প্রেমময় আসক্তি গল্পের লিংক || নন্দিনী চৌধুরী

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ১
নন্দিনী চৌধুরী

বিয়ের আসোরে নিজের হবু বরের জায়গায় এসেছে হবু বরের লাশ।হ্যা কফিনে কোরে রোদেলার হবু বরের লাশ।যেই বরের আশার কথা গাড়িতে করে সে গাড়িতে করে না বরং কফিনে লাশ হয়ে এসেছে।
বিয়ের সাজে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে রোদেলা।এই নিয়ে ৩বার তার সাথে এমন হলো।গত দুবার যেই ছেলে পক্ষ্যরা তাকে দেখতে এসেছিলো সেই দুই ছেলেই তার পরেরদিন থেকে নিখোঁজ হয়েগেছে।রোদেলার মা বাবার ভাই সবাই এটা নিয়ে চিন্তায় পরেগেছিলো যে এমন কেন হচ্ছে।তাই সিধান্ত নিয়েছিলো কাউকে না জানিয়ে বিয়ে দেওয়ার।সেই মতোই কাউকে না জানিয়ে এই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয় রোদেলার।আজকে তাদের বিয়ে হবার কথা ছিলো।কিন্তু বিয়ের আসরে বরের জায়গায় এসেছে বরের লাশ।বরের মা বাবা স্বজনরা সবাই হতভাক।সাথে রোদেলারাও সবাই।

রোদেলার বাবা ছেলের বাবাকে শান্তনা দিচ্ছেন কিন্তু শান্তনা দিয়ে আদৌ কোনো লাভ আছে কি।যার যায় সেইতো বোঝে তাইনা।ছেলের বাবা কাঁদতে কাঁদতে রোদেলার বাবাকে বলে,
ছেলের বাবা:আপনাদের জন্য হয়েছে এসব।সব আপনাদের জন্য হয়েছে।আমার ছেলে আপনাদের মেয়ের জন্য মারা গেছে।যবে থেকে বিয়ে ঠিক হয়েছে তবে থেকে আমার ছেলের কাছে হুমকি আসছিলো।আমার ছেলেতো রাজী ছিলোনা বিয়েতে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কিন্তু আমার জন্য বিয়ে করতে এসেছিলো।আর দেখো আজ আমার ছেলেটাই আমার থেকে দূরে হয়ে গেলো।আপনার এই মেয়ের কোনো গোপন প্রেমিক এসব করছে দেখুন।আপনার মেয়ের জন্য আজ আমার ছেলে মরলো।
ছেলের বাবাকে ছেলের আত্নীয় স্বজনরা খুব কষ্টে শান্ত করলো।তারপর লাশ নিয়ে তারা ওখান থেকে চলে আসলো।যারা বিয়েতে এসেছিলো তারা কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্য।রোদেলা ভাই রাফসান সবাইকে সামলে নিলো।

রোদেলার বাবা সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।মেয়ের এই নিয়ে তিনবার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে আর তিনবার এমন ঘটনা ঘটলো।রোদেলার বাবা পাশে তাকিয়ে চোখ গেলো দেয়ালের সাথে দাঁড়ানো রোদেলার দিকে।মেয়েটার মুখে ভয় আতংক দেখতে পাচ্ছেন তিনি।রোদেলার বাবা উঠে গিয়ে মেয়ের কাছে গেলেন।রোদেলা তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।রোদেলার বাবা গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রাখতেই রোদেলা চমকে উঠে।বাবাকে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয় সে আর বলতে লাগে,

রোদেলা:বাবা এসব কি হচ্ছে আমার সাথে কেন হচ্ছে আমার সাথে।আমিতো কিছু বুজতে পারছিনা।বাবা বিশ্বাস করো আমার এমন কিছু নেই যার কথা অই লোকটা বলে গেছে।বাবা আমি নিজেই বুজতে পারছিনা এরকম কেন হচ্ছে আমার সাথে।

রোদেলার বাবা রোদেলাকে শান্ত করতে লাগনে।তিনি বুজতে পারছেন মেয়ে তার অনেক ভয় পেয়েছে।রোদেলার বাবা রোদেলার মাকে মেয়েকে রুমে দিয়ে আসতে বলে রোদেলার মা মেয়েকে রুমে দিয়ে আসে।
রোদেলা নিজের রুমে এসে খাটে বসে কান্না করতে লাগলো।আজকে তার জন্য একটা নিরীহ ছেলের প্রান চলে গেলো।কিন্তু এসব কেন হচ্ছে সে জানেনা।রোদেলার কান্নার মাঝে পাশে থাকা টেবিলের উপর ফোনে টুং করে ম্যাসেজের শব্দ আসলো।রোদেলা উঠে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজটা দেখে থমকে গেলো হাত পা গুলো কেমন কাপতে লাগলো তার।রোদেলার ফোনে ওর হবু বরের ছবি কি নির্মম ভাবে মেরেছে ছেলেটাকে।ছবির সাথে ম্যাসেজ ও এসেছে।

“প্রানপ্রেয়শী তুমি কেন আমাকে রাগাও বলোতো।তোমার কি মনে হয় দুনিয়ায় কারো ক্ষমতা আছে তোমাকে আমার আড়ালে বিয়ে করার।শুনো প্রানপ্রেয়শী তুমি হচ্ছো আমার নেশা।আমার ভালোবাসা।সেই তোমার সব খোজ খবর আমার হাতে থাকে ২৪ঘন্টা।সেখানে তোমার কি মনে হয় আমি জানতে পারবোনা তোমাকে কে বিয়ে করছে সেটা।আগের দুজনকে শুধু গায়েব করেছিলাম।কিন্তু এই ছেলে তোমাকে আমার রোদেলামইকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলো।তাকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখি বলো।তাইতো বিয়ে করার সাধ মিটিয়ে দিয়েছি।মনে রাখবে,

“মাদকের চেয়েও বেশি নেশালো তুমি আমার কাছে।তোমার নেশায় আমি দিবারাত্রী বিভোর থাকি।কারন তুমি শুধু আর শুধু মাত্র আমার “প্রেমময় আসক্তি”।”
রোদেলা ম্যাসেজটা পরে এক প্রকার চুপ হয়ে যায়।হাত পা খুব কাপছে তার।রোদেলা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলোনা জ্ঞান হারিয়ে পরে গেলো।
আশফিয়া ইসলাম রোদেলা।মা বাবার আদরের ছোট মেয়ে।রোদেলা দেখতে ভাড়ি মিষ্টি আর ভালো মেয়ের।রোদেলা এভার মেডিকেলের স্টুডেন্ট।রোদেলা বাবা রায়হান ইসলাম মা রিনা ইসলাম রোদেলার বড় ভাই রাফসান একজন ইঞ্জিনিয়ার।রোদেলার বাবা পেশায় একজন আইনজীবী।রোদেলা মেডিকেলে উঠার পর রোদেলার বিয়ের জন্য চেষ্টা করছিলেন রায়হান ইসলাম।কিন্তু যেই ছেলে পক্ষ্যকে তিনি মেয়েকে দেখাতেন তার পরেরদিন সেই ছেলে উধাও।তাইতো এভাবে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন কিন্তু তাও সব এলোমেলো হয়ে গেলো।

সিডনি,,,,
নিজের রুমে কাউচে বসে এক হাতে ওয়াইনের গ্লাস। আর এক হাতে একটা মেয়ের হাসি মাখা ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে একজন যুবক।একটু একটু করে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর ছবিটা দেখছে আর নিজ মনে মনে বলছে,
“রোদেলামই তুমি আমাকে কেন এতো কষ্ট দেও।তুমি জানো তুমি ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই।আমি যে এই দুনিয়ায় একদম একা।আমি যে তোমাকে নিয়েই বাঁচতে চাই রোদেলা মই।”
ছেলেটা যখন নিজ কাজে বিজি তখন তার এসিস্টেন্ট রুমে আসলো।

সায়মন:স্যার।
ছেলেটা:হ্যা বলো।
সায়মন:স্যার কোভরা গ্রুপের লিডার আজকেও তার কিছু লোকদের আমাদের লোকেদের উপর আক্রমন করতে পাঠিয়েছিলো।আমাদের লোকেরা তাদের আক্রমন থেকে বেচেঁ তাদের ধরে নিয়ে এসেছে এখানে।এখন আমরা কি করবো?
ছেলেটা:তুমি যাও আমি আসছি।
সায়মম:ঠিক আছে স্যার।

সায়মন যেতেই ছেলেটা উঠে দাঁড়ালো।খালি গায়ে বসে ছিলো এত্তখন সে।আয়নার সামনে এসে দাড়ালো ছেলেটা।বুকের মাঝে বড় করে লেখা রোদেলা।হাত কব্জিতে টেটু করে ডাব্লু।ছেলেটা একটা ব্লাক শার্ট পরে নিলো।দুইটা বোতাম খুলা রেখে বাকি গুলো আটকে নিলো।ছেলেটার চোখ দুটো বরাবর সবাইকে আকর্ষণ করে কারন তার চোখ দুটো নীল।শার্ট গায়ে হাতে সিগারেট জ্বালিয়ে বেরিয়ে আসলো সে।সিগারেট খেতে খেতে আসলো গার্ডেনে।গার্ডেনে বড় বড় চার বাশের সাথে বেধে রাখা হয়েছে চারজনকে।চারজনের সামনে এসে দাঁড়ালো সে।পিছন থেকে একজন গার্ড একটা চেয়ার এনে দিলো।ছেলেটার সেটাতে বসলো।পায়ের উপর পা রেখে সিগারেট খেতে খেতে বললো,

ছেলেটা:তোরা কোন কলিজা নিয়ে আমার এড়িয়ায় এসে আমার লোকেদের মারতে এসেছিলি।তোদের কি জানের ভয় হয়নি একবার ও।যাই হোক জানের ভয় যখন হয়নি তখন জান দিতে প্রস্তুত হো এবার।জনি!
পিছন থেকে কালো পোশাকে আবৃত একটা ছেলে বেরিয়ে আসলো।
জনি:জি স্যার।
ছেলেটা:আমার এলেক্স আর রেইনকে নিয়ে আসো অনেকদিন ওরা তাজা মাংস খায়না।আজকে ওদের বনভোজন হবে।
জনি:জ্বী আচ্ছা স্যার।
জনি অন্য গার্ডের ইশারা করতেই একটা অনেক বড় খাচায় করে দুটো সিংহ কে আনা হলো।সিংহ দুটোকে দেখে বোজা যাচ্ছে তারা অনেক ক্ষুধার্ত।

ছেলেটা:এই চারজনকে এটার ভেতর ডুকিয়ে দেও।
ছেলেটার কথামতো চারজনকে ডুকিয়ে দেওয়া হলো খাচার।আর শুরু হলো চিৎকার।সিংহ দুটো খুবলে খুবলে খাচ্ছে ওদের।সেই দৃশ্য দেখে হিংস্র ভাবে হাসছে ছেলেটা।অনেকে এই দৃশ্য চোখে দেখতে চায়না বলে চোখ বন্ধ করে নেয় অনেকে আবার ভয়ে শিওরে যায়।ছেলেটা হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
ছেলেটা:এটা আদ্রিয়ান খান আমানের রাজ্য।এখানে এসে আমাকে ধ্বংস করতে চাইলে নিজেকেই মরতে হয়।তোদের লিডার জানেনা আমি কে।তবে সময় আসছে তাকে জানানোর।হু আই আম।I Am The White Devil.
বলেই ছেলেটা উঠে চলে আসে।আর সবাই মাথা নিচু করে রাখে।

সকালে,,
পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় রোদেলা।আশে পাশে ভালোভাবে তাকিয়ে অনুভব করে সে বিছানায়।আসতে করে উঠে বসে ভালোমতো বুজার চেষ্টা করতে লাগলো আসলে কি হয়েছে।তখন তার কালকের কথা মনে পরলো।সেই ছেলের লাশ অউ ম্যাসেজ সব কিছু।রোদেলা আবার ঘাবরে গেলো।তখোনি রোদেলার রুমে তার বাবা ভাই আসলো।রোদেলা বাবা ভাইকে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।রায়হান রোদেলার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
রায়হান:প্রিন্সেস কি হয়েছিলো তোমার।তুমি অজ্ঞান হয়েগেছিলে কেন?

রাফসান:বোনু কি হয়েছে আমাকে বল।
রোদেলা:তোমরা এতো হাইপার হচ্ছো কেন।আসলে কালকের ওসব ঘটনার জন্য একটু বেশি চাপ পরছিলো মাথায় তাই এমন হয়েছে।
রায়হান:প্রিন্সেস তুমি চিন্তা করোনা ওসব নিয়ে।ওসব তোমার ভাইয়া আর আমি দেখছি ওকে।
রোদেলা:ওকে বাবাই।
রায়হান:আচ্ছা এবার ফ্রেশ হয়ে নিচে আসো খেতে।কাল রাত থেকে তুমি না খাওয়া।আমরা নিচে ওয়েট করছি।
রোদেলা:ওকে বাবা আমি আসছি।

রায়হান রাফসান চলে আসে।রোদেলা উঠে আলমারি থেকে জামা নিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে চলে আসে।খাবার টেবিলে রোদেলা খাইয়ে দিচ্ছে রাফসান।এটা রোজকার নিয়ম।রাফসান নিজ হাতে বোনকে খাইয়ে দেবে তারপর নিজে খাবে।বোনকে অনেক ভালোবাসে সে।মায়ের যখন শুনেছিলো বেবি হবে তখন খুব চেয়েছিলো আল্লাহর কাছে একটা বোন হোক।আর আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরন করেছে।খাওয়ার মাঝে রোদেলা ওর বাবাকে বলে,,
রোদেলা:বাবা আমি একটা কথা বলতে চাই।

রায়হান:হ্যা প্রিন্সেস বলো।
রোদেলা:বাবা তুমি চেয়েছিলে আমি বিয়ে করি।আমি রাজী হয়েছিলাম।কিন্তু আমার বিয়ে দিতে গিয়ে যা হচ্ছে তা আমি আর নিতে পারছিনা।আমি এখন ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে পড়তে চাচ্ছি।প্লিজ বাবা না করোনা।
রায়হান:ঠিক আছে আমি না করছিনা।এখন থেকে তোমার যেটা ইচ্ছা তুমি সেটা করতে পারো।যেতে পারো তুমি ঢাকা মেডিকেলে পড়তে।
বাবার কথায় রোদেলা অনেক খুশি হয়।এবার সে তার স্বপ্ন পূরন করতে পারবে।

প্রেমময় আসক্তি পর্ব ২