নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৭+৮+৯+১০

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৭+৮+৯+১০
লেখিকাঃ Tamanna Islam

আইরাত ভার্সিটিতে তার ক্লাসে বসে ছিলো। আইরাতের সাথে দিয়াও বসে রয়েছে। আর তাদের সামনেই প্রফেসর ফাটা স্বরে লেকচার দিচ্ছে। দিয়া আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে গালে হাত দিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। তা দেখে দিয়া সামনে চোখ স্থির রেখেই একটু আইরাতের দিকে ঝুকে বলে….
দিয়া;; লেকচার বুঝতাছোস কিছু?
আইরাত;; আগা-মাথা কিছুই বুঝতাছি না। তাও সামনে তাকায় থাক এমন ভাব ধর যেনো সব বুইঝা একেবারে উল্টায় ফেলতাছোস।

দিয়া;; বাদাম খাবি? আমার কাছে আছে? (দাঁত সব বের করে দিয়ে)
আইরাত;; ক্লাস থেকে বাইরে বের হওয়ার শখ আছে তোর! এই টাক্কু দেইখা ফেললে সোজা বাইরে বের করে দিবো চুপ করে বসে থাক।
এভাবেই দেখতে দেখতে ক্লাস টাইম শেষ হয়ে যায়। দিয়া আর আইরাত ভার্সিটির মাঠে বসে বসে এখন বাদাম চিবুচ্ছে। তখনই হঠাৎ দৌড়ে অবনি আসে। এসেই ধিরিম করে মাঠের মাঝে বসে পরে।
আইরাত;; কিরে তুই?
অবনি;; হ্যাঁ।
আইরাত;; অফিসে যাস নি?
অবনি;; মাত্র আসলাম। বাসায় আর না গিয়ে ভাবলাম যে তোমাদের চাঁদবদনী মুখখানা একটু দেখে যাই তাই এসে পরলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দিয়া;; হুমম ভালা করছোস। নে বাদাম খা।
অবনি;; আজকে লেকচার ছিলো?
দিয়া;; হ ছিলো।
অবনি;; কি কি বললো?
আইরাত;; আল্লাহ জানে।
অবনি;; মানে, তোরা ক্লাসে ছিলি না?
আইরাত;; ওই থাকা না থাকা সমান।
অবনি;; তোরা চোর সমিতির সদস্য, পড়া চোর।
আইরাত;; হুমমম।
অবনি;; আচ্ছা শুনলাম কাল নাকি ভার্সিটিতে ফাংশন।
দিয়া;; কি?

আইরাত;; আবার কিসের জন্য ফাংশন?
অবনি;; শুনলাম সবাই বলতাছে আর স্যার রাও বললো।
দিয়া;; কিরে আইরু, আমরা কোথায় ছিলাম রে?
আইরাত;; কি জানি এখানে থেকেও কিছুই জানতে পারলান না আর তুই না থেকেও জেনে গেলি।
অবনি;; হিহিহিহি, দেখেছো আমি কতো স্মার্ট।
দিয়া;; ওই বিবিসি নিউজ।
আইরাত এবার জোরেই হেসে দেয়।
আইরাত;; কিন্তু আমি বুঝলাম না যে কিসের ফাংশন।

অবনি;; আরে নিউ স্টুডেন্ট”স রা এসেছে তাই। মানে নিউ ব্যাচ এসেছে তো তাদের নিয়েই হয়তো।
আইরাত;; কোন ব্যাচ আসলো কোন ব্যাচ গেলো ভাই আমি কিছুই বলতে পারমু না কারণ আমি আসাই শুরু করলাম ভার্সিটি আজ থেকে। আচ্ছা যাক ভালোই হলো মজা হবে।
অবনি;; হ ঠিই কইছোস।
আইরাত;; তোর কাল অন্য কোথাও যেতে হবে না ভার্সিটি আসিস।
অবনি;; হ্যাঁ আসবো তো।
দিয়া;; কিন্তু আমি ভাবতাছি আরেক কথা।
আইরাত;; কিতা?
দিয়া;; শাড়ি পরবি?
আইরাত;; এইযে শুরু হইছে। আমি ভাই পারবো না আগেই না করে দিলাম। আমার দ্বারা সম্ভব না আরে অনেক কঠিন কাজ এই শাড়ি পরা।

অবনি;; আন্টি কে বলবি পড়িয়ে দিবে।
আইরাত;; না মানে আমার শাড়ি নাই।
দিয়া;; মিছা কথা আর কইস না।
আইরাত;; আচ্ছা তোরা কি পরবি?
অবনি-দিয়া;; অবশ্যই শাড়ি।
আইরাত;; ?
দিয়া;; এই পড় না, ভালো লাগবো। তিনজন একসাথে শাড়ি পরে আসবো।
আইরাত;; আচ্ছা দেখি।

আরো বেশখানিক সময় আড্ডা দিয়ে তারা উঠে যায়। আইরাত বাইরে এসে রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে লাগে, কিন্তু পায় না। এত্তো গরম যার জন্য আইরাত কে কপালের একপাশে হাত রেখে কপাল কুচকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এই কাঠফাটা রোদে আর দাঁড়িয়ে না থেকে হাঁটা ধরে। তবে কয়েক কদম এগোতেই সাই করে একটা গাড়ি এসে আইরাতের পাশে দাঁড়ায়। এতে আইরাত কিছুটা হকচকিয়ে যায়। তাকিয়ে দেখে একটা গাড়ি বাট তার উইন্ড উঠানো তাই ভেতরে কে আছে তা দেখা যাচ্ছে না। তা এড়িয়ে গিয়ে আইরাত আবার হাঁটা শুরু করে দেয়।

আইরাতের সাথে সাথে এবার সেই গাড়িটাও আরো একটু এগোয়। আইরাত থামলে সেই গাড়িও থামে। আইরাত আবার হাঁটে গাড়িও কিছুটা এগোয়, সে আবার থামে গাড়িও থামে। এমন প্রায় বেশ কয়েকবার হয়। এভাবে মেইন রোডে এমন করার কোন মানে হয়! আইরাতের বেশ রাগ লাগছে এবার। এই কে রে! চেনে না জানে না এভাবে গাড়ি নিয়ে তার সাথেসাথে কেনো চলছে। আইরাত এবার তার দুইহাত কোমড়ে রেখে মুখ টা বাকিয়ে গাড়ির উইন্ড এর দিকে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড পরে উইন্ড গ্লাস টা নিচে নেমে পরে। উইন্ড যত নিচে নামে আইরাতের চোখগুলোও যেনো তত বড়ো হতে লাগে। সে খেয়াল করে দেখে গাড়ির ভেতরে আব্রাহাম। আব্রাহাম তার চোখে থাকা সানগ্লাস টা নাকের ডগায় খানিক নামিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আইরাত এবার দ্রুত সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে।

আব্রাহাম;; এই যে মেয়ে।
আইরাত থেমে যায়।
আইরাত;; আমার একটা সুন্দর নাম রয়েছে ‘আইরাত’।
আব্রাহাম;; সবাই তোমাকে এই নামে ডাকে রাইট বাট আমি ডাকবো না। মানে সবাই যা করে আমি তা কেনো করবো।
আইরাত;; এহহহ। আপনি এখানে?
আব্রাহাম;; কেনো আসতে পারি না!
আইরাত;; না মানে তা বলি নি কিন্তু….
আব্রাহাম;; এভাবে রোদে ঘুরাঘুরি করলে তো সাদা মুখ টা কালো হয়ে যাবে।
আইরাত;; কালোই ভালো।
আব্রাহাম;; গাড়িতে উঠো।
আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; গাড়িতে উঠতে বলেছি।
আইরাত;; আজব! আমি কেনো আপনার গাড়িতে উঠবো।
আব্রাহাম;; আমি বলেছি তাই।
আইরাত;; আমার চাকরি টা খেয়ে কি আপনার শান্তি হয় নি, এখানেও এসেছেন আমার মাথা খেতে।
আব্রাহাম;; শান্তি তো তোমাকে পাওয়ার পরই হবে।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; রাস্তায় সিন ক্রিয়েট না করতে চাইলে সোজা গাড়িতে উঠো। নয়তো বাকা পথের বাপ আমি।
আইরাত বুঝলো যে এখন আর চাপাচাপি করে লাভ নেই। এই আব্রাহাম তাকে আর ছাড়বে না। আইরাত খেয়াল করে দেখে রাস্তায় মানুষজন যাচ্ছে আর তাদের দিকে অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে আছে। আইরাত দ্রুত আব্রাহামের গাড়ির দিকে এগোয়। গাড়ির দরজা খোলে পেছনের সীটে বসতে নিলে আব্রাহাম আইরাতের বিপরীত মুখী দাঁড়িয়েই কড়া গলায় বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; সামনে বসো, আমি অবশ্যই তোমার ড্রাইভার নই।
আইরাত যেনো এবার তেলে-বেগুনে জ্বলে গেলো। ঠাস করে পেছনের দরজা লাগিয়ে দিয়ে সামনে এসে বসে পরে। কাধের ব্যাগটা কোলে নিয়ে নেয়। আব্রাহাম এসে ড্রাইভিং সীটে বসে পরে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। তার মাঝে কারো কোন শব্দ নেই। আব্রাহাম ড্রাইভ করার মাঝেই কয়েকবার আইরাতের দিকে তাকিয়েছে। এবার আইরাতও বাকা চোখে বার দুয়েক আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; দেখতে কি কেউ মানা করেছে নাকি। বাকা চোখে না দেখে সোজা দেখলেই পারো।
ইশশশ একদম কাঁচা লজ্জা দিয়ে দিলো। আইরাত মুখ কুচকে ফেলে।
আইরাত;; আমার এতো দেখার শখ নেই। আপনি দ্রুত ড্রাইভ করুন আমি বাড়ি যাবো।
আব্রাহাম;; হুমমম।
একসময় বাসায় এসে পরলো আইরাত। গাড়ি থামতে দেরি কিন্তু আইরাতের বাইরে বের হয়ে আসতে দেরি না। আইরাতের দ্রুত চলে আসতেই আব্রাহাম বেশ জোর গলায় বলে….
আব্রাহাম;; হেই বেবিগার্ল! নিয়ম করে প্রতিদিন একটু মধু খেয়ো বুঝলে।
আইরাত থেমে তার পেছন ঘুড়ে।

আইরাত;; কেনো?
আব্রাহাম;; এতে মুখ দিয়ে এতো তেতো কথা না ঝরে কিছুটা মিষ্টি বুলি ফুটবে।
আইরাত;; আমার ঝাল পছন্দ। আর এতো মিষ্টি কথা দিয়ে কি হবে তেতোই ভালো।
এই কথা বলেই আইরাত এসে পরে। সামনে কয়েক কদম যেতেই আইরাতের খটকা লাগে। কপাল কুচকে আরেক দফা পেছন ঘুড়ে তাকায়। কিন্তু ততক্ষণে আব্রাহাম সেখানে ছিলো না।
আইরাত;; Wait, what? আব্রাহাম আমাকে কি নামে ডাকলো!

আইরাতের অবাক হয়ে তাকায়। আজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে আইরাত তার রুমের আয়নাতেও এই নামই দেখেছে ‘বেবিগার্ল’। উনি এই নাম ডাকলো। বায় এনি চান্স আব্রাহামই রাতে আইরাতের রুমে যায় নি তো! এটা ভেবেই যেনো আইরাতের কলিজা-আত্না সব শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আব্রাহামের কি আর খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই যে এতো শত মেয়ে রেখে আইরাতের জন্য এমন করবে। এটা হয়তো একটা Coincidence ছাড়া আর কিছুই না। সে নাচতে নাচতে তার বাড়ির ভেতরে চলে যায়। বাড়ির ভেতরে যেতেই দেখে সাবিলা বসে আছে। তার মায়ের সাথেই কথা বলছে।

অনামিকা;; এসে পরেছিস?
আইরাত;; হ্যাঁ
সাবিলা;; শুনলাম তোর নাকি চাকরি চলে গিয়েছে?
আইরাত;; হ্যাঁ
সাবিলা;; তো এমন কি করলি যে চাকরি থেকেই বের করে দিলো তোকে? আগেই বলেছিলাম ভাবি তোমাকে যে মেয়েকে পড়াশোনা কোন মতে করিয়ে বিয়ে দিয়ে দাও। কিন্তু না তুমি তো আমার কথা শুনলেই না। মেয়েদের সংসারী হতে হয় বুঝলে।

আইরাত;; আমার বিয়ের চিন্তা করার জন্য আমি আছি ফুপি। তোমার এতো মাথা না ঘামালেও চলবে। আশা করি একটু মাথা তুমি তোমার ছেলে নিলয়ের জন্য ঘামাও। প্রতিনিয়ত বাসায় তো তার নামে কমপ্লেইন পাচ্ছোই তাই নয় কি!
অনামিকা;; আইরাত চুপ কর। যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
আইরাত চলে গেলো তার রুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে আবার ফোন নিয়ে বসে পরে। ফোনে বসে বসে শাড়ি দেখছে আসলে। শাড়ি না পরে গেলে অবনি আর দিয়ার সাথে মিলবে না আর না মিললে তাকে তারা আলু ভর্তা বানিয়ে দিবে। কিছুক্ষন পর আইরাতের রুমে অনামিকা আসে। এসেই দেখে আইরাত আধো শোয়া হয়ে ফোন ঘাটছে।

অনামিকা;; কিরে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলি কেনো, খাবি না?
আইরাত;; তোমার ননদ বাসা থেকে গিয়েছে। সে না গেলে আমি নিচে খেতে যাচ্ছি না।
অনামিকা;; হ্যাঁ চলে গিয়েছে এবার তুই আয়।
আইরাত;; যাচ্ছি।
আইরাত ফোন বিছানাতে রেখে উঠে পরে। তবে অনামিকা এবার খেয়াল করে দেখে যে আইরাত তার ফোনে শাড়ির ছবি দেখছে।
অনামিকা;; কিরে শাড়ি কিনবি তুই?
আইরাত;; আব…. না মানে এমনি
অনামিকা;; কি হয়েছে?

আইরাত;; কাল নাকি ভার্সিটি তে ফাংশন আছে। আর
অনামিকা;; আর শাড়ি পরে যাবে সবাই তাই তো।
আইরাত;; প্ল্যান আমার ছিলো না অবনি আর দিয়ার ছিলো।
অনামিকা;; আচ্ছা তুই এখন ফোনে এইসব শাড়ির ছবি দেখা বন্ধ কর। এই ব্যাপার টা তুই আমার ওপর ছেড়ে দে। কাল কের টা কাল দেখা যাবে। এবার চল।
অনামিকা চলে যায় আর তার পিছে পিছে আইরাত নিজেও। সেইদিনের সময় টা এভাবেই চলে যায়। রাতের বেলা দুই মা-মেয়ে বসে হলরুমে ছিলো তখনই সাবিলার ছেলে নিলয় আসে।

নিলয়;; মামি, মামি!
অনামিকা;; আরে নিলয় কেমন আছিস?
নিলয়;; হ্যাঁ ভালো। তুমি?
অনামিকা;; ভালো, আয় ভেতরে আয়।
নিলয় ভেতরে চলে যায়। আর আইরাতের নজরে পরতেই আইরাতের মাঝে একটা বিরক্তি ওয়ালা ভাব দেখা যায়।
নিলয়;; কিরে আইরু কেমন আছিস?
আইরাত;; ভালো, তুমি?
নিলয়;; ভালো, শুনলাম কাল নাকি অনুষ্ঠান আছে!
আইরাত;; হ্যাঁ
নিলয়;; সেখানে চিফ গ্যাস্ট হিসেবে নাকি আব্রাহাম চৌধুরীও আসবেন।
আইরাত;; কি?

নিলয়;; হ্যাঁ, কেনো জানিস না?
আইরাত;; না তো। মাত্র জানলাম তাও তোমার কাছ থেকে।
নিলয়;; ওহ আচ্ছা, ভার্সিটির কমিউনিটি তে আব্রাহাম চৌধুরীর অনেক হাত রয়েছে। মূলত তাকে ঘিড়েই ফাংশন টা এরেঞ্জ করা হয়েছে। আর তুই জানিস না।
আইরাত;; আমি যাবো না।
নিলয়;; কেনো যাবি না?
আইরাত;; না এমনি।

অনামিকা;; আরে বাসায় বসে থেকে আর কি করবি আর তুই না শাড়ি দেখলি সেখানে পরে যাওয়ার জন্য। তাহলে যাবি না কেনো অবশ্যই যাবি।
আইরাত;; কেউ আমাকে বললো না যে আব্রাহাম চৌধুরীও সেখানে যাবে।
অনামিকা;; তার সাথে কি সম্পর্ক তুই যাবি।
আইরাত;; হুম।
নিলয়;; আমার সাথেই যাস সকালে পিক করে নিয়ে যাবো নি।
আইরাত;; না না, লাগবে না আমি একাই যেতে পারবো।
নিলয়;; সিওর?
আইরাত;; হ্যাঁ প্রতিদিন তো একাই যাই।
নিলয়;; আচ্ছা।
নিলয় ঘন্টা খানিক আইরাতের বাড়িতে থেকে তারপর এসে পরে।

অন্যদিকে এতোরাতে আব্রাহাম একা এক অন্ধকার রুমে রয়েছে। সাদা স্লিভল্যাস একটা গেঞ্জি পরে হাতে গ্লাপ”স পরে ইচ্ছেমতো নিজের সামনে থাকা হ্যাঙ্গীং ব্যাগে ঘুষি মেরে যাচ্ছে। অর্থাৎ হাতে যতো কোলায়। ব্যাগ টা যেনো ফেটে যায় যায় এমন দশা। রুম টা বেশ অন্ধকার, গরমে ঘেমে আব্রাহামের সামনের চুলগুলো বেয়ে বেয়ে ঘাম গুলো ঝরে পরছে। ঘুষির এক একটা শব্দ যেনো চারিপাসে দেওয়ালে বারি খাচ্ছে। লাস্ট একটা পাঞ্চ দিতে আব্রাহাম থেমে যায়। পানির বোতল টা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। হাত থেকে গ্লাপ”স গুলো খুলে সামনের চুলগুলো ঝেড়ে ফেলে। চোখ গুলো খানিক বন্ধ করতেই আইরাতের মুখ টা, তার হাসির শব্দ গুলো যেনো ভেসে আসে। এখন তো আইরাতের জন্য তার চোখ বন্ধ করাও কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। হঠাৎ আব্রাহামের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে আর সে ভেবে নেয় যে তাই করবে। আব্রাহাম সেই রুম থেকে বের হয়ে পরে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। তারপর সোজা রাশেদ কে ফোন দেয়। যা যা করতে হবে রাশেদ কে সব বলে ফোন কেটে দেয়। এখন শুধু কাল সকাল হবার পালা।

নিজের সামনে প্রায় ৬-৭ টা শাড়ি এলোমেলো করে উল্টিয়ে রেখে দিয়েছে আইরাত। আর তার নিজের পরনে একটা জলপাই কালারের শাড়ি। শাড়ি কে ধুতির মতো করে পরে রেখে দিয়েছে। তারপরেই হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে অনামিকা আইরাতের রুমে যায়।
অনামিকা;; কিরে কি পরে রেখেছিস এইটা?
আইরাত;; কোন শাড়িই তো পছন্দ হয় না।
অনামিকা;; তুই সেগুলো রেখে আগে এইটা দেখ। এটা দেখার পর আর বাকিগুলো দেখার প্রয়োজন হবে না আমার মনে হয়।

আইরাত তার মায়ের হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে নেয়। ব্যাগ থেকে বের হয় একটা সুন্দর কারুকাজ করা কালো কালারের শাড়ি।
অনামিকা;; পছন্দ হলো?
আইরাত;; থাংকুউউউউউউউউ।
অনামিকা;; জানতাম পছন্দ হবে। এর সাথে হালকা কিছু অর্নামেন্ট”স আছে। পরে নিস।
আইরাতকে অনামিকা সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেয়। প্রথমে একটু অদ্ভুত লাগলেও এবার যেনো ঠিক আছে। একদম কালো শাড়ি, সাথে সাদা স্টোনের কিছু চুরি আর বড়ো ঝুমকো, চোখ ভর্তি কাজল, চুলগুলো পিঠের ওপর ছড়ানো এইতো রেডি।

অনামিকা;; অনেক মিষ্টি লাগছে।
আইরাত;; সত্যি? (আয়নাতে নিজেকে দেখতে দেখতে)
অনামিকা;; না মিথ্যা।
আইরাত;; মা!
অনামিকা;; আচ্ছা এবার যা। সাবধানে যাস।
আইরাত;; আচ্ছা।
আইরাত বাইরে বের হয়ে আসে। ভার্সিটি যেতেই দেখতে পায় গেইট একদম ফুল দিয়ে সাজানো। ভেতরে যায়। ভার্সিটি যেনো চেনাই যাচ্ছে না। সবকিছু এত্তো সুন্দর করে সাজিয়েছে। আইরাত এইসব ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছিলো তখনই অবনি আর দিয়া আসে।

অবনি;; আরে এই কে আইরাত নাকি!
দিয়া;; দেখছোস প্রথমে বললো শাড়ি পরেই আসবে না আর এখন দেখ কত্তো সুন্দর করে সেজে এসেছে।
অবনি;; এমনিতেই কপালে বফ নাই তোকে আজকে দেখে আরো থাকবে না। সবাই তোকে দেখবে।
আইরাত দেয় দুজন কেই কতো গুলো ঝারি মেরে।
আইরাত;; আর এই তোরা দুইজন আমাকে কাল বলিস নি কেনো?
দিয়া;; কি বলবো?
আইরাত;; আব্রাহাম….
অবনি;; হ্যাঁ উনিও আসছেন আর এটা আমরাও প্রথমে জানতাম না পরে জানতে পেরেছি।
আইরাত;; আচ্ছা যাক চল ভেতরে যাই।
দিয়া;; আরে আমাদের জুনিয়র রা নাকি স্টেইজে পার্টিসিপেইট করবে।
অবনি;; কি নাচবে নাকি ওরা?
দিয়া;; হয়তো।

আইরাত;; কি গানে নাঁচবে! ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না।
আইরাতের কথায় সবাই হেসে দেয়।
আইরাত;; আয় ঘুরি।
তিনজন ভার্সিটির ভেতরে গিয়ে সবকিছুই এক এক করে দেখতে লাগলো আবার অনেকের সাথেই কথা বলছে। তবে কিছুক্ষন পর যেনো ভার্সিটিতে এক প্রকার দৌড়াদৌড়ি লেগে গেলো। আইরাত সহ দিয়া আর অবনি বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
আইরাত;; সবাই এতো তাড়ায় আছে কেনো রে?
অবনি;; হয়তো….
দিয়া;; আব্রাহাম স্যার এসেছেন তাই।
অবনি;; চল যাই।

আইরাত প্রথমে যেতে না চাইলেও অবনি, দিয়া আইরাত কে নিয়ে যায়। তবে হুট করেই ভার্সিটির একজন প্রফেসর তাদের সামনে আসেন।
ফারুক;; আইরাত, অবনি আর দিয়া!
তারা তিনজনেই থেমে পরে।
আইরাত;; জ্বি স্যার।
ফারুক;; তোমরা ভার্সিটি লেভেলের রাইট, কলেজ তো না।
অবনি;; এই কথা কি স্যার আজকে জানতে পারলো নাকি রে! (ফিসফিস করে)
আইরাত;; জ জ্বি স্যার।

ফারুক;; তো তোমরা এখানে কি করো। আরে আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী এসেছেন উনাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাতে হবে তো। আর তোমরা সিনিয়র। তোমরা ফুলের তোড়া নাও আর সামনে গেইটের কাছে যাও দ্রুত।
অবনি আর দিয়া সুন্দর করে ফুল নিয়েও নেয়। আর আইরাত মুখ লটকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়া বড়ো একটা ফুলের তোড়া আইরাতের হাতে দিয়ে প্রফেসর চলে যান। অবনি আর দিয়া আইরাতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে।
আইরাত;; এই চুপ কর হারামি রা। আমি এতো পরিপাটি হয়ে ভালো করে আসলাম ওই আব্রাহামের বাচ্চাকে ওয়েলকাম জানানোর জন্য নাকি, যত্তসব। এখন মূর্তির মতো গেইটের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে হবে ধুর।
দিয়া;; আরে আয় না আগে যাই।
আইরাত;; লুচ্চি সব ?

অবনি-দিয়া-আইরাত চলে যায়। এখানে সবাই আছে। প্রফেসর-ম্যাম, জুনিয়র বা আইরাত দের সিনিয়র সব। আইরাত বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই তিনটা গাড়ি আসে। একে একে সবাই ব্যাস্ত হয়ে এগিয়ে যায়। গার্ড রা নেমে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলে আব্রাহাম বের হয়ে পরে। ব্লেক প্যান্ট পরে, ভেতরে একটা লাইট এশ কালারের টি-শার্ট আর তার ওপরে ওলিভ কালারের জেকেট, হাতে ব্লেক ওয়াচ। নিজের ভারি ভারি কদম ফেলে ভেতরে এগিয়ে আসে। একজন একজন করে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। আর আব্রাহামও হাসিমুখে তা নিচ্ছে সবার সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলছে। আব্রাহামের আসতেই আইরাত ফুলের তোড়া দিয়ে নিজের মুখ টা ঢেকে ফেলে। আর দিয়া দেয় এক গুতো মেরে।
দিয়া;; বইন, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে নয়তো স্যার বকবে।

আইরাত;; স্যার দের আর কাজ কি।
আব্রাহামের নজর আইরাতের দিকে পরে। আর আইরাত চোখ নামিয়ে ফেলে। আব্রাহাম এমন ভাবে তাকিয়ে আইরাতের কাছে আসে যেনো তার কাছ থেকেই ফুলের বুকে টা নিবে। তবে না তা আর হলো কই, আব্রাহাম আইরাতকে না দেখার ভান করে বাকি মেয়েদের কাছ থেকে ফুল নিয়ে নেয়। অর্থাৎ একমাত্র আইরাত বাদে আর বাকি সব মেয়েদের কাছ থেকেই সে ফুল নিয়েছে। আব্রাহাম সেখান থেকে ভেতরে চলে যায়। আর বাকিরাও তার সাথে চলে যায়। এতে যেনো আইরাত জ্বলে কয়লা হয়ে গেলো। না না তার কাছ থেকে যে ফুল নেয় নি তার জন্য না।

এখানে অহেতুক দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য। আইরাত অবনিকে ফুলের বুকে টা ঠাস করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে এক ঝটকায় সেখান থেকে এসে পরে। তারপর প্রায় ঘন্টা খানিক সময় পার হয়ে যায়। সবাই ফাংশনে আছে। আইরাত একাই ভার্সিটির ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে আসছিলো। হঠাৎ খেয়াল করে যে তার কানের ঝুমকো টা সমস্যা করছে। তাই ঠিক করতে করতে আসছিলো। হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাস টা পার করে ভার্সিটির হলরুমের দিকে আসতেই হঠাৎ আইরাতের বাহুতে হেচকা টান পরে। টেনে নিয়ে সোজা ক্লাসরুমের ভেতরে।

চিৎকারও দিয়েছে কিছুটা কিন্তু আগে-ভাগেই এক শক্ত হাত তার মুখ চেপে ধরে। আইরাত নিজের হাত দিয়ে সেই ব্যাক্তির হাত সরানোর চেষ্টা চালালে এবার যেনো সেই ব্যাক্তির আরেক হাত এসে আইরাতের দুইহাত চেপে একদম পেছনে মুড়িয়ে ধরে। জোরে জোরে দম ফেলা ছাড়া এই মূহুর্তে আইরাত আর কিছুই করতে পারছে না। সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে এক উষ্ণ নিঃশ্বাস ক্রমেই তার মুখে-ঘাড়ে আছড়ে পরছে। বেশকিছুক্ষন নিস্তব্ধ থেকে হুট করেই আইরাতের বেশ কাছে এসে তার কানে কারো কন্ঠস্বর ভেসে আসে……

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল…!
ডাকটা শোনা মাত্রই কেনো জানি আইরাতের শিরদাঁড়া বেয়ে এক শীতল স্রোত প্রবাহিত হয়ে যায়। হয়তো অবাকে বা হয়তো ভয়ে।
আব্রাহামের ডাকে কেমন যেনো এক ভীতি কাজ করে আইরাতের মাঝে। বেশ অবাক হয়, চোখগুলো ক্রমেই বড়ো আকার ধারণ করে ফেলে। আব্রাহাম তাকে এখনো দেওয়ালের সাথে চেপে তার দুইহাত পেছনে মুড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামের উষ্ণ নিঃশ্বাস সব যেনো এবার আইরাতের গলায়-ঘাড়ে আছড়ে পরছে। এভাবে আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না বিধায় আইরাত নড়াচড়া শুরু করে দেয়।

আব্রাহাম;; হুশশশশশ! এখন তো ভয় পেয়ে লাভ নেই। আর সত্যি বলতে আমি এমনটা কখনোই করতাম না কিন্তু তুমি নিজেই আমাকে এটা করতে বাধ্য করেছো। কে বলেছে তোমাকে কালো শাড়ি পরে আসতে তার ওপর আবার এত্তো সুন্দর করে সেজে আসতে। আমায় খুন করার বুদ্ধি এঁটেছো!
আইরাত;; উম.. উমমম উম্ম উমমম।

আব্রাহাম এবার আইরাতের মুখের ওপর থেকে নিজের হাত টা সরিয়ে নেয়। তারা এখন যেই রুমে রয়েছে সেই রুমের জানালা খোলা যার দরুন কিছুটা আলো ভেতরে আসছে। আর সেই আবছা আলোতেই আব্রাহাম তার আইরাতকে দেখছে। আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ভয়ে ঘেমেই গিয়েছে। কপালের দিকটায়, ঘাড়ের দিকটায়, নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এগুলো হয়তো আব্রাহাম কে তার আরো বেশি কাছে টানছে। ক্ষণে ক্ষণে তাকে আকৃষ্ট করছে। আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে আব্রাহাম আবার তার বাহু ধরে একটান দিয়ে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।

আব্রাহাম তার দুহাত আইরাতের দুপাশে রেখে দিয়ে তার দিকে বেশ ঝুকে পরে। আর সে তার মাথা নিচু করে রেখে দিয়েছে। তাকে দু নয়ন ভরে দেখছে। আব্রাহাম খেয়াল করে যে আইরাতের ঠোঁটের পাশে কিছুটা লিপস্টিক ছড়িয়ে পরেছে। সে মুচকি হেসে আইরাতের মুখের দিকে নিজেকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগে। এতে আইরাত চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। এক হাত আইরাতের পাশে রেখেই আরেক হাত দিয়ে আলতো করে তার ঠোঁটের সাইডে স্লাইড করে। এতে আইরাতের ঠোঁটের পাশে ছড়িয়ে পরা লিপস্টিক টুকু আব্রাহামের বৃদ্ধা আঙুলে উঠে আসে আর লিপস্টিকের রঙ টুকু সে তার আঙুলে আঙুল ঘর্ষনের ফলে মিশিয়ে ফেলে। এখনো সে একমনে আইরাতের দিকেই তাকিয়ে আছে। কিছু হচ্ছে না দেখে পিটপিট করে নিজের আঁখিজোড়া মেলে তাকায়। এবার যেনো তার আর আব্রাহামের চোখাচোখি হয়ে যায়।

আইরাত;; আম আ আমাকে য যেতে দি দ দিন প্লিজ।
আব্রাহাম;; এইটাই তো মন মানে না।
আইরাত তার নজর উঠিয়ে আব্রাহাম কে তাকায়। এর মতিগতি কিছুই সুবিধের লাগছে না, যখন তখন কিছু করে বসতে পারে।
আইরাত;; দেখুন প্লিজ যেতে দিন, বাইরে যাবো আমি।
আব্রাহাম আরেক দফা আইরাতের বেশ কাছে এসে পরে। হুট করেই নিজের ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে আইরাতের গালের খানিক নিচু অংশে বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল মনে রাখবে আমি নিজে তোমার সাথে রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টা থাকতে না পারলেও আমার দুই নজর সর্বদা তোমার সাথেই থাকে, তোমাকে দেখতে থাকে ওকে। আর এটা পুরোটাই তোমার দোষ। তুমি আমার নজরে পরেছো, আমার মনে ধরে গেছে তোমাকে। আর আমার যেটা একবার পছন্দ হয় তা আমি নিজের করেই ছাড়ি By hook or by crook। নিজের থেকে আমার কাছে ধরা দিলে ভালো নয়তো…..
আব্রাহাম এই ‘নয়তো’ বলেই এক কড়া দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতও আব্রাহামের দিকে তাকায় আর শুকনো এক ঢোক গিলে। আব্রাহাম খানিক মুচকি হেসে দিয়ে আইরাতের গাল আর ঘাড় সই ধরে তাকে নিজের কাছে এনে কপালে গাঢ় চুমু একে দেয়। এতে আইরাত কপাল কুচকে ফেলে। আব্রাহামের টাচ করাতে তার শরীরের গাঁট যেনো সব দাঁড়িয়ে উঠছে।

আব্রাহাম;; আর হ্যাঁ যদি চাও যে তোমার নিজের সাথে উল্টা-পাল্টা কিছু না হোক তাহলে পরেরবার থেকে এভাবে স্পেশালি ব্লেল শাড়ি পরে আমার সামনে আর এসো না। কারণ নিজেকে সামাল দেওয়া ঠিক কতোটা কষ্টসাধ্য তা কেবল আর কেবল আমিই জানি। এবার যাও।
পাখিকে খাঁচায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত আটকে রেখে পরে ছেড়ে দিলে যেমন শান্তি পায় এখন যেনো আইরাতেরও ঠিক তেমন দশা। আব্রাহামের দুই হাতের ঘের থেকে ছাড়া পেতেই এক দৌড়ে ছুটে বাইরে চলে আসে। কলেজের মাঠে যেতেই দেখে অবনি আর দিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তারাও আইরাত কে দেখে।

অবনি;; কিরে কোথায় ছিলি তুই?
আইরাত;; বন্দি কারাগারে।
দিয়া;; কি?
আইরাত;; এতোক্ষনে জিজ্ঞেস করছিস কোথায় ছিলাম আমি! একটা বারও খোঁজ করেছিস আমার?
অবনি;; আরে আমরা ভাবলাম হয়তো ব্যাস্ত তুই বা কাজ করছিস তাই।
আইরাত;; কানের গোড়ায় চড় একটা মারতে মন চায়। তোরা বন্ধবী নামে কলঙ্ক।
দিয়া;; আচ্ছা আমরাও না আব্রাহাম স্যার কে প্রায় অনেক সময় যাবত দেখতে পারছি না। কোথায় রে উনি?
আইরাত;; কোথায় আর থাকবে, এতোক্ষন আমাকেই তো আটকে রেখেছিলো। (ফিসফিস করে)

অবনি;; কি?
আইরাত;; কিছু না।
দিয়া;; আরে ওই ওই আসছেএএএএএএএ।
অবনি;; কি কে আসছে? কই আসছে?
দিয়া;; ওই যে আব্রাহাম স্যার কে দেখ। স্টেজে আসছে। বসে আছে যে ওইযে।
আইরাত;; ধুর ছাতা। ক্যান আসছিলাম আমি এখানে।
অবনি-দিয়া আর আইরাত স্টেজের এক সাইডে গিয়ে বসে পরে। আর সামনে ভার্সিটির হ্যাড লেকচার দিচ্ছে।
আইরাত;; কানের পোকা খেয়ে ফেললো। কই যাই কোথাও গিয়ে শান্তি নাই। ক্লাসেও লেকচার আর এখানেও।
দিয়া;; আসলেই আর ভালা লাগে না।

এভাবেই বেশ সময় পার হয়ে যায়। একটা সময় ভার্সিটির ফাংশনও শেষ হয়ে যায়। দিয়া-অবনি চলে গিয়েছে। অবনির একটু তাড়া ছিলো তাই সে আগেই চলে গিয়েছে। আইরাত ভার্সিটির বাইরে গেইটের কাছে আসলেই দেখতে পায় দুজন ছেলে বাইকের ওপর বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। কানার ভাই আন্ধা দেখেও বলবে যে এরা আস্তো বখাটে টাইপের ছেলেপুলে। তাই আইরাত তাদের দিকে খেয়াল না করে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরতে নেয়। তবে আইরাতের সাইড কেটে যেতেই তাদের মাঝ থেকে একজন জোরে সিটি বাজায় আইরাতের দিকে তাকিয়ে। আইরাত রাগে চোখ বন্ধ করে কিছুটা থেমে যায়। এদের সাথে কথা বলে কোন লাভই নেই। দ্রুত চলে যাওয়াই শ্রেয়। তাই আইরাত আবার হাঁটা ধরে। এবার হেঁটে কয়েক কদম সামনে এগোতেই তাদের মাঝ থেকে আরেকজন বলে ওঠে…..

— ভাই, এতো পুরাই আগুন সুন্দরী রে। দিলে লাড্ডু ফুইটা গেলো।
আরো কতো কথা। আইরাত কোন রকমে সবকিছু ইগ্নোর করে সেখান থেকে এসে পরে। খুব খারাপ লেগেছে ব্যাপার টা আইরাতের কাছে। এমনকি রাগে চোখ থেকে কয়েক বিন্দু পানিও বের হয়ে গেছে। আইরাত হাঁটছিলো হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে তার পাশেই দাঁড়ায়। আইরাত থেমে গিয়ে গাড়ির দিকে তাকায়। গাড়ির উইন্ড-এর গ্লাস খুলে এলে দেখে আব্রাহাম। আব্রাহাম তার চোয়াল শক্ত রেখে সামনে তাকিয়ে বলে…
আব্রাহাম;; গাড়িতে উঠো।
আইরাত;; আম….

আব্রাহাম;; এখন আর একটা কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না আইরাত।
আইরাতের আর কিছু বলার সাহস হলো না। চুপ করে গাড়িতে ওঠে পরে আব্রাহামের পাশে। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আইরাত নিজের মাথা নামিয়ে রেখে দিয়েছে, আব্রাহাম একবার আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাতের চোখ ভেজা। তারপরেই গাড়ির স্পীড যেনো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে আইরাত অবাক হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায় তবে সে কিছু না বলেই সোজা আইরাতের বাড়ির সামনে তাকে নামিয়ে দেয়। আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরলে আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসে। সে আব্রাহামের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখনই অনামিকার ডাক….

অনামিকা;; কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ভেতরে আয়।
আইরাত;; আসছি।
আইরাত বাড়ির ভেতরে চলে যায়।
অনামিকা;; কিরে কেমন কাটলো ফাংশন?
আইরাত;; ভালোই।
এভাবেই দিন গড়িয়ে রাত হয়।

বর্তমানে একটা গোডাউনের অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে চেয়ারের সাথে হাত-পা বাধা অবস্থায় বসে আছে দুটো ছেলে। তাদের ঠিক মাথার ওপরে একটা হলুদ রঙের বাতি আবছা আলো ছড়িয়ে পুরো রুম কে আলোকিত করে রেখেছে। একজন অজ্ঞান প্রায়, আরেক জনের নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে এদের খাতিরদারি তে কোন কমতি রাখে নি। হাত গুলো র‍্যাপ দিয়ে এতোটা শক্ত করে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে যে দেখে মনে হচ্ছে মাংস কেটে ভেদ করে ভেতরে ঢুকেই যাবে।

তাদের পেছনেই কতোগুলো গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। ছাড়া পাওয়ার জন্য আকুতিভরা টলটলে চোখে তাদের বললেও গার্ডগুলো তাদের কথা গ্রাহ্য করে না। হঠাৎ তাদের কানে কারো ভারি ভারি পায়ে এগিয়ে আসার শব্দ শোনা যায়। নিভু নিভু চোখে সামনে তাকিয়ে দেখে একজন বেশ লম্বাচওড়া লোক। সে এসে একটা চেয়ার টান দিয়ে তাতে বসে পরে। নীরবতা ভরা স্থানে পায়ের হাঁটার শব্দ, চেয়ার টানার শব্দ যেনো সুস্পষ্ট। হাত দিয়ে মাথার হুডি টা আলতো করে ফেলে দিয়ে সামনে তাকায়। তাতেই যেনো ছেলে দুটোর কলিজার পানি শুকিয়ে যায়।

— স্যার, স্যার আমাদের এভাবে তুলে নিয়ে এসেছেন কেনো স্যার। আমরা ক কি করেছি। প্লিজ স্যার আমাদের যেতে দিন।
— স্যার প্লিজ যেতে দিন আমাদের।
আব্রাহাম নিজের হাতে ধারালো স্টীলের ব্রোজ প্যাচাতে প্যাচাতে রাগি কন্ঠে বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; আমার বেবিগার্ল আগুন সুন্দরি তাই না। হ্যাঁ সুন্দর তো থাকবেই কারণ ও আমার নামে লিখা। তাকে পুরোপুরি দেখার অধিকার শুধু আমারই। আর তোরা কি করেছিস আইরাত কে দেখে সিটি বাজিয়েছিস, কটু কথা বলেছিস তাই না।

— স্যার, স্যার ভূল হয়ে গেছে স্যার আর করবো না।
— আগে যদি জানতাম যে ওই মেয়েটা আপনার কিছু হয় তাহলে বিশ্বাস করুন আমরা ভার্সিটির গেইটের কাছেও থাকতাম না। স্যার মাফ করে দিন প্লিজ।
আব্রাহাম;; অনেক দেরি হয়ে গেছে। তোদের জন্য, তোদের জন্য আমার বেবিগার্লের চোখ থেকে পানি গড়িয়েছে। তোরা ভাবতে পারছিস আমি তোদের ঠিক কি হাল করবো।
— স্যার এইবারের মতো মা….

আব্রাহাম যেনো আর কিছুই শুনতে পারলো না। রাগে হাতের রগ গুলো ফুলে ওঠেছে। হিংস্র এক চিৎকার দিয়ে হাতে থাকা ধারালো স্টীলের ব্রোজ দিয়ে প্রথম ছেলেটার মুখে দেয় এক ঘুষি মেরে। ফলে ছেলেটার গালের এক পাশের মাংস ছিড়ে আরেক পাশে এসে পরেছে। রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হচ্ছে। ছেলেটা চেয়ার সহ মাটিতে ধিরিম করে লুটিয়ে পরে। চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে বের করে রয়েছে। সেখানেই কাতরাতে কাতরাতে ছেলেটা মারা যায়। এছাড়াও প্রথমে প্রচুর মার খেয়েছে দুজনেই। প্রথম ছেলেটার এই দশা দেখে দ্বিতীয় জনের জন্য মরন কান্না শুরু হয়ে গেলো।

আব্রাহামের সামনে এখন শুধু আইরাতের কান্না ভেজা মুখটা ভেসে আসছে। আব্রাহাম আর সহ্য করতে না পেরে পাশে থেকে একটা মোটা লোহার রড দুইহাতে শক্ত করে ধরে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ঠাস করে ওই ছেলেটার মাথার পাশে বারি মেরে দেয়। ঠাস করে শব্দ হয়। দেওয়ালে একগাদা রক্ত ছিটকে যায়। ছেলেটা আর একটা টু শব্দও করতে পারে না। মাথার খুলিটা হয়তো এক সাইড থেকে আলগা হয়ে খুলেই গিয়েছে। চুপ হয়ে সেও নিচে লুটিয়ে পরে। আশেপাশের গার্ডরা সবাই কপাল কুচকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম তার বাম হাতে রড টা নিয়ে রক্তচক্ষু নিয়েই ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে।

আব্রাহাম;; রাশেদ!
আব্রাহাম এতো জোরে চিল্লিয়ে ডাক দেয় যাতে সবাই চমকে ওঠে। রাশেদ খেয়াল করে দেখে আব্রাহামের হাত রক্ত লাল হয়ে আছে। রাশেদ সাদা কাপড় নিয়ে যায় আব্রাহাম তা নিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলে ওঠে….
আব্রাহাম;; ট্রাক এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে দুইজন, ক্লিয়ার?
রাশেদ;; জ্ব জ জ্বি স্যার।

আব্রাহাম আবার হুডি টা তুলে সেখান থেকে সোজা চলে আসে। রাশেদ এবার ছেলে দুটোর দিকে তাকায় তার নিজেরই গা গুলিয়ে আসছে। এক্কেবারে থেতলে গেছে। আব্রাহাম বাইরে গিয়ে রুফল্যাস গাড়িতে বসে ওঠে চলে যায়। কেউ তাকে দেখে বলবে না যে আব্রাহাম শান্ত মস্তিষ্কের একজন খুনী। সে বাসায় চলে যায়। এখনো প্রচন্ড রেগে আছে। ইন ফ্যাক্ট সব স্টাফ রা আব্রাহামের এমন রাগি ভাব দেখেই দূরত্ব বজায় রাখছে। বাসায় গিয়েই দেখে তার দাদি বসে আছে। ইলা আব্রাহামের দিকে তাকায়। বুঝে যে কিছু একটা হয়েছে যার দরুন আব্রাহাম রেগে লাল হয়ে আছে।
ইলা;; আব্রাহাম!!

আব্রাহাম কিছু না বলেই সোজা নিজের রুমে চলে যায়। তারপর গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আইরাতের কথা বড্ড বেশি মনে পরছে। আব্রাহাম যে দিনকে দিন পরিবর্তন হচ্ছে তা সে ভালোই খেয়াল করছে। নিজের অজান্তেই নিজের মাঝে চেঞ্জ আসছে। এইসব প্রেম-ভালোবাসা থেকে সবসময় দূরে থেকেছে সে কিন্তু কখন যে একটা মেয়ের প্রেমে সে নিজেই হাবুডুবু খেতে লাগলো তা হয়তো নিজেও জানে না। দিন দিন যে আব্রাহামের পাগলামো গুলো বেড়েই চলেছে। নিজের ওপর থেকে হুডি টা খুলে ফ্লোরে ফেলে দেয়। খুব রাগ লাগছে। কোন মতেই থামছে না।

ছেলেগুলোর জন্যই তার এত্তো রাগ লাগছে। তাদের নিঃশেষ করে দিয়েছে নির্মমভাবে কিন্তু তবুও যেনো নিজের মাঝে শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না আব্রাহাম। রাগ আর সামলাতে না পেরে নিজের পাশ থেকে বিশাল আকাড়ের কাচের একটা ফ্লাওয়ার ভ্যাস তুলে আছাড় মেরে এক নিমিষেই ভেঙে ফেলে। মূহুর্তে খানখান হয়ে যায়। চারিপাশে কাচের টুকরো সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ওপরের রুম থেকে ভাঙচুরের আওয়াজ পায় সবাই। ইলা বুঝলো ব্যাপার হাতের বাইরে, এখন একটু একা থাকতে দিক ওকে নয়তো আবার কি থেকে কি করে বসবে আল্লাহ জনে।

আব্রাহামের মাথায় এখন এক কথাই কাজ করছে যে ওই ছেলেগুলো তার আইরাত, তার আইরাতের দিকে নজর দিয়েছে। আইরাত কে আজ বিকেলের দিকে তার বাসায় ড্রপ করে দিয়েই আব্রাহাম তার গার্ডদের কে ওই ছেলে দুটো কে তুলে নিয়ে আসতে বলে। আগেই ঠিক করেছিলো যে ছেলে দুটো কে জানে মেরে ফেলবে। ইদানীং আব্রাহাম নিজের সবকিছুতে আইরাতের ছবি রেখে দেয়। তার রুমের এমন একটা কোণা বাকি নেই যাতে আইরাতের ছবি নেই। আর রাশেদ কে দিয়ে সে আইরাতের সব ছবি গুলো নিজের রুমে আনতে বলেছে।

নিজের রুমের দেওয়ালে আইরাতের বড়ো একটা ছবি রয়েছে। নিজের ফোন, ল্যাপটপ, ওয়ালেট অর্থাৎ এমন কোন স্থান নেই যেখানে আইরাতের অস্তিত্ব নেই। আব্রাহাম ভালোবেসে ফেলেছে আইরাতকে, অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে। শুধু মুখ ফুটে বলা হয়নি। আব্রাহাম এক এক করে রুমে আইরাতের যতগুলো ছবি ছিলো তার সব নিয়ে আসে। আইরাতের এতোই ছবি হয়েছে যে তাতে পুরো ফ্লোর একদম ঢেকেই গিয়েছে। চারিপাশে শুধু আইরাতের ছবি আর কাচের টুকরো ছড়িয়ে আছে। আর তাদের মাঝে আব্রাহাম হাতে আইরাতের একটা ছবি নিয়ে শুয়ে আছে।

ফ্লাওয়ার ব্যাস টা যে ভেঙেছিলো তার একটা টুকরো আব্রাহামের হাতে লেগে কেটে গিয়েছে। সেখান থেকেই বেশ রক্ত ঝড়ছে তবে সেদিকে একবিন্দু খেয়ালও নেই আব্রাহামের। সে যেনো এই অবস্থাতেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছে। এটাই যেনো আস্তে আস্তে তার রাগ টাকে একদম পানি করে দিচ্ছে। আইরাতের ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে কাটা হাত টা পাশে এলিয়ে দেয়। চোখের পাতা গুলো বন্ধ করে নেয়। আবছা আঁধার রুমে রক্তাক্ত বেশকিছু কাচের টুকরো আর তাতে আব্রাহামের বুকে আইরাতের চিহ্ন নিয়ে রয়েছে আব্রাহাম। ব্যাপার টা কেমন এক ভয়ংকর জেদ। এভাবে সে ঠিক কতোক্ষন ছিলো তা তার নিজেরও খেয়াল নেই।

পরেরদিন সকালে উঠেই আইরাত তার ভার্সিটি তে চলে যায়। আর তার ভার্সিটি যেতেই দিয়া ছুটে আসে। এসেই হাপাতে লাগে।
দিয়া;; আইরু, আইরু আরে ওইযে…
আইরাত;; আরে ভাই আস্তে ট্রেন ছুটে যাচ্ছে না তোর আস্তে। দম নে আগে। কি হয়েছে কি?
দিয়া;; আমাদের, আমাদের ভার্সিটির দুজন এত্তো জঘন্য ভাবে মারা গিয়েছে কি আর বলবো ইশশশ। রাস্তায় তাদের পরে থাকতে দেখে।
আইরাত;; কি?

দিয়া;; হ্যাঁ। আমি আজ তাড়াতাড়ি ভার্সিটি আসি আর এসেই দেখি এইসব কান্ড। বইন আমি ওদের লাশ দেখেছি আল্লাহ আমার মাথা ঘোড়ায়।
আইরাত;; কিন্তু কীভাবে মারা গেলো?
দিয়া;; সবাই তো বলে ট্রাক এক্সিডেন্ট। দাড়া আমার কাছে পিকও আছে দেখাচ্ছি তোকে।
দিয়া তার ফোন টা বের করে পিকগুলো আইরাতের দিকে ধরে। আর লাশগুলোকে দেখেই আইরাতের মুখ হা হয়ে যায়। সে দিয়ার কাছ থেকে ধরফর করে ফোন টা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। ফাটা চোখে ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; এরা, এরা মারা গেলো কীভাবে? কালই না ভালো দেখলাম।
দিয়া;; মানে?
আইরাত;; কাল আমি আসছিলাম তখন গেইটের কাছে এদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম সত্যি বলতে আমাকে দেখে কিছুটা কটু কথাও বলেছিলো আর আজই এই দশা। প্লিজ ফোন নে আমার গা শিউরে উঠছে এদের দেখে। এত্তো রক্তাক্ত আল্লাহ।

আইরাত দিয়ার কাছে ফোন দিয়ে দেয়। তারপর ক্লাসে চলে যায়। ভার্সিটির পরিবেশে আজ শুরু এই এক্সিডেন্টের কথাই বলে যাচ্ছে। সবার মুখে মুখে এক কথাই। তবে এবার আইরাতের কেনো জানি আব্রাহামের কথা মনে পরছে। কাল গাড়ি নিয়ে তাকে ড্রপ করা, রাগে লাল হয়ে থাকা। আচ্ছা, এই ছেলে গুলোকে আব্রাহামই আবার মারে নি তো। ক্লাসে বসে বসে আইরাত এগুলোই ভাবছিলো হঠাৎ দিয়ার ডাকে তার ধ্যান ভেঙে যায়। পরে খেয়াল করে দেখে ক্লাসই শেষ হয়ে গেছে। দুজন মিলে বাইরে বের হয়ে পরে ক্লাসের। আইরাতের বাইরে বের হতেই একজন কালো পোশাক পরা লোক আইরাতের কাছে আসে।

— আইরাত ম্যাম,
আইরাত;; জ্বি
— আমি আব্রাহাম স্যারের গার্ড, উনি আপনাকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছেন।
আইরাত;; কিন্তু কোথায়?
— স্যারের গেস্ট হাউজে।
আইরাত;; কিন্তু আ…….
— ম্যাম প্লিজ আসুন। আপনাকে যদি সাথে করে না নিয়ে যাই তাহলে স্যার শুট করে দিবেন আমাকে।
আইরাত;; আচ্ছা আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
এই বলেই আইরাত গাড়িতে ওঠে পরে।
আইরাত;; কি মানুষ রে বাবা, সবাই কে ভয়ের ওপরে রাখে।

আইরাত পেছনের সীটে বসে আছে আর ওই গার্ড টা ড্রাইভ করে যাচ্ছে। প্রায় আধা ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামে গেস্ট হাউজের সামনে। একজন গার্ড এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিলে আইরাত নেমে পরে। আরেকজন গার্ডের আইরাত কে নিজের সাথে করে নিয়ে আব্রাহামের রুমে চলে যায়। আব্রাহামের রুমের সামনে আসতেই গার্ড থেমে যায়। আইরাত তার দিকে তাকালে বলে ওঠে….

গার্ড;; ম্যাম আমি আপনাকে এই পর্যন্তই নিয়ে আসতে পেরেছি। এর আগে আমাদের যাওয়ার পারমিশন নেই।
আইরাত;; ওহ আচ্ছা, ঠিকআছে।
এই বলেই আইরাত আস্তে করে রুমের দরজা খুলে ভেতরে চলে যায়। দরজা একাই অফ হয়ে যায়। সামনে এগোতেই দেখতে পায় আব্রাহাম চেয়ারে বসে বসে নিজের কালো শার্টের হাতা ফোল্ড করে খুব মনোযোগ দিয়ে রিভলবারে বুলেট”স লোড করছে। আইরাত কপাল কুচকে তাকায়। আব্রাহাম প্রথমে তার নজর তুলে আইরাতের দিকে তাকায় তারপর পুরো মাথা তুলে।
আব্রাহাম;; হেই আমার বেবিগার্ল!
আইরাত বেশ শান্ত স্বরে বলে..
আইরাত;; কেনো ডেকেছেন আমাকে এখানে?

আব্রাহাম এবার রিভলবার টা রেখে দিয়ে এক শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আইরাতের দিকে। উঠে এসে আইরাতের দিকে এক পা এক পা করে এগোতে লাগে। আইরাত মাথা নিচু করে ফেলে। আব্রাহাম আবার ঘুড়ে গিয়ে আইরাতের পেছনে দাঁড়িয়ে পরে। আইরাতের কানের কাছে বেশ ঝুকে বলে…..
আব্রাহাম;; এতো মাথা ঘামিয়ো না, ওই ছেলে গুলোকে আমিই মেরেছি।
আব্রাহামের কথায় আইরাত চমকে গিয়ে এক ঝটকায় পেছনে ফিরে তাকায়। আব্রাহাম এবার অনেকটা কাছে আইরাতের।

আব্রাহাম;; অবাক হওয়ার কিছুই নেই। হ্যাঁ আমিই মেরেছি তাদের। আর তোমাকে বলার কারণ হচ্ছে আমি প্রকৃতি পক্ষে যেমন স্বভাবের মানুষ তার সম্পর্কে তোমায় জানিয়ে দেওয়া। আমি আমার নিজের বিষয়ে কোন কিছুই লুকায়িত রাখতে চাই না তোমার কাছ থেকে। তাই বলে দিলাম। ওই ছেলেগুলো তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। আমার রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিলো তাই….
আইরাত;; তাই খুন করে দিয়েছেন তাই তো!
আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; আব্রাহাম, আপনি পাগল নাকি? কেনো মারলেন তাদের। সবাইকে সেকেন্ড চান্স দিতে হয়। তাদেরও দেওয়া উচিত ছিলো আপনি কেনো মারলেন। তাদেরও তো পরিবার ছিলো। আপনি?
আব্রাহাম;; এতো শত কিছু জানি না তোমার দিকে যে তাকাবে তাকে অকাল মৃত্যু ভোগ করতে হবে ব্যাস।
আইরাত;; আপনি..
আব্রাহাম একটা ডেস্টের ওপরে বসতে বসতে বলে।
আব্রাহাম;; সেদিন রাতে তোমার রুমেও গিয়েছিলাম এই আমিই।
আইরাত;; কিহ?

আব্রাহাম;; জ্বি। আয়নাতে লিখাটাও আমারই।
আইরাত;; আপনি কেনো এইসব করছেন বলুন তো!
আব্রাহাম;; বিকজ আই ফ্যাল ইন লাভ উইথ ইউ জানপাখি।
আব্রাহামের এমন খাপছাড়া কথায় আইরাত যেনো সোজা আকাশ থেকে টপকে পরলো। চোখগুলো বড়ো বড়ো করে কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকে। পরক্ষণেই তার মনে পরে যে সে হয়তো ভূল কিছু একটা শুনেছে তাই ক্লিয়ার হওয়ার জন্য আবার জিজ্ঞেস করে।
আইরাত;; জ্বি??

আব্রাহাম এবার ডেস্ক থেকে নেমে গিয়ে আইরাতের হাত ধরে নিজের দিকে একটান দেয়, এতে আইরাত সোজা আব্রাহামের বুকে গিয়ে পরে। আব্রাহাম নিজের দুইহাত দিয়ে আইরাতের কোমড়ে জড়িয়ে ধরে। হুট করেই নিজের মাথাটা আইরাতের মাথার সাথে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। আইরাতের হাত দুটো যেনো আপনা-আপনিই আব্রাহামের বুকের ওপরে চলে যায়। আব্রাহাম তার চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের চোয়াল কোঠর করে নিয়ে বলে ওঠে….

আব্রাহাম;; আইরাত বেবিগার্ল, আই লাভ ইউ। অবশেষে বলেই দিলাম। আমি ভালোবাসি তোমাকে। জানি না কীভাবে বাসলাম, কেনো বাসলাম। আমি চাই তোমাকে। মানুষ বলে প্রেমে পরার জন্য নাকি এক সেকেন্ড ই যথেষ্ট। ব্যাপার টা প্রথমে হাস্যকর লাগলেও এখন যেনো এতে দৃঢ় বিশ্বাস কাজ করছে। কারণ আমি তোমাকে চিনি বেশি দিন হবে না। তুমি জানো আমি তোমার জন্য যা ফিল করি তা কখনোই কোনদিন অন্য কারো জন্য ফিল করি নি।

আইরাত আমার না খুব রাগ লাগে তুমি অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বললে বা অন্য কোন ছেলে তোমাকে নিয়ে কিছু বললে। আমি তোমাকে নিজের করে চাই, তোমাকে আমার লাইফে দরকার। আমি অনেক বেশিই ভালোবাসি তোমাকে। আমার মতো এত্তো ভালো না বাসলেও চলবে তোমার বেবিগার্ল। শুধু আমার দম ফুরানোর আগ পর্যন্ত আমার হাত দুটো ধরে রেখো। আমার একার ভালোবাসাই আমার দুজনের জন্য এনাফ হবে। আইরাত তুমি শুধু আমার আর আমার হয়ে থাকো। আমি না তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে কখনো যেতেই দিবো না। তুমি আমার, সম্পূর্ণই আমার।

আব্রাহামের কথা গুলো শেষ হতেই আইরাত দ্রুত আব্রাহামের কাছ থেকে সরে আসে। কেমন এক অদ্ভুত ভঙ্গীতে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামের কথাগুলো তার মন-মস্তিষ্ক সব ভেদ করে গেছে। আব্রাহাম তাকে কখনো এই কথা গুলো বলবে তার বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিলো না তার।
আইরাত;; আপ আ আপনি ম মজা কর ক করছেন তাই ন না?
আব্রাহাম;; আমার বেবিগার্লের বিষয়ে তো কখনোই না।
আইরাত;; না না এটা কি করে সম্ভব। আব্রাহাম আপনি নিজে ভেবে দেখুন আপনি আসলে কি বলছেন। আমি কোথায় সিম্পাল একটা মেয়ে আর আপনি কোথায়। আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, তবে এক্ষেত্রে তুমি না হয় হলে আকাশ আর আমি পাতাল।
আইরাত;; আকাশ আর পাতালের একসাথে কখনোই থাকা হয় না।
আব্রাহাম;; কিন্তু তবুও এদের দুজন কে একসাথেই বলা হয়।
আইরাত;; সম্ভব না। কখনোই সম্ভব না। আমি আপনাকে ভালোবাসি না আর না ই কখনোই বাসবো। আপনি ভালোবাসেন বললেন। আগে ভালোবাসা কি তা জানুন। তারপর ভালোবাসার কথা বলুন। যেই মানুষ এইসব খুন-খারাবি তে জড়িত সে আর‍ যাই হোক কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
আব্রাহাম;; শেষ কথা নাকি আরো বাকি আছে?
আইরাত;; আমি ভালোবাসি না আপনাকে।
আব্রাহাম;; প্রব্লেম আমার মাফিয়া হওয়াতে নাকি…
আইরাত;; আপনি যাই হোন না কেনো। আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না এটাই শেষ কথা।
আব্রাহাম;; আইরাত প্লিজ আমাকে এমন কোন কাজ করতে বাধ্য করবে না যা তোমার জন্য মঙ্গল জনক না।
আইরাত;; _________________________

আব্রাহাম;; যদি ভালো চাও তাহলে ভালো মেয়ের মতো আমার কাছে ধরা দিবে ওকে!
আইরাত;; দেখুন আপনি আমার থেকেও ভালো মেয়ে কে পেয়ে যাবেন। আপনি তো আ……..
আব্রাহাম এক হাতে রিভলবার ঘুড়াচ্ছিলো। এবার যেনো আইরাতের কথায় আব্রাহামের রাগ উঠে গেলো। সে দ্রুত গিয়ে আইরাতের বাহু অত্যাধিক শক্ত করে চেপে ধরে। ব্যাথায় কুকড়ে ওঠে আইরাত। আরেক হাতে রিভল নিয়ে চোখ গরম বলে…
আব্রাহাম;; তোকে চাই আমার বুঝেছিস তুই। তোর মতো কাউকে বা অন্য কাউকে না আমার শুধু তোকে চাই। আর কান খুলে শুনে রাখ তুই আমার। ডু ইউ গেট দ্যাট। তুই আমার আইরাত।
আব্রাহামের চোখে রাগ-জেদ স্পষ্ট। আইরাত বিচলিত ভাবে আব্রাহাম কে দেখে যাচ্ছে। আর আব্রাহাম এবার বুঝে যে সে আইরাত কে বেশ শক্ত ভাবেই ধরে রেখেছে। এটা খেয়ালে আসতেই আব্রাহাম তার চোখজোড়া বন্ধ করে কিছুটা দম ছাড়ে। আইরাতের বাহু ছেড়ে দিয়ে নিজের দুইহাতে তার গালে ধরে নরম সুরেই বলে ওঠে..

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল কেনো! কেনো রাগিয়ে দাও আমায় বলতো। তুমি কিছুটা হলেও তো আমার ব্যাপারে জানো তাই না। তাহলে কেনো জেনে বুঝেও রাগিয়ে দাও বলো তো। আমি ভালোবাসি তোমায়। এই কথা আমি আর মনের মাঝে দমিয়ে রাখতে পারি নি তাই বলেই দিলাম। সব করতে পারি আমি তোমার জন্য, তোমাকে পাওয়ার জন্য। তোমার জন্য আমি নিজের জান দিতেও পারি আবার অন্যের জান নিতেও পারি। আর একে তুমি আমার জেদ বা পাগলামো যাই বলো না কেনো। আই লাভ ইউ ড্যাম ইট।
আইরাত নিজের গাল থেকে আব্রাহামের দুইহাত নামিয়ে দেয়।

আইরাত;; ‘ভালোবাসি’ মুখে বলা খুব সহজ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা খুব কঠিন। মূল কথা কি জানেন আমি না আপনাকে দেখে ভয় পাই। ভয় লাগে আপনাকে দেখে আমার। কখন যেনো আমাকেও মেরে ফেলেন আপনি।
আইরাত কথা গুলো থেমে থেমেই বলে। আব্রাহাম বুঝলো ভয়ের সংমিশ্রণ রয়েছে। তবে আইরাতের বলা লাস্ট কথা শুনে আব্রাহাম তার চোখগুলো ছোট ছোট করে আইরাতের দিকে ঝুকে বলে..

আব্রাহাম;; আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি এমনিতেই মেরে ফেলবো তোমাকে।
আইরাত কি বলবে ভাষা খুঁজে পায় না। আব্রাহাম সোজা হয়ে দুইহাত ভাজ করে দাঁড়ায়। আব্রাহাম ঠিক যে ভাবে আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে তাতে আইরাতের সাধ্য নেই তার ওই চোখে জোড়ায় নিজের চোখ রাখার। তাই অতি দ্রুত নজর নামিয়ে ফেলে। আইরাত কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

আইরাত;; আপনি আমাকে কেনো এখানে ডেকেছেন তা যদি বলতেন!
আব্রাহাম;; যা বলার তা বলে দিয়েছি। অর্থাৎ আমার কথা আমি বলে দিয়েছি এখন যত দ্রুত সম্ভব তোমাকে নিজের করে নেওয়া বাকি।
আইরাত;; আমি বললাম তো এটা কখনোই সম্ভব না। আমি কখনোই আপনাকে ভালোবাসি না আর বাসবোও না। শুনেছেন আপনি। ভালোবাসা কথা টা বলার আগে এটা কি তা জেনে নিন। পারেন তো শুধু মারতে।
আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়।

আব্রাহাম;; জানপাখি যদি তোমার প্রব্লেম আমার প্রফেসন থেকে হয়ে থাকে তাহলে সরি টু সে এই প্রব্লেম তোমাকে আজীবনই ভোগ করতে হবে। কারণ আমার কাছে তুমি যেমন মূল্যবান তেমন আমার প্রফেসনও আমার কাছে মূল্যবান। একটাও ছাড়তে পারবো না। এতে তুমি যাই বলো আর হ্যাঁ তুমি তো আমারই। তাতে তুমি রাজি থাকো বা না থাকো। আর অবশ্যই আমি তোমার মত নিচ্ছি না আমার মত দিচ্ছি।

আইরাত রাগে দাঁত কটমট করে সেখান থেকে এসে পরে। তবে আইরাত ঘুড়ে কয়েক কদম চলে আসতে নিলেই তার ওরনা তে টান পরে। এতে আইরাত তার হাত দিয়ে বুকের কাছের ওরনা টুকু কে চেপে ধরে অবাক হয়ে দাঁড়ায়। পেছন থেকে ওরনা তে টান পরেছে তার। আইরাত শুকনো কিছু ঢোক গিলে। মূহুর্তের জন্য তো দমই আটকে গিয়েছে তার। আব্রাহাম কি তার ওরনা টেনে ধরলো নাকি! এই ভেবেই আইরাত লজ্জায় মুখ কুচকে ফেলে। পেছনে আবার ফিরে তাকানোর সাধ্য হচ্ছে না। একি এক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরলো সে।

এখন সে কিছু বলতেও পারছে না আবার সহ্যও করতে পারছে না। তবুও উপায় না পেয়ে আস্তে আস্তে পেছনে ঘুড়ে আইরাত৷ চোখগুলো নিচে নামিয়ে রেখেছে। লজ্জা লাগছে বেশ। ওরনা এখনো ছাড়ছে না দেখে আস্তে করে চোখ মেলে তাকায়। আর নিজের সামনে তাকাতেই যেনো আরেক দফা অস্বস্তিতে পরলো আইরাত। দেখে আব্রাহাম কিছুই করে নি। সে তো আগের মতো করেই নিজের দুহাত ভাজ করে ডেস্কের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আর আইরাতের ওরনা আব্রাহাম ধরে নি, তার ওরনা ডেসের এক কোণাতে লেগে আটকে আছে। সেখান থেকেই টান পরেছে ওরনাতে। আর আইরাত ভেবেছে যে তার ওরনা পেছন থেকে আব্রাহাম টেনে ধরেছে। এবার যেনো লজ্জ আগে থেকে আরো দ্বিগুণ ভাবে পেলো আইরাত। ইশশশ লজ্জা, কি ভাবলো আর কি হলো। আইরাত তার ওরনা টান দিতে ধরবে তবে তার আগেই আব্রাহাম ওরনা টা ছাড়িয়ে দেয়।

আইরাতের নিজের মাথায় নিজেরই এখন বারি মারতে মন চাইছে। আব্রাহাম আইরাতের অবস্থা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে গলা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। আইরাত আর সেখানে এক মূহুর্ত না থেকে জলদি পা ফেলে এসে পরে। আব্রাহামের গেস্ট হাউজের বাইরে বের হলে একটা গাড়ি কে দেখতে পায়। সেখানে দু-তিনজন মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলো। যদিও আইরাত তাদের চিনে না। এড়িয়ে এসে পরে। সে আর কেউ না আতিক রহমান ছিলো। আতিক আসলে এদিক দিয়েই যাচ্ছিলো রাস্তায় তার গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। সে এটাও জানে যে এটা আব্রাহামের গেস্ট হাউজ। আইরাতকে গেস্ট হাউজ থেকে বের হতে দেখে আতিক তার চোখের চশমা খুলে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতের যেতেই আতিক তার পাশে থাকা একটা চেলা কে জিজ্ঞেস করে….

আতিক;; এই মেয়েটা কে রে?
বিজয়;; জ্বি স্যার আমি আসলে জানি না। তবে আপনি চাইলে সব খবর বের করতে পারি।
আতিক;; বের কর।

আইরাত অবাক হয়ে আছে। একমনে একদিক তাকিয়েই আছে। আব্রাহাম তাকে কি বললো। এটা কি আদৌ সম্ভব। আর যাই হোক একজন গুন্ডা-মাফিয়ার সাথে কেউ নিজের পুরো জীবন পার করতে পারে না। যার বন্দুকের প্রত্যেক টা বুলেটের ওপর যমের ঠিকানা থাকে সে বলছে ভালোবাসার কথা। মানুষ কে ভালোবাসতে হয়, খুন করতে হয় না। আব্রাহাম খুব তেড়া প্রকৃতির মানুষ, ওকে বোঝা বড্ড দায়।

আব্রাহামের সাথে সারাজীবন একই ছাদের নিচে থাকা তো দূরেই থাক, যাকে কিনা দূর থেকে দেখলেই কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় তার সাথে কি করে সম্ভব। আর যাই হোক সে আব্রাহাম কে কখনোই ভালোবাসতে পারবে না। এই ছেলের ধারে কাছেও নিজেকে ঘেষতে দেওয়া যাবে না। নয়তো কখন তার মাথায় রক্ত চেপে যায় আর কখন সে আইরাতকেই খুন করে বসে কে জানে। সাবধানে থাকতে হবে তাকে এখন থেকেই। এগুলো ভেবে ভেবেই আইরাত তার বাসায় চলে যায়। তবে বাসায় যেতেই দেখে তৌফিক বসে আছে।

আইরাত;; কিরে তুই কখন এসেছিস? আর আমাকে তো বললি না।
তৌফিক;; বলি নি তাই না, ফোন টা চেক করে দেখ তো তোকে কতো গুলো কল করেছি।
আইরাত দ্রুত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে যে সত্যি সত্যি তৌফিক তাকে অনেক বার কল করেছে।
আইরাত;; সরি ইয়ার ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো। মানে ক্লাসে সাইলেন্ট করেছিলাম এখনো নরমাল মুড করি নি।
অনামিকা;; আচ্ছা তোরা বোস আমি খাবার জন্য কিছু আনছি।
তৌফিক;; না না আন্টি আমি এখন কিচ্ছু খাবো না। আইরাত কে যে জিনিস টা দিতে এসেছি তা দিয়েই চলে যাবো। বাইরে কাজ আছে আমার।

আইরাত;; কি?
তৌফিক;; এই নে।
তৌফিক আইরাতের দিকে একটা খাম আর কিছু ফাইল এগিয়ে দেয়।
আইরাত;; কি এটা?
তৌফিক;; দেখ।

আইরাত সব চেক করে দেখে তার অফিস অর্থাৎ যেখানে আগে কাজ করতো সেখান থেকে নোটিশ এসেছে। আইরাতের জন্য অফার এসেছে যে সে চাইলে তার আগের জবটা আবার ফিরে পেতে পারে। ফাইল গুলো দেখে বেশ দোটানা নিয়েই আইরাত তৌফিকের দিকে তাকায়। এতো কাহিনী করে আইরাতের চাকরি টা চলেই গেলো এখন আবার ওই চাকরির-ই অফার এসেছে পুনরায় জয়েন করার জন্য।
আইরাত;; আমি তো ভাই কিছুই বুঝলাম না।
তৌফিক;; অফিসের ওনার তোকে আবার অফিসে নিতে চায়, তাই আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছে।
আইরাত;; হঠাৎ মত চেঞ্জ কেনো আবার?

তৌফিক;; তা তো আমি জানি না। এখন দেখ চয়েস তোর। তোর ইচ্ছে। ইচ্ছে হলে জয়েন কর আবার না হলে নেই।
আইরাত অনামিকার দিকে একবার ঠোঁট উল্টিয়ে তাকায়।
অনামিকা;; আমি বাবা জানি না কিছুই। তোরাই বোঝাপড়া কর।
এই বলেই অনামিকা উঠে চলে আসেন। আর আইরাত ক্লান্ত দৃষ্টিতে তৌফিকের দিকে তাকায়।
আইরাত;; এখন জয়েন করলেও আমি আর আগের মতো টাইম অফিসে দিতে পারবো না রে। এখন বলতে গেলে পার্ট টাইম দিতে হবে আমায়। কারণ আমি আবার ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা শুরু করে দিয়েছি। পড়ায় মন দিয়েছি এখন আর আগের মতো কিছুই হবে না।

তৌফিক;; তাও চলবে। তুই তোর ভার্সিটি টাইম শেষ করে তারপর আয় অফিসে। সমস্যা নেই তো।
আইরাত;; সত্যি?
তৌফিক;; তা নয়তো কি। তবে…
আইরাত;; কি?
তৌফিক;; তোকে আরো একটা জায়গায় যেতে হবে।
আইরাত;; কোথায়?
তৌফিক;; আব্রাহাম স্যারের কাছে।
আইরাতের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে যায়।
আইরাত;; কিন্তু কেনো?

তৌফিক;; দেখ আইরু চাকরি টা কি ঝামেলার ফলে তোর হাতছাড়া হয়েছিলো, ট্রাফিকিং রাইট! আর কার জন্য ছাড়া হয়েছিলো আব্রাহাম চৌধুরী তাই না! তো এখন যেহেতু তুই চাকরি টা আবার ফিরে পাচ্ছিস তো এখানে অর্থাৎ ফাইল গুলোতে অবশ্যই আব্রাহাম স্যারের সাইন লাগবে। বুঝলি!
আইরাত;; কি বলিস!
তৌফিক;; আইরু তুইও না। এটা তো কমন ব্যাপার। স্যারের সাইন তো লাগবেই, মাস্ট।
আইরাত;; আবার সিংহের গুহায় হাত দাও।
তৌফিক;; কি?

আইরাত;; আমার বিয়া।
তৌফিক;; কি সত্যি! কবে, কার সাথে?
আইরাত;; তোর দাদার সাথে হারামি চুপ কর। এখন নাকি আবার গিয়ে উনার সাইনও নিয়ে আসতে হবে হায়রে।
তৌফিক;; উপায় নাই।
আইরাত;; আচ্ছা এগুলো থাক এখানে আমি তোকে কাল-পরশুর মধ্যে জানাবো যে কি করবো ওকে!
তৌফিক;; আচ্ছা, তাহলে এবার আমি চলি।
আইরাত;; হুমম।
তৌফিক চলে যায়। তবে আইরাত পরে যায় আরেক চিন্তায়। এখন আবার আগের জব করবে নাকি নিজের স্টাডিই সামলাবে। অনামিকা কে বললে বলবে যা ভালো লাগে তাই করতে। কিন্তু আইরাত এখন নিজেই কনফিউড।

রাতে রুমে বসেই নিজের পড়া পড়ছিলো আইরাত তখনই কিছুটা হুড়মুড়িয়ে অনামিকা তার রুমে আসে।
অনামিকা;; আইরাত!
আইরাত;; কি হয়েছে? এতো টেনশনে আছো কেনো?
অনামিকা;; তোর ফুপির হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেছে রে।
আইরাত;; আরে তকে না দেখলাম ভালোই।
অনামিকা;; হুট করেই বেড়ে গেছে রে। আমি একটু যাই।

আইরাত;; শোন গাড়ির চাবি টা ড্রোয়ার থেকে বের করো। আমি তো ড্রাইভ জানিই, আমি দিয়ে আসি।
অনামিকা;; না না আমি ঠিক চলে যেতে পারবো। তুই পড়। ফোনটা কাছে রাখিস যদি পারি তাহলে এসে পরবো নয়তো থেকে যাবো বুঝলি। তুই সাবধানে থাকিস কিন্তু।
আইরাত;; তুমি নিশ্চিন্তে যাও।

অনামিকা চলে যায়। আইরাতের রাতে রুমে থেকে থেকে আর ভালো লাগছিলো না তাই করিডরের দরজা খুলে দিতেই এক দমকা হাওয়া এসে গায়ে বারি দেয়। প্রচুর গরম লাগছে তাই হাটুর নিচ অব্দি একটা থ্রি-কুয়াটার প্যান্ট আর ট-শার্ট পরে নেয়। কিচেনে গিয়ে বেশি করে গুড়া দুধ আর চিনি দিয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে আনে। তারপর হুমায়ুন আহমেদ এর “হিমু” নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে শুরু করে। একহাতে কফি আরেক হাতে বইটা নিয়ে যেই না করিডরে গিয়েছে ওমনই ঘরের বাতিগুলো যেনো সব ঢিপঢিপ করে জ্বলতে লাগলো।

একবার জ্বলছে তো আরেকবার নিভছে। এটা দেখেই তো আইরাতের কাদো কাদো ভাব। বাসায় একা, তার ওপর যদি কারেন্ট চলে যায় তাহলে সত্যি আইরাত কেদেই দিবে। অন্ধকার থেকে সে অনেক ভয় পায়। তবে বাতিগুলো কয়েক দফা ঢিপঢিপ করে আবার আগের মতো ঠিকঠাক হয়ে গেলো। আর আইরাত বুকে হাত দিয়ে এক স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ে। বই টা হাতে তুলে আবার পড়তে যাবে তখনই আননোন নাম্বার থেকে ফোন। তবে সেটা খেয়াল না করে বই-এর দিকে তাকিয়ে ফোনটা তুলে কানে ধরে…

আইরাত;; হ্যালো।
আব্রাহাম;; হাই বেবিগার্ল।
আইরাত মুখে কফি পুরে নিয়েছিলো আব্রাহামের ডাকটা শুনেই মুখ থেকে একদম কফি ছিটকে পরে। দ্রুত করিডর থেকে ঘরের ভেতরে গিয়ে টিস্যু দিয়ে মুখ চেপে ধরে।
আব্রাহাম;; আহা সাবধানে খাবে তো, কাশি উঠে গেলো।
আইরাত;; আপনি? আপ আ আপনি আমার ফোন নাম্বার কোথা থেকে পেলেন?
আব্রাহাম;; আরে ধুর কি যে বলো না এটা কোন ব্যাপার হলো নাকি আমার জন্য।
আইরাত;; তো কি মনে করে আমাকে ফোন করা?
আব্রাহাম;; তোমাকে মনে করেই তো তোমাকে ফোন করা।
আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম;; মানে এই যে শর্ট”স & টি-শার্টে তোমাকে দারুন মানায় বুঝলে। আসলে বাচ্চা বাচ্চা টাইপ লাগে।
আইরাত;; হ্যাঁ কিন্তু… কি বললেন আপনি? মানে আপনি কি করে জানলেন। আপনি কোথায়?
আব্রাহাম;; করিডরে এসো।
আইরাত দ্রুত করিডরে চলে যায়। আর যেতেই মুখ হা। আইরাত তো তার বাসার করিডর থেকে নিচের দিকে খেয়ালই করে নি। আইরাত জলদি গিয়ে দেখে আব্রাহাম মেইন রোডে অর্থাৎ আইরাতের বাসার ঠিক করিডরের নিচে তার গাড়ির ডিকির ওপর বসে আছে। একহাতে কানে ফোন ধরে আছে আরেকহাতে নিজের জেকেট টা কাধের ওপর ধরে রেখেছে। সেখানেই বসে বসে আইরাতের সাথে কথা বলছে।

আইরাত;; দেখুন আপনি প্লিজ এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন না। প্লিজ যান এখান থেকে।
আব্রাহাম;; এই এতো ভয় পাও কেনো তুমি। ন্যাহ, ভালোও বাসবো আবার ভয়ও পাবো। এটা হয় না বেইবি। ভালোবাসা আর ভয় একসাথে থাকতেই পারে না।
আইরাত;; সে আপনি যাই বলুন না কেনো। কিন্তু এখন প্লিজ যান আপনি।
আব্রাহাম;; আচ্ছা লিসেন একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। অনেক বেশিই ইম্পর্ট্যান্ট কথা। সবথেকে বেশি দরকারি কথা।
আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; আই লাভ ইউ।
আব্রাহাম আইরাতের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
আব্রাহাম;; আমি এবার যাই জানপাখি। শুধু তোমাকে এক নজর দেখতে এসেছিলাম। দেখা শেষ এবার যাই।
আইরাত কিছু বলে না শুধু ফোন কানে ধরে ওপরে দাঁড়িয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম কিছুটা ফ্লাইং কিসের মতো আইরাতের দিকে ছুড়ে দিয়ে তারপর গাড়িতে ওঠে সেখান থেকে চলে যায়।
আইরাত;; আমি এ কোন সাইকোর পাল্লায় পরলাম। কখন কি করে বসে। বলা নেই কওয়া নেই মানে যা তা একেবারে।
আইরাত আর করিডরে থাকেই না ঠাস করে দরজা মেরে দিয়ে রুমের ভেতরে চলে আসে।

পরেরদিন সকালে অনামিকা আসে। অনামিকার কাছে বাসায় ডুপলিকেট চাবি ছিলো তাই দিয়ে এসেছে। সেই এসে আইরাতকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। আইরাত উঠে পরে। ভার্সিটি যেতে হবে আর হয়তো সেখান থেকে আবার আব্রাহামের অফিসেও। হাই তুলতে তুলতে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। রেডি হয়ে বের হয়ে পরে। ভার্সিটি গিয়ে প্রায় সবার সাথেই দেখা হয়। ২-১ টা ক্লাস করে আবার এসে পরে৷ এখন আব্রাহামের অফিসে যাবে কিনা তাই ভাবছে।
আইরাত;; যদি চাকরি তে আবার জয়েন করি তাহলে আব্রাহাম খবিশের সাইন দরকার, আর সাইনের জন্য তো যেতেই হবে। ধুর এতো ভেবে ভেবে মাথায় প্রেসার বাড়ানোর চেয়ে চলেই যাই।
যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত সেখান থেকে এসে সোজা আব্রাহামের অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।

অন্যদিকে আব্রাহাম অফিসে বসে বসে হাতে একটা পেন্সিল ঘুড়িয়ে যাচ্ছে আর ফাইল চ্যাক করছে। তখনই অয়ন হাতে চকোলেট নিয়ে আসে।
অয়ন;; এইযে ব্যাস্ত মানুষ আসবো কি?
আব্রাহাম;; আয় ভাই আয়, এসে আমায় উদ্ধার কর।
অয়ন;; আগে এটা খা।
আব্রাহাম;; কি?
অয়ন;; মিষ্টি।
আব্রাহাম;; এই না না একদম না।
অয়ন কিছুটা জোর করেই আব্রাহামের মুখে সামান্য মিষ্টি পুরে দেয়। কারণ আব্রাহামের ডায়েট চার্ট বিগড়ে যাবে দেখে সে মিষ্টি খুবই কম খায়।

আব্রাহাম;; ওহহ হ্যাপি বার্থডে, বার্থডে বয়।
অয়ন;; থ্যাংক ইউ ব্রো।
ওহ আজ অয়নের জন্মদিন। আর তাই এতো খুশি। তখনই কৌশল আর রাশেদ আসে আব্রাহামের কেবিনে। অয়ন তাদেরও কিছুটা মিষ্টি খাইয়ে দেয়।
কৌশল;; আচ্ছা এতো কাজ মানুষ কীভাবে করে। এতো ওয়ার্কাহলিক কেনো তুই?
আব্রাহাম;; কে আমি?
কৌশল;; না, আমেরিকান মাফিয়া।

আব্রাহাম;; আরে কাজই এমন আমার। এখন কি করবো বল। কাজ তো করতেই হবে। উপায় নেই।
অয়ন;; তবে আজ না। একদিন কাজ একটু কম করলে তোর কোনদিক দিয়ে কম পরবে না ভাই। প্লিজ চল বাইরে যাই।
আব্রাহাম;; আচ্ছা যাচ্ছি তবে এই প্যান্ডিং ফাইল টা চেকাপের পর ওকে।
কৌশল;; না না একটা ফাইলেও আর হাত দিবি না বলে দিলাম। আরে চল না।
সবাই আব্রাহাম কে নিয়ে বাইরে এসে পরে। আর অফিসের হলরুমে এসেই অয়ন একটা কাচের গ্লাস আর একটা স্পুন হাতে নিয়ে নেয়। স্পুন দিয়ে গ্লাসে সামান্য আওয়াজ তুলে সবার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে….
অয়ন;; Excuse me everyone,, may i have your attention please!
অয়নের কথায় সবাই যার যার কাজ ফেলে দিয়ে তাদের দিকে তাকায়।

অয়ন;; আজ আমার বার্থডে।
অয়নের কথায় সবাই হেসে খানিক চিল্লিয়ে ওঠে আর উইশ করে।
অয়ন;; আপনারা কি জানেন যে আমাদের বিগ বসের ঠিক কতোগুলো হিডেন ট্যালেন্ট আছে। হয়তো অনেকেই জানেন। তবে আজ আমার বার্থডে উপলক্ষে আমাদের কোম্পানির হ্যাড মিস্টার.আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আমাদের সবার মাঝে গান গেয়ে শুনাবেন।

আব্রাহাম;; হুয়াট, সিরিয়াসলি ভাই! মানে আমি বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই।
আব্রাহাম অয়ন, কৌশল আর রাশেদের সাথে চাপাচাপি করছিলো তখনই অফিসের ভেতরে আইরাত প্রবেশ করে। এসেই দেখে অফিসে কেমন এক জমজমাট ভাব। আইরাত সামনে এগিয়ে যায়। তারপর দেখে সবার সাথে এখানে আব্রাহামও আছে। আইরাত একটা সাইডে গিয়ে দুইহট ভাজ করে দাঁড়িয়ে থেকে পুরো ব্যাপার টা ক্লিয়ার জানার ট্রাই করছে।
আব্রাহাম;; দেখ আজকে না প্লিজ।

অয়ন;; আরে কিসের আজকে না। আমার বার্থডে আর তুই আমাদের সবার এই একটা কথা রাখবি না। প্লিজ ইয়ার।
আব্রাহাম;; তোরা আর তোদের এই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল।
রাশেদ দ্রুত গিয়ে একটা ব্লেক+ব্রাউন মিক্সের গিটার এনে আব্রাহামের হাতে দিয়ে দেয়।
রাশেদ;; স্যার এইযে গিটার।
আব্রাহাম এবার কিছু বলতে যাবে তবে তার আগেই সামনে তাকালে আইরাতকে তার নজরে পরে। আইরাত কখন এসেছে আব্রাহাম তা দেখেই নি। যাক ভালোই হলো। আব্রাহাম বাকা হেসে অফিসের হলরুমের বড়ো ডেস্কের ওপরে কিছুটা হেলান দিয়ে এক পা দুলিয়ে বসে পরে। আর সবাই আব্রাহামের চতুর্পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো তাদের মাঝে কত্তো আগ্রহ আব্রাহামের গান শোনার। গিটার টা পজিশন মতো ধরে একসময় নীরবতা ভেঙে তাতে টুং টাং আওয়াজ তুলে। আর পরক্ষণেই ছাড়া গলায় এক চঞ্চলমুখর গান ধরে আব্রাহাম….

~“আমি প্রেমিক, আমি কবি
তুমি সিরিয়াস ভাবে দেখো সবই–
আমি গেম খেলে সারারাত জাগি
তুমি পড়ুয়া মেয়ে বেজায় রাগি*
_~আমি বিড়িখোর, আমি আড্ডাবাজ
পড়াশোনা শুধুই তোমার কাজ..
`তোমার প্রিয় বিড়াল ছানা
আমার প্রিয় কুকুর.,
`~তোমার প্রিয় পাহাড়ি ঝর্ণা
আমার প্রিয় পুকুর~

*~ ?গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমাকে জবা ?~বলো তুমি এইবার কি আমার প্রেমিকা হবা!?
~`~?গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমাকে জবা ?~বলো তুমি এইবার কি আমার প্রেমিকা হবা!?
_`আমি ফেল করেও বলি ‘প্যারা নাই চিল’
তুমি হায়েস্ট পেয়েও কেঁদে মুখ করো ‘নীল’
আমার বই-খাতা সব ছেড়া-ফাঁড়া
তোমার কলম টাও মলাট করা.,.,
~_আমি বাড়ি ফিরি ম্যালা রাত করে?
তুমি রাতে ঘুমিয়ে ওঠো ভোরে ⛅
`_তোমার প্রিয় গরুর গোস্ত, আমার প্রিয় চিকেন
তোমার রুমে দুইটা এসি, আমার রুমে ফ্যান।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ৪+৫+৬

*~ ?গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমাকে জবা ?~বলো তুমি এইবার কি আমার প্রেমিকা হবা!?
~`~ ?গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমাকে জবা ?~বলো তুমি এইবার কি আমার প্রেমিকা হবা!?
‘তোমার গল্পে আমি ভিলেন, আমার তুমি ‘রাণী’ ?
যখন আমি প্রেমে সিরিয়াস, তোমার কাছে ফানি ?
‘তোমার গল্পে আমি ভিলেন, আমার তুমি ‘রাণী’ ?
যখন আমি প্রেমে সিরিয়াস, তোমার কাছে ফানি ?

*~ ?গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমাকে জবা ?~বলো তুমি এইবার কি আমার প্রেমিকা হবা!?
~`~ ?গোলাপ ফুলের জায়গায় আমি দিলাম তোমাকে জবা ?~বলো তুমি এইবার কি আমার প্রেমিকা হবা….!
আব্রাহামের গান শেষ হতেই সবাই হাততালি দিয়ে চিল্লিয়ে ওঠে। গিটারের সুরের সাথে দারুণ মানিয়েছে গানটা। সবাই বেশ অবাক, কেননা সবাই জানতো আব্রাহাম খুব বেশি রাগি-বদমেজাজী আর ইগো ওয়ালা একজন ডেয়ারিং পারসন।

তবে আজ সবার ধারণা পুরো পালটে গেছে। আব্রাহামও চাইলে অন্যান্য ছেলে দের মতো হতে পারে। গ্রাম্য ভাষায় কথা বলতে পারে। কেউই ভাবে নি যে আব্রাহাম এখন এই গানটা গাবে। সবার যেমন হাসিও পাচ্ছিলো ঠিক তেমনই সবাই বেশ খুশিও ছিলো। ব্যাসিক্যালি এই মূহুর্তে এই গানটা গাওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে আইরাত। আইরাত কে দেখেই এই গানের কথাটা আব্রাহামের মাথায় এসেছে আর সে গেয়েও দিয়েছে। গানের মেইন মেইন লাইনে সে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছিলো। নিজের প্রেমিকা হয়ে যাওয়ার কথা যেনো সে আইরাত কে এক প্রকার জিজ্ঞেসই করছিলো। আর আইরাত হাবলার মতো দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম গিটার টা একজন স্টাফের হাতে দিয়ে দেয়।

রাশেদ;; স্যার, পুরো ফাটিয়ে দিয়েছেন। সত্যি অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।
কৌশল;; Honesty তোকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেনো কোন ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে তার ভার্সিটি ক্যাম্পাসে বসে বসে গিটায়ে ঝড় তুলেছে এমন।
আব্রাহাম;; হুমম বুঝলাম। এবার সব শেষ। যার যার কাজে মন দেই কেমন!
আব্রাহামের বলাতে সবাই আবার কাজে লেগে পরে। অয়ন-কৌশল-রাশেদও চলে যায়। আইরাত কি করবে ভেবে পায় না তখনই আব্রাহাম গম্ভীর গলায় বলে….
আব্রাহাম;; মিস. আইরাত। কাম টু মাই কেবিন।
এই বলেই আব্রাহাম চলে যায়। আর আইরাতও গুটিগুটি পা ফেলে তার পেছনে চলে যায়।

নেশাক্ত ভালোবাসা সিজন ২ পর্ব ১১+১২+১৩