প্রণয় পর্ব ৪

প্রণয় পর্ব ৪
তানিশা সুলতানা

সূচক তানহার দুই হাত ধরে থামায় ওকে। রাগে সারা শরীর রীতিমতো কাঁপছে মেয়েটার।
সূচক কড়া দৃষ্টিতে তাকায় তানহার দিকে।
“এখানে কেনো এসেছিস? আর আমার চুল টানছিস কেনো?
থাপ্পড় খেতে ইচ্ছে হয়েছে?

কড়া গলায় ধমক দিয়ে বলে সূচক। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।
তানহা কেঁপে ওঠে। মাথা নিচু করে ফেলে। রাগটা চাপা পড়ে যায়। কান্না পাচ্ছে।
উনি কেনো বোঝে না? ওনাকে অন্য কারো পাশে দেখলে তানহার হৃদয় পুরে।
” এসেছিস কেনো? জিজ্ঞেস করছি তো আমি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আবারও ধমক দিয়ে বলে সূচক। সাথে তানহার হাত দুটোও ছেড়ে দেয়। খানিকটা পিছিয়ে যায় তানহা। দুই চোখে পানি টলমল করছে। থুতনিটা নিচু করতে করতে গলার সাথে মিশিয়ে ফেলেছে।
তোহা রুমে ঢুকতে যাচ্ছিলো সূচকের ধমক খেয়ে পিছিয়ে যায়। এখন যেচে ধমক খেতে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না। তার থেকে ভালো ইমনকে জ্বালিয়ে আসা যাক।

“এখুনি চলে যা এখান থেকে। আংকেল দেখলে সমস্যা হবে।
সূচক দুই হাতে চুল টেনে খাটের এক পাশে বসে বলে।
তানহা শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। কিছুতেই যাবে না এখান থেকে। চলে গেলেই আবার ওই মেয়ের সাথে নিকনিক করতে চলে যাবে। এটা হতেই দেবে না তানহা। কিছুতেই হতে দেবে না।
” যেতে বললাম না।

রুম কাঁপিয়ে ধমক দিয়ে ওঠে সৈকত। তানহা ফ্লোরে দুই কানে হাত চেপে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
সৈকত নিজের মাথার পেছনে ছোট ছোট করে কিল দিয়ে মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। কিন্তু হচ্ছে না। অকারণেই রাগ হচ্ছে।

“তানহা এখন চলে যা এখান থেকে। সন্ধায় বাসায় যাবো আমি।
দুই হাতে চুল খামচে ধরে মাথা নিচু করে জোরে জোরে দুইবার শ্বাস টেনে বলে সূচক।
তানহা কান্না ভেজা চোখ তুলে এক পলক তাকায় সূচকের দিকে।
” আচ্ছা ঠিক আছে যেতে হবে না। খাবার এনেছিস?
সূচক তানহার দিকে তাকিয়ে বলে।
তানহা হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে নাক মুছে উঠে দাঁড়ায়। কাঁধ থেকে ব্যাগ খুলে সেখান থেকে টিফিন বক্স বের করে সূচকের সামনে রাখে।

“তুই পানি নিয়ে আয়। আমি খেতে থাকে।
টেবিলের ওপর থাকা জগ দেখিয়ে বলে সূচক।
তানহা জামা টেনে চোখের পানি মুছে জগ হাতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
সূচক বক্স খুলে খাওয়া শুরু করে দেয়।

মনের আকাশে মেঘ জমেছে তোহার। এতবড় সারপ্রাইজ পাবে কখনো ভাবতেই পারে নি। ইমনকে খুঁজতে খুঁজতে ছাঁদে চলে এসেছে। এই সময়ে পুরো বাসা খালি থাকে। যে যার কাজে বেরিয়ে গেছে।
ছাঁদে এসে ইমনকে দেখতে পায়। উল্টো দিকে ঘুরে কিছু একটা করছে। তোহা পা টিপে টিপে ইমনের পেছনে এসে দাঁড়ায়।
ফোনের স্কিনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যায় তোহা। একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে ইমন ভিডিও কলে। মেয়েটা খুব বাজে ভাবে আছে।

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে গা গুলিয়ে আসে তোহার।
মাঝেমধ্যে ব্রেকআপ হয় ওদের। আবার সব ঠিকও হয়ে যায়।
মাথা ঘুরছে তোহার। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। এসব কি দেখছে?
তারপর ইমনের কথা কানে যেতেই দুই হাতে কান চেপে ধরে তোহা।
ছি ইমন এতো অশ্লীল? এতো খারাপ?

মেয়েটা ইমনের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠছে।
হঠাৎ করে মেয়েটার হাসি থেমে যায়। হাতের কাছে থাকা ওড়নাটা গায়ো জড়িয়ে নেয়। ইমন চোখের ইশারায় কারণ জানতে চাইলে মেয়েটা পেছনে দেখায়।
ইমন পেছনে তাকিয়ে তোহাকে দেখে চট করে উঠে দাঁড়ায়। ফোটাও ছিঁটকে পরে যায়।
তোহা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইমনের দিকে। দুই চোখে টলমল করছে পানি। দুপুরের কড়া রোদ এসে পড়েছে তোহার মুখে। দুই পাশে ঝুঁটি করে চুল বেঁধেছে। চোখের গাড়ো কাজল লেপ্টে গেছে।
ঠোঁট দুটো তরতর করে কাঁপছে।

ইমনের গলা শুকিয়ে আসছে। কি বলবে? কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না।
“ততততোহা তুমি এখানে?
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে আমতা আমতা করে বলে ইমন।
তোহা চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। দুই গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ খুলে। এই খারাপ মানুষটার দিকে কখনোই তাকাবে না তোহা। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলে।

বা হাতে ইমনের দেওয়া ঘড়িটার দিকে নজর পড়ে তোহার। কিছুদিন আগেই গিফট করেছে।
তোহা চটজলদি ঘড়িটা খুলে ফেলে।
ইমনের পায়ের কাছে ঘড়িটা ফেলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায় ওখান থেকে। ইমন পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। কি বলার ভাষা নেই।
এভাবে ধরা খেয়ে যাবে বুঝতেই পারে নি।

সূচক খাচ্ছে আর তানহা মাথা নিচু করে বসে আছে। মনের মধ্যে উসখুস করছে কিছু প্রশ্ন। যা না জিজ্ঞেস করলেই নয়।
” মেয়েটা কে ছিলো?
আর থাকতে না পেরে বলেই ফেলে তানহা।
সূচক মুখের মধ্যে রুটি পুরে তানহার দিকে তাকায়।
“কোন মেয়ে?

তানহার থেকে চোখ ফিরিয়ে আবারও খাওয়ায় মনোযোগ দিয়ে বলে সূচক।
আবারও রাগ হয় তানহার। সূচকের হাত থেকে বাটি নিয়ে নেয়।
” খেতে হবে না তোর।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে বাটিটা ব্যাগে পুরে নেয়। সূচক আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে।
“আপনাকে আমি ভালোবাসি। অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ খুলে তাকালে চোখ গেলে দেবো বলে দিলাম।

সূচকের চুল গুলো জোরে টেনে দিয়ে বলে তানহা। তারপর সূচকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়।
কি বলে গেলো ভাবতে থাকে সূচক। প্রপোজ করলো? না কি থ্রেট দিলো?
তানহা বেরিয়ে যেতেই তোহা আসে। কোনো কথা না বলে সূচকের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। কান্নার ফলে নিঃশ্বাসটাও ভালো করে নিতে পারছে না
” কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমায়?
সূচক হাঁটতে হাঁটতে বলে। তোহা কোনো কথা বলে। কোথা দিয়ে হাঁটছে? কোথায় যাচ্ছে কিচ্ছু বলতে পারবে না?

নিজের মধ্যে যেনো নেই।
সূচক বোনের অবস্থা বুঝতে পেরে পাল্টা কোনো কথা বলে না। সাংঘাতিক কিছু যে হয়েছে সেটা ভালোই বুঝতে পারছে।
গেইটের বাইরে এসে থামে তোহা। ছেড়ে দেয় সূচকের হাত। তানহা ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো। বিধস্ত তোমাকে দেখে চমকে ওঠে। একটু আগেই তো মেয়েটা স্বাভাবিক ছিলো। কি হলো হঠাৎ?
তোহা হাঁটু মুরে বসে পড়ে রাস্তায় দুই হাসতো মাথা চেপে ধরে।

“এই তোহা কি হয়েছে তোর? বলবি তো আমায়।
সূচক তোহার পাশে বসে চিন্তিত ভঙিতে জিজ্ঞেস করে।
তানহা তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
আধো আধো চোখ তুলে সূচকের দিকে এক পলক তাকায় তোহা।
” আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবি ভাইয়া?

আমি না হাঁটতে পারছি না। চোখ দুটোও বন্ধ হয়ে আসছে। জানটা বেরিয়ে যাচ্ছে আমার।
টেনে টেনে আছে আধো গলায় বলে তোহা। এই টুকু বলতেই কয়েকবার কেঁপে কেঁপে উঠেছে। সূচকের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে।
তোহার অবস্থা দেখে তানহা কেঁদে ফেলেছে।
ইমনও ততখনে নিচে চলে এসেছে। বেশ খানিকটা দুরে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কাছে যাওয়ার সাহস নেই।

প্রণয় পর্ব ৩

সূচক পাঁজা করে কোলে তুলে নেয় তোহাকে।
তারপর বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করে।
ইমন মনে মনে খুব খুশি হয়। মনে হচ্ছে এতোদিনে ঘাড় থেকে নামবে। বন্ধু বোন বলে কিছু বলতেও পারে না। নাহলে কবেই জায়গা বুঝিয়ে দিতো।

প্রণয় পর্ব ৫