প্রণয় বিরহ পর্ব ২

প্রণয় বিরহ পর্ব ২
অর্ষা আওরাত

ভাইয়ার রুমে সামনে গিয়েই দেখতে পেলাম ভাইয়া বেডে শুয়ে আছে মোবাইল মুখের সামনে ধরে রেখে! মনে হয় কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন! আমাকে দেখেই বেড থেকে নেমে দরজার সাথে দাঁড়ালো। ভাইয়াকে দেখার আগেই আমার চোখ গেলো ভাইয়ার ফোনের স্ক্রিনে থাকা ওয়েলপেপারে ভাইয়ার সাথে একটি মেয়ের ছবিতে!

ছবিটিতে ভাইয়া সাদা রঙের একটি পাঞ্জাবী পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর মেয়েটি লাল রঙের শাড়ি পড়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে! মেয়েটির হাত ভাইয়ার হাতে আবদ্ধ রয়েছে আর তারা দু’জন দু’জনের দিকে বিমোহিতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে! ঠিক সেই সময়ই কেউ ছবি তুলেছে হয়তো। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলাম মেয়েটি আর কেউ নয় সেই এয়ারপোর্টের লাল ড্রেস পড়া মেয়েটি!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরো একটু ভালো করে দেখতে যাবো ঠিক তারই আগে মোবাইল অফ গেলো! হয়তো মোবাইল লক হয়ে গেছে! আমার চোখে এখনো তাদের দু’জনের ছবি ভাসছে! বারংবার মনে হচ্ছে এটা সাধারন সম্পর্কের ভিত্তিতে ছবি নয়! বক্ষপিঞ্জরের ভিতরে কড়াঘাত হচ্ছে! হৃদয়ের ভেতর দিকে কষ্টরা দলা পাকিয়ে কান্নায় রুপান্তরিতো হয়ে আসছে! কান্না সামলাতে পারলাম না সেখানেই অশ্রু কনারা গাল বেয়ে পড়তে লাগলো! আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে অশ্রু বির্সজন দিচ্ছি! আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ভাইয়া বলে ওঠলো,

–“এভাবে কাঁদছিস কেনো? আমি কি তোকে কিছু বলেছি? তাহলে এভাবে কাঁদার কি মানে বল?”
ভাইয়ার কথা শুনে কান্নার গতি কমার বদলে আরো বেড়ে গেলো! আমি কি করে বলবো ভাইয়াকে আমি তাকে ভালোবাসি বলে তার সঙ্গে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারছি না আমি! কোনো উত্তর নেই আমার কাছে ভাইয়াকে দেবার মতন। মাথা নিচু করে চুপচাপ ভাবে অশ্রু বির্সজন দিয়ে যাচ্ছি! ভাইয়া এবার রাগান্বিত দৃষ্টিতে ধমকের স্বরে বলে ওঠলো,

–“তুই কিছু বলবি নাকি কেঁদেই যাবি? এখানে কেনো এসেছিস সেটা তো একবারও বলছিস না উল্টো কেঁদেই যাচ্ছিস! কারো রুমে এলে যে পারর্মিশন নিতে হয় সেই জ্ঞান টা ও কি নেই তোর! কেনো কাঁদছিস এভাবে?”
ভাইয়ার ধমক শুনে মাথা উঁচু করে তাকালাম তার দিকে! সে রাগান্বিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!

ভাইয়ার রাগী গলার ধমকের আওয়াজ শুনে সবাই এসে হাজির হলো ভাইয়ার রুমের সামনে! সবাইকে দেখে লজ্জায় দৌড় লাগালাম নিজের রুমে!আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো ভাইয়ার মতনই তাদেরও একই প্রশ্নের উত্তরের সম্মুখীন হতে হতো আমায় এর চেয়ে চলে আসাই শ্রেয় মনে করলাম! রুমে এসে দরজা বন্ধ করে খাটে শুয়ে পড়লাম। এখন মনে হচ্ছে ঝেঠিমার কথা না শোনাই ভালো হতো। বাইরে অনেকবার খেতে যেতে ডেকেছে কিন্তু ভাইয়ার কথার চোটে পেট ভড়ে গেছে।

শান্ত কোমল রুপের প্রকৃতি চিত্র ফুটে ওঠেছে ধরনীতে। সকালের হলদে সূর্যের আভা ফুটে ওঠেছে চারদিকে বেশ ভালো করে। পাখিগুলো কিচিরমিচির করে ডাক দিয়ে যাচ্ছে। জানলার পর্দা ভেদ করে সকালের সূর্যের কিরন রুমে আছড়ে পড়ছে। কিরন চোখেমুখে লাগতেই ঘুম এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো জুঁইয়ের! ঘুমঘুম চোখে হেলেদুলে বেড থেকে ওঠে দাঁড়াতেই পেট মোচর দিয়ে ওঠলো!

যার অর্থ হলো কাল দুপুরের পর থেকে না খাওয়ার ফলে এখন বেশ জোড়ে সোড়েই পেটে ক্ষিদেন উপদ্রব দেখা দিয়েছে! ফ্রেশ হয়ে এসো রুমে থাকা চকলেটের প্যাকেটে কামড় বসালো। জানলার পাশ ঘেঁসে বসলো সকালের স্নিগ্ধ রুপ দেখতে! দৃষ্টিজোড়া গিয়ে আবদ্ধ হলো ইহাদের দিকে গেয়ে! বারান্দায় বসে হাতে মোবাইল আর কানে হেডফোন নিয়ে চা খাচ্ছে হাসোজ্জল মুখ নিয়ে! ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না হয়তো কালকের মেয়টির সঙ্গেই কথা বলছে! কথাটি ভাবতেই মনে একরাশ খারাপ লাগা ছুঁয়ে যায়!

আপাততো সেদিকে খেয়াল না করে জুঁই ভালো করে ইহাদের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে যেনো বহু বছরের তৃষ্ণা এখন এক নিমিষেই মিটাচ্ছে! নয়নযুগল স্থির করে রেখেছে ইহাদের দিকে। ভাবনার ব্যাঘাত ঘটলো যখন ঘড়ির কাটা টিকটিক করে জানান দিলো আটটা বেজে গেছে! তখনি নিচে যাবার উদ্দেশ্য পা বাড়াবে ঠিক তখনি দরজায় ঠকঠক কড়াঘাত শুনতে পেয়ে দরজা খুলতে গেলো, দরজা খুলতেই হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো বৃষ্টি! বৃষ্টিকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকতে দেখেই জুঁই সবার আগে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিলো বৃষ্টির দিকে। পানি খেয়ে কিছুক্ষণ পর শান্ত হয়ে বসতেই জুঁই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো বৃষ্টির দিকে!

–“আপু তুমি এভাবে হাঁপাতে হাঁপাতে এসেছো কেনো? কিছু কি হয়েছে তোমার?”
–“কি হয়নি সেটা বল! আমি যখন ঘুম থেকে নিচে গেলাম সেখানে ড্রয়িং রুমে ঝেঠু ঝেঠিমারা সবাই মিলে আলোচনা করছিলো ইহাদ ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখবে! মানে কিছুদিনের ভিতরেই ইহাদ ভাইয়ার বিয়ে দিতে চায় তারপরে কাজের জন্য বাহিরে পাঠাবে।”
–বৃষ্টি আপুর কথা শুনে আমি নিথর দৃষ্টিতেই তাকিয়ে রইলাম আপুর দিকে। আপুর কথা শুনে আমার মনের ভেতর যেনো কোনো ভাবন্তরই নেই ইহাদ ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে! আমাকে এরকম শান্ত দেখে বৃষ্টি আপু আবারো বলে ওঠলো,

–“কিরে তুই কি কিছুই বলবি না?”
–আমার এক মনে উত্তর-“না কিছু বলবো না আমি।”
আমার কথা শুনে বৃষ্টি আপু অবাক দৃষ্টিকে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো! তারপর কিয়ৎক্ষন পূর্বে বলে ওঠলো,

–“ইহাদ ভাইয়া অন্য কারো হয়ে যাবে বুঝতে পেরেছিস তো?”
–“যে আগ থেকেই অন্য নারীর হয়ে আছে তার জীবনে নতুন নারীর আগমন ঘটুক বা সেই পুরাতন নারীর আগমন ঘটুক তাতে আর নতুন কিছু না আমার জন্য।”
আমার কথার মানে হয়তো আপু বুঝতে পারেনি। আপু বললো,
–“শোন একটা কথা কোনো কিছু নিজের মতন করে না ভেবে সবটা সিওর হয়ে তারপর কথা বলবি। এই নতুন নারী পুরান নারী কিছুই বুঝিনি আমি। তুই এসব ভাবার আগে নিজের মাথা ঠান্ডা করে ভাব আদৌ যা ভাবছিস বা বুঝেছিস সেটা সঠিক কিনা বুঝেছিস?”

আপু আর কোনোকিছু না বলে রুম থেকে থেকে বেরিয়ে গেলো! আপু চলে গেলো কিন্তু মস্তিষ্কে এখনো কথাটি বেজে যাচ্ছে যা বুঝেছি সেটা সঠিক কিনা? কিন্তু এয়ারপোর্টেের সেই দৃশ্য কালকে ফোনের স্ক্রিনে থাকা ছবি ওগুলো কি? কিন্তু আপুর কথাও তো ঠিক এক মুহুর্তের জন্য মনে হতে লাগলো আমার ভাবনা যদি ভুল হয় তাহলে তো সারাজীবন এর মতন আমি ইহাদকে হারাবো! সবটা পরিষ্কার করতে আমাকে যে করেই হউক ভাইয়ার মুখ থেকে সবটা শুনতে হবে। জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম ভাইয়া এখনো বসে আছে বারান্দায়! আর কালবিলম্ব না করে সেখানে ছুট লাগালাম। দূর থেকে আমাকে দেখতে পেয়ে ভাইয়া কান থেকে হেডফোন খুলে রেখে দিলো টেবিলে। আমি তার সামনে যেতেই বলে ওঠলো,

–“জুঁই কিছু বলবি তুই আমাকে?”
–“হ্যাঁ বলবো বলেই তো এসেছি।”
-“বেশ তাহলে বল কি বলবি?”
ভাইয়ার কথা শুনে মনে সাহস সঞ্চয় করে বলে ফেললাম,

–“আপনার সঙ্গে এয়ারপোর্টে যে মেয়েটি আপনাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো সে কে? কেউ না দেখলেও আমি দেখেছি। আর কালকে রাত্রেবেলাও ওই মেয়েটির সাথে আপনার ছবি দেখেছি আপনার ফোনে বেশ ভালোভাবেই কাছ ঘেঁসে ছিলো। কি হয় মেয়েটি আপনার? কেনো এতো কাছে এসেছিলো আপনার? এটুকু বলুন।”
আমার কথা শুনে ভাইয়ার কপালে ভাজের রেখা ফুটে ওঠলো! ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে রক্তচক্ষু নিয়ে বলে ওঠলো,

–“মেয়েটি আমার সাথে জড়িয়ে থাকুক বা না থাকুক তাতে তোর কি? তুই আমার কাছ থেকে এতো কৈফিয়ত চাইছিস কেনো?”
ভাইয়ার কথা শুনে ভালো করেই বুঝে গেলাম তিনি রেগে গেছে! কিন্তু আজ যখন বলা শুরু করেছি তখন তো আমাকে বলতেই হবে। এবার বাকি কথাটুকু চোখ বন্ধ করে একদমে বলে দিলাম!

—“আমি আপনাকে ভালোবাসি তাই! আপনাকে ভালোবাসি বলেই অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে আপনাকে দেখে প্রশ্ন করছি। শুনেছেন আপনি? আপনাকে ওই মেয়ের সঙ্গে এতো কাছাকাছি দেখে আমার হৃদয় ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে আজ দু’দিন ধরে! খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই আজ আপনাকে সরাসরি বলে দিলাম। আমি ভালোবাসি আপনাকে তাও এক দু’দিন নয় পুরো দেড় বছড় জুড়ে আপনি আমার মনের মনিকোঠায় রয়ছেন। এবার নিশ্চয়ই বুঝেছেন।”

প্রণয় বিরহ পর্ব ১

–বলে তো দিলাম ভালোবাসি কিন্তু এখন অপেক্ষা ভাইয়া কি বলে! কেমন চুপচাপ হয়ে রয়েছে! কোনো কিছু বলছে না কেনো? আজকে যাই বলুক না কেনো আমি সঠিক সিদ্ধান্তই নিবো। এবার উত্তরের অপেক্ষা। ভাইয়া উত্তর দিলেই আমিও আমার মনে মনে ঠিক করা সিদ্ধান্ত মোতাবেকই কাজ করবো!

প্রণয় বিরহ পর্ব ৩