নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮+২৯+৩০

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ২৭+২৮+২৯+৩০
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপর পাশ থেকে আব্রাহামের কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল
আইরাত;; হুমম
আব্রাহাম;; কি করছো?
আইরাত;; মুড়ি খাই।
আব্রাহাম;; ফাজলামি বাদ দিয়ে বলো।
আইরাত;; বসে আছি।
আব্রাহাম;; আম্মু কেমন আছে?
আইরাত;; অনেক ভালো। তবে আপনাকে কেনো সাথে করে নিয়ে এলাম না তার জন্য আমায় বকেছে। আপনার দোষ সব কেনো এলেন না আপনি?

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল আমার কিছু কাজ ছিলো তাই। সমস্যা নেই পরে আসা যাবে তো।
আইরাত;; আচ্ছা শুনুন।
আব্রাহাম;; বলো।
আইরাত;; আব…না মানে বলছিলাম কি যে..
আব্রাহাম;; হুমম বলো।
আইরাত;; আসলে বলছিলাম কি যে আজকের দিনটা আমি এখানেই থেকে যাই প্লিজ!
আব্রাহাম কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকে৷
আব্রাহাম;; আচ্ছা।
আইরাত;; সত্যি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; আচ্ছা তাহলে রাখি।
আব্রাহাম;; হুমম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। সে আসলে অফিসে বসে আছে। হাতে একটা গ্লোব নিয়ে ঘোরাতে লাগে। আর ওদিকে আইরাত দিয়া-অবনি-তৌফিক কে ফোন করে কাউকে কিছুই না বলেই সোজা তার বাসায় চলে আসতে বলে। ঘন্টা খানিক পর তারা এসেও যায়। আইরাত আর অনামিকা মিলে টেবিলে খাবার সার্ভ করছিলো তখনই হলরুমের দরজা দিয়ে তারা আসে।
দিয়া;; কিরে এতো জরুরি তলব কেনো?
অবনি;; তোর জন্য আমার আর তৌফিকের অফিস থেকে দ্রুত আসতে হলো।
আইরাত দুহাত কোমড়ে ঠেকিয়ে বলে।
আইরাত;; এসেছিস তো এবার চুপ করে বোস।
তৌফিক;; কিন্তু হয়েছে কি?
অনামিকা;; বিয়ে।
দিয়া;; বিয়ে মানে?
অবনি;; কার বিয়ে আন্টি?

আইরাত একটা মেকি হাসি দিয়ে আস্তে করে নিজের হাতটা ওপরে তোলে। সবার নজর যায় তার দিকে। তৌফিক ফাটা চোখে তাকিয়ে থাকে। দিয়া ধপ করে সোফাতে বসে পরে। আর অবনি বুকের বা পাশে হাত রেখে দেয়। সবার রিয়েকশন দেখে আইরাত দাঁত গুলো বের করে দেয়।
দিয়া;; তোর আসলেই বিয়ে হয়ে গেছে?
আইরাত;; উপায় ছিলো না আর কোন।
অবনি;; একটা বার বললি না?
তৌফিক;; আরে আগে কেউ এটা বল যে বিয়ে কার সাথে হলো? কে? নাম কি? কি করে? কোথায় থাকে?
আইরাত;; আব্রাহাম।

চমকের ওপরে চমক। এখন অবনি সত্যি সত্যি মাথা ঘুরে পরে যাবে। দিয়ার যেনো সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আর তৌফিক টেবিলে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেয়ে ফেলে।
দিয়া;; আফা কীভাবে কি হলো যদি সবকিছু বলে আমাদের একটু উদ্ধার করিতেন!
আইরাত;; বেসিক্যালি বিয়ের কথা আসলে বিয়ে হয়েই যাচ্ছিলো নিলয় ভাইয়ার সাথে কিন্তু তখন আব্রাহাম এসে পরে। তারপর তো যা হওয়ার হলোই। অতঃপর বিয়ে।
অবনি;; কবে হলো এইসব?
আইরাত;; বেশি না গতকালই।
দিয়া;; আর এখন বলছিস এইসব!
আইরাত;; অবস্থা টাই এমন ছিলো। কি থেকে কি করতাম মাথায় কিছুই আসছিলো না তাই আর তোদের কাউকে জানাতে পারি নি রে সরি।
দিয়া;; এখন তোর সরি তুই ই রাখ। কতো প্ল্যান ছিলো যে তোর বিয়েতে এটা করবো ওটা করবো।
তৌফিক;; সব জলে গেছে।
অবনি;; এক্কেবারে।
আইরাত;; আচ্ছা সরি তো।

দিয়া;; হয়েছে হয়েছে থাক আর বলতে হবে না। জামাই নিয়া তুই থাক সুখে, আগুন জ্বলুক আমাদের বুকে।
আইরাত;; এহহহহ। শোন আমার পক্ষে সম্ভব হলে না আমি এখনই আব্রাহামের থেকে দূরে এখানে বা অন্য কোথাও চলে যাই। কিন্তু তা তো আর পারছি না। ঠ্যালায় পরে বিয়ে টা করতে হয়েছে আমার নয়তো, নয়তো আমি বিয়ে করতাম তাও আবার উনার মতো সাইকো কে। আরে ভাই জীবন তেজপাতা বানায় ফেলবো আমার।
অবনি;; চুপ কর তোকে যে পরিমাণ ভালোবাসে আব্রাহাম স্যার বলার বাইরে।
দিয়া;; কিসের স্যার এখন থেকে দুলাভাই ডাকবি।
অবনি;; যাক অবশেষে ক্রাশ কে দুলাভাই ডাকার ভাগ্য হলো।
আইরাত;; চুপ কর সব।
অবনি;; জ্বলে?

আইরাত;; চড় খাবি কইলাম। খাবার খেতে আয়। বিরিয়ানি রান্না করেছে আম্মু।
সবাই একসাথে খেতে বসে। খেতে বসেও যেনো দিয়া অবনি আর তৌফিক আইরাত কে পঁচানোর কোন কৌশল ছাড়ে নি। আচ্ছা মতো ধুয়ে দিয়েছে।
খাওয়া শেষে তারা সবাই প্ল্যান করে বাইরে থেকে ঘুরে আসবে। অনামিকা আর না বলে না, যেতে দেয়। চারজন বাইরে গিয়ে ইচ্ছা মতো আইসক্রিম ফুচকা যা পারে সব খেয়ে এসেছে। ঘুরাঘুরি শেষ হলে ওদিক দিয়ে দিয়া অবনি আর তৌফিক চলে যায়। আর এদিকে আইরাত তার বাসায় এসে পরে। আইরাতের বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত-ই হয়ে গেছে। বাসায় গেলে অনামিকা দরজা খুলে দেয়।
অনামিকা;; অনেক তো ঘুরাঘুরি হলো এবার যা তোর রুমে ফ্রেশ হয়ে নে।
আইরাত;; হ্যাঁ যাচ্ছি।

আইরাত নিজের রুমে চলে যায়। তবে রুম বেশ অন্ধকার জানালা খোলা সেখান দিয়েই আবছা আলো আসছে। আইরাত গিয়ে জানালার পর্দা গুলো আরো একটু মেলে দেয়। বেশ গরমও লাগছে তাই হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুখটা একটু মুছে এক ক্ষীণ দম ছাড়ে। নিজের ওপর থেকে ওরনা টা খুলে এক্সট্রা এক সোফার ওপর ছুড়ে ফেলে দেয়। গরমে আলু সিদ্ধ হয়ে গেলো পুরো। তবে আইরাত যেই না পেছনে ঘুরবে তখনই একটা কালো অবয়ব কে দেখে ভয়ে গলা ছেড়ে দিয়ে দেয় এক চিৎকার। তবে তা বেশি একটা দূর যেতে পারে নি তার আগেই একটা হাত এসে তার মুখ চেপে ধরেছে। এবার রুমে আলো জ্বলে ওঠে। আইরাত দেখে এই আব্রাহাম। তাকে দেখে আইরাত বেশ অবাক। আব্রাহাম এখানে কখন এলো! অনামিকা নিচ থেকেই আইরাত কে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করে…

অনামিকা;; কিরে কি হলো? চিল্লাচ্ছিস কেনো?
আইরাত;; ন না না কিছু না। আ আস আসলে আমি দেখছিলাম যে আমার রুমে চিল্লালে কেমন লাগে তাই আর কি।
অনামিকা;; পাগল।
আইরাত কিছুটা রেগেই আব্রাহামের দিকে তাকায়।
আইরাত;; আপনি এখানে?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তো!
আইরাত;; কখন এলেন? আমাকে বললেন না কেনো যে আপনি আসবেন? আর কেনোই বা এলেন আমি না বললাম যে আজ থাকবো।
আব্রাহাম;; এসেছি বেশি না মাত্র ত্রিশ মিনিটের মতো হবে।
আইরাত;; আম্মু জানে?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; কিন্তু কই আমাকে তো কিছুই বললো না?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বলেনি কারণ আমি বলতে বারণ করেছিলাম তাই।
আইরাত;; কিন্তু কেনো?
আব্রাহাম;; সারপ্রাইজ।
আইরাত;; আপনার এই সারপ্রাইজ আমার জান-ই নিয়ে নিচ্ছিলো।
আব্রাহাম;; এতো ভীতু কেনো তুমি?
আইরাত;; আমি ভীতু না এভাবে হুট করেই আচমকা কেউ কারো সামনে আসলে মানুষ এমনিতেই ভয় পাবে বুঝেছেন। এবার বলেন আপনি এখানে কেনো?

আব্রাহাম;; আরে বিয়ে করেছি ঠিক করে একদিনও হয় নি। এখনই বউ ছাড়া থাকা যায় নাকি। আর তোমাকে আজ নিয়ে এসেছি আম্মুর সাথে দেখা করানোর জন্য কিন্তু তুমি তো বাপের বাড়ি পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলে। এমন তো হয় না তাই না। তাই নিজেই চলে এলাম। আর আমি তোমাকে ছাড়া থাকবো। ইম্পসিবল। আমি পারবো না।
আইরাত;; একদিনের জন্য শুধু মায়ের কাছে এসেছি আমি, হারিয়ে তো যাই নি।
আব্রাহাম;; হারিয়ে যাবে কোথায়? কতো শত বার ধরে ধরে এনেছি। তাই এবার গিয়ে দেখো এবারও ধরে আনবো।
আইরাত;; বুঝলাম। এবার সরুন।

আব্রাহাম সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আইরাতের দিকে। আইরাত বুঝে যে তার ওরনা নেই। উল্টো ঘুরে চলে আসতে নিবে কিন্তু তখনই আব্রাহাম তার বাহু ধরে নিজের কাছে আনে। বিনাবাক্যে আইরাতের মাথার পেছনে চুলের ভাজে নিজের হাত ডুবিয়ে দিয়ে তার ঠোঁট দুটো আকড়ে ধরে। আইরাত শুধু চোখ বন্ধ করে আব্রাহামের বুকে ঠেলতে থাকে তবে যেই লাউ সেই কদু। কোন লাভ নেই। আব্রাহাম তাকে নিজের সাথে আরো আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। বেশ কিছু সময় পর আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দেয়। আইরাত মাথা নামিয়ে রেখে দিয়েছিলো তখন আব্রাহাম হঠাৎ বলে…
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল, দেখো দেখো তোমার এখানে কি!
আইরাত মাথা তুলে তাকায়। আব্রাহামের কথায় বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পরে।

আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; এই যে এখানে এখানে।
আব্রাহাম আইরাত কে তার থোতার দিকে ইশারা দেয়।
আইরাত;; আরে কোথায়?
আব্রাহাম আইরাতের দিকে বেশ ঝুকে পরে।
আব্রাহাম;; এইযে এখানে।
আব্রাহাম ঝুকে তার হাত দিয়ে আইরাতকে দেখিয়ে দেওয়ার ছলে টুক করে তার গালে একটা চুমু বসিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; কিছুই লেগে নেই। শুধু কিস দেওয়ার ছিলো এই যা।
আইরাতের এই মূহুর্তে হাসি আসলেও কোন রকমে তা দমিয়ে নেয়৷ এভাবেই রাতের সময় টুকু যায়। রাতে শুতে এলে আইরাতের কি কান্ড। আব্রাহাম বেডে শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটছে আর আইরাত হাতে একটা চাদর আর একটা বালিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আব্রাহাম;; কি হলো এসো ঘুমিয়ে পরো। কাল সকালে যেতে হবে।
আইরাত;; আমি, আমি কোথায় শুবো?
আব্রাহাম;; আমার ওপরে।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; আরে অবশ্যই আমার পাশে। এসো।
আইরাত;; শুনুন আমি আম্মুর কাছে গেলাম।
এই বলেই আইরাত যেতে ধরে।
আব্রাহাম;; এই মেয়ে! (গম্ভীর গলায়)
আইরাত থেমে পরে৷
আব্রাহাম;; মাইর না খাইতে চাইলে সুন্দর করে পাশে এসে ঘুমাও।
আইরাত;; আমি এখানে থাকতে পারবো না।
আব্রাহাম;; কেনো?
আইরাত;; আমি আলাদা থাকবো।
আব্রাহাম;; কেনো? (রেগে)
আইরাত;; না মানে এমনি। আচ্ছা আপনি বেডে ঘুমিয়ে পরুন আমি সোফাতে ঘুমাই।

আব্রাহাম কিছু বলে না শুধু রেগে এক সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আইরাতের দিকে। কিন্তু আইরাত তা এড়িয়ে সোফাতে বালিশ টা রেখে তাতে শুয়ে পরে নিজের ওপরে চাদর টা মেলে নেয়। তারপর বুকে তা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে। আব্রাহামের মেজাজ তো পুরোই চটে গিয়েছে। সে উঠে গিয়ে কোন কথা না বলে কিছু একটা খুঁজতে লাগে। আর কিছু সময় পর পেয়েও যায়। আসলে টিকটিকি আর কি। বেশ সময় খোজাখুজি করার পর দুটো টিকটিকি পেয়েছে।

কাচের একটা বয়ামের ভেতরে তা তুলে নিয়েছে৷ তারপর বয়ামের মুখটা খুলে দিয়ে আস্তে করে আইরাতের সামনে সোফাতে রেখে দেয়। আব্রাহাম তারপর আবার আস্তে করে গিয়ে নিজের জায়গায় বসে ফোন ঘাটতে লাগে। এমন একটা ভাব যেনো সে কিছুই করে নি, কিছুই জানে না। নিজের হাতে কিছু একটার অস্তিত্ব টের পায় আইরাত। কেমন যেনো একটা অস্বাভাবিক লাগছে। আর না পেরে চোখ মেলে তাকায়। নিজের ঠিক সামনে বড় বড় দুটো টিকটিকি দেখতে পেয়ে ভয়ে একদম লাফিয়ে উঠে। নিজের ওপর থেকে চাদর টা লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। সোফার ওপর দাঁড়িয়েই চিল্লাচ্ছে। টিকটিকি এবার তার পায়ের কাছে এলে আইরাত দ্রুত নেমে গিয়ে আবার সোজা বিছানার ওপর গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম এইদিকে মুখ টিপে হেসে হেসে শেষ। টিকটিকি গুলো লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যায়। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম হাসছে। আইরাতের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটা আব্রাহামেরই কান্ড।

আইরাত;; আপনি, আপনি খুব খুব খুব খারাপ।
আব্রাহাম একটানে আইরাত কে নিজের কাছে বসিয়ে দেয়। আইরাতও রাগি+কাদো কাদো মুখ বানিয়ে বসে আছে।
আব্রাহাম;; আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইলে এমনই হবে। যাও না এবার যাও আবার অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমাও যাও। এবার আরশোলা নিয়ে যাবো।
আইরাত;; আমি টিকটিকি আর মাকড়সা দেখে ভয় পাই ভয় বলতে ঘৃণা করে। তেলাপোকা দেখে আমি ভয় পাই না।
আব্রাহাম;; হয়েছে আমার সাহসী মানুষ। এবার ঘুমাও।
আইরাতকে এখনো বসে থাকতে দেখে আব্রাহাম বেড থেকে একটা বালিশ দূরে ছুড়ে মারে।
আইরাত;; কি শুরু করলেন এগুলো?
আব্রাহাম;; চুপ।

আব্রাহাম নিজে প্রথমে বালিশে শুয়ে পরে তারপর আইরাত কে টান দিয়ে নিজের বুকের ওপর ফেলে দেয়।
আব্রাহাম;; আমি বালিশে ঘুমাবো আর তুমি আমার ওপরে। এভাবেই ঘুমাবো রোজ বুঝলে। আর না বুঝলে বলো আবার টিকটিকি নিয়ে আসি।
আইরাত;; আপনিইইইইইইই।
আব্রাহাম হেসে উড়িয়ে দেয়। আব্রাহামের বুকে শুয়ে থাকতে থাকতেই কখন যে আইরাত ঘুমিয়ে পরেছে তা মনে নেই। আইরাত কে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে আব্রাহাম নিজেও ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।

পরেরদিন সকালে আব্রাহাম-আইরাত অনামিকার বাসা থেকে এসে পরে। এসে পরার সময় অবশ্য আইরাতের বেশ মন খারাপ ছিলো। মুখটায় কেমন গোমড়ার ছাপ।
অনামিকা;; শোন বিয়ে হয়েছে এবার একটু ভদ্র আর শান্ত হয়ে থাকবি।
আইরাত;; পারবো না।
অনামিকা;; চুপ একদম। সবার মন জুগিয়ে চলার চলার চেষ্টা করবি বুঝলি।
আইরাত;; না জুগিয়ে চললে কি হবে!
অনামিকা;; বেশি কথা বলিস একদম।

অনামিকা আর আইরাত কথা বলতে বলতে বাইরে চলে আসে। আর আব্রাহাম অলরেডি বাইরে গিয়ে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতের তার বিয়ের দিনও চলে যেতে এতোটা খারাপ লাগেনি যতটা না আজ চলে যেতে খারাপ লাগছে। আইরাত গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই কাদো কাদো ফেইস নিয়ে অনামিকা কে জড়িয়ে ধরে।
আইরাত;; আমি সত্যি অনেক বেশি মিস করবো তোমায় মা।
আব্রাহাম;; আহা, এমন একটু মিস যদি আমাকেও করতো।
আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে রাগ+কান্না করে দিয়ে বলে।
আইরাত;; মায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
অনামিকা;; আরে চুপ কর। আব্রাহাম বাবাজ্বি!
আব্রাহাম;; জ্বি আম্মু।
অনামিকা;; এটাকে ধরে নিয়ে যাও তো।
আইরাত;; অপমান”স ?।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল উঠো গাড়িতে।

আইরাত গাড়িতে উঠে পরে৷ অতঃপর তারা রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। আব্রাহাম গাড়ি ড্রাইভ করছে আর থেকে থেকে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে। আইরাত দুহাত ভাজ করে একমনে উইন্ড দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
আব্রাহাম;; মন খারাপ?
আইরাত;; না তেমন না।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ এছাড়াও আমি আছি তো মন খারাপ করার কিছুই নেই।
আইরাত;; ?
আব্রাহাম-আইরাত বাড়ি চলে যায়। গাড়ি থামতেই আইরাত চট জলদি গাড়ি থেকে নেমে পরে। মেইন গেইট ঠেলে ভেতরে ইলার কাছে চলে যায়।
আব্রাহাম;; এত্তো চঞ্চল একটা মেয়ে বাপরে৷

আব্রাহাম চোখে সানগ্লাস পরে গাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। গার্ড কে গাড়ি পার্ক করে দিতে বলে।
ইলা;; আমি অনামিকার কাছে ফোন করেছিলাম। অনেক কথা হলো। কথা বলে এত্তো ভালো লাগলো জানিস৷ তা উনাকেও সাথে করে নিয়ে আসতি!
আইরাত;; আজ আর আসবে না আরেকদিন।
ইলা;; আচ্ছা দুজনেই ভেতরে যা রেস্ট নে।
আব্রাহাম-আইরাত ভেতরে চলে যায়৷
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; হ্যাঁ
আব্রাহাম;; রেডি হও জলদি।
আইরাত;; আবার কোথায় যাবো?
আব্রাহাম;; ম্যাডাম আপনার আমার সাথে বিয়ে হয়েছে পড়াশোনা শেষ হয়নি। ভার্সিটি যাবে রেডি হও। তোমাকে ভার্সিটি নামিয়ে দিয়ে তারপর আমি অফিসে চলে যাবো।
আইরাত;; আচ্ছা।

আইরাত কিছু সময় পর এসে পরে। এসে রুমে আব্রাহাম কে আর পায় না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ভার্সিটির সময় পার হলো প্রায়। চুলগুলো আচড়িয়ে ওরনা টা গলায় জড়িয়ে দ্রুত বের হয়ে পরে। আব্রাহাম হলরুমেই ফোনে কথা বলছিলো৷ আইরাত কে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে ইলা কে বলে তারা চলে যায়। একসময় ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামলে আইরাত গাড়ি থেকে সোজা নেমে যেতে ধরে। আব্রাহাম তখন তার হাত খামছে ধরে। আইরাত ঘুড়ে তাকিয়ে একবার আব্রাহামের দিকে আরেকবার তাদের হাতের দিকে তাকায়। আব্রাহাম তাকে এক টান দিয়ে নিজের কাছে এনে গালে চুমু একে দেয়। কপালে চুমুরত অবস্থায় কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে দিয়ে ঠাই বসে থাকে।
আব্রাহাম;; নাও ইউ ক্যান গো বেবিগার্ল।
আইরাত কিছু না বলেই গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ভার্সিটির ভেতরে চলে যায়।

আব্রাহাম নিজের অফিসে যেতেই দুপাশে দুজন গার্ড এসে দাঁড়ায়। চোখে গ্লাস পরেই জেকেটের কলার ঠিক করতে করতে গম্ভীর মুখে অফিসের ভেতরে চলে যায়। যেই দেখছে আব্রাহামকে সবাই গুড মর্নিং উইশ করছে। ভেতরে গিয়ে নিজের কেবিনে বসার কিছুক্ষন পরেই রাশেদ এসে দরজায় কড়া নাড়ে।
রাশেদ;; স্যার আসবো!
আব্রাহাম;; এসো।
রাশেদ;; স্যার আসলে বলছিলাম কি যে অফিসের কিছু কলিগের পোস্ট খালি ছিলো। কিছু নতুন মানুষ লাগতো অফিসে৷ তার জন্য অনেকেই এপ্লিকেশন লিখেছে আবার ইন্টারভিউও নেওয়া হয়েছে।
আব্রাহাম;; রেজাল্ট?

রাশেদ;; একজন মেয়েকে নেওয়া হয়েছে স্যার। তার পড়াশোনার মান অনেকটাই ভালো। তবে তার বিজন্যাস এক্সপেরিয়েন্স নেই। অর্থাৎ এটাই তার প্রথম অফিসে কাজ করা। একটু বুঝিয়ে দিতে হয় এই আরকি।
আব্রাহাম;; ভালো করেছো। এমন অনেক অফিস আছে যারা শুধু মানুষের কাজের এক্সপেরিয়েন্স খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু তারা এটা বুঝে না যে এক্সপেরিয়েন্স হওয়ার জন্যও কোথাও না কোথাও কাজ করাটা অনেক জরুরি। নতুন বলে যে কেউই তাদের অফিসে জয়েন করাতে চায় না। আরে যদি কাজই না করে তাহলে অভিজ্ঞতা হবে কোথা থেকে!! অনেক ভালো করেছো নিয়ে।
রাশেদ;; থ্যাংক ইউ স্যার।
আব্রাহাম;; বাই দি ওয়ে মেয়েটার নাম কি?
রাশেদ;; রোদেলা।
আব্রাহাম;; ওকে। তো খেয়াল রেখো সব। যেনো মিস্টেক না হয় বারবার বুঝিয়ে দিবে ওকে।
রাশেদ;; জ্বি স্যার।

রাশেদ চলে যায় কেবিন থেকে। হাতে কিছু ফাইল নিয়ে বসে বসে চেক করছিলো আব্রাহাম। ফোনে টাইম দেখে নেয়। এখন আইরাতের ক্লাস চলছে নয়তো এখনই আইরাত কেই ফোন করতো। তারই মাঝে আগমন ঘটে অয়ন আর কৌশলের।
অয়ন;; আসবো?
আব্রাহাম;; আয়।
অয়ন;; একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর আছে।
আব্রাহাম;; কি?
অয়ন বসে পরে।
অয়ন;; দেখ ভাই। “কহিনূর” পৃথিবীর সবথেকে দামি হীরে।
আব্রাহাম;; হ্যাঁ, যা আমেরিকা তে কড়া সিকিউরিটি দিয়ে রেখেছে।
কৌশল;; যা তোর আন্ডারে থাকার কথা।
আব্রাহাম;; কেনো সেখানে কি গার্ডদের অভাব পরেছে নাকি? (ল্যাপটপ দেখতে দেখতে)
কৌশল;; তেমন না বাট এই হীরের দিকে নজর অনেকের আছে।
আব্রাহাম;; আবার কোন মাফিয়া দলের আছে?

কৌশল;; মাফিয়া দলের না তবে ‘তায়াফ’ নামে একজন আছে। তায়াফ খান। আর সে মোটেও সুবিধের না।
আব্রাহাম;; সে যেই হোক না কেনো। কহিনূর…
অয়ন;; তা চুরি হয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; Are you kidding with me??
কৌশল;; না ভাই সিরিয়াস। কহিনূর চুরি হয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; আর এই মহান কাজটা কে করলো? কবে করলো?
অয়ন;; কে করলো তা প্রকৃত পক্ষে জানি বা তবে দু-তিন দিন হবে।
আব্রাহাম;; আর তোরা আজ আমাকে বলছিস?
কৌশল;; আরে বিয়েই করলি তুই গত পরশু। এর মাঝে আর কি…
অয়ন;; হ্যাঁ তার মধ্যে বউমনির এই অবস্থা। কীভাবে বলি এর মাঝে। তাই আজ বলে দিলাম।
আব্রাহাম;; কিন্তু আমি এটা বুঝলাম না যে কহিনূর যদি চুরিই হয়ে থাকে তাহলে এখনো আমার কাছে বাইরের দেশ থেকে কোন ফোন কলস্ কেনো এলো না! কোন খবর কেনো এলো না! আর আমি কোন ভাবেই জানতে পারলাম না কেনো?

কৌশল;; আপনি তো রাগের “র” ও জানেন না তাই না। তাই ভয়ে আর কেউ বলে নি।
অয়ন;; সবাই খুঁজে চলেছে। আমেরিকান গার্ড পুলিশ সবাই তুলকালাম বাধিয়ে দিয়েছে ওদিকে।
আর তোকে কেউ ভয়ের চোটেই বলে নি।
আব্রাহাম চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে হাত দিয়ে তার কপাল চেপে ধরে। কহিনূর উধাও কীভাবে সম্ভব? এতো কড়া গার্ড দিয়ে এতো সাবধানতার মাঝ দিয়ে এটা কি করে হলো!
অয়ন;; কি হলো?

আব্রাহাম এবার আর রাগ সামলাতে না পেরে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে পরে। রেগে চিল্লিয়ে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; এগুলো কোন যুক্তির কথা না। কি ফাজলামি হচ্ছে নাকি এগুলো। পুলিশ রা এতো শত গার্ডরা কি ঘাস খায় নাকি। এতোগুলো গার্ডের চোখ ফাকি দিয়ে এতো পাহারা সব পেরিয়ে কীভাবে কহিনূর নিয়ে পালালো?
আব্রাহাম এবার তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
অয়ন;; আমরা খবর পেয়েছি তাই।
আব্রাহাম;; তো এইযে তায়াফ নামে যেই আছে না কেনো। এই কে? পুরো বায়ো চাই আমার।
কৌশল;; কয়েক মিনিটেই পেয়ে যাবি৷
আব্রাহাম;; এবার তোরা আয়।

অয়ন-কৌশল উঠে চলে যায়। আর এদিকে আব্রাহাম ভাবছে যে কহিনূর চুরি হলো আর আব্রাহাম কোন খোঁজ পেলো না বা কেউ তাকে জানালো না এটা জাস্ট অসম্ভব কিছু একটা। কিন্তু আবার অয়ন আর কৌশল যে মিথ্যা বলবে এটাও সম্ভব না। তাহলে কহিনূর কি আদৌ চুরি হয়েছে নাকি হয়নি! আব্রাহাম এখন আর রাগারাগি করে না। কারণ পুরো টা না জেনে রাগ করা নিতান্তই বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। কয়েক ঘন্টা পরেই আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে আইরাতের ভার্সিটি টাইম শেষ হয়ে গেছে। সে সোজা আইরাত কে ফোন করে।

আইরাত;; হ্যালো।
আব্রাহাম;; ক্লাস শেষ?
আইরাত;; হ্যাঁ।
আব্রাহাম;; একা এসো না আমি রাশেদ কে পাঠিয়ে দিচ্ছি ওর সাথে এসে পরো।
আইরাত;; এসে পরবো মানে কোথায়?
আব্রাহাম;; আমার অফিসে আসবে।
আইরাত;; কিন্তু সেখানে কেনো?
আব্রাহাম;; আসতে বলছি আসবা।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। রাশেদ কে বলে আইরাতের ভার্সিটির সামনে থেকে তাকে পিক করে নিয়ে আসতে বলে। চল্লিশ মিনিট পরেই আইরাত এসে হাজির অফিসে। তবে অফিসের হাতে গোণা শুধু কিছু মানুষ বাদে আর কেউই জানে না যে আইরাত আব্রাহামের বিয়ে করা বউ। তাই আইরাত কে অফিসে আসতে দেখে আর কাউকে কিছু না বলেই সোজা আব্রাহামের কেবিনে চলে যেতে দেখে সবাই বেশ অবাকই। আইরাত আব্রাহামের কেবিনে এসেই বলে।
আইরাত;; আমরা বাসায় যাবো না?
আব্রাহাম;; আমরা আমেরিকা যাবো?
আইরাত;; কিন্তু কেনো?
আব্রাহাম;; ফর হানিনুন বেবিগার্ল। (রিলেক্সিং মুডে)
আইরাত;; হানিমুন আরে না না বাসায় দাদি একা আর আমার ভার্সিটি আছে আপনারও তো অফিস আছে এতোকিছু বাদ দিয়ে আমেরিকা!

আব্রাহাম;; মিসেস. বকবক আপনার বকবক বন্ধ করেন। আমরা আমেরিকা যাচ্ছি তো যাচ্ছিই ব্যাস।
আইরাত;; তো আপনি যান, আমি গিয়ে কি করবো?
আব্রাহাম;; জীবনে কখনো শুনেছো যে হানিমুনে কেউ একা একাই যায়, পাগল একটা৷ আই নিড ইউ। আমি তোমাকে ছাড়া একা কি করে থাকবো ওখানে?
আইরাত;; আরে কিন্তু…
আব্রাহাম;; চুপ। এদিকে আসো তো এই প্রেজেন্টেশন টা সেটআপ করো।
আইরাত এসে আব্রাহামের পাশে এসে দাঁড়াতেই আব্রাহাম তার হাত ধরে এক টান দিয়ে তাকে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। আইরাত উঠে আসতে চাইলে আব্রাহাম নিজের দুহাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে নাক গুজে দেয়।

আইরাত;; আরে এমন করলে প্রেজেন্টেশন চেক করবো কীভাবে?
আব্রাহাম;; ওভাবেই।
আব্রাহাম তেমন ভাবেই থাকে আর আইরাত কাজ করতে লাগে। অফিসে কয়েক ঘন্টা থেকেই তারা বাইরে বের হয়ে গাড়িতে উঠে চলে আসে।
আইরাত;; আচ্ছা আমরা তাহলে সিওর যে আমেরিকা যাচ্ছি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ
আইরাত;; কবে যাচ্ছি?
আব্রাহাম;; যত দ্রুত সম্ভব। পারলে আগামীকালই।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা।

আইরাত-আব্রাহাম বাসায় চলে যায়। তবে আব্রাহাম কে দেখে আইরাতের কেমন যেনো কিছুটা সন্দেহ হতে লাগে। ফোনে রেগে রেগে কথা বলা, দ্রুত সব কাজ করা, কেমন এক রাগি মুডে লাগছে তাই আইরাত নিজেও বাদরামি সব বাদ দিয়ে শান্ত হয়ে বসে। ইলা কে বলেছে যে তারা হয়তো আগামীকাল এখান থেকে চলে যাবে কিছুদিন পরই আসবে। তাদের যাবতীয় সবকিছুই ভিসা-পাসপোর্ট সবই রেডি।
রাতের বেলা আইরাত একটা বই নিয়ে বসে ছিলো আর আব্রাহাম ল্যাপটপ ঘাটছে। তখন আইরাত বলে ওঠে…
আইরাত;; আচ্ছা কিছু কি হয়েছে নাকি?
আব্রাহাম;; না।

আইরাত;; তো আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
আব্রাহাম;; না মানে আমি আসলে ভাবছিলাম যে হানিমুনে গিয়ে ঠিক কি কি করবো তাই আর কি!
আইরাত;; কেনো যে কথা বলতে যাই আমি।
আব্রাহাম;; সকাল ১০ টায় ফ্লাইট জলদি ঘুমাও।
আইরাত বইটা পড়তে পড়তেই কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে খেয়াল নেই। বুকের ওপর বইটা রাখা মাথার চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো। আব্রাহাম তার চোখের মোটা ফ্রেমের চশমা টা খুলে ল্যাপটপ বন্ধ করে পাশে রেখে দেয়। আইরাতের ওপর থেকে বইটা হাতে নিয়ে বেডের পাশে থাকা ছোট টেবিলের ওপর রাখে। হাত দিয়ে আলতো করে তার চুলগুলো ঠিক করে দেয় তারপর সেও আইরাত কে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুম।
সকালে আইরাতের ঘুম ভাঙে আব্রাহামের ডাকে। চোখ ডলে উঠে বসে দেখে আব্রাহাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করছে।

আইরাত;; ওমা আপনি রেডিও হয়ে গেছেন?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বেবিগার্ল এবার উঠো তুমি। চেঞ্জিং রুমে তোমার জন্য ড্রেস রেখে দিয়েছি আমি।
আইরাত;; যাচ্ছি।
আইরাত দ্রুত গিয়ে রেডি হয়ে নেয়। পরবর্তীতে বের হতেই আব্রাহাম এক নজর তাকে দেখে। সাদা ল্যাডিস শার্ট আর কালো প্যান্ট, মাথার ওপরে ঝুটি করা। হাতে সাদা স্টোনের একটা ব্রেস্ললেট৷ পায়ে কিছুটা উঁচু শু জুতো। বেশ লাগছে।
আব্রাহাম;; নিচে যাও আমি আসছি।
আইরাত;; হুম।
আইরাত নিচে গিয়ে ইলার সাথে কথা বলতে থাকে। আর ওদিকে আব্রাহাম ফোন লাগায় রাশেদ কে।
আব্রাহাম;; কোথায় তোমরা?
রাশেদ;; স্যার আমরা তো এয়ারপোর্টে।

আব্রাহাম;; ওকে আসছি আমি।
আব্রাহাম জেকেট টা হাতে ঝুলিয়ে নেয়। ইলা কে বলে আর সবদিকের সিকিউরিটি ডাবল বাড়িয়ে দিয়ে আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে চলে যায় এয়ারপোর্টে। ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে দেখে আইরাত কে আগে ফ্লাইটের ভেতরে বসিয়ে দিয়ে আসে তারপর জেকেট টা নিজের ওপরে জড়িয়ে আব্রাহাম বাইরে এসে পরে।
আব্রাহাম;; লিসেন কেউ যেনো না জানতে পারে যে আমি আউট অফ কান্ট্রি আছি বুঝলে!
রাশেদ;; স্যার কেউ জানবে না আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
আব্রাহাম;; টেক কেয়ার, বায়।

রাশেদ;; বায় স্যার, উইশ ইউ এ হ্যাপি যার্নি।
বিনিময়ে আব্রাহাম মেকি হাসে।
আব্রাহামের এই ফ্লাইট বুক করা। ভেতরে হাতে গোনা কিছু এয়ার হোস্টেজ-পাইলট আর আব্রাহাম-আইরাত ছাড়া কেউ নেই। সকালে ব্রেকফাস্টও করে আসেনি তাই এখন বসে বসে খাচ্ছে। আব্রাহাম একটা ম্যাগাজিন নিজের সামনে ধরে রেখেছে আর আইরাত খাচ্ছে আসলে।
আইরাত;; আমাদের যেতে কতো সময় লাগবে?
আব্রাহাম;; কমপক্ষে ২২ ঘন্টা।
আইরাত;; মানে এই ২২ ঘন্টা এখন আমরা ফ্লাইটে বসে থাকবো!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তা নয়তো আরকি।
আইরাত;; পুরো একদিনই।

২২ ঘন্টা পর~~
বলতে গেলে পুরো একদিন সময় লেগেছে তাদের যেতেই। ফ্লাইট একদম পরেরদিন ভোরে ল্যান্ড করেছে আমেরিকার মাটিতে। আইরাত সিটেই ঘুমিয়ে পরেছে আর আব্রাহাম একদম ঘুমায় নি। সারারাত জেগে জেগে নিজের সামনে আইরাত কে দেখেছে। আইরাত চোখ মেলে তাকাতেই দেখে তার সামনে আব্রাহাম গালে হাত দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে৷ আইরাত নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার গায়ের ওপর আব্রাহামের জেকেট টা।
আব্রাহাম;; গুড মর্নিং বেবিগার্ল।

আইরাত;; মর্নিং।
আব্রাহাম;; কাল রাতে ঘুমের মাঝেই শীতে হালকা কাপছিলে তুমি তাই আমার জেকেট টা দিয়ে রেখেছিলাম তোমার ওপর।
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম;; এখন আমরা বাইরে বের হবো তার পরে সোজা একটা সেভেন স্টার হোটেলে গিয়ে উঠবো।
আইরাত;; ওকে।
আব্রাহাম-আইরাত নেমে পরে। এয়ার হোস্টেজ তাদের জিনিসপত্র গুলো নামিয়ে দিলে গার্ডরা সেগুলো নিয়ে নেয়। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে বিমান থেকে নেমে পরে৷ বিমান থেকে নেমেই কমপক্ষে ৮-৯ জন লোক ছিলো যারা তাদের স্বাগতম জানায়। অবশেষে আব্রাহাম আর আইরাত গাড়িতে উঠে চলে যায়। এবার ড্রাইভার ড্রাইভ করছে আর তারা দুজন পেছনে ব্যাক সীটে বসে আছে৷

অতঃপর গাড়ি এসে থামে এক বিশাল অট্টালিকার সামনে। যা আসলে একটা হোটেল। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়েই নেমে পরে। তাদের আশেপাশে অনেক গার্ড তাদের মাঝখান দিয়ে আইরাত আব্রাহাম যাচ্ছে। আব্রাহাম নিজে ঠিক থেকে চলে গেলেও সে আইরাত কে একটা মাস্ক আর বড় ব্ল্যাক কালারের চশমা পরে থাকতে বলেছে যেনো কেউ আইরাতের চেহারা না দেখে। অবশ্য এটার পেছনেও কারণ আছে। তবে কেউ একজন সুউচ্চ দালানকোঠার ওপর থেকেই তাদের ওপর নজর রেখেছে। আব্রাহাম যত দ্রুত সম্ভব আইরাত কে নিয়ে ভেতরে চলে যায়।

হোটেলের প্রায় সবাই তোড়া তোড়া ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। আব্রাহাম তাদের সাথে স্বসম্মানের সহিত কথা বলে। মিডিয়ার লোকজন দ্রুত পায়ে তাদের দিকে এগিয়ে এলে আব্রাহাম তাদের উদ্দেশ্যে “নো কমেন্ট’স ” বলেই চলে যায়। যে রুম গুলো আব্রাহাম তাদের জন্য বুক করেছে তাদের একটার চাবি নিয়ে রুমে জলদি ঢুকে পরে। রুমে গিয়ে আব্রাহাম আইরাতের হাত ছেড়ে দেয়। আর আইরাত তার গলাতে থাকা স্কাফ, মাস্ক, চশমা এইসব খুলে ফেলে।
আইরাত;; আচ্ছা আমাকে এই মাস্ক, স্কাফ কেনো পরালেন? মানে এমনিতেও তো আসতে পারতাম তাই না!

আব্রাহাম;; জানপাখি তুমি জানো না আমাদের আশেপাশে কত শত রকমের মানুষেরা থাকে৷ আমার‍ যাই হোক তোমার যেনো কিছু না হয়৷ আর তোমায় এভাবে কেনো নিয়ে এলাম তা পরে বলবো৷ এবার চলো ফ্রেশ হয়ে নিই।
আইরাত;; আব… আপনি, আপনি যান না। আমি না হয় আপনার পরেই যাই৷
আব্রাহাম;; সোজা কথায় আমার সাথে ওয়াসরুমে যাবে নাকি তুলে নিয়ে যাবো?
আইরাত;; আচ্ছা এটা কেমন কথা! দুজনেরই একসাথেই যেতে হবে নাকি!
আব্রাহাম;; কেনো, সমস্যা কি গেলে?

আইরাত;; আমার লজ্জা করে৷
আব্রাহাম;; ওরে বাবা তাই নাকি!
আইরাত;; অবশ্যই, আমার কি আপনার মতো লাজ-লজ্জা কিছুই নেই নাকি!
আব্রাহাম নিজের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে হাতে থাকা ঘড়ি টা খুলছিলো। আইরাতের কথায় তার দিকে তাকায়।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত তার দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।
আইরাত;; না মানে কিছু না।
আব্রাহাম গিয়ে সোজা আইরাত কে কোলে তুলে নেয়। আইরাত না না করলেও কে শোনে কার কথা। আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে ওয়াসরুমের ফ্লোরে দাঁড় করিয়ে দেয়। নিজের সবদিকে চোখ বুলিয়ে আইরাত বলে…
আইরাত;; এগুলো এমন কেনো?
আব্রাহাম;; কোনগুলো কেমন?

আইরাত;; ওয়াসরুমের পর্দা গুলো এমন কেনো? আর গ্লাসও তো সব কাচের। স্বচ্ছ পানির মতো এপাশ থেকে ওপাশে সবই ক্লিয়ার দেখা যায়।
আব্রাহাম;; এগুলো এমনই থাকে বেবিগার্ল। আর এটা একটা হানিমুন হোটেল। স্পেশালি নিউ কাপলদের জন্য। আর আমেরিকা আসলে ওয়েস্টার্ন কান্ট্রি।
আইরাত;; আহা, তা যেনো আমি জানতামই না।
আব্রাহাম;; হুমম।

আব্রাহাম আর কিছু না বলেই একহাতে আইরাতের কোমড় চেপ ধরে শাওয়ার অন করে দেয়। হুট করেই সব ঠান্ডা পানি তাদের দুজনের ওপর পরতে লাগে। আব্রাহামের শার্ট টা ভিজে দেহের সাথে লেগে ধরে। আইরাতের পরনে সাদা শার্ট ভিজে লেগে ধরেছে। ফলে দেহের গঠন স্পষ্ট ফুটে ওঠেছে। আব্রাহাম দেখে আইরাতের গোলাপিবর্ণ ঠোঁটজোড়া ভিজে পানি বেয়ে বেয়ে পরছে। নিজেকে আর সামলাতে না পেরে মূহুর্তেই আকড়ে নেয় তার ঠোঁটগুলো। আইরাত একহাতে আব্রাহামের শার্টের কলার খামছে ধরে আরেক হাত তার কাধের ওপরে চলে যায়৷ আইরাতের সাদা ধবধবে পানি বিন্দু দ্বারা মুক্তর ন্যায় ভেজা গলাতে আব্রাহাম নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়।

মূহুর্তেই আইরাতের শিরদাঁড়া বেয়ে কেমন এক শিহরন বয়ে যায়। কিছু সময় পর আব্রাহাম আইরাত কে ছেড়ে দাঁড়ায়। শাওয়ার অফ করে দেয়। এবার ইচ্ছে করেই আব্রাহাম তার সামনের চুলগুলো হাত দিয়ে কিছুটা ঝেড়ে দেয়। ফলে পানির ছিটা গুলো আইরাতের মুখের ওপরে পরে৷ আর আইরাত মুখ কুচকে ফেলে। বাইরে বের হয়ে চেঞ্জ করে নেয়। আব্রাহাম একদম সাদা গেটাপ পরেছে। সাদা শার্ট সাদা প্যান্ট। যার দরুন সুঠাম দেহতে একদম দারুন মানিয়েছে। বাতাসে চুলগুলো একাই দোল খেয়ে যাচ্ছে। তাদের রুমের সামনেই বিশাল আকাড়ের এক করিডর রয়েছে। তার সাথেই ঝাকে ঝাকে বেশকিছু ফুল রয়েছে৷ তাদের রঙ-বেরঙের ফুল-পাতা। দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে।

আব্রাহাম করিডরের দরজাতে হেলান দিয়ে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে ছিলো। তখনই আইরাত আসে টাওয়াল দিয়ে নিজের চুল মুছতে মুছতে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে লাগে। আর আইরাত যখনই নিজের ভেজা চুল মুছে তখনই আব্রাহাম এসে আইরাতের চুলে নিজের নাক-মুখ সব ডুবিয়ে দেয়। এটা আব্রাহামের স্বভাব। এবারও তার ব্যাতিক্রম নয়। আইরাত তার হাত থেকে আধোভেজা টাওয়াল টা পাশে রাখতেই আব্রাহাম হুট করেই ঝড়ের গতিতে এসে আইরাত কে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের বাহুডরে। আইরাতের চুলে কতোক্ষণ ভরা নিজের মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে তারপর চুলগুলো এক পাশে সরিয়ে আইরাতের ঘাড়ে নিজের নাক ঘষতে লাগে।

আইরাত;; ছ ছা ছাড়ুন।
আব্রাহাম;; পারবো না।
আইরাত;; আমার সুরসুরি লাগে তো।
আব্রাহাম;; লাগুক। আমার তো ভালো লাগে।
আইরাত;; আমার কিন্তু সত্যিই অনেক কাতুকুতু লাগছে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল তুমি কি জানো তোমাকে ভেজা চুলে ঠিক কতোটা আবেদনময়ী লাগে! কতোটা আকর্ষণীয় লাগে! মনে হয়, মনে হয় শুধু কিছু একটা করে বসি ব্যাস।
আইরাত;; _________________________
আব্রাহাম;; তুমি কি জানো তোমার ভেজা চুলের এই নেশাক্ত ঘ্রাণ পৃথিবীর সবথেকে বেশি তীব্র ঘ্রাণ। কতো টা মাতাল করা এই ঘ্রাণ।

আব্রাহাম আয়নাতে তাকিয়ে খেয়াল করে দেখে যে আইরাত একটা বেবি পিংক কালারের ফ্রোক টাইপ শর্ট গোল জামা পরে আছে। গলার পাশে ছোট একটা ওরনার মতো রয়েছে। সে সোজা আইরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। একটানে আইরাতের গলা থেকে ওরনা টা টান দিয়ে ফেলে দিয়ে তাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে। আব্রাহাম তার একহাত দিয়ে আইরাতের দুহাত একত্রিত করে দেওয়ালের ওপরে চেপে ধরে৷ আর নিজের আরেক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড়-পেটের অংশ টুকু তে স্লাইড করতে লাগে। এর মাঝে আইরাত কিছুই বলতে পারে না। বলতে গেলেই আব্রাহাম থামিতে দেয় নয়তো তার ঠোঁটে নিজের আঙুল ঠেকিয়ে দেয়৷ আব্রাহাম ধীর গতিতে আইরাতের গলা এবং ঘাড়ের মাঝ অংশ বরাবর এগোতে লাগে৷ আইরাতের ঘাড়ে আবার নিজের নাক ঘষে ঘ্রাণ নিতে নিতে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল জানো কি! তোমার দেহে এক আলাদা রকমের সুগন্ধি জড়িয়ে আছে। যার কাছে আমি নিজেকে আর নিজের মন-মস্তিষ্ক কে বারবার হারিয়ে ফেলি। যত সুগন্ধিই দেখো না কেনো আমার কাছে আমার আইরাতের ভেজা চুল আর তার দেহের সুগন্ধির সামনে যেনো সবকিছুই হার মানে। সবই ফিকে হয়ে যায়৷ ভালোবাসি তোমায়।
আব্রাহাম আইরাত কে একদম ছেড়ে দিয়ে আইরাতের শুধু হাত দুটো নিজের দুহাতের ভাজে নিয়ে নেয়। আইরাতের হাতে নিজের নাক ডুবিয়ে দিয়ে ঘ্রাণ নিতে লাগে৷ কিছু সময় পর ছেড়ে দেয়।

আইরাত শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। তারপরেই দরজাতে কিছু মেয়ে আসে। অর্থাৎ আইরাত-আব্রাহামের রুমের ভেতরেই ক্যামেরা রয়েছে যার দ্বারা দরজার ওপর পাশে কে রয়েছে বা যারা এসেছে তা দেখা যায় অর্থাৎ লুকিং ক্যামেরা। তাতেই আইরাত দেখে মেয়ে গুলো কে। সেগুলো আব্রাহামেরই স্টাফ। আইরাত চিনে৷ লুকিং ক্যামেরা তে মেয়ে গুলোকে দেখে আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়৷ আব্রাহাম ইশারাতে তাদের সাথে আইরাত কে যেতে বলে। আইরাতও আব্রাহামের কথা মতো যেতে লাগে। তবে কয়েক কদম এগোতেই আইরাত থেমে পরে।

আব্রাহামের দিকে তাকায় দেখে আব্রাহামের চোখ জোড়া এখনো তার দিকেই স্থীর। তবে অবাক করা ব্যাপার। আইরাত চলে যেতে ধরেও আবার কি যেনো একটা ভেবে আব্রাহামের কাছে আসে টুক করে তার গালে নিজে ইচ্ছাকৃত ভাবেই একটা চুমু বসিয়ে তারপর দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে মেয়ে গুলোর সাথে চলে যায়। আব্রাহাম অবাক হয়ে আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা সত্যি আইরাতই ছিলো তো! আব্রাহাম মুচকি হাসি হাসে আইরাতের কান্ডে৷ আইরাতের আব্রাহামের প্রেমে পরার প্রথম লক্ষণ। এটা ভেবেই যেনো একরাশ শান্তি আর মুগ্ধতা এসে ভর করে আব্রাহামের বুকে। “আমি যাকে প্রচন্ডভাবে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসি, সেও ঠিক একই ভাবে আমাকে ভালোবাসে” এটার থেকে বেশি সুন্দর আর কিচ্ছু নেই, কিচ্ছু না ❤️।

আইরাতের চলে যাওয়ার পরই আব্রাহাম তার ফোনটা বের করে। ফোন অন করতেই স্বচ্ছ স্ক্রীনে ওয়ালপেপার হিসেবে ভেসে ওঠে আব্রাহাম-আইরাতের একসাথের ছবি। আব্রাহামের মুখের হাসিটা যেনো আরো কিছুটা গাঢ় হয়ে যায় এটা দেখে। তবে হঠাৎ আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে। তা রিসিভ করে কানে ধরে ওপর পাশ থেকে কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই রাগে আব্রাহামের মুখে ফুটে ওঠে বেশ কোঠরতার ছাপ।

আব্রাহাম-আইরাত যে হোটেলে বর্তমানে আছে এটা চারিদিকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশাল। হোটেলের ভেতরেই রয়েছে তিনটা রেস্টুরেন্ট, ক্লাব”স,পার্ক সবই। হোটেলের ঠিক পেছনের দিক টাতে রয়েছে বেশ বড়ো সড়ো আকারে একটা রিসোর্ট। সেখানে সমুদ্র, সমুদ্রের পাশেই এলকোহল/ড্রিংক্স এর শপ৷ আইরাত ওই মেয়ে গুলোর সাথে গিয়েছে প্রায় অনেকক্ষণ যাবৎ। আব্রাহাম মূলত আইরাত কে বলে নি যে তারা এখানে কেনো এসেছে। তাই সে আইরাত কে আটকিয়ে রাখে নি। পুরো হোটেল আর রিসোর্ট ঘুড়ে দেখার বাহানা দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন আব্রাহাম নিজেও বাইরে যাচ্ছে।

আর তখন ফোনের ওপাশে রাশেদ ছিলো। আতিক রহমান যে ছিলো তার কোম্পানি পুরো পুরি ডাউন খেয়ে গেছে। আর এটা যেনো সে কোন মতেই মেনে নিতে পারছে না। তার মন এটা মানতে বেশ নারাজ। অবশ্য আব্রাহাম নিজেই ডাউন করে দিয়েছে। কেননা তার কোম্পানি এবং সেখানকার সব জিনিসের মান একেবারেই কম বললেই চলে। যার দরুন আতিক এখন আব্রাহামের অফিসে এসে কিছুটা ঝামেলা পাকিয়েছে। যদিও তা রাশেদ আর অয়ন সব সামলিয়ে নিয়েছে। ওদিকে আইরাত একটা টেবিলে বসে থেকে চারিদিকে নিজের চোখ বুলাচ্ছে আর ডাবের পানি খাচ্ছে। তবে তার মাঝেই কোথা থেকে যেনো হুট করেই একজন লোক আসে। আইরাতের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখ থেকে গ্লাস খুলে ফেলে।

তায়াফ;; হ্যালো মিস.
আইরাত ঘুরে পেছনে ফিরে তাকায়। দেখে বখাটে টাইপ লুক নিয়ে কেউ একজন তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
তায়াফ;; হ্যালো।
আইরাত;; হ্যালো। (বিরক্তি নিয়ে)
তায়াফ;; আমি তায়াফ খান। আপনি?
আইরাত;; আইরাত।
তায়াফ;; ওয়াও নাইস নেইম। এখানে নিউ?
আইরাত;; হুম।
তায়াফ;; তাই তো বলি যে আপনাকে আগে কেনো চোখে পরলো না আমার।
আইরাত এবার সোজা তায়াফের দিকে তাকায়।
আইরাত;; দৃষ্টি যদি অন্যের ক্ষেত্রে কটু হয় তাহলে চোখে না পরা টাই শ্রেয়।
এই বলেই আইরাত সোজা সেখান থেকে উঠে চলে আসে। আর তায়াফ সেখানেই বসে থাকে।
তায়াফ;; এটিটিউড!

আইরাত দুহাত ভাজ করে সমুদ্রের পাড়ে এসে পরে। এখানে তীব্র বাতাস। চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে বারবার। সাদা পালকের বড়ো বড়ো পাখি গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে সবদিকে। সমুদ্রের ঢেউ-এর আওয়াজ এসে কানে লাগছে। তখনই আইরাতের ডান পাশের বাহুতে কেউ টোকা দেয়। আইরাত সেদিকে তাকায় দেখে কেউ নেই আরেক দিকে টোকা পরে সেদিকে তাকায় দেখে এখনো কেউ নেই। আইরাত বুঝলো এটা আব্রাহাম ছাড়া আর কেউ না। সোজা পেছনে ঘুরে দেখে আব্রাহাম-ই।

আব্রাহাম;; এখানে কি করো?
আইরাত;; আপনি এখানে কখন এলেন?
আব্রাহাম;; প্রশ্ন টা প্রথমে আমার ছিলো!
আইরাত;; দাঁড়িয়ে আছি।
আব্রাহাম;; আমিও মাত্রই আসলাম আর এসেই তোমাকে দেখতে পেলাম।
আইরাতের আব্রাহামের সাথে কথা বলতে বলতে চোখ যায় আবার ড্রিংক্স এর শপের দিকে। দেখে এখনো তায়াফ তার দিকে তাকিয়েই আছে। পরবর্তীতে উঠে চলে যায়। আব্রাহাম আইরাতের নজর অনুসরণ করে পেছনে তাকায়।

আব্রাহাম;; Is everything ok!?
আইরাত;; ইয়াহ।
আব্রাহাম;; এখানে কি আরো কিছু সময় থাকবে নাকি?
আইরাত;; না আমার মনে হয় এখন এখান থেকে যাওয়া উচিত।
আব্রাহাম;; চলো।
আব্রাহামের আগে আইরাত পা ফেলে চলে আসে। এভাবেই সেই সময় টুকু যায়। বিকেলের দিকে আইরাত আয়নার সামনে বসে বসে চুইং গাম খাচ্ছে আর আব্রাহাম আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে তার চুলগুলো বিনুনি করে দিচ্ছে।
আব্রাহাম;; হুম হয়ে গেছে।
আইরাত আয়নাতে তাকায়।

আইরাত;; এত্তো সুন্দর বিনুনি তো আমি নিজেও করতে পারি না। এতো ভাজ কীভাবে দিলেন?
আব্রাহাম;; আমি কি তোমার মতো ঢেড়স নাকি!
আইরাত;; আমি, আমি ঢেড়স?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত;; হ্যাঁ ভালো হয়েছে।
আব্রাহাম;; চলো। বাইরে যাবো।
আইরাত;; কোথায়?
আব্রাহাম;; যেদিকে দুচোখ যায়৷
আইরাত;; আবার একই ডায়লগ।

আব্রাহাম আইরাত কে নিয়ে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম বাইরে গিয়ে একটা কালো বাইকের ওপর উঠে পরে। নিজের জেকেটের হাতা ফোল্ড করতে করতে আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে…
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল উঠে পরো।
আইরাত;; আমরা বাইকে যাবো?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
আইরাত আব্রাহামের পেছনে বসে পরে। নিজের হাতটা আলতো করে আব্রাহামের কাধে রাখে।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল এভাবে বসে না তো।
আইরাত;; তো!
আব্রাহাম পেছন থেকে আইরাতের দুহাত নিয়ে নেয়। আইরাতের হাত নিয়ে নিজেকে জড়িয়ে ধরার মতো করে ধরে বলে…

আব্রাহাম;; এভাবে ধরতে হয়।
আইরাত উঠে আসতে ধরলে আব্রাহাম তেজি কন্ঠে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; এই একদম সরবে না নয়তো এইযে এখনই দিলাম বাইক থেকে ফেলে।
আইরাত;; আরে না না না আচ্ছা আচ্ছা ঠিকআছে ছাড়বো না ছাড়বো না।
আব্রাহাম;; গুড।

আব্রাহাম বাইক স্টার্ট দেয়। আর আইরাত কে তার জড়িয়ে ধরে থাকতে হচ্ছে। আব্রাহাম এক নজর বাইকের গ্লাসে আইরাতের মুখ টা দেখে। কেমন রাগি রাগি একটা ভাব যে দেখে সে বেশ মজা পাচ্ছে। বেশ সময় পর বাইক এসে থামে একটা স্টেডিয়ামের মতো বিশাল আকৃতির মাঠে। আইরাত নেমে পরে। খেয়াল করে দেখে মাঠের এক পাশে কম করে হলেও ১০ টা ঘোড়া রাখা। কিছু ঘোড়া কালো কালারের, আবার কিছু ব্রাউন, দুধ সাদা, লালচে এমন কালারের। তবে আব্রাহাম তাকে এখানে নিয়ে এলো কেনো তাই ভাবছে।

আইরাত;; আমরা এখানে কেনো এলাম?
আব্রাহাম;; For horse riding…
আইরাত অবাক হয়ে তাকায়।
আইরাত;; আপনি করেন গিয়ে আমি নেই।
আব্রাহাম;; কেনো?
আইরাত;; আমি এর আগে কখনোই ঘোড়ার পিঠে উঠি নি। আর রাইড করা তো অনেক দূর।
আব্রাহাম;; আগে উঠো নি কিন্তু এবার উঠবে।
আইরাত;; না আমার ভয় লাগে।
আব্রাহাম;; ডোন্ট ওয়ারি বেবিগার্ল এরা অনেক ভালো ট্রেইন করা। অনেক ভালো ট্রেইনিং দেওয়া আছে এদের। ফেলবে না তোমাকে। আর সেইভাবেই সেইফটি দেওয়া থাকবে।
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; বিলিভ মি, অনেক ভালো লাগবে। চলো।
আব্রাহাম এগিয়ে যেতেই একটা কালো কালারের ঘোড়া সামনে এগিয়ে এসে আব্রাহামের হাতে নিজের মাথা ঘেষতে লাগে। আব্রাহামও তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তবে আইরাতের পছন্দ হয়েছে একদম ধবধবে সাদা কালারের ঘোড়া টা। সে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে আস্তে করে ঘোড়ার কপালে হাত রেখে দেয়। এতে ঘোড়া শব্দ করে ওঠে। প্রথমে আইরাত কিছুটা ভরকে গেলেও এখন যেনো ঠিক আছে।
আব্রাহাম;; বলেছিলাম না, এরা খুব সহজেই পোষ মেনে যায়।
আইরাত;; কত্তো কিউট এরা।
আব্রাহাম;; রেডি?
আইরাত;; আমি যদি ব্যাথা পাই তাহলে সব আপনার দোষ।
আব্রাহাম;; আচ্ছা আর ব্যাথা না পেলে আমায় এত্তো গুলো কিস।
আইরাত;; না।
আব্রাহাম;; চুপ।

আব্রাহাম আইরাতের হাটুতে শক্ত করে স্কেচ পরিয়ে দেয়। কুনির দিকটা তেও পরিয়ে দেয় যেনো কোথাও আবার ব্যাথা পেয়ে ছাল না উঠে যায়। মাথার ওপরে একটা ছোট হ্যালমেট সিস্টেম পরিয়ে দেয়। আব্রাহাম আইরাত কে ঘোড়ার ওপরে ওঠতে হেল্প করে। আইরাত একটা সিলভার কালারের প্যান্ট আর অফ হুয়াইট কালারের টপ পরে ছিলো। আব্রাহাম কিছুটা দূর থেকে আইরাত কে দেখে। সত্যি বলতে আইরাত কে দেখে মনে হচ্ছে যে সে এই মুহুর্তে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে এমন।
আব্রাহাম;; ঘোড়ার সাথে তোমার ড্রেস সেন্স একদম মিলে গিয়েছে।
ঘোড়াটা কয়েক কদম টগবগিয়ে হেটে বেড়ায়। আইরাত প্রথমে ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পারলেও পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে বসে। ঘোড়ার সাথে বাধা ওপরে দুটো কালো বেল্ট হাতে জড়িয়ে নেয়।
আইরাত;; আপনি?

আইরাতের বলার পরই আব্রাহাম নিজেও গিয়ে এক লাফে কালো ঘোড়া টার ওপরে উঠে বসে পরে। ঘোড়ার মাথায় বা বাহুতে যে শক্ত দড়ির মতো বাধা ছিলো তা খুলে ফেলে দেয়। আইরাতের ঘোড়া টা আবার নাড়াচাড়া শুরু করলে আইরাত শক্ত করে একহাতে ঘোড়ার বাহুতে থাকা দড়ি টা ধরে ফেলে৷
আব্রাহাম;; ভয় নেই জানপাখি পরবে না।
আইরাত;; আপনি এভাবেই ঘোড়ার ওপর বসে থাকবেন!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ। আমি পারি।
আইরাত;; হুম বুঝলাম।

এটা বলার সাথে সাথেই সাদা ঘোড়াটা দেয় এক দৌড়। আর আইরাত মুখ টা ভেটকিয়ে দিয়ে বাম হাতে নিজের মাথার ওপরের হ্যালমেট টা শক্ত করে চেপে ধরে। ঘোড়া যে আসলে এতো তীব্র গতিতে ছুটতে পারে তা আইরাতের ধারনা ছিলো না। অর্থাৎ ঘোড়াকে ছুটতে দেখেছে তবে তা বাইরে থেকে। নিজের এমন এক্সপেরিয়েন্স ফার্স্ট। আইরাত যেই না চিল্লানি দিতে যাবে তখনই তার পাশে আসে আব্রাহাম। সে কালো ঘোড়ার ওপর বসে আছে। কোন সেইফটি নেই, কোন কিছুই নেই। ইন ফ্যাক্ট আইরাতের ঘোড়া থেকে আব্রাহামের ঘোড়ার তেজ আরো দ্বিগুণ বেশি। আইরাত কে ভয় পেতে দেখে আব্রাহাম বলে…

আব্রাহাম;; কিচ্ছু হবে না ভয় পেয়ো না একদম, কিছুই হবে না। বি নরমাল। স্বাভাবিক হওয়ার ট্রাই করো। আর ঘোড়ার গতির সাথে নিজে কো-অপারেট করো। কিছুই হবে না বেবিগার্ল। ডোন্ট বি স্কেয়ার।
আইরাত আব্রাহামের কথা মতো দুহাতে ঘোড়ার গায়ের ওপরের দড়ি আকড়ে ধরে। নিজের বডি কে একদম সোজা করে ফেলে৷ দুপা একদম সোজা করে রাখে। এবার আইরাত খেয়াল করে যে এটা আসলেই কাজ করেছে। এবার যেনো ঘোড়ার পায়ের গতির সাথে আইরাত নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছে।

এতোক্ষন তার মুখে ভয়-ভীতি স্পষ্ট থাকলেও এবার যেনো প্রচুর এক্সাইটম্যান্ট লাগছে। আইরাত কে ছাড়িয়ে আব্রাহাম এগিয়ে যায়। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে। তার রাইড করা এতো টা স্মুথ আর স্কিল্ড যা বলার বাইরে। বিশাল আকাড়ের পুরো স্টেডিয়াম টা প্রায় চার বার রাউন্ড দিয়েছে তারা উভয়েই। অবশেষে থেমে পরে৷ আব্রাহাম ঠিক থাকলেও আইরাতের তো হাপাতে হাপাতে জীবন শেষ। আব্রাহাম আবার এক লাফে নেমে পরে ঘোড়ার ওপর থেকে। ঘোড়া টা এবার আব্রাহামের মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে দেয়।

আইরাত;; আব্রাহাম, আমি নামবো।
আব্রাহাম;; কেনো আরো একটু বসিয়ে রাখি!
আইরাত;; না না প্লিজ না। এবার নামতে হেল্প করুন আমায় প্লিজ৷
আব্রাহাম;; ওকে।
আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের কোমড় ধরে আরেক হাতে আইরাতের এক হাতের তালু চেপে ধরে নামিয়ে আনে।
আব্রাহাম;; তো কেমন লাগলো?
আইরাত;; ভয়ও আবার বেশ ভালোও।
আব্রাহাম;; হুমম।
আইরাত;; শুধু এটার জন্য এনেছেন আপনি এখানে আমায়?
আব্রাহাম;; না আমি ভাবলাম যে লাইফে সবকিছুই ট্রাই করা দরকার আসলে। সবকিছুর টেস্ট থাকা ভালো। তাই আর কি।

আইরাতের চোখে পরে রাস্তার ওপাশে থাকা সাদা কালারের গোলুমোলু দুটো কুকুর ছানা কে৷ তারা রাস্তার ওপাশে থাকায় এপাশে সহজে আসতে পারছে না। আর রাস্তায় বারবার গাড়ি যাতায়াত করছে। আইরাত আব্রাহাম কে কিছু না বলেই সোজা সেদিকে চলে যায়।
আব্রাহাম;; আইরাত! কোথায় যাচ্ছো?
আইরাত;; ওইতো দেখুন রাস্তার পাশে দুটো কত্তো সুন্দর কুকুর ছানা।
আব্রাহামের কিছু বলার আগেই আইরাত ছুটে গিয়ে চলে যায়। রাস্তা বেশ সাবধানে পার হয়ে ওপাশে চলে যায়। গিয়েই সোজা কুকুর দুটো কে নিজের কোলে তুলে নেয়। তার অনেক বেশি মায়া লাগে। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পাশে দাঁড়ায়। দেখে কুকুর গুলো আসলেই অনেক বেশি কিউট।

আইরাত;; কি কিউট তাই না!
আব্রাহাম;; হুমমম।
আইরাত;; না জানি কোন ***** এত্তো সুন্দর পাপ্পি গুলো কে এখানে ফেলে দিয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; হুয়াট? এটা কি ছিলো?
আইরাত;; গালি।
আব্রাহাম;; ?
আইরাত;; আব্রাহাম আমি এদের বাসায় নিয়ে যাই আমার সাথে করে?
আব্রাহাম;; আব……
আইরাত;; প্লিজ প্লিইইইইইইজ।
আব্রাহাম;; আচ্ছা, ঠিকআছে।

আইরাত তো খুশিতে গদগদ। আব্রাহামের বাইকের সামনে একটা ছোট্ট বেবি ব্যাগ নিয়ে নেয়। তাতে কুকুর দুটো কে বসিয়ে রেখে দিয়েছে। তারা অনেক টাই ছোট আর বড়ো বড়ো লোম যুক্ত। কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে। এদের নিয়েই আইরাত তার বাসায় চলে যায়। যখন থেকে বাসায় এসেছে তাদের নিয়েই পরে আছে। আর আব্রাহাম আইরাতের কান্ড দেখছে।
কিছুসময় পর রুমের দরজাতে নক পরে। আব্রাহাম গিয়ে দেখে হোটেলের মেনেজার এসেছে।
আব্রাহাম;; ইয়েস!

মেনেজার;; স্যার আমাদের হোটেলে সন্ধ্যায় একটা জাক-জমক পূর্ন পার্টির এরেঞ্জম্যান্ট করা হয়েছে। অনেকেই আসবে সেখানে। আর সেখানে কিন্তু আপনাকে মাস্ট আসতেই হবে। আপনি না এলে সবই ফিকে পরে যাবে।
মেনেজার আব্রাহাম কে একটা ভিআইপি ইনভিটেশন কার্ড দিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; জ্বি আমি অবশ্যই আসবো।
রুমের ভেতর থেকে পিনপিনিয়ে কিছু আওয়াজ মেনেজারের কানে পৌছায় তবে সে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে এক মুচকি হেসে সেখান থেকে দ্রুত বিদায় নেয়।
আব্রাহাম ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। দেখে আইরাত ফ্লোরে কুকুর গুলো কে নিয়েই বসে আছে।

আইরাত;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ বেবিগার্ল।
আইরাত;; আমি না এদের নাম দিয়েছি।
আব্রাহাম;; তাই!
আইরাত;; হ্যাঁ, একটার নাম টাফি আরেকটার নাম সফটি।
আব্রাহাম;; কিউট ঠিক ওদের মতোই।
আব্রাহাম তার হাতে থাকা ইনভাইট কার্ডে একবার তাকায় আর আরেকবার আইরাতের দিকে তাকায়। ভেবে শুনেই সব কাজ করতে হবে।

বিকেলের দিকে বেশ কতোগুলো স্টাফ আইরাত-আব্রাহামের কাছে আসে। আসলে পার্টি টা বেশ বড়োসড়ো হবে তাই এক এক জনের গেটাপ টাও হবে সেই ভাবেই। মূলত স্টাফ গুলো আব্রাহাম আর আইরাতের ড্রেস & বাকি সব ঠিক করার জন্য এসেছে। তবে আব্রাহাম নিজের পছন্দ অনুযায়ী তাদের জন্য ড্রেসাপ এবং অন্যান্য জিনিস চুস করে সবাই কে বাইরে চলে যেতে বলে। আইরাত কে সে রেডি করিয়ে দেয় নিজ হাতেই। একটা গাঢ় নেভি ব্লু কালারের গাউন পরিয়ে দেয়। পেছনে কিছুটা ব্যাকলেস আর হাতা গুলো গুটানো। আর আব্রাহাম সাদা-কালো সুট পরে নেয়। আইরাত আয়নার সামনে বসে বসে কানের দুল পরছিলো তখন আব্রাহাম আইরাতের পেছনে এসে দাঁড়ায়। আইরাত চোখ তুলে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। সামনে একটা ন্যাকলেস ছিলো তা আব্রাহাম নিজ হাতে তুলে নিয়ে আইরাত কে পরিয়ে দিতে দিতে বলে…

আব্রাহাম;; ইউ লুক প্রিটি।
আইরাত;; থাংকু।
আব্রাহাম আইরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। এক হাটু ভাজ করে আইরাতের সামনে বসে পরে। তার ঠোঁটের পাশে আলতো করে চুমু এঁকে দেয়। আইরাতও কিছু বলে না শুধু ক্ষনিকের জন্য নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়ে আবার মেলে তাকায়।
আইরাত;; আব্রাহ….
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল কিছু বলার আছে আমার তোমাকে।
আইরাত;; হ্যাঁ বলুন না।
আব্রাহাম;; একচুয়ালি আই নিড ইউর হেল্প।
আইরাত;; হেল্প? কিন্তু আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করবো!
আব্রাহাম;; তুমিই করতে পারো।

আইরাত;; আচ্ছা বলুন।
আব্রাহাম;; আসলে সত্যি বলতে আমি এখানে আমাদের হানিমুনের জন্য আসি নি।
আইরাত;; তাহলে?
আব্রাহাম;; কোহিনূর চুরি হয়ে গেছে৷
আইরাত;; মানে বুঝলাম না। কোহিনূর তাও আবার চুরি? কি করে সম্ভব এটা?
আব্রাহাম;; আমি শুধু জানি যে এই কোহিনূর চুরি হয়ে গেছে। আন্ডারগ্রাউন্ড এর যে অফিসার রা ছিলো তারা সবাই হন্নে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে। আর যতটুকু সম্ভব এই ব্যাপার টা মিডিয়া/প্রেস এইসবের থেকে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে। কেননা একবার শুধু একবার এই নিউজ পাবলিক হয়ে গেলে সবার সম্মুখীন হতে হবে সরকার কে আর…
আইরাত;; আপনাকে..!

আব্রাহাম;; হয়তো হ্যাঁ। কেননা কোহিনূর যেখানে ছিলো সেখানের পুরো গার্ড রা সব আমারই ছিলো। প্রশ্ন উঠবে আমার ওপর। আমার যাতায়াত ছিলো সেখানে, আঙুল উঠবে আমার ওপর। বাট এতে আমার কিছুই যায়-আসে না। আমি লোকজনের ব্যাপারে মাথা ঘামাই না একবিন্দুও। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে চুরি করলো কে? আর যেই করে থাকুক না কেনো ব্যাটা অনেক চালাক আর চুরির বিষয়ে তো এক্সপার্ট বলা যায়। কারণ এতো গুলো ক্যামেরা, গার্ড এদের চোখ ফাকি দিয়ে কোহিনূর চুরি করা মামার বাড়ির মোয়া না। স্পেশালি সেখানে ‘রেড ল্যাজার লাইট’ আছে। প্রচুর ক্ষতিকারক এই লাইট গুলো। হিউম্যান বডিতে লাইট লাগলে মানুষ পুরো পুড়ে যাবে। ইন ফ্যাক্ট মারাও যেতে পারে। তো এতো টাও ইজি না।

আইরাত;; এখন?
আব্রাহাম;; লিসেন এখানে কেউই জানে না যে তুমি আর আমি হাসবেন্ড এন্ড ওয়াইফ ওকে!
আইরাত;; কিহ?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ। আমি তা জানানোর প্রয়োজন মনে করি নি তাই জানাই নি। সেইদিন তোমাকে ওভাবে স্কাফ, মাস্ক, চশমা পরিয়ে নিয়ে এসেছি ফার্স্ট অফ অল তোমার সেইফটির জন্য আর সেকেন্ড হাইড করার জন্য। বিকজ এটা দরকারি ছিলো।
আইরাত;; মানে আপনার-আমার বিয়ের ব্যাপার টা পাবলিক না?
আব্রাহাম;; অন্তত এখানে না।
আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম;; এবার শোন আমরা হোটেলের সবথেকে বড়ো হলরুমে যাচ্ছি বুঝলে সেখানেই পার্টি হবে। এমন একটা ভাব ধরবে যে তুমি আমাকে চেনোই না। শুধু আমার সাথে নরমাল ভাবে যাবে ওকে। সেখানে অনেক রকমের মানুষ থাকবে, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। যে এসব কিছুতে তুমি অনেক এক্সপার্ট। যদিও প্রকৃতপক্ষে তুমি এক্সপার্ট ই। এখানে সব ফরেইন কান্ট্রির লোক। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে যে তুমি এখানে কোথায় থাকো বা আগে তো তোমাকে এখানে কেউ দেখি নি, কার সাথে এসেছো? তাহলে বলবে তুমি রুম নাম্বার ০৯ এ থাকো ওকে!

আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম;; মনে রেখো রুম নাম্বার ৯।
আইরাত;; কিন্তু ৯ ই কেনো?
আব্রাহাম;; এর উত্তর তুমি নিজেই পেয়ে যাবে। বুঝেও যাবে।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; আর হ্যাঁ বেবিগার্ল একদম ভয় পাবে না বুঝলে কারণ আমি সবসময় তোমার কাছে তোমার পাশে থাকবো। হ্যাঁ হতে পারে যে তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছো না তাই বলে এটা ভেবো না যে আমি নেই বা আমি তোমাকে দেখছি না। মাই আই”স আর ওলয়েস আপওন ইউ।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; যাওয়া যাক?
আইরাত;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম-আইরাত এসে পরে। আইরাত কে সোজা হোটেলের হলরুমে যেতে বললেও আব্রাহাম একটু ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে তারপর সেখানে যায়। আইরাত হলরুমের ওপরের বেশ বড়োসড়ো একটা সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে যেতে ধরে। আচমকাই রুমের বিশাল ফোকাস লাইট এসে পরে আইরাতের ওপর। সবার নজর যায় তার দিকে। তবে সে কোন কিছুই না ভেবেই সোজা নিজের মন মতো করে নিচে চলে যায়। সত্যি বলতে সবাই হা করেই তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। আর তাদের মাঝে তায়াফও ছিলো৷ সে হাতে নিজের কোর্ট টা ঝুলিয়ে নিয়ে হাতে একটা এলকোহলের গ্লাস নিয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত এইসব রেখে সোজা এলকোহল শপের সামনে গিয়ে বসে পরে।

পরিবেশের মাধুর্যতা ধরে রাখার জন্য একটা সফট মিউজিক প্লে করে দেওয়া হয়েছে। আইরাত আশে পাশে তাকাতাকি করছে৷ কেউ কেউ এক জায়গায় গোল হয়ে কথা বলছে, কেউ ফ্রেন্ড নিয়ে আবার কেউ ফ্যামিলি নিয়ে, আবার কেউ প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে ঘুড়ছে। সব বয়সের লোকজনই আছে এখানে। আইরাত মূলত আব্রাহাম কে খোঁজার চেষ্টা করছে কিন্তু তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। এমন এক অজানা-অচেনা পরিবেশে একা সে। তবে পূর্বে আব্রাহামের বলা কথা গুলো মনে করে করেই আইরাত নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে। তার ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটিয়ে দেয় একটা ছেলে। এ যেনো এক বিলেতি ইন্দুর। তাকে আইরাতের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আইরাত কপাল কুচকে ইচ্ছে করেই অন্য পাশে মাথা ঘুরিয়ে নেয়।

— Hay, you look really very beautiful..
আইরাত;; No chance bro so get lost..
ছেলেটা অবাক হয়ে তাকায় আর আইরাত তার দিকে তাকিয়ে এক টেডি স্মাইল দেয়। মিষ্টি সুরে অপমান। ছেলেটা চলে যায়। আইরাত একটা অরেঞ্জ জুসের অর্ডায় দেয়। কিছু সময় চলে যাওয়ার পর এনাউন্সমেন্টের আওয়াজে আইরাত সেদিকে তাকায়। আব্রাহাম আসছে।
আইরাত;; এহ কি ভাব! (মনে মনে)

আব্রাহাম এসে সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তবে কিছুটা চিল্লাপাল্লার শব্দে আইরাত তার পেছনে তাকায়। দেখে তিন থেকে চারজন মেয়ে মাতামাতি করছে আব্রাহাম কে নিয়ে। যেনো তাদের আর তর সইছে না। আইরাত তাদের দেখে সেন্টি খেয়ে যায়। মানে এটা কি! বউ এর সামনে মেয়েরা তার জামাই কে নিয়ে এতো খুশি। আইরাত এমন এক সিচুয়েশনে পরেছে যে সে না পারছে কিছু কইতে আর না পারছে কিছু সইতে। সবাই কে তাদের মতো করে থাকতে দিয়ে আব্রাহাম সাইডে এসে পরে। আর আব্রাহাম আইরাত কে যেভাবে থাকতে বলেছে আইরাত ফুল ট্রাই করছে সেভাবেই থাকার। আব্রাহাম গিয়ে আইরাতের পাশে একটা উঁচু চেয়ারে বসে পরে।

আইরাত কিছুটা গলা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। ওয়েটার এসে আব্রাহামের উদ্দেশ্যে “হ্যালো স্যার” বলে এক জাড় ওয়াইনের পেগ ট্রে রেখে যায় তার সামনে। আইরাত চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় তার দিকে। তবুও কিছু বলে না। আইরাত একমনে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম নিজে একদম সোজা হয়ে থাকলেও তা টের পেয়েছে বেশ। সে আইরাতের দিকে তাকালে সে আস্তে করে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে ফেলে৷ এভাবেই বেশ সময় যায়। তবে এর মাঝে কেউ কারো সাথে কথা বলে না। আইরাতের কথা বলার বেশ ইচ্ছে করছে কিন্তু সে অপারগ। আব্রাহাম কয়েক পেগ মেরে দেয় একসাথে।

তৎক্ষনাৎ একজন এসে হলরুমের মাঝেখানে দাঁড়িয়ে এনাউন্সমেন্ট করে একটা ‘গেইম ডান্স’ এর। এখানে সবাই কাপল থাকবে। প্রথমে সবাই নিজ নিজ পার্টনার কে নিয়ে কাপল হয়ে দাঁড়াবে। তবে পরবর্তীতে মিউজিকের তালে তালে পার্টনার তার স্থান পরিবর্তন করবে। এভাবে একে একে ঘুড়েফিরে সবাই আবার একটা কাপল হবে সে অচেনা হলেও কিছুক্ষন থাকতে হবে। তারপর আবার মিউজিক অন হলে তাদের স্থান পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ ঘুড়ে যেতে হবে। এভাবে যে একদম শেষ অব্দি নিজের আসল পার্টনারের সাথে টিকে থাকতে পারবে সেই বিজয়ী হবে।

তবে এক্ষেত্রে আরো একটা টুইস্ট আছে আর তা হলো এখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েরই পুরো মুখে বা শুধু চোখের অংশ টুকুতে বিভিন্ন ডিজাইন/কালারের মাস্ক থাকবে। পুরো হলরুমের আলো টাও কিছুটা ধোয়াসা থাকবে। সবাই কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে। হাতে গোণা শুধু কিছু কাপল দের বাদ দিয়ে আর বাকি সবাই এখানে পার্টিসিপ্যান্ট করে। আব্রাহাম উঠে চলে যায়। আইরাত ভাবে সে আর গিয়ে কি করবে তাই বসে বসে জুস খাচ্ছিলো তখনই একজন এসে আইরাতের সামনে নিজের হাত মেলে ধরে। আইরাত একবার তার হাতের দিকে তাকিয়ে আরেকবার হাতের মালিকের দিকে তাকায়। দেখে পুরো মুখ এক কালো ডিজাইন করা মাস্ক দিয়ে ঢাকা।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আব্রাহামের ডাকেই আইরাতের মুখে হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। তার আর বুঝতে বাকি থাকে না যে এই আব্রাহাম। আইরাত কিছু না ভেবেই সোজা আব্রাহামের হাতে নিজের হাত রেখে দেয়। তারা দুজনে এগিয়ে যায়। যাওয়ার সময় দুজন মেয়ে এসে আইরাতের চোখে দ্রুত একটা মাস্ক পরিয়ে দেয় তারপর চলে যায়। মিউজিক প্লে করে দেওয়া হয়। আব্রাহাম-আইরাত পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম আস্তে করে আইরাতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; যেভাবে সব চলছে তা চলতে দাও।
আইরাত;; হুম।

আব্রাহাম আইরাত কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে একহাতে তার আরেক হাত ধরে নেয়। আরেক হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। বাকিরাও তাই করে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে দুবার ঘুরিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে একটা চুমু বসিয়ে দেয়। আবার ঘুরিয়ে কিছু সময় ক্যাজুয়াল ডান্স করে আব্রাহাম আইরাত কে নিজের বাহুতে বেশ নিচু হয়ে ঝুকিয়ে নেয়। মিউজিক আবার প্লে হলে আইরাত এবার সাথে সাথে ঘুরে আরেক জনের কাছে চলে যায়। আব্রাহাম হাওয়া হয়ে যায়। আইরাত ডান্স আরেক জনের সাথে করলেও তার নজর যেনো আব্রাহাম কেই খুঁজছে। আইরাত সামনে তাকায়। দেখে একটা ছেলে। আইরাত তার সাথেই নাচছে। হঠাৎ করে সেই ছেলে টা বলে ওঠে…

— সংকোচ ফিল করবেন না। আমি অলরেডি বিবাহিত। কিন্তু করার কিছুই নেই রুলস আর রুলস। ফ্রেন্ড ভাবতে পারেন একদম ক্ষণিকের জন্য।
আইরাত বিনিময়ে মুচকি হাসে। আবার মিউজিকের তাল চেঞ্জ হয়ে গেলে আইরাত আবার ঘুরে যায়। আর এবার আইরাত যার কাছে যায় তার শুধু চোখ ই ঢাকা পুরো মুখ না। যার দরুন আইরাতের আর চিনতে বেশি একটা দেরি লাগে না। এই সেই কাল কে রিসোর্টে দেখা ছেলেটাই, তায়াফ। আইরাত বিরক্ত হয়। আবার চোখ ঘুরিয়ে আব্রাহাম কে খুঁজতে লাগে। কিন্তু সে নেই। তবে তায়াফের নজর আইরাতের দিকেই৷ আইরাত খেয়াল করে যে তায়াফের হাত টা আইরাতের দিকে এগিয়ে আসছে তবে তার আগেই আইরাত নাচের ছলে তার থেকে দূরে সরে আসে। তায়াফ সরু দৃষ্টিতে তাকায়।
তায়াফ;; দূরে চলে গেলে কাছেও আনতে পারি।

আইরাত;; এতো তাড়া কিসের! মনে রাখবেন গোলাপের সাথে কিন্তু কাটাও থাকে।
হুট করেই মিউজিকের থিম চেঞ্জ হয় আর আইরাত নিজেও হাওয়া হয়ে যায়। এবার ঘুরে গিয়ে আইরাত পরে এক ছোট বাচ্চা ছেলের সামনে। বাচ্চাটা কিউট প্রচুর। সাদা চুল সবগুলো, মুখটা দুধের মতো ফর্সা আর গালগুলো গাঢ় গোলাপি। পরণে কালো সুট। সে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে আইরাতের দিকে। আইরাত বড়ো একটা হাসি দেয় বাচ্চা টাকে দেখে। সেও হেসে দেয়।

— Dance with me??
আইরাত;; Of course…
আইরাত ছেলে টার থেকে বেশ লম্বা। এখন নাঁঁচবে কি করে। ছেলেটা কনফিউজড হয়ে যায়। তার কনফিউজড মাখা মুখটা দেখে আইরাত ফিক করে এসে দেয়। আইরাত ছেলেটার হাত ধরে নেয়। কোন রকমে নেচে আইরাত কিছুটা নিচে ঝুকে যায়। তারপর ছেলেটার হাতটা ধরে তাকেই কয়েক বার ঘুরিয়ে দেয়। হঠাৎ মিউজিকের থিম আবার চেঞ্জ এবার সবাই আবার ঘুরে যায়। আর এখন হুট করেই আব্রাহাম এসে আইরাত কে নিজের দিকে টান দেয়। আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে। আইরাত তো আব্রাহামের ছোয়া পেয়েই বুঝে গেছে যে এই আব্রাহাম। আইরাত আর আব্রাহাম কে ডান্স কাপল হিসেবে চলে যেতে দেখে ওই ছোট ছেলেটা মন খারাপ করে। আব্রাহাম নিজেও হেসে দেয় ব্যাপার টা বুঝে।

আব্রাহাম;; Now she is mine..
আইরাত ছেলে টার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে…
আইরাত;; But still you are my favourite dance partner…
ছেলে টা হেসে দেয়। তারপর একটা ছোট মেয়ে আসলে সেও তার সাথে চলে যায়। আইরাত নাচতে নাচতেই আব্রাহাম কে জিজ্ঞেস করে…

আইরাত;; এই কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?
আব্রাহাম;; অন্য মেয়ে দের সাথে নাচতে।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; কাজ ছিলো।
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; চলো এখন এখান থেকে।

আইরাত;; আরে না আমি এই গেইম টা জিতবোই জিতবো৷ আমি যেতে পারবো না।
আব্রাহাম;; আইরাত এটা শুধুমাত্রই একটা গেইম ছাড়া আর কিছুই না। চলো৷
আইরাত;; কিন্তু আমি জিতবো তাও আবার আপনার সাথে।
আব্রাহাম;; আইরাত খেলায় হার-জেত তো থাকেই তাই না।
আইরাত;; আমি হারবো না।
আব্রাহাম;; আমি কখনো হারতে শিখি নি আইরাত। তবে মাঝে মাঝে হারতে হয়। হোক তা ইচ্ছে করেই। কেননা না হারলে কখনো জেতার স্বাদ তুমি পাবে না।
আইরাত;; হুম।
আব্রাহাম;; কিন্তু আমি তো আমার আইরাত কে জিতে গেছি।
আইরাত;; হুম।
আব্রাহাম;; মুখটা গোমড়া করলে কিন্তু চুমু দিয়ে বসবো।
আইরাত;; শরম ছাড়া পোলা।

আব্রাহাম;; চলো (হেসে)
আব্রাহাম-আইরাত কে নিয়ে চলে যায় হলরুমের ওপরের ফ্লোরে। সেখানেও অনেকেই আছে। পুরো হোটেলেই পার্টি। তবে ভেতরে যাবার আগে আব্রাহাম আইরাত কে সব বুঝিয়ে দেয়। আইরাত কে সামনে দিয়ে যেতে বলে সে পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে বলে ঠিক করে। আর আইরাত যেনো ভেতরে গিয়ে একটু বেপরোয়া ভাব নিয়ে চলে এমন। টেবিল নং ১৭ তে গিয়ে বসে থাকতে বলে। তারপর আইরাত কে কি করতে হবে তা সে জানে। আইরাতের চুল ছোট ছোট ক্লিপ দিয়ে খোপা করা ছিলো সুন্দর করে। তা আব্রাহাম তার হাত দিয়ে খুলে দেয়।

আইরাতের চুলগুলো পিঠে আর সামনেও বেশ ছড়িয়ে দেয়। আইরাতের কানে একটা ব্লুটুথ গুজে দেয় আব্রাহাম। নিজের ব্লুটুথের সাথে কানেক্ট করে নেয়। অর্থাৎ দুজনেই কানেই ব্লুটুথ যা একে অপরের সাথে যুক্ত করা। তবে তা আইরাতের চুলের ভাজে ঢাকা পরে গেছে। আব্রাহাম চলে যায় আর আইরাতও ভেতরে চলে যায়। আইরাতের ভেতরে যেতেই সবার নজর তার দিকে যায়। অনেক ছেলে বসে আছে এখানে যাদের পাশের টেবিল টাও ফাকা। তারা যেনো ভেবে রেখেছে যে আইরাত এখানেই বসবে। তা ভুল প্রমাণ করে দিতে আইরাত গিয়ে বসে ১৭ নং টেবিলে।

গা এলিয়ে বসে। আইরাত ইচ্ছে করেই নিজের ব্যাগ থেকে একটা লিপস্টিক বের করে সবাই কে দেখিয়ে দেখিয়ে নিজের ঠোঁটে লিপস্টিক ঘষতে লাগে। নিজেকে খাপছাড়া বানাচ্ছে সে। তবে তা লিমিটে থেকে। আইরাত খেয়াল করে দেখে যে সে যেই টেবিলে বসে আছে সেখানের এক কোণায় লিখা “বুকড” অর্থাৎ টেবিল টা বুক করা।
আইরাত;; না জানি কার টেবিলে এসে বসলাম। (ফিসফিস করে)

কিছুসময় পর একটা ব্রাউন কালারের শার্ট-সুট পরিহিত একজন লোক আসে। সে আইরাত কে তার টেবিলে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক। এতোক্ষন পেছনের দিক থেকে আইরাত কে দেখলেও এবার যেনো আইরাতের সামনে আসে। আইরাত দেখে তাকে। তবে তার মাঝে কোন নড়চড় নেই। আইরাত একটা বেখেয়ালি ভাব নিয়ে হাই তুলে ?। এবার আর চুপ করে বসে থাকতে না পেরে ওপর পাশের লোকটা বলে ওঠে…

উল্লাস;; কে আপনি?
আইরাত;; যাহ বাবা আপনি তো দেখি চোখ থাকতেও কানা। দেখছেন না আমি মানুষ। আপনি কে?
উল্লাস;; উল্লাস শেখ আমি।
আইরাত;; ওহহ ভালো।
উল্লাস;; আপনি আমার টেবিলে বসে আছেন।
আইরাত;; কেনো টেবিল কি আপনার বাপের নামে লিখা নাকি!!
এটা শুনেই উল্লাসের পাশে থাকা একজন গার্ড কিছু বলতে যাবে কিন্তু উল্লাস তাকে থামিয়ে দেয়।

উল্লাস;; আপনি কার সামনে বসে আছেন খেয়াল আছে?
আইরাত;; খেয়াল থাকার প্রয়োজন মনে করি না আমি।
উল্লাস;; অনেক চালু মেয়ে আপনি।
আইরাত;; এছাড়াও আমার ধীর গতির জিনিস মোটেও পছন্দ না।
উল্লাস;; আমাকে দেখে যেখানে সবাই সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে সেখানে আপনি এই এটিটিউড নিয়ে আমার সাথে কথা বলছেন।

আইরাত টেবিলের ওপর নিজের হাত রেখে কিছুটা ঝুকে চোখজোড়া সরু করে বলে ওঠে…
আইরাত;; জনাব, খোঁজ নিয়ে দেখুন যেসব লোকগুলো আপনাকে স্বসম্মানের সাথে সালাম দেয়। ঠিক তারাই আপনার চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আপনার পিঠ পিছে থুথু ফেলে।
আইরাত একদম সোজা হয়ে বসে। উল্লাস তো চটে যায়।
উল্লাস;; মনে হচ্ছে না আপনি বেশিই বকছেন একটু!
আইরাত;; হে ট্যাক এ চিল পিল। সত্য কথা সবসময় তেতোই হয়।

উল্লাস;; আর ইউ সিঙ্গেল?
আইরাত;; হ্যাঁ, কি করবো বলুন কাউকে আজ অব্দি খুঁজেই পেলাম না।
উল্লাস কে কিছু বলতে না দিয়েই আইরাত বলে।
আইরাত;; তবে ক্রাশ আছে। আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর ওপর।
আব্রাহামের নাম নিতেই উল্লাস তার হাতে পাশে থেকে একটা কাটা চামচ তুলে নেয়।
উল্লাস;; কোন কানেকশন আছে কি আপনার তার সাথে?
আইরাত;; হ্যাঁ আগামীতে একটা ডিল ফাইনাল করার কথা উনার সাথে এই যা।
উল্লাস;; গুড।
আইরাত;; হুমম।

উল্লাস;; আজ রাতে কি আমরা দেখা করতে পারি?
আইরাত;; অবশ্যই, কেনো না।
উল্লাস;; তো আপনি কত নং রু……
আইরাত;; রুম নাম্বার ০৯।
উল্লাস;; ৯?
আইরাত;; ইয়াহ।
উল্লাস;; ওকে।
আইরাত;; বায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ২৪+২৫+২৬

এই বলেই আইরাত চলে আসে। সেই ফ্লোর থেকেই জলদি চলে আসে। আর বাইরে আসতেই বুক ভরে দম নেয়। কানের পিঠে চুল গুজে ব্লুটুথ চেপে ধরে কানের সাথে হ্যালো বলে।
আইরাত;; হ্যালো আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; সামনে তাকাও।
আইরাত কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে সামনে তাকায় দেখে আব্রাহাম তার জন্যই অপেক্ষা করছে। আইরাত আব্রাহামের কাছে চলে যায়।
আব্রাহাম;; বেবিগার্ল!
আইরাত;; হুমমম।
আব্রাহাম;; ইউ সুড ট্রাই ইন মুভি ইন্ডাস্ট্রি।
আইরাত;; কেনো?

আব্রাহাম;; তুমি এতো ভালো এক্টিং পারো তা জানা ছিলো না।
আইরাত;; হ ঘোড়ার আন্ডা। কিসের ভেতরে যে ছিলাম আল্লাহ জানে। তবে লোক টাকে কথায় কথায় নিচু দেখিয়ে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। মন চাইছিলো আরো করি কিন্তু এসে পরলাম। আচ্ছা ও কে?
আব্রাহাম;; সব জানতে পারবে। সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে শুধু রাত অব্দি একটু ধৈর্য ধরো।
আইরাত;; সে আজ রাতে দেখা করতে বলেছে।

আব্রাহাম;; দেখা তো অবশ্যই হবে। তবে তা হয়তো উল্লাসের সাথে তার মৃত্যুর। যদি আমার সন্দেহ টা ঠিক বের হয় তাহলে কপালে মরণ লিখা আছে ওর।
আইরাত;; আপনার মাথায় কি খিচুড়ি পাকছে আসলে?
আব্রাহাম;; বললাম তো সবই বুঝে যাবে জাস্ট ওয়েট।
আইরাত আর আব্রাহাম দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান করে। যেনো তাদের কেউ দেখে না ফেলে একসাথে। আব্রাহাম হাঁটতে হাঁটতে এসে আইরাত কে রুম নাম্বার ৯ দেখিয়ে দেয়। তারপর আবার তারা চলে যায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৩১+৩২+৩৩

3 COMMENTS

Comments are closed.