প্রিয়দর্শিনী পর্ব ১৪

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ১৪
প্রজ্ঞা জামান তৃণ

রৌদ্রজ্জ্বল দিন।সূর্যের তাপমাত্রা প্রখর।বেশকিছুক্ষণ সময় পেরিয়ে গেছে!এখন দুপর গড়িয়ে বিকেল প্রায়।প্রজ্জ্বলিনীর চেকআপ করিয়ে হসপিটাল থেকে মাত্র বের হয়েছে দু’বোন। প্রিয়দর্শিনী বোনকে ধরে ধরে সাবধানে হাটঁছে। হসপির্টলের সামনে সদ‍্য গাড়ি থেকে নেমে আসা এপ্রোন পরিহিত সুদর্শন পুরুষটিকে দেখে প্রজ্জ্বলিনীর ঠোঁটে সু’ক্ষ্মহাসির বিচরণ।

লোকটিকে এতোবছর পর দেখে প্রজ্জ্বলিনীর চিনতে এতটুকু অসুবিধা হয়নি। প্রজ্জ্বলিনী সহ‍াস‍্যে বোনের সঙ্গে এগিয়ে যায়।এতোবছর পর প্রজ্জ্বলিনী,প্রিয়দর্শিনীকে দেখে লোকটি মনোমুগ্ধকর ভাবে হাসলো। লোকটি সামনে এগিয়ে আসে। তারপর সহাস‍্যে প্রিয়দর্শিনীর দিকে অপাদমস্তক তাকিয়ে, প্রজ্জ্বলিনীকে জিগ্যেস করে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

 

‘কেমন আছিস প্রজ্জ্বল?’
প্রজ্জ্বলিনী নির্নিমেষ চেয়ে ঠোঁট উল্টে ফেলে,
‘ভালো আছি নিহাল ভাই। কতোদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলো। মাত্র কয়েক বছরে কতো কিছু চেন্জ হয়ে গেছে জানো? তুমি আমাকে প্রজ্জ্বল কেনো বলো?আমার সুন্দর নামটাকে বিকৃত না করলে চলে না তোমার?’
নিহাল মৃদু হেসে প্রজ্জ্বলিনীর উদ্দেশ্যে বলে,

‘এইতো চলছে জীবনের নিয়মে। তোর নামটাকে আমি বিকৃত করলাম? কতো সুন্দর সংক্ষিপ্ত এডিশন বের করেছি।তোকে আজীবন প্রজ্জ্বলই বলবো।’
নিহাল প্রজ্জ্বলিনীর ঠোঁট ফুলিয়ে রাখা মুখটা দেখে হেসে ফেলল। প্রিয়দর্শিনী বোন আর ভাইয়ের কান্ডে মৃদু হাসে। নিহাল লক্ষ‍্য করে প্রিয়দর্শিনীর উদ্দেশ্যে বলে,
‘তুই কেমন আছিস প্রিয়?অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগে তোকে এইটুকু দেখেছিলাম।আজ কতো বড় হয়ে গেছিস আমি চিনতেই পারছিনা।’

প্রিয়দর্শিনী কিছু বলবে তার আগে প্রজ্জ্বলিনী মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে,
‘তো ছোট থাকবে সারাজীবন নিহাল ভাই?আন্টি কেমন আছে? এতোদিন পর তোমরা দেশে ফিরেছো আমাদের বাসায় আসোনি কেনো? মা তোমাদের কথা মাঝে মধ‍্যেই বলে।’
নিহাল করুণ মুখ করে প্রজ্জ্বলিনীর উদ্দেশ্যে বলে,

‘আর বলিস না দেশে ফিরেছি কিছুদিন হলো।এরমধ্যে হসপিটালে জয়েন করতে হয়েছে। অনেক কাজ পেন্ডিং ছিল,শেষ করতে সময় হয়ে উঠেনি যাওয়া। মা ভালো আছে। একদিন সময় পেলে মাকে নিয়ে যাবো।’
প্রজ্জ্বলিনী উচ্ছসিত হয়ে বলে,
‘ইশশ! কেমন সিচুয়েশনে দেখা হলো তোমার সঙ্গে কথা বলার জন‍্য সময় হলোনা। তুমিও তো মনে হয় ব‍্যাস্ত। বাসায় এসো অনেক কথা আছে তোমার সঙ্গে।’

নিহাল হাতের ঘড়িটাই একবার নজর বুলিয়ে বলে,
‘সত‍্যি আমি বিজি। অপারেশন আছে আমার। আচ্ছা তোরা যা পরে কথা হবে। মাকে নিয়ে দ্রুত আসবো ইনশাআল্লাহ্। আন্টি আর খালুকে আমার সালাম জানাস।’__বলেই নিহাল প্রিয়দর্শিনীর দিকে তাকাল।
প্রিয়দর্শিনী সহাস‍্যে বোনকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেল। শুধু যাওয়ার আগে নিহালের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘আন্টিকে নিয়ে অবশ্যই আসবেন নিহাল ভাইয়া।’

বিকালের শেষভাগে আবিদ শিক্ষা বোর্ড থেকে বাড়িতে ফিরেছে সবেমাত্র। আদিবাকে কলেজ থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু সে ছুটি নিয়ে অনেক আগেই ফিরে এসেছে। ড্রয়িং রুমে কোলাহল দেখে আবিদ দ্রুত নিজের রুমে ফিরে যায়।প্রচুর ক্লান্ত সে শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন। পুস্পিতা আর অনুসা বেগম প্রায় সবার জন‍্য অনেক কেনাকাটা করেছে।সেসব চেক করে দেখছে সবাই।এসব তো কিছুই না আরো আশি শতাংশ কেনাকাটা এখনো বাকি আছে তাদের। অনুসা বেগমের ইচ্ছে প্রিয়দর্শিনীকে সঙ্গে করে পছন্দ মতো জুয়েলারি শাড়ি কসমেটিক সহ যাবতীয় যা লাগে সব কিনবেন।এজন্য অবশ‍্য আশরাফ সাহেবের থেকে পারমিশন নিয়ে নিবেন বলে ঠিক করেছেন।

বেশকিছু ক্ষণ পর আবিদ একেবারে শাওয়ার নিয়ে নিচে নামে।পড়নে মিষ্টি রঙের-শার্ট আর কালো রঙের টাওজার। আবিদ সোফায় এসে আরাম করে বসতেই আদিবা উচ্ছসিত হয়ে জুয়েলারির বাক্স গুলো ভাইয়ের সামনে নিয়ে বলে,
‘ভাইয়া দেখো প্রিয়দর্শিনী আপুর জন‍্য কতোগুলো জুয়েলারি পছন্দ করেছে আম্মু, সুন্দর না বলো?আপুকে ভিষণ মানাবে ঠিক না?’

আবিদ নির্লিপ্তভাবে একবার জুয়েলারির দিকে তাকায় আরেকবার অনুসা বেগমের দিকে তাকায়। কন্ঠস্বর শান্ত করে নির্বিঘ্নে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘দর্শিনীকে যেটা’ই পড়ানো হোক তাতেই সুন্দর লাগবে।কিন্তু
এতো হেভি জুয়েলারি এতো হেভি জুয়েলারির কি দরকার?’
আদিবা ভাইয়ের কথায় নির্বিকারভাবে প্রতিত্তর দেয়,

‘এসব কিছুই না। আম্মু ডাইমন্ডের জুয়েলারির জন‍্য অর্ডার দিয়ে এসেছে। আমাদের এখনো ভালো মতো শপিং করা হয়নি। কাল আবার যাবো। আমাদের সঙ্গে কে থাকছে গেস করো তো?’
আবিদ উৎসুক হয়ে জিগ্যেস করে,
‘কে?’

‘উহুম! বলবো না।’__বলেই আদিবা অনুসা বেগমের পাশে বসে নিজের জন‍্য বরাদ্দকৃত লেহেঙ্গা, জুয়েলারি দেখতে থাকে।
আবিদ বিস্মিত, বোনের অদ্ভুত আচরণে। কে আসছে কাল? অনুসা বেগমের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকায়।
অনুসা বেগম আবিদের দিকে অপাদমস্তক নজর বুলিয়ে বিভ্রান্তিকর মুখবয়বে বলেন,

‘ভাবছিলাম প্রিয়দর্শিনীকে নিয়ে আসবো। যা কিছু কেনাকাটা সবটা তার পছন্দ মতো হলে ভালো হবে।আমরাতো জানিনা তার পছন্দ তাই নিজের জিনিস নিজে পছন্দ করে নেওয়ার আলাদা সুবিধা। প্রিয়দর্শিনী এখানে আসলে আমাদের সঙ্গে অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। তাছাড়া আদিবা আছে পুস্পিতা আছে সবার সঙ্গে মিশে যাবে।’
আবিদ খুব শান্ত স্বরে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে উঠে,

‘তো কি করতে বলছেন?’
অনুসা বেগম পুস্পিতা আদিবার দিকে তাকিয়ে আবিদকে বললেন,
‘কাল কেনাকাটা করতে যাবো। পুস্পিতা বলছিল প্রিয়দর্শিনীকে আমাদের সাথে নিতে?এ সম্পর্কে আশরাফ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে চাই, তিনি যেন আপত্তি না করে।’
আবিদ নির্বিকার, দৃষ্টি নিটোল! অনুসা বেগমের কথায় নির্বিঘ্নে বলে উঠে,
‘আমি আশরাফ আঙ্কেলকে বলে দিবো! কাল আমি দর্শিনীকে নিয়ে আসবো। তখন কেনাকাটা করতে নিয়ে যাবেন সমস্যা নেই।’

অনুসা বেগম খুশি হয়ে বলে উঠে,
‘বেশ! কিন্তু আমাদের সঙ্গে যাবেনা তুমি ?’
আবিদ উঠে দাঁড়ায় উদ্দেশ্য রুমে যাবে। যাওয়ার আগে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
‘যাবো সবাই তৈরি থাকবেন।’
আসফি এতোক্ষণ ধরে বিরক্তি নিয়ে সব সহ‍্য করেছে। আবিদের শেষউক্তি শুনে ভাবান্তর হলো। প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ এমনিতে সে পাবেনা। কাল যেহেতু প্রিয়দর্শিনী চৌধুরী বাড়িতে আসবে এটাই ম’ক্ষ’ম সুযোগ প্রিয়দর্শিনীকে আবিদের নামে আজেবাজে বলে বাগদানে ভে’ঙে ফেলার।

মুহতাসিম পরিবারে সন্ধ্যায় সবাই আলোচনায় বসেছে। আলোচনার মধ‍্যমনি হচ্ছে উজান। আবিদের জন‍্য যাবতীয় কেনাকাটা সবটা করেছে আশরাফ মুহতাসিম আর উজান। প্রিয়মা বেগম নিজেই দুই মেয়ের জন‍্য কেনাকাটা করেছে। সবাই প্রিয়মা বেগমের পছন্দের প্রশংসা করল। এদিকে উজান আলোচনায় আবিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
প্রজ্জ্বলিনীর উজানের এসব ভালো লাগেনি বলে দূরে আহমেদ মুহতাসিমের পাশে বসে আছে।সেই সুযোগে বার কয়েক আবিদের নামে মিথ্যা বলে, আহমেদ মুহতাসিমকে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু সফল হতে পারেনি। উল্টো আহমেদ মুহতাসিম আবিদের প্রশংসা করেছে।

এরমধ্যেই আশরাফ মুহতাসিমের কাছে শাহরিয়ার চৌধুরীর ফোন আসলে আশরাফ মুহতাসিম সবাইকে রেখে বাহিরে কথা বলতে যায়।এদিকে উজান প্রিয়দর্শিনীকে আবিদের জন‍্য কেনা দামি দামি সুট-বুট, ওয়াচ, যাবতীয় সব দেখাচ্ছে। প্রিয়দর্শিনী দেখতে চায়নি মূলত জোর করে দেখাচ্ছে উজান, তাঁর উদ্দেশ্য প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে দু’একবার আবিদকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করবে।আশরাফ মুহতাসিম বাহির থেকে ফিরে এসে আরাম করে সোফায় বসলেন। প্রিয়দর্শিনী বাবাকে পানি এনে দেয়। প্রিয়মা বেগম সবার জন‍্য কিছু স্ন‍্যাকস্ এনে টেবিলে রাখে। আশরাফ মুহতাসিম সকলের উদ্দেশ্যে বলে,

‘শাহরিয়ার চৌধুরী ফোন করেছিল।ওরা চাইছে কালকে প্রিয়কে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করবে। প্রিয়র পছন্দ সম্পর্কে ওরা জানেনা। এজন্যই আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী কাল আসবে প্রিয়কে নিতে।’
ড্রয়িং রুমে আপাতত নিরবতা। প্রিয়দর্শিনী নিশ্চুপ হয়ে বসে রয়েছে। সবার ফেস দেখে বোঝা যাচ্ছে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু প্রজ্জ্বলিনী আপত্তি করে বলে,
‘বাগদান বিয়ে এখনো কিছু হয়নি। ওরা কোন সাহসে প্রিয়কে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব‍্যাপারে বলে?বাবা- মা তোমরা কিছু বলছো না কেনো?’

সবাই প্রজ্জ্বলিনীর দিকে একসঙ্গে তাকায়। অতি সামান্য বিষয়ে প্রজ্জ্বলিনী কিভাবে রিয়েক্ট করছে। এখনকার সময়ে প্রত‍্যেক বিয়েতে সবকিছু মেয়ের পছন্দ অনুযায়ী দেওয়া হয়। ছেলে পক্ষ যদি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে পছন্দ মতো কেনাকাটা করে পাঠায় এটা বিস্ময়কর বিষয় নয়। উজান, সহ বাকি সবাই এখনো পযর্ন্ত বুঝলো না প্রজ্জ্বলিনীর কি সমস্যা আবিদকে নিয়ে। আশরাফ মুহতাসিম নির্বিঘ্নে বলে,

‘সমস‍্যা কোথায়? চৌধুরী পরিবার দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়। বরং আমার দেখা সবচেয়ে দায়িত্বশীল পরিবার। সবচেয়ে বড় বিষয় কী জানো ম‍্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী যথেষ্ট দায়িত্ববান। কিছুদিন পর তাদের বিয়ে হবে। আমার মনে হয়না তারা তোমার মতো এই কথাটা ভুলে গেছে! আবিদ শাহরিয়ার যদি প্রিয়কে নিয়ে যায় দেখা যাবে সহিসালামতে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। প্রিয়কে নিয়ে যথেষ্ট সিরিয়াস চৌধুরী পরিবার। মনে নেই আবিদ শাহরিয়ার বাড়িতে চোরের সমস্যাটায় কিভাবে সাহায্য করেছে?’

প্রিয়মা বেগম এবং আহমেদ মুহতাসিমকে আশরাফ সাহেবের কথায় সন্তুষ্ট দেখাল। উজান আশরাফ মুহতাসিমের কথায় সায় দিয়ে বলে,
‘ঠিক বলেছেন বাবা। এতে আমাদের রেড রোজ বিয়ের আগে সবার সঙ্গে সহজ হতে পারবে। শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে বিয়ের আগে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হবে। অচেনা বলে অসস্থিভাব থাকবে না।আর আবিদ শাহরিয়ারের উপর আমাদের ভরসা আছে।’

প্রজ্জ্বলিনী উজানের উপর রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়। উজান এতে ভড়কে যায়! উজান কী বাজে কথা বলেছে? তবে? আহমেদ মুহতাসিম এতোক্ষণ পরে উজানকে সায় দিয়ে আশরাফ মুহতাসিমের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘তো কি সিদ্ধান্ত নিলে?’

সবাই প্রগাঢ় উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।প্রিয়দর্শিনী এখনো নিশ্চুপ। তার অনিহা রয়েছে এমনটা নয়।সে বাবার সিদ্ধান্তের জন‍্য অপেক্ষা করছে। মূলত আবিদ তাকে আগেই জানিয়েছে। কালকে নিতে আসবে। প্রিয়দর্শিনীর আপত্তি ছিলোনা। বিয়ের আগে আবিদের পরিবারের সঙ্গে একটু ভালো সময় উপহার পাবে এটা তার জন‍্য আনন্দের ছিল। আবিদের সুন্দর পরিবার প্রিয়দর্শিনীর কাছে উৎসাহ, আকর্ষণীয়তার বিষয়বস্তু ছিল। প্রিয়দর্শিনীর পুরোপুরি সম্মতি ছিল। প্রিয়দর্শিনী ভালোভাবে জানে আশরাফ মুহতাসিম পারমিশন না দিলে কিছু করার নেই তার।কিন্তু আবিদ প্রিয়দর্শিনীকে নিশ্চিত করে আশরাফ মুহতাসিম রাজি হবে বলে। প্রিয়দর্শিনী প্রচন্ড খুশি আবিদের সঙ্গে দেখা হবে বলে। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ করে আশরাফ মুহতাসিম বলেন,

‘আমি শাহরিয়ার চৌধুরীকে সম্মতি জানিয়েছি। আবিদ কাল সকালে আসবে প্রিয়কে নিয়ে যেতে।প্রিয় যখন ওই পরিবারের একজন হবে তখন আর আপত্তি থাকার কথা নয়।’

প্রজ্জ্বলিনী কিছু বলতে যায় আশরাফ মুহতাসিম হাত উচু করে নিষেধ করেন। বাবার সিদ্ধান্তে প্রিয়দর্শিনীর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। প্রিয়দর্শিনীর ভিতরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অস্থিরতা কাজ করছে তার ম‍্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে দেখার জন‍্য। সবার অগোচরে প্রিয়দর্শিনী নিজের রুমে ফিরে আসে। ঠিক সেইসময় ফোনটা বেজে উঠে।ফোন কলটা আবিদের ছিল। প্রিয়দর্শিনী কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করে। তার কন্ঠস্বর রোধ হয়ে আসছে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। প্রিয়দর্শিনী নরম কমল ঠোঁট ভিজিয়ে সিক্ত করে। ওপাশ থেকে আবিদের নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রিয়দর্শিনী চোখ বন্ধ করে তা অনুভব করে।আবিদ নিরাবতা ভে’ঙে নিরেট শান্ত স্বরে বলে উঠে,

‘দর্শিনী?’
প্রিয়দর্শিনী মৃদু কেঁপে উঠে জবাব দেয়,
‘হুম!’
‘কালকে আমি আসছি দর্শিনী! আপনি তৈরি থাকবেন। শুনেছি মেয়েদের সবচেয়ে বেশি আবেদময়ী, আকর্ষণীয় লাগে শাড়িতে।আপনাকে প্রথম দেখতে যাওয়ার দিনই পরোক্ষ করেছিলাম। এজন্য আপনাকে আবারো শাড়িতে দেখতে চাই দর্শিনী! আমার কাছে আপনি আবেদনময়ী, আকষর্ণীয় আগে থেকে। কিন্তু এবার আমার দেখার নজর ভিন্ন থাকবে। ভিষণ অদ্ভুত অন‍্যরকম।’

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ১৩

আবিদের কথা কর্ণকুহরে পৌঁছনো মাত্রই প্রিয়দর্শিনী অস্থিরতা অনুভব করছে। ধবধবে ফর্সা গালে রক্তিম আভা ছঁড়িয়ে গেছে। আবিদের অদ্ভুত কথায় তার শরীর ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে। আবিদ দর্শিনীর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। আবিদের ভিতরে অস্থিতিশীল অবস্থা বেড়ে’ই চলেছে দর্শিনীর অস্থিরতা অনুভব করে। তার বুকে ঢিপঢিপ শব্দের প্রখরতা বাড়ছে। দুজনেই অসহায়ের মত দূর থেকে নিজেদর অনুভব করতে ব‍্যাস্ত।এই অনুভূতি এতো মা’রা’ত্ম’ক কেনো?

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ১৫