প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব ২৮

প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব ২৮
মুশফিকা রহমান মৈথি

কাকভেজা হয়ে বাড়ি ভিড়তেই দরজা খুলে দিলেন সুভাসিনী বেগম। তার মুখ থমথমে। অনল কারণ শুধাতেই তিনি বললেন,
“সেলিম ভাই এসেছেন”
সুভাসিনীর কথাটা বজ্রপাতের ন্যায় ঠেকলো ধারার কাছে। এই নামটি তার অতি অপছন্দের একটি নাম। নামটি যখন ই কর্ণপাত হয়, মনের অন্তস্থলটা ঘৃণায় তিতকুটে হয়ে উঠে। আজ ও তার অন্যথা হলো না৷ অনল জুতো খুলতে খুলতে বললো,
“দাদাজান কোথায়?”
“উনাকে, তোর বাবা সামলে রেখেছেন। তোরা ভেতরে আয়”

অনল ভেতাজুতোখানা এক পাশে রাখলো। তারপর আড়চোখে তাকালো ধারার পানে। তার মুখশ্রী কঠিন, বিরক্তির সূক্ষ্ণ ছাপ দেখা যাচ্ছে৷ আর যেটা স্পষ্ট তা হলো, বিষাদের নীল প্রতিচ্ছবি। বাবার প্রতি তার অনুভূতি গুলো বরাবর ই শীতল। সেলিম সাহেব তাকে ফোন দিলে সে থাকতো উদাসীন কিংবা চিঠি পাঠালে কখনো উত্তর দেবার চেষ্টা করে নি। সুতরাং সেই মানুষটাকে হুট করে বছর তেরো বাদে সামনে দেখলে তার প্রতিক্রিয়া ঠিক কেমন হবে বুঝে উঠতে পারছে না অনল। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধারা কোমল হাতখানা আকড়ে ধরলো। তার শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই ভাবনার জোয়ার থামলো ধারার। পাশ ফিরতেই অনল নরম গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি আছি। চিন্তা করিস না। শ্বশুর আব্বার সাথে তো দেখা হতেই হতো”
ধারা না চাইতেও নিস্প্রভ হাসি হাসলো। তারপর ভেতরে গেলো তারা।
বসার ঘরের সোফায় কালো স্ট্রাইপ শার্ট এবং কালো প্যান্ট পরিহিত মধ্যবয়স্ক একজন পুরুষ বসে আছেন। তার বয়সটি পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। মুখে মাঝারি গোঁফ, বেশ ঘন কাঁচা, পাকা দাঁড়ি। চোখের দৃষ্টি ক্ষীন হয়তো, কারণ সোনালী রঙ্গের মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে আছে সে। তার মুখ গম্ভীর, চোখের চাহনী ধারালো। ধারার নিজ বাবাকে চিনতে বেশ কষ্ট ই হলো। শেষ বাবাকে দেখেছিলো যখন মা মারা গিয়েছিলো। এর পর থেকে ধারার এই নামমাত্র বাবার দর্শন হয় নি। ধারাকে দেখামাত্র সেলিম সাহেবের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো। তার চোখজোড়া চকচক করছে তের বছর বাদে মেয়েকে দেখে। কিন্তু ধারার প্রতিক্রিয়া শান্ত। সে দেখছে সেলিম সাহেবের পাশে বসা সুন্দরী নারীটিকে। মুখশ্রীতে বাঙ্গালীর ছাপ থাকলেও তার পোশাক আশাকে বাঙ্গালীর ছিটে ফোটা নেই। বেশ একটি নীল শার্ট এবং একটি নিকষকালো জিন্স পরিধান করেছে সে। মুখে জৌলুশপূর্ণ হাসি। বয়স চল্লিশোর্ধ্ব হলেও মুখে বয়সের ছাপ নেই। মহিলাটিকে চিনতে কষ্ট হলো না ধারার। তার নাম রোকসানা। মহিলাটি এক সময় তার বাবার প্রেমিকা ছিলো। মায়ের মৃত্যুর পূর্বে তারা বিয়ে করেন। ধারাকে দেখতেই নরম আদুরে কন্ঠে রোকসানা বলে উঠলো,

“ধারা কেমন আছো?”
ধারা কাঠ কন্ঠে সালাম দিলো। তারপর অনলের পাশের চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। সেলিম সাহেব বললেন ও একবার,
“আমার পাশে এসে বয় মা”
কিন্তু ধারা রইলো নির্বিকার। তার হেলদোল হলো না। জামাল সাহেব, রাজ্জাক এবং ইলিয়াস একটি সোফায় বসে আছে। জামাল সাহেবকে রাজ্জাক শান্ত থাকার অনুরোধ করেছেন। জামাল সাহেব নিজেও জানেন তার শরীরটি ভালো নেই। তাই তিনিও নিজের ক্রোধ সংবরণ করে রাখলেন। তিনি ধারার আসার অপেক্ষাতেই ছিলেন। যাকে নিয়ে বৈঠক সে থাকাটি আবশ্যক। তাই মৌণতা ভাঙ্গলেন৷ রাশভারী কন্ঠে বললেন,
“সেলিম, তোমার আসবার কারণডা খোলশা করো। তোমারে আমার বেশিক্ষণ সহ্য হয় না। ডাক্তার কইছে সেই সব অপদার্থ থেকে দূরে থাকতে”
“দেখুন আব্বা..”

“আমার মেয়ে মইরা গেছে, আর তোমারে তার স্বামী হিসেবে আমি মানি না। তাই আমি তোমার আব্বা না। তোমার আব্বা তোমার মতো একটা অপদার্থরে আমার মেয়ের গলায় ঝুলায়ে দিয়ে মইরা গেছে। ওরে আমি কোনোদিন মাফ করুম না।”
“বেশ, জামাল কাকা আমি জানি আপনি আমার উপর ক্ষিপ্ত। হবার কারণ ও আছে। কিন্তু সেই শোধটি আমার মেয়ের উপর দিয়ে নিলে তো আমি মানবো না। আমার মেয়ের বিয়ে আমার অনুপস্থিতিতে হবে সেটা আমি কিভাবে সহ্য করবো? এই বিয়ে আমি মানি না। আমি আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছি। সেখানেই ধারার বিয়ে হবে”
সেলিম সাহেব কাঠকাঠ কন্ঠে কথাটা বললেন৷ তার উত্তরে ইলিয়াস বলে উঠলো,

“এতোকাল মেয়েটিকে আমরা পেলেছি সুতরাং তার ভালোমন্দটাও আমাদের দেখতে দিন সেলিম ভাই। আমার বোন আর বোনঝি কে রেখে যখন এই মহিলার সাথে আপনি সুখের দিন কাটাচ্ছিলেন তখন ই সেই অধিকার হারিয়েছেন। এখন বাবা বলে বড়াই করতে আসবেন না। আমরা মানবো না। আর আমাদের অনল কম কিসে! আমাদের মেয়েকে অনেক সুখে রাখছে।”
“ইলিয়াস, মেয়েটি আমার। যতই যাই করো তার পিতার স্থানে আমি ই থাকবো। সুতরাং তার ভালোমন্দটি দেখার দায়িত্ব ও আমার। আর ভুলে যেও না, আমি আমার মেয়েকে ভুলি নি। তোমরা জোর করে তাকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছো। সে তো আমার ভালো স্বভাব, কোনো কেস করি নি। ভেবেছি, মেয়ের খুশিতে আমার খুশি”
“তাহলে এবারো তাই ভেবে নাও, তোমার মেয়ে সুখে আছে”

সেলিম সাহেবের কথা শেষ না হতেই রাজ্জাক সাহেব বলে উঠলেন। সেলিম সাহেবের চোখ কুচকে গেলো। তিনি ধারার দিকে আড়চোখে তাকালেন। ধারা তখন ও অনলের হাত আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেলিম মৃদু হাসলেন, তারপর বললেন,
“ও বাচ্চা মানুষ। ও কি ভালো মন্দ বুঝে। এখন উঠতি বয়স। এখন তো সব ই ভালো লাগে। আমার ও এই বয়সে কত কিছু ভালো লাগতো। সুরাইয়া আর আমার বিয়েটাও তো এভাবেই দিয়েছিলেন আপনারা। লাভ টা কি হলো! কি জামাল কাকা! আমরা কেউ সুখী হলাম না। আর যাই হোক জোর করে সম্পর্ক টানা যায় না। একটা সময় সেটা নষ্ট হয়েই যায়। হয়তো ক্ষণিকের ভালোলাগা কাজ করে কিন্তু সেটা স্থায়ী হয় না। অনল এবং ধারার ক্ষেত্রেও তাই হবে”

“তুমি চুপ করবা? তোমার নষ্টামিরে এখন আমাদের মাথায় চাপাইতাছো? তোমারে কেউ জোর করে নাই! আমার মাইয়ারে যদি ভালো নাই বাসছিলা ছাইড়ে দিলা না ক্যান। ক্যান তারে তিলে তিলে মা’র’ছো? মাইয়াডা আমার কি কষ্টটা পাইছে। তোমার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে শেষমেশ আমাদের ছাইড়্যা চইল্যা গেছে। তোমার একখান চিঠির জন্য বইয়্যা থাকতো। তুমি তো জানতা সে অসুস্থ জানতা না? আরে নিষ্ঠুর, মাইনশ্যে তো কুকুরের লগে থাকলেও একটু মায়া জন্মায়। আমার মাইয়্যাডার লগে তুমি দশটা বছর এক সাথে ছিলা। মিথ্যা, মিথ্যি ফোন করতা। তুমি সেটা করো নি। তোমার জন্য কি কি না সইছে সে! তুমি বিদেশে যাইব্যা বইলে নিজের বিয়ের গয়না বেঁইছে দিলো। তুমি জানতা, ওই সময় মাত্র ওর বাচ্চাডা নষ্ট হইয়া গেছে। ওর মাথা খারাপ খারাপ অবস্থা, ধারাডা ছোট। তাও অমানুষ তুমি, তুমি না তুই। তুই ওরে ছাইড়ে বিদেশ গেলি। কি কইলি তুই এক বচ্ছরে ওদের লয়ে যাবি। হ আইলি ঠিক, আমার মাইয়া মরার পর। তাও এই লজ্জাহীন মহিলারে লইয়ে। তুই আমারে শিখাবি সম্পর্ক কেমনে কাটে? তুই? আরে তুই জানোস কিছু! এখন আমার নাতিনরে লইতে আইসো। শোনো হইতে পারো তুমি অনকে বড়লোক কিন্তু আমার নাতিন এখন অনলের বউ। তাই আমার নাতিনরে নিতে চাইলেও আমার নাতবউরে লইতে পারবা না”

জামাল সাহেব চোখ মুছলেন। তার কন্ঠ কাঁপছে। এতোকালের জমা ক্ষোভ তিনি সেলিমের উপর বর্ষণ করলেন। মনটা এখন একটু হলেও হালকা। সেলিম এতো সময় চুপ করে রইলেন। কথাগুলো ভুল নয়। ওই সুরাইয়া না থাকলে তার পক্ষে কিছুই সম্ভব হতো না। মেয়েটা সত্যি অন্যরকম ছিলো। কিন্তু মেয়েটি ছিলো অল্পশিক্ষিত, পড়াশোনা বেশি ছিলো না। খুব একটা সামাজিক ও ছিলো না। ব্যাপারটা তখন কাঁটার মতো লাগতো সেলিম সাহেবের। কিন্তু এখন আফসোস হয়। ভালো স্ত্রী হতে হয়তো এগুলোর কিছুই দরকার হয় না। রোকসানার সাথে থাকতে থাকতে সে বুঝেছে সুরাইয়া তার জন্য কতোটা মূল্যবান ছিলো। মেয়েকেও তাই অসামান্য ভালোবাসে সে। হয়তো সেটা দেখাবার সুযোগ পায় নি। বৃদ্ধ শ্বশুরটির সাথেও ছত্রিশের আখড়া বেধে রয়েছে। তাই তো তাকে না জানিয়েই ধারার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন এই বৃদ্ধ। ফলে প্রচন্ড ক্ষোভ হয় তার, আঁতে ঘা লাগে। সুতরাং সেলিম সাহেব ও হার মানবার পাত্রটি নয়। শ্বশুরের সামনে তো নয় ই। স্মিত হেসে বললো,

“আপনি তো আপনার কথাটা বললেন, এবার আমি বলি! আমার মেয়েটির এখনো জাতীয় পরিচয়পত্র আসে নি। তার জন্মসনদে আপনার বড় ছেলে অতি বুদ্ধিমত্তা দেখাতে বয়স কমিয়ে রেখেছে। তার সনদ অনুযায়ী বয়স সতেরো বছর আট মাস। সুতরাং আমার মেয়ের বয়স উনিশ হলেও সে আইনের চোখে নাবালিকা। এই বিয়েটি বাল্য বিবাহ। কোর্ট প্রমাণ চায়। আমার কাছে প্রমাণ আছে। তাই আমি আপনাদের কোর্ট অবধি টানতে পারি। আর তখন আপনার নাতিটি থাকবে জেলে৷ এবার সিদ্ধান্ত আপনাদের। আসছি আজকে”
বলেই উঠে দাঁড়ালেন সেলিম সাহেব। জামাল সাহেব রাগে গজগজ করছেন। এদিকে রোকসানা লোক দেখানো আদর করতে এগিয়ে গেলো ধারার দিকে। কিন্তু ধারার শীতলতা তাকে মাঝপথে আটকে দিলো। সেলিম সাহেব যেতে ধরলে অনল নির্লিপ্ত স্বরে বলে,

“এজন্যই বুঝি দীপ্তকে পাঠিয়েছিলেন? যাতে মেয়ের সকল খবর নিতে পারেন! ভালো বুদ্ধি ছিলো। কিন্তু কি ফুপা, বাবার অধিকার জমাতে হলে বাবা হতে হয়। আর আপনি সেটা নন। নিতান্ত স্বার্থপর মানুষ আপনি। সুতরাং এসব ভয় দেখাবেন না। চার মাস, এরপর কি করবেন? এর পর ধারা আইনের চোখে একজন এডাল্ট। তখন কি এইসব যুক্তি খাটবে?”
“অনেক বর হয়ে গেছো। শেষ দেখেছি, ছোট ছিলে। ছুটে এসে চকলেট চেতে। এখন আমাকে যুক্তি দেখাচ্ছো। ভালো, দাদার মতোই হয়েছো। কিন্তু আমিও মানুষটা ভালো না। তাই আমাকে চ্যালেঞ্জ দিও না। অস্ট্রেলিয়ায় থেকে মেয়ের সকল খোঁজ নিতে পারলে তাকে নিজের কাছে কিভাবে আনতে হয় সেটাও জানি”

“সেটা নাহয় সময় বলুক”
সেলিম সাহেব আর অপেক্ষা করলেন না। রোকসানাকে নিয়েই বেরিয়ে গেলেন। তার বেরিয়ে যাবার সাথে সাথে জামাল সাহেব রাজ্জাককে ঝাঁঝিয়ে বললেন,
“এই গা’ধা’র বাচ্চা গা’ধা, তোরে কে কইছিলো ধারার বয়স কমাইতে? ব’ল’দ কোথাকার একটা”
“আব্বা, আমি কি জানতাম নাকি সেলিম ভাই এই সুতো ধরবে! ধারারে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় মাস্টার বললো, বয়স কমাতে। নাকি সরকারি চাকরিতে অনেক কাজে দিবে”
“হ, দিছে খুব। আ’হা’ম্মক কোথাকার। কথা কবি না আমার সাথে”

জামাল সাহেবকে কিঞ্চিত ভীত মনে হলো অনলকে। এই প্রথম তিনি ভয় পাচ্ছেন, সেলিম সাহেবের কথায় যুক্তি আছে। উপরন্তু আইনগত ধারা এবং অনলের বিয়েটা হয় নি। ধারার বয়স কম বিধায় ধার্মিকভাবেই বিয়েটা হয়েছিলো। রেজিট্রি করাটা এখনো বাকি। জামাল সাহেব ভেবেছিলেন সময় হলে অনল এবং ধারার ধুমধাম করে বিয়েটা দিবেন। কিন্তু আগেই সেলিমের আগমন হলো। সুতরাং একটা ঝামেলা বাধাটা খুব অস্বাভাবিক নয়। অনল তবুও হাল ছাড়লো না। কারণ ধারা এবং তার মনের মেলবন্ধনটি হয়ে গেছে। কাগজ দিয়ে তো সম্পর্ক হয় না। সম্পর্ক সর্বদা মনের ব্যাপার। অনল দাদাজানের সামনে হাটু গেড়ে বসলো, নরম গলায় বললো,

“দাদাজান, আপনি ধারার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন এই ভেবে যে আমি তাকে সামলে রাখবো। তাহলে আপনি কেনো ভয় পাচ্ছেন? ধারা না চাইলে ওকে কেউ জোর করতে পারবে না। আমি হতে দিবো না”
“তোমারে দেখলে আমার শান্তি লাগে, আমার ধারারাণীরে দেইখে রাইখো”
জামাল সাহেবের কন্ঠ কাঁপছে। বৃদ্ধ মানুষটি সত্যি ই ভীত আজ। এদিকে এশা আশা এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। আশা ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,

“অস্ট্রেলিয়ান ফুপা ভালো কাজ করলো না। আমাদের ধারাপুকে এভাবে নিয়ে যাবে! হুমকি পর্যন্ত দিলো”
“এতো সহজ? এর শোধ তো তুলবোই। তুই চিন্তা করিস না। ধারাপু আমাদের কাছেই থাকবে।”
“করবি কি তুই!”
“অনেক কিছু, কিন্তু এখন শুধু সুযোগের অপেক্ষা। অস্ট্রেলিয়ান ফুপাও বুঝবে কত ধানে কত চাল”
বলেই সফেদ দাঁত বের করে হাসলো এশা। আশর মুখেও হাসি ফুটলো। বোনের দুষ্টু মস্তিষ্কের উপর বিশাল বিশ্বাস তার।

আজ সব কিছু মিলিয়ে ক্লান্ত ধারা। প্রথমেই দিগন্তের সাথে কথা কাটাকাটি। উপরন্তু এখন বাবার ঝামেলা। যখন বাবা অনলকে জেলের ভয় দেখাচ্ছিলো ধারার বুকটা কামড় দিয়ে উঠেছিলো। নিজেকে আজ বড্ড অপদার্থ মনে হচ্ছে। অনলের জীবনে সে যেনো একটা বিরাট বড় পাথর। তার কারণে অনলের উপর আজ বিপদেরা নৃত্য করছে। অথচ তার কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না। কলেজে না হয় সামলে নিবে, কিন্তু বাবা তাকে কিভাবে সামলাবে! আচ্ছা লোকটি এমন কেনো! কেনো কিছুতেই ধারার জীবন থেকে সরে যায় না সে। পেন্ডুলামের মতো শুধু ঘুরছে আর ঘুরছে। সে কি প্রমাণ করতে চাইছে, যে ধারাকে সেই ভালোবাসে! কিন্তু এটা তো তার ভুল ধারণা। ধারা চায় না যেতে অস্ট্রেলিয়া। ওই রোকসানা নামক মহিলার ধারে কাছে সে থাকতে চায় না। চিন্তার জোয়ার মস্তিষ্ক অকেজো করে তুলছে। ধারা দুহাতে মাথা চেপে ধরলো। চুল আঁকড়ে বসে রইলো সে। এমন সময় পুরুষালী কন্ঠ কানে এলো,

“চুল গুলো ছিড়ে গেলে তো টাক হয়ে যাবি। আমার টাক বউ কিন্তু চলবে না”
মাথা তুলে তাকালো ধারা। অনল তার হাতা গোটাতে গোটাতে বললো কথাটা। ধারা থমথমে গলায় বললো,
“তোমার ভয় করছে না?”
“কিসের ভয়?”
“জেলের ভয়! চাকরি হারানোর ভয়! সাসপেন্ডের ভয়!”

প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব ২৭

অনল অমলিন হাসলো। স্নিগ্ধ সেই হাসি। অর্ধভেজা শার্টটা খুলে ঝুলালো হ্যাঙ্গারে। তারপর পাশে এসে বসলো ধারার। ধারার কপালে গভীর চুম্বন একে বললো,
“এসবের ভয় আমার নেই। তবে একটা ভয় আছে। জানিস সেটা কি?”
“কি?”
“তোকে হারানোর ভয়”……..

প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব ২৯