প্রিয়োসিনী পর্ব ২৪

প্রিয়োসিনী পর্ব ২৪
নীরা আক্তার

মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তার প্রিয়ো কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকে আমান। সম্পর্ক গুলো বড্ড অগোছালো হয়ে গেলো।যাকে মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসেছে…সে আর কখনো তার হবে না।হারিয়ে গেলো।
বাবা মায়ের মৃত্যুর পর যাকে জড়িয়ে বেঁচে থাকা সেই বড় আব্বুকেও সে আজকে ত্যাগ করলো।

আর যাকে জীবনের চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকতে দিতে চায় নি সেই ইশাই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই জীবনের সাথে জড়িয়ে গেলো।
সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।তার কি করা উচিত এখন? এভাবে সব কিছু ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া উচিত নাকি সব ভুলে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া উচিৎ ইশার দিকে?
আমান কান্না করে কূল পায় না।পেছন থেকে কাঁধে এক শীতল স্পর্শ পেয়ে আমান নড়ে চড়ে বসে। আমান পেছন ফিরে তাকায়,ইসরাক দাড়িয়ে আছে।
-দাভাই
-আমার মন বলছিলো তুই এখানেই থাকবি
-বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে।
-ভালোবাসা এমনই হয় ভাই।ভালোবাসা বড্ড পুড়ায়।পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।যে ভালোবাসার আগুনে যতো জ্বলে সে ততোটাই খাঁটি হয়।আমি বলছিনা তোকে ইশা কে ক্ষমা করে দে অথবা তোর মনে বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে মেনে নে।শুধু এতটুকু বলবো…..নিজেকে কষ্ট দিস না।আমাদের কষ্ট দিস না।সময় সব ঠিক করে দেয়।বাড়ি ফিরে চল।
আমান ইসরাককে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

[[ভালোবাসা কি অপরাধ? না কি ভালোবাসার মানুষকে চাওয়াটা অপরাধ?
সত্যিই বলতে এর মাঝে কোনোটায় অপরাধ নয়।অপরাধ হলো ভালোবাসাকে মোহ বানিয়ে ফেলা।ভালোবাসার প্রভাবে ঠিক ভুল ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য ভুলে যাওয়া।
মোহ মায়ায় জড়িয়ে ভুল পদক্ষেপ নেওয়া।]]

জিনাত সিকদার আকাশ বাতাস উজাড় করে চেঁচিয়ে উঠে।একটা মেয়ে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে শরীর থেকে।বৃষ্টির পানি সেই রক্ত ধুয়ে মুছে সাফ করে দিচ্ছে।চারপাশ রক্তা রক্তি হয়ে আছে।
তার ঘরটা দুই তালায় হওয়ার তিনি উপর থেকে স্পষ্ট সবটা দেখতে পাচ্ছেন।
জিনাত সিকদার চক্কর খেয়ে নিচে পড়ে যান।ইমতিয়াজ সিকদার উঠে এসে জিনাত সিকদারকে ধরে।তিনি স্বামীকে আঙ্গুল উচিয়ে বাহিরের দিকে দেখান।

“আমার মেয়ে”
ততোক্ষণে আশে পাশে থেকে ওয়াচম্যান আর একজন সার্ভেন্ট ছুটে এসেছে ইশার কাছে। সবাই হায় হায় করতছে।চেচিয়ে ডাকছে বাড়ির লোকজনদের।ইমতিয়াজ সিকদার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুট লাগায় নিচে।
ইশার কাছে যেতে হবে।ইমতিয়াজ সিকদার দ্রুত ছুটে এসে ইশার মাথা উঁচু করে ধরে…মেয়ের রক্ত মাখানো শরীরটা বুকে জড়িয়ে গগন কাঁপানো চিৎকার দেয়।ইশা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
ততোক্ষণে ছোট চাচা ও ছুটে এসেছে।

-ভাইজান কি করেন।এখন এইসবের সময় না।ওরে হাসপাতালে নিতে হবে,
-মেয়েটা কি আমার মরে যাবে?
-এইসব পড়ে ভাববেন আগে হাসপাতালে নিতে হবে চলুন।ওরে তুলুন
-শরীরে জোড় পায় না।কি করে তুলবো।
-আমি ধরি?
-নাহ্ আমি পারবো
ইমতিয়াজ সিকদার ইশাকে কোলে তুলে নেন।গাড়িতে বসিয়ে রওনা হন হাসপাতালের উদ্দেশ্য। এ্যাম্বুলেন্স ডাকলে দেরী হয়ে যাবে।

সামনের সিটে বসে ছোট চাচা গাড়ি চালাচ্ছে আর পেছনের সিটে বসে ইমতিয়াজ সিকদার ইশাকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে।
বার বার দোয়া করছেন আল্লাহর কাছে
“চাইলে আমার প্রাণ নিয়া নাও আমার মেয়েটারে বাঁচিয়ে দাও খোদা…..সন্তানের লাশ কাধে নেওয়ার মতো জোড় আমার শরীরে নাই।আমি মৃত্যু চাই না”
ছোট চাচার চোখ দুটোও ছল ছল করছে।

নওরিন জিদ দেখিয়ে মেজো ভাইকে নিয়ে রওনা হয়েছে সিকদার বাড়ির উদ্দেশ্যে।ভাই আসতে না চাইলে একরকম জোর করেই ধরে এনেছে সে।এতো রাতে তো আর একা আসা যায় না। ফোনে সে স্পষ্ট ইশার চিৎকার শুনেছে।
ইশা মেয়েটা কষ্ট একেবারে সহ্য করতে পারে না।সমস্যা দেখলেই পালাই পালাই করে….।এতো দূর্বল হৃদয়ের মানুষদের প্রেমে পরা বারণ।

ঘড়িতে তখন একটা বেজে কুড়ি মিনিট।সিকদার বাড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে নওরিন আর নিবিড়।
দারওয়ান দরজায় নেই।বিধায় ভেতরে জেতে পারছে না তারা।
একটু পর কোথা থেকে দারওয়ান ছুটে আসে।নওরিনকে দেখে ব্যস্ত হয়ে উঠে,
-বৌমা সর্বনাশ হয়ে গেছে।ইশা মা ঝাপ দিছে।
নওরিন বেশ আন্দাজ করতে পেরেছিলো এমন কিছুই হবে।
বাকি কথা শেষ করার আগেই নওরিন বাড়ির ভেতর ছুট লাগায়।

গোটা বাড়িটা থমথমে হয়ে আছে।কোনো রকমে ছুটে দুইতালায় যেতেই শুনতে পায় জিনাত সিকদারের ঘর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।
নওরিন দ্রুত পায়ে শ্বাশুড়ির ঘরে যায়।
জিনাত সিকদার বিছানায় বসে কান্না করছে।পাশে শিউলি পারভিন বসা।স্নেহা বড় খালাকে ধরে রেখেছে।
নওরিন শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে দাড়ায়।জিনাত সিকদার চোখ মুছে নওরিনের হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়,
– বউমা আমার মেয়েরে তুমি অভিশাপ দিও না।আমি জানি ও অনেক অন্যায় করেছে….তবুও বলছি মা হয়ে বলছি অভিশাপ ফিরায়ে নাও।
পাশ থেকে শিউলি পারভিন চেচিয়ে উঠে,

-এই মেয়ের হায় লাগছে…..
স্নেহা মাকে ধমক দেয়,নওরিন ভ্রু কুচকে তাকায়,
স্নেহা পাশ থেকে বলে উঠে,
-ইশা ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে।অবস্থা খুব খারাপ।
নওরিন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
-ইশা আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ আম্মা।আমি বাবা মাকেও যেগুলো কখনো বলতে পারিনি সেগুলো ইশাকে বলেছি।আমি কখনো ইশাকে অভিশাপ দেয় নি দেবোও না।যে যেমন কর্ম করেছ সে জীবনে তেমন ফল পাবে সেখানে আমার কোনো হাত নেই তা কেবল সৃষ্টি কর্তার হাতে।আমি যা পারি তা হলো ক্ষমা করতে।
আমি হাসপাতালে যাচ্ছি।আমায় ঠিকানাটা দিন।

জিনাত সিকদার মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে।নওরিনের কথার মাঝে ইশার জন্য ব্যকুলতা আছে।সে ইশার ভালো চায়।এতোকিছুর পরও চায়।
স্নেহা ঠিকানা দেয়।নওরিন যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।জিনাত সিকদার বোনকে ছাড়িয়ে টলমল পায়ে নওরিনের হাত ধরে,
-আমারে নিয়া যাবা?আমি এখানে শান্তি পাবো না।
শিউলি পারভিন আতঙ্কিত চোখে বলে,
-ও তোমারে সামলাতে পারবে?আমি যাবো
জিনাত সিকদার টলমল চোখে নওরিনের দিকে তাকায়,

-বৌমা তো মেয়ের মতো হয়,মেয়ে মাকে না সামলাতে পারলে আর কে পারবে…..!
শিউলি পারভিন হৃদয়ে এক অদ্ভুত আতঙ্ক অনুভব করে।
নওরিন জিনাত সিকদারকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।সঙ্গে ছোট চাচী আর নিবিড়।
জিনাত সিকদার ক্ষণে ক্ষণে নওরিনের দিকে তাকাচ্ছে। থেকে থেকে নওরিনের গাল বেয়ে পানি পরছে।নওরিন হাতের উল্টো পাশ দিয়ে সেটা মুছে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
তারা যখন হাসপাতালে পৌছান তখন অলরেডি ইশার ট্রিটমেন্ট শুরু হয়ে গেছে।
ইমতিয়াজ সিকদারের সারে শরীরে রক্ত লেগে আছে নিথর হয়ে একটা চেয়ারে বসে আছেন তিনি।পাশে ছোট চাচা দাঁড়ানো।

জিনাত সিকদার ছুটে গিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরেন,
–আল্লাহর দোহাই লাগে আমার মেয়েকে বাঁচান!
তিনি কোনো উওর দেন না।
ততোক্ষণে ইসরাক আর আমানও সেখানে পৌছে গেছে।আমান ইমতিয়াজ সিকদারের পা জড়িয়ে ধরে,
–আমায় ক্ষমা করো বড় আব্বু!
ইমতিয়াজ সিকদার আমানকে বুকে টেনে নেন।

[সবাই এখানে পরিস্থিতির স্বীকার। এখানে কেউ অপরাধী নয়।যে যার হৃদয়ের তীব্র আকাঙ্কাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে একটার পর একটা ভুল করেছে।দোষ করলে সবাই করেছে।না করলে কেউ করে নি।এখানে সবাই যে যার মতো অপরাধী আর কেউই অপরাধী নয়]
একটু পর ডাক্তার আসে।জানায় তাদের রক্তের প্রয়োজন।এতো রাতে রক্ত এ্যারেন্জ করা কঠিন।
নওরিন জানায় সে রক্ত দেবে।তার আর ইশার ব্লাড গ্রুপ সেম।তবে অনেকটা রক্তের প্রয়োজন শুধু নওরিনের একার রক্তে হবে না।আমান উঠে দাড়ায়।সে ইউনিভার্সেল ডোনার।তার রক্ত ও ইশা নিতে পারবে

একটা ব্রেন্ঞ্চীতে আমান আর নওরিন পাশা পাশি বসে আছে।পাশাপশি বললে ভুল হবে দুজনের মাঝে যথেষ্ট দুরত্ব আছে।একটু আগেই তারা ইশাকে ব্লাড দিয়ে এসছে।
নওরিন আমানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
-একটা কথা বলবো?
আমান নওরিনের দিকে এক নজর তাকায়।চোখ ফিরিয়ে নেয়,গলা কাঁপছে তার।
-কি বলবে বলো!
-আপনি ইশাকে বিয়ে করেছেন?
আমান মাথা নিচু করে উওর দেয়,

-হু
-তারপর ইশাকে একা ফেলে পালিয়ে গেলেন কেন?
-আমি চাই নি?
-কেন?
-আমি ইশাকে ভালোবাসি না।
-তাহলে কাকে বাসেন আমাকে?
আমান মাথা নিচু করে নেয়,কোনো উওর দেয় না….
-সত্যি করে একটা কথা বলুন তো আপনারা পুরুষমানুষ কিসের প্রেমে পরেন?শুধু কি রূপে?
-মানে?

-আমি যতোটুকু জানি আপনাদের সম্পর্ক ছিলো।টানা একবছর চুটিয়ে প্রেম করেছেন….
-আমি জানতাম না…
-আমি তো কেবল একটা অব্যয়ব ছিলাম মাত্র।আপনার হৃদয়কে সন্তুষ্টি তো ইশা দিতো।যার সাথে হৃদয়ের সব ব্যকুলতা ভাগাভাগি করেছেন।যার সাথে আপনার সমস্ত অনুভূতিগুলোকে এক সুতই গেথেছেন সেটা তো ইশা ছিলো!আমি নই….তাহলে কেন আমি নামক মিছে মায়ায় ভাসছেন?
-তোমার রাগ হয় না?
-কার উপর?
-ইশার উপর

-হুম্ম হয় তো।আমার সবার উপর রাগ হয়।আপনার উপরও।আমি না অদ্ভুত একটা চরিত্র।আমার সাথে কে ন্যায় করলো আর কে অন্যায় করলো তার হিসাব কখনো রাখি নি। রাখলে হয়তো আজকে খুশি হতাম।তবে আমি মনে করি ক্ষমার চেয়ে উপরে কিছু হতে পারে না,রাগ অভিমান কোনো কিছু নয়।
-আমার ভীষণ অপরাধ বোধ হয়।
-কেউ শাস্তি দেওয়ার চেয়ে নিজে নিজে অনুতাপের আগুনে পুড়ে নিজের ভুল গুলোকে শুধরে নেওয়া অধিক শ্রেয়।শাস্তি দেওয়ার জন্য তো একজন মালিক আছেনই।

আমান মাথা নিচু করে থাকে।লজ্জায় আর অপরাধ বোধে মাথা তুলতে পারছে না সে।
নওরিন সেখান থেকে উঠে ইসরাকের কাছে যায়।ইসরাক একটা চেয়ারে বসে দেয়ালে মাথা লাগিয়ে বসে আছে। বৃষ্টিতে ভেজা কাপড়গুলো শরীরেই অনেকটাই শুকিয়ে গেছে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে।
নওরিনের কি মনে করে ওড়না দিয়ে ইসরাকের মুখটা মুছিয়ে দেয়।
ইসরাক চোখ তুলে তাকায়,চোখ দুটো লাল হয়ে আছে,

-ঠিক আছেন
-উহু
–আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আশা করি ইশা ঠিক হয়ে যাবে।
-তুমি চাও।তুমি চাইলে আল্লাহ ঠিক শুনবে
-কেন?
-তুমি সবার থেকে আলাদা নওরিন।খুব স্পেশাল। কতো সহজে সব কিছু গ্রহন করতে পারো।
-আমরা সবাই স্পেশাল। সবাই সবার থেকে আলাদা।কারো সাথে কারো মিল নেই।
নওরিন ইসরাকের পাশে গিয়ে বসে।ইসরাক নওরিনের কাঁধে হাত রাখে।

–আপনার জামা কাপড় ভিজা
-হু
-ঠান্ডা লাগবে
-লাগবে না।
-একটা টাওয়াল এনে দিই
-লাগবে না বসে থাকো।
নওরিন আর কিছু বলে না।
টানা ছয় ঘন্টা জীবনের সাথে যুদ্ধ করে ইশা এখনো বেঁচে আছে।কথায় বলে জন্ম মৃত্যু বিয়ে সব আল্লাহর হাতে।এখানে কারো স্বেচ্ছাচারিতায় কিছু হয় না।মালিক যা চাইবে তাই হবে।
তিয়াশ অসহায় মুখ করে অপারেশন থিয়েটার থেকে বার হয়।ইসরাক, নওরিন আর আমান সেখানেই বসা ছিলো।
বাঁকিদের তিয়ার ওয়েটিং রুমে জায়গা করে দিয়েছে।
তিয়াশকে দেখে তিনজনই ছুটে যায়,

-ইশা বেঁচে আছে তো(ইসরাক)
কথাটা বলার সময় গলা কাঁপছিল তার।চোখের কোণে জল টলমল করছে।এই বোধয় বেরিয়ে পড়বে।
তিয়াশ জোরে দম ছেড়ে জানায়,
-বেঁচে আছে তবে..
-তবে কি?
–আউট অফ ডেঞ্জার বলতে পারিস।প্রাণে মরেনি।কিন্তু ও খুব বড় ভুল করে ফেল্লো।মাথায় আঘাত পেয়েছে।নার্ভগুলো তেমন কাজ করছে না।আর বাঁকিটা জ্ঞান ফিরলে বলতে পারবো।
ইসারাক কেঁদে দেয়,

-বেঁচে আছে এটাই তো অনেক।অন্তত বোনের লাশটা কাঁধে নিতে হবে না।
তিয়াশ ইসরাকের কাঁধে হাত রাখে।তারপর চেম্বারে চলে যায়।
আমান অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে ইসরাকের দিকে
-দাভাই সব আমার জন্য হলো তাই না
ইসরাক মুখটা স্বাভাবিক করে উওর দেয়,
-ইশার ঘটনায় তোর কোনো দোষ নেই আমান।
-আমি জানি আমি ভুল করেছি।
নওরিন চেচিয়ে উঠে,
-কে ভুল করলো, কে ঠিক করলো এই সব বাদ দিন না।আর কতো ঠিক ভুলের হিসাব করবেন?আপাতোতো ফ্রেস হবেন চলুন।
ইশা ঠিক হয়ে যাবে।

প্রায় দুদিন পর ইশার হুস ফিরে।চোখ খুলেই সে আমানকে দেখতে পায়।আমান সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে।
ইশা চোখ পিট পিট করে তাকায়।শরীরে ভীষন যন্ত্রণা তার।এতো শত যন্ত্রণার মাঝেও আমানকে দেখে সে মুচকি হাসি দেয়।পৃথিবীর সব সুখ যেন আমানের মুখে লুকিয়ে আছে। এটাই তীব্র ভালোবাসার শক্তি
নোহাও পাশেই ছিলো।ইশাকে তাকাতে দেখে সে চেচিয়ে উঠে,
-শাঁকচুন্নি, আর কতো ইমোশনাল টর্চার করবি আমাদের উপর?
ইশা মুখ কালো করে তাকায়

-ভয় নেই আমিও ভুত না তুইও ভুত না।আমরা দুইজনই বেঁচে আছি।
নোহা জোরে কথা বলায় আমান লাফিয়ে উঠে,ইশার সাথে চোখাচোখি হয়,
নোহা একটুও না থেমে বলতে থাকে,
-জীবনে সব কিছু পেতে হবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয় নি ইশা।ভুল করলে শাস্তি পেতে হবে।অন্যায় করলে কাছের মানুষগুলো শাসন করবে এটাই স্বাভাবিক। কখনো কখনো তো অন্যায় না করেও কথা শুনতে হয়।সব কিছু গায়ে মাখলে বেঁচে থাকা যায় না।মৃত্যু যদি সব কিছুর সমাধান হতো তাহলে শত শত মানুষ রোজ মৃত্যুকেই বেঁছে নিতো।সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতো না।এতো অল্পতে ভেঙ্গে পরলে চলে না ইশা।
নওরিনকে দেখ কতো কিছুর পরও দিব্যিই আছে।তোর জন্য সব ফেলে ছুটে এসেছে।তোকে নিজের শরীরের মূল্যবান রক্তও দান করল।

আমান নোহাকে থামিয়ে দিতে চায় কিন্তু নোহা থামে না।অনড়গল বলেই যাচ্ছে সে,
-আমাকে দেখ আমি আজও অন্ধকার ভয় পাই আজো পুরুষ মানুষ দেখলে আমার গায়ে কাটা দেয়।আজও লোকটাকে মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে চেচিয়ে উঠি।আমি কি মরে গেছি ইশা?নাকি নওরিন মরে গেছে?
নোহার কথার মাঝে বা হাত ঢুকিয়ে দেয় তিয়াশ,
–আমি জানি আপনি অনেক সাহসী। কিন্তু আমি অনেক ভীতু আমার অনেক ভয় হয়।হারানোর ভয়।যাকে ভালোবাসি তাকে হারানোর ভয় কতোটা প্রবল হয় এটা ভালো না বাসলে বুঝবেন না
নোহা বেশ বিরক্ত নিয়ে সেখান থেকে উঠে যায়।
তিয়াশ মুচকি হাসে।

-বাহিরে অপেক্ষা করুন ম্যাম আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে…..!!
নোহা বাহিরে চলে যায়।তিয়াশ আর একজন ডাক্তার ইশার চেকআপ করে।ইশা ঠিক মতো হাতপা নাড়াতে পাড়ছে না।প্রচুন্ড কষ্ট হচ্ছে তার।মেরুদণ্ডে বেশ আঘাত পেয়েছে।ডাক্তার ইশাকে দেখে সেখান থেকে চলে যায় আমার হাটু গেড়ে ইশার মুখের দিকে ঝুকে বসে।হাতদুটো বিছানায় ভাজ করা,
-ইশা খুব কষ্ট হচ্ছে তোর?
ইশার চোখ বেয়ে পানি পরে,

-ভয় পাসনা আমি মানি বা না মানি তোকে ছেড়ে আর কোথাও পালাবো না।তুইও পালাস না। স্বামী স্ত্রী হয়ে না থাকি,ভালো বন্ধু হয়ে তো থাকতেই পারি।
ইশা চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়
মুখে অক্সিজেন লাগানো তাই কথা বলতে পারছে না সে।
আমানও চোখদুটো বন্ধ করে নেয়।আপাতোতো সে ইশার কষ্ট অনুভব করতে চায়।

নোহা বাহিরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে তিয়াশের জন্য,তিয়াশ আসতেই চেঁচিয়ে উঠে
-কি বলবেন বলুন।ইশার জ্ঞান ফিরেছে।দাভাইকে জানাতে হবে।ওরা ওয়েট করছে তো।
-সব সময় এতো ধমক দাও কেন?
বিয়ের পর মায়ের সামনে ধমক দিলে লজ্জা পাবো।ঘমক দিতে মন চাইলে ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিবা।
-উফ্ কি বলবেন বলুন না!
-আম্মু বিয়ের কথা বলছে।তার একটা বউমা চাই।আমি তোমার বাড়িতে কি জানাবো?
নোহা মুখ বাকিয়ে অন্যদিকে তাকায়,

-কি হলো বলো…জানাবো?
-যদি বলি না?
-তুমি না বললেও জানাবো হ্যা বললেও জানাবো।বাকিটা তোমার পরিবারের ইচ্ছে।
-আমার ইচ্ছের দাম নেই
-জানি না
-তাহলে শুধু শুধু প্রশ্ন করছেন কেন?
সরুন যেতে দিন।
নোহা সেখান থেকে চলে যেতে নিলে।তিয়াশ নোহার হাত চেপে ধরে,
-নোহা একটা কথা বলবে…..তুমি পুরুষ মানুষ ভয় কেন পাও?আমায় ভালোবাসতে ইচ্ছে করে না কেন তোমার?
নোহা মুচকি হেসে তিয়াশের দিকে তাকায়,

-আপনার বাবা মা কে নিয়ে আসুন তাদের সামনেই বলবো।যাকে ঘরের বউমা করে নেবে তার সম্পর্কে সব জানার অধিকার তাদের আছে…
কথাটা বলেই নোহা চলে যায় ইসরাক কে ডাকতে।তিয়াশ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে নোহার যাওয়ার দিকে….বুক কাঁপছে তার।হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে।এই মেয়ে আবার সবাইকে কি বলবে ??

প্রিয়োসিনী পর্ব ২৩

[[তোমাকে ভালোবাসার মানে বার বার পথ হারিয়ে তোমার কাছেই ফিরে আসা
তোমাকে ভালোবাসার মানে সব ভুলে গিয়ে তোমায় নিয়ে ভাবা
তোমাকে ভালোবাসার মানে ঘুম ঘুম চোখে তোমায় নিয়ে কল্পনায় ডুবে থাকা]]

প্রিয়োসিনী পর্ব ২৫