নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ১৪+১৫+১৬

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ১৪+১৫+১৬
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত এভাবে না বলে কয়েই রাত-বিরাতে উধাও। মেয়ের চিন্তায় চিন্তায় অনামিকা এখন তার মাথায় আইস ব্যাগ রেখে দিয়েছে। দিয়া তার পাশে বসে এটা ওটা বলে বুঝাচ্ছে। সাবিলা মুখ টা বিষ বানিয়ে রেখে দিয়েছে। তৌফিক আর নিলয় বারবার পুলিশে কল দিচ্ছে। আইরাতের যারা যারা পরিচিত বা যারা আইরাতকে চিনে তাদের সবার কাছে ফোন করে জিজ্ঞেস করছে। তবে কোত্থাও আইরাত নেই। নিলয় ফোন কান থেকে নামিয়ে বসে পরে।

অনামিকা;; কিরে কোন খোঁজ পেলি কি?
নিলয়;; না মামি। সবাইকেই জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কেউ কিছুই জানে না।
অনামিকা;; কোথায় গেলো মেয়েটা। আইরাত কখনোই এমন করে না। যেখানেই যাক না কেনো আমাকে বলে যায়।
সাবিলা;; মেয়ে তলে তলে কিছু করে রেখেছে কিনা গিয়ে দেখো।
নিলয়;; আহা মা চুপ করবে তুমি।
সাবিলা;; কতো করে বললাম নিলয়ের সাথে বিয়ে টা দিয়ে দাও।
নিলয়;; বিয়ের সময় হলে তখন করা যাবে এখন আইরাতকে কীভাবে খুঁজে বের করা যায় তাই ভাবো।
তৌফিক;; এভাবে বসে থাকলে আর হবে না। পুলিশের কাছে যেতেই হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তখনই অবনি আসে। এসেই দেখে সবার মুখে বারো টা বেজে আছে।
অবনি;; কি হলো? আইরাতকে খুঁজে পেলে?
তৌফিক;; না রে। ওর ফোনটাও বাসায়। কেউ কিছুই জানে না।
অবনি;; দেখ ২৪ ঘন্টা অব্দি অপেক্ষা করা সম্ভব না। যাই করবি প্লিজ তাড়াতাড়ি কর।
তৌফিক;; চল পুলিশ স্টেশনে যাবো।
অবনি;; দিয়া, তুই আন্টির কাছেই বোস। আন্টি চিন্তা করবেন না আইরাত এসে পরবে দ্রুতই।
এই বলেই অবনি, তৌফিক আর নিলয় পুলিশ স্টেশনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরে।

আব্রাহাম-আইরাত এখনো গাড়িতেই। আইরাত কমপক্ষে ৭-৮ বার জিজ্ঞেস করেছে যে আমরা কোথায় যাচ্ছি কিন্তু আব্রাহাম তার কথার প্যাচে কেটে দিয়েছে। গাড়ির উইন্ড দিয়ে বাইরে তাকিয়ে তাকিয়ে আসছিলো আইরাত। এই জায়গা গুলো সে একদম চিনে না। না জানে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আব্রাহাম তাকে। তারও প্রায় ঘন্টা খানেক পর গাড়ি থেমে যায়। একজন গার্ড এসে আইরাতের পাশের দরজা খুলে দেয়। আইরাত নেমে পরে আশে পাশে দেখতে লাগে। এটা কি কোন পার্টি নাকি টুরিস্ট স্পট সে বুঝে না। সামনে তাকিয়ে দেখে বেশ জাকজমক পূর্ণ একটা হাউজ। বেশ সুউচ্চ। তার সামনেই কার্পেট বিছানো তা পেরিয়েই ভেতরে যেতে হবে। আইরাত এগুলোই দেখছিলো তখনই আব্রাহাম পাশে তার এসে দাঁড়ায়।

আব্রাহাম;; এসো।
এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগে। সবাই দু’সাইডে দাঁড়িয়ে আছে আর তার মাঝখান দিয়ে আব্রাহাম & আইরাত আসছে। ভেতরে চলে যেতেই আরেক দফা চমক খায় আইরাত। বাইরের থেকে ভেতরে একদমই আলাদা। বেশ বড়ো সড়ো হাউজ। ওপরে কতো গুলো ঝাড়বাতি রয়েছে। আশে পাশে অনেক মানুষের আনাগোনা। সবকিছু তে কেমন এক শৌখিনতার ছোঁয়া। বেশ অনেক গুলো মানুষ আসে তারা আব্রাহামের সাথে কুশল বিনিময় করতে লাগে। তারপর আব্রাহাম গিয়ে একটা আলিশান টেবিলে বসে পরে। নিজের পাশে আইরাত কেও বসিয়ে দেয়। আশেপাশে ডিসের অভাব নেই। তার ঠিক মাঝখানে দুটো মোমবাতির স্যাম্প রাখা আছে। আইরাত শুধু সব তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।

আইরাত;; এ এটা কোন জা জায়গা?
আব্রাহাম;; ইট”স এ পার্টি বেইব।
আইরাত;; কিন্তু আমরা এখানে কেনো?
আব্রাহাম;; বিকজ উই আর স্পেশালি ইনভাইটেড।
আইরাত;; হুমম

একজন ওয়েটার এসে তাদের সামনে খাবার রেখে দেয়। তবে সেইসব কিছু বাদ দিয়ে আব্রাহাম চকোলেট আইসক্রিম আনতে বলে। আইরাত খেয়াল করে দেখে যে এখানে নানা বয়সের মানুষই রয়েছে। আর মেয়েদের কথা না হয় বাদই রইলো। সব কটা ওয়েস্টার্ন ড্রেসাপ। কোথাও কাপল রা বসে আড্ডা দিচ্ছে আবার কেউ যথেষ্ট বিনয়নের সাথেই বসে আছে। হঠাৎ এভাবে থাকতে থাকতে আইরাত জিজ্ঞেস করে বসে…
আইরাত;; আচ্ছা আমি কবে বাসায় যাবো?
আব্রাহাম;; যাবে না।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; কেনো আমার সাথে আছো ভালো লাগে না! চুপ করে বসে থাকো নয়তো তুমি জানো যে আমি কি কি করতে পারি।

আইরাতের এখন আব্রাহামের এমন চটাং চটাং কথা শুনে রাগ লাগছে। হঠাৎ সামনে থাকা ডিসের পাশ থেকে আইরাত তার হাতে একটা ছুরি উঠিয়ে নেয়। ভেবেছে এটা দিয়েই কিছু করবে। কিন্তু কিছু বলা বা করার আগেই আব্রাহাম তার ফোনের স্ক্রীনের দিকে নজর রেখে বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; যেভাবে চাকু টা হাতে নিয়েছো ঠিক সেভাবেই সুন্দর করে আগের জায়গায় রেখে দাও।
আইরাত কিছুটা ঢিল দিয়েই চাকুটা আবার রেখে দেয়। কি যে করবে। তার কিছু সময় পর একজন লোক আসে। সুট বুট পরা তবে দেখতে কিছুটা অদ্ভুত রকমের। এসে আব্রাহামের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই বসে পরে। লোকটি আব্রাহামের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম তার রিভলবার বের করে টেবিলের ওপর রেখে দেয়। রিভলবার দেখা মাত্রই সেই লোকটি উঠে চলে যায়। সব যেনো আইরাতের মাথার ওপর দিয়ে গেলো। পরক্ষনেই ওয়েটার এসে আইসক্রিম দিয়ে যায়।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আইসক্রিম নাও।
আইরাত;; আচ্ছা আপনি কি নরমাল ভাবে কথা বলতে পারেন না!
আব্রাহাম;; হুয়াট?
আইরাত;; মানে আপনি যে এখন ওই লোকটার সাথে কথা বলবেন না তা তো মুখেও বলা যেতো তাই না। এভাবে গান বের করার কি আছে।
আব্রাহাম;; তা তোমার বুঝে আসবে না।
আব্রাহাম আইরাতের চেয়ার টা ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে এনে পরে। আইসক্রিম সামনে নিয়ে বসে আছে আইরাত। তখনই হঠাৎ আব্রাহাম বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমি আইসক্রিম খাবো।
আইরাত;; আব….হ্যাঁ তো খান না।

আব্রাহাম এবার কোন কথা না বলে আইরাতের গলার পাশে হাত দিয়ে তার চুলগুলো সরিয়ে আরেক পাশে দিয়ে দেয়। তারপর আইসক্রিমের গ্লাস থেকে বেশ খানিক আইসক্রিম নিয়ে সোজা আইরাতের গলার উপরের অংশে লাগিয়ে দেয়। আইরাত তো অবাক হয়ে তাকায়। কিছু বলা বা বুঝে ওঠার আগেই আব্রাহাম সোজা আইসক্রিম লাগানো জায়গা টুকুতে অর্থাৎ আইরাতের গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। আইরাতের মুখে তালা লেগে যায় অটোমেটিক। কয়েক মিনিট পর আব্রাহাম নিজেই উঠে আসে। আইরাত খেয়াল করে তার ন্যাক-এ আইসক্রিম টুকু নেই। বুঝলো আব্রাহাম খেয়ে ফেলেছে।
আইরাত;; এটা, এ এটা কি ছিলো?
আব্রাহাম;; কি আবার আমি আইসক্রিম খেলাম।
আইরাত;; এভাবে কে আইসক্রিম খায়?
আব্রাহাম;; আমি খাই।

আইরাত তার আশে পাশে তাকিয়ে দেখে যে যার মতো ব্যাস্ত। কেউ দেখে নি, তা দেখে আইতাত একটু দম ছাড়ে। লাজ-লজ্জা কিচ্ছুই নেই এর। কীভাবে আইসক্রিম নিয়ে, ধুর ছাই। আইরাত এগুলোই মনে মনে বলছিলো। চকোলেট আইসক্রিম তাই তার প্রতি লোভ সামলাতে না পেরে আইরাত কিছুটা খেয়েই নেয়। তারপর চলে যায় আরো বেশ খানিক সময়। একটা সময় বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে। আইরাত বুঝলো এখানে আব্রাহাম ভিপি আর তাকে সবাই আব্রাহামের গার্লফ্রেন্ড ভেবে রেখেছে। এটা ভাবতেই যেনো আইরাতের বিরক্তি লাগছে। আইরাত টেবিলে একাই বসে ছিলো আর আব্রাহাম হাতে একটা ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে কিছুটা দূরে কিছু মানুষের সাথে কথা বলছিলো। থেকে থেকে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। তখনই একজন গার্ড আসে, এসে আব্রাহামের পাশে কিছুটা ফিসফিসিয়ে বলে আবার দ্রুত চলে যায়। আব্রাহাম “Excuse me” বলে লোকগুলোর কাছ থেকে এসে পরে। আইরাতের কাছে গিয়ে তার পেছন দিক থেকে ঝুকে পরে। আইরাতের কানের পাশে গিয়ে বলে…

আব্রাহাম;; জানপাখি তুমি এখানে বসো ওকে, আমি একটু আসছি।
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায় আর আব্রাহাম আইরাতের মাথার পাশে একটা চুমু দিয়ে এসে পরে। আব্রাহামের যাওয়ার প্রায় বেশ সময় পার হয়ে যায় তবুও সে আসে না। তা দেখে আইরাত আশে পাশে তাকাতাকি করতে লাগে। তার চোখে আব্রাহাম তো না তবে কিছু পুলিশ অফিসার কে পরে। এরা হয়তো এখানেই থাকে সবসময় সেইফটির জন্য। আইরাতের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে,, সে উঠে পরে। বাইরে চলে আসে। বাইরে আসতেই দেখে একটা বিশাল করিডর। সেখানে ভেতরের তুলনায় মানুষ খুব কম। আইরাতের পরনের জামা টা বেশ লং। তাই সে দুপাশে হাত দিয়ে কিছুটা উঁচু করে ধরে তারপর চলছে। আইরাত খুব দ্রুত ভাবে চলছে কারণ যদি আব্রাহাম দেখে ফেলে তাকে তাহলে আরেক বিপদ। বলতে গেলে আইরাত এক প্রকার ছুটছে। কিছুদূর যেতেই আইরাতের চোখে পরে যে দুজন অফিসার করিডরের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের মনে যেনো কিছুটা আলোর আশা ফুটে।

আইরাত;; Excuse me Officer’s..!
অফিসার;; Yes ma”am..
আইরাত আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই গার্ড গুলো সামনে তাকিয়ে ‘হ্যালো স্যার’ বলেই সোজা চলে যায়। আইরাত কিছু না বুঝে পেছনের দিকে তাকায় দেখে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে আর তার হাতে একটা এলকোহলের বোতল। একদম গরম কড়াইয়ে পানির ছিটা দিলে যেমন ছাত করে ওঠে। এই মূহুর্তে আব্রাহাম কে দেখেও আইরাতের বুক ঠিক তেমন ভাবেই ছাত করে ওঠে। আব্রাহাম এক চুমুক এলকোহল মুখে দিয়ে বোতল টা পাশেই ছুড়ে ফেলে দেয়, ভেঙে যায় তা। আইরাতের দিকে এক পা এক পা করে এগোতে লাগে। আইরাতের তো আগেই কাদো কাদো দশা হয়ে গেছে।

আব্রাহাম;; পালাতে চাইছো? আমার কাছ থেকে? (একদম নরম সুরে)
আইরাত;; _________________________
আব্রাহাম;; বলো (জোরে ধমক দিয়ে)
আব্রাহামের জোরে ধমক দেওয়াতে আইরাত চমকে যায়।
আব্রাহাম;; লাভ নেই জান। এখানে যে এত্তো গুলো মানুষ দেখছো না এরা সবাই আমার কথায় চলছে। সবই আমার আয়ত্তে। সে কোন পুলিশ অফিসার-ই হোক না কেনো। সো এখান থেকে যাওয়ার বা আমার থেকে পালানোর কোন স্কোপই নেই। যতোই ট্রাই করো না কেনো তা ব্যার্থ। তো এইসব আজাইরা প্ল্যান বাদ দিয়ে চুপচাপ আমার সাথে চলো।
আইরাত আর একটা কথাও বলে না কেননা সে জানে এখন কিছু বললে তার কপালে শনি লাগিয়ে দিবে এই ছেলে। আব্রাহাম সেখান থেকে এসে পরে। অতঃপর রাতে তারা সেই পার্টি থেকে বের হয়ে এসে পরে।

তৌফিক;; অফিসার একটা মিসিং ক্যাস ফাইল করতে হবে।
অফিসার;; জ্বি সব ডিটেইলস বলুন।
আবনি;; মেয়ের নাম আইরাত। ভার্সিটি পরে যদিও আগে রিপোর্টিং এ কাজ করতো। তাকে আজ সকাল থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
নিলয়;; সকালে যখন আইরাতের মা অর্থাৎ আমার মামি রুমে যায় তখন একটা ল্যাটার পায় আর জানালার কাচ ভাঙা পায়।

নিলয় ল্যাটার টা অফিসারের দিকে এগিয়ে দেয়। অফিসার পুরো ল্যাটার টা পরে হেসে দেয়। কিন্তু অফিসারের এই হাসিতে তৌফিক-অবনি-নিলয় সবারই মেজাজ চটে যাচ্ছে।
অফিসার;; জ্বি দেখুন আপনারা অযথা এখানে এসেছেন। এই চিঠি টা দেখেই তো বুঝা যায় যে মেয়ে তার প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়েছে।
অবনি;; জ্বি না। আইরাতকে হারে হারে চিনি। ও এইসবে নেই। ও প্রেম করার মতো মেয়ে না আর ও রিলেশন করবে আমরা কেউ জানবো না এমনটা হতেই পারে না। এটা কিডন্যাপিং ক্যাস আর যে কিডন্যাপ করেছে সেই হয়তো এটা লিখেছে।

অফিসার;; আপনারা এতো সিওর কীভাবে হলেন?
নিলয়;; এটা তো বুঝা যায়। রাত-বিরাতে এভাবে একটা মেয়ে উধাও। প্লিজ খুঁজুন ওকে।
অফিসার;; আপনারা কে হন উনার?
তৌফিক;; আমি আর অবনি আইরাতের ফ্রেন্ড।
নিলয়;; আর আমি ওর কাজিন হই।
অফিসার;; মেয়ে মিসিং একদিন হয়েছে?
নিলয়;; না, আর আমরা সব জায়গায় খুঁজেছি সব ট্রাই-ই করেছে কিন্তু পাই নি। অবশেষে উপায় না পেয়ে এখানে এসেছি।

অবনি;; এবার আইরাত কে খোঁজার দায়িত্ব আপনাদের বুঝেছেন। (কিছুটা রেগে)
অফিসার;; এখানে সাইন করে দিন। আমরা আমাদের যথা সম্ভব চেষ্টা করবো উনাকে খোঁজার।
তৌফিক ফাইলে সাইন করে দেয়। তারপর চলে আসে। বাসায় এসে অনামিকা কে অনেক বোঝায়। অনামিকা তো প্রায় কেদেই দিয়েছেন মেয়ের চিন্তায়। অবনি দিয়া সবাই মিলে অনেক বুঝায়, সেদিন রাতে অবনি-সাবিলা আর নিলয় অনামিকার সাথেই রাতে থেকে যায়।

অন্যদিকে আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে সেখান থেকে এসে পরেছে। গাড়িতে আইরাত একদম মন মরা হয়ে বসে ছিলো। আব্রাহামের গেস্ট হাউজে চলে যায়। দেখতে দেখতেই বেশ রাত হয়ে যায়। আইরাত আব্রাহাম কে কিছু না বলেই রুমে চলে গিয়েছে। বেশ অনেকক্ষন সময় হলো বের হবার নাম নেই। আব্রাহাম আইরাতের রুমে যায় গিয়ে দেখে আইরাত জানালার কাছে হাত-পা গুজে দিয়ে বসে আছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে মাথা ঘুড়িয়ে দেখে আব্রাহাম এসেছে।
আব্রাহাম;; তুমি এখনো ফ্রেশ হও নি। কাবার্ডে কাপড় আছে চেঞ্জ করে এসো আর হ্যাঁ শুনো আমি কিছু কাজে বাইরে যাচ্ছি। ফিরতে একটু দেরি হতে পারে। ততক্ষণ এখানেই থাকবে তুমি। সবদিকেই আমার গার্ড রয়েছে।
আব্রাহাম আইরাতের সামনে বসে পরে। আইরাতের বাহু ধরে নিজের দিকে টান দেয়। আইরাত তার কাছে এসে পরে,, আব্রাহাম আইরাতের চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে…

আব্রাহাম;; আমি যাচ্ছি তবে তুমি এখান থেকে যাবে না। ভূলেও এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করো না ওকে।
হঠাৎ আব্রাহামের চোখ যায় আইরাতের ঠোঁটজোড়ার দিকে। ক্রমশ সে আইরাতের ঠোঁটের দিকে এগোতে লাগে। আইরাত তা বুঝতে পারে ঠিকই তবে নড়তে পারছে না কেননা আব্রাহাম তার হাত দিয়ে আইরাতের মুখ টা ধরে রেখেছে। আব্রাহাম এগোতে এগোতে বেশ কাছে এসে পরে আইরাতের। যেই না ঠোঁটের কাছে আসবে তখনই আইরাত ঝট করে ঘাড় ঘুড়িয়ে ফেলে। তা দেখে আব্রাহাম মুচকি হাসে। আইরাতের গালে জোরে চুমু দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; আমি আসি।

এই বলেই আব্রাহাম রুম থেকে বাইরে বের হতে যাবে তবে আবার দরজাতে থেমে যায়।
আব্রাহাম;; জানপাখি!
আইরাত তার দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; ভূল করেও এখান থেকে পালাতে যেও না কিন্তু।

আব্রাহাম চলে আসে। আর আইরাত বিছানার ওপর বসে পরে। ভালো লাগছে না কিছুতেই। একজন মেয়ে স্টাফ এসে আইরাতের রুমে চ্যাক করে যায় যে তার কিছু লাগবে কিনা। আইরাত মানা করে দেয়। উঠে গিয়ে বড়ো থাই গ্লাস টা সরিয়ে দেয়। এখান থেকে রাতের বেলা বাইরের দৃশ্যটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর দেখতে। সুউচ্চ দালানকোঠা গুলো দেখা যাচ্ছে। তাতে হরেক রকমের লাইট গুলো দূর থেকে মুক্তোর ন্যায় জ্বলজ্বল করছে। বেশ আওয়াজ পেয়ে ওপরের রুম থেকে আইরাত নিচে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার প্যান্টের পেছনে রিভলবার নিয়ে সিড়ি বেয়ে বাইরে বের হচ্ছে। গার্ড রা মেইন গেট খুলে দিলে গাড়িতে ওঠে সে গেস্ট হাউজ থেকে বের হয়ে পরে।

আইরাত;; আল্লাহ জানেন আবার কার জীবন নিতে যাচ্ছে এই ছেলে।
আইরাত ভেতরে এসে পরে। তারপর প্রায় দেড় ঘন্টা মতো সময় চলে যায়। তবে রুমে বসে বসে তো আর ভালো লাগছে না। যাই হোক এখান থেকে যেতে হবে, দূরে যেতে হবে এই জায়গা থেকে নয়তো দম বন্ধ হয়ে এখানেই মরে যাবে সে। আইরাত খুব কষ্টে কিছু সাহস জুগিয়ে নেয়। তারপর রুমের দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে পরে। রুমের বাইরে বের হয়েই নিজের চারিদিকে ভালো ভাবে লক্ষ্য করে নেয়। খুব লুকিয়ে-চুরিয়ে বাড়ির বাইরে পা রাখতে হবে। কোন স্টাফ বা কোন গার্ডের নজরে যদি একবার পরে যায় তাহলে সব ভেস্তে যাবে।

আইরাত খুব সাবধানে গেস্ট হাউজের হলরুমে এসে পরে। আরো কয়েক কদম সামনে এগোতেই দুজন গার্ড কে আসতে দেখে দ্রুত একটা দেওয়ালের পেছনে লুকিয়ে পরে। গার্ড গুলো চলে গেলে আইরাত আবার বাইরে বের হয়। কোন রকমে হলরুম টা পেরিয়ে যেই না বাইরে আসতে নিবে তখনই গার্ড দের মুখে শুনতে পায় যে আব্রাহামের এসে পরার সময় হয়ে গেছে। এটা শুনেই তো আইরাতের ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে। ব্যাপার টা কিছুটা এমন যে একটা রাজপ্রাসাদে একজন মেয়ে কে আটকিয়ে রেখেছে এক রাগি ভূত। আব্রাহাম ভূত। দেখলেই বা ধরে ফেললেই ঘাড় মটকে দিবে। এই গেস্ট হাউজে আইরাত দুদিন এসেছে। একদিম আব্রাহাম ডেকেছিলো আর এখন আব্রাহাম সোজা তুলে নিয়ে এসেছে। কখনোই এই পুরো গেস্ট হাউজ টা ঘুড়ে দেখা হয়নি তার। আর বাইরে থেকেই দেখে বুঝা যায় যে এটা অনেক বড়ো সড়ো একটা প্লেস।

আইরাত;; যা করার সব আব্রাহাম আসার আগেই করতে হবে। কারণ ও একবার এসে পরলে আমার আর জীবনে এখান থেকে বের হওয়া হবে না। দ্রুত বের হতে হবে। কিন্তু বাইরে যাওয়ার মেইন গেইট কোনটা। যে গেইয় টা দিয়ে আব্রাহাম বাইরে গিয়েছে তা দিয়ে এখন আমার বাইরে যাওয়া অসম্ভব প্রায়। কারণ কমপক্ষে দশ জন গার্ড সেখানে পাহারায় আছে। আর আব্রাহামের পারমিশন ছাড়া আমার বাইরে যাওয়া তো দূর কোন গার্ড আমার সাথে কথাও বলবে না। কি যে করি আমি!

আইরাত একরাশ দুঃখ আর রাগ নিয়ে সামনে এগোচ্ছে৷ হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা দূরে এসে পরে। আইরাত বুঝতে পারছে না যে আসলে কোন দিকে যাবে। এ যেনো এক ভুলভুলাইয়া। একদিক যেতে আরেক দিক চলে যায়। এখন আইরাত যেখানে আছে সেখানে ল্যাম্পপোস্টের মতো ২-৩ টা বড়ো বাতি আছে। তবে বেশ অন্ধকারও বটে। মাঝখান দিয়ে যাওয়ার রাস্তা আর দুপাশে বড়ো বড়ো গাছ।গাছগুলো কে ছাটাই-বাটাই করে সুন্দর আকৃতি দেওয়া হয়েছে।

আইরাত;; আর কতো হাঁটবো আমি। বাপরে বাপ এতো বড়ো বাড়ি কার হয়! এই যে হাঁটছি। কখন বাইরের রাস্তা পাবো আমি, কখন বাইরে যাবো। বেশ সময় হয়ে গেছে। আব্রাহাম আবার এসে পরে নি তো। আমাকে যেতে হবে।
আনমনেই এগুলো বলে আইরাত আবার পা বাড়ায় সামনে। এভাবে যেতে যেতে এক সময় হুট করেই চারিপাশে অন্ধকার নেমে আসে। ধুপ করে সবদিকে কালো হয়ে যায়। আইরাত শুকনো ঢোক গিলে। কারণ অন্ধকার তার সহ্য হয় না। পরমূহুর্তেই আবার একপাশে কিছু সাদা বাতি জ্বলে ওঠে আরেক পাশে থাকা আর্টিফিশিয়াল মশালে আগুন জ্বলে ওঠে।

তাতে আলো-আধারে বেশ মুগ্ধকর লাগছে। তবে আইরাত কেনো যেনো থেমে পরে। গা কেমন ছমছম করে ওঠে। মনে হচ্ছে আইরাত কে কেউ ফলো করছে, কেউ তার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে। কেমন এক ভয় কাজ করছে। আইরাত আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে ফট করে নিজের পেছনে ঘুড়ে তাকায়। তাকাতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খায়। দেখে স্বয়ং আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। সোজা কথা ভয়ে আইরাতের শরীরের শিরদাঁড়া সব দাঁড়িয়ে পরেছে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। যেনো এই মূহুর্তে আইরাতের সব উপস্থিত বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। আব্রাহাম ভাবলেশহীন ভাবে এক ভ্রু উঁচু করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে৷

আব্রাহাম;; Are you lost Babygirl…!
আইরাত কিছু বলবে তার আগেই আব্রাহাম আইরাতের কোমড়ে ধরে এক টান দিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। তার ঘাড়ের এক সাইডে নিজের আঙুল দিয়ে প্রেস করে সাথেসাথে আইরাত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে আব্রাহামের বুকেই পরে থাকে। আব্রাহাম আইরাতকে নিজের কাধে তুলে আবার ভেতরের দিকে হাঁটা দেয়।
নিজের মাথায় কারো নরম স্পর্শ পেয়ে জেগে ওঠে আইরাত। মিটমিট করে নিজের চোখের পাতা মেলে। দেখে আব্রাহাম তার পাশেই বসে আছে আর মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। ধরফরিয়ে উঠে বসে পরে সে। নিজের চতুর্পাশে চোখ বুলিয়ে দেখে এটা আগের রুম টাই। তার মানে আইরাত পালাতে পারে নি, আব্রাহাম তাকে ধরে আবার এখানে নিয়ে এসেছে।

আব্রাহাম;; কেনো বাইরে গিয়েছিলে?
আইরাত;; _________________________
আব্রাহাম এবার রাগে গর্জে ওঠে।
আব্রাহাম;; আইরাত কেনো বাইরে গিয়েছিলে? কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি তোমায়।
আইরাত;; আম আমি আ আসলে…
আব্রাহাম এবার তেড়ে এসে আইরাতের বাহু চেপে ধরে।
আব্রাহাম;; তোকে বারবার না করেছি যে এখান থেকে এক পা বাইরে বের করবি না আমি না আসা অব্দি। তাও তুই বাইরে গিয়েছিস।

আইরাত;; আব আব্রাহাম আম আমার লা লাগছে।
আব্রাহাম এবার আইরাতের মুখ চেপে ধরে।
আব্রাহাম;; লাগুক, আমারও লাগে এই যে এখানে (বুকের পাশে হাত দিয়ে)। তুই কেন বুঝিস না যে কতোটা ভালোবাসি আমি তোকে। আরে এতো ভালো হয়তো আমি নিজেকেও বাসি না। আমার পুরো জীবন তুই, আমার সব তুই আর একমাত্র তুই। তুই জানিস না, তোর বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই যে আমি তোকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো। আরে আমি ভালোবাসি তোকে। মানলাম খুন-খারাবা করি, শত শত ঝামেলার সাথে জুড়ে আছি কিন্তু তোকে কি আমি কম ভালোবাসি।

আমাকে দেখে কি কোন সাড়াকছাপ রোমিও লাগে তোর। যে প্রেম করলাম মেয়ে না বললো বা ছ্যাকা দিয়ে চলে গেলো আর আমি হাতে হাতে রেখে বসে থাকলাম। শুনে রাখ (আইরাত কে আরো জরে চেপে ধরে) যেটা আমার সেটা আমারই বুঝতে পেরেছিস তুই। আমার জিনিস কীভাবে আদায় করে নিতে হয় তা আমি বেশ ভালো করেই জানি। I”m the most jealous person in the world যেটা আমার সেটা আমারই। পালাবি না তুই, আইরাত তুই পালাবি তাই না আমার কাছ থেকে। ওকে ফাইন যা পালা। আমিও দেখবো কীভাবে পালাস।

আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দেয়। আর আইরাত চুপ করে বসে বসে নিজের চোখের পানি ফেলছে। আব্রাহামের এত্তো রাগ লাগছে মন চাইছে কতো গুলো খুন করে ফেলুক এখনই। আইরাত হাঁটতে হাঁটতে অলমোস্ট বাড়ির পেছনের গেইটের কাছে চলে গয়েছিলো। বেশি না আর যদি পাঁচ মিনিট দেরি করে আসতো আব্রাহাম তাহলে আইরাত উড়াল দিতো। আইরাতের হলরুম থেকে বাইরে বের হওয়ার পরপরই আব্রাহাম এসে পরে। এসেই সোজা আইরাতের রুমে গিয়েছে তবে সে সেখানে ছিলো না। ওয়াসরুম,করিডর বাকি রুম গুলোতেও আইরাত কে খোঁজা শেষ তবে সে কোত্থাও ছিলো না। আইরাতকে না পেয়ে আব্রাহামের তো মাথায় রক্ত চড়ে বসেছিলো।

যেই না রুম থেকে বের হয়ে আসতে ধরবে তখনই তার চোখ আটকে যায়। আব্রাহাম কয়েক কদম এগিয়ে বড়ো থাই গ্লাস টার কাছে চলে যায়। গ্লাসের ওপর এক হাত রেখে ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই দেখে আইরাত বাড়ির পেছনের দিকটায় চলে গিয়েছে। দু’পাশের বাগানের মাঝে যে সরু পথটা আছে আইরাত তা দিয়েই ছুটে ছুটে বাইরের দিকে চলে যাচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতকে পালিয়ে যেতে দেখে বাকা হাসে। আর তারপরে আব্রাহাম ইচ্ছে করেই পুরো গেস্ট হাউজের লাইট”স অফ করে দেয়।আব্রাহাম জানে যে আইরাত অন্ধকারে ভয় পায় তাই বাইরের লাইট”স গুলো অন করে দেয়। দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে বাইরে চলে যায়। আর একদম নিঃশব্দে যায়। অতঃপর আইরাত কে আবার তুলে নিয়ে আসা।

আইরাতকে রুমে রেখেই আব্রাহাম নিচে চলে যায়। আইরাত তো ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। আব্রাহাম কে ভীষণ ভাবে রেগে নিচে যেতে দেখে। তার কয়েক মিনিট পরেই ভারি কিছু ভাঙার বিকট শব্দ কানে আসে। আইরাত মাথা তুলে বাইরের দিকে তাকায়। পরপরই আবার জোরে শব্দ হয়। আইরাত এবার বিছানা ছেড়ে নেমে বাইরে যায়। যেতেই দেখে আব্রাহাম একের পর এক জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করছে। আর সব গার্ড’রা সামনে মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আব্রাহাম;; বসিয়ে বসিয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কাদের কে পালছি! আইরাত এখান থেকে বের হলো কি করে। এত্তো গুলো স্টাফ বাসায় থাকতে এত্তো গুলো গার্ড থাকতে আইরাত বাইরে পা কীভাবে রাখলো?

জোর চিল্লিয়ে এই কথা বলেই আব্রাহাম তার সামনে থাকা এক বড়ো কাচের টেবিলে দেয় এক লাথি মেরে। ভেঙে খানখান হয়ে যায় মূহুর্তেই। আইরাত ভয়ে চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। জেকেটের হাতা ফোল্ড করতে করতে একটা ফ্লাওয়াত ব্যাসের দিকে এগিয়ে যায় তারপর তা হাতে তুলে নিয়ে স্বজোরে বড়ো গ্লাসে ছুড়ে মারে। কানের পর্দা ফাটার মতো শব্দ করে কাচ ভেঙে ঝরঝর করে নিচে নেমে আসে। পুরো বাড়ি নীরবতায় ভরা, তাতে শুধু আব্রাহামের ভাংচুরের আওয়াজ স্পষ্ট। আব্রাহাম এবার রিভলবারে বুলেট লোড করতে করতে কঠোরভাবে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; এবার কেউ চুপ করে থাকলে তারপর তার মাথা হবে আর আমার রিভলবার।
আব্রাহামের এই কথা বলার সাথে সাথেই একজন গার্ড তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে…

গার্ড;; স্যার, আমরা কিছুই জানি না। আপনার কথা মতো আমরা সবাই বাইরেই ছিলাম। সব স্টাফ রা বাইরে ছিলো। পুরো হলরুমেই ছিলো। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম যে ম্যাম তো হাউজের পেছনের রাস্তা চিনে না তাই পেছনের দিকটার থেকে আমরা সামনে দিকটায় নজর দিয়েছিলাম বেশি। জানি না কখন ম্যাম সবার চোখ ফাকি দিয়ে বাইরে চলে যায়। সরি স্যার, লাস্ট একটা সুযোগ দিন। আর এমন হবে না। স্যার প্লিজ স্যার এইবারের মতো ক্ষমা করে দিন।

আব্রাহাম সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাত দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কে দেখে আব্রাহাম তার কপালের সাইডে হাত দিয়ে চেপে ধরে। অল্পের জন্য, অল্পের জন্য পালাতে পারে নি আজ। আব্রাহাম চলেই যেতো তবে যাবার আগে আরেকটা কাচের ডেস্কে লাথি মেরে যায় তাও নিমিষেই ভেঙে যায়। স্টাফ গুলো যেনো এক একটা বুকে হাত দিয়ে রেখেছে। কেননা বারবার চমকে উঠছে। আব্রাহাম দ্রুত গিয়ে আইরাতের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে চলে যায়। সব গার্ড & স্টাফ রা পুরো হলরুমে তাকিয়ে দেখে ফ্লোর আর দেখা যাচ্ছে না সবদিকে শুধু কাচ আর কাচ। আব্রাহামের মাথায় রক্ত চেপে বসলে যা কিছু করতে পারে, সেই তুলনায় এটা তো কিছুই না। স্টাফ গুলো এগুলো পরিষ্কার করতে লাগলো। আর গার্ড রা গিয়ে আগে থেকে দ্বীগুণ হারে কড়া পাহারা দিতে লাগলো বাড়ির সবদিকেই।

ওদিকে আব্রাহাম আইরাতকে রুমে নিয়ে এসে বিছানার ওপর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। স্বশব্দে দরজা লাগিয়ে দেয়। আইরাত আবার কোন রকমে ওঠে বসে। আব্রাহাম আইরাতের সামনে বসে চোখ বন্ধ করে এনাফ শান্ত হয়ে বলে…
আব্রাহাম;; দেখো জানপাখি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। সবথেকে বেশি। তোমাকে, শুধুমাত্র তুমি আইরাত কে পাওয়ার জন্য এই আব্রাহাম সবকিছুই করতে পারে। সবকিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকে চাই। আর তোমাকেও এই আমাকেই ভালোবাসতে হবে। ভূল করেও তুমি তোমার মন-মস্তিষ্কে অন্য কারো কথা আনতে পারবে না। কখনোই না।

আমাই জীবনের প্রথম & শেষ মেয়ে তুমি। না-ই তোমার আগেই কেউ এসেছিলো আর না-ই তোমার পরে কেউ আসবে। তোমার পরে আসার তো প্রশ্নই আসে না কেননা তুমি-ই আছো আর তুমি-ই থাকবে। আর আমি তোমার লাইফে কাউকে আসতেই দিবো না। মোট কথা তুই আমার বুঝেছিস। দরকার পরলে তোর বডিতে আমি আমার নাম লিখে দিবো। আর মনে রেখো বেবিগার্ল আমি যতটা ভালো তার থেকে দ্বীগুণ খারাপ। যার ডেমো অনেক বার তুমি পেয়েছো।

তোমার লাইফে আমি ব্যাতিত অন্য কোন অপশন নেই। দোষ তোমার, তুমি যদি আমাকে সোজাসাপটা মেনে নিতে তাহলে কি তোমাকে এখানে আমার আটকিয়ে রাখতে হতো বলো। কখনোই না। তবে চিন্তা নেই সব ঠিক হয়ে যাবে। না-ই বাসায় তোমার জন্য চিন্তা করতে হবে আর না-ই তোমাকে এখান থেকে পালাতে হবে। কারণ এখন যা করার আমি করবো। যাই হোক কীভাবে তোমাকে আমার নিজের কাছে রাখতে হয় তাও আমার বেশ ভালো করেই জানা আছে।
এবার আর আইরাত ঠিক থাকতে পারে না। অনেক হয়েছে ব্যাস আর না। আইরাত এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে পরে।

আইরাত;; আমি ভালোবাসি না আপনাকে।
আইরাত এই কথা বলেই রাগে আর কান্নায় ফুসতে লাগে।
আইরাত;; আমাকে কি মানুষ বলে মনে হয় না আপনার। আপনি এখানে আমায় ধরে বেধে রেখেছেন। কেনো? শুধু আপনি আমায় ভালোবাসেন বিধায়। ঘোড়ার ডিম। আমি ভালোবাসায় বিশ্বাসী নই। আর কেনো, আমিই কেনো। আপনি কে হন আমার? কিসের ভিত্তিতে অধিকার খাটান। আব্রাহাম আপনি এত্তো বড়ো একজন মাফিয়া। দেশ হোক বা ফরেইন কান্ট্রি আপনার নাম-ডাকের অভাব নেই।

যেখানে আপনার নাম শুনলে মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পরে সেখানে সব ছেড়েছুড়ে আপনি কিনা, আপনি কিনা আমার কতো একটা সাধারণ মেয়ের পেছনে পরে আছেন। আমার থেকে লাক্ষ গুণে ভালো মেয়ে আপনি পেয়ে যাবেন এন্ড আপনি ডিজার্ভ করেন। আমাকেই কেনো? এতোদিন ভয়ে ভয়ে কিছুই বলতে পারি নি। আপনি এতো রাগি কেনো? আপনি দেখছেন আমার জন্য কতো কিছু হচ্ছে। সব আমার জন্য বিগড়ে যাচ্ছে। আপনি কেনো বুঝেন না যে আমি ভালোবাসি না আপ……
আব্রাহাম;; চুপ, একদম চুপ।

আব্রাহাম এত্তো জোরে চিল্লিয়ে ওঠে যার ফলে আইরাত এবার ভয়ে ভেঁ ভেঁ করে কেঁদে দেয়। হাতের কাছে যা ছিলো তাই নিয়ে গ্লাসে ঢিল মেরে দেয়। আরেক দফা ভাংচুর। সব স্টাফরা এবার ওপর থেকে তোড়-ফোরের আওয়াজ পায়। ভয়ে কেউ আর কিছু বলে না যার যার কাজ কর‍তে লাগে। আইরাত তার দু’হাত দিয়ে কান চেপে রেখে দিয়েছে। আইরাত রুমের এক সাইডে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলো আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের বাহু ধরে নিজের দিকে নিয়ে আসে।
আব্রাহাম;; কান খুলে শুনে রাখ এই দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও আমি তোকে আমার থেকে দূর যেতেই দিবো না। আর তা তো এতোক্ষণে বুঝে গেছিস তাই না। আর রইলো কথা অধিকারের সেটা কালই বুঝতে পারবি। তোকে হার্ট করি না, করতে চাই না কারণ আমার নিজেরই কষ্ট হয়। কিন্তু সহ্যের সীমা থাকে। আর তোমার এখান থেকে বের হওয়ার আগে বা আবার তোমার মায়ের কাছে ফেরার আগে তুমি আমারই নাম-ডাক বা আমার সম্পর্ক বহন করে তারপর এখান থেকে বের হবে, বুঝতে পেরেছো।

এই বলেই আব্রাহাম আইরাত কে কিছুটা জোরেই দূরে ঠেলে দিয়ে সেখান থেকে রেগে আগুন হয়ে বের হয়ে পরে। তবে এতোক্ষন বুঝতে না পারলেও আইরাত এবার খেয়াল করে তার পায়ের গোড়ালির দিকে বেশ কিছুটা অংশ কেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তবে এখন সেই ক্ষত স্থান বাধার একদম ইচ্ছে নেই। নিজের চারিপাশে এতো ভাংচুর আর ভালো লাগছে না আইরাতের। সে গিয়ে চুপ করে বিছানাতে শুয়ে পরে। কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে নিজেরও খেয়াল নেই। আর ওদিকে আব্রাহাম ট্যারেসের ওপর গিয়ে সিগারেট জ্বালিয়েছে। ট্যারেসের ওপর কোন আলাদা ছাউনি নেই। পুরো খোলা আকাশটা পরিষ্কার ভাবেই দেখা যায়। মেঘের আড়ালে আড়ালে যে চাঁদটা ঢাকা পরেছে তাও দেখা যাচ্ছে। চাঁদের আলো সব আছড়ে পরেছে। ছাদের রেলিং ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রাশেদ কে ফোন লাগায়। যা বলার সব ক্লিয়ারলি বুঝিয়ে বলে রাশেদ কে। কিন্তু আব্রাহামের সব কথা শুনে রাশেদ যেনো বেশ অবাক।

রাশেদ;; স্যার আপনি কি সিওর!
আব্রাহাম;; ড্যাম সিওর।
কথা বলে আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। এবার শুধু কাল কি হয় তাই দেখার পালা।

পরেরদিন সকালে আব্রাহাম উঠেই মর্নিং ওয়ার্কে বের হয়ে পরে। আইরাত যে রুমে রয়েছে কাল রাত থেকে সে ওই রুমে যায় নি। ভোরে আইরাত উঠে না তাই গিয়ে আর তার ঘুম আর ভাঙাতে চায় নি। ঘন্টা খানেক পর ওয়ার্ক শেষে বাসায় ফিরে এসে দেখে আইরাত এখনো উঠে নি। এবারও আব্রাহাম তার রুমে যায় না। বাসার সব স্টাফ আর গার্ড দের ভালোভাবে বুঝিয়ে রেখে যায়। আইরাত কে নজর নজরে রাখতে বলে, কখন-কোথায় যায় কি করে বা কি কি লাগবে তার সবই দেখে শুনে রাখতে বলে আব্রাহাম তার অফিসে চলে যায়।

অফিসে গিয়ে মিটিং ছিলো তা কোন রকমে পার করে আব্রাহাম। মন যেনো কিছুতেই টিকছে না। ভেবেছিলো আইরাতের থেকে কিছুটা রাগ করে থাকবে সে কিন্তু না তা আর সম্ভব না। আইরাতের সাথে সে রাগ করে থাকতেই পারবে না। হ্যাঁ আইরাত তার সাথে রাগ করে থাকতে পারবে তবে আব্রাহাম পারবে না। ক্লাইন্ট গুলো চলে যায়। মিটিং এ আব্রাহাম এর সাথে অয়ন-কৌশলও ছিলো। সবাই চলে গেলেও তারা থেকে যায়।

অয়ন;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; হুম
অয়ন;; ঠিক আছিস ভাই? কি হয়েছে?
আব্রাহাম;; কিছু না।
কৌশল;; না কিছু তো হয়েছে আজ কেমন যেনো মনমরা লাগছে।
আব্রাহাম;; আইরাত কে আমি আমার কাছে রেখে দিয়েছি।
অয়ন;; কি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, দুইদিন যাবত সে আমার কাছেই।
কৌশল;; তাহলে তো আরো খুশি থাকার কথা তোর।
আব্রাহাম;; ইয়াহ, আ’ম হ্যাপি। একচুয়ালি আ”ম টু মাচ হ্যাপি। তবে এখন থেকে আইরাতের খুশিটাই সবার আগেই। এখন আমি বাড়ি যাবো তোরা এদিকটা সামলে নিস।
অয়ন;; চিন্তা করিস না সব দেখেই রাখবো তুই যা।
আব্রাহাম;; বায়।

আব্রাহাম অফিস থেকে বের হয়ে পরে। গেস্ট হাউজে চলে যায়। ইলার সাথে আব্রাহামের দেখা হয় নি। যদিও সবসময় ফোনে কথা হয়। আব্রাহাম বলেছে সে কাজের চাপে পরেছে তাই একটু ব্যাস্ত। গাড়ি এসে থামে গেস্ট হাউজের বাইরেই, আব্রাহাম নেমে ভেতরে চলে যায়। হাউজের ভেতর টা কেমন শান্ত। সবাই খুব কমই কথা বলে। সেখানে আব্রাহামের ভারি ভারি কদমে হেঁটে যাওয়ার আওয়াজ যেনো কানে এসে বাজছে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে পরে। কয়েক বার টোকা দেয় তবুও ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসে না।

আব্রাহাম;; আইরাত আ”ম সরি জানপাখি। আর চিল্লাপাল্লা করবো না তোমার ওপর কখনোই না। কি করবো বলো তুমি আমার থেকে দূরে যেতে চাইলেই আমার খুব খুব খারাপ লাগে। মনে হয় এই যেনো তোমায় হারিয়ে ফেললাম। আই ডোন্ট ওয়ানা লস ইউ। এর জন্য রাগ উঠে পরে। বাট আই প্রমিস আর কখনোই রাগারাগি করবো না। আর তুমি যেনো আমার থেকে দূরে না যেতে পারো সেই ব্যাবস্থাও করবো। দরজা খোল। বেবিগার্ল!

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল! প্লিজ ওপেন দি ডোর।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল দরজা খোল প্লিজ। জানপাখি এভাবে আর থেকো না, দরজা টা তো খোলো। বেবিগার্ল!
আব্রাহামের এতো ডাকার পরও আইরাত দরজা খোলে না।
আব্রাহাম;; Airat, i”m telling you for the last time.. open the door নয়তো আমি কিন্তু এখন দরজা সোজা ভেঙে ফেলবো। (চোখ-মুখ শক্ত করে)
এর পরেও দরজার ওপর পাশ থেকে কোনরকম কোন শব্দ আসে না। তা দেখে তো আব্রাহামের মাথা প্রায় খারাপ হওয়ার দশা। কিছু করতে যাবে তার আগেই একজন স্টাফ আসে।

স্টাফ;; স্যার..
আব্রাহাম;; বলো।
স্টাফ;; স্যার আসলে ম্যাম অনেকক্ষন যাবত-ই দরজা খুলছে না। আপনি অফিসে চলে যাওয়ার পর আমরা সবাই অনেক ডেকেছি আইরাত ম্যাম কে কিন্তু না উনি ভেতর থেকে কোন কথা বলেছেন না আর না দরজা খুলেছেন। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।
আব্রাহাম;; হুয়াট?
স্টাফ;; জ জ জ্ব জ্বি স্যার।
আব্রাহাম;; আরে মাথা মোটা তো আমাকে ইনফর্ম করো নি কেনো?
স্টাফ;; স্যার, আমরা অফিসে ফোন করেছিলাম কিন্তু কেউ একজন বললো আপনি নাকি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এ আছেন তাই আপনাকে ফোন দেওয়া যাবে না।
আব্রাহাম;; গুরুত্বপূর্ণ? আইরাতের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার লাইফে আর কিচ্ছু না। আইরাত সবার আগে আর বাকি সবকিছুই পরে। এখন এখান থেকে যাও।

স্টাফ সেখান থেকে দ্রুত কেটে পরে৷ আর আব্রাহামের মনে তো আরেক ভয় ঢুকে যায় যে আইরাত আবার তাকে ফাকি দিয়ে চলে যায় নি তো। আর কিছু না ভেবেই আব্রাহাম দরজাতে স্বজোরে দেয় এক লাথি মেরে। দরজা ভেঙে যায়। আব্রাহাম তড়িঘড়ি করে ভেতরে গিয়ে দেখে আইরাত হাত-পা একদম গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে বেডে। পরনে সেই গাউন টাই। আব্রাহামের বুকে যত ধুকপুকানি ছিলো সব যেনো এক নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। আব্রাহাম ধীর পায়ে আইরাতের কাছে চলে যায়। এক হাটু গেড়ে তার সামনে বসে পরে। আইরাতের একটা হাত নিয়ে নিজের দু’হাতের মাঝে রেখে দেয়। তবে আইরাতকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে আব্রাহাম কপাল কুচকায়। চ্যাক করে দেখে আইরাত তো অজ্ঞান। আর রুমের আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে সেই কাল রাতে যে ভাংচুর করেছিলো তা এখনো একই দশায় রয়েছে। রাগ করতে চেয়েও এখন করতে পারছে না। আব্রাহাম আইরাত কে কোলে তুলে নেয় আর এক চিৎকার দিয়ে স্টাফ কে ডাকে….

আব্রাহাম;; দশ মিনিটের মধ্যে এই রুম পরিষ্কার হয়ে যাওয়া চাই ওকে। একদম নিট & ক্লিন। একটা কাচের টুকরোও যেনো না থাকে। আর সব আগের মতো যেনো পাই।
স্টাফ;; জ্বি স্যার।
আব্রাহাম আইরাতকে নিয়ে অন্য রুমে এসে পরে। মেয়েটা চুপ করে আব্রাহামের বাহুতেই শুয়ে রয়েছে। আস্তে করে আইরাতকে বেডে শুইয়ে দেয়। মুখের সামনে আসা চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়। আব্রাহাম দ্রুত ডক্টর কে ফোন করে। ১০-২০ মিনিট পর ডক্টর এসেও পরে।
আব্রাহাম;; Is everything ok doctor?
ডক্টর;; জ্বি সবই ঠিক আছে। আসলে উনি অতিমাত্রায় ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। ভয়েই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। চিন্তায় কোন কারণ নেই। উনাকে বেশি চিন্তা করতে মানা করবেন আর যত সম্ভব নিজের কাছেই রাখবেন। হ্যাপি রাখার চেষ্টা করবেন।
আব্রাহাম;; Obviously..
ডক্টর;; আমি এবার আসি।

আব্রাহাম একজন গার্ডকে বলে ডক্টর কে বাইরে নিয়ে যেতে বলে। আর আব্রাহাম আইরাতের কাছেই বসে। নিজের ওপর থেকে কোট টা খুলে সোফার ওপরই রেখে দেয়। আব্রাহাম কিছু স্টাফ কে রুমে ডাক দেয় তারপর আইরাতের কপালে চুমু একে বাইরে ভলে যায়।

আইরাতের জ্ঞান ফিরে। উঠে দেখে অন্য রুমে শুয়ে আছে। আর রুমে কেউই নেই। আইরাত উঠে পরে। উঠে দাঁড়ায় কিন্তু পরে যেতে ধরলে একটা টেবিলের কোণা ধরে দাঁড়িয়ে পরে। ঘুড়ে ঘুড়ে রুম টা দেখে। আয়নার সামনে যেতেই আইরাতের চোখ কপালে। গায়ে একটা মিষ্টি কালারের হাটু অব্দি জামা। এটা তো সে পরে ঘুমায় নি। তাহলে চেঞ্জ করলো কে। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজে পেছনে ঘুরে দেখে আব্রাহাম আর তার হাতে খাবারের ট্রে। আব্রাহাম কে দেখে আইরাত চুপ মেরে যায়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল উঠেছো? এদিকে এসো কাল থেকে কিচ্ছু খাও নি তুমি। আসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
আইরাত;; আম আমার ড ড্রেস ক কে চেন চেঞ্জ করেছে?
আব্রাহাম;; আমি করেছি।
আইরাত;; কি ??

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, আমি নিজে নিজ হাতে চেঞ্জ করেছি।
আইরাত;; কি বলছেন এগুলো আপনি? আপনি আমার পারমিশন ছাড়াই আমার কাপড়… আপনি কীভাবে পারলেন!
আব্রাহাম দেখে এই যেনো আইরাত কেঁদে দিলো এমন অবস্থা। তাই দ্রুত আব্রাহাম বলে ওঠে..
আব্রাহাম;; আচ্ছা আচ্ছা কান্না করতে হবে না। আমি চেঞ্জ করি নি। এক মেয়ে স্টাফ চেঞ্জ করে দিয়েছে আমার কথায়। আমি তো ফাজলামি করছিলাম।
আইরাত;; আপনার এই ফাজলামি অল্পের জন্য আমার জানই নিয়ে নিয়েছিলো।
আব্রাহাম;; পারবে না কেননা তোমার ওপর নিজের জান দেওয়ার অধিকারও আমার আর তোমার জান নেওয়ারও।
আইরাত;; _________________________
আব্রাহাম;; এবার কি তুমি ফ্রেশ হতে যাবে নাকি আমি সেইদিনের মতো করে তোমাকে পানিভর্তি বাথটাবে ফেলে দিয়ে আসবো!

কিছু না বলেই আইরাত দ্রুত ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছুক্ষন পর বের হয়ে দেখে আব্রাহাম হাতে চাকু নিয়ে বসে আছে। আর চাকুর ডগায় লাল তরল কিছু একটা লেগে রয়েছে। আইরাত তো চোখ বড় বড় করে তাকায়। আব্রাহাম চাকু ঘোড়ানো বাদ দিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতের কলিজা টা ধপাস করে ওঠে।
আইরাত;; আপনি কি ক কি করেছেন আবার? এ এই চাকু ল লাল কেনো?
আব্রাহাম;; মাত্রই একটা গার্ড কে খুন করে আসলাম।
আইরাত;; কিহ, কেনো?
আব্রাহাম;; মন চাইলো তাই।
আইরাত;; আপনি কি সাইকো?
আব্রাহাম;; মিস. বকবক এদিকে আসেন আর খান। চাকুতে টমেটো ক্যাচাপ লেগে আছে। ব্রেডে লাগাচ্ছিলাম। আর আপেল কেটেছি।
আইরাত;; অযথা ভয় দেখান কেনো?

আব্রাহাম;; তুমি ভয় পাও কেনো? বি স্ট্রোং ইয়ার। আর এছাডাও তোমার ভয় মাখা মুখটা আমার বড্ড পছন্দের।
আইরাত ঠাই দাঁড়িয়ে আছে, খেতে আসছে না দেখে আব্রাহাম আবার ডাক দেয়।
আব্রাহাম;; কি হলো এদিকে আসো দাঁড়িয়ে আছো কেনো!
আইরাত;; আমি খাবো না আমার ক্ষুদা নেই।
এই বলেই আইরাত কয়েক কদম এগিয়ে এসে টাওয়াল টা রেখে দেয়। পেছনে ঘুড়ে তাকাবে তখনই মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে ওঠে। আর আব্রাহাম তাকে নিজের একহাতে ধরে ফেলে।
আব্রাহাম;; মানে ব্যাপার টা কিছুটা এরকম যে শরীর দূর্বল হয়ে শেষ হয়ে যাবে তবুও জেদ কমবে না। এখন যদি এখানে না বসো তাহলে ওইযে ওইটা দেখছো না (থাই গ্লাসের বাইরে থাকা সুউঁচু বিল্ডিং টা দেখিয়ে) ওইটার ওপর থেকে তোমাকে সোজা নিচে ফেলে দিবো বুঝলে।

আইরাত ঠোঁট উল্টিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; আর তুমি বেশ ভালো করেই জানো যে আমি মিথ্যা বলি না।
আব্রাহাম আবার এসে আপেল কাটতে লাগে আর আইরাত বিছানাতে আব্রাহামের সামনে দু’পা ভাজ করে বসে পরে।
আব্রাহাম;; হুমমম হা করো।
আইরাত;; আমি নিজে খাই।
আব্রাহাম;; গুলি খাবা!
আইরাত হা করে আব্রাহাম সুন্দর করে খাইয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; গুড গার্ল।

আইরাত আস্তে আস্তে চিবুতে লাগে। খাওয়া শেষে আব্রাহাম আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে…
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল উঠো রেডি হও আমরা বাইরে যাবো এক জায়গায়। সেখানে গেলে ভালো লাগবে তোমার আর সবার শেষে তোমার জন্য একটা বিশাল সারপ্রাইজ আছে যা দেখে তুমি খুশি না হয়ে থাকতেই পারবে না।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; তা তো গেলেই বুঝতে পারবে, এবার উঠো জলদি।
আইরাত;; আচ্ছা।

ঘন্টা খানিক পর আব্রাহাম-আইরাত বের হয়ে পরে। গাড়িতে বসে ছিলো আইরাত। তার মুড ভালো না মোটেও। এর জন্য আব্রাহাম তার হাতে পুরো এক বক্স চকোলেট ধরিয়ে দিয়েছে। কিছুটা হলেও মুড ভালো হয়। তবে আব্রাহাম সামনে ড্রাইভ করছে আর পেছনের সীটে আইরাত বসে বসে খাচ্ছে। সামনে লুকিং গ্লাসে মাঝে মাঝে আব্রাহাম তাকেই দেখে যাচ্ছে।
আইরাত;; আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আব্রাহাম;; আমার দাদির কাছে।
আইরাত খাওয়া রেখে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; কেনো? মানে সেখানে কেনো?
আব্রাহাম;; মন চাইলো তাই।

আইরাত আর কিছু বলে না। পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে চুপ করে বসে থাকে গাড়ির উইন্ড এর বাইরে চোখ ঠেকিয়ে। কিছুদূর যেতেই আব্রাহামের চোখে পরে দুজন বৃদ্ধা কাপল কে। তারা হাত দিয়ে আব্রাহামের গাড়ি থামায়। আব্রাহামও গাড়ির ব্রেক কষে, গাড়ি থামালে বৃদ্ধা লোকটি আব্রাহামের কাছে আসে।
— আসলে আমাদের কি একটু হেল্প করবে। আমাদের গাড়ি টা রাস্তায় খারাপ হয়ে গিয়েছে। আর আমরা বাসায় যাচ্ছিলাম। তাই কি……..
পুরো কথা শেষ করার আগেই আব্রাহাম বলে ওঠে..
আব্রাহাম;; জ্বি জ্বি অবশ্যই, আপনার ড্রাইভার কে বলুন গাড়ির ডিকি তে আপনাদের সব জিনিসপত্র উঠিয়ে দিতে। আর আপনারা এসে বসুন।

বয়স্ক মহিলাটি এসে পেছনে আইরাতের সাথে বসে। আর লোকটি আব্রাহামের পাশে। গাড়ি চলতে লাগে। তাদের কি কথা। আইরাতের সাথে মহিলাটি বেশ ভালোভাবেই কথা বলছে। বুঝলো উভয়ই খুব মিশুক প্রকৃতির। তবে হুট করে লোকটি আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করে বসে…
— তো বাবা তুমি কি কাজ করো?
তার এহেন কথায় আইরাত পুরাই ভরকে যায়। আর আব্রাহাম কোন রকমে হাসি চাপিয়ে রেখেছে।
আইরাত;; উনি কি বলেন এইসব। আব্রাহাম কে চেনেন না। আব্রাহাম তো মুখে এখন কিছু পরে নি তাও এখন চিনছে না। আচ্ছা যাই হোক না চিনলেই ভালো। (মনে মনে)
— বাবা বললে না তো!

আব্রাহাম;; আব… জ্বি আংকেল আমি আসলে পড়াশোনা করি। আমি বর্তমানে তেমন কিছুই করছি না। স্টাডির পাশাপাশি জাস্ট একটা পার্ট টাইম জব করছি এইতো।
— যাক ভালো। একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম বাবা যদি কিছু মনে না করো!
আব্রাহাম;; না না মনে করার কি আছে, জ্বি বলুন।
— মেয়েটা কে হয়?
— আহা, তুমিও না কি জিজ্ঞেস করছো। মেয়েটা ভারি মিষ্টি গো। (মহিলাটি)
আব্রাহাম;; হুম।
আইরাত শুধু সবার কথা হজম করছে।
— তুমি কি বিবাহিত?
আব্রাহাম;; না আংকেল।
— বাই দি ওয়ে বিয়ে করে ফেলা উচিত তোমার!
আব্রাহাম;; জ্বি আন্টি দ্রুতই করে ফেলবো।

এই কথা বলার সাথে সাথেই আব্রাহাম লুকিং গ্লাসে আইরাত কে দেখে। আর আইরাত মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।
আব্রাহাম;; আংকেল পেছনের ওই মেয়েটা আমার হবু।
— ওহ আচ্ছা আচ্ছা।
আইরাত চোখ রাঙিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। এটা ওটা আরো কতো কথা। এক সময় লোকটি আব্রাহাম কে গাড়ি থামাতে বললে আব্রাহাম গাড়ি থামিয়ে দেয়। তারা দুজন নেমে পরে। তবে বাইরে বের হয়ে বিদায় নেওয়ার সময় লোকটি আব্রাহাম কে বলে….
— আমার কেনো জেনো মনে হচ্ছে যে আমি কোথাও না কোথাও তোমাকে দেখেছি।
আব্রাহাম ম্লান হাসে। তারপর বিদায় নিয়ে এসে পরে৷
আইরাত;; আপনি এমন কেনো?
আব্রাহাম;; কেমন? আর যেমনই আছি সব তো তোমার তাই না!
আইরাত দুই হাত ভাজ করে মুখটা উল্টিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।

তার প্রায় বেশ সময় পর গাড়ি এসে থামে আব্রাহামের মেইন বাড়ির সামনে অর্থাৎ যেখানে তার দাদি রয়েছে। আব্রাহাম কে আসতে দেখে গার্ড রা দ্রুত গেইট খুলে দেয়। তারপর আবার গাড়ি বাড়ির একদম ভেতরে চলে যায়। ইলা বেগম ওপরে নিজের রুমের সামনে থাকা করিডরে ছিলো। সেখান থেকে নিচে সবকিছুই দেখা যায়। আব্রাহামের গাড়ি আসতে দেখে ইলা খুশিমনে দ্রুত নিচে নেমে যায়। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে আইরাতের পাশে গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়। নিজের হাতটা আইরাতের সামনে মেলে দেয়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল এসো।

আইরাত আব্রাহামের হাতে নিজের হাত রেখে দেয়। আস্তে করে গাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। চোখ উঠিয়ে দেখে আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম তার হাতটা আইরাতের গলার উপরিভাগে বুলিয়ে দিতে দিতে বলে…
আব্রাহাম;; আমরা এখন ভতরে যাবো ওকে। তবে তুমি ভূল করেও মুখ দিয়ে উলটা পালটা কিছু বের করবে না। আর যদি কোন চালাকি করার চেষ্টা করেছো তাহলে তোমার হাল আমি বেশি একটা ভালো রাখবো না বুঝলে।
আব্রাহাম যেনো খুব শান্ত স্বরে তাকে এক প্রকার থ্রেইট-ই দিলো। আইরাতের হাত ধরে ভেতরে চলে যায়। হলরুমে যেতেই ইলা আসে। ইলা দেখে আব্রাহাম একা না তার সাথে আইরাতও রয়েছে। আব্রাহাম এবার আইরাতের হাত ছেড়ে দেয়।

আব্রাহাম;; দাদি!
ইলা;; হুম এতোদিন পর আসার সময় হলো তোর?
আব্রাহাম;; আরে এতোদিন কোথায়। মোটমাট সব মিলিয়ে একদিন হবে।
ইলা;; তবুও, আর আইরাত কেমন আছো?
আইরাত;; জ জ্বি ভালো আছি। আপনি?
ইলা;; হ্যাঁ হ্যাঁ ভালো। আব্রাহাম তুই আইরাত কে নিয়ে আসছিস আমকে আগে কেনো বলিস নি৷ তাহলেই তো আমি কিছু না কিছু একটা করে রাখতাম।
আব্রাহাম;; আসলে আমারও কোন প্ল্যান ছিলো না হুট করেই এসে পরেছি। আর কি করবে তুমি, কিচ্ছুই করতে হবে না তোমার।

ইলা;; আইরাত তুমি এদিকে এসো।
ইলা আইরাত কে নিয়ে সোফার ওপরে বসিয়ে দেয়। তখনই আব্রাহামের একটা কল আসে আর সে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে যায়। এদিকে ইলা যেনো আইরাতের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আইরাতও ইলার সাথে হেসে এসেই কথা বলছে। মনটা একটু হলেও ভালো হয়েছে। আব্রাহাম ঠিকই বলেছিলো যে তাকে যেখানে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে গেলে সত্যি ভালো লাগবে। সার্ভেন্ট রা এসে হাজারো পদের খাবার আইরাতের সামনে রেখে দিয়ে গেছে। তবে খাওয়ার মন নেই, সে ইলার কথাগুলোই শুনে যাচ্ছে। হঠাৎ ইলার কথা বলার মাঝেই আইরাত বলে ওঠে…

আইরাত;; আচ্ছা দাদু!
ইলা;; হুমমমমম
আইরাত;; আব্রাহাম আপনারই নাতি তো!
ইলা;; ওমা একি কথা (হেসে দিয়ে)। হ্যাঁ রে আমারই নাতি। কেনো কিছু কি করেছে?
আইরাত;; কিছু না অনেক বেশি কিছুই করেছে (ফিসফিস করে)
ইলা;; হ্যাঁ!
আইরাত;; না না মানে আপনি এতো ভালো এতো সুন্দর করে কথা বলেন আর আব্রাহাম সে তো আস্তো জল্লাদ। এত্তো রাগি, কথা বলার আগেও হিসেব করে বলতে হয়।

ইলা;; ও এমনই। ছোট থেকেই বাবা-মায়ের আদর পায় নি তো। আমার এক হাতে বড়ো করা ওকে। ছোট থেকেই ওর জেদ টা অনেক বেশি। আর যখন বুঝার মতো যথেষ্ট বয়স হলো তখন থেকেই রাগ বাড়তে লাগলো। স্কুল থেকে না জানি প্রিনসিপাল কত শত বার কমপ্লেইন জানিয়েছে। ও যেখানেই গিয়েছে সেখানেই সবাই ওকে দেখে কেমন ভয় ভয় পেতো। তবে আব্রাহাম যেমন রাগি তেমনই চঞ্চল। আব্রাহামের এই চঞ্চলতা একমাত্র তার কাছের মানুষগুলোই দেখেছে। বাকি সবার মতো থাকলেও আস্তে আস্তে কখন যে এইসব মাফিয়া-টাফিয়া বা রিস্ক নেওয়া শুরু করলো সেই জানে। আমি কখনোই ভাবি নি আব্রাহাম এতোটা সাকসেসফুল হবে।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনাকে অনেক ভালোবাসে তাই না!
ইলা এই কথা শুনে আইরাতের দিকে তাকায়।
ইলা;; একটা জিনিস দেখবে!
আইরাত;; কি?
ইলা;; এসো আমার সাথে।
ইলা আইরাতের হাত ধরে ওপরে আব্রাহামের রুমে নিয়ে যায়।
আইরাত;; দাদু এখানে কেনো?
ইলা;; এটা আব্রাহামের রুম, দাড়াও।

ইলা দরজা খুলে আইরাত কে ভেতরে নিয়ে যায়। আর রুমের ভেতরে যেতেই আইরাত জাস্ট ভাষা হারিয়ে ফেলে। রুমের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় আইরাতের ছবি। ইলা এবার গিয়ে রুমে থাকা একটা বেশ বড়োসড়ো পর্দা সরিয়ে দেয়। আইরাত অবাকের চরম পর্যায়। জলরঙ দিয়ে একটা সাদা ধবধবে মোটা কাগজে পেইন্টিং আঁকা। হরেক রকমের রঙ দিয়ে আঁকা হয়েছে। যাতে আইরাতের হাসি মিশ্রিত মুখটা এত্তো সুন্দর করে ফুটে ওঠেছে। আইরাত কখনো ভাবেও নি যে তার ছবি কেউ এভাবে আঁকবে। একরাশ মুগ্ধতা ফুটে ওঠেছে প্রতিচ্ছবি তে।

রঙতুলির মাধ্যমে এত্তো সুন্দর করে সবকিছু ফুটিয়ে তুলেছে যে চোখ ফেরানো দায়। আইরাতের নিজেরই মন চাইছে না ছবিটা থেকে চোখ সরাতে। পুরো ঘরের শোভা যেনো আরো কয়েক হাজার গুণ বাড়িয়ে তুলেছে আব্রাহামের আঁকা আইরাতের এই ছবি। আইরাত এক নয়নে তার ছবির দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায়। হাতটা যেনো আপনা আপনিই ছবির ওপরে চলে যায়। ইলা আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে।
ইলা;; এবার বলো যে আব্রাহাম কাকে বেশি ভালোবাসে আমায় না তোমায়?
ইলার কথায় আইরাত তার দিকে তাকায়। হেসে দিয়ে বলে…

আইরাত;; উনি হয়তো দুজন কেই ভালোবাসে। আপনার জন্য ভালোবাসা টা আলাদা আর আমার জন্য। এ দুটোকে একত্রে মিশাতে গেলে হয়তো সবই গুলিয়ে যাবে।
ইলা;; হ্যাঁ তা তো একদম ঠিক তবে আমি এটুকুই বলতে চাই যে আমার আব্রাহাম তোমাকে অন্নেক ভালোবাসে।
আব্রাহাম;; আইরাত.. আইরাত!

ইলা;; ওইতো এসে গেছে। না পেয়ে নিচে ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে। জলদি চলো যদি দেখে যে আমরা দুজন ওর রুমে তাহলে এসেই এত্তোগুলো প্রশ্ন করা শুরু করবে। চলো চলো।
ইলা আইরাত কে নিয়ে নিচে নেমে পরে। হলরুমেই এসে দেখে আব্রাহাম সোফাতে বসে ফোন ঘাটছে। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে ইলা আর আইরাত ওপর থেকে নিচে নামছে।
আব্রাহাম;; তোমরা ওপরে কোথায় গিয়েছিলে?
ইলা;; সব তোকে বলতে হবে কেনো? নিজের চরকায় তেল দে।

আব্রাহাম;; আমার চরকা তো তুমি নিয়ে গেছো।
ইলা;; হয়েছে। এবার বল তোদের সামনে প্ল্যান কি!
আইরাত;; প্ল প্ল্যান মানে ক ক কিসের প্ল্যান?
ইলা;; আরে আর কতো প্রেম করবে এবার প্রেমের আগে সামনে তো কদম বাড়াও।
আইরাত;; প্রেম কবে ক….
আব্রাহাম;; খুব দ্রুতই করবো।
ইলা;; হ্যাঁ আমারও না বাড়িতে মন টেকে না। তাই তুই জলদি আইরাত কে বউ বানিয়ে ঘরে তোল।
আইরাত এই দুই নাতী-দাদির মাঝে বসে বসে শুধু কথা গিলছে। একবার ইলার দিকে তো আরেকবার আব্রাহামের দিকে তাকাচ্ছে। সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ জানে এরপরে কি হবে।

আব্রাহাম;; দাদি, ক্ষুদা লেগেছে।
ইলা;; হ্যাঁ কি খাবি শুধু একবার বল না। দাড়া তোর তো বিরিয়ানি পছন্দ বানিয়ে দিবো!
আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল!
আইরাত;; জ্বি।
আব্রাহাম;; যাও, পায়েস বানাও।
আইরাত;; পায়েস!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
ইলা;; আব্রাহাম কি বলছিস এইসব। মেয়েটা এসেছে আর তুই ওকে দিয়ে রান্না করাবি।
আব্রাহাম;; দাদি ইন ফিউচার ওকেই মাঝেমাঝে টুকটাক রান্না করতে হবে তাই এখনই একটু করুক।
আইরাত;; নিকুচি করেছে রান্নার, হারামি (মনে মনে)
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল…

আইরাত;; না মানে আম আমি পারি না বানাতে। মিষ্টি জিনিস পছন্দ করি না তো বানাতেও পারি না।
ইলা;; কোন সমস্যা নেই আমি আছি তো। চল আমি হেল্প করবো। আমি না হয় সব দেখিয়ে বলে বলে দিলাম আর তুই রান্না করবি। আর হ্যাঁ আমাকে আপনি বলে ডাকার দরকার নেই আব্রাহামের মতো তুমি বলেই ডাকতে পারিস আর আমিও তুমি তুমি বলতে পারবো না বলে দিলাম।
আইরাত;; চলবে। (হেসে)
ইলা আর আইরাত রান্নাঘরে চলে গেলো। ইলা সব এক এক করে আইরাতকে দেখিয়ে দেখিয়ে দেয় আর সে তেমনই করে। তবে এক সময় ইলাকে আব্রাহাম রান্নাঘর থেকে নিয়ে চলে যায়। চল্লিশ মিনিট পর রেডিও হয়ে যায় পায়েস।
ইলা;; হয়ে গেছে?

আইরাত;; আমি জানি না কেমন হয়েছে। যদি বকা দেয়?
ইলা;; আব্রাহাম আর যাই করুক রেসিপি খারাপ হওয়ার জন্য বকা তাও তোকে তো জীবনেও দিবে না।
আইরাত;; হুমমম।
আইরাত ট্রে তে করে ছোট ছোট কিছু বাটিতে পায়েস নিয়ে এসে আব্রাহামের সামনে রেখে দেয়। আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাত তার মুখটা কেমন ফুলিয়ে রেখে দিয়েছে।
আব্রাহাম;; এভাবে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেনো?
আইরাত;; না মানে এমনি।

আব্রাহাম এবার কোন কথা না বলেই সোজা পায়েস হাতে তুলে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। আব্রাহাম খাচ্ছে তো খাচ্ছেই। আর আইরাত তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। পায়েস কেমন হয়েছে! ভালো নাকি মন্দ কিছুই বলছে না আব্রাহাম। শুধু একের পর এক খেয়েই যাচ্ছে। আইরাত কপাল কুচকে তাকায়। আইরাত ভাবে সেও খেয়ে দেখবে কেমন হয়েছে। জীবনে এই প্রথম পায়েস বানিয়েছে আর খেয়ে দেখবে না কেমন হয়েছে। কারণ আব্রাহাম তো কিছু না বলে লাগাতার খেয়েই যাচ্ছে। আইরাত যেই না পায়েস বাটি হাতে নিতে যাবে তখনই আব্রাহাম দ্রুত বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; What r you doing?
আইরাত;; i”m just checking..
আব্রাহাম;; No need..
আইরাত;; আরে আমি বানিয়েছি আর আমি খেয়ে দেখবো না।
আব্রাহাম;; না।
আইরাত;; আমি তো খাবো।

এই বলেই আইরাত একটা পায়েসের বাটি তুলে স্পুন দিয়ে খানিক পায়েস নিয়ে মুখে পুড়ে নেয়। আর আব্রাহাম তার হাতের বাটি টা রেখে মুখের একপাশে হাত রেখে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ আইরাত তো সামান্য খেয়েই চোখ বড় বড় করে তাকায়। যেনো আর গলা দিয়ে নামছে না। আইরাত মুখে পায়েস পুড়েই আব্রাহামের দিকে তাকালে আব্রাহাম তার উদ্দেশ্যে নিজের ভ্রুজোড়া খানিক নাচায়। আর আইরাত এভাবে থাকতে না পেরে ছুটে কিচেনের বেসিং এ চলে যায়। মুখের সব পায়েস টুকু ফেলে দেয়। সে কি কাশি। আব্রাহামও দ্রুত আইরাতের পেছনে যায়। আস্তে আস্তে আইরাতের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।

আব্রাহাম;; আগেই বলেছিলাম যে খেতে হবে না কিন্তু না কে শুনে কার কথা? আর ইউ ওকে?
আইরাত সোজা হয়ে ওঠে পরে আব্রাহাম নিজের হাত দিয়েই আইরাতের মুখের সাইড টুকু মুছে দেয়। আর আইরাত একমনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক যত্নের সাথেই আব্রাহাম আইরাতের ঠোঁট গুলো মুছে দিয়ে বলে…
আব্রাহাম;; মানা করেছিলাম না খেতে?
আইরাত;; আপনি কি হ্যাঁ? এটা খাচ্ছেন কীভাবে। এত্তো লবণ। পায়েসে আমি হয়তো ভূলে চিনির জায়গায় ভরপুর লবণ দিয়ে দিয়েছি। আপনি কীভাবে পুরো এক বাটি খেয়ে নিলেন। এত্তো লবণ। জঘন্য খেতে এক কথায় কুখাদ্য।

আব্রাহাম;; এইইইইইইইই। হাউ ডেয়ার ইউ!
আইরাত;; হা?
আব্রাহাম;; তোমার সাহস হয় কি করে খারাপ বলার।
আইরাত;; আরে আমারই তো রেস….
আব্রাহাম;; তোমার বলেই। খবরদার না করলাম তোমার কোন জিনিস কে খারাপ বলবে না। আমার কাছে তুমি বেস্ট, তোমার সবকিছুই বেস্ট। লবণ কেনো তুমি যদি বিষও দিয়ে দাও আমাকে তাহলে আমি হাসিমুখে খেয়ে নিবো।
আইরাত;; আচ্ছা দাদি কোথায়?

আব্রাহাম আইরাতের কথায় নিজের চারিপাশে দেখতে লাগে। খেয়াল করে দেখে ইলা হাতে একটা মোটা কলম নিয়ে কিচেনের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ইলা আসলে তার হাতে লবণের বক্স নিয়ে তাতে ‘লবণ’ আর চিনির বক্স নিয়ে তাতে ‘চিনি’ লিখে দিচ্ছে। যেনো পরেরবার এমন ওলট-পালট না হয়। আইরাত ইলা কে দেখে হাসবে না কানবে বুঝে না।
আব্রাহাম;; এইসব রান্নাবান্না তোমার কর্ম নয়। চলো।
আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে বাইরে চলে আসে। তবে আইরাতের মুখটা মলিন। ইলা এসে আব্রাহামের পাশে বসে।
ইলা;; কিরে মুখটা এমন শুকনো কেনো রে?
আইরাত;; না কিছু না।

ইলা;; হুম বুঝেছি। আরে হয় হয় মাঝে মাঝে এমন মিস্টেক হয়। লবণ আর চিনি তো প্রায় একই দেখতে। শুধু লবণের দানা গুলো একটু বেশিই চিকন। আর চিনির দানা গুলো একটু মোটা এই আর কি। এতো খেয়াল করে কে দেখে। আমারও মাঝে মাঝে ভূল হয় যাক ওসব বাদ দে।
তিনজন বসে হলরুমে আড্ডা দিচ্ছিলো। আইরাত মাঝেমধ্যে টুকটাক কথা বলছে। তার মাঝেই একজন গার্ড এসে আব্রাহাম কে কি যেনো একটা বলে যায় তারপর আব্রাহাম বাইরে চলে যায়।
ইলা;; আইরাত জানিস, আব্রাহামের ছোট বেলার এত্তো এত্তো গুলো ছবি আছে। সব এলবামে রেখে দিয়েছি। তুই দেখবি?
আইরাত;; হুম

ইলা গিয়ে এলবাম টা নিয়ে আসে। এসেই আইরাতের সামনে মেলে ধরে।
ইলা;; এই দেখ।
আইরাত এলবাম টা কোলে নিয়ে বসে আছে আর ইলা এক এক করে দেখাচ্ছে। কেনো যেনো আইরাতের বেশ মজাই লাগছে।
ইলা;; দেখ এইযে এই ছবিটা, এটা আব্রাহাম যখন দেড় বছরের ছিলো তখনকার।
আইরাত;; কি এটা, এটা আব্রাহাম?
ইলা;; হ্যাঁ

আইরাত;; উনি ছোট বেলা এতো মোটু ছিলেন।
ইলা;; আল্লাহ আর বলিস না, আব্রাহাম এত্তো গোলুমোলু ছিলো যা বলার বাইরে। মোটার জন্য ওকে তো কেউ কোলেও নিতে পারতো না।
আইরাত ফিক করে হেসে দেয়।
ইলা;; এটা দেখ।
আইরাত এবার খিলখিল করে হেসেই দেয়। কেননা আব্রাহামের একদম ছোট বেলার ছবি বের করা হয়েছে। এতে সে ডায়পার পরে হাতে মুখে সব জায়গায় চকোলেট দিয়ে ডুবিয়ে রেখেছে। তারপর আরো একটা ছবি বের করে এতে আব্রাহাম রাগে দাঁত বের করে ইইইইইইই করে আছে।
আইরাত;; এতো রাগি কেনো?

ইলা;; মায়ের পেট থেকে রাগ নাকের ডগায় নিয়েই হয়েছে।
এলবামের পরের পাতা উল্টাতেই আব্রাহামের আরো একটা ছবি আসে। তাতে সে হাত-পা সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়ে কান্না করছে। পাশেই একটা ভূতের মাস্ক পরে আছে।
ইলা;; এই দেখ আব্রাহাম আগে ভূত দেখে কতোটা ভয় পেতো। মানে ভূতের নাম শুনলেই যেনো আব্রাহাম অজ্ঞান এমন ছিলো। এই ছবিটা আব্রাহামের ২ বছরের বার্থডে-এর সময়ে তোলা। ভেবেছিলাম আব্রাহাম কে চমকে দিবো। কিন্তু না তা আর হলো কই। উল্টো হয়েছে। ভূতের মাস্ক পরে থাকার কারণে আব্রাহামের কি ভয়। ভেঁ ভেঁ করে কেঁদে দিয়েছিলো। বলতে গেলে ছোট বেলা সে প্রচন্ড ভূতের ভয় পেতো।

আব্রাহাম;; আর এখন বাকি সবাইকে নিজের ভয়ের ওপরে রাখে।
ইলা;; এটা একদম ঠিক বলেছিস। এটা দেখ, ও ঘুমাচ্ছিলো তখন আমি ই তুলেছিলাম।
আইরাত;; কি কিউট লাগছে। উনি ছোট বেলায়-ই ভালো ছিলেন। এখন তো যম।
তারপরেই আব্রাহাম ফোনে কথা বলতে বলতে আসে। এদে দেখে আইরাত হাসছে। আব্রাহাম শান্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। পরক্ষণেই তার নজর যায় ইলার হাতের দিকে।

আব্রাহাম;; কি করছো তোমরা?
ইলা;; আইরাত কে তোর ছোট বেলার ছবি দেখাচ্ছি।
আব্রাহাম;; হুয়াট না না, ইজ্জতের ফালুদা।
আব্রাহাম এলবাম টা নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে দেয়।
ইলা;; যা দেখানোর তা দেখিয়ে ফেলেছি আইরাত কে এখন লুকিয়ে লাভ নেই।

এভাবেই খুনশুটির মাঝে বেলা পেরিয়ে যায়। আব্রাহাম ইলাকে বলেছে যে আইরাত কে সে তার বাসা থেকে এনেছে এখন আবার সেখানেই নিয়ে যেতে হবে। আর আব্রাহাম আজও রাতে তার বাড়ি আসবে না। বাইরে কিছু কাজ আছে তাই একদম আগামীকাল থেকে এখানেই এসে পরবে। ইলাও তাই ভেবে নেয়। অনেক সময় একসাথে আড্ডা দিয়ে এবার আসে বিদায়ের পালা। আইরাত ইলার কাছ থেকে এসে পরে। ইলা তো আইরাতকে ছাড়তেই চাইছিলো না কিন্তু উপায় নেই তাই এসে পরে। রাত হয়ে গিয়েছে। আব্রাহাম এখন ড্রাইভ করছে আর তার পাশেই আইরাত বসে আছে। নীরবতা ভেঙে আব্রাহামই বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; মুড ঠিক হয়েছে?
আইরাত;; আপনার দাদি অনেক নরম মনের একজন মানুষ।
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; এখন আমি আমার নিজের বাসায় কবে যাবো?
আব্রাহাম;; সেটা আমার ইচ্ছে তোমার না। এই ব্যাপারে এতো মাথা না ঘামিয়ে চুপ করে বসে থাকো।
আইরাত;; আবার এর হিটলার গিরি শুরু।
আব্রাহাম;; কিছু বললে?
আইরাত;; না।

আব্রাহাম আবার আইরাত কে নিয়ে নিজের গেস্ট হাউজে এসে পৌঁছায়। এসেই দেখে বাইরে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে সাথে আইরাতও।
আব্রাহাম;; কিরে তুই এখানে?
অয়ন;; আপনার পারমিশন ছাড়া আপনার গার্ড রা আমাকে ভেতরে যেতেই দিচ্ছে না।
আব্রাহাম ঘুড়ে গার্ডের দিকে তাকায় দুহাত সামান্য প্রসারিত করে বলে…
আব্রাহাম;; কি ইয়ার! ওকে তো ভেতরে যেতে দিতে৷
গার্ড আর কিছু বলে না তারপর তারা ভেতরে চলে যায়।
অয়ন;; আমার আসলে তোর সাথে কিছু কথা আছে।
আব্রাহাম;; হুম, বেবিগার্ল তুমি তোমার রুমে যাও।

আইয়াত সেখান থেকে চলে আসে। আর তারা দুজন কথা বলতে লাগে। আইরাত সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় এক নজর পেছনের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম বেশ রেগেরেগেই অয়নের সাথে কথা বলছে আর অয়ন যেনো কোন রকমে সামাল দিচ্ছে। আইরাত নিজের রুমে এসে বেডে বসে পরে। মুখটা বাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। পরপক্ষণেই নিচে ঠাস করে কিছু একটা ভাঙার আওয়াজ পায়। আইরাত দ্রুত দরজা খুলে বাইরে দেখে। কিন্তু কিছুই হয় নি শুধু একটা স্টাফের হাত থেকে কিছু গ্লাস পরে গেছে। আর আব্রাহাম-অয়ন নিজেদের মতো বসে বসে কথাই বলছে। আইরাত রুমে এসে পরে…

আইরাত;; আব্রাহাম ভূতে ভয় পেতো!
আইরাত ফ্রেশ হয়ে এসে চেঞ্জ করে নেয়। রুমে এসে দেখে গরম ধোঁয়া ওঠানো কফি রাখা আর তার পাশে একটা ছোট চিরকুট।
”তুমি তো হয় চকোলেট কফি পছন্দ করো তাই খেয়ে নিও, আমি বাইরে যাচ্ছি। হয়তো আসতে একটু দেরি হবে৷ রুমে ভালো না লাগলে ছাদে বা বাগানে গিয়ে ঘুড়ো। পালাবে? যদি ইচ্ছে হয় ট্রাই করে দেখতে পারো তবে বাড়ির মেইন গেটে ইলেকট্রিক শকের ব্যাবস্থা করা আছে। এটুকুই বললাম বেবিগার্ল বাকিটুকু বুঝে নিও। লাভ ইউ”

আইরাত চিঠি টা রেখে দেয়। কি আর করার আইরাত বসে বসে কফি টা খেতে লাগে। ফোনও দেয় নি। কবে থেকে নিজের ফেইসবুক আইডি তে ঢোকা হয় না। কেমন যে আছে। ফোন ছাড়া থাকা যায় নাকি। এগুলোই ভাবছে আর কফিতে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। আইরাতের আগে থেকেই বই পড়ার শখ, সামনে তাকিয়ে দেখে কিছু উপন্যাস রাখা আর ম্যাগাজিন। তবে সেগুলো সবই ইংলিশ। তাতে কিছু কিছু ম্যাগাজিন আব্রাহাম কে নিয়েই লিখা। বুঝলো এগুলো আব্রাহামই বসে বসে পরে। তখনই একজন স্টাফ আসে।

আইরাত;; ভেতরে এসো।
স্টাফ;; ম্যাম আপনার কি কিছু লাগবে?
আইরাত;; না।
স্টাফ;; জ্বি আচ্ছা।
স্টাফ চলে যেতে ধরলে আইরাত আবার ডাক দেয়।
আইরাত;; এই শুনো শুনো।
স্টাফ;; জ্বি।
আইরাত;; তোমার নাম কি?
স্টাফ;; রিতা।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা রিতা আব্রাহাম কোথায় গিয়েছে?
স্টাফ;; ম্যাম স্যার বাইরে গিয়েছে তা জানি। কিন্তু কোথায় গিয়েছে তা তো আমরা জানি না।
আইরাত;; কখন ফিরবে?

স্টাফ;; স্যার বলে গিয়েছে ১১ থেকে ১২ টার মাঝে ফিরে আসবে।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা, আর এখন বাজছে ৯ টা। হুমমমম, আচ্ছা আমাকে কিছু জিনিস এনে দিতে পারবে তুমি?
স্টাফ;; জ্বি ম্যাম বলুন না।
আইরাত;; এনে কিন্তু দিতেই হবে। শুনো একটা বড়ো সাদা কাপড় আনবে, বেশ বড়ো সাথে কিছু কালি আনবে কলমের কালি হলেও চলবে আর সাথে একটা বড়ো মোমবাতি।
স্টাফ;; এ্যাহ?
আইরাত;; হ্যাঁ। এখন যাও দ্রুত এনে দাও প্লিজ।
স্টাফ;; জ জ্বি আ আচ্ছা।

স্টাফ টার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে খুব কনফিউশনে পরে গেছে। আর তার এমন চেহারা দেখে আইরাতের বেশ হাসি পাচ্ছে। স্টাফ চলে গেলে আইরাত আবার বসে বসে পা দুলিয়ে কফি খাওয়া শুরু করে দেয়।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ওই রিতা নামে স্টাফটা আইরাতের বলা সব জিনিস নিয়ে আসে।
স্টাফ;; ম্যাম এই যে বড়ো সাদা কাপড়, কালি আর মোম।
আইরাত;; থাংকু থাংকু।
স্টাফ টা আইরাতের বলার ধরণ দেখে খানিক হেসে রুম থেকে চলে যায়। আর আইরাত বত্রিশ টা দাঁত বের করে দিয়ে দেয় এক ভেটকি।
অন্যদিকে আব্রাহামের কিছু ঝামেলা হয়েছে সে সেগুলোই সামলাতে ব্যাস্ত। আর এছাড়াও গতকাল রাশেদ কে কিছু পেপার”স ঠিকঠাক ভাবে আনতে বলেছিলো সেগুলোও নিয়ে নেয়। সব মিটমাট করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে এগারোটার ওপরেই বেজে যায়।

আইরাত;; আমাকে আটকিয়ে রাখা তাই না। ব্যাটা তুই বাড়ি আয় দেখ কি করি।
বর্তমানে ছাদের ওপরে একটা সাদা কাপড় শুরু ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। সাদা কাপড়ে রয়েছে আইরাত। মূলত পায়চারি, একবার এদিক থেকে ওদিক তো আরেকবার ওদিক থেকে এদিক। হাত দুটো মুঠিবদ্ধ করে রেখেছে পেছনে। একহাতে বড়ো একটা মোম। তাতে ছোট্ট করে আগুনের ফুল্কি জ্বলছে। হাওয়া এসে তা নিভিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও আইরাত আগলে নেয় বারবার। সাদা কাপড়ে কালি দিয়ে ডিমের মতো দুটো গোল গোল চোখ আঁকানো হয়েছে। নাকের জায়গায় শুরু একটা সোজা দাগ বসানো। ঠোঁট গুলো আঁকাবাকা আঁকিয়ে তাতে দাঁত এঁকে দিয়েছে।

দেখে মনে হচ্ছে সেও আইরাতের মতোই দাঁত গুলো বের করে রেখেছে। রুমে বসে বসে এগুলো করেছে সে। সেই সাদা কাপড়ই নিজের ওপর দিয়ে রেখেছে। কাপড় টা এতোই বড় যে আইরাত সম্পূর্ণ মাথা থেকে পা অব্দি ঢেকে গিয়েছে। আর সাদা কাপড়ে তার হাতে আঁকা মহান কারুকাজ করা মুখমণ্ডল খানা তার মুখের ওপরেই। ছাদে ঘুড়ছে। আব্রাহাম তো বলেছেই তাকে যে রুমে ভালো না লাগলে ছাদে বা বাগানে আসতে, তাই সে ছাদে এসে পরেছে। ঘুড়তে ঘুড়তে নিজের কাপড়ে নিজেই কত শত বার যে বেধে পরছে সে। তাও সামলিয়ে নিচ্ছে। মোট কথা আইরাত আব্রাহাম কে ভয় দেখাবে ?‍♀️। ঘড়ির কাটা যখন পনে বারো টায় তখন বাইরে আব্রাহামের গাড়ি আসার আওয়াজ পাওয়া যায়। হর্নের শব্দ। আইরাত ছাদের রেলিং ধরেই নিচে কিছুটা উঁকিঝুকি মারে। দেখে সত্যিই আব্রাহাম এসেছে।

আইরাত;; এসে গেছেএএএএএএ। আইরাত বি রেডি। ভয় দেখাতে হবে। তবে ছাদ টা বেশ নিরব। এতো নিরব ক্যা রে ভাই! এখন তো আমারই ভয় লাগতাছে। আচ্ছা যাজ্ঞে এমন করলে হবে না। আব্রাহাম কে ভয় দেখিয়ে যদি পালাতে পারি, আইডিয়া মন্দ না।
আব্রাহাম এসে গার্ড কে গাড়ি পার্ক করে দিতে বলে। হলরুম পেরিয়ে এসে আইরাতের রুমে চলে যায়। তবে আইরাত নেই। রুমের সবদিকেই খোঁজে কিন্তু আইরাত নেই। আব্রাহাম ভাবে হয়তো বাগানে, সেখানে যায় তবুও নেই। তখন একজন স্টাফ এসে বলে যে আইরাত ছাদের ওপরে গিয়েছে। আব্রাহাম দ্রুত সিড়ি বেয়ে ওঠে ছাদে যায়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল ঘুড়াঘুড়ি শেষ হলো তোমার এবার চলো রুমে। খাবে তারপর কাজ আছে চলো।
কোন শব্দ নেই।

আব্রাহাম;; আইরাত আমি জানি তুমি এখানেই কোথাও আছো তো এইসব লুকোচুরি বাদ দিয়ে জলদি সামনে এসো।
তবুও সাড়াশব্দ নেই।
আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল তুমি কি নিজে থেকে বের হয়ে আসবে নাকি আমি বের করবো। আমি বের করলে কিন্তু ব্যাপার টা বেশি একটা ভালো হবে না। সো কাম আউট।
এবার আব্রাহামের পেছন থেকে ধুপ করে শব্দ আসে। আব্রাহাম পেছন ঘুড়ে তাকায়। দেখে তার সামনে শুধু একটা সাদা কাপড়ে মুড়ানো মূর্তির মতো কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে। মুখের জায়গায় কি কালো কালি দিয়ে উল্টাপাল্টা এঁকে রেখে দিয়েছে। আর সাদা কাপড়ের ভেতরে একটা মোমবাতি জ্বলছে তা থেকেই আলো ছড়াচ্ছে।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ১১+১২+১৩

আইরাত;; হায়ায়ায়ায়ায়ায়াওওওওওও আমি ভূত। আওওওওওওওওওওওওওওও, ঘাড় মটকে তালগাছে উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে দিবো। তারপর তোকে শেওড়াপাড়ায় শেওড়াগাছের পেত্নীর জামাই বানিয়ে রাখবো। হাওওওওওওওওওওওওও আমি ভূত ?‍♀️।
আব্রাহাম নিজের দুহাত ভাজ করে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর আইরাত কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে আবার বলে ওঠে….
আইরাত;; এই আমি ভূত, ভয় পাস না কেনো। হায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া। উলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলুলু (হাত ওপরে তুলে দুলিয়ে দুলিয়ে)

আব্রাহাম এবারও চোখ গুলো সরু রেখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চারিপাশে ঝিঝি পোকার ডাক যেনো স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। আইরাত কোন হাবভাব বুঝতে না পেরে এবার আর থাকতে পারে না। ফু দিয়ে মোমবাতি টা নিভিয়ে এক টানে মাথার ওপর থেকে কাপড় টা নামিয়ে ফেলে। কপাল কুচকে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; আপনি না ভূত দেখে ভয় পান?
আব্রাহাম;; দোয়া করি এমন চুনোপুঁটি একটা ভূত আজীবন আমারই থাক।
আইরাত;; ভয় পান না কেনো আপনি?
আব্রাহাম;; পাগল। চলো
আইরাত;; আরে, আরেএএএএএএ

এই বলেই আব্রাহাম এক টানে আইরাত কে নিজের কাধে তুলে নেয়। তারপর সিড়ি বেয়ে নিচে হাঁটা দেয়। আইরাত এইযে চিল্লাচ্ছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা, আব্রাহাম তা এক কান দিয়ে ঢোকাচ্ছে আরেক কান দিয়ে বের করছে। আইরাত কে তুলে নিয়ে সোজা রুমে গিয়ে বিছানার ওপর ছেড়ে দেয়। আইরাত বিছানার ওপর দাঁড়িয়ে মুখ উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আর আব্রাহাম যেনো থাকতে পারছে না। হাসতে হাসতে সোফাতে গিয়ে বসে পরে। আব্রাহাম কে এভবে হাসতে কি যে সুন্দর লাগছে তবে আইরাত তো হাবলাকান্তের মতো বিছানাতে নিজের কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি ভাবলো আর কি হলো, একেবারে পুরোটাই ঘেটে ঘ।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮+১৯+২০