প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব ১০ || লেখিকা-লাবিবা নুসরত

প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব ১০
লেখিকা-লাবিবা নুসরত

রাতে,,,,,,,
একসাথে খেতে বসেছে সবাই। প্রাচী,মিস্টার ইজাজ আর আইরিন। কিছুক্ষণ আগেই ইজাজ বাসায় এসেছেন। মিটিংয়ের কারনে আজ আসতে লেট হয়েছে। তিনি বাসায় এসে আইরিন কে দেখে বেশ অবাক হয়েছে। কোনো কারন ছাড়া যে তার বোন তার কাছে আসে নি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন তিনি।
আসার পর থেকেই তিনি দেখছেন বিভিন্ন ভাবে প্রাচী আর লারার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে। যদিও আগেও করতো। কিন্তু এখন ইজাজের কাছে ব্যপারটা অনেক বেশি খারাপ লাগছে।
খেতে খেতে হঠাৎ আইরিন বলে উঠলেন,

“ইজাজ?”
ইজাজ~”আপা কিছু বলবি?”
আইরিন~”শুনলাম তোর মাইয়ার জামাইর লগে নাকি আরোহির বিয়া হইছে? সত্যি?”
প্রাচীর গলা দিয়ে খাবার নামছে না কথাটা শোনার পর। সে কোনোরকমে নিজেকে সামলে এখানে বসে আছে।
ইজাজ আইরিনকে বললেন,
“শোন আপা তুই এই বিষয়ে জানিস না। তাই কথা বলিস না। আমার মেয়েটা শুধু শুধু কষ্ট পাবে।”
আইরিন মুখ ভেঙচি কেটে বললেন,

“হুহ যখন বিয়া ভাঙছিল? তখন কই ছিল তোর মাইয়ার কষ্ট? যত্তসব! আজকালকার মাইয়ারা ভালোভাবে সংসার করতেও পারে না। পারবে কেমনে? খালি তো বাইরের দিকে মন থাকে।”
প্রাচী আর সহ্য করতে পারলো না। সে উঠে চলে গেলো। কোনো রকমে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। লারা এবার সহ্য করতে পারলেন না। সাথে মিস্টার ইজাজ ক্ষেপে গেলেন।
“আপা? তুই কি কোনোদিন ভালো হবি না?”
আইরিন চোখ বড় বড় করে ইজাজের দিকে তাকালেন।
“কি বললি তুই?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ইজাজ~”ঠিকই বলেছি। সেই কখন থেকে দেখছি তুই লারা আর প্রাচীকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করছিস। আগেও করেছিস কিছু বলি নি। কিন্তু এখন আমার মেয়েটার পিছনে পরেছিস কেন? ও নিজের জীবনটাকে অতিত থেকে বের করে নতুন ভাবে শুরু করতে চাচ্ছে সেটাও দেখছি তোর জন্য হবে না।”
আইরিন খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।
“শোন আমি বলছিলাম না এই মাইয়ারাই তোর মান-সম্মান ডুবাবে? দেখছোস? আমার কথা কেমনে মিলল? সবে তো শুরু আরও কতো কিছু হইবো! আল্লাহ জানে।”
আইরিন চলে গেলেন। মিসেস লারার চোখের কোণে পানি চলে এসেছে। তিনি ইজাজকে বললেন,
“শুনে রাখো আমার মেয়েকে নিয়ে এরপরের বার কিছু বললে আমি মেনে নিব না।”
এইবলে তিনিও চলে গেলেন। ইজাজ হাত ধুয়ে মাথায় এক হাত দিয়ে বসে রইলেন৷ আইরিন আসার পর থেকেই ঝামেলা হচ্ছে। ইজাজ এইটুকু বুঝতে পেরেছে যে আইরিন থাকতে প্রাচী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। ইজাজের মাথায় আসে না তার মেয়েদের নিয়ে আইরিনের কি এমন সমস্যা?

নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পরে প্রাচী৷ কান্না করার মতো শক্তি তার নেই। কিছু কথার উত্তর দেয়া যায় না। এই যে আইরিন যে কথাগুলো বলল এর উত্তর কি আদৌ দেয়া যেত?
প্রাচী বুঝতে পারে না কেন বার বার সেই বিষাক্ত অতিত তার সামনে নিয়ে আসা হয়! সে তো এসব কিছু থেকে বের হতে চায়৷ তারও তো একটা সুন্দর জীবনের প্রয়োজন। আয়ুসকে যখনই ভোলার চেষ্টা করে তখনই কোনোভাবে সে সামনে চলে আসে।
প্রাচী এসব ভাবছিল তখনই আর ফোনে কল আসে। আননোন নাম্বার। প্রাচী ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বাজে। সে কল রিসিভ করলো।
অপরপাশ থেকে একটা পুরুষালী কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো,
“কেমন আছো?”

ঘোর লাগা সে কণ্ঠ শুনে প্রথমবারেই এক আলাদা শিহরন বয়ে গেলো। পরক্ষনেই সে বুঝতে পারলো কণ্ঠটা আসলে জাহিনের। কাঁপা গলায় প্রাচী বলল,
“ভালো আছি আমি। আপনি?”
জাহিন একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
“ভালো আছি আমি। কি করছো?”
প্রাচী~”ঘুমানোর জন্য ঘরে এসেছিলাম।”
জাহিন~”খেয়েছো?”
প্রাচী~”হুম। আপনি খেয়েছেন?”
জাহিন~”না এখনো বাসায় যাই নি।”
প্রাচী~”ওহ!”
জাহিন~”আচ্ছা তুমি কি নিজের সিদ্ধান্ত নিয়েছো? নাকি আরও টাইম লাগবে?”
জাহিনের এমন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত বনে যায় প্রাচী।
“ননা মানে, আর কিছুদিন সময় লাগবে।”
জাহিন একটা হাসি দেয়।
“আচ্ছা প্রাচী তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো? এমন ভাবে কথা বলছো কেন? টাইম নেও নো প্রব্লেম।”
প্রাচী~”ওকে। গুড নাইট।”
জাহিন~”গুড নাইট।”
কল কেটে দিল প্রাচী। সে একটা কথা ভেবে অবাক হলো যে জাহিনের কণ্ঠ এতো কম সময়ের জন্য শুনেও মনে রেখেছে!
কে জানে! হয়তো প্রাচী মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল বলে মনে আছে।

পরেরদিন বিকালে,,,,,,
প্রাচী একটু আগেই নিচে নেমেছে। সারাদিন বেশিরভাগ সময় নিজের ঘরেই ছিল সে। আসলে আইরিনের সামনে পরতে চায় নি। কিন্তু এখন আসতে হলো। জাহিন কল করে বলল রেডি হয়ে একটু নিচে আসতে। কি যেন একটা জরুরি কাজ আছে। অনুরোধ করেছিল তাই প্রাচী আর ফেলতে পারে নি।
নিচে আসতেই সে দেখলো আইরিন বসে বসে পান চিবুচ্ছে। লারা তার পাশেই বসে আছে। প্রাচীকে নিচে আসতে দেখে লারা বললেন,
“কিরে মা? কোথাও যাচ্ছিস?”
প্রাচী~”হুম মা। জাহিন কল করে বলল কোথায় যেন যাবে।”
আইরিন~”কতো কিছু যে দেখা লাগবে! আল্লাহ!”
প্রাচীর এখন আইরিনের কথা শুনতে মন চাচ্ছে না তাই সে বাইরে চলে যেতে নিলে জাহিন ভিতরে আসে। দরজা খোলা ছিল। তাই সরাসরি ভিতরে এসে লারাকে সালাম দেয়।
আইরিন জাহিনকে দেখে বলে,

“এই পোলার সাথে বাইরে যাবে? হায় হায়! কি দিন-দুনিয়া আসলো রে! মাইয়া একটা মানুষ তাও আবার অবিবাহিত একটা পোলার সাথে বাইরে যাবে!”
জাহিন ভ্রু কুচকে আইরিনের দিকে তাকায়। লারাকে বলে,
“আরে শ্বাশুরি মা আপনি তাকে বলেন নি প্রাচীর সাথে আমার বিয়ে?”
লারা~”আসলে বাবা এখনো কাউকে জানানো হয় নি।”
জাহিন~”ওহ! আচ্ছা আন্টি আমি জাহিন খান। প্রাচীর হবু বর। ভালো থাকবেন। আমি যাই।”
এই বলে প্রাচীর হাত ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে আসলো। প্রাচী চুপ করে আছে।
জাহিন বলে,

“ওনার চেহারা দেখেই বোঝা গিয়েছিল যে এমন খোচা মারা কথা বলে। উত্তর সেভাবেই দিতে হবে।”
প্রাচী~”কিছু মনে করবেন না আসলে উনি ওমনই।”
জাহিন~”হুম সেটা বুঝতেই পেরেছি চলো।”
দুজন গাড়িতে উঠে। জাহিন একটা শপিংমলের সামনে গাড়ি থামায়। প্রাচী জিজ্ঞেস করে,
“এখানে কেন এসেছি?”
জাহিন~”শুনেছি মেয়েদের যখন মন খারাপ থাকে তখন শপিং করলে মন ভালো হয়ে যায়। নামো এখন।”
প্রাচী গাড়ি থেকে নেমে পরলো। ভিতরে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে লাগলো। একসময় একটা শপের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো জাহিন। প্রাচীকে নিয়ে ভিতরে গেলো। একটা গাউন ছিল পুরো সাদা রঙের। তার উপরে সাদা স্টোন বসানো। সেটা কিনে নিল জাহিন। প্রাচীকে বলল,

“কিছুদিন আগে এটা দেখেছিলাম। দেখেই পছন্দ হয়েছিল। তাই কিনলাম। এটা তোমার।”
প্রাচী~”আমার দরকার নেই৷ আপনি কেন শুধু শুধু কিনলেন?”
জাহিন~”আমার দরকার আছে। নাও এটা।”
জোর করে প্রাচীর হাতে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিলো সে। বাইরে আসতেই একটা জায়গায় চোখ আটকে যায় প্রাচীর। আয়ুস আর আরোহি আসছে। মনে হচ্ছে এই শপেই আসবে। প্রাচী ফট করে জাহিনের হাত নিজের হাতের সাথে বাধনের মতো করে ধরলো। প্রাচীর এমন কান্ডে জাহিন বেশ অবাক। হঠাৎ তার চোখ পরলো আয়ুসের দিকে। জাহিনের বুঝতে বাকি রইলো না কেন প্রাচী তার হাত ধরেছে। কিন্তু প্রাচীকে সেটা বুঝতে দিলো না। আয়ুসের চোখও প্রাচীর দিকে আটকে গেলো। প্রাচী ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জাহিনকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।
গাড়ির কাছে এসে জাহিনকে বলল,

প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব ৯

“আজকে বাসায় যাই? আমার ভালো লাগছে না!”
জাহিন প্রাচীর কথা মতো তাকে বাসায় দিয়ে আসলো।
এরমধ্যেই কেটে গেলো আরও চারটা মাস। এই চার মাসে জাহিন অনেক টাইম দিয়েছে প্রাচীকে। অবাক করার মতো বিষয় হলো ওই রাতের পর বিয়ে নিয়ে কোনো কথা বলে নি জাহিন। প্রাচীও কিছু বলে নি। তবে জাহিনের প্রতি অনেক বিশ্বাস জন্মেছে প্রাচীর মনে। দ্বিতীয় বার এমন বিশ্বাস কারো উপর জন্মালো। তবে ভালোবাসা অব্দি এখনো গড়ায় নি। প্রাচী নিজেও জানে না জাহিন তাকে ভালোবাসে কিনা। দুই পরিবার প্রাচীকে অনেক সাপোর্ট করেছে৷ আর একই সাথে অনেক টাইম দিচ্ছে। প্রাচী ভাবলো এবার নিজে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ সে সারারাত ভাবলো। পরেরদিন সকালে জাহিনকে কল দিল।

“হ্যালো?”
জাহিন~”হুম বলো?”
প্রাচী~”আপনি কি ব্যস্ত?”
জাহিন~”আজকে একটু কম ব্যস্ততা। কেন কিছু বলবে?”
প্রাচী~”আসলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ সেটা আপনাকে জানাতে চাই৷ একবার দেখা করুন।”
জাহিন~”আচ্ছা আমার চেম্বারে চলে আসো।”
প্রাচী~”ওকে।”
কল কেটে প্রাচী লারাকে বলে বেরিয়ে পরলো জাহিনের চেম্বারের উদ্দেশ্যে।

প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব ১১