নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ গল্পের লিংক || Tamanna Islam

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ১+২+৩
লেখিকাঃ Tamanna Islam

— যেভাবেই হোক আমার ওই মেয়েকে চাই। ডু ইউ গেট দ্যাট। যে কোন মূল্যেই আমার ওই মেয়েকে চাই হয়তো জীবিত নয়তো মৃত।
মাত্রাতিরিক্ত ক্ষোভ আর রাগ নিয়ে ফোনের ওপর পাশে থাকা ব্যাক্তিকে উপরিউক্ত কথাটা বলে উঠলো আব্রাহাম। মাত্রার বাইরে চলে গিয়েছে রাগ। তবে কথা টা শেষ হতে না হতেই তীব্র বেগে কেউ একজন ছুটে এসে আব্রাহাম কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে একদম আষ্টেপৃষ্টে। হুট করে এমন হওয়াতে আব্রাহাম বেশ অবাকই হয়।

সে কোন রকমে ঘুড়ে দেখে একটা মেয়ে একেবারে ভয়ে শেষ। তার সামনে ঘুড়তেই এবার যেনো মেয়েটা আব্রাহামের বুকে ঝাপিয়ে পরে। দুইহাতে আব্রাহামের জেকেট টা খামছে ধরে। আব্রাহাম বুঝলো যে সে রীতিমতো কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে। আব্রাহাম তার হাত দুটো খানিক ওপরে তুলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। আর মেয়েটা তার চোখ-মুখ খিচে বন্ধ করে আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— প প্ল প্লিজ আম আমাকে বাঁচান। একটু সাহায্য করুন প্লিজ নয়তো, নয়তো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। প্লিজ আ আমাকে এ একটু হ হেল্প করুন।
বেশ আকুতির স্বরেই মেয়েটা আব্রাহাম কে এই কথা টা বলে ওঠে। মেয়েটার গরম নিঃশ্বাস সব আব্রাহামের বুকের ওপর আছড়ে পরছে। আব্রাহাম এবার খেয়াল করে দেখে যে মেয়েটা পরণে একটা সাদা গোল জামা রয়েছে, যাতে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে। হাতের বেশ অংশ কেটেছে। এটা ব্যাসিক্যালি একটা হাইওয়ে রোড আর বেশ নীরব-শুনশান। এখানে এতো রাতে কারো থাকার কথা না।

কিন্তু এখানে একটা মেয়ে এই অবস্থায়। ব্যাপার টা বেশি একটা সুবিধের না অবশ্যই। আব্রাহাম কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই বেশকিছু লোক দ্রুত পায়ে দৌড়িয়ে এদিকে এগিয়ে আসে। হাতে তাদের ছুরি। আব্রাহাম তাদের দেখে, তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আসলে কি হয়েছে। লোকগুলো হন্নে হয়ে আশেপাশে মেয়েটাকে খুঁজে যাচ্ছে। তাদের দেখতেই আব্রাহাম মেয়েটাকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে দ্রুত ওপর পাশে ঘুড়ে যায়।

এমনভাবে মেয়েটাকে নিজের বুকে ধরে রাখে যেনো বুঝায় যাচ্ছে না। যদিও লোকগুলো আরো একটু সামনে এগোলে তাদের দেখতে পায়। লোকগুলো ভেবেছে যে তারা কাপল তাই সেদিকে আর যায় না। সেখানে আরো কিছুক্ষন খোঁজাখুঁজি করে তারপর তারা সেখান থেকে চলে যায়। তাদের চলে যেতেই আব্রাহাম মেয়েটাকে নিজের বুক থেকে কিছুটা আলগা করে ধরে। কোন নড়াচড়া নেই তার এখন। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে।

আব্রাহাম তার হাত দিয়ে মেয়েটির মুখের ওপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। এখন মেয়েটার মুখটা একেবারে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মেইন রোডের ল্যাম্পপোস্টের আলো সম্পূর্ণই যেনো তার মুখে ছড়িয়ে পরেছে। মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে পরেছে। কপালের পাশেও ক্ষত রয়েছে। কাধে রয়েছে একটা ছোট্ট ব্যাগ। আব্রাহাম এতো রাতে আর কোন উপায় না পেয়ে মেয়েটাকে পাজাকোলে তুলে নিলো। তারপর নিজের গাড়িতে বসিয়ে দেয়। আব্রাহাম নিজের জেকেট টা খুলে পেছনের সীটে রেখে দেয়। তারপর নিজেও গাড়িয়ে ওঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দেয়।

দেখতে দেখতে একটা সময় গাড়ি এসে থামে আলিশান এক বাড়ির সামনে। চারিপাশে অনেক গার্ড”স। আব্রাহামের গাড়ি আসতে দেখেই গার্ড রা দুই পাশ থেকে মেইন গেট খুলে দেয়। আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে পরে। গাড়ি থেকে প্রথমে নিজে নামে। তারপর ওপর পাশে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে সেই মেয়েটাকে আবার পাজাকোলে তুলে নেয়। গাড়ির ভেতর থেকে মেয়েকে বের করতে দেখে একজন গার্ড হা করে তাকিয়ে থাকে।

কেননা আব্রাহাম আজ অব্দি তার সাথে কোন মেয়েকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে নি। আব্রাহাম তা খেয়াল করে গার্ড টার দিকে নিজের অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। গার্ড মাথা নামিয়ে চলে যায়। আর আব্রাহাম মেয়েটাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে এসে পরে। বাড়ির ভেতরে যেতেই হলরুমে আব্রাহামের দাদি ইলা বেগম সহ আরো স্টাফ রা ছিলো। তাদের সবাইকেই এড়িয়ে আব্রাহাম মেয়েটাকে নিয়ে সোজা নিজের বেডরুমে চলে যায়। আর সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম গিয়ে মেয়েটাকে আলতো করে শুইয়ে দেয়। তার পায়ের দিকে চোখ যেতেই আব্রাহাম দেখে যে পায়ের ওপরেও বেশ কিছু অংশ কেটে গেছে। তা দেখে আব্রাহাম মুখ কুচকায়। অর্থাৎ যে কিনা একটা মানুষ কে নির্মমভাবে খুন করতেও দ্বিতীয় বার ভাবে না সে কিনা এখন এই সামান্য ক্ষত দেখে এখন মুখ কুচকাচ্ছে। আব্রাহাম দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই রুমে তার দাদি ইলা আসে।

বেশ অনেকটা সময় পর আইরাত তার বাড়িতে আসে। আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরলেই ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে যায়। সে আস্তে ধীরে বাড়ির ভেতরে যেতে লাগে। আর ভেতরে যেতেই সাবিলা শেখ (আইরাতের ফুপু) এক চিল্লানি দিয়ে ওঠেন…
সাবিলা;; ওইতো, ওইতো এসে গেছে মহারাণী। কিরে সারারাত কোথায় ছিলি? বাড়ি আসিস নি কেনো আর কপাল কাটলো কিভাবে?

সাবিলার কথাতে চমকে গিয়ে অনামিকা খাতুন দ্রুত নিজের পেছনে দরজার দিকে তাকান। দেখে আইরাত দাঁড়িয়ে আছে। আইরাতকে দেখেই অনামিকা এগিয়ে যান।
অনামিকা;; কিরে কোথায় ছিলি তুই? এত্তো বার ফোন করলাম বন্ধ দেখায়। অবনি (আইরাতের ফ্রেন্ড) কে যে ফোন করবো তারও নাম্বার ছিলো না। ছিলি কোথায় সারাটা রাত তুই হ্যাঁ? এভাবে একটা মেয়ে বাড়ির বাইরে থাকে রাতে? আর একি কপালে ক্ষত কেনো, কি হয়েছে?
আইরাত;; আস্তে মা প্লিজ হাইপার হইয়ো না। সব বলছি।
সাবিলা;; আর কি বলবি তুই, তোকে তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে কোথায় ছিলি রাতে আর কি কি করেছিস!
অনামিকা;; সাবিলা! মুখ সামলে। ভুলে যেও না আমার সামনে তুমি আমাকে মেয়েকে কথা বলছো। যা বলছো একটু খেয়াল করে বলো।

সাবিলা তার মুখটাকে একদম বিষ বানিয়ে দিয়ে অন্য পাশে ঘুড়ে তাকান। আইরাত গিয়ে সোফার ওপর বসে পরে। পা কেটে গেছে যার দরুন বেশি হাটতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয় তার। আর সেই মহিলাটি হচ্ছেন আইরাতের ফুপু সাবিলা শেখ। আইরাতের বাবার ছোট বোন। স্বভাবতই একটু কুটনি টাইপের মহিলা। আইরাতের মা অনামিকাও আইরাতকে এতোটা শাসন করেন না যতটা সাবিলা করতে চায় তাকে। কিন্তু আইরাতের কাছে এগুলো নিতান্তই বেশ বিরক্তিকর আর আজাইরা লাগে। তাই এড়িয়ে যায়।

আর সাবিলা তাকে কিছু বললেও আইরাত যেনো সহ্য করতে পারে না তাই পাল্টা জবাব টা তার ফুপির জন্য সবসময় তৈরিই থাকে। আর সাবিলার একটা গুনধর ছেলে আছে নাম নিলয়। বলা যায় বড়োলোকের বিগড়ে যাওয়া ছেলে। আর সাবিলা তাকেই আইরাতের সাথে বেধে দিতে চায়। মানে আইরাতের সাথে নিলয়ের বিয়ে দিতে চায় কিন্তু আইরাত আর তার মা অনামিকা এতে কখনোই মতো দিবে না। অনেকবার ইশারা ইঙ্গিতে সাবিলা কে এই কথা বুঝাতে চেয়েছে কিন্তু সে তো সেই। যাই হোক আইরাত সোফাতে পা গুলো তুলে বসে। পা গুলো ওপরে তুললে অনামিকা দেখে আইরাতের পায়েও কেটে গেছে। এটা দেখে যেনো আর তিনি ঠিক থাকতে পারলেন না।

অনামিকা;; কিরে এতো জায়গায় ব্যাথা পেয়েছিস কীভাবে? আচ্ছা কি হয়েছে তা কি বলবি তুই?
আইরাত;; আসলে আমি অবনির বাসাতেই ছিলাম। মানে আমার কাজ শেষ করে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো বুঝলে আর আসলে আবনির গতকাল জন্মদিন ছিলো তো তাই আমাকে এক প্রকার টেনেই নিয়ে গিয়েছে। আমাকে ছাড়তেই চাইছিলো না। আর কোন উপায় না পেয়ে থেকে যাই। কাল বাসায় আসলে কারেন্ট ছিলো না তো তাই ফোনের ব্যাটারি অফ ছিলো। আড্ডা দিতে দিতে মাথা থেকে বেরই হয়ে গিয়েছিলো। আর এই ব্যাথা গুলো আর বলো না রাস্তায় আসার সময় পরে গিয়েছিলাম। সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে।

আইরাতের কথায় অনামিকা কেমন মিথ্যে মিথ্যে গন্ধ পাচ্ছে। কিন্তু তবুও বাদ দেয় এই প্রসঙ্গ।
আইরাত;; আচ্ছা তো কি করো সবাই আর ফুপি কখন এসেছো তুমি?
সাবিলা;; এসেছি এইতো ঘন্টা খানেক হবে।
আইরাত;; হুমম ভালো।
অনামিকা;; ফ্রেশ হয়ে খেতে আয় জলদি। সাবিলা তুমিও এসো।
সাবিলা;; না না আমি এখন আর খাবো না কিছু। আমি যাই পরে আবার আসবো।
আইরাত;; না আসলেই ভালো (ফিসফিস করে)
অনামিকা আইরাত কে কিছুটা গুতো দিয়ে চুপ করে থাকতে বলে।
সাবিলা চলে যায়। আর আইরাত নিজের ব্যাগ টা হাতে নিয়ে রুমে চলে আসতে যাবে তখনই অনামিকা তার হাত ধরে থামিয়ে দেয়।

আইরাত;; মা
অনামিকা;; সবকিছু সত্যি ছিলো তো?
আইরাত;; হ্য হ হ্যাঁ মা, এখন আমি যাই।
আইরাত নিজের রুমে চলে যায়। আইরাত রুমে গিয়েই তার দরজা লাগিয়ে দম ছাড়ে। ব্যাগ টা বিছানাতে রেখে দেয়। কাল কি হয়েছে তাই ভাবতে লাগে। ভাবা যায়,, আব্রাহাম অর্থাৎ যার নামেই কিনা রিপোর্ট করেছে তার কাছেই সে রাতে ছিলো। তাও আবার ভুয়া রিপোর্ট। ভাগ্যিস কাল রাতে আব্রাহাম ছিলো নয়তো সত্যি সত্যি ওই মেয়ে পাচারকারী লোকদের হাতে তাকে মরতে হতো। কিন্তু আব্রাহাম তো বললো যে সেও নাকি আইরাতকে খুন করার ফন্দি আটছিলো। যাক কিছু তো আর করেনি। আইরাত উঠে গিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কপালে পানির ফোটা গুলো পরতেই যেনো তীব্র জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে যায়। তবুও ফ্রেশ হয়ে চুল গুলো মুছতে মুছতে এসে পরে। এসেই দেখে বিছানার ওপর ফোন বাজছে। হাতে নিয়ে দেখে অবনির কল।

আইরাত;; হ্যালো…
অবনি;; কিরে কোথায় তুই?
আইরাত;; মাত্র বাসায় আসলাম।
অবনি;; কি?
আইরাত;; আব…না মানে কিছুনা আমি বাসায়।
অবনি;; অফিসে আসলি না কেনো? জানিস কতোগুলো মাসালা দার খবর পেয়েছি।
আইরাত;; যেমন?
অবনি;; কোন যেনো এক গ্রামে একটা একশ বছরের বুড়ো বাবা হয়েছেন।
আইরাত;; হুয়াট?
অবনি;; আরে হ…

আইরাত অবনির কথা শুনে হাসতে হাসতে প্রায় পরেই যায়। সিরিয়াসলি! বড়ো নানা-দাদা হবার বয়সে বাবা হচ্ছে মানুষ।
অবনি;; আচ্ছা তুই কি অফিসে আসবি?
আইরাত;; না এখন আর অফিসে যাবো না। শোন এককাজ কর বাইরে আয় দেখা করি।
অবনি;; আচ্ছা।
আইরাত;; আর পারলে ওই হাদারাম তৌফিক কেও নিয়ে আসিস।
অবনি;; আচ্ছা। তাহলে আমরা কিছুক্ষণ পর বের হচ্ছি।
আইরাত;; ওকে
এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয়। নিচে নেমেই দেখে অনামিকা টেবিলে খাবার বাড়ছে।
অনামিকা;; আয় দেখি খাইয়ে দিচ্ছি।
আইরাত;; হুমম।
অনামিকা একদম ঠেসে ঠেসে আইরাত কে খাইয়ে দিতে লাগে।
আইরাত;; আরে আস্তে তো।

অনামিকা;; আমার কাছে ঠেসে ঠুসে খাওয়াতে মানে একদম পেট ভরিয়ে খাওয়াতে অনেক ভালো লাগে।
আইরাত;; হ্যাঁ তোমার তো লাগবেই। আচ্ছা আমি আর খাবো না।
অনামিকা;; আরে মাত্র কয়েক লোকমা খেলি আরো খা!
আইরাত;; পেটে জায়গা নেই মোটেও।
অনামিকা;; কি, তুই কি ডায়েট করছিস নাকি?
আইরাত;; এই জিনিস টা আমার দ্বারা সম্ভব না। আর আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।
অনামিকা;; ব্যাথা না পেয়েছিস আবার বাইরে যাবি!
আইরাত;; আরে এইটুকু ব্যাপার না ভালো হয়ে যাবে। আর কিছু কাজ আছে তাই যাচ্ছি।
অনামিকা;; আচ্ছা সাবধানে যাস আর জলদি ফিরে আসিস।
আইরাত;; আচ্ছা।

আইরাত ওপরে গিয়ে রেডি হয়ে নেয় তারপর চলে যায়। একটা ফাস্ট ফুডের শপ আছে সেখানেই অবনি আর তৌফিক বসে ছিলো, আইরাতেরও সেখানেই আসার কথা। আইরাতের যেতেই অবনি তাকে দেখে হাসে তবে তার কপাল আর হাতের দিক টা নজরে পরতেই অবনির হাসি উধাও। আইরাত এসে টেবিলে বসে পরে তাদের সামনে।
আইরাত;; What’s up guy”s…
অবনি;; ব্যাথা পেলি কি করে রে?
আইরাত;; কাহীনি আছে।
তৌফিক;; তোর তো রোজ রোজ কিছু না কিছু কাহীনি থাকেই।
আইরাত;; এই বারের টা আলাদা।
অবনি;; আচ্ছা কি হয়েছে এখন কি খুলে বলবি!
আইরাত;; যার খোঁজে ছিলাম মানে যাকে নিয়ে আমি এতো বড়ো একটা কথা ইতোমধ্যে রটিয়ে দিয়েছি তার কাছেই ধরা খেয়েছি। অল্পের জন্য মরতে মরতে বেঁচেছি।

তৌফিক;; মানে?
আইরাত;; Guess what?
অবনি;; হুয়াট?
আইরাত;; আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর বাসায় ছিলাম আমি কালরাত। যদিও তা একটা কাকতালীয় ব্যাপার।
তৌফিক;; কিইইইইইইই? এই কি কস? তুই কালকে মানে আব্রাহাম স্যারের বাসায় ছিলি। সত্যি??
আইরাত;; জ্বি।
অবনি;; মানে যার নামে….

আইরাত;; আজ্ঞে হ্যাঁ যার নামে আমি মেয়ে পাচারের অভিযোগ লাগিয়েছি সেই।
তৌফিক;; ওহ গড। তুই এখনো বেঁচে আছিস আমার বিশ্বাস হয় না।
অবনি তার সামনে থাকা পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেয়। তারা আইরাতের কথা বিশ্বাস করেছে কেননা মিথ্যা কথা বলার মতো মেয়ে আইরাত না।

আইরাত;; আসলে কাল অল্পের জন্য এইসব লোক মানে যারা ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত তাদের হাতের নাগাল থেকে বেঁচেছি। তারা আমাকে দেখে ফেলেছিলো। আমি তো দৌড়, রাস্তায় পরে গিয়েছিলাম হোচট খেয়ে তাই এভাবে ব্যাথা পেয়েছি। সত্যি ভয় পেয়েছিলাম কাল রাতে তাই সামনে কে আছে তা না দেখেই হেল্প চাই। পরে আর কিছু মনে নেই আমার। যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেকে একটা আলিশান ঘরে আবিষ্কার করি আর তার কিছুক্ষন পরেই নিজের সামনে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী কে৷ বিশ্বাস কর এক মূহুর্তের জন্য তো তাকে দেখে আমার পরাণ পাখি উড়ালই দিয়েছিলো। আর জানিস আমি বুঝতে পেরেছি যে এই সব কাজে অর্থাৎ স্পেশালি মেয়ে পাচারকারী দের সাথে তো আব্রাহাম চৌধুরীর কোন যোগাযোগই নেই। সে এগুলোর ধারে কাছেও নেই। আমি অযথা একটা মানুষের নামে মিথ্যে অপবাদ দিলাম সব না জেনে বুঝেই ধ্যাত।

আইরাতের সব কথা শুনে তৌফিক আর অবনি দুজনেরই সোজা মাথায় হাত।
আইরাত;; আমি তো ভেবেছিলাম আব্রাহাম চৌধুরী রাগে আমাকে মেরেই ফেলবে কারণ কাজই করেছি আমি এমন কিন্তু না বাইচ্চা আছি বইন আমি।
অবনি;; আন্টি জানে এগুলো?
আইরাত;; আরে না না কি বলিস। আম্মু জানবে তাও এগুলো প্রশ্নই আসে না। আম্মু কে বললে সে আমাকে বাসা থেকেই আর বের হতে দিবে না। আর আমার এতো স্বাধের চাকরি টাও যাবে৷ আমি মা কে এটা ওটা বলে বুঝ দিয়েছি আর বলেছি যে আমি গতকাল তোর বাসাতে ছিলাম ব্যাস।

অবনি;; কি? শেষে কিনা আমার কথা বললি?
আইরাত;; হুমমম।
অবনি;; যাক বলেছিস ভালো করেছিস। আচ্ছা শোন না আইরু!
আইরাত;; কি?

অবনি;; আহাম…আহাম মানে বলছিলাম কি যে আব্রাহাম চৌধুরী তো অনেক বেশি হ্যান্ডসাম হবে তাই না বল। আমি তো টিভির সামনে গিয়ে বসে থাকি যে কখন তাকে দেখাবে। হায় তার হাটা, কথা বলার স্টাইল, উনার ওই পারসোনালিটি দেখেই আমি তো ক্রাসের সাগরে ডুবে যাই। বল না বল না অনেক চার্মিং হবেন উনি তাই না!

আইরাত তার চোখ গুলো ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে অবনির দিকে। যেখানে কাল রাতে আইরাতের জীবন নিয়ে টানাটানি লেগে গিয়েছিলো সেখানে এই মেয়ে কিনা আব্রাহামের চার্মিং ন্যাস নিয়ে পরে আছে। তার এত্তো রাগ হলো সে সোজা অবনির চুল ধরে দেয় এক টান। অবনি ব্যাথা পেয়ে মাথায় এক পাশে হাত দিয়ে ডলতে লাগে।
তৌফিক;; আচ্ছা শোন সবাই আগামীকাল একটা কনফারেন্স মিটিং আছে ওকে। সেখানে সব ভিপি রা আসবে। সো মেয়েরা হাতে পেন & নোট নিয়ে বসে পরো। তোমাদের কেই সব সামলাতে হবে।

আইরাত;; আর তুই কি মুড়ি ভাইজ্জা বালু খাবি?
তৌফিক;; আরে না রে আমিও থাকবো সেখানে।
আইরাত;; হুম বুঝলাম।
আরো বেশ সময় সবাই একসাথে থেকে আড্ডা দিয়ে এসে পরে। তিনজন তিন দিকে চলে যায়। তবে আইরাত যখন ফুড শপের বাইরে আসে তখন সে হাটছিলো। আকাশে মেঘ করেছে। ইতোমধ্যে ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও নেমে পরেছে। আইরাত যতই হাঁটছে ততই তার কেমন যেনো মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ একজন তাকে ফলো করছে। আইরাত হাঁটলে সেও হাঁটছে আর আইরাত থামলে সেও থামছে। ক্ষণে ক্ষণে যেনো আইরাতের সন্দেহ টা আরো গাঢ় হতে লাগে। তাই আইরাত দ্রুত পা চালিয়ে এসে পরে। রিকশা করে ওঠে বাসায় চলে আসে। রাতে দরকার পরলে তাকে আবার অফিসে যেতে হবে।

আরেকদিকে চলছে তুমুল গোন্ডগোল। কেননা আইরাত আব্রাহাম কে নিয়ে ভুল বুঝে নিউজ টা করলেও এবার যেনো তার সাথে সাথে তাল তাল মিলিয়ে আরো বেশ কয়েক জন এই একই কাজ করে। একটা পর্যায়ে এসে আব্রাহাম বুঝলো যে এগুলো ষড়যন্ত্র ছাড়া বা আব্রাহামের ইমেইজ কে নষ্ট করা ছাড়া আর কিচ্ছুই না। তবে কথায় আছে না যে “বাপেরও বাপ থাকে”।

রাশেদ;; স্যার পুরো এক ট্রাক মেয়েকে নেওয়া হয়েছে এদের হয়তো দুবাই-এ পাচার করে দেওয়া হবে।
আব্রাহাম;; এতোই সোজা নাকি!
রাশেদ;; স্যার যা করার খুব জলদি করতে হবে।
আব্রাহাম;; ট্রাকটা কি এই শহরেই?
রাশেদ;; জ্বি স্যার তাদের ট্র‍্যাকও করতে পেরেছি।

আব্রাহাম;; ফলো করো,যতদূর যায় তাদের ফলো করো। আর আমাদের এখান থেকে জলদি যাওয়ার ব্যাবস্থা করো।
রাশেদ;; কিন্তু স্যার ট্রাকটা যেখানে গিয়েছে সেটা সম্পূর্ণই “রেড লাইট এড়িয়া”।
আব্রাহাম;; রাশেদ করার এখন কিছুই নেই মেয়ে গুলোকে সেখান থেকে আনতেই হবে। আর বিশেষ করে আমার নামে যেই সব আজগুবি কথা ছড়িয়েছে তা শেষ করতে হবে। সো ফলো করো ট্রাক টাকে। গার্ড দের বলো, আর গাড়ি বের করো ফাস্ট।

রাশেদ;; জ্বি স্যার।
এই বলেই রাশেদ দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো। আব্রাহাম উঠে একটা ডার্ক ব্লেক কালারের রিভলবার হাতে নেয়, বুলেট” স লোড করে নেয়। তারপর বেড়িয়ে পরে। জেকেট টা নিজের সাথে জড়াতে জড়াতে দ্রুত সিড়ি বেয়ে বাইরে বের হয়ে সোজা গাড়িতে ওঠে বসে। আব্রাহামের গাড়ি সবার আগে আর তার পেছনে কমপক্ষে তিনটা গাড়ি। ওই মেয়েযুক্ত যে ট্রাকটা ছিলো তা ট্র‍্যাক করা হয়েছে আর তার ট্র‍্যাক কানেকশন আব্রাহামের হাতে থাকা ট্যাবে দেখাচ্ছে। আব্রাহাম সেটাই দেখছে আর ড্রাইভ করে যাচ্ছে।

একটা সময় একেবারেই জন-মানবহীন এক জায়গায় আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে ঢোকে। সে বুঝলো যে এই জায়গা থেকে শুরু করেই বাকি জায়গা টুকুকে রেড লাইট এড়িয়া হিসেবে ধরা হয়। আব্রাহাম নিজের ওপর কালো হুডি জড়িয়ে নেয়। মুখে কালো মাস্ক পরে নেয়। কোন ক্রমেই তাদের অর্থাৎ ট্রাফিকিং এর লোকদের বুঝতে দেওয়া যাবে না যে কেউ তাদের আস্থানা খুঁজে পেয়েছে। আর ভেতরে একসাথে এতোগুলো মানুষ কে তো যাওয়াই যাবে না। কেননা যদি তারা একবার বুঝে যে তাদের আটক হতে আর বেশি সময় বাকি নেই তাহলে এমনও হতে পারে যে তারা মেয়ে গুলোকে মেরে ফেলেছে। জানের বাজি আছে।

আর এই মূহুর্তে কারো ওপরেই বিশ্বাস নেই, যে কোন সময় যে কিছুই হতে পারে। আব্রাহাম তার গার্ড”স দের বাইরে এমন ভাবে পাহাড়ায় রেখে গেলো যেনো ভেতর থেকে একটা কাক-পক্ষিও বেরুতে না পারে এমন। আর ভেতর থেকে কোন প্রকার আওয়াজ বা বিপদের কোন গন্ধ পেলে সাথে সাথে তাদের যেতে। আব্রাহাম খুব সাবধানে ভেতরে চলে যায়। আর যেতেই দেখে কমপক্ষে প্রায় ২৫-৩০ জন মেয়ে।

এদের সবাই কেই ট্রাক থেকে নামানো হয়েছে। সবগুলো মেয়েই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে, সবার চোখে-মুখে ভয়ে আর আতংকের ছাপ স্পষ্ট। তাদের থেকে কিছুটা দূরেই একজন টাক মাথা ওয়ালা লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে আর অট্টহাসি তে ফেটে পরছে। আব্রাহাম খেয়াল করে দেখলো যে মেয়েগুলো যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তার থেকে কয়েক হাত দূরেই একটা বিশাল আকাড়ের দরজা। সেটা খুলে দিলেই হয়তো একদম বাইরে বের হয়ে যেতে পারবে তারা।

তবেই সেই দরজা খোলার সাহস তাদের নেই। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাদের খুব টর্চার করা হয়েছে। আব্রাহাম এটাও খেয়াল করলো যে ওই টাক মাথা ওয়ালা লোকটার একদম পেছন সই ওপরে একটা বড়ো ঝাড় বাতি ঝুলছে, তা দড়ি দিয়েই ওপরে বাধা। আব্রাহাম এতোক্ষন লুকিয়ে লুকিয়ে এগুলো দেখছিলো। আর যে গোড়াউনের মতো একটা ঘরে মেয়েদের আটকিয়ে রেখেছে আব্রাহাম এবার সেই ঘরের একদম পেছনের দিক টায় চলে যায়।

এখান থেকেও ভেতরে সবই দেখা যাচ্ছে। আব্রাহাম খূবই সুক্ষ ভাবে রিভলবার তাক করে একদম সেই ঝাড়বাতির রশি বরাবর শুট করে দেয়। একবার শুটই যথেষ্ট ছিলো। সাথে সাথে ঝারবাতি টা ওপর থেকে ছিড়ে গিয়ে নিচে পরে খানখান হয়ে যায় ভেঙে৷ এতে সেই টাক মাথা লোকটা চমকে গিয়ে নিজের পেছনে ঘোরে। আর সেই সুযোগে তৎক্ষনাৎ আব্রাহাম ছুটে গিয়ে নিজের এক বাহু দিয়ে ওই লোকের গলা পেচিয়ে ধরে আরেক হাতে যে রিভলবার ছিলো তা লোকটার মাথার পাশে চেপে ধরে৷ লোকটা বেশ ছটফট করতে লাগে।

আব্রাহাম;; আর একবার নড়াচড়া করবি তো এই রিভলবারে এখন যে ক”টা বুলেট আছে সব তোর এই গবর ভরা মাথার ভেতরে যাবে বুঝলি।
লোকটা বেশ ভয় পেয়ে গেলো আর সাথে অবাকও। এটা, এটা আব্রাহামের কন্ঠস্বর। তবে ওই লোকটার যে চেলাপেলা ছিলো তারা ছুটে আসে আর তাদের আসতে না আসতেই আব্রাহামের গার্ড রা চারিপাশ থেকে এসে সবকিছুকে একদম ঘিড়ে নেয়। হাতে তাদের বড়ো বড়ো অস্ত্রসস্ত্র। ওই টাক মাথা ওয়ালা লোক টা দ্রুত তার চেলাপেলা দের সেখান সরে যেতে বললে তারা তাই করে।
আব্রাহাম;; রাশেদ,
রাশেদ;; জ্বি স্যার
আব্রাহাম;; প্রত্যেকটা মেয়ে, প্রত্যেকটা মেয়েকে একদম সহি-সালামাত তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিবে।
রাশেদ;; জ্বি স্যার।

মেয়ে গুলোকে ভরসা দেওয়া হয় যে তারা এখন একদম সেইফ। তারপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তাদের বাড়ি তাদের বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই সব ঠিক। মেয়ে গুলোর চলে যেতেই আব্রাহাম ওই টাক ওয়ালা লোকটাকে ছেড়ে দেয়। এই লোকের সাথে সাথে আরো অনেক গুলো লোকের এখানে আসার কথা ছিলো। তারা জেনে গিয়েছে যে এখানের সবকিছু ভেস্তে গিয়েছে, তাই পালিয়েছে। তবে পারে নি, আব্রাহামের গার্ড দের কাছে ধরা খেয়েছে। আব্রাহাম তার রিভলবার টা ওই লোকের মাথা থেকে সরিয়ে দেয়, হাত টাও আলগা করে দেয়।

আর ছাড়া পেতেই লোকটা ছুটে সামনে চলে যায়। সে ভেবেছে যে হয়তো সে বেঁচে গেছে। তবে নাহ, লোকটি দৌড়িয়ে বেশি একটা দূর যেতে পাতে নি তার আগেই তার বাম পা বরাবর একটা গুলি লাগে৷ যা আব্রাহাম করেছে। লোকটি ব্যাথায় নিচে পরে যায়। আর তার পরপরই আব্রাহাম লোকটার পেছনের দিক থেকে অর্থাৎ মাথার পেছনে যে ব্রেইনের সাইড টা রয়েছে তা বরাবর ধাই ধাই করে গুলি করে দেয়। মূহুর্তেই গলগল করে রক্ত বের হতে লাগে। ইতোমধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পরেছে লোকটা। আব্রাহাম রিভলবার টা তার হুডির মাঝে রেখে ওই লোকটার লাশের দিকে এগিয়ে যায় কয়েক কদম। সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তখনই আবার রাশেদ আসে এসে দেখে যেই লোকটাকে কয়েক মূহুর্ত আগেও ভালো দেখে গেলো সে এখন লাশ।

রাসেদ;; স্যার একে যদি মারারই ছিলো তাহলে প্রথমে ছেড়ে দিলেন কেনো? মানে এখানেই এসেই তো আগে একে মারতে পারতেন, প্রথমে কেনো মারলেন না?
আব্রাহাম;; বাঁচবার আশা দেখিয়ে তারপর নির্মমভাবে মেরে ফেলার মজাই আলাদা, রাশেদ।
রাশেদ;; _________________________
আব্রাহাম;; দূরে কোথাও ফেলে দিয়ে আসো নরকের এই কীটকে।

আব্রাহাম তার ভারি ভারি কদম ফেলে বের হয়ে গেলো। আর এখন এই লাশকে ঠিকানা লাগানোর কাজ রাশেদের। অবশেষে সব ঝামেলা শেষ করে আব্রাহাম তার গাড়িতে উঠে বসে নিজের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রাত বেশ ভারি এখন। আব্রাহাম এক হাতে ড্রাইভ করছে আরেক হাত নিজের মুখে ঠেকিয়ে রেখেছে। তবে যেতে যেতেই একটা মোড় ঘোরে, এখানে আসলে তেমন একটা লাইট নেই।

যার ফলে আব্রাহামের তার গাড়ির ফ্রোন্ট লাইট অন করতে হয়েছে। আরো কিছুটা সামনে এগোতেই আব্রাহাম খেয়াল করে রাস্তার সাইডে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। দেখে বুঝা গেলো কোন মেয়ে হবে। সে সেদিকে এক নজর তাকিয়েই এসে পরতে নিবে তখনই মেয়েটা তার মাথা ঘুড়িয়ে এদিকে তাকায়। আর আব্রাহাম তার চেহারাটা এবার স্পষ্ট দেখতে পায়। সে আইরাত। আব্রাহাম আইরাতকে কাটিয়ে এসে পরলে আবার দ্রুত গাড়ির ব্রেক কষে। উইন্ড দিয়ে কিছুটা মাথা বের করে পেছনে তাকায় কিন্তু ততক্ষণে আইরাত একটা টেক্সি নিয়ে চলে যায়। আব্রাহামও চলে আসে। বাসায় আসতেই দেখে হলরুমে তার দাদি বসে আছে।

আব্রাহাম;; দাদি এখনো ঘুমাও নি?
ইলা;; তুই বাইরে, কীভাবে ঘুমাই!
আব্রাহাম;; ধুর তুমিও না, আর মেডিসিন নিয়েছো?
ইলা;; হ্যাঁ
আব্রাহাম;; এখন যাও তাহলে রুমে গিয়ে ঘুমাও যাও।
ইলা;; তুই কিছু খাবি না?
আব্রাহাম;; না খুদা নেই। তুমি এখন রুমে যাও ঘুমাও।
ইলা;; আচ্ছা।
আব্রাহাম নিজের রুমে এসে পরে। তার বেডের দিকে নজর যায়। কালকের কথা মনে পরে যায়। কাল রাতে আইরাত এখানেই ছিলো। আব্রাহাম মুচকি হাসে। ফ্রেশ হয়ে এসে স্টাফ কে দিয়ে কড়া এক কাপ কফি বানিয়ে আনে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরে ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বসে। এভাবেই রাত টুকু চলে যায়।

পরেরদিন~
অবনি;; কিরে আইরু কোথায় তুই?
আইরাত;; আরে এইতো এইতো আসছি।
অবনি;; বইন জলদি আয়, কনফারেন্স শুরু হলো বলে। সবাই এখানে এসে পরেছে প্লিজ তুই জলদি আয়৷
আইরাত;; পাঁচটা মিনিট সময় দে আমাকে।

আইরাত নিজের ব্যাগ টা নিয়ে দৌড়। আর অনামিকা তার কান্ড দেখছে। এটা নতুন কোন ব্যাপার না যেদিন কোন ইম্পর্ট্যান্ট কাজ থাকবে সেইদিনই আইরাতের লেইট হবেই হবে। যত দ্রুত সম্ভব তত দ্রুত আইরাত চলে যায়। আইরাতের যেতেই অবনি তার কাছে যায়। তারপর কনফারেন্স রুমে নিয়ে এসে পরে। এখানে সবাই অর্থাৎ যারা যারা রিপোর্টার আছে সবাই একসাথে বসে আছে। সামনেই স্টেজ, সেখানেই যত ভিপি রা আসবেন। অনেক মিডিয়ার লোকজন আছে। আইরাত আর অবনি গিয়ে একসাথে বসে পরে, তৌফিক তাদের পেছনে।

তৌফিক;; আইরু এতো জলদি কেউ আসে, আরো একটু দেরিতে আসতি বইন!
আইরাত;; হারামি আমার লেগ পুল করা বন্ধ কর।
আইরাত আর অবনি টুকটাক কথা বলছিলো তার মাঝেই অনেকে আসে, পুলিশ অফিসার, এসইপি আরো অনেকেই আসেন। তাদের নানা ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে আর তারা খুবই সাবলীল ভাবে তার উত্তর দিচ্ছে। তবে তার কিছুক্ষণ বাদেই এনাউন্সমেন্ট হয়…

“” Here is coming Abraham Ahmed Chowdhury””…
এনাউন্সমেন্ট হওয়ার সাথেসাথেই সবাই ফট করে মাথা ঘুড়িয়ে সেদিকে তাকায়। আর সকল ক্যামেরার ফোকাস যেনো তার দিকেই গেলো। তবে আইরাত কি যেনো লিখছিলো তাই সেদিকে তাকায় নি। চারিদিকে গার্ড রা সাইড দিচ্ছে আর তার মাঝখান দিয়ে আব্রাহাম আসছে। ভেতরে সাদা শার্ট ওপরে এশ কালারের কোর্ট, চোখে চশমা। সব হাইলাইট” স গুলো সাইড করে আব্রাহাম এগিয়ে এসে সবার সাথে বসে পরে। আব্রাহামের বসেতে দেরি কিন্তু তার দিকে একটা একটা করে সব রিপোর্টার আর জার্নালিস্ট দের প্রশ্ন ছুড়ে দিতে না। আব্রাহামও খুব স্মার্টন্যাসের সাথে সব উত্তর দিচ্ছে। আর এদিকে অবনি আইরাত কে খুচাচ্ছে।

অবনি;; এই দেখ না আইরু, একবার তাকা।
আইরাত;; কেনো কি হয়েছে?
অবনি;; আরে আগে সামনে তাকিয়ে দেখ তো।
আইরাত মাথা তুলে সামনে তাকায়। আর তার মুখের নকশা পালটে যায়।
আইরাত;; আরে এই এখানে কেনো?
অবনি;; না তুমি উনাকে নিয়ে এতো বড়ো একটা নিউজ করে বসে আছো আর আজ যখন এগুলোর সব জট খুললো তাহলে তো তাকে এখানে আসতেই হবে তাই না।
আইরাত;; আমাকে যেনো না দেখে আল্লাহ প্লিজ।
অবনি;; আরে ভয় পাচ্ছিস কেনো?

আইরাত;; নিজেও জানি না, বাট আমি উনার সামনে পরতে চাই না ব্যাস।
অবনি;; আরে কিছুই হবে না চুপ করে বসে থাক।
আইরাত ব্যাগ দিয়ে নিজের মুখ টা ঢেকে ফেলে,, কিছুটা আড়াল করে রাখে। এটা দেখে আব্রাহাম তার মুখের সাইডে হাত দিয়ে সামান্য গলা খাকাড়ি দেয়। সাথে হেসেও দেয়। কেননা সে যখন এখানে আসছিলো তখনই আইরাতকে দেখেছে। দেখতে দেখতেই এক সময় মিটিং শেষ হয়। সবাই চলে গিয়েছে। আব্রাহাম বাইরে এসে পরতে ধরলে এসইপি তাকে থামিয়ে দেয়….

এসইপি;; আব্রাহাম স্যার..
আব্রাহাম;; জ্বি অফিসার বলুন।
এসইপি;; শুনেছি কাল রাতে আপনি একজনের মার্ডার করেছেন আর…….
আব্রাহাম;; আর কিছুই করি নি। জানেন তো মানুষের হাজার ভালো করলেও তারা তাকে মনে রাখে না। খুতিয়ে খুতিয়ে ওই মন্দ কাজই বের করে। যেই কাজ টা আপনাদের করার কথা ছিলো তা আমি করেছি। একবার ভেবে দেখুন ওই ২৫-৩০ জন মেয়ের যদি কোন ক্ষতি হয়ে যেতো বা তারা সবাই যদি মারা যেতো তাহলে আপনাদের কিসের সম্মুখীন হতে হতো তাহলে! ভেবেছন তো! আর আমি কার মার্ডার করেছি, কাকে মেরেছি তা নিয়ে পরে আছেন। আমার জানা মতে আমি ওই লোকটাকে মেরে খারাপ কোন কাজই করি নি।

এসইপি;; জ্বি স্যার কিন্তু…..
আব্রাহাম;; বেশি বকর বকর করলে এখন এখানে আপনাকেও বিনাবাক্যে শুট করে দেই?
এসইপি;; আব… আসলে স স সরি স্যার।
এসইপি চলে যায়। আব্রাহাম চোখে সানগ্লাস টা পরে নিজের গাড়ির দরজা খুলে কিন্তু তখনই কিছুদূর সে আইরাতকে দেখতে পায় দাঁড়িয়ে থাকতে। আব্রাহাম তার গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে দেয়। আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। অবনি আর তৌফিক চলে গিয়েছে আইরাত নিজেও চলে যেতো কিন্তু পেছন থেকে কারো আওয়াজ পেয়ে হকচকিয়ে যায়। কেননা আওয়াজ টা তার চেনা।

আব্রাহাম;; মিস. আইরাত!
আইরাত পেছনে তাকায়। দেখে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কিছু শুকনো ঢোক গিলে তাকে দেখে। যার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইছিলো সেই এখন সামনে হাজির। আইরাত এগুলোই ভাবছিলো আর আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আব্রাহাম তুরি বাজায় তার সামনে ফলে আইরাতের ঘোর কাটে।
ইলা;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; হুমমম
ইলা;; মেয়েটা কে রে?
আব্রাহাম;; জানি না।
ইলা;; জানিস না মানে? চিনিস না জানিস না একটা মেয়েকে এভাবে বাসায় নিয়ে এলি?
আব্রাহাম;; দাদি তুমি…….

ইলা;; এমা একি অবস্থা রে মেয়েটা তো অনেক ব্যাথা পেয়েছে। আচ্ছা আমি সব দেখছি।
এই বলেই ইলা চলে গেলো। আর আব্রাহাম সেখানেই থেকে যায়। দুইহাত ভাজ করে একমনে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা মলিন হয়ে আছে কিন্তু তবুও যেনো তাতে একরাশ মায়াভরা। কালো ঘন চুল গুলো ছড়িয়ে রয়েছে,, স্নিগ্ধ মুখ। চোখের বড়ো বড়ো পাপড়ি। কপালের ক্ষত স্থান টা কেটে জমাট বেধে এখন খয়েরী বর্ণ ধারণ করেছে। ঠোঁট জোড়া লাল+কালোর সংমিশ্রণ হয়ে আছে।

আব্রাহাম খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো মেয়েটাকে। এর আগে সে কখনো কোন মেয়েকে এতো টা লক্ষ্য করে নি। কিন্তু মেয়েটা এতো রাতে হাইওয়ে রোডে কি করছিলো? আর ওই লোকগুলোই বা কেনো তাকে ধাওয়া করছিলো? এই প্রশ্নই এখন মাথায় এসে বারি খাচ্ছে। আব্রাহাম এগুলোই ভাবছিলো তখনই ইলা আসে তার সাথে এখন একটা মেয়ে স্টাফও রয়েছে। ইলার হাতে ড্রেসিং এর সব জিনিসপত্র। আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসতে নিবে তখনই মেয়েটার ব্যাগের দিকে তার চোখ যায়। আব্রাহাম ব্যাগ টা হাতে করে নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। আর ইলা এদিক টা সামলায়।

আব্রাহাম অন্য পাশের রুমে চলে যায়, আজ হয়তো তাকে এখানেই থাকতে হবে। হাত থেকে মেয়েটার ব্যাগটা রাখতে যাবে তখনই ব্যাগের ভেতর থেকে কিছু একটা নিচে পরে যায়। সে তা তুলে হাতে নিয়ে দেখে, আর তার সাথে বেশ অবাকও হয়। এটা একটা আইডি কার্ড। আইডি কার্ডে ওই মেয়েটার সব ডিটেইলস দেওয়া।এটা কি করে সম্ভব! মেয়েটার নাম “নুজাইফা বিনতে আইরাত” প্রফেশন “রিপোর্টার”। আব্রাহাম তা দেখে কপাল কুচকায়। এটাকে সে শুধু মাত্রই একটা কাকতালীয় ব্যাপার ধরবে নাকি অন্য কিছু তা বুঝে না।

কারণ আব্রাহাম পাগলের মতো করে যেই মেয়েটাকে খুঁজে যাচ্ছিলো সে আর কেউ না এই মেয়েটাই আইরাত। তবে আব্রাহাম তার নাম শুনেছে এর আগে কখনো তাকে দেখি নি। আর এখন সবটা যখন নিজের সামনে এলো তখন আব্রাহাম সত্যি বেশ অবাক। আব্রাহাম সিঙ্গেল একটা সোফাতে বসে পরে। শার্টের ওপরের কয়েক বোতাম খুলে দেয়। হাতে এখনো রয়েছে আইরাতের আইডি কার্ড। তাই দেখছে আব্রাহাম। যাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলো না সে কিনা আজ নিজে থেকেই এসে ধরা দিলো। তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে আব্রাহাম। পাশে থেকে এলকোহলের গ্লাস টা নিয়ে কয়েক পেগ মেরে দেয়। এভাবেই বেশ কিছুক্ষণ সময় পার হয়ে যায়। হঠাৎ ইলা এসে আব্রাহাম কে ডাক দেয়।

ইলা;; আব্রাহাম!
আব্রাহাম;; হ্যাঁ দাদি
আব্রাহাম উঠে এগিয়ে যায় তার দিকে।
ইলা;; আচ্ছা মেয়েটা কে তা কি এখন বলবি তুই?
আব্রাহাম;; আসলে দাদি আমারই পরিচিত একজন।
ইলা;; সত্যি?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ।
ইলা;; মেয়েটা হাতে-পায়ে বেশ ব্যাথা পেয়েছে। আমি নিজেই সব করে দিলাম। বড্ড মায়া হলো আমার। জানিস মেয়েটা পুরোই হীরের টুকরো। অনেক সুন্দর।
আব্রাহাম;; হুম।

ইলা;; মেয়েটা তোর রুমেই রয়েছে বুঝলি। আমি যাই এখন কিছু লাগলে আমাকে বলিস।
আব্রাহাম;; আচ্ছা বুঝলাম এখন তুমি যাও।
ইলা চলে গেলে আব্রাহাম রুমের দরজার সাথে কিছুটা হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। আব্রাহাম এখন যেই রুমে আছে সেই রুম থেকে তার বেডরুম টা দেখা যায়। সেদিকেই তাকিয়ে আছে আব্রাহাম। সেখানেই আইরাত রয়েছে। কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থেকে আব্রাহাম এসে পরে।

{উনি আর কেউ না “আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী”। তবে তার এই নামের আগে একটা ট্যাইটেল না যুক্ত করলেই নয় ‘মাফিয়া-গ্যাংস্টার’। আব্রাহাম কে মাফিয়ার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ধরা হয়। এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যারা আব্রাহাম চৌধুরী কে চিনে-জানে না। আমেরিকা কে বিশ্বে সবথেকে প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই আমেরিকান আন্ডারগ্রাউন্ড বর্তমানে তার আন্ডারেই। সবাই বলে আব্রাহাম বেশ ইগোস্টিক & এটিটিউড ওয়ালা। আপন বলতে শুধু নিজের দাদি রয়েছে। যাকে নিয়েই আব্রাহামের পুরো দুনিয়া।

তবে ফরেইন কান্ট্রি তে আব্রাহামের থাকা টা তেমন পছন্দের না। নিজের দেশেই থাকতে তার ভালো লাগে। আর এছাড়াও দেশে নিজের বয়স্ক দাদিকে রেখে বাইরে একা থাকা তো আর সম্ভব না তাই। তবে আব্রাহাম দেশে নিজের যোগ্যতা-দক্ষতায় বিজন্যাস গড়ে তোলেছে। আর আব্রাহামের বিজন্যাসের সাইড টা এতোটাই স্ট্রোং যে প্রতি বছর বিজন্যাস টাইকুন নিঃসন্দেহে আব্রাহামই হয়। সৌন্দর্যের নিয়মের বাইরে রয়েছে আব্রাহাম। ছেলেরাও যে এত্তো পরিমাণে সুদর্শন হয় তা আব্রাহাম কে না দেখলে হয়তো বোঝার কোন উপায়ই ছিলো না। আব্রাহামের পারসোনালিটি এক কথায় অসাধারণ। যে কেউ প্রেমে পরতে বাধ্য। অত্যাধিক স্মার্ট হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত নানা ধরনের অফার এসেই থাকে তার কাছে কিন্তু সেগুলোতে দেওয়ার মতো আর সময় কই তার। তবে যে যেমন তার সাথে আব্রাহাম তেমন। জেদ-রাগ নাকের ডগায় বাস করে}

{আর ওই মেয়েটা হচ্ছে “নুজাইফা বিনতে আইরাত”। সে পেশায় রিপোর্টার। নিত্যনতুন রিপোর্ট করাই তার কাজ। বাসায় নিজের মা রয়েছে। মায়ের আদরের দুলালি সে৷ বাবা ছিলেন, তবে অনেক বছর আগেই গত হয়েছেন। তিনি পুলিশ অফিসার ছিলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আইরাত মেয়ে হিসেবে মাশআল্লাহ। খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। মুখভরা মায়া রয়েছে। সে কারো চোখে পরলে আবার তার নজর তুলে আইরাতের দিকে দ্বিতীয় বার তাকাতে বাধ্য। মনে যেনো আচড় কাটে এমন। আইরাত স্বভাবতই চঞ্চল মেয়ে। এক জায়গায় চুপ করে বসে থাকার মতো মেয়ে সে মোটেও না। এতো বর্ণনা না করে আইরাত কে এক কথায় বলা যায় সুন্দরী ❤️}

আর আব্রাহামের এতো হন্ন হয়ে আইরাত কে খোঁজার কারণ হচ্ছে একটা ভুয়া খবর। আইরাত যেহেতু রিপোর্টার তাই নানাবিধ নিউজই সে করে। আর এক্ষেত্রে আইরাত আব্রাহাম কে নিয়ে নিউজ করেছে যে আব্রাহাম মেয়ে পাচারকারী দের সাথে জড়িত আছে। দেশে বেশ কয়েকদিন যাবতই গার্ল”স & চাইল্ড ট্রাফিকিং এর কেস চলছে। বড়ো বড়ো অফিসার রাও যেনো নাকানি চোবানি খাচ্ছে তাদের ধরার জন্য। আর দিন কে দিন এই নিউজ টাই যেনো নিউজপেপারের তুঙ্গে রয়েছে। তাই সেই জন্যই রিপোর্ট করা। এক্ষেত্রে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর নাম আসে।

আইরাত অনেক নাম-ডাক শুনেছে এই ব্যাক্তির। আর যেহেতু সে একজন মাফিয়া তাই তার জন্য এই সব ট্রাফিকিং এর কাজ কোন বড়ো ব্যাপার না। আর ভেজাল টা তখন হয় যখন আইরাত কে একজন আব্রাহামের ব্যাপারে ভুল ইনফরমেশন দেয়। আর তখন সবদিকের প্রেসার এতো টাই বেশি ছিলো যে আইরাত কি করবে আর কি করবে না তা বুঝে আসে না। আর আব্রাহামের প্রতি তার সন্দেহ’র কাটা টা কিছুটা ঘুড়ে যায় বিধায় আইরাত এইসব মেয়ে পাচারকারী দের খাতায় আব্রাহামের নাম উল্লেখ করে। অর্থাৎ তার নামে ভুয়া রিপোর্ট।

আব্রাহাম এইসব খবর টিভি আর ম্যাগাজিন থেকে জানতে পারে। আর এগুলো শুনেই তো আব্রাহামের মাথায় ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। যার দরুন আব্রাহামের সাথে বেশ কিছু হাই স্ট্যান্ডার্ড মানুষের রেশারেশিও হয়। আব্রাহাম রিপোর্টারের নামের জায়গায় আইরাতের নাম দেখে তবে সেখানে তার কোন ছবি ছিলো না। ব্যাস সেদিন থেকেই আব্রাহাম আইরাত কে খোঁজা শুরু করে দেয়। আব্রাহাম জীবনে কোন মেয়ের দিকে আঙুল তুলে নি। কিন্তু এইবার ব্যাপার টা এতো টাই বেশি সিরিয়াস যে সে সোজা আইরাত কে মেরে ফেলার কথাই ভেবেছিলো। ফোনে নিজের গার্ড রাশেদ কেই আব্রাহাম ওই কথাটা বলেছিলো। আর তারপরে এইসব কাহীনি হয়।

পরেরদিন সকালে⛅~
সূর্যের তীর্যক রোদ চোখের ওপর আছড়ে পরলে চোখ-মুখ সব কুচকে ফেলে আইরাত। আলতো ভাবে নিজের চোখ দুটো মেলে। মাথা টা বেশ ভারি ভারি লাগছে। মাথার এক পাশে হাত দিয়ে কপাল কুচকে উঠে বসে। এবার সম্পূর্ণ চোখ মেলে নিজের আশেপাশে তাকায়। খেয়াল করে বিশাল একটা রুমে বড়ো এক বেডে বসে আছে সে। সারাটা রুম ধবধবে সাদা। এক পাশে বড়ো থাই গ্লাস আরেক পাশে অনেক বড়ো করিডর।

রুমের সবকিছু সাদার মাঝে কিছু কিছু জিনিস কালো আর ধূসর বর্ণের, যা বেশ ফুটে ওঠেছে। বুঝলো যে এখানে থাকে সে বেশ শৌখিন প্রকৃতির একজন মানুষ। আইরাত দেখে তার পায়ে হালকাভাবে ব্যান্ডেজ করা। মাথাতেও ব্যান্ডেজ রয়েছে এক পাশে। আস্তে করে উঠে পরে আইরাত। উঠে গিয়ে থাই গ্লাস টা সরিয়ে দেয়। বাইরে থেকে পাখিদের কিচিরমিচির কিছু শব্দ আসছে। আইরাত বড়ো বড়ো পর্দা গুলো মেলে দাঁড়ায়। মৃদু বাতাস বইছে। আইরাতের বেশ ভালো লাগলো আবহাওয়া টা। মুখে তার ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি। আইরাত এভাবেই বাইরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই নিজের পেছন থেকে কারো ডাকে চমকে ওঠে….

আব্রাহাম;; নুজাইফা বিনতে আইরাত!
আইরাত পেছনে তাকিয়ে দেখে বেশ লম্বাচওড়া বডিবিল্ডার ওয়ালা একজন দাঁড়িয়ে আছে। সে আর কেউ না আব্রাহাম। একে নিয়েই তো আইরাত নিউজ লিখেছিলো। আব্রাহাম কে খেয়াল করে সে। সাদা রঙের টাওজার আর এশ কালারের একটা টি-শার্ট পরে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাইরের থেকে আসা হালকা বাতাসে তার মাথার চুলগুলো ঢেউ খাচ্ছে। গাল ভর্তি চাপদাড়ি। এক হাত পকেটে গুজে দিয়ে আরেক হাতে আইরাতের ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাতের তার ব্যাগ টা চোখে পরে। তাতে তার ফোন, আইডিসহ আরো নানা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে। আর কাল রাতের সব ঘটনা গুলো এক এক করে মনে পরে আইরাতের। তবে আবার আব্রাহামের দিকে তাকাতেই চুপসে যায়। আব্রাহাম হুট করেই কয়েক কদম আইরাতের দিকে এগিয়ে আসে। আইরাত কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। আব্রাহাম এবার তার হাতে থাকা ব্যাগ টা ওপরে তুলে। আর আইরাত কিছুটা কেড়েই নিয়ে নেয় ব্যাগটা। নিয়ে ভেতরে এক এক করে সব জিনিস চেক করতে লাগে। সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা দেখছে। আব্রাহাম সোফাতে বসে পরে। আইরাতকেই সে দেখছে। সব ঠিক আছে দেখে আইরাত এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।

আব্রাহাম;; কাল রাতে কি হয়েছিলো তোমার? আর এতো ক্ষত হলো কীভাবে?
আইরাত;; ________________________
আব্রাহাম;; বলো..
আইরাত;; না মানে..
আব্রাহাম;; আমাকে চেনো?
আইরাত তার মাথা ওপর-নিচ করে অর্থাৎ হ্যাঁ সে চিনে।
আব্রাহাম;; এখন ঠিক আছো?
আইরাত;; হুমম।
আব্রাহাম;; কাল রাতে….

আইরাত;; আসলে আমি রিপোর্টার, আর এখনকার মেইন টপিক কি তা তো জানেনই। এক এক জনের মুখে এক এক ধরনের কথা। তাই ভাবলাম নিজের সব বের করবো খুঁজে। এরজন্য গিয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ করেই ট্রাফিকিং এর লোকগুলোর মাঝখান থেকে একজন আমাকে দেখে ফেলে। আর আপনি তো ভালোই জানেন যে তাদের এইসব কুকীর্তি কেউ একবার দেখে ফেললে তারা আর তাকে বাঁচিয়ে রাখে না। তাই আমাকেও মারার জন্য ধাওয়া করেছে।
আব্রাহাম;; বুঝলাম, তবে একজন রিপোর্টারের এটাও কাজ যে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা তা খুঁজে বের করা।
আইরাত এবার তার ফর্মে আসে। চঞ্চলমূখর স্বরে বলে ওঠে….

আইরাত;; হ্যাঁ জানি, কিন্তু সিচুয়েশন টাই এমন ছিলো। আর র‍্যালি ভেরি সরি আমি বুঝতে পেরেছি যে আপনি এসবকিছুর মাঝে নেই। ইন ফ্যাক্ট ধারে কাছেও নেই আপনি। আমি অযথা আপনাকে এর মাঝে টেনে এনেছি। তবে চিন্তা করবেন না আপনার নামের ওপর থেকে এই নিউজ টা আই মিন এই ফেইক নিউজ টা একদম মুছে যাবে।
আব্রাহাম;; অবশ্যই মুছাতে তো তোমাকেই হবে। কারণ তুমিই সব রটিয়েছো।
আইরাত;; হুমমমম।
আব্রাহাম;; আচ্ছা আমি ভাবছি যে তোমার নিউজ টা সত্যি করে দেই!
আইরাত;; মানে?
আব্রাহাম তার হাতে একটা গ্লোব ঘোড়াতে ঘোড়াতে বলে….

আব্রাহাম;; মানে এই যে আমার ওপর তো দোষারোপ আছে যে মেয়েপাচার করি আমি। তো এখন ঠিক পাচার না করলেও আটকে রাখতে বড্ড মন চাইছে।
আব্রাহামের কথায় আইরাতের টনক নড়ে। আব্রাহাম গ্লোব ঘোড়ানো হুট করেই বন্ধ করে দিয়ে আইরাতের দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকায়।
আব্রাহাম;; ভাবছি যে যেই রিপোর্টার আমার নামে এতো বড়ো একটা নিউজ ছড়ালো তাকেই বন্দী করে নিজের কাছে রেখে দেই অর্থাৎ তুমি।
আইরাত কপাল কুচকে ফেলে। আব্রাহাম সোজা হয়ে বসে বলে…
আব্রাহাম;; বাই দি ওয়ে আমিও কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলার জন্যই খুঁজছিলাম।
আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, রাগ এতো টাই আউট অফ কোন্ট্রল চলে গিয়েছিলো যে তোমাকে আমি খুন করার জন্যই খুঁজছিলাম।
আইরাত;; সত্যিই আ”ম সরি। আর হ্যাঁ সাথে অনেক গুলো থাংকু, কাল আপনি না থাকলে এতোক্ষণে আমি শেষ। কাল রাতে আমাকে বাঁচানোর জন্য থাংকু আর আ………
আব্রাহাম;; কাল রাতে জড়িয়ে ধরেছিলে তুমি আমায়।
আব্রাহামের এমন কথায় আইরাত থতমত খেয়ে যায়। কি বলবে বুঝে না।
আইরাত;; সরি, আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো তাই (আমতা আমতা করে)

আইরাত মাথা নিচু করে ছিলো। আব্রাহাম হুট করেই উঠে এসে আইরাতের কাছে চলে যায়। আইরাত মাথা তুলে তাকায়। নিজের সামনে আব্রাহাম কে এতোটা কাছে দেখে আইরাত চমকে গিয়ে পেছনে কিছুটা হেলে পরে। আব্রাহাম আইরাতের দুপাশে বেডের ওপর নিজের হাত রেখে দেয়। দুহাতের ওপর ভর দিয়ে আইরাতের দিকে বেশ ঝুকে পরে। এই মূহুর্তে সে আইরাতের বেশ কাছে রয়েছে। এক ঘোর লাগা নয়নে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আইরাত আব্রাহামের চোকের দিকে তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখজোড়া দ্রুত নামিয়ে ফেলে। কিছুক্ষন পর আব্রাহাম বলে ওঠে…….
আব্রাহাম;; এই ভয়টা তোমার মুখে বড্ড বেশিই মানায়।

আইরাত চোখ তুলে তাকায়। এই বলেই আব্রাহাম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরে। আর আইরাত বুক ভরে দম ছাড়ে।
আইরাত;; কি অসভ্য রে বাবা, এখানে কি হীরের খনি বের হয়েছে নাকি এভাবে দেখার কি আছে! (ফিসফিস করে)
আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাই, আমার দাদি তোমাকে কাল হীরের টুকরো বলেই সম্মোধন করেছে।
আইরাত;; এই রে শুনে ফেলেছে।

আইরাত বসে থাকে তার সামনে আব্রাহাম বসে আছে। আব্রাহামের এই নজর যেনো তাকে প্রতিনিয়ত অস্বস্তি তে ফেলছে। হঠাৎ আইরাত তার ব্যাগ টা নিয়ে নিজের ফোন চেক করে। বাড়ি যাওয়া হয় নি, তার মাকে ফোন করেও বলা হয় নি। না জানি চিন্তা করতে করতে তার কি হাল। আইরাত তার ফোন টা অন করে আর অন করতেই দেখে ১০০+ মিস”ড কল আর ৭৫+ মেসেজ। যা দেখে আইরাতের চোখ কপালে। সব তার মা করেছে। আইরাতকে এমন দেখে আব্রাহাম বলে….
আব্রাহাম;; Hay girl, is everything ok?
আইরাত;; না, আমার মা অনেক ফোন করেছে কিন্তু আমি ধরি নি। এখন নিশ্চয়ই অনেক চিন্তা করছে।
ইলা;; তো চিন্তা করবে না, এত্তো একটা মিষ্টি মেয়ে রাতের বেলা বাইরে থাকলে এমন কোন মা আছে যে চিন্তা না করে থাকতে পারে!!

আইরাত তাকিয়ে দেখে দরজার সামনে হাতে খাবারের ট্রে নিয়ে একজন বয়স্ক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত বুঝলো যে এই হয়তো আব্রাহামের দাদি। ইলা রুমের ভেতরে এগিয়ে আসে। হাত থেকে ট্রে টা টেবিলের ওপর রেখে আইরাতের পাশে গিয়ে বসে।
ইলা;; নাম কি গো তোমার?
আইরাত;; জ্বি আইরাত।
ইলা;; বাহ, তোমার মতো তোমার নাম টাও বেশ মিষ্টি তো।
বিনিময়ে আইরাত মুচকি হাসে।
ইলা;; আচ্ছা এতো ব্যাথা পেলে কি করে?
আইরাত;; না মানে ইয়ে আসলে আমি….

ইলা;; আচ্ছা যাজ্ঞে, আব্রাহাম নিয়ে এসেছে কাল রাতে এখানে তোমাকে। আর তোমার সব আমিই করে দিয়েছি। আর তুমি তো আব্রাহামের বেশ চেনা পরিচিত একজন তাই এখন থেকে প্রায়ই এখানে এসো কিন্ত।
ইলার কথায় আইরাত এক নজর আব্রাহামের দিকে তাকায়। চেনা পরিচিত তাও আবার আব্রাহামের!
ইলা;; আচ্ছা ওসব বাদ এবার নাস্তা করে নাও।
আইরাত;; না না দাদু, আসলে এখন আমায় বাসায় যেতে হবে। বাড়ি যায় নি তো কাল তাই। মা চিন্তায় হয়তো পাগলই হলো। এখন আমাকে যত দ্রুত সম্ভব বাসায় যেতে হবে।
ইলা;; হ্যাঁ আমিও ব্যাপার টা বুঝলাম। কি আর করার আচ্ছা যাও তাহলে, আমিও আর জোর করবো না। তবে সাবধানে যেও, আর ভালো থেকো। এসো কিন্তু আবার।

ইলা আইরাতের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পরে। আইরাত এবার উঠে দাঁড়ায়।
আব্রাহাম;; আমার ড্রাইভার আছে সে তোমাকে দিয়ে আসবে।
আইরাত;; না না থাক আমি একাই……..
আব্রাহাম;; বেশি কথা আমি মোটেও পছন্দ করি না।
আব্রাহাম এমন ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়ে কথা টা বললো যে আইরাতের বলতি বান্ধ। আব্রাহামের শীতল চাহনিতেও কেমন যেনো একটা ভয় ছিলো। আব্রাহাম আর আইরাত নিচে চলে যায়। আইরাত গাড়িতে উঠে পরে। গাড়ির উইন্ড-এর দিকে হালকা ঝুলে আব্রাহাম বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; এই চেহারা টা চেনা থাকলো, এখন তো সহজে আর ভুলাই যাবে না।
আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহামের কথায় কেমন একটা নেশা কাজ করে। যেনো কন্ঠস্বরে নেশা মিশিয়ে আছে। তারা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে ছিলো তার মাঝেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। আইরাত চলে যায়। আব্রাহাম আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর এসেও পরে। আর আইরাত নখ খামড়াচ্ছে টেনশনে না জানি বাসায় গেলে কি হয়!

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪+৫+৬

1 COMMENT

Comments are closed.