নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪৪+৪৫+৪৬

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪৪+৪৫+৪৬
লেখিকাঃ Tamanna Islam

ক্ষনিক আলোকে আঁখির পলকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে ?
*ওহে, ক্ষনিক আলোকে আঁখির পালকে
তোমায় যবে পাই দেখিতে ~
ওহে, হারাই-হারাই সদা হয় ভয়
হারাই-হারাই সদা হয় ভয় ••
হারাইয়া ফেলি চকিতে
আশ না মিটিতে হারাইয়া •~•
পলক না পরিতে হারাইয়া
হৃদয় না জুড়াতে
হারাইয়া ফেলি চকিতে…
~`মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেনো পাই না!
~`মাঝে মাঝে তব দেখা পাই
চিরদিন কেনো পাই না! ?
*~ওহে কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
রাখিবো আঁখিতে আঁখিতে??

ব্যাস এইটুকু বলেই নিজের পাশে গিটার টা রেখে দিয়ে আইরাতের দিকে তাকায় আব্রাহাম। আর আইরাত তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। বিকেলের গোধূলি লগ্ন এখন। আকাশে লাল-কমলার মধুর সংমিশ্রণ। যা রাঙিয়ে তুলেছে পুরো আকাশ কে, দিয়েছে এক নতুন রুপ। সেই মুক্ত আকাশে পাখিরা তাদের বড়ো পালক ওয়ালা ডানা ঝাপটে উড়ে যাচ্ছে। তাদের মিষ্টি সুরে কিচিরমিচির ডাক কানে এসে লাগছে। চারিদিকে খোলা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। যা গায়ে লেগে তরতাজা করে দিচ্ছে। ছাদে হরেক রকমের ফুলের তীব্র সুগন্ধি ছড়িয়ে সবদিক কেমন মৌ মৌ করছে। আর এইসবের মাঝে ছাদে মাঝখান বরাবর খোলা জায়গায় বসে আছে দুই প্রেম পায়রা আব্রাহাম-আইরাত। ছাদের রেলিং এর ওপর দুকাপ গরম ধোঁয়া ওঠানো লাল চা রাখা আছে। একটা লম্বা গোল জামা পরে দুহাত হাটুর ওপর রেখে বসে আছে আইরাত। তার সামনেই গিটারে এতোক্ষণ সুর তুলছিলো আব্রাহাম। আইরাতের দুপাশে চুপটি মেরে গুটিয়ে শুয়ে আছে টাফি আর সফটি। আইরাত কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আব্রাহাম খানিক হেসে বলে ওঠে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আইরাত;; কিছু না।
আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে কি দেখো?
আইরাত;; বারে, আমার জামাই আর আমি দেখবো না!
আব্রাহাম;; হুমমম।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে তার কোলে বসিয়ে দেয়। কোন কথা না বলেই সে আইরাতের ঘাড়ের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কানের নিচে নিজের নাক ঘষতে লাগে।
আইরাত;; ওই চৌধুরী!
আব্রাহাম;; হুমম
আইরাত;; চলুন না বাইরে ঘুরতে যাই!
আব্রাহাম;; আচ্ছা কোথায় যাবে বলো?
আইরাত;; আপনার যেখানে ইচ্ছে।
আব্রাহাম;; ক্লাব?
আইরাত;; একদম না। আমার একটা শান্ত সুন্দর পরিবেশ চাই।
আব্রাহাম;; ওকে তো রেডি হয়ে থেকো সন্ধ্যায়।
আইরাত;; আচ্ছা। আর আমি কিন্তু টাফি আর সফটি কেও নিয়ে যাবো নিজের সাথে করে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা।

ছাদের ওপরেই বসে থেকে বেশ সময় পার করে দেয় তারা। অতঃপর নিচে রুমে এসে পরে। আইরাত এখন ভালোই হাঁটতে পারে। শুধু মাঝে মাঝে একটু মাথা ঘোরায় এছাড়া সে একদম সুস্থ। টাফি আর সফটির মাঝে একটা বল দিয়ে রেখেছে তা নিয়েই তারা খেলছে। আর আইরাত রুমের টুকটাক কাজ করছে। আব্রাহাম গিয়েছে ফ্রেশ হতে। ওয়াসরুম থেকে পানি পরার শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ আইরাতের মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি এসে টুক করে বারি খায়। পেত্নীর মতো একটা হাসি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে ওয়াসরুমের দিকে এগিয়ে যায়। ওপরে তাকিয়ে দেখে ভেন্টিলেটর টা বেশ অনেক টাই উঁচু আইরাতের থেকে। তাই আইরাত একটা উঁচু টুলের মতো নিয়ে আসে। তারপর খুব সাবধানে তার ওপর দাঁড়িয়ে পরে। ভেন্টিলেটর দিয়ে ওয়াসরুমের ভেতরে উঁকি দেয়।

দেখে আব্রাহাম খালি গায়ে পানির নিচে দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালে এক হাত রেখে। পানি গুলো তার গা বেয়ে বেয়ে পরছে। আইরাত এক টেডি স্মাইল দেয় তাকে দেখে। টাফি আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাত টুলের ওপর দাঁড়িয়ে ভেন্টিলেটর দিকে উঁকিঝুকি দিচ্ছে তাই সে আস্তে করে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। আইরাত চট জলদি মাথা ঘুড়িয়ে মুখের কাছে তার এক আঙুল এনে ‘হুসসসসসসসসসস’ করে যেনো সে না চিল্লায়। আইরাত আবার আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম নেই শাওয়ারও বন্ধ। কপাল কুচকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তখন দেখে আব্রাহাম মাথায় একগাদা শ্যাম্পু লাগাতে লাগাতে অন্যপাশ থেকে এদিকে আসছে। সে তার মতো করেই আছে। কিন্তু এদিকে তো আইরাত ভেন্টিলেটরে ঝুলে ঝুলে তাকে দেখছে। এভাবে হঠাৎ থাকতে থাকতেই আইরাতের নাকে কেমন যেনো সুরসুরি লাগতে আরাম্ভ করে। সে আর আটকিয়ে রাখতে না পেরে দেয় এক জোরে ‘হেচ্চুউউউউউউউ ?’।

আব্রাহাম নিজের আশেপাশে দেখতে লাগে কিন্তু কেউ নেই। ভাগ্য ভালো আইরাত জলদি করে নিচে ঝুকে পরেছিলো। সে টুলের ওপর থেকে নেমে পরে। এবার তার নজর যায় ওয়াসরুমের সুইচের দিকে। সোজা সেখানে গিয়ে লাগাতার সুইচে চাপ দিয়েই যাচ্ছে তো দিয়েই যাচ্ছে। যেনো কলিং বেল পেয়েছে। আইরাত তো মজাতেই আছে। কিন্তু ওদিকে আব্রাহাম সেন্টি মার্কা মুখ বানিয়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরের লাইটগুলো বারবার অফ-অন হচ্ছে। এই আকাম গুলা যে আইরাত ছাড়া আর কেউ করছে না তা আব্রাহাম জানে। কিছুক্ষন পর সে টাওয়াল প্যাচিয়ে রুমে এসে পরে। এসেই দেখে রুম ফাকা। বিছানার ওপর টাফি আর সফটি তারা চুপ করে বসে আছে। আব্রাহাম আইরাত কে খুঁজতে লাগে। যখন পায় না খুঁজে তখন দাঁড়িয়ে পরে। কিন্তু এদিকে আইরাত তো আব্রাহামের ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে। এটা টের পেতেই আব্রাহাম কিছুটা গম্ভীর ভাবে বলে…

আব্রাহাম;; আইরাত কি হচ্ছে এগুলো?
আইরাত মাত্রই প্রস্তুতি নিচ্ছিলো যে সে আব্রাহাম কে চমকে দিবে পেছন থেকে কিন্তু তা আর হলো কোথায়! তার আগেই আব্রাহাম সব বুঝে ফেলে। আইরাতের মুখটা কেমন চুপসে আসে। তাকে ধরে সামনে এনে জিজ্ঞেস করে…
আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এগুলো? রেডি না হতে বললাম?
আইরাত;; না আমি ভাবলাম যে আপনি ড্রেস পছন্দ করে দিবেন তাই আর কি।
আব্রাহাম;; আচ্ছা দিচ্ছি।

আব্রাহাম কাবার্ডে গিয়ে নুড কালারের একটা লং হুডি ওয়ালা জেকেট আর একটা প্যান্ট বের করে দেয় আইরাত কে। কেননা এখন এখানে প্রচুর শীত পরে গেছে। শীতকাল এখনো ঠিক ভাবে এসেই সারে নি তাই এখানে হার কাপানো শীত। আর রাতের বেলা তো সোজা কথা ছোট ছোট তুষার পরে। তাই বাইরে গেলে ফুল প্যাকেট হয়ে তারপর যেতে হবে। দিনে শীত কম থাকলেও সন্ধ্যে থেকে শুরু করে সারারাত তীব্র শীত।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল পরে নাও।
আইরাত নিজে গিয়ে আব্রাহামের জন্য একটা লাইট ওলিভ কালারের জেকেট, আর ফরমাল গেটাপের শার্ট-প্যান্ট বের করে দেয়।

আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; আচ্ছা জামাইজান শুনুন না!
আব্রাহাম;; বলো।
আইরাত;; চলুন আমরা ট্রুথ & ডেয়ার খেলি।
আব্রাহাম;; অলরাইট।
আইরাত;; তো বলুন কি নিবেন?
আব্রাহাম;; অবশ্যই ডেয়ার।
আইরাত;; ভেবে বলছেন তো?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; ওকে তো আপনি এখন এভাবে অর্থাৎ টাওয়াল প্যাচিয়েই সোজা বাইরে যাবেন ঠান্ডার মাঝেই।
আব্রাহাম;; হুয়াট? নো ওয়ে আইরাত নো ওয়ে।
আইরাত;; না না এখন তো তা বললে চলবে না আপনি ডেয়ার নিয়েছেন। আব্রাহাম এটা চিটিং কিন্তু।
আব্রাহাম;; আর ইউ চ্যালেঞ্জিং মি ??
আইরাত;; আবার জিগায়।

আব্রাহাম;; আচ্ছা যাচ্ছি তবে মেয়েদের লাইন লেগে গেলে পরে আবার আমাকে কিছু বলো না যেনো।
আইরাত;; এখানে মেয়ে আসলো কোথা থেকে?
আব্রাহাম;; মেয়ে আসে নি তবে আসবে তো। যেই যাবে তার সাথেই ফ্লার্ট করবো। বা যাকেই ভালো লাগবে তাকে দেখি বিয়ে করা যায় কিনা। ছেলেদের তো চার-চারটে বিয়ে করা জায়েজ তাই না।

আব্রাহামের কথা শুনে আইরাত তো পুরো হা। এই ছেলে বলে কি! ছাত করে চটে গেলো আইরাত।
আইরাত;; এই এইই ডেয়ার-এর গুষ্টির তুষ্টি। লাগবো না আমার ডেয়ার এর। এহহহ শখ কতো। বিয়ে নাকি করবো। আহারে কি আয়েস রে। এদিকে আসেন তো দেখি আপনার চাঁদবদনী মুখটা একটু দেখি আমি।
আব্রাহাম;; নাহ ডেয়ার যখন নিয়েছি তখন তো না পূরণ করে আমি আর পারছি না। দেখি যাই আমি।
আইরাত;; এই না না দরকার নেই আমার ডেয়ারের। দরকার নেই। আপনি এখানেই থাকুন।
আব্রাহাম বাইরে চলে যেতে ধরলে আইরাত তার হাত টেনে ধরে থামিয়ে দেয়। আব্রাহাম জানতো যে আইরাত এমম কিছুই করবে তাই সে ইচ্ছে করেই বানিয়ে বানিয়ে এইসব বলেছে।

আইরাত;; চেঞ্জ করেন আপনি, আমি গেলাম ফ্রেশ হতে। এহহ আসছে রে বিয়ে করতে।
আইরাত হাজারো বকা-ঝকা করতে করতে ওয়াসরুমের ভেতরে চলে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আরেক দিকে আব্রাহাম হেসে হেসে শেষ। বিছানা থেকে কুকুর ছানা দুটো কে নিজের কোলে তোলে নেয়। কিছুক্ষণ পর আইরাতের বের করে দেওয়া কাপড় গুলো পরে নেয়। নেভি ব্লু কালারের শার্ট পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বডিতে পারফিউম দিয়ে যাচ্ছে। তখনই ওয়াসরুমের ভেতর থেকে আইরাতের কিছুটা গুনগুন করে গানের শব্দ আসে। আইরাতের মতো আব্রাহামেরও মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে। সে গিয়ে সোজা আইরাতের ওয়াসরুমের লাইট অফ করে দেয়। আর ভেতরে তো আইরাতের জান বের হয়ে যায় যায় দশা। আলো না পেয়ে ভেতরে এক প্রকার লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে সে।

আইরাত;; আব্রাহাম আমি জানি যে এটা আপনারই কাজ। লাইট দিন।
আব্রাহাম ওয়াসরুমের বাইরে পাশের এক দেওয়ালে দুহাত ভাজ করে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; হুমম, আমার সাথেও তো ঠিক এগুলোই করেছিলে তাই না।
আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা সরি আর করবো না। এবার প্লিজ লাইট অন করুন।
আব্রাহাম;; পারবো না।

এই বলেই আব্রাহাম হাতে একটা টাওয়াল ঘোরাতে ঘোরাতে আর সিটি বাজিয়ে চলে গেলো। কয়েক মিনিট হয়ে যায় তবুও আলো নেই। আইরাত বুঝলো যে আব্রাহাম তার সাথে এইসব ত্যাড়ামি করছে। আর থাকতে না পেরে আইরাত গায়ে একটা টাওয়াল প্যাচিয়ে বাইরে বের হয়ে এসে পরে। বাইরে এসে উঁকি ঝুকি দিতে দিতে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। তখনই আব্রাহাম তার পেছন থেকে এসে আইরাত কে এক টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। আইরাত দ্রুত চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম আবার তার হাতে থাকা টাওয়াল দিয়ে আইরাতের কোমড়ে ধরে নিজের দিকে টেনে আনে। আইরাত লুটিয়ে পরে আব্রাহামের বুকে।

আব্রাহাম;; কোথায় যাও?
আইরাত;; আপনি লাইট অফ করে দিয়েছেন কেনো?
আব্রাহাম;; আচ্ছা জ্বি! আমি লাইট অফ করে দিয়েছি তাই এমন করছো। আর তুমি কি করেছো হ্যাঁ! তুমি যে ভেন্টিলেটরে ঝুলে ঝুলে আমার গোছল দেখছিলে আর লাইট আপ-ডাউন করছিলে তখন? লুচ্চি মাইয়া একখান।
আইরাত;; ?
আব্রাহাম;; বলো বলো!
আইরাত;; যেতে দিন না।

আইরাতের কথা কানে না তুলে আব্রাহাম একহাত দিয়ে আইরাতের কোমড়ে চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে তার টাওয়ালের বাধন টা আলগা করে দেয়। বুকের ওপরে কাপড় হালকা হতেই আইরাত খপ করে এক হাত দিয়ে তা ধরে আব্রাহামের দিকে চোখ গরম করে তাকায়। আব্রাহাম আইরাত কে ঘুড়িয়ে নিজের পিঠের সাথে লাগিয়ে দেয়। আইরাতের ঘাড়ের চুলগুলো সরিয়ে উন্মুক্ত কাধে নিজের নাক ঘষতে লাগে। কেমন যেনো থেকে থেকে শিউরে উঠছে আইরাত। আব্রাহামের সব খোচা খোচা দাড়িগুলো আইরাতের গলাতে লাগলে হেসে দেয়।
আইরাত;; আমার না কাতুকুতু লাগে।

আব্রাহাম এবার আইরাত কে বিছানাতে হালকা করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। যতক্ষণে আইরাত উঠে যেত ততক্ষণে আব্রাহাম এসে আইরাতের দুহাত বিছানার সাথে চেপে ধরে। আইরাত ছটফট করতে লাগলে আব্রাহাম ইচ্ছে করেই তার গলায় ঘাড়ে নিজের নাক-ঠোঁট দিয়ে সুরসুরি কাটতে লাগে। আইরাতের তো হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে।

আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ ছাড়ুন। আমার হাসতে হাসতে দম আটকে গেলো।
আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁটে চুমু একে দিয়ে উঠে পরে। আইরাত কেও টেনে তুলে বসিয়ে দেয়। তারপর আইরাতের আর কিছু করতে হয় না আব্রাহাম নিজেই তাকে রেডি করিয়ে দেয়। আইরাতের সামনে এক হাটু গেড়ে বসে পরে। নিজের হাটুর ওপর আইরাতের এক পা রেখে তাকে মোজা পরিয়ে দেয়। তারপর জুতোর ফিতা বেধে দেয়। কারণ আইরাত জুতার ফিতা লাগাতে পারে না। অবশেষে আইরাত কে নিয়ে বাইরে বের হয়ে পরে। কি যে একটা অবস্থা।

বাড়ির গেটের ওপরে তুষার জমেছে বেশকিছু। আব্রাহাম হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে একজন গার্ড কে ডাক দিয়ে এগুলো সব ঝেড়ে ফেলতে বলে। জানালা, করিডর সবকিছু থেকেই তুষার গুলো ফেলে দিতে বলে। বাইরে ঠান্ডা অনেক তাই সে আইরাতের মাথার ওপর হুডি টা তুলে দেয়। আইরাত কে এখন ছোটখাটো গোলুমোলু একটা পান্ডা লাগছে। আব্রাহাম আইরাতের দুগাল তার হাত দিয়ে চেপে ধরে তার পুচ্চু ঠোঁটগুলোতে চুমু বসিয়ে দেয়। গাড়িতে বসে পরে৷ কিছুক্ষন পর একটা রেস্তোরাঁর সামনে গাড়ি থামে। দেখে অনেক শান্ত পরিবেশের মনে হচ্ছে। আব্রাহামের যেতেই রেস্তোরাঁর ওনার বিনয়ের সাথে দরজা খুলে দেয়। একটা টেবিলে গিয়ে তারা দুজন বসে পরে। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা সফট মিউজিক দিয়ে রেখেছে। আব্রাহাম নিজের জেকেটের কলার একহাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম-আইরাত খুব সিম্পল কিছু খাবার অর্ডার দেয়। ওয়েটার এসে সেগুলো দিয়ে যায়। আব্রাহাম খাচ্ছে কম আইরাত কে দেখছে বেশি। তাকে কি পরিমাণ যে কিউট লাগছে। খেতে খেতে একটু খাবার আইরাতের ঠোঁটের কাছে লেগে পরে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ওয়েট!
আইরাত তো মুখে খাবার নিয়ে দুগাল ফুলিয়ে বসে ছিলো আব্রাহাম একটা টিস্যু নিয়ে তার মুখটা ক্লিন করে দেয়। এভাবেই বেশ সময় পর তাদের খাওয়া শেষ হয়। এখনো আব্রাহাম কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আইরাত বলে…

আইরাত;; সারারাত কি এখানেই থাকার ইচ্ছে নাকি?
আব্রাহাম;; একদম না।
আইরাত;; তাহলে! আরে বিল টা দিন জলদি।
আব্রাহাম;; দিবো না।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; আমরা ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলছি রাইট?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; তখন আমি নিয়েছিলাম কিন্তু এখন তোমার পালা।
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; কি নিবে?
আইরাত;; ডেয়ার।
আব্রাহাম;; সিরিয়াসলি?
আইরাত;; হ্যাঁ

আব্রাহাম;; সো আই ডেয়ার ইউ যে এখন তুমি হোটেলের কোন বিল না দিয়েই এখান থেকে দৌড়ে পালাবে।
আইরাত;; কিইইইইই? আব্রাহাম না প্লিজ না। এটা না প্লিজ। মান-সম্মান সব জলে যাবে।
আব্রাহাম;; মান-সম্মান আছে?
আইরাত;; কি বলেন এইসব ঘোড়ার আন্ডা। আমি পারবো না এইটা।
আব্রাহাম;; গেইম বেইবি।
আইরাত;; এইটা আবার কেমন! ধুর।
আব্রাহাম;; বলে লাভ নেই। ইউ হ্যাভ টু ডু দিস।
আইরাত আর কোন উপায় পায় না। বুঝে যে এটা করতেই হবে তাকে। আব্রাহাম হালকা করে উঠে বসে।
আব্রাহাম;; আর ইউ রেডি?
আইরাত;; কেমন যেনো লাগছে। এভাবে টাকা না দিয়ে পালাবো আমি। আবার এটা নাকি ডেয়ার।
আব্রাহাম;; করতেই হবে লাভ নেই, পালাও।
আইরাত;; ওকে ওকে।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; ওকে সো 1… 2… & 3

আইরাতের 3 বলার সাথেসাথেই আব্রাহাম আর সে সব ভেঙেচুরে দ্দে দৌড়। সবদিক ভুলে তারপর দৌড় দিয়েছে। সবাই তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কেউ আর কি বলবে বুঝতেই পারছে না যে এরা এভাবে দৌড়িয়ে যাচ্ছে কোথায়। যদিও তাদের দেখে মেনেজার এগিয়ে আসে। কিন্তু ততক্ষনে আব্রাহাম-আইরাত হোটেলের বাইরে চলে গিয়েছে। এক মনে দৌড়িয়েই যাচ্ছে। অবশেষে বেশ অনেক টুকু পথ ছুটে এসে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম হাসছে আর কিছুটা হাপাচ্ছে আর আইরাত তো নিজের হাটুতে দুহাত রেখে ঝুকে গিয়ে তারপর হাপাচ্ছে। কোমড়ে একহাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। এই শীতেও কিছুটা ঘেমে গিয়েছে। আব্রাহাম আইরাতের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে ছিলো। সে ঘুরে আইরাতের দিকে ফিরে আসে। তারা দুজন একে ওপরের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হঠাৎ ফিক করে একসাথেই হেসে দেয়। দুজনেরই হাসতে হাসতে অবস্থা কাহিল। তারা কেউই ভাবে নি যে এমন কিছু একটা হবে, অর্থাৎ হুট করেই এইটা মাথায় এসেছে। যাই হোক সেই মজা লেগেছে। লাইফে সবকিছুরই টেস্ট নেওয়া ভালো।

আইরাত;; এইটা কোন কাজ না বুঝলেন। এইটা কিছু হলো। ধুর মানুষ গুলো কি ভাববে?
আব্রাহাম;; কি ভাববে?
আইরাত;; ভাববে যে এতো বড়ো একজন মাফিয়া হয়ে একটা রেস্তোরাঁয় খেতে এসে নিজের বউ কে নিয়ে এভাবে পালালো।
আব্রাহাম;; আরে তুমি সবসময় সবকিছুর মাঝে আমার প্রফেশন কে কেনো টানো! তাই কি হয়েছে আমি কি আর পাঁচ দশটা মানুষের মতো লাইফ ইঞ্জয় করতে পারবো না নাকি!
আইরাত;; না বাকি রাখেন তা করার। আর তা তো বলি নি। কিন্তু এভাবে কেউ করে। ইজ্জতের ফালুদা।
আব্রাহাম;; ফালুদা, কাবাব, কাচ্চি কিছুই হয় নি। এবার চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; যে…..

আইরাত;; আহা, এবার বলবেন না যে যেদিকে দুচোখ যায় প্লিজ।
আব্রাহাম;; হাহাহাহাহা, সেই রেস্তোরাঁয় যাবো আর বিল প্লাস এক্সট্রা টাকা দিয়ে চলে আসবো চলো।
আইরাত;; হ্যাঁ তাই ভালো হবে চলুন জলদি। আর হ্যাঁ আমি কিন্তু ডেয়ার কমপ্লিট করেছি।
আব্রাহাম;; গুড গার্ল।
আব্রাহাম-আইরাত গাড়িতে উঠে সেই রেস্তোরাঁয় যেতে লাগে। আর হ্যাঁ তারা ছুটে এসে পার্কিং প্লেসেই দাঁড়িয়েছিলো। রেস্তোরাঁয় গিয়ে আব্রাহাম মেনেজার আর ওনারের সাথে সব ক্লিয়ার করে বলে। তারাও শুনে বেশ অবাক হয় সাথে হেসেও দেয়। আইরাতের এখন আরো বেশি হাসি পাচ্ছে। বাইরে আগে থেকে তুষারপাত দ্বিগুণ হারে পরছে। এতোরাতে বাইরে থাকা টা ঠিক হবে না তাই দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যেতে লাগে। ওহ হ্যাঁ গাড়ির পেছনে টাফি আর সফটি কিন্তু আছেই। তাদেরও বড়ো বড়ো শীতের জামা পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক একটাকে পুরো কিউটের ডিব্বা লাগছে। গাড়িতে আব্রাহাম ড্রাইভ করছে একহাতে। আরেক হাত দিয়ে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আইরাত নিজের মাথা আব্রাহামের কাধে রেখে দিয়েছে।

আইরাত;; জামাইজান!
আব্রাহাম;; বলো বেবিগার্ল।
আইরাত;; একটা অনেক বেশি ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে, অনেক বেশিই।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বলো।
আইরাত;; আমি না আপনাকে ভালোবাসি। সেই খবর কি রাখেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আমি রাখবো না তো আর কে রাখবে!
আইরাত;; লাপ্পিউ।
আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতের মাথায় চুমু দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; “আমি কারণে ~ অকারণে ~ বিনা কারণে তোমাকেই ভালোবাসি

সময়ের চাকা ঘুরিয়ে মাঝখানে আরো কেটে যায় বেশ কিছুদিন। আব্রাহাম-আইরাত তাদের বাসাতেই থাকে। সবকিছু তাদের সেখানেই। তবে নিজের দেশ আর ভিন্ন দেশের তফাৎ যেনো আকাশচুম্বী। আব্রাহাম ঠিকঠাক থাকলেও আইরাত যেনো জেদ ধরে বসে আছে যে সে দেশে যাবেই যাবে তাও আবার দুদিনের মাঝেই। এখন কি আর করার যেতে তো হবেই। এখানের তাদের বাড়ি টা ফুল সেইফটি দিয়ে, প্রটেকশন দিয়ে তারপর যেতে হবে। আজ একদম সকাল সকাল আইরাত উঠেই সব গোছগাছ করা শুরু করে দিয়েছে। ট্রোলি ব্যাগে এক এক করে সব জিনিস গুছিয়ে তুলছে। আব্রাহাম ফোনে কথা বলতে বলতে রুমের ভেতরে আসে। আব্রাহাম কে দেখেই টাফি আর সফটি এসে তার পায়ের কাছে লাফানো শুরু করে দেয়। আব্রাহাম গত এক ঘন্টা যাবত ফোনে আর ল্যাপটপে কাজ করেই যাচ্ছে যা আইরাতের রাগ তুলে দিচ্ছে। এখানে এতোগুলো কাজ হেল্প করা বাদ দিয়ে উনি ফোনে লেগে আছেন। আব্রাহাম ফোন কাটতে না কাটতেই আইরাত চিল্লিয়ে ওঠে…

আইরাত;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; ওমা, আরে এতো চিল্লাও কেনো কি হয়েছে?
আইরাত;; আপনি দেখেন না কি হয়েছে। এখানে কতো গুলো কাজ এটা ওটা সব গোছাতে হবে আমাকে হেল্প করা বাদ দিয়ে আপনি কি ফোন নিয়ে পরে আছেন বলুন তো!
আব্রাহাম বুঝলো যে আইরাত রেগে আছে। সে আইরাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে তার ঠোঁটে চুমু দিয়ে, হাতটা ধরে নিয়ে বিছানার ওপর বসিয়ে দেয়। আইরাতের হাতে একটা বার্গারের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে আব্রাহাম মেকি একটা হাসি দিয়ে এক এক করে সব কাজ করতে লাগে। ব্রেকফাস্ট করে নি এখনো তারা, আইরাত তার দুপা দুলাচ্ছে আর আরামছে খাচ্ছে। আব্রাহাম সবকিছু ভাজ করে করে ব্যাগে তুলে ফেলে।

আব্রাহাম;; মাথা ঠান্ডা হয়েছে বেবিগার্ল?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; তো বললেই তো হতো যে ‘আমার ক্ষিদে পেয়েছে আমি বসবো আপনি কাজ করুন’ ব্যাস।
আইরাত;; হয়েছে আপনি আপনার ফোন নিয়েই পরে থাকুন।
আব্রাহাম;; জানপাখি সরি কাজ করছিলাম তো৷
আইরাত;; আচ্ছা হয়েছে। আচ্ছা টাফি আর সফটি কেও খেতে দিন তারাও খায় নি সকাল থেকে। আমি আপনার জন্য গরম খিচুড়ি আনছি।
আব্রাহাম;; আমি হাত দিয়ে খেতে পারবো না।
আইরাত;; আমি খাইয়ে দিতে পারবো না, আমার কাজ আছে অনেক।
আব্রাহাম;; কি বললি?
আইরাত;; আরে দিচ্ছি তো খাইয়ে, হাইপার হন কেনো!

আইরাত গিয়ে একটা প্লেটে করে কিছু খাবার নিয়ে আসে। তারপর আব্রাহাম কে খাইয়ে দেয় আর সে কাজ করতে থাকে। ঘন্টা খানেক সময় পর তারা দুজনেই বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। বাড়ির পাশে দশ জন গার্ড কে পাহারায় রেখে দিয়ে গেছে। কেননা বাড়িটা আমেরিকা তে। আর তারা থাকবে বাংলাদেশে। বাড়ি টা আর যাই হোক এভাবে ফাকা রেখে গেলে তো হয় না। চাবি থাকবে আব্রাহামের কাছেই আর এখানে গার্ড রা পাহারায় থাকবে। যখন এখানে অর্থাৎ আমেরিকা তে আসবে তখন এখানেই থেকে যাবে। আব্রাহাম গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। মাঝে মাঝে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে।

আব্রাহাম;; খারাপ লাগছে না?
আইরাত;; কই! না তো।
আব্রাহাম;; না মানে এতো গুলো দিন এখানে থাকলে বাড়িটাও ছেড়ে আসতে হলো তাই বলছি যে খারাপ লাগছে না!
আইরাত গাড়ির ব্যাক সীটে টাফি & সফটির দিকে একবার তাকায়। তারা দুজন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
আইরাত;; কম খারাপ লাগছে। তেমন একটা না।
আব্রাহাম আবার গাড়ি চালানোর দিকে মনোযোগ দেয়। এয়ারপোর্টে এসে পরলে গাড়ি থেকে নেমে পরে। গার্ড রা এক এক করে সব জিনিসপত্র নিচে নামিয়ে আনে। অতঃপর তারা ভেতরে চলে যায়। ফ্লাইটে গিয়ে বসে পরে। এখন এখানে এই ফ্লাইটের ভেতরে আবার কমপক্ষে পুরো একদিন থাকতে হবে। এটা ভেবেই আইরাত লম্বা এক নিঃশ্বাস ছাড়ে।
আব্রাহাম;; আর ইউ ওকে?
আইরাত;; কবে থেকে যে নিজের বাড়ির আর বাড়ির মানুষ দের মুখগুলো দেখি না।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ যাচ্ছি তো। এখন শুধু মুখ না পুরো আপাদমস্তক সব দেখে নিও।
আইরাত;; হুমম।

২৪ ঘন্টা পর~
সেইদিনের রাত গড়িয়ে গিয়ে পরেরদিন ভোর সকাল হয়ে গিয়েছে। ফ্লাইটের ভেতরে এনাউন্সমেন্ট হয়ে গিয়েছে। এই এনাউন্সমেন্ট-এর শব্দেই আইরাতের ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো আর আব্রাহাম তো সারারাত সজাগই ছিলো। ঘুম ভেঙে চোখ মেলে তাকাতেই দেখে তার গায়ের ওপর আব্রাহামের জেকেট রাখা। আস্তে করে হাই তুলতে তুলতে উঠে পরে।
আব্রাহাম;; ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ঘন্টা খানিকের মাঝেই পৌঁছে যাবো আমরা।
আইরাত;; ওয়েট, আমরা যে যাচ্ছি তা কি বাড়ির সবাই জানে?
আব্রাহাম;; সবাই না তবে হ্যাঁ রাশেদ আর অয়ন-কৌশল জানে যে আমরা যাচ্ছি।
আইরাত;; বলা উচিত তাই না।
আব্রাহাম;; একদম না। সারপ্রাইজ।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা আচ্ছা।

আইরাত উঠে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। তারপর এসে আবার সীটে বসে পরে। এয়ার হোস্টেজ এসে তাদের ব্রেকফাস্ট দিয়ে যায়। হালকা ফুলকা কিছু ব্রেকফাস্ট করে নেয়। তার ঘন্টা খানেক পর ফ্লাইট ল্যান্ড করে। ফ্লাইট থেকে নেমে যেতে লাগে। আশেপাশে গার্ড”স সব আছে। বেশ কিছুদূর এগিয়ে যেতেই অয়ন-কৌশল কে চোখে পরে আব্রাহামের। তারা তো আইরাত-আব্রাহাম কে দেখেই একদম ফেটে পরে।
কৌশল;; ওয়েলকাম ব্যাক ম্যান।
অয়ন;; বউমনিইইইইইইইইইইইইইই।
রাশেদ;; ওয়েলকাম স্যার & ম্যাম।

আব্রাহাম গিয়ে সবাই কে জড়িয়ে ধরে। অয়ন তো পারে না কেঁদে দেয়। খেয়াল করে দেখে আইরাতের কোলে সাদা ধবধবে দুটো কুকুর ছানা। এদের দেখে লোভ আর সামলাতে না পেরে কোলেই নিয়ে নিলো।
অয়ন;; যাক আমেরিকা থেকে আর যাই কিছু আনো আর নাই আনো। দুজন নতুন সদস্য কে ঠিকই এনেছো।
আইরাত;; না নিয়ে এসে থাকতেই পারলাম না।
অয়ন;; বউমনি কত্তো যে মিস করেছি তোমাদের দুইজন কে। বলার বাইরে। আমি ভেবেছি আমেরিকা যাচ্ছো হয়তো কিছুদিনেই এসে পরবে কিন্তু মাসের পর মাস হয়ে এলো কোন খবর নেই। যাক অবশেষে ফিরে এলে।
আইরাত;; না এসে থাকা যায় বলো।

আব্রাহাম;; আচ্ছা বাড়ির কাউকে বলিস নি তো?
রাশেদ;; না স্যার, বাড়ির কেউই জানে না।
আইরাত;; ঝটকা খাবে ঝটকা।
কৌশল;; তাহলে যাওয়া যাক।
গাড়িতে ওঠে পরে তারা। অয়ন বাইক দিয়ে যাচ্ছে রাশেদ-কৌশল সামনে আর আব্রাহাম আইরাত পেছনে বসে আছে। ত্রিশ মিনিট বাদেই তারা পৌঁছে যায় আব্রাহামের বাড়ির সামনে।
আব্রাহাম;; শশুড়বাড়ি ফিরে এসো বউ আমার।
আইরাত;; হুম এলাম।
কৌশল;; বউমনি আগে তুমি যাও। আমরা ছেলেরা পরে আসছি। কেননা বাসায় সবথেকে বেশি মিস তোমাকে করা হয়েছে।
আব্রাহাম;; কি বলিস এইসব?

অয়ন;; জ্বি, আপনাকেও মিস করেছে সবাই কিন্তু খুবই কম পরিমাণে।
আব্রাহাম;; বাহহ দারুন। আমাকে কেউ মনেই রাখে নি।
আইরাত;; এর জন্যই তো বলি যে আপনাকে ছোট বেলা কুড়িয়ে পেয়েছে দাদি।
আব্রাহাম;; হয়েছে যাও যাও।
আইরাত ধীর পায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। কলিং বেলে বার কয়েক চাপ দিতেই খোশমেজাজে ইলা এগিয়ে আসে। হয়তো ভেতরে অনামিকা ছিলো তার সাথেই কথা বলতে বলতে ইলা এগিয়ে আসে। ইলা তো দরজা খুলে সামনে তাকাতেই পুরো থ হয়ে গেলো। আইরাত মেকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; আব…. আচ্ছা দাদি আম্মা এটা কি আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী-এর শশুড় বাড়ি??
ইলা কতোক্ষণ চুপ করে থেকে হুট করেই চিৎকার দিয়ে ওঠে।
ইলা;; ওওও অনামিকা গো। দেখো দেখো কে এসেছে। আরে বাইরে এসো জলদি।
অনামিকা;; কি হয়েছে খালামনি? কে এসেছে?
অনামিকা তো বাইরে বের হয়ে আরো অবাক। আইরাত মুখ টিপে হেসে দাঁড়িয়ে আছে। অনামিকা দাঁড়িয়েই ছিলো তবে ইলা আর থাকতে না পেরে ছুটে এসে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। অনামিকাও তাই। শুরু হলো মা-দাদি কান্নাকাটি। আইরাত এদের সামলাতেই পারে না। আর বাড়ির গেইটের বাইরে সোজা হয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারজন। আব্রাহাম, অয়ন, রাশেদ, কৌশল। তারা ভেতরের কান্ড দেখছে।
অয়ন;; দেখ ভাই বউমনি যেতে না যেতেই কি শুরু হলো এদের কান্নাকাটি আর না জানি তুই গেলে কি হবে।
আব্রাহাম চুইং গাম চিবুতে চিবুতে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আমি ভাবছি ভেতরেই যাবো না। কান্না যে কেনো করে এরা বুঝি না। আরে বাড়ির মেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে কতোদিন পর সুন্দর করে ভেতরে নাও না। কিন্তু না আহারে ম্যালোড্রামা।
আব্রাহামের কথা শুনে রাশেদের কোলে থাকা কুকুরছানা দুটো কিছুটা ঘেউ ঘেউ করে ওঠে। এতে চারজনই মিলেই হেসে ওঠে। ইলা আর অনামিকা তো আইরাত কে নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো কিন্তু হুট করেই আব্রাহামের কথা মনে পরে তাদের।
অনামিকা;; কিরে জামাই কই?
আব্রাহাম;; জামাই এসে গেছে শাশুড়ী আম্মু।

অতঃপর সবাই বাড়ির ভেতরে চলে যায়। বাড়িটা যেনো এতোদিন পর পূর্ন মনে হচ্ছে। পরিবার টা পূর্ণ আজ আব্রাহাম-আইরাতের ফিরে আসাতে। বিকেলের দিকে দিয়া, অবনি কেও ডাকা হয় বাসায়। বাড়িতে একটা গেট-টুগেদারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সবার মিলেমিশে থাকায় বাড়ি টা যেনো পুরো দমে ঝলকাচ্ছে। বাড়ি আজ তার পুরোনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে তাদের এই খুশির মাঝে আইরাতের সনামধন্য ফুপি কিছুটা ঝামেলা পাকিয়ে দেয়।
সবাই মিলেমিশে বেশ ভালো সুন্দর একটা সময় কাটাচ্ছিলো। তবে এর মাঝে সাবিলা অর্থাৎ আইরাতের ফুপি যেনো “এক গ্লাস দুধে এক ফোটা লেবুর রস” হয়ে এলো। তখন সময় প্রায় সন্ধ্যা, আইরাত আর অবনি মিলে রান্নাঘরে টুকটাক কাজ করছিলো। হলরুমে সবাই কে চা দিয়ে এসে পরতে ধরবে তখনই সাবিলার ফোন আইরাতের কাছে। এতোদিন পর নিজের কাছে সাবিলার ফোন পেয়ে যেমন সে অবাক হয় তেমনই সে বেশ খুশিও হয়। খুশি খুশি মনেই ফোন রিসিভ করে কানে ধরে আইরাত৷

আইরাত;; হ্যালো ফুপি!
সাবিলা;; রাখ তোর ফুপি। হ্যাঁ রে আইরাত। তুই এমন মেয়ে বের হবি তা আমি আগে কখনো ধারণাও করি নি।
আইরাত তো অবাকের চরম পর্যায় সাবিলার কথা শুনে। সে আজ সকাল বেলাই তো এলো আমেরিকা থেকে দেশে। এই টুকু সময়ের মাঝে সে এমন কি করে বসলো যে সবিলার চোখে আইরাত উল্টো প্রকৃতির মেয়ে হয়ে গেলো। আইরাত কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই সাবিলা বলে ওঠে…
সাবিলা;; আমি ভাবি নি তোর মুখে মধু অন্তরে বিষ হবে। একটা বারও আটকালি না তুই।
আইরাত;; আরে কিন্তু হয়েছে কি? কি করেছি আমি? আর কাকেই বা আটকাবো? কি করা থেকে আটকাবো? কি বলছো এইসব কিছুই তো মাথায় ঢুকছে না আমার।

আইরাতের কিছুটা জোরে কথা বলায় সবাই তার দিকে তাকায়। আব্রাহাম ইশারাতে আইরাত কে ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞেস করলে আইরাত মেকি হেসে সেখান থেকে কেটে পরে। কিছুটা দূরে চলে আসে।
আইরাত;; ফুপি তুমি এইসব কি বলছো? কি হয়েছে?
সাবিলা;; দেখ আইরাত আমি কিছু বলি না দেখে যে কিছুই বলবো না বা সবসময় ছেড়ে দিবো তেমন টা না।
আইরাত;; আমার সাথে ঝগড়া করে কোন লাভ আছে কি বলো! আর ঝগড়া করছোই বা কি নিয়ে তাই তো জানি না আমি আরে আগে বুঝিয়ে বলবে তো নাকি!
সাবিলা;; নিলয়।

আইরাত;; নিলয়! কি হয়েছে নিলয় ভাইয়ার?
সাবিলা;; নিজের ডান হাত, আর দু পা ভেঙে হস্পিটালে পরে আছে।
আইরাত;; কিহহহ? কি বলো? কীভাবে হলো এইসব কিছু? কখন হলো?
সাবিলা;; হয়েছে থাক থাক বুঝেও আর না বুজার ভান ধরে থাকতে হবে না। জানি আমি সব।
সত্যি এখন আইরাতের মুখ দিয়ে গালি বের হচ্ছে। কিন্তু খুব কষ্টে তা দমিয়ে রেখেছে নিজের মাঝেই। একটা কথা ক্লিয়ার করে না বলেই এভাবে অন্ধকারে ঢিল ছুড়ছে সাবিলা।
আইরাত;; ফুপি আমি কিছুই জানি না এইসবের। সো প্লিজ বলো।
সাবিলা;; দেখ মানলাম যে নিলয় তোকে ভালোবাসতো, তোকে বিয়েও করতে চেয়েছিলো। চেয়েছিলো কিন্তু তা আর বাস্তবে রুপ নেয় নি। তাহলে এখন এগুলো কেনো?

আইরাত;; মানে?
সাবিলা;; মানে এইসব কিছু আব্রাহাম, তোর জামাই করেছে।
আইরাত;; মাথা কি ঠিক আছে তোমার ফুপি? কি বলছো তা কি একবারও খেয়াল করে দেখছো?
সাবিলা;; আরে আব্রাহাম যে তোকে পাগলের মতো করে ভালোবাসে তা তো জানিই কিন্তু এভাবে একজন কে ক্ষতি করে দিবে নাকি সে!

সাবিলার কথা শুনে আইরাত হাসবে নাকি কাঁদবে ভুলে গেছে। লাইক সিরিয়াসলি! সে আর আব্রাহাম দেশের বাইরে থেকেই আসলো আজকে সকালে আর সেখানে আব্রাহাম কিনা মারতে যাবে তাও আবার নিলয় কে। কোব দুঃখে! নিলয় তো আইরাতের সাথে কিছু করে নি তাহলে আব্রাহাম কেনোই বা তাকে মারতে যাবে। যেখানে তার সাথে নিলয়ের কোন যোগাযোগই নেই। আব্রাহাম আসলে বদমেজাজি, রাগ নাকের ডগায় থাকে তো তাই সবাই তাকে দেখে মনে করে যে আব্রাহাম যখন যা ইচ্ছে তাই করে দিতে পারে। কিন্তু এখন তেমন টা না। আব্রাহাম এতো বড়ো একটা কান্ড করে রাখবে আর আইরাত তা জানবে না তেমন টা হয় না। নিলয়ের সাথে প্রথম দিকে আব্রাহামের অবশ্য একটু ঝামেলা ছিলো তাই সাবিলার আব্রাহাম কেই সন্দেহ করছে। কোথায় না কোথায় যেনো নিজের ছেলে মারপিট করে এসেছে সেই খোঁজ খবর না নিয়ে আব্রাহাম কে সন্দেহের কাটায় রেখেছে। যত্তসব।

সাবিলা;; কিরে কিছু বলিস না কেনো? আচ্ছা নিলয় করেছিলো কি হ্যাঁ যে আব্রাহাম তাকে এভাবে পেটালো?
ব্যাস আইরাতের মাথায় আগুন ধরে গেলো। বাড়ির সবার কথা ভুলে গিয়ে গলা ফাটিয়ে সাবিলা কে বলতে লাগে।
আইরাত;; হ্যাঁ মেরেছে, বেশ করেছে মেরেছে। শুকুর করো যে তোমার গুনধর ছেলে কে জানে মেরে দেয় নি। মানে যে কোন কিছু একটা বলে দিলেই হলো। সম্পূর্ণ টা না জেনেই, না শুনেই দোষ চাপিয়ে দিলাম একজনের ঘাড়ে তাই না!
সাবিলা;; আইরাত তুই………..

আইরাত;; অনেক হয়েছে অনেক আলতু-ফালতু বকেছো এবার চুপ করো। আব্রাহাম আর আমি আমেরিকা থেকে দেশেই ফিরেছি আজ সকালে আর এখন তুমি বলো কিনা যে আব্রাহাম নিলয় ভাই কে মেরেছে! ওহ আচ্ছা ভালো। তো আমি হস্পিটালে আসছি তোমার ছেলেকে খুন করতে। আমার জামাই তো আধোমরা করেছে আমি পুরো মেরে ফেলবো। এরপর আবার বাড়ি আসবো। আমি আসছি দাড়াও।
এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দিলো। আর সাবিলার তো চোখ ছানাবাড়া। আইরাত কে এভাবে কথা বলতে দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম আস্তে করে উঠে গিয়ে আইরাতের পাশে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আব্রাহামের কথা শুনে আইরাত ফিক করে হেসে দেয়। হিহিহিহি করে হাসতে হাসতে রান্নাঘর থেকে এসে হলরুমে সোফাতে বসে পরে।

অনামিকা;; এই ভেটকানো বন্ধ কর। কে ফোন করেছিলো? আর কার সাথে এভাবে চটে চটে কথা বলছিলি তুই?
আইরাত;; তোমারই ননদিনী।
ইলা;; কি হয়েছে রে?
আইরাত;; মানে মানুষ কত্তো পরিমাণে আজাইরা হলে এইসব আবোলতাবোল বকতে পারে তা ফুপি কে না দেখলে বুঝতামই না।
রাশেদ;; ম্যাম এনিথিং সিরিয়াস!?
আইরাত;; আরে না তেমন না। নিলয় ভাইয়া হয়তো কারো সাথে মারপিট করে নিজের বডি পার্ট ভেঙে হস্পিটালের বেডে শুয়ে আছে আর ফুপি এখন ফোন করে বলে যে আব্রাহাম নাকি নিলয় ভাইয়া কে এভাবে মেরেছে।
আব্রাহাম;; ওয়াহহহহহহ ?
আইরাত তো আরো হাসি।

আব্রাহাম;; সমস্যা নেই। দুলাভাই আর শালার মাঝে এমন টুকটাক মারপিট হয়েই থাকে।
এবার যেনো সবাই হেসে দেয়।
অনামিকা;; আচ্ছা একবার দেখতে যাওয়া উচিত তাই না!
আইরাত;; আমি পারবো না যেতে। তোমার ননদের পোলা, তুমি যাও।
দিয়া;; এই যা কি বলিস। যাই হোক সব বাদ দে। দিয়ে চল একটা বার দেখে আসি।
অয়ন;; ওরে তোমার বড্ড মায়া লাগছে এই নিলয়ের জন্য তাই না!
দিয়া;; আরে একটা মানুষ অসুস্থ তাই বলেছি।
অয়ন;; এহহহ রে গরিবের মাদার তেরেসা।
আইরাত;; এই তোরা এখন ঝগড়া লাগাস না তো আবার।
সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তার মাঝেই আব্রাহাম বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!

আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; আই থিং নিলয় কে একবারের জন্য হলেও তোমার দেখতে যাওয়া উচিত।
আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে।
আইরাত;; আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছিলো গো?
আব্রাহাম;; মানে কি?
আইরাত;; আপনি বলছেন এই কথা? সত্যি!
আব্রাহাম;; না আমার মনে হলো যে একটা বার দেখে আসা উচিত তাই বললাম আর কি।
আইরাত;; আচ্ছা আপনি রেগে এই কথা গুলো বলছেন না তো আবার?
আব্রাহাম;; আরে না না একদম না। তুমি শাশুড়ী আম্মু কে নিয়ে যেতে পারো সমস্যা নেই।
আইরাত অনামিকার দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; মা আপনি আইরাত কে নিয়ে যেতে পারেন আমি সাথে ড্রাইভার আর গার্ড কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
অনামিকা;; আচ্ছা।

বাসায় সবাই আছে। কাউকেই আজকে যেতে দেয়নি। সবাই একসাথেই থাকবে। তবে এখন আইরাত আর অনামিকা চলে যায় হস্পিটালের জন্য। বেশ সময় পর গিয়ে থামে হস্পিটালের বাইরে। পেছনে ড্রাইভারের হাতে এতোগুলো জিনিস। রেসিপশনে গিয়ে নিলয়ের রুম নাম্বার জেনে নিলো আইরাত তারপর সেদিকেই যায়। আর যেতেই দেখে বেডে পুরো সাদা ব্যান্ডেজে জড়িয়ে আছে একজন ব্যাক্তি। মাথায়ও তার ভারি ব্যান্ডেজ। দু পা ব্যান্ডেজ করে ওপরের দিকে কিছুটা উঁচু করে রাখা। নাকের ওপর ছোট্ট একটা ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে। অনামিকার কপালে চিন্তার ছাপ এইসব দেখে। তবে আইরাতের মুখের কোণে ঝুলছে শয়তানি হাসি। কি পরিমাণ যে হাসি আসছে তার কিন্তু খুব কষ্টে তা দমিয়ে রেখেছে এই মুহুর্তে। সাবিলা নিলয়ের পাশেই বসে আছে। অনামিকা দ্রুত সাবিলার দিকে এগিয়ে যায়।

অনামিকা;; সাবিলা!
সাবিলা;; ভাবি এসেছো তুমি?
অনামিকা;; কি রে এইসব কিছু কি করে হলো?
সাবিলা;; জানি না আমি। নিলয় কে জিজ্ঞেস করলেও কিছুই বলছে না। ডাক্তার অব্দি জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু কিছুই বলে না। এখন ডাক্তার বলছে যে বেশি সিরিয়াস কিছু হলে পুলিশ স্টেশনে ফাইল করতে হবে।
অনামিকা হালকা ভাবে নিজের মাথা দুলিয়ে আইরাতের দিকে তাকায় দেখে আইরাত মুখে হাত দিয়ে মুখ টিপে হাসছে। অনামিকা কিছুটা চোখ গরম করে তাকায়। আইরাত চুপ করে আবার ফিক করেই হেসে দেয়।
সাবিলা;; জানি না কি হবে।
আইরাত;; কিছুই হবে না। নিজের ছেলেকে দেখে রেখো মেডিসিন ঠিকঠাক ভাবে সব খাইয়ে দাও তাহলেই হবে। বেড রেস্টে রেখো তাহলেই হবে। আর রইলো কথা পুলিশ চক্করের তো তার চিন্তা বাদ দাও কিছুই হবে না। চিন্তা নেই।
সাবিলা;; তুই বলছিস এই কথা?

আইরাত;; শুনো আমার জামাই এর না এতো ঠ্যাকা পরে নাই যে তোমার ছেলে কে মারবে। আব্রাহামের তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই না। যখন মুখে যা আসে তাই বলে দাও। একটা বারও কি কথার সত্যতা কতোটুকু তা যাচাই করো নাকি, আজাইরা। এইসব হাবিজাবি ফালতু বদনাম দেওয়ার পরও যে আমি আর আমার মা তোমার ছেলে কে দেখতে এসেছি তাই তোমার ভাগ্য। তোমার ছেলে তো এখন কোন কথা বলতে পারছে না। ঠিক হলে না হয় ওকেই জিজ্ঞেস করে নিও যে কীভাবে এমন করে হাত-পা ভেঙেছে!
এই বলেই আইরাত সেখান থেকে এসে পরে। মেজাজ তুঙ্গে ওঠে গেছে। হস্পিটালের বাইরে এসে অনামিকা কে ফোন করে বলে দেয় সে যেনো পরে বাসায় এসে পরে আইরাত এখন চলে যাবে। তাই ড্রাইভার কে হস্পিটালের সামনে রেখেই আইরাত একটা টেক্সি করে এসে পরে।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪১+৪২+৪৩

বাসায় এসে দেখে দিয়া আর অবনি গালে হাত রেখে বসে আছে। বাকিরাও বসে আছে তবে অবনি আর দিয়ার মাঝে কিছুটা ভিন্নতা আছে। আইরাত গিয়ে তাদের মাঝে বসে পরে।
আইরাত;; কিরে কি হয়েছে?
অবনি;; আর বলিস না অয়ন ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করেছে?
আইরাত;; দিয়া?
অবনি;; হ্যাঁ।
আইরাত;; কিন্তু কেনো?

অবনি;; আরে দিয়ার সাথে আমাদের ভার্সিটির এক বড়ো ভাই জাস্ট কথা বলেছিলো তাই অয়ন ভাইয়া একদম রেগে বম।
দিয়া;; বুঝলাম না কথা বলেছি আমি সমস্যা কেনো উনার!
অবনি;; হ্যাঁ উনি তো ভার্সিটির সিনিয়র তো কথা বলেছে এভাবে এমন রিয়েকশন দে……..
কৌশল;; তুমি যেনো ভুলেও কথা না বলো।
অবনি;; হুয়াট!

কৌশল অবনির পাশ দিয়ে যেতে যেতে এই কথা বলে। দিয়া আর অবনি হা হয়ে বসে আছে। আর আইরাত হেসে দেয়। কিছু সময় পর অনামিকা বাসায় এসে পরে। হলরুমে আব্রাহাম নেই। আইরাত সিড়ির ওপরে নিজেদের রুমের দিকে তাকায়। আব্রাহাম কে খুঁজে চলেছে। আইরাত ওপরের রুমে চলে যায়। দেখে সেখানেও আব্রাহাম নেই। তবে রুমের পুরো হুলিয়া পালটে গেছে। রুমের লাইট সব প্রায় নেভানো শুধু বড়ো বড়ো কয়েকটা সাদা মোমবাতি জ্বলছে। তার মাঝেই হুট করে আব্রাহাম আইরাতের পেছন থেকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। এতে আইরাত কিছুটা চমকে ওঠে। আব্রাহাম পেছন থেকেই আইরাতের গালে চুমু দিয়ে দেয়।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪৭+৪৮+৪৯+৫০