প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ২৯

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ২৯
আরোহী নুর

″কেন ডা.সানিয়ার সাথে আপনার সম্পর্ক ছিল না?ওকে তো আপনি ভালোবাসতেন?″
″কি বলছ আঁখি!মাথা ঠিক আছে তোমার!সানিয়াকে আমি ভালোবাসতে যাব কেন?এটা ঠিক ও আমায় পছন্দ করত কিন্তু আমি ওকে কখনও পাত্তা দেই নি।″

″তবে সেদিন আপনাদের ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ সংবর্ধনায় আয়োজিত অনুষ্ঠান এর দিন যখন ডা.সানিয়া আপনাকে আর আমাকে একসাথে সহ্য করতে না পেরে কাঁদছিল তখন তার কান্না কেন সহ্য হয় নি আপনার?মানা করতে পারবেন সেদিন আপনি তার কান্না থামাতে ব্যর্থ হয়ে তার প্রতি দূর্বল হয়ে পরেন নি?তাকে কোলে করে নিয়ে একটা বন্ধ কেবিনে ঢুকে যান নি,তার ঘন্টাখানিক ওই বন্ধ রুমেই ছিলেন কথাটা অস্বীকার করতে পারবেন আপনি?এসবের মানে কি হয় ডা.আদৃত বলতে পারবেন?″

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাগুলো শুনে অবাকত্ব নিয়ে আদৃত সজোরে ব্রেক কষল গাড়ির।
″কি বলছ আঁখি এসব?এসব ভুলভাল তোমাকে কে বলেছে?″
″ভুলভাল,নিজের চোখে দেখেছি আমি।″

হ্যাঁ সেদিন সানিয়া কাঁদছিল,কারণ হঠাৎ তার পায়ে মোচড় খেয়ে গিয়েছিল,অতিরিক্ত ব্যথায় হাঁটতে পারছিল না,তাই না চাইতেও ওকে আমায় কোলে নিতে হয়েছিল, সেখানে অনুষ্ঠান থাকায় অনেক লোক ছিলেন শোরগোলে ও বসতে চাইছিল না,তাই একটা কেবিন খালি পেলে ওকে নিয়ে সেখানে ঢুকি আমি,পায়ে বড় কোনো সমস্যা হয় নি তার তখন,কোথায় ব্যথা করছিল ঠিকভাবে বলতেও পারছিল না,

তাছাড়াও ওর পারিবারিক কিছু সমস্যা ছিল যার কারণে মানসিকভাবেও অনেক ভেঙে পরেছিল তাই আমি ওকে রেস্ট করার কথা বলে বেড়িয়ে আসতে চাইলেও ও আসতে দিচ্ছিল না,অনেক রিকুয়েষ্ট করছিল ওকে একা ছেড়ে না যেতে,কিছুক্ষণ ওর পাশে বসতে,ও আমার ভালো বন্ধু ছিল তাই সেদিন ওর পাশে কিছুক্ষণ বসে যাওয়া আমি ভুল মনে করি নি,ও তো বেশি কিছু চাইছিল না আমার কাছ থেকে।″

″আপনার আর ডা.সানিয়ার মধ্যে কোনো কিছুই ছিল না?″
″নো আঁখি।″
সেদিন আদ্রিশের দেখানো ভিডিও দেখে কি আমি ডা.আদৃতকে ভুল বোঝলাম!কিন্তু ডা.সানিয়া সেদিন কেন বলল ডা.আদৃতের সাথে তার সম্পর্ক। তারমানে কি ডা.আদৃত আর আমাকে ইচ্ছে করেই আলাদা করা হয়েছিল?

″কি হয়েছে আঁখি কি ভাবছ?কি হয়েছে ব্যাপারটা আমায় খুলে বলো, প্লিজ।″
″আপনি হাসপাতালে যান আমার অন্য কাজ আছে।″
কথাটা বলেই আঁখি গাড়ি থেকে নেমে ছোটতে শুরু করল,আদৃতও কিছু না বোঝেই তার পিছন ছোটে গেল।তার নাম ধরে ডাকছে।

″আঁখি কোথায় যাচ্ছো?আঁখি?দাঁড়াও।″
আঁখি আদৃতের কোনো পিছু ডাকে কান না দিয়েই একটা সিএনজি আটকিয়ে চলে গেল কোথাও,আদৃত এবার ছোটে তার গাড়ির কাছে এসে সিএনজি টার পিছু নিল।
কিন্তু অর্ধেক রাস্তা গিয়ে গাড়িটা হারিয়ে ফেলল আদৃত,এদিকে বার বার আঁখিকে কল করলেও ধরছে না সে।আঁখিকে নিয়ে আদৃত পেরেশানিতে পরে গেল।

আঁখি সোজা গেল সানিয়ার বাড়িতে,কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারল সানিয়ার বিয়ে গত পাঁচ বছর আগেই হয়ে গেছে,আঁখি দেরি না করে তার শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা নিল তার পরিবারের কাছ থেকে,এদিকে আদৃত তাকে কলের উপর কল দিয়ে যাচ্ছে, এবার ফোন উঠাল আঁখি।

″কোথায় আছো আঁখি তুমি?আমি পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছি তোমায় সে কবে থেকেই।″
″আপনি আমাকে খোঁজবেন না,আমি ঠিক আছি,জরুরি কাজে এসেছি,পরে দেখা করছি আপনার সাথে।″
″কি হয়েছে তা সোজাসুজি বলতেই তো পারো।″
″বললাম তো এসে বলছি,আপনি হাসপাতাল যান।″

″হুট করে কি এমন কাজে চলে গেলে যে আমাকে সাথে নেওয়া যেত না,এড্রেস বলো আমি আসছি।″
″না এ দিকটা আমি একাই সামলাব।″
আঁখি কল কেটে দিলো কথাগুলো বলে,আদৃত ভাবলেশহীন হয়ে রইল।

আঁখি পৌঁছাল সানিয়ার শ্বশুর বাড়ি,কিন্তু সানিয়াকে সেখানেও পেল না,সানিয়া হাসপাতালে গেছে ,আঁখি জানতে পারল সানিয়ার স্বামীও একজন ডাক্তার,আর তাদের একটা মেয়ে সন্তানও আছে,আঁখি সানিয়ার শ্বশুর শ্বাশুড়ির কাছ থেকে তার হাসপাতালের এড্রেস নিয়ে এবার বেড়িয়ে গেল সে উদ্দেশ্যে।
রোগী দেখে লাঞ্চ টাইমে একটু রিলাক্স করছিল সানিয়া তখনই তার কেবিনে প্রবেশ করল আঁখি,আঁখিকে হঠাৎ এভাবে দেখে বেশ ঘাবড়ে গেল সানিয়া।অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করল।

″আঁখি তুমি এখানে?″
″হ্যাঁ আমি,সত্য জানতে এসেছি।″
″কিসের সত্য?″
আমতা করে বলল সানিয়া।কর্কশ স্বরে জবাব দিলো আঁখি।
″কিসের সত্য বুঝো না?ডা.আদৃত আর তোমার সত্য,ছয় বছর আগে যে ডং করে ডা.আদৃত আর আমায় দূর করেছিল সে সত্য।″

″আমি তোমায় আর আদৃতকে দূর করব কেন?আমি সেদিন কোনো ডং করি নি।″
″আসলে তাই!তবে ডা.আদৃতের প্রতি এতো ভালোবাসার দোহাই দিয়ে এখন ডা.আদৃতকেই ছেড়ে অন্যকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করছ কেমনে?″

″আদৃত আমাকে ধোঁকা দিয়েছে তাই আমি নিজের জীবনকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছি।″
কথাটা বলতেই সানিয়ার গাল বরাবর কষে একটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দেয় আঁখি,সাথে সাথে সানিয়ার ঠোঁটের একপাশ কেটে র*ক্ত বেড়িয়ে আসে, আঁখি এবার তার চুল মুঠো করে ধরে নিল,সানিয়া শত চেষ্টা করেও আঁখিকে না ছাড়াতে পারছে আর না তো তাকে জিম্মি করে উঠতে পারছে,চিৎকার করতে শুরু করেছে সানিয়া।

″কে আছো বাঁচাও?এই গু*ন্ডি মেয়েটা আমায় মে*রে ফেলছে।″
″সত্যটা বল নয়ত সত্যিই মে*রে ফেলব,তুই আমাকে বলবি ডা.আদৃতের মতো লোক তোকে ধোঁকা দিয়েছে আর আমি তা বিশ্বাস করব!বল সত্যটা শাঁ*ক*চু*ন্নি।″
ততক্ষণে হাসপাতালের বেশ লোক সেখানে প্রবেশ করে গেল,অনেকে আঁখিকে ছাড়াতে এগিয়ে এলেই পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে তার আগা ভেঙে সানিয়ার গলা বরাবর ধরে গর্জে বলল আঁখি।

″কেউ যদি এক পাও এগিয়েছ তবে এখানেই মুহুর্তে এর লাশ ফেলব আমি,বল সানিয়া চুপচাপ নইলে তুই আমায় ভালো করে জানিস এটা তোর গলা বরাবর ঢুকিয়ে দিতে দ্বিতীয় বার ভাবব না।″
আঁখির রাগ সম্পর্কে ভালো জানে সানিয়া,বর্তমানে আঁখির রক্তিম বর্ণ ধারণ করে থাকা চোখের দিকে তাকিয়ে আর সাহস জুটিয়ে উঠতে পারল না,প্রাণ বাঁচানোর চিন্তায় জিম্মি হলো আঁখির কাছে।।

″বলছি আঁখি, আমি সত্যটা বলছি আগে গ্লাসটা নামাও।″
″নামাব না,আগে বল।″
″আপনারা প্লিজ যান,ব্যপারটা আমি দেখছি।″
সানিয়া নিজের বদনাম না হওয়ার সুবিধায় সবাইকে বাইরে যেতে বললে সবাই কেবিনের বাইরে চলে গেল,এবার বলল সানিয়া।

″আসলে আঁখি আমি তখন আদৃতকে অনেক ভালোবাসতাম,সুদর্শন থাকা সত্ত্বেও চরিত্রবান ছিল আদৃত,শালীন মার্জিত তার ভাষা,গম্ভীর স্বভাব,অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় না দেওয়া, সত্যবাদী ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিল আদৃত, এমন ছেলের প্রেমে কোন মেয়েই না পরবে?আদৃত বলতেই তো ভালোবাসার আরেক নাম ছিল।

যাকে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবেসেছিলাম আমিও,কিন্তু বাকি সকল মেয়েদের মতো সে আমাকেও পাত্তা দিত না যেখানে ওর মনের অনেক বড় এক জায়গা জুরে বসবাস করে উঠতে সক্ষম হয়ে গিয়েছিলে তুমি,জা তুমি না জানলেও আমি ঠিকই জানতাম,আদৃতের প্রেম বিরহে কতো পোঁ*ড়ে*ছি তা শুধু আমি জানি,যখন আশাহত হয়ে নেতিয়ে পরেছিলাম তখন আশার আলো হয়ে আসলো আদ্রিশ,আদ্রিশ জানতে পেরে গিয়েছিল আমি আদৃতকে ভালোবাসি,

সেদিন আদ্রিশ আমাকে জানাল সে তোমাকে ভালোবাসে সেই প্রথম থেকেই,কিন্তু তুমি ভালোবাসো আদৃতকে,যেকোনো মূল্যেই আদ্রিশের তোমাকে চাই,এদিকে আমিও আদৃতকে খুব করে চাইছিলাম তখন।সে আমাকে আশ্বাস দিলো আমরা দু’জন মিলে যদি তোমাদের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টি করি তবে তোমরা আলাদা হয়ে যাবে আর আমরা দু’জন নিজেদের ভালোবাসার কাঙ্ক্ষিত জন পেয়ে যাব,প্রথমত আমি আদ্রিশের কথায় রাজি হই না কিন্তু আদ্রিশ আমাকে বোঝায় যে এ ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই।তাই আদ্রিশের সাথে মিলে আমরা দু’জন তোমাদের আলাদা করার প্লান করি।

সেদিন হাসপাতালের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পায়ে ব্যথা আর পারিবারিক সমস্যার নাটক করে আদৃতকে এক কক্ষে নিজের সাথে আঁটকে রাখি,আর তখন সবকিছু আড়াল থেকে ভিডিও করে আদ্রিশ।তারপর তোমাকে তা দেখায় তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী বলে নিজেকে দাবী করে।

তোমার মনে বিষ গুলে দিতে চায় আদৃতকে নিয়ে,কিন্তু তুমি তাতেও বিশ্বাস করছিলে না বরং আদৃতের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে সোজাসুজি কথা বলতে চাইছিলে কিন্তু আদ্রিশ তোমাকে ঠেকায় এই বলে যে আদৃত তোমার কথা ভেবে আমাকে ভালোবাসার কথাটা স্বীকার করবে না,কথাটায় তুমি আটকাও এই ভেবে যে এখানে আদৃত তোমার কথা ভেবে কেন নিজের ভালোবাসার সম্পর্ক মেনে নিবে না,তোমাকে কোনো মতেই বিশ্বাস করানো যাচ্ছিল না তাই তুমি আদৃতের সাথে দেখা করার আগেই আমি তোমার কাছে আসি।″

″তারমানে সেদিন যে তুমি বলেছিলে ডা.আদৃত তোমাকে ভালোবাসেন সেই কলেজ চলাকালীন সময় থেকেই তাই আমাকে পাত্তা দিতেন না উনি,কিন্তু আমাকে সত্যটা বলেন নি বাচ্চা ভেবে,আমার মন ভাঙবে যাতে পড়ালেখা নষ্ট হবে আমার তাছাড়া আমার বাবার সাথে উনার বাবার বন্ধুত্বের সম্পর্কও এতে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল যেহেতু আমি আমার বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে,

কিন্তু ডা.আদৃত তোমায় অনেক ভালোবাসেন,তোমাদের ব্যাপারে উনি এগুতে চান না শুধু আমার কথা ভেবে,উনি কখনও আমাকে মেনে নিবেন না আর আমার কারণে তোমাকেও কবু মেনে নিবেন তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না,এজন্য তুমি ভিক্ষা চাইতে এসেছিলে উনাকে আমার কাছে যাতে আমি নিজে থেকে তোমাদের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়াই,এর মানে এসব সকল কথাই বানোয়াট ছিল?তবে ওই রেকর্ডিং ওটা কি ছিল?

যেটাতে ডা.আদৃত তোমাকে বলছিলেন,আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি সানিয়া,তবে আঁখি বাচ্চা মেয়ে আমাকে অনেক ভালোবাসে,আমি চাই না ওর এ বয়সে মন ভাঙুক,ও উল্টা পাল্টা কিছু করে বসুক,তাই যতদিন আমি বিষয়টা ওকে বুঝিয়ে উঠতে না পারছি ততদিন আমাদের ব্যাপার আর এগুবে না।হুবহু উনার কন্ঠের রেকর্ডিং কোথা থেকে এনেছ বলো?

″আমি আর আদ্রিশ মিলে একজন ভয়েস আর্টিস্ট কে অনেক টাকা খাইয়ে আদৃতের কন্ঠস্বর শুনিয়ে এমনটা করে উঠতে পেরেছিলাম।সে লোকটা প্রায় লোকেরই আওয়াজ নকল করতে পারত।″
″শাঁ*ক*চু*ন্নি, ডা.আদৃতকে আমার বিরুদ্ধে কি বুঝিয়েছিস তোরা বল?″

″আদৃত তোমাকে এরিয়ে চলতে চলতে একসময় তোমাকে ভালোবেসে গিয়েছিল,সে তা দেরিতে হলেও বুঝতে সক্ষম হয় অবশেষে।সেদিন অনুষ্ঠান পরে তোমাকে প্রপোজ করবে ভেবেছিল,কথাটা আমি জানতাম আদৃত আমাকে আগেই বলেছিল।কিন্তু তার আগে আমি তাকে অভিনয় করে বন্ধ কক্ষে আটকে রেখেছিলাম নিজের সাথে আর ততক্ষণে তুমি ওকে ভুল ভেবে গিয়েছিলে,

সেদিন অনুষ্ঠানের পর সোজা বাড়ি চলে যায় আদৃত,হয়ত নিজে অনেক ক্লান্ত ছিল আর তুমিও ভুল বোঝা থেকে ওর সাথে আর সেদিন কথা বলো নি যাতে আমাদের জন্য ভালোই হয়েছিল,আমরা সেই অল্প সময়েই তোমার মনে ভুলের পাহাড় গড়ে তুলেছিলাম,তার পরদিন আদৃত তোমাকে এক জায়গায় ডাকায় তোমাকে প্রপোজ করবে বলে কিন্তু তোমাকে জানিয়েছিল শুধু দেখা করতে চায়।

ঠিক তখন আমিও ওকে তোমার আর আদ্রিশের একটা ভিডিও দেখাই,যেটাতে তুমি আদ্রিশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলে আদৃত আর আমার ব্যাপারে সবকিছু জানার পর কিন্তু ভিডিওটা আমি পিছন থেকে করেছিলাম বিদায় এমন মনে হয়েছে যে তুমি আদ্রিশকে সুখে আলিঙ্গন করছ,ভিডিওটা দেখে আদৃতের মাথায় মুহুর্তেই র*ক্ত চাপে,সেদিন যেমন তোমার অল্প হাত ধরে টান দেওয়া নিয়ে আদ্রিশের হাত ভাঙতে এসেছিল তেমনটাই ভিডিওটা দেখেও আদ্রিশকে মারতে চলে যাচ্ছিল আদৃত।

তখন আমার একটা কথায় ও থমকে দাঁড়িয়েছিল।
আঁখি তোমাকে ভালোবাসে না আদৃত,তুমি শুধু ওর মনের ভুল ছিলে বিষয়টা বুঝে যেতে ও অনেক দেরি করে ফেলেছে,ও আদ্রিশকে ভালোবাসে অবশেষে বুঝতে পেরে এখন তোমাকে নিয়ে অনুশোচনায় ভোগছে,কারণ এতদিন তোমার পিছন ঘুরঘুর করেছে তোমার চোখে না কি নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পেয়েছে কিন্তু সে এখন উপলব্ধি করতে পেরেছে সে তোমাকে ভালোবাসে না,কিন্তু তোমাকে অনেক সম্মান করে,তোমার মন ভাঙার শক্তি জুটিয়ে উঠতে পারছে না।

কথাগুলো শুনে ও একদমই বিশ্বাস করে নি বরং সেদিন আমি কোনো মেয়ে না হলে হয়ত প্রাণে মেরে ফেলত,তাই তাকে বিশ্বাস করানোর জন্য তোমাকে সেদিন তার সামনাসামনি আনাই,আর আমার কথামতো আমার হয়ে সেদিন তুমি তাকে বলেছ যে তুমি ওকে ভালোবাসো না ও শুধু তোমার মনের ভুল ছিল,তুমি আদ্রিশকে ভালোবাসো,

ও তারপরও বিশ্বাস করতে না চাইলে তুমি ওকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছ সেদিন।এটা ভেবে যে ও শুধু তোমার জন্য নিজের ভালোবাসার অসম্মান করছে।তবে এসব করে আদ্রিশ তোমাকে পেয়ে যেতে পারলেও আদৃতকে আমি নিজের করে পেতে পারি নি।ও কাউকে না জানিয়েই আমেরিকা চলে যায় হুট করে একদিন।তারপর আর যোগাযোগই রাখে নি।″
″শা*লি আজ তোকে আমি মে*রে*ই ফেলব,তোরা দুইটা মিলে আমাদের সাজানো সপ্নগুলো সব চুরমার করে দিলি,তোকে তো আমি মে*রে*ই ফেলব। ″

আঁখি এবার রেগে গিয়ে সানিয়াকে বেশ মারল ততক্ষণে সেখানে পুলিশ এসে গেল।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ আনিয়েছেন।
″ডা.আঁখি এভাবে যে কারো কেবিনে ডুকে আপনি তাকে মারধর করতে পারেন না,আপনাকে আমাদের গ্রেফতার করতে হবে।″
″যা এবার জেলের ভাত খা।″

″চুপচাপ পুলিশকে যেতে বল,এই দেখ ফোনে তোর সকল কথা রেকর্ড করেছি, বুঝতেই তো পারছিস মানুষকে ফ্রোড কেসে জেলে যাবি,আর আমার ক্ষমতা সম্পর্কেও ভালো জানিস,তোর লাইসেন্স কেন্সেল করিয়ে দিতেও সময় লাগবে না আমার।আমাকে খ্যাপাশ না,জানিসই তো আমি কি জিনিস?চলে যেতে বল পুলিশকে।″
আঁখি সানিয়ার পাশে ছিল তখন,তাকে দাঁত কটমট করে কথাগুলো বললে সানিয়া ভয় পেয়ে গেল।আঁখি যে নিজের আসল রূপে চলে এলে এক ধরনের সাইকোতে পরিণত হয় তা সে জানে,তাই আর সুযোগ না নিয়ে বিষয়টা রফাদফা করার চেষ্টা করে।

″ইন্সপেক্টর সাহেব আপনারা চলে যান,আমি আঁখির বিরুদ্ধে কোনো কে*স করছি না।″
″আপনি ভয় পেলে হবে না তো?আমরা আছি।″
″আরে আপনারা যান তো,আমার আপনাদের প্রয়োজন নেই এখন।″
অতঃপর পুলিশ চলে যায়।
″তোর টা না হয় পরে দেখব সানিয়া,আগে আদ্রিশের ভাগটা দিয়ে আসি।″

সানিয়াকে আরেকটা জোড়ালো থাপ্পড় মেরে ফ্লোরে ফেলে বেড়িয়ে আসে সেখান থেকে আঁখি,অতিরিক্ত রাগে তার হাত পা একরকম কাঁপছিল তখন,হাসপাতালের বাইরের একটা দোকান থেকে পানি কিনে খেয়ে নিলে রাগ দমনের সুবিধার্থে।অতঃপর আদ্রিশের উদ্দেশ্যে যেতে নিলে কল আসল আবার আদৃতের।

নাম্বারটা দেখতেই বুক মোঁচড় দিয়ে গেল।যার জন্য এতো কিছু করল তার জন্যই তো কিছু করা হয়ে উঠল না আঁখির,নিজের থেকে আদৃতকেই বেশি অসহায় মনে হচ্ছে তার।যে আজ অব্দি আঁখিরই পথ চেয়ে বসে আছে,লোক কাউকে কতটা ভালোবাসলে এমন কিছুও করে যেতে পারে,হয়ত সে ভালোবাসার পরিমাপ করে উঠার সামর্থ্য আঁখির নেই।বর্তমানে এসবের কিছুই আঁখি আদৃতকে জানাতে চায় না তাই নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করে ফোন ধরল।

″কি হয়েছে ডা.আদৃত?″
″কোথায় তুমি?আসছ না কেন এতো সময় ধরে?″
″আমি এখন আসব না,জরুরি কাজ আছে।″
″তোমাকে এখনই আসতে হবে আঁখি,আমাদের হাসপাতালের বেশ পাশে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে,অনেক এমারজেন্সি, এখানে ডাক্তারদের কমতি পরেছে তুমি জলদি আসো।″
″আচ্ছা ঠিক আছে আসছি।″

আঁখির কাছে তার অনুভুতির উপরে তার দায়িত্বের অবস্থান, তাই বর্তমানে হাসপাতালেই ছোটে গেল।
অনেক খোঁজাখোঁজির পর জিসান পেল আমিরুল এর ঢাকার বাড়ির ঠিকানা,আশার আলো খোঁজে পেল সে।আমিরুলের বাড়ি অব্দি পৌঁছালে নিশ্চয়ই তাহমিনা অব্দিও সহজেই পৌঁছা যেতে পারা যাবে।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ২৮

কালকে অল্প অংশ রহস্য উন্মোচন হবে।আজকে এর বেশি আর লিখতে পারলাম না,আর একটা কথা, অনেকেই বলছেন ভাইরাসের ব্যাপার একটা মুভির সাথে মিলে যাচ্ছে, তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই যে মুভিতে দেখালে যে সত্য অর্থে মানুষ ভাইরাস বানাতে পারবে না এমন তো নয়,আর বাংলাদেশে কেউ ভাইরাস বানাতে পারবে না এমনও তো কিছু নয়,মুভিতে হয়েছে বলে বাস্তবে হবেই না এটা কি জরুরি, বাস্তবে হয়ত এমন অনেক ভয়াবহ বিষয়ও আছে যা কখনও মুভিতেও দেখানো হয় না,আপনারা গল্পের প্রতিটা শব্দ নিয়ে যদি এখন যুক্তি দেখাতে আসেন বা সমালোচনা করতে লেগে যান তবে লেখক লেখিকারা লিখবে কোন মন মানসিকতা নিয়ে,আর রিদিকা আদ্রিশকে তুচ্ছ মৃত্যু দান করার থাকলে তো দ্বিতীয় পর্বেই হয়ত প্রমত্ত অঙ্গনা দিয়ে খুন করিয়ে দিতাম,ছাড় এ গল্পের কোনো নেগেটিভ চরিত্রই পাবে না,তাই ধৈর্য্য ধরুন আবারও বলছি,সবার মনের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে আমি গল্পের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারব না,দুঃখীত আমার কথা কারো খারাপ লেগে থাকলে।আসসালামু আলাইকুম সবাইকে।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৩০