নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪৭+৪৮+৪৯+৫০

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪৭+৪৮+৪৯+৫০
লেখিকাঃ Tamanna Islam

জীবন চলছে আপন গতিতে। সুখের ছোয়া চারিদিকে। নেই কোন দুঃখের ছাপ-চিহ্ন। সবকিছুই নিজ নিজ আপন ধারায় প্রবাহমান। অনামিকা চলে গেছে নিজের বাসায়। বাসায় ইলা আর আইরাত থাকে। সেও নিজের ভার্সিটি তে যায়। তাকে তার পড়াশোনায় ফাকি দিতে দেয় না আব্রাহাম। সে নিজের অফিসে যায় আবার বাসায় থেকেও কাজ করে। আবার আইরাত কেও নিজে পড়ায়। এভাবেই চলছে সব।

তবে আজ ছুটির দিন। আজ সবাই বাসায় থাকলেও আইরাত গিয়েছে তার মায়ের বাড়ি। সকালে যখন আব্রাহাম ঘুম থেকে উঠে তখন শুধু আইরাত তার কপালে একটা চুমু দিয়ে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরে। এখন দুপুর হয়ে এলো বলে। ফোনে কথা হয়েছে তাদের। তবুও কেমন যেনো একটা ফাকা ফাকা লাগছে। সবকিছু কেমন পানসে পানসে লাগছে, খেতে বসেও খাওয়ার প্লেটে শুধু আঙুল ঘুরিয়ে যাচ্ছে আব্রাহাম। মুখ টাও কেমন ফ্যাকাশে। তা দেখে ইলা বলে ওঠে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইলা;; কিরে খাচ্ছিস না যে?
আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না আমার।
ইলা;; আরে আইরাত তো এসেই পরবে।
আব্রাহাম;; না তার জন্য না।
ইলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝি আমি।
আব্রাহাম;; আমি উঠলাম।
এই বলেই আব্রাহাম খাবার টেবিল থেকে উঠে পরে। উঠে করিডরে গিয়ে আইরাতের নাম্বারে ফোন করে। দুবার ফোন বেজে কেটে যায়। ফোন না ধরায় এখন রাগ হচ্ছে আব্রাহামের। তিন বারের মাথায় গিয়ে ফোন রিসিভ হয়।

আব্রাহাম;; এই মেয়ে ফোন ধরতে এতো দেরি হয় কেনো?
আইরাত;; না মানে আমি হলরুমে ছিলাম আর ফোন ছিলো রুমে।
আব্রাহাম;; বাসায় এসো।
আইরাত;; আরে ক……
আব্রাহাম;; দরকার পরলে আম্মু কে নিয়েই এসে পরো। তাও তুমি বাসায় আসো।
আইরাত;; আব্রাহাম, আপনি এমন করছেন কেনো?
আব্রাহাম;; কারণ ভালা লাগতাছে না আমার তোরে ছাড়া বুঝছোস তুই!
আইরাত;; আল্লাহ, চিল্লান কেনো? আচ্ছা ঠিক আছে আসছি আমি।
আব্রাহাম;; দুই মিনিটের ভেতরে আসবা।
এই বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়।

আইরাত;; ওই মায়ায়ায়ায়া।
অনামিকা;; এই ষাড়ের মতো চিল্লাবি না।
আইরাত;; সবাই খালি বকাই দেয় আমারে ?
অনামিকা;; বকা খাওয়ার মতো কাজ-কাম করিস কেনো?
আইরাত;; আচ্ছা শুনো! তুমি কি আমার সাথে যাবে?
অনামিকা;; কোথায়?
আইরাত;; কোথায় আবার বাড়িতে।
অনামিকা;; না রে এখন আর না যাই। বাড়ি ফাকা আর কাজও আছে অনেক। তুই যদি যাস তো চলে যা। সেখানেও খালামনি একা।
আইরাত;; আচ্ছা তাহলে গেলাম আমি।
অনামিকা;; আব্রাহাম কি ফোন করেছিলো?
আইরাত;; হ্যাঁ ফোন করে ছোটখাটো একটা বাঁশ দিলো।
অনামিকা;; আচ্ছা বুঝেছি, তুই যা।

আইরাত সেখান থেকে বাইরে বের হয়ে গাড়িতে উঠে পরে তারপর ড্রাইভ করে চলে আসে। বেশ কিছু সময় পর বাড়ি পৌঁছেও যায়। বাড়ির মেইন দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে সামনে অর্থাৎ কিচেন ডেস্কের দিকে তাকাতেই আইরাত অবাক। কপাল কুচকে আসে আপনা আপনি। আব্রাহাম একটা সাদা স্লিভল্যাস গেঞ্জি পরে আছে তার ওপরে আবার সাদা কিচেন এপ্রোন পরা। বডির সাথে লেগে আছে। চুলগুলো কপালে এসে পরেছে, গালভর্তি চাপদাড়ি গুলো ফর্সা মুখে ফুটেছে মারাত্মক। কিন্তু হাতে রয়েছে স্টিলের বড়ো গোল একটা পাত্র। আর তাতে রয়েছে অনেক টুকু লিকুইড চকোলেট।

আর তাই হাতের ভাজে রেখে শুধু ঘুটিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ হাতের উল্টো পাশ দিয়ে সে তার কপালের দিকটায় হালকা ছুইয়ে দেয় এতে ময়দার মতো কিছু সাদা জিনিস তার কপালে লেগে যায়। আব্রাহামের দুহাতেই চকোলেট লেগে আছে। শল্ডারেও খানিক লেগে আছে। সে তার মতো করে কাজ করেই যাচ্ছে। আর আইরাত তো আব্রাহাম কে এমন লুকে দেখে অবাক। সে কি বলবে খুঁজে পায় না। আব্রাহাম কে পুরাই চকোলেট বয় লাগছে এখন। আইরাত আশেপাশে তাকিয়ে ইলা কে খুঁজতে লাগে। সে কোথায়! আইরাত তার হাত থেকে ব্যাগ টা সোফার ওপরে রেখে দিয়ে আব্রাহামের দিকে এগোয়। ডেস্কের সামনে এসে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে পরে। কিন্তু তবুও তাতে আব্রাহামের যেনো কোন হেলদোল নেই। সে তার মতো করেই কাজ করে যাচ্ছে। আজব তো! আইরাত কে এতো বেশি তাড়া দিয়ে বাড়ি আনলো সে আর এখন কিনা তার নিজেরই কোন খবর নেই। আব্রাহাম তার দিকে তাকাচ্ছে না দেখে আইরাত তার গলা কিছুটা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। নাহ, তবুও আব্রাহামের খেয়াল নেই। তা দেখে আইরাত নিজেই বলে ওঠে…

আইরাত;; এগুলো কি হচ্ছে?
আব্রাহাম;; কোথায় কি হচ্ছে?
আইরাত;; আপনি কিচেনে কেনো আর এতোগুলো চকোলেট কেনো?
আব্রাহাম;; চকোলেট কেক বানাবো তাই।
আইরাত;; আপনি পারেন বানাতে! (অবাক হয়ে)
আব্রাহাম;; অবশ্যই, আমি কি তোমার মতো ঢেড়স নাকি!
আইরাত;; কি আমি, আমি ঢেড়স!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ একদম।
আইরাত;; হুম ভালো। দাদি কোথায় দেখছি না যে?
আব্রাহাম;; দাদি অনাথ আশ্রমে গিয়েছে।
আইরাত;; একাই গেলো নাকি!
আব্রাহাম;; না সাথে রাশেদ আর গার্ড কে পাঠিয়ে দিয়েছি।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা ভালো করেছেন।

আইরাত কিচেনের ভেতরে এসে সবকিছু উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখতে লাগে। নাহ, সবই ঠিক আছে। সত্যি বলতে আইরাত নিজেও এতো ভালো ভাবে কেক বানাতে পারে না৷ আব্রাহামের কোন পাত্তাই নেই সে তার মতো করে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে কি যে কিউট লাগছে দেখতে।

আইরাত;; আমাকে এতো তাড়া দিয়ে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে এসে এখন নিজেরই কোন হদিস নেই। (ফিসফিস করে)
এই কথা বলেই একটা ছোটখাটো ভেংচি কেটে আইরাত সেখান থেকে এসে পরতে ধরবে কিন্তু তখনই আব্রাহাম পেছন থেকে খপ করে আইরাতের হাত টেনে ধরে ফেলে। এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিজের চকোলেট ওয়ালা হাত দিয়েই আইরাত কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আইরাতের পরণে সাদা জামা ছিলো তা যেনো মূহুর্তেই চকোলেটের কালারে পুরো ভরে গেলো। আব্রাহাম মুখ ডুবিয়ে দেয় আইরাতের ঘাড়ে। তবুও আইরাত চলে আসতে চাইলে আব্রাহাম আরো শক্ত করে তাকে ধরে কানের লতিতে কামড় দিয়ে বসে। আইরাত চোখ মুখ কুচকে ফেলে।

আব্রাহাম নিজের ওপর থেকে এপ্রোন টা খুলে ফেলে। আইরাতের কোমড়ে ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়। আব্রাহামের বুকের ওপর সে নিজের দুহাত রেখে দেয়। সে এবার ইচ্ছে করেই আইরাতের গলায়, বুকে ছুইয়ে দেয়। দুহাতে ইচ্ছে মতো আইরাতের পেটে স্লাইড করতে লাগে এতে চকোলেট দিয়ে একাকার হয়ে যায় আইরাত। আব্রাহাম তার বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আইরাতের ঠোঁটের পাশে ছুইয়ে দেয়, সেখানে চকোলেট লেগে গেলে আব্রাহাম নিজের ঠোঁট আইরাতের ঠোঁটের পাশে বসিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর উঠে আসে। আর তখন আইরাতের খেয়াল হয় যে আব্রাহামের হাতে অনেক চকোলেট ছিলো। সে নিজের দিকে আকায়। সাদা জামা চকোলেট কালার হয়ে গেছে। আইরাতের তো মাথায় হাত।

আইরাত;; এই এইই আপনি এটা কি করলেন?
আব্রাহাম;; এখনো তেমন কিছু করি নি কেবল তো শুরু।
আইরাত;; আরে আমি জামার কথা বলছি। আমার জামা শেষ। দেখুন আপনি চকোলেট দিয়ে কি করেছেন। এখন এগুলোর দাগ তো আর উঠবে না। কি করলেন আপনি?
আব্রাহাম;; আরে সমস্যা নেই। এমন একটা জামা গেলে হাজার টা এসে পরবে। এতো কিপ্টুস কেনো গো তুমি?
আইরাত;; কিপ্টুস না আব্রাহাম। জামা টা তো নষ্ট হলো নাকি!
আব্রাহাম;; আরে ছাড়ো তো।

আব্রাহাম আইরাতের গালে বেশ টুকু চকোলেট লাগিয়ে দেয় তারপর তার গাল থেকেই খেতে শুরু করে। দুজনেই পুরো চকোলেট চকোলেট হয়ে গেছে। আব্রাহামের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে এখন আইরাতও হাতে চকোলেট নিয়ে আব্রাহামকে লাগিয়ে দেয়। কেকের বারো টা বেজে গেছে। তারা দুই জামাই-বউ চকোলেট দিয়েই শেষ। আব্রাহাম আইরাত কে তুলে ডেস্কের ওপরে বসিয়ে দেয়। আইরাত তার পা দুলাচ্ছে আর আব্রাহাম কে দেখছে। আব্রাহাম চকোলেটের একটা বড়ো স্লাইস এনে অর্ধেক নিজের ঠোঁটে নিয়ে আইরাতের দিকে ধরে। আব্রাহামের ঠোঁট থেকে বাকি অর্ধেক চকোলেট টুকু আইরাত নিজের ঠোঁটে কামড় দিয়ে নিয়ে নেয়। তখনই ওপর থেকে নিচে সিড়ি বেয়ে দ্রুত পায়ে টাফি & সফটি নেমে আসে। যেনো তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা চলছে যে কে কার আগে যেতে পারে। আব্রাহাম-আইরাত দুজনেই হেসে দেয়।

অন্যদিকে অবনিও ভাবছে যে রিপোর্টিং এর কাজ ছেড়ে দিবে। ভার্সিটি করবে আর নিজের মতোই থাকবে। ভার্সিটির ক্যান্টিনে অবনি আর দিয়া বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনই কতোগুলো ছেলে এসে হুট করেই তাদের পাশে চেয়ার টেনে নিয়ে যার যার মতো করে বসে পরে। তারা মোট তিনজন। দিয়া আর অবনি তো বেশ অবাক। সাথে রাগও করে বেশ।

দিয়া;; এটা কোন ধরনের অসভ্যতা!
১ম ছেলে;; কেনো এটা তো ক্যান্টিন, আর এখানে যেখানে ইচ্ছে সেখানে আমরা বসতে পারি।
অবনি;; তাই বলে এভাবে কেউ বিনা বলে কয়ে পাশে বসে। উঠুন জলদি।
২য় ছেলে;; ও হ্যালো সিনিয়র আমরা তোমাদের সো সম্মান দিয়ে কথা বলো।
দিয়া;; হাহ, সম্মান তখন দেওয়া যায় যখন কেউ সেই সম্মানের যোগ্য হয়। আর সিনিয়র হয়েছেন তো কি মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি। উঠুন।

৩য় ছেলে;; প্রশ্নই আসে না। আর যেখানে তোমাদের মতো সুন্দরি বসে তাদের রেখে অন্য কোথাও কি করে বসি বলো!
এক কথায় দুই কথায় বেশ বার বেড়ে যায় ছেলেগুলো। অনেক বেশিই উতক্ত করতে লাগে দিয়া আর অবনি কে। ভার্সিটির ক্যান্টিন টা থেকে আবার মেইন রোডে সবই দেখা যায়। অর্থাৎ খোলা মেলা। তখনই সেদিক দিয়ে কৌশল গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো। একটা ফোন কল আসে তার কাছে যার দরুন তাকে গাড়ি থামিয়ে তারপর ফোন রিসিভ করতে হয়। তবে কথা বলতে বলতেই কিছুটা চিল্লাপাল্লার আওয়াজ তার কানে ভেসে আসে। কৌশল কানে ফোন ধরা অবস্থাতেই কপাল কুচকে আশেপাশে তাকাতাকি করতে লাগে। আর চোখে পরে দিয়া আর অবনি কে। কিছু ছেলে তাদের বিরক্ত করছে বেশ।

কৌশল ফোন কেটে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে। ছুটে গিয়ে ছেলে গুলো কে টেনে দূরে সরিয়ে আনে তাদের থেকে। এক একটার কলারে ধরে সোজা মুখ বরাবর ঘুষি মেরে দেয়। আর ছেলে গুলো তো কৌশল কে দেখেই চিনেছে। আব্রাহামের সাথে সাথে অয়ন-কৌশলের নাম ডাকও কিন্তু কম না। কৌশল এলোপাতাড়ি ভাবে মারতেই থাকে তাদের। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই দিয়ে মারছে। দিয়া আর অবনি আস্তে করে এক সাইড হয়ে দাঁড়ায়। কৌশল পাশে তাকিয়ে দেখে একটা ক্রিকেট ব্যাট পরে আছে। দ্রুত তা হাতে নিয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি আঘাত করতে লাগে তাদের। ছেলে গুলো নিচে শুয়েই গড়াগড়ি খাচ্ছে। মুখ নাক দিয়ে রক্তও বের হয়েছে অনেক টা। দিয়া কপাল কুচকে দেখছে এইসব, আর অবনি দিয়ার হাত খামছে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। ইচ্ছে মতো মারার পর সব কটা কে ওপরে দাড় করিয়ে ধরে।

কৌশল;; এখানে যদি দ্বিতীয় বার তোদের দেখি তো পিঠের ছাল তুলে নিবো একেবারে। আর হ্যাঁ তোরা হাতে তোদের টিসি লেটার পেয়ে যাবি।
কৌশল ছেলে গুলো কে ভাগিয়ে দেয়। তারপর শার্টের দুহাতা গুটাতে গুটাতে দিয়া আর অবনির দিকে এগিয়ে আসে।
কৌশল;; ঠিক আছো তোমরা?
দিয়া;; জ্বি ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ ভাই, কি যে বিরক্তিকর লাগছিলো।
কৌশল;; হুমম। আমি তো তাও কিছুই করলাম না। আব্রাহাম ভাই থাকলে তো লাশ বানিয়ে দিতো এখনই। আচ্ছা চলো দেখি গাড়িতে ওঠো তোমরা। বাড়ি দিয়ে আসছি আমি।
দিয়া;; আচ্ছা ভাইয়া। অবনি চল।
দিয়া আগে আগেই হেঁটে যেতে লাগলো। আর অবনি কৌশলের সাথে যাবে কি যাবে না দ্বিধায় পরে যায়। তখন কৌশল বলে ওঠে…

কৌশল;; অবনি প্লিজ গাড়িতে ওঠো। সিন ক্রিয়েট আর করো না গাড়িতে ওঠো।
অবনি গিয়ে গাড়ির পেছনে উঠে বসে দিয়ার পাশে। কৌশল উঠে ড্রাইভিং সীটে বসে পরে। আগে দিয়া কে তার বাড়ির সামনে ড্রপ করে দিয়ে এসে পরে। তারপর মাঝ পথে এসে থেমে যায়। ব্যাক সীটে মাথা নামিয়ে বসে ছিলো অবনি। হঠাৎ গাড়ি থামাতে দেখে অবনি চোখে তুলে ওপরে তাকায়।
কৌশল;; অবনি সামনে এসে বসো।
অবনি;; আব…না না ঠিক আছি আমি। আপনি যান।
কৌশল;; আমি অবশ্যই তোমার ড্রাইভার নই। সামনে এসো।

হালকা ফুলকা একটা ধমক খেয়ে গটগট করে অবনি সামনে এসে বসে পরে। কৌশলও গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। অবনির বাসার সামনে এসে থামিয়ে দেয় গাড়ি। দেখে বাড়ির সামনে অর্থাৎ ছোট একটা বাগানের মতো খোলা জায়গা আছে সেখানে অবনির মা দাঁড়িয়ে। অবনি গাড়ি থেকে নেমে যায়। যাওয়ার আগে একবার পেছন ফিরে তাকায় দেখে তার বাড়ির একদম ভেতরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কৌশল দাঁড়িয়েই আছে। ভেতরে চলে গেলে কৌশলও চলে যায়। অবনির মা কিছু জিজ্ঞেস করে না। তবে ভেতরে রুমে গিয়ে অবনির মনে পরে যে ‘কৌশল কি করে তার বাড়ির এড্রেস জানলো?’ তবে উত্তর নেই। মনের প্রশ্ন যেনো মনেই রয়ে যায়।

পরেরদিন সকালে অফিসে গেলে কৌশল কে কেবিনে ডাকে আব্রাহাম। সেও আসে।
কৌশল;; আসবো?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আয়।
কৌশল;; ডেকেছিলি ভাই!
আব্রাহাম;; শুনলাম কাল নাকি তুই মারপিট করেছিস?
কৌশল;; মারপিট করিনি, আমি মেরেছি।
আব্রাহাম;; জ্বি, তা খুব পূন্যের কাজ করেছেন আপনি। তো কেনো করলেন এমনটা?
কৌশল;; অবনি আর দিয়া কে জ্বালা……..
অয়ন;; কিহহহ দি দ দিয়া কে মানে! দিয়া কে কি?

অয়ন আব্রাহামের কেবিনেই কাজ করছিলো কৌশলের মুখে এমন কথা শুনে সে তড়িঘড়ি করে বলে।
কৌশল;; আরে ভাই কথা তো শোন। তিনজন ছেলে দিয়া আর অবনি কে জ্বালাচ্ছিলো আমি দেখেছি তাদের। তো তাই মেরে ভাগিয়ে দিয়েছি প্লাস যেই ভার্সিটির স্টুডেন্ট ছিলো তারা তা থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছি।
আব্রাহাম;; ভুল করেছিস তুই।
কৌশল;; কি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ ভুল করেছিস।
অয়ন;; কিন্তু …
আব্রাহাম;; ওদের তৎক্ষনাৎ খুন করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া উচিত ছিলো। যে ছেলে কোন নারীকে সম্মান করতে জানে না সে অবশ্যই কোন সম্মানিত নারীর ছেলেও না।
অয়ন;; একদম। আচ্ছা দুজনেই ঠিক আছে তো?
কৌশল;; হ্যাঁ।

এভাবেই সময় টা যেতে থাকে। আব্রাহাম রাতে যখন বাড়ি যায় তখন দেখে আইরাতের মুখটা কেমন শুকনো, কেমন যেনো মলিনতার ভাব। নিজের ওপর থেকে কোর্ট টা খুলে রেখে দেয়। আইরাত রুম গোছাচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখেও না দেখার ভান করে আছে। আব্রাহাম শার্টের হাতা ওপরে তুলতে তুলতে আইরাতের কাছে যায়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত কিছু বলে না। উল্টো আব্রাহাম কে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আব্রাহাম কপাল ভাজ করে তার যাওয়ার দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; এর আবার কি হলো? (মনে মনে)
আব্রাহাম;; আইরাত!
আইরাত শুধু দ্রুত পা চালিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে। আব্রাহাম এবার আইরাতের হাত ধরে আটকে দেয়। আইরাত কে বিছানাতে বসিয়ে আব্রাহাম তার সামনে এক হাটু ভাজ করে বসে। নরম সুরেই আইরাত কে জিজ্ঞেস করে…

আব্রাহাম;; কি হয়েছে বেবিগার্ল?
আইরাত;; কিছুই না।
আব্রাহাম;; কিছু তো হয়েছে। বলো আমায়।
আইরাত;; আজ আমার এক বান্ধুবীর বিয়ে ছিলো।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো!
আইরাত;; কিছু না।
আব্রাহাম;; আমাদের তো বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গেছে তাই না। এক বছর হবে কিছুদিন পরই।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; আরে বাবা কেনো মন খারাপ তা তো বলবে নাকি?
আইরাত;; না কিছু না।
আব্রাহাম;; জানপাখি বলো। (আইরাতের গালে হাত দিয়ে)
আইরাত;; আমাদের বিয়ে টা কেমন সিচুয়েশনে হয়েছে জানেন তো আপনি তাই না!
আব্রাহাম;; কেমন সিচুয়েশন?
আইরাত;; কেমন?
আব্রাহাম;; বলবে তো কেমন।
আইরাত;; আপনি জানেন না কেমন?
আব্রাহাম;; না (না জানার ভান করে)
আইরাত;; আচ্ছা থাক জানতে হবে না আপনার। (দাঁত কটমট করে)

এই বলেই আইরাত চটে সেখান থেকে উঠে চলে যায় আর আব্রাহাম হেসে হেসে সেখান থেকে ওঠে পরে। আইরাত কেনো এমন করলো তা সে ভালোই জানে। আব্রাহাম সবই বুঝে, তবুও না বুঝার ভান ধরে।
একদম সাজ-সকাল বেলা আইরাতের ঘুম ভেঙে যায় ঢাক-ঢোলের আওয়াজে। এ যেনো আওয়াজ হয়েও আওয়াজ না। কানের মাথা খেয়ে নিলো। এলোমেলো চুলে ঘুম থেকে ধরফরিয়ে উঠে পরে আইরাত। উঠেই চারিপাশে তাকিয়ে দেখে রুম ফাকা। আব্রাহাম নেই। হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ ডলে হাই তুলে নিলো কিন্তু তখনই আবার ঢাক-ঢোলের বিকট শব্দ। আইরাত দ্রুত উঠে গিয়ে প্রথমে রুমের করিডরে চলে যায়।

সেখান থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে পুরো বাসার হুলিয়া পাল্টে গেছে। এখান থেকে আপাতত বাগানের দিক টাই দেখা যাচ্ছে। আর সেই জায়গা টা অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। সেখান থেকেই শোরগোলের শব্দ আসছে। তাকিয়ে দেখে সেখানে অয়ন, দিয়া, কৌশল, অবনি, রাশেদ, রোদেলা সহ সব্বাই আছে। গান বাজানো হচ্ছে অনেক জোরে যার ফলে চিল্লিয়ে ডাক দিলেও কাজ হবে না। বাড়িতে কি কোন ফাংশন আছে নাকি! এতো সাজগোছ কেনো! এগুলোই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার। রুম থেকে আবার ছুটে গিয়ে সোজা নিচে চলে যায়। গিয়ে দেখে হলরুম টাও মোটামুটি সাজানো গোছানো৷ হলরুম পেরিয়ে বাইরে বের হয়ে দেখে সবগুলো যার যার মতো করে কাজ করছে। এদের ছুটোছুটির মাঝে আইরাত গিয়ে দাঁড়ালে যেনো তাকেই উড়িয়ে দিবে ধাক্কা দিয়ে এমন একটা অবস্থা। সবাই আইরাত কে দেখেছে তবুও না দেখার ভান ধরে আছে। আইরাত নিজ থেকে কথা বলতে গেলেও যেনো তারা উল্টো ঘুরে চলে যাচ্ছে।
অবশেষে আর না পেরে আইরাত খপ করে দিয়ার হাত খামছে ধরে।

দিয়া;; আরে..
আইরাত;; এই শোন।
দিয়া;; হ্যাঁ
আইরাত;; কি হচ্ছে কি এগুলো? এতোকিছু কেনো? কোন ফাংশন/ওকেইশন আছে নাকি?
দিয়া;; হ্যাঁ আছে তো।
আইরাত;; কি?
দিয়া;; তরে ক্যান কমু?
আইরাত;; দেখ ফাইজলামি করিস না। বল না।
দিয়া;; কইতাম না।
আইরাত;; দেখ ত্যাড়ামি না করে বলে দে না।
দিয়া;; বললে কি দিবি?
আইরাত;; এই যা তুই যা।
আইরাত সত্যি সত্যি দিয়ার কোমড়ে একটা লাথি মেরে দেয়। আর দিয়া সেখান থেকে চলে যায়। “ভাগ্যিস কেউ দেখে নাই” এই মনোভাব নিয়েই আইরাত তার সামনে তাকায় কিন্তু দেখে যে অবনি হাতে একটা বড়ো ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ড্যাবড্যাব করে।

আইরাত;; ওই তুই শোন।
অবনি;; আমি এই সক্কাল সক্কাল বেলা লাথি খাইতে প্রস্তুত না।
এই বলেই অবনি সেখান থেকে চলে যায়। আইরাত মুখটা ভেটকিয়ে দেয় ঠিক যেনো বাংলার পাঁচ। উঁকি ঝুকি মেরে আব্রাহাম কে খোঁজার চেষ্টা করছে। তাকে সেই কখন থেকে দেখতে পারছে না, কাউকে যে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করবে তাও পারছে না। আইরাত সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই পেছন থেকে কৌশল বলে ওঠে…
কৌশল;; বউমনি!
আইরাত তো সোজা চমকে গিয়েছে।
আইরাত;; আরে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তো।
কৌশল;; কাকে খুঁজছো?
আইরাত;; আরে ভাই আর বলো না। আব্রাহাম কে খুঁজছি। ও কোথায়?
কৌশল;; ভাই তো আ……

অয়ন;; বউমনি ভাই বাইরে গিয়েছে জলদিই এসে পরবে। তুমি ভেতরে যাও।
আইরাত কিছু বুঝে না যে এরা সব এমন কেনো করছে। যাই হোক আইরাত ভেতরে চলে যায়। আর আইরাতের যেতেই অয়ন কৌশলের দিকে চোখ গরম করে তাকায়।
অয়ন;; এই তুই বলে দিচ্ছিলি কেনো বউমনি কে?
কৌশল;; আরে বলে দিচ্ছিলাম না আমি।

অয়ন;; হ্যাঁ হয়েছে। এবার তুই এদিক টা সামলা আর আমি বাড়ির ভেতরে দেখছি।
এই বলেই যে যার যার কাজে চলে যায়। আর আইরাত ভেতরে গিয়েই দেখে ইলা কতোগুলো লোকের সাথে কথা বলছে। এরাই ঘর সাজানোর কাজে নিযুক্ত। আইরাত একবার ওপরে নিজের রুমের দিকে তাকায়। অন্যান্য দিন আব্রাহাম তার ঘুম থেকে উঠার আগেই কফি বানিয়ে নিয়ে যেতো কিন্তু আজ যায় নি। এই ভেবেই নিজের চুলগুলো প্যাচাতে প্যাচাতে রান্নাঘরে চলে যায় কফি বানাতে। ইলা লোকগুলোর সাথে কথা শেষ করে এসে দেখে আইরাত কিচেনে কাপে কফি ঢালছে।

ইলা;; কিরে আমায় বলতি, আমি কফি দিয়ে আসতাম।
আইরাত;; না না থাক দাদি। আমিই আসলাম।
ইলা;; আচ্ছা তুই তো মনে হয় ফ্রেশ হোস নি। এক কাজ কর শাওয়ার নিয়ে নিচে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
আইরাত;; আচ্ছা দাদি এগুলো কি?
ইলা;; কোন গুলো?
আইরাত;; এইযে এতোকিছু, মানে এতো ধুম ধারাক্কা কেনো?
ইলা;; তা বাবা আমি জানি না। সব পোলাপান রাই জানে।
আইরাত;; তা তোমার গুণধর নাতি টা কোথায়?
ইলা;; কে! আব্রাহাম?
আইরাত;; হ্যাঁ আর কে হবে।

ইলা ওপরে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তার দুহাত পকেটে গুজে রেখে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হলরুমের দিকেই তাকিয়ে আছে। ইলা কিছু বলতে ধরলে আব্রাহাম তাকে ইশারাতে বলতে বারণ করে দেয়।
ইলা;; আব.. না মানে ওকে তো আমিও সকাল থেকে দেখি নি।
আইরাত;; হুমমম?
ইলা;; হুমম।
আইরাত;; আচ্ছা হয়তো অফিসে গিয়েছে। থাক বাদ দাও। আমি যাই।
ইলা;; হুমম।

আইরাত ওপরে চলে গেলো। ইলাও যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। আইরাত ওপরে গিয়ে টাওয়াল আর বাথরোব টা হাতে নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পরে। জামা ছেড়ে টাওয়াল টা নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। গিজার অন করেছিলো যার ফলে গরম পানির খানিক ধোঁয়া ওয়াসরুমের সারাটা জুড়েই তৈরি হয়েছে। আইরাতও তার হাত দিয়ে পানির ফোটা গুলো ধরছিলো। তখন হঠাৎ দরজায় কারো টোকা পরে। কপাল কুচকে কয়েক বার ডাক দেয় ‘কে, কে?’ করে। কিন্তু কোন উত্তর আসে না ওপর পাশ থেকে। পরপর কয়েকবার টোকা পরলে আইরাত দরজা আস্তে করে খুলে মাথা টা বের করে ফেলে। কিন্তু দেখে কেউ নেই।

আইরাত;; এই কে রে রুমে?
আব্রাহাম;; তোমার জামাই।
আব্রাহাম ধুপ করে আইরাতের সামনে এসে পরে।
আইরাত;; এহ, আপনি?
আব্রাহাম;; তো আমাদের রুমে আর কে আসবে?
আইরাত;; আপনি অফিসে যান নি?
আব্রাহাম;; না তো। আমি তো ছুটি কাটাচ্ছি।
আইরাত;; তাহলে সকাল থেকে আপনি কোথায় ছিলেন?
আব্রাহাম;; কোথায় আর বাসায় ই ছিলাম।
আইরাত;; তাহলে আমি দেখলাম না কেনো আপনাকে?
আব্রাহাম;; কারণ তুমি কানার বোন আন্ধা।
আইরাত;; ভাগেন এখান থেকে।

বুঝলো আইরাত মনে মনে বেশ অভিমান করে আছে। এখন কি আর করার। আব্রাহাম আইরাত কে সরিয়ে ঠেলে ওয়াসরুমের ভেতরে চলে যায়।
আইরাত;; বাইরে যান নয়তো….
আব্রাহাম;; কি নয়তো কি শুনি!
আইরাত;; আপনি বাইরে যান।
আব্রাহাম আইরাত কে এক টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে।
আব্রাহাম;; যাবো না। কি করবে?
আইরাত;; আমি চিল্লাবো।
আব্রাহাম;; কি?

আব্রাহাম হো হো করে হেসে দেয় আইরাতের কথা শুনে। আর আইরাত মুখটা লটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আব্রাহাম;; মানে তুমি কি পাগল! তুমি চিল্লালেই বা কি আর না চিল্লালেই কি এখন আর এইসবে কাজ হবে না। আর সত্যি বলতে এখন তুমি চিৎকার করলে উল্টো মানুষ অন্য কিছু মনে করবে।
আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়। আব্রাহাম আইরাত কে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে। একহাত দিয়ে আইরাতের কোমড়ে ধরে আরেক হাত দেওয়ালের ওপরে ধরে রাখে। নিজের মাথা আইরাতের মাথার সাথে লাগিয়ে নেয়। আইরাত তার হাতগুলো আব্রাহামের বুকের ওপর রেখে দেয়। আবেশে দুজনেই চোখ বন্ধ করে রাখে।

আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল!
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; আমায় ভালোবাসো?
আইরাত;; নিজের থেকেও বেশি।
আব্রাহাম;; কখনো আমায় ছেড়ে যেও না ওকে!
আইরাত;; কখনোই না।
আব্রাহাম;; আজ, এখন আমায় তুমি যেভাবে ভালোবাসো আগামী তেও ঠিক এভাবেই ভালোবেসো?
আইরাত;; মৃত্যুর পরেও বাসবো।
আব্রাহাম;; আমায় বিশ্বাস করো তো?
আইরাত;; সবার থেকে বেশি।
আব্রাহাম;; আমার হাত কখনোই ছেড়ো না!
আইরাত;; কখনোই না।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল মনে রেখো “তুমিহীনা মরন হবে এই আব্রাহামের”।

আইরাত চোখ মেলে তাকায়। আব্রাহামের গালে চুমু দিয়ে দেয়। আর আব্রাহাম আরেক ধাপ আইরাত কে নিজের কাছে টেনে এনে ঘাড়ে চুমু এঁকে দেয়। একটা সময় আইরাত নিজেই ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসে। আব্রাহাম তাকে নিয়ে বাগানের পাশে গিয়ে সবার সাথে বসে পরে। সবাই এখন স্বাভাবিক আচরণই করছে। আসল কাহিনী তো আছেই। তবে তা আইরাতের কাছ থেকে লুকানো। বাগানের পাশে বেতের সব চেয়ার টেবিল পাতা হয়েছে। সেখানেই সবাই বসা। অবনি এসে সবার মাঝে চায়ের ট্রে টা রেখে দেয়। তবে এই এত্তোসব কিসের আয়োজন তা জানতে চাইলেই সাথে সাথেই সবাই সেই প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ফেলে আর আইরাত চুপসে যায়। বুঝলো যে কেউ এই বিষয়ে কথাই বলতে চায় না।

আসলে সত্যি বলতে আব্রাহাম প্ল্যান করছে আবার বিয়ে করার। মানে আইরাত কেই তবে আবার বিয়ে করার। আব্রাহাম বেশ ভালো করেই জানে যে আইরাত অনেক বেশি সেন্সিটিভ মেয়ে। একটু কিছুতেই মন খারাপ বা রেগে যাওয়া এমন টা হয়-ই। সে স্ট্রোংও আছে তবে তা সময় সাপেক্ষে। কাল যখন সে তার বান্ধুবীর বিয়ের আলাপ শুনলো তখন স্বাভাবিক ভাবে তার মনেও নিজের বিয়ের খেয়াল এসেছে। আর তাদের বিয়ে হয়েছে একটা অপ্রস্তুতকর অবস্থায়। বন্দুকের নখের ওপর বিয়ে করতে হয়েছে আইরাত কে। যা আব্রাহাম এখন চায় না। আইরাত যখন রাতে ঘুমিয়ে ছিলো তখনই আব্রাহাম ভেবে নেয় যে সে আইরাত কে আবার বিয়ে করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। রাতের মাঝে দ্রুত রাশেদ, অয়ন, কৌশল কে ফোন দিয়ে সব এরেঞ্জ করতে বলে দেয়। যেহেতু রাতের বেলা তাও আবার কাজের সময় ছাড়া তাই লোকগুলো কে ডাবল পেমেন্ট করে সব কাজের জন্য হাইয়ার করা হয়েছে। আর সকাল অব্দি তা হয়েও গিয়েছে।

রাশেদ কে বলে সকালে অবনি, দিয়া আর রোদেলা কে ডেকে পাঠায়৷ ইলা সহ সবাইকে সব কিছু বলে দেওয়া হয়েছে। তবে ভুলাক্ষরেও যেনো তা আইরাত টের না পায় এমন ভাবে। একটু পর অনামিকাও এসে পরবে হয়তো। দিনের বেলা সবকিছু এভাবে চলবে তবে রাতের বেলা আইরাত কে মেইন সারপ্রাইজ দেওয়া বাকি আছে বলেই আব্রাহাম সবাই কে চুপ করিয়ে রেখেছে।
যে যার যার মতো করেই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। তার মাঝেই ইলা বলে ওঠে…

ইলা;; দিয়া!
দিয়া;; জ্বি দাদি বলুন।
ইলা;; একটু রান্নাঘর থেকে জুসের গ্লাস গুলো এনে দিবে প্লিজ!
দিয়া;; জ্বি দাদি অবশ্যই।
এই বলেই দিয়া চলে যায়। সবাই এখানে বসে থাকলেও অয়ন নেই। অফিসে হয়তো কোন কাজ নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে তাই সে ফোনে কথা বলার জন্য কিছুটা দূরে গিয়েছে। কয়েক মিনিট পর দিয়া হাতে একটা বড়ো জুসের ট্রে নিয়ে বাড়ির ভেতর থেকে বাগানের দিক টায় আসছিলো। মেইন দরজার সামনে লোকগুলো কাজ করছে তাই তাকে ঘুরে অন্য দরজা দিয়ে অর্থাৎ কিচেনের দরজা দিয়েই বাইরে আসতে হয়।

এদিক টায় আবার বাগানের পাশেই একটা বেশ বড়ো সড়ো নীল রঙের সুইমিং পুল রয়েছে। পানি গুলো কি পরিমাণ যে সতেজ আর ঝলমলে। তাতে সূর্যের আলো পরে যেনো ঝলমল করছে আরো বেশি। দিয়া সেদিক দিয়েই আসতে লাগে। আর কাকতালীয় ভাবে অয়নও ফোনে কথা বলতে বলতে এদিক টায় আসতে লাগে। মোড় ঘুরে এসে বাগানের দিকে যেতে ধরবে তখনই দিয়ার সাথে অয়নের এত্তো জোরে একটা ধাক্কা লাগে যে দিয়া তার ভারসাম্য হারিয়ে হাত থেকে জুসের ট্রে টা নিচে পরে গিয়ে সে ধিরিম করে সোজা সুইমিং পুলেই গিয়ে পরে। পানিতে পরায় তা ঝলকানির বেশ জোরেই শব্দ হয়। শব্দ পেয়ে সবাই পেছনে ঘুরে তাকায়। আর অয়ন তো পুরো দমে আহাম্মক হয়ে গেলো এমন কান্ডে। সে কান থেকে ফোন খানিক দূরে সরিয়ে মুখ টা হা করে তাকিয়ে আছে। আর দিয়া পুলে পরে নাকানিচুবানি খাচ্ছে রীতিমতো।

আইরাত;; দিয়ায়ায়ায়ায়া।
আইরাত ছুটে যায়।
আব্রাহাম;; আরে আরে দিয়া, ঠিক আছো তো!
আব্রাহাম আইরাত, অবনি সব্বাই ছুটে যায়। আর অয়ন হাত থেকে ফোন ছুরে ফেলে দিয়ে সোজা পুলে ঝাপ দিয়ে দেয়। দিয়াকে কোন রকমে ধরে নিজের কাছে এনে পরে। তারপর কিণারে গিয়ে থেমে যায়। ভিজে এক্কেবারেই নাজেহাল অবস্থা দুজনের। সুইমিং পুলের সাইডে যে স্টীলের স্ট্যান্ড গুলো থাকে তা হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে কোন রকমে একটু ওপরে ওঠে। অয়নের আরেক বাহুতে দিয়া। সে প্রচুর কাশছে। আব্রাহাম দ্রুত গিয়ে এক হাত দিয়ে অয়ন কে ধরে। আরেক হাত দিয়ে দিয়া কে কোম রকমে তুলে ওপরে বসিয়ে দেয়। আইরাত এসে দিয়ার পিঠে হাতিয়ে দিচ্ছে। দিয়ার নাকে-মুখে পানি উঠে গেছে, কাশছে।

অবনি;; ঠিক আছিস দিয়া?
কৌশল;; দিয়া ঠিক আছো তো! অনেক বেশি পানি গিয়েছে ভেতরে।
আইরাত;; কেনো যে একটু দেখে শুনে হাঁটিস না তুই।
আব্রাহাম;; তুই! তুই চোখ কোথায় রাখিস হ্যাঁ (অয়নের উদ্দেশ্যে)
আইরাত;; আব্রাহাম কুল, এখানে কারো দোষ নেই। ইট”স জাস্ট এন এক্সিডেন্ট।
অয়ন;; না না দোষ আমার। আমাকেই একটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো।
রাশেদ;; সমস্যা নেই, তুমিই তো বাঁচিয়েছো। উঠে এসো জলদি।
রাশেদ অয়নের দিকে এক হাত এগিয়ে দেয় আর অয়ন উঠে আসে। ভিজে চুবুচুবু।
রোদেলা;; দিয়া, ঠিক আছো?

দিয়া;; হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছি আমি। শুধু পানি নাকে মুখে উঠেছিলো একটু ব্যাস এইযা।
ইলা;; আমারই দোষ সব। কেনো যে আমি ট্রে আনতে পাঠিয়েছিলাম ওকে।
দিয়া;; আরে না না দাদি এমনটা বলবেন না। আমি একদম ঠিক আছি।
আব্রাহাম;; দাদি কি যে বলো না। ছাড়ো তো। অয়ন তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে।
দিয়া;; অয়নের বাচ্চা, তোরে পরে মজা বুঝামু আমি। আমারে পানিতে ফালাইছোস তুই। দাড়া তরে গবর খাওয়াই দিবো আমি। (ফিসফিস করে)
আইরাত;; সমস্যা নাই গবর আমি এনে দিবো নি তোকে।
দিয়া;; এহ! তা কোথা থেকে?
আইরাত;; কেনো কোথা থেকে আবার! তোর মাথা থেকে (মুখ টিপে হেসে)
দিয়া;; চুপ কর রে।
আইরাত দিয়া কে নিজের সাথে নিয়ে চলে যায়।চেঞ্জ করবে বলে। আর ওদিকে সব আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যায়। লোকগুলো আগের মতো কাজ করতে লাগে।

দিয়া অয়ন কে একশ একটা গালি দিচ্ছে আর চেঞ্জ করছে।
দিয়া;; শালা হনুমান কোথাকার। চোখ কি পেছনে নিয়ে হাঁটে নাকি। এভাবে কেউ কাউলে পানিতে ফেলে দেয়। আল্লাহ অল্পের জন্য বেঁচেছি আজ। নয়তো আমি তো ডুবে মরতাম।
অবনি;; আচ্ছা চেতে যাচ্ছিস কেনো। দোষ তো নেই ভাইয়ার। আর ফেলেছেও সে তুলেছেও সে নিজেই।
আইরাত;; আরে ওকে ফাইন মানলাম অয়ন ভাই তোকে পানিতে ফেলেছে কিন্তু পরে পানি থেকে তুলেছেও তো সেই তাই না। শেষ হলোই তো, টিট ফর টেট।
দিয়া;; হয়েছে তোদের আর গুণগান গেতে হবে না ওর নামে।
এই কথা বলতেই দরজাতে কড়া নারে। দিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেখে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই কপাল কুচকে ফেলে সে।

দিয়া;; কি চাই?
অয়ন;; তোমাকে।
দিয়া;; কিহ?
অয়ন;; না মানে তোমাকে দেখতে আসলাম। ঠিক আছো?
এই বলার সাথে সাথেই দিয়া দেয় এক ‘হাচ্ছুউউউউউউ ?’। অয়ন মুখ টা কুচকে ফেলে।
দিয়া;; হ্যাঁ এইযে দেখুন। অনেক ঠিক আছি তো আমি।
এইসব দেখে ওদিকে আইরাত আর অবনি হাসতে হাসতে শেষ। দিয়া রেগে ধিরিম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। অয়ন ক্ষীণ এক দম ছেড়ে এসে পরে। আবার আগের মতো সব কাজ তোড়জোড় ভাবে করতে লাগে সবাই। এখন বিকেলের সময়। আর শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা তারপরেই অপেক্ষা করছে আইরাতের জন্য এক বড়ো সারপ্রাইজ। যা আব্রাহাম তাকে দিবে।

সময় গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে আসে। বাড়ি সম্পূর্ণ সাজানো শেষ। সবাই সব কাজ করে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। এত্তো বড়ো একটা বাড়ি সাজানো তাও আবার বিয়ের সাজ চারটে খানি কথা নয়। দিয়া আর অবনি আইরাত কে নিয়ে এক রুমে যে ঢুকেছে আর বের হবার নাম নেই। আইরাত বের হতে চাইলেও বের হতে দেয় না। কারণ আব্রাহাম মানা করেছে। রুমের দুজনের মাঝে মুখটা লটকিয়ে দিয়ে বসে আছে আইরাত। আর তার দুপাশে বসে মনের সুখে ফোন ঘাটাঘাটি করে যাচ্ছে দিয়া-অবনি।

আইরাত;; এই দেখ তোরা বাইরে চললে চল। নয়তো আমায় যেতে দে।
এই বলেই আইরাত বিছানার ওপর থেকে নেমে আসতে নিলে অবনি আর দিয়া তাকে থামিয়ে দেয়।
দিয়া;; আরে আরে করিস কি? কোথায় যাস?
অবনি;; এখন বাইরে যাবি না বোস চুপচাপ এখানে।
আইরাত;; সেই কখন থেকে এখানেই বসে আছি বাইরে যাবো না! আর বাইরে কে কি করছে। এই হাত ছাড় বাইরে যাবো।
অবনি;; আরে বোস তো চুপ করে।
দিয়া আর অবনি তাকে হাত ধরেই থামিয়ে দেয়। আর ওদিকে বাড়ির পেছন দিক টায় অর্থাৎ যেখানে বাগানের দিকে ফুল বেশি আরকি সেখানে সবকিছু ঠিকঠাক করে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; সব রেডি তো?
অয়ন;; একদম।
কৌশল;; ওদের ডাক দিবো?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

রোদেলা কে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রোদেলা গিয়ে শুধু দিয়া আর অবনি কে রুম থেকে নিয়ে এসে পরে। আইরাত কে রুমেই বসে থাকতে বলে তারা তিনজন উধাও হয়ে যায়। আইরাত বসে বসে বোর হচ্ছিলো তখনই ধুপ করে পুরো ঘরের আলো নিভে যায়। অন্ধকার ঘুটঘুটে। আইরাত তো আশেপাশে শুধু তাকাতাকি করছে। আস্তে করে বিছানা থেকে উঠে নিজের ফোন খুঁজতে লাগে। ফোন তো পাচ্ছে না তাই কয়েকবার দিয়া আর অবনির নাম ধরে ডাকও দেয় কিন্তু কোন সাড়া সব্দ নেই তাতে। অন্ধকার রুমে শুধু বাইরের সাদা পর্দা গুলো ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আবছা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ কয়েক সেকেন্ড পরপরই ঢিলের এক শব্দ আসে। কাচের মাঝে পাথর জাতীয় কিছু ছুড়ে মারলে যেমন শব্দ হয় ঠিক তেমন শব্দ। আইরাত এতে চমকে গিয়ে দ্রুত পেছন ফিরে তাকায়। পর্দা গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে কয়েক কদম এগোলে দেখতে পায় যে সত্যিই করিডরের কাচ ভেঙে ভেতরে একটা পাথর এসেছে। তা নিচু হয়ে হাতে তুলে নেয়। তারপর কপাল কুচকে সামনে যেতে লাগে। করিডরের দরজা খুলে সেখানে চলে যায়। সামনে থাকা রেলিং এ হাত রাখতেই আইরাতের সামনে ঠিক নিচ থেকে একটা লাল কালারের বেলুন উড়ে আসে। যার সুতা নিচেই কোথাও জুড়ে আছে। নিজের সামনে হঠাৎ এমন করে বেলুন আসতে দেখে আইরাত তা হাত দিয়ে ধরে ফেলে। বেলুনের ওপরে কিছু একটা লিখা।

“বাড়ির পেছনের করিডরে এসো জলদি”
আইরাত বুঝে যে এটা আব্রাহামেরই কান্ড। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউই নেই। নিচে তাকিয়েও দেখে তবে চোখে তেমন কিছুই বাধে না। আইরাতও হাত থেকে বেলুন টা ছেড়ে দেয়। এতে বেলুন টা উড়ে দূরে চলে যায়। আইরাত আশেপাশে তাকিয়ে যতটুকু বুঝলো যে পুরো বাড়িতে আলোর রেশটুকু নেই। তাই সে হাতিয়ে হাতিয়ে আগে নিজের ফোন টা নিয়ে নিলো তারপর ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে নিলো। ফোনের আলোতে সামনে হেঁটে হেঁটে যেতে লাগে। হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির হলরুমে পৌঁছে যায়। একটা মানুষও নেই। সব গেলো কই? আইরাত বাড়ির পেছনে চলে যায়। বাড়ির পেছনেও একটা বড়ো সড়ো সিড়ি আছে। যা দিয়ে ওপরে করিডরে যাওয়া যায়।

ওপরে যেতে ধরবে কিন্তু ফোনের আলো সিড়িতে পরতেই আইরাত আরো একটু অবাক হয়। পুরো সিড়িতে লাল গোলাপের পাপড়ি বিছিয়ে রেখে দেওয়া। আর সাইডে একটা তীর চিহ্নের মতো করে ওপরের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত করে রাখা। আইরাতও সেই অনুযায়ী-ই চলে যায়। ওপরে এসে করিডরে নজর যায়। এখানে পুরো ফাকা। শুধু দুপাশে বড়ো ফুলের বেশকিছু টব রাখা। তবে এইখান কার করিডরে ওপরে ছাউনি নেই। ওপরে রয়েছে খোলা আকাশ। আইরাতের মাথায় কিছুই ঢুকে না। হচ্ছে কি এগুলো! একে তো পুরো বাড়িতে কারেন্ট নেই যদিও মোটেও যাওয়ার কথা না। তার ওপর কেউই নেই। সবাই গিয়েছে কোথায় তাও জানা নেই। এখন সে একা। এই অন্ধকারে আইরাতের একা ভয়ই লাগতে লাগলো। এগুলোই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো তখনই নিজের জামাতে কোন কিছুর টান অনুভব করে।

আইরাত ভরকে গিয়ে দ্রুত নিচের দিকে তাকায়। দেখে টাফি এসে আইরাতের জামার শেষাংশ ধরে টানছে। সেও নিচে ঝুকে পরে। খেয়াল করে দেখে যে টাফির মুখে একটা সাদা চিঠির মতো। আইরাত টাফির গায়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে মুখ থেকে চিঠি টা নিয়ে নেয়। চিঠি টা আইরাতের হাতে যাওয়ার সাথে সাথেই টাফি সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। আইরাত তাকে আটকাতে গিয়েও থেমে যায়। করিডরে হুট করে আলো জ্বলে ওঠে। পুরো টা জুড়ে আলোয় মাখামাখি হয়ে যায়। এবার আইরাতের নজর কাড়ে করিডরের সৌন্দর্য। সাদা আর নেভি ব্লু কালারের চিকচিক মরিচ বাতি দিয়ে পুরো টা সাজানো যা দূর থেকেও যে কারো নজর কাড়বে। আর্টিফিশিয়াল ভাবে সাজানো হয়েছে তবে একেবারেই মনের মতো দেখতে। এটা দেখতেই আইরাতের ঠোঁটের কোণে হাসির রেশ ফুটে ওঠে। সে চিঠি টা মেলে পড়তে লাগে। সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে টানা টানা হাতের লেখায় লিখা। লিখাটা ছিলো এরকম যে…..

“প্রথমত আমাকে এই গোটা পৃথিবীর সবথেকে ভাগ্যবান ব্যাক্তি বলেই আমার মনে হয়। কারণ আমার কাছে আমার সবথেকে মূল্যবান জিনিস টাই আছে। সেটা তুমি নিজেজ। আমার কালো জীবন টাকে, আমার বিষাক্তময় জীবন টাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছো তুমি। শুধুমাত্র একটা রাত, একটা রাত হুট করেই তোমার সাথে আমার দেখা হয়ে যাওয়া। আমার বুকেই,, আমার বাহুতেই তোমার লুটিয়ে পরা। তোমার সেই মায়াময় মুখটা দেখা। ব্যাস আমি শেষ। তোমাতে দেখেছিলাম আমি আমার সর্বনাশ। আমি তো ভেবেছিলাম যে আমার নামে যে ভুয়া খবর রটিয়েছে সে যেই হোক না কেনো, যাই হোক না কেনো! তাকে একদম জানেই মেরে ফেলবো আমি।

কিন্তু কে জানতো যে তোমাকে খুন করতে গিয়ে আমি নিজেই উল্টো খুন হয়ে আসবো। আমি ভালোবেসেছিলাম প্রথম দেখাতেই তোমাকে। এখনো বাসি, আজীবনই বাসবো, মরার পরেও। আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ মেয়ে তুমি আইরাত। না তোমার আগে কেউ এসেছিলো আর না-ই তোমার পরে কেউ আসবে। আমি প্রমাণ করে দেবো যে সবাই ছেড়ে যায় না। আগলে রাখে। আমি রেখেছি, রাখবো। আমি ভালোবাসি তোমায় আইরাত বেবিগার্ল। সবথেকে বেশি, সবার থেকে বেশি। আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না প্লিজ। জীবন্ত লাশ হয়ে যাবো আমি। কারণ আমার জান তুমি, নিজের জান নিজে থেকে দূরে চলে গেলে কি নিয়ে, কি করে বাঁঁচবো আমি! আমি তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি আইরাত। অনেক বেশি। আমার পুরো অস্তিত্ব তুমি। তুমিহীনা আমি কিচ্ছু না, কিছুই না। আমি তোমায় ভালোবাসি জানপাখি”
চিঠি টা পড়তে পড়তেই কখন যে আইরাতের চোখ বেয়ে এক ফোটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পরেছে তা তার খেয়াল নেই। বাতাসে কপালের পাশে থাকা চুলগুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। চিঠি টা পড়া শেষ হলে নিজের আশে পাশে দেখতে লাগে। হঠাৎ নিজের ফোনে টুং করে একটা শব্দ হয়। একটা লিখা।

“সামনে এসো তারপর নিচের দিকে তাকাও”
ব্যাস এইটুকুই লিখা। আইরাত সেই মতোই সামনে এগিয়ে যায়। করিডরের রেলিং এ হাত রেখে দেয়। তৎক্ষনাৎ পুরো বাড়ির প্রত্যেক টা কোণা আলোয় আলোয় ভরে যায়। যেনো ঝকঝক করছে। হুট করে একটা তীব্র সিটির শব্দ আসে। আইরাত ফট করে করিডর থেকে নিচে বাগানের দিকে তাকায়।
তাকাতেই চোখে-মুখে হাসির ঝলক ফুটে ওঠে আইরাতের। কেননা নিচে গাঢ় লাল-সাদা রঙের ফুলের পাপড়ি দিয়ে বিশাল বড়ো আকারে লিখা

“Will you marry me Babygirl??” আর তার পাশেই আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। তার নজরও আইরাতের দিকেই স্থীর। আইরাত খুশিতে দুহাত মুখের ওপর রেখে দেয়। আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়েই খানিক মাথা দুলায়। যেনো সে জিজ্ঞেস করছে আইরাত কে। উত্তর চাইছে তার কাছ থেকে। আইরাত আর এক মূহুর্তও সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ছুটে চলে আসে। কিছুক্ষন পর নিচে এসে পরে। এসেই দেখে আব্রাহাম তার দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত আরেক নজর নিচে ফুল দিয়ে লিখা গুলোর দিকে তাকায়। খুশি আর সইছে না যেনো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তার দুহাত মেলে দিলে আইরাত এক নিমিষেই ছুটে এসে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। তার বুকে আচড়ে পরে।

আব্রাহামও তাকে জড়িয়ে ধরে। সাথে সাথেই চারিপাশ থেকে আতশবাজির তীব্র শব্দ আসে। সেই দূর আকাশে আতশবাজি গিয়ে ফেটে পরছে আর তার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পরছে। আলোকিত করছে সবটা। হাজারো বেলুন আর ফানুস উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আর এদের মাঝে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহাম। আইরাত তার মাথা টা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম তার ভ্রু দুটো খানিক নাচায় যেনো আরেক দফা জিজ্ঞেস করছে আইরাত কে। আইরাত তার চোখে অশ্রু মুখে হাসি নিয়েই মাথা জোরে ওপর-নিচ করে যার অর্থ হ্যাঁ। তারপরেই সবদিক থেকে ইলা, অনামিকা, রাশেদ, রোদেলা, দিয়া, অয়ন, অবনি আর কৌশল বের হয়ে আসে। আইরাত তাদের দেখে নিজের চোখে পানি মুছে ফেলে।

আইরাত;; কোথায় ছিলে কোথায় তোমরা? আমি সেই কখন থেকে খুঁজে মরছি তোমাদের সবাই কে৷
দিয়া;; খুঁজে লাভ নেই এগুলো সবই প্ল্যান ছিলো৷
আইরাত;; সত্যি!
অবনি;; একদম৷
ইলা;; আর কাল তোদের বিয়ে।
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম হালকা ভাবে হ্যাঁ বলে। আইরাত বুঝলো যে সে তখন তো আব্রাহাম কে রেগেই বলেছিলো যে তাদের বিয়ে ভালো কোন অবস্থায় হয়নি। তাই আব্রাহাম এগুলো করেছে।
বাইরে বেশ খানিক সময় কাটিয়ে সবাই ভেতরে এসে পরে। শুরু হলো বিয়ের তোড়জোড়।

পরেরদিন সকালে দিয়া আর অবনি আইরাত কে ঘুম থেকে টেনে তুলে। আইরাতের এখনো ঘুমই চোখ থেকে সরে নি। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। হাই তুলছে বারবার। আইরাত আবার একটু শুতে গেলে অবনি তুলে দেয়। তারপর ঠেলে ওয়াসরুমে পাঠিয়ে দেয়।
হলরুমে তো যাওয়াই যাচ্ছে না। সবদিকে মানুষের আনাগোনা। সব্বাই কে ইনভাইট করা হয়েছে। অবশেষে আইরাত ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে বের হয়ে আসে। রুমে এসেই দেখে কতোগুলো মেয়ে এসে বসে আছে। অবশ্যই সাজাবে বলে। এদের দেখে আইরাতের আরো ঝামেলা লাগছে। যাই হোক বসে পরে সাজতে।

অন্যদিকে আব্রাহাম ঘুমের মাঝেই সকালে আইরাত কে রেখে এসে পরেছে। আইরাতের রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করে রেখে এসেছে। কখন কোথায় কি হচ্ছে তা সবই টের পাচ্ছে আব্রাহাম। ফোনে এইসবের ফুটেজ দেখছে। আইরাতের এক একটা কান্ড দেখছে আর হাসছে। তখন রুমে অয়ন আসে।
অয়ন;; কি গো জামাই!
আব্রাহাম;; হুমম।
অয়ন;; আরে ভাই বিয়ে তোর। কি এখানে ফোন নিয়ে পরে আছিস বল তো?
আব্রাহাম;; নিজের বউ কেই দেখছি।
অয়ন;; হ্যাঁ হ্যাঁ দেখো৷ নিজের তো বউ আছে আরামেই থাকছো। আমার মতো অসহায়ের কি হবে!
আব্রাহাম;; কেনো বিয়ে করবি তুই? মেয়ে দেখবো?
অয়ন;; মেয়ে তো দেখাই আছে।
আব্রাহাম;; দিয়া!
অয়ন;; কীভাবে বুঝলি?
আব্রাহাম;; আমাকে কি তোর অন্ধ বলে মনে হয় যে আমি কিছু দেখি না, টের পাই না।
অয়ন;; ?
আব্রাহাম;; দেখ যত সময় নষ্ট করবি তত তোরই কষ্ট বেশি হবে। তাই সময় দেখে শুনে দিয়াকে তোর মনের কথা সব বলে দে।

অয়ন;; হুমম। কিন্তু ও আর আমি একসাথে থাকলেই তো শুধু ঝগড়াই বাধে?
আব্রাহাম;; কারণ তুই সামাল দিয়ে পারিস না। আরে মাথামোটা শোন “বউ রাগারাগি করলে জামাই নেশা করে, সিগারেট খায়। অথচ বোকা জামাই এটা জানেই না, যে ২০ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ ফুল বাসায় নিয়ে গেলেই ঝামেলা শেষ”।
অয়ন;; আসলেই তো।
আব্রাহাম;; কৌশল যে অবনির ওপর লাট্টু আমি তাও বুঝি (ফোনের দিকে নজর রেখেই)
অয়ন;; ওই শালা তো ছাগল।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আর আপনি রামছাগল। দুটোই সমান।
অয়ন;; আচ্ছা এবার নে জলদি রেডি হয়ে নে।
আব্রাহাম;; হুমম।

রাশেদ আসে রুমে। আব্রাহামের কি লাগবে কি না লাগবে তার দিকে নজর দিতে লাগে। সাদা আর এশ কালারের কম্বিনেশনে একটা শেরওয়ানি পরে। হাতে ঘড়ি পরে নেয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শেরওয়ানির বাটন লাগাচ্ছিলো তখনই রাশেদ পেছন থেকে বলে ওঠে…
রাশেদ;; স্যার বিয়েতে মেয়ে রা এসে তো আপনার দিকেই তাকিয়ে থাকবে।
আব্রাহাম;; লাভ নেই। আমি অলরেডি অন্য একজনের। বুক করা আছি।
কৌশল;; কবে আমরা বুক হবো তা কে জানে!
আব্রাহাম;; এর জন্যই জলদি মুখটা খুলে ফেল। মানে মুখ ফুটে বলে ফেল। আর রাশেদ তুমিও।
রাশেদ;; জ জ জ্বি স্যার!

আব্রাহাম;; হয়েছে আর সাধু সেজে কাজ নেই। অফিসে রোদেলা যে যে কেবিনে থাকে তোমারও সেই কেবিনেই থাকা। রোদেলার আশেপাশে অন্য কোন ক্লাইন্টের যাওয়া সহ্য করতে না পারা। রোদেলা কিছু না বুঝলে তোমার দ্রুত তার কাছে যাওয়া আরো কতো কি।
আব্রাহাম রাশেদের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; আমি কি কিছু বুঝি না নাকি!
শেরওয়ানির কলার ঠিক করতে করতে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; সময় থাকতে তিনজনই নিজেদের ভালো বুঝে নাও। নয়তো পরে আফসোস করে কোন লাভই নেই।
বডিতে পারফিউম লাগিয়ে নেয়। গায়ের সাথে খাপ খেয়েছে শেরওয়ানি টা আব্রাহামের। মুখে চাপদাড়ি চুলগুলো কপালে পরে আছে। দারুন মানিয়েছে।

আর ওদিকে আইরাত পুরো সাদা রঙের একটা ভারি লেহেঙ্গা পরেছে। চুলগুলো খোপা করা তার ওপর একটা বড়ো ওরনা রয়েছে তা ছুয়েছে একেবারে পা অব্দি। সাথে সাদা স্টোনের অর্নামেন্ট”স। মুখটা ঠিক একটা পুতুলের মতো লাগছে। আয়নার দিকে তাকায়।
দিয়া;; আজ বুঝলাম আব্রাহাম জিজু তোকে দেখে কেনো পাগল হয়েছে।
অবনি;; হায় ম্যা মারজাবা।
রোদেলা;; আরে আরে কানের পিছে কালো টিকা লাগাও। নইলে নজর লাগবে তো।
দিয়া;; যা লাগার তা তো লেগেই গিয়েছে। মানে আব্রাহাম জিজুর নজর আর কি। এখন অন্য কেউ নজর দিলে তা শুধু উপড়ে ফেলবে জিজু।
অনামিকা;; এই হলো তোদের?

অনামিকা আইরাতের রুমে আসে। এসে দেখে আইরাত সহ দিয়া অবনি রোদেলা সবাই রেডি। অনামিকা গিয়ে আইরাতের মাথায় একটা চুমু একে দেয়। চারজন কেই বেশ লাগছে দেখতে। ইলা হাতে একটা পায়েসের বাটি নিয়ে আগে আব্রাহাম কে এক চামচ পায়েস খাইয়ে দিয়ে আসে তারপর আবার আইরাত কে এক চামচ খাইয়ে দিয়ে আসে। মেয়েদের রুম থেকে আইরাত বাদে সব মেয়েরা বের হয়ে পরে। আর ছেলেদের রুম থেকে আব্রাহাম বাদে সব ছেলে। মেয়েরা ছেলেদের কে দেখেই এক একজন ভেংচি কেটে দেয়।

অয়ন;; আচ্ছা ওদের মুখটা বেঁকে যায় না ক্যান ভাই?
কৌশল;; মেয়ে মানুষের মুখ এতো তাড়াতাড়ি বেঁকে না।
রাশেদ;; হায় রোদেলা কে কি কিউট-ই না লাগছে।
রাশেদের কথা শুনে দু কোমড়ে দুহাত রেখে অয়ন-কৌশল এগিয়ে যায় তার দিকে। তা রাশেদ খেয়ালই করে নি, সে মেকি হেসে রোদেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন রাশেদের কানের কাছে এনে বলে…
অয়ন;; তাড়াতাড়ি ওকে প্রপোজ না করলে ফসকে যাবে, ফসকে।

রাশেদের ধ্যান ভেঙে যায়। তারপর সবাই নিচে নেমে যায়। বিয়েতে সাবিলা আর নিলয় কাউকেই ডাকা হয় নি। প্রথমত নিলয় অনেক অসুস্থ তার মা কে তার পাশেই থেকে যেতে হবে এখন আর দ্বিতীয়ত অনামিকা কড়া ভাবে নিষেধ করেছে। কি দরকার উটকো সব ঝামেলা কে আমন্ত্রণ করে ডেকে আনার। তাই কেউ আর বলে নি তাদের। এভাবেই সময় টুকু যেতে লাগে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যায়। বাড়ি ভর্তি মানুষ। সবাই আব্রাহামের চেনা জানা। সিকিউরিটি কড়া চারিদিকে। কাজিও এসে পরেছে। আব্রাহাম এসে সবার মাঝে বসে পরে। সবার সাথেই হেসে হেসে কথা বলছে সে। তার কিছুক্ষণ পর অবনি আর রোদেলা গিয়ে আইরাত কে ওপর থেকে নিচে নামিয়ে আনে। মূহুর্ত টা এখন স্থীর। বেশ চুপচাপ। আব্রাহাম হাসিমাখা মুখেই নিজের পেছনে তাকায়। দেখে ওপর থেকে আইরাত কে আনা হচ্ছে। আব্রাহাম আইরাত কে দেখে যেনো পলক ফেলতেও ভুলে গেছে। শীতল এক নিঃশ্বাস ছাড়ে। আইরাতও এক নজর আব্রাহামের দিকে তাকায়। নিচে নেমে এলে তাদের পাশাপাশি বসিয়ে দেওয়া হয় কাজির সামনে। আব্রাহামের পাশে দাঁড়ায় অনামিকা আর আইরাতের পাশে দাঁড়ায় ইলা। কাজির বলাতে প্রথমে আব্রাহাম তারপর আইরাত পর পর ‘কবুল’ বলে দেয়। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে দেয়। আর দিয়া-অবনি-রোদেলা তো

‘কাবুল হ্যা’ বলছে আর লাফাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকালে সে আইরাত কে এক চোখ মেরে দেয়। বেশ হৈ-হুল্লোড়ের মাধ্যমেই আব্রাহাম-আইরাতের বিয়ে হয়ে যায়। সারাদিন অনেক বেশিই ধকল গিয়েছে সবার ওপর দিয়ে। তাই আইরাত কে আর বসিয়ে না রেখে তাকে তার রুমে রেখে আসা হয়। আইরাত তো রুমে গিয়েই দেখে মোমবাতি জ্বালানো চারিপাশে। তার মাঝে গোলাপ-বেবি আর বেলুন দিয়ে সাজানো রুম। আইরাত মুখটা কুচকে দুহাত কোমড়ে রেখে দিয়ে দাঁড়ায়।
আইরাত;; রাত বাজছে বারোটা। না জানি এই ছেলে কখন না কখন আসবে। আমি সোজা গিয়ে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পরবো। ব্যাটা এলে আয় নইলে বসে থাক।
এই বলেই আইরাত হাত দিয়ে লেহেঙ্গা ওপরে তুলে সোজা বিছানার ওপর উঠে পরে। তারপর ধিরিম করে বসে পরে। তারপর চিতপটাং।

আব্রাহাম তার শেরওয়ানির হাতা গোটাতে গোটাতে নিজের রুমের দিকে যেতে ধরছিলো তখনই মেয়েরা আর ছেলেরা এসে আব্রাহাম কে আটকিয়ে দেয়।
অবনি;; আ আ জিজু, এতো তাড়া কিসের হ্যাঁ!
রোদেলা;; স্যার আগে আমাদের হিসেব টা মিটমাট করুন।
দিয়া;; আমিও আছি কিন্তু।
আব্রাহাম;; জানতাম আমি এমন কিছু একটাই হবে। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি।
আব্রাহাম তার শেরওয়ানি থেকে টাকার দুটো বান্ডেল ধরিয়ে দেয় দিয়ার হাতে।
আব্রাহাম;; এখানে দুটো বান্ডেল আছে। প্রতি বান্ডেলে ত্রিশ টা করে নোট আছে। আর সব এক হাজার টাকার নোট। এখন আমার পথ টা ছাড়ো।
তখনই পেছন থেকে ছেলেরা আসে।
কৌশল;; আমাদের কি হবে?
আব্রাহাম;; তোরা সব মুড়ি ভাইজ্জা বালু খা Ft. আইরাত।

সবাই হেসে দেয়। আর আব্রাহাম সব কটা কে তাড়িয়ে দিয়ে রুমের ভেতরে এসে পরে। এসেই দেখে আইরাত শুয়ে আছে। আব্রাহাম শেরওয়ানির বাটন ওপর থেকে খুলতে খুলতে আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে। বিছানাতে হেলান দিয়ে আইরাতের গালে আলতো করে ছুইয়ে দেয়। আইরাত চোখ মেলে তাকায়।
আব্রাহাম;; ওগো বউ ঘুম হলো?
আইরাত;; ঘুমালামই তো না।
আব্রাহাম;; কখনো শুনেছিলে যে বাসর রাতে কেউ ঘুমায়।
আইরাত;; আমি ঘুমাবো।
আব্রাহাম;; আরেক বার ঘুমানোর কথা বললে চোখে লবণ লাগিয়ে দিবো।
আইরাত উঠে বসে পরে।
আইরাত;; তো কি করবো?

আব্রাহাম আইরাতের কোমড়ে ধরে নিজের দিকে টান দেয়। এতে আইরাত আব্রাহামের ওপরে গিয়ে পরে। কিছু বলতে গেলেও আইরাতের মুখে নিজের আঙুল ঠেকিয়ে দেয়। আব্রাহাম আইরাতের পিঠে সুরসুরি দিলে আইরাত সোজা আব্রাহামের ঠোঁটের ওপর পরে যায়। আইরাত চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে তাকায়। সে উঠে আসতে চাইলে আব্রাহাম য়
উঠে যেতে দেয় না। আইরাতের পিঠে আর কোমড়ে নিজের হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে। কিছুক্ষন পর আইরাতের ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দিয়ে তার গলায় নিজের মুখ ডোবায় গভীরভাবে। লেহেঙ্গার পেছনের ফিতা এক টানে খুলে ফেলে। আইরাত কিছু বলতে গেলে আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে কানের লতিতে কামড় বসিয়ে দেয়।

এক টানে আইরাত কে উল্টিয়ে দিয়ে নিজের নিচে ফেলে। এক হাত দিয়ে শক্ত করে তার কোমড় চেপে ধরে আবার ঠোঁট জোড়া আকড়ে ধরে। আচমকাই বাইরে হুট করেই বিদুৎ চমক দিয়ে ওঠে। বড়ো করিডর খোলা ছিলো। তার মাঝ দিয়েই তীব্র ঠান্ডা বাতাস আসছে। যাতে পর্দা গুলো বেশ উড়ছে। আইরাত চমকে গিয়ে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম নিজের মাথা আইরাতের মাথার সাথে ঠেকিয়ে দিয়ে ছিলো। তখনই আরেক দফা বিদুৎ চমক দেয় আর এবার বিদুৎ চমক দেওয়ার সাথে সাথে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিও নেমে এলো। বাতাসে রুমের সব মোমবাতি গুলো এক নিমিষেই নিভে যায়। আব্রাহাম আইরাতের হাতগুলো শক্তভাবে চেপে ধরে। কেমন এক মন কাড়া অবস্থার আবির্ভাব ঘটে সবদিকে। আর তাতে আব্রাহাম-আইরাতের ভালোবাসা পূর্নতা পায় ❤️।

ভোর সকালে আইরাত উঠে পরে। ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে চলে যায়। গিয়েই দেখে আব্রাহাম উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার দিকে কিছুটা ঝুকে বসে। ঘুমিয়ে আছে সে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। তা দেখে আইরাত মুচকি হাসে। মাথায় অবশ্য শয়তানি বুদ্ধি এসে টোকা দেয় তার। আইরাতের চুলে টাওয়াল প্যাচানো ছিলো সে তা খুলে দেয়। আব্রাহামের পাশে বসে ভেজা চুলের শেষাংশ দিয়ে তার মুখে সুরসুরি দিতে লাগে। ঘুমের মাঝেই আব্রাহাম মুখ কুচকে ওপর পাশে ঘুরে যায়। আইরাত উঠে গিয়ে দ্রুত আরেক পাশে চলে যায়। সেখানে গিয়েও আইরাত সেই একই কাজ করে। এবার আব্রাহাম ঘুমের মাঝেই আধো আধো গলায় বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল! এমন করো না প্লিজ। ঘুমোতে দাও।
আইরাত;; আপনার বলাতেই আমি শুনে নিলাম। এতো ভালো মেয়ে আমি না।
এই বলেই আইরাত আবার চুলের পানির ছিটা দেওয়া শুরু করে। কিন্তু বালিশে কয়েক বার মুখ ঘষে আব্রাহাম আবার ঘুমিয়ে পরে। এবার আইরাত আব্রাহামের পিঠের ওপর নিজের কুনি হালকা ভাবে রেখে দিয়ে তার দিকে ঝুকে পরে। হাতের আঙুল দিয়ে আব্রাহামের মুখে, চাপদাড়িতে বুলিয়ে দিতে লাগে। হঠাৎ করেই আব্রাহাম এবার তার চোখ মেলে তাকায়। আইরাত সেখান থেকে সরে এসে পরতে ধরলে আব্রাহাম তার হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের ওপরে ফেলে দুহাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। বেশ মোটা কন্ঠেই বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; কি হচ্ছে কি এগুলো?
আইরাত;; কিছু না। ছাড়ুন (হেসে হেসে)
আব্রাহাম;; আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে এখন বলো ছাড়ুন। আগে বলো ঘুম ভেঙে দিলে কেনো আমার?
আইরাত;; না আপনার এতো আয়েশের ঘুমটা আমার আর সহ্য হচ্ছিলো না তো তাই ভেঙে দিলাম।
আব্রাহাম;; তাই না!
এই বলেই আব্রাহাম আইরাতকে নিচে ফেলে তার গলায় ঘাড়ে ইচ্ছে মতো সুরসুরি কাটতে লাগে আর আইরাত খিলখিল করে হেসে দেয়। তবে আইরাতের গোলাপি টসটসে ঠোঁটজোড়া দেখে সে আর লোভ সামলাতে পারে না। এক নিমিষেই তা আকড়ে ধরে। কিছুক্ষন পর ছেড়ে দেয়। আর তখনই দরজাতে ইলার কড়া নাড়ার শব্দ আসে।

ইলা;; আইরাত, আইরাত।
আইরাত;; হ্যাঁ দাদি আসি।
ইলা;; আসতে হবে না রে। বলছিলাম যে তোদের ঘুম ভেঙে গেলে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আয়।
আইরাত;; আচ্ছা।
ইলা চলে যায়। আর আইরাত আব্রাহামের কাছ থেকে উঠে আসার চেষ্টা করে।
আইরাত;; আব্রাহাম উঠুন নয়টা বাজলো বলে। অফিসে যাবেন না আপনি?
আব্রাহাম;; কি বললে? অফিস? মাথা খারাপ নাকি! বিয়ের পরের দিন কেউ অফিসে যায়!
আইরাত;; কেউ যায় না তবে আপনি যাবেন। এবার উঠুন।
আব্রাহাম;; যাবো না আমি।

আইরাত টেনে আব্রাহাম কে উঠিয়ে দেয়। ক্লান্ত দৃষ্টিতে সে আইরাতের দিকে তাকালে আইরাত আব্রাহামের পিঠে ঠেলতে ঠেলতে ওয়াসরুমের দিকে পাঠিয়ে দেয়। ফ্রেশ হতে চলে গেলে এদিকে আইরাত হলরুমে চলে যায়। হলরুমে গিয়ে দেখে সবাই উঠে পরেছে। অনামিকা বসে আছে হলরুমে। আর ইলার সাথে দিয়া-অবনি হালকা ফুলকা কাজ করছে। রোদেলা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। রাশেদ আর অয়ন বাইরে থেকে আসলো মনে হয়। আর কৌশল ফোনে কথা বলছে। আইরাত দ্রুত গিয়ে রাশেদের হাত থেকে জোর করেই সব ব্যাগ নিয়ে নেয়। তারপর তা স্টাফ দের হাতে ধরিয়ে দিলে তারা নিয়ে চলে যায়।

দিয়া;; কিরে ঘুম হলো?
আইরাত;; হ্যাঁ হলো।
অবনি উড়ে এসে আইরাত কে ধরে।
অবনি;; কিরে এসেছিস তুই আমি তো ভেবেছিলাম যে আর এক মাসেও রুম থেকে বাইরে বের হবি না তোরা।
আইরাত;; কুত্তা চুপ কর।
রোদেলা;; এখন কি করবো?
অনামিকা;; না রে মা এখন আর কিছুই করতে হবে না তোকে। অনেক করেছিস।
রোদেলা;; না না সমস্যা নেই।
আইরাত;; কিসের সমস্যা নেই। তুমি এদিকে এসো।
অয়ন;; দাদি ক্ষিদে পেয়েছে তো।
ইলা;; এইতো হলো বলে।
আব্রাহাম;; আইরাত!
ওপর থেকে আব্রাহাম আইরাত কে ডাক দেয়।
দিয়া;; ওইতো ডাক পরে গেছে। যাও যাও।
আইরাত;; উশঠা এডা খাবি হালি। (দিয়ার পিঠে ঠাস করে মেরে দিয়ে)
আইরাত সিড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়। গিয়ে দেখে আব্রাহাম একটা সাদা ধবধবে শার্ট পরছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। আইরাত এগিয়ে যায়।
আব্রাহাম;; ঠিক আছে? (নিজের দিকে দেখিয়ে)
আইরাত মুচকি হেসে হালকা ভাবে মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ হ্যাঁ। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে কপালে চুমু এঁকে দেয়।

আইরাত;; নিচে চলুন সবাই ডাকছে।
আব্রাহাম আইরাত কে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আইরাতের চুলে নিজের মুখ গুজে দেয়।
আইরাত;; আব্রাহাম!!
আব্রাহাম আইরাতের ঘাড় থেকে চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ে নিজের নাক ঘষতে লাগে। এভাবে থাকতে থাকতেই আব্রাহাম আইরাতের গলার মধ্যাংশে দাঁত দিয়ে দেয় এক কামড় বসিয়ে। আইরাত হালকা ভাবে চিল্লিয়ে ওঠে এতে। সে ব্যাথা পেয়েছে বলে তাকে সামনে ঘুড়িয়ে কামড় দেওয়া অংশে হালকা ভাবে হাত বুলিয়ে দেয়।
আইরাত;; আপনি কি রাক্ষস নাকি!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তোমার বেলায়।
আইরাত;; এইটা কি ছিলো?
আব্রাহাম;; This is called “Love Bite”
আইরাত;; ঘোড়ার আন্ডা টা।
আব্রাহাম;; নিচে যাওয়া যাক।
আইরাত;; চলুন।
আব্রাহাম-আইরাত নিচে চলে যায়। সিড়ি বেয়ে নিচে নামছিলো তখনই কৌশল বলে…
কৌশল;; ওইতো এসে পরেছে কবুতরের জোড়া।

গিয়ে দেখে সবাই টেবিলে বসে পরেছে। তারাও গিয়ে বসে পরে। আব্রাহাম আইরাতের সামনে বসেছে। তার পাশে অয়ন কৌশল। আর আইরাতের পাশে দিয়া অবনি। সবাই গল্প করছিলো আর খাচ্ছিলো তবে তার মাঝেই দিয়ার চোখ গিয়ে বাধে আইরাতের গলায়।
দিয়া;; ওই ওই (গুতা দিয়ে)
আইরাত;; হুমম।
দিয়া;; তোর গলায় কি রে?
আইরাত;; কোথায় কি?
আইরাত তার হাত দিয়ে গলায় দেখতে লাগে। তবে এক জায়গায় হাত দিয়ে কিছুটা ব্যাথা অনুভব করে। তখনই আইরাতের মনে পরে যে আব্রাহাম তাকে গলায় কামড় দিয়ে লাল করে দিয়েছিলো। আইরাত চোখ পাকিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। কিন্তু আব্রাহাম উল্টো তাকে চোখ মেরে চামচ দিয়ে আরামছে খেতে লাগে। আইরাত দ্রুত ওরনা দিয়ে গলা ঢাকার চেষ্টা করে। অবনি আইরাত কে হালকা ভাবে ধাক্কা দেয়।

আইরাত;; না মানে ম ম মশার, মশার কামড় আর কি। মশা কামড় দিয়েছে।
অবনি;; এই মনে হয় অনেক বড়ো মাপের একটা মশা।
আইরাতের তো কাশি উঠে পরে। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতের দিকে দ্রুত পানি এগিয়ে দেয়। সে পানি খেয়ে নেয়। রাগ লাগছে বেশ আব্রাহামের ওপর কিন্তু সে এখন কিছুই করতে পারছে না।
আইরাত;; নির্লজ্জ, বেশরম পোলা (মনে মনে)

সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো। তবে রোদেলা দিয়া আর অবনির রুমে। হলরুমে সবার মাঝে রোদেলা কে না পেয়ে রাশেদ যেনো আর স্থীর হয়ে বসে থাকতে পারছে না। অয়নের দিকে তাকায় দেখে সে দিয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কৌশলের দিকে তাকায় দেখে কৌশল অবনির দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম তো সোজা আইরাতের হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। এতোকিছুর মাঝে রাশেদ কে কেমন এতিম এতিম লাগছে। তবে আব্রাহামের ডাকে রাশেদের ধ্যান ভেঙে যায়।
আব্রাহাম;; রাশেদ!
রাশেদ;; জ্বি স্যার।
আব্রাহাম;; রোদেলা কে দেখছি না অনেকক্ষন যাবত, যাও তো ওকে ডেকে নিয়ে এসো।
রাশেদ;; আম আ আমি!
আইরাত;; থাকুক না স্টাফ কে দিয়ে ডাকিয়ে নিয়ে আ……
আব্রাহাম;; আহা, রাশেদ তুমি যাও জলদি।
রাশেদ;; জ্বি স্যার।
রাশেদ চলে যায়। আর এদিকে আব্রাহাম আইরাত কে জ্বালিয়ে মারে।
আব্রাহাম;; বুঝো না কেনো! তারা পছন্দ করে একে ওপর কে।
আইরাত;; কিহ? রাশেদ রোদেলা কে পছন্দ করে?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, কেনো জানো না?
আইরাত;; মাত্র জানলাম।

আইরাত আব্রাহামের কাধে নিজের মাথা রেখে দেয়। আর ওদিকে রাশেদ রোদেলার রুমের সামনে এসে ভেতরে যাবে কি যাবে না দ্বিধায় পরে যায়। অবশেষে সাহস জুগিয়ে ভেতরে চলেই যায়। অর্থাৎ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পরে আরকি। দেখে রোদেলা একটা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে ওয়ারড্রবের ওপর হাতিয়ে হাতিয়ে কি যেনো খুঁজছে। দরজা তে কারো আসার শব্দ পেয়ে রোদেলা না দেখেই বলা শুরু করে….
রোদেলা;; কে! দিয়া! আচ্ছা শুনো না একটু এদিকে এসো প্লিজ। ওপরে না আমার একটা ব্যাগ আছে তা অনেক পেছনে রাখা হয়তো অবনির বাচ্চা রেখে দিয়েছে। এখন কোন ভাবেই নাগালে পাচ্ছি না। আমার টুল টা শক্ত করে ধরো, এটা বেশ নড়বড়ে।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪৪+৪৫+৪৬

রাশেদ আর কিছু বলে না। টুলের ওপরে নিজের পা রেখে দেয়। এতে টুল টার ওপর আরো ভার পরে ফলে শক্ত হয়েই বসে। আর রোদেলা আরো একটু হাত লম্বা করে ব্যাগ টা নিয়ে নেয়। ব্যাগ টা হাতে নিয়ে ঘুরে সামনে তাকাতেই চমকে গিয়ে ধিরিম করে নিচে পরে যায়। হ্যাঁ রাশেদ আর ধরে নি তাকে। সে সোজা নিচে পরেই গিয়েছে।
রোদেলা;; ওমায়ায়ায়ায়ায়ায়া। ইশশশ।
রোদেলা রেগে রাশেদের দিকে তাকায়। রাশেদ এক হাত এগিয়ে দেয় রোদেলার দিকে। রোদেলা জিদের ঠ্যালায় আর তার হাতে নিজের হাত দেয় নি। নিজেই কষ্টে উঠে পরে।
রাশেদ;; ব্যাথা পেয়েছো?
রোদেলা;; নাহ, অনেক আরাম পাইলাম।
রাশেদ;; বোকার মতো কাজ করলে এমনই হবে। বাড়িতে এতো গুলো স্টাফ। কাউকে ডাক দিলেই হতো নিজে ওস্তাদি না করে।
রোদেলা;; তো আপনি যে এখানে আছেন আমাকে তো একটু ধরতে পারতেন তাই না!
রাশেদ;; না কারণ এগুলো কমন। এখন যদি তোমায় ধরতাম তাহলে বলতে যে এভাবে পারমিশন ছাড়া কাউকে ধরতে হয় না।

রোদেলা;; বলতাম না কারণ আমি পরে যেতাম।
রাশেদ;; পরে গিয়ে একটা শিক্ষা তো হলো যে আর ওমন উঁচু তে উঠবে না।
রোদেলা;; ধুর।
রাশেদ;; নিচে চলো সবাই ডাকছে।
রোদেলা;; হুম যাচ্ছি।
রোদেলা নিজের কাজ করতে লাগে। রাশেদ তো দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়েই আছে। তা দেখে রোদেলা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
রোদেলা;; কি হলো?
রাশেদ;; তুমি যাচ্ছো না কেনো!
রোদেলা;; যাবো তো।
রাশেদ;; না আমার আগে যাবে। যাও।

রোদেলা আর কিছুই না বলে মুখটা লটকিয়ে আগে আগে চলে যায়। আর রোদেলার যেতেই রাশেদ মুচকি হাসে। কেননা রাশেদ ইচ্ছে করে রোদেলার সাথে রুডলি বিহেভ করছিলো। আর রোদেলা যখন পরে যায় তখন সে ইচ্ছে করেই ধরে নি তাকে। রোদেলা সহ রাশেদ চলে যায় নিচে। তাদের কে নিচে নামতে দেখেই সবার যা বুঝার তা বুঝে যায়। তবে রোদেলা বুঝে না যে তাদের দিকে সবাই এভাবে কেনো তাকিয়ে আছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। আর আব্রাহাম সবার অগোচরেই আইরাতের গালে টুক করে একটা চুমু বসিয়ে দেয়।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৫১+৫২+৫৩+৫৪+৫৫