প্রণয় বিরহ পর্ব ২৫

প্রণয় বিরহ পর্ব ২৫
অর্ষা আওরাত

সেহেরিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমার ভ”য়ে কাঁপাকাপি অবস্থা শুরু হয়ে গিয়েছে বুকের ভিতর! উনি যদি সবটা শুনে ফেলে ঝেঠু বা আব্বুকে বলে দেয় তো আমি শে’ষ! এমনিতেই বিয়ে নিয়ে সবাই রেগে আছে তারপর যদি সেহেরিশ এর মুখ থেকে এসব কিছু শুনে তাহলে তাদের কি রিয়্যাকশন হবে সেটা ভেবেই ভয়ের গতি আরো দ্রুত হয়ে যাচ্ছে! কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ওনাকে বললাম,

–“কি শুনেছেন আপনি? কি বলতে চাইছেন?
–“আমি শুধু যা শুনেছি তাই-ই বললাম এবার তুমি বলো সত্যি কিনা?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

–ওনার এহেনো কথা শুনে আমার বুঝতে বাকি রইলো না উনি সবটা শুনেছেন বেশ ভালো করেই! আমি কিছু না বলে ভয়ে ভয়ে হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছি। ক্রমশ ঘেমে যাচ্ছি। আমাকে চমকে দিয়ে উনি হঠাৎ করে হেঁসে ওঠলেন উচ্চস্বরে! এদিকে ভয়ে আমার অবস্থা কাহিল আর উনি এরকম ভাবে হাসছে? ওনার হাসির কোনো কারন খুঁজে না পেয়ে আমি জিগেস করলাম ওনাকে,

-“আমি কি হাসির কিছু বলেছি নাকি যে আপনি এভাবে হাসছে”
আমার কথা শুনে ওনার হাসির আওয়াজ আরো তীব্র হয়ে ওঠলো যা দেখে আমার ভয়ের পরবর্তে এখন রাগ ওঠে যাচ্ছে! ওনি হাসতে হাসতেই বললেন,
–“জুঁইফুল আমি তো তোমার সঙ্গে ইর্য়াকি করছিলাম! আরে আমি তো এসে দেখলাম যে তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছো। এখন তোমাকে একটু ভয় দেখালাম আর কি!”

ওনার কথা শুনে মাথায় রাগের মাত্রা বেড়ে গেলো আরো কয়েকদফা! উনি এতোক্ষণ মজা করছিলেন আর আমার তো এদিকে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেছিলো! কিন্তু পরক্ষণেই মস্তিষ্কে উদয় হলো উনি কি করে বুঝবে আমার ভয়ের কারন ঠিক কোন জায়গায়? তাই নিজের রাগটাকে দমন করে নিজের মধ্যেখানে চেপে রেখে দিলাম। ওনি আবারো বলে ওঠলেন,

–“কিন্ত জুঁইফুল তুমি তো কিছুই করোনি তাহলে এভাবে ভয় পেয়েছিলে কেনো আমার কথা শুনে? তোমার মুখ চোখ এরকম হয়ে গেছিলো যেনো তোমার কোনো গোপন সত্যি আমি বুঝে ফেলেছি?”
ওনার কথায় ভয়ের মাত্রা বেড়ে গেলো কিন্তু এবার আর ভয় পেলে চলবে না আগের বারের মতন! জোর গলায় বলে দিলাম,

–“আপনি যেভাবে জিগেস করেছেন এরকম ভাবে জিগেস করলে যে কেউই ভড়কে যাবে! এখন এতো কথা না বলে কি জন্য নিচে গিয়েছিলেন সেটা বলুন?”
আমার কোনো কথার উত্তর না দিয়ে উনি আমার দিকে গভীর ভাবে তার দৃষ্টি আবদ্ধ করে রেখে আমার হাত দু’টো ধরে ছাঁদের এক পাশে নিয়ে দাঁড় করালেন। আমি চুপচাপ ভাবে ওনার সঙ্গে গেলাম কোনো কথা না বলে। উনি ছাঁদে থাকা একটি বেঞ্চের মধ্যে নিজে বসলেন উনার পাশে আমিও বসলাম তবে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে। চুপচাপ ভাবেই বসে আছি অনেকক্ষণ ধরে। হঠাৎই উনি আমার হাতটা নিজের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলল,

–“জুঁইফুল তোমার জন্য হয়তো এই বিয়েটার কোনো দামই নেই আমি জানি সেটা। কিন্তু জানো কি আমার জন্য যে এই বিয়েটাই অনেক মূল্যবান কিছু যা আমার নিজের চেয়েও দামী! তবে এখন তোমার মনে প্রশ্নে উঁকি দিতে পারে কেনো এই হুট করে বিয়ে? সেটার উত্তর তুমি অবশ্যই পাবে তখন এখন নয়। তাই এখন কেনো কোনোদিনই বিয়ে নিয়ে কোনো প্রশ্ন করো না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকতো তাহলো তো আজকে এই দিনটা এভাবে যেতো না জুঁইফুল!

তখন আমরাও বাকি আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মতন জীবন কাটাতাম। কিন্তু এখন জীবন যেই দৌড় গোড়ায় এনে দাড় করিয়েছে তাতে বোধহয় এই ভাঙা চোরা ভাবেই রয়ে যাবে তোমার আর আমার সম্পর্ক টা! কিন্তি ওই যে বললাম বিয়েটা আমার চেয়েও দামী আমার কাছে তাই বলছি নাই বা মানলে আমায় স্বামী হিসাবে অন্ততো বন্ধির মতন মিশতে তো ক্ষতি নেই? না হলাম স্বামী হই না তোমার বন্ধু যে তোমার পাশে বিপদে আপদে সবসময়ই ছাঁয়ার মতন থাকবে। দিনশেষে যাতে আমার কাছে এসে নিজের সব কথা উজার করে দিতে পারো।”

–এতোক্ষণ ধরে উনার সব কথা শুনলাম আমি খুব মনোযোগ সহকারেই! আর যা বুঝলাম তাতে হলো উনার কাছে এই বিয়েটা খুবই মূল্যবান। আর ওনি তো শুধু বন্ধুত্বের হাতটুকুই চাইছে আমার দিক থেকে আর তো কিছুই নয়? সবকিছু বিবেচনা করে দেখলাম মানুষটা কোনো কিছু নিয়ে খুব দু*শ্চি*ন্তায় আছে এখন ওনার এই বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো টা ফিরিয়ে দেওয়া খুব ভালো হবে না। এবার আমি আমার ডান হাত দিয়ে ওনার হাত আমার হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম,
–“হ্যাঁ আপনি যেভাবে বিয়েটা করেছেন তার জন্য আপনি স্বামী হতে পারবেন না কিন্তু বন্ধু কো বানানো যাই আপনাকে!”

আমার কথা বলা শেষ হতেই উনি হেসে ওঠলো। চোখেমুখে আনন্দের ছোঁয়া ঝিলিক মেরে ওঠছে। ওনি কিছু না ভেবেই আমার হাতের মধ্যে চু*মু খেয়ে বসলেন! আকস্মিক ঘটনায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে রয়েছি! হলাম বন্ধু আর উনি কিনা শেষ পর্যন্ত আমার হাতে চুমু দিয়ে দিলেন? আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি ইনোসেন্ট চেহারা করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে লাগলো,
–“স্যরি জুঁইফুল! আনন্দের চোটে মনে ছিলো না। আর দিত্বীয় বার এরকম হবে না কোনোকিছুই আমাকে ক্ষমা করে দিও।”

ওনার এরুপ ক্যা*বলা ক্যা*বলা চেহারা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে খুব করে কিন্তু আমি না হেঁসে কাঠ গলায় বললাম,
–“ঠিকআছে তবে এরকম যাতে না হয় আর পরের বার। আমি বন্ধু বানিয়েছি কিন্তু স্বামী নই সেটা নিশ্চয়ই ভুলে যাবেন না বলুন?”
–“হ্যাঁ তা ভুলবো না।”

উনার কথা শেষ হতেই উনি আমার বা হাত উনার নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে হঠাৎ করেই একটা আংটি পড়িয়ে দিলো আমার হাতে! চাঁদের আলোয় আংটিটা যে স্বর্নের সেটা বুঝতে বাকি রইলো না আমার। আমি বিস্ময় নিয়ে বললাম,
–“তাহলে এটার জন্যই তখন নিচে গেছিলেন?”

–“হ্যাঁ এটার জন্যই গিয়েছিলাম। তখন আনতে ভুলে গেছিলাম কিন্তু পরে রুমে গিয়ে খুঁজে আনতে একটু সময় লেগেছিলো। জানি এটা তোমার কাছে উপহার হিসাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় কিন্তু জুঁইফুল আজকে তো আমাদের বিয়ের প্রথম রাত আমি আমার বউকে উপহার না দিয়ে থাকতাম কি করে বলো?”
–“এসব আলাদা খরচা আমার জন্য না করলেও পারতেন।”

সেহেরিশ আমার কথা বোধহয় পছন্দ হলো না! কপালে ভাজের রেখা পড়ে গেলো তার! সে একটু রাগ করেই বললো,
–“উহু! আলাদা খরচা নয় বরং জানো কি এই আংটি টাতো আমার নিজের ছিলো যেটা আমি হাতে পড়ে থাকতাম ওটা ভাঙিয়েই তোমার জন্য নতুন করে বানিয়েছে। উঁহু একদমই ভেবো না টাকা নাই দেখে এরকম ব্যবস্থা আমি চাই যাতে এই আংটিটা তোমার হাতে থাকে সর্বক্ষন আর মাঝে মাঝে তুমি যদি কখনো সখনো আমাকে ভুলে যাও তখন এই আংটির তাকাবে আর আমার কথা মনে পড়বে। বা ধরো যখন আমি থাকবো না তখন এটা দেখলে আমার স্মতি মনে পড়বে তোমা! কারন এতে আমার ছোঁয়া লেগে আছে যে।”

— শেষোক্ত কথাটি আমার মোটেও ভালে লাগলো না! উনি কোথায় যাবে এখন? যেই বন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে সেখান থেকে তো এতো সহজে ছুটতে পারবে না। ওনার কথার পৃষ্ঠে আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ভাবে আংটিটা হাতে পড়ে নিলাম! আমার গর্জিয়াস কিছু কখনোই ভালো লাগে না কিন্তু এই আংটিটা অতি সিম্পল এর ভিতর নজরকাঁড়া ডিজাইনে বানানো হয়েছে যেটা দেখলে সবারই চোখ আটকে যাবে!

সত্যি মানুষটা পারেও বটে আমার কি পছন্দ অপছন্দ সবটা তার খেয়াল রাখা চাই এগুলো ভাবতেই ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠলো! আমি কোনোকিছু না বলে চুপচাপ ভাবে রইলাম আবারো। কিছুক্ষণ পর ওনি আমার কাছ থেকে ওঠে গিয়ে আবার ফেরত আসলেন হাতে একটা বড়ো বাক্স নিয়ে! আমার চোখ আটকে গেলো বাক্সটায়! কি আছে ওটার মধ্যে। আমি কিছু বলার আগেই উনি বক্সটা খুললেন সাথে সাথে দেখতে পেলাম বক্সের ভেতর ফুচকা রয়েছে! আর সাথে ঝালমুড়িও রয়েছে! এগুলো দেখে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ! কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগলো এই এতো রাত্রে উনি এগুলো কোথা থেকে আনলেন? আমি বলার আগে উনি নিজেই বললেন,

–“জুঁইফুল আমি জানি এই খাবারগুলো তোমার পছন্দের কিন্তু আমার সবচেয়ে অপছন্দের খাবারের মধ্যে এগুলো একটি! কিন্তু আমি এটাও জানি অন্য কিছু দিলে তুমি ততোটাও খুশি হবে না যতোটা না খুশি এইগুলো দেখলে হবে আর প্রিয় মানুষের মুখে হাসি দেখতেই এই পদ্ধতি!”
–“সবই বুঝলাম কিন্তু এগুলো আনলেন কখন আপনি? আমিতো আপনাকে বাহিরে যেতে দেখিনি তাহলে?”
–“আমি রুমে এসে দেখেছি তোমার রুমে স্টোভ ছিলো তাই তুমি যখন ঘুমিয়েছিলে তখন আমি নিজের হাতে সবটা বানিয়েছি শুধু তোমার জন্য!”

উনি আমার জন্য এতোকিছু করেছেন ভাবলেই ওনার প্রতি শ্রদ্ধা দ্বিগুন হয়ে যায়! আবারো বিয়ের ঘটনাটি মনে পড়লে রাগও হয় বটে কিন্তু রাগ ভুলিয়ে দেবার জন্য উনার এই কর্মকান্ডগুলোই যথেষ্ট! দেরি না করে আমি খেতে লাগলাম মনের আনন্দে। বেশ ভালোই বানিয়েছে উনি। আমি খেয়ে যাচ্ছি বেশ কিছুক্ষণ খাবার পর দেখলাম উনি ড্যাব ড্যাব করে আমার খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে! আমিও সুযোগ বুঝে উনার মুখে একটা আস্ত ফুচকা পুরে দিয়ে বললাম,

–“এভাবে তাকিয়ে থাকতে নেই না হলে আমার পেটে ব্যাথা হবে! তার চেয়ে বরং আমিই আপনাকে খাইয়ে দিই।”
আমার কথায় সেহেরিশ মুচকি হেঁসে বলে ওঠলো,

–“ওই যে বললাম না এগুলো আমার সবচেয়ে অপছন্দের খাবার কিন্তু তুমি যখন বলেছো তখন না খেয়ে উপায় নেই।”
উনি খেলেন ঠিকই কিন্তু আমার আঙুলে জোড়ে কামড়ও বসালো ইচ্ছে করে! যার দরুন আমিও ওনাকে আমাকে খাইয়ে দিতে বলে উনার থেকে দ্বিগুন কামড় বসিয়ে শো*ধ বোধ করে নিলম।

এভাবেই আরো কিছুক্ষণ বসে রইলাম চাঁদের আলোয় আলোকিত জোৎস্না রাত্রে! টুকটাক কিছু কথা বলে খাওয়া শেষ করে রুমের দিকে অগ্রসর হলাম! বেশ ভালোই কাটলো সময় টা। একটা স্বরনীয় দিন হয়ে থাকবে আমার জীবনে। প্রথমে ছাঁদে ওঠেছিলাম বিরক্তি নিয়ে শেষে বেরোলাম এক রাশ ভালো লাগা আর কিছু সুন্দর স্মৃতি নিয়ে। বিছানা তো আগে থেকেই করা ছিলো এখন শুধি গিয়ে আমি শুয়ে পড়লাম আর সেহেরিশ ও আমার পাশে শুয়ে পড়লো হ্যাঁ দু’জনের মধ্যে খানে তখনও বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার বর্ডার বিদ্যমান!

প্রণয় বিরহ পর্ব ২৪

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্ব জুড়ে শুধুই জুঁই আর সেহেরিশ ছিলো বিধায় কেউ রাগ করবেন না। আজকের রাত্রিটাই ওদের ছিলো।

প্রণয় বিরহ পর্ব ২৬