নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৩

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৩
লেখিকাঃ Tamanna Islam

এখন গভীর রাত। হয়তো সবাই ঘুম বা যার যার রুমে। বাইরে কেউ নেই বললেই চলে। কিন্তু আব্রাহাম, সে হাতে একটা স্যাম্পেনের বোতল নিয়ে বিচ সাইডে হেটে চলেছে। রাতের আধারের নীরবতায় সমুদ্রের স্রোতের আওয়াজ বেশ জোরে শোনা যাচ্ছে। চারিদিক শান্ত থাকলেও আব্রাহামের ভেতর টা মোটেও শান্ত নেই। তার মনের ভেতরে বয়ে চলেছে এক উথাল-পাতাল। আব্রাহাম সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। স্রোত গুলো এসে পায়ের ওপর বারি দিয়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম এক ধ্যানে সেদিকেই তাকিয়ে আছে৷ আইরাতের কথাই মাথায় এসে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। পারবে না সে, সম্ভব না কোনমতেই আইরাত কে ছাড়া।

আব্রাহাম;; হয়তো আইরাত, নয়তো মৃত্যু। আইরাত নেই তো আব্রাহাম নেই। আইরাত হলে আমারই হবে। নয়তো কারোর না। আর যদি আমার না হয় তাহলে প্রথমে আইরাত কে মারবো তারপর আমি মরবো। ভালোবাসার অধিকারও আমার আর জানে মারারও।
আব্রাহাম তার হাত থেকে স্যাম্পেনের বোতল টা ছুটে ফেলে দেয়। তারপর সোজা সমুদ্রের মাঝে হাটা শুরু করে। যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কোন দিকে কোন খেয়াল নেই। সমুদ্র অনেক টাই গভীর। তবে আব্রাহাম যাচ্ছে। যেতে যেতেই সমুদ্রের পানিতে বেশ খানিক ভিজে গেলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অন্যদিকে আইরাত তার রুমে বসে আছে। সে কখনো ভাবেই নি যে আব্রাহাম তাকে এমন কিছু একটা বলবে।
সে নিজেকে তেমন একটা পর্যায়ে ভাবতেই পারে না। সে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিলং করে। কোথায় আইরাত আর কোথায় আব্রাহাম। এটা হয় না। আব্রাহামের পাশে আইরাত কখনো নিজেকে কল্পনাও করতে পারে না। রাতের মতো রাত চলে যাচ্ছে কিন্তু চোখে নেই ঘুমের ছিটেফোঁটাও।

আব্রাহামের বলা প্রত্যেক টা কথা যেন কানে বেজে চলেছে তার। আব্রাহাম কে সে মানা তো করে দিয়েছে কিন্তু আব্রাহাম কি শুনবে তার কথা। আবার উলটা পালটা কিছু করে না বসলেই হয়। আইরাতের কিচ্ছু ভালো লাগছে না। যাই হোক কাল হয়তো তারা এই রিসোর্ট থেকে বের হয়ে পরবে। আইরাত যেন এখান থেকে যেতে পারলেই বাচে। নিজের বাড়ি গিয়ে একটু শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়বে। এগুলো আর ভালো লাগছে না তার। রাত বাজছে ২ঃ৪৫ মিনিট। এখন তো দুনিয়া উলটে গেলেও ঘুম আসবেই না আর এভাবেই বসে থাকলে মাথা হ্যাং মারবে। তাই আইরাত হাতে এলটা সাইকোলজি বুক নিয়ে করিডরে চলে যায়।

আব্রাহাম;; আমি কোন ধরনের ঝামেলা টামেলা চাচ্ছি না। গাড়ি নিয়ে এখানে এসে পরো।
রাশেদ;; জ্বি স্যার।
আজ এখান থেকে তারা চলে যাবে। বাকি স্টাফ গুলো গতকালই সেই ফাইভ স্টার হোটেল থেকে বের হয়ে গেছে। আর আব্রাহাম এখান থেকে একা বের হতে পারবে না। অনেক জিনিসপত্র আছে এগুলো নিতে হবে তাই সে রাশেদ কে ফোন করে এখানে আসতে বলে।
আব্রাহাম ফোন রেখে দিয়ে সোজা আইরাতের রুমের দিকে যায়। এখন তার মূল কাজ হচ্ছে আইরাত কে জ্বালিয়ে মারা।

আব্রাহাম আইরাতের রুমে গিয়েই দেখে আইরাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কানে ঝুমকো পরছে কিন্তু ঠিক ভাবে পরতে পারচ্ছে না তাই মুখের বিরক্তির ছাপ সুস্পষ্ট। আব্রাহাম হাত দুটো ভাজ করে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে পরে। মুখে এক চিলতে হাসি রেখে আইরাতের ঘাড়ের ওপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। আইরাত আয়নাতে আব্রাহাম কে দেখে থমকে দাঁড়ায়। আব্রাহাম আইরাতের হাত থেকে ঝুমকো টা নিয়ে খুব যত্নের সাথে আইরাতের কানে পরিয়ে দিতে থাকে। তবে আব্রাহামের চোখ গুলো আয়না দ্বারা আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত আয়নাতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখ নামিয়ে ফেলে। ঝুমকো পরিয়ে দেওয়া শেষ হলে আব্রাহাম কিছুটা সরে এসে পরে। তারপর আবার দুই হাত নিজের প্যান্টের পকেটে দিয়ে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; কাজল টা একটু গাঢ় ভাবেই দিও।
আইরাত;; কেন?
আব্রাহাম;; অন্যের নজর লেগে যাবে। যা আমি হতে দিবো না। কারণ তোমার ওপর নজর শুধু আর শুধু মাত্রই আমার আছে & থাকবে।
আইরাত;; ______________
আব্রাহাম;; আমরা আজ এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; সব প্যাক করা শেষ!!
আইরাত;; অনেক আগেই।
আব্রাহাম;; হুম চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; ব্রেকফাস্ট করতে, একসাথে করবো চলো।
আইরাত;; কিন্তু আমি খাবো না। মানে আমার ক্ষিদে নেই আর কি।
আব্রাহাম;; কি বললা?
আইরাত;; ক্ষিদে নেই।
আইরাত;; ভালোই ভালোই বলছি চলো। হয়তো তুমি এখন ব্রেকফাস্ট খাবে নয়তো আমিই এখন তোমাকে পানি ছাড়া কাচ্চা খেয়ে ফেলবো।
আইরাত;;______________

আইরাত কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে বের হয়ে আসে রুম থেকে। বাইরে এসে একটা টেবিলের ওপর বসে পরে। আব্রাহাম তো বসে পরে। তবে আইরাত দাঁড়িয়ে থাকে৷ আব্রাহাম মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। ইশারাতে আইরাতকে টেবিলে বসতে বললে, আইরাত মুখ ঘুড়িয়ে নেয়। আব্রাহামের গেলো মেজাজ চটে। সে আইরাতের হাত ধরে হেচকা এক টান দিয়ে সোজা তাকে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে দেয়। আর এক হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে। হুট করে এমন কিছু একটা হওয়াতে আইরাত অবাক হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। তবে আব্রাহাম বেশ স্বাভাবিক তার মতে কিছুই হয় নি। আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে সরে আসতে চাইলে আব্রাহাম যেন আরো শক্ত করে ধরে রাখে ।

আইরাত;; দেখুন ছাড়ুন সবাই তাকিয়ে আছে। ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; আমার জিনিস আমি নিয়ে বসে আছি এতে কার বাপের কি?
আইরাত;; জিনিস মানে আমি এখন জিনিস?
আব্রাহাম;; চুপ করো।
আইরাত;; ছাড়ুন
আব্রাহাম;; প্রথমে ভালোভাবে বসতে বলেছিলাম বসো নি। এখন এখানেই বসে থাকবে চুপচাপ। আর একটা বাড়তি প্যাচাল পারলে ওইযে সামনে ফল কাটার ওই ছুরি দেখছো না সেটা দিয়ে ভুড়ি ফুটো করে দেবো একদম।
আইরাত;; ?।
আব্রাহাম;; হা করো।
আইরাত;; আমি নিজে খেতে জানি।
আব্রাহাম;; এই হা কর (ধমক দিয়ে)
আইরাত;; খাচ্ছি তো ?।
আইরাত চুপ চাপ খাবার মুখে পুড়ে নিলো আব্রাহামের হাত থেকে।
আব্রাহাম;; দ্যাটস্ লাইক মাই বেবিগার্ল।

আইরাত মুখ টাকে বাংলার পাচ বানিয়ে রেখে দিয়েছে। আব্রাহাম নিজেও খেলো আর আইরাতকেও খাইয়ে দিলো মানে হুমকি দিয়ে আর কি। আর এতোক্ষন এক হাত দিয়ে আইরাতকে আকড়ে ধরে ছিলো। আইরাত তার কোলের ওপর থেকে সরে আসতে চাইলে আব্রাহাম তার দিকে চোখ গরম করে তাকায় আর আইরাত যেন সেখানেই শেষ।
দেখতে দেখতে প্রায় অনেক সময় পার হয়ে গেলো। আর তখন রাশেদও গাড়ি নিয়ে এসে পরে।

রাশেদ;; স্যার।
আব্রাহাম;; কেমন আছো?
রাশেদ;; জ্বি স্যার ভালো। আপনি?
আব্রাহাম;; অনেক বেশিই ভালো। (আইরাতের দিকে তাকিয়ে)
রাশেদ;; স্যার গাড়ি নিয়ে এসেছি। সব কিছু আমি স্টাফ কে বলে ঠিকঠাক করে নিবো।
আব্রাহাম;; হুম আমরাও রেডি হচ্ছি।
আইরাত সেখান থেকে দ্রুত চলে যায় নিজের রুমে। গিয়েই সব গুছিয়ে, সবকিছু আরেক বার চেক করে বের হয়ে পরে। সে দ্রুত যাচ্ছে যেন আব্রাহামের চোখে না পরে। নিজের ব্যাগ টা হাতে নিয়েই আইরাত রাশেদের কাছে চলে যায়।

আইরাত;; রাশেদ!
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।
আইরাত;; আপনি যেই গাড়ি টা এনেছেন তার চাবি কোথায়?
রাশেদ;; জ্বি আমার কাছেই।
আইরাত;; আমাকে দিন।
রাশেদ;; সরি ম্যাম কিন্তু কেন?
আইরাত;; মানে আমি ওই গাড়ি দিয়ে যাব আর কি। আর ওই গাড়িতে ড্রাইভার আছে না?
রাশেদ;; ড্রাইভার তো আছে কিন্তু আপনি না ড্রাইভ করতে জানেন?

আইরাত;; ড্রাইভ করতে জানি কিন্তু জায়গা না। এখন চাবি দিন আমি ড্রাইভারের সাথে ওই গাড়ি দিয়ে চলে যাবো। আব্রাহাম স্যার অন্য গাড়ি দিয়ে যাক।
রাশেদ;; না মানে স্যার তো নিজের গাড়ি দিয়েই যাবেন আর স্যার কখনো ড্রাইভার কে সাথে নেন না তবে…!
আইরাত;; আরে কিছু হবে না চাবি দিন আমায়।
রাশেদ;; আব..আচ্ছা।

আইরাত রাশেদের কাছ থেকে সেই গাড়ির চাবি নিয়ে এসে পরে। মানে শয়তানি বুদ্ধি যেন উপচে উপচে পড়ছে তার। আইরাত কোন রকমে লুকিয়ে চুরিয়ে সব করছে। রিসোর্টের পার্কিং সাইডে গেতেই আইরাত দেখে দু দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের চিনতে আর বাকি নেই যে এগুলোই আব্রাহামের গাড়ি। একটা ব্রাউন কালারের আরেকটা ব্লেক। আর আব্রাহামের অধিকাংশ জিনিসপত্র ই ব্লেক কালারের। আইরাত আস্তে করে গিয়ে কালো গাড়ির পেছনে টায়ারের পাশে বসে পরে। নিজের মাথার পেছন থেকে ক্লিপ নিয়ে ঠুউউউউস করে টায়ার টা পাঞ্চার করে দেয়। আর খিলখিল করে হাসতে থাকে। তারপর হাত ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়ায়।

আইরাত;; এইবার দেখবো চান্দু যে তুমি আমার কাছে কী করে পৌছাও। হিহিহিহিহিহিহিহিহিহিহি ?।
আইরাত হেলেদুলে গিয়ে ব্রাউন কালার গাড়ির পেছন সীটে গিয়ে বসে। কিন্তু শুনে যে ড্রাইভার নাকি কোথায় গিয়েছে আসতে একটু দেরি হবে। আইরাত বিরক্তি নিয়ে বসে থাকে। আর তখনই একজন লোক আসে এসেই দেখে আব্রহামের গাড়ির টায়ার পাঞ্চার। তার তো মাথায় হাত। আব্রাহাম যদি জানে যে এই সময়ে টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে তাহলে এই গাড়ি টাই ভেঙে ফেলবে পুরো। লোকটি দ্রুত গাড়ির টায়ার সারাতে লাগে। কিছুক্ষন পর ড্রাইভার এসে পরে। আর আইরাত তাকে দ্রুত চলে যেতে বলে। ড্রাইভার তো ভেবেছে যে আব্রাহামই যেতে বলেছে তাদের তাই সেও কোন কথা না বলে চলে আসে।

আর ওইদিকে আব্রাহাম সারা রুমে আইরাত কে টই টই করে খুজছে। কিন্তু আইরাত নেই। আব্রাহামের মেজাজ এবার চরম পর্যায়ে। আব্রাহাম রেগে আগ বাবুলা হয়ে বাইরে এসে পরে।
আব্রাহাম;; রাশেদ, আইরাত কে দেখেছো?
রাসেদ;; জ্বি স্যার উনি তো ড্রাইভার কে নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেছেন।
আব্রাহাম;; হুয়াট?
রাশেদ;; জ্বি স্যার।
আব্রাহাম;; আমাকে না বলেই গেলো।
রাশেদ;; আপনার নাকি দেরি হবে তাই উনিই আগে চলে গেলেন।
আব্রাহাম;; গিয়েছে কতোক্ষন হবে?
রাশেদ;; বেশি না স্যার ৫-১০ মিনিট হবে।
আব্রাহাম;; হুমম ৫-১০ মিনিট। ওকে ফাইন শুনো ভেতরে সবকিছু আছে সেগুলো নিয়ে তুমি এসে পরো আমি গেলাম।

আব্রাহাম তার সাদা শার্টের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে হাতে নিয়ে নেয়। তারপর গাড়িতে এসে বসে। কোন রকমে শান্ত শিষ্ঠ ভাবে রিসোর্ট থেকে বের হয়ে আসে। কিন্তু সেখান থেকে বের হতেই যেন আব্রাহামের চোখে ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। গাড়ির যতো স্পীড ছিলো সম্পূর্ণ দিয়ে হাওয়ার গতীতে ছুটে চলেছে।
আব্রাহাম;; আমাকে ফাকি দিয়ে গাড়িতে করে যাওয়া তাই না। দাড়াও বুঝাচ্ছি।

আব্রাহামের সব গাড়িতেই ট্রান্সমিটার লাগানো। ভাগ্য ভালো যে আইরাতের সেই গাড়িতেও লাগানো ছিলো। তাই তারা এখন কোথায় বা কোন দিক দিয়ে যাচ্ছে তা সহজেই ট্রেস করা যায়। আব্রাহাম তার ট্যাবে দেখলো বেশি না আইরাতের গাড়ি তার গাড়ি থেকে আরো কয়েক মিনিটেই দূরত্বেই। আব্রাহাম গাড়ির স্পীড টা আরো একটু হাই করে দিলো। কিছুক্ষণ পরই আইরাতের সেই গাড়ির একদম পাশাপাশি হয়ে গেলো।

এবার আব্রাহাম তার গাড়ি টা নিয়ে ব্রেক কষে সোজা আইরাতের সেই গাড়ির সামনে চলে গেলো। রাস্তা টা যেন ধুলোয় পুরো ভরে গেছে। আব্রাহাম তো তীব্র গতীতে গাড়ির ব্রেক কষে তাদের গাড়ির সামনে নিজের গাড়ি থামায়। আর ওই গাড়ির ড্রাইভার এতে ভেবাচেকা খেয়ে যায়। এভাবে হুট করে আরেকটা গাড়ি নিজের গাড়ির সামনে এসে পরতেই । ড্রাইভারও বেশ জোরেই দ্রুত ব্রেক কষে। আইরাত আরামছে পেছনের সীটে বসে ছিলো। কিন্তু এভাবে হুট করে ব্রেক করাতে আইরাত অল্পের জন্য মাথায় আঘাত পায় নি। সে রেগে যায়।

আইরাত;; আরে আস্তে, হয়েছে কি?
ড্রাইভার;; ম্যাম, সামনে আব্রাহাম স্যার।
আব্রাহামের নাম শুনতেই আইরাতের বুক টা ধুক করে ওঠে।
আইরাত;; কি?
ড্রাইভার;; জ্বি।

এতোক্ষনে আব্রাহাম তার গাড়ি থেকে নেমে এসে আইরাতের গাড়ির পাশে দাঁড়ায়। কোন কথা না বলেই গাড়ির দরজা খুলে আইরাতের হাত খামছে ধরে। তাকে এক প্রকার টেনেই গাড়ি থেকে বাইরে বের করে আনে। আইরাত হাত ছাড়ানোর জন্য চিল্লাচ্ছে কিন্তু আব্রাহাম তো জীবনেও হাত ছাড়বে না। আইরাত কে নিয়ে সে নিজের গাড়ির দিকে যেতে ধরলো।
আব্রাহাম;; ওহ হ্যাঁ, তুমি গাড়ি নিয়ে সোজা এখান থেকে আবার রিসোর্টে বেক করো। সেখানে রাশেদ আছে তাকে নিয়ে আসো।

ড্রাইভার কে এই কথা বলে আব্রাহাম আবার আইরাতের হাত ধরে টেনে এনে সামনের সীটে বসিয়ে দেয়। বসিয়ে দিয়ে দরজা লক করে দেয়। তারপর নিজেও ঘুড়ে এসে গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসে পরে। আইরাত তাকিয়ে আছে আব্রাহামের দিকে। আর আব্রাহাম যেন ভাবলেশহীন। সে এসে আবার নিজের চোখে সুন্দর করে সানগ্লাস টা চোখে পরে নিলো।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২২

আইরাত;; এটা কি হলো?! সবসময় গুন্ডাগিরি করা কি জরুরি?
আব্রাহাম;; সবসময় ত্যাড়ামি করা কি জরুরি?
আইরাত;; আপনি কি ভালো হবেন না।
আব্রাহাম;; That doesn’t suit”s me babygirl…
আইরাত;; ওই গাড়ি দিয়ে গেলেই কি হলো আচ্ছা একই কথা তো।
আব্রাহাম;; গাজর আর মূলা কি এক??
আইরাত;; ??।
আব্রাহাম;; এমন টা করতাম না যদি আমার সাথে আগে থেকেই আসতে। আর তার ওপর আমার গাড়ির টায়ার পাঞ্চার করে দিয়ে এসেছো।
আইরাত;; আপনি কি করে জানলেন? ??

আব্রাহাম;; স্টাফ বলেছে আমায়। আর তুমি যেহেতু নেই মানে ড্রাইভারের সাথে এসেছো তাও আমার আগে তো আমার কাছে ক্লিয়ার ছিলো সব যে এটা তুমিই করেছো। আর তাই আমিও তোমাকে এমন টেনে হিচড়ে গাড়ি থেকে নিয়ে এলাম। Tit for Tat baby…
আইরাত যে আব্রাহামের সাথে জীবনেও পারবে না তা জানা আছে। তাই আইরাত দুই হাত ভাজ করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে।

প্রায় দুই তিন ঘন্টা যার্নির পর আব্রাহাম আইরাতের বাসায় সামনে গাড়ি থামায়। আইরাত কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নেমে পরতে ধরে তখনই আব্রাহাম আবার তাকে হাত ধরে থামিয়ে দেয়। হাত টা কিছুটা টান দিয়ে আইরাতকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। তারপর আইরাতের কপালে চোখ বন্ধ করে একটা চুমু একে দেয়। আইরাত নিজেও তার চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। বেশ সময় হয়ে যায় তবে আব্রাহাম এখনো আইরাতের কপালে নিজের ঠোট দুটো ঠেকিয়ে দিয়েই আছে। যেন এখানেই সে নিজের সুখ খুঁজে পায়। আইরাত কিছুটা নড়ে চড়ে উঠলে আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দেয়। আইরাত মাথা নিচু করে সেখান থেকে এসে পরে।
আইরাত বাড়ির ভেতরে চলে গেলে আব্রাহামও সেখান থেকে চলে আসে। তবে বাড়ির ভেতরে গিয়েই পাকে আরেক ঝামেলা।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ২৪