নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪+৫+৬

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪+৫+৬
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আব্রাহামের সামনে।
আব্রাহাম;; পালাচ্ছো আমাকে দেখে?
আইরাত;; মোটেও না, আম আমি কে কেনো পালাবো। আমি চোর না ডাকাত যে পালাবো!
আব্রাহাম;; হাবভাব দেখে তো তাই মনে হচ্ছে।
আইরাত;; না, আমি যাই।
আব্রাহাম;; ওয়েট, আমি কি যেতে বলেছি তোমাকে?
আইরাত;; না
আব্রাহাম;; তাহলে যাচ্ছো কেনো?
আইরাত;; না এমনি। এনিওয়ে কংগ্রেচুলেশন।
আব্রাহাম তার কপাল খানিক কুচকে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; থ্যাংক্স।

আইরাত;; মানে আপনি কাল এত্তো গুলো মেয়েকে বাঁচালেন, এত্তো হেল্প করলেন তো তাই এই ছোট্ট একটা থ্যাংক্স তো আপনার প্রাপ্যই।
আব্রাহাম;; ইয়াহ, তো আমি কি তোমাকে ড্রপ করে দিবো?
আইরাত;; না মানে না আমি যেতে পারবো, ধন্যবাদ।
এই বলেই আইরাত সেখান থেকে এসে পরে আসলে এসে পরে বলতে কেটে পরে। আব্রাহাম এসে গাড়িতে বসে পরে তখনই অয়নের ফোন। অয়ন হচ্ছে আব্রাহামের জানে-জিগার বন্ধু আর তার সাথে কৌশলও।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অয়ন;; কিরে ভাই কেমন আছিস?
আব্রাহাম;; যেমন থাকার কথা।
অয়ন;; আচ্ছা যাজ্ঞে কোথায় আছিস এখন তুই?
আব্রাহাম;; আ”ম ওন দি ওয়ে।
অয়ন;; রাতে ক্লাবে এসে পরিস।
আব্রাহাম;; কেনো?
অয়ন;; কেনো মানে, আরে ইয়ার ভুলে গেলি!
আব্রাহাম;; ওহহ আচ্ছা, ওকে আমি এসে পরবো।

এই বলেই আব্রাহাম গাড়ি সোজা তার অফিস “The Industry Of Abraham Ahmed Chowdhury”- এর দিকে নিয়ে যায়। অফিসের বাইরে গাড়ি থামাতেই গার্ডরা গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। দুইজন গার্ড আব্রাহামের পেছনে। একজন গার্ড অফিসের বড়ো গ্লাস টা খুলে দেয়। আব্রাহাম ভেতরে ঢুকে পরে। যেতেই সবাই এক এক করে মর্নিং উইশ করছে তাকে। আব্রাহাম সোজা গিয়ে তার কেবিনে বসে পরে। গায়ের ওপর থেকে জেকেট টা খুলে চেয়ারের ওপরে রেখে দেয়। ভেতরে সাদা শার্ট পরে ছিলো তা যেনো বডির সাথে একদম খাপ খাইয়ে গেছে। শার্টের ওপরের বাটন গুলো কয়েকটা খুলে দিয়ে হাতা গুলো ফোল্ড করে নেয়। বেশকিছু পেন্ডিং ফাইল ছিলো তাই চেক করছে। সামনে ল্যাপটপের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে, মুখে গম্ভীরতার ছাপ। আরেক হাতে একটা প্যান ঘুড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কেবিনের দরজাতে নক করে রাশেদ….

রাশেদ;; ম্যা আই কাম ইন স্যার?
আব্রাহাম;; হুমম কাম ইন।
রাশেদ;; স্যার এই পিকচার”স গুলো দেখুন একবার।
রাশেদ আব্রাহামের দিকে বেশ কিছু ছবি এগিয়ে দেয়। আজ সকালের কনফারেন্সের কিছু ছবি। অনেকগুলো অফিসার আছে, আরো নানা ভিপি তাদের সাথে আব্রাহাম রয়েছে। আব্রাহাম এক এক করে সব পিক গুলো দেখছিলো তবে দেখতে দেখতেই হঠাৎ একটা ছবিতে নজর আটকে যায় তার। ছবিটা সামনে এনে দেখে আইরাতের ছবি অর্থাৎ মানুষের ভীড়ে এক পাশে আইরাতের ছবি। যাতে সে হেসে হেসে তার পাশে থাকা একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। হয়তো ছবিটা হুট করেই তোলা হয়েছে যাতে আইরাতও ক্যামেরা বন্দি হয়ে গেছে। ছবিতে আইরাতের গাঢ় হাসির মুখ টা দেখা যাচ্ছে। যা দেখে আব্রাহাম নিজেও আনমনেই সামান্য হেসে ফেলে।

আব্রাহাম;; রাশেদ!
রাশেদ;; জ্বি স্যার
আব্রাহাম;; এই ছবিটা কে কেটে কুটে শুধু এই মেয়েটার ছবিটুকু বের করে ফ্রেমবন্দী করো।
রাশেদ;; ওকে স্যার।
রাশেদ ছবিগুলো নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম আবার ল্যাপটপে মনোযোগ দেয়।

রাতের বেলা, আইরাত হলরুমে বসে বসে টিভিতে ফুটবল ম্যাচ দেখছে আর পপকর্ন খাচ্ছে। চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে দিয়ে মুখে একের পর এক পপকর্ন ঢুকিয়েই যাচ্ছে। অনামিকা কাপড় ভাজ করছিলো। এক ঢিবি কাপড় ভাজ করে আইরাতের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো তখনই আইরাত তার ফাটা গলায় চিল্লিয়ে ওঠে “গোওওওওওওওওওওওওওওওওওওল” আর এতে অনামিকা এতো জোরেই চমকে গিয়েছেন যে তার হাত থেকে সবগুলো কাপড়ই নিচে পরে যায়। আইরাত তো সোফাতে বসেই বসেই নাচানাচি শুরু করে দিয়েছে। অনামিকা আইরাতের মাথায় হালকা করে একটা চড় বসিয়ে দেয়। তারপর কাপড় গুলো আবার তুলে হাতে নিয়ে চলে যায়। তখন আইরাতের ফোন বেজে ওঠে। সে নাম্বার না দেখেই রিসিভ করে….

আইরাত;; হ্যালো…
অবনি;; হ্যাল্লো জানু
আইরাত;; হ্যাঁ পেত্নী বল
অবনি;; রেডি হ
আইরাত;; মানে কেনো?
অবনি;; আরে বাইরে যাবো তাই।
আইরাত;; না না বাইরে যাবো না আর আমার ম্যাচ আছে দেখতে হবে।
অবনি;; আরে পরে রিপিট ট্যালিকাস করবে তো তখন দেখে নিস না!
আইরাত;; আরে ধুর সময়ের ম্যাচ পরে দেখে কোন মজা আছে নাকি!
অবনি;; তুই কি ভালোই ভালোই এখন আসবি?
আইরাত;; আচ্ছা অন্য দিন যাই না।
অবনি;; বুঝেছি এভাবে হবেনা, দাড়া আমিই আসছি।

আইরাত কে আর কোন কথা বলতে না দিয়েই অবনি ফোন টা টুক করে কেটে দেয়। আইরাত সব বাদ দিয়ে আবার খেলা দেখার দিকে মন দেয়। তার কিছুক্ষন পরই অবনি সোজা আইরাতের বাসায় এসে হাজির।
অনামিকা;; আরে অবনি, কেমন আছিস?
অবনি;; হ্যাঁ আন্টি অনেক ভালো, তুমি কেমন আছো? আর তোমার মাইয়া টা কোথায়?
অনামিকা;; হ্যাঁ ভালো, সামনে তাকিয়ে দেখ খেলায় ডুবে গেছে ও।
অবনি;; আচ্ছা আন্টি শোন আমি আসলে আইরাতকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে এসেছি।
অনামিকা;; এখন কোথায় যাবি?

অবনি;; কোথাও যাবো না, এই ধরো একটু কফি শপে তারপর কিছু খেয়ে ঘুড়ে এসে পরবো।
অনামিকা;; এখনই যাবি?
অবনি;; হ্যাঁ হ্যাঁ এর জন্যই তো বাসায় আসা। আর প্লিজ তুমি না বলো না প্লিজ আইরাত কে নিয়ে যাই।
অনামিকা;; আচ্ছা যা কিন্তু দুজনেই দ্রুত ফিরে আসবি।
অবনি;; তা আর বলতে।
অবনি গিয়ে সোজা আইরাতের হাত থেকে পপকর্নের পেকেট টা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। আর অবনি যে এসেছে তা আইরাত খেয়ালই করে নি।
আইরাত;; কিরে তুই কখন এলি?
অবনি;; এসেছি একটু আগেই, এখন তুই উঠ উঠ উঠ উঠ।
আইরাত;; আরে কোথায়?
অবনি;; তা তো এখন বলবো না। আগে উঠ রেডি হ।

আইরাত;; আচ্ছা
অবনি আইরাতকে ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠিয়ে দেয়। আইরাত একটা ব্লেক কালারের প্যান্ট পরে, ওপরে লং টপ পরে তার ওপরে একটা শর্ট জেকেট পরে নেয়। চুলগুলো কার্লি করে নেয়।
অবনি;; ওই হলো তোর?
আইরাত;; হয়ে গেছে।
আইরাত বেরিয়ে আসে।
অবনি;; ওয়াহহহ, কিউট লাগতাছে তরে।
আইরাত;; এখন চল বের হই।

অবনি আর আইরাত চলে গেলো। রাস্তায় যাওয়ার পথে আইরাত অবনি কে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করে যে তারা কোথায় যাচ্ছে এতে অবনি বলে “ফাইটিং ক্লাব”। তা শুনে আইরাত অবাক হয়। কারণ এতো রাতে ফাইটিং ক্লাব!
আইরাত;; তুই এতো রাতে ওখানে গিয়ে কি করবি?
অবনি;; আজব, ফাইটিং ক্লাবে গিয়ে মানুষ কি করে রে? অবশ্যই ফাইট দেখবো আই মিন বক্সিং।
আইরাত;; এই না না দেখ আমার এই সব মারামারি টারামারি মোটেও ভালো লাগে না। খুব বেশিই বিরক্তি লাগে আর বড়ো কথা আমার না ভয় লাগে বুঝছিস। আমি যাবো না।
অবনি;; আরে বাদ দে না কিছুই হবে না। চল যাই।

অবনি এক প্রকার জোর করেই আইরাত কে ক্লাবে নিয়ে যায়। ক্লাবে গিয়েই দেখে কালো রঙের সব লাইট। চারিদিকে বেশির ভাগই কালো। আর প্রচুর মানুষের ভীড়। সবাই যেনো উৎসুক জনতা। অবনি আইরাতকে নিয়ে একটা সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। চারিপাশে অনেক বেশিই মানুষ। আর তাদের সামনে একটা চারকোণা আকৃতির বড়ো স্টেজের মতো রয়েছে। তার ফ্লোরটা সম্পূর্ণভাবে সাদা কালারের। তার চারিপাশে আবার বাউন্ডারি দেওয়া কালো র‍্যাপ দিয়ে। আশেপাশেই সবাই চিল্লাপাল্লা করছে এক্সাইটেডম্যান্ট এ।

তবে আইরাত তার কান কিছুটা চেপে রেখেছে আঙুল দিয়ে। পাশে তাকিয়ে দেখে অবনি নিজেও চিল্লাচ্ছে। তার কিছুক্ষন পর একটা ভারি-ভারকাম লোক আসে। অনেক লম্বা আর হাট্টা-কাট্টা। গায়ে কালো সিল্কের মতো একটা হুডি জড়ানো। হুডি টা লোকটার চোখ অব্দি ঢেকে রেখেছে। লোকটার মাঝে যেনো অহংকারের আর শেষ নেয়। দুইহাত ওপরে তোলে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে আসছে। যেনো তার থেকে বড়ো আর কেউ নেই, সে একাই সব। লোকটি এসে ওই সাদা স্টেজ টার ভেতরে চলে যায়। তারপর অন্য আরেকজন এসে লোকটার হাতে বক্সিং গ্লাপ”স গুলো পরিয়ে দিতে লাগে।

আইরাত;; এই কি ম্যাচ খেলবে নাকি?
অবনি;; হ্যাঁ
আইরাত;; হায়রে এর এক ঘুষি খেলেই তো উঠে আর দুনিয়া দেখতে পারবে না কেউ।
অবনি;; না সোনা, ক্লাইমেক্স এখনো বাকি আছে। এর থেকেও ওপরে আরেকজন আছে। তার সাথে কেউ পারে নি আর কেউ পারবেও না। তো চিন্তায় তো এর থাকা উচিত যে সে আসলে কার সাথে টক্কর নিতে যাচ্ছে। ওয়েট & সি।
আইরাত;; হুমম তবে এ……
অবনি;; সামনে তাকিয়ে দেখ।

এবার যে এলো তাকে দেখে সবাই যেনো উৎসুকে আরেক দফা ফেটে পরে। না ই সে অহংকারের দাম্ভিকতা করছে আর না ই নিজেকে বড়ো বলে দাবি করছে। শুধু নরমাললি হেটে আসে। পরনে ফুল ব্লেক গেটাপ। সে আর কেউ আব্রাহাম-ই। সবার মুখে শুধু তারই নাম। আর আব্রাহাম কে আসতে দেখে তো আইরাতের মুখ হা হয়ে যায়।
অবনি;; ওই দেখ কে আসছে, আব্রাহাম স্যার আহা।
আইরাত;; উনি বক্সিং খেলবেন? (অবাক হয়ে)
অবনি;; হ্যাঁ
আইরাত;; আর এটা তুই আগে থেকেই জানতি?
অবনি;; হ্যাঁ
আইরাত;; আমাকে আগে কেনো বলিস নি?
অবনি;; আরে কি আর বলবো এখানে এসেই তো দেখলি।
আইরাত;; আমি আসতামই না যদি জানতাম যে উনি বক্সিং খেলবেন।
অবনি;; কেনো বল তো।
আইরাত;; এমনি।

আইরাত আর অবনি সামনে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম এসে নিজের জেকেটের চেইন টা খুলে ফেলে। আর তাতেও যেনো মেয়েদের চিল্লাপাল্লা দ্বীগুণ হয়ে যায়। কালো একটা গেঞ্জি আর প্যান্ট পরে আছে সে। স্টেজে চলে যায়। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে তার প্রতিদ্বন্দ্বী তাকে বেশ রাগি একটা লুক দিচ্ছে। আব্রাহাম তা পাত্তা না দিয়ে হাতে গ্লাপ”স পরে নেয়। হঠাৎ ওই লোকটা আব্রাহাম কে বলে ওঠে….
— এখনো সময় আছে চলে যাও এখান থেকে।
আব্রাহাম;; কে যাবে তা তো সময়ই বলে দিবে।

এই বলেই ম্যাচ শুরু হলো। আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে ওই লোকটি বেশ ক্ষোভ নিয়ে আব্রাহামের কাছে যায়। নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে আব্রাহামের গায়ে একটা পাঞ্চ মেরে দেয়। আব্রাহাম তাতে এক চুলও নড়ে না। ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। লোকটা আরো একবার আব্রাহামের গায়ে হিট করে। এতে মানুষের ভীড়ে কিছুটা হতাশ ভাব দেখা যায়। সবাই নিচু গলায় “ওওওওওওওওওওওওওও” করে ওঠে। এভাবেই দেখতে দেখতে আব্রাহামের গায়ে আরো কয়েকটা পাঞ্চ পরে। আব্রাহামের গায়ে যে কটা পাঞ্চ পরছিলো তার সবকটা তেই আইরাত তার চোখ-মুখ সব কুচকে নিচ্ছিলো।

এবার লোকটা আরো একটা পাঞ্চ বসিয়ে দেয়। আর এটাই যেনো তার লাস্ট হিট ছিলো। আব্রাহাম এবার রাগে গর্জে ওঠে। চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারণ করে যেনো অগ্নিমূর্তি। লোকটা আব্রাহামের হঠাৎ এমন লুক দেখে অবাকই হয়ে যায়। আর আব্রাহাম এবার এক গর্জন দিয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে লোকটার একদম মুখ বরাবর ঘুষি মেরে দেয়। তার মুখ থেকে নিমিষেই রক্ত ছিটকে বের হয়ে পরে। আর পাবলিক সবাই চিল্লিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। যেনো তারা এটাই চাইছিলো।

আইরাত একমনে তাকিয়ে ছিলো আর অবনিও আইরাতের কানের কাছে ‘ইয়েএএএএএএস’ বলে চিৎকার করে ওঠে। ম্যাচের যে র‍্যাফারি ছিলো তিনি ওই লোকটার কাছে এগিয়ে যান। ওই লোকটা এখন আর আস্ত নেয়। সেই তখনই লুটিয়ে পরেছে। র‍্যাফারি তার কাছে গিয়ে 1 2 3 বলে কিন্তু তার কোন সাড়া-শব্দ পাওয়া না। খেয়াল করে দেখে যে ওই লোকটার ঘাড়ের হাড় ভেঙে গেছে। মুখের ভেতরের দাঁত অব্দি ভেঙে গেছে। মুখের এক সাইড প্রায় থেতলে গেছে। নিথর হয়ে পরে আছে নিচে। শুধু আধো আধো নয়নে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আব্রাহাম লোকটার দিকে কিছুটা ঝুকে বলে….

আব্রাহাম;; Get well soon dude….
অবশেষে র‍্যাফারি এসে আব্রাহাম কে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করে, যা আব্রাহাম প্রতিবারই হয়। আব্রাহাম এবার সবার দিকে এক নজর তাকায়। তবে তখন তার নজর যায় আইরাতের দিকে। আইরাত তো আগে থেকেই আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আব্রাহাম জানতো না যে আইরাতও এখানে আছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এসে পরে। আর আইরাতও অবনিকে নিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসে সেখান থেকে। ক্লাবের বাইরে এসেই আইরাত বুক ভরে দম নেয়।

আইরাত;; আহহহহহহহ বাঁচলাম। কি ছিলো এইটা।
অবনি;; দারুন না!
আইরাত;; কচুর মাথা। আর তুই, তুই আগে থেকেই জানতি যে এখানে আব্রাহাম চৌধুরী আসবেন তাই তুই এসেছিস তাই না।
অবনি;; সত্যি বলতে তোকে দেখানোর জন্যই এনেছিলাম।
আইরাত;; তুইও না এখন চল তো এখান থেকে।
আইরাত আর অবনি এসে পরে।

আর ওদিকে আব্রাহাম নিজের চুল গুলো আলতো হাতে ঝাড়তে ঝাড়তে এসে পরে। পানির বোতল টা নিয়ে এক নিমিষেই খেয়ে নেয়। আর বাইরে আসতেই অয়ন-কৌশল তার দিকে এগিয়ে যায়।
অয়ন;; ওয়াহহহহ মেরে শের। লোকটার ঘাড়ই ভেঙে দিলি।
আব্রাহাম;; ওর ভাগ্য ভালো যে জানে মারি নি।
কৌশল;; রাগ টা একটু কমা ভাই এইটা একটা গেইম ছিলো মাত্র।
আব্রাহাম;; নট পসিবল।
অয়ন;; আচ্ছা যাই হোক, কাল অফিস আছে সেখানে তো দেখা হচ্ছেই তাই না। আজ তাহলে যাই।
আব্রাহাম;; হুমমম। তবে একটা কাজ করতে হবে তোদের দুজন কেই।
কৌশল;; কি কাজ?

আব্রাহাম;; একটা মেয়ে আছে তার চাকরি টা জাস্ট খেয়ে দিতে হবে এইযা।
অয়ন;; কি? মানে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিতে হবে।
আব্রাহাম;; Exactly..
কৌশল;; কিন্তু কেনো? আর তুই তো কখনোই কারো ক্যারিয়ারের পেছনে পরিস নি তাহলে এখন কেনো? তাও আবার একটা মেয়ের?
অয়ন;; আমার ডাল ম্যা কুচ কালা না পুরো ডালই কালা মনে হচ্ছে।
আব্রাহাম দুজনের মাথা তেই জোরে গাট্টা মারে।
আব্রাহাম;; তোদের এতোকিছু না ভেবে যা করতে বলেছি শুধু তাই কর। আর যত দ্রুত সম্ভব কাজটা হয়ে যাওয়া দরকার বুঝতে পারলি।
অয়ন;; হয়ে যাবে। বাট মেয়েটা কে? নাম কি?
আব্রাহাম;; সব ডিটেইলস পেয়ে যাবি।

এই বলেই আব্রাহাম গাড়িতে উঠে চলে যায়। অয়ন আর কৌশলও এসে পরে। আব্রাহামের মাথায় এখন শুধু আইরাতের কথাই ঘুড়পাক খাচ্ছে। সে জানে না কেনো জানি তার ওই মেয়েটাকে দেখলে চোখ সরাতেই মন চায় না। চোখ যেনো তাকে না দেখতে পেরে বেশ নারাজ। আব্রাহাম ড্রাইভ করছে আর ঘুড়েফিরে চোখের সামনে আইরাতই বারবার ভেসে ওঠছে। নিজের বাসায় চলে যায় আব্রাহাম। বাসার ভেতরে ঢুকলেই অনেক গুলো স্টাফ সামনে আসে। তবে আব্রাহাম নিজের রুমে চলে যায়। তার দাদি কে দেখে না হয়তো উনার রুমে। আব্রাহাম আগে গিয়ে একটা লম্বা শাওয়ার নেয়। ওপর থেকে ঠান্ডা পানিবিন্দু গুলো গড়িয়ে গড়িয়ে সারা গায়ে পরছে। আর আব্রাহাম তার চোখ বন্ধ করে এক হাত দিয়ে কপালের সামনে আসা চুল গুলোকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে আরেক হাত কোমড়ে ঠেকিয়ে রেখেছে। একটা সময় বের হয়ে পরে। হলরুমে গিয়ে দেখে ইলা বসে আছে। আব্রাহাম তার দাদির কাছে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে দিয়ে শুয়ে পরে। আর ইলা আব্রাহামের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

ইলা;; কিরে কি হয়েছে? শরীর খারাপ?
আব্রাহাম;; না এমনি।
ইলা;; কিছু তো একটা হয়েছেই বল না।
আব্রাহাম;; দাদি আমি না যেনো কোথাও আটকে গিয়েছি। মানে আমি তো চলছি কিন্তু আমার মন-মস্তিষ্ক যেনো কিছুতে আটকে গেছে, থেমে গেছে। বের হতে চাইছি কিন্তু পেরে উঠছি না।
ইলা;; আমার কিন্তু ব্যাপার টা বেশি সুবিধার লাগে না।
আব্রাহাম;; মানে?
ইলা;; বুদ্ধিমান দের জন্য ইশারাই যথেষ্ট।
আব্রাহাম;; দাদি কথা প্যাচিয়ো না তো।
ইলা;; তোর কাছ থেকেই তো শিখেছি।
আব্রাহাম কতোক্ষন সেখানেই থেকে তারপর নিজের রুমে চলে যায়। রাতে অয়ন কে ফোন দিয়ে যার চাকরি খাওয়ার কথা বললো তার সব ডিটেইলস দিয়ে দেয় আর অয়ন তৎক্ষনাৎ গিয়ে ঐ অফিসের ওনারের সাথে কথা বলে। ব্যাস কাজ শেষ। আব্রাহাম কে ফোন করে ইনফর্ম করে দেয়। আর সব শুনে আব্রাহাম এক দম ছাড়ে। এখন শুধু সামনে কি হয় তা দেখার পালা।

সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে ব্রাশ করছিলো আইরাত। তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। গিয়ে তা রিসিভ করে কানে ধরতেই আইরাতের চোখগুলো আপনা আপনিই বড়ো হয়ে যায়। ফোন রেখে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে না খেয়েই দ্রুত বের হয়ে পরে। অনামিকা জিজ্ঞেস করলেও আইরাত কিছু বলে না। বেশখানিক সময় বাদে অফিসে গেলে তৌফিক ছুটে আইরাতের কাছে আসে।
তৌফিক;; কিরে কি শুনি এগুলো?
আইরাত;; আরে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না যে কি থেকে কি হচ্ছে। অবনি কোথায়?
অবনি;; এইতো, কিন্তু তোর কি হলো তুই চাকরি টা ছেড়ে দিচ্ছিস কেনো বলতো?
আইরাত;; আরে কিসের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি মাথা খারাপ হয়েছে তোর! আমি নিজেই তো মাত্র শুনতে পেলাম যে আমার চাকরি নেই। কীভাবে কি?
আইরাত, অবনি আর তৌফিক কথা বলছিলো তখনই অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তা মারুফ হোসেন আসেন।
মারুফ;; মিস. আইরাত!

আইরাত তো ভারি ক্ষেপা ক্ষেপে গিয়েছে। দ্রুত পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়।
আইরাত;; কি ফাইজলামি শুরু করেছেন আপনারা নাকি?
অবনি;; আরেএএএ আইরাত উনি সিনিয়র আমাদের।
আইরাত;; রাখ তোর সিনিয়র, চাকরি তো আমার এমনিতেও গিয়েছে। আর এইযে আপনি সিনিয়র নামে ধান্দাবাজ কোথাকার। আসলে কি কারণে আমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো তা কি জানতে পারি?
মারুফ;; ভূল তথ্য ছাপানোর জন্য।
আইরাত;; আপনাদের আগেও বলা হয়েছে আর এখনও বলছি যে সেটা মাত্রই একটা ভূল ছিলো আমার। এমন ভূল রিপোর্ট দিনে হাজারো টা ছাপানো হয়। যদিও তারা ইচ্ছে করেই করে আর আমি ভূলে করে করেছি। সব ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছিলো তাহলে কেনো?

মারুফ;; না এটা তো কোন যুক্তির কথা না আপনি এতো বড়ো একজন মানুষ আব্রাহাম স্যার কে নিয়ে এত একটা কাহীনি করবেন আর আপনাকে কিছু করা হবে না এটা তো কোন কথার মাঝে পরে না।
আইরাত;; আমি আব্রাহাম চৌধুরী কে নিয়ে নিউজ করেছি যেখানে উনার কোন সমস্যা নেই সেখানে আপনি বলার কে?
মারুফ;; দেখুন মিস. আইরাত এটা আমদের অফিসের নিয়মের বাইরে। আর যেখানে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীর মতো ব্যাক্তিত্ববান মানুষের কথা সেখানে তো আর কোন প্রসঙ্গই খাটে না। সরি টু সে বাট আপনার চাকরি আর নেই।
আইরাত;; হাহ্, আমারও কোন ইচ্ছে নেই এই ফালতু রিপোর্টিং করার।

এই বলেই আইরাত রেগে তেড়ে সেখান থেকে চলে আসে। মাথা এত্তো গরম যে সেখানে আলু রাখলে মনে হয় আলুও সিদ্ধ হয়ে যাবে। তবে একজোড়া আঁখি সর্বদা তার ওপর যেনো কড়া নজর রেখেই যাচ্ছে যা আইরাতের অজানা।
আইরাতের আগে থেকেই জার্নালিস্ট/রিপোর্টার প্রফেশন টার ওপর বেশ ঝোক ছিলো। সে তো ভেবেই নিয়েছিলো যে রিপোর্টার হবে। আর হয়েও গিয়েছিলো। এস এ রিপোর্টার আইরাতের রেকর্ড বেশ ভালো ছিলো তবে একজন ভিপি কে নিয়ে হুট করেই না বুঝে নিউজ করার ফলে আজ চাকরি টাকে তার হারাতে হলো।

এগুলোই ভাবছে আর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াচ্ছে আইরাত। রাগ হচ্ছে এখন, প্রচুর রাগ। এতোই রাগ যে মন চাইছে নিজের সামনে যা পরছে তাই যেনো ভেঙে একেবারে চুরমার করে দিক কিন্তু তা আর পারছে না। একসময় আইরাতের রাগ গুলো তার চোখের অশ্রু তে পরিণত হয়। রাগ আর সামলিয়ে রাখতে না পেরে কেদেই দিয়েছে। তবুও চোখের জলবিন্দু গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পরার আগেই তা হাতের উল্টো পাশ দিয়ে দ্রুত মুছে ফেলে। চোখ গুলো লাল টকটকে হয়ে গেছে। বেশ সময় পর বাসায় ফিরে আসে। আর আইরাত কে দেখেই অনামিকার কেমন সন্দেহ হয়। অনামিকা কপাল কুচকে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। আইরাত যখন আলতো করে তার চোখ তুলে তাকায় তখন অনামিকা আরো সিওর হয় যে কিছু না কিছু তো একটা হয়েছেই। আইরাত হলরুমে সোফাতে ধপ করে বসে পরে। ব্যাগ টা সাইডে রেখে দুইহাত দিয়ে নিজের কপাল চেপে ধরে।

অনামিকা;; কিরে কি হয়েছে?
আইরাত;; কিছু না মা (একদম আস্তে)
অনামিকা;; আরে কি হয়েছে বল না। কারো সাথে ঝগড়া করেছিস বা কেউ কি কিছু বলেছে?
আইরাত;; আমার চাকরি টা চলে গিয়েছে।
অনামিকা;; কি? কিন্তু কীভাবে?
আইরাত;; একজন কে নিয়ে একটু ভূল নিউজ বানিয়েছিলাম তাই। কিন্তু বিশ্বাস করো মা আমি ইচ্ছে করে কিছুই করি নি। আমি কিছুটা প্রুভ পেয়েছিলাম তার এগ্যানস্টে কিন্তু কে জানতো যে সেইগুলোও ভূল।
অনামিকা;; তুই যখন ভার্সিটি শেষ না করেই এই রিপোর্টারের কাজে জয়েন করলি আমি তোকে তখনই বলেছিলাম যে আগে নিজের স্টাডি টা একদম কমপ্লিট করে নে তারপর এর থেকেও ভালো ভালো জবের অফার আসবে কিন্তু তুই শুনলি না আমার কথা।

আইরাত;; মা, কথা সেটা না। ভার্সিটি থেকে যে কানেকশন একেবারেই অফ রেখেছি আমি তা কিন্তু না। শুধু ভার্সিটিতে যাই না তেমন অর্থাৎ বেশি একটা গুরুত্বপূর্ণ না হলে যাই না কিন্তু আমি পড়াশোনা ছাড়ি নি। আর তুমি তো জানোই আমার কতো ইচ্ছে ছিলো এই প্রফেশনে কিন্তু গেলো সব।
অনামিকা;; এই মেয়ে মন খারাপ করিস কেনো! তোর বাবা তোর নামে যে টাকা রেখে গিয়েছে তাতে তোর মতো আইরাত আরো পাঁচ টা পালা যাবে।
আইরাত;; মা ব্যাপার টা টাকা-পয়সার না। আমার খারাপ লাগছে চাকরি চলে গেলো, আর টাকার জন্য যে আমি ওই চাকরি টা করতাম তাও না।

অনামিকা;; শোন আমি বলি কি যে যা হয়েছে হয়েছেই। এইসব বাদ দিয়ে এখন থেকে তুই রেগুলার ভার্সিটি যাওয়া শুরু কর। পুরো দমে নিজের পড়াশোনায় মন দে। ইনশাআল্লাহ রেজাল্ট ভালো কর আর তারপর তোর যা ইচ্ছে অর্থাৎ যে জব করতে মন চায় তাই কর। কোন মানা নেই, কোন বাধা নেই। তব হ্যাঁ যে কাজ গুলোতে ঝুঁকি বেশি মানে এই ধর মিডিয়া-প্রেস বা রাজনীতি এগুলো না ওকে!
আইরাত;; আমি জানতাম যে তুমি এখন এই কথা গুলোই বলবে।
অনামিকা;; তো বলবো না। আচ্ছা শোন!
আইরাত;; হুম

অনামিকা;; আচ্ছা অবনিও না তোর সাথেই একই ভার্সিটিতে পড়ে?
আইরাত;; হ্যাঁ আমরা সেইম ভার্সিটি আর সেইম প্রফেশনেও ছিলাম।
অনামিকা;; এটা পার্টটাইম জব?
আইরাত;; হ্যাঁ, বলা যায়। তবে বজ্জাতের হাড্ডি আরেকজন আছে তো।
অনামিকা;; কে?
আইরাত;; দিয়া আর কে।
অনামিকা;; বাহহহ, তিন বজ্জাত এক জায়গায় দারুন হলো।
আইরাত;; আরে ধুর ছাই আগে খেতে দাও দেখি রাগের চোটে ক্ষুদা লেগে গেছে আমার।
অনামিকা চলে যায় টেবিলে খাবার বাড়তে। আর আইরাত হাত-মুখ ধুয়ে আসতে যায়।

অয়ন;; ভাই কাজ হয়ে গিয়েছে।
আব্রাহাম;; গুড।
অয়ন;; আচ্ছা এখন আমাকে আগে একটা কথা ক্লিয়ার কর তো!
আব্রাহাম;; হুয়াট?
অয়ন;; মেয়েটা কে? মানে চাকরি টা খেয়ে দিলি কেনো?
আব্রাহাম;; নিজেও জানি না শুধু এই টুকু জানি যে মেয়েটাকে আমার চাই।
অয়ন;; মানে?
আব্রাহাম;; ওই মেয়েটাকে আমার চাই খুব করে চাই। এই কয়েকদিনে এই টুকু তো বুঝে গেছি যে ”যেভাবেই হোক আমার ওই মেয়েটাকে লাগবে আজীবনের জন্য। এট এনি কোস্ট”।
অয়ন;; হুমম বুঝলাম।
আব্রাহাম;; রাখি
আব্রাহাম ফোন টা কেটে দিয়ে নিজের ল্যাপটপের দিকে তাকায়। চোখ থেকে মোটা ফ্রেমের চশমা টা খুলে দুইহাত ভাজ করে বেডের সাথে হেলান দিয়ে একমনে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে তো আছেই। আর সেখানে আর কারো না আইরাতেরই ছবির স্ক্যাচ।

পরেরদিন সকালে আইরাত খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে পর। সাধারণত আইরাত এতো সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে না তবে আজ উঠে পরেছে। কীভাবে সে নিজেও জানে না। অন্যান্য দিন আইরাতকে সকালে ঘুম থেকে তোলার জন্য অনামিকার এক প্রকার যুদ্ধ করতে হয় তাও যেনো ঘুম ভাঙে না। ঘুম থেকে ওঠেই অফিসে যাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি লাগিয়ে দেয়। কিন্তু এখন যখন আর চাকরি নেই, অফিসে যেতে হবে না তখন আইরাত আপনা আপনিই ঘুম থেকে ওঠে পরেছে কোন ডাক দিতে হয়নি তাকে। আইরাত বিছানাতে বসে এটাই ভেবে তারপর ক্ষীণ এক দম ফেলে ওঠে পরে।

পেছনের চুল গুলোকে ছোট্ট একটা কাটা দিয়ে বেধে ফেলে। ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে পরে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল বাজে ৬ টার কাছাকাছি। আইরাত ভাবলো বাইরে বের হয়ে রাস্তা টা একটু হেঁটে আসুক। ভোরের আবহাওয়া টায় কেমন এক মনোমুগ্ধকর ভাব থাকে, যেনো প্রকৃতির এক আলাদা ছোয়া লেগে থাকে। এই সাজ-সকাল বেলা হাঁটতে গেলে ব্যাপার টা মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ। একটা সফট ব্রাউন কালারের জামা পরে চুলগুলো ছেড়ে দিয়েই সোজা বের হয়ে পরে। তবে যাওয়ার আগে একবার অবনি কে ফোন করে যে সেও হাঁটতে বের হবে কিনা। আইরাত আর অবনির বাসা বলতে গেলে মাত্র ৫-১০ মিনিটের দূরূত্বে। আইরাত অবনিকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয় কিন্তু ধরে না অবশেষে ধরে অবনির ছোট ভাই রাফি। আর সে কিছুটা তোতলা।

রাফি;; হ্যালো
আইরাত;; কিরে পিচ্চি তোর বোন কই?
রাফি;; আপু তো ঘুমায়।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।
রাফি;; তুমি কি কিতু বলবে?
আইরাত;; বাইরে হাঁটতে বের হচ্ছিলাম তো ভাবলাম তোর বোন কেও নিয়ে যাই তা উনি তো ঘুম থেকেই উঠেন নি।
রাফি;; ওহ আত্তা এই কতা, তমস্যা নেই আমি আতি তো। আমি যাবো।
আইরাত;; আচ্ছা তাহলে বাসার সামনে থাকিস।
রাফি;; আত্তা।

আইরাত ফোন কেটে দেয়। যাওয়ার আগে অনামিকার রুমে একবার উঁকি দিয়ে যায়। নাহ সে এখনো ঘুম। আইরাত চলে যায়, মা’র ঘুম ভাঙার আগেই আবার বাসায় চলে আসতে হবে। অবশ্য কিছুই বলবে না তবুও সে তো ঘুম না বলেই বাইরে যাচ্ছে পরে বাসায় না পেলে খোঁজাখোঁজি শুরু করবে।

আইরাত বাইরে বের হতেই এক দমকা হাওয়া এসে গায়ে লাগে। আর আইরাত চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করে, আহহহ শান্তি। পরিবেশেও কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ লেগে আছে। আইরাত আস্তে আস্তে হাটা শুরু করে দেয়। সবুজ ঘাসে ভরা মাঠ, দুইপাশে বড়ো বড়ো গাছ। মাটির ওপরে ঘাস গুলোতে বেশ শিশির বিন্দু লেগে আছে। পাখির কিচিরমিচির স্পষ্ট কানে আসছে। ভোরে যে ফুলগুলো ফোটে তা থেকে তীব্র সুগন্ধি ছড়াচ্ছে চারিদিকে। হাতে গোনা কিছু মানুষ রাস্তায় আছে এখন। কেউ রাস্তা ঝাড় দিচ্ছে, আবার মসজিদ থেকে কিছু মানুষ বের হলো হয়তো নামাজ শেষ করে।

সত্যিই বেশ ভালো লাগছে। ঠিক কতো দিন পর যে এতো ভোরে রাস্তায় বের হয়েছে আইরাত তা তার মনেই নেই। হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে ৬ টা বেজে ৭ মিনিট। আরো কিছুটা দূর হেঁটেই আইরাত দেখে যে ছোট চায়ের দোকানের সামনে পিচ্চি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দোকান দারের সাথে বকর বকর করছে। আইরাতের আর বুঝতে সময় লাগে না যে ওই অবনির ভাই রাফি। চায়ের দোকান টার এক পাশেই বড়ো একটা গেইট রয়েছে আর তাই অবনিদের বাসা। সেখান থেকেই এসে হইতো এই চায়ের দোকানে বসেছে রাফি। এটা তার প্রতিদিনকার কাজ। আইরাত গিয়ে রাফি কে পেছন থেকে “ভুউউউ” করে চমকে দেয়। এতে রাফি এতোই জোরে চমকে গিয়েছে যে আইরাতের সাথে সাথে যে বয়স্ক এক দোকান দার ছিলো তিনিও হেসে দিয়েছেন।

আইরাত;; কিরে ভয় পাইছোস?
রাফি;; এভাবে তেউ তমকায়?
আইরাত;; আহারে তোতলু টা।
রাফি;; আমি, আমিহ তোতলু না। (দুইবার দম ছেড়ে)
আইরাত;; হইছে বুঝছি। এখন চল হাঁটি।
রাফি;; আত্তা।
আইরাত;; হাত দে ধরি নইলে হারিয়ে যাবি।

আইরাতের কথা মতো রাফিও তার হাত টা আইরাতের হাতে দিয়ে দেয়। তারপর হাঁটতে হাঁটতে সেখান থেকে এসে পরে। আইরাত রাফির সাথে অনেক ফ্রি। নিজেরই ভাই মনে করে। আর রাফি অনেক কিউট। আইরাত আর রাফি হাঁটছিলো তার মাঝেই রাফির কত্তো প্রশ্ন। আইরাপু এইটা কি, ওইটা কি, আইরাপু এটা দিয়ে কি করে, ওটা দিয়ে কি করে? আরো কতো কি। সামনেই ছোট্ট একটা নদীর মতো ছিলো, হাতে কয়েকটা পাথর কুড়িয়ে নেয় আইরাত আর রাফি দুজনেই। দুজনেই নদীতে ঢিল দিচ্ছে। আসলে দেখছে যে তাদের মাঝে কার পাথর ঠিক কতো দূর যায়। এভাবেই প্রায় বিশ মিনিটের মতো হাঁটাহাঁটি করে তারা বাসায় আসার জন্য রওনা দেয়। আইরাত প্রথমে রাফি কে তার বাসায় দিয়ে তারপর নিজের বাসায় আসবে। আইরাত রাফির হাত ধরে ধরে হাঁটছিলো তখনই হঠাৎ রাফি বলে ওঠে…..

রাফি;; আইরাপু!
আইরাত;; হুমমম
রাফি;; জানো তুমি না এত্তো এত্তো ভালো গো।
আইরাত;; বাব্বাহ, তাই!
রাফি;; হ্যাঁএএএএ।
আইরাত;; কেনো বলতো?
রাফি;; এইযে আমাতে কত্তো আদল কলো। ঘুলতে নিয়ে যাও, খেলো।
আইরাত;; হুমম হলো তোর পাম-পট্টি দেওয়া।
রাফি;; আলে না না পাম তাম দিত্তি না সত্যি বলতি। জানো আমার না একতা ইচ্ছে আছে অনেক বেশি।
আইরাত;; তা কি ইচ্ছে শুনি!

রাফি;; আমি যদি আলো (আরো) একতু বলো (বড়ো) থাকতাম নইলে তুমি যদি আলো একতু ছোত থাকতে তাহলে কতোই না ভালো হতো বলো।
আইরাত;; এখানে ভালোর কি আছে?
রাফি;; অনেক কিতু, তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে কলতে পালতাম। বিয়ে কলে তোমাকে আমার সাথে কলে এক্কেবারেই নিয়ে তলে যেতাম।
রাফির কথা শুনে আইরাতের মুখ হা হয়ে যায় আর সাথে বেশ হাসিও পায়। রাফির হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের কোমড়ে দুই হাত রেখে আইরাত বলে ওঠে…….

আইরাত;; হায়রে কি পাকনা পোলারে। এই তোর দুধের দাঁত পরেছে হ্যাঁ। আর আমি,, আমি তোর ঠিক কতো বড়ো হবো তার ধারণা আছে তোর। এহহহ নাক টিপলে দুধ পরবে আর সে কিনা আমাকে বিয়ে করতে আসছে দিবো না একটা কান মলা। আগে বড়ো হ ভাই তুই। তোতলামি টা অন্তত আগে বাদ দে।
রাফি;; তালপল কি তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে কলবে?
আইরাত;; ওরেএএএএএ শয়তান দাঁড়া তুই, আজকে তোর খবর আছে। তোর মায়ের কাছে বিচার দিবো আজকে দাঁড়া।
এই বলেই আইরাত রাফির পেছনে ধাওয়া করতে লাগে আর রাফির খিলখিল করে হেসে ছুটতে লাগে। তবে ছুটতে ছুটতেই হঠাৎ রাফির সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। তা দেখে রাফিও থেমে পরে। আর আইরাত গিয়ে আবার রাফির হাত ধরে ফেলে। আইরাত কপাল কুচকে সামনে তাকায় একটা কালো রঙের গাড়ি। গাড়ির উইন্ড গ্লাস খুলে একজন বলে ওঠে…..

রাশেদ;; আপনি আইরাত ম্যাম রাইট?
আইরাত;; আব… হ্যাঁ আমিই আইরাত। আপনি কে?
রাশেদ;; আমাকে হয়তো আপনি চিনবেন না তবে আমি চিনি। চলুন আপনাকে আপনার বাসার সামনে নামিয়ে দেই।
আইরাত;; না না আপনাকে চিনি না জানি না হুট করেই কেনো গাড়িতে উঠবো। আমরা যেতে পারবো প্লিজ আপনি যান।
রাশেদ;; আসলে আমি আব্রাহাম চৌধুরী স্যারের গার্ড। আর উনিই আমাকে আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বলেছেন।
আইরাত;; ওহহ আচ্ছ আচ্ছা বুঝলাম এবার। তাহলে তো আরো দরকার নেই। আপনি প্লিজ যান আর আপনার আব্রাহাম স্যার কেও বলে দিয়েন যে আমার কোন ধরনের কোন হেল্প লাগবে না। নিজের টা নিজে বেশ করতে পারি আমি। সো প্লিজ যান।

এই কথা বলেই আইরাত রাফির হাত ধরে সোজা সেখান থেকে চলে আসে। আর রাশেদ আব্রাহামের বলাতেই অফিসে এতো সকালে কিছু কাজের জন্য গিয়েছিলো। রাশেদ তো আইরাত কে কিছুটা হলেও চিনে। রাশেদ কাজ শেষ করেই আসছিলো আর আব্রাহামের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলো। আইরাত কে দূর থেকে দেখেই রাশেদ দ্রুত আব্রাহাম কে বলে আর আব্রাহাম বলে সে আইরাত কে যেনো ড্রপ করে তার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসে আর ভিডিও কল অন-ই রাখতে। রাশেদ তাই করে।

সে গাড়ি থামিয়ে আইরাতের সাথে কথা বলছিলো আর সবই আব্রাহাম দেখছিলো। ড্রাইভিং সীটের সামনে ফোনে ভিডিও কল অন করে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাতে আব্রাহাম আইরাত কে দেখছে তবে আইরাত গাড়ির ভেতরে নজর না দেওয়াতে আব্রাহামকে দেখতে পারে নি। আর আইরাত কি কি বলেছে তা সবকিছুই আব্রাহাম শুনেছে। সব শুনে যেনো আব্রাহাম বেশ রেগে গেলো। আইরাত এক প্রকার তাকে এটিটিউড দেখালো যা আব্রাহামের বেশ লেগেছে। আইরাত চলে গেলে রাশেদ ফোন টা হাতে নিয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

রাশেদ;; স্যার…
আব্রাহাম;; এবার আইরাত দেখবে যে ত্যাড়ামি কাকে বলে, কতো প্রকার ও কি কি!
এই বলেই আব্রাহাম কল কেটে দেয়। আইরাত রাফিকে নিয়ে তার বাসার সামনে এলে রাফি চলে যায়। আর আইরাতও তার বাসায় চলে আসে। এখন তো আর অফিস নেই আর ভার্সিটি কিছুদিন পর হয়তো যাবে তাই এখন কিছুদিন রেস্ট। আইরাত বাসায় এসে দেখে তার মা রান্নাঘরে কাজ করছে।

আইরাত;; উঠে পরেছো?
অনামিকা;; হ্যাঁ, বাইরে গিয়েছিলি তুই?
আইরাত;; হ্যাঁ ভাবলাম একটু রাস্তা হেটে আসি। তাই আর কি।
অনামিকা;; ভার্সিটি আবার কবে থেকে যাবি ভাবলি কিছু?
আইরাত;; অবনি আর দিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। দিয়া তো রোজ ভার্সিটি যায়, ওর কাছ থেকে যতো নোট”স আছে তা কালেক্ট করতে হবে আর অবনি যাবে কিনা তা জিজ্ঞেস করতে হবে।
অনামিকা;; আচ্ছা।

এভাবেই সময় যায়। দুপুরের দিকে অনামিকা ছাদে আচার শুকোতে দিয়েছিলো। আইরাত এখন ছাদের রেলিং এ বসে হাতে আস্তো একটা আচারের বোয়াম নিয়ে মনের সুখে খাচ্ছে। দিয়া কে ফোন করেছিলো দিয়া বললো সে তো এখন আর তার বাসায় যেতে পারবে না তাই বিকেলের দিকে যেনো ভার্সিটির ক্যাম্পাসে এসে পরে। ভার্সিটি সারাদিনই ওপেন থাকে। আইরাতও হ্যাঁ বলে দেয়। হঠাৎ আচার খাওয়ার মাঝে তৌফিকের ফোন আসে। আইরাত কপাল কুচকে ফোন টা হাতে তুলে নিয়ে কানে রেখে দেয়।

আইরাত;; হ্যালো।
তৌফিক;; হ্যালো ট্যালো বাদ দে খবর জানিস কিছু?
আইরাত;; খবর থেকে আপাতত বিরতি নিয়েছি আমি।
তৌফিক;; আমি সিরিয়াস।
আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা বল কি হয়েছে?
তৌফিক;; মিস.আইরাত আফা আপনার চাকরি কোন ভুয়া রিপোর্ট করার জন্য যায়নি বরং আপনার চাকরি খেয়েছে স্বয়ং আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী বুঝলেন।
আইরাত;; কিহ? মাথা খারাপ হয়েছে তোর মানে উনি আমার চাকরি কেনো খাবেন। উনার সাথে আমার কথা হয়েছে আর আমি যে কাজটা ভূল করেই করে ফেলেছি তাও তিনি জানেন তাহলে আমার চাকরি উনি কেনো কেড়ে নিবেন?
তৌফিক;; মেনেজার কথা বলছিলো আর আমি সবকিছু স্পষ্ট শুনেছি। বিশ্বাস না হলে তুই নিজেই আব্রাহাম স্যার কে জিজ্ঞেস করে নিস।

আইরাত;; আচ্ছা আমি দেখছি।
এই বলেও ফোন কেটে দেয় আইরাত। তার খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কপাল কুচকে হাতে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে। আনমনেই কতোক্ষন তাকিয়ে থেকে মুখের মধ্যে থাকা আচার টুকু গিলে ফেলে। আব্রাহাম তার চাকরি কেনো খেলো। আইরাত দ্রুত তার অফিসের একজন সিনিয়র আপু কে ফোন করে। অর্থাৎ আইরাত যে অফিসে কাজ করতো আর কি, ওই মেয়েটার সাথে আইরাতের বেশ ভালোই সম্পর্ক। আব্রাহামের সাথে দেখা করতে হলে অবশ্যই আইরাত কে এপোয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। তাই আইরাত ট্রাই করছে যে সে ওই মেয়েটাকে বলে আব্রাহামের সাথে আইরাতের এপোয়েন্টমেন্ট টা ফিক্সড করে দেয়। যেই ভাবা সেই কাজ।

আইরাত;; হ্যালো নিপা আপু!
নিপা;; হ্যাঁ আইরাত কেমন আছো?
আইরাত;; হ্যাঁ ভালো। তুমি?
নিপা;; ভালোই। কিছু দরকার?
আইরাত;; অনেক বেশিই দরকার।
নিপা;; হ্যাঁ তাই বলি, দরকার না পরলে তো আবার আমাকে মনেই করো না।
আইরাত;; ধুর আজাইরা কথা বলো না তো। তোমার সাথে সারাদিন বসে থাকলেও তুমি বলবে যে দরকার ছাড়া মনে করি না।

নিপা;; আচ্ছা যাই হোক কি হেল্প লাগবে তাই বলো।
আইরাত;; আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আছে না।
নিপা;; হুমম
আইরাত;; তার সাথে আমার এপোয়েন্টমেন্ট ফিক্স করে দিতে হবে তোমার।
নিপা;; ওকে, আজ নাকি কাল?
আইরাত;; আজ মানে যত দ্রুত সম্ভব।
নিপা;; আচ্ছা। তো এইদিকে সব ঠিক ঠাক করে আমি তোমাকে জানাচ্ছি কেমন?
আইরাত;; আচ্ছা।
আইরাত ফোনটা রেখে দেয়। আস্তে আস্তে বিকেল ঘনিয়ে এলে আইরাত ভার্সিটির ক্যাম্পাসে চলে যায়। সেখানেই দিয়া আর অবনি আছে। দিয়া আর অবনি বকর বকর করলেও আইরাত যেনো নিজ চিন্তায় মগ্ন। তা খেয়াল করে দিয়া বলে….
দিয়া;; কিরে এতোদিন পর ক্যাম্পাসে আসলি তাও এমন করে থুম মেরে বসে আছিস কেনো? চাকরি চলে গেছে দেখে মন খারাপ?

আইরাত;; আরে না রে।
অবনি;; তো?
আইরাত;; কিছু না এমনি। বাই দি ওয়ে আমি আগামীকাল থেকেই ভার্সিটি আসবো। বাসায় বসে বসে আর ভালো লাগে না। সময় যেনো যেতেই চায় না।
দিয়া;; হ্যাঁ আয় আয় দ্রুত আয়, আমারও একা একা ভালো লাগে না তুই আসলে তাও মজা হবে।
আইরাত;; হুমম।
তাদের আড্ডা দেওয়ার মাঝেই হঠাৎ নিপার ফোন আসে আইরাতের কাছে।
আইরাত;; হ্যালো।
নিপা;; হ্যাঁ আইরাত তোমার এপোয়েন্টমেন্ট ফিক্স।
আইরাত;; তাহলে কি আব্রাহাম চৌধুরীর অফিসে এখনই যাবো?
নিপা;; হ্যাঁ যেতে পারো।

আইরাত;; আচ্ছা।
নিপা;; আচ্ছা হুট করেই উনার সাথে দেখা কেনো বলতো?
আইরাত;; বেশি না শুধু কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো উনাকে ব্যাস।
নিপা;; ওকে তো যাও তুমি।
আইরাত;; থ্যাংক ইউ সো সো সো মাচ আপু।
নিপা;; ওয়েলকাম বোনু।
এই বলেই আইরাত ফোন রেখে দেয়।
আইরাত;; তোরা থাক, আমি এখন উঠি রে।
দিয়া;; মাত্র আধা ঘন্টা হলো এসেছিস আরো একটু বোস।
আইরাত;; না রে কিছু কাজ আছে আমার যেতে হবে।
অবনি;; তাহলে কাল থেকে তুই ভার্সিটি রেগুলার আসছিস?
আইরাত;; হ্যাঁ

অবনি;; তবে আমার তো জব আছেই আমি তো চাইলেও রেগুলার আসতে পারবো না। তোরা কত্তো আড্ডা দিবি আর আমি একা।
দিয়া;; আরে আমাদের কাছ থেকে সব পড়া জেনে নিস আর আসবি রেগুলার না আসলেও মাঝে মাঝে আসবি সমস্যা কি।
আইরাত;; আর অফিস তো সকালে এখন বাসায় গিয়ে তোর আর কাজ কি। এখানে বসে দিয়ার সাথে আড্ডা দে পরে যাস।
অবনি;; হ্যাঁ আচ্ছা।

আইরাত তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পরে। একটা ট্রক্সিতে উঠে পরে। অফিসে যেতেও প্রায় অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। একটা সময় টেক্সি থেকে নেমে পরে। নিজের সামনে তাকিয়েই দেখে ইয়া বড়ো বড়ো অক্ষরে আব্রাহামের নাম লিখা। আইরাত তা দেখে কিছুটা ভেংচি কাটে। ভেতরে চলে যায়। ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসে পরে। এখানে আইরাতের সাথে সাথে আরো তিনজন বসে আছে। তারাও হয়তো আব্রাহামের সাথেই দেখা করার জন্য ওয়েট করছে।

তবে তার কিছুক্ষন পর হঠাৎ লোকগুলো উঠে চলে যায়, আইরাত বসে থাকে। কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর একজন গার্ড এসে আইরাত কে বলে যে আব্রাহাম স্যার অফিসে এই মূহুর্তে নেই। আইরাত কিছুটা রেগে চলে আসে। এপোয়েন্টমেন্ট আছে জেনেও অফিসে নেই। অযথা এই মানুষ গুলোকে বসিয়ে রাখার কোন মানে হয়। পরে জানতে পারে যে আব্রাহাম কাজে ব্যাস্ত অনেক। আইরাতের আর কি করার মনমরা হয়ে বাইরে বের হয়ে পরে।

অফিসের বাইরে আসতেই হঠাৎ আইরাতের চোখে পরে একটা ডার্ক ব্লেক কালারের গাড়ি। আরো একটু খেয়াল করে দেখলে আইরাতের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এটাই আব্রাহামের গাড়ি। আইরাতের বেশ রাগ হলো। মাথায় যেনো ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। সাইড ব্যাগ টা আরো একটু ঠিক করে কাধে ঝুলিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। দুইহাত ভাজ করে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আনমনেই কতোক্ষণ কিছু একটা ভেবে নেয়।

মাথায় যেনো বাত্তি জ্বলার মতো শয়তানি বুদ্ধি এসে হাজির হয়ে গেলো। আইরাত তার ব্যাগের সাইড চেইন টা খুলে কিছু একটা খোঁজতে লাগে। আর তা পেয়েও যায়। একটা গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক। আইরাত সম্পূর্ণ লিপস্টিক টা বের করে নেয়। তারপর তা ডান হাতে নিয়ে গাড়ির উইন্ড-এর দিকে বেশ কিছুটা ঝুকে পরে। ইচ্ছে মতো উইন্ড তে লাল লিপস্টিক দিয়ে ঘষা দিতে লাগে। আব্রাহামের গাড়ির উইন্ড টা যেনো লিপস্টিক দিয়ে একেবারে লেপ্টে দেয় আইরাত। লিপস্টিক টাও প্রায় শেষ হয়ে গেছে।

তবে আইরাত যখন লিপস্টিক দিয়ে উইন্ড তে লাস্ট একটা মার্ক করতে যাবে তখনই ভেতর থেকে উইন্ড টা আস্তে করে নিচে নেমে আসে। আইরাত এতোক্ষন এক শয়তানি হাসি হেসে এগুলো আকাম করছিলো তবে উইন্ড টাকে নিচে নামতে দেখে তার মুখের হাসি ধুপ করে উধাও। গাড়ির ভেতরে চোখ পরতে আইরাতের কলিজা টা কেমন ধক করে ওঠে। আব্রাহাম এক হাত দিয়ে তার কানে ফোন ধরে রেখেছে আর আইরাতের দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে। আইরাত মেকি একটা হাসি দিয়ে শুকনো কিছু ঢোক গিলে। লিপস্টিক টা আবার সুন্দর করে নিজের ব্যাগে রেখে দেয়। এমন একটা ভাব ধরে যেনো সে কিছুই করে নি, ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না।

আব্রাহাম এবার রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে আইরাতের দিকে, যা দেখে আইরাতের যায় যায় অবস্থা। আইরাত দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরতে ধরলে আব্রাহাম এক নিমিষেই গাড়ি থেকে নেমে এসে আইরাতের হাত ধরে হেচকা এক টান দেয়। এতে আইরাত ভরকে যায়।

আব্রাহাম পেছন থেকে আইরাতের হাত খপ করে ধরে নিজের দিকে এক হেচকা টান দেয়। যার ফলে আইরাত একদম তার মুখোমুখি হয়ে যায়। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আইরাত তার হাতের দিকে খেয়াল করে দেখে আব্রাহাম বেশ শক্ত করে ধরে আছে। সে হাত ছাড়ানোর জন্য কিছুটা মুচড়া মুচড়ি করলে আব্রাহাম আবারও এক টানে তাকে গাড়ির সাথে চেপে ধরে। আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে রাখে। আলতো করে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তার দিকেই সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আব্রাহাম;; সমস্যা কি তোমার?
এবার আইরাতের যেনো বুলি ফুটলো।
আইরাত;; সমস্যা? আপনি জিজ্ঞেস করছেন আমার সমস্যা কি?
আব্রাহাম;; অবশ্যই সমস্যা আছে তোমার তাও এখানে (আইরাতের মাথার পাশে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)
আইরাত;; একদম বাজে বকবেন না বলে দিলাম।
আব্রাহাম;; কথা ঘুড়ানো বাদ দিয়ে যা জিজ্ঞেস করছি তাই বলো।
আইরাত;; জিজ্ঞেস তো করবো আমি আর বলবেন আপনি।
আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; আমার চাকরি কেনো খেয়েছেন বলুন!
আব্রাহাম এবার নিজেই আইরাত কে ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ায়।
আইরাত;; কি হলো বলুন!
আব্রাহাম;; আমার কি খেয়ে-দেয়ে আর কোন কাজ নেই যে আমি তোমার চাকরি খেতে যাবো।
আইরাত;; একদম মিথ্যে বলবেন না আমি জানি আপনিই কিছু একটা করেছেন।
আব্রাহাম;; ওকে তো আমিই যে তোমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করিয়েছি তার ব্যাপারে কোন প্রুভ আছে কি তোমার কাছে?

এবার আইরাত চুপ হয়ে যায়। আসলেই তো তেমন কোন প্রুভ নিয়ে আইরাত আসে নি। তৌফিক যেভাবে বললো সেভাবেই সে এসে পরেছে যদিও সে তৌফিক কে অনেকটা বিশ্বাস করে।
আব্রাহাম;; স্পিক আপ।
আইরাত;; না (কপাল কুচকে অন্য দিকে তাকিয়ে)
আব্রাহাম;; তাহলে কিসের ভিত্তিতে তুমি আমার ওপর এই অপবাদ দিচ্ছো?
আইরাত;; হয়েছে এতো ভোলা সাজতে হবে না। আপনাকে এই ক”দিনে এটুকু তো চিনেই গিয়েছি। বেশ গভীর জলের মাছ আপনি।

আব্রাহাম;; সামনে আরো কতো চেনা বাকি আছে।
আইরাত;; কিছু বললেন?
আব্রাহাম;; বললাম যে এখানে কি করো?
আইরাত;; আপনার সুদর্শন মুখমণ্ডল খানা দর্শন করিবার জন্য এসেছিলাম তবে আপনাকে ভেতরে না পেয়ে পেলাম এখানে।

আব্রাহাম;; তো এখন এখানে দেখে নাও যত ইচ্ছে (আইরাতের দিকে বেশ ঝুকে)
আইরাত;; আব, না না থাক দেখতে হ হবে না। আম আমি যাই।
এই কথা বলেই আইরাত দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরে। আর আব্রাহাম কতোক্ষন আইরাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর এসে পরে। আইরাত মনে মনে হাজারো বকা ঝকা করে এসে পরে। আব্রাহাম অফিসের ভেতরে যেতে না যেতেই রাশেদ আসে।
রাশেদ;; স্যার যাক আপনি অবশেষে এসেছেন।
আব্রাহাম;; কেনো, ইজ এভরিথিং ওকে?
রাশেদ;; স্যার আতিক রহমান এসেছেন, আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।
আব্রাহাম;; কেবিনে পাঠিয়ে দিও।

আব্রাহাম যেতে যেতে এই কথা বলে, কেবিনে চলে গেলে রাশেদ আতিক রহমান কে আব্রাহামের কেবিনে যেতে বলে। এই আতিক রহমান নিজেও এক বিজন্যাস ম্যান। সে বলতে গেলে এক প্রকার মরিয়া হয়ে রয়েছে আব্রাহামের সাথে ডিল ফাইনাল করার জন্য কিন্তু আব্রাহাম তাতে রাজি না। রাজি না থাকার কারণ হচ্ছে এই আতিক রহমানের কোম্পানি আর আতিক রহমানের নিজের কারোরই রেকর্ড ভালো না। মার্কেটে ভেজালযুক্ত প্রোডাক্ট চালান দেওয়ার জন্য যে ঠিক কতো শত বার একে জেলে যেতে হয়েছে তার হিসেব নেই। আর পারসোনাল ভাবেও আব্রাহাম তাকে পছন্দ করে না। ইদানিং বেশ গরম পরেছে, আর আব্রাহাম কে ওলয়েজ ফরমাল গেটাপে থাকতে হয়। সে নিজের জেকেট টা খুলে রেখে দেয়। কোল্ড ড্রিংকস এর ক্যান টা খুলে খাচ্ছে। কাচের ডেস্কের সাথে হেলান দিয়ে একহাত প্যান্টের পকেটে গুজে রেখেছে আরেক হাতে ফোন ঘাটছে। তার কিছুক্ষন পরেই কেবিনের দরজাতে নক পরে। আব্রাহাম ফোনের দিকে নজর রেখেই গম্ভীর স্বরে বলে ওঠে…..

আব্রাহাম;; কাম ইন…
আব্রাহাম ফোন টা রেখে দিয়ে শার্টের হাতা গুলো গুটিয়ে নেয়। এবার মাথা তুলে সামনে তাকিয়ে দেখে আতিক।
আতিক;; হ্যালো স্যার, কেমন আছেন?
আব্রাহাম;; এইতো ভালো, আপনি?
আতিক;; জ্বি ভালো।
আব্রাহাম;; কিছু দরকার?
আতিক;; স্যার আসলে আমার কোম্পানির সাথে আপনার ডিল টা যদি………..
আব্রাহাম;; দেখুন মিস্টার আতিক. আমি আপনাকে আগেও বলেছি আর এখনো ক্লিয়ারলি বলছি যে আমি আপনার কোম্পানির সাথে কোন ডিল ফাইনাল করতে পারবো না। আমি তো আর জেনে শুনে মানুষের ক্ষতি করতে পারবো না তাই না।

আতিক;; কিন্তু স্যার আমি সিওরিটি দিচ্ছি আপনাকে যে কোন ঝামেলা হবে না।
আব্রাহাম;; কিছুদিন আগে এক পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগতে লাগতে বেঁচেছিলো। ভাগ্য ভালো ব্যাপার বেশি সিরিয়াস হয় নি। আর সবশেষে নাম কার উঠে এসেছে আপনার। দেখুন তা আপনি যতই বলুন না কেনো ভেজাল না হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু আপনি নিজেও দিতে পারবেন না। সো অযথা এখানে আপনার এবং আমার উভয়েরই সময় বরবাদ না করে কীভাবে আপনার কোম্পানি কে পদে তোলা যায় তার দিকে নজর দিন।
আতিক;; কিন্তু স্যার আ………

আব্রাহাম;; ইউ ক্যান লিভ, যাওয়ার রাস্তা টা ওইদিকে।
আতিকের বেশ লাগলো আব্রাহামের কথা গুলো তাই সে অপমান বোধ করেই সেখান থেকে চলে যায়। আব্রাহাম ব্যাসিকালি খুব বেশি স্ট্র‍্যাইট ফরওয়ার্ড। অফিসে তখন অয়নও ছিলো। ওহ বাই দি ওয়ে অয়ন আর কৌশল আব্রাহামের আন্ডারেই কাজ করে। তো আব্রাহামের কেবিন থেকে আতিক কে বেশ রেগে মেগে বের হতে দেখে অয়ন তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চলে যেতেই অয়ন আব্রাহামের কেবিনে যায়।

অয়ন;; আসবো?
আব্রাহাম;; হুম আয়।
অয়ন;; কি হয়েছে রে আতিক ওভাবে রেগে গেলো কেনো?
আব্রাহাম;; সত্য কথা সবসময় তেতোই হয়।
অয়ন;; কি আবার ডিলের কথা বলার জন্য এসেছিলো নাকি?
আব্রাহাম;; হুমমম, এই শোন রাশেদ কে বলে দিস তো যেনো এই আতিক রহমান কে আর আমার সামনে না দেখি সবকিছু টোটালি অফ।
অয়ন;; আচ্ছা।

আব্রাহাম;; আর এই তোরা জীবনে একটা কাজ ঠিক ভাবে করতে পারবি না তাই না!
অয়ন;; ওমা আবার কি করলাম?
আব্রাহাম;; কি করলি মানে! আইরাত কীভাবে জানলো যে ওর চাকরি যাওয়ার পেছনে আমি আছি।
অয়ন;; I Don’t know i swear…
আব্রাহাম;; ?
অয়ন;; ভাই বিশ্বাস কর।
আব্রাহাম;; যা করলাম।
অয়ন;; আচ্ছা একটা কথা বল তো!
আব্রাহাম;; হুমমম (ফাইল চ্যাক করতে করতে)
অয়ন;; তুই প্রেমে পরেছিস তাই না?
আব্রাহাম;; হঠাৎ এই কথা।

অয়ন;; শোন বুঝি সবই বুঝলি, যে ছেলে কখনো কোন মেয়েকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নি সে একটা মেয়েকে এতো দিন যাবত ফলো করছে, সব ডিটেইলস বের করছে, না জানি তোর ল্যাপটপে কতো ছবি আছে ওই মেয়েটার। শেষে কিনা চাকরিও খেয়ে নিলি। আসলে ইরাদা কি তোর?
আব্রাহাম ঠাস করে হাত থেকে ফাইল তা অফ করে দিলো। কপালের এক সাইডে হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; প্রেমে পরা বা ভালোবাসা একে বলে কিনা জানি না। আর সত্যি আমার জানার প্রোয়জনও নেই। আমি শুধু আইরাত কে চাই তাও নিজের করে ব্যাস আর একে যদি ভালোবাসা বলে দ্যান ইয়েস আ”ম ইন লাভ উইথ হার। আই লাভ দ্যাট গার্ল। এতে যদি আইরাত সোজা-সাপটা ভাবে মেনে রাজি হয়ে যায় তাহলে ভালো আর যদি রাজি না হয় তাহলে কোনকিছুই আর আস্তো থাকবে না। থাকবে না বলতে আমি রাখবো না।

অয়ন;; ট্রিট দে ভাই।
আব্রাহাম;; এইযে শুরু হলো তোর।
অয়ন;; না দে।
আব্রাহাম;; চুপ কর, আর কি ট্রিট ট্রিট করছিস যা মন চায় খেয়ে নে যা।
অয়ন;; ?
আব্রাহাম অয়নের দিকে একটা প্যান ঢিল দেয়।

অন্যদিকে আইরাত রেগে মেগে তার বাসায় যায়। সে আব্রাহামের কথা বলার ধরন দেখে এবার স্পষ্ট বুঝেছে যে আব্রাহামই তার চাকরির ‘ওয়াট’ লাগিয়ে দিয়েছে। আইরাত কে তেড়ে বাসায় আসতে দেখে অনামিকা বলে…..
অনামিকা;; কিরে আবার কি হয়েছে?
আইরাত;; কিছু না, আমি কাল থেকে ভার্সিটি যাচ্ছি।
অনামিকা;; আচ্ছা তা তো ভালো কথা।
আইরাত;; হুমম আমি রুমে গেলাম বেশ কিছু পড়া বাকি আছে তা পড়তে।

আইরাত রুমে চলে যায়। ঠাস করে রুমের দরজা টা খুলে এক ঘুড়ান্টি দিয়ে বিছানার ওপর শুয়ে পরে। কয়েকবার দম ফেলে। চোখ টা বন্ধ করে নিতেই আব্রাহামের এক একটা চটাং চটাং কথা আর উইন্ড তে লিপস্টিক লাগিয়ে দেওয়ার সময় ধরা খাওয়ার ব্যাপার টা ভেসে আসে। ফট করে চোখের পাতা মেলে ফেলে। উঠে রেগে চুলগুলো বাধতে বাধতে আপনা আপনিই বক বক করতে লাগে।
আইরাত;; হাহ, ঢং দেখলে গা জ্বলে যায়। এতো এটিটউড দেখানোর কি আছে। আমার চাকরি ওই বজ্জাত আব্রাহামই খেয়েছে আমি জানি। আমার এতো স্বাধের চাকরি টা। রাগ যে লাগছে না। ওকে, ওকে আমি পুকুরের পানিতে চোবাবো। শয়তান পোলা কোথাকার।

চুলগুলো কে পেছনে বেধে ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসে। এভাবেই বেশ সময় চলে যায়। প্রায় দুঘন্টা এক টানা পড়ে আইরাত উঠে পরে। রুমে পানি শেষ তাই পানি আনার জন্য নিচে কিচেনে যেতেই হুট করে বাড়ির কারেন্ট চলে যায়। আইরাত এতে চমকে যায়। সাধারণত আইরাত অন্ধকার দেখে বেশ ভয় পায়, তার দম বন্ধ হয়ে আসে। হাতে ওয়াটার পট নিয়ে অন্ধকারের মাঝেই হাতিয়ে হাতিয়ে লাইটার খুঁজে যাচ্ছে। রান্নাঘরের জানালার ফাক দিয়ে বাইরে থেকে হালকা আলো আসছে কিন্তু তাতেও যেনো তেমন কিছু একটা দেখা যাচ্ছে না।

এখন আইরাতের নিজের ওপর নিজেরই বেশ রাগ লাগছে কেনো নিজের সাথে করে ফোন টা আনলো না। ফোন আনলে আর এই বিপদে পরতে হতো না তাকে। হাতের বারি লেগে একটা স্টীলের থালা ফ্লোরে পরে যায়। অন্ধকার নিস্তব্ধ জায়গায় স্টীলের থালা পরে যাওয়ার শব্দ টা যেনো কানের একদম নলি অব্দি গিয়ে বারি খেলো। ওপর থেকে অনামিকার ডাক আসলে আইরাত তাকে নিচে নামতে মানা করে দেয়। আইরাত তার হাত থেকে ওয়াটার পট টা রেখে দিয়ে এখন ভালোভাবে লাইটার খুঁজতে লাগে। ভাগ্যক্রমে তা পেয়েও যায়।

তবে তা যেনো জ্বলছে না। বারবার ট্রাই করছে জ্বালানোর কিন্তু জ্বলছে না। হঠাৎ রাতের অন্ধকারে বিড়ালের ডাক এলো। সাথে সাথে আইরাতের শরীরের লোম গুলো দাঁড়িয়ে পরে। বেশ ভয় লাগছে এখন। আইরাতের কেনো যেনো মনে হচ্ছে যে তার ঠিক পেছোনেই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। তবে পেছন ফিরে তাকানোর সাহসটুকু হচ্ছে না। তবুও এখন উপায় না পেয়ে আইরাত আস্তে আস্তে করে ভয়ে পেছন ফিরে তাকায়। তাকানোর সাথে সাথে লাইট জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কাউকে দেখতে পায় অর্থাৎ মোমবাতি। মোমবাতির আলোতে অনামিকার মুখ টা হুট করেই সামনে চলে আসে। এতে আইরাত চমকে গিয়ে দেয় এক চিল্লানি। চিৎকার দেওয়ার পরপরই বাড়িতে কারেন্ট চলে আসে। আর অনামিকা আইরাতের বাহুতে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয়।

অনামিকা;; দিবো না একটা থাপ্পড় মেরে, এভাবে কেউ চিল্লায়?
আইরাত;; আরে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তো। তোমাকে না বারণ করলাম নিচে নামতে।
অনামিকা;; তুই এখানে একা কি না কি করছিস তাই মোম জ্বালিয়ে নিয়ে আসলাম আর তুই কিনা আমাকেই ভূত ভাবছিস। এখানে কি করিস?
আইরাত;; পানি নিতে এসেছিলাম।
অনামিকা;; বাইরের অবস্থা ভালো না, অনেক বৃষ্টি হবে হয়তো। ইলেক্ট্রিসিটি ডিস্টার্ব করবে। পানি নিয়ে যা বেশি করে আর লাইট নিজের কাছেই রাখিস।
আইরাত;; আচ্ছা।
আইরাত ওপরে নিজের রুমে চলে আসে। অনামিকাও চলে যায়। আইরাত পড়া শেষে ফোন টা নিয়ে একটু ফেইসবুক ঘাটাঘাটি করে। বাইরে তখন বেশ জোরে সোড়ে বিদুৎ চমকাচ্ছে। হাত থেকে ফোনটা রেখে এলোমেলো ভাবেই ঘুমিয়ে পরে।

রাত যখন বেশ গভীর আর আইরাত নিজেও গভীর ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে তখন কেনো জানি আইরাতের মনে হতে লাগে যে কেউ তার কাছে, তার পাশেই বসে আছে। হয়তো তাকে খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখছে। আইরাত বুঝতে পারছে যে কেউ একজন তো তার কাছে এখন আছেই। তবে সে চোখ মেলে তাকিয়ে যে তাকে দেখবে সেই শক্তি টুকু এখন তার মাঝে নেই। তার কিছুক্ষন পরই হঠাৎ আকাশ কাপিয়ে বিদুৎ চমক দিয়ে ওঠে। আইরাত হাত দিয়ে বালিশ টা আরো শক্ত করে চেপে ধরে। হ্যাঁ, আসলেই একজন ব্যাক্তি এখন আইরাতের রুমে তার ঠিক সামনেই বসে আছে। তার চোখজোড়া আইরাতে স্থির। একদম কাছে এসে রয়েছে,, আইরাতের সারামুখে বিচরণ করে চলেছে তার চোখগুলো। তুমুল বৃষ্টির পর একসময় চারিদিক শান্ত হয়ে যায় আর সেই ব্যাক্তিটিও চলে যায়।

সকালে এলার্মের কর্কশ শব্দে আইরাতের ঘুম ভেঙে যায়। হাই তুলতে তুলতে উঠে বসে এলার্ম টা বন্ধ করে দেয়। ওরনা টা গলায় জড়িয়ে চুল গুলো এক পাশে নিতে নিতে উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আর দাঁড়াতেই তার চোখগুলো যেনো ছানাবাড়া হয়ে যায়। কারণ আয়না তে গাঢ় লাল রঙ দিয়ে লিখা “”গুড মর্নিং বেবিগার্ল””। আইরাত কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। এটা কে লিখলো, কেনো লিখলো কিছুই মাথায় ঢোকে না। আর লিখলোই বা কিভাবে। আর এই কথাই বা কেনো লিখবে। সব প্রশ্ন মাথায় এসে বারি খাচ্ছে। তখনই আইরাতের চোখ যায় তার রুমের বড়ো থাই গ্লাসের দিকে। সেটা খোলা। গ্লাসের কাছে চলে যায়। আইরাতের কপালে চিন্তার ভাজ আরো দু-একটা পরে।

তার ভালোভাবেই খেয়াল আছে যে গতকাল রাতে সে গ্লাস লাগিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলো তাহলে এটা খোলা কীভাবে! আর কে এমন কথা লিখবে? এগুলো ভেবে ভেবেই আইরাত আবার গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। পানির মতো স্বচ্ছ আয়নাতে গাঢ় লাল রঙের লিখা যেনো চকচক করছে। সে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে আলতো হাতে আয়নাতে বুলিয়ে দেয়। বাই দি ওয়ে লিখা গুলো যেই লিখে থাকুক না কেনো ভারি সুন্দর, টানাটানা হাতের লিখা অনেক বেশিই সুন্দর দেখতে। আইরাত একমনে তাকিয়ে ছিলো আয়নার দিকে তখনই তার রুমে অনামিকা আসে। এসে দেখে আইরাত দাঁড়িয়ে আছে।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ১+২+৩

অনামিকা;; কিরে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ভার্সিটি যাবি না?
অনামিকার কথা শুনে আইরাত দ্রুত পেছন ফিরে তাকায়। এমন ভাবে আয়নার সামনে দাঁড়ায় যেনো অনামিকার নজরে তা না পরে।
অনামিকা;; কিরে?
আইরাত;; আব….হুম হুম
অনামিকা;; যা জলদি রেডি হ, আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।
আইরাত;; আচ্ছা আমি আসছি।
অনামিকা চলে যেতে ধরেও আবার কপাল ভাজ করে আইরাতের দিকে ফিরে তাকায়।
অনামিকা;; কিছু কি হয়েছে?
আইরাত;; হা! আরে ন না না কিছু হয়নি।
অনামিকা;; হুমমমম।

অনামিকা চলে যায়। আর আইরাত হাফ ছেড়ে বাঁচে। ক্লিনার জেল এনে দ্রুত আয়নাতে থাকা কালার টুকু মুছে ফেলে। তারপর খেয়ে-দেয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
আইরাতের বাসা থেকে বের হতেই একজোড়া নজর তাকে দেখে। তারপর সোজা আব্রাহাম কে ফোন করে।

— স্যার, আইরাত ম্যাম বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
আব্রাহাম;; ওকে।
আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। সে নিজের অফিসেই বসে বসে ক্লাইন্ট দের সাথে কথা বলছিলো কিন্তু তখন সবকিছু বাদ দিয়ে দ্রুত চলে যায়। তবে আব্রাহামের বাইরে যেতেই অর্থাৎ কেবিন থেকে বের হতেই রিয়ানা নামে একটা মেয়ে তার পথ আগলে দাঁড়ায়।
রিয়ানা;; ওহ আব্রাহাম কোথায় যাচ্ছো তুমি?
আব্রাহাম;; Mind your own business…

রিয়ানা হচ্ছে আব্রাহামের বিজন্যাস পার্টনার। অর্থাৎ আব্রাহামের সাথেই কাজ করে তবে আব্রাহামের ডিরেকশনে। মেয়েটা বেশ গায়ে পড়া স্বভাবের। কোন না কোন বাহানা দিয়ে আব্রাহামের কাছে ঘেঁষতেই চায়। তবে সে যেনো আব্রাহামের দু-চোখের বিষ। রিয়ানা কে এই কথা বলেই আব্রাহাম দ্রুত বের হয়ে পরে। সিড়ি বেয়ে বাইরে নেমে আসলে গার্ড গাড়ির দরজা খুলে দেয় তারপর ড্রাইভিং সীটে বসে সোজা চলে যায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৭+৮+৯