পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৪

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৪
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

আপনার চাকরিটা কী ঘুষ দিয়ে পেয়েছিলেন? ফোনের লাস্ট কল দিয়ে আপনি বিচার করছেন খুনি কে? এখন যদি প্রমাণিত হয় রুদ্র নির্দোষ তখনি কী আমাকে খুনি বলবে? কারণ রুদ্রের আগে তো আমাকেই কল করেছিল ইলান। আপনি হয়তে ভাবতেও পারছেন না রুদ্র কতোটা ইলানকে ভালোবাসে। রুদ্র ইলানকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখতো। আপনি তাকেই ইলানের খুনি প্রমাণ করতে চাইছেন। ইলান রুদ্রকে ফোন করেছিল উনি বাবা হবেন সেই খবরটা দিতে। আর ইলানকে হুমকি দেওয়ার কথা। রুদ্র ইলানকে খুন করার হুমকি দিয়েছিল সেটা একটা ডেয়ার ছিল।
বিষ্ময়ে পুলিশ অফিসারের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। পুলিশ নিজের বিষ্ময় কাটিয়ে ওঠতে না পেরে বলে ওঠেন,
এসবের মানে কী? আপনি এসব কী বলছেন?

অনেক দিন পর আমরা কলেজের সব ফ্রেন্ডরা একসাথে হই। একসাথে হওয়ার উদ্দেশ্য ছিল একটু আনন্দ আর হই হুল্লোড় করা। একজন ট্রুথ অর ডেয়ার গেইম খেলার কথা বলে। খেলা শুরু হলে রুদ্রের ট্রান আসলে রুদ্র ডেয়ার নেয়। রুদ্রকে ডেয়ার দেওয়া হয় ইলানকে খুন করার হুমকি এমন ভাবে দেয় যেনো মনে হয় এটা কোনো অভিনয় নয় সত্যি সত্যিই ঘটনাটা ঘটছে। আমরা জানতাম রুদ্র এটা করবে না এবং পারবেও না। বাস্তবে তো অনেক দূরের কথা অভিনয়েও রুদ্র এই কাজটা করতে পারবে না। রুদ্র নাকোচ করে দেয় সেটা এটা পারবে না। আমাদের অনেক জুড়াজুড়িতে রুদ্র রাজি হয়। রুদ্র নিজের ডেয়ার সম্পূর্ণ করতে পারে না। ইলানের কলার ধরে অর্ধেক ডায়লগ বলার পরই হুট করে রুদ্র ইলানকে জড়িয়ে ধরে। পেয়ে গেছেন আপনাদের উত্তর? এখন আপনারা আসতে পারেন। তদন্তের কোনো দরকার নাই। তদন্তের নামে বাংলা সিনেমা করার কোনো দরকার নাই। চলে যান এখান থেকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুনা আপু এবার চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। বাধ্য হয়ে পুলিশ চলে যায়। রুনা আপু কাঁদতে কাঁদতে পড়ে যেতে নিলে আমি ধরে ফেলি। রুনা আপু গিয়ে রুদ্রর সামনে বসে পড়ে।
রুদ্র ইলান কেনো এমন করলো? কেনো আমাকে ছেড়ে চলে গেলো? ও জানে না আমি ওকে ছাড়া কতোটা অসহায়। ওকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। আমি আর পারছি না ওকে ছাড়া থাকতে। ও তো জানতো আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারি না। সত্যিই আমি আর পারছি না।

রুনা আপু রুদ্রর হাত দুটো চেপে ধরে বলে, রুদ্র তুই তো জানিস আমি ইলানকে কতোটা ভালোবাসি। দে না ভাই ইলানকে আমার কাছে ফিরিয়ে। ইলানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলে আমি তোর কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। তুই তো বলিস আমি তোর বোন। বোনের কাছে….
রুনা আপু অঙ্গান হয়ে পড়ে যেতে নিলেই রুদ্র ধরে ফেলে। আমি আর রুনা আপুর আম্মু দুজন মিলে রুনা আপুকে রুমে নিয়ে যায়। রুদ্র ডক্টরকে ফোন করে।

কেটে গেছে এক সপ্তাহ। রুনা আপু এখন মোটামুটি স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভিক হয়ে গেছে রুদ্র। সারাদিন বাসায় থাকে না। রাত করে বাসায় ফিরে। মাঝে মাঝে ফিরেও না। বাসায় ফিরলেও রুম থেকে বের হয় না। প্রয়োজনের বাইরে কারো সাথে ঠিক করে কথাও বলে না। উনি এখন আমাকে আর কোচিংয়ে দিয়ে আসেন না। কিন্তু একাও ছাড়েন না। আমার জন্য দুটো গার্ডস নিযুক্ত করেছেন। উনারা সব সময় আমার পিছনে আটার মতো লেগে থাকে।

গার্ডস সাথে থাকা সত্ত্বেও উনি আমাকে কোচিংয়ের বাইরে কোথাও যেতে দেন না। বাসা থেকে কোচিংয়ে যাবা, কোচিং থেকে সোজা বাসায় আসবা। বিরক্ত হয়ে গেছি আমি। উনি আমাকে খাঁচায় বন্দি পাখির মতো বন্দি করে রেখেছেন। এরকম জীবন যাপনে তো আমি অভ্যস্ত নই। আমি বাধন ছাড়া পাখির মতো উড়তে চাই। খোলা আকাশে ডানা ঝাপটাতে চাই। বন্দিত্ব আমার কাম্য নয়। আমি চাই স্বাধীনতা। নিজের ইচ্ছে মতো লাইফ লিড করতে। যেটা উনার সাথে থেকে সম্ভব না। খাঁচায় বন্দি পাখি যেমন খাঁচা ভেঙ্গে পালায় তেমন আমারও এখান থেকে অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করে। উনার দায়িত্বের বেড়াজালে বন্দি হয়ে থাকতে চাই না।

নোট নিয়ে নড়াচড়া করছিলাম। নোটটা মুখস্থ করা শেষ এখন রিভিশন দেওয়ার পালা। প্রথম পেইজটা শেষ করে যখন দ্বিতীয় পেইজ পড়তে যাব ঠিক তখনি উনি আমার নোটটা কেড়ে নিলেন। বিরক্তিতে দাঁত কিড়মিড় করে উনার দিকে তাকালাম। উনার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম,
সমস্যা কী আপনার? নোট নিয়ে এমন টানাটানি কেনো করছেন? দেখতে পাচ্ছেন না আমি পড়ছি? অন্ধ হয়ে গেছেন?
উনি আমাকে ধমক দিয়ে বলেন,

প্রশ্নটা আমার করা উচিত। কী সমস্যা তোমার? তোমার মনে হয় না তুমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছো। কিছু বলি না দেখে দিনকে কী দিন সাহস বেড়ে যাচ্ছে।
আমি এবার বিছানা থেকে নেমে উনার সামনে দাঁড়িয়ে রেগে গিয়ে বললাম, আমি কী করেছি? আপনি আমার সাহস কোথায় দেখলেন?

উনি এবার বেশ জুড়ে ধমক দিয়ে বলেন, কী করোনি তুমি? তোমার সাহস হয় কী করে বাসায় একা ফেরার? তোমাকে আমি বলেছিলাম না তুমি একা একা কোচিংয়ের বাইরে এক পাও রাখবে না। গার্ডসরা তোমাকে কোচিংয়ের ভিতর থেকে নিয়ে আসবে। আর সেখানে তুমি একা একা বাসায় চলে আসছো। শুধু যে বাসায় এসেছো তা না রাস্তায় রাস্তায় টো টো করে ঘুরে বেড়িয়েছ। মাথায় বুদ্ধি বেশি হয়ে গেছে? গার্ডসদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে এসে এসব করো। তোমাকে এতো সাহস কে দিলো? আন্সার মি।

উনি কথাগুলো বলতে বলতে আমার দিকে দুই পা এগিয়ে আসলাম। আমি বরাবর মতো দু কদম পিছিয়ে গেলাম না। নিজের জায়গায় অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আচমকা নিজের রাগটা কনট্রোল করতে না পেরে উনার কলার চেপে ধরলাম। চিৎকার করে বললাম,

আপনার কী আমাকে মানুষ হয় না? আমাকে কী আপনার হাতের পুতুল মনে হয়? যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে নাচাবেন। আমি পুতুল বা যন্ত্র নই আমি একজন মানুষ। একটা মানুষ এভাবে বাঁচতে পারে না। আমি বিরক্ত হয়ে গেছি নিজের জীবনের ওপর আপনার ওপর। আপনি কী বুঝতে পারছেন না আপনি আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিছেন। ক্রমে ক্রমে আমার জীবনটা দুর্বিষহ করে তুলছেন। আমাকে আপনার খাঁচার বন্দি পাখি বানিয়ে দিয়েছেন। আমি আপনার বন্দিনী হয়ে থাকতে

চাই না। আমি খোলা আকাশে মুক্ত পাখির নেই উড়তে চাই। নিজের জীনটাকে উপভোগ করতে চাই। এই রুমে, এই বাসায় থাকতে থাকতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। মনে হয় এই বাসায় আমার জন্য বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিশ্বাস নিলেই আমি মারা যাব। আমি হাপিয়ে গেছি প্লিজ আমাকে মুক্তি দিন আমি মুক্তি চাই।
উনি আমার বাহু খামছে ধরেন। উনার আঙ্গুলগুলো জেনো আমার শরীরের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

মুক্তি? মুক্তি চাই তোমার তাই না? আমার কাছ থেকে মুক্তি চাও। যেটা কোনোদিনও পাবে না। আমার কাছ থেকে তোমার কোনো মুক্তি নেই। জোড় করেই তোমাকে আমার সাথে রেখে দিব। আমার বন্দি খাঁচার পাখি হয়ে থাকবে তুমি। আজকে থেকে তোমার টোটালি বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ। কোচিংয়েও যাওয়া বন্ধ। কোচিংয়ের সমস্ত নোট আমি তোমাকে এনে দিব।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৩

কথাগুলো বলেই উনি চলে গেলন। আমি স্তব্ধ হয়ে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি এসব কী বলে গেলেন? সে যাই হোক আমি তো বন্দি হয়ে থাকব না।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ২৫