নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৫১+৫২+৫৩+৫৪+৫৫

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৫১+৫২+৫৩+৫৪+৫৫
লেখিকাঃ Tamanna Islam

বিছানার ওপর বসে বসে ল্যাপটপে চোখ বিধিয়ে দিয়ে আছে আব্রাহাম। আর আয়নার সামনে বসে বসে নিজের চুল বাধছে আইরাত। তবে তার চোখ যেনো আয়নার মাঝে ফুটে ওঠা আব্রাহামের প্রতিবিম্বে। সে মনোযোগ দিয়ে একের পর এক কাজ করলেও আইরাত তার দিকে মুখটা লটকিয়ে দিয়ে রয়েছে। একটা ক্ষীণ দম ছেড়ে আইরাত উঠে পরে। আব্রাহামের পাশে গিয়ে বসে পরে।

আইরাত;; অনেক বেশি ব্যাস্ত?
আব্রাহাম;; না।
আইরাত;; হুম তা তো দেখাই যাচ্ছে।
আব্রাহাম;; কিছু বলবে?
আইরাত;; নাহ, আমি আর কি বলবো।
এই বলেই আইরাত সেখান থেকে উঠে চলে আসতে নিলে আব্রাহাম খপ করে তার হাত খামছে ধরে আটকিয়ে দেয়৷ আস্তে করে ল্যাপটপ টা অফ করে দেয় আর আইরাত কে এক টান দিয়ে নিজের ওপর ফেলে দেয়। সে উঠে আসতে চাইলে আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে। ল্যাপটপ টা পাশে রেখে দিয়ে আইরাতের দিকে তাকায়।
আইরাত;; ছাড়ুন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্রাহাম এবার দুহাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। আইরাতের মাথার ওপর নিজের থুতনি রেখে দিয়ে বলে….
আব্রাহাম;; কাল তো ছুটির দিন।
আইরাত;; তো কি হয়েছে?
আব্রাহাম;; তুমি না বলেছিলে যে আমাদের হানিমুন এখনো হয় নি!
আইরাত;; হ্যাঁ তো!
আব্রাহাম;; কাল আমরা হানিমুনে যাবো।
আইরাত কপাল কুচকে তাকায়।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; তা তো কাল-ই টের পাবে।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; রেগে আছো?
আইরাত;; একদম না।
আব্রাহাম;; অভিমান?
আইরাত;; উহু।

আব্রাহাম;; আসলে প্রিয় মানুষ কে দেওয়া সবথেকে মূল্যবান উপহার হচ্ছে ‘সময়’। এর থেকে বেশি দামি জিনিস আর দ্বিতীয় টা নেই।
আইরাত;; না আব্রাহাম তেমন টা না, আপনি আমাকে যথেষ্ট সময় দেন৷
আব্রাহাম;; তা আমি জানি।
আইরাত;; আমি ঘুমাই!
আব্রাহাম;; হুম ঘুমিয়ে পরো।
আইরাত নিজেও আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে। আব্রাহাম তার হাতে একটা বই নিয়ে পড়তে লাগে, কিছু সময় পড়ে সেও ঘুমের অতলে হারিয়ে যায়।

সকালে উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে ছিলো আইরাত, চুলগুলো এলোমেলো। ঘুমের মাঝেই নিজের পাশে হাতিয়ে হাতিয়ে আব্রাহাম কে খুঁজতে লাগে। যখন পায় না তখন চোখ-মুখ সব কুচকে উঠে পরে। উঠে সোজা হয়ে বসে আড়মোড়া ভেঙে হাই তুলে। হাত দিয়ে চুলগুলো কোন রকমে সামলিয়ে নেয়। তখনই রুমের ভেতরে আসে আব্রাহাম তার হাতে একটা ছোট ব্রেকফাস্ট ট্রে। তাতে নরমাল ব্রেকফাস্ট রাখা। ভেতরে এসে পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর গিয়ে আইরাতের সামনে বসে পরে। ট্রে টা সামনে রেখে দেয়।
আইরাত;; কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?
আব্রাহাম;; লিসেন আজ ছুটির দিন মানে শুক্রবার।
আইরাত;; তো?
আব্রাহাম;; তো আজ সব আমি করবো।
আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম;; মানে এই যে তুমি এখন ঘুমাও না হলে ব্রেকফাস্ট করে ফ্রেশ হয়ে আবার ঘুমিয়ে পরো। যখন মন চায় উঠো কোন মানা নেই। এদিকে সব কাজ আমি করে দিবো। আমার আলসেমি লাগলে আমিও তোমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকবো। তারপর দুজনে একসাথে উঠবো। যদি দুপুর হয়ে যায় তাহলে তুমি শুধু উঠে ফ্রেশ হয়ে আমার জন্য পাঞ্জাবি, ঘড়ি সব কিছুই বের করে রাখবে। আমি নামাযে যাবো। এদিকে ধরো তুমি রেডি হয়ে আমার জন্য টুকটাক মানে একদমই হালকা পছন্দের কিছু রান্না করে রাখলে। তারপর আমি নামায থেকে আসবো তখন তুমি আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিবে।

বিকেল বেলা তুমি একটা সুন্দর কালো শাড়ি পরে, এক জোড়া ঝুমকো পরে, হাতে কিছু চুড়ি, চোখভর্তি কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কপালে একটা ছোট্ট টিপ ব্যাস। এভাবেই সুন্দর করে রেডি হয়ে থাকবে আর আমার জন্য ম্যাচ করে কালো পাঞ্জাবি বের করে রাখবে। আমরা দুজনে ঘুরতে যাবো। তুমি যা যা খেতে চাও আইসক্রিম, ফুচকা, হাওয়াই মিঠাই সব কিনে দিবো। তুমি খাবে। তারপর আমরা রিকশা করে অনেক অনেক ঘুরবো, হাত ধরে হাঁটবো। তারপর সবশেষে আমরা যাবো নদীর পাড়ে সেখানে বসে কোন এক চায়ের দোকানে গরম চা খাবো। আমি তোমার মাথার পেছনে বেলি ফুলের গাজরা গুজে দিবো। তারপর আমরা আরো ঘুরেফিরে বাসায় এসে পরবো। রাতে পরিবারের সবার সাথে আড্ডা দিয়ে তারপর আমরা রুমে এসে পরবো। ওইযে করিডর সেখানে বসে আমি তোমাকে গিটার বাজিয়ে গান গেয়ে শুনাবো। যতক্ষণ তোমার ইচ্ছে। তারপর আমার বুকে তুমি মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরবে। এইতো।

আব্রাহাম এতোক্ষণ ট্রে-এর ওপরে আইরাতের জন্য খাবার রেডি করছিলো আর এইসব বলছিলো। বলা শেষ হলে আইরাতের সামনে জ্যাম যুক্ত ব্রেড টা ধরে তার দিকে তাকায়। দেখে আইরাত তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে যেনো নিজের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে এমন। আব্রাহাম তার উদ্দেশ্যে নিজের ভ্রুজোড়া নাচায়। আইরাত ফিক করে একগাল হেসে দিয়ে খানিক বসা থেকে উঠে সোজা আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামও হেসে একহাত আইরাতের পিঠের ওপর রেখে জড়িয়ে ধরে।
আব্রাহাম;; আইডিয়া টা কেমন?
আইরাত;; অতিমাত্রায় অসাধারণ। কিন্তু মানে আপনি খাবেন টঙের দোকানের চা!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ জানি আমিই বলতাম যে এগুলো খাওয়া ভালো না। অস্বাস্থ্যকর, আনহাইজ্যানিক ব্লা ব্লা ব্লা। কিন্তু এখন আমিই বলছি।

আইরাত;; হুমম। এটাই বুঝি আমাদের হানিমুন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বলা যায়। চলবে না?
আইরাত;; হাওয়ার গতিতে দৌড়াবে।
আইরাত কে ব্রেকফাস্ট করতে দিয়ে আব্রাহাম চলে যায়। আইরাতও খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
অন্যদিকে অয়ন-কৌশল-রাশেদ আরেক রুমে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। রাশেদের সামনে একটা গোলাপ ফুল রেখে দেওয়া হয়েছে। কারণ সে কনফিউজড যে কীভাবে রোদেলা কে প্রোপজ করবে। অয়ন গালে হাত দিয়ে বসে আছে। কারণ সে আর দিয়া শুধুমাত্রই সাপ-নেউল। আর কৌশল মনে হয় পাগলই হয়ে গেছে। অবনি কে মনের কথা কীভাবে বলবে তা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রেকটিস করছে।

অয়ন;; কিরে তোরা কিছু বলস না কে? কি করমু?
রাশেদ;; আমি চিন্তায় মগ্ন।
অয়ন;; এক কাজ কর। ফুলে দেওয়া বাদ দিয়ে খেয়ে নাও।
কৌশল;; হ্যাঁ আর তখন রাশেদ “এক চুটকি সিন্দুর কি কিমাত তুম ক্যায়া জানো রামেশ বাবু” এর বদলে বলবে যে “এক গুলাপ ফুল কি কিমাত তুম ক্যায়া জানো রামেশ বাবু সরি অবনি”।
অয়ন বেশ জোরেই হেসে দেয়।
রাশেদ;; মজা নেও মিয়া।
কৌশল;; হ্যাঁ আমি তো…..
অবনি;; এইযে তিন নবাব!
কৌশন;; অবনি ?
অবনি;; সবাই কে ডাকে নিচে ব্রেকফাস্ট-এর জন্য।

এই বলেই অবনি সোজা চলে যায়। তার যাওয়ার পর তারা তিনজনও নিচে নেমে আসে। সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ফেলে। আব্রাহাম কিছু কাজের ফলে বাইরে গিয়েছে আর আইরাত এদিকে রুমে চলে যায়। তারপর আব্রাহামের জন্য সব জামা, জায়নামাজ সব বের করে রাখে। নামায পড়বে বলে। কয়েক ঘন্টা পর আব্রাহাম এসেও পরে তারপর ফ্রেশ হয়ে নেয়। দুপুরের সময় টা যেন এভাবেই কেটে যায়। বিকেলের দিকে আব্রাহাম-আইরাত অসম্ভব সুন্দর ভাবে রেডি হয়ে নেয়। যদিও আইরাত কে শাড়ি আব্রাহাম নিজেই পরিয়ে দিয়েছে। আব্রাহাম কে দেখতে প্রচুর সুদর্শন লাগছে। গায়ে কালো পাঞ্জাবি, তার হাতা গুলো গুটানো, হাতে সিলভার কালারের ঘড়ি। চুলগুলো প্রচুর সিল্কি হয়ে আপনা আপনিই দোল খাচ্ছে আর গালে চাপদাড়ি। আইরাত কে মায়াবিনী লাগছে। মনে হচ্ছে তার চেহারায় একরাশ মায়া ঢেলে দিয়েছে। হাতে পরে থাকা রুপালি রঙের চুড়িগুলো যেনো ঝনঝন করে বাজছে। মুখে সবসময় লেগে থাকা হাসিতে তার সৌন্দর্য যেনো চাড়া দিয়ে ওঠছে। আব্রাহামের সামনে গিয়ে আইরাত বলে…

আইরাত;; কেমন লাগছে আমায়?
আব্রাহাম আইরাতের কাছে এসে তার কোমড়ে হালকা ভাবে নিজের হাত রেখে দিয়ে কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে বলে…
আব্রাহাম;; “মহাকাব্যের মতো স্নিগ্ধ” ?
সবাই হলরুমেই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তখন আব্রাহাম-আইরাত কে নিচে নামতে দেখে সবাই অবাক। দিয়া রান্নাঘর থেকে হাতে চায়ের ট্রে টা নিয়ে আসতে আসতে হাসিমুখে বলে ওঠে…
দিয়া;; আরে আরে জিজু আর আইরু। ওয়াহহহহ দারুন লাগছে দুজনকে। হায়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়, যেনো কারো নজর না লাগে।

অনামিকা;; কিরে!
আব্রাহাম;; আসলে মা ভাবলাম যে বিবিজান কে নিয়ে কোথাও ঘুরে আসি।
ইলা;; অনেক ভালো ভেবেছিস। এবার দেরি না করে জলদি বের হয়ে পর দুজনে।
আব্রাহাম;; হুমম।
যেই না আব্রাহাম বের হতে ধরবে তখনই অয়ন বলে ওঠে…
অয়ন;; এই দাভাই তোরা যে ঘুরতে যাচ্ছিস আমরা কি করবো তাহলে!
আইরাত;; কি করবে মানে? সবার প্রিয়তমা রা কাছেই তো আছে, তাও আবার তিনজনেরই।
রোদেলা;; বুঝলাম না।
আইরাত;; টাইম হোক বুঝে যাবে।
আব্রাহাম;; এই কৌশল!
কৌশল;; হ্যাঁ

আব্রাহাম;; এই নে গাড়ির চাবি।
আব্রাহাম গাড়ির চাবি হালকা ভাবে ঢিল দেয় কৌশলের দিকে আর সে ধরে নেয়।
আব্রাহাম;; দিয়া, অবনি আর রোদেলা তোমরা সবাই এই তিন বাদরের সাথে ঘুরতে যাও। ভালো লাগবে। ঘুরতে শুধু আমরা একা যাবো কেনো!
আইরাত;; দাদি আর মা তোমাদেরও নিয়ে যাই!
ইলা;; আরে না না। আমরা দুই বুড়ি বাসায় থেকেই আড্ডা দেই। গল্প করি আর পুরো বাড়িতে একবার চক্কর কাটলেই তো ঘুরাঘুরি হয়ে যাবে। তোরা যা।

তারা তিন কাপল এক গাড়ি দিয়ে চলে যায়। আর আইরাত তো গাড়ি দিয়ে ঘুরবে না বলে ঠিক করে। সে রিকশা দিয়ে ঘুরবে। আর আব্রাহাম আগে থেকেই জানতো যে আইরাত এমনই কিছু একটা চাইবে। তাই সে আগে থেকেই একটা রিকশা একেবারে ভাড়া করে নিয়েছিলো। রিকশা টাও এতো সুন্দর করে সাজানো আর বড়ো সড়ো। আইরাত এটা দেখেই খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। সারাটা বেলা আব্রাহাম-আইরাত প্রচুর ঘুরে। এক সময় কৃষ্ণচূড়া এক গাছের নিচে দুজনে বসে পরে। তখন আইরাতের চোখ যায় একটা ছোট দোকানের দিকে সেখানে অনেক রকমের ঝুমকো বেচা-কেনা করছিলো। আইরাত সেখানে যায় আর আব্রাহাম তার পছন্দ মতো এক জোড়া ঝুমকো তার কানে পরিয়ে দেয়। ফুচকা খেতে যায়। তারা এক প্রকার বাজিই ধরে যে কে কতোগুলো ফুচকা খেতে পারে।

আব্রাহাম তো এক প্লেটে খেয়েই কুপকাত আর আইরাত মাশাআল্লাহ একসাথে ৩-৪ প্লেট সাটিয়ে দিয়েছে। ফেরার পথে একটা ছোট মেয়ে পরে আব্রাহামের চোখে। তার কাছে একটা ঝাকা ছিলো আর ঝাকাতে এত্তোগুলো ফুল। আব্রাহাম মেয়ে টাকে ডাক দিয়ে তার সামনে এক হাটু গেড়ে বসে। বেশ কিছু টাকা মেয়ে টার হাতে দিয়ে সম্পূর্ণ ফুলের ডালা নিয়ে আইরাতের হাতে ধরিয়ে দেয়। চায়ের দোকানে গরম ধোঁয়া ওঠানো লাল চা আর আইরাতের চুলে আব্রাহামের বেধে দেওয়া বেলি ফুল।

অন্যদিকে দিয়া, অবনি আর রোদেলা যেনো অয়ন, কৌশল আর রাশেদ কে পাত্তাই দিচ্ছে না। তারা গাড়ি থেকে বের হয়ে নিজেদের মতো করে ছবি তুলছে, হাসাহাসি করছে আর ওই তিনজন হাবলার মতো করে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবেই সময় টুকু যায়। আব্রাহাম-আইরাত বাড়ি এসে দেখে তারা তিন কাপল আগে থেকেই বাসায় এসে হাজির। তাদের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে বেশ চাপে ছিলো। এবার তাদের তিন কাপল কে নিয়ে আব্রাহাম-আইরাত এক প্ল্যান করে। তবে সেই দিন টা এভাবে হাসি-আড্ডার মাঝেই দিয়েই যায়।

রাতের মুগ্ধকর আবহাওয়া। নিস্তব্ধ চারিদিকে। শীতল বাতাস। তার মাঝে করিডরের ফ্লোরে বসে আছে আইরাত। আব্রাহামও নিচে বসে দরজার সাথে হেলান দিয়ে রয়েছে। আব্রাহাম করিডর থেকেই আকাশের দিকে তাকায়। আকাশে কেমন যেনো কালো কালো মেঘ জমেছে। তার ওপর হাজারো তারা জ্বলজ্বল করছে। চাঁদ টা নিজের আলো ছড়িয়ে বেশ বড়ো আকার ধারণ করে রয়েছে আকাশের বুকে। আবার সামনে তাকায়, তাকিয়ে দেখে আইরাত তার দুহাত দুহাটুর ওপর ভাজ করে রেখে দিয়েছে। আইরাতের উদ্দেশ্যে আব্রাহাম গিটারে আওয়াজ তুলে…

“এএ নিশি তোমার-আমার
এএ নিশি ভালোবাসার ??”
করিডরের গোল দোলনার ভেতরে বসে বসে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আইরাত। আর তার সামনেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে আব্রাহাম। যেনো সে কিছুটা চটে আছে এমন। কথা বলা শেষে করিডরের রেলিং এ হাত রেখে দূর আকাশ পানে তাকিয়ে থাকে।
আইরাত;; কিছু কি হয়েছে?
আব্রাহাম;; না তেমন কিছু না।
আইরাত;; না কিছু তো একটা হয়েছে। কি হয়েছে?
আব্রাহাম;; একটা ক্লাইন্ট আছে, তার নাকি কয়েক লাক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তার নিজের বোকামির জন্যই তা হয়েছে। কিন্তু এখন তার দোষ সে আমার কোম্পানির এম্পলয় দের ওপর চাপাচ্ছে।

আইরাত;; এটা আবার কেমন লজিক?
আব্রাহাম;; সে নাকি এখন মামলা সহ করবে।
আইরাত;; এহহহহহহ মামলা করবে। বললেই হলো!
আব্রাহাম;; হুম।
আইরাত;; এখন!
আব্রাহাম;; এখন আর কি এভাবে তো ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আমায় যেতে হবে।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; ক্যাস ফাইল করেছে। উকিল আছে তার কাছে যেতে হবে।
আইরাত;; আপনি যাবেন কেনো?
আব্রাহাম;; না আমি অন্য কাউকে পাঠাতে চাচ্ছি না। ব্যাপার টা যতো তাড়াতাড়ি মিটনাট করা যায় আরকি। যদিও এখানে আমাদের কোন দোষই নেই।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; আপনার কাছে কি ওই উকিলের নাম্বার আছে?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, কেনো?
আইরাত;; না এমনি। আচ্ছা যদি ওই লয়ার আবার উলটা পালটা কিছু করে তো?
আব্রাহাম;; তো আমার থেকে খারাপ আর কেউই হবে না।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; শুনো তুমি থাকো। আমি আর রাশেদ যাচ্ছি। বাকিরা সবাই বাসায় ই থাকবে৷ আমি ঘন্টা খানিক পরেই এসে পরবো।
আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম নিজের ওপর শুধু কোর্ট টা জড়িয়ে চলে যায়। তার যাওয়ার পর আব্রাহাম আইরাত উঠে পরে। কিছুক্ষন পর নিচে তাকিয়ে দেখে বাড়ির মেইন গেইট দিয়ে আব্রাহামের গাড়ি চলে গেলো। এখন আইরাত দ্রুত গিয়ে আব্রাহামের সব ডায়েরি চেক করতে লাগে। কেননা আব্রাহামের যাবতীয় দরকারি সব কিছু বা কারো ফোন নাম্বার সব একটা ডায়েরি তেই লিখা থাকে। আইরাত জানে কোন ডায়েরি সেটা তাই তাকে খুঁজে বের করতে বেশি একটা বেগ পেতে হলো না। পুরো ডায়েরি ঘেটে ঘ করেও একটা লয়ারের নাম্বার পেলো না। তবে পেছনের দিকে পাতা তে একটা নাম্বার আছে আর তার পাশে ‘লয়ার’ লিখা। শুধু এই একটাই নাম্বার। আইরাতের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটাই ওই উকিল বেটার নাম্বার। এটাকে লাল কালি দিয়ে মার্ক করে আইরাত একটু নিচে যায়। আর নিচে যেতেই দেখে সবাই গোল হয়ে বসে গল্প করছে।
আইরাত;; বাহহহ সবাই দেখি আমাকে ছাড়া একাই বসে বসে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছো।

ইলা;; আরে আয় আয়।
অনামিকা;; আব্রাহাম কোথায়?
আইরাত;; আব্রাহাম তো বাইরে গিয়েছে। বললো ঘন্টা খানিক পরেই এসে পরবে।
দিয়া;; আচ্ছা এদিকে এসে এবার বোস।
আইরাত গিয়ে তাদের সাথে বসে পরে। এভাবেই বেশ সময় কেটে যায়। কিন্তু আব্রাহামের আসার কোন খবর নেই। এদিকে আইরাতেরও ভালো লাগছে না। বাগানের দিকটায় হাঁটাহাঁটি করছিলো আইরাত তখনই চোখে পরে অয়ন কে।
আইরাত;; অয়ন ভাইয়া!
অয়ন;; হ্যাঁ বউমনি।
আইরাত;; আব্রাহাম যে এখনো এলো না!
অয়ন;; বউমনি ভাই যে কখন আসবে তা জানি না আমি। আসলে একটু সমস্যা হয়েছে তো তাই আর কি।
আইরাত;; কোন সমস্যা! ওইযে ওই ক্লাইন্ট কে নিয়ে যে মামলা করতে চাইছে।
অয়ন;; হ্যাঁ আর ওই যে……
আইরাত;; ওই উকিল!

অয়ন;; হ্যাঁ কিন্তু তার কোন দোষ নেই। আর আসলে এইসব মামলা-মোকদ্দমায় তো প্রমাণ চায় সবাই তাই উকিল সাহেব এখন বলেছেন যে এই ক্লাইন্ট যদি সত্যি প্রমাণ নিয়ে আসতে পারে তাহলে এই ক্যাস ফাইল হবে।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।
অয়ন চলে যায় বাইরে। আর আইরাত তার চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।
আইরাত;; হারামির সাহস তো কম না। আমার জামাই এর কোম্পানির নামে মিথ্যে ক্যাস করবি। আর উকিলের বাচ্চা তুই হেল্প করবি দাড়া তুই মজা দেখাচ্ছি। নিকুচি করেছে তোর প্রমাণের।
এই বলেই আইরাত চটে ওপরে চলে যায়। আর অবনি আইরাতের চলে যাওয়ার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে। হাতে তার একটা পানির পাইপ। তা দিয়ে পানি অনায়াসে পরে যাচ্ছে। রোদেলা এসে অবনিকে কুনি দিয়ে ধাক্কা দেয়।
রোদেলা;; কিরে, সব পানি তো গেলো। কি করছিস?
অবনি দ্রুত তা সামলিয়ে নেয়।

অন্যদিকে আব্রাহাম পরেছে এক মহা ঝামেলায়। মানে যেটার কোন মানেই নেই। এইসব আজাইরা ঝামেলা কেনো যে আসে। একেবারে হুদ্দাই। হাইওয়ে রোডে গাড়ি থামিয়ে গাড়ির ডিকির ওপর চড়ে বসে আছে আব্রাহাম। হাতে তার একটা বিয়ারের বোতল। তার পাশেই রাশেদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন গুতাচ্ছে।
রাশেদ;; স্যার কি করবো?
আব্রাহাম;; কিসের কি করবো?
রাশেদ;; লয়ার!
আব্রাহাম;; ওহ হ্যাঁ।
আব্রাহাম ডিকির ওপর থেকে নেমে পরে।
আব্রাহাম;; তার কাছে মনে হয় একবার হলেও যেতে হবে।
রাশেদ;; মানুষ টা বয়স্ক। কিন্তু কিছুটা খিটখিটে।
আব্রাহাম;; ও ব্যাপার নাহ।
রাশেদ;; এখন যাবো স্যার!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ চলো, যেতেও তো আবার সময় লাগবে।

তারা রওনা দেয়। আর আইরাত তার পেছনে দুহাত একত্রে বেধে রুমে একনাগারে পায়চারি করেই যাচ্ছে। একবার এদিক থেকে ওদিক আবার ওদিক থেকে এদিকে। মুখটা কেমন একটু কুচকানো। ঘড়ির দিকে তাকায়, সে চলছে আপন গতিতে। সামনে টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে ডায়েরি টা পরেই আছে। আইরাত হাতে নিজের সেলফোন টা নেয় তারপর গিয়ে টেবিলের পাশে বসে পরে। ডায়েরি থেকে দেখে দেখে ফোনে নাম্বার টা টুকে নেয়। তারপর গিয়ে আবার বিছানার ওপর ধিরিম করে বসে পরে। তখনই দিয়া, অবনি আর রোদেলা আইরাতের রুমে আসে। এসেই দেখে আইরাত এগুলো করছে। তখন আইরাতের পাশে গিয়ে বসে পরে। আইরাত গলা টা খাকাড়ি দিয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে সেই নাম্বারে ফোন লাগায়। ফোন বাজছে।

টাক মাথা, তাতে যে দু-একটা চুল আছে সেগুলোও পাকা। টাক টা কেমন চিকচিক করছে। চোখ দুটো বেশ কুচকানো। কপালে ভাজ অনেক। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা দিয়ে সামনে নিউজপেপার নিয়ে চেয়ারে এক গম্ভীর মুখে বসে আছে মিস্টার আজাদ। উনিই সেই সনামধন্য উকিল। সবাই তাকে পাকাও প্রকৃতির লোক বলেই মনে করেন। টেবিলে নিজের পাশে সাদা একটা ল্যান্ডলাইনের ফোন আছে। সেটা সহ আশেপাশে মোটমাট ৫-৬ টা টেলিফোন রাখা। সব কটাই মানুষের ঝামেলা মিটমাট করার জন্য রাখা। মনোযোগ দিয়ে নিউজপেপারের নতুন নতুন ঝামেলার কথাই পড়ছিলেন তিনি আর তার পাশে থাকা এসিস্ট্যান্ট কে তা বলছিলেন। অসহায় এসিস্ট্যান্ট ব্যাটা একরাশ বিরক্তি নিয়ে নিরুপায় হয়ে তার বকর বকর শুনেই যাচ্ছে। কি আর করার উপায় নেই যে এর ছাড়া। এসিস্ট্যান্ট কে আরো কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই সাদা টেলিফোনে ক্রিংক্রিং করে শব্দ বেজে ওঠে। মিস্টার আজাদ এসিস্ট্যান্টের দিকে তাকালে সেও আস্তে করে সেখান থেকে দূরে চলে যায়। উকিল সাহেব আবার ফোনে কথা বলার সময় কেউ তার আশেপাশে থাকুক তা পছন্দ করেন না। টেলিফোন টা কানে ধরে চশমার মাঝ বরাবর একটা গুতা মেরে তা ওপরে তুলে নেয়৷

আজাদ;; হ্যালো।
আইরাত;; আহাম….আহাম। জ্বি এটা কার নাম্বার?
আইরাতের এমন উল্টো প্রশ্নে আজাদ কপাল কুচকে তাকায়।
আজাদ;; ফোন টা আপনি করেছেন। তাই প্রশ্নটাও আমারই থাকার কথা।
আইরাত;; হুমম কিন্তু আমিই না হয় করলাম।
আইরাতের কাছ থেকে ফোন টা নিয়ে দিয়া নিজের কানে ধরে। আর ব্যাটা আজাদ বুঝেই নি যে এটা অন্য আরেক জনের গলা।
দিয়া;; হ্যালো।
আজাদ;; তো আপনার কি সমস্যা বলুন আমায়। ডিভোর্স নাকি অন্য কোন উটকো ঝামেলা?
দিয়া;; আরে উকিল রে আগে এটা তো জিজ্ঞেস করে নে যে আদৌ কি আমার বিয়ে হয়েছে কিনা। (ফিসফিস করে)
আজাদ;; বলছেন না যে আমার আবার এতো টাইম নেই অযথা ফোনে কথা বলার।
আইরাত দ্রুত দিয়ার কাছ থেকে ফোন নিয়ে নেয়।

আইরাত;; আরে না না না না,, বেশ কথা বলার আছে আপনার সাথে আমার।
আজাদ;; জ্বি জলদি বলুন।
আইরাত;; তো ছোট খাটো হাতির বাচ্চা বলছিলাম কি যে নিজের কাজে মনোযোগ দে। অযথা কেনো অন্যের কাজে নাক গলাতে হবে। তাও আবার ফাউ ফাউ কাজে যার কোন ভিত্তিই নেই।
আজাদ তো ভরকে যায় আইরাতের কথায়।
আজাদ;; মানে কি এইসবের?
আইরাত;; শালা ***** তুই তো আচ্ছা খারাপ। তরে ধইরা ******* ত ****** কুত্তা*****। তোর সাহস তো কম না। যার তার কথা শুনে তুই, তুই আমার জামাই এর কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্যাস ফাইল করবি। তোর মাথায় আমি গরুর গবর ঢেলে দিবো। তোকে বিনা টিকেটে বান্দরবন বান্দরের কাছে পাঠিয়ে দিবো ***** ***** *****। শালারপুত তুই ********* তর মা*********। হারামি শালা ত********।

গালির অভাব নেই। গালির ওপর গালি৷ পাশে দিয়া, অবনি আর রোদেলা কানে আঙুল দিয়ে চেপে রেখেছে আর আইরাত তো আইরাতই। বাপরে মুখে যেনো বুলি ফুটছে৷ এত্তো গালি।
আইরাত;; তোকে উল্টো ঝুলিয়ে তোকে গরম পানিতে চুবাবো আমি শালা গরু। হালা পাডার পো পাডা। তোকে ড্রেনের পানিতে ফেলে দিবো ******* অ ******* ও****** বা ******* খ*****।

আব্রাহাম আর রাশেদ নিজেদের মাঝেই কথা বলতে বলতে ভেতরে আসে অর্থাৎ উকিলের কেবিনে প্রবেশ করে। কিন্তু আব্রাহাম নিজের সামনে তাকাতেই কপাল কুচকায়। কেননা মিস্টার আজাদ মানে উকিল সাহেব উনি উনার চেয়ারে অজ্ঞান রত অবস্থায় পরে আছেন। উনার হাত থেকে সাদা টেলিফোন টা নিচে পরে ঝুলছে। টেলিফোনের সাথে টেলিফোনের তার টাও নিচে ঝুলছে। উকিলের চশমা টা চোখের ওপরে উঠে পরেছে। দু হাত তার দুদিকে এলিয়ে দেওয়া। আব্রাহাম কিছুই বুঝে না। সে খেয়াল করে যে টেলিফোনের ভেতর থেকে কারো চেচানোর শব্দ আসছে। আব্রাহাম আলতো পায়ে টেলিফোনের দিকে এগিয়ে যায়, টেলিফোন টা ওপরে তুলে নিজের কানে ধরে। আর ওপর পাশের কন্ঠ শুনে তার বুঝতে আর এক মিনিটও দেরি হয় না যে এই আসলে কে! আইরাতের চিল্লানো তে আব্রাহাম কপাল কুচকে টেলিফোন টা নিজের কান থেকে হালকা দূরে সরিয়ে নেয়। তারপর ঠাস করে ফোন রেখে দেয়।

আইরাত;; পোকা পরবে তোর ওপরে, পোকা। বুঝলি তুই পোকা পরবে শালা নরকের কীট।
এই বলে আইরাতও ধিরিম করে তার ফোন কেটে দেয়। আইরাত এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। মুখে এক গাঢ় হাসির ছাপ রেখে পেছনে ঘুড়ে তাকায়। দেখে বাকি তিনজনের অবস্থা খারাপ। দিয়া এক মেকি হাসি দিয়ে বসে আছে, অবনি সোজা চিতপটাং, আর রোদেলা ঢকঢক করে পানি খাচ্ছে।
আব্রাহাম বুঝলো যে সে আর কি করবে যা করার আইরাতই তা আগে ভাগেই করে দিয়েছে। আব্রাহাম উকিলের এসিস্ট্যান্ট কে ডেকে তাকে দেখতে বলে। বুড়ো ব্যাটা আইরাতের গালির লোড সামলাতে পারে নি। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।আব্রাহাম আইরাত কে বাসায় গিয়ে যে কি বলবে খুঁজে পায় না। আব্রাহাম সেখান থেকে রাশেদ কে নিয়ে বের হয়ে পরে। গাড়িতে উঠে বসে। এবার আব্রাহাম নিজেই ড্রাইভ করছে। তবে আবার আগের জায়গা অর্থাৎ হাইওয়ে রোডে এসে পরে। হুট করেই গাড়ি থামিয়ে দেয়। রাশেদ কিছু না বুঝে আব্রাহামের দিকে তাকায়। রাশেদের কিছু বলার আগেই আব্রাহাম ফিক করে হো হো করে হেসে দেয়। এত্তো জোরে জোরে হাসছে যা বলার বাইরে। রাশেদের তো সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।

রাশেদ;; স্যার, স্যার আপনি এভাবে হাসছেন কেনো স্যার? স্যার।
আব্রাহাম তো লাগাতার হেসেই যাচ্ছে।
রাশেদ;; স্যার ।
আব্রাহাম;; বাসায় যাই আগে চলো।
রাশেদ;; কিন্তু স্যার হয়েছে কি বলবেন তো!
আব্রাহাম;; আরে বেশি কিছু না তবে হ্যাঁ বউ পাইছি একখান মাশআল্লাহ।
আব্রাহাম এখনো হেসেই যাচ্ছে।
আব্রাহাম-রাশেদ বাসায় এসে পরে এবং অয়ন কেও উকিলের কাছে না গিয়ে সোজা বাসায় চলে আসতে বলে। আব্রাহাম রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত বসে বসে ফোনে গেমস খেলছে। আইরাত দরজার দিকে তাকায়।

আইরাত;; এসেছেন আপনি?
আব্রাহাম আইরাত কে দেখেই হেসে দেয়।
আব্রাহাম;; কি করেছো তুমি এগুলো?
আইরাত;; কই! আমি আবার কি করলাম?
আব্রাহাম;; আহ সাধু। লয়ারের নাম্বার পেয়েছো কোথায় তুমি?
আইরাত;; পেয়েছি এক জায়গায়। খুঁজে খুঁজে বের করেছি।
আব্রাহাম;; কেনো?
আইরাত;; আজব তো! ওই শালা কেনো মামলা করবে!
আব্রাহাম;; আরে…
আইরাত;; না না ওই **** আমি ওই খা *******

আব্রাহাম ছুটে গিয়ে আইরাতের মুখটা চেপে ধরে।
আব্রাহাম;; হায়রে আল্লাহ কৈ যাই আমি। মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে রাখা উচিত তোমার। তোমার মুখ বড়ো সাংঘাতিক জিনিস, যে কোন জায়গায় যে কোন সময় খুলে যায়।
আইরাত;; হ্যাঁ তো খুলবে না। আমি তো পারলে ওই উকিলের মাথায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া….
আব্রাহাম;; এই চুপ চুপ চুপ হুসসসসস।
আইরাত;; আমার কি মনে হয় জানেন!?
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; ওই উকিল ব্যাডার বউ না ওকে ভালোই বাসতো না। একদমই না, তাই হয়তো ওর বউ ওকে রেখে চলে গিয়েছে। তাই সে এমন হয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; হুমম হতেও পারে।
আইরাত;; আরে মনে হয় বুড়া রে বুড়ি চুমা টুমা কিছুই দিতো না। পুরাই পানসে।
আব্রাহাম;; আরেএএএএএ আমার বাপ একটু অফ যাও না।
আইরাত;; আচ্ছা গেলাম।
আব্রাহাম আইরাতের কপালে চুমু খেয়ে দেয়। হাতের ঘড়ি টা খুলে একটা টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ইলা;; অবনি! অবনি!
অবনি;; হ্যাঁ দাদি।
ইলা;; কিগো শুনলাম তুমি নাকি চলে যাচ্ছো?
অবনি;; আব.. হ্যাঁ দাদি। ভাবছি বেশ দিন তো হলো এখানেই আছি। এখন না হয় এখান থেকে চলে যাই। আবার একদিন আসবো।
ইলা;; আরে মাত্র ২-৩ দিনই তো হয়েছে। বাসায় গিয়েই আর কি করবে। এছাড়াও তোমার আম্মুর সাথে তো আমার কথা হয়েছে তাই থেকে যাও। কাউকেই যেতে দিবো না। তোমাদের সবাই কে একসাথে পেয়ে বাড়ি টা তাও পূর্ণ মনে হয়। ফাকা ফাকা আর লাগে না।
অবনি বিনিময়ে মুচকি হাসে শুধু।
ইলা;; আচ্ছা শুনো আমার একটা কাজ করে দিবে?
অবনি;; হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই দাদি বলুন না।
ইলা;; এইযে এই আচার গুলো ছাদে রোদে দিয়ে আসবে একটু!
অবনি;; হ্যাঁ দিন।

অবনি ইলার হাত থেকে আচারের বয়াম নিয়ে চলে যায় ছাদে। ছাদে গিয়ে আচার গুলো শুকোতে দেয়। তখনই কৌশল ছাদে আসে দুহাত নাড়াতে নাড়াতে। এসেই দেখে অবনি নিচে হাটু গেড়ে বসে আচার শুকোচ্ছে। তাকে দেখেই নিজেকে সামলে ঠিকঠাক করে নেয়। গলা কিছুটা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। শব্দ পেয়ে অবনি একবার পেছন ঘুরে তাকায়। কৌশল কে দেখলে সে নিজেও একটু ঠিক করে বসে।
কৌশল;; কি করছো?
অবনি;; আচার শুকাচ্ছি।
কৌশল;; তা তুমি কেনো? বাড়িতে কি স্টাফ দের অভাব পরেছে নাকি!
অবনি;; তা না। দাদি নিয়ে আসতে বললো তাই নিয়ে এসেছি।
কৌশল;; ওহহ, আমি তো তোমাকেই খুঁজছিলাম।

অবনি;; কেনো?
কৌশল;; শুনলাম তুমি নাকি চলে যাচ্ছো!
অবনি;; যেতে চাইছিলাম।
কৌশল;; এখন?
অবনি;; চাইছি না।
কৌশল;; যাক বাবা বাঁচলাম। (ফিসফিসিয়ে)
অবনি;; কিছু বলবেন?
কৌশল;; আসলে হ্যাঁ।
অবনি;; তো বলুন।
কৌশল;; রাতে, রাতে বলবো।
অবনি কিছু একটা ভেবে বলে..
অবনি;; হুমম।

কৌশল নিচে চলে যায় দ্রুত পায়ে। তবে নিচে যেতেই আব্রাহামের সামনে পরে। আব্রাহাম কপাল কুচকে একবার ছাদের ওপরের দিকে তাকায় তো আরেকবার কৌশলের দিকে।
আব্রাহাম;; কি হয়েছে রে? এভাবে ছুটে আসছিস কেনো?
কৌশলের কিছু বলার আগেই হাতে কিছু ঝুড়ি নিয়ে অবনি ছাদের ওপর থেকে নেমে আসে। আব্রাহামের বুঝতে আর বাকি রইলো না। অবনির চলে যাওয়ার দিকে কৌশল তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম মুচকি হেসে হুট করেই কৌশলের কাধে নিজের হাত রাখে।
আব্রাহাম;; শোন, বলে দে ওকে।
কৌশল;; হুমম।
ওদিকে অয়ন দিয়ার পিছন পিছন ঘুরছে শুধু। দিয়া যেদিকে যাচ্ছে অয়নও তার সাথে সাথে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই তার পিছে পিছেই যাচ্ছে। দিয়ার সাথে তার মাঝেমধ্যে চোখাচোখি হয়ে গেলে সে এমন একটা ভাব ধরে যেনো সে কিছুই বুঝে না। অবশেষে আর না পেরে অয়ন বলেই দেয়…

অয়ন;; দিয়া!
দিয়া;; বলুন।
অয়ন;; আই ওয়ান্ট টু সে সামথিং টু ইউ।
দিয়ার হাতে কিছু জিনিসপত্র ছিলো সে তা নিচে রেখে দিয়ে অয়নের দিকে দুহাত ভাজ করে তাকায়।
দিয়া;; জ্বি বলুন।
অয়ন;; দেখো আসলে আমি কীভাবে।কি বলবো বা কোথা থেকে কি শুরু করবো তা জানি না। সত্যিই জানি না। তবে কথা টা আমার বলতেই হবে। আসলে আমি ব…..
অয়নের পুরো কথা শেষ হতে না হতেই তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনে নাম্বার দেখে অয়নের মাঝে একটু ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। তা আবার দিয়া খেয়াল করে কিছুটা উঁকি দিয়ে অয়নের ফোনের দিকে তাকায়। অয়ন দিয়া কে বলে ফোন রিসিভ করে সেখান থেকে এসে পরে। দিয়াও ঘুরে এসে পরে সেখান থেকে। তবে অয়নের যাওয়ার দিকে পেছন ঘুরে একবার তাকিয়ে দেখে। অয়ন হেসে হেসে কথা বলছে। যাই হোক দিয়া এসে পরে।

বেলা গড়িয়ে রাত হয়। হলরুমের দরজাতে দাঁড়িয়ে ছিলো রাশেদ। আইরাত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখে তাকে। আইরাতের হাতে একটা গোলাপ ফুল। সে তা নিয়েই রাশেদের দিকে যায়।
আইরাত;; রাশেদ ভাইয়া!
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।
আইরাত;; শুনেন একটা কাজ আছে।
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম কি কাজ বলুন!
আইরাত;; কাজটা যদিও আপনার নিজের জন্যই।
রাশেদ;; কি?
আইরাত;; এইযে এটা!
আইরাত গোলাপ ফুলটা রাশেদের দিকে এগিয়ে দেয়। আর রাশেদ কিছুই না বুঝে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
আইরাত;; আরে নিন নিন।
রাশেদ;; কিন্তু এটা কেনো?
আইরাত;; কেনো মানে কি আবার রোদেলা কে দিবেন।
রাশেদ;; রোদেলা!
আইরাত;; না তো আর কাকে দিবেন পাশের বাড়ির ছকিনা কে নাকি!
রাশেদ হেসে দেয়।
আইরাত;; আরে জানি জানি সবই জানি। শুনুন যত দেরি করবেন তত আপনারই ক্ষতি। তাই জলদি জলদি সব বলে দিন।
রাশেদ;; বলবো?
আইরাত;; আরে আবার জিগায়! অবশ্যই।

আইরাতের কথা মতো রাশেদ হাতে একটা লাল টকটকে বড়ো গোলাপ নিয়ে চলে যায়। খেয়াল করে দেখে সবাই এখানেই অর্থাৎ দিয়া, অবনি সবাই এখানেই শুধু রোদেলা নেই। তার মানে রোদেলা রুমে। এইতো সুযোগ। রাশেদ চট জলদি সিড়ি বেয়ে ওপরের রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে রোদেলা নেই। তাহলে গেলো কোথায়! রুমের ভেতরে আসতেই ওয়াসরুম থেকে শাওয়ারের শব্দ শুনতে পায় রাশেদ। এই সুযোগে রাশেদ গোলাপের সাথে একটা ছোট চিরকুট বিছানার এপর রেখে দিয়ে যায়।

আর অন্যদিকে কৌশল কে ঝাপটে ধরেছে আব্রাহাম।
কৌশল;; ভাই শোন না!
আব্রাহাম;; কি হয়েছে? (চিল্লিয়ে)
কৌশল;; রাগিস কেনো?
আব্রাহাম ছাদে রেলিং এর ওপর বসে ছিলো। কৌশলের কথা শুনে সে যেনো জ্বলে যায়। এক লাফে রেলিং এর ওপর থেকে নেমে পরে।
আব্রাহাম;; না রাগবো না! শালার ব্যাটা তুই ভালোবেসেছিস তাহলে আবার বলতে ভয় পাস কেনো!
কৌশল;; মানে যদি অবনি মানা করে দেয় আরকি তখন কি হবে আমার?
আব্রাহাম;; কেনো তখন তোকে কাজের মেয়ে জরিনার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো।
কৌশল;; এইভাবে বলিস না ভাই ?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাই এখন ভালোই ভালোই বলে দে।

কৌশল এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। আর এদিকে আব্রাহাম বাকি সবাইকে ইশারা করে দ্রুত ছাদে আসতে বলে। সবাই এসে পরে। পুরো ছাদ ফাকা কেউ নেই। তবে ছাদের ঠিক মাঝখানে ছোট ছোট মোমবাতি দিয়ে লাভ স্যাপ করা। আকাশ টা স্নিগ্ধ, হাজারো তারা তাতে মিটমিট করছে। আশে পাশে সুমিষ্টি গন্ধ। পরিবেশ টা সুন্দর। আর সবাই জানে যে কৌশল অবনি কে পছন্দ করে। ছাদের পাশে সবাই গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়া, অয়ন, রাশেদ, রোদেলা। তবে রোদেলা যেনো রাশেদের সাথে নিজের চোখ মিলাচ্ছে না। আর আব্রাহাম রেলিং এর ওপর দুপা ঝুলিয়ে বসে আছে। সামনে তার আইরাত। আইরাত কে জড়িয়ে ধরেই বসে আছে। কৌশল এখনো বেশ নার্ভাস। কিন্তু পাশ থেকে সবাই তাকে উৎসাহ দিচ্ছে। সিড়িতে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে কৌশল রেডি হয়ে দাঁড়ায়।

কৌশল;; আল্লাহ প্লিজ এবারের মতো বাঁচিয়ে নিও প্লিজ প্লিজ।
অবনি ভেতরে আসে এসেই দেখে কৌশল দাঁড়িয়ে আছে। সে এগিয়ে যায়।
কৌশল;; অবনি!
অবনি;; আব্রাহাম জিজু যে বললো সবাই নাকি ছাদে আড্ডা দিচ্ছে। তো কোথায় সবাই?
কৌশল;; আছে।
অবনি;; কৈ?
কৌশল;; অবনি আসলে আমিই ডেকেছি।
অবনি আরো একটু এগিয়ে এসে কৌশলের সামনে দাঁড়ায়।
অবনি;; জ্বি বলুন।
কৌশল;; আসলে কি বলছিলাম যে..
অবনি;; কি?
কৌশল;; আব, আব আসলে মানে…
অবনি;; আরে কি!

কৌশল;; আব…… “ডানে গরু বামে খাসি, মুই তুমারে ভালাবাসি” ?।
কৌশলের এই কথা বলার সাথে সাথেই সোজা ঠাস করে সবার মাথায় হাত।
আব্রাহাম;; মন চাইতাছে এইডারে ধইরা উশঠা দেই একটা।
আইরাত;; আরে জামাইজান কুল কুল।
ওদিকে অবনি মুখ ভেটকিয়ে দেয়।
অবনি;; কিহ?
কৌশল;; আমি তুমারে অনেক ভালাপাই অবনি ?
অবনি;; আরে ধুর…
এই বলেই অবনি ঘুরে চলে আসতে নিবে কিন্তু এবার কৌশল অবনির হাত ধরে আটকিয়ে দেয়। সে পেছন ঘুরে তাকায়। দেখে কৌশল এক হাটু গেড়ে নিচে বসে আছে। মাথা টা তার ঝুকানো। আস্তে করে মাথা টা ওপরে তুলে তাকায়। আর অবনিরও এবার টনক নড়ে৷

কৌশল;; এতোক্ষণ ফাইজলামি করেছি আমি। কিন্তু এবার অনেক বেশি সিরিয়াস। অবনি আমি, আমি তোমায় ভালোবাসি। অনেক ভালোবাশি। বিশ্বাস করো কথা টা কতোদিন কতোভাবে যে তোমায় জানাতে চেয়েছি। কিন্তু পারি নি আমি।সত্যি পারি নি। ভয় কাজ করতো যদি তুমি আমায় না বলে দাও এই ভয়। আমি জানি না তোমায় উত্তর কি হবে। হ্যাঁ নাকি না। তবে আমি তোমায় জোর করবো না অবনি। কেননা ভালোবাসা টা মন থেকে আসে। সেটা তোমার ইচ্ছে। তোমার ডিসিশন। তবে হ্যাঁ আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি অবনি। আই লাভ ইউ। তুমি হবে কি আমার!?
অবনি তায্যব হয়ে তাকিয়ে ছিলো। সে ভাবেই নি যে কৌশল তাকে এমন কিছু একটা এই মূহুর্তে বলবে। সে বেশ অবাক।

কৌশলের জন্য সফট কর্ণার তো অবনির মনেও আগে থেকেই ছিলো কিন্তু তা প্রকাশ করে দিলে না জানি পরবর্তীতে কি না কি হয় এই ভয়ে সে নিজেও বলে নি। তবে আজ সব ভয় ভেঙে কৌশল নিজেই আগে বলে দিলো। অবনি এখন আর কি করে নিজের মনের ভাব দমিয়ে রাখবে। তাই অবনিও হ্যাঁ বলে দেয়। অবনির হ্যাঁ বলার সাথে সাথেই ছাদের এক পাশ থেকে সবাই জোর একটা চিল্লানি দিয়ে এগিয়ে আসে। আর এদের দেখে অবনি একটু চমকে যায়। সবাই যে এখানেই ছিলো তবে এক কিণারে তা অবনি খেয়ালই করে নি। আর ছাদের ওপর জোৎস্নার আলো পরেছে। আলো-আঁধারির সংমিশ্রণ তাই তেমন টা চোখে বাধার মতোও না। সবাই কে এভাবে দেখে অবনি কিছুটা লাজে লালই হয়ে গেলো। সবাই কংগ্রেচুলেশন বলে তাদের। আর আইরাত গিয়ে অবনি কে আরো কাঁচা শরম দিতে লাগলো। আব্রাহাম গিয়ে কৌশলের মাথায় এক গাট্টা মেরে কাধে হাত রাখে।

আব্রাহাম;; তোকে আগেই বলেছিলাম যে বলে দে বলে দে। দেখলি তো রাজি হয়েই গেলো।
কৌশলও ভাবে নি যে অবনি কে বলতেই সে রাজি হবে। খুশির বাঁধ নেই। সবাই মজা-মাস্তি করে সেখান থেকে এসে পরতে ধরে। সর্বশেষে রাশেদ রোদেলা ছাদ থেকে নেমে যেতে ধরলে রোদেলা হুট করেই রাশেদের সামনে এসে দাঁড়ায়। রাশেদ রোদেলার দিকে তাকায়। রোদেলা কিছুই না বলে রাশেদের হাতে শুধু আগের ন্যায় একটা ছোট চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। রাশেদ আর দেরি না করে তৎক্ষনাৎ চিরকুটের ভাজ টা খোলে। দেখে তারই দেওয়া চিঠি। ওপর পাশে ঘুরিয়ে দেখে রোদেলা তার প্রতিউত্তর দিয়েছে।

“” গোলাপ দিলেন তা বুঝলাম। সাথে ‘ভালোবাসি’ বললেন তাও বুঝলাম। তবে আমি তার বিনিময়ে কি দিবো তাই ভাবছি। কি দিবো বলুন তো! গোলাপের বিপরীতে কি দিবো গোলাপ নাকি কাঁটা? কাঁটা টা দিলাম না কারণ ভালো তো বেসেছি আমিও তাই আপনাকে কাঁটা দিলে বিধবে আমার নিজেরও। না ফুল নাই বা কাঁটা। বিনিময়ে শুধু ছোট্ট একটা ‘হ্যাঁ’ দিলাম””।
রাশেদের যা বুঝার তা বুঝে গেলো। সে সামনে তাকায়। রোদেলা তখনও দাঁড়িয়েই ছিলো। কিন্তু তারপর চলে যায়। রাশেদ তো খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো।

দিয়া আর আইরাত রান্নাঘরে চা বানাচ্ছিলো। চা বানানো শেষ হলে দিয়া সবাই কে এক এক করে দেয়। দেখে অয়ন সবার থেকে কিছুটা দূরে সরে ফোনে আলাপ করছে। দিয়া ট্রে থেকে একটা চায়ের কাপ নিয়ে অয়নের দিকে এগিয়ে যায় তাকে চা দিবে বলে। তার কাছে যেতেই বুঝে অয়ন তো বেশ গভীর আলাপে ডুবে আছে। তবুও দিয়া ইশারাতে অয়ন কে চা সাধে। অয়ন চা টা কোন রকমে দিয়ার হাত থেকে নিয়ে নেয়। আর কিছুই বলে না। দিয়াও সেখান থেকে এসে পরতে নেয় কিন্তু তখনই তার কানে আসে ওপর পাশ থেকে কেমন এক হালকা মেয়েলি কন্ঠ। বুঝলো অয়ন কোন এক মেয়ের সাথে কথা বলছে। দিয়া মুখ টা একদম বিষ বানিয়ে দিয়ে সেখান থেকে এসে পরে।
দিয়া;; হাহ গপ্পের যেনো আর শেষ নেই। যা ইচ্ছে করুক, যার সাথে ইচ্ছে গল্প করুক। আমার কি! হাহ ঢং।
এই বলেই দিয়া এসে পরে।

সেইদিন টা এভাবেই যায়। আইরাত তার কোলে টাফি & সফটি কে নিয়ে বসে আছে। তারা হয়তো ঘুমিয়ে পরেছে তাও তাদের নরম গায়ের ওপর হাতিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আব্রাহামের দিকে তাকাচ্ছে। দেখে সে বেশ ব্যাস্ত। হাতে অনেক গুলো ফাইল। সব এক এক করে দেখছে।
আইরাত;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমি একটু ব্যাস্ত গো।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; কিছু বলবে?
আইরাত;; নাহ।

আব্রাহাম;; রাগ করে না জান আমার। একটু কাজ আছে।
আইরাত;; ফাইল গুলো কি অনেক দরকারি?
আব্রাহাম;; তেমন আহামরি দরকারি না তবে হ্যাঁ দরকারি।
আইরাত;; আমি কি চেক করে দিবো কিছু?
আব্রাহাম;; না গো মহারাণী আমার। আপনি গিয়ে বরং পড়তে বসুন। আগামীকাল ভার্সিটি দিয়ে আসবো আপনাকে আমি। পড়তে বসো এবার আইরাত।
আইরাত;; ওইযে আবার শুরু হইছে মাস্টার গিরি।
আব্রাহাম;; পড়তে বোস জান।
আইরাত;; আরে ধুরু কাল ভার্সিটি নেই আমার।
আব্রাহাম এবার একটু গম্ভীর মুডে আইরাতের দিকে ফিরে তাকায়।
আব্রাহাম;; সত্যি তো!

আইরাত;; না বিশ্বাস হলে আপনি দিয়া আর অবনি কে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন।
আব্রাহাম;; থাক লাগবে না। তবুও পড়তে বোস। আগের পড়াগুলো পড়ো যাও।
আইরাত;; নায়ায়ায়ায়ায়া, আমি পড়বো না।
আব্রাহাম;; কি বললা!
আইরাত;; আমার পড়তে ভালা লাগে না। আপনি এদিকে আসুন।
আব্রাহাম;; জান আর একটু সময় দাও প্লিজ৷ ফাইল গুলো দেখেই আসছি।
আইরাত;; আচ্ছা ?।
আইরাত;; এহহ কি আমার ফাইল ডা রে। হায়রে গুরুত্বপূর্ণ আমার থেকেও বেশি তাই না! খুব তো ফাইল দেখেন। আচ্ছা আমিও দেখে নিবো। কাল সকালে কি করি দেখবেন। ওয়েট। বারো টা বাজাবো আমি আপনার। (মনে মনে)
এই বলেই আইরাত চিতপটাং হয়ে ঘুমিয়ে পরে।

ডার্ক ব্লেক কালারের কোর্ট টা নিজের ওপর জড়াচ্ছে আর পেছন ঘুরে ঘুরে একবার করে আইরাত কে দেখছে আব্রাহাম। সাদা চাদর টেনে আইরাত ঘুমাচ্ছে পরম শান্তিতে। আর আব্রাহামের অফিসে জরুরি মিটিং আছে। তাই তাকে তাড়াতাড়ি উঠতে হয়েছে। রেডি হয়ে আইরাতের কপালে একটা চুমু খেয়ে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়। আব্রাহামের রুম থেকে বের হতেই আইরাত প্রথমে এক চোখ খুলে তারপর আরেক চোখ খুলে। মুখে ঝুলছে শয়তানি হাসি। ঠাস করে উঠে বসে পরে। আড়মোড়া ভাঙছে। কিছুক্ষণ পর নিচে আব্রাহামের গাড়ি চলে যাওয়ার আওয়াজ পেয়ে আইরাত করিডরে গিয়ে নিচে তাকায়। চলে গিয়েছে আব্রাহাম।
আইরাত;; হিহিহিহিহি, একটা বার অফিসে যাও না চান্দু তারপরই বুঝবে মজা ?‍♀️।
এই বলেই আইরাত ফ্রেশ হতে চলে যায়। ওদিকে আব্রাহাম গাড়ি চালাচ্ছে আর কানে ব্লুটুথ লাগানো। তখনই অয়নের ফোন।

অয়ন;; তুই কোথায় ভাই?
আব্রাহাম;; আ”ম অন মাই ওয়ে।
অয়ন;; জলদি অফিসে আয়।
আব্রাহাম;; কেনো! কিছু কি হয়েছে নাকি?
অয়ন;; আশফাক আহমেদ তোর সাথে আবার নিজের পার্টনারশিপ শুরু করতে চায়।
আব্রাহাম;; কিন্তু একটা সময় সে নিজেই সবকিছু শেষ করে আরেক কোম্পানি তে জয়েন করেছিলো প্লাস আমার ক্ষতি করার জন্য উঠে পরে লেগেছিলো।
অয়ন;; আমি ওকে অনেক বুঝিয়েছি। এও বলেছি যে তুই জীবনেও আর ওর সাথে কাজ করতে রাজি হবি না। কিন্তু সে আমার কোন কথাই শুনতে রাজি নয়। বলেছে তোর সাথে কথা বলে তারপরই সবকিছু মিটমাট করবে।
আব্রাহাম;; আজ আমার সময় নেই। ওকে বল আমি এখন পারবো না। আমার কাছে ওকে দেওয়ার মতো এতো আজাইরা সময় নেই।

অয়ন;; আচ্ছা আমি দেখছি।
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। তার বেশ সময় পর অফিসে এসে পরে। গার্ড রা অফিসের দরজা খুলে দিলে আব্রাহাম ভেতরে চলে যায়। সবাই মর্নিং উইশ করছে আব্রাহামও যেতে যেতে তাদের সবার উত্তর দিচ্ছে। নিজের কেবিনে গিয়ে রাশেদ কে ডাকে।
আব্রাহাম;; সবকিছু রেডি আছে তো?
রাশেদ;; একদম স্যার। কনফারেন্স রুমে সবাই আপনার জন্য ওয়েট করছে।
আব্রাহাম;; ওকে আমি আসছি।
রাশেদ চলে যায়। তার কয়েক মিনিট পর আব্রাহাম কনফারেন্স রুমে চলে যায়। সেখানে অয়ন-কৌশল সবাই আছে। তাকে দেখেই সবাই দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম তাদের বসে যেতে বলে। মনিটর সেট করে নেওয়া হয়। প্রেজেন্টেশন করবে আব্রাহাম।

ইলা-অনামিকা, দিয়া-অবনি-রোদেলা সবাই হলরুমেই বসে ছিলো। কাজ করছে আর আড্ডা দিচ্ছে।
ইলা;; কিরে সবাই এখানে আছি কিন্তু আইরু কোথায়?
এই কথা বলার সাথে সাথেই ওপরে আইরাতের রুম থেকে বেশ জোরে গানের শব্দ আসে। তাও আবার খাসা একখান গান। গান বাজছে…
“চান্দেও চিনে না, সূর্যেও চিনে না। টিং টিংটিং টিং টিংটিং টিং টিংটিং টিং টিং টিং টিং টিং।
চান্দের বাত্ত্বির কসম দিয়া ভালোবাসিলি, সূর্যের আলোয় ঝলমলাইয়া আমায় পোড়াইলি। এখন তো চান্দেও চিনে না, আমারে সূর্যেও চিনে না। চিনবো কেমনে যে চিনাইবো সেও তো চিনে না”।
এমন গানের জোর আওয়াজে সবাই অবাক হয়ে ওপরের দিকে তাকায়। আগা-মাথা কিছুই না বুঝে একে ওপরের দিকে তাকাতাকি করতে লাগে।

দিয়া;; এই সাজ-সকাল বেলা এ আবার কেমন তামাশা রে ভাই!
অনামিকা;; এটা নিশ্চয়ই আইরাতের কাজ। এভাবে কেউ এই সকাল বেলা গান বাজায়।
অবনি;; আবার কোন ভূতে ধরলো কে জানে!
তখনই আইরাত রুম থেকে বের হয়ে আসে কোমড়ে নিজের দুহাত রেখে। চোখে একদম কালা চশমা আর মুখে একখান ভেটকি। আবার গান শুরু। আর আইরাত উরাধুরা যা খুশি নাচ দিচ্ছে। আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। এসেই দিয়াকে বসা থেকে হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়। তারপর তাকে নিয়ে নাচতে শুরু করে। দিয়া তো শুধু ঘুরছে। একটা সময় দিয়ার হাত আইরাত ছেড়ে দেয়। এতে দিয়া গিয়ে ধিরিম করে সোফার ওপরে পরে। তারপর ইলার কাছে গিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তারপর আবার আইরাতের মন মতো নাচানাচি শুরু। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

আব্রাহাম প্রেজেন্টেশন শুরু করবে সবই রেডি। রাশেদের হাতে সব ফাইল। সেই এক এক করে আব্রাহাম কে ফাইল আর যাবতীয় সব কিছু দেয়। আব্রাহাম কোর্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে রাশেদের দিকে তাকায়। দেখে রাশেদ হাবলার মতো সব ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম রাশেদের দিকে তুরি বাজায়। ইশারাতে ফাইল চায় তার কাছে। কিন্তু রাশেদ আসলে কি করবে সেটাই তার বুঝে আসে না। সে শুকনো কিছু ঢোক গিলে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়।
আব্রাহাম;; কি হলো ফাইল দিচ্ছো না কেনো?
রাশেদ;; স্যার এগুলো কি আসলেই ফাইল?
আব্রাহাম;; মানে?
রাশেদ;; স্যার এই দেখুন।

আব্রাহামের সামনে রাশেদ সব ফাইল গুলো রাখে। সেগুলো হাতে নিয়ে এক এক করে উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখতে লাগে। কিন্তু ফাইল উল্টিয়ে দেখতে দেখতে তো আব্রাহামের নিজেরই মাথা উল্টে গিয়েছে। আব্রাহামের কপাল ভাজ হয়ে আসে। রাগে মূহুর্তেই চোখ গুলো রক্তবর্ণ ধারন করে। কোর্টের হাতা গুলো আরো শক্ত ভাজে গুটিয়ে নেয়। রাশেদ সিচুয়েশন বুঝতে পেরে দ্রুত সবাই কে কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে। মিটিং হুট করেই ক্যান্সেল করে দেওয়া হলো। এখন এছাড়া আর কোন উপায় নেই। অয়ন আর কৌশলও কিছু বুঝে না। আস্তে করে চলে যায়। আব্রাহাম এক হাত তার কোমড়ে রেখে আরেক হাত দিয়ে কপাল চেপে ধরে। রাগে শুধু ফুসছে।

রাশেদ নিজেও আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে পরে। আসলে আব্রাহামের যে সমস্ত ফাইল ছিলো সেগুলোর সব কটাতেই আইরাত তার মহান কারুকাজ করে দেখিয়েছে। ফাইল গুলো সব ধবধবে সাদা আর তাতে একশ একটা কালারিং পেন দিয়ে যত্তসব আজগুবি ড্রোইং আঁকা রয়েছে। আব্রাহাম চেয়েও এখন রাগ দেখাতে পারছে না। কনফারেন্স রুমে কেউই নেই শুধু আব্রাহাম ছাড়া। সে আস্তে করে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। আস্তে করে গা টা এলিয়ে দেয়। আব্রাহাম বেশ ভালো করেই জানে যে এগুলো আইরাত ছাড়া আর কেউ করে নি। কারণ আইরাত ছাড়া বাসাতে কেউ আব্রাহামের এই জিনিস গুলো ধরবে তার প্রশ্নই আসে না। ফর সিওর আইরাত করেছে।

আর আব্রাহাম তাকে হারে হারে চিনে। চেয়েও রাগ করতে পারছে না সে এখন। সকালে ফাইল গুলো আবার রিচেক করবে সেই সময় টুকু ছিলো না। আর রাতের অর্ধেক সময় পর্যন্ত তো কাজ করেছেই তাই আর সকালে চেক করে নি। ভেবেছে সবকিছু ঠিকই আছে। আব্রাহাম চেয়ারে বসে সব ফাইল গুলো দেখছে এক এক করে। এক ফাইলে হাতি, হনুমান, কুত্তা, ভেড়া, বিড়াল, আড়শোলা সবই আঁকা। আরেকটা তে একটা পালোয়ানের মতো মানুষ আঁকা। এটা কে প্রথমে চেনা যেতো না কিন্তু মুখে চাপদাড়ি, আর চুলের আকৃতি দেখে স্পষ্ট প্রমাণ যে আইরাত এটা আব্রাহাম কেই আঁকিয়েছে। খেয়াল করে দেখে আব্রাহামের পাশেই ছোট্ট করে একটা পুচকে মেয়ে কে আঁকিয়েছে।

সেটাই হয়তো আইরাত। এটা দেখেই আব্রাহাম তাচ্ছিল্যের মতো হাসি হাসে। সে হাসবে নাকি কাদবে ভুলে গেছে। আরেক ফাইলে হয়েছে পুরো উল্টো কাজ। সেখানে একটা বিশাল আকারের মেয়ে কে আঁকানো হয়েছে আর মেয়ে টার পাশেই পুচকু করে একটা ছেলে কে আঁকানো হয়েছে। সেটা হয়তো আব্রাহাম কে আঁকিয়েছে আইরাত। আরেক ফাইলে ৩২ টা দাঁত বের করে, টাক মাথা সহ একটা দানব আকৃতির মুখমন্ডল এঁকেছে সে। আরো কতো শত কারুকাজ তার। আহা, এগুলো কে জাদুঘরে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। আইরাতের ভয়ংকর প্রতিভা। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আব্রাহাম ফাইল গুলো সব রেখে দেয় টেবিলের ওপর। বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যে আইরাত কে সময় না দেওয়ার ফল এটা। ওইযে একটু ব্যাস্ততা দেখিয়েছে তাই সে এমন করে রেখেছে সব ফাইল। এত্তো জেদ। যেটার জন্য রাত জেগে কাজ করলো সেটা আইরাত পুরো ভেস্তে দিলো।

অন্যদিকে ইচ্ছেমতো নেচে-টেচে ধুপ করে বসে পরে। মিটমিট করে হাসছে। অনামিকা বেশ ভালো করেই বুঝলো যে নিশ্চিত আইরাত কিছু উল্টা-পাল্টা একটা কাজ করেছে তাই এমন করে নাচছে।
অবনি;; ওই ওই
আইরাত;; কি হইছে?
অবনি;; সত্যি কইরা ক ত। কি করছোস তুই?
আইরাত;; আচ্ছা শোন শোন এদিকে আয় বলতাছি। কানে কানে বলি।
আইরাতের কথা মতো অবনিও আস্তে করে আইরাতের মুখের কাছে নিজের কান পেতে ধরে। আর আইরাত তার মুখের এক পাশে আলতো করে হাত এনে অবনির কানে কানে কিছু বলবে বলে এগিয়ে আসে।
আইরাত;; বলছিলাম কি যে…
এই বলেই আইরাত অবনির কানে দেয় এক ফাটা গলায় চিৎকার মেরে ?। অবনি দ্রুত সরে এসে কানে হাত দিয়ে দেয়। এই মনে হয় কানের পর্দা টা ফেটে গেলো। শেষ শেষ কান পুরো শেষ।
অবনি;; হারামি মাইয়া।
আইরাত;; ?

ইলা;; আচ্ছা কি শুরু করেছিস কি তুই! কোন আজাইরা কাম-কাজ করিস নি তো আবার!
আইরাত ইনোসেন্ট ফেইস করে দুপাশে মাথা নাড়ায়। তার মানে সে ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে জানেই না। সেই সময় টুকু এভাবেই যায়। সকাল থেকে না আব্রাহাম আইরাত কে কোন ফোন করেছে আর না আইরাত ফোন করছে তাকে। সে শুধু থেকে থেকে ঘড়ি দেখছে। আইরাত ভেবেছে হয়তো আব্রাহাম ব্যাস্ত তাই ফোন দিচ্ছে না। তাই কৌশল কেই ফোন করে বসে আইরাত।
কৌশল;; হ্যালো।
আইরাত;; হ্যালো, কৌশল ভাইয়া!
কৌশল;; হ্যাঁ বউমনি বলো।
আইরাত;; আব্রাহাম কোথায়?
কৌশল;; সে তো কাজ করছে। তবে আজ যে মিটিং ছিলো তা ক্যান্সেল হয়ে গেছে।
এটা শুনেই আইরাত দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।
আইরাত;; হ্যাঁ বুঝলাম। তো এখন কি করে?
কৌশল;; কেবিন রুমেই বসে আছে।
আইরাত;; দুপুর হয়ে এলো। খেয়েছে কিছু?
কৌশল;; না।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা। ভাইয়া আমি রাখি।
কৌশল;; আচ্ছা বউমনি।

আইরাত ফোন কেটে দেয়। উঠে সোজা রান্নাঘরে চলে যায়। গিয়েই ওরনা কোমড়ে গুজে বিরিয়ানি রান্না শুরু করে। ইলা একবার এসে উঁকি দিয়ে দেখে যায়। দেখে বেশ যত্ন সহকারে বিরিয়ানি রান্না করছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না যে আব্রাহামের জন্যই। দেড় ঘন্টার মাঝেই পুরো বিরিয়ানি তৈরি হয়ে এলো। একটা সুন্দর বক্সে তা বেশটুকু নিয়ে নেয়।
রোদেলা;; ম্যাম, আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন?
আইরাত;; এইযে শুরু হলো আবার। ম্যাম আর আপনি এই দুটো ডাক কি তুমি বাদ দিবে না। দিয়া আর অবনি যেভাবে ডাকে সেভাবে ডাকবে তা না পারলে তুমি বলে ডাকবে। সমস্যা কি!
রোদেলা;; আচ্ছা।

আইরাত;; আমি অফিসে যাচ্ছি আব্রাহামের কাছে। কিছু সময় পরই ফিরে আসবো।
রোদেলা;; আচ্ছা। ড্রাইভার কে বলে দিবো?
আইরাত;; না না আমি একাই যাচ্ছি।
আইরাত বের হয়ে পরে গাড়ির চাবি নিয়ে।
আর ওদিকে আব্রাহামের মেজাজ কিছুটা গরম। ফাইল গুলোর সব নাজেহাল অবস্থা আর তার ওপর মিটিং ক্যান্সেল। আবার আরেক নতুন আপদ এই আশফাক আহমেদ। কিযে ঝামেলা। এইসবের প্যারায় আজ বাসায় ফোন অব্দি দিতে পারে নি। কেবিনে বসে বসে কি যেনো লিখছিলো তখনই রাশেদ কড়া নাড়ে।

রাশেদ;; স্যার।
আব্রাহাম;; এসো রাশেদ।
রাশেদ;; স্যার একজন এসেছে বলছে আশফাকের লোক।
আব্রাহাম;; কেনো এসেছে?
রাশেদ;; আপনার সাথে কথা আছে নাকি।
আব্রাহাম;; পাঠাও দেখি, আবার কোন ঝামেলা এলো।
রাশেদ;; কিন্তু স্যার….
আব্রাহাম;; পাঠাও।
রাশেদ আর কিছু না বলে লোক টাকে পাঠিয়ে দেয়। কেবিনের দরজায় টোকা পরলে ভেতরে আসতে বলে।
আব্রাহাম;; জ্বি বলুন।
–;; স্যার আসলে আশফাক আহমেদ চাইছেন যে….
আব্রাহাম;; যাকে একবার না বলি তাকে না তেই টিকিয়ে রাখি আমি। এবার আপনি আপনার কথা বলতে পারেন।
লোকটি আর কিছু না বলে এবার তার হাত থেকে দুটো সিলভার কালারের বড়ো বড়ো ব্যাগ বের করে টেবিলের ওপর আব্রাহামের সামনে রাখে। দু ব্যাগ ভর্তি শুধু টাকা আর টাকা। যদিও সব ফরেইন কান্ট্রির ডলার।
–;; আপনি চাইলে এর থেকেও বেশি দিতে পারি কিন্তু বিনিময়ে…
আব্রাহাম;; আশফাকের সাথে পার্টনারশিপ করতে রাজি নই আমি।

–;; আপনি….
লোকটি আর কিছু বলতে পারে না। ওদিকে আইরাত প্রায় ত্রিশ মিনিট পর অফিসের সামনে আসে। গার্ডরা আইরাত কে দেখেই দ্রুত অফিসের দরজা খুলে দেয়। সবাই হেসে হেসে কথা বলছে আইরাতের সাথে। আইরাতের তো আর আব্রাহামের কেবিনে ঢোকার সময় পারমিশন লাগে না। আর লাগলেও আইরাত নিবে না। আইরাত তো সোজা কেবিনের দিকে যেতে লাগে। তবে বাইরে থেকেই ভেতরের দিকটায় কিছুটা শোরগোলের আওয়াজ পাওয়া যায়। আইরাত কপাল কুচকায়। সে দ্রুত কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পরে। তবে এখন যেনো সবই নীরব। একেবারেই শান্ত। আইরাত আশেপাশে চোখ বুলাতে থাকে। শান্ত পরিবেশে হঠাৎ কারো চাপা স্বর পেলে আইরাত আরো কয়েক কদম এগিয়ে যায় কিন্তু তখনই আব্রাহাম বের হয়ে আসে। সে যেনো কিছুটা হাপাচ্ছে এমন। অর্থাৎ জোরে দম ছাড়ছে। হুট করেই আইরাতের সামনে এসে পরাতে আইরাতও অবাক।

আব্রাহাম;; হে বেবিগার্ল!
আইরাত;; আপনি?
আব্রাহাম;; তো আমার কেবিনে আর কে থাকবে?
আইরাত;; না না তা না।
আব্রাহাম;; তুমি অফিসে এলে কখন? বললে না যে!
আইরাত;; না আসলে আমি কৌশল ভাইয়া কে ফোন করেছিলাম। আপনি নাকি কিছুই মুখে তুলেন নি তাই আমিই খাবার নিয়ে এলাম।
আব্রাহাম;; তাই কি এনেছো?
আইরাত;; গেস করুন!
আব্রাহাম;; আব….. কি?
আইরাত;; বিরিয়ানি।
আব্রাহাম;; ওয়াহহহহহ।
আইরাত;; কিন্তু আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
আব্রাহাম;; কেমন?
আইরাত;; আপনি কি রেগে আছেন?

আব্রাহাম;; একদম না। এখন কিছুই করবো না তবে রাতে তোমার খবর আছে।
আইরাত বুঝলো যে আব্রাহাম ফাইলের কথাই বলছে।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন আমি বাড়ি যাই। আর এই রইলো আপনার বিরিয়ানি। এটাই দিতে এসেছিলাম। আপনি খেয়ে নিয়েন কেমন। তারপর না হয় গার্ড কে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েন।
আব্রাহাম;; আরে এতো তাড়াতাড়ির কি আছে!
এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে এক টান দিয়ে নিজের কাছে এনে পরে। হাত দিয়ে তার কোমড় প্যাচিয়ে ধরে। আব্রাহাম তার নাক দিয়ে আইরাতের গালে ঘষছে। কিন্তু তখনও আইরাত কারো চাপা স্বর শুনতে পায়। আইরাত কপাল কুচকে তার পেছন ঘুরে তাকাতে যাবে কিন্তু তখনই আব্রাহাম তাকে টান দিয়ে আবার অন্য পাশে ঘুরিয়ে ফেলে। অর্থাৎ আইরাতকে দেখার সুযোগ টুকুও দেয় না।

আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।
আইরাত;; টু (হেসে)
আব্রাহাম;; আচ্ছা শুনো বাড়ি যাও এবার। বাইরে এতো বেশি থাকতে হবে না।
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম আইরাতের সারা মুখে চুমু এঁকে দেয়। আইরাত চলে যেতে নেয়। তবে কেবিনের দরজাতে গিয়ে আইরাত একবার দাঁড়িয়ে পরে। ঘুরে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; সবকিছু ঠিক আছে তো?
আব্রাহাম;; টোটালি পারফেক্ট বেবিগার্ল। গো হোম।

আব্রাহাম মুচকি হেসে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আইরাতও এসে পরে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। আর আইরাতের চলে যেতেই আব্রাহাম কয়েক কদম হেঁটে গিয়ে কেবিনের আরো ভেতরে যায়। একটু আগে যে লোকটা এসেছিলো আশফাকের বিষয়ে আব্রাহামের কাছে সুপারিশ করতে আর টাকা নিয়ে। বেশি কিছু না তবে আব্রাহাম শুধু তাকে মেরে ফেলেছে। এখনো মরছে সে। দুহাত একদম ওপর থেকে ভেঙে দিয়েছে। ঠিক গলার শ্বাসনালি বরাবর একটা চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে সূত্রপাত হয়েই রক্ত ঝড়ে পরছে সারা গা বেয়ে। আর জীবন তো এখনো পুরো যায় নি তার। গলাতে চাকু বিধে রয়েছে আর সেখান থেকেই তার চাপা স্বর বের হয়ে আসছে। আব্রাহাম খুব শান্ত দৃষ্টিতে তার কাছে যায়।

লোকটি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে, কথা বের হচ্ছে না তার মুখ থেকে। একে তো এতো জরুরি মিটিং ক্যান্সেল হয়েছে তাই মাথা গরম। যদিও আইরাত ফাইল গুলো দুষ্টুমি করেই নষ্ট করেছে। আর আব্রাহাম চাইলেও আইরাত কে কিছুই বলতে পারবে না। আইরাত দুনিয়া উল্টে ফেলে দিলেও আব্রাহাম তাকে কিছু বলবে না। আর এই আশফাক সব মিলিয়ে আগে থেকেই বেশ রাগ উঠে ছিলো তার ওপর এই উটকো ঝামেলা সইতে না পেরে দিলো মেরে। আইরাতের নজরে যেনো এইসব খুন-খারাবা আর না পরে তাই আব্রাহাম খুব সাবধানেই এটা সামলিয়েছে। লোকটাকে দেখার অবকাশ টুকুও দেয় নি। আর আইরাত যখন আব্রাহামের কেবিনের ভেতরে আসছিলো তখনই তাকে আব্রাহাম নিজের কেবিনের ভেতরে থাকা লুকিং ক্যামেরা তে আগে থেকেই দেখে নিয়েছিলো। তাই সতর্কতা আরো বাড়ে।

আব্রাহাম;; গার্ড (জোর চিল্লিয়ে)
আব্রাহামের ডাকার সাথে সাথেই কেবিনের ভেতরে তিনজন গার্ড প্রবেশ করে।
আব্রাহাম;; এটাকে নিয়ে গিয়ে ওই আশফাকের ঠিক সামনে ফেলে দিয়ে আসবে।
এবার আব্রাহাম রাগে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আরেক দফা ঘুষি মেরে দেয় ওই লোকটির গলা বরাবর অর্থাৎ যেখানে চাকু আগে থেকেই বিধে ছিলো। গার্ডরা ওই লোকটার আধামরা দেহটা তুলে নিয়ে যায়। আর আব্রাহাম শান্ত হয়ে বসে। মুড খারাপ ছিলো তবে আইরাতের হাতে বানানোর বিরিয়ানির গন্ধে মুড অন। কোর্ট টা খুলে ফেলে। ভেতরের শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করে খেতে বসে। আগামী এক ঘন্টা কেবিনে প্রবেশ সবার নিষেধ করে দেয়।
আইরাত বাসায় চলে যায়। ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে বাড়িতেই ঘুরতে লাগে। এক সময় দিয়ার রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে দিয়া পেছনে দুহাত বেধে শুধু পায়চারি করে যাচ্ছে।

আইরাত;; কিরে!
দিয়া;; ওহ, আয় আয় ভেতরে আয়।
আইরাত;; কিছু কি হয়েছে তোর?
দিয়া;; কিছু না। তবে ভালো লাগছে না।
আইরাত;; হয়েছে কি?
দিয়া;; ?
দিয়ার চাহনি দেখেই আইরাত যেনো কিছুটা টের পায়।
আইরাত;; আব…. অয়ন ভাইয়ার সাথে…….!!
দিয়া;; বাদ দে। অয়ন অনেক ব্যাস্ত থাকে। হয়তো ও অন্য কাউকে ভালোবাসে রে।
আইরাত;; আরে নাহ তেমন না।
দিয়া;; এমনই রে।
আইরাত;; আচ্ছা তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি সামলাচ্ছি সব।
দিয়া;; লাভ নেই রে। অয়ন অন্য কাউকেই ভালোবাসে।
আইরাত;; হ কইলেই হইলো। চুপ কর তুই।
তখনই আইরাতের ফোন আসে।

বিকেলের দিকে হঠাৎ করেই আইরাতের শরীর প্রচুর খারাপ লাগতে শুরু করে। এতো টাই খারাপ যে অবশেষে তাকে দ্রুত হস্পিটালে যেতে হয়েছে। আব্রাহাম তো বাসায় ছিলো না তাই আইরাত অনামিকা আর অবনির সাথে হস্পিটালে গিয়েছিলো চেকাপের জন্য। সেখানে ডক্টর কিছু টেস্ট দিলে আইরাত সব টেস্ট গুলো করে নেয়। রিপোর্ট আসতে একদিন সময় লাগবে। আর আব্রাহাম যদি শুনে যে আইরাত হস্পিটালে গিয়েছিলো মানে আইরাতের শরীর খারাপ তাহলে সে অযথাই হাইপার হয়ে যাবে। আর তেমন কিছু সিরিয়াস ম্যাটারও না। তাই আইরাত আব্রাহাম কে এই কথা বলতে সবাই কেই বারণ করে দেয়। তবে আইরাতের মন টা কেমন একটু ভার ভার। যেনো কিছু নিয়ে চিন্তিত সে। রাতে আব্রাহাম বাড়ি ফিরে আসে। অন্যান্য দিন আব্রাহাম এসেই দেখে আইরাত হলরুমেই সবার সাথে রয়েছে কিন্তু আজ আইরাত এখানে নেই। আব্রাহাম ইলা কে জিজ্ঞেস করলে ইলা বলে আইরাত নাকি বেশ সময় যাবত নিচেই নামে নি। ওপরে রুমেই রয়েছে। আব্রাহামও আর কিছু না বলে দ্রুত পায়ে রুমে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত বিছানার ওপর থেকে ওরনা নিজের ওপর জড়াচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখে আইরাতের মাঝে তেমন কোন হাবভাব দেখা যায় না। আব্রাহাম হয়তো কিছুটা টের পেয়েছে। জেকেট টা নিজের ওপর থেকে খুলে ফেলে। শার্টের হাতা গুটাচ্ছে আর সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; ____________________
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; হুমম
আব্রাহাম;; হলরুমে সবাই তুমি এখানে একা একা কি করো?
আইরাত;; না এমনি। আমার ভালো লাগছিলো না তো তাই আরকি নিচে যাই নি।
আব্রাহাম যেনো এটা মেনে নিতে পারলো না। আইরাত চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম তার বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। বিছানার ওপর আইরাত কে বসিয়ে দেয়। আর সে আইরাতের সামনে এক হাটু ভাজ করে বসে পরে। সামান্য উঁচু হয়ে আইরাতের কপালে আর ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে আবার বসে। বেশ নরম সুরেই বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আইরাত;; কিছু না।
আব্রাহাম;; বলো আমায় কি হয়েছে?
আইরাত;; আব্রাহাম আমার ভালো লাগে না। (কিছুটা জোরেই)
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; আব্রাহাম মানলাম আমি একটু চঞ্চল, মাঝে মাঝে একটু বেশিই বাচ্চামো করি কিন্তু আমি অবুঝ নই। অবুঝ নই, আমি বুঝি।
আব্রাহাম;; হয়েছে কি?
আইরাত;; আপনি কি এগুলো ছাড়বেন না। এইসব মারপিট, ঝামেলা। এইসব খুন-খারাবি কবে ছাড়বেন আপনি!?
আব্রাহাম;; আইরাত ত……

আইরাত এবার উঠে আব্রাহামের সামনে থেকে এসে পরে।
আইরাত;; আমি দেখেছি আজ অফিসে সব। আপনি ওই লোকটাকে মেরেছেন। আমি সেখান থেকে এসেই পরতাম। বাইরেও এসে পরেছিলাম কিন্তু আপনার কেবিনে আমি আমার ফোন রেখে এসে পরেছিলাম। তাই সেটা নিয়ে আসার জন্য আবার ঘুরে যাই। আর গিয়েই দেখি আপনি লোকটাকে মেরে বসেছেন।
আইরাত রাগ-ক্ষোভ নিয়ে কপাল কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম এবার উঠে আইরাতের কাছে যায়। আইরাতের গালে নিজের দুহাত রেখে দেয়।

আব্রাহাম;; ভয় পাও আমাকে?
আইরাত;; ____________________
আব্রাহাম;; বলো। ভয় পাও আমাকে তুমি?
আইরাত;; নাহ।
আব্রাহাম;; আমার ওপর বিশ্বাস আছে?
আইরাত;; অনেক টাই বেশি। নিজের থেকেও বেশি।
আব্রাহাম;; তাহলে তো তুমি এও জানো যে আমি বিনা কারণে কাউকে মারি না।
আইরাত;; কিন্তু মেরে ফেলার কি দরকার। কথা বলে বুঝিয়েও তো মিটমাট করা যায় নাকি!
আব্রাহাম;; আইরাত শুনো আমি তোমায় ভালোবাসি বুঝলে তুমি। ঠিক ততো টাই ভালো আমি আমার প্রফেশন কেও বাসি। এন্ড ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার প্রফেশন খুন করা নয়, মানুষ কে মেরে ফেলা নয়। সাধে মারি না আমি। না আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো আর না ই আমি আমার প্রফেশন কে। আমি বলছি না যে আমি এইসব বারবার করবো। তবে হ্যাঁ আর কখনো এইসব তোমার চোখের সামনে পরবে না। কখনোই না।

আইরাত কে জড়িয়ে ধরে আব্রাহাম নিজের বুকের সাথে। বুঝলো যে অফিসে সেই কান্ড টা দেখার পরই আইরাতের মন খারাপ। তবে আইরাত কে নিজের বুকে নিয়ে আব্রাহাম বুঝলো যে আইরাতের শরীর অনেক পরিমাণে গরম। আব্রাহাম তার মুখ তুলে ধরে। তার গালে, কপালে ভালো করে হাত রেখে দেয়। কপাল কুচকে বলে…
আব্রাহাম;; বডির টেম্প্রেচার এতো বেশি কেনো! জ্বর এসেছে নাকি তোমার?
আইরাত;; কৈ না তো।
আব্রাহাম;; শরীর খারাপ লাগছে?
আইরাত;; হ্যাঁ কিছুটা।
আব্রাহাম;; তুমি, তুমি এখানে বসো।
আইরাত তার মাথার পাশে হাত রেখে দেয়। মাথা টা কেমন ঘুরিয়ে উঠলো। আব্রাহাম আইরাত কে শুইয়ে দেয়। তারপর ফ্রেশ হয়ে আসে। নিজে খায় সাথে আইরাত কেও খাইয়ে দেয়। সারাটা রাত আইরাতের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই পার করে দিয়েছে আব্রাহাম।

দিয়া তো জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। প্রায় কয়েক দিন যাবত অয়ন তার সাথে ভালোভাবে কথা বলছে না, দেখছে না অব্দি। যদিও আগে এইসবে দিয়ার কিছুই আসিতো-যেতো না। তবে ইদানীং কেনো যেনো দিয়ার বেশ খারাপ লাগে অয়নের এমন কান্ডে। না পারে মুখ ফুটে তাকে কিছু বলতে আর না পারে সহ্য করতে। দিয়া নিজেও জানে না যে তার এমন কেনো লাগছে। অয়নের সাথে তো তার বনেই না তাহলে কেনো জ্বলছে সে। দিয়া চেয়েও নিজেকে নরমাল রাখতে পারে না। এবার আর না পেরে দিয়া ঠিক করলো যে যাই হয়ে যাক না কেনো দিয়াই সবকিছু বলে দিবে অয়ন কে আর অয়নের মনে আসলে কি খিচুড়ি পাকছে তাও জানবে। সবাই হলরুমে বসেই ছিলো।

ছেলেরা সবাই অফিসে। দিয়া ভেবেছিলো অয়নও হয়তো অফিসেই। কিন্তু দেখে অয়ন তার রুম থেকে নামছে। এতোক্ষন সে তার রুমেই খাপটি মেরে বসে ছিলো। অয়ন ছাদের দিকে যেতে ধরে, আইরাত তাকে দেখে দিয়া কে ইশারা দেয়। অয়ন যাওয়ার পর দিয়াও উঠে ছাদের দিকে যেতে লাগে। ছাদে তীব্র বাতাস, তার সাথে প্রখর রোদও। দিয়া ছাদের আশেপাশে তাকাতাকি করে দেখতে লাগে। অবশেষে দেখে ছাদের এক কিণারে রেলিং এর ওপরে হাত রেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। কানে এখনো ফোন রয়েছে। হেসে হেসে কথা বলছেই। এটা দেখেই তো দিয়ার মাথা খারাপ হয়ে যায়। দিয়া তেড়ে অয়নের কাছে যায়। রাগ আর সামলাতে না পেরে অয়ন কে নিজের দিকে জোরে ঘুরিয়ে আনে। তারপর তার কান থেকে ফোন নিয়ে সোজা একটা আছাড় মারে নিচে। ফোন ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। অয়ন তো হাবলাকান্তের মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আর দিয়া সোজা কথা রাগে ফুসছে।

অয়ন;; কি হলো এটা?
দিয়া;; আপনার মুন্ডু টা হয়েছে।
অয়ন;; মানে কি! বলা নেই কওয়া নেই। এভাবে এসে ফোন ভেঙে ফাললে কেনো! আজব।
দিয়া;; আজব তাই না আজব! আর এই কয়েকটা দিন যাবত আপনি যা করে আসছেন এগুলো কি হ্যাঁ? এগুলো কি? ফোন একটা মুহুর্তের জন্যও হাত ছাড়া করেন না, সারাদিন কানের সাথে ফোন কে চিপকেই রাখেন। এতো হেসে হেসে কিসের কথা, এতো কিসের কথা! নিজে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেও কথা বলেন না। আজকে সব বলবেন আমায় সব। তা নাহলে গালি দিবো, ভয়ংকর গালি। সব আইরাতের কাছ থেকে শিখে এসেছি।
অয়ন;; কুল কুল কুল।
দিয়া;; রাখেন আপনার কুল।
অয়ন;; আরে এভাবে রাগ করলে তো ফেটে যাবে।
দিয়া;; কিইইই!
অয়ন;; চুপ চুপ।

দিয়া এবার চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয়। নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু হয় উল্টো টা। নিজেকে শান্ত করতে গিয়ে দিয়ার চোখই ভিজে আসে। যেনো সব রাগ চোখের জল হয়ে বের হয়ে এলো। তবুও চোখ বন্ধ রেখেই অয়নের পাশ কেটে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। বাতাসে দিয়ার চুলগুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। অন্য পাশে মাথা ঘুরিয়ে চোখের কার্ণিশে আশা অশ্রু ফোটা গুলো মুছে ফেলে। বার কয়েক নাক টান দেয়। অয়ন দিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। সে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই দিয়া কিছুটা ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে….

দিয়া;; দেখুন অয়ন আমি জানি না আপনার মনে কি আছে বা আপনি আসলে কি চান। কি এক্সপেক্ট করেন। আমি জানি যে আপনি আর আমি একসাথে থাকলেই শুধু ঝগড়া বেধে যায়। কিন্তু ঝগড়া গুলোও যে আমার বড্ড বেশি ভালো লাগে। জানি না কীভাবে ভালো লাগতে শুধু করলো। ভালো লাগতে শুরু করলো আপনার নামকে, আপনার করা সব কাজ কে, আপনাকে। আমি জানি না আপনি অন্য কাউকে পছন্দ না আসলে ভালোবাসেন কিনা। আপনার মনে অন্য কেউ রয়েছে কিনা। আমি চাই নি এভাবে বলতে তবে আর পারছি না। অয়ন আমি…

অয়ন;; তোমাকে ভালোবাসি।
অয়নের কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে দিয়া ফট করে পেছন ঘুরে তাকায়। দিয়ার মাঝে বিচলতা স্পষ্ট। যেনো সে বিশ্বাসই করতে পারছে না। কিন্তু অয়নের মাঝে এমন বিচলতার ছিটেফোটাও নেই। সে তার মতো করেই শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিয়ার দিকে। অয়ন কয়েক কদম এগিয়ে যায় তার দিকে।
অয়ন;; আমি তোমাকে ভালোবাসি দিয়া।
দিয়া;; ক ক কিন্তু আ আপনি তো…
অয়ন;; হুমম এবার বুঝলাম সব ক্লিয়ার করে। শোন ফোনে বেশিক্ষণ যাবত কারো সাথে কথা বলা বা হেসে হেসে বলার মানেই এই না যে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি বা চুটিয়ে প্রেম করছি। এমন টা না। আর হ্যাঁ কয়েক দিন ধরে আমি ফোনে একটু বেশি টাইম দেই। জানি আমি। মিথ্যে বলবো না আমি। হ্যাঁ যার সাথে কথা বলতাম সে একজন মেয়েই।
দিয়া চোখ তুলে তাকায়।

অয়ন;; মেয়েটা আমার কাজিন লাগে। তাও আবার বিবাহিত। আমার থেকে বড়োও। উনার হাসবেন্ড আর্মিতে রয়েছেন। বাসায় এসেছেন প্রায় দু বছর পর। তাই আমাকে জোর দাবি জানাচ্ছে সেখানে বেড়াতে যেতে। সবার সাথেই কথা হয়। তাই একটু বেশিই টাইম দিচ্ছিলাম। আমি ভাবি নি যে তুমি এটাকে অন্য কিছু ভেবে বসবে।
এটা বলেই অয়ন হেসে দেয় ফিক করে। কিন্তু দিয়া তো নিজেই ‘ব’ তে বলদ হয়ে গেলো। যাহ বাবা, কি ভাবলো আর কি হলো।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪৭+৪৮+৪৯+৫০

অয়ন;; তবে একটা দিক দিয়ে ভালোই হলো বলো। তোমাকে জ্যালাস তো ফিল করাতে পেরেছি। এই অনেক। তবে পরিশেষে এই বলবো যে আমি আমার না বলা কথা বলতে পেরেছি। ভালোবাসি আমি তোমায়।
অয়ন দিয়ার দিকে নিজের দুহাত মেলে দাড়ালে দিয়া ছুটে এসে অয়নের বুকে আচড়ে পরে। জড়িয়ে ধরে। এভাবে তারা দুজন কতোক্ষন ছিলো জানা নেই। তখনই ছাদের দরজাতে আইরাত আর অবনি আসে। এসেই দেখে ছাদে দুই প্রেমিক-প্রেমিকা একে ওপর কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের দেখেই আইরাত-অবনি হেসে দেয়। হঠাৎ করেই তাদের দুই প্রেমিক-প্রেমিকার পাশ দিয়ে কারো গলা খাকাড়ির আওয়াজ আসে।

দিয়া;; অয়ন!
অয়ন;; হুমম।
দিয়া;; আপনার কি গলা খারাপ হয়েছে?
অয়ন;; না তো।
আইরাত;; হায়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য় আমার লায়লি-মজনু রে।
আইরাতের কন্ঠ পেয়েও অয়ন আর দিয়া দুজন দুজন কে তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দেয়। দুজনেই ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ায়।
অবনি;; হয়েছে যা দেখার তা দেখে ফেলেছি আর লুকিয়ে লাভ নেই।
আইরাত;; যাক একটা রোমান্টিক সিন তো নজরে পরলো।

অয়ন;; না মানে বউমনি আসলে ইয়ে মানে….
আইরাত;; হয়েছে থাক। দুজনেই নিচে যাও এবার সবাই ডাকছে।
অয়ন-দিয়া জলদি করে চলে যায়। আইরাত আর অবনি হাসছিলো কিন্তু তার মাঝেই আইরাত হঠাৎ তার মুখ টা একেবারে কুচকে দিয়ে একহাত পেটে চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে দ্রুত নিচে ছুটে যেতে লাগে। অববি আগামাথা কিছুই না বুঝে সেও সোজা আইরাতের পিছে পিছে ভৌ দৌড় লাগায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৫৬+৫৭+৫৮+৫৯+৬০