প্রণয় বিরহ পর্ব ২৬

প্রণয় বিরহ পর্ব ২৬
অর্ষা আওরাত

ধরিত্রীপুরে ভোরের আগমন হয়েছে খানিক্ষন প্রহর আগেই। চারিদিকে সূর্য্য তার কিরন ছড়িয়ে দিয়ে আভাস দিচ্ছে সকাল হয়ে গেছে। ধরনী জুড়ে এক মিষ্টি সুপ্রভাতের আগমন ঘটেছে। পাখিরাও কিচিরমিচির করে তাদের সুরেলা কন্ঠে গান গাইতে ব্যস্ত। সকালের হালকা মিষ্টি রোদে বসে থাকতেই বেশ ভালোই লাগছে জুঁইয়ের! শরীরে রোদের আলতো উষ্ণতা নিয়ে রুমে এসে জানলার পর্দা খুলে দিলো।

পর্দা সরাতেই বাহিরের সুর্য্যের তাপ আসে ঘরের ভিতর যা সরাসরি ঘুমন্ত সেহেরিশ এর উপর পড়তেই নাক মুখ কুঁচকে ওঠলো তার! ভ্রু জোড়া বাঁকিয়ে শোয়া থেকে ঘুমঘুম চোখে ওঠতেই সামনে খোলা চুলে শাড়ি পরিহিতা এক সুন্দরী মেয়ের দিকে চোখ গেলো তার! উঁহু মেয়েটি আর এখন আর শুধুই মেয়ে নয় সে এখন অন্য কারোর রমনী আর সেই রমনীর উপর জুড়ে অধিকার শুধু সেহেরিশ এরই আছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

খুব ভালো করে দৃষ্টি পাত করে দেখলো রমনী টি গায়ে লাল রঙের শাড়ি পড়েছে, চোখে কালো রঙের কাজলও পড়েছে আর তার ভেজা চুলগুলো মুক্ত বাতাসে ছেড়ে দিয়েছে! সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে! একটু বউ বউও লাগছে শাড়ি পড়ায়। পরক্ষণেই মনে হলো মেয়েটিতো আসলেই তার বউ! পলকহীন ভাবে কিয়ৎক্ষন যাবত সেই সুন্দরী রমনীর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো! ধ্যান ভাঙলো সেই রমনীর হাতের তুড়ি বাজার শব্দে। সুমিষ্ট কন্ঠে সেই রমনীটি সেহেরিশকে বললো,

–“ঘড়ির কাঁটায় প্রায় আটটা বেজে গেছে দেখুন। আপনাকে আমি আরো আগে একবার ডেকেছি কিন্তু আপনি ওঠেন নি। কিন্তু এখন তো ওঠবেন নাকি? বেলা বয়ে যাচ্ছে যে সেই খবর তো মাথায় রাখুন?”
–জুঁইয়ের প্রশ্নে সেহেরিশ কেমন গভীরভাবে জুঁইয়ের দিকে তার দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে জুঁইয়ের বেশ নিকটে গিয়ে বললো,
–“কি ব্যাপার বলোতো জুঁইফুল? কালকে তো আমরা মধ্যেখানে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার ব*র্ডা*র স্থাপন করে ঘুমিয়েছিলাম তাহলে কি করে কি হলো বলোতো? আমার তো মনে পড়ছে না আমাদের মধ্যে রো”মা”ন্টিক কোনো কিছু হয়েছে? আমার যে কিছুই মনে পড়ছে না!”

সেহেরিশ এর এরুপ কথায় জুঁই ভড়কে গেলো মুহুর্তের মধ্যে! সে প্রথমে ভাবলো হয়তো সে ভুল শুনেছে কিন্তু পাশে থাকা সেহেরিশ এর চোখ মুখ দেখে বুঝে গেলো সে ঠিকই শুনেছে! সঙ্গে সঙ্গেই জুঁই সেহেরিশ এর থেকে কিঞ্চিৎ পরিমান দুরত্ব বজায় রেখে বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠলো,

-“আপনি কি বলছেন? আপনার কথার আগামাথা তো আমি কিছুই বুঝছি। আর রোমা*ন্টি*কতা আসবে কোথা থেকে? আমি তো আমার জায়গায় আমার বালিশেই ঘুমিয়েছি আর হ্যাঁ এক চুলও নড়ি নি আমি নিজের জায়গা থেকে।”
জুঁইয়ের প্রতিত্তোর শুনে হতাশ মুখ করে সেহেরিশ বলে ওঠলো,
–“ওহ্ তাই বলো! আমি অযথাই কতো কিছু ভেবে বসেছিলাম। আচ্ছা তাহলে বলো তুমি সকাল সকাল এই গোসল করে শাড়ি পড়ে আছো কেনো?”

–“আরে আজব তো! আপনার কি কিছুই মনে নেই নাকি বলুনতো? আজকে তো আপনাদের বাড়ি থেকে আপনার বাবা,মা, লতা, আরো কয়েকজন অতিথি আসার কথা আছে তো হিসবে মতন তো কালকে আমাদের বিয়ে হয়েছে এখন নতুন বউ হিসাবে আমি শাড়ি না পড়ে কি করে তাদের সামনে যাই বলুন তো? আর মা বললো গোসল করে একেবারে রেডি হয়ে নিতে কারন মেহমানরা সব একটু পরেই আসবে।”

-“ওহ্ তাই বলো! এবার বুঝেছি সবটা।”
-জুঁইয়ের খটকা লাগলো সেহেরিশ এর এভাবে মুখ মলিন করে বসে থাকাটা! মস্তিষ্কে গেঁথে নিলো কিয়ৎক্ষন পূর্বে বলা সেহেরিশ বলা কথাগুলো। সমস্ত বাক্যগুলোর মানে বুঝতেই জুঁই কেমন রাগান্বিত স্বরে সেহেরিশ কে বললো,

–“একদম আজেবাজে চিন্তা আনবেন না মাথায়! এই যে পাঞ্জাবী রইলো আপনি এগুলো পড়ে রেডি হয়ে নিচে আসুন।”
জুঁই আর সেহেরিশ কে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিচে নামতে লাগলো! নিচে নামার আগেই সিঁড়িতে থাকা কালীন দেখা হলো তার বৃষ্টির সাথে! বৃষ্টি জুঁইকে দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জুঁইয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে বসালো! জুঁই কোনো কিছু না বরে চুপচাপ ভাবে বসে আছে সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছে বৃষ্টি কেনো তাকে এভাবে টেনে নিয়ে এসেছে! জুঁই মুখ খোলার আগেই বৃষ্টি তার মনের গহীনে থাকা এক গাঁদা প্রশ্ন উপস্থাপন করলো জুঁইয়ের সামনে!

–“এসব কি জুঁই? তোর সাথে সেহেরিশ এর এই হুট করে বিয়ে কারন কি? সবাই জানে তোরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসিস কিন্তু আসি এটা খুব ভালো করেই জানি তুই ইহাদ ভাইয়াকে ভালোবাসতিস তাহলে মাঝখান থেকে এই সেহেরিশ ভাইয়ার সঙ্গে তোর বিয়ে এসব কি হচ্ছে? খুলে বল সবকিছুর!”

আপুর কথা শুনে মনে হলো সবকিছু আগা থেকে গোড়া অব্দি সব খুলে বলে দিই কিন্তু পরক্ষণেই মস্তিষ্কে উদয় হলো আপুকে এতকিছু বলে টেনশনে না ফেলে চুপচাপ ভাবেই থাকাটা শ্রেয়! কারন আর ক’দিন পর আপুর বিয়ে। বিয়েটা ভালোয় ভালোয় মিটে যাক। এই ক’দিনে আমি চাই না আমার জন্য আপু কোনো রকম কষ্ট পাক বা কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তায় থাকুক। আমি হেসে হেঁসে বললাম,

–“তুমি অযথাই এতো চিন্তা করছো। আমরা দু’জন ঠিক মনে করেছি তাই-ই বিয়েটা করে ফেলেছি এখনই। তুমি এতো কথা না বলে চুপ করতো একটু আমি নিচে যাচ্ছি।”
–“তুই সত্যিই বলছিস তো? তোদের বিয়ের পিছনে অন্য কোনো কারন নেই আবার?”
-“না কোনো কারন নেই আপু।”

জুঁইয়ের কথা বৃষ্টির বিশ্বাস হলো কি না সেটা বোঝা যাচ্ছে না! তবে আপাতত দৃষ্টিতে দেখলে জুঁইয়ের মিথ্যা বলারও কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছে না বৃষ্টি। আর কথা না বাড়িয়ে জুঁই নিচে গিয়ে রান্নাঘরে গেলো টুকটাক কাজে সাহায্য করার জন্য। ওদিকে সেহেরিশ কাউকে ফোনে বলছে
–“আমি যা ভেবেছি ঠিক সেটাই হয়েছে! এই বাড়িতে আসার পর আমার স*ন্দে*হ তীব্র হয়েছে খুব ভালো করেই! যে উদ্দশ্য নিয়ে এসেছি সেটা পূরন হতে আর বেশিদিন বাকি নেই।এখন শুধু প্রমানের অপেক্ষায় আছি। সবটা প্রকাশ করার জন্য।”

-অপর পাশের ব্যাক্তিটি কি বললো সেটা শোনা না গেলেও অপর পাশের ব্যাক্তিটির কথা শুনে সেহেরিশ মুচকি হেসে নিজের কাজে চলে গেলো। খানিক্ষন প্রহর পরেই সেহেরিশ এর পরিবার থেকে সেহেরিশ এর বাবা,মা, ছোটো বোন লতা, ঝেঠু, ঝেঠিমা বেশ কয়েকজন মানুষ এসে উপস্থিত হয়েছে। জুঁই তাদের প্রত্যেকের সামনে শরবত, নাস্তা দিয়ে শাড়ির আচল টেনে ঘোমটা দিয়ে রুমের এক কোনে দাঁড়িয়ে রয়েছে চুপচাপ ভাবে। বড়োদের কথা সব শেষ হলো।

সবারই এক মতামত ওরা যখন বিয়েটা করেই ফেলেছে তখন সেটা অস্বীকার না করে একটু সময় দিয়ে মেনে নেওয়া প্রয়োজন। ততদিন না হয় জুঁই তার নিজের বাড়িতে যাবে। সামনে জুঁইয়ের পরিক্ষা শেষ হলে একেবারে ঘটা করে অনুষ্ঠান করে ওদের বিয়ে হবে। কথাবার্তা শেষ হতেই সকলে চলে গেলো। সেহেরিশ আজকের মতন থেকে গেলো জুঁইয়ের বাড়িতে।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব সেরে মেহমানরা সব চলে যেতেই জুঁইয়ের মা আর কাকীমারা সব কিছু গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জুঁইয়ের বড্ড গরম লাগছে এতোক্ষণ শাড়ি পড়ে থেকে তাই সে আরো একবার গোসল করার উদ্দেশ্য রুমের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। রুমে ঢুকেই দাঁড়াতেই প্রিমাকে দেখতে পেলো। জুঁইকে রুমে আসতে দেখে প্রিমা দরজা বন্ধ করে দিয়ে প্রিমা জুঁইয়ের মুখের সামনে একটি চুড়ি ধরে রাখে! যেটা দেখে জুঁই হতভম্ব হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। জুঁই কাঁ’পা কাঁ’পা স্বরে বলে ওঠলো,

–“ভাবী এটা তো আমার চুড়ি। হারিয়ে গিয়েছিলো তুমি এটা কোথা থেকে খুঁজে পেলে বলোতো?”
আমার ভ*য়ের মাত্রা বেড়েই যাচ্ছে ক্রমশ! কারন এই চুড়িটা সেদিন যখন আমি প্রিমা আপুকে পিছু করেছিলাম তখন হাতে পড়েছিলো বাড়ি ফিরে দেখি ওটা আর নেই! আমারো আর বুঝতে বাকি রইলো না ওইদিন যে চুড়িটা রাস্তায় পড়ে গেছে! রাস্তায় পড়েছে ভেবে কোনো হেল দোল ছিলো না আমার কিন্তু হঠাৎ করে এই চুড়ি প্রিমা কোথা থেকে পেলো? আমার ভাবনার মাঝেই তার উত্তর,

-“কি ভেবেছিলে জুঁই? তুমি এতোকিছু করবে আমার পিছনে আর আমি কিছুই টের পাবো না? নিজেকে এতোটাই চালাক মনে করো তুমি! এই চুড়িটা তোমার সেদিন আমাকে পিছু করতে করতে এই চুড়িটা তোমার রাস্তায় পড়ে যায়। আমি যেই সরু গলিটা দিয়ে ঢুকেছিলাম বোধহয় সেখানে তুমি পৌঁছুতে পারো নি। আর এটা আমি সিওর করে বলছি কারন ওই গলির একটু সামনে এই চুড়িটা পড়েছিলো! আর চুড়িটা যে তোমার সেটা তো আমি কিছু বলার আগেই তুমি নিজের মুখে স্বীকার করলে!”

–যে ভয়টা পেয়েছিলাম ঠিক সেটাই হলো আমার সাথে! উনি বুঝে গিয়েছেন হয়তো আমি পিছু পিছু গেছিলাম কিন্তু উনি কতোটুকু বুঝতে পেরেছে সেটা একবার বাজিয়ে দেখা দরকার!
–“হ্যাঁ চুড়িটা আমি হারিয়েছি ঠিকই কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আমি তোমার পিছু পিছু গিয়েছি। তুমি ভুল ভাবছো।”
-“চুপ একদম!”

উনি বেশ ধ’ম’কের স্বরেই কথাটা বললেন আমাকে। তারপর আমার কাছে এসে বললো,
–“নিজেকে এতোটাও সেয়ানা ভেবো না জুঁই! তোমার চুড়ি পড়ে থাকা। পরশু দিন রাত্রে আমার পিছনে বসে ফোন রের্কডিং করা কি ভেবেছো আমি কিছুই টের পাইনি!”

প্রণয় বিরহ পর্ব ২৫

এবার ভ*য়ে আমি পুরো জমে যেতে লাগলাম! উনি এতোকিছু কিভাবে জানলো? এখন কি হবে তাহলে? আমি তো এই বিয়ের ঝামেলায় কিছুই প্রমান করতে পারেনি কিন্তু এখনি আমাকে সবটা সবার সামনে বলতে হবে। যেই না সবটা জানানোর জন্য দরজার কাছে গিয়েছি ঠিক তখুনি প্রিমা আমার মুখে চে”পে ধরলো! আমার শ্বাস আটকে আসছে! নিশ্বাস নিতে পারছি না ভালো করে।

প্রণয় বিরহ শেষ পর্ব 

2 COMMENTS

Comments are closed.