নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬১+৬২+৬৩

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬১+৬২+৬৩
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবার সাথেই হাসি মুখে কুশল বিনিময় করছিলো। তার ফাঁকে ফাঁকেই বাকা চোখে আবার আব্রাহামের দিকে নজর দিচ্ছে। অনেকে তাদের হাতে ড্রিংক্স নিয়ে আছে, কথার বলার মাঝে মাঝে তাতে চুমু দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ সফট মিউজিকের তালে তালে নিজেদের পার্টনারের সাথে কপল ডান্স করছে। আইরাতের কথা বলা শেষ হলে সে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে যে সে বসে বসে ফোন ঘাটছে। আইরাত ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়।

আইরাত;; হেই জামাইজান!!
আব্রাহাম;; উফফ বিরক্তিকর…
আইরাত;; এখানে এতো ভালো পার্টি রেখে ফোনে কি করা হচ্ছে?
আব্রাহাম;; Mind your own business girl….
আইরাত;; Yes, i am… আমার কাজই তো আপনার পেছনে লাগা আর আপনার সাথে চিপকে থাকা। আপনি কি করছেন না করছেন সেদিকে খেয়াল রাখা। আর আমি তো তাই করছি তাই না।
আব্রাহাম;; হুমম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্রাহাম এবার আইরাতের দিকে তকায়। আব্রাহামের চোখ গুলো আইরাতের সারা মুখে বিচরণ করে চলেছে।
আব্রাহাম;; কিছু একটা মিস্টেক আছে।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; তোমার কানের ঝুমকো তে একটা হুয়াইট স্টোন কম আছে মানে গায়েব আর কি।
আইরাত;; এত্তো ক্ষুদ্র একটা জিনিস এত্তো সুক্ষ্ম ভাবে লক্ষ্য করলেন? কেনো বলুন তো?
আব্রাহাম;; আমি মেয়েদেরই বেশি লক্ষ্য করি।
আইরাত;; চোখ দুটো যখন কাটা চামচ দিয়ে বের করে মার্বেল খেলবো তখন লক্ষ্য কইরেন বেশি করে ?৷
আব্রাহাম;; হাহ্

তখনই রোদেলা আইরাতের কাছে আসে। অফিসের পরবর্তী প্রজেক্ট যার সাথে সাইন করার কথা উনি এসেছেন। তাই সৌজন্যের খাতিরে দেখা তো করতেই হবে। আইরাত একবার আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে রোদেলার সাথে চলে যায়। তখনই একজন লোক আসে। তিনি আইরাতের সাথে কথা বলেন। এক সময় হ্যান্ডশেক করেন। তারপর আরো কিছুক্ষন সময় কথা বলে চলে আসেন। তারপরেই সেখানে আহসান যায় অর্থাৎ আইরাত যাকে ভাই বলে ডাকে সেই আর কি। আইরাত তো আহসানের সাথে বেশ ফ্রি। তারা দুইজন মিলে বেশ আড্ডা দিচ্ছে। কথা বলার এক সময় আইরাতের মাথার সাইডের কিছু ক্লিপ খুলে যায়। আহসান সেগুলো আইরাতকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আইরাত ঠিক করতে না পারলে আহসান আইরাতের মাথায় হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়।

আহসান;; আরে এইদিকের ক্লিপ গুলো খুলে গেছে তো।
আইরাত;; আরে ধুরু ভেজাল।
আহসান;; নাও এবার ঠিক আছে।
আইরাত;; থাংকু ভাইয়া।
আহসান;; ওয়েলকাম বইনা।

আইরাত আর আহসান মিলে আবার কথা বলা শুরু করে দেয়। তবে এখানেই কেউ একজন তাদের দেখে রাগে ফেটে পরছে। তবে তা প্রকাশ করছে না। তার কয়েক মিনিট পরেই ঠাস করে কিছু একটা ভেঙে যাওয়ার শব্দ আসে৷ আইরাত সহ বাকি সবাই সেদিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার মাথা নিচু করে বসে আছে তবে তার হাতের অবস্থা খারাপ। আব্রাহামের হাতে একটা এলকোহলের গ্লাস ছিলো আব্রাহাম তা তার হাতের চাপেই ফাটিয়ে দিয়েছে। গ্লাস টা হাতের মাঝেই ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছে৷ মূহুর্তেই আব্রাহামের হাত থেকে রক্ত পরা শুরু করে দেয়। কাচের টুকরো গুলো নিচে পরে আছে। আইরাত তো এটা দেখেই কপাল কুচকে চিন্তা মাখা মুখ নিয়ে আব্রাহামের কাছে আসে। এসেই আব্রাহামের হাত ধরে ফেলে।

আইরাত;; আব্রাহাম!! কি করলেন এটা আপনি? এভাবে হাতের মাঝে রেখেই কেউ গ্লাস ভাঙে নাকি। আপনার ভাংচুর করতে মন চাচ্ছে আমাকে একবার বলে দিতেন। আমি হাজার হাজার জিনিস হাজির করে দিতাম কতো ভাংবেন আপনি। কিন্তু এভাবে??

আব্রাহাম ঝট করে আইরাতের কাছ থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নেয়। সেখান থেকে উঠে চলে যেতে নেয় তবে আইরাত থমিয়ে দেয়। আব্রাহাম শুধু টিস্যু দিয়ে কো রকমে হাত টা পেচিয়ে নেয়। আইরাতও কিছু বলে না। আব্রাহাম এভাবে রেগে কেনো গেলো আইরাত তাই বুঝে উঠতে পারলো না। সময় এভাবেই কিছুক্ষন চলে যায়। তারপর আইরাত খেয়াল করে যে আব্রাহাম জমিয়ে একটা মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করছে। আর ওই মেয়ে হেসে হেসে ফেটে পরছে। আইরাত এগুলো দেখে সরু চোখে তাদের দিকে তাকায়। কিন্তু আইরাতও তো কম না। আইরাত গিয়ে সফট মিউজিক বাদ দিয়ে ধুম ধারাক্কা গান বাজাতে বলে আসে। প্রথমে “mujhe to teri lat lag gayi” গান লাগিয়ে আসে আর তারপর

” Avi toh party shuru huyi hain ” আইরাত নিজেও গানের তালে তালে গা দুলাচ্ছে রোদেলা আর বাকি যারা ছিলো তাদের সাথে। মানে আব্রাহাম কে সে ইগ্নোর করেও করছে না। সে দেখাতে চাচ্ছে যে আব্রাহাম যা ইচ্ছে করুক গা আইরাত তো নিজের মতো করে আছেই। She Don’t give a damn about him…. আইরাতের এমন করাতে পুরো পার্টির হুলিয়া-নশকা সব পালটে গেছে। আইরাত আরো একটু বেপরোয়া ভাব ধরে, পার্টি তে অনেক ছেলে ছিলো তারাও তাদের মতো করে রয়েছে।

যদিও তারা আইরাতের কাছে আসার চেষ্টা করেছে কিন্তু আইরাত কাউকে পাত্তাই দিচ্ছে না। আইরাত এমন করছে আর আড়চোখে আব্রাহাম কে দেখছে। কিন্তু আব্রাহাম আগে যেমন ছিলো এখনো সেইম। সে আরো উলটা অন্য দিকে ঘুড়ে ড্রিং করছে। এতে আইরাত নিজের মনে মনে আব্রাহাম কে একটা ভেংচি কেটে দেয়। তিবে প্রকৃতপক্ষে কিন্তু আব্রাহামের নজর আইরাতের দিকে আছেই। অর্থাৎ দুইজনই ছুপা রুস্তাম। দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু বুঝতে কেউই কাউকে দিচ্ছে না। কেউ কারো থেকে একবিন্দুও কম না। একসময় গান অফ হয়ে যায়। সবাই মিলে কিছুটা চিল্লিয়ে উঠে। আর একসাথে কড়তালি দেয়।

এবার আব্রাহাম ঘুড়ে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত নিজেও আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাত হেটে আব্রাহামের কাছে আসে। এসে আব্রাহামের পাশে দাঁড়িয়ে পরে। দুজনই চুপ। হঠাৎ আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতের কেনো যেনো মনে হচ্ছে যে পাশ থেকে কেউ একজন তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত ফট করে মাথা ঘুড়িয়ে তার সাইডে তাকায় দেখে আব্রাহাম তার দিকে ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে। আইরাত তার চোখ গুলো নামিয়ে নিজের গলা কিছুটা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। কিন্তু আব্রাহাম হুট করেই আইরাতের দিকে এগোতে লাগে। আইরাত এটা বুঝতে পেরে পাশে তাকায়। আব্রাহাম ক্রমশ তার দিকে এগিয়ে আসছে। আব্রাহামের চোখ গুলো আইরাতের ঠোঁটের দিকে স্থীর।

আইরাত কিছুটা হকচকিয়ে ওঠে। সে ভেবেছে হয়তো আব্রাহাম কিছু একটা করে বসবে এখানেই কিন্তু আইরাতের ধারনা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আব্রাহাম করে উল্টো কাজ। আইরাতের গলাতে একটা ব্লেক কালারের স্কাফ ছিলো। আব্রাহাম সেটা আস্তে করে টান দিয়ে নিয়ে নেয়। তার এমন কান্ডে আইরাত কপাল কুচকে তাকায়। আব্রাহাম কিছু না বলেই আইরাতের ওই স্কাফ টা নিয়ে নিজের হাতের ক্ষত স্থানে বেধে নেয়।

আব্রাহামের এমন করাতে আইরাত বেশ অবাকই হয়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়েই তার হাতে স্কাফ টা বেধে নেয়। আইরাত অবাক দৃষ্টিতে একবার আব্রাহামের দিকে আরেকবার তার হাতের দিকে তাকাচ্ছে। অবশেষে আব্রাহাম স্কাফের শেষ অংশ টা তার হাতে বেধে আইরাতের দিকে তাকিয়ে একটা ডোন্ট কেয়ার ওয়ালা ভাব নিয়ে চলে আসে। আইরাত আব্রাহামের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়।

আব্রাহাম হেটে হেটে পার্কিং প্লেসে চলে যায় একা। সবসময় নিজের সাথে গার্ড নিয়ে ঘুরতে কার ভালো লগে। আর আব্রাহাম নিজেই এনাফ অবশ্যই তার অন্য কাউকে দরকার পরে না। আব্রাহাম নিজের গাড়ির কাছে চলে যায়। জেকেট টা গাড়ির ভেতরে সীটের ওপরে রেখে দেয়। আর এখানেই গোন্ডগোল টা পাকে। আব্রাহাম তার হাতে একটা সিগারেট নিয়ে নেয়। গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে। লাইটার দিয়ে সিগারেট টা জ্বালিয়ে নিলো।

ব্যাসিক্যালি আব্রাহাম স্মোক করে না, খুবই কম। সিগারেটের কয়েক পাফ নিতেই আব্রাহামের কেনো জানি মনে হলো যে তার পেছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে তা পরিষ্কার জানান দিচ্ছে। আব্রাহামের কাছে ব্যাপার টা আরো বেশি ক্লিয়ার হয়ে যায় যখন আব্রাহাম তার সামনে থাকা আরেকটা গাড়ির সাইড গ্লাসে ঠিক তার পেছনেই একটা লোকের অবয়ব দেখতে পায়।

লোকটি আব্রাহাম কে আঘাত করতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম ঝট করে তার পেছন ঘুড়ে লোকটির হাত ধরে ফেলে। লোকটির হাতে শক্ত কিছুটা একটা ছিলো যা দিয়ে সে আব্রাহাম কে আঘাত করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে নি। আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে লোকটার গলা পেচিয়ে ধরে। এতে লোকটার শ্বাস আটকে আসতে শুরু করলো। আব্রাহাম কিছুক্ষন বেশ শক্তি দিয়ে লোকটিকে চেপে রাখে।

যখন লোকটির অবস্থা বেগতিক তখন আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দূরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। লোকটি ভয়ার্ত চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখনই আব্রাহাম তার পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে। রিভলবার টা বের করে সোজা সেই লোকটির মাথা বরাবর তাক করে ধরে। সামনে থাকা লোকটি তো ভয়ে কাদো কাদো অবস্থা। আব্রাহাম হঠাৎ তার রিভলবার টা আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে এনে লোকটির পা বরাবর তাক করে ধরে। লোকটি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম শুট করে দেয় তার পায়ে। লোকটি অসহ্য ব্যাথায় চিল্লিয়ে উঠে। আব্রাহাম এবার তার এক পা ভাজ করে লোকটির সামনে বসে পরে। রিভলবার দিয়ে নিজের মাথার সাইডে কিছুটা স্লাইড করে আবার সরু দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে…….

আব্রাহাম;; দেখ, না আমি তোকে চিনি আর না ই তুই আমাকে চিনিস। নাকি তুই আমাকে চিনিস আচ্ছা যাই হোক। তোর কোন ক্ষতি আমার জানা মতে আমি করি নি। তাহলে কেনো, কেনো আমাকে মারতে এখানে এসেছিস বলতো। মানে তোর সাথে আমার কোন রকম কোন শত্রুতা নেই তারপরেও তুই আমাকে মারতে এসেছিস। শখ জেগেছে তোর মরার। কেনো অযথা নিজের মৃত্যুর দিকে পা বাড়াচ্ছিস বল তো। আজ ছেড়ে দিলাম এরপর বিনা কথায় সোজা ওপরে বুঝলি। গার্ড…

আব্রাহামের একটা গার্ড এসে সেই লোকটিকে নিয়ে যায়। আব্রাহাম আবার তার পেছনের পকেটে রিভলবার টা তুলে রেখে দেয়। তারপর সে নিজেও চলে যায়। কিন্তু খানিক দূর থেকে কেউ খুটিয়ে খুটিয়ে আব্রাহাম কে আর তার কাজ কে দেখছে। আর তা হলো আইরাত নিজেই। আইরাতের সাথে রাশেদও রয়েছে। আইরাত আর রাশেদ মূলত একটা গাড়িতে। আর হ্যাঁ যেই লোকটিকে পাঠানো হয়েছিলো আব্রাহাম কে মারার জন্য সে আর কেউ না আইরাত নিজে ইচ্ছে করেই পাঠিয়েছিলো। যদিও সে জানতো যে এই লোকটা আব্রাহামের ধারে-কাছেও যেতে পারবে না তবুও কিছু জিনিস লক্ষ্য করার জন্য আইরাত এই কাজ টা করেছে। আব্রাহামের সেখান থেকে চলে যেতেই আইরাতের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে। আব্রাহামের ব্যাপারে আইরাতের সন্দেহটা যেনো আরো গাঢ় হয়ে গেলো।

রাশেদ;; ম্যাম স্যার তো……
আইরাত;; তুমি খেয়াল করেছো কিছু?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম অর্নীল স্যার যেভাবে রিভলবার ধরেছিলো আব্রাহাম স্যারের রিভলবার ধরার স্টাইলও পুরোই এক। ইভেন স্যার যে শুট করলো মানে সব একই।
আইরাত;; সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে আব্রাহামের সব রিভলবার গুলোর ওপর একটা গোল্ডেন কালারের চ্যাক থাকতো। এবারও কিন্তু তার ব্যাতিক্রম নয়। ওর হাতে যে রিভলবার টা ছিলো তাতেও গোল্ডেন কালারের একটা চ্যাক রয়েছে।
রাশেদ;; হুমমম।

আইরাত;; ও আমার আব্রাহাম ই রাশেদ। ও যতোই না বলুন আমাকে। আমি ওকে চিনি।
তারকিছুক্ষণ পর আইরাত আর রাশেদও সেখান থেকে এসে পরে। আইরাত যখন তার বাসায় আসে তখন দেখে ইলা বসে আছে।
আইরাত;; কি করছো?
ইলা;; কিছু না।
আইরাত;; মুখ টা এমন শুকনো কেনো?
ইলা;; আজ টিভিতে একজন কে দেখি।
আইরাত;; কাকে? (কানের দুল খুলতে খুলতে)
ইলা;; নাম ছিলো আব্রাহাম চৌধুরী কি কি যেনো একটা!
আইরাত;; অর্নীল।
ইলা;; হ্যাঁ

আইরাত;; ও কোন অর্নীল টর্নীল না ও আব্রাহাম ই।
ইলা;; কি করে সম্ভব এটা? আমাদের হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। চেহারাতে মিল থাকে না মানুষের।
আইরাত;; চেহারাতে মিল থাকে কিন্তু গলার স্বর, হাটা চলা, কথা বলা, রাগি ভাব, ভেশ-ভুষা, মানে এত্তো মিল কীভাবে। আর মিল দেখেই যে আমি বলছি আব্রাহাম তা না আমার মন বলে সে আব্রাহাম।

ইলা;; তা তাহলে এ এতোদিন আম আমাদের কাছে এলো না কেনো? (কেদে)
আইরাত;; জানি না। কেনো এমন করছে তাও জানি না। এতো উঁচু খাদ থেকে পরে কীভাবে কি হলো কোথায় ছিলো মানে কিচ্ছু জানি না। তবে আমি শুধু এই টুকুই জানি যে ও আব্রাহাম। আর হ্যাঁ তুমি দেখো আমি তো ওর মুখ দিয়ে এটা স্বীকার করিয়েই ছাড়বো যে ও আব্রাহাম।
ইলা;; তুই, তুই কি ওর সাথে দেখা করিস?
আইরাত;; হ্যাঁ।
ইলা;; কেমন আছে ও?
আইরাত;; হ্যাঁ বেশ ভালো, আমাকে খারাপ রেখে অনেক ভালোই আছে ও।
ইলা;; তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে। খাবি আয়।
আইরাত;; খেতে ইচ্ছে করছে না দাদি। কাল আবার সকাল সকাল যেতে হবে তবে কাল অফিসে যাবো না। কাল বাইরে থাকবো।

ইলা;; কোথায় যাবি?
আইরাত;; আব্রাহামের কনসার্ট আছে,, কনসার্ট বলতে ওর একটা শো আছে। সেখানে বেশ কিছু মানুষ থাকবে তাই।
ইলা;; ওহহ আচ্ছা।
আইরাত ওপরে তার রুমে চলে গেলো। কাপড় চেঞ্জ না করেই বিছানাতে গা এলিয়ে দিলো। ভালো লাগছে না। আইরাত এক সময় আব্রাহাম কে ফোন দিলো। ফোন তিনবার কেটে অফ হয়ে যায় তবে ধরে না। আইরাতও হাল ছাড়ার পাত্রি না সে লাগাতার ফোন দিতেই থাকলো। এক সময় ফোন রিসিভ হয়।
আব্রাহাম;; হ্যালো… (ভারি গলায়)
আইরাত;; এই কোথায় আপনি এতো দেরি কেনো ফোন ধরতে??
আব্রাহাম;; দেরি করি বা ফোন না ই ধরি তাতে তোমার কি। মানুষকে বিরক্ত করা ছাড়া আর কি কোন কাজ নেই তোমার?

আইরাত;; আরে না না মানুষকে না শুধু আপনাকে।
আব্রাহাম;; কি বলবে জলদি বলো।
আইরাত;; না মানে আসলে ইয়ে মানে….
আব্রাহাম;; না মানে ইয়ে এগুলো বাদ দিয়ে বলো তো কি বললে।
আইরাত;; মিস ইউ ??
আব্রাহাম;; ঘুমাও রাত হয়েছে।
আইরাত;; আপনি তো আগে এতো আনরোমান্টিক ছিলেন না আব্রাহাম। আপনি এমন হলেন কেনো বলুন তো। আয় হায় আমি শেষ,, আমি তো আমার এমন জামাই কে চাই নি। এত্তো আনরোমান্টিক কেনো আপনি ধুর।
আব্রাহাম;; আইরাত কিছু কি খেয়েছো?
আইরাত;; না তো।

আব্রাহাম;; তাহলে এগুলো কি আবোল তাবোল বকছো। চুপচাপ গিয়ে ঘুমাও যাও।
আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই সে আব্রাহামের পাশ থেকে কিছুটা মেয়েলি আওয়াজ শুনতে পায়। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম তাকে বায় বলে ফোন কেটে দেয়। আইরাত কপাল কুচকে হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। যাই হোক এইসব ভাবনা আইরাত তার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পরেরদিন সকালের কথা ভাবতে থাকে। আব্রাহাম কে আরো একটু ভালো ভাবে প্যাচে ফেলতে হবে তার।

আব্রাহাম আইরাতের ফোন কেটে দিয়েই নিজের সামনে থাকা রাত্রির দিকে চোখগুলো খানিক ছোট করে এক ভ্রু উঁচু করে তাকায়। আব্রাহামের এমন ঘায়েল করা চাহনি দেখে রাত্রি তার ৩২ টা দাঁত বের করে দিয়ে হেসে ওঠে। রাত্রির এমন হাবলা মার্কা হাসি দেখে আব্রাহাম কপাল কুচকে রাগি ভাবে তার দিকে তাকায়। মূহুর্তেই রাত্রির হাসি টা গুম হয়ে যায়। সে মাথা নিচু করে ওরনার আচল টা দুই আঙুলের মাঝে পেচাতে থাকে। তাকে দেখে আব্রাহাম এবার বলে ওঠে…..

আব্রাহাম;; কি হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
রাত্রি;; না মানে মা তোকে খেতে ডাকছে।
আব্রাহাম;; যা আসছি।
রাত্রি;; না না তোকে আমার সাথে একদম নিয়ে যেতে বলেছে।
আব্রাহাম;; আমি তো ছোট কোন বাচ্চা না তাই না। যেতে পারবো তো তুই যা আমি আসছি।
রাত্রি;; বললাম তো তোকে সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছে।
আব্রাহাম;; আরে মেরি মা,, আচ্ছা চল।

আব্রাহাম আর না পেরে রাত্রির সাথে চলে গেলো। আসলে আব্রাহাম যেই বাড়িতে থাকে তার নিচের অংশে রাত্রিরা থাকে। রাত্রির বাবা একজন বড়ো পোস্টের সরকারি পুলিশ অফিসার ছিলেন যদিও তিনি এখন আর বেঁচে নেয়। রাত্রির মা আর রাত্রি কিছুটা পারসোনাল ভাবে আব্রাহাম কে চিনে থাকলেও পাবলিক প্লেসে তা প্রকাশ করে না। বাকি ৮-১০ টা মানুষের মতো তারাও আব্রাহামের বিরাট বড়ো ফ্যান এটাই দেখায়। তবে এই রাত্রি আর আব্রাহাম যে একই বাসার ওপর-নিচে থাকে তা সবারই অজানা। আব্রাহাম রাত্রি আর তার মা লাবনীর সাথে রাতের খাবার খেয়ে ওপরে তার রুমে এসে পরে।

আব্রাহাম তার রুমে গিয়ে কাচের দরজার ওপর নিজের হাত টা রেখে দাঁড়িয়ে পরে। চোখ দুটো তার বাইরে স্থীর। আব্রাহাম হঠাৎ তার মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। অবশেষে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নেয়। অনেক সময় কষ্ট মুখে ব্যাক্ত করতে হয় না। আসলে ব্যাক্ত করার প্রয়োজন হয় না। কিছু কষ্ট কিছু ব্যাথা একান্তই নিজের থেকে যায়। মানুষ বলে নিজের মনের কথা কাউকে খুলে বলে দিলে, শেয়ার করলে নাকি অনেক টাই কমে যায়। নিজেকে হালক অনুভব হয়।

কিন্তু অনেক সময় এই কষ্ট গুলো কারো সাথে ভাগাভাগি করা যায় না, কাউকে বলা যায় না। মন তাতে সায় দেয় না। থাক না কিছু ব্যার্থতা নিজের নামেই। আব্রাহাম নিজের মনের অব্যাক্ত যন্ত্রণা গুলো যেনো এখন সিগারেটের ধোঁয়ার মাধ্যমে উড়িয়ে দিতে লাগলো। ভালো লাগছে না কিছুতেই, কিছুতে ঠিক ভাবে মনও বসাতে পারছে না। অথচ কাল একটা শো আছে। আব্রাহাম আর এভাবে না থাকতে পেরে একদম রুমের ভেতরে চলে গেলো। রুমের লাইট সম্পূর্ণ নিভিয়ে দিলো। বাইরে থেকে ল্যাম্পপোস্টের কিছু আলো রুমের ভেতরে এসে পরেছে। হাল্কা বাতাসে ঘরের বড়ো বড়ো সাদা পর্দা গুলো উড়ছে। আব্রাহাম ভাবলেশহীন ভাবে ওপরের দিকে এক নয়নে তাকিয়ে থাকে। এভাবেই রাত টুকু কেটে গেলো।

আইরাত;; অয়ন ভাইয়া গ্যাস করো আমি তোমাকে কি বলতে যাচ্ছি!!
অয়ন;; কি?
আইরাত;; গ্যাস করো।
অয়ন;; আমি এই গ্যাস করাতে সবসময় ভুলই হই। এবারও হবো তো তুমিই বলো।
আইরাত;; ব্যাপার টা শুনে ৪৪০° এর ঝটকা খাবে।
অয়ন;; এমন কি?
আইরাত;; অনেক বড়ো কিছু।
অয়ন;; আচ্ছা এবার বলো তো।
আইরাত;; আব্রাহাম।
অয়ন;; আমি জানি তুমি ওকে অনেক মিস করো।
আইরাত;; ও ফিরে এসেছে।
অয়ন;; হ্যাঁ আমি…… কিহ?

আইরাত;; কিন্তু স্বীকার করছে না। ও মরে নি, বেচে আছে ও।
অয়ন;; বউমনি, শরীর ঠিক আছে তোমার। জ্বর টর আসে নি তো।
আইরাত;; ধুত্তুরি ভাইয়া আমি সিরিয়াস।
অয়ন;; না বউমনি হয়তো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। এটা কি করে…?
আইরাত;; আমি গত এক সপ্তাহের বেশি হবে তার সাথে আছি। অর্থাৎ কাজ করছি। ভাইয়া তুমি দেখলে সেখানেই পরে যাবে। ও হুবাহু আমার আব্রাহাম। কিন্তু ও মানতেই চায় না।

অয়ন;; এখন তো আমার ই বিশ্বাস হচ্ছে না।
আইরাত;; ওকে ফাইন তুমি একটা জায়গায় এসে পরো যত জলদি সম্ভব।
অয়ন;; আচ্ছা বউমনি আসছি, তুমি মেইল করে দাও এড্রেস টা।
আইরাত;; আচ্ছা।

এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয় তরপর অয়ন কে এড্রেস টা মেইল করে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে আজ সকাল থেকে আব্রাহামের কোন খোজ নেই। সে কোথায় আইরাত জানে না। বারবার আব্রাহাম কে ফোন দিয়ে যাচ্ছে বাট নো রেসপন্স। আইরাত একবার ভাবলো যে হয়তো সে তার শো তে। কিন্তু ফোন না ধরার সাথে কি কানেকশন। অনেক আগে থেকেই তো ফোন করে যাচ্ছে। যাই হোক আইরাত অফিসের কিছু কজ মিটমাট করে সোজা চলে যায় আব্রাহামের শো তে। আইরাত একদম তার মুখে মাস্ক টাস্ক পরে গিয়েছে যেনো কেউ না চিনে।

তবে আইরাত সেখানে গিয়ে এই যে আব্রাহাম কে খুঁজে কিন্তু তার দেখা আর মিলে না। তবে আইরাত হাটতে হাটতে একসময় একটা বেশ বড়ো আর খোলা মেলা জায়গা তে এসে পরে। তার কিছুদূর যেতেই বেশ কিছু মানুষের চিল্লাপাল্লার আওয়াজ আইরাতের কানে আসে। আইরাত ভাবে হয়তো কোন ঝামেলা পেকেছে তাই আইরাত আগেই তার প্যান্টের পকেটে থাকা রিভলবার টা হাত দিয়ে খামছিয়ে ধরে।

কিন্তু সামনে এগোতেই দেখে খোলা আকাশের নিচে আর ঘন সবুজ গাছের ওপরে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে আছে। আর তাদের সবার সামনে আব্রাহাম হাতে গিটার নিয়ে মুখে হাসির রেশ টেনে নিয়ে বসে আছে। আইরাত এগুলো দেখে নিজের আনমনেই হেসে ওঠে৷ যাহ বাবা, নিজে ভাবলো কি আর হলো কি। আইরাত সবার পেছনে দাঁড়িয়েই দেখতে লাগলো। পরিবেশ টা সুন্দর। একদম খোলা আকাশের নিচেই সবাই কে নিয়ে বসেছে।

শো এর যে হোস্ট ছিলো উনি বেশ হাই-ফাই একটা স্টেজে এরেঞ্জ করেছিলো সব কিন্তু আব্রাহামের সেটা পছন্দ হয় নি। সামনেই এত্তো বড়ো একটা জায়গা থাকতে আর এগুলো কেনো। আশে পাশে বেশ কিছু গাছ রয়েছে। সেগুল কিছুটা আর্টিফিশিয়াল ভাবে সাজানো হয়েছে। মানে সবকিছু মিলিয়েই বেশ সুন্দর। সবাই যেনো আব্রাহাম কে পেয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অনেকেই তাদের গালে হাত ঠেকিয়ে আব্রাহাম কে দেখছে। মাঝে মধ্যে হালকা ভাবে চিল্লিয়ে উঠছে। হঠাৎ করেই আব্রাহাম তখন গান ধরে…….

“কেনো কাছে তুই এলি
যদি আবার চলে যাবি
বল কেনো তাহলে স্বপ্ন দেখালি ❤️~~
~আমি জানি কোন একদিন
কোন এক নতুন ভোরে
দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে ✨
~~আমি জানি কোন একদিন
কোন এক নতুন ভোরে
দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে “
•••তোর সাথে ছিলো বাকি
কতো কথা বলবো একদিন
একাকী নিজের সাথে
করেছি তোর গল্প সারাদিন ~~
~`তোর কথা আসে ফিরে ফিরে
পথ হারানোর সব কবিতায়
আমি তোকে নিয়ে যাবো আবার
রুপকথার সেই বাড়িতে—–
আয় ফিরে ?……….
“আমি জানি কোন একদিন
কোন এক নতুন ভোরে
দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে ~~
“আমি জানি কোন একদিন
কোন এক নতুন ভোরে
দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে ~~

~`~`Mujhe khone ke baad ekdin
Tum mujhe yaad karooge
Phir dekhna milke ki mujhse
Tum fariyad karooge ❣️
~`~`Mujhe khone ke baad ekdin
Tum mujhe yaad karooge
Phir dekhna milke ki mujhse
Tum fariyad karooge ~ ??

শেষ হতেই সবাই ওওওওওওওওও করে ওঠে। তবে আব্রাহাম যখন গানটা গাচ্ছিলো তখন কেনো জানি সে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছিলো না। কথায় বলে মানুষ যা মুখে বা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না তখন তা গানের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। মুখে লেগে ছিলো আব্রাহামের বেলাগাম হাসি। থেকে থেকে খুব কম আইরাতের দিকে তাকাচ্ছিলো আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছিলো। আইরাত এতোক্ষন ভরা আব্রাহাম কেই দেখে যাচ্ছিলো। গানটাতে সত্যি হারিয়ে ফেলা মানুষ কে আবার আগের মতো করে কাছে পাবার প্রবল আকাঙ্খা ছিলো।
অবশেষে আরো প্রায় ঘন্টা খানিকের মতো সেখানে থেকে আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসে। আব্রাহামের বাইরে আসতেই আইরাত দ্রুত তার কাছে যায়।

আইরাত;; ওই জামাইজান দাড়ান।
আব্রাহাম;; তুমি এখানে কি করো?
আইরাত;; তুমি যেখানে, আমি সেখানে সেকি জানো না।
আব্রাহাম;; প্রচুর বেসুরা গলা ছিলো।
আইরাত;; এই চুপ করুন আর চলুন।
আব্রাহাম;; কোথায়?
আইরাত;; যেদিকে দুচোখ যায়।
আব্রাহাম;; মানে?
আইরাত;; মনে পরে কি কিছু? আমিও এভাবেই জিজ্ঞেস করতাম যে আমরা কোথায় যাচ্ছি আর তখন আপনি আমায় এই ডায়লগ টা মারতেন।

আব্রাহাম;; আমার কাজ আছে অনেক আমি পারবো না।
আইরাত;; আপনি যাবেন না আমার সাথে?
আব্রাহাম;; না
আইরাত;; যাবেন না?
আব্রাহাম;; না বললাম তো।
আইরাত;; তবে রে।
আইরাত হাতে একটা ইয়া বড়ো পাথর নিয়ে নিলো।
আব্রাহাম;; এই এই কি করছো?
আইরাত;; আমার সাথে এখন না গেলে এই পাথর দিয়ে প্রথমে আপনার গাড়ির হুলিয়া পালটে দিবো আর তারপর আপনার।
আব্রাহাম;; এ তো দেখি আচ্ছা মুশকিল রে বাবা,, আচ্ছা চলো।
আইরাত;; আপনি না আসলেই ঘি।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; হ্যাঁ ঘি কে যেমন সবসময় বাকা আঙুলে তুলতে হয়, ঠিক তেমন ভাবে আপনাকেও বাকা পথে রাজি করাতে হয়।

আব্রাহাম আইরাতের কাছ থেকে এসে পরে। তারপর আইরাত আর আব্রাহাম গাড়িতে ওঠে চলে যায়। আব্রাহাম শুধু বসে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো। তবে যেই রাস্তা গুলো দিয়ে যাচ্ছে সেগুলো আব্রাহামের বেশ চেনা। দেখতে দেখতেই এক সময় গাড়ি থেমে যায়। আব্রাহাম তার মাথা ঘুড়িয়ে আইরাতের দিকে তাকায়।
আইরাত;; নামুন নামুন।
আব্রাহাম নেমে পরে সাথে আইরাতও। আব্রাহাম এই জায়গা টা দেখে অবাক। কেননা এটা সেই পার্ক যেখানে আব্রাহাম একদিন আইরাত কে নিয়ে এসেছিলো।

আইরাত;; মনে পরে কিছু?
আব্রাহাম;;
আইরাত;; নাকি এখনো বলবেন যে মনে নেই।
আব্রাহাম;; আমরা এখানে কেনো এসেছি?
আইরাত;; আসুন।
আইরাত আব্রাহাম কে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায়।
আইরাত;; আমরা এটা করবো।
আব্রাহাম সামনে তাকিয়ে দেখে বাঞ্জি জাম্পিং। আইরাত তাকে এখানে নিয়ে আসবে আব্রাহাম তা ভাবেও নি। তবে আইরাতের কথায় আব্রাহাম হেসে দেয়।

আইরাত;; আজব, হাসার কি আছে?
আব্রাহাম;; তুমি করবে বাঞ্জি জাম্পিং, সিরিয়াসলি?
আইরাত;; হ্যাঁ তো?
আব্রাহাম;; তুমি উঁচু দেখে ভয় পাও।
আইরাত সরু চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; আমি উঁচু দেখে ভয় পাই তা আপনি কি করে জানলেন?
আব্রাহাম;; আব… আহাম। না মানে আইডিয়া করলাম আর কি।
আইরাত;; তো আইডিয়া করে কি মনে হলো?
আব্রাহাম;; পারবে না।

আইরাত;; আর যদি পারি তো?
আব্রাহাম;; যা বলবে তাই করবো।
আইরাত;; সত্যি?
আব্রাহাম;; সত্যি।
আইরাত;; ভেবে বলছেন তো?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; ফাইন।

আইরাত দ্রুত পায়ে একদম ওপরে চলে গেলো। আর আব্রাহাম সিওর ছিলো যে আইরাত পারবে না জাম্প করতে। তাই সে নিচে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে। কিন্তু বেশ সময় পার হয়ে যায় তবুও আইরাতের আসার নাম গন্ধ নেই তা দেখে আব্রাহাম কিছুদূর হেটে সামনে যায়। আর সামনে যেতেই সে অবাক। আইরাত সত্যি দুই হাত মেলে অনেক বেশিই উঁচু তে দাঁড়িয়ে আছে। জাম্প করে করে এমন অবস্থা। আব্রাহাম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আর ওদিকে আইরাত বুক ভরে দুইবার দম নেয়। চোখ গুলো বন্ধ করে নেয় সে।

সেইদিনের কথা মনে পরছে। আব্রাহাম তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। আর আইরাত চিল্লিয়ে চল্লিয়ে তার মাথা খেয়ে ফেলছিলো। হঠাৎ এভাবে থাকতে থাকতে আইরাত খেয়াল করে যে তার পেছনের বাধন টুকু বেশ আলগা হয়ে আসছে। তার পরমুহূর্তেই ধিরিম করে আইরাত কে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। আইরাত শুধু খিচে চোখ বন্ধ করে দিয়ে থাকে। ১০-১৫ সেকেন্ড পরই আইরাত নিচে গিয়ে আটকে যায়। পায়ের সাথে দড়ি বেধে নিচে ঝুলে আছে। তারপর তাকে ওপরে এনে ঠিক ঠাক ভাবে সব র‍্যাপ গুলো খুলে দেয়। আইরাত আবার দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আইরাত;; এখন যা বলবো তা যদি না শুনেন তাহলে খবর আছে আপনার।
আব্রাহাম;; ভয় লাগে নি?
আইরাত;; ভয়? ভয় কাকে বলে কেউ তা আমার কাছ থেকে শিখুক।
আব্রাহাম;; তাহলে!
আইরাত;; আচ্ছা ছাড়ুন না। এখন আমি যা চাইবো তাই দিবেন।
আব্রাহাম;; আচ্ছা কি চাই বলো।
আইরাত;; আপনাকে চাই আমার।
আব্রাহাম;; আইরাত, লিসেন। আমি জানি না কীভাবে আর বুঝাবো তোমাকে। আমি তোমার হাসব্যান্ড না।
আইরাত;; আমি মিথ্যা কথা ধরতে পারি আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; আইরাত Watch out!!

আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই আব্রাহাম খেয়াল করে যে আইরাতের থেকে বেশকিছু দূর একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে আর সে আইরাতের দিকেই গান তাক করে রয়েছে। ইন ফ্যাক্ট শুটও করে দিয়েছে। আব্রাহাম দ্রুত আইরাতের মাথার পেছনে হাত দিয়ে তাকে নিচের দিকে ঝুকিয়ে দেয়। গুলি টা গিয়ে আইরাতের গাড়ির গ্লাস লাগে যার ফলে গ্লাস টা ভেঙে ঝরঝর করে নিচে পরে যায়।

আইরাত তার পেছনে তাকিয়ে দেখে একজন ব্যাক্তি হাতে গান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কিছু একটা করতে যাবে তার আগেই আইরাত তার জুতোর সাইড থেকে ছুরি বের করে একদম তার হাত বরাবর তাক করে ছুরে মারে। আর ছুরিটা লোকটির হাতে লেগেও যায়। গান টা তার হাত থেকে নিচে পরে যায়। ব্যাথায় সে তার এক হাত দিয়ে আরেক হাত চেপে ধরে। চিল্লাপাল্লার আওয়াজ পেয়ে গার্ড রা সব এসে পরে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসে আর এক সেকেন্ড দেরি না করে চলে আসে। এবার আব্রাহাম ড্রাইভ করছে।

আব্রাহাম;; লোকটা কে ছিলো?
আইরাত;; জানি না।
আব্রাহাম;; তো এভাবে হুট করেই একটা পাবলিক প্লেসে গুলি চালালো কেনো?
আইরাত;; জনি না।
আব্রাহাম;; হুয়াট দা হেল! তাহলে কি জানো?
আইরাত;; বললাম তো জানি না। আমি কি সবার পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুড়ি নাকি।
আব্রাহাম;; তুমি তোমার জুতার ভেতরে চাকু রাখো?
আইরাত;; হ্যাঁ এটা আমার এক চোরাই বুদ্ধি। মারতে কাজে লাগে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ হতেই পারে একবার যখন মেরেছো তখন বারবার মারতেই পারো।
আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম;; মানে এই যে আমরা এখন একটা গ্লাস ভাঙা গাড়িতে বসে আছি।
আইরাত;; গ্লাসে বুলেট লেগেছিলো।
আব্রাহাম;; তো এখন কোথায় নামবে?
আইরাত;; মন তো চাইছে আপনার সাথেই থেকে যাই কিন্তু অফিসে কাজ আছে। আর এই লোকটা কে ছিলো তা জানার আছে।
আব্রাহাম;; থ্যাংক গড আমি বেচে গেছি।
আব্রাহাম ড্রাইভ করে আইরাতের অফিসের সামনে নেমে পরে। গার্ড কে ডাক দিয়ে সেই ভাঙা গাড়ি টাকে রিপ্যার করার জন্য বলা যায়। আব্রাহামের যে গাড়ি ছিলো সে তাতে উঠে পরে। আইরাতও ভেতরে চলে যাবে তার আগেই আব্রাহাম বলে ওঠে…..

আব্রাহাম;; আইরাত..!
আইরাত;; হ্যাঁ
আব্রাহাম;; অনেক পালটে গেছো তুমি। অনেকটাই বেশি। রাত-দিনের মাঝে যেমন পার্থক্য তেমন আগের তুমি আর এখনের তুমির মাঝেও তাই।
আইরাত;; মানুষ পরিবর্তনশীল আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; আমি যাই আর হ্যাঁ প্লিজ আমার পেছনে একটু কম লাগো।
আইরাত;; মানুষ তার কাজ থেকে ছুটি কি করে নিতে পারে বলুন। আপনার পেছনে লাগাই তো আমার একমাত্র কাজ। আর হ্যাঁ মেয়েদের থেকে দূরে থাকবেন।
আব্রাহাম;; আমি কেনো তোমার কথা শুনবো।
আইরাত;; বাধ্য আপনি।
আব্রাহাম;; ওয়েট ফর সারপ্রাইজ……

এই বলেই আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে সাই করে চলে যায়। আইরাতও কিছুক্ষন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে অফিসের ভেতরে চলে যায় সবার হাওয়া টাইট করতে।
আইরাত এই ভেবে পাচ্ছে না এখন যে হুট করেই গুলি কে আর কীভাবে চালালো। আর কেনোই বা চালালো। আইরাত তো তার জানা মতে এখন আর কারো সাথে ঝামেলা করে নি তাহলে এভাবে না বলে কয়েই গুলি। তবে হ্যাঁ এটা মানতেই হবে যে আজ আব্রাহাম থাকার ফলে আইরাত বেচে গেছে। আব্রাহাম যদি সময় মতো আইরাতের মাথার পেছনে হাত দিয়ে তাকে নিচে না নামিয়ে দিতো তাহলে বুলেট সোজা আইরাতের মাথার পেছনে গিয়ে লাগতো। এগুলো ভাবতে ভাবতেই আইরাত অফিসের ভেতরে চলে গেলো, যেতেই দেখে অয়ন……
.
আইরাত;; ভাইয়া!!
অয়ন;; বউমনি এসেছো!
আইরাত;; আচ্ছা তুমি যাও নি কেনো। এড্রেস যে দিলাম তোমাকে।
অয়ন;; বউমনি আই এম সো সরি আসলে কাজের চাপে পরে গিয়েছিলাম তো অনেক বেশি তাই যেতে পারি নি সরি।
আইরাত;; আচ্ছা ইট’স ওকে।
অয়ন;; কি হয়েছে এতো রাগি রাগি লাগছে যে?
আইরাত;; মরতে মরতে বেচেছি আজ।
অয়ন;; মানে?

আইরাত;; জানি না, আমি আব্রাহাম কে নিয়ে বাইরে ছিলাম তখন হুট করেই গুলি চালানো হয়েছিলো ভাগ্যিস আব্রাহাম বাচিয়েছে আমায়। আরে অনেক শোরগোল ছিলো সেখানে আর আমি তো আব্রাহামের সাথে কথা বলছিলাম খেয়াল করি নি। কিন্তু ও আমায় বাচিয়ে নেয়।
অয়ন;; আসলেই কি আব্রাহাম আছে মানে কীভাবে সম্ভব এটা। অবিশ্বাস্য।
আইরাত;; এর জন্যই বলেছিলাম যে তুমি সেখানে যাও।
অয়ন;; আচ্ছা তো…….
রাশেদ;; ম্যাম?
আইরাত;; হ্যাঁ
রাশেদ;; খুব বেশিই খারাপ খবর আছে।
আইরাত;; কি হয়েছে আবার?
রাশেদ;; ম্যাম, আসলে রায়হান জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছে।
আইরাত;; কিহ?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।

আইরাত;; কি এগুলো? এরা কি ঘাস খেয়ে পুলিশ হয়েছে নাকি যত্তসব। এতো বড়ো একটা ক্রিমিনাল জেল থেকে উধাও হয়ে গেলো। পুলিশ অফিসার দের চোখ ফাকি দিয়ে। ইয়ার্কি হচ্ছে আমার সাথে। বলদ গুলা। জেলে কি ওরা বসে বসে লুডু খেলছিলো নাকি। এই সব কটা, সবকটা কে চাকরি থেকে বিদায় করো। রাশেদ! (গলা ফাটিয়ে)
রাশেদ;; জ জ্বি জ্বি ম্যাম।
আইরাত;; মানে ও কীভাবে পালালো সবাই কে ফাকি দিয়ে?
রাশেদ;; ম্যাম আসলে ঘটনা টা ঘটেছে বেশ কয়েক ঘন্টা আগে কিন্তু আপনি তো বাইরে আব্রাহাম স্যারের সাথে ছিলেন তাই বিরক্ত…….

আইরাত;; আমি পাগল হয়ে যাবো। (চিল্লিয়ে)
আইরাতের রাগে এই খবর টা যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতো ছিলো। আইরাত চিল্লিয়ে তার কেবিনে চলে গেলো। মাথা প্রচুর গরম হয়ে আছে। আইরাতের যেতেই অয়ন রাশেদ কে বলে ওঠে……..
অয়ন;; আব্রাহাম….
রাশেদ;; যখন আমি দেখেছিলাম উনাকে আমার দুই রাত ভরা জ্বর ছিলো।
অয়ন;; তাহলে এতোদিন কোথাও ছিলো ও। আমাদের কাছে কেনো এলো না। পুলিশ রা যে এতো খোঁজ চালালো পেলো না কেনো?
রাশেদ;; প্রশ্ন তো অনেক আছে করার মতো কিন্তু জবাব একটারও নেই।
অয়ন;; আমি যাই।
রাশেদ;; জ্বি।

অন্যদিকে আব্রাহাম পাকাচ্ছে আরেক তালগোল। আসলে সে এই তালগোল টা ইচ্ছে করেই পাকাচ্ছে। কারণ হচ্ছে সে সব জেনে গেছে। অর্থাৎ সেইদিন রাতে যে লোকটাকে আব্রাহাম কে মারার জন্য পাঠানো হয়েছিলো সে যে আর কেউ না বরং আইরাত নিজেই পাঠিয়ে ছিলো তা আব্রাহাম জেনে গেছে। আব্রাহাম এটাও টের পেয়েছে যে আইরাত কেনো লোকটাকে পাঠিয়েছিলো। শুধু টেস্ট করার জন্য। তো আইরাত যেহেতু আব্রাহামের সাথে এমন করলো, আব্রাহামের একটা ছোট খাটো টেস্ট নিলো তাহলে আব্রাহাম তো আর এতো সহজে ছেড়ে দিতে পারে না তাই না।

কিছু না কিছু একটা করতে তো হবেই। তাই আইরাতের মতো করে সেও একটা গোন্ডগোল পাকিয়েছে। শুধুই আইরাতের রিয়েকশন দেখার জন্য। ওইযে কথায় আছে না “যেমন কুকুর তেমন মুগুর” সেম তাই। আইরাত কে রিটার্ন গিফট দিতে হবে না। আব্রাহাম তার বাড়ি এমন ভাবে সাজাতে বলেছে যেনো দেখে মনে হয় বিয়ে বাড়ি। আরে হ্যাঁ বিয়েই। তবে মিছে মিছে। আর আব্রাহাম একজন পাবলিক ফিগার হওয়াতে তার শুধু নিঃশ্বাস ছাড়তেও তা ভাইরাল হয়ে যায় বা মিডিয়া জেনে যায়। তখন তো আব্রাহামের বিয়ের খবর অবশ্যই ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে। আব্রাহাম আরামছে বসে বসে গান শুনছে।

আইরাত তার কেবিনে চোখ বন্ধ বসে আছে। রায়হান জেল থেকে পালিয়ে গিয়েছে। কি করে হলো এটা৷ রায়হান যে চুপ করে বসে থাকার মতো লোক না তা আইরাত জানে। কে জানে আবার কোন দন্ড বাধিয়ে দেয়। এখন যেনো আইরাত আর কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। আইরাত বসে ছিলো নিজের কেবিনে তখনই রাশেদ আসে।
রাশেদ;; ম্যাম আসবো?
আইরাত;; এসো।
রাশেদ;; ম্যাম তনয়ার সাথে আপনার প্রজেক্ট সাইন করার কথা ছিলো।
আইরাত;; কোথায় ও?
রাশেদ;; নিজের কেবিনে।
আইরাত;; আমি যাচ্ছি।

আইরাত সোজা চলে গেলো তনয়ার কাছে। রাশেদ বেশ বুঝতে পারছে যে একে তো নিজের ওপর এমন একটা জনমানব জায়গায় গুলি চলেছে, তার মধ্যে আবার এই রায়হানের জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার খবর। সব মিলিয়ে যেনো আইরাত খুব টেনশনে আছে। আইরাত তনয়ার কাছে গিয়ে দেখে তনয়ার মুখ টা কেমন গোমড়া।
আইরাত;; কিরে কি হয়েছে তোর?
তনয়া;; দিল টুট গায়া ?
আইরাত;; ছ্যাকা খাইছোস? কেডায় দিলো?
তনয়া;; কিছু না।
আইরাত;; শোন আমি তোকে আগে থেকেই বলে দিলাম ওকে প্লিজ মন খারাপ করিস না।
তনয়া;; হয়েছে কি?

আইরাত;; আমি এইবার তোর সাথে কোন প্রজেক্ট সাইন করতে পারবো না শুধু তোর সাথে না আমি এবার কোন প্রজেক্টই সাইন করতে পারবো না।
তনয়া;; আচ্ছা থাক বুঝতে পেরেছি।
আইরাত;; হ্যাঁ আমি অনেক টেনশনে আছি আর আমার বেশ কিছু কাজ আছে ব্যাক্তিগত তো…..
তনয়া;; আরে বেইবি ইট’স ওকে। বুঝেছি আমি।
আইরাত;; আচ্ছা এবার তুই বল যে তোর মন কেনো খারাপ?
তনয়া;; তুই খবর জানিস না?
আইরাত;; হাহ আর খবর। নিজের খবরেরই শেষ নেই আর খবর জেনে কি করবো।
তনয়া;; অর্নীলের বিয়ে।
আইরাত;; মানে?

তনয়া;; আরে মানে আব্রাহামের আর কি ওর তো বিয়ে হতে যাচ্ছে।
আইরাত;; গবর মাখা জুতার বারি না খাইতে চাইলে চুপ কর।
তনয়া;; বিশ্বাস করিস না আমায় তাই না। ওকে ওয়েট। এই দেখ
এই বলেই তনয়া গিয়ে টিভি অন করে দিলো। আর টিভি টা অন করতেই বাপরে বাপ এক একটা চ্যানেলে যেন জার্নালিস্ট রা ফাটা বাশের মতো গলায় একটা কথাই লাগাতার বলে যাচ্ছে “” অবশেষে, নিজের জীবনে আরেক জনের আগমন ঘটলো। নিজের লাইফ পার্টনার কে নিয়েই এলেন আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। বিয়ে করছেন তিনি””। ব্যাস এই টুকু বলতেই তনয়া টিভি বন্ধ করে দিলো। টিভি অফ করাতে আইরাত যেনো কিছুটা চমকে উঠলো কেননা আইরাত এক ধ্যানে টিভির দিকে তকিয়ে ছিলো।

তনয়া;; কিরে বিশ্বাস হলো তো এবার?
আইরাত;; না।
তনয়া;; এহ??
আইরাত;; যেই বান্দা আগে থেকেই শাদি-শুদা সে আবার কি করে বিয়ে করবে বল।
তনয়া;; বুঝলাম না।
আইরাত;; বিয়ার খেতা পুরি। আমিও দেখমু বিয়া কেমনে হয়।
আইরাত নিজের জেকেটের ওপরের কিছু বোতাম ঢিলা করতে করতে দ্রুত পায়ে তনয়ার কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। এদিকে তনয়া ঠোঁট উল্টিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগা কোনটা মাথা কোনটা কিছুই বুঝতে পারছে না। আইরাত কে এভাবে বাতাসের গতিতে যেতে দেখে রাশেদ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; রাশেদ!
রাশেদ;; জ্বি
আইরাত;; দ্রুত অয়ন ভাইয়া কে বলো আমার কাছে আসতে দ্রুত।
রাশেদ;; বলছি।
রাশেদ অয়ন কে ইমারজেন্সি ফোন করে ডাকে৷ অয়ন তার ১০-১৫ মিনিট পরেই অফিসে এসে পরে। আইরাত কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত সোজা অয়নের হাত ধরে “ভাইয়া চলো” এটা বলেই গাড়িতে৷ আইরাত এতো জোরে ড্রাইভ করছে যে অয়ন কে তার সীট শক্ত ভাবে ধরে রাখতে হচ্ছে। আইরাত বেশ মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে এই রাস্তা টুকু যদি সে উড়ে যেতে পারতো তাহলে হয়তো তার ভালোই হতো।
অয়ন;; আইরাত বইন আমার কি হয়েছে বলবে তো। এতো জোরে জোরে ড্রাইভ করলে এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। একটু আস্তে।

আইরাত;; এখন আস্তে ধীরে কাজ করার সময় নেই। আব্রাহাম অনেক বেশি বাড় বেড়ে গেছে। মানে এই ছেলে কে কিছু বলি না দেখে একদম মাথায় চড়ে বসেছে। শুনেছি প্রেমের মরা জলে ডুবে না কিন্তু একে আমি ডুবিয়েই ছাড়বো। নিজেও ডুববো আর ওকেও ডুবাবো।
অয়ন;; কথার কোন কিছু বুঝছি না। আর এখন কি আমরা আব্রাহামের কাছে যাচ্ছি?
আইরাত;; বিয়ে ভাঙতে যাচ্ছি। বহুত পুরানা এক্সপেরিয়েন্স আছে বিয়ে ভাঙার।
অয়ন;; কার বিয়ে, কিসের বিয়ে?
আইরাত;; আব্রাহামের বিয়ে।

অয়ন;; বিয়ে তো আব্রাহামের হয়ে গেছে, তাও তোমার সাথে।
আইরাত;; কত্তো বড়ো খচ্চর ঘরে বউ থাকতে আরেক বার বিয়ে করতে যাচ্ছে। নিকুচি করেছে ওর বিয়ের। একদম আজীবনের জন্য বিয়ের স্বাদ মিটিয়ে দিবো। চুল টেনে ছিড়ে দিবো আমি ওর।
অয়ন;; কুল কুল কুল কুল কুল।
আইরাত;; ধুর, আমি কুল ই আছি ?।
অয়ন;; ?

আইরাত এমন বকর বকর করেই আব্রাহামের বাড়ির সামনে চলে গেলো। কিন্তু এখানে বাধে আরেক বিপত্তি। কেননা বাড়ির সামনে প্রায় অনেক গার্ড। আইরাত গাড়ির জানালা দিয়ে তার মাথা বের করে গার্ড দের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে….
আইরাত;; ওও চেলাপেলা যারাই আছো জলদি সামনে থেকে সরো।
গার্ড;; ম্যাম সরি আমরা সরতে পারবো না। স্যারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আইরাত;; ওয়াও,,নিষেধাজ্ঞা রাইট।
গার্ড;; জ্বি ম্যাম স্যার আপনাকে ভেতরে যেতে দিতে মানা করেছে।

আইরাত;; পোলার তো দেখি মাথার চুল থেকে শুরু করে একদম পায়ের নখ অব্দি খালি কলিজা আর কলিজা। আমাকে না করেছে। আচ্ছা আমিও দেখবো কীভাবে না করে ও আমাকে।
আইরাত সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। অয়ন অবাক হয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। মানে আজব গার্ড গুলো আইরাতকে ভেতরে যেতে মানা করলো আর আইরাত এতো ভালো কবে থেকে হলো যে বলা মাত্রই সোজা সেখান থেকে চলে এলো। মানে কি? আইরাত কিছু না বলেই গাড়ি নিয়ে তো এসে পরেছে। তবে এবার উলটো ঘুড়ে।

অর্থাৎ গাড়ি নিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে নিয়েছে। আর এতো জোরে মোড় ঘুড়িয়েছে যে অয়ন আবার সীট শক্ত করে চেপে ধরে। আইরাত কিছু না বলেই হাওয়ার গতিতে গাড়ি নিয়ে যায় আব্রাহামের বাড়ির মেইন গেটের দিকে। গাড়ি সাই সাই করে গেটের দিকে এগিয়ে আসছে। কেউ এই গাড়ির নিচে পরলে সেখানেই সোজা ইন্না-লিল্লাহ। গার্ড রা প্রথমে আইরাতের গাড়িকে আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু এটা গাড়ি নাকি কোন লাগাম ছাড়া ষাড় কে জানে।

গাড়ির নিচে পরে যাওয়ার ভয়ে সকলেই গাড়ির সামনে থেকে বেশ দূরে সরে এসে পরে। আর আইরাত কানের পর্দা ফাটানোর মতো একটা বিকট শব্দে বাড়ির গেইট টা উড়িয়ে নিয়ে যায়। গেট পুরো ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে। আব্রাহাম, রাত্রি আর তার মা লাবনী সবাই বাড়ির ভেতরেই বাকি দিনগুলোর মতো বসে ছিলো। কিসের বিয়ে কিছুই না তবে একটা ফ্যামিলি গেট-টুগেদার রেখেছিলো আর বাড়ি সাজিয়েছে। লাবনী আব্রাহাম কে বাড়ি সাজানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আব্রাহাম হেসে তা উড়িয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ বিয়ে ছাড়াই বিয়ের মতো সাজ। তারা শান্তিতে ভেতরে বসে ছিলো কিন্তু বাইরের এমন শব্দে তাদের মনে অশান্তি নামিয়ে দিলো।

আইরাত;; উফফফফফফ, দারুন ছিলো তো এটা। সেই মজা লাগলো। ভাইয়া তু…….
আইরাত পাশে তাকিয়ে দেখে অয়ন চোখ মুখ সব খিচে বন্ধ করে রেখেছে।
আইরাত;; ভাইয়া শেষ শেষ সব শেষ। জিন্দা আছো।
অয়ন ঘেমে গিয়েছে ভয়ে।
অয়ন;; আমি ক্যান আসছিলাম তোমার সাথে বউমনি। ছাইরা দেও মা কাইন্দা বাচি।
আইরাত;; তুমি ভেতরে যাবে?
অয়ন;; আসছি।
আইরাত;; আমি গেলাম।

আইরাত গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। ভেতরে গিয়ে দেখে বেশ কিছু মানুষ জন। একটা মেয়ে বসে আছে আর তার পাশেই আব্রাহাম। আইরাত বিনা বাক্যে সোজা আব্রাহামের কাছে চলে গেলো। আব্রাহাম ভাবেও নি যে আইরাত এইভাবে তার বাড়িতে এন্ট্রি করবে। আব্রাহাম বাকা চোখে তাকিয়ে দেখে আইরাতের বাম হাতে গান। আইরাত বাড়ির ভেতরে যখন আসে তখন আইরাত চিল্লিয়ে বলে ওঠে…
আইরাত;; এই বন্ধ করো এইসব আজাইরা বিয়ে টিয়ে। কোন কিছুই হবে না, কোন বিয়ে হবে না এখানে। সব বন্ধ।
আব্রাহাম;; ওওও গেট টাই ভেঙে দিলে।

আইরাত;; আপনাকেও ভেঙে দিতে দুই সেকেন্ড সময় লাগবে না আমার আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; আর কতো ভাঙবে।
আইরাত;; বিয়ে করছেন আপনি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ মন চাইলো তাই।
আইরাত;; আপনি বিয়ে কেনো করছেন? মানে কি এটা লোক দেখানোর জন্য নাকি শুধুই আমাকে দেখানোর জন্য কোনটা বলুন তো।

আব্রাহাম;; দুটোই। এবার যাও প্লিজ। আমি তোমাকে ইনভাইট করি নি সো বিন বুলাই মেহমান হয়ে এসো না।
আইরাত;; আমি কোন মেহমান না। যাজ্ঞে ছাড়ুন এখন আমি কথার প্যাচ খেলতে চাচ্ছি না। এই বিয়ে বন্ধ করুন।
আব্রাহাম;; আর যদি না করি তো।
আইরাত;; এখানে যে কটা মানুষ আছে সব মরবে। আর লাস্টে প্রথমে আপনাকে মারবো তারপর নিজে মরবো।
আব্রাহাম;; আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছো। সাহস আছে?
আব্রাহামের কথায় আইরাত রাত্রির দিকে রিভলবার তাক করে ধরে। সবাই চিল্লিয়ে ওঠে।
আব্রাহাম;; For your kind information ও বউ না। বউ এখনো এখানে আসেই নি।

আইরাত;; মিথ্যা।
আব্রাহাম;; হুয়াট?
আইরাত;; হাহাহাহা, আমাকে কি?। আমাকে কি পাগল মনে হয়। নাকি আমি মেয়ে দেখে আমাকে হালকার ওপরে নেন কোনটা বলুন তো।
আব্রাহাম;; প্রথম টা।
আইরাত;; এটা কোন বিয়েই না রাইট। এটা শুধু বিয়ের ঢং। কোন বিয়ে এখানে হচ্ছেই না।
আব্রাহাম;; কেনো আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করছো?
আইরাত;; মানুষ টাই যখন নিজের হয় তখন আর বলে কয়ে ইন্টারফেয়ার করতে হয় না।
আব্রাহাম;; আইরাত ত……..

আইরাত;; Attention everyone… এখানে কোন বিয়ে টিয়ে হচ্ছে না। আর সামনে এই যে এই ছেলেকে দেখছেন সবাই এই আমার জামাই, আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা, আমার সব। আমদের বিয়েও হয়েছে। আর এতো কিছু হবার পর কেউ কি করে আশা রাখে যে আব্রাহাম কে আমি আবারও বিয়ে করতে দিবো।
আব্রাহাম;; আইরাত সিন ক্রিয়েট করো না।
আইরাত;; যেই মেয়ে আপনার দিকে নজর দিবে আল্লাহ ওকে আমি কি যে করবো।

আব্রাহাম;; Can you please stop this nonsense?!
আইরাত;; বের হন সবাই এখান থেকে কোন বিয়ে টিয়ে হচ্ছে না। সবাই যার যার বাড়ি যান।
আইরাতের কথায় সবাই এক এক করে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। আইরাত দেখে আব্রাহাম দুই হাত ভাজ করে মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত তার দাত দিয়ে ঠোঁট গুলো চেপে হেসে ওঠে।
আইরাত;; হায়য়য়য়য়য়য়, আমার শরম লাগে তো জামাই এভাবে তাকাইলে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৫৮+৫৯+৬০

আব্রাহাম;; তুমি আসলেই পাগল।
আইরাত;; পাগল ছাড়া দুনিয়া চলে না।
আব্রাহাম;; সব নাটক শেষ নাও হুয়াট?
আইরাত;; এখন আর কি কিছুই না। কাল সকালে টিভি চ্যানেলে বড়ো বড়ো অক্ষরে হ্যাড লাইন হবে ‘”ভেঙে গেলো আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী উপস সরি আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীলের নাটক আই মিন বিয়ে”‘। আমি আসি আজ, থাকুন আমার জামাইজান। টাটা, লাপ্পিউ।

এই বলেই আইরাত তার পেছনে ঘুড়ে। দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। চোখ গুলো তার বড়ো বড়ো হয়ে গেছে আব্রাহামকে দেখে। অপলকহীন ভাবে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে অয়ন। যেনো কোন ভুত দেখে ফেলেছে। আইরাত অয়নের কাছে এলেই অয়ন কি বলবে কি বলবে না তা হকচকিয়ে উঠে। আইরাত ক্ষীণ হাসে অয়ন কে দেখে। পরক্ষণে আহসানও আসে সেখানে।

আহসান;; আইরাত অনেক ঝামেলা হয়েছে এখন চলো এখান থেকে।
আইরাত;; তুমি কখন আসলে?
আহসান;; এসেছি এখন চলো।
আহসান আইরাতের হাত ধরে নিয়ে বাইরে এসে পরে।
তাদের চলে যেতেই আব্রাহাম দেখে রাত্রি তার দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম রাত্রি কে বা অন্য কাউকে এইসবের ব্যাপারে কিছুই বলে নি। তারা এইসব কিছুই জানে না। তাই হঠাৎ এমন একটা কান্ড হওয়াতে তারা সবাই অবাক।
রাত্রি;; আব্রাহাম ওই ম……….

আব্রাহাম;; রাত্রি প্লিজ, আমি এখন এইসব কোন কিছুর ব্যাপারেই কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।
এই বলেই আব্রাহাম সিড়ি বেয়ে ওপরে তার ঘরে চলে যায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬৪+৬৫+৬৬