পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪০

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪০
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

মাঝ রাতে রুদ্রকে ড্রয়িংরুমের সোফায় আয়েশ করে বসে থাকতে দেখে আমি চমকে ওঠলাম। এটা কী সত্যিই রুদ্র? নাকি আমার ভ্রম। আচ্ছা আমি স্বপ্ন টপ্ন দেখছি না তো? সপ্নই হবে। এটা রুদ্র হতেই পারে না। মাঝরাতে রুদ্র আমাদের বাসায় আসবে এটা অসম্ভব।
রুদ্র দিকে তাকিয়ে কানার মতো হাঁটতে গিয়ে চেয়ারে পা বেজে গেলো। রুদ্র আমার কাছে হওয়ায় রুদ্র আমাকে ধরে ফেললো। এবার বুঝতে পারলাম এটা স্বপ্ন না সত্যি। এটা বুঝা মাত্রই আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। যে লোক রাত ১০ টার পরে কাউকে ফোন দেয় না। সেই লোক নাকি মাঝ রাতে আমাদের বাসায় এসেছে। এটাও দেখার বাকি ছিল। পরমুহূর্তেই রুদ্রর ধমক শুনে কেঁপে ওঠলাম।

তুমি এতোটা কেয়ারলেস কী করে হতে পারো? এত বড় একটা চেয়ার সেটাও দেখতে পারছ না। এখন যদি তুমি এখান থেকে পড়ে যেতে কী হতে পারতো ভাবতে পারছো? তোমার কোনো আইডিয়া আছে আমি তোমাকে নিয়ে কতোটা টেনশনে থাকি? তুমি কবে একটু নিজের কেয়ার নিতে শিখবা?
রুদ্র আমার আরেকটু সন্নিকটে আসতেই কারো আসার শব্দ শুনে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায়। হালকা একটু কেশে সোফায় গিয়ে বসে পড়েন। আব্বু আর ভাইয়া এসে রুদ্র বিপরীত পাশের সোফায় বসে। রুদ্র সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আব্বু রুমে চলে যাই। আব্বু হাই পেশারের রোগী। বেশি রাত জাগলে আবার প্রবলেম হয়। ভাইয়ার একটা ফোন আসায় ভাইয়াও ওঠে চলে যাই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আম্মু অতি দ্রুত এসে রুদ্রর সামনে উপস্থিত হয়। আম্মুর হাতে সবজি কাটার ছুড়ি। আম্মু এখন রান্না করছে। রান্না করবেই না কেনো? একমাত্র বোনের একমাত্র ছেলে। তার উপর একমাত্র মেয়ের জামাই। কতো আদরে। তাহার খাতির যত্নের কী কমতি রাখতে পারে? অবশ্যই না। আম্মু ব্যস্ত হয়ে পড়ল রুদ্রকে জিঙ্গেস করতে। সে কী খাবে না খাবে? অবশ্য আম্মু সবই জানে। আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মু আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে,
ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? দেখছিস তো ছেলেটা একা একা বসে বোরিং ফিল করছে। কোথায় একটু কথা বলবি তা না ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। হসপিটাল করে এতো পথ জার্নি করে আসছে কিছু লাগবে কি না এসবও তো জিঙ্গেস করতে পারিস। তোর মাথায় কোনোদিন বুদ্ধি সুদ্ধি হবে না।

আমি হাবলার মতো আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। আম্মু হঠাৎ এমন অদ্ভুত বিহেইভ করছে কেনো সেটাই বুঝতে পারছি না। আর উনাকে হসপিটাল করে এতোটা পথ জার্নি করে আসতে আমি বলেছিলাম। যত সব ঢং। আম্মু আরেক বার চোখ গরম করে তাকাতেই আমি সুর সুর করে গিয়ে রুদ্রর পাশে বসে পড়লাম। আম্মু চলে যেতে রুদ্র একেবারে আমার গা ঘেষে বসে পড়ে। আমি বিরক্তিরকর চাহনি উনার দিকে নিক্ষেপ করি।
আমি কাঠ কাঠ গলায় বলি,
আপনি এখানে কেনো এসেছেন? মাঝ রাতে কেউ কারো বাসায় আসে।
আমার বউ এখানে আর আমি এখানে আসবো না এটা হতে পারে? আমার শ্বশুরবাড়ি বাড়ি আমি যখন ইচ্ছে তখন আসবো তোমার কী?

আমি রাগে হিশহিশিয়ে বললাম, মাঝ রাতে এই বাসায় এসে কী প্রমাণ করতে চাইছেন? আমাকে ছাড়া আপনি থাকতে পারেন না? আপনি বউ পাগল হয়ে গেছেন? আমার জন্য আপনার ভালোবাসা উতলায়ে পড়তাছে?
আমার কোমড় চেপে ধরে উনি আমাকে আরেকটু নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আমি উনার কাছ থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করছি। অস্বস্তিতে হাসফাস করছি। বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। কেউ যদি চলে আসে আর আমাদের এভাবে দেখে ফেলে তাহলে মান-সম্মান আর থাকবে না। সব প্লাস্টিক হয়ে যাবে। রুদ্র আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে মোহনীয় কন্ঠে বলেন,
এরকম একটা সুন্দরী বউ ঘরে থাকলে যে কেউই পাগল হবে।
উনি আরো কিছু বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাইয়াকে এদিকে আসতে দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে বসলেন। সেই সুযোগে আমি সেখান থেকে ওঠে চলে আসলাম।

জামাই আদর কাকে বলে? কত প্রকার? কী কী? সেটা আজকে উনি ভালো করেই টের পেয়েছেন। উনি রুমে এসেই চার হাত পা মেলে বিছানায় শুয়ে পড়েছেন।
তোমার মা আজকে আমাকে চার মাসের খাবার এক সাথে খাইয়ে দিছে। ওহ গড ব্যাঙের মতো না আমার পেটটাও ফেটে যায়।
উনার কথা শুনা মাত্র আমি হেসে দিলাম। উনি আধ শোয়া হয়ে বসলেন। আমার এক হাত ধরে টেনে উনার কাছে নিয়ে আসলেন। আমার কোমড় চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলেন,

আমার ওপর কী জাদু করেছো বলো তো? তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারি না। সবকিছু ফাঁকা লাগে।
আমার কী হলো আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না। হুট করেই উনাকে প্রশ্ন করে বসলাম।
আপনি আমাকে ভালোবাসেন?
এই প্রশ্ন করাটা অনেকটা বাচ্চামো হয়ে গেলো। যেখানে উত্তরটা জানা সেখানে প্রশ্ন করাটা বৃথা। উনার উত্তরটা যে নেগেটিভ হবে সেটা তো আমি জানি।

ভালোবাসি কি না জানি না। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার কিছু ভালো লাগে না। তোমাকে আগে সহ্য করতে পারতাম না আর এখন তোমাকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসে না। তুমি আমার বদ অভ্যাস হয়ে গেছো। প্রিয় বদ অভ্যাস যেটা ছাড়া এক মুহূর্ত আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না। তুমি আমার অস্তিত্বে মিশে গেছো। তুমিহীনা এই আমি প্রাণহীন। বেঁচে থাকার জন্য আমার তোমাকে প্রয়োজন। নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য তোমাকে প্রয়োজন। কোনোদিন তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে গেলো জানবে এই হার্টের ড. এর হার্টটাও তুমি নিয়ে যাবে। যেদিন তুমি থাকবে না যেনো রেখো এই রুদ নামক ব্যক্তিটাও আর থাকবে না।
উনার মোহনীয় কন্ঠে আমি একটা ঘোরের মাঝে চলে গেলাম। নিজে থেকেই আমি উনার আরেকটু কাছে চলে গেলাম। উনার বুকের মাঝে মাথা রাখলাম। উনি আমার মাথায় শব্দ করে চুমু খেলেন। আবেশে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। উনি আমাকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে পড়লেন।

সকাল থেকে আম্মু ভীষণ ব্যস্ত উনি খাবেন আর কী না খাবেন এটা নিয়ে। অলরেডী দুই বার ব্রেকফাস্ট করা হয়ে গেছে রুদ্রর। উনি আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে কেলিয়ে হাসছি। আমাকে খাবার নিয়ে জোড় করা। জোড় করে মুখে খাবার ঠুসে দেওয়া। দেখুন এখন কেমন লাগে। আম্মু একেকটা রেসিপি রান্না করছে আর রুদ্রকে খাইয়ে যাচ্ছে।
আব্বু অলরেডি বাজারে চলে গেছে। রুদ্র হসপিটালে যেতে চেয়েছিল কিন্তু আম্মু সাফ সাফ না করে দিয়েছে এখন কোথাও যাওয়া চলবে না। আব্বুকেও অফিসে যেতে দেয়নি। ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে এসে সোফায় বসল। ভাইয়াকে দেখেই রুদ্র বলে ওঠে,

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৩৯

তোমার নাকে কী হয়েছে? গতকাল থেকে লক্ষ্য করছি নাকটা কেমন যেনো লাগছে।
কি আর হবে তোমার এই দজ্জাল বউ ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে দিয়েছে। ভাই এই মাইয়ারে কেমনে সহ্য করো। মাইয়া মানুষ মানেই প্যারা। একে দেখে আমার বিয়ে করার সখ মিটে গেছে। সারাজীবন আবিয়াত্তা থাকবো তবুও কোনো মেয়েকে বিয়ে করবো না।
তোমাকে কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে হবে না। এক কাজ করো তুমি একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলো।
কথাটা বলেই আমি ভাইয়ার দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকাই। ভাইয়া মুখ কালো করে সোফায় বসে রয়েছে। ভাইয়া হয়তো ভুলে গিয়েছিলো আমার সামনে বেফাস কথা বলা মানেই ফেসে যাওয়া। ভাইয়া মুখ কালো করেই বলে,
তোর মতো মীর জাফর আমি জীবনে দেখি নাই।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪১