পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৫

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৫
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

ড্রয়িংরুমে আসতেই আমি চমকে ওঠি। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে বিহান। আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে একটা প্রশ্নই বিহান এখানে কী করছে?
এখানে কী করছো?
আমি চমকে পিছনে তাকাই। আমার ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র ভাইয়া মানে রুদ্র। রুদ্রের কথা শুনে বিহানও এদিকে তাকায়।

আব মানে।
এখানে এভাবে না দাঁড়িয়ে থেকে ডাইনিং রুমে যাও। আরে মি. বিহান যে। তা কী মনে করে আমার মতো একটা সামান্য ডক্টরের বাড়িতে।
আপনার পায়ের ধুলো আমাদের বাসায় পড়লো আমি তো ধন্য হয়ে গেলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বিহান রুদ্রের কথা পাত্তা না দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, রিয়া তুমি এখানে? ডক্টর রুদ্রের বাসায় তুমি কী করছো?
বিহানের সাথে রুদ্রের আগে দেখা হয়নি। মামুনির সাথে বিহানের পরিচয় হলেও রুদ্রের সাথে হয়নি। রুদ্র আমার বিয়ের কোনো অনুষ্ঠানই ছিল না। আমি কী বলবো বুঝতে পারছি না। আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাব। তার আগেই রুদ্র থমথমে গলায় বলে,

আপনি ঐদিকে নজর না দিয়ে এদিকে দিন। রিয়া এখানে কী করছে? সেটা আপনাকে না জানলেও চলবে। রিয়া তুমি ডাইনিং রুমে যাও।
রুদ্রের চোখে আমি স্পষ্ট রাগের আবাশ পাচ্ছি। তাই কোনো কথা না বাড়িয়ে সেই স্থান ত্যাগ করি। আমি সোজা কিচেনে যাই। কিচেনে মামুনি কাজ করছিল। আমি মামুনিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলি,
কী রান্না করছো মামুনি?

তুই আমাকে মামুনি ডাকছিস কেনো?
প্লিজ মামুনি তুমি আমাকে এখন তোমাকে আম্মু ডাকার কথা বলো না। সবাই তোমাকে খালামনি ডাকলেও আমি কিন্তু ছোটবেলা থেকেই তোমাকে মামুনি ডেকে আসছি। আমি আম্মু টাম্মু বলতে পারবো না। আমি তোমাকে সারাজীবন মামুনি বলেই ডাকবো।

পাগলি একটা। ডাইনিং টেবিলে বস আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। আজকে তোর ফেবারিট বিরিয়ানি রান্না করছি।
তুমি সকাল সকাল ব্রেকফাস্টে বিরিয়ানি রান্না করছো শুনলে তোমার ছেলে বাসা মাথায় করে ফেলবে। তোমার ছেলে তো হেলথ নিয়ে এক ঢোক জল বেশি খায়। সকালে এই অয়লি ফুড জীবনেও তোমার ছেলে খাবে না। বরং একশ একটা ঙ্গানের বাণী শুনিয়ে দিবে।

ও ওর প্রিয় খাবার খাবে আমাদের প্রিয় খাবার আমরা খাব। ওর প্রিয় ঘাস টাস রান্না করে রেখে দিয়েছি। আমি গরম গরম বিরিয়ানি এক প্লেট নিয়ে ডাইনিং রুমে বসে পড়লাম। এক চামচ বিরিয়ানি মুখে দিতে যাব তখনি বিহানের একটা কথা আমার কানে আসে।
প্লিজ ডক্টর রুদ্র আপনি আমার বাবার অপারেশনটা করে দেন।

আমার মতো একটা সাধারণ ডক্টর দিয়ে আপনি আপনার বাবার চিকিৎসা করাবেন? আপনি না বলেছিলেন আমার থেকেও বড় ডক্টর দিয়ে আপনার বাবার চিকিৎসা করাবেন।
সেদিন আমি ভুল করেছিলাম তার জন্য ক্ষমা চাইছি। আপনি আমার বাবার অপারেশন করাতে রাজি নন শুনে অন্য কোনো ডক্টর আমার বাবার অপারেশন করাতে রাজি হচ্ছে না।
তো আমি কী করবো?

প্লিজ আপনি রাজি হয়ে যান অপারেশন করানোর জন্য। নাহলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আপনি যত টাকা চান ততই দিব।
আমাকে টাকা দেখাতে আসবেন নাহ। আপনাকে কিনে নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার আছে। হার্টলেস মানুষের আমি হার্টের অপারেশন কী করে করবো? এতগুলো মানুষের সামনে বিনা কারণে নিজের ছেলের দ্বারা একটা মেয়েকে অপমানিত হতে দেখেও যে লোক চুপ করে থাকে, আমার মনে হয় না সেই লোকের হার্ট আছে। আপনি এখন আসতে পারেন।

আমি খাচ্ছিলাম আর মামুনি সাথে কথা বলছিলাম। আমার দৃষ্টি স্থির হয় রুদ্রের দিকে। রুদ্র আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। উনি কেনো রেগে আছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমি ভয়ে ভয়ে চোখ নামিয়ে ফেললাম। আমার আর খাওয়া হলো না। কেউ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে আমি খেতে পারি না। পেট ভরে গেছে বলে রুমে চলে এলাম। কী ভয়ানক চাহনি। বুকে হাতে দিয়ে লম্বা শ্বাস নিলাম।

যেটা পড়তে পারো না, সেটা পড়ো কেনো?
আমি চমকে পিছনে তাকাই। আমি ভ্রু কুচকে বলি,
মানে?
আজকের পর থেকে তোমাকে যেনো আর শাড়ী পড়তে না দেখি।

আপনি বললেই হলে নাকি। আমি আপনার ইচ্ছে মতো একদম চলবো না। আমি আমার মতো করে চলাফেরা করবো। আপনি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানেন না। সেহেতু আমার ওপর কোনো বিষয় নিয়ে জোড় করার অধিকার আপনার নেই। আপনি আপনার মতো থাকবেন আমি আমার মতো থাকব। আপনি আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করবেন না, আমি আপনার লাইফে ইন্টারফেয়ার করবো না।

তোমার ফর্সা পেটে যে একটা তিল আছে সেটা সবাইকে দেখাতে হবে।
আমি চমকে নিজের দিকে তাকাই। পেটের কাছ থেকে শাড়িটা সরে যাওয়ায় পেটের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। আমি আঁচল দিয়ে পেট ডেকে ফেললাম। উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।

রুদ্র ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আমি উনার সামনে দাঁড়িয়ে বলি,
আমি তো আপনাকে ভদ্র ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি তো দুনিয়ার অসভ্য। আপনার নজর ভালো না। আপনি মেয়েদের পেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছিঃ
এখানে ছিঃ বলার কী আছে? দেখার জিনিস দেখবো না। তুমি দেখাইবা আর আমি দেখবো না।
আমি চোখ রাঙিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বলি, আপনি………

হুশশ। একদম আমার সাথে চিৎকার করে কথা বলবে না। আমি বলেছি তাই দোষ। আর বিহান যে হা করে তাকিয়ে ছিল। জানো তখন আমার কী ইচ্ছে হচ্ছিল? ঐ বিহানকে যাস্ট খুন করে ফেলতে। আর তোমাকে একটা থাপ্পড় মেরে বোঝায় শাড়ী কেমন করে পড়তে হয়। আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না। তাই তুমি বেঁচে গেলে। আই সয়্যার আরেকদিন যদি তোমাকে এভাবে শাড়ী পড়তে দেখি আমি যাস্ট তোমাকে খুন করে ফেলবো। প্রোপারলি যেদিন শাড়ি পড়তে পারবে সেদিন থেকে শাড়ি পড়বে।

আমি যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে শাড়ি পড়বো আপনার কী? ইচ্ছে হলে আমি বলিউডের নায়কাদের মতো করে শাড়ি পড়বো তাতে আপনার কী? আপনার এতো জ্বলে কেনো?
উনি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকান। পরে কোনো বাক্য ব্যয় না করে সোজা রুম থেকে বের হয়ে যান। উনি রুম থেকে বের হয়ে যেতেই আমি লজ্জায় মিইয়ে গেলাম। আমি এতক্ষণ ধরে সবার সামনে এভাবে ছিলাম। ভাগ্য ভালো আংকেল বাসায় ছিল না। নাহলে লজ্জায় মাথা কাটা যেতো। বিহানের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ঐ লুচ্চাটার মাথা ফাটিয়ে দিতে।

রাত ১২ টা বেজে ৩০ মিনিট এখনো রুদ্র বাসায় ফেরেনি। মামুনি আর আংকেল সোফায় বসে আছেন। আমি রুমে পায়চারি করছি। রুদ্র কখনোই এতো দেরি করে বাসায় ফিরেন নাহ।
বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। তাই সবার টেনশনটা একটু বেশিই হচ্ছে। এদিকে রুদ্র ফোনও বন্ধ। হিম শীতল বাতাস বার বার শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে। ঠান্ডা বাতাসে বার বার কেঁপে ওঠছি। বাসার নিচে সিএনজি থামার শব্দ শুনে দৌড়ে বেলকনিতে যায়। একটা লোক সিএনজি থেকে নামল। অন্ধকারের জন্য লোকটাকে দেখা যাচ্ছে না। তবে লোকটার অবয়ব বোঝা যাচ্ছে। এটা রুদ্র। কিন্তু রুদ্র গাড়ি রেখে সিএনজি দিয়ে কেনো আসবে?

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৪

লোকটা বাসার ভিতর প্রবেশ করলো। আমি দৌড়ে ডয়িংরুমে গেলাম। ঠিক তখনি কলিংবেল বেজে ওঠলো। আমি দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। দরজার সামনে ভিজে অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৬