প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪৩

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪৩
আরোহী নুর

রিদিকা হুডি,হাতমোজা আর মাস্ক মনে করে নিজের সাথে করে আনা ব্যাগে নিয়ে নিয়েছে,শরীর অনেক দূর্বল হয়ে গেছে তার,সামনের দাঁত সহিত প্রায় সব চুল উঠে গেছে।আদ্রিশ আদৃতের পিছন লোক লাগিয়েছিল,জানতে পেরেছে আদৃত আঁখিকে নিয়ে বর্তমানে এক জায়গায় যাচ্ছে, সেখানটার ঠিকানাও আদ্রিশ জানতে সক্ষম হয়েছে,বর্তমানে সেই উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে আজ যাই হয়ে যাক আদ্রিশ আঁখিকে ছিনিয়ে নিয়ে আসবে আদৃতের কাছ থেকে মন স্থির করে নিয়েছে।
এদিকটায় আদৃত আঁখিকে নিয়ে সুন্দর সে গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে।

″আচ্ছা আঁখি রিদিকার বিরুদ্ধে কোনো স্টেপ নিলে না যে? তুমি আমায় সেদিন ইন্সপেক্টর জিসানকে কিছু বলতে দিলে না,আমার তোমাকে নিয়ে ভয় হচ্ছে রিদিকা তোমাকে না কিছু করে বসে।আর আমার যতটুকু মনে হয় রিদিকাই প্রমত্ত অঙ্গনা।″

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

″রিদিকাই প্রমত্ত অঙ্গনা আমি শিওর,কিন্তু তার কোনো প্রমাণ নেই আমাদের কাছে।আমি গতকাল ইন্সপেক্টর জিসানকে রিদিকা সম্পর্কে সবকিছু জানিয়েছি,আমিরুল আর নিলিমা কেসের জের ধরে ইন্সপেক্টর জিসান রিদিকার পরিবারের খোঁজে ওদের ঢাকায় থাকার স্থানে পৌঁছাতে পারলেও বরিশালে ওরা কোথায় থাকেন তা খোঁজে বের করতে পারেন নি।অতঃপর আমি সবকিছু জানালে উনি শিওর খবর পেতে বরিশাল যান রিদিকার বাড়িতে।

আসলে উনারা বেশি বিভ্রান্তিতে ছিলেন কারণ রিদিকা আমিরুলের সাথে যশোরে তাহমিনা নামে ছিল,তার কারণ ছিল আমিরুল রিদিকাকে নিয়ে সেখানে থাকত সে খবর যাতে পরিচিত কেউ না পায় বা বুঝতে পারে,তাই ছদ্মনামে থাকছিল।তাছাড়া ওর পরিবার আর বেশ আত্নীয় স্বজন ওকে রিদু নামেই ডাকত,তাই আমিরুলের পরিবারের কাছ থেকেও ওর পুরো নাম জানতে পারেন নি ইন্সপেক্টর জিসান।″

″হুম,এই রিদিকা সত্যিই ভাবনার বাইরে,আদ্রিশের কপাল বলতে হবে।হা হা হা হা।কি ফেলে কি আনল!″
″এতো খুশি হবেন না,আপনি কি জানেন আপনি নিজের কপালে কি জুটিয়েছেন?হয়ত বা রিদিকা থেকেও ভয়ংকর কেউ আমি।″
″তুমি যতই ভয়ংকর হউ না কেন ভালোদের জন্য সবসময়ই কল্যানকর,আর আমার জন্য তো আমার জীবন।″
″সবকিছুতে রোমান্টিক ডায়লগ এনে ঢুকানো মিস হয় না?″

″সাথে এতো সুন্দরী রমণী থাকলে যে কেউ রোমান্টিক হতে বাধ্য হবে।দেখো না আমি তোমার প্রেমে আসত ঢেঁড়স থেকে গাজরে পরিণত হয়ে গেছি।″
″আপনিও না,হা হা হা।যাক নিরামিষতা অল্প কেটেছে আপনার।কমপক্ষে হাসাতে তো পারেন এখন আমায়।″
″মুক্ত ঝরানো সেই হাসি দেখার জন্য তো আমি জোকার হতেও রাজি।″
″হয়েছে আর কিছু হতে হবে না ড্রাইবিং এ মনোযোগ দিলেই হবে বর্তমানে।″

আঁখিকে নিয়ে আদৃত পৌঁছালো বেশ বড় একটা সুইমিংপুল প্রান্তে,সুইমিংপুলের পানিতে ভাসমান অজস্র ফুল,মধ্যখানে ফুল দিয়েই বড় একটা হার্ট বানানো আর তার মধ্যে লিখা দৃতখি।পুলের চারপাশে অজস্র বেলুন ও ফুল সাথে মোমবাতিও শোভা পেয়েছে।আঁখি এবার বেশ উৎসুখ হয়ে জানতে চাইল।
″এই দৃতখি এর মানে?″
″আদৃত + আঁখি =দৃতখি।সুন্দর না।″
″অদ্ভুত,একদম আপনার মতো।″

কথাটা বলে আঁখি মোহিত দৃষ্টিতে তাকালো আদৃতের দিকে,কালো শার্টটা একদম তার গায়ের মাপ অনুযায়ী যা লেপ্টে আছে গা বরাবর,হাতের শক্ত পেশিগুলো জানান দিচ্ছে শার্টের ভিতর থেকেই,গালের সেই খোঁচা দাঁড়ি, সাথে তৃপ্তির সেই হাসিখানা,কপালে এসে লেপ্টে পরা চুল সবকিছুই আজ যেন আঁখিকে আবারও আরেকদফা আদৃতের প্রেমে ফেলছে।সেই ছয় বছর আগে আঁখি ঠিক এভাবেই তো এই সুদর্শন পুরুষের প্রেমে পরেছিল,আদৃতের সব দিক আঁখিকে তার প্রতি যেন টানত খুব করে, হঠাৎ আঁখির ধ্যানে বিঘ্ন ঘটাল আদৃত।

″এই যে ডা.সাহেবা,কি এমন দেখছেন?″
″দেখছি কেউ কিভাবে এতটা নিঁখুত ভালোবাসতে পারে।কেন সেদিন সানিয়া আর আদ্রিশের ধোকায় পরলাম,জীবনের ছয় টা বছর আপনার মতো মানুষের সান্নিধ্য হারালাম।″
″পিছনে ফিরে তাকিয় না সুখ,হারিয়ে ফিরে পাওয়ার অনুভুতিটাও যে আলাদা এক ভালোলাগার শিহরণ তৈরি করে মনে,আছি তো আজ থাকব সারাজীবন, কথা দিলাম। তা চলো তোমাকে কিছু দেখাই।″

অতঃপর আদৃত আঁখিকে নিয়ে পুলের অন্য এক প্রান্তের দিকে গেল।সেখানেও লাল পোলাপের পাঁপড়িতে বড় একটা হার্ট বানানো,আদৃত সেই হার্টের মধ্যেখানে আঁখিকে নিয়ে দাঁড় করাল।তারপর হুট করে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসল,হাতে আদৃতের লাল তাজা গোলাপ।প্রেমময় স্বর ফোটিয়ে বলতে লাগল।

″আংটি তো আগেই পরিয়ে দিয়েছি সুখ,তবে মনের কথা সোজা ভাষায় আজও প্রকাশ করতে পারি নি,ভাবতে পারো লাল গোলাপের আশ্রয়ে এই অধমের ভালোবাসা প্রকাশের এটা ছোট্ট এক প্রচেষ্ঠা মাত্র।তুমি আমার কাছে এই লাল গোলাপের মতই সুখ,যাকে পেতে আগে তার কাঁটার বিষাদ গায়ে মাখতে হয়েছে।তবে অবশেষে তার সান্নিধ্য পেয়েছি।আমার জীবনে শুধু একটাই চাওয়া সুখ।সে চাওয়াটা শুধু তুমি,পাওয়াটাও তুমি হবে অটল বিশ্বাস যে আছে আমার আল্লাহ তায়ালার প্রতি।ভালোবাসি বড্ড তোমায়,হারিয়ে গেলে নিজেকেই হারিয়ে যাব।বলো না ভালোবাসো আমায়ও।″

″ভালোবাসি, আমার ডাক্তার সাহেবকে।″
″সত্যিই বাসো তো!″
″ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।″
″আঁখির তিন তিন বার দিয়ে উঠা স্বীকারুক্তিতে আদৃতের খুশিতে দ্বিগুণ আমেজ যোগ হলো।উঠে দাঁড়িয়ে আঁখিকে জড়িয়ে নিল নিজের বুকের সাথেল।আঁখিও জড়িয়ে ধরল আদৃতকে।কিছুক্ষণ পর আঁখি বেশ লজ্জা নিয়ে আদৃতকে ছাড়িয়ে নিল নিজের কাছ থেকে,অতঃপর লজ্জামিশ্রিত হাসিতে তাকে পাশ কাটিয়ে চারপাশ ভালো করে দেখতে লাগল।চারিদিকেই ফুল আর বেলুনের ছড়াছড়ি,কিছু কিছু জায়গা পরে পরেই লিখা,ভালোবাসি সুখপাখি।

ওয়েলকাম বেক টু মাই লাইফ হিটলার,দৃতখি, ভালোবাসি সুখ।আরও না জানি কতো কি।যা ফ্লোর থেকে নিয়ে আসপাশের দেয়ালগুলোতেও শোভা পেয়েছে,আঁখি একটা মোমবাতির পাশে দাঁড়িয়ে তার পাশে ফুলের পাপড়িতে লিখা দৃতখি শব্দটা বিমোহিত হয়ে দেখছিল ঠিক তখন আদৃত পিছন থেকে তার গলায় একটা ডায়মন্ডের নেকলেস পরিয়ে দেয়।অতঃপর আঁখিকে সেখানেই রাখা ফুলে সজ্জিত একটা আয়নার সামনে নিয়ে যায়,তার পিছনে দাঁড়িয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে।

″পছন্দ হয়েছে?″
″হুম,কিন্তু আমার কাছে সবকিছুর থেকে বেশি পছন্দের আপনি।″
আদৃত আলতো হেসে এবার একটা লাল গোলাপ আঁখির কানে গুঁজে দিয়ে গাইতে শুরু করে।
বকুলের মালা শুকাবে…
রেখে দিব তার সুরভী…
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে…
মুছো না কো আমারি ছবি…
আমি মিনতি করে গেলাম…

আদৃত আঁখির হাত ধরে তাকে নিয়ে গিয়ে পুলের পাশটায় বসালো,তার হাত ধরে থাকা অবস্থায় তার পাশে বসল,এদিকে গানটা গাইতে থাকল।
এই মন তোমাকে দিলাম…
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।
এবার আঁখিও গাইলো।
তুমি চোখের আড়াল হও…
কাছে কি’বা দূরে রও,
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম।
এই প্রেম তোমাকে দিলাম।
তুমি চোখের আড়াল হও…
কাছে কি’বা দূরে রও,
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম।

দু’জন একে ওপরের দিকে তাকিয়ে গানটি গেয়ে গেল।যাতে ব্যক্ত করল দু’জন দু’জনাকে নিজেদের মনের প্রেমময় ভাব,গান শেষে বেশ লজ্জায় পরল দু’জনই,একে ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিল।
পুলের পানিতে পা ভিজেয়ে রেখেছে দু’জনই,বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা পালনের পর আঁখি আদৃতের কাঁধে মাথা রেখে চাঁদের প্রতি দৃষ্টি স্থির করল,আদৃত আঁখির হাত নিজের হাতে নিয়ে নিজেও চাঁদের প্রতি মনোনিবেশ করল।আজকের পূর্ণ চাঁদ,আঁখি আদৃতের জীবনের পূর্ণতার আভাস যেন দিয়ে যাচ্ছে।

″ভালোবাসি সুখ।″
″আমি ভালোবাসি আমার ডা.সাহেবকে।″
তখনই পিছন থেকে আদ্রিশের ঝাঁঝালো স্বর কানে এলো দু’জনের,আদ্রিশ আঁখি বলে চেঁচিয়ে উঠেছে,আদৃত আঁখি কিছু না বুঝে হতভম্ব হয়ে উঠে দাঁড়ালে আদ্রিশ আর তাদের ভাবার কোনো পথ না দিয়ে সোজা আদৃতের মুখে কিছু স্প্রে করলে আদৃত জ্ঞান হারিয়ে পরে গেল সাথে সাথেই।আদ্রিশ সে সুযোগে একটা ধারালো ছুরি নিয়ে আদৃতের উপর ঝাঁপিয়ে পরতে নিলে আঁখি তাকে এক ধাক্কাতে বেশ দূরে ছিটকে ফেলে।

″তোমার সাহস হলো কি করে আদ্রিশ আমার ডা.আদৃতের উপর এভাবে অ্যাটাক করার?উনার সাথে শক্তিতে পেরে উঠার সক্ষমতা তো নেই তোমার তাই উনাকে অজ্ঞান করেছ তাই না,তবে ভেব না আমি বেঁচে থাকতে উনার কিছু হতে দিব।″
″আঁখি তুমি এমনটা করো না আঁখি,কেন ওই আদৃতের প্রতি দরদ দেখাচ্ছ,তুমি তো শুধু আমার আঁঁখি,তুমি আমার সাথে চলো আমি আদৃতকে কিছুই করব না।″
″লজ্জা করল না তোমার ওই নোংরা মনে আবার আমাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে,অন্য নারীর শরীরে মন ভরে গেছে তো এখন এসেছ আবার আমার কাছে।″

″আঁঁখি ক্ষমা করে দাও,প্লিজ ফুলপরি,আর কখনও এমন হবে না,চলো না আমার সাথে প্লিজ।″
আদ্রিশ কেমন জানি অস্বাভাবিক আচরণ করছে,যেন মানসিক ভারসাম্যহীন কেউ,আঁখি এবার বেশ তাচ্ছিল্য সহিত বলল।
″এই পাগলামি তোমার ততদিন ঠিক ছিল যতদিন তুমি এক আমিতে আবদ্ধ ছিলে আদ্রিশ,তোমার এসব এখন দেখতে আমার ডং আর ন্যাকামো ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না,প্লিজ তুমি চলে যাও।″
″আমি তোমাকে না নিয়ে যাবো না।″

এই বলে আঁখির হাত ধরে তাকে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে হাত বাড়াবে তখনই তার মাথায় প্রচন্ড জোরে একটা আঘাত করে পিছন থেকে কেউ একজন,সাথে সাথে আদ্রিশ জ্ঞান হারিয়ে লুটে পরে,আঁখি ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হুডিওয়ালা মাস্ক পরিহিত কাউকে,বুঝতে তার বাকি নেই কে সেই জন,হুডিওয়ালা জন এবার ছু*রি নিয়ে আদ্রিশের উপর প্রহার করতে নিলে আঁখি তাকে এক ঘুষিতে বেশ দূরে ফেলে দেয়,তেড়ে গিয়েই এক টান দিয়ে তার মুখের মাস্ক খুলে ফেলে,চুরের মতো তাকিয়ে থাকে রিদিকা তার দিকে,এবার আঁখি তাচ্ছিল্য হেসে বলল।

″আমি জানতাম রিদিকা তুই ই নকল প্রমত্ত অঙ্গনা,যে নিজের স্বার্থের গায়ে আঘাত দেওয়া লোকদের খু*ন করে বেড়ায়,যাকে বলো বদ্ধ উন্মাদ।″
″হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমি পাগল,আমি প্রমত্ত অঙ্গনা,আমিই সবার খুন করেছি।ওই শিউলি,আব্দুল,

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪২

মিশু,আমিরুল,নিলিমা,কলি,লিজান,ইয়াসমিন সবার খুন আমি করেছি আর এখন তোকেও মারব।তারপর আদ্রিশকে মারব,আমি সবাইকে মেরে ফেলব যারা আমার পথের কাঁটা হবে।

প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব ৪৪++৪৫