প্রিয়দর্শিনী পর্ব ২১ ( ১ম অংশ )

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ২১ (১ম অংশ)
প্রজ্ঞা জামান তৃণ

সকালের স্নিগ্ধ মনোমুগ্ধকর আবহওয়া। সঙ্গে ধোঁয়া উঠা উষ্ণ এককাপ কফিতে কোমল ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে সময়টা উপভোগ করছে দর্শিনী। বেলকনির ফাঁকা জায়গায় চ‍েয়ারে বসে আছে সে। আজকের সকালটা অন‍্যরকম সুন্দর। মুহতাসিম ভিলায় তোড়জোড় করে আয়োজন শুরু হয়েছে। আজ আবিদ দর্শিনীর এঙ্গেজম‍েন্ট। আশরাফ মুহতাসিম আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখতে রাজি নয়। বেলকনিতে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দর্শিনী নিচে নামে। বাসার সবাই বিভিন্ন কাজে ব‍্যাস্ত। উজান প্রজ্জ্বলিনীকে জোর করে খাইয়ে দিচ্ছে। প্রজ্জ্বলিনী খাওয়ায় অনিয়ম করে প্রচুর। দর্শিনীকে নিচে নামতে দেখে উজান বলে উঠে,

‘স্নো হোয়াইট! আজকে কেমন বোঁধ করছো?’
দর্শিনী বুঝতে পারছে উজান তাকে নিয়ে মজা করছে। আজকের দিনে উজান দর্শিনীকে টিজ করবেনা এমনটা হতেই পারেনা। দর্শিনী কিছু না বলে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ে। প্রজ্জ্বলিনী সবটাই লক্ষ‍্য করছে, সে উজানের উপর একটু বিরক্ত হয়। উজানের আবিদের ব‍্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি তার পছন্দ নয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এরমধ্যেই শাহরিয়ার চৌধুরী আশরাফ মুহতাসিমকে ফোন করে জানিয়ে দেন তারা বিকালে রওনা দিবেন। দর্শিনী খাওয়া-দাওয়া শেষে নিজের রুমে চলে যায়। প্রজ্জ্বলিনী সুযোগ বুঝে দর্শিনীর রুমে আসে। প্রায় নানা গল্পের মাঝে প্রজ্জ্বলিনী দর্শিনীকে কালকের ব‍্যাপারে বলে। কাল নিহাল আর রেহানা বেগম এসেছিল দর্শিনীর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। নিহাল তাকে পছন্দ করে শোনার পর দর্শিনীর ভ্রুকুঁচকে যায়।

অদ্ভুত ভাবে তাকায় প্রজ্জ্বলিনীর দিকে। যেন কোন অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনল। দর্শিনী বুঝতে পারছে না নিহাল সব জেনে শুনে কেনো এমন প্রস্তাব দিয়েছে। সেদিন আবিদ নিজে থেকে নিহালের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। নিহাল তো তার ভাই। কতো ভদ্র একটা ছেলে। দর্শিনীর ভাইয়ের প্রতি এমন ভ্রান্ত ধারণা কখনো ছিলোনা। দর্শিনী প্রজ্জ্বলিনীর উদ্দেশ্যে বলে,

‘নিহাল ভাইয়াকে আমি সবসময় ভাইয়ের চোখে দেখেছি আপু। নিজেদের মধ‍্যে সম্পর্ক আমার পছন্দ নয়। এমন চিন্তা উনি কীভাবে করতে পারেন। কাল ‘বিগ বাজারে’ আমাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী নিজে পরিচিত হয়েছিল উনার সঙ্গে। তবুও এমন প্রস্তাব দেওয়ার মানে কী? এটা চৌধুরী পরিবারের সবাই জানতে পারলে কীভাবে রিঅ‍্যাক্ট করবে জানো?’___বলেই দর্শিনী প্রচন্ড অসস্থি অনুভব করে।

দর্শিনীর কথায় প্রজ্জ্বলিনীর মুখটা ভারী হয়ে আসে। বোনকে বুঝিয়ে বাগদান ভাঙতে চেয়েছিল সে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে দর্শিনী আবিদের উপর প্রচন্ড দূর্বল হয়ে পড়েছে। ঠিক যেভাবে একসময় না চাইতেও সে দূর্বল হয়েছিল। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর জন‍্য চিঠি লিখে কতো পাগলামি করেছিল। প্রজ্জ্বলিনীর আগের কথা ভাবলে প্রচন্ড রাগ হয়। আবিদের প্রত‍্যাখান তাকে আরো বি’ষিয়ে তুলে।

এখন তার আফসোস হয় কেনো সে কিশোরী বয়সে আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর প্রেমে পড়েছিল। প্রজ্জ্বলিনী পুরোনো কথা ভেবে চোখমুখ কুঁচকে নেয়। নিজেকে শান্ত করে দর্শিনীর উদ্দেশ্যে বলে,
‘নিহাল ভাই তোকে পছন্দ করে। তার পছন্দের কোন দাম নেই তোর কাছে? নিহাল ভাই একজন ডাক্তার এতো শিক্ষিত। তোর জন‍্য যোগ্য তুই একটু ভেবে দেখ প্রিয়। নিহাল ভাই কতো কষ্ট পেয়েছে জানিস বাবার প্রত‍্যাখানে। তুই রাজি থাকলে আবিদ শাহরিয়ারের কিছু করার থাকবে না।’

দর্শিনী বুঝতে পারছেনা প্রজ্জ্বলিনী তাকে আজ এসব কথা কেনো বলছে। মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে দর্শিনী। প্রজ্জ্বলিনীর আবিদ শাহরিয়ারের প্রতি এতো রাগের কারণ জানেনা দর্শিনী। জিগ্যেস করলেও প্রজ্জ্বলিনী স্বীকার বা কিছু বলেনি কোনদিন। এদিকে দর্শিনী আবিদকে ব‍্যাতিত অন‍্য কারো সম্পর্কে ভাবতে পারেনা। সেখানে প্রজ্জ্বলিনীর নিহালকে নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ভালো লাগলো না। আবিদ দর্শিনী একে অপরকে ভালোবাসে সেখানে একতরফা ভালোবাসা কতটা যুক্তিযত? আত্মীয়দের মধ‍্যে সম্পর্ক আশরাফ মুহতাসিম এমনিতেও পছন্দ করেনা। দর্শিনীও ব‍্যাতিক্রম নয়। দর্শিনী বোনের উদ্দেশ্যে বলে,

‘আমি একা থাকতে চাই আপু। প্লীজ যাও এখন।’
প্রজ্জ্বলিনী রাগ করে উঠে আসে। মেজাজটা তার খারাপ হচ্ছে। ছোট বোনের উপর এই প্রথম বিরক্ত হলো সে। সেটার জন‍্যও দায়ী আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী। প্রজ্জ্বলিনী ক্রো’ধে বিরক্তিতে বলে উঠে,
‘বাহ্! আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী বাহ্! ভালোই ব্রেইন ওয়াশ করেছো আমার বোনের। অনেক হয়েছে, তুমি যতো চেষ্টা করো তোমাকে আমি সফল হতে দিচ্ছিনা।’

প্রজ্জ্বলিনীর চলে যাওয়ার পর নিহালের বিষয়টি ভেবে দর্শিনীর প্রচন্ড খারাপ লাগছে। হুট করে নিহালকে নিয়ে তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে। নিহাল আর যাইহোক দর্শিনীকে পাওয়ার জন‍্য অনৈতিক পথের আশ্রয় নেবে না। সে যথেষ্ট ওয়েল ম‍্যাচিয়‍্যুর পার্সন। কিন্তু কালকের সেই অপ্রীতিকর ঘটনায় নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছে। দর্শিনী পরবর্তীতে নিহালের সঙ্গে কথা বলে মিটমাট করে নিবে বলে ঠিক করল। নিহাল যেন তাকে ভুলে মুভ অন করে সে ব‍্যাপারে বোঝাবে দরকার হলে।

চৌধুরী বাড়িতে,
সবাই তৈরি হয়ে গেছে একটুপর মুহতাসিম ভিলার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। আবিদ মেরুন রঙের কাজ করা পান্জাবী সঙ্গে সাদা পাজামা পড়েছে। চুলগুলো সুন্দর করে জেল দিয়ে সেট করা। হাতে রোলেক্স ব‍্যান্ডের ঘড়ি। গমরঙা ত্বকে বলিষ্ঠ সুন্দর শরীরে মেরুন রঙ সুন্দর ভাবে ফুঁটে উঠেছে। শাহরিয়ার চৌধুরী কোট প‍্যান্ট পড়ে তৈরি। অনুসা বেগম আর পুস্পিতা একই ডিজাইনের ভিন্ন কালারের শাড়ি পড়েছে। আরহান শার্ট প‍্যান্ট পড়ে তৈরি। আদিবা মিষ্টি কালারের কাজ করা থ্রি-পিচ পড়েছে। আসফি গম্ভীর মুখে পান্জাবী পড়ে রেডী হয়ে আসে। যদিও যাওয়ার ইচ্ছে ছিলনা। প্রিয়দর্শিনীকে সে ভাইয়ের সঙ্গে দেখতে পারবেনা বলে। কিন্তু শাহরিয়ার চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়েছেন যেতে হবে।

মোট দুইটা গাড়ি যাবে মুহতাসিম ভিলার উদ্দেশ্যে। একটায় আবিদ, আদিবা, অনুসা বেগম, শাহরিয়ার চৌধুরী। অন‍্যটায় আসফি, আরহান, পুস্পিতা যাচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ‍্যেই তারা প‍ৌঁছে যায়। আশরাফ মুহতাসিম আর উজান, চৌধুরী পরিবারের সবাইকে ভিতরে নিয়ে যায়। চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে আরো দু’জন কাজের লোক ছিল।

ফলমূল, মিষ্টান্ন দ্রব‍্য সবকিছু নিয়ে আসতে সাহায্য করার জন‍্য। চৌধুরী পরিবারের সবাইকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সামনে ট্রি-টেবিল ভর্তি ভিন্ন রকমের স্ন‍্যাকস্। সবাই হালকা নাস্তা করে নেয়। আবিদ এদিকে দর্শিনীকে দেখার জন‍্য প্রচন্ড উদগ্রীব হয়ে আছে। আদিবা সব লক্ষ‍্য করে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঠাট্টা করে। আবিদ কিছু না বলে চোখ রাঙায়। আদিবা পাত্তা দেয়নি।

আহমেদ মুহতাসিম, আশরাফ মুহতাহিম, শাহরিয়ার চৌধুরী বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে দর্শিনীকে ডেকে আনার জন‍্য বলেন। প্রজ্জ্বলিনীর এই অবস্থায় বারবার উঠা নামা নিষেধ এজন্য প্রিয়মা বেগম হৃদিকে বলেন। হৃদি দর্শিনীর কথায় সেই দুপুরেই চলে এসেছিল। দু’বান্ধবী একে অপরকে সব শেয়ার করে। হৃদি নিহালের ব‍্যাপারটা নিয়ে মন খারাপ করতে নিষেধ করে। অন‍্যদিকে দর্শিনীর মুখে আবিদ সম্পর্কে সবটা শোনার পর অবাক হয়েছিল। যে ম‍্যাজিস্ট্রেট নিয়ে এতোকিছু সেই ম‍্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে দর্শিনীর বিয়ে। অবশ্য হৃদি আগে থেকে জানতো দর্শিনী ম‍্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর উপর মা’রাত্মক ক্রাশড্। এজন্য সে অনেকটাই খুশি। হৃদি দর্শিনীকে সিঁড়ি বেয়ে নামাচ্ছিল।

এদিকে আবিদ একদৃষ্টিতে দর্শিনীর দিকে তাকিয়ে আলতো করে হাসছিল। দর্শিনীর ফর্সা শরীরে মেরুন জামদানি, গহনা হালকা সাজে দারুণ লাগছে। দর্শিনীর এই মা’রাত্মক আবেদনময়ী রূপে আবিদ ঘায়েল হয় প্রতিবার। কিন্তু দর্শিনীর মুখে সেই প্রাণোচ্ছল হাসিটা আজ আর নেই। আবিদের কিছু একটা ভেবে সন্দেহ হয়। যতক্ষণ না সে দর্শিনীর সঙ্গে এ ব‍্যাপারে কথা বলবে আবিদ সস্থি পাবেনা। আবিদ উপর উপর হাসিখুশি দেখালেও ভেতর থেকে দর্শিনীর জন‍্য দুশ্চিন্তা করছে।

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ২০

[ মাফ করবেন দেরী করার জন‍্য। আজ থেকে নিয়মিত পাবেন। ভুলত্রু’টি ক্ষমার নজরে দেখবেন রিচেক করা হয়নি। আগের মতো রেসপন্স করার অনুরোধ রইল পাঠকবৃন্দ 🧡]

প্রিয়দর্শিনী পর্ব ২১ ( শেষ অংশ )