প্রণয় পর্ব ১১

প্রণয় পর্ব ১১
তানিশা সুলতানা

তানহা মুখে মুড়ি পুরে গালে হাত দিয়ে সূচকের দিকে তাকিয়ে আছে। কি সুন্দর করে চিবায় ছেলেটা। মুঠে মুড়ি পুরে উপর দিকে তাকিয়ে হা করে মুখে মুড়ি দিচ্ছে।
আবার এক্সর্টা মরিচ নিয়েছে। মুড়ি মুখে পুরে মরিচ খাচ্ছে। এক কামড়ে অর্ধেক মরিচ শেষ করছে।
লোকটার কি ঝাল লাগে না?

সূচকের খাওয়া দেখতে দেখতে নিজের খাওয়ার কথা ভুলে গেছে।
সূচক আড় চোখে দেখছে তানহাকে। এভাবে তাকানো দেখে মনে মনে শুকনো ঢোক গিলে। এই মেয়েটার চাহনি কবে জানি খু*ন করে দেবে সূচককে।
“না খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সূচক দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চাহনিতে তানহার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে।
তানহা এক গাল হাসে। নাকটা টানতে গিয়ে মনে পড়ে সবাই খাচ্ছে। তাই ওড়নার কোনা দিয়ে নাকটা একটু চেপে ধরে।
তারপর ভালো করে মুছে নেয়। সূচক কপাল কুচকে কান্ড কারখানা দেখছে।
” আপনাকে দেখলে নেশা নেশা লেগে যায়। ইচ্ছে করে টুপ করে ধরে টাস করে গিলে ফেলি।
সূচকের গাল টেনে ফিসফিস করে বলে তানহা।

সূচক সাথে সাথে তানহার হাতটা নামিয়ে দেয়। দ্রুত মাথা ঘুরিয়ে সবার দিকে তাকায়। কেউ দেখলো কি না?
নাহহ কেউ দেখে নি।
তানহার এবার মরিচ খাওয়ার শখ জাগে। সূচকের খাওয়া দেখে নিজের জিভে পানি চলে আসে।
সূচকের আধখাওয়া মরিচটা হাতে নিয়ে খানিকটা নেরেচেরে দেখে। তারপর তাতে লবন মাখিয়ে পুরোটাই মুখে পুরে নেয়।
সূচক চোখ পাকিয়ে তাকায়। এখনি ঝালে লাফালাফি করবে। ইচ্ছে করছে থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু অতিরিক্ত দুর্বল তাই গায়ে হাত তুলতে পারে না।

মরিচে কামড় লাগতেই চোখ বড়বড় করে সূচকের দিকে তাকায় তানহা। সূচক দাঁতে দাঁত চেপে পাশ থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে তানহার দিকে এগিয়ে দেয়। তানহা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ঝালে মরে যাবে তবুও পানি খানি না। যতখন না সূচক একটু খেয়ে দেবে।
সূচক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
এই পাগলীটাকে নিয়ে কোথায় যাবে?
একটুখানি পানি খেয়ে তানহার দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দেয়। তানহ ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেয়।
বৃষ্টির চোখ এড়ায় না বেপারটা।

“এখন থেকে আপনি যা খাবেন। একটুখানি রেখে দেবেন আমার জন্য।
তানহা সূচকের দিকে আরও একটু চেপে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে।
” বকবক না করে তাড়াতাড়ি খা।
সূচক দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“কি হচ্ছে এসব?
বৃষ্টি খানিকটা জোরে বলে তানহার দিকে তাকিয়ে।
তানহা নরে চরে বসে। সূচক এক লাফে খানিকটা দুরে চলে যায়। তোহা ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে। ইরা সরু চোখে তাকিয়ে আছে।

সাদিয়া বেগম একবার তানহার দিকে তাকাচ্ছে তো আবার সূচকের দিকে তাকাচ্ছে।
“না মানে ওর নাক চুলকাচ্ছে। তাই হেচ্চি দিতে চাই ছিলো। আমি বারণ করলাম। সবাই খাচ্ছে তাই আর কি।
সূচক আমতা আমতা করে বলে। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায়। মিথ্যা বলছে ঠিক আছে। তাই বলে এতো বড় মিথ্যা?
এটা কি হজম করবে তানহা? না কি প্রতিবাদ করবে?
প্রতিবাদ করাই উচিৎ

তানহা কিছু বলার জন্য হা করে। সূচক ওর হাত চেপে ধরে। তানহা সূচকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। এভাবে হাত ধরে থাকলে তো সারাজীবন একটা কথাও বলবে না।
“ও হেচ্চি দেবে কি না সেটা তোমার থেকে পারমিশন কেনো নেবে?
বৃষ্টি ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলে।
” ও মা তুমি জানো না? আমি ওয়াশরুমে গেলেও ওনাকে বলে যাই। ওয়াশরুমে কি করি আবার এসে সেটাও বলি। বড় ভাই বলে কথা বলতে হবে না?

তানহা সূচকের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলে। সূচকের কাশি উঠে যায়। সাদিয়া বেগম পানি এগিয়ে দেয়। ঢকঢক করে পুরো গ্লাস শেষ করে সূচক।
তোহা খিলখিল করে হেসে ওঠে। তোহার স্বভাব হাসতে হাসতে পাশের জনের গায়ের ওপর পরে যাওয়া। তো এখনও হাসতে হাসতে বৃষ্টির গায়ের ওপর গিয়ে পড়ে। ভীষণ বিরক্ত বৃষ্টি।
সাদিয়া বেগম ছেলের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। সূচক চুপসে যায়। খাওয়ার কথা ভুলে গেছে। এই মুহুর্তে এখানে থেকে উঠতে পারলেই বাঁচে।

এদিকে তানহার হেচ্চির কথা মনে পড়তেই নাকটা চুলকে ওঠে।
“অতিরিক্ত কথা বলে মেয়েটা।
বৃষ্টি বলে।
” তা বলবো না। আল্লাহ মুখ দিছে তো বলার জন্য। বাই এনি চান্স তুমি কি আমায় বোবা হতে বলছো?
তানহা মুখ বাঁকিয়ে বলে।
“এতো বেশি বুঝিস কেনো তুই?
সূচক তানহাকে ধমক দিয়ে বলে।

” তো বুঝবো না?
আমার তো ব্রেণ ভালো।
মুখে মুড়ি পুরে বলে তানহা।
এবার একদম হেচ্চি চলে চলে আসে।
এই মুহুর্তে হেচ্চি না দিলে চলছে না।
কোনো রকমে মুখটা ওড়না দিয়ে ঢেকে চলে যায় ওখান থেকে। সূচক লম্বা দম নেয়।
দেখতে পুচকে হলে কি কবে? মারাক্তক সাংঘাতিক।

বৃষ্টিও দাঁত কটমট করতে করতে চলে যায়। সাদিয়া বেগম মিটমিট করে হাসছে। কথা শিখে গেছে মেয়েটা। এতোদিন শুধু ছেলে পাগল ছিলো। এখন আবার তানহাও পাগল হয়েছে।
কি করে সামলাবে নবাব সাহেব?
আমিও দেখবো।
সাদিয়া বেগম বিরবির করে বলে।

ইমন কখন থেকে অপেক্ষা করছে তোহার জন্য। তোহার সাথে কথা বলা প্রয়োজন। জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছে কিন্তু তোহার মতো এতো ইনোসেন্ট দেখে নি। মেয়েটা সত্যিই একদম অন্য রকম। এই যুগে এরকম মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাবে না। একে কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।
প্রেম করার জন্য মর্ডান মেয়ে দরকার হলেও বিয়ে করার জন্য তোহার মতো ইনোসেন্ট মেয়ে প্রয়োজন।
বাগানে পায়চারি করছে আর একটু পর পর সূচকের রুমের দিকে তাকাচ্ছে।

“ইমন
হঠাৎ পেছন থেকে পরিচিত একটা কন্ঠ ভেসে আসতেই চমকে ওঠে ইমন। দ্রুত ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে তাকায়।
ইরাকে দেখে পায়ের তলার মাটি সরে যায়। এই মেয়ে এখানে কি করে আসলো?
বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে ইমন।
ইরার চোখে দুটো টলমল করছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইমনের দিকে।
” ততুমি এখানে?

কিছুটা থমথমে খেয়ে বলে ইমন।
“ভাগ্য আবার তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিলো।
তাচ্ছিল্য হেসে বলে ইরা।
” ভাগ্য মাই ফুট।
ইমন দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“এমন কেনো হলো ইমন? আমার দোষটা কি? কেনো এড়িয়ে চলছো? কেনো কথা বলো না?
কি করেছি আমি?

ইরা ইমনের বা হাতটা মুঠো করে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে।
ইমন ইরার দিকে তাকাতেই চোখ পড়ে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা তোহার দিকে। তোহাও তাকিয়ে আছে ইমনের দিকে। চোখে কতো অভিমান।
ইমন তারাহুরো করে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে তোহার সামনে চলে যায়। ইরা ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে হাঁটু মুরে বসে পড়ে।
” ততোহা তুতু
ইমন কিছু বলতে যায়। তোহা মুচকি হাসে।

“এতো এক্সকিউজ দিতে হবে না। বন্ধুর বোনকে কেউ এক্সকিউজ দেয়? ভাইয়া আপনি একদম বোকা।
কিন্তু আমি খুব চালাক। ইরা আপু কাঁদছে কেনো?
শেষের কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে বলে তোহা।
” আআমি কি করে জানবো?
ইমন দায় ছাড়া ভাবে বলে।
তোহা তাচ্ছিল্য ভাবে তাকায় ইমনের দিকে। তারপর ইরার কাছে গিয়ে ইরার কাঁধে হাত রাখে। ইরা চোখ মুছে ফেলে।
“আপু চলো

প্রণয় পর্ব ১০

ইরা তোহার হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়।
” তাকেই গুরুত্ব দাও
যে তোমার গুরুত্বটা ডিজার্ভ করে।
তাকে গুরুত্ব দিও না
যার তোমার সাথে কথা বলার যোগ্যতা নেই?
ইমনের দিকে তাকিয়ে বলে তোহা।

প্রণয় পর্ব ১২