নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯+৪০

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯+৪০
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত রেডি হয়ে সোজা চলে যায় আব্রাহামের অফিসে। তার মুখের মাঝে রাগ আর জেদ স্পষ্ট। আইরাত বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রায় বিশ মিনিট পর অফিসে পৌঁছায়। অফিসে গিয়েই দেখে সবাই একদম চুপচাপ শান্ত। আইরাতকে দেখে রোদেলা এগিয়ে আসে, আইরাতের সাথে কথা বলতে যাবে কিন্তু আইরাত পাশ কাটিয়ে চলে আসে। কারো সাথে কোন কথাই বলে না। সোজা এসে পরেছে। আইরাতের এমন হাবভাব দেখে রোদেলা বেশ অবাক হয়ে যায়। যাই হোক আইরাত আব্রাহামের কেবিনে চলে যায় সরাসরি। না বলে কয়েই বিনা পারমিশনে। আব্রাহাম বসে বসে ফোনে কথা বলছিলো তখনই আইরাতকে এমন তেড়ে আসতে দেখে আব্রাহাম তার দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; গুড মর্নিং বে………
আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত তার কাছে এসে ঠাস করে একটা কাগজ আব্রাহামের টেবিলের ওপর রাখে। টেবিলের ওপর হাত দিয়ে কিছুটা ঝুকে রয়েছে আর রাগে লাল হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম একবার আইরাতের হাতের দিকে তাকায় আরেকবার আইরাতের দিকে।
আইরাত;; আমার রেসিগন্যাশন লেটার। আমি এই চাকরি ছাড়ছি।
আব্রাহাম;; তুমি হয়তো….

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আইরাত;; রাখেন আপনার এক বছরের কমিটমেন্ট। আমি চাকরি করবো না মানে না শুনেছেন আপনি। And don’t you dare to stop me ok!
আব্রাহাম;; ন্যাহ, একদম না। আমি আটকাবো না তোমাকে যা ইচ্ছে করতে পারো।
আইরাত;; আপনি আমাকে আটকানোর কে হন? Who the hell are you?
আব্রাহাম;; আপাতত কেউই না কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ই হয়ে যাবো।
আইরাত;; হাহ, দিনের বেলা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন।
আব্রাহাম;; হয়েছে তোমার?
আইরাত;; হ্যাঁ এটাই বলতে এসেছিলাম আপনাকে আর এখন শেষও বলা তাই চলে যাচ্ছি।
আব্রাহাম;; আইরাত!

আইরাত এক ঝটকায় আব্রাহামের কেবিন থেকে চলে আসে। আব্রাহাম আটকায় না আইরাত রেগে মেগে চলে আসে। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম শুধু একটা দম ফেলে কেননা এমনটা হওয়ারই ছিলো। সাননে তাকিয়ে দেখে আইরাতের রেসিগন্যাশন লেটার টা। আব্রাহাম তুলে তা হাতে নিয়ে নেয়। তারপর লাইটার দিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। নিমিষেই তা ছাইয়ে পরিনত হতে লাগে।
আব্রাহাম;; রাগ করবে সারাজীবন করে থাকো মানা নেই। রেগে থাকলেও আমার কাছেই থাকবে। যাই হয়ে যাক ছেড়ে যাবে না। আমি যেতে দিবোই না।
আগুনের আভাগুলো যেন আব্রাহামের চোখের মনি তে জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠেছে।

আইরাত আর কাউকে কিছু না বলেই ভার্সিটি চলে গিয়েছে। নিজের ক্লাস রুমে চুপ করে এক জায়গায় বসে পরে। দিয়া আইরাতকে দেখে দ্রুত তার পাশে এসে বসে।
দিয়া;; কিরে এসেছিস আমি তো ভেবেছিলাম যে আসবি না!
আইরাত;; হ্যাঁ পড়া গুলো তুই পড়ে দিবি তাই তো!?
দিয়া;; আস্তে ভাই চেইতা যাইতেছিস ক্যান?
আইরাত;; ভালো লাগছে না রে কিছুই।
দিয়া;; আচ্ছা শোন আব্রাহাম ভাইয়ার সাথে তোর কি কিছু হয়েছে নাকি?
আইরাত;;

দিয়া;; কিরে বল!
আইরাত;; না কিছুই হয় নি। এমনি জাস্ট ভালো লাগছে না আমার।
দিয়া;; অফিসে যাস নি?
আইরাত;; আমি আর ওখানে যাবো না চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।
দিয়া;; বাড়িতে কেউ কিছু বলবে না?
আইরাত;; বললে বলুক। দরকার পরলে বাড়িও ছেড়ে দিবো। একদম একা হয়ে যাবো। কাউকে এখন আর ভালো লাগে না। আমার ওপর দিয়ে যে কি যাচ্ছে তা কেবল আমিই জানি।
দিয়া;; আমাকেও ছেড়ে দিবি ??
আইরাত;; ঘোড়ার ডিম।

আইরাত আর দিয়া ক্লাস করে চলে গেলো। আইরাত ভার্সিটির গেটের বাইরে এসে চলে যেতে ধরবে তখনই নিজের ওরনাতে টান পরে। আইরাত ফট করে মাথা ঘুড়িয়ে পেছনে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার ওরনার এক পাশ ধরে রেখেছে। আইরাতের মেজাজ ৪৪০ হয়ে গেলো আব্রাহাম কে দেখে।
আইরাত;; আবার আপনি? এখানে কি করছেন?
আব্রাহাম;; একটা বার বলো তো যে কি করতে হবে আমায় আমি তাই করবো। প্লিজ দূরে যেও না।
আইরাত;; এক কথা বারবার শুনতে মজা লাগে না।
আব্রাহাম;; আই এম সরি।
আইরাত;; সরি! সরি! সরি তাই না সরি! ওয়েট আপনার কে তো আমি……

আইরাত এই কথা বলেই তার আশে পাশে কি যেনো একটা খুজতে লাগলো। আর পেয়েও গেলো। আইরাত তার হাতে একটা বেশ বড়োসড়ো পাথর নিলো তারপর আব্রাহামের গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। ঠাস করে গাড়ির সামনের দুই হ্যাডলাইট ভেঙে দিলো। তারপর আবার গাড়ির দুই পাশের দুই উইন্ডো গ্লাস ভেঙে দিলো। একদম ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। আইরাত তার হাত থেকে পাথর টা ফেলে দিয়ে দুই হাত ঝেড়ে ঝেড়ে আব্রাহামের সামনে আসে। দুইভাত ভাজ করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
আইরাত;; আপনার সরি আপনাকেই মুবারাক। আই এম সরি!! ভুল হয়ে গেছে আর হবে না।
আব্রাহাম;;

আইরাত;; দেখুন তো আব্রাহাম কাচ গুলো আবার জোড়া লেগেছে কি না। দেখুন দেখুন। লেগেছে? লাগে নি তাই তো। ঠিক তেমন আমিও। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনি আমার সাথে ওইসব করেছেন। ভেঙে দিয়েছেন আপনি আমাকে। আমি আর জোড়া লাগবো না ঠিক এই কাচের মতো।
আব্রাহাম;; যা ইচ্ছে বলো, যা ইচ্ছে করো।
আইরাত;; ইচ্ছে তো করে আপনাকেও খুন করে ফেলতে কিন্তু পারি না।
আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে নেয় আব্রাহাম তখন আইরাতের হাত ধরে থামিয়ে দেয়। আইরাত রাগি ভাবে একবার আব্রাহামের হাতের দিকে তাকায় আরেকবার আব্রাহামের দিকে তাকায়। এবার আইরাত তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আব্রাহামের গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা কাচের টুকরো তুলে নেয় হাতে। তারপর আবার আব্রাহামের কাছে আসে। আব্রাহামের হাত টা নিজের হাতে তুলে নেয়। আইরাত আব্রাহামের দিকে আর আব্রাহাম আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; সব মানুষের দুটো রুপ থাকে। মানুষ আর হিংস্র পশুর রুপ। সেইদিন রাতে আমি আপনার পশুর রুপ তো দেখে নিয়েছি কিন্তু আফসোস আমি আপনার মতো এতোটা পশু না। তাই আপনি দেখতে পারবেন না। আর এতোদিন আপনি তো আমার ভালোবাসা দেখেন নি তবে এখন আমার ঘৃণা ঠিকই দেখবেন।
এই বলেই আইরাত তার হাতে থাকা কাচের টুকরো টা দিয়ে আব্রাহামের হাতের তালুতে বেশ বড়ো একটা আচড় কাটে। মূহুর্তেই হাতের চামরার ভাজ গুলো কেটে গিয়ে রক্ত নেমে পরে।
আইরাত;; আপনি তো ঠিক এভাবেই আমার হাতও সেইদিন কেটে দিয়েছিলেন ছুরি দিয়ে তাই না। এটা তার জন্য।
আইরাত এটা বলেই আরেক টা টান দেয় কাচ দিয়ে আব্রাহামের হাতে।
আইরাত;; এটা মানুষ কে খুন করার জন্য। আমি জানি আপনি বিনা দোষে কাউকেই মারেন না কিন্তু তবুও এতোটা নির্মম এতোটা নির্দয় হবার জন্য।

আইরাত এটা বলেই আরেক টা ঘা বসিয়ে দেয় আব্রাহামের হাতে। তারপর লাগাতার একসাথে অনেক গুলো আচড় কাটেতে থাকে আব্রাহামের হাতে। আইরাতের হাতে যতো গুলো সহ্য হয় ঠিক ততগুলোই আচড় কেটে গেছে। একসময় আইরাত থেমে যায়।
আইরাত;; আর এগুলো ছিলো সেইদিন আমার ওপর ওমন ভাবে ঝাপিয়ে পরার জন্য। আমার ওপর বিশ্বাস না রাখার জন্য। আমার কথা একটা বার না শোনার জন্য।
আইরাতের নিজের চোখেও পানি চিকচিক করছে। সে তার হাত থেকে কাচের টুকরো টা ছুড়ে ফেলে দিয়ে আব্রাহামের সামনে থেকে চলে আসে।

আইরাত যখন আচড় গুলো কাটছিলো আব্রাহামের হাতে আব্রাহাম তখন এক ধ্যানে আইরাতের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। এমনকি চোখের পলক অব্দি ফেলে নি। আসলে আইরাতের মাঝে একদিনেই তার প্রতি ঠিক কি পরিমান ঘৃণার জন্ম নিয়েছে আব্রাহাম তাই দেখছিলো। আইরাত রাগ করে এগুলো করলেও আব্রাহাম তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়েই ছিলো। যেনো তার কোন ব্যাথাই লাগছে না এতে। আইরাত তার সামনে থেকে চলে আসলে আব্রাহাম সেখানে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। হাত টা কেটে একদম বলি দিয় ফেলেছে।

অঝোরে রক্ত গড়িয়ে পরছে কিন্তু সেদিকে আব্রাহামের কোন খেয়ালই নেই। আইরাত চলে গেলে আব্রাহাম নিজেও সেখান থেকে চলে আসে। আব্রাহাম অফিসে চলে যায়। তার যে কাটা হাত টা আছে সেটা সে আর ব্যান্ডেজ করে নি। ভাবলেশহীন ভাবে অফিসের সবার সামনে দিয়ে এভাবে এসে পরেছে। সবাই তো পুরো তাজ্জব লেগে গেছে। সাথে ভয়ও পেয়েছে। সবাই ভেবেছে আব্রাহাম হয়তো কাউকে খুন করে এসেছে বা মেরে এসেছে। এটা রাশেদেরও চোখে পরে। আব্রাহাম কে কিছু জিজ্ঞেস করবে কিনা তাতেও ভয় পাচ্ছে। আব্রাহাম যখন কেবিনে চলে যায় তখন রাশেদ হাতে একটা মেডিসিনের বক্স এনে তার কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। রাশেদের আত্না আগেই কাপছে আব্রাহাম কে কিছু বলবে তো দূরে থাক। তবুও কাপা কাপা স্বরে বলে ওঠে….

রাশেদ;; স স স্যার, স্যার আসবো?
আব্রাহাম;;
রাশেদ;; স্যার স স, স্যার আসবো?
আব্রাহাম;; এসো।
রাশেদ ভেতরে কেবিনে গিয়ে দেখে আব্রাহাম তার কাটা হাত টা নিচে রেখে দিয়ে আরেক হাতে নিজের কপাল চেপে ধরে রেখেছে। চোখ গুলো বন্ধ করে রেখেছে। খুব শান্তই লাগছে দেখে।
রাশেদ;; স্যার মানে আসলে বলছিলাম কি যে ব্লিডিং হচ্ছে আপনার হাত দিয়ে।
আব্রাহাম;;
রাশেদ;; স্যার পরে প্রব্লেম হবে দিন ব্যান্ডেজ করে দি।
আব্রাহাম;;
রাশেদ;; স্যার হাত কি করে কাটলো। স্যার অসুস্থ হয়ে পরবেন হাত টা দিন।

আব্রাহাম কিছু বলছে না দেখে রাশেদ আব্রাহামের হাত টা নিজের কাছে নিয়ে নেয়। ব্লাড গুলো ভালো ভাবে পরিষ্কার করে দেয়। আব্রাহাম নিজের চোখ বন্ধ করেই রেখেছে। আইরাতের বলা এক একটা কথা যেন তার কানে বাজছে। রাশেদ আব্রাহামের হাত টা ব্যান্ডেজ করে দিয়ে উঠে চলে যায়। এদিকে আব্রাহামের যেন শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে আইরাত কে ছাড়া। নিজেকে নিজেরই শুট করে দিতে ইচ্ছে করছে। আজ তার, একমাত্র তার দোষের ফলেই তার আইরাত আজ তাত থেকে এতো দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলেই তো আর চলবে না। এভাবে হাতে হাত রেখে দিলে হবে না। আইরাত অনেক রেগে আছে। কিছু তো করতেই হবে। আব্রাহাম রকিং চেয়ারে বসে বসে এগুলোই ভেবে চলেছে।

আইরাত তার বাসায় চলে যায়। গিয়ে দেখে তার চাচা-চাচি এসে পরেছে। আইরাতের চাচি কে দেখে আইরাতের রাগে আরো গা জ্বলে যাচ্ছে। এই মহিলা টার বেশি বুঝার ফল আজ এগুলো। আইরাত কাউকে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে যেতে ধরলে আইরাতের চাচি ডাক দেয়….
কলি;; এসেছিস?
আইরাত;; কেনো বাসায় এসেছি দেখে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে।
কলি;; এখনো রেগে আছিস?

আইরাত;; তুমি যা করেছো তার জন্য আমি একদম শেষ হয়ে গিয়েছি চাচি। একটা বার আমাকে জিজ্ঞেস তো করতে যে আমি আদৌ কাউকে পছন্দ করি কিনা, কাউকে ভালো লাগে কিনা বা এখনই আমি বিয়ে জন্য রেডি কিনা। না বলে কয়েই বিয়ে ঠিক করে নিয়েছিলে। বিয়ে কি আমাকে তো একদম তুলে দিতে চেয়েছিলে বিয়ে করিয়ে। আজ একমাত্র তোমার জন্য রকমাত্র তোমার জন্য আমার জীবনে আজ তুফান বইছে।

এই কথা বলেই আইরাত তার রুমে চলে যায়। কলি আর কি বলবে সে এখন বুঝতে পারছে যে আসলেই তার কাউকে না জানিয়েই এতো বড়ো একটা ডিসিশন নেওয়া উচিত হয় নি। কলিও সেখান থেকে চলে আসে। তবে এগুলো ইকবাল সাহেব দেখেন। বুঝতে পারলেন যে আইরাত হয়তো কোন ঝামেলায় আছে।
ওদিকে আব্রাহাম উঠে পরে লেগে গেলো আইরাতের রাগ ভাঙানোর জন্য। আইরাত যে তার হাত কেটে দিয়েছে তার দিকে তাকিয়ে নিজের আনমনেই হেসে ওঠে। সেও দেখবে যে আইরাত তার সাথে ঠিক কি কি করতে পারে। আব্রাহাম তো জীবনেও হাল ছারার পাত্র না। দেখা যাক শেষ কি হয়। আইরাত রাগ করতে করতে হেরে যায় নাকি আব্রাহাম তার রাগ ভাঙাতে ভাঙাতে হেরে যায়।

পরেরদিনও আইরাত তার কলেজে চলে যায়। এখন তার কাছে এই ভার্সিটি আর বাসায় ব্যাস এই দুটোই যাওয়ার জায়গা। ক্লাসে স্যার লেকচার দিচ্ছিলো আর আইরাত তা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। হঠাৎ এরই মাঝে আব্রাহাম তার ভারি ভারি কদম ফেলে ক্লাসে ভেতরে এসে পরে। স্যার আব্রাহাম কে দেখে চুপ হয়ে যায়। আর ক্লাসে সবাই হা। এভাবে হুট করেই আব্রাহাম কে দেখবে কেউ ভাবে নি। আইরাত মাথা তুলে দেখে আব্রাহাম এসেছে। আইরাত তো ভেবে পায় না যে এই এখানে এই সময়ে কি করছে। আর ক্লাসে মেয়েদের কথা না হয় না বলাই রইলো। আব্রাহাম যাতে আইরাতকে না দেখতে পায় এর জন্য সে তার মুখের সামনে একটা বড়ো বই ধরে। কিন্তু তখন আব্রাহাম বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; হে ইউ গার্ল।
আইরাত কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
আব্রাহাম;; Hay you Brown Bird…
আব্রাহামের এই কথায় সবাই সোজা আইরাতের দিকে তাকায়। আর এবার আইরাতের সন্দেহ স্পষ্ট হয়। কেননা আইরাত ব্রাউন কালারের গোল জামা পরে আছে। আইরাত আস্তে আস্তে মুখের সামনে থেকে বই নামিয়ে ফেলে।
আব্রাহাম;; হাই।
আইরাত;; ??
আব্রাহাম;; কাম অন। চলে এসো।
আইরাত কোন রকমে নিজের রাগ টা কোন্ট্রল করে।
আব্রাহাম;; আরে চলে এসো তাড়াতাড়ি।
আইরাত;; আমার ক্লাস চলছে এখানে দেখতেই পারছেন ?।
আব্রাহাম;; সো হুয়াট, কাম।

আইরাত তাকিয়ে দেখে সে যে আব্রাহামের হাত কেটে দিয়েছিলো গতকাল তাতে আজ ব্যান্ডেজ করা। এরই মাঝে আব্রাহাম দ্রুত চলে আসে আইরাতের কাছে। তারপর আইরাতের হাত ধরে তাকে ক্লাসের সবার সামনে দিয়ে নিয়ে এসে পরে। আইরাত তার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আব্রাহাম ছাড়লে তো। আব্রাহাম আইরাতকে ক্যান্টিনে নিয়ে আসে ভার্সিটির। আইরাত এবার দাঁড়িয়ে পরে। কি যে রাগ লাগছে তার। আইরাত তার পাশে তাকিয়ে দেখে টেবিলে পানি রাখা। আইরাত সেই পানি নিয়ে সোজা আব্রাহামের মুখে ছুড়ে মারে। আব্রাহাম তার চোখ বন্ধ করে ফেলে তারপর আবার আইরাতের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; শেষ? মানে পানি শেষ নাকি রাগ শেষ কোনটা? আরো পানি লাগবে আরো ছিটা মারবে বলো আমাকে আমি এনে দিই।
আইরাত;; আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াহহহহহহহহহহহহহহ!!
আইরাত নিজের দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে রাগে দেয় এক চিল্লানি। সে আর পারছে না রাগ আটকাতে। রাগে এখন কেদেই না দেয়। আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম তাকে একটা মেকি হাসি দেয়। আইরাত আব্রাহামের কলার খামছে ধরে…

আইরাত;; কি তামাশা শুরু করেছেন এগুলো? সারারাত বাইরে ঝড়ের মাঝে দাড় করিয়ে রাখলাম, চাকরি ছেড়ে দিলাম, আপনার হাত টা পর্যন্ত কেটে দিলাম এতোখানি, মুখে পানি আর কতো মারবো তারপরও শিক্ষা হন না আপনি। এভাবে ভার্সিটির সবার সামনে দিয়ে টেনে নিয়ে আসার কোন মানে হয়। বিরক্তিকর।

এই কথা বলেই আইরাত চলে আসতে ধরে আর আব্রাহাম তার বাহু খামছে ধরে সোজা নিজের গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর চলে যায়। আর আইরাত যে এদিকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে গলা ফাটাচ্ছে তার দিকে কোন খেয়ালই নেই আব্রাহামের।
আব্রাহাম আইরাতকে গাড়িতে করে নিয়ে সোজা চলে আসে। নিজের আনমনেই গাড়ি চালাচ্ছে আব্রাহাম। এদিকে আইরাত এই যে চিল্লাচ্ছে, কথা বলছে সেগুলো যেনো আব্রাহামের কানের পর্দাকে উপেক্ষা করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। আইরাত আরো একটু চিল্লাতে যাবে তখনই তার কাশি উঠে পরে। কাশির বেগ তীব্র হয়ে এলে আব্রাহাম আইরাতের দিকে পানির বোতল টা এগিয়ে দেয়। আইরাত তা আব্রাহামের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। তারপর পানি খেয়ে কিছুটা শান্ত হয়। আব্রাহাম এক নজর আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে যে আইরাত এবার তার দুই হাত ভাজ করে গম্ভীর মুডে বসে আছে।
আব্রাহাম;; শেষ মানে এনার্জি শেষ কি? আরো করো বেশি করে চিল্লা-পাল্লা।

আইরাত তার অগ্নিদৃষ্টি আব্রাহামের দিকে নিক্ষেপ করলে আব্রাহাম কিছুটা বাকা হেসে আবার গাড়ি ড্রাইভ করাতে মন দেয়। দেখতে দেখতে এক সময় আব্রাহাম তার গাড়ি হাইওয়ে এর রোডে নিয়ে এসে থামায়। গাড়িটা এক সাইডে নিয়ে রাখে। এখানে বরাবরই গাড়ি-ঘোড়া বা মানুষ-জনের যাতায়াত বেশি। আব্রাহাম তার গাড়ি থেকে নেমে পরে। আইরাত কপাল কুচকে প্রথমে আব্রাহামের দিকে তকিয়ে থাকে তারপর সেও বাইরে নেমে পরে। দেখে এইটা একটা হাইওয়ে রোড।

আইরাত;; এই হাইওয়ে তে আমরা কি করছি? এখানে কেনো এলাম?
আব্রাহাম;; অবশ্যই কিছু না কিছু তো করতেই এসেছি।
আইরাত;; কিন্তু কি?
আইরাত আর আব্রাহাম রোডের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো,, তখন আব্রাহাম আইরাতের গলাতে হাত দেয়।
আইরাত;; এই কি করছেন?
আব্রাহাম;; তোমার গলার স্কাফ দাও।
আইরাত;; হুয়াট?

আব্রাহাম কিছু না বলেই আইরাতের গলা থেকে তার স্কাফ নিয়ে নেয়। ছোট একটা স্কাফ। আইরাতের গলা থেকে আব্রাহাম তার স্কাফ টা নেবার পর আইরাতের দিকে নিজের চোখ গুলো স্থীর রেখেই নিজের পেছন দিকে আস্তে আস্তে পেছাতে লাগে। অর্থাৎ রাস্তার মাঝে যাচ্ছে। মুখে ঝুলে আছে বাকা হাসি। আইরাত কিছুই বুঝতে পারছে না যে আব্রাহাম করছে টা কি। রাস্তা তে অনেক বেশির গাড়ি চলাচল করছে, এক একটা হাওয়ার বেগে যাচ্ছে। আইরাত একবার রাস্তার আশে পাশে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আব্রাহামের দিকে।

কিন্তু আব্রাহাম তো আইরাতের দিকে তাকিয়ে পিছিয়েই যাচ্ছে পিছিয়েই যাচ্ছে। এক সময় রাস্তার মাঝ বরাবর আব্রাহাম চলে আসে। আর তখনই আব্রাহাম তার হাতে থাকা আইরাতের সেই স্কাফ টা নিয়ে নিজের চোখে বেধে দেয়। আইরাতের মুখ তো পুরো হা হয়ে গেলো। এই করছে টা কি? আগে থেকে গাড়ির স্পিড যেনো আরো বেড়ে গেলো আর তার সাথেসাথে আইরাতের ভয়ও। আব্রাহাম নিজের মন মতো করে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে চোখ বেধে। আইরাত আর থাকতে না পেরে চিল্লিয়ে ওঠে…..

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি করছেন টা কি? আব্রাহাম প্লিজ সাবধানে গাড়ি গুলো খুব বাজে ভাবে চলাচল করছে। আব্রাহাম আপনি এমন করছেন কেনো?
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, আমি জানি আমি সাথে অনেক বেশি বাজে করে ফেলেছি। আর এর শাস্তি তো অবশ্যই আমায় পেতেই হবে তাই না। তাই নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি।
আইরাত;; কিহহহ? শাস্তি মানে? আব্রাহাম প্লিজ চলে আসুন। দেখুন একটা বার যদি কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লাগে তাহলে সব শেষ। আব্রাহাম প্লিজ চলে আসুন।
আব্রাহাম;; ধাক্কা লাগলে লাগুক বাট আমি যাচ্ছি না।

আব্রাহাম এবার এক পা এক পা করে হাটতে শুরু করলো। আর আইরাতের অবস্থা কাহিল। সে রাস্তার সাইডে থেকে অনেক ডাকাডাকি করছে আব্রাহাম কে কিন্তু কে শোনে কার কথা। আইরাত বেশ কয়েকবার নিজের পা রাস্তায় রাখার চেষ্টাও করেছে কিন্তু পা ফেলার আগেই গাড়ি এসে পরে। যাওয়া মুশকিল আব্রাহামের কাছে। তখনই হঠাৎ একটা গাড়ি আব্রাহামের সাথে একদম লাগে লাগে একটা অবস্থা। আইরাত চিৎকার করবে কিন্তু ভাগ্য ভালো তার আগেই সেই গাড়ির ড্রাইভার টা ব্রেক কষে দিয়েছে। আব্রাহাম তার চোখ থেকে স্কাফ টা সামান্য তুলে দেখে তার সামনে একটা গাড়ি থেমে আছে। আব্রাহাম উলটা সেই গাড়ির ড্রাইভার কে হাই বলে।

আর ওই গাড়ির ভেতরে যে মেয়েরা বা বাকি মানুষ রা ছিলো তারা উকি দিয়ে দিয়ে দেখছে৷ সেই গাড়ি তো চলে যায়। কিন্তু আব্রাহাম এবার নিজের দুই হাত দুই পাশে প্রশারিত করে রাস্তার মাঝখানে হেটে চলেছে। আইরাত এই ঠান্ডা আবহাওয়া তেও ঘেমে যাচ্ছে বারবার। আব্রাহাম কে অনেক ডাকছে এসে পরার জন্য কিন্তু লাভ নেই। আস্তে আস্তে আইরাতের আশেপাশে বেশ মানুষ জন জড়ো হতে লাগলো। সবাই আইরাতকে বলছে যে কি হয়েছে, কি হয়েছে? আর আইরাত ইশারাতে সামনে আব্রাহাম কে দেখাচ্ছে। এবার আইরাতের সাথে সাথে বাকি মানুষ রা সহ আব্রাহাম কে রাস্তার মাঝখান থেকে চলে আসতে বলছে কিন্তু শোনে না সে কথা।

আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন আমার ভীষণ ভয় লাগছে প্লিজ এসে পরুন। কখন কি হয় আব্রাহাম আপনি কি শুনতে পারছেন আমার কথা। আব্রাহাম?
আব্রাহাম;; সব শুনতে পারছি৷
আইরাত;; এমন পাগলামি গুলো করার কি কোন মানে হয়?। যখন নিজের জীবন হারাবেন তখন বুঝবেন।
আব্রাহাম;; ওহহ হ্যালো তুমি কাকে কি বলছো। জীবন-মন সব অনেক আগেই হেরে বসেছি আমি তোমাতে ?।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ এসে পরুন।
আব্রাহাম;; Then first say that you forgive me!?
আইরাত;; Not at all…

আব্রাহাম;; Ok fine then আমি যাবো না এখান থেকে।
আইরাত;; আব্রাহাম ফাজলামি করার একটা সীমা থাকে, ভালো লাগছে না আমার। প্লিজ চলে আসুন।
আব্রাহাম;; আগে বলো আমাকে ক্ষমা করেছো তারপর আসবো। নয়তো আমি আসবো না। আমার সাফ কথা আগে বলো যে তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো।
আইরাত;; না করি নি।
আব্রাহাম;; আমি যাবো না।

আইরাত তো এক মহা মুশকিলে পরলো। এই পাগল কে নিয়ে সে কি করবে। আইরাতের সাথে সাথে আরো অনেক মানুষ ই ডেকে চলেছে আব্রাহাম কে কিন্তু আব্রাহাম কোন কিছুরই পাত্তা দিচ্ছে না। সেম আগের মতোই হেটে যাচ্ছে রাস্তার মাঝে আব্রাহাম,, আইরাতের চিল্লাতে চিল্লাতে গলা ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা। আইরাত এবার যেন সমুদ্র আর খাদের মাঝ বরাবর পরে গেছে। আব্রাহাম কে মাফ করবে কি করবে না। আইরাত নিজের কপালে হাত দিয়ে দেয়। কি বিপদ রে বাবা। আইরাত টেনশনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর এগুলো ভাবছিলো। তখনই একটা গাড়ি আব্রাহামের দিকে বেশ জোর গতিতে এগিয়ে যেতে ধরে। আব্রাহাম তো নিজের মতো করে হাটছিলো তাই একদম ঠিক সময়ে সে সরে আসে গাড়ির সামনে থেকে। আর গাড়ির যে চালক ছিলো সে অতি ভয়ে দ্রুত ব্রেক কষতে গিয়ে আরেকটা গাড়ির সাথে কিছুটা ধাক্কা খায়। আইরাত জোর চিল্লিয়ে ওঠে আর সাথে মুখে দুই হাত দিয়ে দেয়।

আইরাত;; এই ছেলে পাগল। আমি সিওর পাগল। এই পাগল গাদর থেকে আসছে। এই যেখানেই যাক ওর তো কিছু হবেই না উলটো অন্য মানুষের ক্ষতি হবে।
আইরাত আবার ডাক দেয়।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ আমার একটা কথা তো শুনুন উঠে আসুন না।
আব্রাহাম;; আগে বলো আমাকে ক্ষমা করেছো কিনা?!
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ক্ষমা করেছি করেছি। একদম ক্ষমা করে দিয়েছি। এবার তো প্লিজ আসুন।
(করি নি ক্ষমা বেটা খবিশ, মনে মনে)
আব্রাহাম;; ন্যাহ ন্যাহ ন্যাহ।
আইরাত;; না মানে, আরে বললাম তো মাফ করে দিয়েছে এবার প্লিজ মাঝ রাস্তা থেকে চলে আসুন প্লিইইইইইইজ।
আব্রাহাম;; Say that ‘You love me’..
আইরাত;; কিহহহহহহ?

আব্রাহাম;; এই মেয়ে কানে বেশি শুনো নাকি? বলো যে তুমি আমায় অনেক অনেক অনেক ভালোবাসো বলো এটা।
আইরাত;; জীবনেও বলবো না আমি।
আব্রাহাম;; জীবনেও এখান থেকে যাবো না আমি।
আইরাত;; উফফফফ আব্রাহাম ?!
আব্রাহাম;; বলো তুমি আমায় ভালোবাসো বলো আগে আমি এসে পরবো,, আগে বলো।
আইরাত;; হায়রে আল্লাহ।

আইরাতের পাশে যে মানুষজন ছিলো এবার তারা মিটিমিটি করে হাসতে শুরু করলো। তারা সবাই বুঝলো যে আব্রাহাম-আইরাত দুইজন একচুয়ালি লাভ বার্ড”স্।
তবে গাড়ির যাতায়াত আর স্পিড যতো বেশি বাড়ছে আইরাতের বুকের ধুকপুকানি ঠিক ততো বেশিই জোরে বিট করছে।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ এবার তো চলে আসুন।
আব্রাহাম;; আগে বলো যে তুমি আমায় ভালোবাসো।
আইরাত বিরক্তি + রাগে মাথা ঘুড়িয়ে ফেলে। তখন একজন বৃদ্ধ মহিলা আইরাতের পাশে এসে তার কাধে হাত রাখে….
বৃদ্ধা;; মা
আইরাত;; জ্বি

বৃদ্ধা;; যতটুকু বুঝলাম ছেলেটা একটা উন্মাদ পাগল তোমার জন্য। রাগ-অভিমান সব সম্পর্কে তেই হয়। কিন্তু সেটা মনে বেশি দিন জমিয়ে রাখতে নেয়। আস্তে আস্তে পাহাড় সমান হয়ে যাবে। তাই রাগ বা অভিমানের পাহাড় গড়ার আগেই সেটা ভেঙে দাও। ভুল করেছে মাফ করে দাও না, বলে ফেলো যে ভালোবাসো।
আইরাত;; কিন্তু আমি তো….

বৃদ্ধা;; বলে ফেলো। ভালোবাসি কথা টা এমন একটা জিনিস যেটা বলে দিলেও মনে হবে যে কেনো বললাম আর না বললেও মনে হবে যে কেনো বললাম? তাই সবথেকে ভালো হবে যে বলে ফেলেই নিজেকে বলো যে কেনো বললাম। আর এখন যা দেখছি তোমার কাছে এটা বলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বলে দাও মা ☺️। (আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে)
আব্রাহাম;; জানপাখি আমার, আমি কি মরে যাবো??
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ!
আব্রাহাম;; আগে বলো যে তুমি আমায় ভালোবাসো।

আইরাতের পাশে থাকা সব মানুষই আইরাতকে বলে দিতে বলছে আর আইরাতের সামনে আব্রাহাম এমন অবস্থা করছে। এগুলো যেনো আইরাতের মাথা খেয়ে ফেলছে। একদিকে এরা সবাই আরেক দিকে এই সাইকো আব্রাহাম। কি করবে কি করবে না ভেবে পায় না। তখন আরেকটা গাড়ি সাই করে আব্রাহামের দিকে আসতে ধরলে আইরাত নিজের দুই হাত দিয়ে দুই কান চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে….
আইরাত;; আব্রাহাম আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি আমি আপনাকে। অনেক বেশি। আমি আপনাকে ভালোবাসি আব্রাহাম।
ব্যাস এটা বলার সাথে সাথেই আব্রাহাম হেসে দিয়ে নিজের চোখ থেকে আইরাতের স্কাফ টা খুলে ফেলে। মুখে তার ফুটে ওঠেছে গাঢ হাসির রেখা। আইরাত পিটপিট করে চোখ খুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে হেসে তাকিয়ে ছিলো ঠিক তখনই আরেকটা গাড়ি এসে এবার সত্যি সত্যি আব্রাহাম কে ধাক্কা মেরে দেয়।
আইরাত;; আব্রাহামমমমমমমমমমমমমমমমম!!

আইরাত এবার কেদেই দিয়েছে। সবকিছু ভুলে সোজা রাস্তার দিকে দৌড় লাগায়। এর মধ্যে রাস্তাতে সব গাড়ি গুলোই থেমে গিয়েছে। যে গাড়ি টা এসে ধাক্কা দিয়েছিলো তার ওনার বাইরে বের হয়ে আসে। সব থেমে গেছে। আইরাত দ্রুত গিয়ে আব্রাহাম কে ধরে আব্রাহাম একদম ব্যাথা পায় নি। শুধু কপালে চিকন একটা আচড় কেটেছে। আইরাত এসে সোজা আব্রাহামের জেকেট খামছে ধরে। আব্রাহাম তার চোখ থেকে আইরাতের স্কাফ টা খুলে নিজের হাতে পেচিয়ে নেয়। আইরাত তো কাদো কাদো ভাব। আব্রাহামের কপালে ছোট কাটা জায়গায় নিজের হাত রেখে দিয়েছে।
আইরাত;; আপনি ব্যাথা পেয়েছেন তাই না। সব আমার জন্য তাই না। আপনাকে কখন থেকে বলছি যে এসে পরুন এসে পরুন আপনি কথাই শুনেন না।

আব্রাহাম;; তুমি আমায় ভালোবাসো বলেছো।
আইরাত;; ধুর রাখুন তো। আপনার অনেক লেগেছে তাই না?
আব্রাহাম;; ন্যাহ একদম না ?।
আইরাত;; মিথ্যা বলবেন না।
আব্রাহাম;; আহা কাল যে আমার হাত কেটে দিয়েছিলে না তুমি তার থেকে এটা অনেকটাই কম।
আইরাত;; চুপ করুন তো। কি এক পাগলের পাল্লায় পরেছি আমি। দেখুন সব থেমে গেছে রাস্তায়।
গাড়ির ওনার;; আই এম সো সো সো সরি স্যার। আমি ভাবি নি এই সময়ে এভাবে আপনাকে দেখবো। কি বলবো আমি বুঝতে পারছি না। আই এম সো সরি আব্রাহাম স্যার। আপনার লেগেছে। স্যার সরি।

আব্রাহাম;; হে ম্যান ইট”স ওকে। ভুলে যাও। ব্যাপার না।
গাড়ির ওনার;; থ্যাংক ইউ স্যার।
এই বলেই সেই ব্যাক্তিটি তার গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
আইরাত আব্রাহামের দিকে ক্লান্ত নয়নে তাকায়।
আব্রাহাম;; নিজের জীবন বাজি রাখলাম আমি কিন্তু এমন রিয়েকশন দিচ্ছো তুমি।
আইরাত;; চলুন তো। এমন আজাইরা উদ্ভট কাজ যদি আবার করেছেন তো আপনার একদিন কি আর আমার যতোদিন লাগে।

আইরাত আর আব্রাহাম আবার নিজেদের গাড়িতে গিয়ে বসে পরে।
আব্রাহাম;; কোথায় যাবে বেবিগার্ল?
আইরাত;; চান্দের দেশে।
আব্রাহাম;; সরি সেখানে নিয়ে যেতে পারবো না আমি।
আইরাত;; আরে বাড়ি যাবো আমি। বাড়ি নিয়ে চলুন আমাকে।
আব্রাহাম আইরাতের কথা মতো তাকে তার বাড়ির সামনে ড্রপ করে দিলো। আইরাতও চলে যেতে ধরে কিন্তু আবার থেমে যায়।
আইরাত;; আমার স্কাফ?!
আব্রাহাম;; সেটা এখন আমার কাছে আমারই থাকবে আর দিবো না আমি।
আইরাত;; ?। না দিলেন হাহ্।
এই বলেই আইরাত চলে যায়। আর আইরাতে বাড়ির ভেতরে না যাওয়া অব্দি সে তার দিকে তাকিয়েই থাকে। আইরাত চলে গেলে আব্রাহামও চলে যায়।

রাত বাজে ৯ টার কাছাকাছি। আইরাত বসে বসে টিভি দেখছে। তখন তার কাছে ফোন আসে।
আইরাত;; হ্যালো।
অয়ন;; হ্যাঁ আইরাত আমি অয়ন।
আইরাত;; জ্বি ভাইয়া বলুন।
অয়ন;; জলদি আব্রাহামের বাড়ি এসো।
আইরাত;; কি এখন কিন্তু কেনো?
অয়ন;; আব্রাহাম যে কি করছে আল্লাহ মালুম।
আইরাত;; কেনো কি করেছে?

অয়ন;; ট্যারেসের ওপরে চলে গিয়েছে। গিয়ে ট্যারেসের গ্লাস একদম লক করে দিয়েছে। খুলছে না। আর আইরাত ট্যারেস অনেক উঁচু । সেখান থেকে জাম্প না করে বসে আব্রাহাম।
আইরাত;; কি যাতা বলছেন আপনি। আচ্ছা আব্রাহাম কেনো এগুলো করছে?
অয়ন;; অবশ্যই তোমার জন্য। আইরাত বোন প্লিজ জলদি এসো।
আইরাত;; ধুত্তুরি।
এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয়। এক দৌড়ে তার চাচ্চুর কাছে চলে যায়।
আইরাত;; চাচ্চু চাচ্চু,, এই চাচ্চু!
ইকবাল;; কি হয়েছে রে মা?

আইরাত;; জলদি তোমার গাড়ির চাবি দাও।
ইকবাল;; কি এতো রাতে তুই গাড়ির চাবি দিয়ে কি করবি? আর আমার গাড়ি তো….
আইরাত;; জানি সেটা ১৯শ কটকটি শনের। টাকা এটা ওটার অপর খরচ করতে পারো কিন্তু একটা গাড়ি কিনতে পারো না। যাই হোক জলদি চাবি দাও।
ইকবাল;; এতো রাতে গাড়ির চাবি দিয়ে কি করবি?

আইরাত;; আরে ওইযে মা মা মানে ওইযে আরে ওইতো দিয়া। হ্যাঁ হ্যাঁ দিয়া আরকি দিয়া না ওর মা মা মামার বাসা থেকে আসার সময় আটকে গিয়েছে বুঝলে। তো আমাকে ফোন করেছিলো হেল্প লাগবে ওর। তাই আমি যাচ্ছি। ওকে তো আর এভাবে একা একা রাতের বেলা ছেড়ে দিতে পারি না বলো। তাই চাবি লাগবে চাবি দাও।
ইকবাল;; তো আমি নিয়ে যাই।
আইরাত;; এই না না না না।
ইকবাল;; কি?
আইরাত;; না মানে বলছিলাম কি যে তোমার না শরীর খারাপ, প্রেসার আছে। তাই তুমি থাকো। তোমার যেতে হবে না। আমি পারবো আর জলদি এসে যাবো। চিন্তা করো না চাবি দাও তো দ্রুত।
ইকবাল;; আচ্ছা এই নে।

আইরাত চাবি নিয়েই দেয় এক্কেবারে দৌড় বাড়ির বাইরে। বাড়ির পেছন দিক থেকে তার চাচার গাড়ি টা বের করে স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। বেশ অনেক সময় পর আব্রাহামের বাড়ির সামনে আসে। এসেই আইরাত গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে আব্রাহামের বাড়ির ভেতরে চলে যায়। গিয়েই দেখে অয়ন চিন্তার চোটে নিজের হাতের নখ কামড়াচ্ছে।
আইরাত;; ভাইয়া আব্রাহাম কোথায়?
অয়ন;; তুমি এসেছো। আব্রাহাম ওপরে।

আইরাত কিছু না বলেই সোজা ওপরের দিকে দৌড় লাগায়। কিন্তু এবার আইরাত গিয়ে দেখে যে ট্যারেসের দরজা খোলা। যাই হোক সেইদিক টা ইগ্নোর করে আইরাত চলে যায় ওপরে। যেতেই যা দেখে তাতে আইরাতের আত্না টা ছাত করে ওঠে। কেননা সামনে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম ছাদের একদম ওপরে ওঠে তার রেলিং-এর ওপর দিয়ে হাটছে। তার হাতে রয়েছে একটা এলকোহলের বোতল। এরই মাঝে আব্রাহাম এই পরে যায় যায় অবস্থা তখন আইরাত জোরে ডাক দেয়।
আইরাত;; আব্রাহাম আবার। উফ আল্লাহ আপনি আবার কি করছেন এটা। নিচে নামুন। হায় আল্লাহ হাতে এলকোহলের বোতল। আব্রাহাম আপনি ড্রাংক। প্লিজ নিচে নামুন।

আব্রাহাম;; Look who”s come! My Babygirl…
আইরাত;; আব্রাহাম নিচে নামুন।
আব্রাহাম;; আইরাত জানো আমার কেনো জানি মনে হয় যে তুমি না আমাকে ক্ষমাই করো নি।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, মানে আমার মন বলে যে তুমি সত্যি ক্ষমা আমাকে করো নি। শুধু তখন আমাকে রাস্তা থেকে আনার জন্য এমনি বলেছিলে।
আইরাত;; এইরে (মনে মনে)
আব্রাহাম;; কি বলো ঠিক ধরেছি আমি তাই না?
আইরাত;; ছাড়ুন ওইসব কথা আপনি নিচে নামুন তো আগে।
আইরাত এই বলেই আব্রাহামের দিকে এক পা এগোতে লাগে আর আব্রাহাম বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; আব.. স্টপ রাইট দ্যায়ার। এক পা এগোবে না। ক্ষমা করো নি তুমি আমায়।
আইরাত;;

আব্রাহাম;; আমি জানতাম ?।
আব্রাহাম;; আমার জানপাখি আমায় মাফ করে নি তাহলে আমি কেনো বেচে থাকবো। এই বেচে থাকার কোন মানেই হয় না। এর থেকে ভালো আমি মরে যাই।
আইরাত;; আব্রাহাম এবার কিন্তু খুব বেশি বারাবারি হচ্ছে। নিচে নামুন।
আব্রাহাম;; আ আ… এক কদম আগে বাড়াবে না বললাম তো।
আইরাত;; আব্রাহাম…
আব্রাহাম;; গুড বায় সুইটহার্ট।
এই বলেই আব্রাহাম তার দুই হাত মেলে দিয়ে ছাদের রেলিং-এর ওপর থেকে পেছনের দিকে পরে যেতে নেয়। আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে আব্রাহামের নাম ধরে ডাক দেয়।

আইরাত চোখ মেলে সামনে তাকায় দেখে কেউ নেই। মানে কি আব্রাহাম কি নিচে পরে গিয়েছে নাকি। আইরাত ছুটে গিয়ে রেলিং এ হাত রাখে। তারপর নিচের দিকে উকি দেয়। কোথাও কাউকেই তো দেখাই যাচ্ছে না। একদম শুনশান নীরব। তখনই আইরাত তার কাধে কারো হাতের শীতল স্পর্শ পায়। আইরাত চমকে গিয়ে চিল্লিয়ে ওঠে। এমনকি আইরাত নিজেই ভয়ে পেছনে ঘুরে পরে যেতে নিলে একটা হাত এসে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে আষ্ঠেপৃষ্ঠে।

আইরাত দেখে তা আর কেউ না স্বয়ং আব্রাহাম নিজে। আব্রাহাম হেসে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামকে একদম ঠিকঠাক দেখে আইরাতের কলিজাতে যেনো পানি এলো। আইরাত এতোই ভয় পেয়েছে যে সে সব ভূলে আব্রাহাম কে একদম জোরে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামও তাই। আইরাত তো আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে সোজা হাউমাউ করে কেদে দিয়েছে।

আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ এমন করবেন না আমার সাথে। আমি ভয়েই মরে যাবো। কেনো এমন করেন বলুন তো। আমি সত্যি ভয় পেয়ে গিয়েছি। আপনি চলে গেলে আমি নিজেকে কখনোই মাফ করতে পারবো না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। প্লিজ এমন করবেন না।
আব্রাহাম;; তো তোমার কি মনে হয় আমি এগুলো সত্যি সত্যি করছিলাম বাকি?
আইরাত মাথা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; এগুলো সব কিছু আমাদের প্ল্যান ছিলো। মানে আমার, অয়ন আর হ্যাঁ দাদিরও।
আইরাত;; কিহ, কি বলেন এগুলো?
আব্রাহাম;; সত্যি।

আইরাত;; আর আপনি ড্রাংক না?
আব্রাহাম;; আরে না ওইটা এলকোহলের বোতল ছিলো ঠিকই কিন্তু তাতে লেমন জুস ছিলো।
আইরাত;; ?‍♀️?‍♀️।
তখনই ট্যারেসের দরজা দিয়ে অয়ন আর ইলা ভেতরে আসে।
অয়ন;; রাগ ভাঙলো তবে?!
ইলা;; আহাম আহাম। ভেঙেছে ভেঙেছে।
আইরাত এগুলো দেখে রাগ করে বসে আবার। এক মস্ত বড়ো বোকা বানিয়েছে আব্রাহাম আইরাতকে। আইরাত তারপর আব্রাহামের বুকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি সব দিতে থাকে। আব্রাহাম হেসে হেসে আইরাতকে জড়িয়ে ধরে আর সাথে আইরাতও।

আইরাত-আব্রাহামের রাগ গুষা যাই ছিলো সব শেষ। এতোকিছুর পর অবশেষে আইরাত তার আব্রাহাম কে মাফ করেই দিয়েছে। এখন সবকিছু ভালোই। দেখতে দেখতে মাঝখানে কেটে গেছে আরো বেশ কয়েক দিন। আইরাত আর আব্রাহামের মাঝে সারাদিন খুনশুটি লেগেই থাকে। আব্রাহামের পাগলামির মাঝে আইরাতের দিন কাটে। কি কি যে সাইকো মার্কা কাজ করে বসে। আর এর প্রভাব মাঝে মাঝে আইরাতের ওপরও পরে। এইতো কিছুদিন আগের কথা আইরাতের ফাইনাল এক্সাম ছিলো ভার্সিটিতে। এখন স্যার রা ছেলে-মেয়ে দের একসাথে সীট ফেলেছে।

এক ব্রেঞ্চে দুইজন করে। একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে। এটা শুনেই তো আব্রাহামের মাথা খারাপ। আইরাতের পাশে বসবে অন্য ছেলে এটা কি আদৌ সম্ভব। এর জন্য আব্রাহাম নিজে এক্সাম হলে গিয়ে আইরাতের সামনে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলে বসে ছিলো। আর একটা মেয়ে কে আইরাতের পাশে বসিয়েছে। মানে দিয়াকেই বসিয়েছে আর কি। শুধু দিয়াকে আইরাতের পাশে বসায় নি। এমনকি আইরাত যেই রুমে বসে এক্সাম দিচ্ছিলো সেই রুমে অন্য কোন ছেলেকে ঢুকতেই দেয় নি।

ছেলেদের অন্য রুমে স্যার দের বলে সিফট করে দিয়েছিলো। যত চুরাই বুদ্ধি ছিলো, যতো নকল করার বুদ্ধি ছিলো আব্রাহাম সব এক এক করে আইরাতকে শিখিয়ে দিচ্ছিলো কিন্তু অবশেষে আইরাতের ধমক আর ঝাড়ি খেয়ে সে চুপ হয়ে যায়। কারণ এক্সামের জন্য আইরাতের প্রিপারেশন এনাফ ভালো ছিলো। যতগুলো এক্সাম হয়েছে সবগুলোতেই আব্রাহাম তার অফিসে না গিয়ে আইরাতের সাথে তার এক্সাম হলে ছিলো। নিজে সাথে করে আইরাত কে ভার্সিটি নিয়ে গেছে আবার নিজের সাথে করে নিয়েও এসেছে। একসময় আইরাতের এক্সাম শেষ হয়ে যায়।

আব্রাহামের আইরাত কে নিয়েই হুট হাট প্ল্যান ছাড়া বের হয়ে পরা। লং ড্রাইভে চলে যাওয়া। টপ করেই আইরাতের বাড়িতে টপকে পরা, যদিও আইরাত আব্রাহাম কে মানা করেছে কিন্তু কথা শুনলে তো আব্রাহাম। আইরাতের চাচার সাথে আব্রাহামের সম্পর্ক কিছুটা ইঁদুর-বিড়াল। দুইজন দুইজনের পেছনে পরেই থাকে। আর আইরাতের চাচি তো আব্রাহামের সামনে চু পর্যন্ত করতে পারে না। আব্রাহাম কে দেখলেই কলির রিয়েকশন কিছুটা এমন হয় ?। আব্রাহাম আগে যেভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা অফিসে থাকতো এখন আর তেমন থাকে না।

যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকুই থাকে। আরে তার আইরাতকে টাইম যে দিতে হবে। গভীর রাত পর্যন্ত আইরাতের সাথে ফোনে কথা বলা আব্রাহামের। মাঝে মাঝে তো এমনও হয় যে আইরাত ফোন কানে রেখেই ঘুমিয়ে পরে। আর যখন পরেরদিন সকালে আইরাত ঘুম থেকে ওঠে তখনও দেখে যে আব্রাহাম ফোনের লাইনেই আছে। লাইন কাটে নি। এমনকি আইরাতের ঘুমও ভাঙে আব্রাহামের ডাকেই। আবার যখন আইরাতের মুড কোন কারণে খারাপ হয় তখনই আব্রাহাম হাজির হাতে এত্তোগুলো চকোলেট বা ফুচকা নিয়ে। মানে যা আইরাতের পছন্দ তা নিয়েই। ভার্সিটির কোন ছেলেই আইরাতের ধারে কাছে আসে না। সবাই আপু বলে ডাকে। এমনও হয় যে আইরাতের নিজের ক্লাসমেট রাই মাঝে মাঝে আব্রাহামের ভয়ে আইরাতকে আপু ডেকে ফেলে। আইরাতের আর বুঝতে অসুবিধে হয় না যে এটা আব্রাহাম ছাড়া আর কারোরই কাজ না।

এখনো আইরাত-আব্রাহাম একসাথে। একটা কফি শপের ভেতরে বসে আছে। আইরাত বসে বসে খাচ্ছে আর আব্রাহাম কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে। তারপর রেখে দেয়।
আইরাত;; কে ছিলো? (খেতে খেতে)
আব্রাহাম;; ছিলো কিছু ক্লাইন্ট।
আইরাত;; খাবেন?
আব্রাহাম;; আমি বার্গার খাই না। এতে অনেক ফ্যাট থাকে।
আইরাত;; এহহহ আসছে রে আমার The most health conscious man….
আব্রাহাম;; হ্যাঁ অবশ্যই, আমাকে ফিট থাকতে হয়। আমি কি তোমার মতো মোটা নাকি।
আইরাত;; হ্যাঁ? এই কি কি বললেন আপনি? আমি, আমি মোটা?

আব্রাহাম;; নিজেকে দেখেছো একবার গালের দিকে মাংস বেড়ে যাচ্ছে। কিছুটা ভুরিও তো বেড়েছে তোমার।
আব্রাহামের এমন কথা শুনে আইরাতের খাওয়াতে তালা লেগে গেলো। খাওয়া পুরো বন্ধই হয়ে গেলো তার। মুখে এক বাইট বার্গার রেখে আব্রাহামের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম তো ফাজলামি করছিলো কিন্তু আইরাতের এমন চেহারা দেখে হাসতে হাসতে শেষ। আব্রাহামের হাসি দেখে আইরাত রাগে শেষ। রাগে মুখে থাকা বার্গার টা আস্তে আস্তে চিবুচ্ছে আর আব্রাহামের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; হাহাহাহাহা ??। আস্তে খাও।
আইরাত;; শালা খবিশ। আমি ৫৩ কেজি, হাইট ৫.৫ আর কতো লাগে। আমি নাকি মোটা। হ্যাঁ মানলাম আমার গালে একটু মাংস বেশি। কিন্তু এই গাল সরকারি না বুঝলেন। আমার গাল, আমার সম্পত্তি তাতে কার বাপের কি! আর এতোই মোটা লাগে তো যান না অন্য মেয়েদের কাছে যান এখানে কি করেন। যত্তসব।
আব্রাহাম;; হায়য়য়য়য়য়য়য়য়য়!! এই রাগের আগুনেই না আমি আব্রাহাম ঝলসে যাই।
আইরাত;; ?
আব্রাহাম;; আরে বুঝো না কেনো মজা করছি। আর এছাড়াও আমার শুটকি মার্কা মানুষ পছন্দ না। আমার এইযে গোলুমোলু মানুষই পছন্দ।
আইরাত;; হুম হয়েছে এখন ভালো ছেলের মতো আরেকটা বার্গার অর্ডার দিন।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; শুনেন না ?।
আব্রাহাম;; দিচ্ছি তো।

আব্রাহাম আরো একটা বার্গার অর্ডার দেয় সাথে একটা ক্যাপাচিনো তার নিজের জন্য। বার্গার এলে আইরাত খাওয়া শুরু করে। আব্রাহামও আইরাতকে দেখছে আর খাচ্ছে। তখনই একটা মেয়ে আসে। মুখে হ্যাভি মেকাপ, ওয়েস্টার্ন ড্রেসাপ পরা। হয়তো আব্রাহামেরই ভুল ছিলো যে সে ওই মেয়েটার চোখে পরেছে। বাপরে বাপ। নেকামোর একটা সীমা থাকে। মেয়েটা এসেই আব্রাহাম কে দেখে ছোট-খাটো একটা চিৎকার দিয়ে কিছুটা লাফিয়ে ওঠে। মানে তার সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবার মতো অবস্থা। হুমড়ি খেয়ে পরছে।
আব্রাহাম;; আরে ঠিক ভাবে খাও। মুখের সাইডে লাগাচ্ছো কেনো? এদিকে কাছে আসো দেখি।
আব্রাহাম হাতে টিস্যু নিয়ে আইরাতের ঠোঁটের সাইডে মুছে দিচ্ছিলো আলতো ভাবে। তখনই ওই মেয়েটি ছুটে আব্রাহামের কাছে আসে।

মেয়েটি;; ওহ গড ওহ গড ওহ গড। এই আমি কাকে দেখছি। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। আপিনিইইইইইই?
আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। স্যার আপনি জানেন না আমি আপনার কতো বড়ো ফ্যান। আর এভাবে নরমাল ভাবেই যে আপনাকে দেখতে পারবো আমি ভাবিই নি। আজ বুঝলাম যে আপনি হয়তো অনেক বড়ো একজন মানুষ কিন্তু অনেক ভালো। তাইতো এভাবে নরমাল ভাবে চলাচল করেন। স্যার আপনি তো আমার জন্ম-জন্মান্তরের ক্রাশ। বলতে গেলে আমার ভালোবাসা। আপনার যে ঠিক কতো গুলো ছবি আমার রুমে লাগানো তা আমি নিজেও জানি না।
মেয়েটি এসে তার নিজের মতো করেই এইগুলো বলে যাচ্ছে। আর আব্রাহাম তার মুখে হাত রেখে শুধু হুম হুম করে যাচ্ছে। আব্রাহাম কিছুটা বাকা চোখে আইরাতের দিকে তাকায়। দেখে যে আইরাত শান্ত ভাবেই বসে আছে। কিন্তু হুট করেই আইরাতের এতো শান্ত স্বভাব টা কেনো জানি আব্রাহামের হজম হচ্ছে না। তার মাঝেই মেয়েটা আবার বলে ওঠে…

মেয়ে;; স্যার স্যার আমার নাম জোতি। আমি কি আপনার সাথে জাস্ট একটা, জাস্ট একটা ছবি ক্লিক করতে পারি।
আব্রাহাম;; আব… ইয়াহ সিওর।
মেয়েটি আব্রাহামের কাছে গিয়ে তার সাথে একটা ছবি নেয়। (মেয়েটা এতো নির্লজ্জ কেন ?)
মেয়ে;; স্যার ছবিতেও আপনাকে দারুন লাগছে। স্যার স্যার একটা অটোগ্রাফ প্লিজ।
আব্রাহাম;; ওকে…
মেয়ে;; আমার হাতেই করে দিন।

মেয়েটা একটা জেল প্যান বের করে আব্রাহাম কে দেয়। আব্রাহামও অটোগ্রাফ দিয়ে দেয়। কি আর করার। সে আইরাতের দিকে তাকায় দেখে আইরাত আস্তে আস্তে মানে একদম আস্তে আস্তে বার্গার খাচ্ছে।
মেয়ে;; স্যার থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমার তো খুশিতে গড়াগড়ি খেতে মন চাইছে। ইশশশশ আপনার সাথে ছবিইইইইই।
আইরাত;; হ্যাঁ এখন ওই ছবিটা ফ্রেমে বাধিয়ে নিও তারপর দেওয়ালের সাথে সাথে নিজের সাথেও চিপকিয়ে নিও। আর হ্যাঁ হাতের যে ওই অটোগ্রাফ টা আছে না। এককাজ করো হাতের চামড়া খুলে সেটাকেও ফ্রেম করিয়ে নাও ঠিকআছে বইন ???

মেয়ে;; এ মানে…. স্যার উনি কে?
আইরাত হাসবে না কাদবে ভুলে গেছে।
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন না আব্রাহাম জ্বি আমি আপিনার কে? বলুন।
আব্রাহাম;; মানে আসলে….
আইরাত;; আব্রাহাম জ্বি, আরে বলুন না আমি আপনার কে? বলুন, বলা তো উচিত তাই না। বলে ফেলুন বলে ফেলুন। আমি আপনার কে হই আব্রাহাম?
আব্রাহাম একদম স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড জবাব দিলো।
আব্রাহাম;; আমার বউ।
মেয়ে;; জ্বি??

আব্রাহাম;; জ্বি, আমার বউ উনি।
মেয়ে;; ওহহ আচ্ছা না মানে আচ্ছা ঠিকআছে আমি এবার তাহলে যাই।
এই বলেই মেয়েটি সেখান থেকে কেটে পরে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায় দেখে যে সে আইরাত না তো রাগে একটা আগুনের গোলা। মানে একটা আগুনের গোলা কে আব্রাহাম তার পাশে নিয়ে বসে আছে। সেই মেয়েটা এসে এখন এমন একটা কিছু করবে তা আব্রাহাম ভাবেই নি। আইরাতের মাথা-মুথা তো রাগে ফেটে যাচ্ছে। আব্রাহাম কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত উঠে রাগে চলে যায় সেখান থেকে।

আব্রাহাম;; আবার চেইতা গেছে। আরে আল্লাহ ?।
আব্রাহাম সবসময় নিজের সাথে দুই একটা গার্ড নিয়েই বাইরে বের হয়। তবে তারা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো। আব্রাহাম তাদের বিল পে করতে বলে নিজে দ্রুত আরাতের পেছন পেছন চলে যায়। আইরাত কে পেছন থেকে অনেক ডাক দেয় কিন্তু আইরাত শোনে না। এবার আব্রাহাম কিছুটা দৌড়ে গিয়েই আইরাতের একদম সামনে এসে পরে। হাত ধরে থামিয়ে দেয় তাকে।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে?
আইরাত;; ??।
আব্রাহাম;; আরেএএএ কাদছো কেন?
আইরাত;; ??
আব্রাহাম;; জানপাখি কি হয়েছে কাদছো কেনো?
আইরাত;; ওই মাইয়া এতো লুইচ্চা কেন। আপনার দিকে নজর দিবো কেন। কীভাবে আপনার ওপর হুমড়ি খেয়ে পরছিলো। কীভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে আপনাকে দেখছিলো ?।
আইরাত সত্যি কেদে দিয়েছে। আব্রাহাম বুঝলো যে এগুলো আইরাতের রাগ যা কান্নায় পরিনত হয়েছে। আব্রাহাম মুচকি হেসে আইরাতকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। আইরাত আব্রাহামের বুকে মুখ গুজে দিয়ে এক রকম চিল্লাচ্ছে। আব্রাহামের বুক থেকে উঠে আসতে চাইলে আব্রাহাম তাকে আরো জোরে চেপে ধরে নিজের সাথে। আব্রাহামের এই মূহুর্তে প্রচুর হাসি পাচ্ছে।

আইরাত;; শুনেন আপনি আমার তো তাই না, আপনাকে অন্য মেয়ে কেনো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে। আপনি আমার তো। এর পর থেকে আমি আপনাকে বোরকা পরে বাইরে নিয়ে আসবো।
আব্রাহাম;; কিইইইই?
আইরাত;; হ্যাঁ সত্যি। আর এখন ছাড়ুন আমাকে। আমি ওই মেয়ের কাছে যাবো। তারপর এই কুত্তির মাথার সব চুল টেনে টেনে ছিড়বো। ছবি ক্লিক করা একদম ঘুচিয়ে দিবো। লুচ্ছি বেডি। ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; আরে বাবা আমি কি চলে গিয়েছি নাকি। আমি তো আছি তাই না। আমি তো তোমারই। কেউ নিবে না আমাকে তোমার কাছ থেকে। এমন করে না। এমন পাগলামি করে না বেবিগার্ল।

আইরাত;; এহহহ এক সাইকো-পাগলে আমায় বুঝ দিচ্ছে যে আমি যেনো এমন পাগলামি না করি। হায়রে।
আব্রাহাম;; আচ্ছা চলো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; একটু আগে যেই কথা বলছি তা সত্যি করবো।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; বিয়ে করবো বিয়ে, বিয়ে।
আইরাত আব্রাহামের কাছে গিয়ে দাত কটমট করতে করতে বলে ওঠে…
আইরাত;; আমি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাবো হাহ্।

এই কথা বলেই আইরাত চলে আসে। তার মানে এখনো রেগে আছে। আব্রাহাম আবার চলে যায় আইরাত আইরাত করতে করতে। রাগ যে ভাঙাতে হবে। গোধূলির লগ্ন। সূর্য অস্ত যায় যায় ভাব। একদিকে সূর্য ডুবছে আরেক দিকে এই দুই লাভ বার্ড নিজেদের খুনশুটি করতে করতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ?।

আজ সকাল থেকেই আব্রাহামের কোন খোঁজ নেই। মানে ক্ষনিকের জন্য গুম বলা যায় তাকে। আইরাত ফোনের ওপর ফোন করে যাচ্ছে, টেক্সট করে যাচ্ছে বাট নো রেসপন্স। এগুলো দেখে তো আইরাতের মাথা নষ্ট হবার মতো অবস্থা। আইরাত ভাবলো আব্রাহামের বাড়ি যাবে কি যাবে না। কিন্তু সেই চিন্তা পরক্ষণেই আবার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো। কাল রাতে খুব কম কথা হয়েছিলো আব্রাহামের সাথে তার। আর আজ সকালেই সে গুম। এগুলো যেনো আর ভালো লাগছে না। তবে আইরাত ভাবলো যে অফিসে আছে আর হয়তো কোন ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং-এ আছে তাই ব্যাস্ত। আইরাত তার রুম থেকে বের হয়ে নিচে হলরুমে চলে গেলো। যেতেই দেখে রনিত বসে আছে। আইরাত যেই না রনিতের কাছে যেতে ধরবে তখনই আব্রাহামের ফোন। আব্রাহামের ফোন কল দেখে যেনো আইরাতের শান্তি লাগে। তবে ভেবে নেয় যে ফোন ধরতেই আচ্ছা মতো করে বকে দিবে।

আইরাত;; হ্যালো, এই কোথায় আপনি। সেই ভোর থেকে ফোন দিচ্ছি আপনার কাছে কিন্তু রিসিভ করার নাম নেই। মেসেজ দিয়ে পাচ্ছি না। কোথাও না। আপনি কোথায় ছিলেন?
আব্রাহাম;; আরে আস্তে আগে একটু দম নাও।
আইরাত;; ধুর।
আব্রাহাম;; আমি অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছি।
আইরাত;; তা কি এমন কাজ শুনি?
আব্রাহাম;; অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আইরাত;; আমার থেকেও বেশি?
আব্রাহাম;; তোমার জন্যই তো করা।
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম;; এতোকিছু তোমার না বুঝলেও চলবে।
আইরাত;; কিন্তু……

আব্রাহাম;; হে লিসেন, কিছুক্ষন পর একটা পার্সেল যাবে তোমার নামে ওকে তো সেটা পিক করে নিও।
আইরাত;; পার্সেল? কিন্তু কেনো? মানে পার্সেল কেনো?
আব্রাহাম;; সেটা এলেই বুঝতে পারবে। আর আমি এখন রাখছি ওকে পরে কথা বলি।
আইরাত;; আরে বাট হ্যালো, হ্যালো….
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আইরাত একটা ভেংচি কেটে রনিতের কাছে চলে যায়।
আইরাত;; কিরে বিচ্ছু কি করিস?
রনিত;; জাম খাই। খাবে?
আইরাত;; না তুই ই খা।
রনিত;; আরে খাও না অনেক মজা।
আইরাত;; হুমম দেখে-শুনে খাস। জামাতে দাগ লাগাস না নইলে তোর মা তোকে সাবান ছাড়া ধুয়ে দিবে।
রনিত;; ?।

তখনই কলিংবেলে চাপ পরে, আইরাত গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দেখে ডেলিভারি বয় দাঁড়িয়ে আছে।
আইরাত;; জ্বি?
ডেলিভারি বয়;; জ্বি এখানে নুজাইফা বিনতে আইরাত নামে কেউ কি আছে?
আইরাত;; জ্বি আমিই আইরাত, বলুন।
ডেলিভারি বয়;; হ্যাঁ আসলে আপনার নামে একটা কুরিয়ার এসেছে।
আইরাত;; কিন্তু আমি তো কিছু অর্ডার করি নি।
ডেলিভারি বয়;; কিন্তু এটা আপনার নামেই এসেছে।
তখনই আইরাতের আব্রাহামের কথা মনে পরে।
আইরাত;; ওহহ হ্যাঁ হ্যাঁ, দিন।
ডেলিভারি বয়;; এখানে একটা সিগন্যাচার করে দিন।

ডেলিভারি বয় আইরাতের হাতে পার্সেল টা এগিয়ে দিয়ে একটা কাগজ দেয়। আইরাত তাতে সাইন করে দিলে সে চলে যায়। আইরাত দেখে বেশ বড়োসড়ো একটা পার্সেল। সে অনেক বেশি এক্সাইটেড এতে কি আছে তা দেখার জন্য।
রনিত;; আপু এতে কি আছে?
আইরাত;; সেটা তোর জেনে কাজ নেই। জাম খাচ্ছিস চুপচাপ জাম খা।

রনিত ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে আইরাতের দিকে। আইরাত তো ঢেংঢেং করে পার্সেল টা হাতে নিয়ে ওপরে তার রুমে চলে গেলো। গিয়েই দরজা লাগিয়ে দিয়ে বিছানার ওপর ধপ করে বসে পরে। পার্সেল টা নিজের সামনে রেখে খুলতে থাকে। একসময় খোলা শেষ হলে আইরাত ভেতরে দেখে একটা স্কাই ব্লু আর হুয়াইট কালারের কম্বিনেশনে গাউন। অসম্ভব সুন্দর দেখতে। আইরাত তা নিয়ে দেখছিলো তখনই আব্রাহামের ফোন আসে। আইরাত তো না দেখেই ফোন রিসিভ করেছে। তাই গাউনের দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে….

আইরাত;; হ্যালো
আব্রাহাম;; পছন্দ হয়েছে?
আব্রাহামের কন্ঠস্বর পেয়ে আইরাত হেসে দেয়।
আইরাত;; আপনি?
আব্রাহাম;; তো কে থাকবে? বলো পছন্দ হয়েছে?
আইরাত;; অনেক বেশি। অনেক সুন্দর গাউন টা।
আব্রাহাম;; আমি জানি আমার চয়েস তোমার থেকে অনেক ভালো।
আইরাত;; হ্যাঁ হয়েছে। কিন্তু এটা কেনো?
আব্রাহাম;; শুনো গাউন টা সুন্দর করে পরে চলে আসবে।
আইরাত;; কিন্তু কোথায়?

আব্রাহাম;; তোমার বাড়ির সামনে আব্দুল চাচা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুমি শুধু গাড়িতে উঠবে আর চলে আসবে।
আইরাত;; আরে বাবা কিন্তু আসবো কোথায়?
আব্রাহাম;; সেটা তো এলেই বুঝতে পারবে।
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম;; তবে একটা কথা!!
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; সেইদিন তো আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে। আজ প্লিজ এমন কিছু করো না। নয়তো উল্টা-পাল্টা কিছু করে না বসি আমি।
আইরাত;; আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম মানে??
আব্রাহাম;; এখন রাখলাম।

আইরাত আর কি বলবে আগেই ফোন কেটে দেয়। আব্রাহাম যে কি করছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। যাই হোক আইরাত দ্রুত রেডি হয়ে নেয়। আব্রাহামের দেওয়া গাউন টা পরে নেয়। চুল গুলো খুলে দেয়, আর একদম হাল্কা কিছু অর্নামেন্টস।
পায়ে কিছুটা উঁচু জুতা পরেছে। হাতে স্টোনের ব্রেসলেট টা পরে নিচে নেমে আসে আইরাত। আইরাত বাইরে যেতে ধরবে তখনই কলি আসে…
কলি;; কিরে কোথাও যাচ্ছিস?
আইরাত;; হ্যাঁ চাচি একটু বাইরে যাচ্ছি। জলদি ফিরে আসবো।
কলি;; আচ্ছা।

আইরাত বাইরে এসেই দেখে একজন মাঝবয়স্ক লোক গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসলে উনার নাম আব্দুল রহমান। উনি আব্রাহামের সাথেই আছেন। একসময় আব্রাহামের বাবার ড্রাইভার ছিলেন। এখনো আব্রাহাম উনাকে নিজের সাথেই রেখে দিয়েছেন। আইরাতের বাইরে আসতেই উনি গাড়ির বাইরে বের হন।
আব্দুল;; আসুন ম্যাম, আব্রাহাম বাবা আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
আইরাত;; আংকেল প্লিজ আপনি আমার বাবার বয়সী। ম্যাম না ডাকলেই ভালো লাগবে।
আব্দুল;; মা ডাকি?
আইরাত;; অবশ্যই ?।

আইরাত গাড়িতে উঠে বসে। আইরাত শুধু গাড়ির উইন্ডো দিয়ে বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
আইরাত;; আচ্ছা আংকেল আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আব্দুল;; মা আমি আসলে জানি না। আর জানলেও আব্রাহাম বাবা আমাকে বলতে মানা করেছে।
আইরাত;; এইটা কোন কথা।
আইরাত আবার মুখ ফুলিয়ে বসে পরে। কেউ কিছু বলবেই না যেহেতু তাহলে কি আর করার। দেখতে দেখতেই এক সময় একটা খোলা মেলা জায়গায় এসে গাড়ি থামে।
আব্দুল;; মা আমরা এসে গেছি।
আইরাত;; এখানেই?
আব্দুল;; হ্যাঁ।

আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরে আর আব্দুল রহমান গাড়ি নিয়েই চলে যায়। আইরাত এই জায়গা টা চিনে না। একদম অচেনা একটা জায়গা। আইরাত কপাল কুচকে কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়। কোথাও কাউকে দেখতেও পারছে না। কিছুটা সামনে এগোলে আইরাতের চোখ গুলো আপনা আপনিই বড়ো হয়ে যায়। কেননা সামনে সুন্দর একটা পুকুর, তাতে আবার রয়েছে বেশ কিছু পদ্মফুল। সাদা ধবধবে পালকের পাতি হাসগুলো পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক থেকে সেদিকে। আবার মাঝে মাঝে পানিতে ডুব দিয়ে ওপরে উঠে আসছে। পুকুরের চারিপাশে রয়েছে সারি সারি গাছ।

এখানে যতদূর চোখ যায় শুধু খোল আকাশ আর সবুজ ঘাস। রয়েছে মন-মুগ্ধকর খোলা বাতাস। আইরতের এখন মন চাইছে সব ছেড়ে ছুড়ে ছুটে যাক ওই দূর দিগন্তে। কি যে সুন্দর একটা জায়গা বলারও বাইরে। মুগ্ধ নয়নে আইরাত তাকিয়ে তাকিয়ে এইসব কিছু দেখছে। তখনই হঠাৎ আইরাতের মাথার ওপর দিয়ে অনেক গুলো ফুলের পাপড়ি ঝড়ে পরে৷ আইরাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ফুলগুলো কোথা থেকে এলো আবার। তবে নিজের অজান্তেই আইরাতের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে নিজের দুই দিকে তার দুইহাত মেলে দিয়েছে৷ এত্তোগুলো ফুলের পাপড়ি, সব আইরাতের ওপর পরেছে। আইরাত খিলখিল করে হেসে ওঠে। তখনই এক নেশাময় পুরুষালী কন্ঠে আইরাত তার পেছন ঘুড়ে তাকায়।

তাকিয়েই আইরাত অবাক। আব্রাহাম এক হাটু গেড়ে আইরাতের সামনে বসে আছে। হাতে একটা ফুলের বুকে আর রিং।
আব্রাহাম;; আমি ভাবতেই পারি না নিজেকে তোমায় ছাড়া। আমার অস্বস্তি তুমি। আইরাত আছে তো আব্রাহাম। আইরাত নেই, আব্রাহামও নেই। আইরাত আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এই কথা টা আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস অব্দি প্রতিদিন বলেই যাবো। আমার লাইফে আসা ফার্স্ট & লাস্ট মেয়ে তুমি। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। না তোমার আগে কেউ ছিলো আর না ই তোমার পরে কেউ আসবে। আমি আমার জীবনের সূর্যদয় টা তোমার সাথে দেখতে চাই আর সাথে সূর্যাস্ত টাও। আমার জীবন তোমাতেই শুরু আর তোমাতেই শেষ ?।

তুমি যদি একটু আমাকে কমও ভালোবাসো তাও সমস্যা নেই। আমার চলবে। কেননা আমার একার ভালোবাসাই আমাদের দুই জনের জন্য যথেষ্ট। আমি তোমার সাথে ছিলাম, আছি আর সবসময় থাকবো। তুমি শুধু আমার হাত শক্ত ভাবে ধরে রেখো?? আর আমাকে একটু নিজের বলে দাবি করো?? আর তুমি তো আমারই। আমি যেনো বলতে পারি যে “” না, সবাই এক না। সবাই এক হয় না। সবাই ছেড়ে যায় না। কেউ কেউ নিজের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থেকে যায় “”।

আমাদের দুইজনের শেষ বয়সে যখন আমরা ৬০-৬৫ বছরের বুড়ো-বুড়ি হয়ে যাবো তখনও যেনো এই আইরাত এই আব্রাহামেরই থাকে আর এই আব্রাহাম এই আইরাতের। বিকেলের শেষ বেলা টা যেনো আমার হাতে তোমার হাত আর আমার কাধে তোমার মাথা রেখেই শেষ হয়। আইরাত সবাই বলে আমি আমার ভালোবাসার জন্য মরতেও রাজি। কিন্তু আই এম সরি আমি তোমার জন্য মরতে রাজি না। কারণ আমি আমার জীবনটা তোমার সাথে কাটাতে চাই, তোমার নামে লিখে দিতে চাই। একসাথে বাচতে আমি তোমাকে নিয়ে। তো এতোকিছু যে পরিকল্পনা আছে আমার তোমাকে নিয়ে তা কি পূর্ণ করবে তুমি আমার সাথে?? চিরতরে হবে কি আমার? হবে এই আব্রাহামের আইরাত??

আব্রাহাম এই কথা গুলো এক দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছে। আইরাত ভাবেই নি যে আব্রাহাম তাকে এমন একটা সারপ্রাইজ দিবে। টুপ করেই আইরাতের চোখ দিয়ে এক বিন্দু পানি গড়িতে পরে। আব্রাহামের দিকে সেও ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম, সে যেনো নিজের প্রশ্নের জবাব গুলো আইরাতের চোখে খুঁজে চলেছে। আইরাতের সারামুখে তার চোখ গুলো বিরচন করে চলেছে। আইরাত তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। তার চোখের দেওয়ালে সেইদিন সেই রিসোর্টের কথা টা ভেসে উঠলো। আব্রাহাম তাকে এভাবেই সেইদিন প্রোপজ করেছিলো।

আইরাত তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলো সেইদিন। আর এখন আইরাতের কাছে ক্লিয়ার হলো যে আব্রাহাম কেনো তাকে ফোন করে ফিরিয়ে দেবার কথা বলছিলো। সেইদিন যখন আব্রাহাম আইরাতকে প্রথম প্রোপজ করে তখন আইরাতের বেশ ভয় লেগেছিলো। অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে নিজের দুই পা পিছিয়ে নিয়েছিলো। আইরাত নিজের চোখ মেলে তাকায়। আব্রাহাম এখনো অধির আগ্রহে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো নিজের জবাব পাওয়ার বেকুল ইচ্ছে। আইরাত নিজের দাত দিয়ে ঠোঁট গুলো কামড়িয়ে ধরে কোন রকমে কান্না থামাচ্ছে। ভীষণ ইমোশন কাজ করছে নিজের মাঝে।

আব্রাহাম;; Airat Babygirl, Do you love me?!
আইরাত;; Yes, I do…
আইরাত তো সেইদিন নিজের দুই পা আব্রাহামের দিক থেকে পিছিয়ে নিয়েছিলো। কিন্তু আজ & এখন সে আব্রাহামের দিকে নিজের দুই পা এগিয়ে দিলো।
আব্রাহাম;; Will you marry me?✨?
আইরাত;; YES….

আইরাত এক হাত দিয়ে নিজের চোখের পানি কোন রকমে মুছে ফেলে। আব্রাহাম ডায়মন্ড রিং টা আইরাতের হাতে পড়িয়ে দেয়। আইরাত ঝট করে আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম নিজেও আইরাতকে জড়িয়ে ধরে। একহাত আইরাতের কোমড়ে ধরে আরেক হাত আইরাতের মাথার পেছনে দিয়ে দেয়। আইরাতের মাথার ওপর আলতো করে চুমু একে দেয়। আর তখনই বেশ চিল্লা-পাল্লা করে চারদিক থেকে সবাই ছুটে আসে। সবাই বলতে অয়ন-দিয়া, রহিত-আরুশি, আর কৌশলও। আইরাত ওদের দেখে হেসে দেয়।

আইরাত;; এইইই তোরা সবাই এখানে??
দিয়া;; তো থাকবো না,, তুমি যে তলে তলে কত্তো বড়ো ট্যাম্পু চালাও, আহা।
অয়ন;; সিরিয়াসলি অনেক হ্যাপি হ্যাপি লাগছে। ওহ গড এক্সেপ্ট করে নিয়েছে। এখন তো আমার আর আইরাত নাম ধরে ডাকলে চলবে না। বউমনি বলে ডাকতে হবে।
আরুশি;; কংগ্রেচুলেশন গাইস। যাক তোরা এক হলি অবশেষে।
রহিত;; হুমম অনেক আগে থেকেই এক আছে।
কৌশল;; তোরা সবাই মিঙ্গেল ই থাক। একাই সিঙ্গেল আমি মরি ?। আমি মঙ্গল গ্রহে চইলা যাই। মিশন মঙ্গল।
কৌশলের কথায় সবাই হেসে উঠে।
আইরাত;; আছে আছে আমার কাছেও তোমার জোড়া আছে ভাই।
কৌশল;; ওমা তাই নাম কি গো ???
আইরাত;; অবনিইইইইই।
আব্রাহাম;; তাহলে এখানে সবাই বুক করা!
আইরাত;; আবার জিগায়। অবশ্যই।

এভাবেই চলতে থাকলো। বেশ সময় সবাই মিলে আড্ডা দেয়। তারপর রহিত-আরুশি, অয়ন-দিয়া আর কৌশল চলে যায়। কিন্তু আব্রাহাম আর আইরাত সেখানেই থেকে যায়। আব্রাহাম ঘাসের ওপর বসে আছে আর তার কোলেই হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে আইরাত। আইরাতের এক হাত আব্রাহামের আরেক হাতের ভাজে।
আইরাত;; আমরা কখন বাসায় যাবো?
আব্রাহাম;; মন তো চাইছে যে এখান থেকে তোমাকে সোজা আমার বাড়ি নিয়ে যাই।
আইরাত;; হেহেহেহেহে।
আব্রাহাম;; হুমমমম।
আইরাত;; আচ্ছা আব্রাহাম!?
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; আমার না কেনো জানি মনে হচ্ছে যে আমার চাচ্চু আমাদের ব্যাপার টা নিয়ে রাজি হবেন না।
আব্রাহাম;; হাহাহা, হাহাহা।
আইরাত;; আমি কোন জোক বলি নি। হাসছেন কেনো?

আব্রাহাম;; তোমার কি মনে হয় যে আমি কারো বলা-কওয়ার নিচে পরে থাকবো নাকি। ভাগিয়ে নিয়ে আসবো আমি তোমাকে। তোমার চাচা-চাচি রাজি থাকলেও এই বিয়ে হবে আর না থাকলেও এই বিয়ে তো হবেই৷ হাহ যেখানে আমি তোমার মতামত নিবো না বিয়ের জন্য সোজা তুলে এনে বিয়ে করে ফেলবো। সেখানে কিনা তোমার ওই খাড়ুস চাচা-চাচি,, হাসালে।
আইরাত;; ধুর, এভাবে বলতে হয় না।
আব্রাহাম;; আজ আমি তোমাদের বাসায় যাবো। সেখানে গিয়ে যতটুকু না বললেই নয় ততটুকুই বলবো। তারপর সম্পূর্ণ আমার ইচ্ছে বুঝেছো।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; এখন দাদির সাথে দেখা করে পরে তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসবো, চলো।
আইরাত;; আচ্ছা।

আব্রাহাম আর আইরাত চলে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের বাড়িতে যায়। সেখানে আইরাত আর ইলা বসে অনেক গল্প করে। ইলার যেন এই আধবয়সে একটা সঙ্গী হয়ে গেছে, সেটা আইরাত। তাকে পেলে আর কিছু লাগে না। যাই হোক প্রায় ঘন্টা একের মতো থেকে আইরাত চলে আসে। আব্রাহাম নিজে তাকে নিয়ে আসে। আব্রাহাম আর আইরাত যখন একসাথে আইরাতের বাসায় ঢুকে তখন আইরাতের চাচা-চাচি সবাই ড্রোইং রুমে বসে ছিলো। আব্রাহাম কাউকে কিছু না বলেই সোজা ইকবাল সাহেবের পাশে বসে পরে।

আব্রাহাম;; প্রিয় চাচাজান, ওপস সরি শশুড়আব্বু বেশি না তবে তোমাকে জাস্ট এইটুকু কথা বলতে এসেছি যে আমি তোমার একমাত্র মেয়েকে খুব খুব জলদি বিয়ে করে নিজের সাথে নিয়ে যেতে চাই। সো আমি হচ্ছি তোমার একমাত্র মেয়ের জামাই বুঝলে। আইরাত আমার। তোমরা রাজি থাকলেও বিয়ে হবে আর না থাকলেও। যদি ভালোভাবে রাজি হয়ে যাও তাহলে ভালো আর না হলে বাকা পথ আমি অনেক ভালো জানি। এটাকে চাই তোমরা আমার মিষ্টি সুরে থ্রেইট ভাবো বা অন্য কিছু। তাড়াতাড়ি তোমার মেয়ের আমার সাথে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাও হবু শশুড় বাবাজী আর আম্মাজান।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

আইরাতের বেশ হাসি পাচ্ছে। সে মুখ টিপে হাসছে আব্রাহামের এমন কথা শুনে। আর এছাড়াও এতোদিনে আব্রাহামের ব্যাপারে বেশ ধারনা হয়ে গেছে ইকবাল সাহেবের। আর যাই হোক আব্রাহাম আইরাতের জন্য বেস্ট। আইরাতের জন্য আব্রাহামের থেকে ভালো কোন ছেলে আর হয়ই না। আব্রাহাম এই বলেই উঠে গেলো। সবার সামনেই আব্রাহাম আইরাতের গালের পাশে নিজের হাত রেখে তার কপালে একটা গাঢ চুমু দিয়ে চলে যায়। আইরাত আর কি বলবে সেও নিজের রুমে ওপরে চলে যায়। ইকবাল সাহেব কিছুক্ষন ভাবলেন এই বিষয় টা নিয়ে। তিনি কলির দিকে তাকিয়ে দেখে কলি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। কলি হঠাৎ করেই ইকবাল সাহেবের হাতে নিজের হাত রাখেন। ইকবাল সাহেব তার দিকে তাকালে কলি চোখের ইশারা দেয়। অর্থাৎ হ্যাঁ, বিয়ে টা হোক। ইকবাল সাহেব মুচকি হেসে উঠে বাইরের দিকে চলে আসে। দেখে আব্রাহাম গাড়ির দরজা খুলছে তখনই ইকবাল সাহেবের ডাক…..

ইকবাল;; আব্রাহাম…!
আব্রাহাম;; আরে শশুড়আব্বু, তুমি এখানে?
ইকবাল সাহেব কিছু না বলেই আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। হুট করেই আব্রাহামের হাত টা নিজের হাতে তুলে নেয়। আব্রাহাম কিছু না বুঝে শুধু তাকিয়ে আছে। আর সে এখন একটু সিরিয়াস হয়।
ইকবাল;; আমার মেয়েটাকে সারাজীবন ভালোবাসায় আগলে রেখো বাবা।

এই বলেই ইকবাল সাহেব চলে যান। আব্রাহাম কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। তার মানে কি? মানে আইরাতের চাচা-চাচি রাজি। ওহ গড। সবাই রাজি হয়ে গেছে। আব্রাহাম হেসে ওঠে। আজ কারো খুশির কোন সীমাই নেই। একদম বাধভাঙ্গা খুশি। আব্রাহাম হঠাৎ ওপরের দিকে তাকায়। দেখে যে আইরাত তার রুমের করিডর থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আর বাতাসে তার চুল গুলো উড়ে উড়ে যাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে চুমুর মতো কিছু একটা দেয়। আইরাত হেসে দেয়। তারপর আব্রাহাম তার গাড়ি নিয়ে চলে আসে, আর আইরাতও ভেতরে চলে যায়। সবাই খুশিতে দিশেহারা।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪১+৪২+৪৩