নীরবে তুমি রবে পরিশিষ্ট পর্ব

নীরবে তুমি রবে পরিশিষ্ট পর্ব
রিধিমা জান্নাত রূপা

“চলে যাচ্ছেন?”
“হু! এখানে থেকে আমার লাভ আছে কি?”
“নেই বুঝি?”
দাঁড়িয়ে পড়লো তাসফি, পাশ ফিরে তাকালো নিজের কল্পনায় আনা রূপার পানে। পূর্ণ চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে মেয়েটার মুখখানা, ঠোঁটে লেগে আছে প্রানবন্ত হাসি। যে হাসি’টা এক নিমিষেই তাসফি’কে ঘায়েল করতে বাধ্য, এই মুখটা খুব কাছ থেকে দেখেই কাটিয়ে দিতে পারবে জীবনের শেষ পর্যন্ত। ইস্! প্রায় দু’টো মাস এই মুখটা কল্পনায় ছাড়া খুব কাছ থেকে দেখে না তাসফি, একটুখানি ছুঁয়ে দেয় না।

রূপার ফিরতি প্রশ্নে সহসায় জবাব দিতে পারলো না তাসফি, তাকিয়েও থাকতে পারলো না রূপার দিকে। এই মুখখানা দেখার পর একটুখানি ছুঁয়ে দিতে পারছে না, কিন্তু যে মুখপানে আলতো স্পর্শে ছুঁয়ে দিতে পারে সে মুখপানে তাকিয়ে থাকার সাধ্য নেই তার। ঠিক এই যন্ত্রণা’টাই যেন কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাসফি’কে।
জোরে নিশ্বাস টেনে, “আছে তো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলেই একটু থামলো তাসফি। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলে লাগলো, “এই যে, আমার দীর্ঘ শ্বাস, বুক ভরা আর্তনাদ, তোমাকে পেয়েও ছুঁতে না পারার যন্ত্রণা।”
খিলখিল করে হেঁসে উঠলো রূপা, বেশ শব্দ করেই হাসালো। নিস্তব্ধ রাতে সেই হাসিটা ঝনঝন শব্দের প্রতিধ্বনি তুলে চারদিকে বাজতে লাগলো, কিন্তু তাসফি ছাড়া সেই হাসির শব্দ কারোর কানে এলো না। রূপা সেই হাসিটা বজায় রেখেই বলে উঠলো,

“আপনি ফেঁসে গেছেন তাসফি, খুব বাজে ভাবে রূপা’তে ফেঁসে গেছেন।”
“ভয়ংকর বাজে ভাবে!”
“আপনার এই ফেঁসে যাওয়া’টা আমার বড্ড ভয় লাগে তাসফি।”
“কারণ?”
“এই যে, আমি বিয়ে’তে রাজি ছিলাম না, আপনি জোর করেছেন। আপনার থেকে সময় চেয়েছি, দূরত্ব ঘোচাতে আমার ভীতি কাটিয়েছেন, ভালোবাসতে চাই নি, কিন্তু বাঁধ্য করেছেন।”

সামান্য হাসলো তাসফি। এই কথাগুলো অসংখ্য বার শুনেছে সে রূপার মুখে, বারংবার তাকে অপরাধী বানিয়েছে, অভিযোগ করে গেছে মেয়েটা। আর তা বরাবরের মতোই হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছে তাসফি। এবারও তার ব্যাতিক্রম হলো না যেন। তবে রূপার করা অভিযোগ গুলো মিথ্যে হলেও বিয়ের ব্যাপার’টা শতভাগ সত্যি। হ্যাঁ! তাসফি’ই তাকে জোর করেছিলো বিয়েতে, বাধ্য করেছিলো রাজি হতে। সেদিন তাসফি বিয়ে’তে রাজি হবার পরেই রূপাও বাধ্য হয়েছিলো, এছাড়া তো আর কোন উপায় ছিলো না মেয়েটার। কিন্তু সেদিন কেন তাসফি বিয়েতে রাজি হয়েছিলো তার কারণ জেনেও যেন জানে না তাসফি। তবে দুইটা কারণ তার মস্তিষ্কে বিচরণ করে।

প্রথমত রূপার সেফটির জন্য। হ্যাঁ! রূপার বিপদের আশঙ্কা পেয়েই পরিবারের সবাই এত দ্রুত বিয়েতে তাড়া দেয়। সবটা জানার পরও তাসফি রাজি হয় না, হয়তো রূপাকে দেওয়া কথাটা রাখতে। কিন্তু তার খালাতো ভাই রিফাতের সাথে রূপা’কে দেখার পর আর নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারে না তাসফি, নিজের সিদ্ধান্ত বদলে রাজি হয়ে যায় বিয়েতে। আর দ্বিতীয় কারণ’টা? সেটা ভেবেই হাসলো তাসফি। এই কারণের বিচরণও শুধু রূপাকে ঘিরেই, যা একান্ত নিজের মাঝেই রাখতে চায় তাসফি।

সবটা মিলিয়ে রূপার ভালো থাকার দ্বায়িত্ব নিয়েছিলো তাসফি। তাদের বছর খানিকের সংসারে তা পালনও করেছিলো, কিন্তু তার প্রতি রূপার সেই অগাধ বিশ্বাস’টা হয়তো ধরে রাখতে পারে নি তাসফি। ভেবেই আবারও হাসলো তাসফি, সেই হাসিটা যেন তাচ্ছিল্যের ছিলো। বলে উঠলো,
“তবে আমার প্রতি তোমার বিশ্বাস’টা ধরে রাখতে পারি নি।”
সহসায় জবাব এলো না রূপার। তাসফিও কিছু বললো না। কে’টে গেল খানিকটা সময়। রূপা নিজের মতো করে বলে উঠলো,

“ভালোবাসতে পেরেছেন?”
“তুমিই তো বলেছিলে —ভালোবাসা না-কি হঠাৎ করেই হয়ে যায়। আমার হয়েছে কি না জানি না, তবে ভালোবাসতে পারি নি। ভালোবাসি! তোমাকে ভালোবাসি রুপু।”
এলো না রূপার জবাব, পাশে তাকিয়েও পেল না। হ্যাঁ! চলে গেছে, ফুরিয়ে গেছে তাসফি’র কল্পনা। নিশ্বাস টেনে ছাড়লো তাসফি, বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “পাষণ্ডী রুপু! ভালোবাসি বলেই গেলে, অথচ শুনে গেলে না।”
আর দাঁড়াতে চাইলো না তাসফি। হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে এলো বাড়ির সামনে। ভেতরে যেতে না চেয়েও যেতে লাগলো। হঠাৎ বলে উঠলো,
“নীরবে রাখতে চেয়েছিলাম রুপু, নিশ্চুপে রয়ে গেলে।”

নীরবে তুমি রবে শেষ পর্ব

অনেকে বলেছিলো ওদের বিয়ের বিষয়টা ক্লিয়ার হয় নি, আমার মাথা থেকেও ব্যাপার’টা বেড়িয়ে গিয়েছিলো, তাই ছোট পর্বে কিছুটা জানিয়ে দিলাম। যদিও পুরোপুরি ক্লিয়ার করি নাই। এর আর কোন পর্ব ফেসবুকে আসবে না, আর না দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ আসবে। এই গল্পটা নিয়ে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে, সেভাবেই এগোনোর ইচ্ছে আছে। আশা করি সবাই পাশে থাকবেন নতুন কিছুর জন্য।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা অবিরাম।

সমাপ্ত…