প্রিয়োসিনী পর্ব ২১

প্রিয়োসিনী পর্ব ২১
নীরা আক্তার

ইশা থমথমে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই স্তব্ধ।কেউ কোনো কথা বলছে না।
ইশা বেশ বুঝতে পেরেছে, বিয়েটা আর হবে না….আর যা কিছু ঘটেছে তা ইচ্ছে করেই ঘটানো হয়েছে।
ইশা ছুটে এসে আমানের কলার চেপে ধরে,
–আমান ভাই কেন করলে এমন?বিয়ে যখন করবেই না কেন স্বপ্ন দেখালে?তামাশা করার জন্য?কেন করলে বলো??
আমান ইশার হাত ছাড়িয়ে নেয়,।

–আমি কখনো তোকে সেই নজরে দেখি নি….আর তোর ক্ষতি করার কথা চিন্তাও করতে পারি না।
-দেখো নি কেন?আমি কি দেখতে খারাপ?সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোমার জন্য পাগল ছিলাম।অথচ সেই তুমি কখনো সেটা বুঝলে না…আমানভাই।
জিনাত সিকদার ইশাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়
পা থেকে জুতা খুলে দুইটা বাড়ি দেয়,
আমান আটকায়,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-বম্মা থামো। হয়েছে….এরকম করো না
-ইশা আমি তো অহংকার করতাম তোদের নিয়ে।তোদের মানুষ করা নিয়ে….তুই এটা কি করলি?
আমান মৃদু স্বরে বলে উঠে,
-ও ভুল করেছে ছেড়ে দাও।
-এই কথাগুলো যদি এক বছর আগে নিজে থেকে এসে বলতো মানতাম ভুল করেছে…কিন্তু আজকে…..!শুধু মাত্র ওর জন্য আজকে এই পরিস্থিতিতে আমরা দাড়িয়ে আছি।ও একটা মেয়ের সন্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে….!ছিহ্!
ইমতিয়াজ সিকদার চুপ করে দাড়িয়ে আছে,মেয়েকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না,মৌনতা কাটিয়ে বলে উঠেন,

-যা হবার হয়েছে বাদ দাও।
মাঝে শিউলি পারভিন চলে আসে,
-বুবু এভাবে সবার সামনে অপমান করার কি আছে?ও না হয় মজা করে একটু কথা বলেছেই সে আর এমন কি?ঘি আর আগুন পাশাপাশি রেখেছো তা তো একটু আকটু জ্বলবেই….এভাবে তিল কে তাল করার কোনো মানেই হয় না!
জিনাত সিকদার বোনকে ধমকিয়ে থামিয়ে দেয়,

-ঘটনা যদি শুধু নাম করে কথা বলা পর্যন্তই থাকতো তাহলে বুঝতাম ভুল করেছে….।কিন্তু
শুধু মাত্র ওর একটা ভুলের সূত্র ধরে সিকদার বাড়ির সন্মান মাটিতে মিলিয়ে গিয়েছে।আমান মরতে বসেছিলো।আমানের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।শুধু সিকদার বাড়ি কেন নওরিন….ওর জীবনটাও তো শেষ হয়ে গিয়েছিলো।ওর কতোটা অসম্মান হয়েছে তা মেয়ে হয়ে বুঝলো না।কিন্তুু ওকে দেখো ওর মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো অনুতাপ আছে?
তিনি একটু থেমে বলে উঠেন,

-খুব ছোট বেলায় বিয়ে হয়েছে আমার….গ্রামের সাধারন পরিবারের মেয়ে থেকে সিকদার বাড়ির বড় বউ হয়ে উঠা সহজ ছিলো না।নিজের সমস্ত সুখ,শখ আল্লাদ,ভালোবাসা সবকিছু বিসর্জন দিয়ে এবাড়ির বউ হয়ে উঠেছিলাম।সবার সব অত্যাচার সহ্য করে পরে ছিলাম শুধু মাত্র সন্তানদের মুখ চেয়ে।ওদের মানুষ করার জন্য….কিন্তু কোই আমি তো সন্তান মানুষ করতে পারলাম না।না ইসরাককে,না আমানকে আর না ইশাকে।ওরা কেউ মানুষ হয় নি।
আমান এক হাতে জিনাত সিকদারকে জড়িয়ে ধরে,

–আমি ইশাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বা ওকে সবার সামনে অপমান করার জন্য এইসব করি নি বম্মা।আমি শুধু চেয়েছি নওরিনকে একটু সন্মান দিতে।দাভাই তোকে যেই ছবিগুলো পাঠিয়েছিলাম সব ফেক আমি শুধু চেয়েছিলাম নওরিনের বিরুদ্ধে একটু স্ট্রং এভিডেন্স দেখাতে যাতে তুমি সবটা….আমি যা কিছু করেছি সব নওরিনের উপর রাগ থেকে করেছি।ইশা যতোটা দোষী তার চেয়ে অনেক বেশি অপরাধী আমি।আই আম সরি দাভাই!নওরিনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ নেই আমার!
ইমতিয়াজ সিকদার আমানের কাছে আসে।

–আমান আব্বা তুই কি আমার ইশাকে বিয়ে করবি না?
-সরি বড়আব্বু আমি কখনো ইশাকে সেই নজরেই দেখি নি।আর আমি শুধু নওরিনকেই ভালোবাসি।আমি জানি ও আমার দাভাইয়ের স্ত্রী, আমি ওকে যথেষ্ট সন্মান করি।আমি চেষ্টা করবো সব কিছু ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করতে।কিন্তু আপাতোতো আমি অন্য কাউকে আমার জীবনে জায়গা দিতে পারবো না।আমায় ক্ষমা করো।
ইশা কান্না করতে কারতে মেঝেতে বসে পড়ে।একবুক আশা নিয়ে কনে সেজেছিলো সে ভালোবাসার মানুষটা আজকে তার হবে হয়তো।কিন্তু সবটা শেষ হয়ে গেলো…..

আচ্ছা নওরিনের যেদিন বিয়ে ভেঙ্গেছিলো সেদিনও কি ওর এমন কষ্ট হয়েছিলো?
আমান নত মস্তিকে নওরিনের কাছে ক্ষমা চায়।
সবার উদ্দেশ্য জানিয়ে দেয়,
-আমার দ্বারা নওরিন অসম্মানিত হয় নি।তার সাক্ষী দাভাই…নোহাও জানে সবটা।আমার কথা বিশ্বাস না হলে ওদের থেকে জেনে নিও।
তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
ইশা ছুটে এসে ইসরাকে জড়িয়ে ধরে,

-দাভাই ওকে আটকাও আমি কিন্তু মরে যাবো ।
ইসরাক কেনো কথা৷ বলে না।হাত দিয়ে বোনের চোখ মুছিয়ে দেয়।
-অন্যায় করলে শাস্তি পেতে হয় ইশা।
-তুমিও বুঝি আমায় ত্যাগ করলে?
ইসরাক এবার কোনো উওর দেয় না।
ইশা ছুট লাগায় নিজের ঘরের দিকে।পেছন পেছন নোহাও যায়।ইশার মাথা ঠিক নেই যদি কিছু করে ফেলে……..।ইশার জন্য তার ভীষণ খারাপ লাগছে।এতোটা কষ্ট দেওয়া ঠিক হলো না।
ইসরাক একবার নওরিনের দিকে তাকায়।সে বিষ্ময়কর চোখে সব কিছু গিলছিলো।

তারপর সেও ইশার পেছন পেছন ছুট লাগায়।
জিনাত সিকদার নওরিনের সামনে এসে দাড়ায়,
-আমি ক্ষমা চাইছি….আমায় ক্ষমা করে দিও।তোমায় যথেষ্ট অসন্মান করেছি আমি।
নওরিন শ্বাশুড়িকে কিছু বলার আগেই তার পরিবারের লোক তাদের দু চার কথা শুনিয়ে দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যায়।নওরিন যেতে চায় না৷থেকে যেতে চায়।আসে পাশে ইসরাককে খুজতে থাকে৷কিন্তু সে ইশাকে নিয়ে ব্যস্ত। নওরিনের মেজো ভাই কিছুতেই তাকে এবাড়িতে রেখে যাবে না।
সিকদার বাড়ির জটিলতায় সে আর নিজের বোনকে পড়তে দেবে না।নিবিড়
বাবা মায়ের সাথে তিশা আর নওরিনকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
সে নিজে এখানে থেকে যায়।ইসরাকের সাথে কথা বলা প্রয়োজন।

গোটা একটা রাত কেটে গেছে।ভোর হতে চললো।নওরিন গোটা রাতটায় জাগা।ওবাড়িতে কি ঘটছে তা তার জানা নেই।নোহাকে ফোন করেছে কিন্তু নোহা কল রিসিভ করছে না।এদিকে ইসরাককেও কল করতে ইচ্ছে করছে না তার।
নোহাকে আরো কয়েকবার কল করে সে।কোনো রেসপন্স নেই।
নওরিন ছাদে চলে যায়।সবে ভোরের আলো ফুটছে।চারদিক সূর্যের সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়ছে।অনেক দিন হয়ে গেলো এমন ভোরে উঠা হয় না তার।
নওরিন কিছুক্ষণ ছাদে হাটা হাটি করে।একটু পর নওরিনের মেজো ভাই চলে আসে,
ভাইকে দেখে নওরিন মুচকি হাসি দে

-কেমন আছিস রিনি?
নওরিন জোর করে হাসার চেষ্টা করে,
-কি বলো ভালোই তো আছি।তুমি কাল কখন ফিরলে?ওবাড়িতে সব ঠিক আছে তো?
-ওবাড়ির কথা তোর চিন্তা করা লাগবে না আর এভাবে বলিস কেন?বলবি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি!
–আচ্ছা। তাই বলবো…..তুমি এতো সকালে উঠলে কেন?
-এমনি।তুই তো সারা রাত ঘুমাস নি।
-ঘুমিয়েছি তো।
নিবিড় নওরিনের দিকে তাকায়,

-না মানে একটু চিন্তা হচ্ছে ও বাড়িতে কি হলো… আই মিন সবাই ঠিক আছে কি না!
-রিনি,যদি আমি বাড়িতে থাকতাম আই সোয়্যার আমি ইসরাক সিকদারের সাথে এই বিয়েটা হতে দিতাম না।মা সবটা আমায় না জানিয়ে করেছে।আমার বোন কখনো আমার কাছে বোঝা ছিলো না ভবিষ্যতে হবেও না।
-বাদ দাও যা হবার হয়ে গেছে।
-নিজের ভালো নিজের সন্মান এগুলো নিয়ে কখনো ভাবিস না না?
নওরিন মাথা নিচু করে নেয়,
-তোর মাথা থেকে কলঙ্কের বোঝা তো নেমে গেলো এবার অন্তত সোজা হয়ে দাড়া।নিজের জীবন নিয়ে সিরিয়াস হো।আর কতো এভাবে চুপ চাপ পাথরের মতো জীবন কাটাবি?

–আমি তো সিরিয়াসই।
নিবিড় নওরিনের মাথায় একটা গাড্ডা মারে,
-যদি সিরিয়াস হতি এই সব কাহিনি আমার থেকে লুকোতি না সবাই কে সবটা বলে দিতি!
-কেউ বিশ্বাস করতো না!কোনো প্রমান ছিলো না আমার কাছে।
-এমনি বিশ্বাস না করলে, কিভাবে বিশ্বাস করাতে হয় সেটা করতি।নিজের সন্মান রক্ষা করার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়।
নওরিন মাথা নাড়ে।
–আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি দুই চার দিনের মধ্যে তোদের ডিভোর্স পেপারটা রেডি করিয়ে দিবে।
-(….)
-তোর কোনো মতামত আছে?
নওরিন চুপ করে থাকে…..

-ডিভোর্সের কাজ তো এতো দ্রুত হয় না আপাতোতো শুরু করি দেখা যাক কতোদিন লাগে।তুই পড়াশোনাটা শুরু কর বাদ বাকি যা করা লাগে সব করার জন্য আমি আছি।
নিবিড় আর কোনো কথা বাড়ায় না নিচে চলে যায়।নওরিন সেখানেই ফোন হাতে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে,
-মন সায় দিচ্ছে না।।।
আজ নিবিড় আর তিশার…..তিশার বাবার বাড়িতে যাওয়ার কথা। একটু বেলা হলে তিয়াশ এসে তাদের নিয়ে যাবে।নিবিড়,নওরিনকে রেখে যেতে চায়না। কাল এতো বড় কান্ড হওয়ার পর নওরিনকে একা ফেলে সে যাবে না।
তিশা নওরিনকেও সাথে নিয়ে নেয়।

প্রায় দুইদিন কেটে গেছে…নওরিনের সাথে কারো কোনো যোগাযোগ নেই।ও বাড়ির কোনো খবরই নওরিন পাচ্ছে না।
প্রায় দুদিন পর তিয়াশ বাড়ি এসেছে।বাড়িতে জামাই মেয়ে আসায় তারা ছোট খাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।তিয়াশ সেজন্যই বাড়ি এসেছে।নয়তো সে নিজস্ব ফ্লাটে থাকে।কাজের প্রেসারে তেমন একটা বাড়ি আসা হয় না তার।
নওরিন তিয়াশকে দেখে এগিয়ে যায়।
-কেমন আছেন ভাইয়া?
তিয়াশ নওরিনকে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়

-তুমি এখানে কি করো?
–আসলে ভাইয়া ওবাড়িতে আর যেতে দেয় নি।
-ওহ্।
-ওনি কেমন আছেন?ও বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো?
তিয়াশ ভ্রু কুচকে তাকায়,
-তুমি কিছু জানো না?
-না তো।
-ইশা সুইসাইড এটেম্পড করেছিলো। বারাবাড়ি কিছু হয় নি চিন্তা করো না সব ঠিক আছে।
নওরিন মাথা নাড়ে,
-ইসরাকের সাথে কথা বলো নি তুমি?
-ফোন করেছিলাম ধরে নি।
তিয়াশ একটা জোরে নিঃশ্বাস নেই,

–আমি বলবো নে….কথা বলতে।লোকটা একে বারে ঘাড় ত্যাড়্যা।কখন কি মাথায় ঢোকে আল্লাহ মাবুদ জানে।
নওরিন চেচিয়ে উঠে,
-কিছু বলার দরকার নাই।আমিও কথা বলবো না।
তিয়াশ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।নওরিন তো এমন ছিলো না!সিকদার বাড়িতে গিয়ে নওরিন ও এমন হয়ে গেছে।তিয়াশ মাথা চুলকায়!
সিকদার বাড়ির এই পাগলগুলোর সাথে চলা ফেরা করতে সেও না জানি কবে পাগল হয়ে যায়।
এরকমই এক পাগলের সাথে সে সংসার করবে।ভাবতেই তার বুক কেঁপে উঠে,
নওরিন সেখান থেকে চলে যায়।

ইশাকে বাড়িতে আনা হয়েছে।সেদিন ইশা হাতের শিরা কেটে আত্নহত্যা করার চেষ্টা করেছিলো।নোহা আর ইসরাক এসে বোনকে বাঁচিয়ে নেয়।ঠিক সমসয় হাসপাতালে ভর্তি করায় তেমন একটা সমস্যা হয় নি।
জিনাত সিকদার তিনদিন যাবত মেয়ের সাথে কথা বলে না।
ইশাও তেমন একটা ঘর থেকে বার হয় না।নোহা বার কয়েক কথা বলার চেষ্টা করলে ইশা এড়িয়ে যায়।
নোহার উপর তার ভিষন রাগ।
জিনাত সিকদার বিছানায় বসে আছেন।শরীরটা তার ভিষন খারাপ।একদিকে মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া আঘাত অন্যদিকে ইসরাকের শরীরটাও ভালো নেই।সব মিলিয়ে তিনি পাগল প্রায়।
বোন শিউলি পারভিন এসে বসেন তার পাশে,

-বুবু
-কিছু বলবি?
-হো,বলছিলাম বউ তো ভালো মেয়ে খারাপ না আমরা তারে ভুল বুঝছি।
-কার কথা বলিস?
-কেন নওরিন…ইসরাকের বউ!
জিনাত সিকদার ভ্রু কুচকে তাকায়,
-কি বলতে চাস?
-ভেবছিলাম নওরিন তো ভালো মেয়ে তাহলে শুধু শুধু তাড়াইবা কেন?তার চেয়ে বরং নওরিনকে এ বাড়িতে নিয়ে আসো। না মানে বলছিলাম শুধু শুধু ইসরাকের সাথে স্নেহার বিয়ে দিয়ে কি হবে।
জিনাত সিকদার বিরক্ত নিয়ে তাকায়,তিনি বেশ বুঝতে পেরেছেন বোন কি বলতে চাইছে

–আমার ইসরাকের কোনো অসুখ টসুখ হয় নি।ও হয়তো রাগের মাথায় সব বলেছে।
-তুমি নিশ্চিত বুবু?রিপোর্ট গুলা দেখছিলা?
জিনাত সিকদার মাথা নাড়ে।
“নাহ সেদিন উত্তেজনায় আর রাগে সেগুলো দেখা হয় নি।তার ধারনা ছেলে হয়তো রাগ করে কথা গুলো বলেছে”
-তুই ঘর থেকে যা।আমার ভালো লাগছে না…
-বলছিলাম কি যদি আমানের সাথে স্নেহার বিয়েটা দেওয়া যেত…..
জিনাত সিকদার ধমক দেয়,

-স্নেহাকে রাখতে চাই লে রেখে দে।এর সাথে নয়তো ওর সাথে বিয়ে করিয়ে রাখতে হবে কেন?ছোট বেলায় আনতে দেই নি তোর ভালোর জন্য। ভেবেছিলাম তোর ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবো।কিন্তু তুই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমাদের সংসারেই আগুন লাগানোর চেষ্টা করলি….আমানের নামও মুখে আনবি না।আমানের থেকে যতো দুরত্ব রেখে চলবি ততোই ভালো।আমান বা কেউ যদি জানে ওর বাবা মায়ের মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী।

তোকে আর তোর মেয়েকে এখানেই শেষ করে দেবে।
আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নি!ভুল করে ফেলেছি।
শিউলি পারভিন আঁচলে মুখ ঢেকে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
জিনাত সিকদারের বুক কাঁপছে।তার সাত রাজার ধন ইসরাক।তার কিছু হলে সে মারা যাবে।ইসরাকের বলা কথাটা সেদিন আমলে না নিলেও এখন তার প্রচুন্ড ভয় করছে।

ঐ ঘটনার পাঁচদিন পর নোহা নওরিনের সাথে দেখা করতে এসেছে।নোহাকে দেখে নওরিন বেশ খুশি হয়।
-তোমরা তো আমার কথা ভুলেই গেলে….কতোবার ফোন করেছি জানো?
নোহা একটু দম নিয়ে উওর দেয়
-কি করে ধরবো বলো তো।বাড়িতে এতো কান্ড হয়ে গেলো!
-একটা ফোন করতে পারো নি?এতো ব্যস্ত ছিলে?
-না মানে…দাভাই বারণ করেছে।
-ওহ্ তা কি করেছি আমি?এখনো কি আমাকে ওনি অপরাধী মনে করেন?
-না মানে?

-ইশা কেমন আছে?
-স্বার্থক বন্ধু তুমি।এখনো ইশার খবর নিচ্ছো?
-ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
-ওকে ওকে। ভালো আছে।হয়তো অনুশোচনা হচ্ছে নয়তো সব ভঙ্গি করছে।
নোহা নওরিনের দিকে একটা ল্যাগেজ এগিয়ে দেয়।
-তোমার জামা কাপড়, বিয়ের গয়না গাটি যা যা দেওয়া হয়েছিলো সব কিছু আছে এখানে।দাভাই পাঠিয়েছে।
-কেন পাঠিয়েছে?
নোহা মাথা নিচু করে নেয়,
নওরিন অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে,
-আমাকে কি ঐবাড়িতে আর নেবে না?
নোহা অবাক হয়ে বলে উঠে,

-তুমি এখনো ও বাড়িতে যেতে চাও?এতো কিছুর পরও দাভাইয়ের সাথে সংসার করতে চাও??আমি হলে কারো মুখও….নোহা থেমে যায়।একটা শুকনা ঢোক গিলে…..
নওরিন কোনো উওর দেয় না……
নিবিড় ঘরে আসে,
নোহার দিকে ডিভোর্স পেপার এগিয়ে দেয়।
-তোমার দাভাইকে বলো এটাতে সই করে দিতে।
নোহা অবাক চোখে নওরিনের দিকে তাকিয়ে থাকে,

–আমার সাথে ইসরাকের কথা হয়ে গেছে।বসতে চাইলে বসো।না হলে যাও।সমস্যা নেই
নোহা আর কথা বাড়ায় না।নওরিনকে আস্তে করে জড়িয়ে ধরে।বিদায় নেয়।
ইসরাক নিচেই দাড়ানো ছিলো।নওরিন বাহিরের জ্বানালা দিয়ে ইসরাককে দেখে।গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।ইসরাক একবার জ্বানালার দিকে তাকাতেই নওরিনের সাথে চোখাচোখি হয়।ইসরাক চোখ ফিরিয়ে নেয়।
আর তাকায় না।
নোহা আসার পর ইসরাক নোহাকে নিয়ে সেখান থেকে রওনা দেয়।নওরিনের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,
-এমন অসভ্য লোকের জন্য। এতো কষ্ট হওয়ার কোনো মানেই হয় না!

ইসরাক চুপ চাপ গাড়ি চালাতে থাকে।
নোহা পাশে বসে আছে,
-দাভাই তুমি এমন করছো কেন?
-কি করলাম?
-নওরিন এটা ডিসার্ভ করে না।
-কোনটা?
-তুমি যেই বিভেব করছো সেটা..নওরিন তো ভিকটিম। ওর সাথে অন্যায় হয়েছে আর আমরা অন্যায় করেছি।আমরা তো ওকে সিম্প্যাথি দেখাবো?
–আর কতোদিন অন্যের সিম্পাথি নিয়ে বাঁচবে?এবার তো অন্তত মেরুদণ্ড সোজা করে দাড়ানো উচিত!
-কি বলো?

-ওর আমাদের থেকে দূরে থাকায় ভালো।
-রিয়েলি
-হুম্ম।বাড়ি যাবি?
-কেন তুমি কোথাও যাবা?
-হ্যা….তিয়াশের চেম্বারে যাবো!
নোহা মিন মিন কর বলে উঠে,
-ঐবদ লোকটার ওখানে তোমার কি কাজ?
ইসরাক ভ্রু কুচকে তাকায়…

প্রিয়োসিনী পর্ব ২০

-না মানে কেন!
-এমনি!!
নোহা গাড়িতে এটা সেটা ঘাটাঘাটি করতে করতে ইসরাকের রিপোর্টস গুলো হাতে পায়।ইসরাক দুম করে গাড়ি থামিয়ে দেয়!
-ওগুলো ধরিস ক্যান?

প্রিয়োসিনী পর্ব ২২