প্রণয় বিরহ গল্পের লিংক || অর্ষা আওরাত

প্রণয় বিরহ পর্ব ১
অর্ষা আওরাত

আড়াই বছর পর যখন অধীর আগ্রহ নিয়ে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এক নজর দেখবো বলে তখন দেখলাম তারই পাশে অন্য একটি মেয়ে ইহাদকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছে! এরকম দৃশ্য দেখে যেনো পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো এরম অবস্থা! বুকের পা পাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হলো। না চাইতেই অশ্রু কনারা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো! আমার প্রণয় শুরু হবার আগেই প্রণয়ের বিরহে বিলীন হতে হলো আমাকে।

হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা অশ্রু মুছে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলাম ইহাদ নামক মানুষটি যাকে আমি ভালোবাসি। তার সঙ্গে একটি মেয়ে খুব গভীরভাবে তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে! আমি যে তাদের এই দৃশ্য অবলোকন করছি সেটা বোধহয় তাদের দৃষ্টিগোচর হলো না। সবার আগে ভাইয়াকে আমি দেখবো বলে দৌড়ে গাড়ি থেকে নেমে গেছিলাম ভাইয়ার সাথে দেখা করবো বলে। কিন্তু নেমেই যে দেখতে পেলাম ইহাদ ভাইয়া একটি মেয়েকে খুব গভীরভাবে আলিঙ্গন করে আছে! মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে যে তাকানো আর পাঁচটা তাকানোর মতন এটা যে বিপরীত মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে তাকানো এটা যে কেউ বুঝে যাবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে রয়েছি ইহাদ ভাইয়ার দিকে। মানুষটার চোখে সুখে আনন্দের ঝিলিক নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটাও তার সম্পূর্ণ দৃষ্টি আবদ্ধ করে রেখেছে ইহাদ ভাইয়ার দিকে! তাদের দু’জনের দৃষ্টি এখন দু’জনের মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে! এক সময় যে দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আমি নিজের ভুবন ভুলতাম এখন সেই দৃষ্টিই অন্য কারো মায়ায় গভীরভাবে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে। কিয়ৎক্ষণ সময় সেভাবে অতিবাহিত হলো।

তারপরেই কিছুক্ষণ পর সেই মেয়েটি উল্টোদিকে হাঁটা দিলো ইহাদ ভাইয়াকে ছেড়ে। বোধহয় মেয়েটি তার নিজের গন্তব্য যাচ্ছে। হয়তো কিছুদিন পরেই তাদের ভালোবাসার কথা সম্মুখ সমরে প্রকাশ করবে। ইহাদ ভাইয়া অন্য কারো হয়ে যাবে সেই কথা যতোবারই মনে পড়ছে তখনি যেনো কেউ আমার বক্ষপিঞ্জরে জোরে জোরে আঘাত করছে যা সহনীয় নয়! দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।

উপলব্ধি করতে পারছি ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে দেখার যন্ত্রণা কি! উল্টো দিক ফিরে তাকালাম। ফ্যামিলির সবাইই আমাকে ক্রস করে ইহাদ ভাইয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একমাত্র আমি ছাড়া। আমি কি করে সহ্য করবো তার পাশে অন্য কাউকে? এখন ইহাদ ভাইয়াকে দেখলেই কিয়ৎক্ষন পূর্বের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে ওঠছে! ক্রমশ কষ্টরা দলা পাকিয়ে এক হয়ে অশ্রুতে রুপান্তর হয়ে অশ্রু ঝড়ছে দু চোখ দিয়ে।

হয়তো কেউ সেটা একবারের জন্য ও লক্ষ্য করেনো সবাই এখন ইহাদ ভাইয়াকে নিয়েই ব্যস্ত। আর ইহাদ ভাইয়া তার কি মনে পড়বে একবারের জন্য আমি নামক কেউ আছি? হয়তো না! কারন তার মনে পড়ার জন্য অন্য একজন এসে পড়েছে। আর ভাবতে পারছি না কোনো কিছু মাথাটা কেমন ঝিম ধরে আসছে! অপর পাশে সবাই ইহাদ ভাইয়াকে নিয়ে মাতামাতি করছে। নানান রকম প্রশ্নও করছে ইহাদ ভাইয়া সেটা হাসি মুখে জবাব দিয়ে যাচ্ছে। কেনো জানি ইহাদ ভাইয়ার হাসোজ্জল মুখ দেখে আবার কিয়ৎক্ষন পূর্বের ঘটনা মনে পড়ে গেলো! আর কিছু ভাবতে পারলাম। চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সবকিছু!

জ্ঞান ফিরতেই আশেপাশে চোখ মেলে দেখতে লাগলো জুঁই। সে তো এয়ারপোর্টে ছিলো তাহলে রুমে আসলো কখন? প্রশ্নরা মস্তিষ্কে উঁকি দিতেই রুম ছেড়ে বাইরে বেরোলো জুঁই। রুমের বাইরে বেরোতেই ড্রয়িং রুমে সবাই গোল হয়ে বসে আছে আর তাদের সবার মধ্যেখানে ইহাদ ভাইয়া! বোঝাই যাচ্ছে বাড়ির সবার কৌতুহল এখন ইহাদ ভাইয়ার দিকে। নিজের মনকে ফ্রেশ করতে ছাঁদে ওঠলো জুঁই। ছাঁদে গিয়ে বুক ভরে সতেজ বাতাস নিলো সবার আগে। চোখ বুলালো ছাঁদে থাকা কয়েকটি ফুলের টবের দিকে। ফুলগুলো কতো সতেজ হয়ে আছে। এর ভিতরেই একটি সাদা গোলাপ ফুলের চারা হাতে নিয়ে আনমনে ফুলটির দিকে তাকিয়ে আছে।

–“ইহাদের সাদা গোলাপ প্রিয় বলে এই ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস ইহাদকে দিবি বলে নাকি জুঁই?”
জুঁইয়ের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটলো কারো শব্দ ধ্বনি কর্নকুহুরে প্রবেশ করতেই। আচমকা পিছন দিক ফিরে তাকালো। আগন্তককে দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
–“তুমি এখানে বৃষ্টি আপু? তাও আবার এই সময়? তুমি তো ছাঁদে বেশি একটা আসো না তাহলে যে আজকে এসেছো?”

বৃষ্টি হলো জুঁইয়ের মেজো কাকার মেয়ে। জুঁইয়ের থেকে দুই বছরের বড়ো। জুঁইয়ের বাবারা সবাই জয়েন ফ্যামিলি তে থাকে। জুঁইয়ের বাবার তিন ভাই তাদের মধ্যে জুঁইয়ের বড়ো ঝেঠুর ছেলেই ইহাদ। যে কিনা হায়ার স্টাডির জন্য এতোদিন বিদেশে ছিলো তারা দু’ভাই। বৃষ্টির বাবা মেজো। বৃষ্টিরা এক ভাই এক বোন। ভাই এখনো অনেক ছোটো মাত্র স্কুলে পড়ে আর জুঁইয়ের বাবা ছোটো। জুঁই একা তার কোনো ভাইবোন নেই। জুই ইন্টারে পড়ছে সামনেই ফাস্ট ইয়ারের ফাইনাল পরিক্ষা। বৃষ্টি বলে ওঠলো,

–“ইহাদ আসবে বলে যে আজ কতো আনন্দে ছিলিস সারাদিন দেখলাম তাহলে এখন এই অবেলায় মন খারাপ করে এভাবে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? নিচে তো সবাই ইহাদকে নিয়ে গল্প করছে তুইও সেখানে যা?”
বৃষ্টি আপুর কথায় তৎক্ষনাত এয়ারপোর্টের দৃশ্যের কথা মনে পড়তেই কঠোর বাক্যে বৃষ্টি আপুকে বলে দিলাম,
–“তো তিনি এসেছেন আমি কি করবো তাতে? সে কোথাকার সেলিব্রেটি যে আনন্দে থাকবো। তার কথা বাদ দাও তো আপু।”

আমার কথা শুনে বৃষ্টি আপু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেনো আমি কতোবড়ো একটা ভূল বাক্য বলে ফেলেছি! বিশ্বাস হচ্ছে না আমি এগুলো বলছি! বৃষ্টি আপু তার চোখে মুখে প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে আমাকে জিগেস করলেন,

–“কেউ জানুক আর না জানুক আমি জানি তুই ইহাদ ভাইয়াকে পছন্দ করিস মানে ভালোবাসি এক কথায়! মনে আছে কাল সন্ধ্যা বেলা কতোটা এক্সাইটেড ছিলিস তুই ইহাদ আসবে বলে? তাহলে কি এমন হলো বল? এয়ারপোর্টে গেলি হাসি খুশি ভাবে আর ফিরে আসলি মুখ গোমড়া করে তাও আবার অজ্ঞান হয়ে! তোর হয়েছে টা কি একটু ঠিক করে বলবি আমায়?”

–“তেমন কিছু না তখন মাথাটা একটু ধরেছিলো তাই হয়তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছিলাম। আর মুখ গোমড়ার কিছু নেই তুমি এতো প্রশ্ন করো না তো।”

বৃষ্টি আপুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছাঁদ থেকে হনহন করে নেমে গেলো জুঁই! বৃষ্টি জুঁইয়ে যাবার পানে তাকিয়ে ভাবছে মেয়েটার হলো টা কি?” জুঁই নিচে নেমে একেবারে হাফ ছেড়ে বাঁচলো! এখনি কাউকে কোনো কিছু বলতে না চায় না সে। বৃষ্টিকে সে কি করে বলবে ইহাদ ভাইয়ার সাথে তার প্রণয়ের সুত্রপাত ঘটার আগেই প্রণয়ের বিরহ এসে তাকে গ্রাস করবে!

নিজের রুমে গিয়েই দরজা বন্ধ করে খাটের উপর শুয়ে শুয়ে ভাবছে তখনকার ঘটনাগুলো। ইহাদ আসা থেকে এখনো একবারের জন্যও তার সাথে কথা বলেনি ভাবতেই এক রাশ অভিমান এসে ভড় করলো মনের সুপ্ত কুঠুরিতে! কিছুক্ষনের ভিতরে আবারো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো জুঁই।
জুঁইয়ের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো জুঁইয়ের মায়ের ডাকে। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলতেই জুঁইয়ের মা ধমকের স্বরে বলে ওঠলো,

–“সারাদিন খালি পড়ে পড়ে ঘুমানো এইই আছে তোর! পড়ালেখার তো কোনো নাম গন্ধ নেই খালি শুয়ে বসে কাটালেই চলে তাই না? নিচে সবাই খেতে বসেছে তুইও তাড়াতাড়ি আয়।”
মায়ের যাবার পরপরই জুঁই ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে খাবারের জন্য। সবাই বসে গেছে কিন্তু একটি চেয়র ফাঁকা রয়ে গেছে! জুঁইকে তার ঝেঠিমা বলে ওঠলো,

–“জুঁই তুই একটু ইহাদকে ডেকে আনবি? এর আগেও ওকে ডেকেছি ও আসেনি। তুই একটু ওকে ডেকে দে। কতোদিন যে ছেলেটাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিই নি।”

ঝেঠিমার কথার পৃষ্ঠে আর কোনো কথা না বলে আমি চলে গেলাম ইহাদ ভাইয়াকে ডাকতে। তার রুমের সামনে যেতেই দরজার আড়াল থেকে দেখতে পেলাম কানে হেডফোন গুঁজে সামনে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলছেন তিনি! শুধু তাই নয় মোবাইলের স্ক্রিনে থাকা মেয়েটিকে কেমন চেনা চেনা লাগছে ভালো করে দেখবো এর আগেই ইহাদ ভাইয়া আমাকে দেখে ফেলে! ইহাদ ভাইয়ার দৃষ্টি দেখে কলিজা কেঁপে ওঠলো ভয়ে! কেমন রাগী রাগী মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! ভাইয়া কি আমাকে আগের মতনই থাপ্পড় মারবে? নাকি ইংরেজিতে স্টুপিড, ইডিয়ট বলে ঝাড়বে? মনের ভিতর নানান প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে কি করবে ভাইয়া এখন?”

প্রণয় বিরহ পর্ব ২

1 COMMENT

Comments are closed.