প্রাণেশ্বরী পর্ব ২৪

প্রাণেশ্বরী পর্ব ২৪
Writer Asfiya Islam Jannat

প্রাণ সময় কাটাতে ফোন হাতে নিতেই অপরিচিত এক নাম্বার থেকে মেসেজ আসে৷ সে মেসেজটি ওপেন করতেই দেখতে পায় তাতে লেখা, “প্রাণ, আমি নয়ন। জানি তুমি আমার সাথে কোনপ্রকার কথাবার্তা বলতে ইচ্ছুক না কিন্তু তাও বলছি সময় করে একটু মিট করতে পারবে? তোমার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। প্লিজ না কর না। ইট ইজ মাই লাস্ট রিকুয়েষ্ট টু ইউ।”

মেসেজটা পড়ে প্রাণ মোবাইলটা পুনরায় সিটে ফেলে দিল। বিতৃষ্ণায় মন বিষিয়ে গেল তার। সাথে প্রশ্ন জাগলো মনে, হঠাৎ নয়ন দেখা করতে বলছে কেন? নতুন করে কি মতলব এঁটেছে সে? তবে যাই হোক, তার কোন প্রকার ইচ্ছে নেই নয়নের সাথে দেখা করার। পাশে বসেই চৈতি প্রাণের আঁধারে ঘনীভূত চেহেরা দেখে জিজ্ঞেস করলো, “কিছু কি হয়েছে ম্যাম?”
প্রাণের দৃষ্টি জানালার কাঁচ ভেদ করে স্থির হলো বড় বড় অট্টালিকার চূড়ায়। মন্থর কন্ঠে বলল, “নয়ন দেখা করার জন্য বলছে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘নয়ন’-এর নাম শুনেই চৈতির কপালে তিনটে ভাঁজ পড়লো। সে কৌতূহল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি দেখা করবেন ম্যাম?”
প্রাণ উদাসীন কন্ঠে বলল, “ইচ্ছে নেই।”
প্রাণের উত্তরে চৈতি যেন বেশ খুশি হলো। মনে মনে আওড়ালো, “ওই রা’স’কে’ল’টার সাথে দেখা করতে চাইবেই কে? ননসেন্স একটা।”

“তুমি কি বলতে চাইছো, প্রাণ সেই রাতে ছন্দের সাথে বাহিরে ছিল?”
চৈতি মাথা নত করে বললো, “জি আশা ম্যাম।”
আশা বেগম তবুও নিজের মনের দ্বিধা দূর করতে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি নিশ্চিত ও ছন্দের সাথেই ছিল?”
“আমি শতভাগ নিশ্চিত। কেন না, ম্যামের ফোন তার কাছে ছিল। আমি সেদিন নিজের চোখে দেখেছি, তিনি যাওয়ার আগে পকেট থেকে বের করে ম্যামের ফোন তার পাশে রেখে গিয়েছিলেন।”
আশা বেগম রূঢ় কন্ঠে বললেন, “আমাকে আগে জানাও নি কেন এই ব্যাপারে?”

চৈতি তটস্থ কন্ঠে বলল, “মাথা থেকে ব্যাপারটা বেরিয়ে গিয়েছিল ম্যাম। তার উপর মাঝ দিয়ে ম্যামের শরীর এত খারাপ ছিল, আপনি তাকে নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলেন। তাই সুযোগও হয়ে উঠেনি। সরি ম্যাম!”
আশা বেগম দৃষ্টি সরু করে বললেন, “কাজে এমন হেরফের পছন্দ করি না আমি।”
চৈতি মাথা নত করে পুনরায় বলে উঠল, “সরি ম্যাম! আর এমন হবে না।”
“ওইখানে প্রাণকে টাইম টু টাইম মেডিসিন দিয়েছিলে তুমি?”
“জি দিয়েছি। শুধু ওইদিন রাতে মিস হয়ে গিয়েছিল তার জন্যই হয়তো পরেরদিন জেসিকার মৃ’ত্যু’র খবর শুনে তিনি ওমন রিয়্যাক্ট করে বসেন।”

আশা বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। অবসন্ন কন্ঠে বললেন, “ছন্দের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখেছ? কেমন ও?”
“খারাপ কিছু খুঁজে পায়নি তার সম্পর্কে। সব রেকর্ড ক্লিয়ার তার। এমনকি কখনো কোন সম্পর্কেও ছিলেন না।”
“ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছ?”
“হ্যাঁ! ছন্দ যখন অফিশিয়ালি বিসিবিতে জয়েন করেন তখন তার বাবা-মা এবং ছোট বোন লন্ডনে শিফট হয়ে যান। তার একটা বড় ভাইও আছে, বাংলাদেশেই থাকেন। তিনি ঢাকার প্রখ্যাত এক হসপিটালে কার্ডিওলজিস্ট হিসাবে আছেন। কিন্তু দুই ভাই একসাথে থাকেন না। বড় ভাই,তার বউ-বাচ্চা নিয়ে আলাদা থাকেন। তবে দুই ভাইয়ের একে অপরের বাসায় যাওয়া-আসা আছে। বলতে, তাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড বেশ ভালো।”

আশা বেগম সন্তুষ্ট হলেন নাকি অসন্তুষ্ট বুঝা গেল না। শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। তিনি নিঃস্পন্দ কন্ঠে বললেন, “আচ্ছা ঠিক আছে। সময় মত সব খবর দিতে থাকবে আমায়। আর তোমায় যে যে কাজ দিয়েছি ওইগুলো ঠিক মত করবে। এখন যেত পারো তুমি।”
চৈতি মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেল রুম থেকে। চৈতি যেতেই গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত হলেন আশা বেগম।

দুইদিন হলো, নয়ন প্রাণকে দেখার করার জন্য ক্রমান্বয়ে মেসেজ করেই চলেছে। তবে প্রাণ সম্পূর্ণভাবে তাকে উপেক্ষা করে চলেছে, কোনপ্রকার রেসপন্স করছে না তাকে। শেষে নয়ন মাত্রা ছাড়িয়ে যেতেই প্রাণ এক প্রকার বিরক্ত হয়ে তাকে ব্ল’ক করে দেয়৷ সে খুঁজে পায় না, একটা মানুষ এত হ্যাংলা কিভাবে হয়? অসহ্য!
এর মাঝে জিহানের সাথে প্রাণ একটা অ্যাডভারটাইজমেন্টের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। সেই শুটের ডেট পড়েছে আজকে। যার জন্য বনানী আসতে হলো তাকে। জমপেশ ভাবেই শুটিং চলছিল কিন্তু হঠাৎ করেই শুটিং স্পটে নয়নের আগমন ঘটে। তাকে দেখামাত্র সকলে নীরব হয়ে যায়, গোলগোল চোখে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। ইতোমধ্যে ক্রিউ মেম্বারদের মাঝে কানাঘুষাও শুরু হয়ে যায়। সকলেই মূল কৌতূহল এখানেই, “নয়ন কেন প্রাণের সেটে এসেছে? আবার কি চলছে তাদের মাঝে?”

প্রাণের নজর নয়নের উপর পড়তেই তার ভ্রু কুঁচকে আসে। সে তী’র্য’ক দৃষ্টিতে তাকায় নয়নের দিকে। এই ফাঁকেই নয়ন তার সন্নিকটে এসে বলে উঠল, “আমার তোমার সাথে কথা আছে প্রাণ।”
প্রাণ বিরক্ত সহিত কন্ঠে বলল, “কিন্তু তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই৷ তুমি যেতে পারো।”
নয়ন নম্র কন্ঠে বলল, “এটাই লাস্ট মিট আমাদের। বেশি সময় নিব আমি তোমার, সত্যি বলছি। ইটস ইমপোর্টেন্ট, ট্রায় টু আন্ডাস্ট্যান্ড।”

প্রাণ তবুও রাজি হলো না। নয়ন তবুও হাল না ছাড়ায় চৈতি মাঝে এলো। কিন্তু লাভ হলো না। জিহান তখন উপস্থিত ছিল বিধায় এগিয়ে এসে নয়নকে বাঁধা দিল৷ মুহূর্তেই দুইজনের মধ্যস্থলে বেঁধে গেল হুলুস্থুল। প্রাণ পরিবেশ ঠান্ডা করতেই রাজি হলো নয়নের সাথে কথা বলতে। জিহান প্রাণের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আর ইউ সিউর?”
প্রাণ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। অতঃপর চৈতিকে সেটে থাকতে বলে ডিরেক্টরের কাছ থেকে অনুমতি প্রাণ বেড়িয়ে গেল। রাস্তার ওপাড়েই একটা ক্যাফে ছিল। প্রাণ ও নয়ন গিয়ে সেখানে বসলো। দুইজনে দুইটা কফি অর্ডার দিয়ে প্রাণ অপ্রসন্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “এসবের মানে কি নয়ন? ক্যান ইউ প্লিজ এক্সপ্লেইন?”
নয়ন মাথা নত করে বলল, “এসবের জন্য সরি বাট তুমি কোন রেসপন্স করছিলে না, তাই বাধ্য হলাম তোমার সেটে আসতে আমি।”

প্রাণ বিতৃষ্ণায় মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, “কি কথা বলার আছে বল, সময় যাচ্ছে তোমার।”
নয়ন থেমে বলল, “কথা ঘুরাতে চাচ্ছি না আমি তাই ডাইরেক্ট পয়েন্টে আসছি। জেসিকা সু’ই’সা’ই’ড করেনি। শি ওয়াস রে’প’ড এন্ড কি’ল’ড।”
কথাটা কর্ণগোচর হওয়ামাত্র প্রাণের অভিব্যক্তি বদলে গেল। সে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকায় নয়নের দিকে। নয়ন স্মিত কন্ঠে বলল, “কি বিশ্বাস হচ্ছে না?”

প্রাণ প্রত্যুত্তর করলো না। নয়ন কয়েকটা ডকুমেন্টস এগিয়ে দিয়ে বলল, “হয়তো এগুলা দেখার পর হবে।”
প্রাণ ডকুমেন্টস গুলো হাতে নিয়ে দেখলো। জেসিকার পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট এটা, তাতে স্পষ্টরূপে লেখা আছে জেসিকাকে গ’ণ’ধ’র্ষ’ণ এবং হ’ত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোথাও এইসব উল্লেখ করা হয়নি কেন? সোশ্যাল মিডিয়া, নিউজ সবখানেই এই নিউজ দেওয়া হয়েছে জেসিকা সু’ই’সা’ই’ড করেছে। তাহলে সত্য কোনটা? নিউজে যা বলেছে তা, নাকি তার হাতে ধরে থাকা রিপোর্টগুলো? বুঝে উঠতে পারলো না প্রাণ। সে স্থির হলো। নয়নের পাণে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এটা যদি সত্যি হয় তাহলে নিউজে বলা খবরটা কি? মিথ্যে? এটা বলতে চাচ্ছ তুমি?”

নয়ন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “খবরের নিউজটা সত্য না। আসল সত্যটা মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে প্রাণ। কারণ যারা কাজটা করেছে তারা ভীষণ পাওয়ারফুল। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ডার্ক সিক্রেট তুমিও জানো, আমিও। তাই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো এইগুলা কোন ব্যাপার না। আর আসলে কি ঘটেছে।”
প্রাণ বুঝতে পারলো না কি করবে। প্রমাণ তার হাতে, তবে সামনে বসে থাকা মানুষটাও নয়ন। যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক’প’ট’তা, ধোঁ’কা’র চলাচল। কিভাবে তার কোন কিছুতে বিশ্বাস করে প্রাণ?

প্রাণকে চুপ দেখে নয়ন নিজ থেকেই বলে, “জানি আমাকে বিশ্বাস করার মত কোন কিছু করিনি আমি৷ তবে আমাকে বিশ্বাস করতে বলছিও না তোমাকে, প্রমাণগুলো দেখাতে চাইছি শুধু। বাকি বিশ্বাস করা বা না করা সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার।”
প্রাণ ক্ষীণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কারা করেছে এসব?”
এর মাঝে ওয়েটার কফি নিয়ে আসতেই চুপ বনে গেল দুইজন। ওয়েটার কফি সার্ভ করে চলে যেতেই নয়ন নিঃশব্দে বাকি কাগজপত্রও এগিয়ে দিয়ে বলল, “দেখে নাও।”
প্রাণ কাজগপত্র সব হাতে নিল। একেক করে সবগুলো নামই দেখলো, তবে একজনের নাম দেখে ভড়কে উঠলো সে। দৃষ্টি স্থির হয়েই রইলো তাতে৷ যৎসামান্য সময় অতিবাহিত হলো এভাব্দি। প্রাণ নিজেকে ধাতস্থ করে জিজ্ঞেস করলো, “এসব করার মোটিভ কি ছিল তাদের?”

নয়ন বলে, “সঠিক জানি না। তবে মাঝে জেসিকা আমায় একদিন ফোন করে জানিয়েছিল তারা তাকে বিভিন্ন ধরনের কু’প্র’স্তা’ব দিচ্ছে এবং থ্রে’ট দিচ্ছে। আমি বিষয়টা তখন আমলে নেয়নি। ভেবেছিলাম জেসিকা নতুন করে কোন চাল চলছে আমাকে ফেরত পাওয়ার জন্য। আমার ওর সাথে কোন কিছু ঠিক করার ইচ্ছে ছিল না তাই ইগ্নোর করে যাই। কিন্তু এর সপ্তাহে খানিক পর যখন ওর মৃ’ত্যু’র খবর পাই তখন নিজ থেকেই খোঁজ লাগাই৷ আর শেষে এই সত্যটা বেরিয়ে আসে।”
নয়ন একটু থেমে আবার বলে, “জেসিকা এবার কোন মিথ্যে বলেনি আমায়। মেয়েটা আসলেই ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিল, নিতে পারছিল না পাপাজিদের ও নেটিজেনদের টক্সিসিটি। মেন্টালি ডিপ্রেসড হয়ে পড়েছিল সে, দিনে দিনে মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তবুও বিশ্বাস করতে পারিনি আমি ওকে।”

নয়নের কথা শুনে প্রাণের সেই ছোটবেলায় পড়া মিথ্যাবাদী রাখালের কাহিনীটি মনে পড়ে গেল৷ সেখানে কিন্তু ঠিক এই একই ঘটনা ঘটেছিল। রাখালটি এতবার মিথ্যে বলে গ্রামবাসীকে বো’কা বানিয়েছিল যে শেষে যখন সত্যি সত্যি বাঘ এসেছিল তখন গ্রামবাসীরা আর তাকে সাহায্য করতে আসেনি৷ রাখাল মিথ্যে বলছে ভেবে বসেছিল তারা। যার ফলে জীবন হারাতে হয়েছিল রাখালটিকে। তাই হয়তো গল্পের শেষে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, “কখনো মিথ্যা বলবে না।” আজ কথাটির বাস্তবিক প্রমাণ পেল সে। সে সাথে মনে হলো, “ছোটবেলায় শোনা গল্প সব শুধু রূপকথা না, বাস্তবও হয়।”
প্রাণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। নয়নের দিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “এখন আমার থেকে তুমি কি চাও?”

নয়নের সহজ স্বীকারোক্তি, “সত্যিটা সামনে আনতে তোমার সাহায্য চাইছি। আমি জানি জেসিকা তোমার সাথে অনেক খারাপ করেছে, আমিও করেছি কিন্তু কেউ আমরা কম শাস্তি পায়নি৷ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি পুরা। বিশ্বাস কর। প্রতিনিয়ত কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি শুধু আমি জানি। তাই বলতে পারি শেষে ওর সাথে যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে। এত করুণ পরিনতির হওয়ার কথা ওর ছিল না। এখন আমার হাতে পাওয়ার,পজিশন কিছু নেই এর জন্য সত্যিটা আমার পক্ষে আনাও সম্ভব না। আমার সব চেষ্টাই বৃথা যাবে।”

“তাই তুমি আমার পাওয়ার আর পজিশনের ইউস করতে চাইছো তাই তো? তা মি. নয়ন মেহরাব আপনার এটা কেন লাগলো আমি আপনার সাহায্য করবো?”
প্রাণের শাণিত কন্ঠে করা প্রশ্ন। তবে নয়ন অপ্রস্তুত হলো না, সে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল প্রাণ এমন কোন প্রশ্নই করবে। তাই সে ধাতস্থ কন্ঠে বলে, “আমি যে প্রাণকে চিনে, সে কখনো কাউরো সাহায্য করতে কৃপণতা করে না। হোক সে-টা শত্রু বা মিত্র। তবে তুমি সাহায্য করতে না চাইলে সমস্যা নেই। জোড় করবো না তোমায়।”
প্রাণ প্রত্যুত্তরে বলল, “আমি ভেবে দেখবো।”

নয়ন কন্ঠস্বর নামিয়ে বললো, “আমি অপেক্ষায় থাকবো। আর ধন্যবাদ।”
প্রাণ একবার সময় দেখে নিয়ে বলে, “তোমার কথা শেষ হলে আমি যেতে পারি?”
আকস্মিক নয়ন প্রাণের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না প্রাণ?”
প্রাণ কথাটা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, “সবাইকে ক্ষমা করা গেলেও খু’নি ও প্র’তা’র’ক’দে’র কখনো ক্ষমা করা যায় না। তাদের ক্ষমার যোগ্যই হয় না। তাই ভুলে যাও।”
কথাটা বলে প্রাণ সেখানে থেকে বেরিয়ে যায়। নয়নও তার যাওয়ার পাণেই তাকিয়ে থাকে শুধু৷

প্রাণের সেট আপে নয়নের আগমন ও পরবর্তীতে তাদের আলাদা সাক্ষাৎ-এর নিউজ খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। নতুন হেডলাইনের সাথে নতুন গসিপ উঠেছে জনসাধারণের মাঝে। সকলের আশঙ্কা এটাই যে, জেসিকার মৃ’ত্যু’র পর এখন হয়তো নয়ন ও প্রাণ পুনরায় এক হতে চলেছে৷ এর কোন কিছুই এবার ছন্দের নজর এড়ায়নি। সে প্রাণকে নিয়ে উঠা সব নিউজই খুব মন দিয়ে পড়েছে, সাথে জিহানের মুখেও দুপুরের ঘটনা শুনেছে। কিন্তু তবুও নিউজগুলোর হেডলাইনগুলো সে যতবারই পড়ছে ঠিক ততবারই তার অন্তঃকরণে ভিন্ন এক ধরনের জ্ব’ল’ন অনুভব হচ্ছে। র’ক্ত’খ’ন’নের ন্যায় ধাঁ’রা’লো সেই অনুভূতি। ছন্দ দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠে, “এই নয়নের সমস্যা কি? প্রাণের পিছনে পড়ে আছে কেন এভাবে? কি চাই ওর? আর প্রাণেরও কি দরকার ওর সাথে আলাদা কথা বলার?”

প্রাণেশ্বরী পর্ব ২৩

জিহান পাশে বসে সবটাই শুনে। সে ভ্রু কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করে, “প্রাণ ও নয়ন যাই করুক তাতে তোর এত জ্বলছে কেন? তোমার সমস্যাটা কই?”
জিহানের কন্ঠ শুনেই ছন্দ সম্বোধি ফিরে পায়। তখন নিউজগুলো দেখে তার মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল। যার ফলে ক্রোধের বসে কথাগুলো বলে উঠেছিল। অথচ জিহান যে তার পাশেই বসা তা বেমালুম ভুলে ছিল সে। এখন জিহানের কথার কি উত্তর দিবে সে? কেন এমন রিয়্যাক্ট করছিল? প্রাণ যা ইচ্ছাই করুক তার এত জ্বলে কেন? কিভাবে বুঝাবে সে? কিভাবে?

প্রাণেশ্বরী পর্ব ২৫