পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১৫

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১৫
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

ইলান ভাইয়া বুকে হাত দিয়ে সোফায় বসে পড়েন। তোমার মুখে নিজের নামটা শুনলে বুকে চিন চিন ব্যথা করে। সেটা কী তুমি বুঝো না?
ইলান ভাইয়ার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে আমি ফিক করে হেসে দিলাম।
আহ রিয়া তুমি আমার কষ্ট দেখে এভাবে হাসতে পার না। তুমি না আমার বোন। তোমার উচিত আমার এই কষ্টে কেঁদে কেঁদে বন্যা বানিয়ে দেওয়া।
আর এই বন্যার পানিতে যেনো তুই ভেসে যাস।

ইলান ভাইয়া রুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলে, চুপ থাক তুই। কষ্ট আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এই বেয়াদব মহিলা আমাকে ধোকা দিয়ে বিসিএস ক্যাডার বিয়ে করে ফেললো। আমি এই কষ্ট কই রাখি?
তোর উচিত এই কষ্টে কঁচু গাছে ফাঁস নেওয়া।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইলান ভাইয়া আর রুদ্রর কথা শুনে আমরা সবাই হেসে দিলাম। আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে ইলান ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম,
আচ্ছা ভাইয়া আপনার আর রুনা আপুর তো লাভ ম্যারেজ তাই না?
ইলান ভাইয়া মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়। তাদের লাভ স্টোরি জানার জন্য আমার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো। আমি অনুরোধ সুরে বলি,

ভাইয়া আপনাদের লাভ স্টোরিটা বলুন না।
বলার মতো কোনো লাভ স্টোরি আমাদের নেই। আমাদের লাভ স্টোরিতে ছিল না কোনো ভিলেন আর না কোনো বাধা। আর চার পাঁচটা প্রেমের মতোই আমাদের প্রেমটা শুরু হয়েছিল। হাই স্কুল লাইফ থেকে আমাদের প্রণয় শুরু। তখন থেকে আমরা এক সাথে আছি। এখন পর্যন্ত এক সাথেই আছি। স্কুল লাইফ শেষ হলো, কলেজ লাইফ শেষ হলো। ভার্সিটি লাইফে আমরা দুজন আলাদা হয়ে গেলাম। ও ভার্সিটিতে ভর্তি হলো আর আমি মেডিক্যালে। তবে ইন্টাররেস্টিং ব্যাপার হলো আমাদের ফাস্ট হাগ ফাস্ট কি……

আমি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললাম,
ছিঃ নাউযুবিল। ভাইয়া এসব কী বলেন? বেড রুমের কার্যকলাপ পাবলিক প্লেসে বলছেন কেনো?
রুদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে, ইলান তুই এখনোও শিখলি না কোথায় কি বলতে হয। বাচ্চা মেয়েদের সামনে এসব কেউ বলে? বাচ্চারা এসব কথাবার্তা হজম করতে পারে না।
আমি উনার দিকে নাক ফুলিয়ে তাকাই। নিয়াম ভাইয়া হাসি মুখে বলে,
রিয়া এমন করছো কেনো? রুদ্র তো…..

নিয়াম ভাইয়ার কথার মাঝেই রুদ্র কাঁশতে শুরু করে। যেনো কাঁশতে কাঁশতে যক্ষা রোগীর ট্যাগ নিয়ে নিবেন। রিদি আপু নিয়াম ভাইয়ার মুখ চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে তাকায়।
লজ্জায় আমি হাসফাস করছি। উনি কাঁশতে কাঁশতে ওঠে চলে যেতে নিলেই ইলান ভাইয়া উনাকে টেনে আবার বসিয়ে দেয়।

এমন ডং করছিস কেনো? দুই দিন পর বাচ্চার বাপ হয়ে যাবি এখনো আমাদের সামনে ঢং করস। বিয়ের আগে তো বিয়ে করবি না বলে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছিলি। এখন তো বউ ছাড়া বাঁচস না।
তোর মতো আমার মাথায় এতো বাচ্চা ঘুরে না।
আমার মাথায় বাচ্চা ঘুরে তো তোর কী হয়ছে? আমি তো প্লেন করে নিয়েছি আমি প্রত্যেক বছর একটা করে বাচ্চার বাপ হবো।

আগে একটার হয়ে নে। তারপর বাকিগুলোর চিন্তা করিস।
আল্লাহ চাইলে…..
আমি দৌড়ে ওখান থেকে রুমে চলে এলাম। উনাদের এসব বেফাস কথা বার্তা আর নিতে পারছিলাম না। সবাই যেনো লজ্জা সরম বাজারে বিক্রি করে দিছে।

রিদি আপুরা এখানে আছে, ইলান ভাইয়াও যখন এখানে এসেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার। বাধ সাদলো মামুনি আর আংকেল। উনারা কিছুতেই যাবেন না। অগত্যা উনাদের ছাড়াই আমাদের যেতে হচ্ছে।
রেডি হচ্ছিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো রুমে একটাই ড্রেসিংটেবিল আর একটাই আয়না। উনিও রেডি হবেন আর আমিও রেডি হবো। আমি হিজাব পড়ছিলাম। ঠিক তখনি উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করা শুরু করে দেন। আমি বিরক্ত হয়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এতে উনার কাজে ব্যাঘাত ঘটলো। আমার সামনে দাঁড়ানোর মতো আর জায়গা নেই। আমি একেবারে ড্রেসিংটেবিল ঘেষে দাঁড়িয়ে রয়েছি। উনি আমাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই আমি বিরক্ত হয়ে উনাকে বলি,

কী সমস্যা আপনার? এমন বাচ্চামু কেনো করছেন? আপনি যে লম্বা আমার পিছনে দাঁড়িয়েও আপনি অনায়সে রেডি হতে পারবেন। কিন্তু আমি তা পারবো না। আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে আমি কিছুই দেখতে পারবো না।
এতো খাটো হইছে কেনো? কমপ্লেন খাওনি? ইউ নো তোমার সাইজ একদম আঙ্গুরের মতো।

রাগে দুঃখে চোখ দিয়ে পানি চলে আসছে। এর আগে কেউ কখনো আমাকে এভাবে বলেনি। রাগে আমি রুম থেকে চলে এলাম। মামুনির রুমে গিয়ে হিজাবটা পড়ে নিলাম। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি নিয়াম ভাইয়া, রিদি আপু, নিধি, ইলান ভাইয়া আগে থেকেই বসে আছে। এখন শুধু দুইটা সিটই খালি আছে। একটা ড্রাইভিং সিট আরেকটা ড্রাইভিং সিটের পাশেরটা। উনি যে ড্রাইভ করবেন। সেটা আমি জানি। আমি কিছুতেই উনার সাথে বসবো না।
ইলান ভাইয়া আপনি সামনে আসবেন প্লিজ।

আমি মিষ্টি বোনটার কথা নিশ্চয়ই শুনতাম। কিন্তু কী বলো তো আমার মাথা কেমন ঘুরছে? শরীরটা কেমন লাগছে। তুমি প্লিজ সামনে বসে পড়ো। বমি বমিও লাগছে। এখন যদি আমি রুদ্রের শরীরে বমি করে দেই। তাহলে আর রুদ্র আমাকে আস্ত রাখবে না। তাই তো এমন একটা জায়গায় বসেছি এক পাশে জানালা অন্য পাশে প্রাক্তন। প্রাক্তনের গায়ে বমি করে প্রতিশোধ নেওয়ার প্লেন করছি।

আমি উনার লজিকলেস কথা বার্তা শুনেই বেশ বুঝতে পারছি সব সামনে না বসার বাহানা। যেতে একদম ইচ্ছে করছে না। আমি না গেলে সবার মন খারাপ হবে। এর মাঝে উনি এসে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন।
কেউ একজন কী গাড়িতে ওঠবে? নাকি তার যাওয়ার ইচ্ছে নেই? তাকে ফেলে চলে যাব নাকি?
আমি ফুস ফুস করতে করতে নিজের সিটে বসে পড়লাম। আমি বসতেই উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পর থেকেই ইলান ভাইয়া উনাকে এদিকে তাকাতে বলছেন তো আবার অন্যদিকে। আচমকা ইলান ভাইয়া চিৎকার করে বলে ওঠে,

রুদ্র তুই বাম দিকে তাকা। দেখ কী সুন্দর একটা মেয়ে যাচ্ছে?
আচমকা চিৎকার করে ওঠায় রুদ্র ঘাবড়া গিয়ে হুট করে গাড়ি ব্রেক কষে। এদিকে আমি রাগে সিট বেল্ট বাঁধতেই ভুলে গেছি। নিয়াম ভাইয়ার জন্য শুধু ব্যাথা পায়নি। আমি হেলে পড়তেই নিয়াম ভাইয়া আমাকে পিছন থেকে ধরে ফেলেন।
রিয়া তুমি সিটবেল্ট বেঁধে বসবা না। এখনি তো একটা এক্সিডেন্ট হতো। আমাদের ঘুরা রেখে হসপিটালে যেতে হতো।
জিজু তুমি কাকে কী বলছো? ওর তো কোনো কমনসেন্সই নেই। গাধা একটা। শুধু রাগই দেখাতে পারে। সবাইকে অস্থির না করলে এই মেয়ের শান্তি হয় না। রিডিকিউলাস।

উনি নিজেই আমার সিটবেল্ট বেধে দিলেন। আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি। উনি এভাবে আমাকে সবার সামনে না বললেও পারতেন। অভিমানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। আমি জানি আমি অভিমান অপাত্রে দান করছি। উনি কখনোই আমার অভিমান বুঝবেন নাহ। অভিমান ভাঙানো তো অনেক দূরের কথা।
কী সমস্যা তোর? এমন চিৎকার করছিস কেনো?

আমার আবার কী সমস্যা? আমার কোনো সমস্যা নেই তো। আমি তো শুধু চেক করছিলাম তোর দৃষ্টি শুধু রিয়াতেই সীমাবদ্ধ নাকি অন্য মেয়েদের দিকেও যায়।
আমি ওর দিকে তাকাবো কেনো? তুই এসব আজাইরা জিনিস বাধ দিয়ে নিজের কাজে মন দে। সারাদিন তো শুধু মাথায় এসবই ঘুরে।

রুদ্রর কথা শুনে ইলান ভাইয়া মুখ কালো করে ফেলে। গাড়ি জুড়ে শুধু নিস্তব্ধতা। কেউ কোনো কথা বলছে না। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। এই নিস্তব্ধতা ভেঙে হুট করেই রুদ্র বলে ওঠে,
সরি। আসলে তুই এভাবে চিৎকার করে ওঠলি তাই রেগে গিয়েছিলাম। তুই তো জানিস আমি চিৎকার চেঁচামেচি একদম পছন্দ করি না। প্লিজ কিছু মনে করিস না।
আমি বাইরের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছি। প্রথমে ভেবেছিলাম উনি আমাকে সরি বলছেন। আমি তো এমন কেউ না যে উনি আমাকে সরি বলবেন।

আমি বাইরের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে আছি। প্রথমে ভেবেছিলাম উনি আমাকে সরি বলছেন। আমি তো এমন কেউ না যে উনি আমাকে সরি বলবেন। আমি উনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কেউ না তো। উনার তো আমার মন খারাপে কিছু যায় আসে না। আমার জীবনে আমার অবস্থান একটা আগাছার মতো। আগাছা যেমন মানুষ উপড়ে ফেলে, তেমনি একদিন উনিও আমাকে উনার জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। কিন্তু আমি তো সেই সুযোগ দিব না। তার আগেই আমি উনার জীবন থেকে অনেক দুরে চলে যাব। এতোটাই দূরে যাব উনি আমাকে আর কখনো খোঁজে পাবেন নাহ।

সবাই হাসি ঠাট্টা করছে। কিন্তু আমি নিশ্চুপ।
রুনা আসুক তারপর আমি তোর হাসি বের করবো। আমি বলবো তুই অন্য মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকিস। তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মাঝে মাঝে চোখও মারিস।
ছিঃ রুদ্র। তোকে তো আমি ভালো ভাবতাম, আর তুই আমার সংসার ভাঙতে চাইছিস।
তোর ড্রামা অফ কর।

সবাই মিলে আজ অনেক ঘুরাঘুরি করলাম। একসাথে সবাই হাওয়াই মিঠাই খেলাম। উনি প্রথমে খেতে না চাইলেও ইলান ভাইয়া জোড় করে মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছিল। রুদ্র আর ইলান ভাইয়া কী যেনো একটা জরুরি কাজে গিয়েছে। যাওয়ার আগে অবশ্য আমাকে গাড়িতে বসে থাকার কথা বলে গিয়েছিল। রিদি আপুরা নিজেদের বাসায় চলে গেছে।

হুট করেই কেউ একজন আমার হাত ধরে রাস্তার পাশ থেকে সরিয়ে নিলো। সাথে সাথেই তীব্র বেগে একটা গাড়ি আমার পাশ ঘেষে চলে গেলো। আচমকা এমন হওয়াতে আমি অনেকটাই ভয় পেয়ে গেলাম।
আর ইউ অকে?

পুরুষালি কন্ঠ কর্ণকুহর হতেই আমি মাথা তুলে থাকালাম। চোখের সামনে স্বল্প পরিচিত একটা মুখ। এই লোকটা আগের বারও আমাকে বাঁচিয়েছিল। এবারও আমাকে বাঁচালো। আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। আমি ঠিক আছি।
ধন্যবাদ আপনাকে। আবারও আপনি আমার জীবন বাঁচালেন। আপনি আমার জীবন বাঁচিয়েছেন এর তুলনায় ধন্যবাদটা অতি সামান্য। আমি সারাজীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

কৃতজ্ঞ থাকার দরকার নেই এটা আমার কর্তব্য ছিল। চোখের সামনে একজনকে তো আর মরতে দেখতে পারি না। আমার জায়গায় আপনি হলেও হয়তো এই একই কাজ করতেন। বাই দা ওয়ে দুই দুবার দেখা হলো কিন্তু আপনার নামটা জানা হলো না। আমি ইফাদ আপনি?

আমি রিয়া।
নাইস নেইম।
ধন্যবাদ।
আচ্ছা তাহলে আমি আসি, আর একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন। আই থিংক আপনাকে কেউ মারার চেষ্টা করেছিল। আপনাকে বাঁচানোর জন্য তো সবসময় আর আমি থাকবো না।

উনি আমাকে বাই বলে চলে গেলেন। আমিও সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বাই বললাম। কিন্তু আমার মাথায় ঘুরছে অন্য চিন্তা। কে আমাকে মারতে চাইছিল? এটা পরিষ্কার কেউ একজন আমাকে মারতে চাইছিল। কারণ আমি মেইন রোড থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কেউ একজন ইচ্ছাকৃত ভাবে আমাকে গাড়ি চাপা দিতে চাইছিল। কিন্তু কে?
আমি গিয়ে আবার গাড়িতে ওঠে বসলাম। একটু পর উনিও আসলেন। সিটবেল্ট বাধতে বাধতে উনি বলেন,

বাহ আজকে এতো শান্ত শিষ্ট। এমনিতে তো তোমাকে ধমকিয়ে এক জায়গায় বসিয়ে রাখা যায় না। আর আজকে নিজে থেকেই এতক্ষণ ধরে শান্তভাবে গাড়িতে বসে আছো।
আমি উনার কথার কোনো প্রতিত্তর করলাম না। উনি গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলেন,

তখনকার জন্য রেগে আছো? বকাটা তোমার প্রাপ্য ছিল। এর জন্য আমি তোমাকে সরি বলবো না। ভুলটা তোমার ছিল। জিজু তোমাকে না ধরলে এতক্ষণে তুমি হসপিটালে থাকতে।
আমি এবারও কিছু বললাম না। উনিও আর কিছু বললেন না। উনি চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি উনাকে তখনকার ঘটনাটাও বললাম না। বললেই বকাবকি শুরু করে দিবেন। তাই চুপ থাকাই ভালো। হুট করেই উনি আশ্চর্যজনক একটা প্রশ্ন করে বসেন,

ফুচকা খাবে তুমি?
মানে?
ঐ যে দেখো ফুচকা আর চটপটির দোকান। খাবে? মেয়েদের মন খারাপ থাকলেও নাকি ফুচকা দেখলে মন ভালো হয়ে যায়।
আমি একবার দোকানের দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। ফুচকা কখনোই আমার প্রিয় খাবারের মাঝে ছিল না।
না খাব না। আপনি বাসায় চলুন।
সিরিয়াসলি তুমি মেয়ে হয়ে ফুচকাকে না বলছো।

মেয়ে হওয়ার পিছনে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মেয়ে হলে ফুচকা খেতেই হবে। প্রিয় খাবারের মাঝে ফুচকা থাকতেই হবে। আমি ফুচকা এতো পছন্দ করি না। এখানের ফুচকাগুলো নোংরা পরিবেশে তৈরি করে। একজন খেয়ে যাওয়ার পর আরেক জনকে এই প্লেটেই দিচ্ছে। দেখুন প্লেটগুলো বার বার এক পানিতেই ধুয়ে দিচ্ছে।
তুমি মেয়ে তো? কলেজ লাইফে থাকতে দেখতাম কলেজ ছুটি হওয়ার পর মেয়েরা হামলে পড়তো ফুচকার দোকানের ওপর। অ….

কিছু একটা বলতে গিয়েও উনি থেমে গেলেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি উনি অরির কথায় বলতে চেয়েছিলেন। উনার মনটাও খারাপ হয়ে গেছে। আমি হাসি মুখে বললাম,
আমি কোনো ট্রিট মিস করি না। আপনি আমাকে ফুচকা ট্রিট দিতে চেয়েছিলেন। যেহেতু আমি ফুচকা পছন্দ করি না। তাই আপনি আমাকে চকলেট ট্রিট দিবেন। না বলতে পারবেন নাহ। যান এখনি চকলেট নিয়ে আসুন।
উনি চলে গেলেন চকলেট নিয়ে আসতে।

এর মাঝে কেটে গেলো দুইদিন। বিহান আমার সাথে অনেক চেষ্টা করেছে কথা বলার জন্য। কিন্তু রুদ্রর জন্য সুযোগ পায়নি। বিহান হঠাৎ কেনো আমার সাথে দেখা করতে চাইছে। সেই কারণটা সবার কাছে অজানা হলেও আমি জানি।
আগামীকাল কোচিংয়ে পরিক্ষা। তাই পড়াশোনা নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত। রুদ্র আমাকে একজন টিউটরের মতো গাইড করছে। পড়া না বুঝলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। নোটস করে দিচ্ছেন। যাতে আমার সময় নষ্ট না হয়। যখন যা লাগে সব এনে দিচ্ছেন। এক কথায় উনি উনার দায়িত্ব পালনে কোনো রূপ ত্রুটি রাখছেন নাহ।

নিজেকে একজনের দায়িত্ব মনে হতেই হাসি পায়। সত্যিই আমি উনার কাছে দায়িত্ব ছাড়া আর কিছুই না। এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই চুলে টান পড়লো। আমি চোখ মুখ কুঁচকে সামনে তাকাতেই রুদ্রকে দেখতে পেলাম। উনি কিছুক্ষণ আগেই হসপিটাল থেকে এসেছেন। হসপিটাল থেকে এসেই শাওয়ার নিয়েছেন। এখনো চুল থেকে টুপ টাপ পানি পড়ছে। শাওয়ার নেওয়ার পর উনাকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে।

একে তো আমার আদেশ অমান্য করে বিছানায় পড়তে বসেছো। এখন আবার পড়াশোনা বাদ দিয়ে স্বপ্ন দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেছো।
উনার কর্কশ গলা শুনে ঘোর কেটে গেলো। এই লোকটা অলয়েজ তেতো তেতো কথা বলে। জন্মের পর থেকে মনে হয় শুধু করলাই খেয়েছে।

বইটা দাও দেখি। এতক্ষণে কী পড়ছো? শুধু স্বপ্নই দেখেছ নাকি ফাঁকে ফাঁকে একটু পড়াশোনাও করছো।
মাথায় হাত দিয়ে আমি উনার দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকাই। বেয়াদব লোক এতো জুড়ে চুল টান দিয়েছে যে এখনো ব্যথা পাচ্ছি।

পরীক্ষার দিন আমার এতো টেনশন হয় কি বলবো। টেনশনে পড়ায় ভুলে যায়, আর প্রশ্ন কমন পড়লে এক্সাইটমেন্টে লিখতে ভুলে যায় বা কোনটা রেখে কোনটা দিব সেটাই ডিসাইড করতে পারি না।
আজকে সকাল থেকেই প্রচুর টেনশন করছি। টেনশনে রাতে ভালো করে ঘুমাতে পারি নাই।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১৪

এতো টেনশন করো না। তোমার প্রিপারেশন অনেক ভালো। ইনশাল্লাহ পরীক্ষা ভালোই হবে।
গাড়িতে ওঠে বসলাম। কিন্তু কিছুতেই সিটবেল্ট লাগাতে পারছি না। নিজের হাতের ওপর আরেকটা হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে পাশে তাকাতেই ঘটে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ১৬