পথান্তরে প্রিয়দর্শিনী পর্ব ২৯

পথান্তরে প্রিয়দর্শিনী পর্ব ২৯
মম সাহা

রাতের আঁধারও জমজমাট খুশির আমেজ কমাতে পারে নি। তৃণাদের বাড়ি ভরা মানুষ। আশেপাশে বাড়ির মহিলা দিয়ে বাড়ি পরিপূর্ণ। পান খাচ্ছে, চা খাচ্ছে আর বিয়ের গল্পে মেতে উঠছে। কেউবা নিজের বিয়ের গল্পও শুনাচ্ছে। কেউ তৃণাকে দেওয়া তার শ্বশুর বাড়ি থেকে আশীর্বাদের গহনা দেখতে চাচ্ছে। ঠাট্টা, টিটকারিতে রমরমা পরিবেশ। বাড়ির উঠোনে বড় একটা লাইট জ্বালানো। সেই লাইটের আলোর নিচে বসেছে মহিলাদের গল্পের হাট। বিমল সাহা একটু পর পর এসে তদারকি করছে সবার কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না। মাঝে মাঝে মহিলা গুলো তার সাথেও ঠাট্টায় মেতে উঠে। গ্রামের রীতি নিয়মও একটু ভিন্ন রকম। অনুষ্ঠান এক বাড়ির হলেও মেতে উঠে সবাই। আবার শোক এক বাড়ির হলেও বিষাদে মিইয়ে যায় সবাই। কিন্তু আবার পুরোনো সংস্কৃতি অনুযায়ী কাউকে হেয় করতে এক মিনিটও ভাবে না।

নিধি, নিধির মা রমলা,নিধির কাকী রান্নাঘর সামলাচ্ছে। চা বানাচ্ছে, পাপড় ভাজছে। সরলাও এসেছে,সে আপাতত উঠোনে। প্রদীপকে একটা রুমে শুয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাড়ির সামনে এসে থামে দর্শিনীদের গাড়ি। ঘড়ি কাঁটায় তখন রাত দশটা পনেরো বাজছে। দর্শিনী, নিপা,প্রতাপ সাহা ধীর গতিতে নেমে গেলেন। মৃত্যুঞ্জয় আর দৃষ্টান্ত ঠাঁই বসে আছে। তাদের বাড়ির ভেতর আসতে বললে তারা প্রস্তাব নাকোচ করে। অনেক রাত হয়েছে বলে পাড়ি জমায় নিজেদের গন্তব্যে। দর্শিনীরা ধীর পায়ে প্রবেশ করে বাড়িতে।
দর্শিনীকে দেখে উঠানের জাঁকজমক আড্ডায় ভাঁটা পড়ে। সবার হাসি হাসি মুখ গুলোতে কৌতূহল উপচে পড়ে। এখানে অবস্থিত সবাই ই জানে দর্শিনী শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে এসেছে। দর্শিনীকে দেখে উঠানে অবস্থানরত নিধির এক জেঠিমা বলে উঠে,
“আরে দর্শিনী যে! তা ডিভোর্সটা হলো শেষমেশ?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

উপস্থিত সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আজ যে দর্শিনীরা ডিভোর্সের জন্য শহরে গিয়েছে এটা কেউ জানতো না। হয়তো নিধির কাছ থেকে এই ভদ্রমহিলা জেনেছে। আগে সংসারের কোনো কথা নিধি বের করতো না কারো কাছে কিন্তু এখন তার আচরণ বদলেছে। পাড়া প্রতিবেশীর সাথে মানুষের সমালোচনা করে বেড়ায়। এর ওর দোষ ধরতে বেশি পছন্দ করে।
জেঠিমার পাশে বসা কালো, মোটাতাজা এক মহিলা বলে উঠলো,
“আহারে,আজ ডিভোর্স টা হলো? বাচ্চার কথা ভেবেও তো টিকিয়ে রাখতে পারতে সংসার টা। ডিভোর্সই কী সব সমাধান? আজকালকার মেয়েছেলেরাও না ডিভোর্সের মাঝে সুখ খুঁজে নেয়।”
“যখন বেঁচে থাকাটা মুখ্য হয় তখন ডিভোর্সই সব সমাধান হয়ে যায়, মাসি।”

নিপার হাসি হাসি মুখের ঝাঁঝালো উত্তরে দর্শিনী ভরসা পেলো। নিধির ঠাকুমাও ফোঁকলা দাঁতে পান চিবাচ্ছিলেন সেখানে। এতদিন সে মেয়ের বাড়িতে ছিলো। নাতনির বিয়ের কথা শুনে এখানে এসেছে। সত্তরের বেশি বয়স হবে মহিলাটির। সাদা থান শরীরে জড়ানো। ব্লাউজ পড়েন নি। গ্রামের বেশির ভাগ বৃদ্ধাই শরীরে কেবল সাদা থান জড়িয়ে ঘোমটা দিয়ে থাকেন।
মহিলাটি পান চিবুতে চিবুতে দর্শিনীর উদ্দেশ্যে বললো,
“পোয়াতি মাইয়া মানুষ এত রাইতে বাইরে থাকা ভালা না লো ছেড়ি। যা, আমার তিরিনা দিদি ভাইয়ের ঘরে গিয়া বাইরের জামা কাপড় পাল্ডা। বেডা মানুষ গেছে গা জীবন থেইকা, হেইডার শোক পালন করার দরকার নাই। এমন বেডা থাহনের চেয়ে বিধবার মতন থাহাও ভালা। যা তো ছেমড়ি। আমি তিরিনার মারে কইতাছি তোরে হলুদ দুধ দিতে। খাইলে ভাল্লাগবো। যা।”

দর্শিনী মাথা নিচু করে ধীর পায়ে তৃণার ঘরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। তন্মধ্যেই বৃদ্ধার কর্কশ কণ্ঠ ভেসে এলো। সে উপস্থিত মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলছে,
“তোমরা মাইয়া মানুষ হইয়া আরেকডা মাইয়াে শোক বুঝো না, কষ্ট, দুক্কু বুঝো না এইডা একটা লজ্জার কতা। এই ছেমড়িডার উপর দিয়া কী যাইতাছে সেইডা যদি বুঝতা তাইলে এমন তামাশা করতে পারতা না।”
দর্শিনী আর দাঁড়ালো না৷ তৃণার ঘরে ধীর পায়ে প্রবেশ করলো। আসলে যুগ বদলানোর সাথে মানসিকতা বদলায় এ ধারণাটা ভুল। নাহয় এ যুগের মানুষ হয়ে মহিলা গুলো তাকে ভৎসনা করতো না আর না ঠাকুমা আগের যুগের হয়েও তার পক্ষে কথা বলতো। সমাজ শিক্ষিত হচ্ছে ঠিক,বিবেক আজও মূর্খই রইলো।

তৃণার ঘরের লাইট বন্ধ। উত্তর দিকের জানালাটা খোলা। সেখানেই শাড়ি পড়া এক নারীর অবয়ব দেখা যাচ্ছে। জানালার এই দিকটাই মানুষ জনের আসা যাওয়া নেই। কেবল গাছাপালা আর খোলামেলা জায়গা।
দর্শিনী ঘরে ঢুকেই দরজাটা হালকা করে চাপিয়ে দিলো। তৃণার সামান্য ধ্যান ভাঙলো। দর্শিনী ততক্ষণে তৃণার পাশাপাশি এসে দাঁড়িয়েছে। চাঁদের আলোয় হালকা উজ্জ্বল দুই নারীর মুখমন্ডল। তৃণা দর্শিনীর দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। ক্ষীণ কণ্ঠে বললো,

“হ্যাপি ইনডিপেনডেন্স ডে, প্রিয়দি।”
এই সময়ে এমন কথায় ভ্রু কুঁচকালো দর্শিনী। অতিব আশ্চর্যিত ভঙ্গিমায় বললো,
“আজ স্বাধীনতা দিবস হতে যাবে কেন? কী বলছিস এসব?”
“আমি তো কেবল তোমাকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানালাম। কারণ আজ স্বাধীনতা দিবস কেবল তোমার জন্য। ভুল সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাওয়াটাও এক প্রকারের স্বাধীনতা। হয়তো কষ্ট পাবে কিন্তু বাঁচার মতন বাঁচবে।”
“সে মানুষটাকে ছাড়া আমাকে বাঁচতে হবে কখনো ভাবি নি রে তৃণা। আর তাকে ছাড়া বাঁচাকে স্বাধীনতা দিবস ভাবতে হবে সেটাও ভাবি নি কখনো। তবুও আজ মনে সংশয় নেই। নিঃসন্দেহে আজ আমি স্বাধীন।”

তৃণা হাসলো। অন্ধকারের মাঝেই তার নাকের সরু নাক ফুলটা চিলিক দিয়ে উঠলো। দর্শিনীকে যেন জানান দিলো তৃণাকে নিয়ে ভাবার কথা। দর্শিনী কতক্ষণ তৃণার সারা মুখে চোখ বুলালো। বিষন্ন কণ্ঠে বললো,
“মেসো মশাই কেনো তোর বিয়েটা এত দ্রুত দিচ্ছে, তৃণা?”
“জানিনা, দি। হয়তো ভালোবাসা জীবনের সব থেকে বড় আফসোস সেটা প্রমাণ করানোর জন্যই এ সিদ্ধান্ত।”
তৃণার কণ্ঠে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। দর্শিনী অদ্ভুত কণ্ঠে বললো,
“তুই দৃষ্টান্ত’দাকে ভালোবাসিস তাই না?”
তৃণা উত্তর দিলো না। কেবল মুচকি হাসলো। হয়তো নিরবতা সম্মতির লক্ষণ বলেই দর্শিনী উত্তরটা বুঝে নিলো। তৃণার বাহুতে হাত দিয়ে স্বান্তনার কণ্ঠে বললো,

“তবে মেসো মশাইয়কে কেনো বলছিস না?”
“বাবা এটা জেনেছে বলেই বিয়ের এত তোড়জোড়। বাবা বলেছে দৃষ্টান্তকে, ওর বাবা যদি তোমাদের জমি নিয়ে আর কোনো ঝামেলা না করে তবেই সে তার মেয়েকে দৃষ্টান্তের হাতে তুলে দিবে। দৃষ্টান্তকে এমন শর্ত দিয়েছে যেটা সে কখনো পূরণ করতে পারবে না। ওরা আমার জীবনটাকে খেলনা পেয়েছে। আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল দৃষ্টান্তকে আবার ভালোবাসতে বাধ্য করা। ছেলেটাতো আমায় যেচে ভালোবাসতে আসে নি। আমিই আশ্বাস দিয়ে ছিলাম চিরদিন ওর পাশে থাকার। কতটা বেইমান হয়ে গেলাম আমি! ছেলেটাকে আবার না পাওয়ার যন্ত্রণায় পুড়াবো।”

দর্শিনী অবাক হলো তৃণার কথায়। অবাক কণ্ঠে বললো,
“আবার না পাওয়ার যন্ত্রণায় মানে? দৃষ্টান্ত দা আগেও কাউকে ভালোবাসতো!”
তৃণা উত্তর দেওয়ার আগেই তাদের বাড়ির গৃহপরিচারিকা গরম দুধ নিয়ে হাজির হলো। রমলা নাকি পাঠিয়েছে। দর্শিনীর আর জানা হলো না দৃষ্টান্তের ভালোবাসার গল্প। তবে সে এই মেয়েটার জন্য কিছু অবশ্যই করবে।

পুরো একটা রাত পর মোহনার জ্ঞান ফিরলো। ডান হাতটা নড়ানোর শক্তি তার নেই। তাছাড়া পুরো শরীরই নড়াচড়া করাতে সক্ষম সে।
মোহনা জ্ঞান ফিরতেই চোখ বুলালো আশেপাশে। কেবিনের এক সাইডে সোফায় বিহঙ্গিনী ঘুমিয়ে আছে। মোহনা ডান দিকে তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ। তার মাথার কাছেই একটা কাঠের টুলে মায়া বসে আছে। মোহনা আবারও পুরো কেবিনে চোখ বুলালো। ছেলে আর স্বামীকে না দেখে তপ্ত এক শ্বাস ফেললো। তার স্বামীর না থাকাটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারলেও ছেলের ব্যাপারটা সে নিতে পারে নি। তার ছেলে এখানে আসে নি কেনো! তবে কী ঐ মেয়েটার সাথে তার ছেলের সম্পর্ক ঠিক হয়ে গেছে? ছেলে কী তবে বৌ ভক্ত হয়ে যাবে? তারপর তার ছেলে আর ছেলের বৌ মিলে কী তাদের উপর খুব অত্যাচার করবে? বিহুকে অনেক শাস্তি দিবে? তাদের কী বাড়িতে আর জায়গা হবে না?

মোহনার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিকের চেয়েও অধিকতর হয়ে গেলো। অনাকাঙ্খিত ভয়ে শরীর ঘেমে উঠলো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো নোংরা অতীত।
মায়া এতক্ষণ মোহনার দিকেই নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলো। কিন্তু আকষ্মিক মোহনার এমন পরিবর্তনে সে হকচকিয়ে গেলো। বুড়িকে তো এত তাড়াতাড়ি মরতে দেওয়া যাবে না। ছটফটিয়ে বাঁচবে এই মহিলা।
মায়া ব্যতিব্যস্ত কণ্ঠে মোহনাকে বললো,
“কী হলো, শাশুড়ি? কোনো সমস্যা হচ্ছে?”
মোহনা অস্ফুটস্বরে বললো,
“আমার বাবু,আমার বাবু কই মায়া?”

মায়া অবাক হলো। বিয়ের এত মাসে এ প্রথম মোহনা তার নাম ধরে ডাকলো। মায়া বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইলো।
মোহনা ধৈর্য হারা হয়ে বললো,
“ডিভোর্সটা হয় নি তাই না?”
মায়া নিজেকে ধাতস্থ করলো। এই মোহনা জীবনেও শুধরোবে না ভেবে হতাশার শ্বাস ফেলে। তারপর কুটিল হেসে বলে,
“আপনার জন্য দুইটা খবর আছে শাশুড়ি মা। একটা সুখবর, আরেকটা দুঃখের খবর। কোনটা শুনবেন আগে?”
মায়ার কুটিল হাসি আর কথার ভঙ্গিমা দেখে মোহনার রক্ত হিমশীতল হয়ে গেলো। কেনো মতে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো,
“সুখবরটাই আগে বলো।”
“ডিভোর্স টা হয়ে গেছে,শাশুড়ি।”
মোহনার যেন মনে হলো মায়া পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কথাটা উচ্চারণ করলো। তার কানকে সে ধন্য মনে করলো এমন একটা কথা শুনে।

মোহনার মুখে হাসি খেলে যেতে ঘৃণায় রি রি করে উঠলো মায়ার শরীর। তাই সে বাঁকা হেসে বললো,
“দুঃখের খবরটা শুনবেন না, শাশুড়ি?”
“কী সেটা?”
মোহনার তীক্ষ্ণ প্রশ্নে মায়ার হাসি গভীর হলো। কণ্ঠ খাঁদে নামিয়ে হেসে বললো,
“আপনার ছেলে আবারও জেলে গিয়েছে।”
মোহনা অবাকে হতবাক হয়ে যায়। অবাক কণ্ঠে চিৎকার দিয়ে বলে,
“কী!”

মোহনার চিৎকারে ধরফরিয়ে উঠে বিহু। মায়ের কাছে এসে ব্যস্ত ভঙ্গিতে মাকে দেখতে শুরু করে। মায়ের কোনো সমস্যা হলো কিনা। মায়ার মুখের হাসি গভীর থেকে গভীর হলো। তন্মধ্যেই তার ফোন কিঞ্চিৎ ভাইব্রেট করে উঠে জানান দিলো নতুন বার্তা এসেছে। মায়া ম্যাসেজ ওপেন করতেই হৈমন্তের ম্যাসেজ ভেসে উঠলো,
“মায়া,তাড়াতাড়ি বাড়ি ফের। তোর শাশুড়ির ঘর হাতিয়ে কিছু তথ্য পেয়েছি। উনি স্বাভাবিক না মায়া। উনি খুনি।”
মায়া হতভম্ব হয়ে একবার ম্যাসেজ আরেকবার মোহনার দিকে তাকালো। এমন কথার কারণ তার যেন বোধগম্য হলো না।

সকাল হতেই দর্শিনী মৃত্যুঞ্জয়দের বাড়িতে হাজির হলো। তৃণা আর দৃষ্টান্তের সম্পর্কটার সঠিক পরিণতির জন্য মৃত্যুঞ্জয়ের সাহায্য দরকার। বাড়ির সদর দরজা খুলে দিলো বাড়ির কেয়ার টেকার। ড্রয়িং রুমে তখন অনেক মানুষজন। দর্শিনী বিব্রতিতে পড়লো। সে তো ভুলেই গেছে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের লোক যে এসেছে বাংলাদেশ।

পথান্তরে প্রিয়দর্শিনী পর্ব ২৮

হঠাৎ কাউকে প্রবেশ করতে দেখে রাজকীয় বাড়িটার মানুষ জনের আড্ডায় বিরতি ঘোষণা হলো। সবাই দর্শিনীর দিকে কৌতূহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তার মাঝেই পঞ্চাশের মতন বয়সী এক সুন্দর, সভ্য, লম্বা চওড়া মহিলা এগিয়ে এলো। চোখে তার চিকন গ্লাসের চশমা। শরীরে জড়ানো শাড়ি। ভরাট কণ্ঠে সে ভদ্রমহিলা প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“তুমিই কী প্রিয়দর্শিনী?”

পথান্তরে প্রিয়দর্শিনী পর্ব ৩০