নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬৭+৬৮+৬৯

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬৭+৬৮+৬৯
লেখিকাঃ Tamanna Islam

সবকিছুই রেকর্ড হয়েছিলো। রায়হান যখন আব্রাহাম কে খুন করার প্ল্যানগুলো নিজ মুখে সব স্বীকার করছিলো তাও আবার প্রীতির নাম সহ সেটাও রেকর্ড হয়েছে আর আর ব্লেক মানির ব্যাপার টাও অর্থাৎ আইরাতকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ফাসানোর ব্যাপার টাও রেকর্ড হয়েছে। সবই রায়হান তার মরার আগে নিজ মুখে স্বীকার করে গেছে। আব্রাহাম কে খুন করার অংশ টুকু আব্রাহাম রেকর্ড করে আগেই তনয়া কে পাঠিয়ে দেয়।

অর্থাৎ সেই ক্লিপ টুকু আলাদা ভাবে সেন্ড করা হয়েছে তনয়া কে। তবে পরবর্তীতে কিন্তু ক্যামেরা বন্ধ হয় নি। ক্যামেরা অন করাই ছিলো৷ যার দরুন ব্লেক মানির ব্যাপার টাও রেকর্ড হয়। তা শুধু আব্রাহাম নিজের কাছেই রেখেছিলো। অতঃপর আব্রাহাম যখন জানতে পারে যে আইরাত কে এরেস্ট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তখন আব্রাহাম দ্রুত পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আইরাতকে একদম নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য প্রুভ হিসেবে সেই ভিডিও ক্লিপ টা দেখিয়েছে অফিসার কে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সেখানেও রায়হান সব নিজের মুখেই উগ্লে দিয়েছে৷ আব্রাহাম যখন জেলে আইরাতকে দেখে তখন সে কোন কথা না বলেই সোজা আইরাতের হাত ধরে তাকে পুলিশ স্টেশন থেকে বাইরে বের করে নিয়ে আসে৷ এখনো পুরনো অনেক কিছুই বলার আছে আব্রাহামের আইরাতকে। সব ঠিক করে নিতে হবে, সব আবার আগেরমিতো করে নিতে হবে যেকোন মূল্যেই। আব্রাহাম আইরাতকে বাইরে এনে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দেয়৷ তারপর নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসে পরে।

তীব্র গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে আব্রাহাম। সে এক হাতে গাড়ি ড্রাইভ করছে আরেক হাত নিজের কপালের সাইডে ঠেকিয়ে রেখেছে। মাঝে মাঝে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। তবে আইরাতের মাঝে কোন ভাব নেই। সে একদম ভাবলেশহীন ভাবেই বসে রয়েছে। ঠিক আগের মতো চুপ থাকার লক্ষণ টা আবারও দেখা যাচ্ছে৷ আব্রাহাম বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে যে আইরাত কেনো এভাবে বসে আছে। আব্রাহাম ইচ্ছে করেই আইরাতকে একটা আলাদা ফ্লাটে নিয়ে যায়। সেটাও অবশ্য পুরো টাই আব্রাহামের।

আব্রাহাম গাড়ি থামিয়ে দেয়৷ নিজে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে আইরাতের পাশে গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়। কিন্তু এবারও আইরাত আগের মতোই চুপ মেরে বসে আছে। আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত নেমে পরে। আব্রাহামের আগেই আইরাত নেমে গিয়ে দ্রুত পায়ে ভেতরে চলে যায়। আব্রাহাম গাড়ির দরজা খুলে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই ফ্লাটে আইরাত এর আগেও ২-১ বার এসেছিলো যার ফলে তার চিনতে বেশি একটা অসুবিধে হয় না। আব্রাহাম গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে চাবি দিয়ে গাড়ি লক করে ভেতরে চলে আসে।

সিড়ি বেয়ে আব্রাহাম ওপরে নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই দেখে আইরাত কাচের দরজাতে হেলান দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আব্রাহাম ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়৷ দরজা লাগানোর শব্দ শুনে আইরাত তার পেছন ঘুড়ে তাকায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। তবে আইরাতকে দেখেই আব্রাহামের বুকের ভেতর টা কেমন যেনো একটা মোচড় দিয়ে ওঠে। কেননা আইরাতের চোখ দুটো রক্ত লাল হয়ে রয়েছে,, তাতে পানি গুলো যেনো টলমল করছে। আইরাত এক দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ টুপ করেই কয়েক ফোটা পানি তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে।

আব্রাহাম;; আই………..
আইরাত দ্রুত এগিয়ে গিয়ে আব্রাহামের জেকেটের কলার দুহাতে খামছে ধরে। রাগ, দুঃখ সব একসাথে কাজ করছে আইরাতের মাঝে। চোখে অশ্রু, মুখে রাগ নিয়ে বলে ওঠে…..
আইরাত;; আমাকে কীভাবে আর ঠিক কতো ভাবে ভাঙবেন আপনি। আর কতো? যেগুলো স্বপ্নেও ভাবতে পারি নি সেগুলো কিনা আজ আমার সাথে হয়ে যাচ্ছে৷ আমি কিসে ছিলাম এতোদিন, কি নিয়ে ছিলাম আমি। একটা ধোয়াসার মাঝে থেকে এসেছি আমি এতোগুলো দিন। আপনি, আপনি আমাকে? আমাকে এতোদিন আপনার খুনি ভেবে এসেছিলেন? আমি মারবো আপনাকে। আব্রাহাম কীভাবে মেনে নিলেন আপনি এটা? আপনাকে খুন করার আগে আমি নিজেই না মরে যাই৷

আব্রাহাম;; আইরাত আমার কথা টা!
আইরাত;; আপনি খাদে পরে যাবার পর কোথায় ছিলেন এই বছর গুলো, এই পর্যায়ে কীভাবে এলেন, বা এই গ্ল্যামার ওয়াল্ডেই কীভাবে এলেন? আমার কাছে আসতেন আপনি। আপনি আমার কাছে আসেন নি। সব সমাধান করা উচিত ছিলো আপনার। আমার কাছে এসে আমাকে একবার জিজ্ঞেস তো করতেন। রাগ করতেন, আমাকে কাটতেন, মারতেন, বকতেন যা খুশি করতেন বাট এই Misunderstanding তো ক্লিয়ার করতেন নাকি। এতো গুলো বছর আমার জন্য পুরো একটা ভূল ধারণা নিয়ে ছিলেন আপনি। (চিল্লিয়ে)

আব্রাহাম;; আমি তোমাকে দোষী বলছি না। আমি তোমার কোন দোষই এখানে দিচ্ছি না। আমার কথা তো শুনবে। তুমি যে এভাবে এতো সহজে বলছো না ব্যাপার টা ঠিক এতো টা সহজ ছিলো না আইরাত। আমি, আমি যে কিসের মাঝে ছিলাম তা কেবল আমি ই জানি। তুমি কি ভেবেছো যে নিজের ওপর দিয়ে এতো বড়ো একটা ঝড় বয়ে যাবার পরও আমি খুব ভালো ছিলাম, খুশি ছিলাম? ভুল তুমি। অনেক বেশি আঘাত পেয়েছিলাম আমি। মাথার পেছনে অনেক ভারি আঘাত লেগেছিলো। আমার এক্সিডেন্ট হবার পর কতো কিছু হয়েছে তার বিন্দুমাত্র ধারণাও তোমার নেই।

আব্রাহামকে খাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। গাড়ি সহ একদম নিচে আছড়ে পরেছিলো সে। এক পর্যায়ে আব্রাহাম গাড়ি থেকে ছিটকে গিয়ে বেশ দূরে পরে যায়। আর গাড়িটার অবস্থা একেবারেই বাজে হবার ফলে তা ক্র‍্যাশ হয়ে যায়। তবে আব্রাহামের তখনও কোন স্যান্স ছিলো না। কপালের অংশ বেশ খানিক কেটে গিয়ে রক্ত জমাট বেধে গিয়েছিলো। গায়ের শার্ট টা তেও রক্ত লেগে ছিলো। সেই খাদের অন্ধকার জায়গাতেই আব্রাহাম পরে ছিলো।

এখন আসি রাত্রি কে আর রাত্রির সাথে আব্রাহামের দেখা কি করে হলো তাতে। তাবাসসুম আলাম রাত্রি, পেশাগত ভাবে রাত্রি একজন ডক্টর। পড়াশোনা শেষ করে দেশেই কাজ করছে। বাবা সরকারি পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি গত হয়েছেন। রাত্রিরা দুই বোন ছিলো। রাত্রির বড়ো বোন তমা আর রাত্রি। মোট তিনজনের সংসার ছিলো তাদের,, রাত্রির বড়ো বোন তমা ছিলেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। তমার বিয়ে ঠিক হয়, সবাই খুশি ছিলো এই বিয়েতে। আর বিয়ে হয়েও গিয়েছিলো তবে তমার বিয়ে পর যখন সে তার হাসব্যান্ডের সাথে গাড়িতে করে আসছিলো তখন দূর্ভাগ্যবশত একটা দানব আকৃতি ট্রাকের সাথে তাদের গাড়ির ধাক্কা লাগে। গাড়িতে ছিলো তারা বর-কণে এবং গাড়ির ড্রাইভার।

আর কাকতালীয় ভাবে তমা আর তার বর সেই পাহাড়ি রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলো। তাদের গাড়ি এক ধাক্কায় নিচে খাদে গিয়ে পরে। এদিকে তো রাত্রি তার মা নিশ্চিন্তে ছিলো তমাকে নিয়ে যে সে তার শশুড় বাড়ি চলে গিয়েছে। তবে বেশ ঘন্টা পেরিয়ে যায় তাদের আসার আর নাম নেই। দেখতে দেখতে যখন প্রায় সকালই হয়ে গেলো, তখন তমার শশুড় বাড়ির লোকজন সবাই রাত্রির কাছে ফোন দেয়। তমা বা কেউই এখনো বাড়ি আসে নি। বিয়ের পরের দিনই এমন খবর পেয়ে রাত্রির তো চিন্তায় যেনো মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। সবার মাঝেই একটা দুশ্চিন্তা আর ভয় এসে ভর করলো।

রাত্রির বাবা যেহেতু একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার ছিলেন তাই পুলিশ ডিপার্টমেন্টে তাদের বেশ কিছু চেনা জানা লোক রয়েছে। সেখান থেকেই রাত্রির কাছে ফোন আসে। রাত্রির পুরো ফ্যামিলি কেই প্রায় সেই ডিপার্টমেন্টের সবাই চিনতো। এক অফিসার রাত্রি কে ফোন করে বলে যে “”” খাদে একটা গাড়ির বাজে ভাবে কিছু অংশ পাওয়া গেছে, গাড়িটা সাজানো ছিলো। হয়তো বিয়ের। আর দুটো লাশ পাওয়া গেছে, একদম বর-কনের বেশে। তবে চেহারা বিগড়ে গেছে খুব খারাপ ভাবে তাই চেনা যাচ্ছে না”””।

রাত্রির হাত থেকে ফোন পরে যায়। কি বলবে খুঁজে পায় না, তার মা কেই কি করে সামলাবে তাও জানা নেই তার। অতঃপর রাত্রি আর তা মা সেই এক্সিডেন্ট স্পটে যায়। লাশ গুলোকে চেক করতে হবে, না করে উপায় নেই তাই লাশ গুলোর ওপর হাত দেওয়া বা ধরা নিষেধ। তাই বাধ্য হয়েই খাদের একদম নিচে নামতে হয়েছিলো রাত্রি কে। রাত্রির সেইদিন মনে হচ্ছিলো যে নিজের চোখের সামনে নিজের বড়ো বোনের এমন নির্মম মরন দেখার চেয়ে ভালো সে এর আগেই মরে যেতো। সবকিছু দেখে শুনে অবশেষে রাত্রি বলে যে হ্যাঁ এরাই তার বড়ো বোন আর বোনের স্বামী।

তারা মারা গিয়েছে। রাত্রি তো সেখান থেকে এসেই পরতো কিন্তু হঠাৎ তার চোখ যায় কিছু একটা কিছুর ওপর। পুলিশ রা অন্য দিকে আর রাত্রি অন্যদিক দিয়ে যাচ্ছিলো। আর এছাড়াও এখানে বেশ বন্য পশুও আছে তাই সহজে কেউই আসতে চায় না। রাত্রি তার কপাল কুচকে সেদিকে এগিয়ে যায়। আর যেতেই অবাক। কারণ এখানে আরো একটা লাশ। রাত্রি ভেবেছিলো যে এটাও লাশ। তাই রাত্রি দ্রুত সেদিকে এগিয়ে যায়। রাত্রি ভয়ে যেই না পুলিশ কে ডাক দিতে যাবে তখনই সে খেয়াল করে যে লোকটার হাত নড়ছে।

রাত্রি তার হাটু ভাজ করে বসে পরে, কান কিছুটা সেই ব্যাক্তিটির মুখের কাছে নেয়। শ্বাস চলছে। সেই আব্রাহাম ছিলো। রাত্রি তার হাতের পার্লস চেক করে দেখে সে জীবিত আছে। রাত্রি আব্রাহাম কে খেয়াল করে দেখে বেশ চেনা চেনা লাগছে। কোথাও তো দেখেছে৷ রাত্রি তখনই সেই খাদ থেকে আব্রাহাম কে নিয়ে আসে। আব্রাহাম কে বাসায় এনে রাত্রির পক্ষে যতটুকু সম্ভব সে তার সাধ্য মতো সব করে। আব্রাহামের যখন জ্ঞান ফিরে তখন সে সব বুঝতে পারে। আর রাত্রিও বুঝে যে এই আব্রাহাম। রাত্রির মারও কোন রকম কোন সমস্যা ছিলো না। তবে রাত্রি পরবর্তীতে এই ভেবে অবাক হয় যে এতো বড়ো একজন মানুষ এভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে তার আর পুলিশ রা টের অব্দি পেলো না। আশ্চর্য!!

রাত্রি অনেক ট্রাই করেছে পুলিশ কে ইনফর্ম করার কিন্তু প্রত্যেক বারই আব্রাহাম তাকে বাধা দিয়েছে, তাকে মানা করেছে। আর রাত্রি যেইদিন আব্রাহাম কে নিয়ে এসে পরে তারপরের দিনই পুলিশ রা সেই খাদে গিয়ে তদন্ত করে আব্রাহাম কে পাওয়ার জন্য। কিন্তু আব্রাহাম যখন সেখানে ছিলোই না তাহলে পাবে কোথা থেকে। কারণ তার আগেই রাত্রি আব্রাহাম কে নিয়ে এসে পরেছিলো। আব্রাহাম সুস্থ হয়ে যায় মোটামুটি, আর সে তো আর হাতে হাত রেখে বসে থাকবে না। আব্রাহাম বেশ কিছুদিন পর বাইরে বের হয়। উদ্দেশ্য ছিলো সব কাহিনীর মূল খুঁজে বের করা।

কিন্তু ততদিনে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী যে নিখোঁজ তা পাবলিক হয়ে গিয়েছিলো। আর সিচুয়েশন টা এমন ছিলো যে আব্রাহাম কারো সামনেও আসতে পারছিলো না। আব্রাহাম যেহেতু মাফিয়া তো তার বাইরের দেশেও কানেকশন ছিলো। সেখানেও আব্রাহাম অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু হাতে কিছুই আসে নি। অবশেষে আব্রাহাম জানতে পারে যে তাকে মৃত্য ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে। তাই কোন কিছুই আর বাকি নেই। এখন তো কারো সামনে যাওয়ার প্রশ্ন আরো আসে না। আব্রাহাম প্রতিদিন বাসায় বসে বসে তার মৃত্যুর খবর টিভিতে দেখতো। ব্যাপার টা হাস্যকর।

অনেকের সন্দেহও ছিলো যে আব্রাহামের এই মৃত্যু শুধুই সাধারণ নাকি এটা ছিলো মার্ডার? আর সেইদিন রাতে প্রীতি যেভাবে আব্রাহাম কে কথা গুলো বলেছিলো বা যা যা প্রুভ রেখেছিলো সেগুলো যে কেউ বিশ্বাস করবে। আব্রাহাম যে খুঁজে নি, বা তার পক্ষ থেকে কোন তালাশি করেন না তা নয়। সব করেছে সব, নিজের সাধ্য মতো সব করেছে। এমনও হয়েছে যে কালো হুডি পরে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে নিজের পুরো পরিচয় হাইড করে তারপর খুঁজেছে কিন্তু যে প্রমাণ গুলো পেয়েছে তার সবই আইরাতের বিপক্ষে ছিলো, সবই তার বিরুদ্ধে ছিলো। কিন্তু এতো কিছুতেও যেনো আব্রাহামের মন মানছিলো না। তার মস্তিষ্ক বলছিলো আইরাত ই তার খুনি কিন্তু মন বলছিলো তার বিপরীতে।

আইরাত যদি আব্রাহাম কে খুন করেই থাকে তাহলে এতোদিনের এই ভালোবাসা, এতো ওয়াদা, এতোকিছু সব কি মিথ্যে ছিলো তাহলে। মানুষ এতো নিখুত অভিনয় টা কি করে করতে পারে। আব্রাহাম দ্বিধায় ছিলো। সবকিছু ছিলো কিন্তু তবুও যেনো আব্রাহামের মন মানছিলো না আইরাতকে নিজের খুনি হিসেবে সাব্যস্ত করতে। একদিন আব্রাহাম শুনে যে তার অফিসের একটা অংশ নাকি নিলামে উঠেছে। আব্রাহাম নিজ হাতে, নিজ একার দক্ষতায়-যোগ্যতায় তার এই অফিস তার এই ডাক-নাম-পরিচয় সব বানিয়েছিলো। আব্রাহাম ভেবেছিলো হয়তো তার জীবন টা এভাবেই আস্তে আস্তে আরো বরবাদ হয়ে যাবে কিন্তু না। এভাবেই চলতে থাকে ধীরে ধীরে দিন যেতে থাকে। আব্রাহাম রাত্রি দের সাথেই ছিলো।

এদিকে রাত্রির মা আর রাত্রি জানতো যে আব্রাহাম কেমন পারসোনালিটির ব্যাক্তি। আর আব্রাহাম কিন্তু আইরাত আর তার ব্যাপারে রাত্রি কে কিছুই জানায় নি। থাকতে থাকতে রাত্রির সাথে আব্রাহামের বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আর সেই সুবাধেই তুই-তুকারি ডাকা। একদিন আব্রাহামের অফিসের ওনার কে এওয়ার্ড দেওয়া হয়। আব্রাহাম তখন কপাল কুচকায়। তবে পরে সব ক্লিয়ার হয়। আইরাত হাল ছাড়ে নি। সে নিজে সবকিছু হ্যান্ডেল করেছে। আর সেটাই ছিলো আইরাতের জীবনের প্রথম এওয়ার্ড। তবে তাতেও আব্রাহাম বেশ বিচলিত হয়।

কেননা আইরাতের এওয়ার্ড ফাংশনের একদিন আগেই আইরাতের আর কবিরের বিয়ের ফেইক খবর টা ঘোষণা করা হয়েচছিলো। এবার তো আইরাতের ওপর থেকে আব্রাহামের মন একদম উঠেই পরেছিলো। পুরো ভেঙে গিয়েছিলো আব্রাহাম যখন সে আইরাতের বিয়ের খবর শুনে। আইরাত কীভাবে পারলো আব্রাহাম কে ভুলে আরেক জন কে আবার বিয়ে করতে এটাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো তার মাথায়। আইরাত তো আরেকটা বিয়ে করে খুশিই থাকবে এই ভেবেই আব্রাহাম ছিলো। কিন্তু তার পরের দিনই আব্রাহাম তার অফিস থেকে আবার এওয়ার্ডের এনাউন্সমেন্ট শুনে।

পরবর্তীতে আব্রাহাম খোঁজ নিয়ে দেখে আইরাতের সেই বিয়ের খবর ভুয়া। ব্যাস সেইদিন রাতেই আব্রাহাম সীদ্ধান্ত নেই যে এভাবে কিছুই হবে না, কিচ্ছু না। সব নতুন করে আবার শুরু করতে হবে,, আব্রাহাম এবার তার লাইফের সেকেন্ড চয়েসটা প্রফেসন হিসেবে নেয়। যদিও এটা তার জীবনের ফার্স্ট চয়েস ছিলো একটা সময়। রকস্টার ? ?। আব্রাহাম নিজের পরিচয় একদম গোপন রাখে। তবে এক্ষেত্রে কিছু মানুষ তার কাজে আসে। অর্থাৎ যারা আব্রাহামের হয়ে ছোট খাটো কাজ করতো। তাদের দ্বারা নিজের সব পুরানা পরিচয় গোপন রেখে বাকি কাজ গুলো করে ফেলে।

এন্ড একচুয়ালি আব্রাহামের গানের গলা ভীষণ সুন্দর… তাই তাকে এই প্রফেশনে আসতে আর পাবলিসিটি পেতে বেশি একটা বেগ পেতে হয় নি। একদম চকোলেট বয় বলে কথা। আব্রাহাম যেখানে এই গ্ল্যামার ওয়াল্ডে গিয়েছে প্রায় দুই বছরের কাছাকাছি হবে সেখানে আব্রাহাম বলে দিয়েছে সাড়ে তিন বছর আর এটা বলার মানে হচ্ছে কেউ যেনো সন্দেহ না করে তাই। আব্রাহাম এই গ্ল্যামার ওয়াল্ডে যাওয়ার পর থেকে আইরাতের চর্চা আরো যেনো দ্বিগুণ হারে শুনতে পায়।
আর যখনই কেউ আইরাতের প্রশংসার পুল আব্রাহামের সামনে নিয়ে বসতো তখন আব্রাহাম এমন একটা ভাব ধরতো যেন সে তাকে চিনেই না। অবশেষে আব্রাহাম তনয়া কে আইরাতের কাছে পাঠায়। তনয়া আইরাতের সাথে কাজ করে বেশি দিন হবে না। প্রায় ৭-৮ মাস। এভাবেই আব্রাহামের দ্বিতীয় জার্নি টা শুরু হয়। একদম প্রথম বারেই ছক্কা মেরে দেয়। তার ফ্যান, ফলোয়ার”স, নাম-ডাক উঠে আরে আরেক দফা।

আব্রাহাম A-Z সব আইরাতকে খুলে বলে। আর সবকিছু শুনে আইরাত ধুপ করে বিছানার কিণারে বসে পরে।
আব্রাহাম;; আইরাত, তনয়া কোন বিজন্যাসের জন্য তোমার সাথে কাজ করে নি, তাকেও আমিই পাঠিয়েছিলাম।
আইরাত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাতের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আইরাত এক ঝটকায় আবার উঠে গিয়ে আব্রাহাম কে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারে। তাতে তো আব্রাহাম একবিন্দুও নড়ে না ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। আইরাত একদম আব্রাহামের কাছে গিয়ে রেগে বলে…..

আইরাত;; “” উপসংহারে যদি বিচ্ছেদই থেকে থাকে, তাহলে তার সূচনা টা এতো রঙিন কেনো? ??””
আব্রাহাম;; উপসংহার এখনো আসে নি আর না ই আসবে। আর আসলেও তা হাজারো রঙ দ্বারা রঙিন হবে।
আব্রাহাম আইরাতকে এখন কীভাবে শান্ত করাবে তা জানা নেই। তবে আইরাত অনেক হার্ট হয়েছে, যদিও আব্রাহামের ক্ষেত্রেও একই।
আব্রাহাম;; জানপাখি…..
আইরাত;; আপনি জানেন না আব্রাহাম আমি আপনাকে ছাড়া কি হালে থেকেছি। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। প্লিজ আমাকে আর ভুল বুঝবেন না।
আব্রাহাম;; আমি ভুল বুঝি নি তোমায়।

আইরাত;; আমি ভেঙে গিয়েছিলাম পুরো, আপনাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না। আমি নিজেকেও এতোটা ভালোবাসি না যতটা আপনাকে বাসি। আমি সবসময় দূরে থেকেছি ভালোবাসা নামক এই জিনিস থেকে। কারণ আমি এতে বিশ্বাস করতাম না। মানতাম না যে ভালোবাসা নামক জিনিস আসলেই আছে কি। কিন্তু আমার ধারণা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আমার জীবনে আপনি এলেন। ভালোবাসতে আমাকে আপনি শেখালেন আর সেই আপনিই কিনা এভাবে আমাকে ছেড়ে দূরে চলে গেলেন।

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে এসে তার দুই হাতে আইরাতের গালে ধরে।
আব্রাহাম;; আমি আছি। ছিলাম আর সবসময় থাকবো।
আইরাত এবার হুহু করে জোরে শব্দ করেই কেদে দেয়। কেদে কেদে নিচে বসে পরে। আব্রাহাম তাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। আইরাত প্রথমে আব্রাহাম কে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে চায় রাগে কিন্তু আব্রাহাম যেনো আইরাতকে নিজের সাথে আরো শক্ত করে চেপে ধরে রাখে। একটা সময় আইরাত হাপিয়ে যায়। তারপর গা এলিয়ে দিয়ে সেখানেই বসে থাকে। চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে গেছে কান্না করতে করতে।

সেখানে আইরাত বেশ কিছুক্ষণ থেকে আব্রাহাম কে এক ঝটকায় নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে এসে পরে। আব্রাহাম আইরাতের নাম ধরে ডাকে কিন্তু আইরাত থামে না। সে একদম বাইরে এসে পরে। বাইরে এসে দেখে আইরাতের ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যাক ভালোই হলো, আইরাত গিয়ে সোজা গাড়িতে উঠে চলে আসে আর আব্রাহাম কোমড়ে দুইহাত রেখে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। অভিমানের পাহাড় জমে রয়েছে তা আব্রাহাম বেশ ভালোই বুঝতে পারছে। কিন্তু এভাবে থাকলে তো আর চলবে না রাগ ভাঙাতে হবে।

আর তার জন্য আব্রাহাম কে আবার আগের ফর্মে ফিরে আসতে হবে। এটা ভেবেই আব্রাহাম এক ক্ষীণ দম ত্যাগ করে। তরপর আব্রাহাম নিজেও তার ওই ফ্ল্যাট থেকে এসে পরে। আব্রাহাম হয়তো তার এই বাড়ি তেও বেশি একটা দিন আর থাকবে না। অর্থাৎ যেই বাড়ির সাথে রাত্রি রা থাকে আর কি। আব্রাহাম গিয়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। নিজের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে শার্টের হাতাগুলো গুটিয়ে নেয়। তখন আব্রাহামের রুমের দরজাতে রাত্রি কড়া নাড়ে।

আব্রাহাম;; কিরে রাত্রি বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো আরে ভেতরে আয়।
রাত্রি;; আজ তোকে অনেক খুশি খুশি লাগছে যে!! ঘটনা কি হুম হুম?
আব্রাহাম রাত্রি কে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে সে তার সামনে বসে পরে।
আব্রাহাম;; দেখ অনেক কিছুই আমি তোকে বলি নি। আমার ব্যাপারেই। আমার পারসোনাল লাইফের ব্যাপারে। আমি ম্যারিড রাত্রি, সেইদিন যে মেয়েটা এসেছিলো। সে আইরাত, আমার বউ। ওকে তো চিনিসই। ওর জন্যই আমার এতো কিছু করা। আর আমার এই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী থেকে আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল হওয়ার কাহিনী তো তুই জানিস ই। অর্নীল শুধুই একটা ছদ্মনাম। আমি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আর ও মিসেস চৌধুরী।

রাত্রি;; আরে হ্যাঁ আমি, আম আমি জা জানি। আমার সেইদিনই সন্দেহ হয়েছিলো তোর ওপরে। আর ঠিকই আছে। তোর বউ তোর থেকেও বেশি সুন্দর। আর তুই যে রাফ & টাফ মুন্ডা তাতে আইরাত তোর বউ হিসেবে একদমই পারফেক্ট, এক্কেবারে মানানসই।
আব্রাহাম;; আর তুই ফ্রেন্ড হিসেবে।
রাত্রি আর আব্রাহাম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে তারপর রাত্রি নিজেই বলে ওঠে…..
রাত্রি;; চলে যাবি কি এখান থেকে??
আব্রাহাম;; হ্যাঁ রে যেতেই হবে, সেখানে সব ঠিক করতে হবে। আমি আইরাতকে ছাড়া পারবো না থাকতে। ওকে আমার লাগবে। সেখানে সব আগের মতো করে নিতে হবে। আমি করবো।
রাত্রি;; ?

আব্রাহাম;; আচ্ছা তুই একজন ডক্টর,, রাত জেগে থাকার সাইড ইফেক্ট”স গুলো অবশ্যই বেশ ভালো করেই জানিস। তাহলে ইদানীং কেনো এতো রাত অব্দি জেগে থাকিস বল তো। যা গিয়ে ঘুমা।
রাত্রি;; না মানে তুই আসতে দেরি করছিলি তো তাই।
আব্রাহাম;; এখন তো এসে গেছি তাই না, এবার তুই যা গিয়ে ঘুমা।
রাত্রি;; গুড নাইট।
আব্রাহাম;; গুড নাইট উইথ সুইট ড্রিম”স।
রাত্রি সেখান থেকে এসে পরে। নিজের রুমে গিয়ে দেখে তার মা বসে আছে। এতো রাতে রাত্রি তার মাকে তার রুমে দেখে অবাক।

রাত্রি;; মা তুমি? ঘুমাও নি?
লাবণী;; এদিকে আয়।
রাত্রি তার মায়ের কাছে চলে যায়। সোজা তার মায়ের কোলে মাথা রেখে দিয়ে শুয়ে পরে।
লাবণী;; রাত্রি রে একটা কথা বলবি?
রাত্রি;; হ্যাঁ বলো না কি কথা!!
লাবণী;; তুই আব্রাহাম কে পছন্দ করিস তাই না?

রাত্রি;; আব্রাহাম পাগলের মতো করে আইরাতকে ভালোবাসে। যেনো আব্রাহামের জীবন টা আইরাতের মাঝেই রয়েছে। ও নিজের জান দেখে আইরাতকে। এদের এত্তো ভালোবাসার মাঝে সেখানে আমার একতরফা ভালোবাসাটা একেবারেই ঠুনকো মা। আমি কখনো বলবোও না আব্রাহাম কে যে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম৷ এমনকি এখনো বাসিই।
লাবণী;; শোন একতরফা জিনিস টা খুব বেশিই খারাপ। সেটা বন্ধুত্বই হোক বা ভালোবাসা।

রাত্রি;; মা মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না,, ঘুম দরকার আমার।
লাবনী রাত্রির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর রাত্রি ঘুমিয়ে পরে।
ওদিকে আইরাত সোজা নিজের বাড়িতে গিয়ে কাউকে কিছু না বলেই রুমে চলে যায়। কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু আব্রাহামের তো ঘুম নেই। আইরাতকে ফোনের ওপরে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু সুইচ অফ দেখাচ্ছে। আব্রাহাম বুঝলো যে এভাবে কাজ হবে না। আবার উল্টো পথ বেছে নিতে হবে।

আব্রাহাম;; বাঘীনি রেগে গেলে শুধু বাঘ কেনো বাঘের পুরো চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলবে। এমনিতেই ব্যাপার হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। আর যেতে দেওয়া যাবে না তার আগেই আইরাতকে সামলাতে হবে।
শুরু হয়ে গেলো আবার আগের কাহিনি। আগামীকাল থেকে আব্রাহামের সাইকোগিরি আবার শুরু।

পরেরদিন সকাল হতে না হতেই আব্রাহাম বের হয়ে পরে গাড়ি নিয়ে সোজা আইরাতের বাসার উদ্দেশ্যে। আব্রাহাম বাড়ির বাইরে গাড়ি থামায় গার্ড রা গেট খুলে দিলে তারপর ভেতরে চলে যায়। তবে কেনো যেনো আব্রাহামের একটু অস্থির অস্থির লাগছে। এক্সিডেন্টের পর সে এই প্রথম আবার নিজের বাসায় যাচ্ছে। আব্রাহামের দাদি তো অবশ্যই ভেতরে আছে না জানি আব্রাহাম কে দেখে কেমন রিয়েকশন দেয়। যাই হোক আব্রাহাম সব চিন্তা বাদ দিয়ে বাড়ির একদম ভেতরে চলে যায়। আর আব্রাহামের যেতেই ইলার সাথে তার একদম মুখোমুখি হয়ে যায়।

ইলা তো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক লাগা নয়নে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। ইলার হাতে মেডিসিনের বক্স ছিলো তা ধিরিম করে হাত থেকে নিচে পরে যায়। ইলা হুহু করে কেদে দিয়ে ছুটে আব্রাহামের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামের কপালে গালে হাজারো চুমু দিচ্ছে আর তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আব্রাহাম নিজেও কিছুটা ঝুকে তার দাদিকে জড়িয়ে ধরে আছে।

আসলে দাদি-নানিরা হয় ই এমন। তাদের কাছে যেনো তাদের সন্তানের থেকেও তাদের নাতি-নাতনীদের কদর টা অনেক বড়ো। তাদের ওপর দাদি-নানি দের একটা আলাদা টান থাকে, একটা আলাদা মায়া থাকে। এমনও আছে যে নিজের পেটের সন্তান দেখতে না পারলেও একমাত্র তাদের নাতি-নাতনীদের জন্য বারবার ছুটে আসে তারা। বেড়াতে এসে বা চলে যাবার সময় ওইযে হাতে ১০০ বা ৫০০ টাকার নোট গুজে দিয়ে বলা

“” এটা আমি তোকে দিলাম, তোর মা কে বলিস না যেনো””। মাঝে মাঝেই মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে দাদি-নানির পানের বাটা থেকে পান চুরি করে খাওয়া, একসাথে ঘুড়তে যাওয়া আরো কত্তো কি। এগুলো যেনো দাদি-নানিদের আদরের এক অন্যতম অংশ। ইলা আব্রাহাম কে বেশ সময় জড়িয়ে ধরে। তবে আব্রাহাম বুঝলো যে বেশি কান্না কাটি করলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে তাই আব্রাহাম ইলা কে আস্তে করে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে দেয়। আব্রাহাম ইলার বয়সের চাপে কুচকে যাওয়া চামড়াময় হাত গুলো নিয়ে তাতে চুমু একে দেয়।

ইলা;; কোথায় ছিলি এতো গুলো দিন সোনা? জানিস কত্তো খুঁজেছি তোকে? কতো কেদেছি। নামাজে বসে কতোই না আল্লাহ”র কাছে দোয়া করেছি তোর জন্য। আমি জানতাম যে তুই একদিন না একদিন আমার কাছে আসবিই। (আব্রাহামের মাথা হাতিয়ে দিতে দিতে)
আব্রাহাম;; এসে গেছি তো।
ইলা;; আমি যেমন-তেমন আইরাত টা তো মরেই গেছিলো। তোর ভাগ্য যে আইরাতের মতো মেয়ে কে জীবনে পেয়েছিস।
আব্রাহাম;; আর ওর ভাগ্য যে ও আমার মতো জামাই পেয়েছে।

ইলা কান্না অবস্থাতেই ফিক করে হেসে দেয়। তখনই আব্রাহাম খেয়াল করে যে দরজার এক কিণারে রনিত হাতে একটা পুতুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কেমন এক মায়া মায়া ভাব। আব্রাহামের হঠাৎ নিজের ছোটবেলার কথা মনে পরে গেলো। সেও ঠিক এভাবেই দরজার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে তার বাবার দ্বিতীয় সুখী সংসার দেখেছে কিন্তু সেইদিন কেউ তাকে কাছে টেনে নেওয়ার মতো ছিলো না। আব্রাহাম হেটে গিয়ে রনিতের কিছুটা কাছে চলে যায়। তারপর নিচে এক হাটু ভাজ করে রনিতের দিকে তার দুই হাত কিছুটা মেলে ধরে। রনিত একগাল হেসে দিয়ে দৌড়ে আব্রাহামের কাছে এসে পরে। আব্রাহামও তাকে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নেয়। কষে গালে একটা চুমু একে দেয়।

আব্রাহাম;; বাব্বাহ, কিরে ব্যাটা বড়ো হয়ে গেছিস তো!!
রনিত;; তোমার মতো তো হই নি।
আব্রাহাম;; আরে না রে ভাই আমার মতো হোস না জীবন শেষ। আর তার ওপর যদি তোর বোনের ক্যাটাগরির মেয়ে কপালে পরে তাহলে নেও ঠ্যালা। কথাই নাই।
রনিত;; হিহিহিহিহিহিহিহি।
আব্রাহাম;; দাঁত গুলো শেষ করেছিস চকোলেট খেতে খেতে। ক্যাবিটি”স।
রনিত;; আচ্ছা শুনো…
আব্রাহাম;; হুমম
রনিত;; তুমি কি আবার চলে যাবে?
আব্রাহাম;; না তো,, একদম না।
রনিত;; ?

এভাবেই সময় টুকু যায়। না রনিত আর না ই ইলা কেউ যেনো আব্রাহাম কে ছাড়ার নাম অব্দি নিচ্ছে না। আব্রাহাম সারা বাড়ি তে চোখ বুলাচ্ছে। কিন্তু যাকে খুঁজছে তাকে কোথাও পাচ্ছে না।
ইলা;; বউ কে খুঁজছিস বুঝি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, কই বউ কই আমার?
ইলা;; ওরে ছেলে ?।
আব্রাহাম;; এখন তো অনেক সকাল, আইরাত ঘুমাচ্ছে নাকি?
ইলা;; না, আইরাত বাসায় নেই।
আব্রাহাম;; মানে?
ইলা;; ও জিমে গিয়েছে। সাথে তনয়াও হয়তো আছে। আমাকে শুধু “দাদি যাই” এই কথা বলেই হাতে ওয়াটার পট টা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা।
ইলা;; এখন কি…….

আব্রাহাম;; আমিও যাবো মানে জিম করতে না তবে ওর কাছে।
ইলা;; আইরাত এসে পরবে তো, আর বেশি সময় হয়তো থাকবে না।
আব্রাহাম;; তবুও যাই।
ইলা;; আচ্ছা।
আব্রাহাম বাড়ি থেকে আবার বের হয়ে পরে।
অন্যদিকে আইরাত মুখে এক কঠোর ভাব এনে ট্রেডমিলের ওপর দৌড়িয়ে যাচ্ছে। কপালের সাইডে, বুক দিয়ে, ঘাড়, পিঠ দিয়ে ঘাম ঝড়ে যাচ্ছে। বেশ হাপিয়ে গিয়েছে সে কিন্তু তবুও তার থামার নাম নেই। জোরে জোরে দম নিচ্ছে এক প্রকার ফুসছে তবুও দৌড়িয়েই যাচ্ছে। তনয়া আইরাতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে তার দুইহাত ভাজ করে অবাক চোখে আইরাতের কাছে এসে পরে। আইরাতের তাতেও যেনো ভ্রক্ষেপ নেই। সে আনমনে সামনে তাকিয়ে দৌড়িয়েই যাচ্ছে। এবার তনয়া নিজেই আইরাতের ট্রেডমিলের স্পীড টা কমিয়ে দিলো। আইরাতের দৌড়ের বেগ আস্তে আস্তে কমে আসে। এবার আইরাত হাটছে।

তনয়া;; আচ্ছা কি হয়েছে? রাগ?
আইরাত;; মোটেও না।
তনয়া;; তাহলে এতো স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে এমন করছিস যে?
আইরাত;; কেনো মানুষ দৌডায় না দ্রুত গতিতে?
তনয়া;; দৌড়ায় কিন্তু তোকে দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছিস।
আইরাত;; নাহ, রেগে নেই আমি। সত্যি বলতে আমি খুশি জানিস। তবে হ্যাঁ একজনের ওপর রেগে আছি ভীষণ।
তনয়া;; কে?
আইরাত;; তোর ওপরে।
তনয়া;; ওমা কেনো আমি কি করলাম আবার?

আইরাত ট্রেডমিলের ওপর থেকে নেমে পরে। তনয়ার পিঠে দুই-একটা মেরে দিয়ে বলে ওঠে….
আইরাত;; হারামি তুই আব্রাহামের সাথে ছিলি তাও আমাকে বলিস নি।
তনয়া;; ওহহ এই কথা। আরে স্যার যে স্ট্রিক্ট মানুষ জানিসও তো। আমি যদি তোকে বলে দিলাম তাহলে স্যার হয়তো আমাকেই শুট করে দিতো। কীভাবে বলতাম বল।
আইরাত;; হুম তোর সিচুয়েশনও বুঝি।

আইরাত তার হাতে একটা ছোট টাওয়াল নিয়ে ঘাড় গলা মুছতে থাকে। এশ & ব্লেক কালারের একটা জিম আউটফিট পরে এসেছিলো আইরাত। ঘামে তার আউটফিটের এশ কালারের অংশ টাও যেনো ব্লেক হয়ে গেছে।
আইরাত;; গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। এই পানি দে।
আইরাত আর তনয়া কথা বলছিলো তখনই একটা ছেলে আসে। একচুয়ালি জিমের ট্রেইনার। কিন্তু আইরাত ওকে দুচোক্ষে দেখতে পারে না। আইরাত যতটা দূরে দূরে থাকে এই ছেলের থেকে এই ছেলে তত আইরাতের সাথে মিশতে চায়।

আদিব;; হেই আইরাত!
আইরাত;; হুয়াট?
আদিব;; অনেক দৌড়িয়েছো মনে হচ্ছে। ক্লান্ত নিশ্চয়ই।
আইরাত;; Mind your own business..
আদিব;; বাই দি ওয়ে আজকে তোমার মুখ টা অনেক মলিন লাগছে।
আইরাত;; মিষ্টি কুমড়া খেয়ে এসেছি তো তাই মলিন লাগছে ?।
আদিব;; হুয়াট এ জোক আইরাত।
আইরাত;; গাধা।

আইরাত এগুলোই বলছিলো তখনই আব্রাহাম আসে। একদম ব্লেক কালার প্যান্ট পরে, জেকেট টেকেট পরে। চোখে চশমা দিয়ে। বেশ অনেক মেয়েই জিম করছিলো। কেউ কেউ হাতে ভারি বস্তু নিয়ে আপ-ডাউন করছে। আব্রাহাম যখন ভেতরে আসে তখন সবাই তাকিয়ে ছিলো। একটা মেয়ের হাত থেকে তো সোজা ভারি ডাম্বেল টা নিচে পরে যায় আব্রাহাম কে দেখতে গিয়ে। তবে আব্রাহাম এসেই দেখে আদিব আইরাতের সাথে ফ্লার্ট করার ট্রাই করছে। তনয়া দেখে আব্রাহাম দুই হাত ভাজ করে সরু চোখে তাকিয়ে আছে। একবার আব্রাহাম রেগে গেলে শেষ। তনয়া আইরাত কে ইশারা করে। আইরাত সেখান থেকে চলে আসে বিরক্তি একটা ভাব নিয়ে।

আদিব;; যাহ বাবা চলে গেলো?
আব্রাহাম;; না না সে তো তোমার কাছে থাকার জন্য এখানে এসেছে তাই না।
আদিব পেছন ঘুড়ে তাকায়।
আদিব;; আব..আব আব্রাহাম স্যার আপনি?
আব্রাহাম;; বউ হয় আমার। just stay away from her,, do you get that?!
আদিব;; জ জ্বি।
আদিব দ্রুত চলে যায়। এবার আব্রাহাম আইরাতের কাছে যায়। আইরাতের বাহু ধরে দেয় এক টান। আইরাত পানি খাচ্ছিলো এভাবে টান দেওয়াতে পানি পরে যায়।
আইরাত;; হুয়াট দা হেল!
আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে চেপে নিজের বেশ কাছে এনে রেগে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; কসম লাগে খোদার যদি কোন পোলা তোর দিকে তাকায় আমি ওর জান নিয়ে নিমু। (রাগে লাল হয়ে)
আইরাত;; তো যান নিন জান। আপনার দিকে যে এতো মেয়েরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো আমি কি কিছু বলেছি নাকি।

আব্রাহাম;; কিন্তু আমি তো তোমার দিকে তাকাই শুধু।
আইরাত;; তো আমিও তো আপনার দিকে শু…….
আব্রাহাম;; হা?? কি কি? আবার, আবার বলো।
আইরাত;; না মানে!!
আব্রাহাম;; হুম হুম কি কি? বলো, কি?
আইরাত;; আমাকে কথার ফাদে ফেলা বন্ধ করুন।
আব্রাহাম;; হাহাহাহাহা,, চলো!
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; জিমে কি সারাদিন থাকবে নাকি। টাইম”স আপ। চলো।

আইরাত নিজের ওপরে জেকেট টা জড়িয়ে নেয়। তারপর আব্রাহামের সাথে গাড়িতে করে চলে যায়। তবে আব্রাহাম আইরাতকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে সে নিজে তার বাড়িতে চলে যায় যেখানে রাত্রি রাও থাকে। আজ হয়তো আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসবে। আব্রাহাম সেখানে গিয়ে নিজের সব প্যাকিং শুরু করে দেয়। ঘন্টা খানিক পর আব্রাহাম তার রুম থেকে বের হয়ে হলরুমে আসে। রাত্রির মা লাবণীর সাথে আব্রাহাম অনেক কথা বলে। একটা সময় আব্রাহাম বাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে রাত্রি অনেক বেশি চুপচাপ। আব্রাহাম তার গার্ড কে দিয়ে নিজের সব লাগেজগুলো গাড়ির ডিকি তে তুলে ফেলে। তারপর সে নিজেই রাত্রির দিকে এগিয়ে আসে৷

আব্রাহাম;; রাত্রি!!
রাত্রি ডাক শুনে বাড়ির গেটের পাশে এসে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; মন খারাপ?
রাত্রি;; একদম না।
আব্রাহাম;; আমাকে মিস করবি তুই?
রাত্রি;; একদম না।
আব্রাহাম;; সত্যি?
আব্রাহাম রাত্রির দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো সেই চোখে যে কেউ তাকালেই মায়ায় পরে যাবে।
আব্রাহাম;; রাত্রি!!
রাত্রি তার চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়৷
রাত্রি;; অনেক মিস করবো।
আব্রাহাম;; শোন…
রাত্রি;; হুমম।

আব্রাহাম রাত্রির দিকে কয়েক কদম এগিয়ে আসে৷
আব্রাহাম;; আমার থেকে হাজার গুণে ভালো ছেলে পাবি তুই। যে তোকে ভালোবাসবে আর আগলেও রাখবে।
রাত্রি অবাক হয়ে আব্রহামের দিকে তাকায়।
রাত্রি;; না মানে আম……
আব্রাহাম;; আমি জানি সবই,, একজনের মন কখন, কীভাবে আরেকজনের ওপর এসে পরে তা জানা নেই কারোরই। আর আমি সত্যি বলতে এতো টাও ভালো একজন না। দেখিস তুই তোর লাইফে এমন একজন কে পাবি যে কিনা তোকে নিজের নয়নের মনি বানিয়ে রাখবে। তোকে অনেক ভালোবাসবে আর তুইও।

রাত্রি;; হুমম। এখানে মাঝে মাঝে আসবি তো?
আব্রাহাম;; অবশ্যই।
রাত্রি;; আইরাত কে নিয়ে আসিস,, আমার জাস্ট এক কথায় ওকে অনেক ভালো লাগে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি বুঝি মাসে কয়দিন হয় আর বছরে কয়দিন।
রাত্রি;; হাহাহা, ওই ই তোর জন্য ঠিক আছে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা আমি যাই,, তুই নিজের খেয়াল রাখিস আর আন্টিকেও দেখে রাখবি। আর হ্যাঁ যাই হোক, যে কোন সময় ই হোক যা কিছুই হোক না কেনো সবার আগে আমাকে ডাকবি ওকে। কোন প্রব্লেম হলে আমাকে আগে ডাকবি।
রাত্রি;; অবশ্যই, তোকে জ্বালানো ছাড়ছি না।
আব্রাহাম;; আমি যাই।
রাত্রি;; যাই বলতে নেই বল আমি আসি।
আব্রাহাম;; ?। আমি আসি, আল্লাহ হাফেজ।
রাত্রি;; আল্লাহ হাফেজ।

আব্রাহাম রাত্রির দিকে এক নজর তাকিয়ে এসে পরে। রাত্রিও আব্রাহাম চলে গেলে বাড়ির ভেতরে এসে পরে। বেশ কিছু সময় পর আব্রাহাম তার নিজ বাড়িতে এসে পরে। গাড়িতে যা কিছুই ছিলো সব গার্ড রা ভেতরে নিয়ে এসেছে। এখন সব ঠিক, সবকিছু একদম আগের মতো। আব্রাহাম-আইরাত, দাদি আর রনিত। একটা ছোট্ট হ্যাপি ফ্যামিলি। আব্রাহাম সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। তবে রুমে গিয়ে আব্রাহাম অবাক। একটা সুতো অব্দি নড়েনি রুমের।

বেশ বছর আগেও যেমন ছিলো এখনো ঠিক তাই। শুধু রুমের দেওয়াল গুলোতে আব্রাহাম-আইরাতের আরো বেশ কিছু ছবি যুক্ত হয়েছে। আব্রাহামের চোখে আইরাতের একটা ছবি বাধে। সেখানে শুধু আইরাত একাই দাঁড়িয়ে আছে। লাল-সাদা কালারের হাজারো বেলুনের মাঝে আইরাত একটা সাদা গোল জামা পরে দুই হাতে দুইটা বেলুন নিয়ে একগাল হেসে বসে আছে। আব্রাহাম দেওয়ালে এক হাত রেখে আইরাতের সেই ছবিটার দিকে ঝুকে পরে কিছুটা। ডান হাত দিয়ে ছবিতে থাকা আইরাতের ওপর হাত বুলিয়ে দেয়। তখনই ওয়াসরুম থেকে শাওয়ারের আওয়াজ আসে। অর্থাৎ ঝড়ে যাওয়া পানির শব্দ। আব্রাহাম তার ঘাড় ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকায়। সে বুঝলো যে আইরাত ওয়াসরুমে।

আইরাত;; Main jalti raatein teri tu woh subah jo bhuja dee,, Bheegh loon bheegh loon ajj main teri baarish main bheegh loon…..
আইরাতের এমন গান শুনে আব্রাহাম ফিক করে এসে দেয়। সে ভালোই বুঝলো সে আইরাত বেশ খাঁটি একজন বাথরুম সিংগার। তার প্রায় আধা ঘন্টা পর আইরাত ওয়াসরুম থেকে বাইরে বের হয়ে পরে। তাও তারর হাটু অব্দি সাদা টাওয়াল পেচিয়ে। আইরাত গুনগুন করে গান গেয়ে যাচ্ছে তো গেয়েই যাচ্ছে। অন্য দিকে খেয়াল নেই তার। আইরাত তার ভেজা পায়ে রুমের ভেতরে এসে মাথা থেকেও টাওয়াল টা খুলে নেয়। ভেজা চুল গুলো পিঠের ওপর ছড়িয়ে পরে। গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন আইরাত খেয়াল করে যে বিছানার ওপর আব্রাহাম তার দুইহাত ভাজ করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত আয়নাতে আব্রাহাম কে দেখেই দেয় এক চিল্লানি।

আইরাত;; আম্মুহহহহহহহহহ..৷
আইরাত ঠাস করে আবার ওয়াসরুমের ভেতরে চলে যায়। এদিকে আব্রাহাম শুধু আইরাতের কান্ড দেখছে। পরিস্থিতি একদম নীরব, চুপচাপ। কয়েক মিনিট পর আইরাত তার ওয়াসরুমের দরজা হাল্কা খুলে এক চোখ বের করে রুমে তাকায়। আব্রাহাম নেই। আইরাত অবাক হয়। আব্রাহাম কি তাহলে চলে গেলো নাকি। আইরাত এবার দরজা বেশ টুকু খুলে মাথা বের করে সারা রুমে চোখ বুলাচ্ছে আর তখনই আব্রাহাম হুট করেই সামনে এসে পরে। এতে আইরাত পুরো চমকে যায়। আইরাত দরজা লাগাতে যাবে কিন্তু আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে ওয়াস রমের দরজা আটকে দেয়।

আইরাত যেখানে নিজের দুই হাত আর বডি দিয়ে দরজা লাগানোর চেষ্টা করছে সেখানে শুধু আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে আটকে রেখে দিয়েছে। তবে আব্রাহাম এক প্রকার ঠেলেই ওয়াসরুমের ভেতরে ঢুকে পরে। আইরাত তো ঠোঁট উল্টিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আব্রাহাম এক পা এক পা করে আইরাতের দিকে এগোচ্ছে। আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে যতটা পেছায় আব্রাহাম আইরাতের দিকে ঠিক তার দ্বিগুণ ভাবে আগায়। একটা সময় পেছাতে পেছাতে আইরাতের পিঠ দেওয়ালের সাথে ঠেকে যায়। আব্রাহাম আইরাতের কোমড়ে ধরে নিজের দিকে এক হেচকা টান দেয়।

এতে আইরাত এসে সোজা আব্রাহামের বুকের ওপর পরে। আব্রাহাম আইরাতকে দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে ধরে তার দিকে বেশ ঝুকে যায়। আইরাতের ভেজা ভেজা চুলগুলো তার গালে, ঠোঁটে আর কিছুটা কপালে লেগে রয়েছে। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে সেগুলো আলতো করে সরিয়ে দেয়। আইরাত তার মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। তার জন্য পরিস্থিতি টা সামলানো বেশ কষ্টসাধ্য। আব্রাহাম খেয়াল করে দেখে আইরাতের ফর্সা ঘাড়ে বিন্দু বিন্দু পানি জমে রয়েছে। আর তার ঠিক মাঝ বরাবর জায়গায় একটা কালো তিল ফুটে রয়েছে। আব্রাহাম সাথে সাথে আইরাতের ঘাড়ে নিজের মুখ ডুবায়।
আব্রাহামের বডির সাথে এভাবে লেগে গিয়ে আইরাতের যেনো একটা ঝটকাই লাগলো৷ চেয়েও সে আব্রাহাম কে দূরে সরাতে পারছে না। আইরাতের শ্বাস ভারি হয়ে এসেছে। আব্রাহাম আইরাতের চুলের একদফা ঘ্রাণ নিয়ে মাথা তুলে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত আধো আধো চোখে তাকিয়ে আছে আর এগুলো যেনো আব্রাহাম কে মেরেই ফেলছে। সামলানো বড্ড দায় তার পক্ষে৷ আইরাতের বুকের টাওয়াল টা কিছুটা ঢিলা হয়ে এসেছে।

তাই সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁট গুলো আকড়ে ধরে নিজের করে নেয়। আইরাত তার চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকায়। কিন্তু আব্রাহাম তো আব্রাহামই। সে তার বাম হাত দেওয়ালের ওপরে রেখে ডান হাত দিয়ে আইরাতের দুই হাত পেছনে আটকিয়ে ধরে আইরাতে মগ্ন। কতোক্ষন আইরাতকে এভাবে সে ধরে রেখেছিলো তার ধারণা নেই। আব্রাহাম আইরাতকে ছেড়ে দেয়। আব্রাহাম অপলহীন ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে আর আইরাত মাথা নামিয়ে রেখেছে। আইরাত খেয়াল করলো যে তার গায়ের টাওয়াল টা আরো ঢিলা হয়ে এসেছে তাই আইরাত তার বুকের দিকটায় হাত দিয়ে খামছে ধরে। আব্রাহাম আইরাতের গালে টুক করে একটা চুমু একে দেয়। আইরাত আর এভাবে থাকতে না পেরে বলেই দিলো……

আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ থামুন, আমার চেঞ্জ করতে হবে।
আব্রাহাম আইরাতের অবস্থা খেয়াল করে,, আব্রাহামের শার্ট টা আইরাতের গায়ের পানি দিয়ে বেশ ভিজে গেছে। অবশেষে আইরাতের কপালে একটা গাঢ় চুমু খেয়ে আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দেয়। আর ছাড়া পেয়েই আইরাত ছুটে চলে যায় চেঞ্জিং রুমে।

আব্রাহাম নিজেও চেঞ্জ করে নিচে ড্রোইং রুমে এসে পরে। সেখানে ইলা রনিত সবাই বসে আছে। আব্রহামও বসে বসে কথা বলছে আর খাচ্ছে। তখনই ওপর থেকে সিড়ি বেয়ে আইরাত নিচে নামে। সবাই আইরাতের দিকে তাকায়। ইলা তো বেশ অবাক। আইরাত ওইযে আগের মতো করেই নেভিব্লু কালারের একটা গোল জামা পরে এসেছে। আইরাত নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে বসে পরে। সবাই আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে আইরাত মুচকি হেসে বলে ওঠে….

আইরাত;; কি সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? দেখতে খারাপ লাগছে নাকি?
ইলা;; কত্তোদিন পর তোকে এভাবে দেখলাম। প্রচন্ড রকমের মিষ্টি লাগছে দেখতে।
আইরাত;; ??
ইলা;; অনেক সুন্দর লাগছে ?।
আইরাত;; থাংকু।

আইরাত খেতে বসে কিন্তু তখনই আব্রাহামের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আটে। টেবিলের নিচ দিয়ে আইরাতের পায়ে সুরসুরি কাটতে শুরু করে দেয় সে। এতে আইরাত বিষম খায়। রাগি চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায় কিন্তু আব্রাহাম আইরাতকে উল্টো চোখ মেরে দেয়। আইরাত এখন না পারছে হাসতে আর না পারছে খেতে। কি আর করার এভাবেই চলতে থাকে সময় টা।
আব্রাহাম মখমলে বিছানার ওপর একটা হুয়াইট কালারের স্লিভল্যাস টি-শার্ট পরে ঘুমিয়ে আছে। একদম গভীর ঘুম। চুল গুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে। তখন আইরাত আসে রুমে।

এসেই দেখে বাইরে থেকে ভেতরের পর্দা ভেদ করেই রোদ এসে রুমে আছড়ে পরছে। সেদিকে খেয়াল নেই আব্রাহাম পরে পরে ঘুমোচ্ছে। আইরাত গিয়ে বড়ো বড়ো পর্দা গুলো সরিয়ে দেয়। এবার যেনো রোদের প্রখর উষ্ণতা এসে সোজা আব্রাহামের মুখের ওপর পরে। এতে আব্রাহাম তার মুখ টা কুচকে ফেলে। আইরাত গিয়ে আব্রাহামের পেছনে দুইভাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহামের দিকে উঁকি ঝুকি দিচ্ছে। আইরাত এভাবেই উঁকি দিচ্ছিলো তখন আচমকাই আব্রাহাম আইরাতের দিকে ঘুড়ে তার কোমড়ে ধরে দেয় এক টান। এতে আইরাত ধিরিম করে আব্রাহামের ওপর পরে যায়।

আইরাত;; ওও মা, আমার কোমড় টা শেষ।
আব্রাহাম;; হুমম কোথায় দেখি আমি একটু কোমড়ে মালিশ করে দেই।
আইরাত;; এই না না হয়েছে থাক।
আব্রাহাম;; লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখা হচ্ছিলো!
আইরাত;; আমি আপনাকে লুকিয়ে দেখতে যাবো কেনো। না মানে সামনে এসেও তো দেখা যাবে তাই না লুকিয়ে দেখবো কেনো?

আব্রাহাম;; হুমম। এখন আমার একটা জিনিস দরকার।
আইরাত;; কোন জিনিস না আব্রাহাম,, উঠুন ফ্রেশ হোন। আমাকে অফিসে যেতে হবে আর আপনার আজ মিডিয়ার সাথে ইন্টারভিউ আছে। দ্রুত উঠুন আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; অফিস আর ইন্টারভিউ কে গুল্লি মারি। ঘোড়ার ডিম দিলে তো মুড টার বারো টা বাজিয়ে। এখন তো আমার জিনিস টা লাগবেই।
আইরাত;; আচ্ছা কি লাগবে বলুন।
আব্রাহাম;; Now i wanna morning kiss..
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; জ্বি।

আইরাত;; না মানে, আচ্ছা উঠুন আপনি পরে এগুলো দেওয়া-নেওয়া যাবে তো।
আব্রাহাম;; এই চুপ,,, তরে এখনই দিতে বলছি তুই এখনই দিবি।
আইরাত;; ধমক দেওয়ার কি আছে ?
আব্রাহাম;; কথা শুনলে কি আর ধমক দিতে হয়। বেবিগার্ল জলদি কিসসি দাও তো।
আইরাত আর না পেরে আব্রাহামের গালে চুমু দিতে দেয়। আইরাতের দেওয়াতে যেনো আব্রাহামের পেট ভরে নি তাই আব্রাহাম উলটে গিয়ে আইরাতকে কে তার নিচে ফেলে দেয়। তারপর আইরাতের গালে, কপালে, গলায় ইচ্ছে মতো চুমু দিতে থাকে। আর এদিকে আইরাতের হাসতে হাসতে পেটে ব্যাথা হওয়ার মতো অবস্থা।

আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ স্টপ দিস ???।
আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।
আইরাত;; টু ?।
আব্রাহাম;; এভাবে হাসছো কেনো?
আইরাত;; আপনার ওই খোচা খোচা চাপদাড়ি গুলো দিয়ে সুরসুরি লাগছে আমার ?।
আব্রাহাম;; তাই না।
এই বলে আব্রাহাম আবার আইরাতের গলায় সুরসুরি দেওয়া শুরু করে দেয়। অবশেষে আইরাত কোন রকমে আব্রাহামকে ছাড়িয়ে ছুটে এসে পরে।

আইরাত;; আল্লাহ, হাসতে হাসতে আমি শেষ। আচ্ছা শুনুন আপনি উঠুন আমি নিচে যাই।
আব্রাহাম;; রান্নাঘরে যাবে না কিন্তু।
আইরাত;; এই চুপ আবার শুরু হয়েছে আগের কাহিনী। আমি তো আর ওইভাবে রান্না করি না জাস্ট সিম্পল কিছু ব্রেকফাস্ট। সেগুলো নিজ হাতে করি সবসময় কি আর স্টাফদের হাতের খাবার ভালো লাগে।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন।
আইরাত নিচে চলে গেলো।

আইরাত;; দাদি, কি খাবে বলো। রনিত, রনিত!!
ইলা;; কিরে কি করিস?
আইরাত;; কিছু না এইতো হালকা পাতলা রান্না। রনিত কোথায়?
ইলা;; ব্রাশ করছে।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।
ইলা;; আব্রাহাম উঠেছে?
আইরাত;; হ্যাঁ
ইলা;; ওর জন্য কফি বানাবো?
আইরাত;; ফ্রেশ হতে গেলো তো মাত্রই আর একটু পর বানাও।
ইলা;; আচ্ছা, আইরু দেখ সোফার ওপর তোর ফোন বাজছে।
আইরাত;; আচ্ছা দেখছি।

আইরাত গিয়ে ফোন রিসিভ করে কিছুক্ষন কথা বলে তারপর রেখে দেয়। আব্রাহাম ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে। তারপর সবাই একসাথে খাবার টেবিলে বসে। আইরাতের পাশেই আব্রাহাম বসে। আর আব্রাহামের স্বভাব তো আইরাত বেশ ভালো করেই জানে। নির্ঘাত টেবিলের নিচ দিয়ে পায়ে সুরসুরি দিবে। তাই আইরাত তার চেয়ার টা হালকা সরিয়ে দেয়। আব্রাহাম সাথে সাথেই তার হাত দিয়ে আইরাতের হাত খপ করে ধরে ফেলে।
আব্রাহাম;; সাহস কি করে হলো আমার থেকে দূরে যাওয়ার।
আইরাত;; এখানে অন্তত কোন বাদরামি না করে চুপচাপ খান।

ইলা;; আইরাত..!
আইরাত;; আব..হ্য হ্যাঁ দাদি।
ইলা;; ব্রেড আরেকটা দিবো?
আইরাত;; না না, রনিত কে দাও।
আব্রাহাম;; অফিসে যাবে না তুমি?
আইরাত;; না আসলে রাশেদ ফোন করেছিলো তো তেমন কিছু নেই আজকে। মানে তেমন কোন কাজ নেই। তো আমিও ভাবলাম যে আজ না যাই।
আব্রাহাম;; আমার সাথে যাবে।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; ইন্টারভিউ এ
আইরাত;; এইসব মিডিয়া, প্রেস আবার?
আব্রাহাম;; প্রফেশন টাই এমন,, না যেয়ে উপায় নেই।
আইরাত;; হুমম। ওকে তো কখন যাবেন?
আব্রাহাম;; দেরি আছে, কয়েক ঘন্টা পর। গার্ড বলবে।
আইরাত;; ওহহ।

এভাবেই সকাল টা তাদের কেটে আয়। আব্রাহাম সবার সাথে বেশ সময় কাটিয়ে ওপরে রুমে চলে যায়। আইরাত গিয়ে তাকে এক কাপ কফি দিয়ে এসেছে। আজ যেহেতু সবাই প্রায় বাসাতেই আছে তাই আইরাত ভাবলো যে নতুন কিছু র‍্যাসিপি ট্রাই করা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত আর ইলা গিয়ে রান্নাঘরে মিষ্টি ঝাল সবই বানাচ্ছে। প্রথমেই পায়েস আর লাড্ডু বানিয়ে নেয়। মাত্রই বানালো আইরাত,, তাই একটা ছোট বাটিতে বেশ কিছু লাড্ডু নিয়ে নেয়।

রনিত ড্রোইং রুমে বসে বসে খেলছিলো আইরাত তার মুখে একটা লাড্ডু দিয়ে আবার কিছুটা ছুটে সিড়ি বেয়ে ওপরে রুমে আব্রাহামের কাছে চলে যায়। আইরাত গিয়ে ঠাস করে রুমের দরজা মেলে দাঁড়ায়। আব্রাহাম নেই,, তাহলে কোথায় গেলো? আইরাত করিডরে গিয়ে দেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আব্রাহাম কফি খাচ্ছে। আইরাত তার গুটি গুটি পা ফেলে আব্রাহামের দিকে এগোতে লাগে। উদ্দেশ্য আব্রাহাম কে ভোওওও করে চমকে দেওয়া৷ আইরাত যেই না আব্রাহামের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় তখনই আব্রাহাম বলে ওঠে…….

আব্রাহাম;; বাচ্চামো এখনো গেলো না তোমার?
আইরাত;; ??
আব্রাহাম তার পেছন ঘুড়ে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত মুখ টা লটকিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম তখনই টুক করে আইরাতের নাকের ডগার ওপর একটা চুমু একে দেয়। আইরাত ফিক করে হেসে দেয়।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন এটা খান। আমি নিজে বানিয়েছি।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; দিল্লি কা লাড্ডু!
আব্রাহাম;; দিল্লি? তুমি ইন্ডিয়া কবে গেলে?
আইরাত;; আরে না না আনি ইন্ডিয়া যাই নি। আসলে এই লাড্ডুর নামই দিল্লিকা লাড্ডু।
আব্রাহাম;; হুম তু………
আইরাত;; আরে আগে ধরুন, মুখ খুলুন।
আব্রাহাম;; আরে কিন্তু উ উম উম্ম….

আইরাত ঠেসে একটা লাড্ডু আব্রাহামের মুখে পুড়ে দেয়। আর আব্রাহামের তো চাবানো মুশকিল হয়ে গেছে। গাল গুলো ফুলে গেছে। কোন রকমে চিবুচ্ছে। আর আব্রাহামের এমন হাল দেখে আইরাত হেসে দেয়।
আইরাত;; হিহিহিহি।
আব্রাহাম তা কোন রকমে খেয়ে ফেলে।
আব্রাহাম;; এভাবে কেউ খাওয়ায়। আর এগুলো লাড্ডুর সাইজ এতো বড়ো কেনো?
আইরাত;; এগুলো এমনই হয়। কেমন হয়েছে?
আব্রাহাম;; দারুন তবে এটা খেয়ে পেটও ভরলো না আর মনও না।
আইরাত;; তাহলে, আরে তাহলে আরেকটা নিন।
আব্রাহাম;; তোমাকে খাই।
আইরাত;; এহ??
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তোমাকে খাই একটু।
আইরাত;; লুচু কোথাকার চুপ করুন। আর বলুন না কেমন হয়েছে?
আব্রাহাম;; সত্যি অনেক মজা হয়েছে আমার আইরাত বানিয়েছে ভালো হবে না। প্রচুর মিষ্টি তবে তোমার থেকে বেশি না।

আইরাত;; সব পাম পট্টি দেওয়া শেষ?
আব্রাহাম;; আরে সত্যি। তবে প্রচুর মিষ্টি।
আইরাত;; আরে হয়েছে একদিন একটু মিষ্টি খেলে আপনার বডি ফিটন্যাস নষ্ট হবে না। আসছে রে আমার Health conscious টা।
আব্রাহাম;; হুমম, রেডি হয়ে নাও। বের হবো আমরা।
আইরাত;; আচ্ছা।

আইরাত গিয়ে সব কিছু ঠিক ঠাক করে ফেললো। তারপর এসে রেডি হয়ে নেয়। আব্রাহাম ব্লেক কালারের রিপ প্যান্ট পরে ওপরে এশ কালারের শার্ট পরে তারপরে জেকেট জড়িয়ে নেয়। এদিকে আইরাত এই যে চেঞ্জিং রুমে ঢুকেছে তার আর বের হবার নাম নেই। এর মাঝে আব্রাহাম দুবার ডাকও দিয়েছে তাকে। আব্রাহাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বডি তে পারফিউম দিচ্ছে। হাতে ঘড়ি পরছিলো তখনই চেঞ্জিং রুমের দরজা স্বশব্দে খুলে আইরাত বের হয়ে আসে। আব্রাহাম আইরাতের পা থেকে শুরু করে মাথা অব্দি একবার স্ক্যান করে নেয়।

আইরাত স্লিভল্যাস একটা জামা পরেছে কিছুটা ব্যাকল্যাসও,, জামাটা হাটু অব্দি কিন্তু সে যে জুতো পরে আছে সেটা আবার পা থেকে শুরু করে একদম হাটুর খানিক নিচ পর্যন্ত। অর্থাৎ লং জুতো। আইরাত নেভি ব্লু কালারের ড্রেস পরেছে। ফর্সা গায়ে যেনো বেশ মানিয়েছে। চুল গুলো পেছনে ছেড়ে দেওয়া। আইরাতের হাতে দুটো হুয়াইট রিং আর একটা হুয়াট স্টোনের ব্রেসলেট। আইরাত আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসে। আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে নিজের ভ্রো জোড়া খানিক নাচায়। আব্রাহাম মুচকি হেসে দিয়ে নিজের আঙুল দিয়ে কপালের সাইডে কিছুটা স্লাইড করে।

আব্রাহাম;; আহাম, আহাম।
আইরাত;; কি হয়েছে জামাইজান?
আব্রাহাম;; লুকিং হট।
আইরাত আব্রাহামের দিকে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে আসে। তারপর তারা বের হয়ে পরে। আব্রাহাম আর আইরাত একটা জায়গায় এসে থামে। এখানে অনেক বেশিই মানুষের ভীড়। আর সবগুলোই প্রায় মিডিয়ার লোক। অনেক গুলো গার্ড আব্রাহাম-আইরাতের গাড়ি কে প্রটেকশন দিয়ে রেখেছে। সবাই সাইড দেয়। তখনই আব্রাহাম-আইরাত গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে সামনে এগোয়।

চারিপাশে তাদের অনেক গার্ড। ক্যামেরাম্যানরা ছবির ওপরে ছবি তুলছে তাদের৷ অবশেষে আব্রাহাম-আইরাত এসে সবার সামনে স্টেজে গিয়ে বসে। তাদের সামনে মিডিয়া প্রেসের অভাব নেই। মাঝে মাঝে আব্রাহাম আইরাতের কানের কাছে গিয়ে কথা বলছে আর আইরাত হাসছে। অতঃপর একজন ইন্টারভিউয়ার গিয়ে আব্রাহাম-আইরাতের সামনে গিয়ে বসে। বেশ সময় কুশল বিনিময় করে।

সামিয়া (ইন্টারভিউয়ার);; তো মিস্টার. আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী এন্ড মিসেস. চৌধুরী। আপনাদের নিয়ে এক প্রকার তোলপাড় চলছে মিডিয়া জগৎ এ। আপনাদের নিয়ে বেশকিছু প্রশ্নও আছে।
আব্রাহাম;; জ্বি যা কিছুই আছে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
সামিয়া;; আগে আমি আমার নিজের ডাউট ক্লিয়ার করি। এই আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল আর আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর কাহিনী কি?

আব্রাহাম;; কাহিনী কিছুই না,, দুইজন একই ব্যাক্তি এই আমিই। থাকে না মানুষের নাম দুই টা। আমারও হলো।
সামিয়া;; এখন মেইন প্রফেশন হিসেবে কি চুস করে নিয়েছেন আপনি? এই গ্লামার ওয়াল্ড নাকি মাফিয়া?
আব্রাহাম;; দুটোই আছি। যখন যার প্রয়োজন পরে। না মানে ব্যাসিক্যালি এই মাফিয়া বা গ্যাংস্টার যে শব্দ গুলো আছে এগুলো হলেও মানুষ তা সবার সামনে অস্বীকার করে। লুকোনোর চেষ্টা করে। কিন্তু না আমার এইক্ষেত্রে কোন দ্বিধাই নেই। আই ক্যান প্রাউডলি সে দ্যাট আই এম এ মাফিয়া। এতে যে যাই ভাবুক বলুক আই র‍্যালি ডোন্ট কেয়ার এবাউট দ্যাট।

সামিয়া;; দিস ইস কল্ড এটিটিউড।
আব্রাহাম;; আমার থেকে বড়ো একজন আমার পাশে বসে আছে। এটিটিউডের গোডাউন।
আব্রাহামের এমন কথায় সবাই হেসে দেয়।
সামিয়া;; আইরাত ম্যামের তো কথাই নেই। সিরিয়াসলি এতো কম সময়ে এসে এতো বড়ো কিছু এচিভ করাটা বেশ টাফ। আপনারা কতো টুকু সাকসেসফুল তা বলার আর কোন দরকারই পরে না। এবার আসি আপনাদের লাভ লাইফে। মানে কেউ শুধু আব্রাহাম বা শুধু আইরাত এদের আলাদা আলাদা নাম নেয় না। আব্রাহাম-আইরাত এই দুটো নাম সবসময় একসাথেই উচ্চারণ করা হয়। বেস্ট কাপল আই হ্যাভ এভার সিন।

আইরাত;; থ্যাং ইউ।
সামিয়া;; আচ্ছা আব্রাহাম স্যার আপনি কখনো নিজের রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস পাবলিক করেন নি কেনো? মানে আপনি সিংগার পেশা টার ক্ষেত্রে আইরাত ম্যামের সাথে আপনার সম্পর্ক টা পাবলিক করেন কি কেনো?
আইরাত;; এর পেছনে অনেক বড়ো লম্বা কাহিনী আছে। বলতে বলতে রাত হয়ে যাবে। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাকে।
সামিয়া;; ??

আব্রাহাম;; না আইরাতের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। আমি ম্যারিড।
সামিয়া;; আপনি জানেন আপনার এই কথা টায় আজ কতো গুলো মেয়ের মন খানখান হয়েছে?
আব্রাহাম;; করার কিছুই নেই। আমার আইরাত আছে।
সামিয়া;; আচ্ছা তো আব্রাহাম স্যার আপনার আর ম্যামের প্রথম দেখা কোথায় হয়?
আব্রাহাম এমন প্রশ্নে আইরাতের দিকে হেসে দিয়ে তাকায়। আইরাত নিজেও বুঝতে পেরেছে যে আব্রাহাম কেনো তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

আইরাত;; কি থামলেন কেনো। বলুন,, আমাদের কোথায় দেখা হয়েছিলো প্রথম আব্রাহাম? বলুন।
সামিয়া;; এমন কোথায় দেখা হয়েছিলো?
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন! আইরাতের সাথে প্রথম দেখা হয় আমার একটা বারে।
আব্রাহামের এমন কথায় সব পাবলিক ওওওওওওওওওওওও করে ওঠে।
আব্রাহাম;; না না তেমন কিছু না। আইরাত তার বেস্টফ্রেন্ডের বার্থডে সেলিব্রেইট করার জন্য সেখানে যায় আর কাকতালীয় ভাবে আমার নজরে পরে যায়। জানি না ওর মাঝে কি ছিলো। বাট বিলিভ মি আইরাতকে দেখার পর থেকে আমার দু রাতের ঘুম পুরো হারাম ছিলো।

সামিয়া;; কথা বলা কীভাবে স্টার্ট হয়?
আইরাত এবার আব্রাহামের হাত ধরে হেসেই দেয়। আব্রাহাম বুঝেছে যে কেনো আইরাত হাসছে।
আব্রাহাম;; মানে আমাদের লাভ লাইফ নিয়ে এতো বেশি ইন্টারেস্ট কেনো আপনার?!
সামিয়া;; স্যার শুধু আমার না আমাদের সবারই।
আব্রাহাম;; As usual,, আইরাত খুব সিম্পল একটা মেয়ে ছিলো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। আর তার মাঝেই আমি হুট করে তাকে বলে দেই “” হেই বিউটিফুল একরাতের জন্য আমার বউ হবে?””
আব্রাহামের কথায় সবাই হেসেও দেয় আবার সেই সাথে অবাকও হয়।

সামিয়া;; হুয়াট?
আব্রাহাম;; Exactly…
সামিয়া;; ওহ গড, ম্যামের রিয়েকশন কেমন ছিলো?
আব্রাহাম;; আইরাত অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
সামিয়া;; ম্যাম?
আইরাত;; মানে ব্যাপার টা কিছুটা এমন যে আমি যেতে চাই নি কিন্তু আমার ফ্রেন্ড জোর করে নিয়ে গেছে। আমি আমার মতোই ছিলাম তার মধ্যে হুট করেই এমন কথা। মানে কি যে একটা অবস্থা ছিলো। তবুও আমি অনেক কথা শুনিয়ে এসে পরি।
আব্রাহাম;; তবে আমি ওর পিছু ছাড়ি নি। আর সেইদিন থেকে আইরাতের পিছু ছাড়ি নি বলেই আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি।

সামিয়া;; ওকে তো ম্যাম আপনাকে আব্রাহাম স্যার কি নামে ডাকে?
আইরাত;; ইউ মিন নিকন্যাম?
সামিয়া;; জ্বি।
আইরাত;; জানপাখি & বেবিগার্ল। মানে এই দুটো নাম আব্রাহামের একদম মার্ক করা। এগুলো আব্রাহামের দেওয়া নাম। ও আমাকে আইরাত বলে খুব কমই ডাকে। মানে আব্রাহাম যখন খুব বেশি সিরিয়াস থাকে তখন আমাকে আইরাত বলে ডাকে৷ আর আমিও বুঝি যে জামাই আমার এখন সিরিয়াস মুডে।

সামিয়া;; হাহাহাহা,, আচ্ছা তো স্যার ভালোবাসা কি? মানে আপনার মতে ভালোবাসা কি?
আব্রাহাম;; এটা ঠিক মুখে প্রকাশ করার মতো না। ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। একেক জনের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা একেক রকম। কারো কাছে ভালোবাসা পাওয়ার অফুরন্ত আনন্দ-খুশি আবার কারো কাছে ভালোবাসা না পাওয়ার বুক ফাটা আর্তনাদ। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এটা যে আমার উভয়েরই অভিজ্ঞতা আছে। আমি ভালোবাসা নামক জিনিসের একদম বাধভাঙ্গা খুশিকেও জানি আবার তা হারিয়ে ফেলার নরক যন্ত্রণাও। কারণ আমার সাথে দুটোই হয়েছে। একচুয়ালি আমাদের সাথে। তবে এখন আমাদের জীবন টা খুশির ভাগেই পরে। পরিশেষে শুধু এটাই বলার আমার আইরাত না থাকলে আমি নেই (আইরাতের দিকে তাকিয়ে)

সামিয়া;; হাউ সুইট। আমার তো এখন হিংসে হচ্ছে আপনাদের মতো এত্তো কিউট কাপল কে দেখে।
আইরাত;; আরে সবার জীবনেই কেউ না কেউ আসে। তোমারও আসবে।
সামিয়া;; আচ্ছা লাভ স্টোরি তে যেমন বাবা বা ভাই রা শত্রু হয়ে দাঁড়ায় মানে মেয়েদের ক্ষেত্রে আরকি তো আইরাত ম্যামের সাথে কি এমন কিছু হয়েছে কখনো?
আইরাত;; না। আমার চাচ্চু যখন বেচে ছিলেন তখন তিনি কিছুটা আপত্তি জানান কিন্তু পরক্ষনেই আবার সব ঠিক। তেমন ভাবে ফ্যামিলি থেকে কোন শত্রু ছিলো না।

সামিয়া;; আচ্ছা তো, দুইজনের মাঝে কে বেশি ডেয়ারিং মানে স্যার নাকি ম্যাম?
এবার আব্রাহাম আইরাতের দিকে আঙুল দিয়ে দেখায় আর আইরাত আব্রাহামের দিকে তার আঙুল দিয়ে দেখায়। সামিয়া হেসে দেয় সাথে বাকি সবাইও।
সামিয়া;; ম্যাম আব্রাহাম স্যার কি ভালোবাসায় পাগলামি করে?
আব্রাহাম;; ভালোবাসার আরেক নাম পাগলামি।
আইরাত;; প্রচুর। আর কিছু বললাম না শুধু প্রচুর টাই বলে দিলাম। এখন বাকি টুকু বুঝে নাও। মানে আমি বলতে পারবো না যে ও ঠিক কি কি করেছে।

সামিয়া;; কে বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করে?
আইরাত;; আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; আমার বেবিগার্ল।
সামিয়া;; আচ্ছা বুঝলাম ??।
সামিয়া আর বেশ সময় কথা বলে তাদের সাথে। একটা সময় আব্রাহাম-আইরাত এসে পরে। আইরাত-আব্রাহাম হাইওয়ে দিয়ে আসছিলো। আব্রাহাম ড্রাইভ করছে আর আইরাত উইন্ড দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে গালে হাত দিয়ে। আইরাত গাড়ির সামনে তাকায়। তারপর একটা বাটনে প্রেস করে। তাতে গাড়ির ওপরের রুফ টা আপনা আপনিই খুলে নেমে পরে। এবার যেনো বাইরের সব হাওয়া ভেতরে আসছে। আইরাত এক পাশে হয়ে বসে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম সামনে তাকিয়ে থাকলেও আইরাত যে তার দিকে তাকিয়ে আছে তা সে অবশ্য ভালোই বুঝতে পেরেছে। আব্রাহাম ড্রাইভ করতে করতেই বলে……

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল এভাবে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে।
আইরাত;; হোক
আব্রাহাম;; তুমি চাও এক্সিডেন্ট হোক?
আইরাত;; তেমন না। কিন্তু এক্সিডেন্টের ভয়ে আমি আপনার দিকে তাকানো বন্ধ করবো না। তাতে এক্সিডেন্ট হলে হোক।
আব্রাহাম;; চলো কিছু করি।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; fly boarding…
আইরাত;; এখন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; সব এরেঞ্জ করতে হবে, আর অবশ্যই আমরা এই গেটাপে ফ্লাইবোডিং করতে পারবো না।
আব্রাহাম;; সব কিছুর এরেঞ্জম্যান্ট করতে মাত্র দু মিনিট লাগবে।
আইরাত;; ওকে দ্যান।

আব্রাহাম প্রায় আরো এক ঘন্টার মতো ড্রাইভ করে। তারপর একটা বিচ সাইডে নিয়ে এসে পরে। গার্ড রা গিয়ে ফ্লাইবোর্ডিং এর মেশিন টা নিয়ে আসে। আসলে এটা একটা ওয়াটার রাইডের মতো। এটা বেশির ভাগ বিচ সাইডেই করা হয়। ফ্লাইবোর্ডিং এর ক্ষেত্রে পায়ের নিচে একটা ভারি লম্বা বস্তুর মতো জিনিস রেখে দেওয়া হয়। তার ঠিক মাঝ বরাবর একটা মোটা পানি নির্বাহীর মতো যন্ত্র থাকে। এই ফ্লাইবোর্ডিং একা বা দুইজন মিলে করা করা যায়৷ এটা সমুদ্রে বা যেখানে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে সেখানে করা যায়। পানির ওপরে শূন্যে ভাসা যায়।

অর্থাৎ এক প্রকার স্কাই ডাইভিং এর মতোই কিন্তু পায়ের নিচ দিয়ে পানির দ্রুত স্রোত থাকে। এই ফ্লাইবোর্ডিং দিয়ে অনেক উঁচু তে ওঠা যায়। পায়ের জায়গায় বেশ কিছু প্রসেস থাকে সেখানে নিজের ইচ্ছে মতো কোন্ট্রল করা যায়। যেভাবে খুশি মন মতো হাওয়াতে ভেসে ড্রাইভ করা যায়। ওপরে যেই ব্যাক্তি থাকে সে পানির মাধ্যমে ওপরেই ভেসে বেড়াতে থাকে তবে নিচে সমুদ্র তে বেশ কিছু স্পীড বোর্ড থাকে যেগুলোর সাথে পানির কানেকশন থাকে আর ওপরে থাকা ব্যাক্তিটাকে সাপোর্ট দিতে থাকে। (চাইলে কেউ সার্চ করে দেখতে পারেন)

আইরাত আর আব্রাহাম এখন যেখানে আছে সেখানে এক প্রকার বিচ সাইড ই। তাদের সাথে সাথে অনেক মানুষও রয়েছে। আব্রাহাম তো তার ফরমাল গেটাপেই ছিলো তাই তার চেঞ্জ করতে হয় নি আইরাত গিয়ে একটা পেন্ট আর টি-শার্ট পরে আসে। আইরাত বের হয়েই দেখে আব্রাহাম গার্ড দের সাথে কথা বলছে। আইরাত কে আসতে দেখে আব্রাহাম একদম রেডি হয়ে গেলো। বোর্ডের সাথে অর্থাৎ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভিং করা হয় সেখানে এক জোড়া জুতো থাকে। ভারি আর খুব মজবুত। আব্রাহাম সেগুলো পায়ে পরে নেয়। আইরাত এসে আব্রাহামের পাশে কোমড়ে দুই হাত রেখে দাঁড়ায়।

আইরাত;; আমার কিন্তু নারভাস লাগছে।
আব্রাহাম;; ওইযে সামনে যে সমুদ্র দেখছো তোমার নারভাস গুলো সব সেখানে ছুড়ে মারো।
আইরাত;; যদি আমি উঁচু থেকে পরে যায়।
আব্রাহাম;; আইরাত, তুমি আমার বাহুতে আবদ্ধ থাকবে।
আইরাত;; না মানে।
আব্রাহাম;; আমি কিন্তু ফেলে দিবো।
আইরাত;; এহহ

আব্রাহাম হাতে গ্লাভস পরে নেয়। কোমড়ে একটা বেল্টের মতো পরে নেয়। তারপর আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। এই ফ্লাইবোর্ডিং এর যে ট্রেইনার আছে সে আস্তে করে তাদের পানিতে নামিয়ে দেয়। পানি গুলো কি ঠান্ডা। পানির বেশ মাঝ বরাবর আব্রাহাম-আইরাত গিয়ে থামে। তখন ৩-৪ টা স্পীড বোর্ড পানিতে নামে। আস্তে আস্তে আব্রাহাম-আইরাত ওপরে উঠে পরে। আর আব্রাহামের দু পায়ের নিচ দিয়ে তীব্র বেগে পানির ধারা বয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে তারা দুইজন বেশ ওপরে ওঠে পরে৷ আইরাত আব্রাহামের শার্ট খামছে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল দেখো উঁচু থেকে সবকিছু কত্তো সুন্দর লাগে। মানুষ গুলো কে লিলিপুটের মতো লাগছে দেখতে। তুমি আস্তে আস্তে চোখ খুলো। একদম নিচে তাকিয়ো না শুধু আশে পাশে তাকাও দেখো।

আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; গেট রেডি।
আইরাত;; কেনো?

তখনই আব্রাহাম আইরাতকে নিজের সাথে চেপে ধরে একটা ঘুরান্টি দেয়। আইরাত আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। আর এদিকে আব্রাহাম মিটিমিটি করে হাসছে। মাঝে মাঝে আব্রাহাম আইরাতের কোমড়ে ধরে নিজের থেকে কিছুটা আলগা করে ঘুড়িয়ে দিচ্ছে। প্রথমে আইরাতের ভয় লাগলেও এখন সে একদম নরমাল। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে এবার একটু জোরেই ঘুড়িয়ে দেয়। তারপর আবার আইরাতকে নিজের বুকের ওপরে ফেলে। আইরাত হেসে দেয়।

দূর থেকে কি যে সুন্দর লাগছে আব্রাহাম-আইরাত কে। সবকিছুর উর্ধ্বে আব্রাহাম আর আইরাত একসাথে ওপরে ভাসছে। আব্রাহাম তার মাথা আইরাতের মাথার সাথে লাগিয়ে দেয় তারপর তারা ঘুরতে থাকে। তারপর থামিয়ে দেয়। এভাবেই প্রায় ৩০ মিনিটের মতো ওপরে ভেসে আব্রাহাম- আইরাত আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসে। ইট”স কল্ড ফ্লাইবোর্ডিং। নিচে নেমে এসে আইরাত আগেই নেমে পরে তারপর আব্রাহাম তার ওপর থেকে জেকেট টা খুলে হাতের গ্লাভস গুলো খুলে গার্ডের হাতে দিয়ে দেয়।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬৪+৬৫+৬৬

আব্রাহাম;; কেমন লাগলো?
আইরাত;; ইট”স র‍্যালি ওসাম। দারুন ছিলো।
আব্রাহাম;; এবার বাসায় যাই?
আইরাত;; হ্যাঁ চলুন।

আব্রাহাম-আইরাত বাসায় চলে যায়। সারাটাদিন এভাবেই চলে যায়। এখন রাত বাজছে প্রায় এগারো টার মতো। আব্রাহাম হেলান দিয়ে বিছানাতে বসে আছে। আর আইরাত আব্রাহামের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। আব্রাহাম এক হাতে ল্যাপটপ চালাচ্ছে আরেক হাত দিয়ে আইরাতের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। আর আইরাত তো আইরাতই,, সে তার মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে। আর আব্রাহাম শুধু হুমম হুমম করে যাচ্ছে। এবার যেনো আইরাতের রাগ উঠে পরে তাই আইরাত এক লাফে উঠে বসে পরে৷ আব্রাহামের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। তারপর আইরাত আব্রাহামের চোখ থেকে চশমা টা খুলে নিয়ে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দেয়। আব্রাহামের সামনে একদম থুম মেরে বসে আব্রাহাম কে বলে ওঠে….

আইরাত;; আমি বিয়ে করবো ?
আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা,, হ্যাঁ কি বললা?
আইরাত;; আমি বিয়ে করবোওওওওওওওওও।
আব্রাহাম;; আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে তো ?
আইরাত;; না না আমি আপনাকে আবার বিয়ে করবো।
আব্রাহাম নিজের দুইহাত দিয়ে আইরাতকে নিজের কাছে টেনে নেয়।

আব্রাহাম;; এতো রাতে বিয়ে করার শখ হয়েছে তোমার? কিন্তু এখন আমার তো অন্য কিছুর শখ জেগেছে।
আইরাত;; আরে আপনি আমার কথা শুনুন আমি বিয়ে করবো। আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াম, আমি বিয়ে করবো।
আব্রাহাম;; আচ্ছা করবো।
আইরাত;; সত্যি ??
আব্রাহাম;; হ্যাঁ। এবার এদিকে এসো।

আব্রাহাম আইরাতকে নিজের বুকের মাঝে একদম আগলে নেয়। সে আইরাতের মাথার পেছনে এক হাত রেখে দেয় আরেক হাত আইরাতের কোমড়ে রেখে দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রাখে। আইরাতও আব্রাহামের বুকে মুখ লুকায়। আব্রাহামের বুকের উষ্ণতায় আইরাত তার চোখ বন্ধ করে রাখে। আব্রাহাম থেকে থেকে ঘুমন্ত আইরাতের কপালে, গালে আর বাচ্চার মতো পিংকিস কালারের ঠোঁটে চুমু দিয়ে যাচ্ছে। আব্রাহামের কাছে তাদের এই মূহুর্ত টা যেনো স্বর্গসুখ ❤️।

নেশাক্ত ভালোবাসা শেষ পর্ব