প্রণয়ের জলসাঘরে শেষ পর্ব 

প্রণয়ের জলসাঘরে শেষ পর্ব 
রেহানা পুতুল

আলিশা ভয়ার্ত নিষ্পলক চোখে পুলিশের দিকে চেয়ে রইলো। শুভ’র মেজাজটাই বিগড়ে গেল।
হালকা মেজাজে ভরাট গলায় পুলিশদের উদ্দেশ্যে বলল,
আচ্ছা ভাই আপনাদের সমস্যাটা কি?
বিয়ে ঠিক হওয়া হবু বউ নিয়ে একটু ঘুরতে এলাম। তাও শান্তি দিবেন না আপনারা?

ফাজলামো হচ্ছে পুলিশের সাথে? হবু বউ না অন্যের বউ। তা প্রমাণ হবে থানায় গেলেই। থানায় চলেন দুজনে। আর নয়তো মাল ছাড়েন মানে মানে রক্ষা পেতে হলে।
শুভ পুলিশের সাথে আর একটি কথাও বললনা। ফোন দিল তার এক বড় ভাইকে। সেও রমনা থানার ওসি। শুভ পুলিশ একজনের হাতে ফোন দিলো সেই ওসির সাথে কথা বলার জন্য।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পুলিশ বিরক্ত চোখে ফোন কানে নিলো চার কদম পা সরিয়ে। দু চার মিনিট শুভ’র বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলল। তারপর এগিয়ে এসে নম্রতার সাথে শুভ’র হাতে মোবাইল দিয়ে দিল। বলল সর‍্যি ফর ডিস্টার্ব। বেস্ট অফ লাক দুজনের জন্য।
শুভ ভ্রুকুটি হেসে, আপনাদের জন্যও শুভকামনা রইলো। তারা দুজন চলে গেল।
আলিশা বলল,

কি ম্যাজিক দেখালেন স্যার। আমিতো পুরাই ফিদা।
শুভ আলিশার দিকে গম্ভীরভাবে তাকালো।
তুমি একটা কুফা মেয়ে। আমার বাকি জিন্দেগী যে কিভাবে কি হবে। তা উপর ওয়ালাই জানে মাত্র।
আলিশার মুড অফ হয়ে গেল। অনুযোগ মিশ্রিত ধমকের সুরে,
আমি আবার কি করলাম?

কি করনাই তুমি? তোমাকে যখন পড়াতাম। বলছি বাইরে এত ঘনঘন দেখা করোনা। নাহ। কে শুনে কার কথা। যার ফলস্বরূপ আয়মান ভাই জেনে গেল।
বলছি এই সব স্থানে ঝামেলা আছে। অন্য পার্কে যাই। অন্য গাছতলায় যাই। না এখানেই আসা চাই তোমার। এখন দেখলে?
আমার এক কাজিন যদি থানার এসপি না হতো আজ। তাহলে হয় থানায় যেতে হতো দুজনের । নয়তো ভালই টাকা পয়সা এদের হাতে দিতে হতো। হ্যাসেল টা যে কি হতো। ইজ্জত ও পাংচার হয়ে যেতো। ওদের স্বভাবই হলো পার্কে জুটি গুলাকে ফাঁফরে ফেলে নিজের পকেট ভারি করা । ক্লিয়ার?

আপনার সাথে বিয়ে ক্যান্সেল আমার। অন্য পাত্রী দেখেন আজ থেকে।
সিরিয়াসলি? বলে শুভ হোঃহোঃহোঃ করে উদ্দাম হাসি ছড়িয়ে দিল। উপর দিকে লাফিয়ে ঝুঁকে থাকা আম গাছের শাখা থেকে দুটো সবুজ আমপাতা ছিঁড়ে নিল। পাতা দুটোকে ছিঁড়ে কুচিকুচি করে নিল হাতের তালুতে। ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিল একটু দূরেই।
কি বুঝলে তুমি? জানতে চাইলো আলিশার কাছে।

বোঝার কি আছে এতে? মুখ গোঁজ করে বলল আলিশা। যদিও শুভর এই দুষ্টমিটা আলিশা বেশ উপভোগ করেছে।
তুমি ছাড়া এই জীবনটা এমন ছিন্নপত্র হয়ে উড়ে গিয়ে ঠেকবে অন্য বৃক্ষ তলায়।
শুভ’র কথার ঢঙে আলিশার মুখ দিয়ে ধুম করে হাসি বেরিয়ে গেল।
শুভ আলিশাকে অন্য একটা মোটা গাছের আড়ালে হাত ধরে নিয়ে গেল। বলল এটা কি গাছ?
বট গাছ। আবার কি গাছ ?
বট বৃক্ষের ছায়াগো যেমন..

প্রাণ ও বন্ধুর মায়াগো তেমন। গানের মানেটা বোঝ কন্যা?
বুঝতে চাইনা। আমি বাসায় যাব।
প্রেম করবানা গাছের তলায় লুকিয়ে?
নাহ! সাধ মিটে গিয়েছে।
শুভ নানাছলে আলিশার মান ভাঙ্গালো। পার্ক থেকে বের হয়ে বেশ কিছুদূর পথ হেঁটে গেল হাত ধরাধরি করে। একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকে লাঞ্চ করলো। আলিশা সাদা ভাত খেল। সাথে পছন্দ করে নিল ডাল, কাচকি মাছ চচ্চড়ি, কাঁচকলার ও কচু শাক ভর্তা। শুভ নিল বিফ খিচুড়ি সালাদসহ। শেষে খেল পুডিং ও চা৷ দুজনের জম্পেশ খাওয়া শেষে শুভ আলিশাকে তাদের বাসার পাশে পৌঁছে দিল।

রায়হান দেশে এসেছে। তার মেয়ে সন্তান জন্ম নিয়েছে। বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দকে উজাড় করে বরণ করছে সে। দুহাতে মিষ্টি বিতরণ করছে সবার বাসায়। শুভদের বাসায় নিজেই চলে এলো তিনপদের মিষ্টি নিয়ে । সবার সাথে বেশ সময় গল্প গুজব করলো।
বর্তমানে পিয়াসার প্রতি তার মনে আর কোন আলাদা প্রবল অনভূতি নেই। তবুও একটা সূক্ষ্ম মায়ানুভূতি সদা বিরাজমান তার অন্তরে । যেটা পিয়াসার মুখের হাসি দেখে এই মুহুর্তে পূনরায় জাগ্রত হলো ভোরের উদীয়মান সূর্যের ন্যায়। জীবনের প্রথম শ্রেষ্ঠ অনুভবের মালা গেঁথেছে এই পিয়াসাকে নিয়েই সে।

আয়মানের মায়ের ডাকে রায়হান ধাতস্থ হলো নিজের উপর। নাস্তা খেয়ে বের হয়ে গেল। যাওয়ার আগে লুকানো চোখে পিয়াসাকে দেখে নিল ফের। পিয়াসা দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে মুখ ঘুরালো।
তার দুই মাস পরে আজ শুক্রবার রাতেই শুভ আর আলিশার কাবিন সম্পূর্ণ হলো ঘরোয়া আয়োজনেই। দুই পরিবার নিজেদের মধ্যে জানাশোনা সেরে নিলো কয়দিন আগেই। বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে আলিশা মা ও বড় ভাইকে পা ধরে সালাম দিল। তারা আশীর্বাদ করলো আলিশাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে। গ্রাম থেকে শুভ’র মা বাবা ও ছোট ভাই এলো। ছেলের পছন্দের উপরে তাদের আর কোন আপত্তি নেই। আর তারাও আলাদাভাবে খোঁজ খবর নিয়েছে আলিশা ও তার পরিবার সম্পর্কে। তাই দ্বিমত করার কথাই উঠেনা।
রাতে শুভ চলে যেতে চাইলো। তার সেই এসপি বন্ধু বলল,

গাধা নাকি তুই? কাবিন টা কিরে? কাবিন মানেই বিয়ে। আর কাবিন নামক বিয়ের পরেই আড়াইদিন থাকতে হয় স্বশুর বাড়ি। বুঝলি। তুই থাকবি। আমরা সবাই চলে যাচ্ছি।
আলিশার রুমের খাটে নতুন বেড শিট বিছানো হলো। বেড সাইড টেবিলের ফুলদানির আর্টিফিশিয়াল ফুল সরিয়ে কাচাঁফুল রাখা হলো। হালকা সাজে বাসর ঘর সাজানো হলো। মিষ্টি শরবত রাখা হলো। এ সবই আয়োজন করেছে পিয়াসা নিজ হাতে।

শুভ রুমে ঢুকলে পিয়াসা একগাল হেসে শুভকে আস্তে করে বলল,
এই যে.. হ্যালো। শুভ ভাই,
বিয়ে করতে চেয়েছেন আমাকে। এখন আমার পরিবর্তে আমার ননদকে দিলাম। প্রায় একই কথা। হৃদয়ের সংরক্ষিত আসনে হেফাজতে রাখবেন তাকে। এই বলে দিচ্ছি। তাসের ঘর পছন্দ হয়েছে?
পছন্দ না হয়ে যাবে কই। পিয়াসার হাতের ছোঁয়া আছে যে। আচ্ছা আমি কি এখন তোকে তুই বলব? না ভাবি বলব পিয়াসা? হেসে জিজ্ঞেস করলো শুভ।

আপনার ইচ্ছে। এতে আমার কোন আপত্তি নেই।
কিন্তু বাকিরা কি ভাববে? বা আলিশা?
সেটাতো আর আমি জানিনা। তারা ‘ তুই ‘ এড্রেস করে বলা ডিজলাইক করলে, ভাবী বলবেন।
কি বলিস? তুই আমার কত ছোট। এখন ভাবি বলতে হবে আমার ?
হ্যাঁ হবে। বলে পিয়াসা চলে গেল আলিশাকে শুভর কাছে রুমে এনে দিয়ে।
পিয়াসা শাশুড়ীর রুমে গেল। লক্ষ্য করল তিনি নিরবে অশ্রুপাত করছেন। শাশুড়ীর পিঠের উপর ভরসার হাত রাখল পিয়াসা৷ স্বান্তনা দিয়ে বলল,

মা কাঁদবেন না। দোয়া করেন ও যেন সুখে থাকে। আর এখনতো ও আমাদের কাছেই আছে।
আয়মানের মা শাড়ির আঁচল দিয়ে নাক মুখ মুছে নিলেন। আদ্রপূর্ণ গলায় বললেন,
সেজন্য কাঁদছিনা মা। আজ যদি তোমার শ্বশুর বেঁচে থাকতো কত যে খুশী হতো। কত বড় আয়োজন করতো। আলিশা জন্ম নেওয়ার পরে প্রায় তাকে কোলে নিয়ে আদর করতো আর বলতো,

আমার ছোট্ট রাজকন্যা। দেখে শুনে তুলে দিব আরেক রাজপুত্তুর হাতে। এই বলে আয়মানের মা থেমে গেল।
আমি আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছি মা। শুভ ভাই রাজপুত্রর চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। অর্থ সম্পদ জীবনকে সুখী করে তুলতে পারেনা। জীবনকে সুখী আর আনন্দময় করে তুলতে চাই পারষ্পরিক বোঝাপড়া আর চিন্তা ভাবনার সমমিল। ব্যাস জীবনে ভালো থাকতে আর কিছুই চাইনা। নুন পান্তা খেয়েও দিব্যি ভালো থাকা যায়। নয়তো কোর্মা কাবাবকেও তেতো লাগবে।

তাতো তোমাকে দেখেই আমি আঁচ করতে পেরেছি মা। বিয়ের সময় তোমার গলার এই চেইন ছাড়া আর কোন গহনাই আমরা দিতে পারিনি। বউ সাজের দিন আমার সিম্পল গহনা দিয়েই তোমাকে বরণ করে নিলাম। তার পর কতমাস পরেও তোমার কান খালি ছিল। তুমি মুখ ফুটে কখনোই স্বামীর কাছে কিছু আবদার করনি। চাওনি।
পিয়াসা শাশুড়ীর কথার মাঝখানে বলে বসল,
এসব আমার চিন্তায় ও আসেনা মা। বাদ দেন। ভাবছি শুভ ভাইকে কাল কয়েক পদের ভর্তা দিয়েই লাঞ্চ করাব।
হেসে আয়মানের মা বলল,

নতুন জামাই শুধু ভর্তা দিয়ে ভাত খাবে? কি বল? এটা বেমানান লাগবে। ফ্রিজে সবই আছে৷ পছন্দমতো রান্না করে নিও।
আচ্ছা মা দিব। আমি মজা করে বলছি।
শুভ দরজা বন্ধ করে দিল। লাজুক ভঙ্গিতে নত মাথায় বসে আছে আলিশা। সে বুঝে উঠতে পারছেনা কেন তার এত সংকোচ লাগছে। এতদিনের পুরোনো চেনা মানুষটাকে নতুন অচেনা লাগছে কেন আজ? সমস্ত লজ্জারা তাকে এত ঘিরে ধরেছে কেন? বুকের ভিতর ধুকপুকানি ক্রমাগত হারে বেড়েই যাচ্ছে কেন? শুভ তার প্রেমিক। কত দেখেছে এই মুখ। কত ছুঁয়েছে এই হাত। কত দুষ্টমি করেছে। করেছে কত প্রণয়ালাপ।
আলিশা শুভকে পা ছুঁয়ে সালাম দিতেই,

শুভ আলিশাকে টেনে দাঁড় করালো।
তোমার স্থান আমার পায়ে নয় বুকে। চিবুক উঁচিয়ে ধরে রোমাঞ্চিত হাসি দিলো শুভ। বলল রাতদিন এত চটপটানো মেয়েটা আজ এই মুখর রজনীতে চুপ কেন? শাড়িতে বেশ কমনীয় লাগছে তোমাকে। যেন পমত্ত অঙ্গনা। আসো এই নিশিকে করি উতলা। অবগাহন করি সুখের প্রণয় রাজ্যে।
আলিশা চুপ হয়ে আছে।
শাড়ি চেঞ্জ করবেনা?

করবো বলে আলিশা ওয়াশরুমে গিয়ে পরিহিত সব বস্র বদলে নতুন একটা নাইটি পরে নিল। চলে এলো বিছানায়। শুয়ে গেল কাত হয়ে। শুভ আলিশার নাইটির গলা একটু টেনে নিচে নামালো। বিরামহীনভাবে বেহিসেবী চুমুতে ভরিয়ে দিল আলিশার খোলা বুক। একটু থেমে বলল তুমি এত শুকনো কেন? এর আগে আর তোমার গলা চোখে পড়েনি আমার। বুকের উপরের দুপাশের হাড়গুলো কেমন খাড়া হয়ে আছে মরা গাছের শেকড়ের মতো । যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।

আলিশার রাঙা অধর দুটো কাঁপছে তিরতির করে বৃদ্ধ মানুষের শরীরের মতো। ভিতরে ভিতরে সে খুন হয়ে যাচ্ছে শুভর হাতের স্পর্শ’র অসহ্য সুখে। দুচোখ বন্ধ করে ফেলল। দুহাত দিয়ে দুপাশের চাদর খামচি দিয়ে ধরলো।
শুভ আলিশাকে বুকে জড়িয়ে নিলো। বলল ঘুমাও চুপটি করে লাজরাঙা বধুয়া।
লেখিকা রেহানা পুতুলের পেইজে লাইক ও ফলো দিয়ে যুক্ত হবেন নতুন স্বাদের সব গল্প পেতে।

বাসায় নতুন জামাই। সে উপলক্ষে ভালো খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। সবাই মিলে দুপুরে একসাথে খেল। পিয়াসা সাইড ডিস হিসেবে দুই পদের ভর্তা রাখল। কুচো চিংড়ি ভর্তা তিসি দানা দিয়ে। সজনে পাতার হাতে মাখা ভর্তা ইলিশ মাছ ভাজা দিয়ে। দুর্দান্ত স্বাদ হয়েছে বলে শুভ পিয়াসার রান্নার প্রসংশা করলো।
বিকেলে পিয়াসা শাশুড়ীর সাহায্য নিয়ে কয়েক পদের নাস্তা তৈরি করল। ঘন দুধ দিয়ে স্পেশাল চা বানাল। আলিশা তার আর শুভর জন্য রুমে নাস্তা নিয়ে গেল।

পিয়াসা ছোট একটি ট্রেতে করে আয়মানের জন্য চা নাস্তা নিয়ে রুমে গেল। এই যে মিস্টার। হায়দ্রাবাদি চা পান করেন। দুধের সর দেয়া হয়েছে। উপরে ভেসে আছে দেখুন।
খাবনা তোমার দুধের সর। নিয়ে যাও।
কি বেশরম পুরুষ। কিসের আমার দুধের সর?
তোমার দুধের সর মানে,

তোমার হাতে বানানো চায়ের দুধের সর মিন করছি। ননদের বিয়ে নিয়ে তুলকালাম মোজে আছ। জামাইর দিকে কোন খেয়াল আছে তোমার?
ওরেব্বাপস! জামাই কি নয়া? কিসের খেয়াল করব। শুধু এক জামাই নিয়ে পড়ে থাকলে আমার চলবে? সংসারের আর দায়িত্ব নেই আমার?
কি সংসারীরে আমার। আম্মু আছেনা এসবের জন্য?
আম্মু আছেনা? আম্মু আর কত করবে সংসারে? মুখ ভেংচি দিয়ে পূর্ণ অধিকার নিয়ে বলল পিয়াসা।

কিরে তোরা ঝগড়া করছিস কেন? আয়মানের মা দরজার বাইরে দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করলো। পিয়াসা, মা আসেন বলে দরজার পর্দা সরিয়ে দিল। ঝগড়া করছিনা মা। কথা হচ্ছে চা নিয়ে।
ওহ। আমার কাছে ঝগড়ার মতই মনে হলো।
তিনজনে কিছুক্ষণ পারিবারিক নানা বিষয়ে আলাপ আলোচনা করলো। আসরের আযান শুরু হলে নামাজ পড়ার জন্য আয়মানের মা উঠে গেল। পিয়াসাও অজু করে নামাজ পড়ে নিলো।
তারপর উঠে গিয়ে প্রসংগক্রমে বলল আয়মানকে,

মা মনে হয় ব্যংক লোনটা নিয়ে চিন্তিত। তাইনা?
মায়ের মন যে। সকল সমস্যা নিয়ে উনার চিন্তার অন্ত নেই। কত বলি আম্মুকে, দুঃখ-বেদনা হলো জীবনেরই অঙ্গ বা অংশ । এর ভিতর থেকেই মানুষের সুখ অন্বেষণ করতে হয় । আসল কথাটা হলো হাসি-কান্নার মধ্যেও জীবনের মধুর স্মৃতিটাকে স্মরণীয় করার নামই জীবন।

এই ধরো, বলে আয়মান চাবি দিয়ে টেবিলের ড্রয়ারটা খুলল। তার ডায়েরিটা বের করল। পিয়াসাকে নিয়ে নানা সময়ে লিখা কবিতা, গান,অবক্ত প্রণয়ের পংক্তিমালাগুলো দেখাল।
বলল এই সুখস্মৃতিগুলো আমাদের দুজনকে ভালো রাখবে জীবনের পড়ন্তবেলায়। অফুরন্ত ভালোলাগায় ভরিয়ে দিবে দুজনার দুটি মনকে।

পিয়াসা আয়মানের হাতের পিঠে নরম চুমু খেল। বলল অনেক ভালোবাসি তোমাকে আয়মান।
আয়মান পিয়াসার দিকে জ্বলজ্বল চোখে চেয়ে, মাই গড!
কি বললা? এই প্রথম তুমি বলে ডাকলে তোমার প্রেমিকটাকে । কি যে সুখ লাগছে। বোঝাতে পারবনা। পিয়াসাকে সামনে দাঁড় করিয়ে কোমরের দুই পাশ দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলে। সব সময় শাড়ি পরবে। বুঝলে। শাড়ি পরলে নানান সুবিধা ভোগ করা যায়, আমার মতো প্রণয়ের জলসাঘরে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকা প্রেমিকের।

তুমি আমার পূর্ণতা। তুমিই আমার শূন্যতা। তুমি আমার প্রণয়ের জলসাঘরের একমাত্র আরাধ্য কামিনী।
পিয়াসা দুইহাত দিয়ে আয়মানের কাঁধকে পেঁচিয়ে ধরেছে। বলল। তোমার এ ডায়েরি আমি একদিন লুকিয়ে দেখেছিগো। হিহিহিঃ।
কিহ? তার মানে জেনেও পরে ইচ্ছে করে আমার থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছ?
ইয়েস বস!
এটার প্রতিশোধ আজ রাতেই নিব আমি। ঘুমাতে দিবনা। আমাকে আনন্দ দান করবে সারারাত্রি জেগে জেগে। বুঝলে সখী ।
পিয়াসা মৃদু হেসে বলল,

যা আমার। সবই তোমার। যা তোমার। সবই আমার।
আয়মান পিয়াসার চোখে প্রেমাচ্ছন্ন চাহনিতে চাইলো। গুনগুনিয়ে গাইতে লাগল,
” তুমিই শুধু তুমি নও, আরো যে কত কি।
ফাগুনের ফুল তুমি, চাঁদনিই রাতি।
তুমি জীবনেএএ তুমি মরণেএএ
তুমি যে শুধু আমারিইই। ”

ভালোবাসা আছে বলেই জগৎ আজো এত সুন্দর। কাননে ফুল ফোটে। পাখিরা করে রব। শিশুরা মেতে উঠে পুতুল পুতুল খেলায়।
ভালোবাসা স্বাশ্বত! চিরন্তন! ভালোবাসা অম্লান নক্ষত্র ! ভালোবাসার বিশালতা আকাশের চেয়েও বিশাল। সমুদ্রের চেয়েও গভীর। পাহাড়ের চেয়েও মজবুত।
ভালোবাসার অনন্ত অসীমে হারিয়ে যাক আলিশা শুভ, আয়মান পিয়াসার সুপ্ত অনুভূতিগুলো । ভালোবাসার মুক্ত আকাশে তারা ঝান্ডা উড়াক চিরসবুজ হয়ে। বিশুদ্ধ বিশ্বাসের সারথি হয়ে বেঁচে থাকুক তাদের প্রেম যুগের পর যুগ৷

সমাপ্ত (মন্তব্য ও শেয়ার দিয়ে প্রেরণা দিবেন আশাকরি। হ্যাপি রিডিং। 🥰)

[ ” প্রণয়ের জলসাঘরে ” উপন্যাসটি ফুরিয়ে গেলেও আমি রয়ে যেতে চাই আপনাদের হৃদয়ে। এই উপন্যাসটি মলাটবন্দী হয়ে প্রকাশ হবে পরবর্তীতে। যেসব শুভাকাঙ্ক্ষী পাঠকগণ শুরু থেকে শেষ অবধি পাশে থেকে প্রেরণা দিয়েছেন। সেই আপনাদের সবার জন্য রইলো আমার হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা । ইতি টানলাম বলে অভিমান পুষে রাখবেন না আমার উপর। এটা চাইলেই আরো বাড়াতে পারতাম।

প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব ২৭

কিন্তু অপত্যাশিতভাবে উপন্যাসটির সমাপ্তি টানলাম কারণবশতই। ১ দিন পর পর দিই বলে বহু পাঠক গ্রুপে বিরক্ত হচ্ছে। আর আমিও সংসার, সন্তান,সামাজিকতা সামলে সময় বের করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। গল্প/ উপন্যাস যেদিন থেকে রোজ দিতে পারব। ঠিক সেদিনই দিব। তার আগে শুধু একক গল্প দিব মাঝে মাঝে। যদি বেঁচে আর সুস্থ রই। আল্লাহ সবাইকে সুস্থ ও হেফাজতে রাখুক। আর পেজে লাইক ও ফলো দিয়ে যুক্ত হওয়ার আকুল আবেদন রইলো। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ তার সৃষ্টির মাঝেই বেঁচে থাকতে চায়৷ 💖🌹🙏😪]

প্রণয়ের জলসাঘরে পর্ব ২৯