নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ২১+২২+২৩

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ২১+২২+২৩
লেখিকাঃ Tamanna Islam

একহাতে ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বাড়ির মেইন গেইট ঠেলে ভেতরে চলে যায়। কলিং বেলে একনাগারে বেশ কয়েকবার চাপ দেয়। ভেতর থেকে চুল বাঁধতে বাঁধতে দ্রুত পা চালিয়ে অনামিকা আসে। এসে দরজা খুলে দেখে আইরাত দাঁড়িয়ে আছে। অনামিকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দুপুর একটার ওপরে বেজে গেছে। এখন তো আইরাতকে ফ্লাইটে থাকার কথা সে এখানে কি করে!

অনামিকা;; কিরে তুই এখানে কি করিস?
আইরাত কোন কথা না বলেই অনামিকার হাত সরিয়ে দিয়ে ঘরের ভেতরে চলে যায়। অনামিকা দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে এসে পরে।
অনামিকা;; কিরে কিছু বলিস না কেনো? ফ্লাইটে না থেকে বাসায় কি করিস?
আইরাত সোফাতে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে।
আইরাত;; মা একটু ঠান্ডা পানি দাও।
অনামিকা;; দিচ্ছি।
অনামিকা পানির পট এনে আইরাতের হাতে দিয়ে তার পাশে বসে।
অনামিকা;; এবার বল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আইরাত;; ফ্লাইট সেই ১১ টায়-ই চলে গিয়েছে।
অনামিকা;; কি? আমাদের না বললো ১২;৩০!
আইরাত;; ভুল।
অনামিকা;; কিন্তু সাবিলা তো বললো নিলয় চলে গিয়েছে। আমি তো ভেবেছি যে তোরা একই সাথে আছিস।
আইরাত;; নিলয় ভাইয়া চলেই গিয়েছে। আমিই যেতে পারি নি।
অনামিকা;; তাহলে এখন?
আইরাত;; আমি কানাডা যাবো না মা।
অনামিকা;; সিওর?
আইরাত;; হ্যাঁ, ভাবলাম যাবো না আমি।
অনামিকা;; আচ্ছা।

আইরাত নিজের জিনিসপত্র সব নিয়ে রুমে চলে যায়। গিয়ে নিজের জেকেট টা খুলে ফেলে। আব্রাহামের কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কখনো মাত্রাতিরিক্ত ভালো, কখনো তার থেকেও হাজার গুণ বেশি খারাপ আর রাগি, কখনো চাইতল্ডিস, কখনো রোমান্টিক, কখনো এমন ভাব ধরে বাপরে বাপ। তবে যা কিছুই করে সবই আইরাতের জন্য। আইরাতের ভয় একটাই আব্রাহামের তার জন্য এই অতিরিক্ত ভালোবাসা হিতে বিপরীত না হলেই হলো। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে পরে। দেখে অনামিকা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। আইরাত গিয়ে টেবিলে বসে এক হাতে চাকু আরেক হাতে আপেল নিয়ে খেতে লাগে।

অনামিকা;; তোর ফুপি আসছে।
আইরাত;; আসুক।
অনামিকা;; একটু চুপ করে থাকিস।
আইরাত;; কি ঠ্যাকা লাগছে আমার। তোমার ননদ চটাং চটাং কথা বলবে আর আমি চুপ করে থাকবো। কেনো? আসতে দাও কিছু বলবে এই হাতের চাকু দিয়েই ভুড়ি ফুটো করে দিবো।
অনামিকা হেসে দেয়।
অনামিকা;; চুপ করবি।
আইরাত;; আচ্ছা একটা কথা বলো তো!
অনামিকা;; কি?
আইরাত;; তুমি যখন বাবার সাথে বিয়ে করে এসেছিলে তখন ফুপি কুটনামি করে নি?
অনামিকা;; হালকা পাতলা।
আইরাত;; হুমমম।

তার কিছুক্ষণ পরেই সাবিলা আসে। আইরাত খেয়াল করে দেখে সাবিলার মুখটা কেমন শুকনো।
আইরাত;; কিছু কি হয়েছে ফুপি?
সাবিলা;; তুই ফ্লাইটে যাস নি কেনো?
আইরাত;; আমি জনতাম ১২ঃ৩০ এ তবে ফ্লাইট ছিলো ১১ টায়। অনেক দেরি করে ফেলেছিলাম তো তাই।
সাবিলা;; এখন তো নিলয় কানাডা।
আইরাত;; তো?
সাবিলা;; ও হয়তো আগামীকালই এসে পরবে।
আইরাত;; হুমম।
সাবিলা;; ভাবি আমার তোমার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে।
অনামিকা;; হ্যাঁ বলো।
সাবিলা এক নজর আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত ব্যাপার টা বুঝলো তৎক্ষণাৎ উঠে চলে যায়। বড়োদের কথার মাঝে না থাকাটাই শ্রেয়।

সাবিলা-অনামিকা বেশ সময় যাবত কথা বলে আর ওদিকে আইরাত ছাদের ওপরে চলে গিয়েছে। বিকেলের সময় রোদের হালকা আভা এখনো ছাদের প্রত্যেকটা কোণাতে লেগে আছে। ছাদের সবদিকে আলতো পায়ে হাঁটছে। ভাবলো বাসায় বসে থেকে আর কিই বা করবে এর থেকে ভালো বাইরে যাওয়া যাক। আর বাকি সবাই তো ভাবছে যে আইরাত এখন কানাডা। কিন্তু আসলে তো যাওয়া হয়নি। তাই একটা ছোট খাটো সারপ্রাইজ দেওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত ছাদ থেকে নিজের রুমে চলে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দিয়া কে ফোন দেয়। দিয়া তো আইরাতের ফোন পেয়ে লাফিয়ে ওঠে।

দিয়া;; হ্যালো।
আইরাত;; কোথায় তুই?
দিয়া;; বাসায়। তুই কোথায়? ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে?
আইরাত;; বাইরে বের হ তো। অবনি কেও নিয়ে আসিস।
দিয়া;; মানে কি?
আইরাত;; বাইরে কফিশপে আয় দেখা করি।
দিয়া;; তারমানে তুই যাস নি?
আইরাত;; না।
দিয়া;; সত্যি?
আইরাত;; আরে হ বইন।

দিয়া;; দাঁড়া দাঁড়া আগে আমি অবনি কে বলি।
আইরাতের কিছু বলার আগেই দিয়া ফোন কেটে দেয়। দিয়ার অবস্থা দেখে আইরাত হেসে দেয়। আইরাত রেডি হয়ে সোজা নিচে নেমে পরে। নিচে গিয়ে দেখে সাবিলা আর অনামিকা এখনো তাদের আলোচনা করতেই আছে। আইরাত সিড়ি বেয়ে দ্রুত নামতে নামতে বলে…
আইরাত;; তোমরা থাকো গল্প করো। আমি একটু বাইরে থেকে আসছি।
অনামিকা;; আবার কোথায় যাস?
আইরাত;; দিয়া আর অবনির সাথে একটু ঘুরে আসি। বাসায় ভালো লাগছে না।
অনামিকা;; আচ্ছা যা।
সাবিলা;; তাড়াতাড়ি আসিস।
আইরাত;; আচ্ছা।

আইরাত বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। তাদের আড্ডা দেওয়ার একটাই জায়গা কফিশপ। আইরাত এসে দেখে অবনি আর দিয়া বসে আছে। অবনি আইরাত কে দেখে দাঁত গুলো বের করে দেয়।
আইরাত;; হিলুউউউউ।
অবনি;; আমি দোয়া করছিলাম যে তুই যেনো না যেতে পারিস দেখ আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন। ইয়াহুউউউউউ
দিয়া;; এই আমি না আমার স্কুটি এনেছি। চল তিনজন তা দিয়ে ঘুরি।
আইরাত;; আরে এলামই তো মাত্র আগে বোস গল্প সল্প করি তারপর যাওয়া যাবে।
অবনি;; হুমম।
দিয়া;; মানে কি করে হলো এটা। যাওয়া ক্যান্সেল হলো কি করে?
আইরাত;; কি আর বলি আব্রাহামই যেতে দেয় নি।
অবনি;; কি ওখানেও?

আইরাত;; হ্যাঁ। আমি ফ্লাইটে গিয়েছিলাম দেখি পুরা ফাকা। আব্রাহাম আমার সামনেই বসে ছিলো তারপর আর কি ধরে নিয়ে এসে পরেছে।
দিয়া;; আসলে সত্যি বলতে আব্রাহাম স্যার এক দিক দিয়ে ঠিকই করেছেন। একদম উচিত কাজ। তুই যেতে পারিস নি। আহহ মজা।
আইরাত;; আমার একটা জিনিস ভেবেই হাসি আসছে নিলয় ভাইয়া আমাকে ছাড়া এখন কানাডা গিয়ে বসে আছে।
অবনি;; কবে আসবে?
আইরাত;; ফুপি বললো আগামীকালই নাকি এসে পরবে।
দিয়া;; ওহ আচ্ছা।
তিনজন মিলে কথা বলছিলো। আসলে কথা কম হাসছিলো বেশি। এক একটার কি হাসি। যেনো পুরো শপের কাচের গ্লাস গুলো ফেটেই যাবে। স্পেশালি আইরাত। আল্লাহ, ওর তো হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। পুরো শপের মানুষ গুলো কিছুটা তাকিয়েই ছিলো।
দিয়া;; ওই তোরা বোস আমি কিছু খাওয়ার জন্য নিয়ে আসি।
আইরাত;; কোল্ড কফি নিয়ে আসিস।
দিয়া;; আচ্ছা, অবনি তুই?
অবনি;; কফিই।
দিয়া;; আচ্ছা।

আব্রাহাম সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে আর নিজের শার্টের হাতাগুলো ফোল্ড করছে। ইলা রান্নাঘরে ছিলো সেখান থেকে সবই দেখা যায় ড্রোইং রুমের। ইলা আব্রাহাম কে দেখে হেসে এগিয়ে আসে।
ইলা;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; হুমম।
ইলা;; তোকে আজ অন্য রকম লাগছে।
ইলা মাথা থেকে পা অব্দি আব্রাহাম কে একবার চেক করে। একটা নেভি ব্লু কালারের প্যান্ট পরেছে আর পুরো কালো শার্ট। হাতে একটা মোটা কালো ঘড়ি। অন্যান্য দিনের থেকে একেবারেই সিম্পল।

আব্রাহাম;; কি?
ইলা;; আগে যখন তুই ভার্সিটিতে পড়তি তেমন মনে হচ্ছে পুরো।
আব্রাহাম;; সত্যি?
ইলা;; হ্যাঁ। সুন্দর লাগছে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ আসো বিয়ে করি। আমি তো কবেই থেকেই রেডি।
ইলা;; মারবো একটা শয়তান।
ইলা আব্রাহামের কানে ধরে আর আব্রাহাম হেসে দেয়।
ইলা;; আচ্ছা শোন না।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বলো।
ইলা;; যত জলদি পারিস….
আব্রাহাম;; আইরাত কে বউ করে আনবো। জানি আমি।
ইলা;; হ্যাঁ সেটাই। আইরাত কে আমার সেই প্রথম দিন থেকেই অনেক পছন্দ।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ পরে নাত-বউ কে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবে।
ইলা;; হ্যাঁ তোর দিন শেষ।

আব্রাহাম;; হয়েছে বুঝলাম। আচ্ছা শুনো আমি বাইরে যাচ্ছি। তোমার জন্য কি আনবো বলো।
ইলা;; কিছুই না। গার্ড কে নিয়ে যাবি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ দু-একজন। তবে অয়নও সাথে যাচ্ছে।
ইলা;; ওহ আচ্ছা। জলদি আসিস।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ কয়েক ঘন্টা বাদেই এসে পরবো।
ইলা;; আচ্ছা।
আব্রাহাম ইলার গালে একটা চুমু বসিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; আল্লাহ হাফেজ দাদি।
ইলা;; আল্লাহ হাফেজ।
আব্রাহাম বাসা থেকে বের হতেই অয়ন ফোন দেয়।
অয়ন;; ভাই কই তুই?
আব্রাহাম;; সামনে তাকিয়ে দেখ।

অয়ন তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম আসছে। গার্ডরা গেইট খুলে দেয়। আব্রাহাম কে দেখে অয়ন কিছুটা হাসে। আর আব্রাহাম চোখে সানগ্লাস পরে অয়নের পাশে গিয়ে বসে পরে।
অয়ন;; কিরে আজকে লুক চেঞ্জ কেনো?
আব্রাহাম;; এমনি।
অয়ন;; হ্যান্ডসাম লাগছে প্রচুর।
আব্রাহাম;; থ্যাংক্স ডুড।
অয়ন;; তো কোথায় যাবো?
আব্রাহাম;; আইরাতের ভার্সিটির পাশে যে কফিশপ আছে সেখানে।
অয়ন;; সেখানে! কিন্তু কেনো?
আব্রাহাম;; সেখানে আইরাত আছে।
অয়ন;; তুই কি করে জানলি?

আব্রাহাম;; আইরাতের ফোনের লোকেশন আমার ফোনের সাথে ট্রেক করা আছে। তো আইরাত যেখানে যাবে আমি আরামছে জেনে যাবো। কিন্তু আইরাত এটা জানে না। ওকে জানাবো তবে কিছুদিন পর।
অয়ন;; হুমম বুঝলাম।
অয়ন গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করে।
অয়ন;; কিছু খেতে মন চাইছে।
আব্রাহাম;; কি খাবি?
অয়ন;; কোল্ড ড্রিংকস আছে?
আব্রাহাম;; পেছনে তাকিয়ে দেখ।
অয়ন তার পেছনের সীটে তাকিয়ে দেখে এক জাড় বিয়ার রাখা যদিও এটা আব্রাহামের গাড়ি। গাড়ির চাবি অয়ন কে দিয়ে তাকে বাসার নিচে আসতে বলেছিলো।

অয়ন;; পুরো এক বিয়ারের জাড়?
আব্রাহাম;; হুমম। (ফোন ঘাটতে ঘাটতে)
অয়ন;; এখানে কি করে এলো। সিরিয়াসলি আমি একদম খেয়াল করি নি।
আব্রাহাম;; কারণ তুই চোখ থাকতেও কানা।
অয়ন;; যাই হোক থ্যাংকস ভাই। তুই তো দেখি সব সাথে নিয়ে ঘুড়িস।
অয়ন গাড়ি টা একটু থামিয়ে নিজে একটা বিয়ারের বোতল নিয়ে আরেকটা আব্রাহাম কে দিয়ে দেয়। বেশ কিছু সময় পর কফিশপের সামনে এসে গাড়ি থামে।
আব্রাহাম;; শোন আমি ভেতরে যাচ্ছি। আর তুই পেছনের সাইডে গাড়ি পার্ক করে তারপর আয়।
অয়ন;; ওকে।

আব্রাহাম কে এভাবে রাস্তায় দেখে কিছু সংখ্যক মানুষের ভীড় জমে। তবে দুপাশে দুজন গার্ড এসে থামে। আব্রাহাম সেদিক টা এড়িয়ে গিয়ে কফিশপের ভেতরে চলে যায়। ভেতরে যেতেই সবার মাঝে কিছুটা শোরগোল দেখা দিলে আব্রাহামই তাদের ইশারাতে চুপ হয়ে বসে থাকতে বলে। অবনির নজর যায় আব্রাহামের দিকে। সে হেসে দিয়ে আইরাত কে তার পেছনে ঘুরে দেখতে বলে। আইরাত কপাল ভাজ করে পেছনে তাকায় দেখে আব্রাহাম। তাকে দেখে আইরাত সেন্টি খেয়ে যায়।
অবনি;; Honesty আব্রাহাম স্যার পরে আছে তোর পেছনে কিন্তু এদিকে ক্রাশ খাই আমরা।
আইরাত;; তুই সীমিত আকারে মইরা যা।
আব্রাহাম;; হে গার্ল”স, হুয়াট’স আপ!!
অবনি;; জ্বি ভালো।
আইরাত তাকিয়ে থাকে আব্রাহামের দিকে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল কিছু বলবে?
আইরাত;; আপনি এখানেও!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো!
আইরাত;; নাহ কিছু না৷ কোথাও গিয়ে আর শান্তি নাই।

আইরাতের অবস্থা দেখে অবনি মুখ টিপে হাসে। আর ওদিকে অয়ন গাড়ি পার্ক করে হাতে গাড়ির চাবি ঘুরিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে আসছিলো। শপের পেছনের দিকটা থেকে আসছিলো। এসেই যেখানে অর্ডার নেওয়া হয় সেখানে চলে যায়। দাঁড়িয়ে ছিলো আর আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখছে। অয়ন খেয়াল করে তার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই কখন থেকে অর্ডার নেওয়া মানুষের সাথে বকর বকর করে যাচ্ছে। হয়তো চেনা-পরিচিত তাই৷ সেই দিয়া। দিয়া আরো একটু সামনে আগায় পেছনে জায়গা খালি হয় তখন অয়নও কয়েক কদম সামনে এগোয়। পরক্ষণেই দিয়া তার হাতে একটা ছোট ট্রে তে তিনটে কোল্ড কফি নিয়ে পেছনে ঘোরে। আর সাথে সাথে তা অয়নের ওপর পরে যায়। কফির কাচের গ্লাস গুলো টাস টাস করে নিচে পরে ভেঙে যায়। বেশ কফি দিয়ার জামাতেও লেগে যায়। দিয়ার মুখও হা অয়নের মুখও হা। দিয়া রাগে সামনে অয়নের দিকে তাকায়। অয়নেরও বেশ রাগ লাগছে। যদিও এটা মাত্রই একটা এক্সিডেন্ট ছিলো কেউই ইচ্ছে করে করে নি।

দিয়া;; কানা নাকি, দেখেন না চোখে?
এই কথা বলেই দিয়া চলে যায়। অয়ন আর কি বলবে দিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সে নিজেই উলটা ঝাড়ি মেরে চলে গেলো। দিয়া চলে আসে তারপর আইরাতের পাশে গিয়ে বসে পরে ধিরিম করে। সে খেয়ালই করে নি যে আব্রাহামও বসে আছে।
আইরাত;; কিরে?
দিয়া;; আরে একজন লোকের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো তিনটে গ্লাস ভেঙে।
আইরাত;; কে?
দিয়া;; চিনি না।
দিয়া রাগ বাদ দিয়ে ঠোঁট গুলো চেপে এক হাসি দেয় আব্রাহাম কে দেখে।
দিয়া;; হিহি না না কিছু না কিছু না।
আইরাত সেদিকে উঁকি দিয়ে দেখে একজন লোক সেগুলো পরিষ্কার কিরছে। আর তার পাশেই অয়ন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে। তা আব্রাহামও খেয়াল করে।

আব্রাহাম;; ও অয়ন, আমার ভাই হয়।
দিয়া;; ওও আচ্ছা।
আইরাত;; ঝগড়া হয়েছে?
দিয়া;; আরে না না, একদম না।
এভাবেই কথা বলে বেশ সময় চলে যায়। আইরাত শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আসলে কথা তো বলছে আব্রাহাম, অবনি আর দিয়া। কি আড্ডা তাদের। হঠাৎ এক সময় দিয়া বলে ওঠে…
দিয়া;; তো বাসায় যাবো কখন আমরা?
আইরাত দ্রুত উঠে পরে হাতে ব্যাগটা নিয়ে।
আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ এখনই যাবো চল চল।

আব্রাহাম;; আইরাত আমার সাথে যাবে।
আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টান দিয়ে আবার বসিয়ে দেয় নিজের কাছে।
আব্রাহাম;; আর হ্যাঁ তোমাদেরও একা যেতে হবে না। অয়ন দিয়ে আসবে তোমাদের বাসায়, অয়ন।
অয়ন;; আসছি।
অবনি;; না না স্যার আমরা যেতে পারবো তো।
আব্রাহাম;; সমস্যা নেই। যা বলছি তা শোন অয়নের সাথে চলে যাও।
অবনি;; আচ্ছা।
অয়ন দিয়া কে দেখে কপাল কুচকায়। দিয়া মেকি একটা হাসি দেয়। তারপর তারা তিনজন চলে যায়। আর এদিকে বসে থাকে আব্রাহাম-আইরাত।

আব্রাহাম;; এই
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; অনেক ইম্পর্ট্যান্ট একটা কথা আছে।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।
আইরাত;; থ্যাংক ইউ।
আব্রাহাম;; এটার উত্তর তো এটা না।
আইরাত;; এটাই।
আব্রাহাম আইরাতের চেয়ার টা ধরে টান দেয় এতে চেয়ার সহ আইরাত আব্রাহামের কাছে এসে পরে।
আব্রাহাম;; এটার উত্তর এটা না বেবিগার্ল।
আইরাত;; এটাই।
আব্রাহাম;; এই আই লাভ ইউ বলো।
আইরাত;; না।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; বলবো না।
আব্রাহাম;; বলবে না?
আইরাত;; না
আব্রাহাম;; বলতে বলছি বলবা। বলো।
আইরাত;; না।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, এখন এখানে কিন্তু এমন কিছু করে বসবো যার ফলে তুমি নিজেই লজ্জা পাবে।
আইরাত;; এমন করেন কেনো?
আব্রাহাম;; তুমি কথা শুনো না কেনো? বলো বেবিগার্ল আই লাভ ইউ।
আইরাত;; না ?
আব্রাহাম;; এই আই লাভ ইউ বল। (ধমক দিয়ে)
আইরাত;; আই লাভ ইউ ?
আব্রাহাম তার বুকের পাশে হাত দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; সব শান্তি আমার বুকে এসে পরেছে। আই লাভ ইউ টু জানপাখি।
আইরাতের এবার চোখ যায় পাশের টেবিলে বসে থাকা দু-তিনজন মেয়ের দিকে। ড্যাবড্যাব করে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; ঘোড়ার ডিম। আমাকে না বলে ওইযে পাশের টেবিলের কিছু পেত্নীকে দিয়ে বলালেই তো পারতেন।
আব্রাহাম;; কেনো?
আইরাত;; কীভাবে তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম;; এভোয়েড করো।
আইরাত;; আমি বাসায় যাবো।
আব্রাহাম;; আচ্ছা চলো দিয়ে আসি।
আইরাত;; আমি বাচ্চা নই। একাই যেতে পারবো।
আব্রাহাম;; আমার সাথে যাবা, এক্ষন যাবা।

আব্রাহাম কে সোজাসাপটা কথা বলতে দেখে আইরাত আর কিছুই বলে না। কারণ সে জানে যে এখন বলেও লাভ নেই। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে চলে যায়। তবে আব্রাহাম যখন আইরাত কে নিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলো তখন সে খেয়াল করে যে তাদের গাড়ির ঠিক পেছনেই একটা কালো গাড়ি রয়েছে। গাড়ির পাশে থাকা লুকিং গ্লাসে আব্রাহাম দেখে। তারা যেদিকে যাচ্ছে ওই গাড়ি টাও সেদিকেই যাচ্ছে। আব্রাহামের ব্যাপার টা কেমন ঘোলাটে লাগে। যাই হোক আগে আইরাত কে সেইফ & সাউন্ড বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে তারপর বাকিসব কিছু করতে হবে। আব্রাহাম গাড়ির স্পীড আরো বাড়িয়ে দেয়।

গাড়ির স্পীড় বাড়িয়ে দিয়ে যেনো হাওয়ার গতিতে যেতে লাগলো আব্রাহাম। আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম কিছুটা রাগি মুডে সোজা গাড়ি ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। বিশ মিনিটের মাথায় এসে গাড়ি হুট করে ব্রেক কষে আইরাতের বাসার সামনে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল এসে পরেছি।
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম সাইড মিররে তাকিয়ে দেখে যে গাড়িটা তাদের ফলো করছিলো সেটা এখন আর নেই। আব্রাহাম এবার পুরো ক্লিয়ার হলো যে সেই গাড়িটা আসলে মেইনলি আব্রাহামেরই পিছু করছে৷ আইরাত আস্তে করে নিজের সীট ব্যাল্ট টা খুলে ফেলে। আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে দেখে সে এক হাত ড্রাইভ কোন্ট্রলের ওপর রেখে আরেক হাত মুখের পাশে রেখে দিয়ে আছে। আইরাত নেমে যেতে ধরেও আবার থেমে যায়।

আইরাত;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ জানপাখি।
আইরাত;; একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বলো না।
আইরাত;; না মানে আসলে….
আব্রাহাম বুঝলো যে আইরাত কিছুটা ভয় পাচ্ছে বা তার মাঝে কিছুটা জড়তা কাজ করছে। তাই সে আইরাতের হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলে…
আব্রাহাম;; আমার দিকে তাকাও।
আইরাত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; এবার বলো।
আইরাত;; আমাদের মাঝে কি আছে?
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; এইযে আমাদের মাঝে যা ই আছে। যা কিছুই আছে। এইযে আপনি যেভাবে বলেন আমায় ভালোবাসেন। কিন্তু আমি তো…

আব্রাহাম;; তুমি ভালোবাসো না। জানি আমি।
আইরাত;; আমি জানি না। কিন্তু এটা কি। আমাদের মাঝে যাই আছে এটার নাম কি। এই সম্পর্কের নাম কি? আপনি কে হন আমার?
আব্রাহাম;; যদি বলি হাসব্যান্ড।
আইরাত;; হুয়াট?

আব্রাহাম;; কেউই চায় না যে সে যাকে ভালোবাসে তার সাথে সে কোন প্রকার কোন অবৈধ সম্পর্কে জড়াক। সবাই চায় সমাজ হোক বা ধর্ম যেনো তারা বৈধ/হালাল সম্পর্কে জড়াক। আমিও জড়িয়েছি। একচুয়ালি ইউ নো হুয়াট সমাজ বলতে যে এই জিনিসটা আছে না এইটা জাহান্নামে যাক আমার কিছুই যায়-আসে না তাতে। তবে আমি কখনো কাউকে বলতে দিবো না যে আব্রাহাম তার আইরাত কে অবৈধভাবে পেয়েছে। কখনোই না। তুমি আপাতত এইটুকু জেনে রাখো যে আমি তোমায় ভালোবাসি আর তুমি আমার।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি আ…..
আব্রাহাম;; আরে চাই না আমার তোর থেকে ভালো কাউকে। তুই ভালো হলেও আমার আর খারাপ হলেও আমার। আমার শুধু তোকেই চাই। (নরম সুরেই)
আইরাত;; আমি, আমি বাড়ি যাই।
আব্রাহাম;; যাও।

আইরাত গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত আইরাত বাড়ির একদম ভেতরে চলে গিয়েছিলো ততক্ষণ আব্রাহাম এক নয়নে তাকিয়েই ছিলো। আইরাত চলে গেলে সেও গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে এসে পরে। কিছুদূর যেতেই আব্রাহাম লক্ষ্য করে যে আবার সেই গাড়িটা আব্রাহামের গাড়িকে ফলো করছে। এটা দেখেই আব্রাহামের রাগ উঠে পরে। তখন আইরাত ছিলো কিছু করতে পারে নি কিন্তু এবার তো সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। গাড়ির ফুল স্পীড বাড়িয়ে দেয়। সাই সাই করে যেতে লাগে। খেয়াল করে দেখে আব্রাহাম যে যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে সেই গাড়িটাও ঠিক সেই দিক দিয়েই যাচ্ছে। তাই আব্রাহাম একটু চালাকি করে।

সে ইচ্ছে করে উল্টা-পাল্টা পথে যেতে লাগে। যত আঁকাবাঁকা রাস্তা ছিলো সবদিক দিয়ে ট্রাই করছে। এতে কিছুটা হলেও ওই গাড়িটা আব্রাহামের গাড়ি থেকে পেছনে পরে গেছে। পেছনের গাড়ি কে হুট করেই এগিয়ে আসতে দেখে আব্রাহাম এবার ইউ টার্ন নিয়ে নেয়। ইউ টার্ন নিয়ে আগে ভাগেই চলে যায়। একটা খোলা রাস্তা দিয়ে গিয়ে অন্ধকার জায়গায় চলে যায়। এখন আর এখানে আব্রাহামের গাড়িকে দেখা যাচ্ছে না। যে গাড়ি ফলো করছিলো সেই গাড়ি অন্ধকার সেই খোলা জায়গায় এসে থেমে পরে। আব্রাহাম কে কোথাও না পেয়ে গাড়ি থেকে দুজন লোক হুড়মুড়িয়ে নেমে পরে।

— এই কোথায় গুম হয়ে গেলো রে?
— জানি না, ঠিকঠাক ফলোই তো করছিলাম। হুট করেই কোথায় চলে গেলো!
— ধুর, এভাবে হাতছাড়া হয়ে গেলো।
লোকগুলো কথা বলছিলো তার মাঝেই তাদের কানে আসে সিটি বাজানোর শব্দ। আস্তে আস্তে গাড়ির ফ্রর্ন্ট লাইট গুলো জ্বলে ওঠে। এবার তাদের চোখ যায় আব্রাহামের ওপর। আব্রাহামের কালো গাড়ি আর ওই রাস্তা টা আসলে এতোই কালো যে বোঝার উপায় নেই সেখানে কেউ আছে। রাস্তায় কোন লাইট বা ল্যাম্পপোস্টও নেই। আব্রাহামের গাড়ির সামনের লাইট জ্বলে উঠলে আব্রাহাম কে স্পষ্ট দেখা যায়। সে সিটি বাজানো অফ করে দেয়।
আব্রাহাম;; হাই গাধার দল তোমরা কি আমায় খুঁজছিলে!

কেউ কিছু না বলেই সোজা গুলি বের করে আব্রাহামের দিকে তাক করে। আব্রাহাম ধীর পায়ে কয়েক কদম এগিয়ে যায়।
— সামনে এগোবেন না। নয়তো, নয়তো গুলি করে দিবো।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো কর না। কে ধরে রেখেছে। কর গুলি দেখি কতো পারিস।
পাশে থাকা আরেক ব্যাক্তি এসে দ্রুত গুলি তাক করে রাখা লোকটির কানে কানে বলে…
— এই ভুল জীবনেও করিস না। অনেক ভারি পরবে, গুলি করিস না।
আব্রাহাম এবার সামনে এসে গুলি তাক করে থাকা লোকটার হাতের ঠিক মাঝ বরাবর অর্থাৎ কুনির দিকে তার হাত দিয়ে প্রচুর পরিমানে জোরে একটা বারি দিয়ে বসে। অতিরিক্ত ব্যাথায় হাত থেকে গান হালকা হয়ে এলে আব্রাহাম তা দ্রুত নিজের হাতে নিয়ে নেয়।

আব্রাহাম;; আগে কীভাবে গান ধরতে হয় তা জেনে নে তারপর আমাকে মারতে আসিস ওকে!
এমন অবস্থা দেখে পেছনের এক লোক দৌড়ে চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম ঠিক তার হাটু বরাবর গুলি করে দেয়। এতে হয়তো বুলেট তার হাটু ভেদ হয়ে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। আব্রাহামের হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে কিছুটা ধোঁয়া বের হচ্ছে। একটা কে হাটু ধরে মাটিতে কাতরাতে দেখে আরেকটা কিছুটা শুকনো ঢোক গিলে। আব্রাহাম এগিয়ে গিয়ে লোকটার হাতে পিস্তল টা ধরিয়ে দেয়।

আব্রাহাম;; ওটাকে হস্পিটালে এডমিট করে দিস আর তুই বাড়ি গিয়ে দোয়া কর যে জীবন হাতে নিয়ে বেঁচে ফিরেছিস। বুঝলি বাচ্চু যাহ। আর হ্যাঁ আমাকে ফলো করতে হবে না তোদের যে পাঠিয়েছে ওকে বলিস যেনো আমার সামনে এসে দেখে করে কেমন।
এই বলেই আব্রাহাম চোখে সানগ্লাস টা পরে গাড়ি তে উঠে বসে সাই করে চলে যায়। আর ওই লোকটা কোন রকমে গুলি লাগা ব্যাক্তিটিকে গাড়িতে তুলে চলে যায়।

ড্রইংরুমে বসে বসে টিভি তে ডোরেমন ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছামতো গপাগপ আইসক্রিম খেয়েই যাচ্ছে। অনামিকা তার পাশেই বসে আছে।
অনামিকা;; আচ্ছা শোন না আমি কি বলি।
আইরাত;; বলো না। আমি তো শুনছি কান খোলা আমার।
অনামিকা;; ত্যাড়ামি না করে একটু মনোযোগ দে।
আইরাত;; বলতে থাকো।
অনামিকা;; আইরাত!
আইরাত বুঝলো কেসটা হয়তো সিরিয়াস। তাই আইসক্রিমের বাটি টা টেবিলে রেখে দিয়ে টিভি টা বন্ধ করে দুইপা ভাজ করে অনামিকের দিকে তাকায়।
আইরাত;; এবার বলো।

অনামিকা;; শোন আমি চাই তুই হ্যাপি থাক৷ আর আমি মনে করি তুই থাকবিও। তো বলছিলাম কি যে…
আইরাত;; আরে মা এতো ইনিয়েবিনিয়ে বলার থেকে সোজাসাপটা বলো তো।
অনামিকা;; দেখ মা আমি জানি যে তুই তোর ফুপি কে বেশি একটা পছন্দ করিস না। কিন্তু সত্যি বলতে সাবিলা হয়তো একটু গোমড়া টাইপের তবে ভালো।
আইরাত তার চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।
অনামিকা;; যদিও তোর ফুপি এই কথা টা বিগত ২ বছর যাবত বলছে। আগে হালকার ওপর নিলেও এখন যেনো আমাকে আরো বেশি বেশি বলছে ইদানীং। তোর ফুপি আজ তোর আর নিলয়ের বিয়ের প্রস্তাবের কথা নিয়ে এসেছিলো।
আইরাত অনামিকার কথা শুনে হাসবে নাকি কানবে বুঝে না। আইসক্রিমের বাটি তা হাতে তুলে নিয়ে আবার খেতে শুরু করে।

অনামিকা;; কিরে আইসক্রিম খেতে লাগলি যে, শুনছিস তুই আমার কথা?
আইরাত;; আমি বিয়ে করবো না। শুনেছো তুমি
“ন আকারে না”।
অনামিকা;; আচ্ছা মানলাম নিলয় একটু আজেবাজে ঝামেলায় ছিলো আগে তবে তুই দেখেছিস এখন নিলয় কত্তো ভালো হয়ে গেছে। কালই কানাডা থেকে আসছে সকালের ফ্লাইটে। আর এসেই তার বাবার বিজন্যাসে জয়েন করবে।
আইরাত;; তো আই কিত্তাম?

অনামিকা;; কি সব ভাষা রে বাবা। আইরাত দেখ আমি কিন্তু ফাজলামির মুডে নেই বলে দিচ্ছি।
আইরাত;; মা বুঝলাম। কিন্তু, কিন্তু নিলয় ভাইয়াই কেনো। আরে ছোট থেকে এই পর্যন্ত ভাই হিসেবেই ট্রিট করেছি আমি ওকে। আর ফুপি কে আমি আমার শাশুড়ী হিসেবে ভাবতেও পারি না। ফুপি হয়েই যে জল্লাদ না জানি আমার শাশুড়ী হয়ে গেলে কি করবে।
অনামিকা;; কে বলেছে যে তুই তোর ফুপির বাড়ি থাকবি। সেটা তোর ইচ্ছে মন চাইলে তুই আমার সাথেই থাকবি। আর এটা সাবিলা নিজেই বলেছে।
আইরাত;; কিন্তু আমিই কেনো। ফুপির না চেনা-পরিচিত কতো মেয়ে আছে। তাদের কে বলতে বলো।
অনামিকা;; কিন্তু সাবিলা অনেক আগে থেকেই নিলয়ের জন্য তোকে পছন্দ করে রেখেছে। দু-একদিনের কথা না বেশ কয়েক বছরের কথা সাবিলা আমাকে বলছে। তোর কলেজ পড়ার সময় থেকেই।
আইরাত;; হ্যাঁ কিন্তু আ……

অনামিকা;; আর নিলয়ও কিন্তু তোকে পছন্দ করে বুঝিস তুই!
আইরাত;; মা বুঝো আমি বিয়ে করতে পারবো না।
অনামিকা;; সমস্যা কি?
আইরাত;; এখন মা কে কি করে বলি আব্রাহামের কথা। (মনে মনে)
অনামিকা;; বল।
আইরাত;; আমি এখনো এইসব বিয়ে-শাদির জন্য প্রস্তুত না।
অনামিকা;; শোন তোর তো আর অন্য ঘরে বিয়ে হচ্ছে না। নিজেদের মাঝেই বিয়ে টা হবে। কোথাও যাবি না তুই এখানেই থাকবি। খুশি থাকবি। বিয়ে টা করে নে না মা।
আইরাত;; কিন্তু…

অনামিকা আইরাতের দুহাত খামছে ধরে।
অনামিকা;; শোন আমি জীবনে কিচ্ছুই কখনো চাই নি তোর কাছে। তবে আজ চাইছি এই একটা কথা রাখ তুই আমার। নিলয়ের সাথে বিয়ে টা করে নে।
আইরাত;; মা আমি…
অনামিকা;; তুই পড়াশোনা করতে পারবি তো। সবই করতে পারবি যা তোর ইচ্ছে। করে নে বিয়ে টা।
আইরাত;; আমাকে কিছুদিন সময় দাও ভাবার জন্য।

অনামিকা;; নে যত সময় নেওয়ার নে তবে শেষে যেনো বিয়ে টাই হয়।
অনামিকা উঠে কাজ করতে চলে যায়। আর আইরাত পরে যায় মহা চিন্তায়। সামনে আইসক্রিম গলে গলে পানি হয়ে গেলো তবুও খেতে ইচ্ছে করছে না। একদমই মন উঠে গেছে। একদিকে নিজের মা আরেকদিকে আব্রাহাম। কার কথা শুনবে। আব্রাহাম যদি একটা বার জানে যে আইরাতের বিয়ে সোজা কথা কিয়ামত বাধিয়ে দিবে সে। আর আইরাত যদি মানা করে দেয় তাহলে সাবিলাও মুখ গোমড়া করে দিয়ে থাকবে, নিলয়ও আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিবো। আর অনামিকা, অনামিকা তো আইরাতের সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিবে। এখন কি করবে! এইসবই ভাবছিলো তখন ফোনে ফোন আসে।

আইরাত;; হ্যালো।
নিলয়;; কিরে কি করিস?
আইরাত;; কিছু না বসে আছি। তুমি?
নিলয়;; আমিও বসে আছি। কাল সকালে ফ্লাইট আছে আসছি আমি।
আইরাত;; হুমমম।
নিলয়;; মামি তোকে কিছু বলেছে?
আইরাত;; অনেক কিছুই বলেছে?
নিলয়;; কিছু কি ভাবলি?

আইরাত;; ভাইয়া সত্যি বলতে আমি বুঝতে পারছি না কি করবো। আম্মুর কথা ভাবছি। আম্মু তো রাগ করে থাকবে।
নিলয়;; কিছু সময় নে তুই। ভাব তারপর বল।
আইরাত;; হুমম।
নিলয়;; শোন
আইরাত;; হ্যাঁ
নিলয়;; এর আগে কখনো তোকে বলা হয়নি বাট আমি, আমি তোকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি।
আইরাত;; ____________________
নিলয়;; আইরু…
আইরাত;; আমি, আমি রাখি।
এই বলেই আইরাত টুক করে ফোনটা কেটে দেয়। বুকটা কেমন ধুকপুক ধুকপুক করছে। আইরাত উঠে গিয়ে কিচেনে তার মায়ের পাশে দুহাত ভাজ করে দাঁড়ায়। অনামিকা পেয়াজ কাটতে কাটতে বলে ওঠে…

অনামিকা;; কিছু বলবি?
আইরাত;; বিয়ে টা না করলে হয় না?
অনামিকা;; কেনো তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?
আইরাত;; ন ন না।
অনামিকা চাকু রেখে আইরাতের দিকে তাকায়।
অনামিকা;; তাহলে তো আর কোন কথাই রইলো না। বিয়ে করবি মানে করবি ব্যাস।
আইরাত;; মা!

অনামিকা;; আইরাত আমি কখনো কিছুই নিয়ে জোর করেছি তোকে বল। করি নি। কিন্তু আমি তোর ভালো চাই সবসময়। আর এতেই ভালো হবে। তুই তো কাউকে পছন্দই করিস না তাহলে ভেজাল তো রইলোই না। বিয়ে করবি ব্যাস।
আইরাত কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়। বালিশ বুকের মাঝে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পরে। কতোক্ষণ শুয়ে থাকলো কিন্তু চিন্তার ভূত যেনো মাথা থেকে নামারই নাম নিচ্ছে না। কোন উপায় না পেয়ে উঠে পরে। পড়ার টেবিলে গিয়ে হাতে একটা কাগজ নিয়ে নেয়। কিছু কাগজ ছোট ছোট করে কেটে নেয়।

তারপর কিছু কাগজে “বিয়ে করবো” আর কিছু কাগজে “বিয়ে করবো না” লিখে নেয়৷ তারপর সবগুলো প্যাচিয়ে নেয়। হাত দিয়ে কিছু ওলট-পালট করে সবগুলো টেবিলে ছড়িয়ে দেয়। তারপর বেশ দ্বিধা নিয়েই যেকোন একটা কাগজ তুলে নেয় হাতে। তড়িঘড়ি করে তা মেলে ধরে। দেখেই পিটপিট করে তাকায়। “বিয়ে করবো” উঠেছে। আইরাত বিয়ে করবে! দরজায় কড়া নাড়ে দেখে অনামিকা…

অনামিকা;; সারারাত পরে আছে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য এখন আয় খেয়ে নে।
আইরাত সব রেখে নিচে চলে যায়। রাতে তো ঘুম দুচোখের পাতায় নেই-ই উল্টো চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। আব্রাহাম সত্যিই মেরে ফেলবে আইরাত কে। কিন্তু অনামিকা কে তো আর আব্রাহামের কথা বলতে পারছে না কারণ আইরাতের মতে সে তাকে ভালোবাসে না। আর যদি এই বিয়ে না করে তাহলে সাবিলা হোক বা অনামিকা রাগ করে থাকবে প্লাস বেশ রেশারেশিও হবে। কোথাও না কোথাও অভিমানের পাহাড় জমা হবে। করিডরে গিয়ে বসে আছে হাতে একটা বই। তবে বই-এ যেনো নজর নেই। এভাবেই দেখতে দেখতে রাত টুকু কেটে যায়।

মুখের ওপর ঠাস করে রোদের প্রখর উত্তাপ এসে পরে। চোখ মুখ ভাজ করে হাত দিয়ে রোদ আসাকে ঠেকাচ্ছে। ঘুম ভেঙে যায় আইরাতের। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে করিডরেই বসে আছে। তার মানে সারারাত এখানেই থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছিলো।
আইরাত;; জীবন টা বাঁশময়। সবাই মজা নিচ্ছে। রোদও নিচ্ছে।
আইরাত চটে গিয়ে ভেতরে এসে পরে৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯ টা বাজে। অবনি বলেছিলো আজ ক্লাস নেই ভার্সিটিতে তাই যাবে না। চুলগুলো বেধে মুখে পানির ছিটেফোঁটা দিয়ে আসে। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আসে।

অনামিকা;; আইরাত, এই আইরাত।
আইরাত;; হ্যাঁ বলো।
অনামিকা;; এই নিচে আয় দ্রুত।
আইরাত;; কেনো?
অনামিকা;; আগে আয় জলদি।
আইরাত টাওয়াল টা রেখে দিয়ে নিচে চলে যায়।
যেতেই দেখে সাবিলা বসে আছে। আইরাত সিড়িতে দাঁড়িয়েই গা এলিয়ে দেয়।

আইরাত;; মা।
অনামিকা;; ম্যা ম্যা না করে নিচে আয়।
আইরাত সিড়িতেই ধপাস করে বসে পরে গালে হাত দিয়ে।
সাবিলা;; আইরাত বাদরামি বাদ দিয়ে এদিকে আয়।
আইরাত এবার উঠে গিয়ে তার ফুপির পাশে বসে।
সাবিলা;; হ্যাঁ রে কিছু ভাবলি?
আইরাত;; তুমি আর কাউকে পেলে না।
সাবিলা;; ভাবি শুনো তোমার মেয়ের কথা।
অনামিকা;; আমি আর কতো বলবো বল।

সাবিলা;; আইরাত দেখ হ্যাঁ মানলাম আমি একটু বারাবারি করে ফেলি মাঝে মধ্যে। কিন্তু দেখ তুই তো আমারই ভাইয়ের মেয়ে তাই না। না জানি বাইরের মেয়ে কেমন হবে। আদৌ নিলয়ের সাথে সে খুশি থাকবে কি না। আমাদের পরিবারের মর্যাদা বুঝবে কি না। সংসার সামলাতে পারবে কিনা। আমি এই বলছি না যে বিয়ের পর সব বাদ দিয়ে শুধু সংসারই সামলাতে হবে। কিন্তু তবুও একটা তো কথা আছে বল। এখন বলছি যে তুই প্লিজ রাজি হয়ে যা না বিয়েতে।

আইরাত;; ফুপি আমি আসলে কি আর বলি। আমি জানি না আমি কি বলবো।
অনামিকার হাতে কিছু জিনিস ছিলো সেগুলো সোফার ওপর রেখে আইরাতের দিকে তাকিয়ে বলে…
অনামিকা;; হ্যাঁ বলবি তুই ব্যাস আর কিছুই না।
আইরাত কিছু না বলেই হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে।
সাবিলা;; দেখ তুই যেমন চাস তেমনই হবে। মানে বিয়ের পরে আর কি। যেভাবে খুশি থাকিস। বিয়ে টা একদম ঘোরয়া ভাবেই হবে। কেউ জানবে না। তবুও বিয়ে কর।

আইরাত;; _____________________
সাবিলা;; আচ্ছা তুই বল যে নিলয় কি দেখতে খারাপ?
আইরাত;; না।
সাবিলা;; আগে যে মারপিট বা ঝগড়া করতো তার জন্য?
আইরাত;; না।
সাবিলা;; টাকা-পয়সা কম?
আইরাত;; না।
সাবিলা;; তাহলে কোন দিক দিয়ে খারাপ বল।
আইরাত;; ব্যাপার সেটা না ফুপি।
সাবিলা;; তাহলে?
আইরাত;; কিছু না।
অনামিকা;; শোন। তুই যদি এই বিয়ে না করিস তাহলে…
আইরাত;; তাহলে!
অনামিকা;; আর জীবনেও আমি তোর সাথে কথা বলবো না।
আইরাত;; কেনো গো মুখে কি সুপার গ্লু লাগিয়ে নিবে নাকি!
অনামিকা;; যাহহ।

আইরাত;; আমি ছাদে গেলাম। এতো চিন্তা করলে আমায় এক সময় পাগলের প্রলাপ বকতে হবে।
এই বলেই আইরাত ওপরে ছাদে চলে যায়। ভাবতে লাগে। আচ্ছা সে তো আব্রাহাম কে ভালোবাসে না। না ই কখনো আগে ভেসেছিলো তো বিয়ে করে নিলেই তার কি। বিয়েতে কাউকেই ডাকবে না। সবাই কে বিয়ের পরে বলা যাবে। যাই হোক আইরাতের কাছে আব্রাহামের আগে তার মা। অনামিকা বেশ ফুলে রয়েছে আইরাতের থেকে। যদি সত্যি সত্যি কথা বলা বন্ধ করে দেয় তো। আর বিয়ে তো ঘরেই হচ্ছে, ঘর থেকে বাইরেও যাবে না। কাকপক্ষিও টের পাবে না। পেতেই দিবে না। আর একবার যদি বিয়ে হয়ে যায় তাহলে আব্রাহাম কিছুই করতে পারবে না। এখন পাগলামো করতে পারে কিন্তু একবার অন্য জনের সাথে আইরাতের বিয়ে হয়ে গেলে কিছুই করতে পারবে না।

এটাই ভেবে নেয় আইরাত। বেলা ঠিক বারো টা বাজে তখন নিলয় দেশে আসে। নিলয় এসে আইরাতের সাথে কথা বলে, তার ওপর অনামিকা তো আছেই। সাবিলাও বুঝাচ্ছে আইরাতকে। সব ভেবে-চিন্তে আইরাত ঠিক করে যে হ্যাঁ রাজি হয়ে যাবে সে বিয়েতে। বড় কথা হচ্ছে অনামিকা কে দেখেই বুঝা যায় যে এই বিয়েটা হলে সে কতোটা খুশি হবে। আইরাতের সব দিক বাদ দিয়ে শুধু নিজের মায়ের মুখের ওই হাসি-খুশি টার জন্য হলেও বিয়ে টা করা উচিত। আইরাত ভার্সিটিতে যায় আসে। এর মাঝে অবনি, দিয়া, তৌফিক কাউকেই কিচ্ছুটি বলে নি। নিজের মনে মনেই সব ভেবে নিয়েছে সে। মাঝখানে কেটে যায় আরো দু থেকে তিন দিন।

আসলে কেউ নিজের জায়গায় থেকে অন্যের অবস্থা বা তার সিচুয়েশন কখনোই পরিমাপ করতে পারে না। যার সমস্যা একমাত্র সেই সাফার করে আর সেই বুঝতে পারে। ঠিক তেমনই হয়েছে আইরাতের সাথে। একদিনে নিজের মা আর পরিবার তো আরেক দিকে আব্রাহাম। কাকে রেখে কাকে চুস করবে। আইরাত তো বলে যে সে আব্রাহাম কে ভালোবাসে না তাহলে আজ কেনো নিলয়ের সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে তার বুক ফাটছে। কারণ কি! খুব বেশি খারাপ লাগছে। আইরাতের যখন থেকে বুঝার বয়স হয়েছে তখন থেকেই এই বিয়ে নামক জিনিস থেকে দূরে ভেগে এসেছে। বিয়ের নাম টা নিলেই কেমন যেনো লাগতো। আর এখন কিনা নিজেরই ফুপির ছেলের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসতে হচ্ছে তাকে।

এতোদিন শুধু মানুষ কে দেখে এসেছে যে ‘বিয়েতে মত নেই তবুও নিজের ওপর জোর খাটিয়ে বিয়ে করতে’। আইরাত আগে এগুলো দেখে ভাবতো যে হয়তো কিছুদিন পরই ঠিক হয়ে যাবে বা এমনি। কিন্তু না আজ বুঝতে পারছে যে নিজের সাথে নিজেরই বিরাট বড় এক যুদ্ধ করে তারপর নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করতে হয়। যদি বিয়েতে মত না থাকে তো। আর এক্ষেত্রে আসলে আইরাত সবার মন-কথা রাখতে গিয়ে বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছে। আজ বাড়ি ফিরে যখন অনামিকা কে বললো যে “মা আমি এই বিয়েতে রাজি আছি” ব্যাস তখন অনামিকার খুশি দেখে কে। তৎক্ষনাৎ সাবিলা কে ফোন দিয়েছে সে কি কথা। আর আইরাত মুখটা শুকনো করে দিয়ে নিজের রুমে এসে পরে। তখন থেকেই বিছানাতে দুহাটু ভাজ করে যে এক বসা দিয়েছে আর ওঠাওঠি নেই। সেই তখন থেকে বসে বসে এগুলোই চিন্তা করে যাচ্ছে। আইরাতের ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে অনামিকা তার রুমে আসে।

অনামিকা;; আইরু!
আইরাত;; হ্যাঁ
অনামিকা;; এদিকে আয় তো।
অনামিকা রুমের ভেতরে এসে পরে আর আইরাত দাঁড়িয়ে পরে বসা থেকে। অনামিকা হঠাৎ বেশ বড়োসড়ো একটা লেহেঙ্গা আইরাতের গায়ে মেলে ধরে। আইরাত নিজের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার অনামিকার দিকে তাকায়।
অনামিকা;; বাহহ দারুন মানিয়েছে তো। আমি যেমন ভেবেছিলাম তার থেকে হাজার গুণে বেশি ফুটে ওঠেছে।
আইরাত;; বিয়ে না ঘোরয়া ভাবে হচ্ছে!
অনামিকা;; হ্যাঁ
আইরাত;; তো এগুলা করা কি খুব দরকার?

অনামিকা;; ওমা বলিস কি করতে হবে না। ঘোরয়া তাই কি সাজবি না তুই।
আইরাত;; এখন প্লিজ এটা বলো না যে বাইরে থেকে মেয়েদের ডেকেছো তুমি আমায় সাজানোর জন্য।
অনামিকা;; আসলে আমি ডেকেছি।
আইরাত;; যেভাবে ডেকেছো সেভাবে ফিরিয়ে দাও। কোন দরকার নেই রঙ মেখে সং সাজার। আমি নিজে যতটুকু পারি ততটুকুই রেডি হবো।
অনামিকা;; আচ্ছা।

অনামিকা জিনিস গুলো সব হাত থেকে রেখে বাইরে চলে যেতে ধরে তবে আইরাত আবার তার হাত ধরে কিছুটা টান দেয়। অনামিকা পেছনে তাকায়। দেখে আইরাত আগে ছোট বেলা যেভাবে অনামিকার কনিষ্ঠা আঙুল ধরতো ঠিক সেভাবেই ধরে আছে। অনামিকা হাতের দিকে তাকিয়েই হেসে দেয়। আইরাতের দিকে ঘুরে তাকায়।
অনামিকা;; কিছু বলবি?
আইরাত;; দম আটকে আসছে আমার।
অনামিকা;; কেনো শরীর খারাপ লাগছে?
আইরাত;; কেমন এক দমবন্ধ অনুভূতি।
অনামিকা;; ও কিছু না। ঠিক হয়ে যাবে।

অনামিকা আইরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে এসে পরে। আর আইরাত বিছানাতে বসে দুহাতে মাথা চেপে ধরে। আব্রাহামের কথা খুব বাজে ভাবে মনে পরছে। তার আর আব্রাহামের একসাথে বাইরে যাওয়া, আব্রাহামের তাকে ধমক দেওয়া, তার আইরাতের গলাতে আইসক্রিম রেখে খাওয়া, রাগি চোখ, এক নেশা লাগানো দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকা, ভ্রু নাচানো, আইরাতের কপালে গালে হুটহাট চুমু বসিয়ে দেওয়া আরো না জানি কতো কি। আইরাতের অজান্তেই আব্রাহামের সাথে তার দিনকে দিন হাজারো স্মৃতি জড়ো হয়ে গেছে। ফোন বেজে ওঠে। আইরাত তাকিয়ে দেখে ফোনের স্ক্রিনের ওপর নিলয়ের নাম ভেসে ওঠেছে৷ আইরাত কয়েক মূহুর্তের জন্য একেবারে থমকে যায়। মাথায় আব্রাহামের চিন্তা আর এদিকে নিলয়ের ফোন। এ কোন এক দোটানায় পরে গেছে সে। ফোন দুবার বেজে কেটে যায়। তৃতীয় বারের মাথায় ফোন রিসিভ করে।

আইরাত;; হ্য হ হ্যালো।
নিলয়;; কিরে বউ ব্যাস্ত নাকি!
আইরাত;; চুপ করো (ধমক দিয়ে)
নিলয়;; _____________________
আইরাত;; এই নামে আমাকে ডাকবে না কখনো।
নিলয়;; আরে কিছু সময় পর তোর আর আমার বিয়ে আর এখন বলছিস যে বউ বলে ডাকবো না। তো কি বলে ডাকবো তুই-ই বল।
আইরাত;; কিছু সময় পর বিয়ে। বিয়ে এখনো হয়নি।
নিলয়;; হতে কতোক্ষণ।
আইরাত;; কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।
নিলয়;; কিছু কি হয়েছে নাকি এভাবে চটে আছিস কেনো?
আইরাত;; আমাকে আমার মা দশ দিন যাবত খাইতে দেয় নাই বুঝলা। তাই ক্ষুদায় পাগল হয়ে গেছি এখন দ্রুত ফোন কাটো নয়তো তোমাকে আস্তো কাঁচা চিবিয়ে খেতে আমার দু মিনিটও লাগবে না।
নিলয়;; এ্যাহ!

আইরাত ফোন কেটে দিয়ে বিছানার ওপর ছুড়ে মারে। পাশেই তাকিয়ে দেখে বিয়ের ওই একশ কেজি ওয়ালা একটা লেহেঙ্গা। এটা দেখে এখনই আইরাতের গরম লাগছে। যাই হোক এভাবেই বেশ সময় চলে যায়। সাবিলা এসে পরেছে, নিলয় ওদিকটার কাজ সেরে তারপরই আসবে। নিলয়ের সাথে হয়তো কাজিও আসবে। বেলা গড়িয়ে বিকেল হয়। বিয়ে সন্ধ্যায় আর আইরাত কে রেডি হতে বলে গিয়ে প্রায় দুঘন্টা আগে। কিন্তু আইরাত সবকিছু বাদ দিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে লেহেঙ্গার নিচের অংশ পরে ওপরে একটা শর্ট জেকেট পরে বসে আছে।

কেমন যে লাগছে দেখতে। নিচে লেহেঙ্গা ওপরে জেকেট। হাতভর্তি চুড়ি পরে ফোন ঘাটছে। আর ওদিকে অনামিকা দরজাতে জোরে জোরে চাপড়াচ্ছে। আইরাত মুখে বিরক্তির আভা এনে দরজার দিকে তাকায়। ফোন রেখে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায়। অনামিকা কথা বলছিলো নিচের দিকে তাকিয়ে। আইরাত দরজা মেলে দাঁড়ায়। আর অনামিকা তার আপাদমস্তক স্কেন করে।
অনামিকা;; একটু পরে বিয়ে আর এই কি হুলিয়া বানিয়ে রেখেছিস নিজের। অর্ধেক লেহেঙ্গা বাকি অর্ধেক জেকেট, হাতে চুড়ি। কি এগুলা?

আইরাত;; ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল বউ।
অনামিকা;; রাখ তোর ডিজিটাল। সামনে থেকে সর দেখি।
আইরাত সরে ভেতরে চলে যায়। আর অনামিকা গিয়ে আইরাত কে বাকি অর্ধেক রেডি করিয়ে দেয়। লাল-মেরুন কালারের কম্বিনেশনে কারুকাজ করা একটা টকটকে বড়ো লেহেঙ্গা। পেছনের দিকে কিছুটা ব্যাকলেস। দুহাত ভর্তি লাল চুড়ি। চুলগুলো বেধে দিয়ে খোপা করে তাতে ভারি ফুলের গাজরা দেওয়া গোল করে। মাথার ওপরে ওরনা বাধা। তার ওপর সাজ। অপ্সরী ❤️। আয়নার সামনে বসে আছে আইরাত।

অনামিকা;; দেখ তো তখন কেমন লাগছিলো আর এখন কেমন লাগছে!
আইরাত;; লিপস্টিক টা এমন নোনতা ক্যান। আমি তো খাইয়া ফেলমু।
অনামিকা;; বিয়ে হচ্ছে, তুই বড়ো হবি কবে?
আইরাত;; ধুর এতো বড়ো হইয়া কি হবো। এতো বড়ো হইয়া আজ পর্যন্ত কে বড়োলোক হইছে।
অনামিকা;; কিছুই বলার নেই আমার।
আইরাত;; ইশশ এত্তো গরম।
আইরাত তার লেহেঙ্গা বেশ খানিক উপরে তুলে পা দুটো টেবিলের ওপর রেখে দেয়। আরেক হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপাল মুছে নেয়।

অনামিকা;; আরে করছিস টা কি?
আইরাত;; ওমা আমি আবার কি করলাম?
অনামিকা;; কিচ্ছু মানিস না, একটু তো লিহাজ কর। বউ তুই।
আইরাত;; কেডায় কইছে, বিয়ে তো হয়নি এখনো।
সাবিলা;; ভাবি, ভাবি কোথায় তোমরা আইরাত কে নিয়ে নিচে নেমে এসো জলদি।
অনামিকা;; ওই দেখ ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে। এবার চল জলদি।

আইরাত সব ঠিকঠাক করে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরে। অনামিকা আইরাতের সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখে নিজের সাথে করে নিচে নিয়ে যায়। হলরুমে নিলয় এসে পরেছে। সেও পাঞ্জাবি পরেছে, ভালোই লাগছে। সাথে কাজিও রয়েছেন। আইরাত কে নিচে নামতে দেখে নিলয় সেদিকে তাকায়। চোখ যেনো সরাচ্ছেই না সে। একমনে তাকিয়ে আছে তো আছেই। যদিও তা আইরাত খেয়াল করেছে। মাথা তুলে দেখে নিলয় চোখ গোল গোল করে তাকে দেখছে এটা দেখে আইরাত দেয় এক ভেংচি কেটে। নিলয় তারপর মাথা নামিয়ে ফেলে।

অনামিকা আইরাত কে বসিয়ে দেয়। আইরাত আর নিলয় একইসাথে সোফাতে বসে আছে। আর সাবিলা-অনামিকা আরেকপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত-নিলয়ের সামনে ঠিক মাঝ বরাবর কাজি হাতে যাবতীয় সব কাগজপত্র নিয়ে বসে আছেন। দোয়া-কালাম যা পড়ার পরে নেয়। নিলয় কে কবুল বলতে বললে নিলয় কবুল বলে। সময় যত যাচ্ছে আইরাতের বুকের ধুকপুকানি যেনো ততই বেড়ে যাচ্ছে। এতো জোরে বুক ধুকপুকাচ্ছে যে মনে হচ্ছে হৃদপিন্ডটা ধপাস করে বাইরেই বের হয়ে পরবে। যেনো চারিদিকের সব মানুষ তার বুকের ধুকপুক ধুকপুক শব্দ টা শুনতে পারছে এমন। আইরাত তার চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে বাম হাত দিয়ে বুকের জায়গায় টায় হাল্কা ভাবে চেপে ধরে। জোরে জোরে কিছু দম নিয়ে আবার চোখের পাতা মেলে দেয়। আইরাত কিছুটা গলা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। অনামিকা গিয়ে আইরাতের পাশে তার কাধে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। ইশারাতে আইরাত কে জিজ্ঞেস করে যে সে ঠিক আছে কিনা। আইরাত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানায়। সামনে থাকা কাজি আবারও বলে ওঠে…

কাজি;; বলো মা ‘কবুল’।
ব্যাস এই কথা বলার সাথেসাথেই বাড়ির বাইরে থেকে কানের পর্দা ফাটানোর মতো বিকট আওয়াজ নিয়ে ঢাক-ঢোল বাজানোর শব্দ আসতে লাগে। এ যেনো শব্দ হয়েও শব্দ না। ভাগ্য ভালো এখানে কোন হার্ট প্যাসান্ট নেই নয়তো সোজা পরতো আর মরতো। এত্তো জোরে ঢাকের আওয়াজ কানের পোকা অব্দি নড়ে যাচ্ছে। বাড়ির ভেতরে সবাই নিজেদের দুহাত দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে কান চেপে রেখে দিয়েছে। কাজির অবস্থা খারাপ। উনি বেশ বয়স্ক মানুষ, বুকের পাশে হাত দিয়ে আছে। কেউ আর কিছু বলতে পারছে না। এতো শব্দ কিসের আর কেই বা এভাবে এই সময়ে এমন করে ঢাক-ঢোল পেটাচ্ছে তা জানার জন্য নিলয় উঠে গিয়ে যেই না ড্রইংরুমের দরজাতে যেতে ধরবে তখনই বাড়ির ভেতরে আব্রাহাম আসে উইথ সব ব্যান্ড-বাজা নিয়ে। কালো প্যান্ট পরে আছে, গ্রে কালারের শার্ট আর তার ওপরে কফি কালারের জেকেট, হাতা গুলো গুটানো। আব্রাহাম সোজা কথা নাচতে নাচতে ভেতরে এসেছে। বাড়ির ভেতরে পা রাখার সাথে সাথেই জোরে গান বেজে ওঠেছে…

“Mehendi laga ke rakhna, Doli saja ke rakhna, Lene tujhe oo gori aayenge teri shajnaa”
আব্রাহাম গানের লাইন গুলো যেনো আইরাত কেই ডেডিকেট করছে। তার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেখিয়ে লিপসিং করছে। আর আইরাত তো আব্রাহাম কে দেখে এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরে। যেনো তার পুরো শরীরে ভূমিকম্প হচ্ছে। রীতিমতো থরথর করে কাপাকাপি করছে সে। আইরাত সত্যি বেশ ঘাবড়ে গেছে আব্রাহাম কে দেখে। এখন এই মুহুর্তে এখানে সে আব্রাহাম কে কখনো আশা করে নি।

উল্টো আব্রাহাম এলো তো এলোই তাও আবার এই লুকে, টোটালি আনএক্সপ্যাক্টেড। বাকি সবাই যেনো এইসব কান্ড দেখে সোজা আকাশ থেকে টপকে পরলো। সবাই হা করে কপাল ভাজ করে তাকিয়ে আছে। আর কাজি বেচারা এগুলো তামাশা দেখছে। আইরাত মাথা ঘুরে পরে যেতে ধরলে সোফার এক কোণা ধরে কোন রকমে দাঁড়িয়ে পরে। অতঃপর গান শেষ হলো। সবাই থেমে গেলো। আব্রাহাম ঢাক-ঢোল বাজানো সব হাতের ইশারাতে থামিয়ে দিতে বললো আর তাদের বাইরে চলে যেতে বললো। তারা তাই করে। এবার আব্রাহাম এক ক্ষীণ দম ছেড়ে নিজের জেকেটের কলার ঝেড়ে আইরাতের দিকে ঘুরে তাকায়। খুব সুন্দর করে একটা হাসি দেয় আইরাত কে আপাদমস্তক দেখে।

আব্রাহাম;; হে মাই বিউটিফুল বেবিগার্ল!
আইরাত;; আলা লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ,, আলা লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
যত দোয়া-দরুদ পারতো সব একনাগারে পড়া শুরু করে দিয়েছে আইরাত। এইসব দেখে আর মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে না থেকে নিলয় বলে ওঠে…
নিলয়;; আপনি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী নিশ্চয়ই!
আব্রাহাম;; একদম।
নিলয়;; তো জানতে পারি কি যে এইসব কিছুর মানে কি। বলা নেই কওয়া নেই এভাবে হুট করে কারো বাড়িতে এসে এগুলো কি। আপনার মতো এতো বড়ো আর এতো হাই পারসোনালিটির মানুষের কাছে এটা মোটেও আশা করা যায় না।
আব্রাহাম;; কুল ব্রো। বাসা টা যখন নিজেরই শশুড় বাড়ি হয় তখন এখানে আসার জন্য অবশ্যই কারো পারমিশন নিতে হয় না।

সাবিলা;; মানে কি?
আব্রাহাম;; এই যে কন্যা (আইরাতের উদ্দেশ্যে)।
আইরাত ভয়ার্ত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়৷
আব্রাহাম;; আরে বলো ওদের যে আমি তোমার কে হই আর এই বাড়ি আমার কি!
আইরাত;; আম, আমি নিজেই কিছুই বুঝতে পারছি না যে আপনি ঠিক কিসের কথা বলছেন।
আব্রাহাম;; কি বলো! আইরাত বেবিগার্ল এইসব আজাইরা প্যাচাল বাদ দিয়ে সত্যি টা বলে দাও না ওদের।
অনামিকা;; কি হচ্ছে কি এইসব? আইরাত

আইরাত;; মা আমি নিজেও বুঝতে পারছিনা যে উনি কিসের কথা বলছেন।
আব্রাহাম;; আচ্ছা ঠিকআছে কাজি সাহেব আপনিই বলেন তো একজন মেয়ে বিবাহিত হওয়া সত্বেও কি আরেকজন কে বিয়ে করতে পারবে?
কাজি;; না কখনোই না। এক নারীর একসাথে দু-দুজন স্বামী থাকতেই পারে না।
আব্রাহাম;; হুমম তাহলে এই বিয়েও হবে না। আর এই বিয়ে অবৈধ। কেননা আইরাত অলরেডি ম্যারিড।
অনামিকা;; কিসব যা তা বলছো তুমি। মানে কি এইসবের। কিসের বিয়ে কিসের স্বামী। আইরাতের তো আজকে বিয়ে।
আব্রাহাম;; মোটেও না শাশুড়ী আম্মু। আপনার মেয়ে অলরেডি আমার বিয়ে করা বউ।

আইরাতের মাথায় পুরো আকাশ ভেঙে পরে আব্রাহামের এই কথা শুনে। অনামিকা অবিশ্বাস্য চোখে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত তেড়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়।
আইরাত;; সমস্যা কি আপনার। কি সব যা তা বলছেন। কেনো আমাকে দোষী বানাচ্ছেন বলুন তো। আমাদের বিয়ে কখন হলো? কবে হলো? কীভাবে সম্ভব এটা?
সাবিলা;; ভাবি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
অনামিকা;; আইরাত কি হচ্ছে এগুলো?
আইরাত;; মা আমি সত্যি কিছু জানি না।
আব্রাহাম;; আহা, শাশুড়ী আম্মু আমি সব বুঝিয়ে বলছি যদিও এখানে এতো বুঝাবুঝির কিছুই নেই। খুবই সোজা। আইরাত আমার বিয়ে করা একমাত্র বউ এইতো।

আব্রাহামের কথা বলার ধরন দেখে অনামিকার সেইদিন আইরাতের রুমে পাওয়া সেই চিঠির কথা মনে পরে গেলো। সেখানেও এই শাশুড়ী আম্মু বলে তাকে সম্মোধন করা হয়েছিলো। নিলয় এবার তেড়ে বলে ওঠে…
নিলয়;; আপনি যে এতো সিওর দিয়ে বলছেন আইরাত আপনার বউ। তা প্রমাণ কি, কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে?
আব্রাহাম;; অবশ্যই আমি প্রমাণ ছাড়া কিছুই করি না আর বলিও না।
আব্রাহাম তার আর আইরাতের বিয়ের কাবিননামা টা নিলয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; এই দেখুন আশা রাখছি আমাদের বিয়ের এই কাবিননামা টা দেখলেই বুঝবেন। প্রমাণের জন্য এটাই এনাফ। আর হ্যাঁ আমি একজন অতিমাত্রায় বউ পাগল জামাই হয়ে কি করে আমার বউ কে আরেকজনের হতে দিবো বলুন! (আইরাতের দিকে তাকিয়ে)

আইরাতের চোখে পানি জড়ো হয়ে গেছে। আব্রাহাম যে নিলয়ের হাতে কাবিননামা দিলো তা দেখেই আইরাত অবাকের চরম পর্যায়ে। আরে যখন বিয়েই হলো না তখন এই কাবিননামা টা কোথা থেকে এলো। নিলয় যেনো ভেঙে গিয়েছে তাদের বিয়ের এই কাবিননামা টা দেখে। আইরাত কে সে ভালোবাসতো তো কষ্ট তো হবেই। পুরো চেক করে দেখে যে কাবিননামা টা একদমই আসল। এমনকি এখানে আব্রাহাম-আইরাতের উভয়েরই লিগ্যাল সাইন রয়েছে। তা দেখে নিলয় অবাক হয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। নিলয়ের হাত থেকে সাবিলা কাবিননামা টা নিয়ে নেয় ছো মেরে। সেও দেখে যে এটা সত্যি।

সাবিলা;; ছিঃ আইরাত ছিঃ তোর থেকে এটা কখনোই আশা করি নি আমরা।
অনামিকা সাবিলার হাত থেকে কাবিননামা নিয়ে দেখে। আইরাতের করা সাইন টা যেনো চোখে বাধার মতো। সব দেখে অনামিকা আইরাতের কাছে এগিয়ে যায়। আইরাতের দিকে কাগজ টা এগিয়ে দেয়। আইরাত কাপাকাপা হাতে তড়িঘড়ি করে কাবিননামা টা হাতে নেয়। আইরাতের পায়ের নিচ থেকে জমি সরে গেছে কাগজে নিজের করা সাইন দেখে। প্রচুর মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু মনে হচ্ছে না যে সে কখন এখানে সাইন করেছিলো।

নিজের মস্তিষ্কে আরো একটু জোর দিলে আইরাতের মনে পরে যে আব্রাহাম তাকে যখন নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলো তখন আব্রাহাম তাকে দিয়ে একটা কাগজে সাইন করিয়েছিলো। এটা সেই কাগজই হবে না তো! তাহলে কি, তাহলে কি সেদিন রাতেই তাদের বিয়ে হয়ে গেছে নাকি!! এটা ভেবেই আইরাত টলমলে চোখ নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। নিজের সামনে অনামিকার দিকে তাকায়। অনামিকা যেনো এটা নিজের মেয়ের কাছ থেকে কখনো আশাই করে নি। তবে যা কখনো আশা করেনি তা আজ করে দেখিয়ে দিয়েছে।

আইরাত;; মা সত্যি বিশ্বাস করো আমি আ…….
অনামিকা;; তোকে আমি বারবার হাজার বার জিজ্ঞেস করেছি যে আইরাত তুই কাউকে ভালোবাসিস কিনা! কিন্তু তুই প্রত্যেক বার না বলেছিস আমায়। এটা তাহলে কি আইরাত। তুই কবে বিয়ে করেছিস তাও আবার আমাদের কাউকে না জানিয়েই। তুই এতো বড়ো হয়ে গেছিস যে নিজের মা কেও এতো বড়ো ঘটনা টা জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। আমাকে আগেই বলে দিতি তুই তাহলে এইসব বিয়ে আর আয়োজন এগুলো করতামই না। তুই আগে থেকেই বিয়ে করেছিস তাহলে নিলয়ের সাথে এই বিয়েতে রাজি কেনো হলি?

আইরাত;; মা আমি কেনো এমন করবো। আমি তোমায় না জানিয়ে বিয়ে করবো ভাবলে কি করে। আর বিয়ে করার পরেও নিলয় ভাইয়ের সাথে বিয়ে। এটা আমি কখনোই করতে পারি না।
সাবিলা;; তুই করতে পারিস না তাহলে এগুলো কি। তুই এতো টা নিচ এতোটা চরিত্রহীন বের হবি আগে জানতাম না। আমার ভাইয়ের মেয়ে তুই হতেই পারিস না।

আব্রাহাম;; ব্যাস, মুখ সামলে। ভুলে যাবেন না আইরাতের হাসবেন্ড এখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমার আইরাত কে কেউ কিছু বললে আমি না-ই তার বয়সের লিহাজ করবো আর না-ই সম্পর্কের। আপনি নিজের ছেলেকে সামলান তাই ভালো হবে। আইরাত কে ভুল করেও জীবনে কিছু বলতে আসবেন না। বিয়ে করেছে আমাকে কোন অপরাধ করেনি। এতো ওভার রিয়েক্টের দরকার নেই এখানে। বিয়েরই তো আসর এখানে তো বিয়েই হবে তবে তা আমার সাথে।
আইরাত;; করবো না আমি বিয়ে। আমি কবে বিয়ে করলাম আমি নিজেই জানি না। কি হচ্ছে এইসব। আমাকে সবাই ভুল ভাবছে। যত দোষ নন্দ ঘোষ। আমি কিছু করি নি। আরে আমি জেনে শুনে কেনো আব্রাহাম কে বিয়ে করবো।
অনামিকা;; তাহলে তোর সাইন কেনো কাবিননামায়? কী করে এলো?

আইরাত;; আমি জানি না।
আব্রাহাম;; আইরাত আমার সাথেই ছিলো সেই তিনদিন। যখন আইরাত নিখোঁজ ছিলো, আমিই আইরাত কে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম রাতে৷
নিলয়;; কিহ?
সাবিলা;; মানে আইরাত একটা ছেলের সাথে তিনদিন যাবত বাড়ির বাইরে ছিলো!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো (রাগে লাল হয়ে)

সাবিলা আর কিছু বলে না। তবে নিলয় সত্যি খুব হার্ট হয়েছে। অনামিকা সোফাতে বসে পরে। তার মানে আইরাত মিথ্যা বলেছে। আইরাত তাদের বলেছিলো কাজের ফলে শহরের বাইরে ছিলো সে৷ আইরাত তার মাথা নিচু করে দুহাতে লেহেঙ্গা খামছে ধরে নীরবে চোখের পানি ফেলছে। কেননা এটা সে অস্বীকার করতে পারবে না। এটা সত্য। সে তো আব্রাহামের সাথেই ছিলো, এটা তো সে সবার থেকে লুকিয়েছেই। মিথ্যা বলেছে। সে জানতো না যে এভাবে একদিন সব সত্য সামনে এসে পরবে তা নাহলে আইরাত আগে ভাগেই সবাই কে সব জানিয়ে দিতো। আব্রাহামের সাথে তার গেস্ট হাউজে থাকা অর্থাৎ আব্রাহাম যে তাকে আঁটকে রেখেছিলো এটা সত্যি হলেও বিয়ে কখন করলো তা আইরাত জানে না, অজানা তার।
কাজি;; বিয়ে কি তাহলে হবে না? আর বিয়ে কাদের পড়াবো?

আব্রাহাম;; আরে আরে বলেন কি কাজি সাহেব। বিয়ের আসরে বিয়ে হবে না এটা কি হয় নাকি। অবশ্যই বিয়ে হবে। আর আমাদের হবে।
আব্রাহাম আইরাতের কোমড় ধরে সাইড থেকে নিজের দিকে টেনে আনে। তারপর আইরাতের হাত ধরে নিয়ে গিয়ে কাজির সামনে সোফাতে বসে পরে। আব্রাহাম নিজের বাম হাত দিয়ে আইরাতের ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। এতে আইরাতের হাতের কিছু চুড়ি ভেঙেও গিয়েছে।

ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে কিন্তু কোন লাভ নেই। আইরাত চলে যেতে ধরলে আব্রাহাম তাকে টান দিয়ে নিজের কাছে আবার বসিয়ে দেয়। সব শেষে কাজি আব্রাহাম কে কবুল বলতে বলে আব্রাহাম দেরি না করে বার তিনেক কবুল বলে দেয়। আইরাতের পালা এলে আইরাত যেনো তার ঠোঁটে তালা মেরে দেয়। এবার আব্রাহাম আইরাতের এই না না আর নিতে না পেরে জেকেট থেকে রিভলবার বের করে কাচের টেবিলের ওপর রাখে। তা দেখে আইরাত ভেজা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায়। বাকিদের কথা যেমনতেমন তবে রিভলবার দেখে কাজির অবস্থা ঢিলা হয়ে গেছে। সে কাপছে।
আইরাত;; আব্রাহাম প্লিজ…

আব্রাহাম;; তুমি চাইলেই তো আমায় আর এইসব ঝামেলা করতে হয় না বেবিগার্ল। কবুল বলে দাও না। নয়তো নিলয় কে মেরে ফেলতে আমি দু সেকেন্ড সময়ও নিবো না।
আব্রাহামের কথা শুনে সাবিলা চোখ বড় বড় করে তাকায়। আইরাত অনামিকার দিকে তাকায়। দেখে অনামিকা অপলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। উনি জানেন যে আইরাত এমন করার মতো মেয়েই না তবে এইসব প্রমাণ সব যেনো উলটাপালটা করে দিচ্ছে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে টান দেয়।

আব্রাহাম;; Now i”m gonna shoot, Babygirl!
আইরাত;; না না।
আব্রাহাম;; তাহলে জলদি কবুল বলো।
আইরাত;; ______________________
এখনো আইরাত কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে আব্রাহাম শূন্যে গুলি চালিয়ে দেয়। ঠাস করে শব্দ হয়। কাজি তো আল্লাহ আল্লাহ শুরু করে দিয়েছে।

সাবিলা ভয়ে শেষ। আর অনামিকা ঠাই বসে আছে। আইরাতের এক হাত এখনো আব্রাহামের আরেক হাতের মুঠোয়। আইরাতের এতো সুন্দর মুখে চোখের পানিগুলো মুক্তোর ন্যায় গড়িয়ে পরে। আব্রাহাম রিভলবার হাতে নিয়েই তার অশ্রুবিন্দু গুলো মুছে দেয়।
আব্রাহাম;; জানপাখি কবুল বলো।
আইরাত এবার প্রায় হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েই কবুল বলে।
আইরাত;; কবুল! কবুল! কবুল!
কাজি;; আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।
কাজি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে নয়তো আব্রাহাম কাকে রেখে কাকে মেরে বসতো আল্লাহ মালুম। কাজি মেকি হেসেই বলে…

কাজি;; আমি আমার বাপের জন্মেও এমন জামাই দেখি নি।
আব্রাহাম;; দেখবেন কি করে আপনার বাপের জন্মে তো আমারই জন্ম হয়নি।
আব্রাহামের কথা শুনে কাজি না চাইতেও হেসে দেয়। সবই শেষ হয় তবে এবার নিলয় একবার আইরাতের দিকে কষ্টভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে সোজা বাসা থেকে চলে আসে। সাবিলাও নিলয়ের পেছন পেছন চলে যায়। কাজিও বিদায় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। আইরাত এবার ঝটকা দিয়ে নিজের হাত আব্রাহামের থেকে ছাড়িয়ে হাটু বাজ করে অনামিকার কাছে চলে যায়। কেঁদে কেঁদে বলে ওঠে…

আইরাত;; মা মা ও মা বিশ্বাস করো আমি উনাকে আগে বিয়ে করি নি। ওই কাবিননামায় কি করে সাইন এলো জানি না। সত্যি আই সুইয়ার মা। আমি জানি না।
অনামিকা;; বলে লাভ নেই। আগে না হোক এখন তো তোদের বিয়ে হয়েই গেলো। ব্যাপার শুধু এইটুকু যে আমি সাবিলার কাছে ছোট হলাম।
আইরাত;; মা।

অনামিকা;; তুই আমার একটাই মেয়ে। তাও খুব কষ্টের। বিয়ের আট বছরের মাথায় তুই হয়েছিস। আমার নাড়ি ছেড়া ধন। তোকে আমি চিনি। আব্রাহাম তোকে ভালোবাসতো তাও আমি জানতে পেরেছি কিন্তু তোদের যে বিয়ে হয়ে গেছে তা জানতাম না। তাহলে সাবিলাকে আমি কথাই দিতাম না।
আইরাত;; আই এম সরি মা।
অনামিকা আইরাতের থোতাতে হাত দিয়ে খানিক হাসে। অনামিকা উঠে পরে। আইরাতের বাহু ধরে নিয়ে আব্রাহামের কাছে যায়। আইরাত কে আব্রাহামের দিকে দিয়ে বলে…
অনামিকা;; ওকে সবসময় খুশি রেখো বাবা!

আব্রাহাম;; আজকের পর থেকে আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আইরাতের চোখে দুঃখের পানি আমি আসতে দিবো না। আজই শেষ। দুনিয়ার সব খুশি আমি আইরাত কে দিবো। শুধু একটাই কথা ওকে আমার হয়ে থাকতে হবে আজীবন। আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়া তো দূর তার চিন্তা মাথায় আনলেও আমার থেকে খারাপও আর কেউ হবে না। বড্ড বেশিই ভালোবাসি আমি শাশুড়ী আম্মু আপনার এই মেয়েকে।
অনামিকার কেনো যেনো আব্রাহামের কথা গুলো শুনে বুকে শান্তি এসে পরে।
অনামিকা;; নিয়ে যাও ওকে।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ১৭+১৮+১৯+২০

অনামিলা এই বলে আইরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়। আর আইরাত কিছু বলার আগেই আব্রাহাম তার বাহু চেপে ধরে টেনে টেনে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে। আর আইরাত কেঁদে কেঁদে মা মা বলেই যাচ্ছে। “আমি যাবো না” বললেই আব্রাহাম এমন ধমক দেয় যাতে আইরাতের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে।
আব্রাহাম;; শাশুড়ী আম্মু কে তো কোন রকমে বলে এলাম একবার বাড়ি আসো জান। তোমার হাল একেবারে নাজেহাল বানিয়ে তারপর ছাড়বো আমি। মনের কথা মনেই আছে আজ আমার।

আইরাতের মাঝে ভয় আরো চেপে বসে। বেশি নড়াচড়ার ফলে আব্রহাম আইরাত কে এক টান দিয়ে নিজের কোলে তুলে নেয়। আইরাত বাইরে বের হয়ে দেখে অয়ন আর কৌশলও দাঁড়িয়ে আছে। মানে আব্রাহামের সাথে এরাও এখানে এসেছে। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আবার আগের মতো ঢাক-ঢোল বাজানো শুরু হয়। কান ঝালাপালা। আইরাত কে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আব্রাহাম কৌশলের দিকে নিজের আরেকটা গাড়ির চাবি কিছুটা ঢিল দেয়। কৌশল ক্যাচ ধরে।
আব্রাহাম গাড়িতে উঠে বসে। দেখে আইরাত তার মুখটাকে একদম বাংলার পাঁচ বানিয়ে রেখে দিয়েছে।

আব্রাহাম;; “বিবিজান, চলো শশুড় বাড়ি”।
এই বলেই আব্রাহাম তার আইরাত কে নিয়ে সাই করে চলে যায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ২৪+২৫+২৬

2 COMMENTS

  1. Apu,নেশাক্ত ভালোবাসার সব পাঠই বলবো অনেক অসাধারণ হয়ছে।ধন্যবাদ তামান্না আপু।etar porer part gulo den please.just awesome story.i will read it.

  2. এটা কি হলো এর পরের পার্ট গুলো তো সিজন ১ এর পার্ট গুলোর মতো আসে ??

Comments are closed.