প্রণয় বোনাস পর্ব

প্রণয় বোনাস পর্ব
তানিশা সুলতানা

সবাই চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে ইমনের দিকে। তোহা চোখ মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। এরকম একটা কিছু ঘটবে এটা কল্পনারই বাহিরে। ইরার চোখে পানি চিকচিক করছে। এটা কি হয়ে গেলো ও ভাবতেও পারছে না।

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আমার দিকে? আমি একদম সত্যি কথা বলেছি। আপনার মেয়েকে একদম সুখে রাখবো। খুব ভালো রাখবে। এতো ভালো রাখবো এতো ভালো রাখবো যে আপনার মেয়ের মুখে সারাক্ষণ ইমন আর ইমন থাকবে।
এক গাল হেসে বলে ইমন। তমাল খুক খুক করে কেশে ওঠে। তোহা আস্তে আস্তে নিঃশব্দে নিজের রুমে চলে যায়। সাদিয়া বেগম মাথা নিচু করে ফেলে।

” ও আংকেল বিয়ে দেবেন না? না করবেন না কিন্তু। না করলে আমি এখানেই বসে থাকবো।
পা দুটো তুলে একদম গোল হয়ে বসে দুই গালে হাত দিয়ে বলে ইমন। ইরার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
“কে এসেছে ভাই?
তাহের হাই তুলতে তুলতে বসার ঘরে আসে। ইমনকে দেখে হামি দেওয়া থেমে যায়। গোল গোল চোখ করে তাকায় ইমনের দিকে।
ইমন তাহেরের দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আংকেল ভালো আছেন? বাড়িতে বিয়ে লেগে যাচ্ছে। জানেন না কি?
খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ইমন। তমাল কপালে হাত দিয়ে বসে। তাহের একটা ধাক্কা খায়। এখন আবার কার বিয়ে? চুপচাপ গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে পড়ে তাহের।
“আপনারা কনফিউজড হয়ে গেছেন? হওয়ারই কথা। বাবাও বলেছিলো এমনটাই হবে। তার জন্য আমিও একটা আইডিয়া পেয়েছি।

আমি বরং ছোট আংকেলের সাথে ঘুমিয়ে পড়ি কেমন? আপনারা সারা রাত ভাবেন। সকালে উঠে যদি দেখেন সোফা আনাম আছে তাহলে হ্যাঁ বলে দেবেন। ওকে?
বলতে বলতে উঠে দাঁড়ায় ইমন। সবার চোখ বড়বড় হয়ে যায়।
” আংকেল আসুন। ঘুমিয়ে পড়ি। আমার তো বিয়ের চিন্তায় ঘুম আসবে না। আপনারা বরং ঘুমিয়ে পড়ুন।
ইমন তাহেরের হাত ধরে টেনে তুলে হাত ধরে এক প্রকার টেনেই নিয়ে যায়।
তমাল কপালে হাত দেয়। সাদিয়া তামালের পাশে বসে।

“হ্যাঁ গো
ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলো না কি?
” তুমিও যেখানে আমিও সেখানে। জানবো কি করে?

তোহা রুমের মধ্যে পায়চারি করে যাচ্ছে। বাইরে কি হচ্ছে আল্লাহ জানে। ওই পাগলটা আবার আবোলতাবোল বলে দিচ্ছে না তো?
তখনই ইভা আর ইরা রুমে ঢোকে।
“এসব কি হচ্ছে তোহা?
ইরার চোখে এখনো পানি টলমল করছে।
তোহা চমকে ওঠে৷
“আমি কি করে জানবো আপু?
চোখ মুখ কুঁচকে বলে তোহা।
” আপু কথা বাড়াস না। চল ঘুমিয়ে পড়ি।
হামি দিতে দিতে বলে ইভা। তোহা ইরার দিকে এক পলক তাকিয়ে শুয়ে পড়ে। তোহার পাশে ইভাও শুয়ে পড়ে। আর ইরা জানালার কাছে চলে যায়। ঘুম ওর এমনিতেও আসবে না।

“তানহা
নরম গলায় ডাকে সূচক। তানহা কথা বলে না। লেপ্টে পড়ে থাকে সূচকের বুকে।
” সরি রে মাথা ঠিক ছিলো না আমার। তোকে অন্য কারো সাথে জাস্ট সয্য করতে পারি না আমি।
যখন দেখলাম তুই সৈকতের হাত ধরেছিস ট্রাস্ট মি ভেতরটা পুরে যাচ্ছিলো। আর সেই রাগটা তোর ওপর ঝেড়েছি।
তানহার মাথায় চুমু দিয়ে বলে সূচক। তবুও তানহা কিছু বলে না। একটু নরে চরে সূচককে একটু গভীর ভাবেই জড়িয়ে ধরে।

“তোর খুব অভিযোগ আমি নিরামিষ। তো আজকে একটু আমিষ হতে চাইছি। তুই কি বলিস?
হেসে বলে সূচক। তানহা তবুও কথা বলে না। সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এই মেয়েটার অভিমান ভালোবাসার চেয়েও বেশি গভীর।

প্রেমিকার অভিমান হওয়াটাই ভালো। সম্পর্কে রাগ অভিমান অভিযোগ ভালোবাসা সবটারই প্রয়োজন আছে।
তবে প্রেমিককেও অভিমান ভাঙানোর হ্মমতা রাখতে হবে। তবে সূচকের একমাস প্রেমিকা যে অভিমান করে নেই সেটা বুঝতে পারছে সূচক। বরং মহারানী ইচ্ছে করেই কথা বলছে না। অভিমান করলে এতোখনে বুক থেকে সরে যেতো।
সূচক এবার দুষ্ট হেসে তানহার কোমরে হাত রাখে। তানহা একটু নরে ওঠে। মুচকি হাসে সূচক। এবার সূচকের ছোঁয়া গুলো অবাধ্য হয়ে ওপরে উঠতে থাকে। তানহা ছিঁটকে সরে যায় সূচকের থেকে৷ কাঁপছে মেয়েটা। জোরে জোরে শ্বাস টানছে। সূচক ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

“কি হলো তোর?
কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে সূচক।
” আআমি মায়ের সাথে ঘুমবো।
তানহা ফাঁকা গলায় ঢোক গিলে এদিক ওদিকে তাকাতে তাকাতে বলে।
“কখনোই না। আমি এতো কষ্ট এখানে এসেছি কি মশা মারতে?
তানহাকে টেনে শুয়িয়ে দেয় সূচক। তারপর তানহার দুই পাশে হাত রেখে তানহার দিকে ঝুঁকে।
তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
সূচক খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে তানহার কুঁচকানো মুখ টার দিকে তাকিয়ে থাকে। সূচকের শ্বাস তানহার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে।

সূচকের সাথে তানহার একটুও ছোঁয়া লাগছে না। জাস্ট ছুঁই ছুঁই হয়ে আছে।
” সসরুন প্লিজ
চোখ বন্ধ রেখেই কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তানহা।
সাথে সাথে সূচক মিশে যায় তানহার সাথে। আঁকড়ে ধরে তানহার কোমল নরম ওষ্ঠদ্বয়। হাত ঢুকিয়ে দেয় তানহার কামিজের ফাঁকে।
তানহা বন্ধ করা চোখ দুটো একদম খিঁচে ফেলে। দুই হাতে সূচকের চুলগুলো মুঠো করে ধরে।
“লাভ ইউ তানহা। আই লাভ ইউ সো মাচ।

ঠোঁট ছেড়ে তানহার কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে টানতে বলে সূচক। তানহার যেনো শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। ও সমানে শ্বাস টানছে। এতোখন কি হলো ভাবতেই শরীর জারিয়ে যাচ্ছে।
” আই নিড ইউ তানহা। খুব করে তোকে চাইছি আমি। এতোদিন কন্ট্রোল করে রাখা অনুভূতি আজকে কন্ট্রোল করতে পারছি না।

প্রণয় পর্ব ৩

কি করবো বল তো?
তানহার কপালে চুমু দিয়ে বলে সূচক। কথা গুলো জরিয়ে যাচ্ছে।
তানহা কোনো কিছুই চিন্তা ভাবনা না করেই সূচককে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে। সূচকের এরকম কন্ঠ একদম নিতে পারছে না ও। থামানো উচিত ছিলো সূচককে। মুচকি হাসে সূচক।
এতোখন যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো।
“আজকে থেকে জীবনটা নতুন ভাবে শুরু হলো।

প্রণয় পর্ব ৩৯