প্রণয় পর্ব ২৫

প্রণয় পর্ব ২৫
তানিশা সুলতানা

সাদিয়া বেগম হাজারটা কল করে যাচ্ছে কিন্তু সূচক ফোন তুলছে না। এতে আরও চিন্তা হচ্ছে ওনার। সকাল সকাল মেয়েদের রুমে গিয়ে দেখে তানহা নেই। তারপর সূচকের রুমে গিয়ে দেখে সূচক নেই। এবার কি করবেন উনি?

সূচক কোথায় নিয়ে গেলো তানহাকে ভাবতে ভাবতে ওনার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ফজরের আজান দিয়েছে কিছুখন আগে। এখনো নামাজ পড়া হয় নি ওনার।
আজানের শব্দে ঘুম ভেঙেছে। মনটা খচখচ করছিলো বলে দেখতে গেছিলো কিন্তু পেলো না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তানহা কালকে সূচকের সারকথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গেছিলো। এরকম একটা সময় মানুষ ঘুমতে পারে বলে সূচকের মনে হয় না। কিন্তু তার বউ তো ঘুমিয়ে ছিলো। কি আর করার তানহাকে সোজা করে শুয়িয়ে দিয়ে নিজে ইমনের রুমে চলে গেছিলো।

এই বাড়িটাও ইমনের বাবার। ইমনের দাদা বানিয়েছিলো। সে সেনাবাহিনিতে চাকরি করতো। এখানেই ওনার পোস্টিং ছিলো। ছেলে বউ নিয়ে যখন এখানে থাকতো তখন বাড়িতে গড়িয়েছিলো।খুব পুরোনো বাড়ি এটা।

ইমনের যখন দশ বছর বয়স তখন ওরা ঢাকায় যায়। দাদা মারা গেছে তিন বছর হলো।
আজানের শব্দে তানহার ঘুম ভেঙে গেছে। নামাজ পড়ে বিছানার এক কোনে বসে আছে। সূচক কোথায় গেছে ভাবছে?

ওকে একা রেখে চলে গেলো না কি? একটু একটু ভয় করছে তানহার।
এতবড় রুমে একা থাকা যায় নাকি? ফুল গুলো সব একই ভাবে আছে।
বিছানায় হাতরিয়ে ফোন খোঁজে তানহা। সূচকের ফোনটা দেখে।
হাতে নেয় একটু ফোন দেখে সময় পার করবে। সূচকের ফোন যখন এখানে তারমানে সূচক যায় নি।

অবশ্য সূচক কখনোই ওকে রেখে যাবে না।
ফোন অন করতেই দেখে বড়মার বারোটা কল। লাস্ট কল দুই মিনিট আগে।
চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায় তানহার। ভয়ে হাত পা কাঁপতে থাকে। তাহলে কি বড়মা জেনে গেলো?
এখন কি হবে?

ভীষণ কান্না পাচ্ছে তানহার। এতো টেনশন জীবনেও করে নি ও।
সাথে সাথে আবার কল বেজে ওঠে। তানহা চমকে ওঠে। হাত থেকে ফোনটা বিছানায় পড়ে যায়।

তারাহুরো করে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বের হয়। দুটো রুম এই বাড়িতে। তার মানে অন্য রুমটাতেই সূচক থাকবে।
তানহা দৌড়ে ওই রুমে চলে যায়। দরজা খোলাই ছিলো আর লাইট জ্বালানো।
সূচক ইমনের ওপর হাত পা তুলে ঘুমচ্ছে।

“এই যে উঠুন না।
তানহা সূচকের চুল টেনে ডাকে। পিটপিট করে চোখ খুলে সূচক। বিরক্ত হয় ভীষণ। মানুষ সাধারণত হাত ধরে ডাকে। এই মেয়ে একদম উল্টো।

” ডাকছিস কেনো?
ধমক দিয়ে বলে সূচক।
“বড় মা কল দিচ্ছে।
তানহা ভয়ে ভয়ে বলে। সূচক এক লাফে উঠে বসে।

” ফোন কই?
“ওই রুমে রেখে আসছি।
” ইডিয়েট
সূচক উঠে হনহনিয়ে ওই রুমে চলে যায়। তানহাও পেছন পেছন যায়।
এখনো ফোনটা জ্বলছে। সাইলেন্স করা।
সূচক তারাহুরো করে ফোনটা রিসিভ করে।

“কই তুই বাবু? তানহা কোথায়?
কর্কশ গলায় বলেন উনি।
” আমার সাথেই আছে।
সূচক শান্ত গলায় বলে।
“সকলে জেগে যাওয়ার আগে চলে আয়। তাড়াতাড়ি।
বলেই কল কেটে যায়।

তানহা কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভীষণ ভয় করছে ওর। সূচক কপালে হাত দিয়ে কিছুখন দাঁড়িয়ে থাকে।
” প্রতিবন্ধীর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
সূচক ধমক দিয়ে বলে। তানহা গাল ফুলিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। একদম তাকাবে না সূচকের দিকে।

“চল যেতে হবে। শান্তিতে তো আর থাকতে পারবো না।
এলোমেলো চুল গুলোতো হাত বুলিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করে বলে সূচক।
তানহা কিছু না বলে গটগট করে বেরিয়ে যায়।

সকাল সকাল এতো বড় চমক পাবে একদম ভাবে নি তোহা। ওর চোখের সামনে ইমন দাঁড়িয়ে আছে মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে।
তোহা হা করে কিছুখন তাকিয়ে থাকে
তারপর পাশে থাকা তানহার দিকে তাকায়।

” আমাদের সাথেই এসেছে। আমরা যতদিন থাকবো উনিও থাকবে।
তানহা তোহার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে। তোহা মাথা নিচু করে খাবার গিলতে শুরু করে।
তোহার সামনাসামনি চেয়ারে বসেছে ইমন আর সূচক। আজকে সূচকের পাশে বৃষ্টি বসেছে। বাকি সবার খাওয়া হয়ে গেছে অনেক আগেই।

সাদিয়া বেগম বাবা মায়ের পাশে বসে আছে। সাইদুল চৌধুরী মেয়ের হাতের ওপর হাত রাখে।
“তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে। তোর ভাইয়েরা তোকে কতো ভালোবাসে। আমাদের গোটা বংশের একমাত্র মেয়ে তুই।
সবার ইচ্ছে তোর ছেলের সাথে আমাদের বৃষ্টির বিয়ে হোক। তোর পরে এই বংশের দ্বিতীয় মেয়ে বৃষ্টি।
তুই ভালোবেসে বিয়ে করেছিস। আমরা মেনে নিয়েছে।কেউ তোকে দুরে সরিয়ে দেয় নি।

তোর ছেলের সাথে বৃষ্টির বিয়ে হলে অনেক ভালো হবে। দুজনকে মানাই ও খুব। আমি আমার অর্ধেক সম্পত্তি লিখে দিয়ে যাবো তোর বাবুর নামে।
এখন তুই বল কি বলবি?

সাদিয়া বেগম মন দিয়ে বাবার কথা গুলো শুনলেন। উনিও মনে মনে চায় বৃষ্টির সাথে সূচকের বিয়ে হোক। ছেলের অনেক ইচ্ছে পূরণ করার সামর্থ্য তমালের ছিলো না। ফোন থেকে শুরু করে শার্ট প্যান্টও সাদিয়া বেগম বাবার বাড়ির টাকায়। সূচক নেবে না বলে তমালের হাত দিয়ে টাকা দেওয়ায় সাদিয়া বেগম। কিছু দিন আগে কেনা বাইকটার বৃষ্টির বাবা অর্ধেকের বেশি টাকা দিয়েছে বাকিটা সূচকের বাবার।

তমাল ভাবে মামার বাড়ি থেকে দিচ্ছে এতে ওনার না করার সাদ্ধ নেই। ছেলে জেদি প্রচন্ড নিতে চাইবে না। এতে অসম্মান করা হবে ওনাদের। তাই নিজে হাতে দেয়।
” বাবা এখনো বাবু তেমন কিছু করে না। পড়ালেখাও শেষ হলো না। আগেই বিয়ের কথা তুলবো কি করে?

আমতা আমতা করে বলে সাদিয়া বেগম।
“এখন ভাবতে বলছি না। রেজাল্ট দিক। তারপর বাবুকে বিদেশে পাঠিয়ে দে। সেখান থেকে ভালো ডিগ্রি নিয়ে ফিরুক। তারপর বিয়ের কথা বলা যাবে।
এখন তোকে বলে রাখলাম।

সাইদুল চৌধুরী মুচকি হেসে বলে।
” বাবা অনেক টাকা লাগবে। এতো টাকা ও পাবেই বা কোথায়? এখানেই মাস্টার্স পড়ুক।
“টাকা নিয়ে তোকে ভাবতে না। আমার নাতি টাকার জন্য পড়াশোনা করবে না? এটা হয় না কি?
টাকা আমি দেবো।

তানহার খুব ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু নিয়ে যাবে কে? তাছাড়া ইমন আর তোহাকেও কথা বলার একটা উপায় বের করে দিতে হবে।
তানহা সূচকের রুমের দরজার সামনে ঘুরঘুর করছে আর ভাবছে।
ভেতরে যাবে কি যাবে না?
যাওয়াই উচিৎ। সূচক এখন তানহার একমাত্র বর। তার রুমে ঢুকতে আবার ভয় কিসের?

বুকে থু থু দিয়ে দরজা ঢেলে ভেতরে ঢোকে পড়ে তানহা। সূচক ঘুমিয়ে আছে। শার্টের বোতাম খোলা। ফর্সা বুকটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দুই ঠোঁট একটু ফাঁকা হয়ে গেছে সেটা বালিশের জন্য। বালিশটা ওনার পিঠের নিচে পড়ে গেছে।

বেলকনির দরজা খোলা সেখান দিয়ে রোদ এসে সূচকের পায়ের ওপর পরেছে।
তানহা বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে পর্দা টেনে দেয়। তারপর মেইন দরজা বন্ধ করে গুটিগুটি পায়ে সূচকের কাছে চলে আসে।

বুকের ওপর হাত গুঁজে ঘুমচ্ছে সূচক। তানহা সূচকের পাশে বসে আস্তে করে বুকের ওপর থেকে হাত সরিয়ে দেয়। তারপর মাথাটা একটু উঁচু করে বালিশটা টেনে বের করে ঠিকভাবে মাথার নিচে দেয়। দুই আঙুলের সাহায্যে দুই ঠোঁট এক করে দেয়।
বাহহহ এখন একদম কিউ টের বস্তা বস্তা লাগছে।

মাথায় একটু হাত বুলিয়ে সূচকের বুকের ওপর মাথা রাখে তানহা।
সূচক একটু নরেচরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তানহা প্রথমে ভরকে যায়। কিন্তু পরে যখন দেখে এটা ঘুমের ঘোরে করেছে তখন মুচকি হাসে।

খুব ভালো লাগছে এভাবে থাকতে। সূচকের বুকের থুপবুক আওয়াজ গুলো গুনতে পারছে তানহা। নিশ্বাসটা চুলের ভাজে পড়ছে। শরীর জারিয়ে যাচ্ছে।
নাক ঘসে দেয় সূচকের বুকে।

তোহা রুমের মধ্যে পায়চারি করছে। ছটফট করে মরে যাচ্ছে ইমনের সাথে কথা বলার জন্য। ইমন কি ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই কল কেটে দিয়েছিলো?
এমনটাই হবে। নাহলে এখানে কেনো আসবে?

প্রণয় পর্ব ২৪

ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তোহার।
হঠাৎ কেউ রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। চমকে ওঠে তোহা। সাথে ভয়ও পায়।

প্রণয় পর্ব ২৬