প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ১৩

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ১৩
আরোহী নুর

আজকে দ্বিতীয়বারের মতো আদ্রিশকে ডিভোর্স পেপার পাঠাল আঁখি,ব্যাথার পরিমাণ তার সেদিনের তুলনায় এক চুলও কম ছিল না,আজও হাতে কাগজটা নিয়ে বুকে প্রচন্ড কম্পন অনুভব করল,তবুও বুকে আত্মসম্মান নামক পাথর রেখে কাগজটা আবারও পাঠিয়ে দিল আঁখি।

আঁখি তার পক্ষের উকিল পাঠিয়েছে আদ্রিশের কাছে।লয়্যার আরিফুল ডিভোর্স পেপার টা বের করে আদ্রিশের সামনে রেখে বললেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দেখুন মি.আদ্রিশ আপনিও একজন লয়্যার,আপনি ভালোয় জানেন ডিভোর্স হতে সর্বক্ষেত্রে দু’পক্ষেরই মতামত প্রাধান্য পায় না,বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে কেউ যদি তার স্বামী বা স্ত্রীর সাথে থাকতে না চায় তবে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে সে তাকে ডিভোর্স দিতে পারবে অপরপক্ষের মতামত না থাকলেও,

এতে যদি নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিষয়টার মিমাংসা না হয় তবে সে ব্যাপারটা আদালত অব্দি পৌঁছায়,মিস আঁখি আপনার সাথে থাকতে মানসিকভাবে প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছেন না,আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন তাই উনি আপনাকে অনায়াসে ডিভোর্স দিতে পারেন,আগের বার উনি সাইন করে আপনাকে ডিভোর্স পেপার দিয়েছিলেন,

আপনি তা ছিঁড়ে দিলেন,কিন্তু আপনি ভালোয় জানেন ওটা অনুলিপি ছিল,যার ফলস্বরূপ আপনার বিরুদ্ধে উনি আইনত পদক্ষেপ নিতে পারেন উনি,তাও উনি আপনাকে একটা সুযোগ দিলেন,এখানে উনি আবারও তার একটা অনুলিপি পাঠিয়েছেন,আপনিও সই করে দিবেন উনি আশা রেখেছেন,তাও যদি আপনি আগের মতো কিছু করার চিন্তায় থেকে থাকেন তবে আপনি ভুল করছেন,আইন সম্পর্কে আপনি ভালো জানেন,ডিভোর্স টা এমনিতেই কার্যকর হবে।আমি না হয় চলি,আপনি যথেষ্ট সময় নিন,ভেবে দেখুন বিষয়টা,আশা করি সাইন করে রাখবেন।

লয়্যার আরিফুল চলে গেলে ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কাগজটার দিকে আদ্রিশ,যেখানে আঁখির সাইন স্পষ্ট, কি করে পারল আঁখি সাইন টা করে দিতে, আদ্রিশ কি আদোও পেরে উঠবে সাইন করতে,কই কথাটা ভেবেই তো তার বুক কাঁপছে,যে আঁখিকে না পাওয়ার শোকে একসময় ম*র*তে বসেছিল সেই আঁখিকে কি পারবে নিজে থেকে দূর করতে!কি করে পারবে তাকে ছাড়া বাঁচতে!

ডুবে গেছে এক বিষাদের সমুদ্রে আঁখি,সব কিছু যেন একসাথেই মাথায় ভর করে গেছে,আদ্রিশের বিশ্বাসঘাতকা,আদৃতের হুট করে ফিরে আসা,কলির আচমকা মৃত্যু, সাথে তার ব্যক্তিগত খবর মিডিয়াতে চলে যাওয়া,আশপাশের লোকের সমালোচনা,এর উপর ডিভোর্স পেপার আবার পাঠানো,ভালোবাসার মানুষের সাথে বিচ্ছেদ,আদ্রিশের সাথে তার সুন্দর সেই সম্পর্কের সমাপ্তির সূচনা,এতো কিছু একসাথে কেউ কেমনে মেনে নিতে পারে,উক্ত পীড়া সহনীয় মাত্রা পেরিয়ে গেছে আঁখির,মাথা প্রচন্ড ধরেছে তাই একটা ওষুধ খেয়ে শুয়ে পরেছে বিছানায়,তবে ঘুম আসছে কোথায়,হঠাৎ মনে পরল তার বাবার কথা।তার বাবা তাকে প্রায়ই বলতেন।

আঁখি,মাই প্রিনসেস,তুই শুধু আমার মেয়ে না আমার অহংকার হতে হবে তোকে,যার সামনে শত পুরুষকেও হার মানতে হবে,যাকে জয় করতে হবে পৃথিবীর সকল অসাধ্য সাধন করার সক্ষমতা,সেই ধৈর্য্য আর সাহসিকতা তোর মধ্যে থাকতে হবে,যাতে আমি মাথা উঁচু করে বলতে পারি তুই আমার সন্তান, আমার মেয়ে।

বাবার এ কথাটা মনে পরায় হঠাৎ করেই যেন সীমাহীন এক ধৈর্য্য ও শক্তির যোগান হলো,মনে কোথা থেকে একটা প্রশান্তির ছোঁয়া বিরাজমান হলো,মনে প্রচন্ড এক টান পরল আঁখির,বাবা মায়ের স্মৃতি যখন এতো প্রশান্তি দিতে পারে তবে তাদের সংস্পর্শ কতটা প্রশান্তি দিতে সক্ষম হবে।খুব লোভ হলো আঁখির আবারও মা বাবার ভালোবাসা পাওয়ার,তবে তা আদোও সম্ভবপর কখনও হবে কি না কে জানে,কিন্তু নিজেকে আজ আটকাতে পারছে না আঁখি,তাদের পাশে যাওয়ার ক্ষমতা আঁখির নেই তবে দূর থেকে তাদের একপলক দেখে আসবে ভেবে নিয়েছে।যেই ভাবনা সেই কাজ,উঠে গেল আঁখি।

একটা জিন্স প্যান্টের সাথে হুডি পরে নিল,চুলগুলো খোঁপা করে কাঠি দিয়ে আঁটকে নিল,তারপর বেড়িয়ে গেল ঘর থেকে,বাবার দেওয়া সেই বাইকটা বের করল,মা বাবার ঘর থেকে আর কিছু সাথে করে নিয়ে না আসলেও বাইকটা ঠিকই নিয়ে এসেছিল,তার বাবার স্মৃতি হিসেবে,মা বাবার কাছে সন্তানদের এতো আত্মসম্মান খুঁজতে নেই আঁখির মতামত,যেহেতু প্রাণটাই উনাদেরই দান,আদ্রিশের বাড়ি থেকে আসার পরদিন লোক পাঠিয়ে বাইকটাও আনিয়ে নিয়েছিল আঁখি,তি

ন বছর পর আজ আবারও তাতে চড়ার ইচ্ছে জাগল আঁখির,বেশ খুশি মনে চড়ে বসল তাতে,চওড়া এক হাসি দিয়ে বাইক স্টার্ট করল,লক্ষ্য খান ম্যানশন,ভিতরে না গেলেও বাহির থেকে দেখে আসবে নিজের জন্মস্থান, পারলে জন্মদাতা পিতা মাতা ও তার বাকি পরিবারের সদস্যদেরও।আজ তিন বছর পর আবারও সেই রূপে রাতের শহরে রাইড করতে বের হয়ে খুব ভালো লাগছে আঁখির।

আজ হাসপাতাল থেকে বেশ রাত করে ফিরছেন ডা.আশরাফ খান,সাথে আজ গার্ড আনেন নি,এমারজেন্সিতে হাসপাতালে থাকাও পরতে পারে ভেবে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।আদৃত আজ নিজে থেকেই উনার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল।অনেক দিন পর তার আশরাফ স্যার এর সাথে দেখা,যথেষ্ট সম্মান ও শ্রদ্ধা করে উনাকে আদৃত,

এমারজেন্সিতে আদৃত আজকে উনার সাথেই ছিল,এমারজেন্সি পর আদৃতকে উনি আর যেতে দেননি,নিজে তাকে বাড়ি ড্রপ করবেন বলে।আদৃতের বাড়ি ডা.আশরাফ খানের বাড়ি যাওয়ার রাস্তার মধ্যেই পরে তাই।বর্তমানে আদৃত আর আশরাফ খান গাড়িতে বসে আছেন,আশরাফ খান আদৃতকে নিজের হাসপাতালে জয়েন হবার প্রস্তাব সরাসরিই দিয়ে দিলেন।
আদৃত মাই ভয়,তুমি সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ছিলে আমার শিষ্যদের মধ্যে, তাই আমি তোমাকে আমাদের হাসপাতালের একজন সার্জন হিসেবে নিয়োগ করাতে ইচ্ছুক,এ বিষয়ে তোমার কি মতামত?

আদৃত উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই গাড়িটা থেমে গেল।
কি হয়েছে মফিজ?
স্যার মনে হয় টায়ারে কোনো সমস্যা হয়েছে,আমি দেখছি।
আশরাফ রায়খানকে কথাটা জানিয়ে গাড়ি থেকে নিচে নামতেই কোথা থেকে তিনজন মাস্ক পরা লোক এগিয়ে এলো,হাতে তাদের ধারালো ছু*রি,একজন ছুরিটা এনে ড্রাইবারের গলা বরাবর ধরল,বাকি দু’জন গাড়ির দু’দিকে গিয়ে আদৃত আর আশরাফ খানকে বেরুতে বলল।তারা রাস্তায় কিল ফেলে গাড়ি আটকাতে সফল হয়েছে।

এই বের হো দু’জন, আর যার যার কাছে যা আছে সব দে।
আশরাফ খান আর আদৃত দুজনই বুঝতে পারলেন এরা ছিনতাই কারী,গাড়ি থেকে নেমে পরলেন তারা দু’জন।আশরাফ খান বললেন।
দেখো তোমরা আমাদের কাছে কিছুই পাবে না,আমরা টাকা বহণ করছি না,সোনা গহনা কিছু নেই আমাদের কাছে,বাকি কার্ডগুলো নিয়ে গিয়েও তোমাদের কোনো লাভ হবে না।

ওই বুড়া বেশি কথা বলিস কেনো?চুপচাপ যা আছে বের কর।নয়তো এখনই পেটে ছু*রি ঢুকিয়ে ফুটো করে দিবে,হাতের ছুরি দেখিয়ে আশরাফ খানকে ভয় দেখালে তার হাত ধরে এক টান দিয়ে পিছনে মুড়ে ভেঙে দেয় আদৃত,সাথে সাথেই লাথি দিয়ে ড্রাইবারের পিছনের জনকে ফেলে দিল,পাশের জন এসে আদৃতের উপর ঝাপিয়ে পরল।

আদৃত তিনজনকে সামলাতে লাগল আর ডা.আশরাফ খানকে বলল ড্রাইবারকে নিয়ে গাড়ির ভিতর ঢুকে চলে যেতে,এদিকে আশরাফ খান কি করবেন কিছু ভেবে পাচ্ছেন না,এভাবে আদৃতকে রেখে যাওয়া ঠিক বলে মনে হচ্ছে না উনার,উনি সাথে সাথে পুলিশকে ফোন করলেন,হঠাৎ একজন আদৃতের অগোচরে আশরাফ খানের উপর হামলা করবে ঠিক তখন তার হাত পাকড়াও করে কেউ একজন,এক ঘুষিতে তাকে নিজের জন্মদাতার পাশ থেকে বেশ দূর করে আঁখি,দীর্ঘ তিন বছর পর নিজের কলিজার টুকরোকে আবারও এই রুপে দেখে নয়ন ভরে এলো আশরাফ খানের,বাবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে আঁখি বলল।

গাড়িতে ঢুকে গাড়ি লক করো বাবা,এদের তোমার মেয়েই সামলে নিবে।কথাটা বলে ছোটে গেল আঁখি তাদের দিকে,আদৃত তাদের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত,একজন আদৃতকে ছুরিঘাত করতে আসলে আঁখি তার আশাতে পানি ঢালে,হাত মুড়ে ভেঙে দেয় তার,তখনই আদৃতের নজর যায় আঁখির উপর,আঁখির এই রূপটা আবারও দেখতে পেয়ে আদৃতের মনে প্রশান্তি ছেঁয়ে গেল,বেশ অবাকত্ব নিয়ে তাকিয়ে আছে আঁখির দিকে।এদিকে আঁখি তাকে হুটহাট বলল।

এই যে আমাকে এভাবে দেখাদেখির অনেক টাইম পাবেন বর্তমানে এদের দিকে খেয়াল দেন,আমি না হলে এখনই পরে মা মা বলে চিল্লানী দিতেন।

বরাবরের মতো আঁখির কথায় হাসি আসলেও হাসল না আদৃত,মারপিটে মন দিলো,একসময়কার কারাতে চ্যাম্পিয়ন আদৃত, আর আঁখি যাকে তার বাবা দশ পুরুষের সমতুল্য এক নারী হিসেবে গড়ে তুলেছেন,এমন কোনো দেশ নেই যেখানে তিনি তার একমাত্র মেয়েকে ঘুরতে নিয়ে যান নি,বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের আত্নরক্ষা কৌশল তিনি শিখেয়েছেন মেয়েকে,শারীরিক ও মানসিক কোনো দিক থেকেই মেয়েকে অক্ষম রাখতে নারাজ ছিলেন আশরাফ খান,

আঁখির সকল সফলতার পিছনেই রয়েছে তার বাবার অবদান।আজ মেয়েকে নিজের ঢাল স্বরূপ পেয়ে সুখে চোখে জল চলে এসেছে আশরাফ খানের,একাই একটা মেয়ে তিনজনের উপর ভারী পরেছে,অবশেষে তিনজনকে মেরে কুপকাত করল আঁখি আদৃত,গাড়ির ডিঁকিতে দড়ি ছিল তা বের করে তিনজনকেই পাশের গাছের সাথে বেঁধে নিল দু’জন,

ড্রাইবার ততোসময়ে টায়ার পাল্টাতে লেগে গেছে,আশরাফ খান এখনও দাঁড়িয়ে আছেন গাড়ির বাহিরে,আঁখি এবার ছোটে গেল বাবার কাছে,বর্তমানে তার ভিতর দ্বিধা দন্দ্ব কাজ করল না আর,বাবাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা মাথায় চাপল।বাবার হাত পা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে অস্থির হয়ে বলল।
বাবা তুমি ঠিক আছো তো?

তিনটে বছর পর আজ মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনে প্রাণটা জুরিয়ে গেল আশরাফ খানের,তবুও দম্যের কাছে হার মেনে গেলেন উনি,মুখ ফিরিয়ে বললেন।
আমাদের ব্যাক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই ডা.আঁখি,আপনি তা ভালো জানেন,আশা করি আমাদের সম্পর্ক শুধু প্রফেশনালই থাকবে।

বাবার মুখে এমন পর করা কথা মেনে নিতে পারল না আঁখি। ঠোঁট চেঁপে কান্না দমানোর চেষ্টা করল,চোখ তার জ্বলে টইটম্বুর হলো, যা লক্ষ্য করলেন আশরাফ খান,গম্ভীর হয়ে বললেন।
কান্না দূর্বলদের প্রতিক,তাছাড়া আপনি ভালো ফাইটার,ওয়েল ডান,কিপ ইট আপ।

বাবার মুখে নিজের জন্য প্রসংশা বাক্য আঁখির জীবনের সব বিষাদ যেন মুছে দিল নিমিষেই। যে বাবা কখনও আঁখির প্রশংসা করেন নি উক্ত বিষয়ে,যতই দক্ষতা দেখাত সে তার বাবাকে তার বাবা সন্তুষ্ট হতেন না,বলতেন এর থেকেও ভালো করা যায়,যাতে অনেক সময় মন খারাপ হতো আঁখির,আজ অবশেষে তার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটেছে ভেবেই চোখে জমে থাকা বিষাদময় জল সুখের আশ্রুরূপে ঝরে গেল।আশরাফ খান এবার আদৃতের উদ্দেশ্যে বললেন।

″আদৃত আমি পুলিশকে ফোন করে দিয়েছি উনারা আসছেন ততসময় আমাদের এদের দেখে রাখতে হবে।″
″এদের জন্য আমরা আছি স্যার,আপনি চলে যান,রাত অনেক ঘনিয়েছে।″
″তুমি তো সাথে গাড়িও আনো নি,পুলিশ এসে যাক আমরা নাহয় একসাথেই যাব।″
″তার আর কোনো প্রয়োজন হবে না স্যার।আমি বাড়ি থেকে গাড়ি আনিয়ে নিব,নয়ত আঁখি তো আছেই।″

আদৃতের কথায় অনেকটা ভ্রু উঁচিয়ে তাকাল আঁখি আদৃতের দিকে কিন্তু বেশি সময় না তাকিয়ে থেকে আঁখি বলল।
″তার প্রয়োজন হবে না ডা.আদৃত,আমি একাই এদের দেখে রাখব আপনি চলে যান।″
আঁখির বাবা চাইলেন না মেয়েকে এভাবে নির্জন একটা জায়গায় একা রেখে চলে যেতে কিছু বা*জে লোকের সাথে,তাই আবার বললেন।

″না আমি ঠিক আছি এখানে,একসাথে যাব ডা.আদৃত।″
″স্যার আপনি চলে যান,আমরা দেখে নিব ব্যাপারটা।″
হ্যাঁ বাবা,দুঃখীত স্যার আপনি চলে যান,আমি না হয় উনাকে ড্রপ করে দিব।

আঁখি আদৃতের সাথে বর্তমানে সায় মেলানোর কোনো ধান্দায় ছিল না,কিন্তু এতো রাতে এমন জায়গায় বাবার প্রাণেরও অনিশ্চয়তা মেয়ে চায় নি,তাই আমতা করে কথাগুলো বলে গেল।
না যেতে চাওলেও আঁখি আর আদৃতের জোরাজুরিতে পরে গেলেন আশরাফ খান, মেয়ের সামনে তাকে নিয়ে উনার মনের দূর্বলতা ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে যেতে মন মানিয়ে নিলেন।আদৃতকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেলেন,যাবার আগে আড়চোখে নিজের সন্তানকে প্রাণভরে একনজর দেখে নিলেন।

আঁখি আদৃত তাকালো একে ওপরের দিকে,চোখে চোখ পরতেই দু’জনই অসস্তিতে পরে চোখ নামিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি।
ব্যাথার্ত হৃদয় নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল আদ্রিশ,আঁখিকে ছাড়লে নিঃস্ব হয়ে পরবে সে,কিন্তু তাকে নিজের করেও রাখবে কেমনে?

বাড়িতে প্রবেশ করতেই রিদিকা এগিয়ে এসে তার ব্যাগটা নিলো,তাকে কক্ষে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বসতে বলে নিজে তার খাবার আনতে ব্যস্ত হলো।
আদ্রিশ কক্ষে এসে ফ্রেস হয়ে নিল,বিছানায় বসতেই রিদিকা খাবার নিয়ে এল তার জন্য।
তার মুখে এক লোকমা ভাত মেখে তুলে দিতে গেলে আদ্রিশ জিজ্ঞেস করল।
″তুমি খেয়েছ রিদিকা?′
″হুম কবেই খেয়ে নিয়েছি,তুমি খেয়ে নাও।″

কথাটা শুনে আদ্রিশের মনে পরল আঁখির কথা।এমন অনেক রাতেই দেরি করে ঘরে ফিরত আদ্রিশ,তবে তা যতই রাত হোক না কেন আদ্রিশ ব্যতীত কখনও খাবার মুখে নিত না আঁখি,আদ্রিশের জন্যই অপেক্ষা করত,সে কি রাগ আর অভীমান করত মধ্যরাতে তার সাথে তার ফুলপরি দেরিতে ঘরে ফিরা নিয়ে,অতঃপর পাল্টা অভিমানে যখন আদ্রিশ না খেয়ে ঘুমোতে যেত তখন আদ্রিশকে টেনে তুলে মুখে জোর করে খাবার তুলে দিত,

আদ্রিশও তখন সব অভিমান ভুলে খেয়ে নিত আর নিজেও খাইয়ে দিত তার প্রিয়তমাকে।সে ক্ষণটা কি আদোও আর কখনও ফিরবে তার জীবনে?প্রশ্নটা ভয় ও দুরাশা উভয়ের জানান দিয়ে যাচ্ছে, যাতে রিদিকার হাতে খাওয়ার মনোভাবই ফুরিয়া যায় আদ্রিশের,

আঁখির জায়গায় আজ সে রিদিকাকে এভাবে মেনে নিতে পারছে না,কিন্তু কেনোই বা পারবে না!সে তো রিদিকাকেও ভালোবেসে পাশে রাখার চেষ্টা করেছে,আর রিদিকা তো তার পাশে আছেই,তবে কেনো ওকে আঁখির মতো মেনে নিতে পারবে না সে?অনেক চেষ্টা করেও রিদিকার হাতে আর খেতে পারল না আদ্রিশ,তাই এবার বলল।
খাব না রিদিকা,খাবারটা রেখে তুমি চলে যাও,আমার যখন ইচ্ছে হবে খেয়ে নিব।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ১২

অনেকেই প্রশ্ন করেছেন প্রমত্ত অঙ্গনা মানে কি।প্রমত্ত মানে পা*গ*ল বা উন্মাদ,অঙ্গনা মানে নারী,সহজ ভাষায় প্রমত্ত অঙ্গনা মানে পা*গ*ল নারী,বা সাইকো গার্ল/লেডি। আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ১৪