শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩৩

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩৩
তানিয়া মাহি

আবিরা ফোনে কথা বলার সময়েই নিহান দরজায় নক করে। সে তখন অভীকের সাথে কথা বলছিল কোন একটা বিষয় নিয়ে। নিহানের গলা শুনতেই আবিরা ফোনটা বিছানার ওপর ছুড়ে মা*রে। তাড়াতাড়ি করে দরজার সামনে গিয়ে ম্লান হাসি দেয়। নিহান রুমের ভেতরে এসে বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে আবিরার মনে পড়ে সে কল কাটতে ভুলে গিয়েছে। নিশ্চয়ই অভীক ফোনের ওপাশ থেকে কথা বলেই যাচ্ছে। নিহান এগোতে দেখে আবিরা ভয়ে বারবার শুকনো ঢোক গিলছে। নিহান গিয়ে বিছানায় বসে। আবিরার দিকে তাকিয়ে বলে,

” কারো সাথে কথা বলছিলি?”
” ন না তো ভাইয়া।”
” আমাকে দেখে ফোন ছুড়ে মারলি কেন?”
” ছুড়ে কেন মার*ব!”
নিহান ফোনটা হাতে নেয়। অভীক এতক্ষণে কল কেটে দিয়েছে। নিহান কললিস্ট চেক করে আবিরার দিকে তাকায়। আবিরা তখন ভয়ে কাঁপছে। নিহান ফোনটা রেখে বলে, ” অভীক কে?”
আবিরার গলা দিয়ে আর কোন কথা বেরোচ্ছে না। ভয়ে তার গলাভারী হয়ে এসেছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। এক হাতের আঙুল আরেক হাত দিয়ে নাড়ছে। নিহান আবার বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কে অভীক?”
আবিরা আমতা আমতা করে বলে, ” ভাইয়া উনি ডাক্তার।”
” তুই অসুস্থ?”
” না মানে..”
” কি?”
আবিরা আবার চুপ হয়ে আছে। কি বলবে সে এখন! এই সুযোগে কি অভীকের কথা বলে দেওয়া উচিৎ! কিন্তু কীভাবে কি শুরু করবে সে?
নিহান বলে ওঠে, ” অভীককে বলবি ওর বাবা-মাকে নিয়ে যেন এ বাড়িতে আসে। বাবার আসতে বেশি দেরি নেই কয়েকটা দিন মাত্র। ”

” ভাইয়া তু তুমি অ অভীকের কথা কীভাবে জানলে?”
” সেটা আপনার জানতে হবে না, যেটা বললাম সেটা কর।”
” তুমি রাজি?”
” তারা আসুক, দেখি কেমন! তারপর তো পছন্দ অপছন্দের বিষয়। ”
” ঠিক আছে।”
নিহান ফোনটা আবিরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ” তাকে কল করে বলে দিবি বিয়ের আগে প্রেম না, বিয়ের আগে প্রেম করলে বিয়ের পর সেই স্নিগ্ধ ভালোবাসাটা থাকে না।”
” হুম।”

নিহান রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আবার পিছন ফিরে বলে, ” মা কি তোকে কিছু বলেছে? ”
আবিরা ফোন টেবিলে রেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, ” কোন ব্যাপারে?”
” এই যে ছয়দিন পর আমি চলে যাব তার আগে আমি শুভ্রাকে বিয়ে করতে চাইছিলাম। এ ব্যাপারে কিছু বলে নি?”
” না তো, আমি তো এ বিষয়ে জানিই না। মা আমাকে বলেনি কেন? মা কি চাচ্ছে আমি বিয়ের দিনে জানব?”

” মা হয়তো আমার কথা সিরিয়াসভাবে নেয় নি। আমি এবার গেলে দুই মাসের আগে আর আসতে পারব না। শপথ গ্রহনের পর দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে, অনেক কাজ। আমি আজ কাকার সাথে কথা বলব। রাতে বাবার সাথে কথা বলেছি, জানিয়েছি সব। প্রথমে একটু আপত্তি করলেও পরে মেনে নিয়েছে। বাবা চেয়েছিল বাবা আসার পর বিয়েটা হবে কিন্তু সেটা এখন আর সম্ভব না। আমাদের না হওয়া সম্পর্ক নিয়ে মানুষ নানারকম কথা তুলছে। আমার মনে হয়েছে তাড়াতাড়ি নতুন সম্পর্কে জড়ানো উচিৎ। ”

” শুভ্রতা রাজি হয়েছে?”
” অমত করবে না হয়তো।”
” বাহ মানিয়ে নিয়েছ? আমি কিছুই জানলাম না।”
” তোর জানার কথা?”
” আমার জানার কথা হবে না কেন? আমার বিষয়ে তুমি জানলে ক্ষতি নেই কিন্তু শুভ্রতা আর তোমার বিষয়ে আমি জানতে পারব না!”

নিহান আর আবিরার মাঝে বেশ কিছুক্ষণ কথা চলে। আবিরা তার ভাইকে খুব ভয় পায় অথচ মাঝেমাঝে এমন কথাবার্তা দুজন বলে যেন তারা একে অপরের সাথে ভীষণ ফ্রি। তবে ছোটবেলা থেকে ভাইয়ের সাথে অনেক মজা করা হলেও নিজের কথাগুলো শেয়ার করতে পারে নি। কোন ছেলে ডিস্টার্ব করলেও সেই কথা নিহানকে বলতে এসে কান্না করে ফেলত।

শাহাদাত সাহেবকে বাড়িতে না পেয়ে নিহান অফিসে এসেছে দেখা করতে। নিহানকে চা দেওয়া হয়েছে, সে বসে বসে শাহাদাত সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ পর শাহাদাত সাহেব এসে নিহানের সামনের চেয়ারটায় বসলেন। নিহান চা রেখে সোজা হয়ে বসলো। একজনকে ডেকে আরেক কাপ চা দিতে বলে নিহানের দিকে তাকালো। ঘড়ি দেখে বলল, ” পনেরো মিনিটে হবে?”
নিহান স্বাভাবিকভাবেই বলে ওঠে, ” এনাফ টাইম।”

” আচ্ছা ঠিক আছে বল।”
” আমি আর ছয়দিন এখানে আছি। এরপর আমার শপথগ্রহণ। যদিও কিছুদিন দেরিতেই ছিল তবে ফোন করে জানিয়েছে সময় আগানো হয়েছে। আমি চাচ্ছিলাম…..”
” কি চাচ্ছিলে? চলে যাওয়ার আগে বিয়েটা করে রেখে যেতে?”
” হ্যাঁ। ”
” ভাই কল দিয়েছিল রাতে। আমাকে বলেছে সবকিছু।”
” আপনার কি কথা এখন?”

” আমিও চাই না আমার মেয়ের গায়ে কোন দাগ লাগুক। আমার মেয়ের সহ্যশক্তি বেশি বলে যে সে সব সহ্য করবে আর আমি তাকে সহ্য করতে দেব এমন হবে না।”
” জি, আমি জানি।”
” শুভ্রার সাথে কথা বলেছ?”
” জি বলেছি।”
” ফলাফল কি? কি বলেছে আমার মেয়ে?”
” হয়তো অমত করবে না। সে জানে আমি তাকে…”

” তোমাদের বিয়েতে আমার আপত্তি নেই। হয়তো তোমার বাবা-মায়ের ও নেই, এখন নেই। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না, মানুষের মন পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। ”
” আমি সেসব দেখে নেব। আপনাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ”
” আমার মেয়ের বয়স একুশ, তাকে আমি তার জন্মের আগে থেকে ভালোবাসি। তার মা যেদিন জানিয়েছে আমাদের ঘরে নতুন মানুষ আসছে সেদিন থেকে আমি তাকে ভালোবাসি। তোমার ভালোবাসা নিশ্চয়ই আমার চেয়ে বেশি না।”
” আমি আসলে ওভাবে বলতে চাই নি।”

” আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দেব কিন্তু তোমার যদি কখনো মনে হয় আমার মেয়ের সাথে তোমার বনিবনা হচ্ছে না, তুমি তাকে আর ভালোবাসো না, তাকে সহ্য করতে পারছো না তাহলে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে রেখে দিও না। আমার মেয়েকে কষ্ট না দিয়ে তাকে আমার কাছে আবার ফিরিয়ে দিও। আমি নিজে হয়তো রাজা নই, আমার রাজ্য নেই কিন্তু আমার মেয়ে আমার কাছে রাজকন্যা। আমি তাকে আমার নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।”
” ফিরিয়ে দেওয়ার দিন কখনোই আসবে না। তার প্রতি আমার ভালোবাসাও কমবে না। আপনার পর হয়তো আমি ওকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। ”

” আমার মেয়েকে কখনো কষ্ট দিস না বাবা। ওর চোখের পানি আমি অনেক দেখেছি, আমার মেয়ের চোখের পানি দেখলে আমার বুকে প্রচন্ড ব্যথা করে।”
” দোয়া করবেন কাকা, আমি যেন আমার জীবন দিয়ে হলেও আমার ভালোবাসাকে ভালো রাখতে পারি।”
” আমার মেয়ের কিছু হলে আমি তোকে ক্ষমা করব না কোনদিন মাথায় রাখিস। এই যেভাবে হাত পেতে আমার মেয়েকে চাইছিস, আমার মেয়েকে যদি মাথায় করে না রেখেছিস তোকে আমি খু*ন করতে দুবার ভাববো সে তুই পেশায় যাই হোস না কেন!”

” আচ্ছা ঠিক আছে, এমন দিন জীবনে কখনো আসবে না।”
” মাথায় রেখো সবসময়। ”
” জি থাকবে। আপনি কি তবে অনুমতি দিচ্ছেন?”
” দিচ্ছি। আমি বাসায় গিয়ে দিন ঠিক করছি তোমার মায়ের সাথে।”
” ঠিক আছে। তাহলে আমি কি শুভ্রাকে নিয়ে কিছু কেনাকাটা করতে যাব?”
” না, ওর এখন কিছু লাগবে না। বিয়েটা হোক, বিয়ের আসর থেকেই ইচ্ছে হলে বউকে নিয়ে গিয়ে যা ইচ্ছে হয় কিনে দেবে। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কোথাও যেতে দেব না।”

” ও কি শুধু আপনার মেয়ে?”
” হ্যাঁ শুভ্রতা এখন শুধু আমার মেয়ে। এখনো তোমাদের বিয়ে হয়নি যে তুমি ওকে নিজের স্ত্রী বলবে।”
” হবু স্ত্রী তো….”
” সেটার কোন দাম নেই।”
” এত হিংসুটে কেন আপনি কাকা?”
” কি বললে?”
” বিয়ে করে নি, বাসায় যেতেই দেব না।”

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩২

” বেরোও তুমি এখান থেকে। আমি মেয়েই বিয়ে দেব না। হতচ্ছাড়া কোথাকার।”
” এর জবাব আমি দেব, মনে রাখবেন।”
নিহান হাসতে হাসতে শাহাদাত সাহেবের কাছে থেকে চলে যায়। শাহাদাত সাহেব ও বসে বসে হাসতে থাকেন। চা টা খাওয়াই হয়নি ঠান্ডা হয়ে গেছে তাই তিনি আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দেন।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩৪