নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪১+৪২+৪৩

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪১+৪২+৪৩
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আব্রাহাম আইরাতের একহাত নিজের দুহাতের মাঝে নিয়ে বসে ছিলো। এভাবে থাকতে থাকতেই কখন যে চোখ লেগে এসেছে তার সে জানে না। পাশেই শুধু মাথা টা রেখে শুয়ে ছিলো তখনই আইরাতের হাতের আঙুল নড়ে ওঠে। কয়েক বার নড়াচড়া করলে আব্রাহামের ঘুম ভেঙে যায়। কপাল কুচকে আস্তে করে চোখ মেলে তাকায়। দেখে আইরাতের হাত আসলেই নড়ছে আর সে খুব দ্রুত গতিতে শ্বাস নিচ্ছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থা তেই দ্রুতভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। যেনো এই তার দম আটকে যাচ্ছে। আব্রাহাম ব্যাস্ত হয়ে ওঠে পরে। আইরাতের বাহুতে হালকা করে ধরে কয়েক বার ডাকতে লাগে কিন্তু তার কোন সাড়া নেই। ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত ডক্টর কে ডাক দেয় আব্রাহাম। জোর চিল্লানোর আওয়াজ শুনে ডক্টরও ছুটে আসে। এসেই দেখে আইরাতের অবস্থা বেগতিক। চেকাপ করে। কিছুসময় পর কেবিন থেকে বের হয়ে আসে।

আব্রাহাম;; Doctor, is everything ok!?
ডক্টর;; মোটামুটি। ম্যাম এখনো সেড়ে ওঠে নি। সময় দরকার। খুব বড়ো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে উনার। মাথায় আঘাত পেয়েছে, ক্ষত রয়েছে। তবে চিন্তা করবেন না আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ডক্টর মুচকি হেসে চলে যায়। আর আব্রাহাম আবার গিয়ে আইরাতের কেবিনে বসে থাকে। যদিও এখন পেসেন্টের কেবিনে যাওয়া বারণ তবে আব্রাহামকে কে মানা করবে আর সাহসই বা কার আছে তাই সে এখন গিয়ে আইরাতের পাশে বসে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

একদিন পার হয়ে যায়। আইরাতের এখনো জ্ঞান ফিরে নি। হাতে ইঞ্জেকশন পুশ করে অজ্ঞান হয়ে আছে। জ্ঞান আসতে সময় লাগবে। আব্রাহাম বলতে গেলে প্রায় সময়ই হস্পিটালে থাকে। হোটেলে থাকেই না অতি প্রয়োজন ছাড়া। আর রইলো কোহিনূর হীরের কথা তো সেই ভেজাল বলতে গেলে মিটেই গেছে। আব্রাহামের কাছে যে নকল হীরে ছিলো তা সে ভেঙে ফেলেছে। আসল হীরে তায়াফের সেই ব্যাগেই ছিলো। আব্রাহাম মিস্টার. ডজান আলবাট্রার সাথে দেখা করেছে। যদিও তিনি কিছুটা অসুস্থ এখন। আব্রাহাম তার সাথে একদম খুলে সব কথা ক্লিয়ার করে বলেছে। যা শুনে তিনি অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। অবশেষে আসল হীরে আবার নিজের জায়গায় রেখে দেওয়া হয়।

তবে এইবার প্যালেস পালটে দেওয়া হয়েছে। দু হাজারের কাছাকাছি সিসিটিভি ক্যামেরা। আর গার্ডদের সংখ্যা অগনিত। হীরে কে যারা নজরে রাখে তারা বাদে যে কোন একজন সেই কক্ষে প্রবেশ করলেও মরন ছাড়া উপায় নেই। বিষাক্ত ল্যাজার লাইটে পুড়ে ছাই হতে বাধ্য। আর গুলিতে ঝাঝড়া। কাজটা এতোটাই লুকিয়ে চুরিয়ে আর সাবধানে করা হয়েছে যে হাতে গোনা কিছু মানুষ বাদে তা কেউ জানতেই পারে নি। এখন আসল হীরে আগের ন্যায় তার সঠিক জায়গা তেই রয়েছে। সবার মতে হীরে কখনো চুরিই হয় নি, আর নির্দিষ্ট জায়গায় থেকে নড়েই নি। যেমন ছিলো তেমনই আছে।

শুধু মাঝখানে একটা গুজব ছড়িয়েছিলো ব্যাস। আর গুজবে কান না দেওয়াই শ্রেয়। এইসব ঝামেলা শেষ করে আব্রাহাম যেনো এক স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এখন শুধু আর শুধুই নিজের পারসোনাল লাইফে মনোযোগ দেওয়া। আব্রাহাম রাতের বেলা হস্পিটালে থাকে। এমনকি ডক্টর কে বলে আইরাতের বেডের পাশে আরেকটা বেড নিয়ে অর্থাৎ ডাবল বেড জোড়া লাগিয়ে আইরাতের পাশেই তাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকে। আব্রাহামের এইসব কান্ড দেখে ডক্টর সহ বাকিরা মুচকি হাসে। কেউ কি করে এতোটা বউ পাগল হতে পারে আব্রাহাম কে না দেখলে তা বুঝাই যেতো না।

আইরাতের যে এখন কোন হুস নেই তাতে আব্রাহাম থেমে নেই। সে কেবিনে একা একাই আইরাতের পাশে বসে কথা বলে। এটা ওটা কতো কথা। কিন্তু যখন তার কথার কোন উত্তর আইরাত দেয় না তখনই যেনো বুকের মাঝে এক তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে সে। চোখের কোণে একা একাই পানি চিকচিক করতে লাগে। তখন কান্না থামানোর জন্য আইরাতের হাত টা নিজের হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে চুমু এঁকে দেয়। বাংলাদেশে কাউকেই আইরাতের এই ব্যাপারে বলা হয় নি।

সেখান থেকে রোজ ফোন কল”স আসে। সবাই আইরাতের সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু আব্রাহাম এটা ওটা বলে কোন রকমে এড়িয়ে যায়। কি বলবে সে! যে আইরাত বাজেভাবে এক্সিডেন্ট করে এখন হস্পিটালে শায়িত। সেখানে সবার মাঝে কান্নাকাটির রোল পরে যাবে যা আব্রাহাম চায় না। তাই সে কাউকেই বলে নি। কাজে বাইরে এসেছে বলে কাটিয়ে দেয় অনেক সময় তো ফোনই ধরে না। তারপর গার্ড এসে বলে যে বাড়ি থেকে অনেকবার ফোন এসেছে। এভাবেই দিন যাচ্ছে। দুইদিন হয়ে এলো। আব্রাহামের কষ্ট একটাই যে তার আইরাত আজ দুদিন যাবত তার সাথে একটা টু শব্দও করেনি। একবার আইরাত আব্রাহামের সাথে রেগে গিয়ে মনে অভিমানের পাহাড় জড়ো করে বলেছিলো যে “” আব্রাহাম আপনি রাগ করলে তো রাগারাগি/চিল্লাপাল্লা করেন তাই না! কিন্তু আমি এমন কিছুই করবো না। সবই ঠিক থাকবে শুধু আমি আপনার সাথে কথা বলা ছেড়ে দিবো। কোন কথা বলবো না আপনার সাথে কেননা কথা বলা বন্ধ করে দেওয়ার চেয়ে বড়ো আর কোন শাস্তি-ই হয় না “”।

আজ কেনো জানি আইরাতের বলা কথা টা আব্রাহামের খুব করে মনে পরছে। বারবার মনে হচ্ছে যে আইরাত তার সাথে রেগে আছে যদিও এমন কিছুই না। তার খারাপই লাগে এখানে যে আইরাত তার সাথে দুদিন হলো কোন কথা বলে না। যেই মেয়ে কিনা বকবক করতে করতে কানের পোকা খেয়ে ফেলতো। আব্রাহাম আর আইরাত কে মিসেস. বকবক বলে ডাকতে পারে না। আইরাত কে আব্রাহাম একদিন জিজ্ঞেস করেছিলো যে “ফিউচারে আমাদের বেবি হলে তাদের নাম কি রাখবে!?” আইরাত প্রতিউত্তরে বলেছিলো “” আমাদের বেবি হলে একটার নাম রাখবো ‘আলু’ আরেক টার নাম রাখবো ‘বোখরা’ এই হলো আপনার আর আমার আলু-বোখরা””। এটা ভাবতেই আব্রাহাম কান্নারত অবস্থাতেই ফিক করে হেসে দেয়। আব্রাহাম শুধু সারাদিন-রাত আল্লাহ আল্লাহ করে যে আইরাত যেনো জলদি ঠিক হয়ে যায়। নামাজের প্রত্যেকটা মোনাজাতে আব্রাহাম খুব করে আইরাত কে চায়। খুব করে। আর সত্যি আব্রাহামের প্রার্থনায়, তার মোনাজাতে অনেকটাই শক্তি-আস্থা ছিলো তাই হয়তো আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নিয়েছেন।


আজ চারদিনের মাথায় ঠেকলো আইরাত হস্পিটালে। সকালে একবার এসে আব্রাহাম আইরাত কে দেখে গিয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্লাইন্ট এসেছিলো তাদের সাথে মিটিং না করলেই নয় তাই তাকে যেতেই হয়েছে। পুরো হস্পিটাল তো গার্ড দিয়ে ঘেরাও করাই প্লাস আইরাতের কেবিনের বাইরে কমপক্ষে ৮-১০ জন বিশাল দেহি গার্ড কে পাহারায় রেখে দিয়ে এসেছে সে। আব্রাহাম মিটিং রুমে বসে ছিলো। অন্যান্য দিন তো আব্রাহাম নিজেই প্রেজেন্টেশন করে কিন্তু আজ কিছুতেই মন নেই তার। সব কেমন ফ্যাকাশে লাগছে। এর জন্য সে কপালে হাত দিয়ে চুপ করে বসে ছিলো।

আরেকজন যে আব্রাহামের সাথেই কাজ করে সেই প্রেজেন্টেশন করছিলো। তবে একটা সময় এসে আব্রাহাম কে ডাক দেয়। এই পার্ট টুকু আব্রাহাম কেই সামলাতে হবে। কারণ তার প্রেজেন্ট করার ধরনই আলাদা তার মতো করে কেউ পারে না। যাই হোক আব্রাহাম উঠে নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে নেয়। তারপর মনিটরিং করে একটা গ্রাফ রাখে যা বিজন্যাস জনিত। তারপর ধীরে ধীরে সব বুঝিয়ে দিতে লাগে। আজ কেনো জানি অন্যান্য দিনের থেকে আব্রাহামের কন্ঠস্বর বেশ গম্ভীর। আব্রাহাম প্রেজেন্ট করছিলো আধা ঘন্টা যেতে না যেতেই তার ফোন বেজে ওঠে। সে হাত দিয়ে নিজের চোখ চেপে ধরে। মেজাজ টাই বিগড়ে গেলো। কাজের সময় ফোন এলে কি যে মেজাজ খারাপ হয়।

একজন গার্ড দ্রুত ফোন কাটার ট্রাই করে। ফোন কেটে যায় তবে তারপর পরই আরো লাগাতার দুবার ফোন বেজে ওঠে। গার্ড কে ইশারা করতেই সে ফোন তার কাছে নিয়ে আসে। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপর পাশ থেকে যা শুনে তাতে আব্রাহামের সবকিছু যেনো কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে যায়। বুকের ধুকপুকানি ক্রমশ বেড়ে গেছে। মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছে না। সবাই আব্রাহামের এমন রিয়েকশন দেখে চুপ করে আছে। সবাই ভেবেছে যে আবার হয়তো কোন একটা গন্ডগোল পেকেছে। আব্রাহাম সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে ফোনটা দ্রুত গার্ডের হাতেই ধরিয়ে দিয়ে চেয়ারের ওপর থেকে নিজের জেকেট টা নিয়ে কোন রকমে বের হয়ে পরে কনফারেন্স রুম থেকে।

বড়ো কাচের গ্লাস ঠেলে বাইরে এসে জেকেট পরতে পরতেই দ্দে দৌড়। সবাই আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।আব্রাহাম কে এভাবে বাইরে আসতে দেখে গার্ড দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে দেয়। ড্রাইভিং সীটে বসে সাই করে চলে যায় আইরাতের হস্পিটালের উদ্দেশ্যে। সে এক প্রকার ছুটছে। যত দ্রুত সম্ভব হস্পিটালে পৌঁছে যায়। এভাবে তড়িঘড়ি করে তাকে যেতে দেখে সবাই জলদি করে সাইড দিচ্ছে আর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অবশেষে পাগলের মতো দৌড়ে আইরাতের কেবিনের সামনে থামে। হাপাতে হাপাতে আস্তে করে কেবিনের দরজা মেলে দাঁড়ায়।

বেকুল দৃষ্টিতে সামনে তাকায়। আর তাকাতেই পৃথিবীর সব শান্তি যেনো সব একসাথে ভর করে বসে তার মনে। আইরাত বেডের ওপর স্বজ্ঞানে বসে আছে। গায়ে হস্পিটালের ড্রেস, মাথায় ব্যান্ডেজ করা তবে হাত থেকে সুই খুলে দেওয়া হয়েছে। আশেপাশে বেশ কিছু নার্স আর ডক্টর দাঁড়িয়ে আছে। তারা হাসিমুখে আইরাতের সাথে কথা বলছে কিন্তু আইরাত মুখে কোন হাবভাব ছাড়া বসে আছে। শুধু তাদের কথা শুনে যাচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সবাই দরজার দিকে তাকায়। আইরাত আস্তে আস্তে করে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তার অস্থিরতার ছাপ স্পষ্ট। কিছুটা হাপাচ্ছে। আব্রাহাম কে দেখে সব নার্স রা কেবিন ছেড়ে চলে যায় আর ডক্টর আব্রাহামের কাছে এসে মিষ্টি হেসে বলে…
ডক্টর;; নিন স্যার আপনার প্রাণভোমরা আপনার কাছে ফিরে এসেছে।

এই বলেই ডক্টর সেই স্থান ত্যাগ করে। আর আব্রাহাম আবার সামনে তাকায়। শুকনো কিছু ঢোক গিলে ধীর পায়ে আইরাতের দিকে এগোতে লাগে। আইরাতও ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের কাছে তার সামনে বসে পরে। আইরাত আব্রাহামের সারা মুখটা একবার দেখে নেয়। যেমন ছিলো তেমনই আছে সবই ঠিক আছে তবে আগে যে আব্রাহামের মুখে একটা বেলাগাম হাসি লেগে থাকতো তা কিঞ্চিৎ পরিমাণ কমে এসেছে। আইরাত ছোট করে একটু হেসে বলে…

আইরাত;; আ”ম ব্যাক জামাইজান।
আইরাতের এটা বলতে দেরি কিন্তু আব্রাহামের তাকে নিজের সবটুকু দিয়ে জড়িয়ে ধরতে দেরি না। আব্রাহাম একদম তাকে নিজের বুকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়। সে আর চোখ খুলে না। চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে হাজারো অশ্রুবিন্দু। থেকে থেকে কেপে উঠছে আব্রাহাম। আইরাতের কাধের অংশের জামা টুকু এক নিমিষেই ভিজে যায় আব্রাহামের চোখের পানিতে। বুঝলো সে অনেক পরিমাণে কাদছে। আইরাত নিজেও হাত আস্তে করে তার পিঠের ওপর রেখে দেয়। আব্রাহাম যেনো নিজের জীবন টাই হাতে পেয়ে গেছে আইরাত কে পেয়ে।

আইরাত;; আপনি কি ভেবেছিলেন আমি এতো জলদি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো। এখনো আপনাকে জ্বালানো বাকি, আপনার জীবন পুরো তেজপাতা বানানো বাকি। আমাদের “আলু-বোখরা” হওয়া বাকি। আপনার সাথে আমার বৃদ্ধ হওয়া বাকি। তাই আমি আল্লাহ কে বললাম যে ‘আল্লাহ লাস্ট একটা সুযোগ দাও না, এবারের যাত্রায় বাঁচিয়ে দাও’ তাই তিনি আমার কথা শুনে নিলেন আর আমায় আবার আপনার কাছে পাঠিয়ে দিলেন।

আব্রাহাম;; আমি আর কিচ্ছু জানি না শুধু একটা কথাই বলবো যে আমি মরে যাবো রে আইরাত।তোকে ছাড়া মরণ হবে আমার। বেবিগার্ল তুমি, জানো না আমি কত্তো করে চেয়েছি তোমাকে। আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। বাড়িতে কাউকেই এইসবের ব্যাপারে কিচ্ছু বলি নি, কাউকেই না। কি করে যে সব সামাল দিয়েছি আমি। এদিকে তোমার চিন্তায় কিচ্ছু করতে পারতাম না অন্যদিকে বাকি সবাই। আমি সত্যি আধো মরা হয়ে গিয়েছিলাম। কত্তো ভয় পেয়েছিলাম আমি।
আইরাত;; ওরে তাই নাকি। আমার মাফিয়া জামাইও যে ভয় পায় তা তো জানা ছিলো না।
আব্রাহাম;; শুধুমাত্র তোমাকে নিয়েই।

আইরাত;; আব্রাহাম কান্না করবেন না প্লিজ। আপনাকে এটা মানায় না। একটুও না। আমি আছি তো এই দেখুন আমি একদম ঠিক আছি। আপনার কাছে আর আপনার-ই আছি।
আব্রাহাম;; না ঠিক নেই। চোখের নিচে দেখো কেমন কালো দাগ পরেছে, ঠোঁট গুলো শুকিয়ে গেছে, দূর্বল অনেক তুমি। শুকিয়ে গেছো তুমি যা আমার একদমই পছন্দ না। গলার স্বর কেমন মিলিয়ে গেছে।
আইরাত;; সমস্যা নেই আপনি আছেন তো এখন ঠিক হয়ে যাবো আমি।
আব্রাহাম;; বাড়ি চলো আমি আজই তোমাকে নিয়ে যাবো আমার সাথে করে।
আইরাত;; আব্রাহাম, আব্রাহাম শুনুন। পাগলামো করবেন না আমি আছি তো।
আব্রাহাম আবার আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। যেনো ছাড়তেই চাচ্ছে না। ডক্টর এসে দরজাতে নক করে। আব্রাহাম এবার তার সাথে কথা বলে।

আব্রাহাম;; ডক্টর আমি আইরাত কে বাড়ি নিয়ে যাবো।
ডক্টর;; আসলে স্যার আমার মতে ম্যাম কে আরো দু-একদিন হস্পিটালেই থাকতে দেওয়া উচিত। কারণ আজ চারদিন পর ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে। এখনই আবার এইসব যানবাহনে উঠা ঠিক হবে বলে মনে হয় না। যদিও রাস্তা স্বল্প। কিন্তু আমার মতে এখন উচিত না। শারীরিক ব্যাপারের সাথে সাথে একটা মানসিক ভারসাম্য বলেও কথা আছে। আর আপনি কেনো চিন্তা করছেন! ম্যামের এখানে কোন প্রকার কোন কমতিই আমরা হতে দিবো না। তাই বলছি যে স্যার এখানে ম্যাম ২-১ টা দিন আরো থাক।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন।

ডক্টর চলে যায়। আব্রাহাম এবার আইরাতের কপালে, গালে, নাকে, চোখে, মুখে, ঠোঁটে, থোতায়, ঘাড়ে, অর্থাৎ এমন কোন জায়গা নেই যে বাকি রাখে নি। সব জায়গায় পাগলের মতো করে চুমু দিয়ে দেয়। তারপর আবার আইরাত কে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে। আব্রাহামের কি যে শান্তি লাগছে আইরাত কে ফিরে পেয়ে। এখন থেকে শুরু হবে আইরাতের ওপর আব্রাহামের লাভ কেয়ার।

আইরাত এখনো হস্পিটালেই আছে। তাকে আরো কিছুদিন এখানেই থাকতে হবে। আব্রাহাম আগে থেকে যেনো এখন আরো কাজ কম করে। নিজের সব সময় টুকু আইরাত কে দেয়। সকালে আইরাত কে ঘুম ভেঙে উঠানো থেকে শুরু করে রাতে আবার ঘুম পারানো পর্যন্ত সব কাজ আব্রাহাম নিজে করে। আইরাত কে এক মিনিটের জন্যও একা ছাড়ে না সে, নিজে থেকে দূরে রাখে না। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। সাজ-সকালেই আব্রাহাম এসে পরেছে হস্পিটালে। এসেই সোজা আইরাতের কেবিনে চলে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত আজ উঠে গিয়েছে তার আসার আগেই। আইরাতের পাশে একজন নার্স বসে আছে। ফ্রেশও হয়ে গিয়েছে সে। আব্রাহাম কে আসতে দেখে আইরাত মুচকি হাসে। আব্রাহাম নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে আইরাতের পাশে বসে পরে। নার্স তখন উঠে চলে যায়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; আচ্ছা আপনি যে এত্তো সময় এখানে আমার কাছে থাকেন, ওদিকে আপনার কাজ কে সামলায়?
আব্রাহাম;; কাজ বলতে আর কি। এখানে এত্তো গুলো ক্লাইন্ট আছে তারাই সব সামলায়। আর দেশে তো রাশেদ-মেনেজার, অয়ন-কৌশল সবাই আছে। চিন্তা কিসের!
আইরাত;; হুম বুঝলাম।
আইরাতের কেবিনে টিভি লাগানো ছিলো সেখানেই তাকিয়ে তাকিয়ে আইরাত কার্টুন দেখছে। আব্রাহাম তার চোখ অনুসরণ করে সেদিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; আচ্ছা খেয়েছো তুমি?
আইরাত;; না
আব্রাহাম;; হুমম।

আব্রাহাম নার্স কে বলে এক বাটি সবজির স্যুপ নিয়ে আসে। স্যুপের বাটি নিয়ে বসতেই আইরাত তা দেখে নিজের নাক-মুখ সব কুচকিয়ে ফেলে৷
আব্রাহাম;; এমন করে লাভ নেই সোনা। হা করো জলদি জলদি।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন না আমি না আসলে খাবো না। মানে সিরিয়াসলি সবজির স্যুপ ইশশশ এগুলো নাকি মানুষ খায়।
আব্রাহাম;; না গরু-ছাগলে খায়।
আইরাত;; আসলেই তাই।
আব্রাহাম;; ত্যাড়ামি বাদ দিয়ে হা করো তো।
আইরাত;; খাবো না।
আব্রাহাম;; এর পর দুধ খাবে এক গ্লাস হা করো।
আইরাত;; ?
আব্রাহাম;; এই মেয়ে!
আইরাত;; আমার মাথা ঘোরাচ্ছে এখনই।

আব্রাহাম;; কিন্তু আমি তো তোমার সাথে এখন তেমন কিছু করলাম না। মাথা ঘোরানো, টক খেতে ইচ্ছে তো করবেই কিন্তু কিছুদিন পর।
আইরাত;; চুপ করেন। বেশরম পোলা।
আব্রাহাম;; বেশরম পোলার এখনো অনেক বেশরম গিরি করা বাকি আছে জান তবে তার আগে তুমি জলদি জলদি ঠিক হয়ে যাও। এবার হা করো।
আইরাত;; আমার সত্যি খুব বাজে লাগছে খেতে।
আব্রাহাম এবার তার হাত থেকে স্যুপের বাটি টা রেখে দিয়ে দুহাত ভাজ করে সরু দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত তো চুপসে গেলো।
আব্রাহাম;; খাবে না তুমি?
আইরাত;; না
আব্রাহাম;; কি বললা?
আইরাত;; না মানে..
আব্রাহাম;; আবার বলো!
আইরাত;; আ আ আসলে..
আব্রাহাম;; কি বললি আরেকবার বল।
আইরাত;; আমি খাবো খাবো, আমি খাবো।
আব্রাহাম;; এইবার এসো লাইনে।

আব্রাহাম চামুচ দিয়ে আইরাত কে খাইয়ে দিতে লাগে। খেতে খেতে হঠাৎ টিভি তে একটা নিউজ ব্রেকিং হিসেবে দেখায়। টিভিতে জার্নালিস্ট এর চিল্লানো তে আইরাত সেদিকে তাকায়। নিজের কথা মনে পরে যায়। সেও তো এই কাজেই নিযুক্ত ছিলো। আব্রাহাম খাইয়ে দিচ্ছিলো আইরাত কে তখনই নিউজ আসে চেলাপেলা সহ তায়াফের জঘন্য রকমের মৃত্যুর। টিভিতে তাদের লাশও দেখানো হয়েছে। আর এগুলো গত ২-৩ দিন যাবত লাগাতার দেখিয়েই যাচ্ছে। টিভিতে এগুলো দেখেই আইরাত তার চোখ সরিয়ে নেয় দ্রুত। ইশশশ কি বিভৎস দৃশ্য। আব্রাহাম জলদি হাতে রিমোট নিয়ে টিভি বন্ধ করে দেয়। তবে আইরাত অবাক তায়াফের লাশ দেখে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল জাস্ট ইগনোর দ্যাট।
আইরাত;; আব্রাহাম!!
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; সত্যি একটা কথা বলুন তো!
আব্রাহাম;; হুমম!
আইরাত;; আপনি এদেরকে মেরেছেন তাই না!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; কেনো মারলেন?
আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়।
আইরাত;; না মানে কি করেছিলো তারা আর তায়াফ তো….
আব্রাহাম;; আগে তুমি আমায় বলো যে তুমি কি তায়াফ কে চিনতে?
আইরাত;; আব…হ্যাঁ চিনতাম বলতে হোটেলেই কয়েক বার দেখা হয়েছে এই যা।
আব্রাহাম;; তোমাকে চিনতো?
আইরাত;; হ্যাঁ হয়তো।
আব্রাহাম;; কোহিনূরের আসল চোর সেই ছিলো।
আইরাত;; কিহ?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, আর তুমি যে তায়াফ নামে কাউকে চেনো তা আমাকে আগে বলো নি কেনো?
আইরাত;; আমি ভেবেছিলাম যে কোন কাজের না তাই আর কি…
আব্রাহাম;; তোমায় আগেই বলেছিলাম আমি যে এখানে কোন এক পিপড়ের সাথেও তোমার দেখা হলে আমাকে আগে বলবে। তুমি বলো নি।
আইরাত;; সরি জামাইজান। আর আসলে মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিলো আমার। তো এই কোহিনূরের জন্যই আপনি মেরেছেন ওকে?
আব্রাহাম;; শুধু তাই না।
আইরাত;; তাহলে!
আব্রাহাম;; আমার জিনিসে নজর দিলে মারবোই তো তাই না।
আইরাত বুঝলো ব্যাপার টা।
আইরাত;; তাই এতো বাজেভাবে মারবেন আপনি?
আব্রাহাম;; তাও তো কম হয়েছে।
আইরাত;; কিন্তু আ……
আব্রাহাম;; চুপ।

আব্রাহাম আইরাত কে খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষন পর ডক্টর আসে আইরাতের মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দিবে বলে। আইরাত সোজা হয়ে বসে আর আব্রাহাম তার পাশে দাঁড়িয়ে পরে। ডক্টর খুব সাবধানে আইরাতের মাথার ব্যান্ডেজের এক পাশে কাচি দিয়ে কেটে ফেলে তারপর তা আস্তে আস্তে করে খুলে ফেলে। হালকা মাথা টা চক্কর দিয়ে ওঠে তবে তা নরমাল ছিলো। ইনশাআল্লাহ কিছুদিনের মাঝেই আইরাত সুস্থ হয়ে যাবে। হালকা পাতলা কিছু ক্ষত থাকবে যেগুলো প্রোপার কেয়ার আর মেডিসিন নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।

আব্রাহাম;; ঠিক আছো?
আইরাত;; হ্যাঁ একদম।
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; জামাইজান আমরা বাড়ি কবে যাবো?
আব্রাহাম;; আগামীকাল ই বেবিগার্ল।
আইরাত;; না আমরা দেশে কবে যাবো?
আব্রাহাম;; কিছুদিন পরই। বাট একটা জিনিস!
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; আমাদের হানিমুন তো হলো না।
আইরাত চুপ করে বসে থাকে।
আইরাত;; যা যা হলো এইযে এতো দৌড়ঝাপ এর মাঝে আবার হানিমুন!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ। আচ্ছা দেশে যাই তারপর দেখা যাবে।
আইরাত;; হুমম।

এভাবেই সেইদিন টা গেলো। রাতে আব্রাহাম আইরাতের পাশেই থেকে যায়। পরেরদিন সকাল হলে আব্রাহাম সব নার্স দের বলে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যায়। কয়েক ঘন্টা পর আবার হস্পিটালে এসে পরে। এসে দেখে আইরাত বসে আছে। নার্স দের সাথে কেমন তেড়ে তেড়ে কথা বলছে সে। ব্যাপার টা আব্রাহাম বুঝতে পারে। আইরাতের ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে আর সে নার্স দের হাতে তা করাবে না। আব্রাহাম ইশারা দিয়ে সব নার্স দের কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে বলে। তারা বাইরে বের হয়ে আসে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের সামনে বসে পরে।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে বেবিগার্ল?
আইরাত;; কিছু না।
আব্রাহাম;; ড্রেস কেনো চেঞ্জ করছো না। আজ তো আমরা বাসায় যাবো তাই না!
আইরাত;; আমার ভালো লাগে না।
আব্রাহাম এক ক্ষীন দম ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরে। কেবিনের জানালার বড়ো পর্দাগুলো ভালোভাবে টেনে দিয়ে আসে। তারপর আইরাতের পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। একটা ব্যান দিয়ে তার চুলগুলো বেধে দেয়। কিছু না বলেই আইরাতের পরনের জামার পেছনের বাটন খুলে দিতে লাগে। ভরকে গিয়ে আইরাত তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে…
আইরাত;; আপনি করছেন কি?
আব্রাহাম;; তো বাসায় কি আমি এখন তোমাকে হস্পিটালের ড্রেস পরিয়ে নিয়ে যাবো?
আইরাত;; না।

আব্রাহাম;; তাহলে চুপ করে বসে থাকো আর যা করছি তা আমায় করতে দাও।
আইরাত চুপ হয়ে যায়। আব্রাহাম আইরাতের জামার বাটন খুলে দুপাশে কাধ থেকে নামিয়ে দেয়। আব্রাহামের চোখ যায় আইরাতের কোমল কাধ-পিঠের ওপর। সাদা চামড়ায় কেমন একটা কালচে দাগ রয়েছে। একটাই। আব্রাহাম তার ওপর হাত দিয়ে হালকা ভাবে ছুইয়ে দেয়। আইরাতের কেমন যেনো লাগে। তার ভয় যদি ক্ষত আব্রাহামের হাতে লাগে। সে চায় না তার জন্য আব্রাহামের কিছু হোক।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ ধরবেন না।
আব্রাহাম আইরাতের কথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়ে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; আমি ধরবো, আমি ছুবো সব আমিই করবো। তাতে তোমার কি!

এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের ক্ষত স্থানে গাঢ় চুমু এঁকে দেয়। আইরাতের ড্রেস চেঞ্জ করে একটা ঢোলাঢুলা লম্বা জামা পরিয়ে দেয়। হাতে সুই লাগানো ছিলো সেটা ডক্টর এসেই খুলে দিয়েছে যদিও কিছুটা ব্লাড বের হয়েছে তাতে। আইরাতের যাবতীয় সব জিনিস গার্ড কে দিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়েছে আব্রাহাম। আইরাত ভালোভাবে হাঁটতে পারে না এর জন্য ডক্টর শুধু বলেছিলো যে আইরাত কে হুইল চেয়ারে বসিয়ে তারপর নিয়ে যেতে। আল্লাহ, ডক্টরের এটা বলতে দেরি কিন্তু ডক্টরের গুষ্টি উদ্ধার করতে দেরি না আব্রাহামের। আইরাত খুব কষ্টে আব্রাহাম কে সামলিয়েছে ঝামেলা করতে মানা করেছে।

আব্রাহামের মতে “আমার বউ কে হুইল চেয়ারে বসানোর কথা মুখে তো দূর মাথায়ও আনার সাহস হলো কি করে তোর!?”। আইরাত সত্যি খুব কষ্টে সামাল দিয়েছে তাক্ব। আব্রাহাম আইরাত কে পাজাকোলে তুলে নেয়। আইরাতও আব্রাহামের গলা জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে থাকে। আব্রাহাম যে আইরাত কে এতো বড়ো হস্পিটালের মাঝ দিয়ে কোলে করে নিয়ে আসছে সবাই তাকিয়ে ছিলো তাদের দিকে। তাতে আব্রাহামের কি সে তার মতো করেই যাচ্ছে। আইরাত কে বাইরে এনে গাড়িতে তুলে নেয়। তারপর আবার নিজের বাড়ি। তাদের সেই বাড়ি যা আব্রাহাম শুধুমাত্র তার আর আইরাতের জন্য নিয়েছিলো। তাদের স্বপ্নের বাড়ি। সেখানে টাফি-সফটিও আছে। আজ এতোদিন পর নিজের বাড়ি যাচ্ছে তারা। হয়তো কিছুদিন পর নিজের দেশের মাটিতেও পা রাখা হবে তাদের।

সাদা পর্দা ভেদ করে রোদের মিষ্টি আলো মুখের ওপর আচড়ে পরতেই কপাল জোড়া খানিক কুচকে ফেলে আইরাত। চোখ গুলো মেলে তাকায়। নিজের দিকে তাকাতেই দেখে শুধু একটা ফ্রক পরে বুক অব্দি চাদর টেনে শুয়ে আছে সাদা ধবধবে বিছানায়। পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। হালক বাতাস এসে রুমের পর্দা গুলো নাড়িয়ে দেয়। আস্তে করে একটু উঠে বসতে ধরে কিন্তু পারে না। তখনই আব্রাহাম আসে হাতে একটা ব্রেকফাস্টের ট্রে নিয়ে।
আব্রাহাম;; আরে আরে দাড়াও, আমি আসছি তো।

আব্রাহাম এসে আইরাত কে ধরে আস্তে করে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়। তার পিঠের পিছে একটা বালিশ রেখে দিয়ে হেলান দিয়ে বসায়। আব্রাহাম ব্রেকফাস্টের ট্রে টা এনে এক সাইড দিয়ে রেখে দেয়। আইরাতের সামনে আসা খোলা চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দেয়। সে এক মনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়েই আছে৷ আব্রাহাম আইরাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে মাথার পেছনে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে দেয়। আইরাতও আব্রাহামের চুল গুলো এলোমেলো করে দেয় হাত দিয়ে। তবে হঠাৎ বসে থাকতে থাকতেই আইরাত কপাল কুচকে মাথার আশে হাত দিয়ে দেয়। আব্রাহাম তো হাইপার হয়ে গেলো।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আর ইউ ওকে? মাথায় ব্যাথা করছে?

আইরাত;; না না ঠিক আছি আমি।
আব্রাহাম;; হুমম। আচ্ছা খেয়ে নাও।
আইরাত তাকিয়ে দেখে ট্রে তে ডিম, দুধ, কলা, জুস আর স্যুপ। যা দেখে আইরাত মুখ টা ভেটকিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; মুখের এই অবস্থা কেনো? (গম্ভীর ভাবে)
আইরাত;; জুস আর কলা পর্যন্ত ঠিক আছে আর বাকি গুলো কেনো?
আব্রাহাম;; এগুলো সব মাথায় ঢালবো তো তাই আর কি।
আইরাত;; এহ?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।

আইরাত;; কিন্তু আমি তো এগুলো…..
আব্রাহাম;; তুমি এগুলো খাও না। কি তাই তো!
আইরাত;; অবশ্যই, আবার জিগায়।
আব্রাহাম;; কিন্তু এগুলো এখন তোমার দরকার বেইবি।
আইরাত;; আব্রাহাম আমি বলতে পারবো না যে আমার এগুলো কি পরিমাণ বিরক্তি লাগে খেতে। আপনি বুঝেন না কেনো? আমার কি কি পছন্দ আপনি জানেন না!?
আব্রাহাম দেখলো আইরাত রেগে যাচ্ছে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা আচ্ছা কুল ডাউন। রেগো না। লিসেন ডিম সিদ্ধ খেতে হবে, দুধও খেতে হবে আর স্যুপও। এগুলোতে ক্যালসিয়াম, আয়রন আছে। মোট কথা তুমি শুকিয়ে গেছো এই কয়েকদিনে যা আমার মোটেও ভালো লাগে না। এখন আমি তোমাকে খাওয়াবো আর গোলুমোলু বানিয়ে ফেলবো।

আইরাত;; ?
আব্রাহাম;; মুখ খুলো।
আইরাত;; আচ্ছা এগুলো কি আপনি রান্না করেছেন?
আব্রাহাম;; অবশ্যই, আবার জিগায়।
আব্রাহাম জাস্ট আইরাত কে হাসানোর জন্য বলেছে আর আইরাতও আব্রাহামের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দেয়।
আব্রাহাম স্যুপ আইরাতের মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে আর আইরাত হাতে জুস নিয়ে বসে আছে।
আইরাত;; আপনিও খান।
আব্রাহাম;; হুমম।

আব্রাহাম আইরাত কে অর্ধেক জুস টুকু খাইয়ে দিয়ে তারপর নিজে খেয়ে নেয়। তবে এখানে একটা ব্যাপার হচ্ছে যে আব্রাহাম-আইরাতের এই বাড়িতে কোন স্টাফ নেই। একটা স্টাফও নেই। বাসায় শুধুমাত্র দুইজন। গার্ড প্রচুর পরিমাণে রয়েছে তবে সব বাড়ির বাইরে আর চারিপাশে। আব্রাহাম চায় না যে তার আর আইরাতের এই বাসায় তাদের দুজন ছাড়া অন্য কেউ থাকুক।
খাওয়ানো শেষে ট্রে টা হলরুমে রেখে আসে। তারপর রুমে এসে দেখে আইরাত বিছানাতে থেকে নামার ট্রাই করছে। আব্রাহাম এবার একটু ধমক দেয়।
আব্রাহাম;; আসলেই বেশি বুঝো তুমি।
আইরাত;; ?
আব্রাহাম;; কি? আমি কি নেই নাকি। বলে যে গেলাম যে আমি আসছি একা নামবে না, মাথা ঘুরে পরে যাবে। ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে।

আব্রাহাম এসে আইরাত কে কোলে তুলে নেয়। ওয়াসরুমের কাছে গিয়ে পা দিয়ে দরজা খুলে দেয়। তারপর ভেতরে গিয়ে বড়ো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পরে। আইরাতের ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে দেয়। আইরাত আস্তে আস্তে ব্রাশ করছে আর আব্রাহাম তার মাথার চুলগুলো ওপরে বেধে দেয়।
অবশেষে ফ্রেশ হয়ে এসে পরে। গায়ে বাথরোব জড়িয়ে রুমে এসে পরে। আব্রাহাম খেয়াল করে আইরাতের চুলের আগাল বেয়ে টপ টপ করে পানি পরছে। একটা টাওয়াল হাতে নিয়ে আব্রাহাম দ্রুত আইরাতের চুলগুলো প্যাচিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; এই মেয়ে!
আইরাত;; কি হইছে?
আব্রাহাম;; আমি বহুত ভালাবাসি তরে।
আইরাত;; আপনি কি শুরু করলেন?
আব্রাহাম;; না মানে অনেকদিন যাবত না গ্রামীণ ভাষায় কথা বলি না তো। সো ভাবলাম যে নিজের বউ এর সাথে একটু ট্রাই করি এই আরকি।
আইরাত;; সত্যি বলতে কি আপনি যখন মাঝে মাঝে আপনার শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে গ্রাম্য ভাষা বলেন না তখন…
আব্রাহাম;; হুমম তখন?
আইরাত;; আপনাকে কি যে ভালো লাগে।
আব্রাহাম;; সিরিয়াসলি?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; বলি?
আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা।
আব্রাহাম;; আহাম.. আহাম।

“এইযে মাইয়া হুনো, মুই না তোমারে বহুত ভালাবাসি বুঝঝো নি! মোরে জীবনেও ছাইড়া যাইয়ো না বুঝলা নয়তো মুই টাস কইরা পইরা টুস কইরা মইরা যামু। হের লেইজ্ঞা মোরে থুইয়া কহনো কোনোদিন যাইয়ো না হ্যাঁ!”
আইরাত আর কি বলবে আব্রাহামের কথা শুনে সে হাসতে হাসতে শেষ। আব্রাহাম এতো বেশি সিরিয়াস ভাবে নিয়ে নিবে তার কথা ভাবেই নি। তবে আব্রাহামের মুখে এমন কথা হুট করেই, এটা অবাক করা বিষয়। আইরাত যেনো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে বিছানার ওপর। আইরাতের অবস্থা দেখে এবার আব্রাহামও ফিক করে হেসে দেয়।
আইরাত;; সত্যি সেই ছিলো। আপনি এভাবে গ্রামের ভাষা পারেন তা জানা ছিলো না আমার।

আব্রাহাম;; এখন জেনে নাও।
আইরাত;; এইযে চৌধুরী!
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; আলাভুউউউ।
আব্রাহাম;; লাভ ইউ টু। এবার ড্রেস চেঞ্জ করে নাও জলদি।
আইরাত;; হুমম, আচ্ছা আমরা কি আর সেই আগের হোটেলে যাবো না?
আব্রাহাম;; না, আমরা এখানেই কিছুদিন থেকে তারপর দেশে চলে যাবো।
আইরাত;; হুমম। তো চলুন না আজ-কালের মাঝেই চলে যাই।
আব্রাহাম;; মাথা খারাপ নাকি। তোমাকে নিয়ে এখন ট্রাভেল করবো না। আর বড়ো কথা হচ্ছে বাড়ির কাউকেই আমি জানাই নি যে তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। তো আমি সত্যিই কাউকে এটা জানাতে চাচ্ছি না। তা আগে হোক বা পরে।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা।

আইরাত কে আয়নার সামনে বসিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিচ্ছে আব্রাহাম। তখনই দৌড়ে দৌড়ে টাফি-সফটি আসে। এসেই আইরাতের পায়ের কাছে নিজেদের গা ঘেষতে লাগে। তাদের কোলে তুলে নেয়। আইরাতের কোলে পরম আবেশে তারা শুয়ে থাকে। এভাবেই বেশ সময় চলে যায়। এক সময় বিকেলের বেলা নেমে আসে। আব্রাহাম হাতে একটা বই নিয়ে পরছে। আইরাত আব্রাহামের কোলে হাত-পা গুটিয়ে শুয়ে আছে আর তার কোলেই টাফি-সফটি। তাদের বড়ো বড়ো সাদা লোমগুলোতে আইরাত হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আইরাত;; এই চৌধুরী!
আব্রাহাম;; হুমমমম।
আইরাত;; আমার….
আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না, বোরিং লাগছে তাই তো?
আইরাত উঠে বসে পরে।
আইরাত;; আপনি কি করে জানলেন?
আব্রাহাম;; হুমম আমি জানবো না তো কে জানবে! আচ্ছা এবার উঠো দেখি।
আইরাত;; কোথায় যাবো?
আব্রাহাম;; দুচোখ যেদিকে যায়।
আইরাত;; উফফ আবার!

আব্রাহাম আইরাত কে একটা ছোট বেবি ব্যাগ পরিয়ে দেয়। সেখানে সে টাফি-সফটি কে কোলে তুলে নেয়। মনে হচ্ছে এরাই বেবি। একটা সাদা লম্বা জামা পরে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বুকের কাছে একটা বেবি ব্যাগ নিয়ে টইটই করে ঘুরছে আব্রাহামের পেছন পেছন। আর আব্রাহামও একটা সাদা শার্ট পরে নেয়। আশেপাশে সব করিডরের দরজা গুলো খুলে দিয়ে আসে। আইরাত কে নিয়ে বাইরের দরজা খুলে চলে যায়। আইরাত কে বেশি দৌড়ঝাপ বা লাফালাফি করতে মানা করেছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা।

আব্রাহাম;; আইরাত একদম লাফাবে না।
আইরাত;; আমি তো লাফাবো।
আব্রাহাম;; পুরোপুরি সুস্থ হওনি তুমি বেবিগার্ল। এর জন্য বলেছি।
আইরাত একটা ফাকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।
আইরাত;; এই চৌধুরী কোথায় যাবো আমরা? আর প্লিজ এবার বলবেন না যে যেদিকে দুচোখ যায়।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯+৪০

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে হাঁটতে লাগে। হেঁটে যেতে যেতেই একদম খোলা একটা জায়গায় এসে পরে। এখানে মাথার ওপরে রয়েছে নীল-সাদার সংমিশ্রণের বিশালতার আকাশ, মাটির ওপরে হরেক রকমের ফুল। বৃহৎ আকারের এক ফুলের বাগান। দেখে এমন মনে হয় যে কেউ আবেশে রঙ তুলি দিয়ে রাঙিয়ে রেখে দিয়েছে যা ফুলের বাগান হিসেবে আমরা দেখতে পারছি। বাগানের ঠিক মাঝেই আব্রাহাম তার আইরাত কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে?
আইরাত;; নাহ
আব্রাহাম কপাল কুচকে ফেলে।
আব্রাহাম;; আসলেই পছন্দ হয় নি?
আইরাত;; আমার সব পছন্দ, ভালোলাগা/ভালোবাসা সবই তো আপনাকে ঘিরে জামাইজান। তাহলে সেখানে এগুলো কে কীভাবে পছন্দ হবে বলুন।

আব্রাহাম নিজের মাথা আইরাতের মাথার পাশে হালকা করে ঠেকিয়ে দিয়ে হেসে ওঠে। আইরাতের কানের নিচে চুমু এঁকে দেয়। এক দমকা বাতাস এসে আইরাতের চুলগুলো উড়িয়ে নিয়ে যায় আর দিয়ে যায় এক সজীবতার ছোয়া। আইরাতের কোলে কুকুর ছানা দুটো খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। তারা আব্রাহাম-আইরাত কে একসাথে দেখলেই হেসে দেয়। আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের পেটে আর কোমড়ে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা রেখে দেয়। আইরাতের মুখে ফুটে ওঠে গাঢ় হাসি। এভাবেই তাদের প্রেমময় মূহুর্ত টা কেটে যেতে লাগে।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪৪+৪৫+৪৬