নীলাঞ্জনা পর্ব ৮

নীলাঞ্জনা পর্ব ৮
শুভ্রতা জাহান

আকশার বাড়ির সবাই অবাক হয়ে চেয়ে আছে মহু যাকে বাবাই ভেবে জড়িয়ে ধরেছিলো সেই ছেলের দিকে। মহু ভেবে পাচ্ছে না এই ছেলে এত সাহস পেলো কীভাবে! একেবারে বাবাই এর রুমে এসে তার বই পড়তে শুরু করে দিয়েছে। ভাবা যায়! এদিকে বাকিরাও কিছু বলছে না। অদ্ভুত তো। পাপাই, বাবাই, মামনি একে কিছু বলছে না কেনো?

“বাবাই এই ছেলেটা তোমার রুমে এসে বসে আছে আর তোমরা এখনো চুপ করে আছো?”
মহুর কথা শুনে সবাই হাসলেও ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রওনক আকশার মেয়ের গাল টেনে বলেন
“তা তুই ওই ছেলেটার থেকেই জেনে নে। কেনো ওকে কেউ কিছু বলছে না!”
বিরক্ত হয় মহু। সবাই এমন তব্দা মেরে আছে কেন আশ্চর্য তো। কিছু তো বলবে। মহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছেলেটা মুখ খোলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তুমি বড্ড বেশি কথা বলো। বাড়ির সবাই যতটা আহ্লাদ তোমাকে দেয় ততটা উচিত নই।”
রেগে যায় মহু।
“হেই ইউ আমার বাড়ির লোক আমাকে কতটা আহ্লাদ দেবে সেটা বলার আপনি কে হ্যাঁ?”
হালকা হাসে ছেলেটা। অতঃপর বলতে শুরু করে

“মিস মহুয়া আকশার নীলাঞ্জনা। ওরফে মহু। ডটার অফ রওনক আকশার। রাইট?”
চোখ মুখ কুঁচকে ছেলেটার পানে তাকায় মহু। ছেলেটি আবার বলতে শুরু করে।
“মা মারা গেছে ১৫ বছর আগে। বাবাই, পাপাই, মামনি আর রেহানা আপুইকে নিয়ে পরিবার। আপাতত এসএসসি ক্যান্ডিডেট।”
আরো কিছু বলবে তার আগেই রওনক আকশার মুখ খোলেন।
“আহ অভ্র থামবি তুই? এসেই আমার মেয়ের পেছনে লাগতে শুরু করে দিয়েছিস? আচ্ছা তোর না আরো পরে আসার কথা?”

বাবাই এর কথা শুনে অবাক হয় মহু। এটা অভ্র? মানে তার পাপাই এর ছেলে? কিন্তু তার তো আরো পরে আসার কথা ছিলো। তাহলে এখন কেনো? আর এসেছে ভালো কিন্তু মহু যখন জড়িয়ে ধরলো তখন কথা বললো না কেনো? কেনো বললো না সে বাবাই নই, অভ্র? আচ্ছা ফাজিল লোক তো। কাউকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায় মহু। বিরক্ত লাগছে তার সবকিছু।
মহু চলে যেতেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে অভ্র। রওনক আর রেহমান আকশার এসে চাপর মারলে বলে ওঠে
“তোমাদের দুলালী বেজায় রেগে গেছে বাবা। আচ্ছা বাই দ্যা ওয়ে ও কি আসলেই কখনো আমাকে দেখেনি? নাকি ভুলে গেছে?”

রেহমান সাহেব হেসে বলেন
“ও কখনো দেখেনি তোকে।”
“তবে যাই বলো বাবাই তোমার মেয়ে কিন্তু তার নামের মতোই সুন্দরী। আমাকে দিয়ে দিলে আমি কিছু মনে করবো না।”
অভ্রর কথা শুনে রেহমান আকশার আর রওনক আকশার দুইজন দুইজনের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে। তারপর রেহমান আকশার বলেন

“নোপ্। আমাদের মহু মামনি তোমার মতো বাঁদর ডিজার্ভ করে না মিঃ আকশার।”
নিজের বাবার মুখে এমন ভদ্র ভাষার অপমান সহ্য হয় অভ্রর। সে নিজেও কিছুটা ভাব নিয়ে বলে
“তোমাদের মহুর থেকে কত স্মার্ট মেয়েরা এই অভ্র আকশার এর জন্য দিওয়ানা জানো তুমি মিঃ রেহমান আকশার? হ্যাভ ইউ এনি আইডিয়া এবাউট দিস? হ্যাঁ হয়তো তারা তোমার মেয়ের মতো অত সুন্দর না বাট চলে।”
ছেলের কথা শুনে রওনক, রেহমান দুই ভাই ভ্রু কুঁচকে ফেলেন। তারপর দুইজনে দুই কাল ধরে একসাথে বলে ওঠেন
“দিন দিন তুমি খুব পেকে যাচ্ছো।”

তারপর পুরো পরিবার মেতে ওঠে খুনসুটিতে শুধু আর শুধুমাত্র মহুয়া বাদে। অভ্রকে তার মোটেই সুবিধার লাগছে না। আরো এসএসসি পরীক্ষা চলমান হওয়ায় সে বাড়ির আড্ডায় যায়নি। রাতের খাবারও সে নিজের রুমেই খাবে বলে ঠিক করলো। পড়া শেষে নামাজ পড়ে রহিমা দিদুনকে ডেকে খাবার চাইলো। মেয়েকে রুমে খাবার নিতে দেখে রওনক বুঝলেন কন্যা তার মান করেছে। তাই গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে মেয়ের রাগ ভাঙালেন। তারপর মহুকে ঘুমাতে বলে নিজেও রুমে গেলেন। বাকিরাও এতক্ষণে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়েছে।

বৃষ্টিতে ভিজে সন্ধ্যার পরে বাড়ি ফেরে নভ। এখন ঢাকায় ফেরার মতো না সময় আছে আর না তো এনার্জি। রোদ, বৃষ্টি সব শরীরের ওপর দিয়ে যাওয়ায় জ্বর এসে হানা দিতে চাইছে। নীল আর নভর পরিবার এখন একসাথেই তাঁদের গ্রামে বড় একটা বাড়ি করে থাকে। শুধু নভই থাকে ঢাকাতে। আজ নীলের জন্মদিন হওয়ায় কাউকে না বলেই গ্রামে চলে এসেছিলো সে। ফোনও অফ রেখেছে যাতে কেউ যোগাযোগ এর জন্য বিরক্ত না করে। বছরের এই একটা দিনই তার নীলময়ীকে দেওয়ার জন্য। সেখানে কেউ বিরক্ত করবে কেনো?

সূর্য ডুবে যাওয়ারও অনেক সময় পর ছেলেকে ভেজা কাপড়ে বাড়ি ফিরতে দেখেও অবাক হননি আনোয়ারা বেগম। আয়রা বেগমও এভাবে নভকে দেখে মুখে আঁচল চেপে ভেতরে চলে যান। নওশাদ শেখ চোখের জল মুছে মাথায় হাত রাখেন নভর তারপর নিজেও প্রস্থান করেন। আয়রা বেগম ছেলেকে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসতে বলে চলে যান রান্না ঘরে। নভও কথা না বাড়িয়ে মায়ের কথা মতো কাজ করে। বড্ড ক্লান্ত আজ সে।

হুর চোখ লেগেই এসেছিলো এমন সময় তার ঘরে আসে অভ্র। মহু কখনো দরজা লক করে ঘুমায় না, তার বাবার নিষেধ। তাই অভ্রর ঢুকতে অসুবিধা হলো না। রুমে ঢুকেই মহুর চুল ধরে টান দিলো অভ্র। হঠাৎ চুলে ব্যথা পেয়ে চোখ খুলে নিজের সামনে অভ্রকে দেখে ক্ষেপে যায় মহু।
“এই আপনি আমার রুমে কি করছেন?”
মহুকে রাগাতে পেরে যেন সফল হয়েছে এমন ভাব নিয়ে অভ্র বসে পড়ে বেডের একপাশে। তারপর আবার মহুর মাথায় গাট্টা মেরে বলে

“এই তোমার নামটা কত্ত সুন্দর, অথচ তুমি এমন কাঠখোট্টা কেনো? নীলাঞ্জনা নামের মতো নমনীয় হতে পারো না?”
একথায় আরো বেশি রেগে যায় মহু। দাঁতে দাঁত পিষে বলে
“আপনি কি যাবেন এখান থেকে? এই রাত দুপুরে ঝগড়া করার মুড নেই আমার একদমই।”
এক ভ্রু উঁচু আফসোস করে অভ্র বলে,
“তারমানে তুমি ঝগড়ুটে? ইশ কেমন বাজে লাগবে যখন মানুষ বলবে আকশার বাড়ির ছোট মেয়েটা বড় ঝগড়ুটে!”
রেগে গিয়ে অভ্রর চুল টেনে ধরে মহু।

নীলাঞ্জনা পর্ব ৭

“আমি ঝগড়ুটে হ্যাঁ? রাত দুপুরে অন্যের ঘরে কি আমি গিয়েছি?”
অভ্র নিজেও মহুর চুল টেনে দিয়ে বলে
“নাহয় এসেছেই একটা বাচ্চা ছেলে তোমার ঘরে। তাই বলে এভাবে শিশু নির্যাতন করবে?”
মহু হতবাক হয় অভ্রর কথায়। অভ্র বাচ্চা? আর সে শিশু নির্যাতন করছে? এত বড় কথা! আবারও শুরু হয় খুনসুটি। যা দেখে কেউই বলবে না এই মানব মানবীর আজই প্রথম দেখা।

নীলাঞ্জনা পর্ব ৯