প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ২৮

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ২৮
আরোহী নুর

আঁখির মন বড্ড খারাপ আজ,চাইলেও রিংকির রাতে বলা কথাগুলো ভুলতে পারছে না সে,এমনিতে কারো বলা কোনো কথা কখনও মনে নিয়ে বসে থাকে না,হাসিখুশি থাকাই আঁখির স্বভাব,কিন্তু আজ যেন চাইলেও খুশি থাকতে পারছে না,মন টা কেমন জানি ভার হয়ে আছে,কি করবে আঁখি ডিভোর্সিদের হয়ত সবাই এমন নিচু চোখেই দেখে,মন ভালো করার জন্য ইশিকার সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়েটাকে কোলে নিয়ে নিজের রুমে এসে খেলা করছিল আঁখি,এমনিতে বাচ্চাদের সে খুব পছন্দ করে,ঠিক তখন কক্ষে নক করল আদৃত।

″আসতে পারি?″
″হুম আসুন ডা.সাহেব।″
″কি করছ?″
″এইত নিশিকে নিয়ে খেলা করছি।″
″শুধু খেলা করবেই?হাসপাতালও তো যেতে হবে আর তার আগে নাস্তা করতে হবে,চলো।″
″আপনার জ্বর নেমেছে?″

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

″হ্যাঁ,একদম সুস্থ আমি বর্তমানে, আজকে হাসপাতালও যাব।চলো নাস্তা করবে।″
″না আমি নাস্তা করব না,খিদে নেই।″
″নেই বললে চলে?চলো চুপচাপ। ″
″খাবো না ডা.আদৃত, প্লিজ আপনি গিয়ে খেয়ে নিন।″
″তুমি না খেলে আমিও খাচ্ছি না।″
″এ কেমন জেদ?″
″তেমন জেদ যেমন তুমি করছ।″

″আপনি একটু বেশি করছেন।″
″তুমি কোথায় কম করছ?″
″কথায় কথায় ঝগড়া না বাঁধালে হয় না আপনার?″
″ঝগরাটের সাথে ঝগড়া করব না তো কি করব?″
″কি আমি ঝগড়াটে?″
″আমি তো সেটা বলি নি,তবে তুমি মেনে নিলে আমার কি করার আছে?″
″আপনি কি মনে করেন আপনি আমায় কথায় ফাঁসাতে পেরো যাবেন?″
″চেষ্টা তো করতেই পারি।″
তখনই নিশি কেঁদে উঠল চিৎকার করে।

″দেখলেন তো আপনার বাজে ফাজলামো নিশিরও পছন্দ হয় নি,দিলেন তো কাঁদিয়ে বাচ্চাটাকে।না না কাঁদে না ময়না।″
″ও কাঁদছে কারণ ওর তোমার কথা পছন্দ হয় নি।″
″আপনার মতো পঁচা নিরামিষ কথা বলি না আমি।″
″হয়েছে তোরা থাম এবার,এতো বড় হয়েও দু’জন বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করা বাদ দিলি না।আঁখি চল আদৃতকে নিয়ে নাস্তা করবি নিশিকে আমার কাছে দে।″

″না মামুনি খিদে নেই।″
″আবার কথাটা বললে নাস্তার জায়গায় থাপ্পড় খাইয়ে তোর পেট ভরাব।″
″তুমি আমায় এমনটা বলতে পারলে মামুনি?″
আহ্লাদী করে ঠোঁট উল্টে বলল আঁখি।
″যাবি এবার খেতে না দিব সত্যি একটা কানের নিচে বসিয়ে।″
″দিয়ে দাও মা,তাও যদি একটু বুজদার হয়।″
″হুহ,কি এসেছেন আমার বোজদার সাহেব।″

আঁখি আদৃতকে ভেংচি কেটে চলে গেল পাশ কাটিয়ে, আদৃতও মুচকি হেসে তার পিছু গেল,শায়েলা মির্জা দু’জনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললেন।
আল্লাহ আমাকে তৌফিক দাও যাতে এ দু’জনকে আমি এক পবিত্র বন্ধনে বেঁধে দিতে সক্ষম হই।যে বন্ধন থাকবে জীবনভর,কখনও ছিঁড়ে যাবে না,দু’জন একে ওপরে খুঁজে পাবে নিজেদের প্রকৃত সুখ।রহম করুন রাব্বুল আল-আমিন।
আজ হঠাৎ করেই লক্ষ্য করল রিদিকা তার গায়ের চামড়া খসখসে হয়ে যাচ্ছে, একটা টান টান ভাব সারা শরীর জোরে,মনের ভয় আরও প্রখড় হলো তার।হঠাৎ হাতে অল্প ব্যথা অনুভব করলে হাতে সুচের ছিদ্র লক্ষ্য করল সে।হতবাক হলো মুহুর্তেই।

″আমি তো কোনো ইনজেকশন দেই নি তবে হাতে সুচের দাঁগ এলো কোথা থেকে!তাছাড়া ব্যথাও আছে,এদিকে চামড়াও কেমন খসখসে হয়ে আছে।না দেরি করলে হবে না দেখছি,আজ একবার সময় করে ডাক্তারে যেতে হবে,এভাবে বসে থাকলে তো আর হয় না।তবে ব্যপারটা আদ্রিশকে জানানো উচিৎ হবে না।″

আদ্রিশের কিছুই ভালো লাগছে না,জীবনটা কেমন বিষাদময় হয়ে গেছে,মন শুধু আঁখিকেই খোঁজে বেড়াচ্ছে,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছিল তখন রিদিকা এসে তাকে বোতাম লাগাতে সাহায্য করতে শুরু করলে তাতে বাঁধা দিলো আদ্রিশ।রিদিকার প্রতি কোনো টানই যেন বর্তমানে অনুভব করছে না আর সে।

″কি হয়েছে আদ্রিশ?″
″কিছু না ভালো লাগছে না কিছু।আমি চলি।″
″কখন ফিরবে?″
″আজ কখন আসব জানি না,আসতে দেরি হবে।″
″দিনে ফিরবে না তো?″
″না,কেন?″
″না এমনিই।″

আমতা করে জবাব দিলো রিদিকা।আদ্রিশ আর সে নিয়ে এতো মাথা না ঘামিয়ে বরং চলে গেল।
″মামুনি আমি হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যাব।″
″কি বললি তুই?আবার বল তো?″
″না মানে একদিন তো থেকেছি।″
″তো কোন বড় তী*র মে*রে*ছি*স?এখানে তুই মাস দেড় এক থেকে যাবি,তার মধ্য দিয়ে তোকে পার্মানেন্ট করে রাখার ব্যবস্থা করে নিব আমি।″

শেষের কথা মিনমিনিয়ে বললেন শায়েলা মির্জা।
″কি বললে মামুনি?″
″না বললাম যে তুই এখন যাবি না।″
″কিন্তু মাস দেড় এক তো বেশি হয়ে যায়।″
″তো কি হলো?বুঝেছি আমি তো তোর নিজের মা না তাই এমন করছিস, নিজের মা হলে তো এমন কখনও করতি না″
″তুমি কিন্তু আমায় ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করছ মামুনি।″

″হ্যাঁ,আমার অনুভূতি তো নাটক মনে হবে তোর কাছে,যা চলে যা আমার আর কাউকে প্রয়োজন নেই।″
″কি বলছেন মামুনি এসব?আচ্ছা ঠিক আছে দেড় দুই মাস না থাকলেও কিছুদিন থেকে যাব,এবার খুশি?″
″এই তো আমার লক্ষি মেয়ে।″

অনেক সন্ধানের পর জিসান পেল আমিরুল এর ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর খোঁজ,আমিরুলকে প্রায় সময়ই তার সাথে দেখা যেত অনেকের মুখ থেকে খবরটা জানতে পারল জিসান,এবার বের করল তার বাড়ির ঠিকানা,কিন্তু তার বাড়িতে গিয়ে যা শুনল তা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে।লোকটির নাম মিশু,ঘরে তার স্ত্রী আর দু’টা সন্তান আছে,মিশু আর আমিরুল সম্পর্কে মিশুর স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে মহিলাটি জানাল।

″স্যার,আমার স্বামী মিশু হাসান একটা ছোটো কোম্পানিতে কাজ করতেন,উনার সাথে কাজ করত আমিরুলও,ওখান থেকেই দু’জনের পরিচয়,কম দিনেই দু’জনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে পরিণত হয়,আমিরুল প্রায়ই আমাদের বাড়িতে আসত,তবে তার স্ত্রী তাহমিনাকে কখনও আনা হয় নি,দাওয়াত দিলেও সে আসতে চায় নি কখনও,উল্টো আমিরুল বলত তাহমিনার না কি আমিরুল এর অন্যদের সাথে মেলামেশা তেমন পছন্দ ছিল না,আর আমিরুল তাকে খুব ভালোবাসে,

তাকে হারাতে চায় না,আমিরুলের আগের স্ত্রী ছিল,ঢাকাতে নিজস্ব বাড়ি আছে আমিরুল এর,নিলিমার দূর সম্পর্কের বোন ছিল না কি তাহমিনা,আমিরুল এর তাহমিনাকে হঠাৎ ভালো লেগে যায় কিন্তু সে চাইলেও নিলিমাকে ছাড়তে পারত না,কারণ আমিরুল এর মা বাবা নিলিমাকে খুব ভালোবাসতেন,ওকে ছাড়তে গেলে হয়ত ঘর সম্পত্তি সবকিছু ছাড়তে হতো তাকে,তাই আমিরুল কাজের কথা বলে তাহমিনাকে বিয়ে করে এসে যশোরে থাকত।

এতটুকুই জানতাম আমরা তার বিষয়ে।হঠাৎ একদিন আমার স্বামী কারো হাতে খুন হন,তার লাশের পাশে প্রমত্ত অঙ্গনা নামটা পাওয়া যায়।স্থানীয় পুলিশ এ নিয়ে খোঁজ করলেও আজ অব্দি কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি।তার কিছুদিন পরে আমিরুল এর ও একইভাবে মৃত্যু ঘটে প্রমত্ত অঙ্গনা দ্বারা।

কথাগুলো শুনে জিসান জায়গায় স্থির হয়ে যেন থাকতে পারছে না,রহস্য খুলতে এসে রহস্যের মারপ্যাঁচে তলিয়ে যাচ্ছে জিসান,খু*নির সন্ধান করতে গিয়ে খুনের সংখ্যা অজস্র বেড়িয়ে আসবে আগে তো এমন ভাবনা ভাবার কথাই ছিল না।এবার আবার জিজ্ঞেস করল জিসান তাকে।

″আচ্ছ আমিরুল ঢাকায় কোথায় থাকত সেটা কি আপনি জানেন?″
″না স্যার,আমিরুল তার আর তাহমিনার ব্যপারে তেমন কিছু বলতে চাইত না,কেমন জানি রহস্যের নিচে চাঁপা রাখত সব,মিশু বলতেন আমিরুল তার ব্যপারে কিছুই বলে না,যা সব জেনেছিলেন তা না কি আমিরুল কখনও কখনও মুখ ফসকে বলে ফেলত উনাকে।″

″তাহমিনার কোনো ছবি হবে?বা তাকে কখনও দেখেছ?″
″না স্যার।″
″হুম, আসি তাহলে।″
জিসান আবার নিরাশ হয়ে ফিরে এলো,তাকে এবার আমিরুল এর আসল বাড়ির ঠিকানা পেতে হবে,ওখানে গেলে হয়ত কোনো সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।

রিদিকা বসে আছে ডাক্তারের চেম্বারে,আদ্রিশ বেড়িয়ে যেতেই রিদিকা বেড়িয়ে এসেছিল।ডাক্তার আবারও তাকে চেক আপ করলেন,সে তার হাতের ব্যপারে বলল উনাকে,এবার ডাক্তার বললেন।

″মিসেস রিদিকা রাহমান আপনার শরীরে যে ভাইরাসটা পাওয়া গেছে তা নিয়ে আমি অনেক রিসার্চ করেছি,অতঃপর এ বিষয়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম আমি।ভাইরাসটা মানুষের শরীরে বা অন্য কোথাও কখনও নিজে থেকে জন্ম নেওয়ার কোনো যোগ্যতা রাখে না,এটা সম্পূর্ণ মনুষ্য সৃষ্টি,এটা কোনো মাধ্যম খোঁজে কারো শরীরে পৌঁছানোর জন্য,আর শরীরে ঢুকে শরীরের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে দেয়,যাতে অল্প বসয়ে বার্ধক্যের ভাব চলে আসবে,ধীরে ধীরে শরীর অচল হয়ে পরবে।এটার অংশ অনুযায়ী,এর মোট তিন অংশ,পূর্ণাঙ্গ কাজের জন্য এর প্রথম অংশ অল্প আকারে দিতে হবে আর পরের অংশ এর থেকে বেশি আকারে,আর তার পরের অংশ এর থেকে বেশি,এই তিন ডোজই একজনকে জীবন্ত লা*শে পরিণত করতে সক্ষম।″

″এ কি বলছেন ডাক্তার!তারমানে কি আমার শরীরে দুই ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে!″
″আপনার কথামতো আপনার শরীরে ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে আপনি তা বুঝতেই পারেন নি এর মানে তো এটাই মনে হয় আপনার শরীরে দুই ডোজ দেওয়া শেষ,তাও টেস্ট করে দেখতে হবে আবার।″

″এর থেকে বাঁচার কি কোনো রাস্তা নেই ডাক্তার?″
″দেখুন আমি ওষুধ লিখে দিতে পারব,কিন্তু কাজ করার কোনো নিশ্চয়তা নেই,যেহেতু ভাইরাস নতুন তাই এতো তাড়াতাড়ি তার পথ্য দেওয়ার সামর্থ্য বর্তমানে কোনো ডাক্তারের থাকবে না,তবে হ্যাঁ যে এটা বানিয়েছে তার কাছে এর প্রতিষেধক নিশ্চয়ই থাকবে।ভাইরাসটা যেই বানিয়েছে সে নির্ঘাত কোনো বিজ্ঞ ও দক্ষ একজন যে বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান রাখে।যেহেতু আপনার সাথে সে এমন করছে তবে তো নিশ্চিত তার আপনার সাথে ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা,আপনি তাকে সনাক্ত করুন, তারপর তার সাথে সবকিছু মিটিয়ে নিন এতেই প্রাণরক্ষা পাবেন আপনি।″

আঁখি আজ আদৃতের গাড়িতে হাসপাতাল যাচ্ছে, আদৃত আঁখির ড্রাইবারকে আঁখির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে আর বায়না ধরেছে আঁখি তাদের বাড়িতে যতদিন থাকবে আদৃতের গাড়িতেই যেখানে যাওয়ার যাবে,আজকে ড্রাইবার আনে নি আদৃত,অনেক দিন পর আঁখির সাথে একা সময় পার করার সুযোগ কি সে এমনি যেতে দিবে!বর্তমানে ড্রাইব করছে আদৃত,আঁখি চুপচাপ গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।আদৃত মনে মনে বলে চলেছে।

″আফসোস হয় আঁখি,একদিন যে আঁখি সারাদিন কথা বলে আমাকে বিরক্ত করত,গাড়িতে আমার সাথে একা ভ্রমণ করার জন্য না জানি কি কি করত,একবার আমাকে একা পেলে জীবনের সব গল্প অল্প মুহুর্তে বলে দেওয়ার প্রচেষ্ঠায় থাকত সেই আঁখি আজ এতো চুপচাপ, সবকিছুই ওই ফালতু আদ্রিশের জন্য হয়েছে,আমি কথা দিলাম আঁখি ছাড়ব না ওই আদ্রিশকে,তোমার সুখ কেঁড়ে নেয় এমন সব লোককেই আমি দূর করে রাখব তোমার থেকে।″
হঠাৎ আঁখি বলে উঠল।

″গাড়ি থামান ডা.আদৃত।″
আঁখির কথায় জায়গা দেখে গাড়ি দাঁড় করাল আদৃত।
″কি হয়েছে আঁখি?″
″শুভ্রতা আপু,বাড়ির বাজার করছে দেখি।উনি তো কখনও বাজার করতে আসে না,বাড়ির কর্মচারী গুলো বাজার করে।দাঁড়ান আমি কথা বলে আসি।″
আঁখি নেমে গেলে আদৃতও তার পিছন নেমে যায়,আঁখি গিয়েই শুভ্রতার হাত পাকড়াও করে,হঠাৎ আঁখিকে এভাবে দেখে হকচকিয়ে উঠে শুভ্রতা।

″আপু তুমি এখানে কি করছ?তুমি সবজি কিনতে এলে কেন?ঘরের কর্মচারী গুলো কই?″
″ওই আসলে আঁখি দু’জনই কাজ ছেড়ে দিয়েছে,নতুন কাজের লোক তো আর তাড়াতাড়ি করে পাওয়া যায় না,আর আদিল একটা কাজে গেছে ওই যে ব্যবসা খুলছে তোমার কথায় ওটারই কাজ,তাই আমি চলে আসলাম।″
″হুম,আমি নতুন কাজের লোকের ব্যবস্থা করে দিব,ভাইয়াকে বলো ব্যপারটা আদ্রিশকে না জানাতে।″

″না তোমাকে কষ্ট করতে হবে না আঁখি,কাজের লোক আর লাগবে না,লাগলে আদ্রিশ দেখবে,আমি বরং আসি কাজ আছে।″
শুভ্রতা চলে যেতে নিলে তার হাতে বেশ গাঢ় হয়ে ফুলে ওঠা খামচির দাঁগ দেখতে পেল।
″এ কি হয়েছে তোমার হাতে আপু?কে করল এসব?″
″আরে কিছু না,রিহান দুষ্টুমি করে করেছে এসব,চলি এবার।″

অতঃপর চুরের মতো পালিয়ে গেল শুভ্রতা,আঁখি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সেখানে,আঁচড়টা রিহানের দেওয়া বলে মোটেও মনে হলো না আঁখির,বরং মনে সৃষ্টি হলো অন্য এক সন্দেহের।
আঁখি আবারও চুপচাপ গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দেখছে আর আদৃত ড্রাইব করছে,এবার নিরবতা ভেঙে বলল আদৃত।
″আঁখি,আমি জানি তুমি রিংকির ব্যপার নিয়ে আপসেট,আসলে ও সহ্যের বাহিরের একটা ব্যক্তিত্ব,ওর কথা আমি কখনও কানে নেই না,কিন্তু ও তোমাকে এভাবে কথা বলবে বলে ভাবি নি,তুমি মন খারাপ করো না,ওকে আমেরিকা পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি আমি।″

″আমেরিকা কেন পাঠাবেন?বিয়ে করে নিন ওকে,দেখতে তো সুন্দরী, তাছাড়াও এডাল্ট,আপনাকে পছন্দও করে তবে ক্ষতি কিসে?আর কতকাল একা থাকবেন?কারো জন্য তো জীবন আটঁকে থাকে না,ডা.সানিয়ার সাথে কি হয়েছিল আপনার তা আমি জানি না তবে আপনার জীবনকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া উচিৎ বলে আমার মনে হয়।

আদৃতকে জীবনে অন্য কারো সাথে এগিয়ে যেতে বলতে বুকে বড্ড পীড়া অনুভব করছিল আঁখি তবুও তাতে মন দিলো না,নতুন কোনো মনের অনুভুতির ডাকে সারা দিতে চায় না সে,একদিন যে আদৃতকে খুব করে চেয়েছিল তাই হয়ত আজও তাকে অন্য কারো সাথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলতে খারাপ লাগছে।

এদিকে বাকরুদ্ধ হলো আদৃত, প্রথমত বুক ফেঁটে যাচ্ছে এটা ভেবে যে আঁখি কখনও তার মুখে কোনো মেয়ের নাম শুনতে রাজি ছিল না সেই আঁখি আজকে তাকে অন্যের সাথে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলছে আর দ্বিতীয়ত আঁখির ডা.সানিয়াকে নিয়ে বলা কথাটা পেরেশান করে তুলল তাকে।আঁখির এমন কথার মানে বুঝে উঠতে না পেরে এবার প্রশ্ন করে বসল সে।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ২৭

″ডা.সানিয়ার সাথে আবার কি হবে আমার?ওর সাথে কিছু থাকলে তো কিছু হবে।আমি তোমার কথার মানে বুঝতে পারছি না আঁখি,পরিষ্কার করে বলো।″

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ২৯