প্রিয়োসিনী পর্ব ২২

প্রিয়োসিনী পর্ব ২২
নীরা আক্তার

নোহা অনেক টানা টানি করে ইসরাকের রিপোর্টস গুলো দেখে ফেলে।ইসরাক রাগে ফুসতে থাকে।
-কি দরকার এগুলিতে হাত দেওয়ার।
-দাভাই…
নোহা কান্না করে দেয়
-কিচ্ছু হয় নি আমার।হুদাই কাঁদিস কেন?
নোহার কান্না যেন থামছেই না।রাস্তায় একা একটা মেয়ে এমন হাউ মাউ করে কান্না করছে দেখে আসে পাশে লোক সব
জড়ো হয়ে যায়…

-নোহা প্লিজ থাম নাহলে টিউমারে না মরলেও লোকের গণ ধোলায়ে অবশ্যই মরবো।প্লিজ পা ধরি বোনটা আমার থাম
নোহা কান্না করেই যাচ্ছে
ইসরাক দুই হাত তুলে দাড়ায়,
–আমি মোটেও মেয়ে ধরা না এটা আমার বোন।আমি এরে বাড়ি নিয়া যাইতেছি।
ইসরাক কোনো রকমে পরিস্থিতি সামলে নোহাকে নিয়ে তিয়াশের চেম্বারে যায়।অনেক রোগী দেখে ইসরাক বাহিরে ওয়েট করতে চাইলেও নোহা ইসরাকের হাত ধরে নেটে হুরমুরিয়ে চেম্বারে ঢুকে যায়।
তিয়াশ তখন একটা মেয়ের পাল্স চেক করছিলো…..
নোহাকে দেখে হাত ছেড়ে দেয়।শুকনা ঢোক গিলে…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-তোরা এখানে?
-সুযোগ পেলেই মেয়ে ধরা লাগে!
-না মানে
নোহা নাক টেনে বলে উঠে
-আমার দাভাইয়ের কি হয়েছে?
-কোই কি হয়েছে?
নোহা লাফিয়ে গিয়ে তিয়াশের কলার চেপে ধরে
-কি হয়েছে মানে?আমার দাভাই যদি সুস্থ না হয় আপনার ডাক্তারির বারোটা বাজিয়ে দেবো।
ইসরাক বড় বড় চোখ করে নোহার দিকে তাকায়।
-নোহা এটা না তোর ভাইয়ের মতো।এমন কেউ করে?

তিয়াশ চোখের চশমা টা টেনে বলে,
-ভাই হতে যাবো কোন দুঃখে
ইসরাক ভ্রু কুচকে বলে উঠে,
-তাহলে কি হবি?
-না না কিছু না।
তিয়াশ ভয়ে চোখ পিট পিট করছে….পেশেন্ট ভয় পেয়ে চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
ইসরাক নোহাকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দেয়,
– কি হয়েছে শোন তো আগে….তারপর পাগলামো করিস।
তিয়াশ একটা শুকনা ঢোক গিলে বলতে শুরু করে,
–আমি এক্সপ্লেন করছি কি হয়েছে….

মানবশরীরে কিছু জিন আছে, যা টিউমাট হওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে। এদের বলে টিউমার সাপ্রেসর জিন। কোনো কারণে টিউমার সাপ্রেসর জিন যদি যথাযথ কাজ না করে, তাহলে ব্রেন টিউমার হয়ে থাকে।
ব্রেন টিউমার দুই ধরনের…
১. বেনাইন টিউমার, যা ক্যানসার নয় এবং
২. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যানসার–জাতীয় টিউমার।
-এতো এক্সপ্লেনেশন কে চাইছে?দাভাই ঠিক হবে তো?
তিয়াশ শুকনা ঢোক গিলে বলতে শুরু করে,

-বেনাইন টিউমার সাধারণতো মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে টিউমারে অস্ত্রোপচার করা হয়।তাতে ঠিক হয়ে যায় আর প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে মানে একটা মিনিমাম সাইজ পর্যন্ত এটা কোনো রকম অস্ত্রোপচার ছাড়ায় ঠিক হয়ে যায়।মানে রেডিও থেরাপি দিয়ে…..
সেক্ষেত্রে টিউমারের সাইজের উপর ডিপেন্ড করে কার কতোগুলো থেরাপি দরকার।যেমন কারো তিনটা লাগে কারো ৪ টা বা কারো পাঁচটা।
নোহা কপালে হাত দেয়….
-এতো কিছু বলার দরকার কি?দাভাইয়ের কি চাই তাই বলুন।কি করলে সুস্থ হবে?
-তুমি না ডাক্তার হবা?তাই জন্যই তো বললাম

নোহা কান্না করতে থাকে…
-ইসরাকের কিছু হবে না নোহা।আমি বলছি তো ও ঠিক হয়ে যাবে….আমার উপর একটু ভর্সা করো! আমি ভালো ডাক্তারের কাছে রেফার্ড করে দিবো…
নোহা ইসরাককে জড়িয়ে ধরে,
-কিছুটা নিশ্চিন্ত লাগছে…..
ইসরাক মুচকি হেসে নোহাকে আশ্বস্ত করে।
তারপর দুজনই চেম্বার থেকে বেরিয়ে যায়।তিয়াশ নোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেয়েটা যাওয়ার আগে একবার অন্তত পেছন ফিরে তাকাতে পারতো!

তিয়াশ টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখে নোহা ফোন ফেলে চলে গেছে।তিয়াশ ফোন হাতে নিয়ে বের হতে যাবেই তখনই নোহা আবার রুমে ফিরে আসে।
-আমার ফোন ধরলেন কেন?
-ধরলে কি হবে ঝালমরিচ?এমন করো কেন?ফোনই তো ধরলাম।দুদিন পর তো তোমাকে ধরবো)
-থাপরায়ে সব দাঁত ফালায়ে দিবো।
তিয়াশ আড় চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

-কি আছে ফোনে?
-বফের সাথে পার্সোনাল কনভার্সেশান আছে।আপনি দেখলে হার্ট এট্যাক করবেন।
নোহা তিয়াশের দিকে একপলক তাকায়ে বেরোতে নিলেই তিয়াশ পেছন থেকে বলে উঠে,
-মা বিয়ের জন্য প্রেশার দিচ্ছে….তোমার বাসায় কি বিয়ের কথা বলবো?বলো?
নোহা কোনো উওর দেয় না।হন হন করে বেরিয়ে যায়।
কি চমৎকার তার কথা বলার ভঙ্গি,কি চমৎকার তার চলন বলন,কি চমৎকার তার রাগ। সব মিলিয়ে পাগল করে দেবে আমায়…এই মেয়ে কি কখনো পটবে?
তিয়াশ মনে মনে কথাগুলো বলে হেসে দেয়

নোহা বাড়ি ফিরে ইসরাকের অসুস্থতার ব্যাপ্যারে সবাইকে সবটা জানিয়ে দিয়েছে।ইসরাক বারণ করলেও সে শুনতে নারাজ,
বাড়িতে কান্নার রোল পরে গেছে।ইসরাক অসুস্থ ভাবা যায়।জিনাত সিকদারের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা যেন ক্রমশ্য অকেজো হয়ে পরছে।বুক কাঁপছে তার।সন্তানের কিছু হলে মায়ের কলিজা ছোট হয়ে যায়….।
তিনি চোখের পানি ছেড়ে,ইসরাককে জড়িয়ে ধরেন।
ইসরাক মাকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করছে তেমন কিছু নয়!তেমন কিছু নয়।কে শুনে কার কথা।
তিনি কেঁদেই যাচ্ছেন তো কেঁদেই যাচ্ছেন।

–আম্মা আমার কিছু হবে না।তুমি দোয়া করো।তুমি তো মা।তোমার দোয়াশ সব ঠিক হয়ে যাবে।
জিনাত সিকদার ইসরাকের কথায় কিছুটা ভরসা পান।নিজেকে সামলে নিয়ে নামাজে দাড়িয়ে যান।
সকাল পেড়িয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে।সূর্যটা লাল আভা ছড়াচ্ছে…..
স্নেহা আজ বিকেলেই সিকদার বাড়িতে এসেছে।শিউলি পারভিন মেয়েকে কাছে টেনে নিতে চাইলে স্নেহা মাকে এড়িয়ে যায়।
মাকে কড়া স্বরে জানিয়ে দেয়

“এবাড়িতে আমি শুধু মাত্র বড়খালার কথাই এসছি।তুমি আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না”
শিউলি পারভিনের মুখটা ছোট হয়ে আসে।তিনি আর কথা বাড়ান না নিজের ঘরে চলে যান।
স্নেহাও তার জন্য বরাদ্দ রাখা ঘরে চলে যায়।
স্নেহা এ বাড়িতে আসার পর থেকে সবাইকে ইসরাকের জন্য দুঃশ্চিন্তা করতে দেখেছে। তার নিজেরও ভালো লাগছে না।মনটা বড় অশান্ত হয়ে উঠেছে।আবার স্নেহা আসার পর থেকে একবারও ইসরাককে দেখেনি।ইসরাকের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে সে ইসরাকের ঘরে যায়,দরজা ধাক্কা দিতেই ক্যাড় ক্যাড় শব্দ করে দরজা খুলে যায়।

–আসবো?
-হু
ইসরাক বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন চাপ ছিলো।স্নেহা ইসরাকের মাথার কাছে এসে দাড়ায়।ইসরাক উঠে বসে,
-কেমন আছো ভাইয়া?
স্নেহাকে দেখে ইসরাক প্রশ্ন করে,
-কখন এলি?
-এই তো।তুমি নাকি অসুস্থ।
-কে বললো?আমাকে দেখে কি তাই মনে হয় আমি অসুস্থ?
-নিজের একটু যত্ন নিলেই তো পারো।তাহলে অসুস্থ হতে না।
ভাবি কোথায় ভাবি কি তোমার দেখাশোনা করে না?
-তোর এতো ভাবা লাগবে না।দুদিনের জন্য এসেছিস দুদিন ঘুরা ফিরা কর।এইসবের চিন্তা করতে হবে না!
স্নেহা মাথা নিচু করে উওর দেয়,

-দুদিনের জন্য তো আসি নি।বড়খালা বলেছে..আমি এখন থেকে এখানেই থাকবো।
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায়
-মা বলেছে?
-কেন আমাকে তুমি থাকতে দেবে না?
-আশ্চর্য।আমি থাকতে দিবো না কেন?
স্নেহা একটু থেমে বলে উঠে,
-বড় খালা বলেছে কালই আমাকে এখানকার কলেজে ভর্তি করিয়ে দেবে।কাগজ পত্র কালেক্ট করতে একটু দেরি হলো না হলে মায়ের সাথেই আসতাম।তুমি কাল আমায় নিয়ে যাবে ভর্তি করাতে?আর তো কেউ নেই।
ইসরাক একটু বিরক্ত নিয়ে তাকায়।

কিন্তু কোনো উওর দেয় না।
স্নেহা উওরের আশা না করেই বেরিয়ে যেতে থাকে।
স্নেহা চলে যাওয়ার পর পরই নোহা ঘরে প্রবেশ করে…….!
হাতে নিবিড়ের দেওয়া ডিভোর্স পেপার।
-দাভাই
-হুম্ম
-নওরিনের ভাই কি বলেছে তোমায়?
-কেন?
-এটা দেখো!
-কি এটা?
– ডিভোর্স পেপার।
-ওহ্
-সই করবে তুমি?

-নওরিন কি চায়?
-তুমি নিজেই জেনে নাও
-লাভ নেই!
-কেন?
-ওর কোনো সেন্স আছে?ও নিজের ভালো বুঝে?
-নওরিন হলো নরম মাটির মতো।যেমন আকার দেবে তেমন হয়ে উঠবে।
-আমি এমন নওরিন চাই না।
-কেন?
-পরিস্থিতি অনুযায়ী মাঝে মাঝে শক্ত হতে হয়।
-তুমি কি ডিভোর্স দেবে?
-জানি না!
-ওর ভাই কি বলেছে বললে না তো?

-বাদ দে…..আমার আপাতোতো একটা ইচ্ছেই বাকি।নওরিনকে যোগ্য সন্মান দিয়ে এই বাড়িতে আনা।প্রথমবার মাথা নিচু করে এসেছিলো আর একবার মাথা উচু করে আসবে তারপর চলে যেতে চাইলে যাবে কষ্ট নেই।
-ও যাবে না।ও তোমার কাছেই থাকবে…
-যাবে!যেতে হবে ওকে।জীবনের পাঠ শিখতে হবে।ওর অনেক কিছু শেখা বাকি।যেদিন শিখবে সেদিন আমাকে ঘেন্না করবে।আমি তো কম অন্যায় করি নি।
-তুমি কি চাও
–আমি চাই নওরিন আত্নসন্মানের সাথে মাথা উচু করে বাচুক।তাখন যদি আমায় ঘৃনা করে করবে।দুঃখ নেই।
-করবে না!আমার বিশ্বাস।
-না করলে বুঝবো আমি পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবান পুরুষ!

সকাল থেকেই শিউলি পারভিন ইসরাকের পেছনে পড়ে আছে।মেয়েকে আজকেই কলেজে ভর্তি করাতে হবে।মিডট্রামের পর ভর্তি করানো অনেকটাই ঝামেলার কাজ যেটা অন্যকারো দ্বারা সম্ভব নয়।
খালামুনির এতো জোড়াজুড়িতে সে রাজি হয়ে যায়।
জিনাত সিকদার কি বলবে ভেবে পায় না।স্নেহা নামক ঝামেলাটা সে নিজেই ঘারে করে বয়ে এনেছে।বোনকে কথাও দিয়ে দিয়েছে সে স্নেহাকে রেখে দিবে।এখন কথা না রাখলে বোন তাকে ছেড়ে কথা বলবে না….,
সন্মানে লাগবে তার!

ইসরাক রেডি সেডি হয়ে স্নেহাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে কলেজের উদ্দেশ্যে।
কলেজের গেটের সামনে এসে গাড়ি দ্বার করায়।
স্নেহাকে নিয়ে সোজা চলে যায় অফিস রুমে।
কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার ইসরাকের পরিচিত হওয়ার ভর্তি নিয়ে বেশি বেগ পোহাতে হয় নি।
স্নেহাকে ট্রান্সফারের মাধ্যমে ভর্তি করানো যাবে।
ইসরাক স্নেহাকে নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে করিডোরে আসতেই স্নেহা চেচিয়ে উঠে,
-নওরিন ভাবি?
ইসরাক ভ্রু৷ কুচকে তাকায়,

নওরিন করিডোরের শেষ মাথায় দাড়িয়ে আছে।
স্নেহা নওরিনের কাছে যায়,
-কেমন আছো?
নওরিন মুখ বাকিঁয়ে উওর দেয়
– ভালো…তুমি?
-আমিও ভালো।
-তুমি এখানে কি করো?
-ভর্তি হতে এসেছি।ভাইয়া আমাকে এখানে……
নওরিন পুরো কথা না শুনেই ইসরাকের দিকে এগিয়ে যায়।
-এই যে শুনছেন…

-কি চাই?
–আপনার কি চাই?একে আপনি আপনার কলেজে ভর্তি করালেই পারতেন। আমার পিছু পিছু পাঠানোর কি দরকার?ওকে দিয়ে আমাকে মানানোর ধান্দা
ইসরাক বিরক্ত হয়,
-তোমার মতো গাধার মাথায় এইসবই আসবে।আমার কলেজে ভর্তি করালামনা কারণ তোমাদের মতো গাধাদের জন্য আমার কলেজ না।
নওরিন মুখ বাঁকায়।
বেশ মানে লেগেছে তার।

-খুব জানি আমাকে ফলো করার জন্য এরে পাঠাইছেন না?
-গাধা একটা….
নওরিন কিছু বলতে যাবে তখনই পেছন থেকে নিবিড় ডেকে ওঠে,
নওরিন থেমে যায়।
নিবিড় হনহন করে এসে ইসরাকের দিকে একপলক তাকায়।তারপর নওরিনকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে
-তোকে এখানে ক্লাস করার জন্য৷ এনেছি গল্প করার জন্য না!বলেছি না সিকদার বাড়ির কারো সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবি না।৷

নওরিন কিছু বলে না…..
ইসরাক অপলক তাকিয়ে থাকে নওরিনের যাওয়ার দিকে,
নিবিড় তাকে পছন্দ করছে না।না করারই কথা কেন করবে পছন্দ!সে তো তার বোনের যত্ন নিতে পারে নি!
ইসরাক জোরে নিঃশ্বাস নেয়,
স্নেহা হা করে তাকিয়ে আছে ইসরাকের দিকে,
-কি হলো চল
স্নেহা চমকে যায়।
-হুম্ম চলো!
-কাল থেকে কলেজ আসবো!
ইসরাক শুধু ছোট্ট করে হু বলে।

প্রায় সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে…..
বাড়ির সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত।ইশার কথা ভাবার বা শোনার মতো সময় কারোর নেই।ইশা সারা দিন একা একাই ঘরে কাটিয়ে দেয়।যা ইচ্ছে করে।ইচ্ছে না হলে কিছুই করে না।
ইশা কিছু একটা ভেবে মোবাইল আর পার্সটা নিয়ে বেরিয়ে পরে। অনেক ক্ষন হয়ে গেলো ইশা একা একা রাস্তা দিয়ে এলোমেলো হাটছে।সামনের বড় রাস্তা পার করলেই একটা এপ্যার্টমেন্ট।ঐ এপ্যার্টমেন্টে চার তলায় আমান থাকে।ফ্লাটটা মূলত আমানের বাবার ছিলো।যেকোনো অফিশিয়াল কাজ, মিটিং এখানেই করা হতো।মূলত এটা তেমন একটা ব্যবহার হতো না।বর্তমানে আমান আছে।এই এপ্যার্টমেন্টের সব লোকজনই হয় ইমতিয়াজ সিকদারের বিজনেস পার্টনার নয়তো বন্ধু,

অনেক খুঁজে খুঁজে সে আমানের এই ঠিকানা বার করেছে…..।কারন আমান কোথায় থাকে না থাকে সেটা কাওকেই জানায় নি।
ইশা নিচে দাড়িয়ে আমানকে ফোন করে।এক ঘন্টা যাবত সে ট্রাই করেই যাচ্ছে।কিন্তু আমানের কোনো রেসপন্স নেই।
ইশা নাছর বান্দা একটার পর একটা কল করেই যাচ্ছে…..
আমান বিরক্ত হয়ে কলটা রিসিভ করে…….

-কি চাই তোর?কেন বার বার জালাস আমায়?
-একটু কথা বলতে চাই
–আমি চাই না?
-সবাই আমায় ত্যাগ করেছে আমান ভাই তুমি করো না।নয়তো নিতে পারবো না।
-না পারলে নাই।
-প্লিজ

–আমি তো কখনো তোকে গ্রহনই করলাম না ত্যাগ করবো কিভাবে।
-একটু কথা বলবো তুমি নিচে আসবে?
-না
-আমি উপরে যাবো..?
-না
-কথা বলবো?
-কি কথা?
-বিয়ে করলে না কেন?
-এইসব বলবি বলে এসেছিস?
-হুম্ম

-ধর তোকে আমি বিয়ে করলাম তারপর তোকে গ্রহন না করে ছুড়ে ফেলে রাখলাম ঘরের এক কোণে।তারপর সারা জীবনে জন্য দূরে কোথাও চলে গেলাম…..তখন কি করে থাকবি?পারবি তো থাকতে?তার চেয়ে এটাই ভালো না তুই তোর মতো নতুন জীবন শুরু কর আমি আমার মতো….
-তুমি জীবন শুরু করতে চাও?
–আমি নওরিনকে ভালোবাসি।আমাদের অসম্পূর্ণ থাকা গল্পটাকেই ভালোবাসি।আপাতোতো কাউকে নিয়ে ভাবতে চাই না আমি।

-একটা মেয়ে সব সহ্য করতে পারে।শুধু পারে না নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা শুনতে।
-শুনতে হবে! যা সত্যিই তাই তো বলবো
-আমি মরে যাবো।
-,তোর ইচ্ছে….
আমান কল কেটে দেয়।
ইশা রাস্তায় বসে কান্না করতে থাকে।তারপর কি মনে করে ছুট লাগায় আমানের ফ্লাটের দিকে।
ইশাকে সবাই চেনায় সিকিউরিটি গার্ড আর তাকে বাঁধা দেয় না।সে গট গট করে উপরে উঠে যায়।
দরজার এসে সজোড়ে ধাক্কাতে থাকে।চেচামেচি করতে থাকে।ইশার বিহেভিয়ার দেখে আসে পাশের ফ্লাটের লোকজন জড় হয়।

আমান বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দেয়। ইশা আমানকে জড়িয়ে ধরে,
আমান সবার সামনে ইশাকে ছাড়িয়ে নিয়ে সজোরে চড় লাগায়।
ইশা ইমতিয়াজ সিকদারের মেয়ে।সবাই চিনে ইশাকে।এমন সিনক্রিয়েট দেখে
ইমতিয়াজ সিকদারকে কল করা হয়।

প্রিয়োসিনী পর্ব ২১

আমান পরিস্থিতি সামলাতে ইশাকে টেনে ভেতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়…….
উপস্থিত লোকজন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে!!!

প্রিয়োসিনী পর্ব ২৩