প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪১

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪১
আরোহী নুর

পুরো ২ দিন চলে গেল,এই ২ দিন বাড়িতে আসে নি আদ্রিশ, আজ বাড়ি আসলো ডিভোর্স পেপার সহিত,এসেই রিদিকার সামনে ডিভোর্স পেপার রেখে বলল।
″আধ ঘন্টার মাথায় কাপড়–চোপড় প্যাক করে এটাতে সাইন করে চলে যেও,নয়ত ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে বাধ্য হবো।

কথাটা বলে আদ্রিশ কক্ষ ত্যাগ করে ছাঁদের দিকে চলে গেল।রিদিকা অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে এবার দাঁত কটমট করে বলল।
″দিলে নাতো ভালোবাসার মর্ম আদ্রিশ,এবার দেখে নিতে হবে তার পরিণাম তোমায়,সবার সামনে আমার চলে যাওয়া তোমার নাশ করার সর্বোত্তম পন্থা হবে আমার জন্য।″

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বেশ কিছুক্ষণ পর ছাঁদ থেকে নেমে আদ্রিশ দেখতে পেল রিদিকা ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছে,আশেপাশে কোথাও নেই সে,কর্মচারী মিরাকে জিজ্ঞেস করলে তার কাছ থেকে জানতে পারল রিদিকা চলে গেছে, কিন্তু সাথে করে কোনো কিছু নেয় নি,আদ্রিশ সস্তির নিশ্বাস ছাড়ল অবশেষে রিদিকাকে জীবন থেকে বের করতে পারল সে।
আঁখির ছবি বুকে নিয়ে কান্না করতে মত্ত হয়ে আছে আদ্রিশ।

″আমায় ক্ষমা করে দাও তুমি ফুলপরি,আমি এতটাই অধম হয়ে গেছিলাম যে সত্য জ্ঞান হারিয়ে ছিল আমার,ভুলে গেছিলাম আমার মনে তোমাকে নিয়ে ভালোবাসার সে পরিমাণ কতটুকু।আমি যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসি ফুলপরি,তোমাকে ছাড়া আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি,একবার ফিরে আসো কখনও তোমাকে আর কষ্ট দিব না,অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাব না কখনও কথা দিলাম।

আমি আসব আঁঁখি আবারও তোমাকে ফিরিয়ে নিতে,যতক্ষণ না ক্ষমা করছ, না ফিরে আসছ আমি তোমার পিছু ছাড়ব না।আগে তোমার রাগ ভাঙাব,অতঃপর পরিবারের সবার,এরপর সবাই মিলে আগের মতোই মিলেমিশে থাকব।″
আদ্রিশ এবার বেড়িয়ে আঁখির উদ্দেশ্য হাসপাতালে গেল,তখন একজন নার্স ওকে জানাল।
″ডা.আঁখি তো এখন এখানে নেই,লাঞ্চ টাইম শুরু হতেই ডা.আঁখি আর ডা.আদৃত কোথাও বেড়িয়ে গেলেন।আমি জানি না।

আদ্রিশ নিরাশ হয়ে বেড়িয়ে এলো সেখান থেকে,রাত থেকেই কিছু খায় নি,খিদেও লেগেছে বড্ড, তাই ভাবল হাসপাতালের পাশের কোনো রেস্টুরেন্টে কিছু খেয়ে নিক ততক্ষণে হয়ত আঁখি আদৃত চলে আসবে।অতঃপর সে বেড়িয়ে এলো।
হাসপাতালের বেশ পাশেই একটা রেস্টুরেন্ট,আদ্রিশ সেখানটায় গেল।
আঁখি আদৃত দু’জন একে ওপরের পাশাপাশি বসে আছে, দু’জন খাবার খাচ্ছে আর একে ওপরের সাথে কথা বলছে।
″আচ্ছা তুমি কি আমার উপর দয়া করে বিয়েতে রাজি হয়েছ?″

″তো আর কি?কি করব উদার মন,নয়ত আপনার মতো চোখা নাকওয়ালাকে বিয়ে করার মতো সিদ্ধান্ত নিতাম?″
″কে বলেছে তোমাকে বিয়ে করতে?″
″কি করতাম চোখা নাকওয়ালা যে পিছু পরত,তখন সম্মানটা আমার কোথায় রয়ে যেত?তাই সম্মানের ভয়েও বলতে পারেন সিদ্ধান্ত টা নেওয়া।″
আদৃত বেশ অভিমান করল আঁখির কথায়,খাবার রেখে একদিকে মুখ করে বসে থাকল।আঁখি মুচকি হাসল এতে।
″অভিমানটা মুহুর্তেই জমা হয় বুঝি নাকের ডগায়?″
″হুম হয়,তাতে তোমার কী?″
″তা সবার সাথে করেন এমন অভিমান?না আমি আলাদা?″
″জানিনা।″

″এতো অভিমান?কথা বলতেও মন চাইছে না বুঝি?এদিকে খাবার ঠান্ডা হচ্ছে, হাসপাতালও যেতে হবে খেয়াল আছে?″
″খাব না আমি,তুমি খেয়ে নাও তারপর চলব।″
″কথাটা বাকা মুখ করে না বলেও স্বাভাবিক ভাবে বলা যেত।অভিমানে মুখ বাঁকাও হয় জানতাম না।″
আদৃত কিছু বলল না জবাবে,একদিকে মুখ করে বসে আছে।আঁখি আবারও মুচকি হাসল অতঃপর আদৃতের প্লেট থেকে এক চামচ খাবার তুলে তার মুখের সামনে ধরল।″

″আমি খাওয়ালেও খাবেন না?″
″খাব,তবে চামচে না,চামচে খেলে সেই ফিল আসবে না,বাংলার বউয়েরা স্বামীকে হাতে খাওয়ায়।″ঝটফট মুখ ফিরিয়ে দুষ্টু হেসে এবার বলল আদৃত।
″প্রথমত আপনি আমার স্বামী এখনও হন নি আর দ্বিতীয়ত এটা আপনার বাড়ি না রেস্টুরেন্ট।″
″হুম হই নি স্বামী হয়ে তো যাব,মন থেকে তোমাকে বউ আমি কবেই মেনে নিয়েছি,আর যেখানে কথা হাতে খাওয়ার তবে বাঙালীদের হাতে খাওয়াটাই বেশি মানায়।″
আঁখি হাসল,আদৃত এক লোকমা খাবার নিজ হাতে আঁখির মুখে তুলে দিলে আঁখি খেয়ে নিল।
″এবার আমাকে খাওয়ায়।″

আঁখিও হাসিমুখে এক লোকমা খাবার আদৃতের মুখে তুলে দিল,দৃশ্যটা স্পষ্ট ধরা দিলো আদ্রিশের চোখে,চোখ মুহুর্তটা মেনে নিতে পারছে না,এখনই যেন ফসকে পরে যাবে।আদ্রিশ তেড়ে গেল দু’জনের কাছে,গিয়েই টেবিলে জোরালো থাবা দিয়ে দুই হাত রাখল।আদৃত আঁখি চমকে উঠল এতে বেশ।আশপাশের লোকগুলোও সেদিকটায় খেয়াল করতে শুরু করল।
″এটা কেমন আচরণ আদ্রিশ!তোমার কি কোনো কান্ড জ্ঞান নেই পাবলিক প্লেসে এমন সিন ক্রিয়েট করছ!″

″তোর সাহস হলো কি করে আদৃত আমার আঁখির সাথে এমন মুহূর্ত পার করার কল্পনাও করতে,আর আঁখি তুমি কি লাশ শরম সব ধুয়ে খেয়েছ!এটাই কি ছিল তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা?″
″ওটা ভালোবাসা না আমার জীবনের ভুল ছিল আদ্রিশ,ভুল শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করলাম মাত্র।আর যেখানে কথা লজ্জা শরমের নিজের হবু স্বামীকে নিয়ে সীমারেখায় থেকে একান্তে কিছু সময় পার করা শরমের কিছু হতে পারে না।″
″হবু স্বামী! ″

″হ্যাঁ আদ্রিশ,আমার আর আঁখির বিয়ের ডেট ফিক্স হয়ে গেছে,বিয়ের কার্ড এখনও রেডি হয় নি,হলে প্রথম কার্ডটা তুমিই পাবে।″
″চলো আঁখি এখানে আর থাকলে আমাদের উপর আবারও কারো নজর লেগে যাবে।″
আদৃত বিল টা দিয়ে আঁখির হাত ধরে আদ্রিশের দিকে তাচ্ছিল্য ভরা নয়নে তাকিয়ে হাঁটতে লাগল।আঁখি ফিরেও তাকালো না আর আদ্রিশের দিকে,আদ্রিশ অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকল তাদের পানে,বুকে অনুভব করল যেন তীর আঘাত,চোখ বেয়ে নামল জল।

আঁখি রিদিকার বিষয়ে সবকিছু বলল আদৃতকে।
″কি বলছ আঁখি!রিদিকা এসব করেছে,কিন্তু কেন!″
″এটাই তো জানার কথা,যা একমাত্র ওর পরিবারের কাছ থেকে জানা যাবে।″
″এখন কি তুমি ওর বাড়ি যাবে?″
″হুম,বাবার কাছ থেকে কালকের দিনের ছুটি নিয়েছে আজ সন্ধ্যায় বরিশালের ফ্লাইট ধরব।″
″আমিও যাব তোমার সাথে।″
″কিন্তু আপনি কেন?″

″আমি যাব এটাই ফাইনাল,তোমার জীবনসঙ্গী হতে চলেছি জীবনের প্রতিপদে সাথে থাকব।″
আঁখি না চাইলেও আদৃতের জেদের কাছে হার মানল।
রাতের ফ্লাইটে আঁখি আদৃত বরিশাল চলে আসলেও দু’জন একটা রিসোর্টে থেকে যায় আলাদা দুই কক্ষে,অতঃপর সকাল হতেই রওয়ানা হয় রিদিকাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে,সেখানে গেলে উনারা তাদের যথেষ্ট আদর আপ্যায়ন করেন,যেহেতু আঁখির বাড়িতে দীর্ঘবছর কাজ করেছেন মফিজ সাহেব,আঁখিও উনাকে যথেষ্ট সম্মান করে।
অনেকক্ষণ যাবত এটা ওটা কথা আলার পর আঁখি বলল।

″তা রিদিকার সাথে আপনি যোগাযোগ কেন করেন না মফিজ চাচা?ওকে যখনই আপনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম বলত আপনি না কি ওর সাথে সকল সম্পর্ক ভঙ্গ করে দিয়েছেন,ওকে সহ্যই করতে পারেন না,ওকে মাথার বোজা মনে করে আজিজের সাথে বিয়ে দিয়েছেন আজিজ বা*জে জেনেও।″
″এ কি বলছ আঁখি!আজিজের সাথেও ওর সম্পর্ক ছিল আমরা জানতাম না,আর ও আমার নামে এসব বলেছে,ও কোথায় আছে তাও তো আমি ২ বছর ধরে জানি না।″

″আজিজের সাথেও মানে?কি বলতে চাইছেন চাচা,পরিষ্কার করে বলুন।″
কথাটা শুনে মফিজ সাহেবের চেহারা কেমন চুপসে গেল।
″কি হলো চাচা চুপ করে আছেন কেন?বিষয়টা জানা আমার কাছে খুব জরুরি,রিদিকা অনেক কুকাজ করে বেড়াচ্ছে, ওকে আটকাতে হবে আমাদের। ″
″ওকে কে কীভাবে আটকাবে মা,যেখানে আমি নিজেই ব্যর্থ– বাবা হয়েও।″
″বলুন চাচা সবকিছু।ছোটবেলা থেকেই ওকে দেখে আসছি ও তো ভিতু আর পরোপকারী একটি মেয়ে ছিল কিন্তু হঠাৎ এমন হলো কিভাবে বলুন চাচা?″

″মা রে তুই তো জানিস,এতো এতো সন্তানদের ভরণপোষণ করতে আমি নড়েচড়ে যাচ্ছিলাম,ঢাকার দামী দামী স্কুলে সন্তানদের পড়ালেখা করানোর সক্ষমতা আমার ছিল না।আমার সকল ছেলেমেয়ে এখানের সরকারি স্কুলগুলোতে পড়ালেখা করেছে কিন্তু রিদিকা তোমার মতো করে তোমার সাথে একই স্কুলে পড়তে চাইত,একবার ঢাকা বেড়াতে গিয়েছিল আমার সাথে তখন থেকেই তো তোমার সাথে পরিচয়,তোমার সাথে চলার পর থেকে তোমার মতো জীবনযাপন করতে চাইত,আমি কথাটা তোমাদের জানাতাম না,

তা শুনলে হয়ত তোমরা রিদিকার আবদারের যথেষ্ট মান দিতে,এমনিতেই তোমার বাবার অনেক ঋন ছিল আমার মাথায়,উপর থেকে রিদিকার চাহিদা নিয়ে হাজির হওয়ার সক্ষমতা ছিল না আমার,তাই ঢাকা থেকে ওকে এখানে এনে দিয়ে যাই,তোমার সাথে বেশি যোগাযোগ করতে দিতাম না কথাটা তোমাকে জানাবে বলে,কিন্তু মাঝে মধ্যে আমার পিছু ধরে বাড়ি থেকে পালিয়েই ঢাকা চলে আসত,এসে তোমার সাথে ভিরত,তোমাকে কথাটা জানাতে চাইত কিন্তু আমি ওকে শাসাতাম,

তখন থেকেই আমাকে কেমন ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু করে।ওকে ওর মা বোঝাতে চাইলে ওকেও ভুল বুঝত,সারাদিন স্বাভাবিক আচরণ করলেও হঠাৎ করে এমন উদ্ভট কিছু করে বসত যে আমরা সবাই বিষয় খেতাম,আমার পিছু হয়ে চলে আসত ঢাকা,তাছাড়া না বলে যেখানে ইচ্ছে চলে যেত,কয়েকদিন যাবত ওর খোঁজ পেতাম না,ওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলেও অস্বাভাবিক আচরণ করত।হঠাৎ একদিন জানতে পারি ও প্রেগন্যান্ট,আমি তখন ছুটি নিয়ে তাড়াহুড়োয় বরিশাল আসি,তখন ওর বয়স ১৬,

আমরা আরও জানতে পারি বাচ্চাটা আমারই বড় জামাতা আব্দুলের ছিল,আপন দুলাভাই এর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পরেছিল রিদিকা,খবরটা জানাজানির পর আব্দুল আমার বড় মেয়ে শিউলিকে ছেড়ে দিতে চায় না,ভুল হয়ে গেছে বলে আমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী হয়।এক মেয়ের সংসার ভেঙে অন্য মেয়ের জীবন সাজাতে চাই নি আমরা,বিষয়টা সমাজে জানতে না দিলেও আব্দুলের সাথে এ নিয়ে শিউলি এবং আমাদের সবারই দন্ধ ছিল,শিউলি তার ঘরে ফিরে যেতে চায় নি তবে আব্দুল তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়।

রিদিকাকে সে নিজের ভুল হিসেবে মাথা থেকে নামাতে চায়।আমরা ওষুধ খাইয়ে রিদিকার বাচ্চা মে*রে ফেলি লোক লজ্জায়,একদিন গভীর রাতে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ শিউলির চিৎকার শুনে হকচকিয়ে উঠি সবাই,কিন্তু ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে যায়,শিউলির প্রাণহীন দেহ পরে থাকতে দেখি ফ্লোরে পাশে রিদিকা ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল,সাথে সাথে ও আমার উপরও ঝাঁপিয়ে পরে,আমরা ওকে কোনোরকম বেঁধে রাখি।রিদিকার মানসিক অবস্থা খারাপ ছিল আমরা আগে থেকেই জানতাম।

যতই হোক নিজের সন্তান তাই পুলিশকে বা আশেপাশে জানাই নি এই খুনের ব্যপারে,কোনরূপ মানুষকে বুঝিয়ে শিউলির দাফন কার্য শেষ করার পর আমরা ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই তখন ও অনেক উত্তেজিত ছিল,ডাক্তার ওকে দেখে বললেন ও পুরোই মানসিক ভারসাম্যহীন,তাই ওকে আমাদের ওকে মানসিক হাসপাতালে দিয়ে আসতে হয়।তুমি ওই সময়টাতে আমার কাছে ওর খবর জানতে চাইলে বলতাম ও কারো সাথে যোগাযোগ করে না তেমন।কয়েকবছর পর ও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়,

ডাক্তার ওর আচরনে যথেষ্ট স্বাভাবিকতা খুঁজে পেয়েছিলেন তাই ওকে ছেড়ে দিলেন,ওকে আমরা আবারও নিয়ে এলাম,ওকে তখন অনেক স্বাভাবিক মনে হতো,যেন আমরা নতুন কোনো রিদিকাকে দেখছি।ও তারপর থেকে তোমার সাথে আবারও যোগাযোগ শুরু করে,তবে এসব বিষয়ে তোমাকে কিছু না বলতে মানা করেছিলাম ওকে,ও আমার কথা মেনে যায়।ও আবারও ঢাকা চলে আসে আমার সাথে,আমাকে বলেছিল এমনিই পড়ালেখা শেষ করতে পারে নি,যাই যতটুকু আছে ততটুকু দিয়ে একটা জব করবে,

আমি মেনে গেলাম,ভাবলাম জীবনে সঠিক পথে কিছু করতে চাইছে বাঁধা দিব কেন!কয়েকদিন পর বলল আমার খালাত ভাইয়ের স্ত্রীর বোনের মেয়ে নিলিমার শ্বশুরবাড়ির পাশে একটা এনজিওতে কাজ পেয়েছে,ওর সাথে ভালো সম্পর্কও ছিল তার,নিলিমা না কি তাকে গিয়ে কয়েকদিন তার বাড়িতে থেকে কাজ করতে বলেছে,নিলিমা আমাকে নিজে বললে আমি আর মানা করলাম না,তাছাড়া আমরা যেখানে থাকতাম সেখান থেকে ওর কাজের জায়গা বেশ দূর ছিল,ঢাকার বাড়িতে শুধু আমি আর ওর মা–ছোট ভাই থাকতাম জানো তুমি,

ছোট্ট ঘর ছিল এতজনের থাকতেও সমস্যা হতো তাই মানা করি নি ওকে,কিন্তু কয়েকদিন পর হঠাৎ রিদিকা আমাদের কাছে ফিরে এলো,বলল নিলিমা ভুল বুঝে ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে,বেশ কান্নাকাটিও করল।এদিকে নিলিমা আমায় ফোন দিয়ে বলল রিদিকাকে সামলে নিতে,সামনে থেকে কখনও যাতে রিদিকাকে সে সে তার স্বামীর আশেপাশেও না দেখে নয়ত অনেক খা*রা*প হবে এমনটা বলে ফোন রেখে দেয়।

আমি ভয় পেয়ে যাই,রিদিকা আবারও কোনো অঘটন না ঘটিয়ে দেয় সেই ভাবনায় আমি ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দেই।এর কিছুদিন পর জানতে পারি রিদিকাকে পাওয়া যাচ্ছে না।প্রায় ৭ মাস পর আমি কোনো এক কাজে যশোর যাই,তখন আমিরুল(নিলিমার স্বামী) আর রিদিকাকে একটা রেস্টুরেন্টে দেখতে পাই একসাথে।দু’জনের পিছু নিলে দু’জনকে একটা ঘরে ঢুকতে দেখি,পাশের বাড়ির এক লোককে জিজ্ঞেস করি এই ঘরে কে বা কারা থাকে,তখন সেই লোকটা বলে এই ঘরে আমিরুল আর তাহমিনা নামক দম্পতি থাকে।

আমি বুঝতে পারি রিদিকা আবারও সেই পথে পা বাড়িয়েছে,কিন্তু ওর মানসিক অবস্থার কথা ভেবে আমি তখন ওদের সামনে গিয়ে কিছু বলি নি বরং নিলিমাকে খবরটা দেই।কিন্তু কিছুদিন পর জানতে পারি নিলিমা আর আমিরুল দু’জনই কোনো প্রমত্ত অঙ্গনার হাতে খু*ন হয়,আব্দুলও খু*ন হয়েছিল একই প্রমত্ত অঙ্গনার হাতে,রিদিকার মানসিক হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার দু’দিন পরেই।যাক এর অনেকদিন পর হঠাৎ রিদিকা ফিরে আসে,এসে আমার কাছে কান্নাকাটি করে বলে আমিরুল ওকে ফাঁসিয়ে ওকে বিয়ে করেছিল,ও তাকে বিয়ে করতে চায় নি তবুও,না চাইতেও না কি ওর সাথে থাকতে হয়েছে রিদিকাকে।আমি ওর কথায় বিশ্বাস না করলে আমার পায়ে পরে কান্না করে বলে প্রমত্ত অঙ্গনা নামক খু*নি ওর পিছন পরে আছে ওকে মে*রে ফেলবে।ওকে বাঁচাতে।

যতই হোক নিজের সন্তান, মায়া তো হয়ই,তাছাড়া প্রমত্ত অঙ্গনা আমিরুল নিলিমা দু’জনকেই মে*রে*ছিল তাই ওর জীবন যুকি নিতে চাই নি আমি,সেদিন আমি ঢাকা ছেড়েই চলে আসি ওকে নিয়ে,তোমার বাবার চাকরিটাও ছেড়ে দেই,যেহেতু রিদিকা আমিরুলের সাথে ছিল তাই এ নিয়ে কোনো কেসের ঝামেলায় পরতে চাই নি।কিন্তু সেটা ছিল আমার জীবনে করা আরেক ভুল,ভালোভাবে যাচ্ছিল দিনগুলো কিন্তু হঠাৎ একদিন ও আবার পালিয়ে যায় কারো সাথে, সেদিন ভেবে নিয়েছিলাম রিদিকা নামক ব্যক্তিত্ব জীবন থেকে মুছে দিব।এরপর আর খোঁজ নেই নি ওর।″

এই মাত্র আঁখি আদৃত বেরুলো মজনু চাচার ঘর থেকে।
″জানো আঁখি এই রিদিকার উপর তো আমি অনেক খুশি।″
″তা কেন?″ভ্রু উঁচিয়ে বলল আঁখি।
″এই দেখ না,ও যদি আদ্রিশকে তার চতুর্থ উইকেট হিসেবে না ফেলত তবে আমি ছক্কা কেমনে মারতাম?বেচারা আদ্রিশ হিরে ফেলে কাঁচ ধরতে গেছে,কি মজাটাই না লাগছে আদ্রিশের ঘাড়ে রিদিকার মতো পাগল চেঁপেছে।হা হা।″
″হয়েছে নিজেকে সাকিব আল হাসান ভাবা বন্ধ করে চলুন ফ্লাইট আছে ঢাকার।তা মানুষের দূরাবস্থা শুনে হাসাহাসি কখন থেকে শিখলেন একটু শুনি?″

″আরে মানুষের দূরাবস্থায় হাসব কেন?যে আমার প্রাণ নিয়ে টানাটানি করেছে,আমার হাসি কেড়ে নিয়েছিল তার দূরাবস্থায় না হাসলে কিসে হাসব?″
″আমি আপনার প্রাণ?″
″তা কি বার বার প্রমাণ করতে হবে?″আঁখির দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল।
″হয়েছে আর রোমান্টিক হতে হবে না।তাছাড়া কাজে হোক বা অকাজে কখনও যেন কোনো মেয়ের প্রশংসা করতে না শুনি আমার সামনে।″

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪০

″জেলাস হও বুঝি?″
″জানিনা।″
মুচকি হাসি দিয়ে আদৃতের হাত ছাড়িয়ে হাঁটা ধরে আঁখি,আদৃতও পিছু নেয় তার বাঁকা হেসে।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪২