পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৩১

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৩১
লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া

আমি কাঠ কাঠ গলায় বললাম, আপনাকে উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।
উনি আমার প্রশ্নে অতিরিক্ত মাত্রাই রেগে গেলেন। রেগে গিয়ে উনি হিতাহিত ঙ্গান শূন্য হয়ে পড়লেন। এক টানে উনি আমাকে সিট থেকে উনার কোলে বসিয়ে দিলেন। আচমকা উনার কাজে আমি বিষ্মিত, শিহরিত। বিষ্ময়ে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। উনি রাগে ফুস ফুস করছেন।

হঠাৎ উনার বলিষ্ঠ হাত জোড়া আমার কোমড় চেপে ধরে। উনার হাতের ছোঁয়া আমার কোমড়ে পেতেই আমার শরীরটা বরফের মতো জমে গেল। উনি আমার খুব কাছে চলে এলেন। উনার নিশ্বাস আমার চোখে মুখে পড়ছে। উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমাকে বলতে বাধ্য নও তো কাকে বলতে বাধ্য? হুম? ঐ ইফাদকে? ঐ ইফাদের আশেপাশেও যদি তোমাকে দেখি তো একদম মেরে ফেলবো বলে দিলাম।
উনার হাত জোড়া আমার কোমড় থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,

আমি কাকে বলতে বাধ্য সেটা নিশ্চয়ই আপনাকে বলবো না। আমি কার সাথে কথা বলবো, কার সাথে মিশবো সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিশ্চয়ই আপনি ঠিক করে দিবেন না আমি কার সাথে কথা বলবো আর না বলবো, কার সাথে মিশবো আর না মিশবো। আপনার অধিকার খাটানো বন্ধ করুন আমার লাইফে। আপনি বুঝতে পারছেন না আপনি আমার লাইফে অনধিকার চর্চা করছেন?

দেখো রিয়া আমাকে রাগিয়োও না। আমার রাগানোর ফল তোমার জন্য নিশ্চয়ই সুখকর হবে না। তুমি আমার স্ত্রী। তোমার ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার।
প্লিজ বন্ধ করুন আপনার দায়িত্ব পালন।

এই’দায়িত্ব’ শব্দটা শুনতে শুনতে আমি হাঁপিয়ে গেছি। দায়িত্ব শব্দের বেড়াজালে পড়ে আমার লাইফটা হেল হয়ে গেছে। এই দায়িত্ব শব্দটা আমি আর নিতে পারছি না। বন্ধ করুন আপনার দায়িত্ব পালন। অনেক পালন করেছেন আপনার দায়িত্ব। এবার আমাকে মুক্তি দিন। ওপস সরি আপনি না আমার আপনাকে মুক্তি দেওয়া উচিত। আমি নামক দায়িত্বের বেড়াজাল থেকে আপনাকে মুক্ত করে দেওয়া উচিত। আজকে থেকে আপনাকে মুক্ত করে দিলাম। আর আমি নামক বুঝা আপনাকে বইতে হবে না। শেষ বারের মতো আমাকে আমার বাসায় রেখে আসুন।

উনি আমাকে উনার কোল থেকে ছুঁড়ে ফেলার মতোই সিটে রাখলেন। কোমড়ে হালকা ব্যথাও পেয়েছি। উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। উনি জুড়ে জুড়ে নিশ্বাস নিচ্ছেন। উনি প্রচণ্ড স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করছেন। ভয়ে আমি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি।

৩০ মিনিটের রাস্তা আজকে ২০ মিনিটে চলে এসেছি। বাসার সামনে আসতেই উনি গাড়ি থেকে নেমে আমাকে টেনে গাড়ি থেকে নামান। টানতে টানতে বাসার ভিতরে নিয়ে যান। কলিংবেল না বাজিয়ে উনার কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খুলে বাসায় প্রবেশ করলেন। রুমে যাওয়ার পথেই মামুনির সাথে দেখা। মামুনি উনাকে অনেক প্রশ্ন করেন। উনি এতো রেগে আছেন কেনো? আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো? উনি মামুনির কথাগুলো উপেক্ষা করে আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে আসলেন। মামুনিও রুদ্রের পিছন পিছন আসেন। রুদ্র আমাকে নিয়ে রুমে এসেই ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেন।

উনি আমাকে রেখে সারা রুম জুড়ে পায়চারী করছেন। টেবিলের ওপর থেকে পানির বোতল নিয়ে মাথায় ঢেলে দেন। আমি ভয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি। উনাকে এতোটা রেগে যেতে আমি আগে কখনো দেখিনি। উনাকে দেখে আমার ভীষণ ভয় করছে।

আচমকা উনি আমার দুই বাহু চেপে ধরেন। আমি ভয়ে দুপা পিছিয়ে গেলাম। উনি আমাকে নিজের সাথে চেপে ধরলেন।
আমাকে আর এখন ভালো লাগে না? অন্য কাউকে ভালো লাগে? এজন্যই আমার কাছ থেকে মুক্তি চাও? শুনে রাখো মুক্তি তুমি কোনো দিনই পাবে না। আমাকে তোমার ভালো লাগুক আর লাগুক তোমার আমার সাথেই থাকতে হবে। দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলোও তোমার আমার কাছ থেকে মুক্তি নেই। তুমি সেদিনই মুক্তি পাবে যেদিন আমি এই বাসা থেকে লাশ হয়ে বেড়িয়ে যাব।

উনার ফোন বেজে ওঠতেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। ফোনের স্কিনের নামটা দেখেই উনি বেলকনিতে চলে গেলেন। বেলকনিতে যেতেই উনার একটা কথায় কর্ণকুহর হলো।
‘ও পালালো কীভাবে? তারপর আর কোনো কিছু বোধগম্য হলো না। কিছুক্ষণ পরেই উনি রেগে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

আজকে কলেজে আসতেই ত্রয়ী আমাকে চেপে ধরে। ও আমার বিয়ের ব্যাপার জেনে গেছে। যেটা এতোদিন ধরে আমি ওর কাছ থেকে লুকিয়ে গিয়েছিলাম। আমি কলেজে যেতেই কতক্ষণ গাল ফুলিয়ে বসে রইল। আমার সাথে কথা বলবে না। যখন দেখলো আমি ওর রাগ ভাঙানোর কোনো প্রচেষ্টায় করছি না। আমি নিজের মতোই বসে আছি তখন ও নিজেই এসে কথা বললে।

আমি তোর এতোটাই পর যে আমাকে তোর বিয়ের খবরটা দিলি না। তোর বিয়ে নিয়ে আমার কতো প্লেন ছিল স্বপ্ন ছিল। তুই আমার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিলি। হে পাষাণ নারী আপনি আমার মনটা ভেঙে দুই টুকরো করে দিলেন।
পরিস্থিতি ছিল না তোকে বলার মতো। আমি আমার লাইফের কোনো কিছু তোকে ছাড়া করি বল? আমার জীবনের এতো ইম্পর্টেন্ট একটা অধ্যায় তোকে ছাড়া নিশ্চয়ই করতাম না? পরিস্থিতি এমন ছিল যে কাউকে বলতে পারিনি। তুই আমার বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলি? আমি জানতাম মানুষ নিজের বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখে আর তুই? অন্যের বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখলে এমনি হয়।

তুই জানিস না মেয়েরা নিজের বিয়ের থেকেও নিজের বেস্টফ্রেন্ডের বিয়ে নিয়ে বেশি স্বপ্ন দেখে। আমি কেমন হতভাগা নিজের বেস্টফ্রেন্ডের জামাইকে এখনো দেখতে পেলাম না। আচ্ছা জামাইকে না দেখা তোর জামাই সম্পর্কে কিছু বল। ভাইয়া তোকে নিশ্চয়ই অনেক ভালোবাসে?
আমার ভালো লাগায় সে, তার ভালো না লাগায় আমি। তার বিরক্তিতে আমি, আমার সস্থিতে সে। আমার ভালোবাসায় সে, তার ঘৃণায় আমি।

এসব কী বলছিস?
তার কাছে শুধুই আমি দায়িত্ব। সে আমাকে নিজের দায়িত্ব ছাড়া আর কিছু মনে করে না। আমাকে একা ছাড়তে সে ভয় পায়। আমাকে কোনো ছেলের সাথে দেখলে সে রেগে যায়। আমার ওপর সে সব ধরনের অধিকার ফলায়। কিন্তু তবু আমি তার দায়িত্ব।

আমি তোকে গাধা ভাবতাম। কিন্তু আমার এখন মনে হচ্ছে তোর গাধা হওয়ার যোগ্যতাও নাই। তোকে যদি গাধা বলি তাহলে গাধাকে অপমান করা হবে। তোকে যদি ভালো নাই বাসে শুধু দায়িত্বই মনে করে তাহলে তোকে একা ছাড়তে কেনো ভয় পাবে? তোকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে কেনো রেগে যাবে? তোকে নিয়ে কেনো এতো পসেসিভ হবে? গাধা ভাইয়া তোকে ভালোবাসে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারে না। কিছু মানুষ মুখে না কাজের মাধ্যমে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে। ভাইয়ার রাগের আড়ালেই তোর জন্য এক অসীম ভালোবাসা রয়েছে।

শুরু হয়ে গেলো ত্রয়ীর ভালোবাসা নিয়ে ঙ্গান দেওয়া। আমি জানতাম ত্রয়ী ভালোবাসা নিয়ে একটু অভিজ্ঞ। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ত্রয়ী ভালোবাসার ওপর পিএইচডি করে আসছে। আমি ত্রয়ীর বকবকানির হাত থেকে বাঁচাতে বইয়ে চোখ বুলাতে ব্যস্ত। ঠিক তখনি রুদ্র আমার পাশে এসে বসে পড়ে। আচমকা উনার আগমনে আমরা দুজনেই চমকে ওঠি। আমরা দুজনেই চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। রুদ্র আমাদের দুজনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,
এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমাকে দেখে কী এলিয়েন মনে হচ্ছে?

আমরা দুজনেই মাথা নাড়িয়ে না বলি। ত্রয়ী রুদ্রের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,
আপনি আমার স্যার আবার রিয়ার খালাতো ভাই। আপনার কাছে তো রিয়ার নামে বিচার দেওয়ায় যায়?
অবশ্যই।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৩০

রুদ্রর কথায় মনে হলো ত্রয়ীর সাহসটা বেড়ে গেলো।
এই বেয়াদপ মহিলা আমাকে রেখে একা একা বিয়ে করে ফেলেছে। বিয়েতে কী আমি বেশি খেয়ে ফেলতাম? এক পিস রোস্ট আর এক প্লেট পোলাওই তো খেতাম।

পূর্ণিমাতিথি পর্ব ৩২