নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬৪+৬৫+৬৬

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬৪+৬৫+৬৬
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাতের চলে যাবার পরে আব্রাহাম সোজা তার ঘরে এসে পরে। সে তো শুধু আইরাতকে একটু ঝটকা দিতে চেয়েছিলো, অবশ্য আব্রাহাম আগে থেকেই জানতো যে আইরাত এটা জানার পর অনেক বড়ো সড়ো কিছু একটা করবে। ভাগ্যিস বউ নামে কোন মেয়েকে এখানে পায় নি সে তা নাহলে যে কি করতো আল্লাহ জানেন। তবে আব্রাহামের এবার বেশ রাগ লাগছে৷ খুব বেশি। আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো খামছে ধরে সারা ঘরে পায়চারি করে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও রাগ থামার নাম নেই। অবশেষে আব্রাহাম তার ফোন টা তুলে একজন কে ফোন দেয়।

আব্রাহাম;; হ্যালো, তনয়া!
তনয়া;; জ্বি স্যার বলুন।
আব্রাহাম;; এই যে এই আহসান আছে না এর পুরো বায়োডাটা আমার চাই পুরো বায়োডাটা ওকে?
অনয়া;; জ্বি স্যার ও আহসান আহমেদ। আইরাতের সাথেই কাজ করে, এক বছর হবে সে আইরাতের সাথে আছে।
আব্রাহাম;; এক বছর তাই না৷
তনয়া;; জ্বি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। এবার একটু বিষয় টা ক্লিয়ার করি। আইরাতের সাথে কাজ করে এই যে এই তনয়া আছে সে আসলে কোন নিজের কোম্পানির সুবিধার্থে আইরাতের সাথে কাজ করে না। এই তনয়া নামে মেয়েটা আব্রাহামেরই পাঠানো একটা মেয়ে। যে বেশ কিছুদিন যাবৎ আইরাতের সাথে আছে। তবে তনয়ার একটা ছোট খাটো কোম্পানি আছে বটে।আর সেটার অজুহাত দিয়েই সে আইরাতের সাথে রয়েছে।

আসলে ব্যাপার টা এতো টাই চালাকির সাথে করা হয়েছে যে আইরাত টেরও পায় নি। অবশ্য তনয়া যখন আইরাতের সাথে কাজ করতে শুরু করে তখন আইরাত বেশ ইনফরমেশন নিয়েছিলো তনয়ার নামে। তবে সে এটা জানতো না যে তনয়ার পেছনে আব্রাহাম রয়েছে। আর আব্রাহাম তখন নিখোঁজ ছিলো। আইরাত বুঝতোই বা কি করে যে তার আব্রাহাম আছে আর এই তনয়ার পেছনেও সেই আছে। সো এই যে এই আব্রাহামের কনসার্ট, সেখানে আইরাতকে নিয়ে যাওয়া, আব্রাহামের মুখোমুখি করা আইরাত কে, এগুলো সবই আব্রাহামের প্রিপ্ল্যান ছিলো। তবে এর মাঝে আরো একটু টুইস্ট বাকি আছে।

আব্রাহাম চুপ করে বিছানার ওপর বসে পরে। রাগে হাত-পা কাপছে। আর কেনো রাগে কাপছে সেটাও তার জানা। সেটার কারণ আহসান। আব্রাহাম আহসান কে নিয়ে বেশ ক্ষেপে রয়েছে। আহসানের এতো টা ক্লোজ আসা আইরাতের, স্পেশালি আইরাতের হাত ধরা, এতো কথা বলা সেগুলো যেনো আব্রাহাম সহ্য করতেই পারে না। আর একটু আগেও নিচে আহসান কীভাবে আইরাতকে টেনে বাইরে নিয়ে গেলো তাও আব্রাহাম দেখেছে। আব্রাহাম রাগে হাতে থাকা ফোন টা একটা আছাড় মারে।

আইরাত;; কিন্তু এমন করার মানে কি? কেনো করছে ও। ও কি আমার ক্লিয়ার কথা বুঝে না নাকি আজব।
রাশেদ;; আমি জানি না ম্যাম,, তবে কবির চেয়েছে যে যত জলদি সম্ভব তত জলদি আপনার সাথে দেখা করতে।
আইরাত;; এখন সে কোথায়?
রাশেদ;; ওইযে ম্যাম সামনে আসতাছে।

রাশেদের কথায় আইরাত তার পেছনে তাকিয়ে দেখে কবির আসছে। এই হচ্ছে কবির, বেচারা বেশ ভালোই। গত দুই বছর যাবৎ এই আইরাতের পেছনে পরে আছে, উদ্দেশ্য বিয়ে। এই নিয়ে অনেক ঝামেলাও হয়েছে। না জানি কতো হাজার বার আইরাত তাকে রিজেক্ট করেছে। একবার তো এও হয়েছিলো যে এই কবির পাগলের মতো করে আইরাতকে না বলে কয়েই তাদের বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করে দিয়েছিলো।

আর মিডিয়ার স্বাভাব তো সবারই জানা। তিল থেকে তাল করতে এদের বেশি একটা সময় লাগে না। এখানেও ঠিই তাই হয়েছে। সবকিছু ভালোই ছিলো কিন্তু যেইদিন আইরাতের লাইফের সর্বপ্রথম এওয়ার্ড ফাংশন ছিলো ঠিক তার একদিন আগেই এই আইরাত আর কবিরের বিয়ের ভুয়া এনাউন্সমেন্ট টা হয়েছিলো যা আইরাত টিভি চ্যানেল থেকে জানতে পারে। আর এটা জেনে তো আইরাতের মাথা প্রায় ঘুড়ে পরে যাওয়ার উপক্রম ছিলো।

তাই সব কিছু হ্যান্ডেল করার জন্য আর নিজের এওয়ার্ড শো তে যেনো কোন ন্যাগেটিভ ইফেক্ট না পরে তাই দ্রুত আইরাত কবিরের সাথে কথা বলে। আইরাত তাকে জীবনেও বিয়ে করতে পারবে না, সাফ পরিষ্কার মানা করে দিয়ে আইরাত সেই নিউজ টা ফেইক প্রমাণ করে দেয়। অতঃপর সেই ব্যাপার টা কেটে যায়। কিন্তু ব্যাপার কেটে গেলেও কেটে যায় নি সেই মানুষ টা কবির। কবির ওর মতো করে লেগেইছিলো আইরাতের পেছনে এমনকি এখনো আছেই। এখনো সে আইরাতের পেছনে ঘুড়েই। সে প্রায়ই আইরাতের খোঁজে তার অফিসে আসে। আজও এসে পরেছে। আইরাত কবিরের দিকে চোখ ছোট ছোট করে কঠোর মুখ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো আর রাশেদ আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে তার এক হাত মুখে ঠেকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

কবির;; কেমন আছো আইরু?
আইরাত;; বর্তমানে টক, ঝাল, মিষ্টি সবই আছি। ওহহ না না সরি মিষ্টি না। এটা আমি পছন্দও করি না আর আমায় সুটও করে না।
কবির;; তুমি তো এমনিতেই যে মিষ্টি আরো মিষ্টি হলে ডায়বেটিস হয়ে যবে তো।
কবিরের কথায় রাশেদ ফিক করে হেসেই দেয়। আইরাত চোখ কিছুটা গরম করে দিয়ে রাশেদের দিকে তাকায়।
রাশেদ;; আহাম,,আহাম।
আইরাত;; কবির লিসেন, আমি পারবো না। সম্ভব না। আমি অন্য একজন কে ভালোবাসি। আমি ম্যারিড কবির।
কবির;; কিন্তু আব্রাহাম তো আর বেচে নেই, তাহলে তু…….
আইরাত;; ব্যাস ওখানেই থেমে যাও। যেটুকু বলেছো সেখানেই থেমে যাও আর বলো না। কে বলেছে আব্রাহাম নেই, ও আছে।

কবির;; একটা লাস্ট চান্স দেওয়া যায় না?
আইরাত;; Ohh for god sake stop,, what do you mean by last chance… আমাদের কি আগে কোন সম্পর্ক ছিলো নাকি যে তা মাঝে ভেঙে গিয়েছিলো আর এখন আমি তোমাকে লাস্ট চান্স দিবো। যেখানে কোন কিচ্ছু ছিলোই না সেখানে লাস্ট চান্স মানে কি। এটা আসে কোথা থেকে। আমি তোমাকে ফার্স্ট চান্সই কবে দিয়েছিলাম যে লাস্ট দিবো।

কবির;; কিন্তু আইরাত আমার ভালোলাগে তোমাকে অনেক বেশি।
আইরাত কয়েক কদম কবিরের দিকে এগিয়ে যায়।
আইরাত;; ভালোলাগা আর ভালোবাসা দুইটা দুই আলাদা-আলাদা জিনিস। এদের একসাথে মিশিয়ো না। এর আগেও তুমি আমাকে না বলেই আমাকে নিয়ে এতো বড়ো একটা নিউজ করে দিয়েছিলে। বেশিকিছু বলি নি আমি তোমাকে সেইদিন কিন্তু প্লিজ এইবার না কবির। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আমি অনেক আগেই একজনের নামে লিখা হয়ে গেছি।
কবির;; ??

আইরাত;; আল্লাহ হাফেজ।
এই বলেই আইরাত সেখান থেকে দ্রুত পায়ে কেটে পারে। সত্যি এখন এইসব তার কাছে প্রচুর বিরক্তিকর লাগছে। একে তো আব্রাহামের এমন হঠাৎ বিয়ের কথা শুনে আইরাতের পায়ের রক্ত একদম মাথায় উঠে গিয়েছিলো আর এখন, এখন কিনা তার নিজেরই বিয়ে। ছেলেটা বুঝে না নাকি। আইরাত সেখান থেকে সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়৷ তারপর একটা কোল্ড কফি অর্ডার দেয় কেননা এখন তার মাথা খুব বেশিই গরম আর এই মূহুর্তে তার ঠান্ডা কিছু দরকার। আইরাত কিছু ফাইল চেক করছিলো তখন কেবিনে তনয়া আসে।

তনয়া;; আসবো?
আইরাত;; আয়
তনয়া;; কিরে তখন ওভাবে চলে গেলি যে আর কোথায় গিয়েছিলি?
আইরাত;; তা আগামীকাল টের পাবি।
তনয়া;; মানে?
আইরাত;; আগামীকাল সব টিভি চ্যানেলেই দেখাবে তো তুইও দেখে নিস।
তনয়া;; বাই দি ওয়ে, কবির কি বলে আবার?
আইরাত;; বিয়ে।
তনয়া;; হ্যাঁ তো করে নে না।
আইরাত;; কি মাথা খারাপ হয়েছে তোর নাকি কিছু উল্টা-পাল্টা খেয়ে এসেছিস কোনটা?
তনয়া;; আরে না তা হতে যাবে কেনো। আমি বলছি যে যখন তোদের এনগেজমেন্ট টা হয়েই গেছে তাহলে বিয়ে টা জলদি করে নে।

তনয়ার কথায় আইরাত হাত থেকে ফাইল টা ঠাস করে টেবিলের ওপর রেখে এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কপাল কুচকে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে ওঠে……
আইরাত;; হুয়ায়ায়ায়ায়াট?
তনয়া;; আস্তে
আইরাত;; এই তুই কি বললি?
তনয়া;; এনগেজমেন্ট??
আইরাত;; কাদের?
তনয়া;; তোর আর কবিরের।
আইরাত;; কানের ঠিক তিন ইঞ্চি নিচে এমন একটা থাপ্পড় খাবি না যে পরে আর কিছু শুনতে পারবি না বলে দিলাম। তিন দিন অব্দি ঝনঝন করবে।
তনয়া;; আমার কি দোষ ☹️

আইরাত;; তো কি বলছিস তুই এসব এনগেজমেন্ট মানে? আরে কবিরের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে সে আমার পেছনে পরেছে। আর সেইদিন ডিরেক্ট বিয়ের কথা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলো তাও ফেইক, ভুয়া। কিছুই না।
তনয়া;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা।
আইরাত আর কিছু না বলেই কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। বাকিদের সবকিছু দেখতে বলে আইরাত নিজে বাসায় চলে আসে। আইরাতকে এখন বিকেলের সময় বাসায় আসতে দেখে ইলা বেশ অবাক হয়। কেননা আইরাত বিকেলে কখনোই বাসায় আসে না। আইরাত এসেই সোফাতে ধপ করে বসে পরে।

ইলা;; কিরে এই সময়ে বাসায় এলি যে? কিছু কি হয়েছে নাকি?
আইরাত;; আবার কবির।
ইলা;; হাহাহা ওইযে ওই ছেলেটা যে তোকে নিয়ে একবার বিয়ের কথা পাবলিক করে দিয়েছিলো?
আইরাত;; হ্যাঁ, তুমি জানো না দাদি আমাকে এই নিয়ে ঠিক কতো টা ঝামেলায় পরতে হয়েছে। সবাই তো সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিলো৷ কবির আজও এসেছিলো আর এগুলো বলছে। সত্যি আমার যদি মাথা মুথা খারাপ হয়ে যায় আমি কিন্তু একদম বিনা বাক্যে ওকে ওখানেই শুট করে একদম জ্যান্ত পুতে দিবো। একটা মানুষ কে আর কতো ভাবে, কীভাবে বুঝানো যায় বলো।

ইলা;; আচ্ছা যাজ্ঞে তুই আগে মাথা ঠান্ডা কর।
আইরাত;; রনিত কোথায়?
ইলা;; ড্রোইং করছে।
আইরাত;; আমার একটু ঘুম প্রয়োজন অনেক দৌড়ঝাপ হয়েছে।
ইলা;; আচ্ছা যা যা আগে রুমে যা।

আইরাত দ্রুত পায়ে রুমে চলে আসে। রুমে গিয়ে কোন রকমে নিজের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে ফেলে। তারপর মাথার ওপরে টাইট করে বেধে রাখা চুলগুলো খুলে দেয়। ঝরঝর করে সব চুলগুলো আইরাতের পিঠ পেছনে ছড়িয়ে পরে। ধিরিম করে বিছানাতে পরে যায় আইরাত, নিজের গা এলিয়ে দিলো। উপুড় হয়ে বালিশ জড়িয়ে তাতে মুখ গুজে দিয়ে শুয়ে পরে। মূহুর্তেই চোখে ঘুমের রাজ্য নেমে পরে। আইরাত এক গভীর ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।

রাতের মাঝখানে আইরাতের একবার ঘুম ভেঙে ছিলো। তখন আইরাত উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ইলা আর রনিত কে বেশ কিছুটা সময় দিয়ে তারপর আবার নিজের রুমে চলে যায়। পুরো রুমের লাইট অফ করে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরে গভীর মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে। তবে থেকে থেকেই আইরাতের মাথায় শুধু আব্রাহামের কথা আসছে। বহুবার নিজের ফোন হাতে নিয়েও আবার রেখে দিয়েছে। এভাবেই সেই রাত টুকু কেটে যায়।

পরেরদিন সকালে আসলে ভোরে আইরাত আর থাকতে না পেরে আব্রাহাম কে ফোন দিয়েই ফেলে। তবে আব্রাহাম ফোন পিক করে না। আইরাত আর কি ফোন রেখে দেয়। ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে একদম অফিসে এসে পরে। অফিসে এসেই দেখে অয়ন আর রাশেদ মিলে আড্ডা দিচ্ছে।
আইরাত;; হে গাইস, এতো ফুর্তিবাজ লাগছে কেনো তোমাদের আজ?
রাশেদ;; ম্যাম দারুন খবর আছে।
আইরাত;; আবার কি?
রাশেদ;; দাড়ান।

এই বলেই রাশেদ টিভি অন করে দেয়। সেখানের আজ ব্রেকিং নিউজ “” মানুষ প্রেংক করে কিন্তু এতো বড়ো প্রেংক কীভাবে। আজ হয়তো অনেক মেয়েরই কলিজার পানি আবার ফিরে এসেছে, আব্রহাম চৌধুরী অর্নীল কোন বিয়ে করছেন না, সম্পূর্ণই ছইলো একটা ভুয়া খবর””।

এটা দেখেই আইরাত হেসে দেয়। হাসতে হাসতে একদম খারাপ দশা। আইরাতের হাসি দেখে রাশেদ আর অয়ন তাকিয়ে আছে তার দিকে। কেননা আইরাত কে এতোদিন পর এই প্রথম এভাবে মন খুলে হাসতে দেখছে তার। আইরাতের হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে পরেছে। আইরাত খেয়াল করলো যে রাশেদ আর অয়ন তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তা দেখে আইরাত কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

আইরাত;; সরি, সরি, সরি গাইস। আসলে ব্যাপার টাই এমন যে না হেসে আর পারলাম না সরি। (এই বলে আইরাত আবারও হেসে দেয়)
আইরাত;; এহহহ আসছিলো বিয়ে করতে। করিয়েছি না জন্মের বিয়ে একেবারে। বিয়ে করবে হাহ।
এই বলেই আইরাত থেমে যায়। রাশেদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…..
আইরাত;; তনয়া কোথায়?
রাশেদ;; ম্যাম আজ ও অফিসেই আসে নি। ওর নাকি একটু কাজ আছে, বেশ ব্যাস্ত তাই।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা থাক। আচ্ছা আমি একটু বাইরে যাবো। ভালো লাগছে না আমার এখন একটু টাইম নিজেকে দেওয়া প্রয়োজন।
রাশেদ;; জ্বি আচ্ছা ম্যাম।

অফিসে প্রায় ঘন্টা একের মতো থেকেই আইরাত এসে পরে। আব্রাহাম কে কল-মেসেজ দিচ্ছে কিন্তু সে নেই। আইরাত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরে। কোথায় যাচ্ছে তাও সে জানে না। শুধু নিজের মন মতো করে গাড়ি ড্রাইভ করেই যচ্ছে৷ একবার ভেবেছিলো যে সে সোজা আব্রাহামের বাড়িতে চলে যাবে কিন্তু কেনো যেনো আইরাতের মন বলছে যে আব্রাহাম এখন তার বাসায় নেই। যাই হোক আইরাত এগুলো ভাবছে আর গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। গন্তব্যহীন ভাবে। দেখতে দেখতেই একসময় হাইওয়ে তে এসে পরে আইরাত। হাইওয়ে রোডের একদম মাঝ বরাবর আছে সে এখন।

হঠাৎ আইরাত গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দেয়। নিজ ইচ্ছে করেই গাড়ি একটা জোরে সাই করে টান দেয়। আইরাত ড্রাইভ করতে করতে রাস্তার একটা সাইড দিয়ে বাতাসের গতিতে চলে যায়। কিন্তু তার কিছুদূর গিয়েই আইরাত জোরে ব্রেক কষে। তার মনে হলো সে কিছু দেখেছে। অর্থাৎ গাড়ির দ্রুততার ফলে সে ঠিক সম্পূর্ণ খেয়াল করতে পারে নি কিন্তু আইরাত কাউকে দেখেছে। আইরাত একবার তার মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে তাকায় কিন্তু সেখান থেকে স্পষ্ট কাউকে দেখা যাচ্ছে না তাই সে তার গাড়ি পিছিয়ে নেয় আস্তে আস্তে।

বেশ খানিক পেছনের দিকে গাড়ি নিতেই আইরাত দেখে যে একটা গাঢ় কালো কালারের গাড়ি হাইওয়ে রোডের একটা সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। আর গাড়ির ডিকির ওপরে বসে বসে আব্রাহাম বিয়ার খাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামকে দেখে কপাল কুচকায়। আইরাতও নিজের গাড়িটা এক সাইডে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে। এখানে বাতাসের বেগও প্রচুর। আইরাত আব্রাহামের সামনে গিয়ে কিছুটা রাগ নিয়েই বলে ওঠে……

আইরাত;; এই আপনি এখানে বসে আছেন। ফোন টা একবার চেক করুন তো আমি আপনাকে ঠিক কতো গুলো কল করেছি আর মেসেজ দিয়েছে। রিপ্লাই তো দূর সিন পর্যন্ত করেন নি আপনি।
আব্রাহাম;; ( এক মনে সামনের দিকে তাকিয়ে বিয়ার খাচ্ছে)
আইরাত;; ওওও হ্যালো আই এম টকিং উইথ ইউ।
আব্রাহাম;; _______________________
আইরাত;; ওমা কি হয়েছে,, আহারে আজ বুঝি সকালে টিভি তে নিজের বিয়ে ভাঙার কথা শুনে ভালো লাগে নি? আরে প্যারা নাই চিল, বিয়ে তো হয়েই গিয়েছে আমাদের তাই না।
আব্রাহাম;; _______________________

আইরাত;; আরে ধুর, কি এটা খেয়ে যাচ্ছেন তো খেয়েই যাচ্ছেন। কিছু বলছি তো আমি আপনাকে নাকি।
আব্রাহাম এবার তার হাত থেকে বিয়ারের কাচের বোতল টা আস্তে করে ছুড়ে মারে নিচে তবুও তা ভেঙে যায়। গম্ভীর মুখে আইরাতের দিকে তাকায়। আব্রাহামের নাক মুখ আর চোখ গুলো কেমন লাল লাল হয়ে আছে। আব্রাহাম হালকা ভাবে লাফ দিয়ে গাড়ির ডিকির ওপর থেকে নেমে পরে। নিজের দুই হাত ঝেড়ে ফেলে। আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে।

হুট করেই আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় পেচিয়ে ধরে নিজের সাথে ঠেকিয়ে নেয়। আরেক হাত আইরাতের গাল আর গলার মাঝ বরাবর রেখে দিয়ে স্লাইড করতে থাকে। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের দিকে কিছুটা টেনে নিয়ে আসে। আইরাত কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। আইরাত অবাক করা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আব্রাহাম এভাবে আইরাতকে নিজের সাথে চেপে ধরে তার মুখের কাছে একদম নিজের মুখে নিয়ে আসে। আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম বেশ নেশাক্ত কন্ঠে আইরাতকে বলে……..

আব্রাহাম;; আইরাত, আজ এসেছো এসেছোই,, এরপর থেকে আর আমার সামনে এসো না। নয়তো একদম জানে মেরে দিবো তোমাকে আমি।
আব্রাহামের এমন কথায় আইরাত শূন্য চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
বেশকিছুক্ষন আব্রাহাম আইরাতকে সেভাবে ধরে রেখে ছেড়ে দেয়।
আইরাত;; মরে তো গিয়েছি সে কবেই আমি। তবে এবার যদি আপনার নিজ হাতে আমাকে মরতে হয় তাহলে সেটা আরো ভালো। সেখানে আর আফসোস টা থাকবে না।

আইরাত কিছুক্ষন চুপ করে থাকে তারপর আবার বলে ওঠে….
আইরাত;; আপনার ভাই রায়হান জেল থেকে পালিয়েছে।
আইরাতের কথায় আব্রাহাম তার দিকে একবার তাকায়।
আইরাত;; এন্ড আই থিংক সেইদিন যে লোকটা আমার ওপর গুলি চালিয়েছিলো সে রায়হানেরই লোক ছিলো।
আব্রাহাম;; এখন না অফিসে থাকার কথা তোমার এখানে কি করো?
আইরাত;; ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম একটু গাড়ি নিয়ে ঘুড়ে আসি আর দেখুন না কাকতালীয় ভাবে আপনাকেও পেয়ে গেলাম।

আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; আজ সন্ধ্যার দিকে একটা ক্লাবে যাবো, আমাদের সাথে আপনিও যাবেন।
আব্রাহাম;; Not interested
আইরাত;; ওও হ্যালো আমি আপনাকে জিজ্ঞেস বা অফার করছি না,, আমি আপনাকে বলছি। আর আপনি যাবেন।
আব্রাহাম;; আমি যাবো না, আমার মুড নেই।
আইরাত;; আপনার মুডকে গুল্লি মারি। যেতে বলছি যাবেন ব্যাস,, একটা টু শব্দও করবেন না।
আব্রাহাম;; আশ্চর্য।

আইরাত;; আর এই এভাবে হাইওয়ে তে বসে বসে বিয়ার খাচ্ছেন,, কেনো বলুন তো। এখানে কি মেয়ে মানুষ কম নাকি এক একটা যেনো চিৎপটাং হয়ে পরে যায় এর জন্য। বাড়ি যান।
আব্রাহাম;; কখন আমাকে নিঃশ্বাস নিতে হবে তাও বলে দাও। তাহলে খুব উপকার হতো আমার।
আইরাত;; না না আমি আবার এতোটাও স্ট্রিক্ট না, তা আপনি আপনার মন মতো নিতে পারেন।
আব্রাহাম;; সিরিয়াসলি আইরাত!!
আইরাত;; হ্যাঁ ?
অতঃপর আইরাত সেখান থেকে চলে আসে। আইরাত যখন চলে আসছিলো আব্রাহাম তার যাওয়ার দিকে এক মনে তাকিয়ে ছিলো। কেমন যানি এক মায়া কাজ করছিলো নিজের মাঝে।

আইরাত বিকেলের দিকে অফিসে যায়। বেশকিছু পেন্ডিং ফাইল ছিলো সেগুলোই দেখছিলো।
রাশেদ;; ম্যাম ডেকেছেন?
আইরাত;; কিছু জানতে পারলে?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম এবার একদম কনফার্ম, লোকটা রায়হানেরই ছিলো।
আইরাত;; হুমম,, সবাই একদম আমার জানের পেছনে হাত ধুয়ে লেগে পরেছে। পরুক, দেখি কি হয়।
রাশেদ;; কিন্তু ম্যাম একটা জিনিস বুঝলাম না, এই রায়হান তো আপনাকে ভালোবাসতো তাই না,, তাহলে গুলি কেনো চালালো?!

আইরাত;; রাশেদ, প্রেম-ভালোবাসার থেকেও সবচেয়ে খারাপ জিনিস হলো রাগ & জেদ। এই দুইটা জিনিস একদম মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। একটা ডায়লগ তো শুনেছোই হয়তো যে Everything is fair in love and war… রায়হান হয়তো আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু যখন সে বুঝলো যে আমি মরে গেলেও তার হবো না তাই সে এখন আমারে মেরে ফেলার ওপরেই উঠে-পরে লেগেছে। আগে ভালোবাসা ছিলো তবে এখন তা যুদ্ধ হয়ে গেছে।
রাশেদ;; কিন্তু ম্যাম সত্যি যদি আপনার কিছু করে বসে রায়হান?

আইরাত;; আমি জানি না যে আব্রাহাম এমন কেনো করছে সে এখনো আমাকে ভালোবাসে নাকি ঘৃণা করে। তবে আমি এইটুকু জানি যে এখন যেহেতু আব্রাহাম আছে তো সে এই দুলিয়া উলটে গেলেও আমার কিছুই হতে দিবে না। আব্রাহাম আমাকে সবসময় বলতো যে আমাকে নাকি ভালোবাসার অধিকারও তার আর মেরে ফেলারও। আব্রাহাম আমার কিছু হতেই দিবে না।
রাশেদ;; ?❤️

আইরাত;; আরে পরের টা পরে দেখা যাবে,, এখন বলো রোদেলা কোথায়, আর অয়ন ভাইয়া, আহসান ভাই সবাই কোথায়। ক্লাবে যাবো না?!
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম যাবো তো।
আইরাত;; সবাইকে ডাক দাও,, আর বাইরে গাড়ি বের করো।
রাশেদ;; আচ্ছা।
এই বলেই রাশেদ কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। আইরাত তার চোখ থেকে গ্লাস টা খুলে সোজা আব্রাহাম কে ফোন দেয়।
আব্রাহাম;; হ্যালো

আইরাত;; আমার জামাইজান টা কি করছে?
আব্রাহাম;; আব্রাহাম গান শুনছে, কারো জামাইজান না।
আইরাত;; কারো হতে যাবে কেনো আমার, আমার। আচ্ছা কি গান শুনছেন?
আব্রাহাম;; Loving you is a loosing game….
আইরাত;; বাব্বাহ,
আব্রাহাম;; কিছু বলবে?
আইরাত;; Dynamic Drillers,, Road no. 29 জলদি এসে পরুন।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন আসছি।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আইরাতও তার রকিং চেয়ারের ওপর থাকা জেকেট টা কাধে তুলে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। সবাই এসেছে তবে অয়ন আসতে কিছুটা দেরি করে তারপর সবাই গাড়িতে করে ক্লাবে চলে যায়। প্রায় ৩০ মিনিট পর সবাই এসে পরে,, এখন বলতে গেলে রাতই হয়ে গেছে। অনেক মানুষ সবার যার যার মতো করে ব্যাস্ত। ডিস্কো লাইট চলছে সব জায়গায়, গানও আছে। আইরাত সহ বাকিরা গিয়ে একটা জায়গায় বসে পরে।

অয়ন;; বউমনি আব্রাহাম কোথায়?
আইরাত;; আসবে আসবে।
রোদেলা;; আরে এসে পরেছে।
আইরাত মাথা তুলে সামনে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার ভারি ভারি কদম ফেলে এইদিকেই আসছে। আইরাত হেসে দেয় তাকে দেখে। আব্রাহামের আসার সময় সবাই তাকিয়ে ছিলো। এমনকি যেই মেয়েদের পার্টনার ছিলো তারাও তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা ফোল্ড করতে করতে এসে বসে পরে।
রোদেলা;; এত্তো Attitude আসে যে কোথা থেকে!! (মেকি হেসে)
আব্রাহাম;; হুয়াট?
রোদেলা;; ন ননা ক কিছু না, কিছু না।

তারা সবাই বসে কথা বলছিলো আর আড্ডা দিচ্ছিলো। তখনই আইরাতের একটা কল আসে আর আইরাত কিছুটা দূরে চলে যায় ফোন নিয়ে কথা বলতে। আর সেই সময়ই ক্লাবে এনাউন্সমেন্ট হয় একটা গ্যামের। গ্যাম টা কিছুটা এরকম যে একটা কাচের দেওয়ালে একটা লাভ স্যাপের অর্ধেক অংশ আছে। তার সেই অর্ধেক অংশে একটা হাতের ছাপ আছে। এখন মূল থিম হচ্ছে একপাশে অর্থাৎ যেই পাশে লাভ স্যাপের অর্ধেক অংশে একটা হাতের ছাপ আছে সেখানে একজন হাত রাখবে, আরেক পাশে তার পার্টনার হাত রাখবে।

যদি তারা মেড ফর ইচ আদার হয় তাহলে সেই লাভ স্যাপ টা ফুল পূরণ হয়ে যাবে আর তাতে রেড কালারের লাইট জ্বলে উঠবে। আর যদি তারা মেড ফর ইচ আদার না হয় তাহলে লাভ সেপ টা ভেঙে যাবে আর ভেঙে গেলে অবশ্যই কাপলদের মন টাও ভেঙে যাবে। গ্যাম টা বেশ ইন্টারেস্টিং। গ্যামের এনাউন্সমেন্ট হতেই সবাই বেশ Excitement নিয়ে এগিয়ে গেলো। অনেকের টা জোড়া লাগছে আবার কারো কারো ভেঙে যাচ্ছে। ভেঙেছেই বেশি,, জোড়া খুব কম ২-১ টা লেগেছে।

রাশেদ;; স্যার আপনিও যান না।
আব্রাহাম;; কি আমি? না না আমি না।
রাশেদ;; আরে স্যার একটা বার ট্রাই তো করেন।
আব্রাহাম;; আরে না এইসব ফেইক হয় না কিছুই এমন,, বাদ দাও।
রোদেলা;; স্যার একটা বার চেষ্টা করলে কি ক্ষতি যান না স্যার প্লিজ। আমরাও দেখি আপনার পার্টনার কে স্যার প্লিজ যান।

সবাই আব্রাহাম কে একদম খামছে ধরলো যেতে হবে মানে যেতেই হবে। আব্রাহাম আর না পেরে চলে গেলো। আব্রাহাম গিয়ে মনে বেশ কিছু ভেবে চিন্তে লাভ স্যাপের এক সাইডে হাত রেখেই দেয়। তারপর একটা মেয়ে আসে, সে এসে আব্রাহামের হাতের পাশে নিজের হাতটা রাখে কিন্তু হাত রাখার সাথে সাথেই লাভ স্যাপ টা ভেঙে যায়। সবাই ওওওওওওও করে ওঠে। মেয়েটা চলে যায়। তারপর আরেকটা মেয়ে আসে সেও হাত রাখে আর আগের বারের মতো এটাও ভেঙে যায়।
আব্রাহামের এবার হাসি পাচ্ছে। এমন ঠিক চার পাঁচ বার হয়। আব্রাহাম তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চলে যেতে ধরবে তখনই একটা হাত এসে আব্রাহামের হাতের পাশে দাঁড়ায়। লাভ স্যাপ টার ওপরে রেখে দেয় একদম। আর রাখার সাথে সাথে তাতে ফট করে রেড লাইট জ্বলে উঠে। সবাই কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে। লাভ স্যাপ টা ফুল ফিলআপ হয়ে গেছে,, তার মানে তারা মেড ফর ইচ আদার। আব্রাহাম কপাল কুচকে পাশে তাকায় দেখে আইরাত মুচকি হেসে তাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আইরাত নিজেও আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে গাঢ় এক হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। তারপর আব্রাহাম নিজেও চলে আসে।

রোদেলা;; ইইইই মিলে গেছে তোমাদের টা, হায় কি লাকি কাপল তোমরা।
আইরাত;; আমার সাথে না মিললে আমি হয়তো আব্রাহামের হাত টাই কেটে দিতাম। আর এছাড়াও না মিলে যাবে কোথায়। আমি জানতাম যে মিলবেই।
আব্রাহাম আইরাতের পাশে বসে পরে।
আইরাত;; জামাইইইইইইইই
আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আইরাত;; এই আপনি স্বীকার করেছেন তার মানে যে আপনি আমার জামাই।
আব্রাহাম;; ওহ গড।
রোদেলা;; এই আইরাত চলো।
আইরাত;; কোথায়?
রোদেলা;; আরে চলো একটু ওদিকে যাবো, চলো চলো।
আইরাত;; আরে কিন্তু।
রোদেলা;; আরে চলো না।
আইরাত;; আচ্ছা।

রোদেলা আইরাত কে নিয়ে চলে গেলো। অন্যদিকে রাশেদ আর অয়ন একটা টেবিলে বসে বসে কথা বলছে।
রাশেদ;; কি ভাবছেন?
অয়ন;; ও আমাদের আব্রাহামই তো?
রাশেদ;; হ্যাঁ, অবশ্যই।
অয়ন;; তাহলে এই এতো বছর কোথায় ছিলো, এলো না কেনো আমাদের কাছে? কথা আমার এই একটাই।
রাশেদ;; তা তো স্যার নিজেই ভালো বলতে পারবেন।
অয়ন;; নাকি আব্রাহাম সব ভুলে গিয়েছে?
রাশেদ;; না, কীভাবে সম্ভব এটা?
অয়ন;; না হয়তো আব্রাহাম ভুলে গিয়েছে সব। কম বড়ো এক্সিডেন্ট হয় নি তার। আব্রাহাম কে সবকিছু মনে করাতে হবে।

আব্রাহাম;; মনে তো তখন করবো যখন আমি সবকিছু ভুলে যাবো। যখন আমি কিছু ভুলিই নি তখন সেখানে নতুন করে সবকিছু মনে করার প্রশ্নই আসে না।
রাশেদ & অয়ন তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
আব্রাহাম;; মনে তো তখন করবো যখন আমি সবকিছু ভুলে যাব। যখন আমি কিছু ভুলিই নি তখন সেখানে নতুন করে সবকিছু মনে করার প্রশ্নই আসে না।

রাশেদ & অয়ন তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে দেখে না যতটা বেশি অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে আব্রাহামের কথা শুনে। আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রাশেদ আর অয়নের টেবিলে এসে একটা চেয়ার টান দিয়ে নিয়ে বসে পরে। আরেক হাতে এলকোহলের পেগ নিয়ে নেয়। আব্রাহাম তার মতো করে আছেই তবে তার সামনে থাকা দুই জনের অবস্থা খারাপ। বেশ অবাক তারা।
আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো, তোমরা তো আগে থেকেই মেনে নিয়েছো যে আমিই আব্রাহাম। এখন শুধু আমি নিজেই মুখে স্বীকার করে নিলাম ব্যাস। হ্যাঁ আমিই আব্রাহাম,, আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

রাশেদ;; স স স্যার, আপনি……
আব্রাহাম;; অয়ন ভাই চোখ নামিয়ে ফেল, নয়তো তা তোর কোটর থেকে খুলে পরে যাবে।
অয়ন আব্রাহামের কথায় ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
অয়ন;; আব্রাহাম ভাই মানে আমি কি বলবো এখন। আমি খুঁজে পাচ্ছি না,, তুই, তুই আসলেই ঠিক আছিস তাহলে। মানে কিছু হয় নি তোর ৷ আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। আর তুই, তুই তাহলে এই এতো গুলো বছর আমাদের সবার থেকে দূরে কেনো ছিলি বল। কেনো আমাদের কারো কাছে আসিস নি। আমাদের কথা কি তোর একটা বারের জন্যও মনে পরে নি। আমাদের কথা ছাড়, আইরাত বউমনির কথা তোর মনে পরে নি। কীভাবে আর কোথায় ছিলি তুই এতোদিন?

আব্রাহাম;; ছিলাম কোথাও না কোথাও তো ছিলামই।
অয়ন;; তুই পাল্টে গেছিস অনেক।
আব্রাহাম;; আহা, আগের আমিই আছি। সামান্য পাল্টাতে বাধ্য ছিলাম এই যা।
অয়ন;; আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। কি থেকে কি হলো এইসব।
আব্রাহাম;; তুই ভাবিসও। আগে জানতাম না তো। তবে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
অয়ন;; সিরিয়াসলি? এখনো লেগ পুল করিস আমার তুই। এতোসব কিছু হয়ে যাওয়ার পরও এতো শান্ত। কীভাবে ভাই?
আব্রাহাম;; মাথা গরম করে সবসময় কাজ করতে হয় না৷
অয়ন;; আই…….

আব্রাহাম;; আইরাতকে আর বলেই বা কি হবে। ও তো এমনিতেই আমাকে আব্রাহাম ভেবেই নিয়েছে৷ ও কারো কথার ধার ধারে না। ওকে হাজার না করলেও ও আমাকে আব্রাহাম ই ভাববে। আইরাত জানে।
অয়ন;; বউমনি তোকে ছাড়া কতো টা নরক যন্ত্রনা সহ্য করেছে তুই জানিস?
আব্রাহাম;; নরক যন্ত্রণা? আমাকে ছাড়া? ওর তো ভালো থাকার কথা।
অয়ন;; হাহ, মুখে বলা টা খুবই সহজ। বউমনি তোকে ছাড়া কি কি সাফার করেছে তা আমরা জানি।
হঠাৎ সেখানে আগমন ঘটে আহসানের ৷ যাকে দেখেই আব্রাহাম কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে ৷ আহসান অয়নের সাথে কিছু কথা বলে।

আহসান;; আচ্ছা আইরাত কোথায়, দেখছি না যে?
আব্রাহাম;; কেনো ওকে খুব মিস করছো বুঝি?
আহসান;; হ্যাঁ করারই কথা। (হেসে)
আব্রাহাম;; হুমম, করবেই তো। কেউ কি আর সুযোগ ছাড়ে।
আহসান;; হুয়াট ডু ইউ মিন?
আব্রাহাম;; আই মিন ভালোই তো তাই না। তুমিও আইরাতের সাথে আছো আর আইরাতও তোমাকে ভালোই পাত্তা দেয় তো ভালোই তো।
আহসান;; হাহাহাহাহা ?,, হাসালে। তোমাকে জানিয়ে দেই যে আমি আইরাত কে আমার বোনের চোখে দেখি। আর সেও আমাকে ভাই বলেই ডাকে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা??
আহসান;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; গুড

তাদের কথার মাঝেই রোদেলা আর আইরাত এসে পরে। আইরাত এসে দেখে আব্রাহাম, অয়ন, রাশেদ এরা তিনজনেই বেশ গম্ভীর মুডে বসে রয়েছে। আইরাত এসে আব্রাহামের পাশেই বসে পরে।
আইরাত;; হেই গাইস, কি হয়েছে সবাই এমন সিরিয়াস মুডে কেনো?
অয়ন;; না এমনি।
আইরাত;; হে… (আব্রাহামের উদ্দেশ্যে)
আব্রাহাম;; খাবে?
আইরাত;; এইসব ছাইপাস আপনিই খান। এখন মুড নেই আমার।
আব্রাহাম;; হুমম।

হঠাৎ সেখান থেকে রাশেদ, অয়ন, রোদেলা আর আহসান উঠে চলে যায়। থেকে যায় শুধু আব্রাহাম-আইরাত। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। এক নয়নে তাকিয়েই থাকে। আইরাত তা খেয়াল করে হালকা হেসে দেয়।
আইরাত;; কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
আব্রাহাম;; সবকিছু কতো দ্রুত পালটে যায় তাই না।
আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; তুমি কীভাবে পাল্টালে বলো তো!!
আইরাত;; যেভাবে আপনি পাল্টেছেন।
আব্রাহাম;; “ভালোবাসা” মানুষ কে জিন্দা মেরে ফেলার মতো ক্ষমতা রাখে।
আইরাত;; হুম, বেশ অভিজ্ঞতা আছে আমার।
আব্রাহাম;; আবার মরতে পারবে?
আইরাত;; না। কষ্ট হয় অনেক।
আব্রাহাম;; তাহলে ভালোবাসা জিনিস টা থেকে দূরে চলে যাও।
আইরাত;; সম্ভব না। এটার ওপর আমার নিজের কোন হাত নেই। আমার ক্ষমতা নেই বের হবার।
আব্রাহাম;; ভা…………
আইরাত;; আমি আপনাকে ভালোবাসি।
আব্রাহাম;; Stop loving me..
আইরাত;; I can”t…
আব্রাহাম;; আইরাত……….

আইরাত;; আব্রাহাম, আমার কাছে সব ছিলো সব। সব ছিলো আমার কাছে। টাকা-পয়সা, প্রোপার্টি, ব্যাংক ব্যালেন্স, পাবলিসিটি, পপুলারিটি সব। কিন্তু এই সবকিছু থেকেও আমার কিচ্ছু ছিলো না। কিচ্ছুই না।
I was a big big zero..
আব্রাহাম;; __________________
আইরাত;; কিন্তু এখন আমার কাছে সব আছে সব। কারণ এখন আমার কাছে আপনি আছেন। এখন যদি কেউ আমার কাছ থেকে আমার জীবন টাও চায় তাহলে আমি হেসে হেসে রাজি হয়ে যাবো।
আব্রাহাম আইরাতের বেশ কাছে এসে পরে।
আব্রাহাম;; তাহলে সেইদিন আমার জীবন কেনো নিয়েছিলে?
আব্রাহামের কথায় আইরাতের মুখের হাসি টা উড়ে গিয়ে কিছুটা কালো হয়ে আসে। বুকের ভেতর টা ধক করে ওঠে।
আইরাত;; ম মা মানে?

আব্রাহাম;; মাঝে মাঝে দেখে মনে হয় যে তুমি এমন টা করতেই পারো না, কখনোই না। এটা মাত্রই আমার ভূল। কেননা তোমার চোখে মুখে আমি নিজের জন্য গাঢ় ভালোবাসা খুঁজে পাই। আমাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা খুঁজে পাই। কিন্তু পরক্ষণেই আবার পুরোনো সব কিছু মনে পরে সব এলোমেলো হয়ে যায়।
আইরাত;; আমি ক…………
আব্রাহাম;; বাদ দাও সব প্লিজ আমি আর কথা বলতে চাচ্ছি না।
আইরাত;; ____________________
আব্রাহাম;; তো? নতুন লাইফ পার্টানারের সাথে জীবন কীভাবে কাটাবে ভাবলে কিছু?
আইরাত;; আব্রাহাম কি বলছেন এইসব?
আব্রাহাম;; কবির?

আইরাত;; আরেএএএএএএ,, কবির ফেইক নিউজ বানিয়েছিলো আমার নামে। আমাকে না বলে কয়েই। ওটা ভুয়া। কিসের লাইফ পার্টনার, আমার বিয়ে বছর কয়েক আগে হয়ে গেছে আপনার সাথেই।
আব্রাহাম তার এক হাত কপালের সাইডে ঠেকিয়ে আইরাতের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।
আইরাত;; হাহ, কথা শুনেছো। নিজে বিয়ের আসর অব্দি চলে গিয়েছিলো আমি কিছু বললাম না অবশ্য করে দেখিয়েছিলাম। আর সে আসছে আমার বিয়ের খবর নিয়ে, এহহহহহহ।
আব্রাহাম;; অনেক রাত হয়েছে বাড়ি যাও।
আইরাত;; আর আপনি এখানে একা একা ক্লাবে থেকে কি করবেন। আপনাকে আমি এখানে রেখে যাই যেনো আপনি অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে পারেন তাই না?
আব্রাহাম;; ওও ম্যাডাম, ক্যারেক্টার এতো টাও ঢিলা না আমার ওকে।
আইরাত;; হ্যাঁ জানি আমি। এর জন্যই তো আপনাকে এতো এতো ভালোবাসি আমি।

আইরাত-আব্রাহাম আর বাকিরা সবাই ক্লাব থেকে এসে পরে। সবাই যার যার গাড়িতে উঠে বসে পরে। আব্রাহাম চলে যেতে ধরবে কিন্তু আইরাত তার সামনে এসে পথ আটকে দেয়। আব্রাহাম তার দিকে কপাল কুচকে তাকায়।
আব্রাহাম;; হুয়াট?
আইরাত;; আপনাকে না অনেক কিউট লাগছে।
আব্রাহাম;; থ্যাংক্স গার্ল।
আইরাত;; ফেভারিট।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; আপনার চাপদাড়ি গুলো।
আব্রাহাম;; এবার কি আমি যাবো?
আইরাত;; জান।
আব্রাহাম;; ওকে সামনে থেকে সরো।
আইরাত;; জান জান
আব্রাহাম;; সরলে তো যাবো নাকি!

আইরাত;; আরে ওই যান বলি নি আমি বলেছি জান। জায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ান।
আব্রাহাম;; ইয়া খোদা। আইরাত প্লিজ বাড়ি যাও,, অনেক রাত হয়েছে, পাগলামি করো না ওকে। প্লিজ বাড়ি যাও।
আইরাত;; যাচ্ছি যাচ্ছি,, হাহ ?

তারা সবাই যার যার বাড়ি চলে যায়। আর আব্রাহামও আর বাইরে আজ বেশি একটা থাকে না সেও বাড়ি চলে যায়। তবে বাড়ি গিয়েই আব্রাহাম সোজা নিজের রুমে চলে যায়। ফুল পাওয়ারে এসি অন করে দেয়। ভালো লাগছে না কিছুতেই। সে এক প্রকার কনফিউশনে আছে। একবার মনে হয় আইরাতের সব দোষ আবার মনে হয় যে আইরাতের মতো মেয়ে এমন কিছু একটা করতেই পারে না।

আইরাত আব্রাহাম কে মারতেই পারে না। দুই রকম দুই দ্বিধার মাঝে ঝুলে রয়েছে আব্রাহাম। আব্রাহাম তার জেকেট টা খুলে ফেলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কতোক্ষন নিজের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করেই মাথা অন্য পাশে ঘুড়িয়ে ফেলে। পরনের শার্টের বোতাম গুলো খুলে গায়ের ওপর থেকে শার্ট টা খুলে ফেলে। এক হাত কোমড়ের সাইডে ঠেকিয়ে আরেক হাত ঘাড়ের পেছনে নিয়ে ক্লান্ত ভঙিতে চোখ গুলো বন্ধ করে ফেলে।

কতোক্ষন পর নিজের চোখ গুলো মেলে তাকায়। আর তখনই আয়নাতে আব্রাহামের গায়ের একটা জিনিস লক্ষ হয়। আর সেটা হচ্ছে আব্রাহামের বাম পাশের বাহুতে থাকা ডার্ক ব্লেক কালারের ট্যাটু। আব্রাহামের বাম বাহুতে গাঢ় কালো কালার দিয়ে “আইরাত” নামে ট্যাটু করা, আইরাত নামের সাথেই আবার একটা গোলাপ ফুলের মতো গাঢ় নকশা আঁকা। এটা যে ঠিক কতো বছর আগে করেছিলো সে৷ আব্রাহাম হাত দিয়ে তাতে কিছুটা ছুইয়ে দেয়৷ সে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে এক হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে থাকে।

ওপর থেকে ঠান্ডা বড়ো বড়ো পানিবিন্দু গুলো সব আব্রাহামের গায়ের ওপর পরছে। ফর্সা গায়ে পানিবিন্দু গুলো সব বেয়ে বেয়ে নিচে পরছে। আব্রাহাম বেশ সময় পর মাথা টা তুলে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে সামনে আসা চুলগুলো ঠেলে পেছনে দিয়ে দেয়। আব্রাহাম আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারছে না। কারণ চোখ বন্ধ করলেই আইরাতের সেই হাসিমাখা চেহারা টা বারবার তার সামনে এসে পরে। আব্রাহাম হঠাৎ ফট করেই নিজের চোখ মেলে তাকায়। প্রায় বেশ এক লম্বা শাওয়ারের পর আব্রাহাম বের হয়ে আসে। সাদা টাওয়াল টা দিয়ে নিজের সামনের চুল গুলো মুছেতে মুছতে বের হয়ে পরে৷

একটা এশ কালারের টাওজার আর সাদা কালারের টি-শার্ট পরে নেয়। টি-শার্ট টা যেনো বডির সাথে একদম লেগে ধরেছে। একজন সার্ভেন্ট কে দিয়ে গরম-গরম এক কাপ কফি আনতে বলে। কয়েক মিনিট পর এসেও যায়। আব্রাহামের রুমে ভালো লাগছে না দেখে সে করিডরে চলে যায়। চাঁদের আবছা আলো করিডরের সম্পূর্ণ অংশে পরেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রেলিং এর ওপর হাত রেখে গরম ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে সে। কিছু সময় সেখানেই কাটিয়ে আবার ফিরে আসে রুমে। বিছানার সাথে গা ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে পরে। ঘাড় টা কিছুটা এলিয়ে দিয়ে ওপরের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়।

“” আমি না আপনাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক টাই বেশি। জামাইজান আমার। আব্রাহাম প্লিজ কোন মেয়ের দিকে তাকাবেন না। আর আমি জানি আপনি তাকাবেন ই না। আচ্ছা আব্রাহাম, আপনি আমাকে কতোটুকু ভালোবাসেন। শুনুন না আব্রাহাম, প্লিজ আপনি আর কখনো আমাকে ছেড়ে দূরে যাবেন না ওকে। প্রমিস করুন। আব্রাহাম-আইরাতের একটা ছোট্ট দুনিয়া হবে যেখানে শুধু ভালোবাসা থাকবে। একটা ছোট্ট বাড়ি, দুটো মানুষ আর অনেক গুলো ভালোবাসা।
আব্রাহাম, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আল্লাহ কে বলবো উনি যেনো আমার হায়াত আপনাকে দিয়ে দেয়, তবুও আপনি আমার কাছে থাকুন। ভালোবাসি তো। “”

আব্রাহাম এক ঝটকায় চোখের পাতা গুলো মেলে ফেলে। চোখের কার্নিশে পানি গুলো জমে ওঠেছে আব্রাহামের। খুব বেশি খারাপ লাগছে তার। কেনো এতো খারাপ লাগছে আজ তা সে নিজেও জানে না। খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই কান্না যেনো আব্রাহাম কে একদম মানায় না। কেউ এই মূহুর্তে কাছেও নেই যাকে কিছুক্ষন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের মনে শান্তু পাওয়া যায়। এখন যদি আইরাত আব্রাহামের কাছে থাকতো তাহলে হয়তো আব্রাহাম সবকিছু ভুলে, সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে আইরাত কে এক নিমিষেই নিজের করে নিতো।

আব্রাহামের চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে আব্রাহাম তা সাথে সাথেই মুছে ফেলে। দূরে ছিলো কতো বছর। আইরাতের জীবন বেশ খারাপ গিয়েছে কিন্তু তাতে যে আব্রাহাম ভালো থেকেছে তা কিন্তু একদমই নয়। আব্রাহামও কম কিছু সহ্য করে নি,, কম কষ্ট আব্রাহামও পায় নি। কেননা আইরাতের থেকে আব্রাহামও কিন্তু তাকে কম ভালোবাসে না। সে নিজের সাধ্য মতো সব করেছে, এমন কিছু নেই যে আব্রাহাম ট্রাই করে নি। কিন্তু হয়তো ভাগ্যে আব্রাহামের সাথে এতো বছর আইরাতের দূরে থাকা টাই লিখা ছিলো। সিচুয়েশন সবকিছু আইরাতের বিপক্ষে ছিলো। দুটো মানুষ দুই প্রান্তে থেকে সমান কষ্ট-ই পেয়েছে। তফাৎ শুধু এটা যে আইরাতের টা প্রকাশ পেয়েছে আর আব্রাহামের টা পায় নি। (আব্রাহামের ব্যাপারেও সব জানতে পারবেন)

আব্রাহাম আর থাকতে না পেরে তার পাশে থাকা গিটার টা হাতে তুলে নেয়। এটাই যেনো আব্রাহামের বর্তমান সঙ্গী হয়ে গেছে। যাই হোক না কেনো, যে কোনকিছুই হোক না কেনো আব্রাহাম তখন এই গিটার টা হাতে নিয়ে মন খুলে গান গাওয়া শুরু করে দেয়,, ব্যাস মন মূহুর্তেই ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় আমাদের মনের কথা গুলো আমাদের মুখে ব্যাক্ত করতে না পারলে তা গানের কলি গুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়। গানের লাইন গুলো অনেক সময় আমাদের মনের ভেতরের কথা গুলোকে খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করে দেয়। গানে বা তার কলিগুলোতে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার মতো এক অদ্ভুত ক্ষমতা থাকে। ঘরের মাঝে আবছা আলো রয়েছে,, এর মাঝেই বিনা বলেই হুড়মুড়িয়ে মুষুলধারে বৃষ্টি নেমে পরে। বাইরে থেকে শীতল বাতাস সব রুমের ভেতরে প্রবেশ করছে। আব্রাহাম গিটার টা হাতে নিয়ে তার চোখ গুলোতে এক নেশা লাগানো ভাব এনে ছাড়া গলায় গান ধরে….

“শ্রাবণ ধারায় এতো চেনা কি খুজে পাও?
যা আমার মাঝে নেই একবিন্দু পরিমাণু ?~
`~আমার সরল রেখার চিন্তা-ধারায়
আড়ারি করে দাগ কাট কেনো?
••নাকি কাঁদিয়ে আমাকে সেই
চোখের জলে ভেজো?
তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে শুধুই আমি মরিচিকার মতো! ?
~`~তবে তাই যদি হয় করি নাকো ভয়
জানি আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়— ⛅
**আমি ভেবে নিলাম তুমি সেই লাল গোলাপ ?
যার নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাটার বাগান?
~হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম……
*~*পাহাড়-চূড়ায় বেয়ে আকাশ তো ছুতে দেখিনি
স্রোতস্বিনীর হাওয়ায় পাড়ি দাও সমুদ্দুর ❄️
ওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওও~~
`~* আচড়ে পরে সে ঢেউ আমার বুকে দূরন্ত বেগে
নাকি কাঁদিয়ে আমাকে সেই চোখের জলে ভেজো ?
“`তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে শুধুই আমি মরিচিকার মতো! ??
~`~তবে তাই যদি হয় করি নাকো ভয়
জানি আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়— ⛅
**আমি ভেবে নিলাম তুমি সেই লাল গোলাপ ?
যার নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাটার বাগান ?
~হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম……

মূহুর্তেই বাইরে একটা বিকট বর্জ্যপাতের শব্দ শোনা গেলো। আব্রাহাম আস্তে করে গিটার টা নামিয়ে সাইডেই রেখে দিলো। তখনই দরজাতে কারো কড়া নাড়ার শব্দ আসে। আব্রাহাম তার মাথা ঘুড়িয়ে দেখে দরজার আড়ালে রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে।
রাত্রি;; আসবো কি?
আব্রাহাম;; হুমম
রাত্রি;; কি হয়েছে মন খারাপ?
আব্রাহাম;; নাহ এমনি
রাত্রি;; তাহলে থামলি কেনো, গান টা তো সুন্দরই ছিলো।
আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না।
রাত্রি আব্রাহামের পাশে এসে বসে পরে। আব্রাহামের কাধে হাত রাখে।
আব্রাহাম;; আসলে না আমরা যা কখনোই নিজেদের লাইফে এক্সপেক্ট করি না বা তার বিন্দুমাত্র ধারণাও থাকে না পরবর্তীতে দেখা যায় কি যে সেগুলোই আমাদের সাথে হচ্ছে। জীবন টা যে এভাবে বদলে যাবে ভাবি না। জীবনের মোড় টা যে এবে ঘুড়ে যাবে সত্যি তা ভাবি নি। আমি তো চাই নি এমন কিছু, কিন্তু দেখ না কি থেকে কি হয়ে গেলো।
রাত্রি;; ___________________________

আব্রাহাম;; রাত অনেক হয়েছে যা ঘুমিয়ে পর।
রাত্রি;; তুই?
আব্রাহাম;; আমি তো আমিই। তুই যা।
রাত্রি;; আচ্ছা।
রাত্রি চলে যায়, তবে যাওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরেক বার আব্রাহাম কে দেখে যায়। আব্রাহাম ইচ্ছে করেই ঘরের লাইট অফ করে একটা বড়ো সাদা মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছিলো। বাইরের দমকা বাতাস এসে তাও ধুপ করে নিভিয়ে দিয়ে যায়। ঘর টা আবছা আলো-আঁধারের ছায়া হয়ে যায়। বাইরে যে বিদুৎ চমক দিচ্ছে তার আলো ঘরের মাঝে থেকে থেকে জ্বলে উঠছে। আব্রাহাম শূন্য দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকায়। আইরাতের কথা খুব বাজে ভাবে মনে পরছে তার। বড্ড বেশি। আব্রাহাম উঠে গিয়ে একটা কালো মোটা ফ্রেমের ডায়েরি বের করে। কালো কালি দিয়ে তাতে গাঢ় ভাবে লিখে………

“” যত নেশাই করো না কেনো,, সারা দুনিয়া খুঁজেও নারীর চেয়ে তীব্র নেশা কোথাও পাওয়া যাবে না~~
??””
এটা লিখে দিয়েই আব্রাহাম টাস করে ডায়েরি টা বন্ধ করে ফেলে। বিছানাতে গিয়ে গা এলিয়ে দেয়। এভাবেই রাত টুকু কেটে যায় তার।


পরেরদিন সকালে~~
আইরাত;; রাশেদ তাহলে ফাইল গুলো নিয়ে আমি যাচ্ছি ওকে, তোমরা এদিক টা দেখো। আর মিস্টার ডিসোজার কোন ক্লাইন্ট যদি এখানে আসে তাহলে সোজা আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়।
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।

তনয়ার দুই দিন ধরে কোন খবর নেই যার ফলে কাজের চাপ টা একটু বেশিই পরেছে। আইরাত যদিও তনয়া কে ফোন দিয়েছিলো। আর দুই একদিনের মাঝে সে আবার অফিসে জয়েন করবে। তবে এখন কিছু নতুন ক্লাইন্ট আছে আর তারা আইরাতের সাথে দেখা করার জন্য বাইরেই হয়তো কোন এক হোটেলে সব এরেঞ্জম্যান্ট করেছে তাই আইরাত সেখানে যাচ্ছে। আইরাতের বাইরে বের হতেই অফিসের বেশ কিছু স্টাফ দের সাথে তার দেখা হয়,, তারা সবাই আইরাত কে মর্নিং উইস করে। আইরাত হেসে সবার উত্তর দিয়ে দ্রুত পায়ে গিয়ে তার গাড়িতে ওঠে স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।

আইরাত আজ নিজেই কিছুটা ব্যাস্ত তাই সে আব্রাহাম কে ফোন দেয় নি। আইরাত গাড়ির স্পীড বেশ বাড়িয়ে দিয়ে আপন গতিতে যেতেই আছে৷ তবে মাঝপথে আচমকাই একটা গাড়ি আইরাতের গাড়ির সামনে এসে পরে,, আইরাত কোন রকমে দ্রুত ব্রেক কষে। অল্পের জন্য সেই গাড়িটার সাথে ধাক্কা লাগে নি তার। আইরাতের মাথায় ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এখন এই গাড়িরও বারো টা বাজাবে আর তার সাথে গাড়ির মালিকেরও। আইরাত গাড়ি থেকে রেগে মেগে আগুন হয়ে নামতে যাবে তার আগেই গাড়ির ওনার আইরাতের গাড়ির উইন্ড-এর পাশে এসে দাঁড়ায়। আইরাত গাড়ির উইন্ড টা নামিয়ে বাইরে তাকায়। আর যে দাঁড়িয়ে ছিলো তাকে দেখে আইরাতের সব রাগ যেনো নিমিষেই পানি পানি হয়ে গেলো। তার মুখে ফুটে ওঠে দীর্ঘ হাসি।

আইরাত;; আরেহহ আমার জামাই টা না এইটা।
আব্রাহাম;; না অন্যের জামাই।
আইরাত;; ওইইয়া ফাইজলামি করেন ??
আব্রাহাম;; আইরাত গাড়ি থেকে নামো ফাস্ট।
আইরাত;; কিন্তু কেনো? আর আজ দেখি আমার কথা আপনার আগেই মনে পরেছে। থাকতে না পেরে একা একাই চলে এসেছেন আমার কাছে তাই না।
আব্রাহাম;; আইরাত বেশি কথা বলার সময় নেই এখন প্লিজ জলদি গাড়ি থেকে নেমে পরো।
আইরাত;; কিন্তু আব্রাহাম হয়েছে টা কি বলবেন তো।
আব্রাহাম;; আইরাত, গাড়ি থেকে নামতে বলেছি। সময় নেই হাতে বেশি একটা প্লিজ নামো জলদি।
আইরাত;; কিন্তু…

আব্রাহাম;; ধুত্তুরি, ফাজিল মেয়ে বেশি বকবক করে। ওওও মিসেস. বকবক।
এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের ডান বাহু ধরে দেয় এক হেচকা টান। ফলে আইরাত হুমড়ি খেয়ে গাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম আর কিছু না বলেই আইরাতের হাত ধরে দৌড় লাগায়। দুজনেই দৌড়িয়ে বেশ কিছু দূরে এসে পরে। আইরাত তো হিল পরে ছিলো যার ফলে একটু অসুবিধা হয়েছে দৌড়াতে আর হাপিয়েও গেছে।
আইরাত;; আমি বুঝলাম না এভাবে টেনে বাইরে আনলেন কেনো, আর আমরা দৌড়ালামই বা কেনো। (কোমড়ে হাত রেখে হাপাতে হাপাতে)

আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা গুটিয়ে নিয়ে আইরাতের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। আর তার সাথে সাথেই এক গগন ফাটানো আওয়াজ করে আইরাতের গাড়ি টা ব্লাস্ট হয়ে হয়ে যায় অর্থাৎ বিস্ফোরণ। আইরাতের মুখ হা হয়ে গেছে। সে ফাটা চোখে তার গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়েই রয়েছে।
আব্রাহাম;; এর জন্য টেনে এনেছি।

এই বলেই আব্রাহাম চলে আসে। আর আইরাত অবাকের চরম পর্যায়ে এখন। মানে কি তার গাড়িতে কি বোম টোম ফিট করা ছিলো নাকি। আইরাত এইসবের কিছু ভুল করেও জানতো না। অল্পের জন্য আজ বেচে গেছে। ভাগ্যিস আব্রাহাম সময়মতো এসেছিলো। তবে আব্রাহাম এটা জানলো কি করে? আইরাত তার পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম নেই। আইরাত ঘুড়ে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম তার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন ঘাটছে। এগুলো কোন কথা? মাত্রই একটা এত্তো বড়ো বিস্ফোরণ হয়ে গেলো চোখের সামনে আর আব্রাহাম এখন এমন একটা ভাব ধরছে যেনো এখানে কিছুই হয় নি। এমনকি আব্রাহাম-আইরাতের থেকে কিছুটা দূরেই আইরাতের ওই গাড়ি টা আগুন লেগে জ্বলছে। জ্বলে-পুড়ে একদম ছাই হচ্ছে। আইরাত দ্রুত বেগে আব্রাহামের কাছে চলে গেলো। চিল্লিয়ে বলে ওঠে….

আইরাত;; কি হচ্ছে এগুলো? গাড়িতে বোম এলো কোথা থেকে আর আপনিই বা জানলেন কীভাবে?
আব্রাহাম;; _______________________
আইরাত;; আব্রাহাম!! বেশ রাগ হচ্ছে এবার আমার।
আব্রাহাম;; চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; যেদিকে দুচোখ যায়।
আইরাত;; কিহ?

আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না। ত্যাড়া যে ত্যাড়াই রয়ে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে তার গাড়িতে তুলে আইরাতের যেই জায়গায় যাওয়ার কথা ছিলো আব্রাহাম তাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে আসে। অবশেষে আইরাত আব্রাহামের গাড়ি থেকে নেমে পরে। আইরাত ভেতরে চলে যেতে ধরবে কিন্তু কি যেনো একটা মনে করে আবার ঘুড়ে আব্রাহামের কাছে আসে। বেশ ঝুকে আব্রাহামের গাড়ির উইন্ড তে দুই হাত রেখে বলে ওঠে…..

আইরাত;; আপনা টাইম আয়েগা ?
আব্রাহাম;; ??
এই বলেই আইরাত ভেতরে চলে যায় আর আব্রাহাম একজন কে ফোন দেয়।
আব্রাহাম সোজা তনয়াকে ফোন দেয়।
আব্রাহাম;; হ্যালো, কিছু জানতে পারলে?
তনয়া;; স্যার আমি গত প্রায় কয়েক বছরের প্রায় সব কেস চেক করেছি। সব ফাইল চেক করেছি। তা কোন এক্সিডেন্ট হোক বা মিসিং এর। তেমন বেশি কিছু তো পাই নি তবে হ্যাঁ একটা ব্যাপারে বেশ খটলা লাগলো।
আব্রাহাম;; কি?

তনয়া;; একটা মেয়ের মিসিং কেস এখানে ফাইল করা হয়েছিলো প্রায় এক বছর আর কয়েক মাস আগে। ধরতে গেলে দুই বছরই। আর আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এটা যে মেয়েটাকে কেউ খুঁজতে আসে নি বা পরে এই মেয়ের বিষয়ে কোন খবরাখবর রাখে নি। পরবর্তীতে আর না পেরে বাধ্য হয়েই এই কেসটা ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে।
আব্রাহাম;; মেয়ের নাম কি?
তনয়া;; নাম? নাম? ওহ হ্যাঁ মেয়ের নাম প্রীতি।
আব্রাহাম;; প্রীতি??
তনয়া;; জ্বি স্যার প্রীতি নাম ওর৷
আব্রাহাম;; ওকে।

এই কথা বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। মাথায় হাজারো চিন্তা ভর করে বসেছে৷ হাজারো কথা মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। আব্রাহাম তনয়া কে দিয়ে পুলিশ স্টেশনে সব এক্সিডেন্ট & মিসিং কেস গুলো চেক করাচ্ছিলো। তনয়াকে যেনো পুলিশ তার কাজে বাধা না দেয় তার জন্য তনয়ার কাছে পারমিশন টাও ছিলো। আর চেক করানোর কারণ হচ্ছে যে আব্রাহামের যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তখন কেস কতটুকু এগিয়েছিলো বা কীভাবে ক্লোজ হয়েছে তা জানা। যেই কারণে এইসব করা তা তো জানা যায় নি তবে হ্যাঁ উল্টো আরেক প্রশঙ্গ উঠে এসছে।

এই প্রীতির কথা তো আব্রাহামের মাথা থেকে পুরো পুরি বেরই হয়ে গিয়েছিলো। প্রীতি নামে যে কোন মেয়ে আছে তাও প্রায় ভুলে গিয়েছিলো আব্রাহাম। সে ভাবতেও পারে নি যে এখানে প্রীতির এমন কোন কেস তার কাছে পরবে। আর মিসিং মানে? প্রীতি মিসিং কীভবে আর কবে হলো। আব্রাহাম এগুলো ভেবে ভেবেই গাড়ি ড্রাইভ করছে এখন বেশ রাত হয়ে গেছে তাই রাস্তা ঘাটে মানুষজনও কম। আব্রাহাম তার এক হাত মুখের কাছে রেখে আরেক হাত দিয়ে আস্তে আস্তে করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এক ফাকা রাস্তা ক্রস করে যেতেই কিছু একটা বাধে আব্রাহামের চোখে।

একজন লোক কালো চাদরের মতো কিছু একটা পরে মনে হলো দ্রুত আব্রাহামের গাড়ির সামনে দিয়ে চলে গেলো। আব্রাহাম গাড়ির ব্রেক কষে কপাল কুচকে তাকায়। লোকটার অবয়ব দেখে আব্রাহামের তাকে বেশ চেনা জানা মনে হলো। আর লোকটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে খুব তাড়ায় আছে। আর মূল কথা হচ্ছে আব্রাহাম এখন আইরাতের অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। মানে সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলো আর কি। সেই চাদরে ঢাকা লোকটিও ঠিক চোরের মতো করে এখান দিয়ে চলে গেলো। এমনি আইরাতের ওপর বিপদের সীমা নেই তারওপর আবার এই অজানা অচেনা লোকটা। আব্রাহামের বেশ সন্দেহ লাগলো। সে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে লোকটার পিছু নিলো।

লোকটা শুধু অলিগলিতে যাচ্ছে। আর রাস্তা গুলো বেশ অন্ধকার। একটা সময় হুট করেই কিছু একটার সাথে বেধে লোকটার ওপর থেকে কালো চাদর টা সরে যায়। সে তার পেছনে ঘুড়ে। আর আব্রাহাম সেই লোকটার চেহারা দেখে বেশ অবাক হয়। লোকটা আর কেউ না রায়হান নিজে। আব্রাহাম বহু বছর পর রায়হান কে দেখছে। এভাবে হুট করেই এমন একটা জায়গায় সে রায়হান কে দেখবে তা আব্রাহাম ভাবে নি।

তবে এবার রায়হান উল্টো ঘুড়ে দ্রুত চলে যায়। আব্রাহাম নিজেও দ্রুত পায়ে রায়হানের পিছু পিছু যায়। রায়হান যাতে আব্রাহাম কে দেখতে না পারে আব্রাহামের সেইদিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। রায়হান যেতে যেতেই একটা মোড় ঘুড়ে। তার কিছুক্ষন পরেই আব্রাহামও তার পিছু যায় কিন্তু দুভার্গ্যবশত আব্রাহাম রায়হান কে হারিয়ে ফেলে। রায়হান হুট করেই গুম হয়ে যায়। আব্রাহাম তাকে সবদিকে খুঁজতে থাকে৷ আশে পাশের সব জায়গাতেই খুঁজে কিন্তু রায়হান হঠাৎ করেই নাই হয়ে যায়। আব্রাহামের রাগ উঠে গেলো। একটুর জন্য, একটুর জন্য সে রায়হান কে হারিয়ে ফেললো। আব্রাহাম আবার এসে নিজের গাড়িতে বসে পরে। রাত অনেক, তাই এখন তো অবশ্যই আইরাতের অফিসে কারো থাকার কথা না। আব্রাহাম একবার অফিসের দিকে তাকিয়ে চলে যায়।

রাশেদ;; কিন্তু ম্যাম বোমা? বোমা কোথা থেকে আসবে? কখন করলো এইসব?
আইরাত;; জানি না আমি কিচ্ছু জানি না। তবে আমি এই টুকু সিওর যে যাই হচ্ছে, যেকিছুই হচ্ছে সবকিছুর পেছনে ওই রায়হানেরই হাত আছে। আই এম ড্যাম সিওর। কারণ রায়হান জেল থেকে পালিয়ে গিয়ে তো আর হাতে চুড়ি পরে বসে থাকবে না। সেইদিন আমার ওপর গুলি চালানো থেকে শুরু করে কাল আমার গাড়িতে বোমা ফিট করা পর্যন্ত সবকিছুতেই কোন না কোন ভাবে ওই রায়হানই আছে। ভাগ্যিস আব্রাহাম ছিলো। আমি বেচে গেছি।

রাশেদ;; ম্যাম এইটুকু একদম চোখ বন্ধ করে বলা যায় যে স্যার থাকতে আপনার কিছুই হবে না। কিন্তু এভাবে রিস্কের ওপর তো আর জীবন চলে না তাই না।
আইরাত;; দেখি কি করা যায়। তনয়া কোথায় ও এসেছে?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম,,
আইরাত;; ওকে আমার কেবিনে পাঠাও।
রাশেদ;; জ্বি।
এই বলেই রাশেদ চলে গেলো তার কিছুক্ষন পর আইরাতের কেবিনে তনয়া আসে।

তনয়া;; বেবি আমাকে ডেকেছিস?
আইরাত;; ভেতরে আয় (গম্ভীর মুখে)
তনয়া;; এলাম, কিন্তু হয়েছে কি?
আইরাত;; এই দুই-তিনদিন তোর এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিলো শুনি?
আইরাতের কথায় তনয়া কিছুটা আটকে যায়।
তনয়া;; না মানে আসলে এমনি কিছু কাজ ছিলো আরকি?
আইরাত;; কাল রাত কোথায় ছিলি?
তনয়া;; হ্যাঁ??
আইরাত;; হ্যাঁ!! কোথায় ছিলি?
তনয়া;; আরে ছিলাম কিছু কাজে। তুই বল না কিছু বলবি আমায়?
আইরাত;; কিছু জনিস না তুই?
তনয়া;; না কেনো ??
আইরাত;; রায়হান জেল থেকে পালিয়েছে + আমার ওপর গুলি চালিয়েছে + আমার গাড়িতে বোমা ফীট করেছিলো। ভাগ্য ভালো বেচে আছি।

তনয়া;; হুয়াট?
আইরাত;; ইয়েস।
তনয়া;; কীভাবে কি?
আইরাত;; জানিস মাঝে মাঝে ভয় লাগে। আমিও মানুষ, খুব তো স্ট্রোং থাকার ভং ধরি কিন্তু মঝে মাঝে আমারও ভয় হয়। প্লিজ অনেক হয়েছে আর চাই না আমি। আমার মাঝে আর সহ্য করার ক্ষমতা নেই। আমি এখন একটু হ্যাপি হতে চাই একটু। আমার আব্রাহামের সাথে।
তনয়া;; সব ঠিক হয়ে যাবে,, চিন্তা করিস না। সব এলোমেলো হয়ে গেলেই যা তা শেষ বা শুরুর কোন পথ নেই তা একদমই না। আর এখানে! এখানে তো কিছুই শেষ হয় নি। সব ঠিকই আছে। তুই শুধু আরো একটু ধৈর্য ধর, ভরসা রাখ, আশা ছাড়িস না ব্যাস। (আইরাতের হাতের ওপর হাত রেখে)
আইরাত তনয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়। তারপর আরো বেশ কিছুক্ষন সময় তনয়া আইরাতের কেবিনে থেকে বের হয়ে পরে।

তনয়ার চলে যেতেই আইরাত আব্রাহাম কে ফোন করে। আব্রাহাম প্রথম বারেই তা রিসিভ করে নেয়।
আইরাত;; হ্যালো..!
আব্রাহাম ফোনের ওপর পাশ থেকে আইরাতের মিষ্টি কন্ঠস্বর টা পেয়েই তার চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। আব্রাহাম কিছু বলছে না দেখে আইরাত আবার বলে ওঠে…
আইরাত;; হ্যালো আব্রাহাম! আমি জানি আপনি শুনছেন সবই।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; কোথায় আপনি?
আব্রাহাম;; বাসায় আছি।
আইরাত;; কি করছেন?
আব্রাহাম;; ভাবছি।
আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত ব্যাক্তি কে তোমার কাছে?
আইরাত;; বলাটা কি জরুরি?
আব্রাহাম;; হয়তো।
আইরাত;; যদি বলি আমি নিজে??
আব্রাহাম;; আমি মানবো না।
আইরাত;; কেনো?
আব্রাহাম;; তোমার নিজেরই কোন অধিকার নেই নিজেকে ঘৃণা করার।
আইরাত;; অধিকার খাটানোর মানুষ টা কাছেও থেকে বেশ দূরে যে আমার।
আব্রাহাম;; প্রীতির সাথে লাস্ট কবে কথা হয়েছিলো তোমার??
আইরাত;; প্রীতি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ মনে আছে??
আইরাত;; হ্যাঁ থাকবে আবার না,, ও তো আপনার পেছনেই ঘুরঘুর করতো। যত্তসব লুচ্চি মাইয়া।
আব্রাহাম;; ও মিসিং। ইন ফ্যাক্ট বছরের ওপরে হবে সে মিসিং। কোন খবরই নেই।
আইরাত;; ওহহহ,,
আব্রাহাম;; রায়হানের কোন খবর পেলে?
আইরাত;; আপাতত না।
আব্রাহাম;; ওহহ,, আচ্ছা। তো! কি করছো?
আইরাত;; এইতো বসে বসে ফাইল চেক করছি।
আব্রাহাম;; করো আর হ্যাঁ ওই আহসানের কাছ থেকে দূরে থেকো প্লিজ।
আইরাত;; কেনো?
আব্রাহাম;; পছন্দ না আমার ওকে।
আইরাত;; ওহ হো, আমার জামাইজানের জ্বলছে বুঝি?
আব্রাহাম;; মোটেও না।
আইরাত;; হাহাহাহাহা, আচ্ছা বুঝলাম। এবার রাখি।
আব্রাহাম;; বায়।

এই বলেই আব্রাহাম ফোনটা কেটে দেয়। সে করিডরে একটা বেতের চেয়ারে বসে রয়েছে। পরণে এশ কালারের টি-শার্ট, চুল গুলো বেশ এলোমেলো হয়ে কপালে পরে রয়েছে। প্রচুর খোলা বাতাস রয়েছে, ছোট ছোট বেশ কিছু গাছপালা রয়েছে। পরিবেশ টা সুন্দর। আব্রাহামের আজ কেমন যেনো মনে হচ্ছে। তার কাল রাতের রায়হানের কথা মনে পরছে। রায়হান লুকিয়ে ছিলো তা মানা যায়,, গা ঢাকা দিয়ে আছে মানা যায় কেননা সে জেল পলাতক আসামী। কিন্তু সে আইরাতের অফিসের নিচে কি করছিলো, অবশ্যই তাহলে আইরাতের কোন না কোন ক্ষতি করার জন্যই এসেছিলো। আব্রাহাম বসে বসে এগুলোই ভাবছিলো তখনই হঠাৎ এক আননোন নাম্বার থেকে আব্রাহামের কাছে একটা ফোন আসে। আর ফোনের ওপর পাশে থাকা ব্যাক্তিটির কন্ঠস্বর শুনে মূহুর্তেই যেনো আব্রাহামের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়।

রায়হান;; কেমন আছিস ভাই?
আব্রাহাম;; নির্লজ্জের মতো কেনো ফোন করেছিস?
রায়হান;; হায়াত অনেক লম্বা রে তোর। তাই তো এতো উঁচু থেকে পরে গিয়েও বেচে ফিরেছিস।
আব্রাহাম;; কিন্তু এখন হয়তো তুই আর বাচবি না।
রায়হান;; কে মারবে আমাকে? তুই?
আব্রাহাম;; তোকে মেরে আমি আমার হাত অপবিত্র করতে চাই না।
রায়হান;; আর আমি যদি তোর আইরাতকে মেরে দেই তো?

আব্রাহাম;; রায়হান নিজের লিমিটে থাক,৷ আইরাতের ওপর একটা আচড় অব্দি এলেও আমি তোকে জেন্ত পুতে দিবো।
রায়হান;; তাই না? আচ্ছা। আসলে কি এটা মানোটই হবে যে তোরা দুইজন দুইজনের জন্য অনেক বেশিই লাকি। নয়তো তুই চলে যাওয়ার পর আমি আইরাতের কাছে গিয়েছিলাম ওকে সুন্দর করে বুঝিয়ে নিজের করে নিতে কিন্তু না। তোর বউ তো এর জন্যই ত্যাড়া। আমার কাছ থেকে পাখির মতো পালিয়ে গেলো। আমাকে শুট অব্দি করলো। তারপর আমাকে জেলের পেছনে বন্দি করে দিলো। বিশ্বাস কর ভাই তারপর আইরাতকে মেরে ফেলার কতো কিছুই না করেছি আমি। কিন্তু মাইয়া হেব্বি স্মার্ট।

আব্রাহাম;; কাল রাত চোরের মতো আইরাতের অফিসের নিচে কি করছিলি?
রায়হান;; ওহহহ তো ওইটা তুই ছিলি? আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো যে কেউ আমাকে ফলো করছে বা আমার পেছনে কেউ আছে। তাহলে সেটা তুই ছিলি।
আব্রাহাম;; কথা না ঘুড়িয়ে যা জিজ্ঞেস করছি তাই বল।
রায়হান;; আইরাত কে দেখতে গিয়েছিলাম। মেয়েটার মাঝে এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করে।
আব্রাহাম;; অন্যের জিনিসে নজর দেওয়ার স্বভাব বন্ধ কর। যদিও তোর এই স্বভাব পুরানা।

রায়হান;; আমার বাড়ির গ্যারাজে এসে পরিস। বেশ কিছু সত্য বলার আছে তোকে। আর কতোদিন আবছা ঘোরের মাঝে থাকবি বল। সত্যি জানিস তুই কিন্তু অর্ধেক, আয় দেখা করি। কথা মিটমাট করি।
আব্রাহাম;; নিজের মরণ কে নিজে আমন্ত্রণ জানাস না রায়হান।
রায়হান;; আগে তুই আয় তো,, দেখি কে কাকে মারে।

আব্রাহাম ফোন টা কেটে দেয়। রাগ যখন আউট অফ কন্ট্রোল চলে যায় তখন মানুষ স্বাভাবিকের থেকে আরো বেশ চুপচাপ থাকে। আব্রাহামের ক্ষেত্রেও তাই। আব্রাহাম এখন একদম চুপ করে বসে আছে। রাগের সীমা একদম অতিক্রম করে গেছে। যাই হোক আব্রাহাম উঠে পরে। রুমে এসে নিজের ব্লেক+ব্রাউন কালারের জেকেট টা নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। এক্ষেত্রে আব্রাহাম একটু চালাকি করে। নিজের জেকেটের বাটনের সাথে একটা ছোট্ট ক্যামেরা ফিট করে নেয় অর্থাৎ বাটন ক্যামেরা। এটা করার কারণ হলো রায়হান সেখানে যাই করবে বা যাই হবে সেগুলো রেকোর্ড হয়ে যাবে। আব্রাহাম তার কাবার্ড থেকে রিভলবার টা হাতে নিয়ে নেয়,, বুলেট”স একদম লোড করা তাতে। তবে পরক্ষণেই আবার কি যেনো একটা ভেবে আব্রাহাম রিভলবার টা কাবার্ডের ভেতরেই আবার ছুড়ে মারে। নিজের সাথে কিচ্ছু নেই না। সোজা বাইরে বের হয়ে গাড়িতে করে চলে যায়। গাড়িতে বসে আব্রাহাম তার কানে এয়ার পড লাগিয়ে নেয়। তনয়ার সাথে কানেক্ট করে নেয়।

তনয়া;; হ্যালো
আব্রাহাম;; হ্যালো তনয়া!
তনয়া কিছুটা দূরে চলে যায় কথা বলার জন্য।
তনয়া;; জ্বি স্যার।
আব্রাহাম;; লিসেন মি কেয়ারফুলি,, আমি রায়হানের কাছে যাচ্ছি ওকে, আর হ্যাঁ আমার সাথে ক্যামেরাও আছে। আর এই ক্যামেরার কানেকশন তোমার ফোনের সাথেই করা। মনে আছে?
তনয়া;; জ্বি স্যার আছে।
আব্রাহাম;; আমি সেখানে গেলে সেখানকার সব কিছুই এখানে রেকোর্ড হবে। যা তোমার ফোনে দেখা যাবে। ওটাকে সেভাবেই রেখে দিবে,, আমি যখন তোমাকে কিছু করতে বলবো দ্যান কিছু করবে বুঝলে।
তনয়া;; ওকে।

এই বলেই আব্রাহাম কল কেটে দেয়। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট সময় পর আব্রাহাম রায়হানের কাছে এসে পরে। এইতো এটাই রায়হানের ২ নাম্বার বাড়ি। আর এটার শেষের দিকেই একটা গ্যারাজ আছে। বেশ বড়ো সড়ো। আব্রাহাম এসে দেখে বাড়ির সামনে না আছে কোন গার্ড আর না ই আছে অন্য কোন কিছু। আব্রাহাম বাড়ির একদম পেছনে গিয়েই দেখে গ্যারাজ টা একদম খোলা। সে ভেতরে চলে যায়। বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর টা। ঘরটার ঠিক মাঝ বরাবর জ্বলছে একটা হলুদ কালারের বাতি। পাশেই ওপর থেকে বেশ কিছু ইলেকট্রিকের তার ঝুলে আছে।

সেগুলো থেকে কিছুটা আগুনের ফুলকির মতো বের হচ্ছে। আব্রাহাম গিয়ে একদম ঘরের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে পরে। ওপরে কিছুর কিচির মিচির আওয়াজ শুনে আব্রাহাম ওপরের দিকে তাকায় দেখে যে একটা লোহার ফ্যান বেশ জোরে জোরে দুলছে। যেনো এই নিচে পরে গেলো এমন। বেশ বিরক্তিকর একটা অবস্থা। আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে তার পেছনের ডাকে সে থেমে যায়।

রায়হান;; আব্রাহাম!! কোথায় যাচ্ছিস ভাই। আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাচ্ছিস?
আব্রাহাম তার পেছন ঘুড়ে তাকায়। দেখে রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। এতো বছর জেলে থাকার ফল বা খাতির দারি তার চোখে মুখে স্পষ্ট। আগে থেকে বেশ কালো হয়ে গেছে। চোখের নিচে গাঢ় কালো দাগ। মুখে বেশ কিছু স্পর্ট পরেছে। চুল গুলো উষ্কখুষ্ক। তবে আগের সেই শয়তানি হাসি মুখে আছেই।
রায়হান;; দেখ তোর বউ আমার কি হাল করে দিয়েছে। পাগল কুকুর বানিয়ে দিয়েছে আমাকে ওর পেছনে।
আব্রাহাম;; কি বলবি জলদি বল।

রায়হান;; আগে তুই বল যে তুই আইরাত কে কতো টুকু ভালোবাসিস?
আব্রাহাম;; হাহ, সেই কৈফিয়ত অবশ্যই আমি তোকে দিবো না।
রায়হান;; বিশ্বাস আছে আইরাতের ওপর?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আছে, আইরাত যদি আমাকে নিজ হাতে মেরে রেখেও যায় তবুও আমি ওকেই ভালোবাসি, বাসবো আর বেসেই যাবো।
রায়হান;; তাহলে ওর সাথে এতো রাগ আর অভিমান কেনো?
আব্রাহাম;; না রাগ আর না ই অভিমান। শুধু কিছু এমন ঘটনা জীবনে ঘটেছে যার ফলে আমাকে তার কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে।

রায়হান;; মনে পরে কি সেইদিন সেই রাতের কথা? যখন তোর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো?!
আব্রাহাম;; সেই অভিশপ্ত ঘটনাই আমার জীবনের চেহারা পুরো পালটে দিয়েছে,, আমি কি করে ভুলি তা।
রায়হান;; আইরাত তোকে মেরেছে??
আব্রাহাম;; হয়তো না হয়তো হ্যাঁ,, তবে আমি এই টুকু জানি যে এই সবগুলোর পেছনে কেউ না কেউ তো অবশ্যই আছে। আর সত্যি বলতে আমার পুরো সন্দেহ তোর ওপরে।
রায়হান;; ঠিক ধরেছিস। আমিই তোকে মেরেছি।
আব্রাহাম;;

রায়হান;; লেট মি এক্সপ্লেইন,, আমি আইরাতকে ভালোবাসতাম আর এখনো বাসি বুঝলি। বাট কি করবো বল ওর ওপরে তো তোর নজর ছিলো। আর হ্যাঁ কে যেনো ঠিকই বলেছে যে “” মেয়েদের জন্য ঘর যেমন জুড়ে আসে ঠিক তেমনই মেয়েদের জন্য ঘর তেমন বরবাদও হয়ে যায়””। আজ পর্যন্ত দুনিয়াতে যতো যুদ্ধ-বিবাধ ই হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই মেয়ে জনিত। মেয়েরা খুব বেশি অদ্ভুত হয়। তাই তো দেখ না আমার অবস্থা এখন এমন। এই আইরাতকে পাওয়ার জন্য কম কিছু করেছি আমি?? কত্তো কিছু না করেছি। এমনকি তোকেও খুন করতে দুইবার ভাবি নি। কিন্তু ফলাফল কি হলো দেখ শূন্য। পাই নি আমি ওকে।

তাই ভাবলাম যে যখন আইরাতকে পাবোই না তখন ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ মেরে ফেলি। হ্যাঁ আমিই মেরেছি তোকে, আর আইরাতকে মারার চেষ্টা করেছি। সেইদিন পার্কে গুলি, আইরাতের গাড়িতে বোমা আমার লোকেরাই লাগিয়েছে। যখন আইরাতকে আমি পাবোই না তখন ওকে কেউ পাবে না। আর শোন, প্রীতিও কিন্তু কম ভালোবাসতো না তোকে। কিন্তু মেয়েটা আর নেই। প্রেমের জন্য তাকেও মরতে হয়েছে। তাকেও আর কেউ না এই আমিই মেরেছি। নাও কাম টু দি মেইন পয়েন্ট। তুই যখন সেইদিন রাতে আসছিলো ওই পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে। আমি আগে থেকেই তোর গাড়ির ব্রেক ফেইল করে রেখেছিলাম। তোর গাড়ির এক্সিডেন্টও আমিই করিয়েছিলাম।

তারপর তুই কিছুটা আঘাত পেলি বাইরে বের হয়ে পরলি গাড়ি থেকে। আমি ভেবেছি তুই মরে গেছিস কিন্তু না তোর হোস তখনও ছিলো। তখন তোর মতে তোর কাছে আইরাত যায় তাই না??? আসলে না সেটা আইরাত ছিলো না, সেটা প্রীতি ছিলো, প্রীতি। এখন প্রশ্ন হলো প্রীতি কীভাবে আইরাতের মতো দেখতে হলো। এটা 2021 এখন একজনের চেহারা, আরেকজনের মতো করে করতে বেশিকিছু করতে হয় না। আর্টিফ্যাশিয়াল ওয়ার্ক্স & সাম ট্যাম্পোরারি কসমেটিকস সার্জারি ব্যাস। প্রীতি কে তোর আইরাতের মতো করে দিতে বেশি সময় লাগে নি।

তবে হ্যাঁ আমার জন্য একটা প্লাস পয়েট ছিলো। তা হচ্ছে এই যে সেই রাস্তা টা একদমই ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিলো তার ওপর তুই তোর মাথার পেছনে আঘাত পেয়েছিলি। যার ফলে তুই সব ঝাপসা দেখেছিস। সেইভাবেই আইরাতকে দেখেছিস তাও আবার এই রূপে। তোরই খুনির রূপে। আইরাত ওরফে প্রীতি যখন সেখান থেকে চলে আসতে নিয়েছিলো তখনও তুই সহজে বিশ্বাস করতে চাস নি, তারপর তুই ভালোভাবে প্রীতির মুখ দেখিস যা ৯৯.৯% আইরাতের মতো ছিলো। তুই মরলি না উঠে দাড়ালি। আর জানিস তো তখন কি হলো আমি রড নিয়ে তোর মাথার পেছনে আঘাত করি।

ব্যাস তুই স্যান্সলেস। তোকে তোর গাড়িতেই তুলি আর খাদ থেকে আমি এই যে নিজ হাতে তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেই। কিন্তু প্রীতি বারাবারি করছিলো বেশ। নিজের জীবন হারানোর জন্য দায়ী একমাত্র সে। তোকে মেরেছি তো তাই ওর অনেক খারাপ লাগছিলো। আমার কলার খামছে ধরেছিলো আমাকে গালিও দিয়েছে। তোকে চাইতো ও। এখন আমি কি করে প্রীতি কে কষ্ট দিতে পারি বল বিকজ প্রীতি আমার অনেক হেল্প করেছে। ইন ফ্যাক্ট সে না থাকলে তোকে আর আইরাতকে আমি এতো বছর দূরে রাখতেই পারতাম না। তাই ওকে এবার আমি একটু হেল্প করি। প্রীতি কেও আমি তোর পরে সেই খাদে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। ব্যাস, খাতাম কাহানী। কিন্তু দেখ তোর কৈ মাছের প্রাণ এখনো বেচেই আছিস। আর আইরাতের কাছেও পৌঁছে গেছিস। (রাগে দাত কটমট করে)

রায়হান আব্রাহাম কে সব খুলে বলে। আর সবকিছু শুনে যেনো আব্রাহামের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। তাহলে আইরাত কিছু না করেই দোষী। আইরাত তো এগুলোর কিছুই জানে না। আইরাত হয়তো ধারণাও করতে পারবে না যে তার পিঠ পিছেই কত্তো বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেছে। আব্রাহাম কেনো দূর ছিলো, কীভাবে ফিরে এলো আর গায়েবই বা কোথায় ছিলো আইরাত এগুলোর কিচ্ছু জানে না। কেউ একজন যে মিথ্যে আইরাত সেজে এসে তারই নাকের নিচ দিয়ে এত্তো বড়ো একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে তার একফোটা আন্দাজও আইরাতের নেই।

না, আব্রাহাম যে একদম আইরাতকে নিজের খুনি হিসেবে ভেবে এসেছে তা না। আব্রাহাম দ্বিধায় ছিলো। কিন্তু এবার যেনো সব ক্লিয়ার তার কাছে। একদম পানির মতো পরিষ্কার সব। আব্রাহাম রায়হানের অগোচরেই তার জেকেটে থাকা বাটন ক্যামেরা টার একটা জায়গায় প্রেস করে। অর্থাৎ এতোক্ষন সবকিছুই রেকোর্ড হচ্ছিলো। আর ক্যামেরাতে প্রেস করার ফলে তা একটা এমএমএস হসেবে তনয়ার ফোনে চলে যায়। মেসেজের শব্দ পেয়ে তনয়া তা ওপেন করে। আর সবকিছু দেখে তনয়ার নিজেও মুখ একদম হা হয়ে যায়। তনয়া আর এক মূহুর্ত দেরি না করে সেই এমএমএস টা সোজা আইরাতকে সেন্ড করে দেয়। আইরাত তার ফোনে শব্দ পেয়ে তা ওপেন করে। দেখে একটা ভিডিও এসেছে। আইরাত ভিডিও ক্লিপ টা অন করে দেখতে থাকে।

রায়হান;; কি অবাক লাগছে? কিন্তু এটাই সত্যি। এটাই হয়েছে তোদের সাথে। আইরাত জানেই না যে তারই নকল ধরে তার সাথেই কেউ এমন টা করেছে। ওহহ হ্যাঁ আরেকটা খবর। খুব জলদি তোর আইরাত জেলে যাচ্ছে।
আব্রাহাম;; হুয়াট?
রায়হান;; হ্যাঁ ভাই। কেনো জানিস? কারণ আইরাতের নামে প্রচুর ব্লেক মানির ইলিগ্যাল কেস আছে। আইরাত তার বাড়িতে ইভেন অফিসেও অনেক ব্লেক মানি জড়ো করে রেখেছে। যেগুলো সরকার কতৃক নিষিদ্ধ। আর হ্যাঁ চিন্তা করিস না। সেগুলো ভুয়া, ফেইক। ভুল নিউজ কিন্তু সত্য। কেননা সেখানে টাকার মানে ব্লেক মানির হিসেবের যে ফাইল গুলো আছে সেগুলোর সবগুলোতেই আইরাতের সিগন্যাচার আছে।

আব্রাহাম;; আইরাত জেনে শুনে এমন কোন পেপারে সিগন্যাচার কখনোই করবে না।
রায়হান;; হ্যাঁ তা তো আমিও জানি আর জন্যই তো আমাকে উল্টো পথ বেছে নিতে হয়েছে। আমার যে ২-১ জন লোক আইরাতের পেছনে জাসুস হয়ে আছে,, তারাই আইরাতের সাইন কপি করে। কিন্তু আইরাত এতো বড়ো একজন বিজন্যাস ওম্যান। তার সিগন্যাচার তো আর এতো সহজে কপি করা যায় না তাই না। তাই একজন লোককে আমি আইরাতের অফিসে এস এ স্টাফ হিসেবে পাঠিয়েছি। আর আইরাত তো অনেক ব্যাস্ত মেয়ে।

তার এতো সময় কই যে সবার বায়োডাটা নিয়ে ঘুড়বে। আর সেটাই আমার সুবিধা হয়েছে। স্টাফ টা মানে যে কিনা আমার লোক সে ফাইল গুলো কালেক্ট করে কোন না কোন কাজের ফলে। আর তখনই সেই ফাইল গুলো থেকে আইরাতের সিগন্যাচার কপি করে নেয়। এইতো হয়ে গেলো। এখন এই যে এই ব্লেক মানির সব পেপারস আছে সেখানেও আইরাতের সাইন মানে কপি করা আর কি। তবে সবাই তো এই ভাববে এখন যে আইরাত ব্লেক মানির সাথে জড়িয়ে আছে। এতোক্ষনে পুলিশের কাছে এই খবর চলেও গিয়েছে। আর কিছু সময়ের মাঝে তারা আইরাতকে এরেস্ট করেও নিয়ে যাবে। নে সব হয়ে গেলো। মরার আগে তোকে সব সত্য আমি জানিয়েই দিলাম। এবার বল আমার প্ল্যান টা কেমন হয়েছে?? একদম মাস্টারপিস না??

রায়হানের কথা শুনে আব্রাহাম বেশ তাচ্ছিল্যের একটা হাসি হেসে দেয়। যা দেখে রায়হানের রাগ উঠে যায়।
আব্রাহাম;; ব্লাডি বুলশিট!! জানিস তো ক্রিমিনাল যতোই চালাক হোক না কেনো এমন কিছু সে রেখেই যাবে যা তাকে ফাসানোর জন্য যথেষ্ট। অতি চালাকের গলায় দড়ি।
রায়হান;; মানে??

আব্রাহাম;; মানে এই যে আমার সাথে ক্যামেরা ছিলো,, যা বলেছিস তুই যা যা করেছিস সব ক্যামেরা তে বন্দি হয়ে গেছে। আর এর থেকে ভালো আর কি হয় যে ক্রিমিনাল যখন নিজের মুখেই নিজের সব কুকীর্তি স্বীকার করে।
রায়হান;; কিহ? ক্যামেরা? ক্যামেরা কোথায় আমি তা ভেঙে ফেলবো।
আব্রাহাম;; কোন লাভ নেই। সব রেকোর্ড হয়ে গেছে। আর এতক্ষণে তা আমি একজন কে পাঠিয়েও দিয়েছি। কত্তো কিছু করলি তুই কত্তো কিছু। কতো প্ল্যান তোর। কিন্তু দেখ আমাকে শুধু একটা ক্যামেরা আনা ছাড়া আর কিছুই করতে হয় নি। সব একা একাই হয়ে গেছে। রায়হান ব্যাটা ফেসে তো তুই গেছিস।

আব্রাহামের কথায় রায়হানের বেশ রাগ উঠে পরে। সে চিল্লিয়ে তার পাশে থাকা একটা বড়ো লোহার রড নিয়ে আব্রাহামের দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু আব্রাহাম তাকে তার হাত দিয়ে আটকিয়ে দেয়। রায়হানের হাত শক্ত করে ধরে পেচিয়ে তাকে উল্টিয়ে দেয়। রায়হানের এক হাত পেছনের দিকে মুচড়ে ধরে। এতে রায়হানের হাতে বেশ টান লেগে তার হাত থেকে লোহার রড টা পরে যেতে ধরে। আব্রাহাম রড টা তার হাতে নিয়ে বিনা বাক্যে সোজা রায়হানের পিঠ পিছে মেরে দেয়।

রড টা রায়হানের পিঠের মাঝে দিয়ে ঢুকে একদম সামনে দিয়ে বের হয়ে পরেছে। মূহুর্তেই জায়গা টা একদম শান্ত হয়ে গেছে। রায়হান না পারছে কথা বলতে না পারছে অন্য কিছু করতে, গলগল করে রক্ত ঝরে যাচ্ছে। রায়হান খুব কষ্টে তার মাথা ঘুড়িয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহামকে দেখে তার আত্না আতকে উঠে। চোখে যেনো তার রক্ত জমে গেছে। রাগে মুখ টা কাপছে। মাথার রগ গুলো সব ফুলে গিয়েছে তার। আব্রাহাম রায়হান কে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে সোজা বুক বরাবর একটা লাথি মেরে দেয়। যার ফলে রড টা আরো বেশি করে রায়হানের মাঝে ঢুকে পরে।

এবার যেনো রায়হানের মুখ দিয়েও রক্তের ধারা বের হয়ে পরে। আব্রাহাম পাশে তাকিয়ে দেখে এক ধারালো চাকু পরে আছে। আব্রাহাম তা সাথে সাথে হাতে নিয়ে বাতাসের গতিতে রায়হানের কাছে চলে যায়। রায়হান দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে একটা লোহার চেয়ারে মরার মতো করে পরে ছিলো। আব্রাহাম তার এক পা রায়হানের চেয়ারের হাতলি তে রেখে দিয়ে তার বাম হাত দিয়ে রায়হানের গলা চেপে ধরে। আব্রাহাম একটা কথাও বলছে না সে শুধু তার মতো করে রাগ মিটাচ্ছে। আব্রাহাম ছুরি দিয়ে রায়হানের গাল বরাবর দেয় এক ঘা বসিয়ে।

এতে রায়হানের গালের ভেতর দিয়ে ছুরি টা একদম তার মুখে মাঝে চলে যায়। রায়হান কিছু বলতে পারছে না। শুধু যন্ত্রণায় ছটফট করে যাচ্ছে। আব্রাহাম ছুরি টা গাল থেকে তুলে আবার সোজা তার গলার শ্বাসনালিতে বসিয়ে দেয়। এতে যেনো রায়হানের শ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। রায়হানের উভয় হাতের রগ গুলোও আব্রাহাম কেটে দিয়েছে। অর্থাৎ রায়হানের শরীর রক্তে একদম ছেয়ে গেছে। অবশেষে আব্রাহাম রায়হানের গলাতে একদম ছুরি দিয়ে একটা টান দিয়ে দেয়। রায়হান শেষ, এক ফোটা শক্তিও আর বাকি নেই। তবে পুরো জীবন যায় নি তার। এবার আব্রাহাম ঠিক একটা সাইকোর মতো করে রুমের আশে পাশে তাকাতাকি করতে থাকে।

হয়তো সে খুজছে যে এখন রায়হান কে আর কীভাবে যন্ত্রণা দেওয়া যায়। আব্রাহাম পাগলের মতো করে খুজছে। অবশেষে আব্রাহাম দেখতে পেলো যে গ্যারাজেই বেশ বড়ো বড়ো পানির কিছু ড্রাম রয়েছে। আব্রাহাম সেগুলো সব নিয়ে আসে। এক এক করে ড্রাম থেকে সব পানি রায়হানের ওপরে ঢালতে থাকে। রক্ত আর পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে। প্রায় তিন ড্রাম পানি আব্রাহাম রায়হানের ওপর ঢালে। তারপর আব্রাহাম সোজা সেই ইলেকট্রিক তারের কাছে চলে যায়। খুব সাবধানে তা নিয়ে এসে রায়হানের সামনে দাঁড়ায়।

রায়হান আধো আধো চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে খুব বিভৎস লাগছে তাকে। গলা, চেহারা, শরীর একদম ক্ষত-বিক্ষত। এমনকি শরীরের ঠিক মাঝ বরাবর লোহার রডটা বিধেই আছে, তার ওপর পানি দিয়ে একদম ভেজা। আব্রাহাম এসে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে। রায়হান যে আব্রাহাম কে মারার জন্য এতো প্ল্যানিং করেছে তার জন্য আব্রাহামের বিন্দুমাত্র চিন্তা বা রাগ নেই। রায়হান আইরাতকে কেড়ে নিতে চেয়েছে আব্রাহামের কাছ থেকে এটাই যেনো আব্রাহাম কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। আব্রাহাম রায়হানের দিকে তাকিয়ে শুধু একটা কথাই বলে…..
আব্রাহাম;; হ্যাপি জার্নি সৎ ভাই…!!

এই বলেই আব্রাহাম তার হাত থেকে ইলেকট্রিক ওয়ার টা রায়হানের গায়ের ওপর ছুড়ে মারে। ব্যাস, রায়হান যে ঠিক কীভাবে ছটফট করছে তা বলার বাইরে। একে তো রায়হানের ওপরে পানি আর তার ওপর কারেন্ট। ইলেকট্রিক শক খুব ভাজে ভাবে লাগছে রায়হান কে। রায়হান তার চোখ গুলো উল্টিয়ে দিয়েছে। এভাবেই কাতরাতে কাতরাতে রায়হান মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। আর আব্রাহাম তার জেকেটের কলার ঠিক করতে করতে গ্যারাজের বাইরে এসে পরে যেনো কিছুই হয় নি।

অন্যদিকে ক্যামেরা তে শুধু আব্রাহাম কে মারার কথা রেকোর্ড হয়েছে। এই ব্লেক মানির কথা রেকোর্ড হয় নি। আইরাত তার চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে দিয়ে তার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে এতো টাই অবাক যে আশে পাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তারও খেয়াল নেই তার। আইরাতের চোখ থেকে টপ করে পানি গড়িয়ে পরে। আইরাত তার হাতে ফোন টা নিয়ে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছে। রায়হান & প্রীতি যে এমন কিছু করেছে তার কল্পনা মাত্র আইরাতের ছিলো না। আইরাত নিজের হিতাহিত জ্ঞ্যান শূন্য হয়ে গেছে। তখনই কিছুটা দ্রুত বেগে আইরাতের কেবিনে কয়েকজন পুলিশ অফিসার আসে। আইরাত তাদের এভাবে এখানে দেখে অবাক হয় না। কেননা যে ঝটকা আইরাত খেয়েছে তার কাছে এটা কিছুই না।

অফিসার;; মিসেস. আইরাত আপনাকে একটু এই সময়ে আমাদের সাথে যেতে হবে।
তখনই আইরাতের কেবিনে রাশেদ আসে। সে পুলিশ কে অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে আইরাত তাকে থামিয়ে দেয়।
অফিসার;; দেখুন মিসেস. আইরাত। আমরা কিছু ব্লেক মানির পেপার্সের ওপরে আপনার সাইন পেয়েছি যেগুলো ইলিগ্যাল। তাই এখন আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।
আইরাত;; চলুন।

আইরাতের এখন কথা কাটাকাটি করার মতো মেজাজা একদমই নেই। তাই অফিসার আইরাতকে যেভাবে নিয়ে গেলো আইরাতও সেভাবেই চলে গেলো। তবে ওদিকে তো আব্রাহামের চিন্তার শেষ নেই। যাই হোক সব পরে, কিন্তু এই মূহুর্তে তাকে আগে আইরাতের সাথে দেখা করতে হবে। আব্রাহাম গাড়ি হাওয়ার বেগে চালিয়ে নিয়ে গিয়ে সোজা আইরাতের অফিসে চলে যায়। আব্রাহাম গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে দৌড়ে অফিসের ভেতরে চলে যায়। গিয়েই দেখে রাশেদ, অয়ন, আহসান সহ বাকিরা বেশ চিন্তায় আছে। এই মূহুর্তে আব্রাহাম কে অফিসে দেখে তারাও অবাক হয়। আব্রাহাম দ্রুত রাশেদের কাছে এগিয়ে যায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬১+৬২+৬৩

আব্রাহাম;; রাশেদ আইরাত কোথায়?
রাশেদ;;
আব্রাহাম;; আইরাত কোথায়? (চিল্লিয়ে)
রাশেদ;; স্যার,, স্যার আইরাত ম্যাম জেলে।
আব্রাহাম;; কিহহ? কখন নিয়ে গেছে?
রাশেদ;; কিছু পুলিশ অফিসার এসেছিলো তাদের মতে ব্লেক মানির পেপার্সে ম্যামের সাইন আছে কিন্তু ম্যাম তো কখনোই সেগুলোতে সাইন করবে না। জানি না ম্যামের সাইন কি করে এলো। তাদের কাছে এনাফ প্রুভ ছিলো তাই তারা ম্যাম কে নিয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; Damn It…!!

আব্রাহাম আবার বাইরে এসে দ্রুত গাড়িতে উঠে পরে।রাগে গা কাপছে। ওদিকে আইরাত জেলের ভেতরে বসে আছে। মাথা নিচু করে। এই এতো গুলো বছর যাবৎ আইরাত এক ভুল ধারণা নিয়ে বেচে ছিলো। আইরাত না শুধু প্রায় সবাই। এগুলোই যেনো আইরাতের মন-মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রায় ৩০ মিনিট পর আব্রাহাম পুলিশ স্টেশনে এসে পরে। দ্রুত পায়ে গিয়ে পুলিশ স্টেশনের ভেতরে চলে যায়। আব্রাহাম যেদিক দিয়ে আসছিলো সেইদিক দিয়েই সবাই দাঁড়িয়ে পরছিলো তাকে দেখে। কিন্তু আব্রাহাম সবাইকে এক প্রকার ইগ্নোর করেই ভেতরে এসে পরে। আব্রাহাম এসেই পুলিশ অফিসারের টেবিলে ঠাস করে নিজের হাত রাখে। পুলিশ অফিসার আব্রাহাম কে এই রূপে দেখে দ্রুত দাঁড়িয়ে পরে।

অফিসার;; আব..আব্রাহাম স্যার আপনি এখানে?
আব্রাহাম;; আপনারা কিসের ভিত্তিতে আইরাতকে এরেস্ট করেছেন?
অফিসার;; স্যার কিছু বেআইনি কাগজে উনার সাইন পাওয়া গেছে ত……..
আব্রাহাম;; তার জন্য এটাই যথেষ্ট।

আব্রাহাম অফিসারের দিকে তার জেকেটে থাকা ক্যামেরা টা এগিয়ে দেয়। যাতে রায়হানের নিজের মুখে স্বীকার করা সবকিছুই রয়েছে। সেটা অফিসারকে দিয়েই আব্রাহাম আরো ভেতরে চলে যায়। ভেতরে কয়েক কক্ষ পেরিয়েই আব্রাহাম থেমে যায়। তার ডান পাশে তাকিয়ে দেখে আইরাত একটা জেলের কক্ষের ভেতরে একদম একা বসে আছে। আব্রাহাম আর কিছু না বলেই জেলের দরজা সই দেয় এক লাঠি মেরে। সাথে সাথেই ঠাস করে দরজা টা ভেঙে নিচে পরে যায়। এমন বিকট শব্দে আইরাত ফট করে মাথা তুলে তাকায়। দেখে আব্রাহাম এসেছে। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম এসে কোন কথা না বলেই সোজা আইরাতের হাত ধরে তাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসে।

নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব ৬৭+৬৮+৬৯