প্রণয় বিরহ পর্ব ৩

প্রণয় বিরহ পর্ব ৩
অর্ষা আওরাত

পরিবেশ কেমন নিস্তব্ধ শান্ত হয়ে আছে। আরো বেশি নিস্তব্ধ হয়ে আছে ইহাদ ভাইয়া! তার চোখ মুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে বোঝাই যাচ্ছে হয়তো রেগে আছে কিন্তু রেগে থাকলেও আমাকে আজ সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। অনেক হয়েছে বিরহের খেলা এবার বিরহের আগুনে নিজেকে আর পোড়াবো না! এখন শুধু ভাইয়ার উত্তরের অপেক্ষা। আরো কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিতো হবার পর ভাইয়া নিজের হাত মাথায় চেপে ধরে রেখেছে হয়তো নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ পর এভাবে থাকার পর তিনি বললেন,

–“দেখ জুঁই আমি চাইলেই ব্যাপারটি বাড়াতে পারতাম এখন পরিবারের সকলকে জড়ো করে কিন্তু আমি সেরকম কিছুই করতে চাচ্ছি না কারন সবাইকে ডাকলে যেরকম সবাই তোকে একটু নিচ নজরে দেখবে তেমনি সবার চোখে তুই ছোটোও হয়ে যেতে পারিস। এবং সবাই তোকে একটু হলেও বকাবকি করবে তাই ঠান্ডা মাথায় বলছি শোন তুই এসব প্রেম ভালোবাসা ভুলে যা, ভুলে গিয়ে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী হ সেটা তোর জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভাইয়ার ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বলা কথার ধরন আমার পছন্দ হলো না। আমি ফের বলে ওঠলাম,
–“ভাইয়া আপনি সত্যিই আমার মনে বিরাজ করছেন দেড় বছর ধরে। তাই চাইলেও এতো সহজে আপনাকে আমি ভুলতে পারবো না তবে এখনো আপনি বললেন না ওই মেয়েটির সাথে আপনার সম্পর্ক কি রকম? সেটা তো বলুন?”

এবার ভাইয়া চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ পরিমান বাঁকিয়ে আমার দৃষ্টি কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাঠ গলায় বলে ওঠলেন,

–“তোর এতো শোনার ইচ্ছে না? তাহলো শোন! বেশ তো বলছিস আমাকে ভালোবাসিস তাহলে এটুকু বুঝছিস না যে প্রিমার সাথে আমার ভালোবাসার সম্পর্ক আছে! কোন পরিস্থিতি থাকলে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে, কাপল পিক তুলে সেটা তো নিশ্চয়ই তোর বোঝার বাহিরে নয়? হ্যাঁ আমি ভালোবাসি প্রিমাকে শুনতে পেয়েছিস তুই? আর ওকেই আমি বিয়ে করবো! আর ওকে শুধু ভালোইবাসি না গতো একবছর ধরে ওকে আমি ভালোবেসে আসছি। এবার পেয়েছিস তো উত্তর? তো এবার চলে যা দয়া করে এখান থেকে। আর বড়ো তো কম হসনি এখনো কি বুঝলি না এতোকিছু দেখেও যে প্রিমার সাথে আমার কোনো সাধারণ সম্পর্ক নেই? এবার চলে যা!”

ভাইয়ার কথা শুনে প্রুচর কষ্ট হচ্ছে! বুক ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু আমি চোখ থেকে পানি পড়তে দিচ্ছি না!আমি দেখাতে চাই না নিজের দুর্বলতা! ভাইয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতে ভাইয়ার উল্টোদিকে ফিরে বলে ওঠলাম,

–“হ্যাঁ বেশ ভালো করেই বুঝেছি আপনার সাথে ওই আপুর সাধারন সম্পর্ক নয় কিন্তু সিওর হবার জন্য আজকে আপনাকে জিগেস করতে এসেছিলাম। কারন প্রণয়ের বিরহে বিলীন হওয়া সেটা যে কতোটা যন্ত্রনাদায়ক সেটা যার সাথে ঘটে সেই কেবল বুঝতে পারে অন্য কেউ নয়। তাই বাধ্য হয়েই আপনার কাছে এসেছি জিগেস করতে এখন যখন উত্তর দিয়েই দিলেন তো ঠিকআছে আপনার সামনেও না আসার চেষ্টা করবো আমি। ভালো থাকবেন আপনি আপনার ভালোবাসা নিয়ে এটাই কাম্য আপনার জন্য।”

–ভাইয়া শুনেছেন কিনা জানি না। আমার কথা বলা শেষ করে আমি নিজের রুমে চলে আসি! আর এক মুহুর্ত ও থাকলে বোধহয় কান্না সামলাতে পারতাম না! সত্যি টা জানার পর তারই সামনে তার ভালোবাসার দাবি নিয়ে কান্নার কোনো মানেই হয় না! যতোই হউক এতোদিন ধরে সে আমার মনে ছিলো তাই কষ্টটা মানাতে পারছি না এতো সহজে।

উনি যখন অন্য কাউকে ভালোবাসেন তো আমার আর জোড় করার দরকার নেই বা যেচে ভালোবাসি বলতে যাবো না কোনোদিনো! ভালোবাসলেই নিজের আত্মসম্মান ভুলতে হয় না। আমার আত্মসম্মান বজায় রেখে আম আমার মতন থাকবো। ভালোবাসলেই নিজের আত্মসম্মান ভুলতে হবে না। নিজের কষ্ট নিজের মনেই গোপন থাকবে না হয়। তবুও তাকে ভুলতে পারবো না কিন্তু দূর থেকে না হয় ভালোবেসে যাবো। এতোদিন ধরে মনের অনেকটা জুড়ে ছিলো এখন চাইলেই তাকে মুছতে পারবো না।

মোবাইলের এর্লামের শব্দে ঘুম ভাঙলো জুঁইয়ের! ঘুমঘুম চোখেই মোবাইলের এর্লাম বন্ধ করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হওয়া শেষে তৈরী হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো কোচিং এর উদ্দেশ্য। কোচিং এ গিয়েও মন বসলো না! সকালের ঘটনা মনে পড়তেই মনের খারাপ লাগার উদয় হলো যার ফলস্বরুপ কোচিং-এর মাঝখান থেকেই ছুটি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো!

কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছে এক ধ্যানে জুঁই! রাস্তার পাশ ঘেঁসে দু’জনের দিকে চোখ পড়তেই পা জোড়া থমকে দাঁড়ালো মাথা উঁচু করে দৃষ্টি মেলে তাকালো হাসোজ্জল দু’টো মানুষের দিকে! রাস্তার পাশে ফুচকার দোকানে দু’জন মিলে ফুচকা খাচ্ছে! সেই দুজন হলো ইহাদ আর প্রিমা! জুঁই নিষ্পলক ভাবে তাদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

এক আরেকজনকে খাইয়ে দিচ্ছে! দু’জনেরই চোখে মুখে আনন্দের রেশ দেখা গেলো। না চাইতেও চোখ জোড়া যেনো সেখানেই চলে যাচ্ছে জুঁইয়ের! হয়তো সব ঠিক থাকলে আজ ইহাদের জায়গায় জুঁই থাকতো। কিন্তু যা হবার নয় তা নিয়ে চিন্তা করলে হাপিত্যেশ করা ছাড়া উপায় নেই! ওদের দু’জনকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো। বাসায় ফিরতেই দেখা দিলো বৃষ্টি!

–জুঁইকে ছাঁদে নিয়ে বসে এক গাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিলো জুঁইয়ের দিকে,
–“সত্যি করে বলবি কি হয়েছে তোর? যদি আজকে না বলিস তো আর কোনোদিনও তোকে আর কোনোদিনও কোনো কিছু বলতে হবে না এবার বাকিটা তোর সিদ্ধান্ত।”

–আমি চেয়েও কিছু বলতে পারলাম না বৃষ্টি আপুকে! কারন কেউ বুঝুক আর না বুঝুক বৃষ্টি আপু সবসময় ছায়ার সাথে আমার সঙ্গে মিশে থাকে। আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না আপুকে। সবটা খুলে বললাম এয়ারপোর্টের ঘটনা থেকে আজকের সকালের ঘটনা পর্যন্ত! সবটা বলার পরে আপুর দিকে তাকালাম আপুর মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছি না কেমন থম মেরে বসে আছে! কিছুক্ষণ সময় এভাবেই অতিবাহিতো হলো আমিও সামনের দিকে তাকিয়ে আছি আর আপুও আগের মতন থম মেরে বসে আছে! হটাৎই আপু বলে ওঠলো,

–“অন্য বিষয় হলে এতোক্ষণ তোকে বকাবকি করতাম কিন্তু পরিস্থিতি অন্য রকম এখন তোকে বকলে আরো তোর মনে প্রভাব পড়বে তাই ঠান্ডা মাথায় বলছি শোন, ভাইয়া যখন অন্য কাউকে ভালোভাসে তো তুই তাকে ভুলে যা! যে তোকে ভালোবাসে না তাকে আঁকড়ে ধরে থাকিস না। ছেড়ে দে তাকে অপেক্ষা কর তার জন্য যে তোকে সঠিকভাবে ভালোবাসবে।”

–“কিন্তু আপু আমি তাকে ভালোবাসি দেড় বছর ধরে এক দু’দিন নয়! তাই ভুলতে কষ্ট হবে কিন্ত আমি চেষ্টা করবো।”
আর কোনো কিছু না বলে ছাঁদ থেকে নিরবে নেমে আসলাম নিচে! এক মুহুর্তও ওসব নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে হচ্ছে না! পুরনো কথা বললেই ক্ষতে ঘা লাগে বারংবার প্রণয়ের বিরহ মনকে পুড়িয়ে দেয়! যা সইতে বড্ড কষ্ট হয়। নিচ নেমে ঝেঠিমারা বলাবলি করছে,

–“আর দু’দিন পরেই মেয়েকে দেখতে যাবো আমি ইহাদের জন্য। তারপরেই বিয়ের ডেট ঠিক করবো বেশি দেরি নয় দশ দিনের ভিতরেই বাড়িতে ইহাদের বউ আসবে।”

প্রণয় বিরহ পর্ব ২

একদিনেই এতো ঝটকা খাবো এটা মোটেও প্রত্যাশা করিনি! প্রথমে ইহাদ ভাইয়ার ভালোবাসার কথা তারপরেই বিকেলের ঘটনা আর এখন ইহাদ ভাইয়ার বিয়ে হবে! তাও দশদিনের ভিতরেই! আমার নিজের চোখো সবটা দেখতে হবে! বিরহে বিলীন হবার কষ্ট আরো তীব্র হয়ে ওঠছে দিনকে দিন। যাকে ভালোবাসি সেই মানুষটাকেই অন্য কারো সাথে দেখতে হবে তাও নিজেরই চোখের সামনে! পারবো তো সবটা মেনে নিতে আমি?

প্রণয় বিরহ পর্ব ৪