প্যারাময় লাভ পর্ব ৩১+৩২+৩৩

প্যারাময় লাভ পর্ব ৩১+৩২+৩৩
written Nurzahan akter Allo

রোদ মুচকি হেসে একজনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো!মুগ্ধও মুচকি হেসে একজনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো! রাসেলও দুষ্টু হেসে একজনের পাশে গিয়ে দাড়ালো।তারপর সুমি যে যার বউয়ের ঘোমটা তুলতে বললো।তারপর কাঁপা কাপা হাতে যে যার বউয়ের ঘোপটা তুলতেই রোদ,মুগ্ধ, রাসেল তিনজনেই এক সাথে চিৎকার করে উঠলো…..

রোদ, মুগ্ধ, আর রাসেল তাদের বউদের তারা চিনতে পারেনি।রোদ মিষ্টুর ঘোমটা তুলছে,রাসেল তুলছে রুহির আর আলোর ঘোপটা তুলছে মুগ্ধ। বউদের ঘোপটা তুলে তিনজনেই কয়েকটা পা পিছিয়ে যায়।মুগ্ধদের মুখের অবস্থা দেখে উপস্থিত সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে!মুগ্ধ, রোদ আর রাসেল খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে শনি গ্রহ এখন ওদের মাথার উপর এসে নাচানাচি শুরু করছে।আলো,রুহি,মিষ্টু তিনজনেই রাগি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে…

কোথা থেকে মেঘ এসে আলো,মিষ্টু আর রুহির দিকে তিনটা কাঠালের ডাল এগিয়ে দিলো আর বললো…
মেঘঃ ভাইয়ারা তাদের বউকেই চিনতে পারেনি!তাই তোমরা এই ডাল দিয়ে ওদের মারো!
আলোঃ একদম ঠিক বলছো মেঘ???(রাগী চোখে)
মিষ্টঃ হুলো বিড়াল তুমি বাইরে মেয়ের দিকে কুটুরকুটুর করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এখন নিজের বউকেই চিনতে পারছো না। (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃ পুরুষ মানুষের ছুকছুকানির স্বভাব থাকে এটা আজকে বুঝে গেলাম।আর অঙ্কটা আজকে
left= Right (প্রমানিত) হয়ে গেল।
মেঘঃ দাড়াও বউমনি!এরা যাতে পালাতে না পারে তাই আমি দড়ি নিয়ে আসছি।দাভাই প্রতিদিন কান টানো আমার। আজকে আমিও সব শোধ নিবো (রোদকে উদেশ্য করে)

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারপর আলো যুক্তি দেখায় রোদ,মুগ্ধ, রাসেল যদি আলোদের তিনজন ৩০ হাজার টাকা দেয় তো মাফ করবে।আর তা না হলে ধুমাইয়া মারতে শুরু করবে।রোদ রা আলোদের কথা মেনে নিলো আর টাকাও দিলো।রাসেল এবার ওদের জুতা দিয়ে দিতে বললো।মিষ্টুরা শুনে না শোনার ভান করে দাড়িয়ে রইলো!এবার রুহি বললো আরো দশ হাজার করে টাকা না দিলে ওরা জুতা পাবে না।
রোদঃ একবার তো দিলাম!তাহলে আবার কিসের টাকা??
আলোঃ টাকা দাও! জুতা নাও!
রাসেলঃ মগের মুল্লুক নাকি??
মিষ্টুঃ না কিসের মুল্লুক বাসায় গিয়ে বোঝাবো??টাকা দিবে নাকি অন্য কিছুর ব্যবসথা করবো?
রুহিঃ কি গো ঝনটুর বাপ তোমাকে কি আলাদা করে টাকা দেওয়ার কথা বলতে হবে??(মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে)
মুগ্ধঃ আমি বাসায় গিয়ে দিয়ে দিবো।আমি তো ক্যাশ টাকা আনিনি..
রুহিঃবাকির নাম ফাঁকি…
রোদঃআলোমনি আমার কাছেও আর ক্যাশ নেই!আমার কার্ড আছে।…
রাসেলঃ সেইম কাহিনী আমারও…

তারপর আলোও দুষ্টু হেসে রোদের কার্ড নিলো,রাসেলের কার্ড মিষ্টু নিলো,আর মুগ্ধর কার্ড নিলো রুহি!রোদ এবার ওদের জুতা দিতে বললো??কারন মাগরিবের আজান দিয়ে দিয়েছে!মুগ্ধদের বাসায় যেতে হবে!আলো,রুহি,মিষ্টু তিনজন তিনজনের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসে!তারপর ওরা ওদের শাড়িটা পা দিক থেকে একটু উপরে তুলে।রোদ, মুগ্ধ, রাসেল চোখ বড় বড় ওদের বউদের পায়ের দিকে তাকিয়ে আছে!কারন রোদের জুতা আলো,রাসেলেরটা মিষ্টু আর মুগ্ধর টা রুহির পায়ে আছে।আলোরা যে যার বরের পাশে দাঁড়ালো তারপর দুষ্টু হেসে তাদের বরদের পায়ে জোরে পাড়া দিলো!রোদ,মুগ্ধ, রাসেল তিনজন পা ধরে লাফাচ্ছে। এটাই ওদের আপাতত শাস্তি!বাসায় গিয়ে আরেক দফা শাস্তি পাবে! তারপর রুহিরা মুগ্ধদের জুতা দিয়ে দিলো!

রুহিরা মুগ্ধদের জুতা দিয়ে নিজের জুতা পড়তে গিয়ে দেখে ওদের জুতা নাই!আলো, রুহি আর মিষ্টুকে খোঁজাখুঁজি করতে দেখে রোদরা জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে?আলো বললো এবার আলোদের জুতা খুঁজে পাচ্ছে না।তখন মেঘ ওদের সামনে এসে বললো…
মেঘঃ বউমনি তোমরা জুতা খুজে পাবে না!কারন আমি তোমাদের জুতা লুকিয়ে রাখছি!!!!
রুহিঃ তুই লেংটি ইঁদুর তুই না আমাদের দল!তাহলে আমাদের জুতা লুকালি কেন??
মেঘঃ তোমরা তোমাদের ভাগ থেকে আমাকেও টাকা দাও! তাহলে তোমাদের জুতা দিবো।
রোদঃহা হা হা! একেই বলে চোরের উপর বাটপারি..বাহ্ দারুণ তো।
রাসেলঃ হা হা হা! জিও জুনিয়র বস
মুগ্ধঃ হা হা হা!বাহ্ মেঘ বাবু কামাল করে দিলে…

তারপর আলোরা মেঘকে ভুজুংভাজুং দেওয়া শুরু করলো!যাতে এক হাজার টাকা করে দিয়ে মেঘকে বোঝানো যায়।বাট মেঘকে পটানো এত সোজা না।মেঘ তিন জনের থেকে পাঁচ হাজার করে নিলো! তারপর পনের হাজার টাকা নিয়ে বিশ্বজয় করা হাসি দিলো আর আলোদের জুতা আলোদের দিলো।মুগ্ধ রুহি দুজনেই পাশাপাশি বসতেই রোদ আর আলো গিয়ে একটা রুহি হাতে নেকলেসের বক্স দিলো আর রাসেল আর মিষ্টু রুহির আর মুগ্ধর হাতে কাপল রিং উপহার দিলো।এবার রুহিকে বিদায় দেওয়ার!রুহি তো ভ্য ভ্য করে কাঁদছে! রুহি ছোট বাচ্চাদের মত কাঁদছে তো কাঁদছেই থামার কোন নাম নেই!রুহির বাপি মুগ্ধর হাতে উপর হাত রেখে বললো..

রুহির বাপিঃ মুগ্ধ বাবা আম
মুগ্ধঃ মেজবাবা আপনি একদম চিন্তা করবেন না!আমি শেষ নিঃশ্বাস অবধি রুহি আগলে রাখার চেষ্টা করবো।আপনি চিন্তা করবেন না।

রুহি কান্না শব্দ আর কিছু বলতেও পারলো না কেউ!তারপর রুহি সবার থেকে বিদায় নিচেছ জড়িয়ে ধরে।রুহির ওর বাপি,আম্মু আরো অনেক কে ধরে কান্না করছে!মুগ্ধ দাঁতে দাঁত চেপে দাড়িয়ে আছে।রুহি একে একে সবাইকে ধরে কান্না করতে করতে মুগ্ধ কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো।মুগ্ধ অবাকের চরম শিখায় পৌঁছে অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে!ওইদিকে আলো,মিষ্টু, মেঘ মেঘতে বসে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে! রোদ আর রাসেল এদিক ওদিক তাকিয়ে ওদের হাসি লুকানোর চেষ্টা করছে।রোদ আর রাসেল হাসতেও পারছে না আবার হাসি চাপিয়েও রাখতে পারছে না।

রুহিঃভ ভ ভা ভাইয়া আ আম আমি চলে যাচ্ছি!(মুগ্ধর গলা জড়িয়ে ধরে)

রুহির এমন কান্ড করাতে মুগ্ধ আর কিছু না বলে রুহিকে কোলে নিয়ে ওর বাসার দিকে হাঁটা ধরলো!কারন কাঁদতে কাঁদতে যে রুহির মাথার ব্রেক ফেল হয়ে গেছে সেটা ওর এসব কান্ড দেখেই বোঝা যাচ্ছে। মুগ্ধ রুহির বাবা মা কে বলো মুগ্ধ রুহিকে নিয়ে চলে গেল।মুগ্ধ যাওয়ার পর রুহির বাপি সহ সবাই হেসে দেয়।তারপর বেশ কিছুক্ষণ পর রোদরা মুগ্ধদের বাসায় গেল!রুহি তখন মুগ্ধদের ড্রয়িংর সোফাতে বসে ফোপাচ্ছিলো!আর মুগ্ধ রাগি চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো…

আলোঃ বোকা মেয়ে আর কাঁদে না!কেন কাঁদছো তুমি?জানো তো রুহি অনেক ভাগ্যবান হলে তারপর ভালবাসার মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য পাওয়া যায়!তুমি কত ভাগ্যবান তুমি মুগ্ধ ভাইয়ার মত একজনকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছো।শুকরিয়া করো বোকা মেয়ে!শুভ দিনে কাঁদতে নেই… (রুহির চোখ মুছে দিয়ে)
রুহিঃ…..
মিষ্টুঃতোমাদের জন্য সব সময় আমাদের দোয়া রইল রুহি!সারাজীবন একসাথে দুজন দুজনের পাশে থাকবে!তবে সব পরিস্থিতিতে একটা কথা রাখবে…
সম্পক ভাঙ্গ যতটা সহজ!সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ততটাই কঠিন।দুজন দুজনকে বোঝার চেষ্টা করো আর অনেক ভালো থাকো,সুখে থাকো…
রুহিঃ…..
রোদঃরুহি- মুগ্ধ আমাদের জীবনটা বড্ড অদ্ভুত।আর সব সময় পরিস্থিতি এক থাকে না! তাই তোমরা দুজন দুজনাকে সব সময় বোঝার চেষ্টা করবে!একে অপরের আত্মা হয়ে উঠবে!আর রুহি আমরা ছেলেরা ভালবাসার কথা সাজিয়ে গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারি না!তার মানে এই না যে আমরা ভালবাসি না বা ভালবাসতে পারিনা!আর মুখে বার বার ভালবাসি বলে যদি ভালবাসা বোঝাতে হয় তাহলে এটা কেমন ভালবাসা!ভালবাসা মুখ না থেকে মন থেকে ফিল করতে হয়।আর দোয়া করি রুহি- মুগ্ধ তোমরা অনেক ভাল থাকো…(মুচকি হেসে)
রাসেলঃরোদ ভাই সব বলে দিসে! আমি আর কি বলবো?আমি শুধু এতটুকু বলবো তোমরা এখন পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ।আর পবিএ ভালবাসাটা নিয়ে সারাজীবন একসাথে পথ চলতে পারো এই দোয়ায় করি।

আলোঃআজকে তাহলে আমরা আসি!আপনাদের জন্য অনেক অনেক ভালবাসা ও দোয়া রইলো..
মুগ্ধঃ আজকে থেকে গেলে হয় না!প্লিজ
রোদঃ না ভাইয়া আমাদের আর জোর করো না।কারন লেখিকা আমাদের এই টুকু সময় থাকারই পারমিশন দিয়েছে।আবার দেখা হবে কোন এক সময় আর কোন এক গল্প…
রুহিঃ রাসেল আর রোদ ভাইয়া আপনারা থেকে যান না!আপনাদের সাথে সময় কাটাতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
রাসেলঃযেতে মন নাহি চাই তবুও যেতে হবে! তোমাদের সাথে আবার দেখা হবে ইনশাল্লাহ…
মিষ্টুঃ রুহি তারাতারি জুনিয়র রুহি আনতে হবে! তাহলে আমরা আবার মিষ্টি খেতে আসতে পারবো…
রুহিঃ সত্যি আসবে তো!!!!!(অনেক খুশি হয়ে)
আলোঃ হুমমম অবশ্যই আসবো..
রুহিঃ তাহলে আজকে থেকে মিশন শুরু করবো।যত তারাতারি জুনিয়ার দের আনা যায়…
আলো আর মিষ্টুঃ হা হা হা! আচ্ছা
রোদঃ উহুম!উহুম তাহলে আমরা আজ আসি কেমন…
মেঘঃ তোমরা সবাই কত কি বললে!বাট আমি এখন কি বলবো???বউমনি আমি এখন কি বলবো???(আলোর দিকে তাকিয়ে)
আলোঃওহহ তাই তো!তুমি মুগ্ধ আর রুহির গলা জড়িয়ে ধরে হামি দাও আর বলো যাতে তারা অনেক ভালো থাকে।
মেঘঃ এতটুকুই শুধু বলবো..!!আর কিছু বলো!!
আলোঃবলো ভালো থাকতে বেশি টাকার প্রয়োজন নেই!মনে থেকে ভালবাসাটাই যথেষ্ট…
মেঘঃ মুগ্ধ ভাইয়া বউ শোন একটা কথা!ভালবাসতে বেশি টাকা লাগে না মনে থেকে ভালবাসাটাই যথেষ্ট! তাই বলছিলাম কি…
মুগ্ধঃ তা বলছিলেন শুনি??
মেঘঃ তোমাদের তো তাহলে টাকা দরকার নাই তাহলে সব টাকা আমাকে দিয়ে দাও।
উপস্থিতি সবাইঃ হা হা হা হা
তারপর রোদ,আলো,মিষ্টু, রাসেল মুগ্ধ আর রুহিকে সাথে আর কিছুক্ষন কথা কথা বলে বিদায় নিলো!….

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_32

তারপর রোদ,আলো,মিষ্টু, রাসেল মুগ্ধ আর রুহিকে সাথে আর কিছুক্ষন কথা কথা বলে বিদায় নিলো!

মুগ্ধ রোদদের এগিয়ে দিয়ে গটগট করতে করতে ওর রুমে চলে গেল!তারপর ওর ড্রেস বদলে নিলো।মুগ্ধ রাগে ফোঁস ফোঁস করছে কারন রুহির এরকম লাগাম ছাড়া মুগ্ধকে বার বার সবার সামনে লজ্জাতে ফেলে।রুহি ওখানকারই স্থানীয় মেয়ে তারপরেও রুহিকে দেখার জন্য অনেকে ভিড় করছে!এভাবে বেশ কিছুক্ষন থাকার পরে রুহি মুখ তুলে আশে পাশে মুগ্ধকে খুঁজলো! বাট রুহি মুগ্ধকে কোথাও দেখতে পেলো না।রাত ১২ঃ৩০ টার দিকে মুগ্ধ ড্রয়িং রুমে এসে সোফাতে বসলো।রুহি একবার তাকালো!মৌমি রুহিকে মুগ্ধর রুমে গিয়ে রেখে আসলো আর ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো।তারপর মৌমি নিচে গিয়ে একটা ট্রে তে মুগ্ধ আর রুহির খাবার ধরিয়ে দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো।

মুগ্ধ রুমে এসে দেখে রুহি রুমে নেই!রুহি একে বারে সাওয়ার নিয়ে তারপর বের হয়!একটা লাল কালার থ্রীপিস পড়ছে!চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।রুহি ওয়াশরুমে দরজা খুলে রুমে আসতেই পা পিছলে ধপাস করে পড়ে গেল!মুগ্ধ তখন সোফায় বসে ফোন টিপছিলো!মুগ্ধ রুহির দিকে একবার তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে মনোযোগী হলো।
রুহি একা একাই উঠলো।মুগ্ধ রুহিকে সোফাতে এসে বসতে বললো!মুগ্ধর কথামত রুহি সোফাতে গিয়ে বসলো!মুগ্ধ রুহিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজেও খেয়ে নিলো।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মুগ্ধ এটো প্লেট গুলো নিচে রাখতে গেল! আর রুহিকে বললো বেডের উপর থেকে ফুলের পাপড়ি গুলো সরাতে।

মুগ্ধর রুম সাজানো নেই!শুধু বেডের উপর গোলাপের ফুলের পাপড়ি পড়ে আছে!এজন্য রুহি মুগ্ধর গুষ্ঠী উদ্ধার করতে শুরু করলো!মুগ্ধ রুমে এসে দেখে রুহি খাম্বার মত এখনো দাড়িয়ে আছে!মুগ্ধ দরজা আটকে রুহির দিকে এগোতেই! রুহি যে ফুল না সরিয়ে দাড়িয়ে আছে এটা ওর হুশ হতেই রুহি মুগ্ধকে দেখে দৌড়ে বেডের উপর উঠতেই হুড়মুড় করে খাট ভেঙ্গে নিচে পড়ে গেল।মুগ্ধ আবুলের মত বোঝার চেষ্টা করছে এটা কি হলো?রুহি খাট থেকে পড়ার সাথে সাথে চিৎকুর দিয়ে উঠলো! ওর চিৎকার শুনে বাসার সবাই এসে মুগ্ধ দরজা নক নক শুরু করলো…

মুগ্ধ দরজা খুলে দিতেই সবাই হুড়মুড় করে রুমের মধ্যে ঢুকে পড়লো!মৌমি গিয়ে রুহিকে টেনে তুলতে পারছে না!তাই মুগ্ধ গিয়ে রুহিকে টেনে তুললো।মুগ্ধ লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে! কারন ওর বাবা মায়ের সামনে এভাবে লজ্জায় পড়তে হবে! এটা ওরা ভাবে নি।মুগ্ধর বাবা মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে…
মুগ্ধর বাবাঃ আহাম্মক একটা!…(বলে চলে গেল)
মুগ্ধর আম্মুঃকি রে খাট ভাংলো কি করে??
মুগ্ধর বাবাঃ মুগ্ধর আম্মু রুমে এসো!!!(বাইরে থেকেই)
মৌমির হাজবেন্ড(সবুজ)ঃবাহ্ আমার শালা বাবু এত তাড়া।যে সত্যি সত্যি খাটই ভেঙ্গে ফেলছে।শালাবাবু ছোট একটা মেয়ের উপর একদিনেই এত অত্যারচার করাটাই কিন্তু মোটেও ঠিক না! হা হা
মৌমিঃ আমার ঘুম পাচ্ছে আমি গেলাম।(কথাটা বলে চলে গেল)
সবুজঃ হা হা হা! শালাবাবু তুমি সত্যি রেকর্ড করে দিলো!তোমার মত হাজবেন্ড ঘরে ঘরে হোক
মুগ্ধঃ ভাইয়া প্লিজ! ফাজলামি বাদ দেন।আর এসব কে করলো তাই বলেন।(বিরক্তের সুরে)
সবুজঃ আমি তো জানিনা…
রাহাতঃ এসব আবির করছে (দরজার কাছে দাড়িয়ে)
মুগ্ধঃ ওই হারামিটা কই আগে তাই বল!আজকে ওকে মেরে! আমি উল্টো করে ঝুলাবো।(দাঁতে দাঁত চেপে)
আরিয়ানঃ আমাদের রেখে আবির পালিয়েছে।
সবুজঃ আচ্ছা এসব এখন বাদ দাও!আপাতত পাশের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো কেমন।এখন অনেক রাত হয়ে গেছে।

সবুজ রা সবাই চলে গেল!মুগ্ধ রুহির কাছে যেতেই দেখলো রুহি মাথা নিচু করে বসে আছে।মুগ্ধ রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে তারপর পাশের রুমের দিকে হাটা ধরলো।রুহি মুগ্ধর বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো!কারণ রুহি সত্যি খুব ভয় পেয়েছে।মুগ্ধ আর কিছু বললো না!ওরা পাশের রুমে ঢুকতেই দেখে রুমটা অনেক সুন্দর করে লাল গোলাপ,রজনীগন্ধা আর লাল অর্কিড ফুল দিয়ে সাজানো!বেডের উপর মুগ্ধ আর রুহির নাম লিখা!পুরো রুমে ক্যান্ডেল আর বেলুন দিয়ে সাজানো।মুগ্ধ আবিরকে এই এভাবেই রুম সাজাতে বলেছিলো বাট মুগ্ধ যখন এসে দেখলো রুম সাজানো নেই তখন ওর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছিলো! বাট এমন সারপ্রাইজ পাবে মুগ্ধও আশা করে নি।মুগ্ধ আর বুঝতে বাকি নেই আবির ইচ্ছে করছে যাতে রুহি ইচ্ছেও পূরণ হয় আর ওদের আজকের মত পবিএ রাতটাও নিয়ে যাতে কারো মনে আফসোস না থাকে।আর এজন্য প্রতিটা মানুষের জীবনে এইরকম হারামি বন্ধু থাকা দরকার!

রুহি খাট ভেঙে পড়ে গিয়েও ব্যাথা পাইনি কারন মেঝেতে তোষক বিছানো ছিলো।রুম টা এত সুন্দর করে সাজানো দেখে রুহি মুগ্ধর কোল থেকে নেমে রুম টা ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে!রুহির ছলছল চোখের বদলে এখন রুহির মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠেছে।মুগ্ধও মুচকি হেসে রুহিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।রুহি কাঁপাকাপি শুরু করে দেয়!রুহি যে কাঁপতে শুরু করছে সেটা মুগ্ধও বুঝতে পারছে।মুগ্ধ রুহিকে ওর দিকে ঘুরালো তারপর দুই হাত রুহির গালে রাখলো!

মুগ্ধ রুহির চোখে চোখ রাখে!রুহি মুগ্ধর চোখের দিকে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়!কারন আজকে মুগ্ধ চোখে এক ধরনের নেশা কাজ করছে।রুহি পেছাতে থাকে আর মুগ্ধ এক পা একপা করে রুহির দিকে এগোতে আছে।রুহি একটা সময় ঠাস করে বেডে পড়ে যায়।মুগ্ধও মুচকি হেসে রুহির দুই হাত বেডের সাথে চেপে ধরে। মুগ্ধ ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি!রুহির আজকে কেন জানি মুগ্ধকে
খুব ভয় লাগছে!রুহির গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। মুগ্ধ রুহির ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে যাবে ঠিক তখনই রুহি ভ্য ভ্য করে কেঁদে দিলো।
মুগ্ধঃ কি হলো কাদছিস কেন??আমি কি তোকে মেরেছি??(আদুরে কন্ঠে)
রুহিঃ প্লিজ সরো! আমার কেমন জানি লাগছে।
মুগ্ধঃ কেমন লাগছে?(দুষ্টু হেসে)
রুহিঃ তোমাকে এখন আমার কেন জানি খুব ভয় লাগছে!!!!সরো প্লিজ
মুগ্ধঃ কেন আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে আমাকে
তোর ভয় লাগছে।আর এতদিন তো খুব বলতি আদর লাগবে তাহলে আজকে কেন ভয় লাগছে??
রুহিঃ প্লিজ সরো!আমার হাঁটু কাঁপছে আর কান গরম হয়ে যাচ্ছে। বুকের মধ্যে ঢড়াস ঢড়াস করছে।
মুগ্ধঃআমি আছি তো কাঁপাকাপি বন্ধ করে দিবো।
রুহিঃ পি….

মুগ্ধ মুচকি হেসে রুহির ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কান্না বন্ধ করে দিল…..
তারপর…… তারপর……..(বাকিটা ইতিহাস!আর ইতিহাস জানতে চেয়ে লজ্জা দিবেন না)

সকালে ৬ঃ৩০ টা..
রুহি মুগ্ধর বুকে মুখ গুজে শুয়ে আছে!আর মুগ্ধ পরম যত্নে রুহিকে জড়িয়ে ধরে আছে।মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে আছে! সকালে সোনালী রোদ এসে রুহির মুখে পড়ছে! আর নাকে নোজপিন টা চিকচিক করছে।মুগ্ধ মুচকি হেসে রুহির কপালে আদর দিয়ে দেয়।রুহিকে নড়তে দেখে মুগ্ধ সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করতে থাকে…

রুহি পিটপিট করে চোখ খুলে আর দেখে রুহি মুগ্ধর বাহুডোরে বন্দী!রাতের কথা মনে হতে রুহি লজ্জা লাল,নীল, বেগুনী হতে শুরু করে! রুহি মুচকি হেসে মুগ্ধর চুলে হাত বুলিয়ে দিলো,দাড়িতে আঁকিবুঁকি করলো,মুগ্ধর কপালে,গালে,রুহি ঠোঁট ছোয়ালো।তারপর হালকা করে রুহি মুগ্ধর থুতনীতে কামড় দিলো।যদিও কামড় আস্তে দিতে গিয়ে একটু জোরেই দিয়ে ফেলছে!মুগ্ধ সাথে সাথে চোখ খুলে..

মুগ্ধঃ আদর লাগবে এটা মুখে বললেই হয়!সকাল বেলা এমন ভাবে কামড়াকামড়ি করছিস কেন??(দুষ্টু হেসে)
রুহিঃ না মানে..ইয়ে আসলে
মুগ্ধঃতুই আসলেই একটা লুচু মেয়ে!যখনই দেখলি নিষ্পাপ একটা ছেলে ঘুমাচ্ছে তখনই…
রুহিঃ কে নিষ্পাপ??? (চোখ বড় বড় করে)
মুগ্ধঃ কে আবার আমি??(ভাব নিয়ে)
রুহিঃ ওহহ!মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
মুগ্ধঃনে শুরু কর..
রুহিঃ কি শুরু করবো?(ভ্রু কুচকে)
মুগ্ধঃ যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন তো কামড়াকামড়ি করছিলি!এখন জেগে আছি নে আবার সেই কাজ শুরু কর।দেখি তুই কত কামড়াতে পারিস…
রুহিঃ তুমি কি জানো!বিয়ের আগের তুমি কতটা ভদ্র ছিলে! বাট বিয়ের পর কতটা খাটাশ হয়ে গেছো।
মুগ্ধঃ শোন বিয়ের পর কোন ছেলেই ভদ্র থাকে না বুঝলি!আর যে ছেলে বিয়ের পরও ভদ্র থাকবে! তাকে আর বাবা ডাক আর শুনতে হবে না।আর বেশি ভদ্র হলে আরেকটা সমস্যা আছে??
রুহিঃকি সমস্যা শুনি??
মুগ্ধঃ বেশি ভদ্র হলে বউ থাকবেনা।পাখি অন্য ডালে গিয়ে বাসা বাঁধবে ..(দুষ্টু হেসে)
রুহিঃকেন বউ থাকবে না কেন??(ভ্রু কুচতে)
মুগ্ধঃসময় হোক সব বুঝে যাবি..

তারপর মুগ্ধ রুহিকে ওর ঠোঁটেদ দেখিয়ে ইশারা করে আদর দেওয়ার জন্য! রুহি মুগ্ধর বুকের উপর উঠে আর মুচকি হেসে মুগ্ধকে চোখ বন্ধ করতে বলে।মুগ্ধ রুহির কথামত চোখ বন্ধ করে।আর রুহি সুযোগ বুঝে দৌড় দেয় মুগ্ধ চোখ খুলে দেখে রুহি নেই!তারপর আর কি আপসোস করতে করতে মুগ্ধ আবার ঘুমিয়ে পড়ে…

রুহি দৌড় যাওয়ার সময় ইভার সাথে ধাক্কা লাগে আর দুজনেই পড়ে যায়!ইভার আম্মু এসে ইভাকে টেনে তোলে আর রুহির একা একা উঠে।ইভার আম্মু রুহিকে বলে…
ইভার আম্মুঃ চোখের মাথা খেয়েছো নাকি??এভাবে দৌড়ে আসছো কেন?
রুহিঃচোখের মাথা খেতে কেমন টেস্ট! আপনি যদি টেস্ট টা বলতেন,তাহলে আমিও খেয়ে দেখতাম।
ইভার আম্মুঃআমি জানবো কি করে??
রুহিঃ জানেন না তো খাওয়ার কথা বললেন কেন??
ইভার আম্মুঃ এই মেয়ে তোমার লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই নাকি!মুখে মুখে তর্ক করছো কেন??আর বড় কথা বিয়ের পরেরদিন নতুন বউ হয়ে এভাবে দৌড়ে বেড়াচ্ছো..
ইভাঃ ওর আবার লজ্জা! আম্মু তুমি এত ফানি কথা বলো না।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
ইভার আম্মুঃ ছিঃ!ছিঃ! কেমন বেহায়া মেয়ে।ফরজ গোসলও তো দাও নি দেখছি!আর এই ভাবেই রুম থেকে ড্যাং ড্যাং করতে বাইরে যাচ্ছো…
রুহিঃ ফরজ গোসল দিয়েছি কি না সেটা কি আপনাকে বলে দিতে হবে নাকি?আর আগে যদি জানতাম যে আমার ফরজ গোসল দেওয়া নিয়ে আপনার এত আগ্রহ তাহলে আপনাকে আমার ওয়াশরুমে নিয়ে যেতাম।তাহলে সরাসরি দেখে নিতেন!আফটার অল খালা শাশুড়ি আপনি আমার!আপনার ইচ্ছে কি আমি অপূর্ণ রাখতে পারি…
ইভার আম্মুঃ তুমি আসলেই বেহায়া,বেশরম একটা মেয়ে! (কথাটা বলে চলে গেল)
রুহিঃ ধন্যবাদ..
ইভাঃ সে আর বলতে!জানো তো রুহি আমার মনে হয় তুমি মুগ্ধকে শরীর দেখিয়ে পাগল করছে!আর তা না হলে মুগ্ধ মত ছেলে তোমাকে বিয়ে করবে কেন বলো??
রুহিঃ তুমিও বুঝি ছেলেদের শরীর দেখিয়ে বেড়াও।আর আমার মত এভাবেই বুঝি ছেলেদের পাগল করো তাই না।
ইভাঃ মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ…
রুহিঃ তুমি বললে দোষ নাই!আমি বললে ইংরেজি ঝাড়ছো।তোমার আর দোষ কিসের বলো! যে যেমন মন-মানসিকতা নিয়ে চলে! তার চিন্তা ধারা তো তেমনই হবে।
ইভাঃ মুগ্ধকে আমি ভালবাসি!আমি দেখবো কতদিন মুগ্ধকে আটকে রাখতে পারো।
রুহিঃহুমম অবশ্যই ট্রাই করে দেখো! এই ইভা জানো তো কালকে রাতে না মুগ্ধ আমাকে অনেক আদর করছে।(ইভাকে রাগানোর জন্য)
ইভাঃআমি মুগ্ধকে ছিনিয়ে নিবোই…
রুহিঃ ওকে!আপাতত তুমি যেহেতু এখন ওকে পাও নি! তাই তোমার জন্য দশ ড্রাম সমবেদনা। আর হ্যা কালকে রাতেই ফরজ গোসলটা দিয়েছিলাম এজন্য সকালে দেয় নি।কারন এসব লোক দেখানো কাজ আমার মোটেও পছন্দ না।রুমের ভেতরে কি করবো সেটা বাইরের লোকদের জানানো শোভনীয় না! তাই না…
(ফিসফিস করে)

তারপর রুহি দুষ্টু হাসি নিয়ে নিচে গেল!আর ইভা রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে গেল।রুহি নিচে মুগ্ধর আম্মুর সাথে দেখা করলো!তারপর রান্নাঘরে গিয়ে মুগ্ধর আম্মু সাথে গল্প জুড়ে দিলো!মুগ্ধর আম্মু রুহিকে খুব ভালোবাসে!মুগ্ধর আম্মু বললো…
মুগ্ধর আম্মুঃ এই রুহি মা যা তোর বাপি আর আম্মুর সাথে দেখা করে আয়..
ইভার আম্মুঃ কেন বড় আপা?রুহি এখন ওই বাড়িতে যাবে কেন??
মুগ্ধর আম্মুঃরুহির বাবার কলিজা রুহি!ওদের বাসাটা ফাঁকা হয়ে গেছে!আর আমার বাসায় রুহিকে এত নিয়ম কানুন মানতে হবে না! কারন আমি ছেলের বউ হিসেবে ওকে নিয়ে আসিনি।রুহিকে আমি বাসায় এনেছি আমার মেয়ে হিসেবে রাখবো তাই! আর আমার ছেলের প্রাণ ভোমরা রুহি!আমার ছেলে যেটাতে ভাল থাকবে আমি মা হয়ে আমার ছেলের ভালোটাই আমি আগে দেখবো।আর ওরা ভাল থাকলে আমরাও ভালো থাকবো…
ইভার আম্মুঃ আপা এত বার বাড়তে দিও না পরে দেখবে এর জন্য আপসোস না করতে হবে।
মুগ্ধর আম্মুঃএই রুহি এই খাবার গুলো তোর আম্মুকে দিবি !আর ওদের সাথে দেখা করেই চলে আসবি কেমন।(রুহি হাতে খাবারের বক্স ধরিয়ে দিয়ে)
রুহিঃ হুমমম

ইভার আম্মু মুগ্ধর আম্মুকে রুহির নামে হাজিবাজি বলছে!বাট মুগ্ধর আম্মু সেগুলো শুনেও না শোনার ভান করছে!আর এটা সেটা বলে কথা কাটিয়ে অন্য কথা বলতে শুরু করছে!রুহি ওদের বাসায় গিয়ে ওর বাপি আর আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো।রুহি ওর বাপি আর আম্মু সাথে কথা বলে নিজের রুমে গেল।রুহি আম্মু হুট করে এসে একটা নীল শাড়ি ধরিয়ে দিলো কারন বিয়ের পরের দিন থ্রীপিস পড়ে থাকাটা বেমানান লাগছে!রুহি প্রথমে রাজি হচ্ছিল না পরে ওর আম্মু ওকে বোঝানোর পর রুহি শাড়ি পড়তে রাজি হলো।রুহি তো শাড়ি পড়তে পারে না তাই রুহির আম্মু রুহিকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো….

#প্যারাময়_লাভ❤❤
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_33

ইভার আম্মু মুগ্ধর আম্মুকে রুহির নামে হাজিবাজি বলছে!বাট মুগ্ধর আম্মু সে কথা কাটিয়ে অন্য কথা বলতে শুরু করছে!রুহি ওদের বাসায় গিয়ে ওর বাপি আর আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো।রুহি ওর বাপি আর আম্মু সাথে কথা বলে নিজের রুমে গেল।রুহি আম্মু হুট করে এসে একটা নীল শাড়ি ধরিয়ে দিলো কারন বিয়ের পরের দিন থ্রীপিস পড়ে থাকাটা বেমানান লাগছে!রুহি প্রথমে রাজি হচ্ছিল না পরে ওর আম্মু ওকে বোঝানোর পর রুহি শাড়ি পড়তে রাজি হলো।
রুহি তো শাড়ি পড়তে পারে না তাই রুহির আম্মু রুহিকে শাড়ি পড়িয়ে দিলো….

তারপর রুহি শাড়ি পড়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে মুগ্ধর বাসার দিকে!রুহি মুগ্ধদের বাসায় ঢুকতেই আগে মুগ্ধর বাবার সাথে হয়…
মুগ্ধর বাবাঃ আরে রুহি মা তোকে তো একদম আমার মায়ের মত লাগছে…
রুহিঃ এত সুন্দর করে শাড়ি পড়লাম আর তুমি কিনা বলছো তোমার বুড়ি মায়ের মত লাগছে (গাল ফুলিয়ে)
মুগ্ধর আম্মুঃ তাই তো তুমি এসব বলছো কেন??
আমার রুহি মা তো দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে!
রুহিঃ সত্যি তো!!!
মুগ্ধর বাবাঃ হুমম একদম!অনেক সুন্দর লাগছে আমার মা টাকে…
মুগ্ধর আম্মুঃ রুহি মা মুগ্ধকে গ্রীণ ট্রি টা দিয়ে আয় মুগ্ধর রুমে! আর তারাতারি ফ্রেশ হয়ে দুইজনই নিচে ব্রেকফাস্ট করতে আয়..
রুহিঃ আচ্ছা!!!

রুহি মুগ্ধর রুমে গিয়ে দেখলো মুগ্ধ রুমে নেই!মুগ্ধ ওয়াশরুমে আছে। রুহি তারাতারি করে ওর মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়! আর হাতের কাপটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখে!তখনই মুগ্ধ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে!মুগ্ধ ভ্রু কুচকে সামনে দাড়িয়ে থাকা ঘোপটাওয়ালির দিকে তাকায় আর বলে..
মুগ্ধঃ কে আপনি??আর আমার রুমে কি চাই??
রুহিঃ…..
মুগ্ধঃ আমার রুমে আসার সাহস হলো কি করে?যাই হোক চলে যখন এসেছেন! তাহলে চলেন একটু রোমাঞ্চ শুরু করি।কারন আমার এখন খুব রোমাঞ্চ
করতে ইচ্ছে করছে।
রুহিঃ….

মুগ্ধ রুহিকে প্রথমেই চিনে ফেলছে আর মুগ্ধর রুমে হুট রুমে যে সে হুট করে ঢুকতে পারে না।মুগ্ধ দুষ্টু হেসে রুহিকে জড়িয়ে ধরে আর রুহির কাঁধে মুখ রেখে বলে…
মুগ্ধঃ সকাল সকালে এভাবে পাগল করা হচ্ছে!হুট করে শাড়ি পড়তে ইচ্ছে কেন আমার বউটার??
রুহিঃব ব ব
মুগ্ধঃ আরে আপনি তোতলাচেছন কেন?আমি চুপটি করে থাকুন প্লিজ! আর আমাকে আমার কাজ করতে দেন..
রুহিঃ….

এরপর মুগ্ধ রুহির ঘোপটা সরিয়ে ফেলে!তারপর আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে।আর এভাবে খুনশুটি চলতে থাকে ওদের মাঝে!তারপর দুইজন নিচে যায় ব্রেক ফাস্ট করতে!সবার সাথে রুহিও গিয়ে ডায়নিং টেবিলে বসে…
ইভার আম্মুঃএই মেয়ে তুমি এখন খেতে বসলে কেন?তুমি এখন খেতে বসলে আমাদের সার্ভ করবে কে??
রুহিঃ আচ্ছা আমি সার্ভ করে দিচ্ছি (উঠে দাড়িয়ে)
মুগ্ধঃ (মুগ্ধ রুহি উঠতে দেয় না!বরং রুহির হাত ধরে বসিয়ে দেয়)
ইভার আম্মুঃ মুগ্ধ এসব কেমন ধরনের অসভ্যতামী!আমাদের সামনে এভাবে বউয়ের হাত ধরে রাখছো!তোমার থেকে তো এসব আশা করি নি….
মুগ্ধঃ…..
ইভাঃ একদিনেই কেমন বউ পাগলা হয়ে গেছে মুগ্ধ ভাইয়া! এটাও দেখার বাকি ছিলো…হা হা হা
ইভার আম্মুঃ বড় আপা তোমার কপালে দুঃখই আছে!এখনই তোমার ছেলের যে অবস্থা দেখছি আর তো দিন পরেই আছে…
মুগ্ধর বাবাঃ এসব কথা থাক না!যে যার মত খাওয়া শুরু করো তো।কথায় কথা বাড়ে…
রুহিঃ……
মুগ্ধর আম্মুঃ খাওয়ার সময় এত কথা বলা ঠিক না!এই টপিক বাদ দে আর মনোযোগ দিয়ে খাওয়া শুরু কর…

এসব কথা শুনে রুহির খুব খারাপ লাগছে!রুহি ভেবেছিলো মুগ্ধ উনাকে কিছু বলবে বাট মুগ্ধ কিছু বলছে না নিজের মত খেয়েই যাচ্ছে! রুহি মুখে খাবার দিয়ে আর গিলতে পারছে না! কারন রুহি বিনাদোষে কেউ কিছু বললে তাকে ছেড়ে দেয় না!বাট এখন এখানে বড় বাবা আর বড় আম্মু আছে তাই রুহিও কাউকে কিছু বলতেও পারছে না।রুহি রাগে ফোঁস ফোঁস করছে…মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে দেখলো রুহি খাচ্ছে না!তাই মুগ্ধ রুহির দিকে তাকিয়ে বললো তারাতারি খেয়ে রুমে আসতে দরকারী কথা আছে!এই নিয়ে ইভার আম্মু আবার পকপক করা শুরু করলো!মুগ্ধর খাওয়া শেষ তাই মুগ্ধ উঠে গিয়ে বেসিনের হাত ধুয়ে আবার ওর চেয়ারেই বসে আর রুহিকে তারাতারি খাওয়ার জন্য তারা দিতে শুরু করলো।তারপর মুগ্ধ আরাম করে চেয়ারে বসে বললো…

মুগ্ধঃ খালামনি আপনি কি যেন বললেন?রুহি কে ব্রেকফাস্ট সার্ভ করার জন্য তাই না।তা আপনাদের হাত কি বাসায় রেখে এসেছে নাকি, যে নিজে নিজেরা সার্ভ করে খেতে পারবেন না!আর আপানারা কোন জমিদার যে আপনাদের সার্ভ করে খাওয়াতে হবে…
ইভার আম্মুঃ মুগ্ধ তুমি কি আমাকে অপমান করতে চাচ্ছো??
মুগ্ধঃ না অপমান করছি না বাট আপনার ভুল গুলো ধরিয়ে দিচ্ছি!আর যদি অপমান ভাবেন তো ভাবতে পারেন আমি কিছু মনে করবো না।(শান্ত সুরে)
মুগ্ধর বাবাঃ থাক না মুগ্ধ এসব বাদ দে..
মুগ্ধঃ বাবা আমার বউকে কেউ কটু কথা বলবে আর আমি তা শুনে যাবো সেই রকম কাপুরুষ আমি না।আর হ্যা ইভা তুই কি যেন বললি একদিনেই আমি বউ পাগল হয়ে গেছি তাই না!হুমমম বউকে সাপোর্ট করলে যদি বউ পাগল হতে হয় তো হলাম সমস্যা কি!আর খালামনি আমি অসভ্যতামির কিছুই করি নি বাট এর পর যদি সেইম কাজ আপানারা করেন তো আমি আমার মতো করে অসভ্যতামি কাকে বলে সেটা আপনাদের বুঝিয়ে দিবো।
ইভার আম্মুঃ এই মেয়েটার জন্য তুমি আমাদের সাথে এইভাবে কথা বলতে পারলে??(ন্যাকা সুরে)
মুগ্ধঃ এই মেয়ে না বলে ওর যেহেতু সুন্দর একট নাম আছে! তাই ওর নাম ধরে ডাকেন।আর নাম না জানলে মিসেস মুগ্ধও বলতে পারেন।আর হ্যা আর একটা কথা আমার বউকে যদি আর একবার আপনারা কোন রকম ভাবে অপমান বা কটু কথা শোনান! তো আমিও ভুলে যাবো আপনারা আমাদের রিলেটিভ হন..

কথাটা বলে মুগ্ধ রুহির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে ওপরে৷ চলে গেল।মুগ্ধর বাবা মা অবাক হন নি কারন এটা নতুন কিছু না।মুগ্ধ বরাবরই এইরকমই! সহজে কাউকে কিছু বলে না বাট বলতে শুরু করলে আর ছাড়ে না।

আজকে ওদের রিসিপশন তাই মুগ্ধ একটু ছোটাছুটি করতে থাকে!আরো একটি কারন আছে এর জন্য মুগ্ধও বাসার বাইরেও এসেছে কারন আজকে রুহির রেজাল্ট দিবে।রুহি বিয়ের আনন্দে রেজাল্টের কথাও ভুলে গেছে।

১১ টার দিকে রুহিকে সাজানোর জন্য পার্লার থেকে লোক এসেছে। মুগ্ধর আম্মু রুহিকে একটা গয়নার বক্স দেয়!রুহি আজকে পড়ছে এ্যাশ কালার লেহেঙ্গা। লেহেঙ্গাতে গোল্ডেন সুতা আর পাথরের কাজ করা।এই ড্রেসটা মুগ্ধ বাইরের দেশ থেকে আনিয়েছে।রুহি সাজতে বসে বার বার ছটফট করছে!
পার্লারের মেয়েঃম্যম নড়বেন না প্লিজ আমাদের সাজাতে সমস্যা হচ্ছে..
রুহিঃ নড়বো না মানে কি!আমি কি রোবট নাকি যে নড়াচড়া না করে থাকতে পারবো।
ভাবিঃ একটু কষ্ট করো রুহি!আজকের দিনই তো…
রুহিঃ ভাবি শরীরের মধ্যে কুটকুট করছে!মনে হচ্ছে কে জানি সুচ দিয়ে গুতো দিচ্ছে
ভাবিঃ কাপড়ের মধ্যে সূচ আসবে কোথায় থেকে??
রুহিঃ তা তো জানিনা!

তারপর সাজগোজ শেষ করে! আর রুহি সেজেগুজে বসে লক্ষী বউয়ের মত বসে আছে!বাট মুগ্ধর কোন দেখা নাই।বাসায় মেহমানরা গিজগিজ করছে। রুহি চারদিকে চোখ বুলিয়ে মুগ্ধকে খুঁজছে। মুগ্ধ ফোনটাও রিসিভ করছে না।রুহি মন মরা হয়ে বসে আছে ঠিক তখনই মুগ্ধ বাসায় ঢুকে আর রুহির দিকে না তাকিয়ে হনহন করতে করতে রুমে চলে যায়।রুহি আহাম্মকের মত তাকিয়ে মুগ্ধর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে?৩০মিঃ পর মুগ্ধ কালো শার্টের সাথে
এ্যাশ কালারে ব্লেজার পড়ে আসে!রুহি চোখ বড় বড় মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে আছে!রুহির পাশে মুগ্ধ বসলো তখন রুহি মনে মনে বিরবির করে বলে উঠলো…
রুহিঃ এই বরটা কার রে!!ভাভা গো ভাভা আমি তো পাঁচ কেজি ওই সব খেয়ে ফেলছি!ওইসব মানে ক্রাস আর কি!ওমা এ তো দেখি আমার বাবার মেয়ের জামাই! এজন্য তো বলি এমন ভাব আর কার হতে পারে!কাল রাতে কত কামড়ালাম তাও চেহারাটা একটুও অসুন্দর হলো না বরং আরো হ্যান্ডস্যাম লাগছে…(মনে মনে)
মুগ্ধঃ…..
রুহিঃআজকে একবার সুযোগ পায়! তার পর তোর ভাব না কমাতে পারলে আমার নামও রুহি না।তোর মাথায় এমন ডগা মারবো যেন সাথে সাথে তোর মাথায় আলু উঠে যায়।শালা খাটাশ তোকে না কালো শার্ট পড়তে না করছি তাও কালো শার্ট পড়ছিস…মন তো চাচ্ছে এক খাবলা থুথু দিয়ে আসি!যাতে কারো নজর না লাগে…
(মনে মনে)

মুগ্ধ রুহির সাথে কোন কথা বলছে না বাট অন্যদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে!রুহি মনে মনে মুগ্ধর গুষ্ঠী উদ্ধার করছে আর সেটা খুব যত্নে।রুহি মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো…

প্যারাময় লাভ পর্ব ২৮+২৯+৩০

রুহিঃও স্বামী তুমি আমার সাথে কথা বলছো না কেন??
মুগ্ধঃ…..
রুহিঃ কি এমন করছি আমি! যে কথা বলছো না তুমি!প্লিজ কথা বলো না আমার সাথে! তুমি কথা না বললে আমার মনটা আকুপাকু করছে।
মুগ্ধঃ আজকে তোর পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে! তোর কি মনে আছে?
রুহিঃ ওহহ আজকে রেজাল্ট!!!!!!! ইসস আজকের দিনেই হারামজাদা রেজাল্টকে বের হতে হলো!আর দুইদিন পর বের হলে কি হতো??যাই হোক দুপুর ১তো বেজে গেছে রেজাল্ট দিবে কখন…
মুগ্ধঃতিনটা সাবজেক্টে ফেল করছিস!ছিঃ! ফেলের কথা মুখে বলতেও আমার লজ্জা লাগছে।তোকে এত কষ্ট করে পড়ানো টাই বৃথা.. (দাঁতে দাঁত চেপে)
রুহিঃ যাক বাবা বাচলাম!তাহলে বাকি গুলোতে তো পাশ করছি!(অনেক খুশি হয়ে)
মুগ্ধঃ পরীক্ষাতে ফেল করে তুই এত খুশি হচ্ছিস???তুই আসলেই কি মানুষ??? ..
রুহিঃ যা বাবা তুমি তো কালকে রাতে আসার সাথে বাসর করলে আর আজকে বলছো আমি মানুষ কি না??
মুগ্ধঃ…..
রুহিঃথাক মন খারাপ করো না!আসছে বছর আবার হবে!আর বাদ বাকি গুলোতে তো পাশ করছি! এর জন্য আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া..একটা কথা সব সময় মনে রাখবা…
মুগ্ধঃ….
রুহিঃ অল্পতে খুশি হতে শিখো!তাহলে জীবনে কিছু করতে পারবে…
মুগ্ধঃ তা তিনটা বিষয়ে ফেল করে তুই কি করবি শুনি??(অবাক হয়ে)
রুহিঃ এমন একটা কাজ করবো! যেটা পড়াশোনা না জানলেও খুব ভালো ভাবে করা যায়।ঝাক্কাস কাজ আছে একটা আর আমি ওইটাই করে তোমাকে দেখাবো…

মুগ্ধঃহুমম সেই মহৎ কাজটা কি?? যদি বলতি! তাহলে তোর কথা শুনে আমার কান দুটোকে ধন্য করতাম।
রুহিঃফেল যখন করেছি তখন কি আর করবো! হালি হালি বাচ্চা পয়দা করবো…আর সেই ছালপাল কে মানুষ করবো।আর আমার এত পড়াশোনা করে কি হবে? আমার ছানাগুলো কে অ আ মুরগির ঠ্যাং শেখানোর পর টিচারের গলায় ঝুলিয়ে দিলেই তো ল্যাটা লুকে গেল! তাহলে হুদাই আমি পড়াশোনার করে ব্রেণ ক্ষয় করবো কেন? বলো! বলো! এটাও উওর দাও আগে আমাকে??
রুহির কথা শুনে মুগ্ধ কি বলবো বুঝতে পারছে না!আপাতত রুহিকে কি বলা উচিত মুগ্ধর জানা নেই….

প্যারাময় লাভ শেষ পর্ব