প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব ৮ || লেখিকা-লাবিবা নুসরত

প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব ৮
লেখিকা-লাবিবা নুসরত

বাবার কাছ থেকে নিজের বিয়ের কথা শুনে অনেকটাই অবাক হয়েছে প্রাচী। এতো তারাতাড়ি এসব হয়ে যাবে ভাবতে পারে নি সে।
মিস্টার ইজাজ প্রাচীকে চুপ থাকতে দেখে বলেন,
“কি হলো? দেখ মা আমি একবার তোর জীবনে ভুল মানুষকে এনেছি। আর পারবো না।”
প্রাচী~”কিন্তু বাবা এভাবে?”

ইজাজ~”পরিস্থিতি বোঝ মা। ছেলেটা সব কিছু মেনে নিয়ে রাজি। তাছাড়া বিয়ে বা বাগদান কিছুই এখন না। আগে নিজেদের ভালো করে জান। এরপর দেখা যাবে।”
প্রাচী~”তারমানে গতকাল এসব নিয়েই কথা বলছিলে তোমরা?”
ইজাজ~”হুম। সবাই রাজি। আর এখানে কেউ আসতে পারলো না। প্রহর অসুস্থ জানিস তো। তাই ওকে ফেলে কেউ আসে নি। এখন তুই রাজি হলে ওদের জানিয়ে দিব।”
প্রাচী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“আমি আগে জাহিনের সাথে কথা বলতে চাই। পারবো কি?”
ইজাজ~”অবশ্যই! কেন পারবি না।”
মিস্টার ইজাজ ফোন বের করে জাহিনকে কল করতে যাবে তখনই হঠাৎ কেউ বলে উঠে,
“আসতে পারি?”

দরজা খোলাই ছিল। জাহিনকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক হয় প্রাচী। মিস্টার ইজাজ খুশি হয়েছেন।
“আরে জাহিন? বাবা এসো?”
জাহিন ভিতরে আসলো। ইজাজ বললেন,
“প্রাচী তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিল। আসলে জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্ত। তাই আমিও রাজি হয়েছি। তুমি ওর সাথে বরং কথা বলে নাও।”
জাহিন হেসে বলে,
“আচ্ছা প্রাচী চলো।”
প্রাচী~”কোথায়?”
জাহিন~”কথা বলবে না আমার সাথে? পারফেক্ট জায়গা আছে একটা চলো।”
প্রাচী~”আচ্ছা। আমি রেডি হয়ে আসি।”
জাহিন~”সমস্যা নেই। এভাবেই চলো।”
প্রাচী আর জাহিন চলে গেলো। মিসেস লারা এতো সময় নাস্তা বানাচ্ছিলেন। কেবল আসলেন। প্রাচীকে দেখতে না পেয়ে ইজাজকে বললেন,
“মেয়ে কোথায় গেলো?”
ইজাজ~”জাহিনের সাথে বের হয়েছে।”
লারা~”তা কি বলল ও? রাজি হয়েছে?”
ইজাজ~”আগে জাহিনের সাথে কথা বলে নিতে চায়। এরপর দেখবে।”
লারা~”হুম সেই ভালো। ওদেরই তো জীবন। আগে নিজেদের ভালো করে বুঝে উঠুক। বিশ্বাস গড়ুক। এরপর।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

প্রাচী আর জাহিন একটা নদীর পারে বসে আছে। আশেপাশে বেশি কেউ নেই। ঠান্ডা একটা আবহাওয়া। বেলা এগারোটা বাজলেও আকাশ কালো হয়ে আছে। মনে হয় বৃষ্টি হবে।
দুজনেই চুপচাপ। কেউ কথা বলছে না। হঠাৎ প্রাচী বলে উঠে,
“আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?”
জাহিন মুচকি হাসে।
“এমনি!”
প্রাচী বিরক্ত হয়। এটা কেমন উত্তর! এমনি কেউ বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয় নাকি!
“আমাকে দয়া করছেন আপনি?”

জাহিন~”মোটেও না! তোমাকে দয়া করার মতো ক্ষমতা আমার নেই।”
প্রাচী~”তাহলে বিয়ে কেন করছেন? আমার ব্যাপারে তো সবই জানেন। আমার উপরে যে অপবাদ এসেছে তাও জানেন। একজনকে ভালোবাসতাম সেটাও জানেন৷ তাও কেন?”
জাহিন শান্ত কণ্ঠে বলল,
“আমাদের জীবনে অনেক ঘটনা আকস্মিক ঘটে । এমন অনেক কিছু হয়ে যায় যা আমরা কল্পনাতেও আনতে পারি না। এটাও তেমন কিছু একটা।”
প্রাচী~”আমার কি বিয়ের জন্য রাজি হওয়া উচিৎ?”
জাহিন~”আমি তা জানি না। শুধু বলবো নিজের মন যা বলে তাই করো। মন যদি বলে অতিত নিয়ে থাকো তাহলে আমি তোমাকে অতিত ভুলতে সাহায্য করবো৷ মন যদি বলে অতিত ভুলে সামনে এগিয়ে যাও তবে আমি তোমার পথ চলার সঙ্গী হবো। এখন সিদ্ধান্ত তোমার!”
প্রাচী জাহিনের কথার প্যাচ বুঝতে পারছে না। এইদিকে আকাশ পুরো কালো মেঘে ছেয়ে গিয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। প্রাচী জাহিনকে বলল,

“ভিজে যাবেন তো। গাড়িতে চলুন।”
জাহিন~”মাঝে মাঝে বৃষ্টি বিলাস করতে হয়।”
প্রাচী~”এই অসময়ে বৃষ্টি বিলাস করলে আপনার জ্বর বাধবে।”
জাহিন মুচকি হাসলো। প্রাচীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি এক দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত! সেখানে জ্বর কিছুই না।”
প্রাচী~”মানে? আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না! কি বলছেন আপনি?”
জাহিন~”উহু! আমি বোঝাবো না৷ যেদিন নিজ থেকে বুঝবে সেদিন দেখা যাবে।”
এতক্ষণে প্রাচী আর জাহিন দুজনেই ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। প্রাচী গাল ফুলিয়ে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। আশেপাশে কোথাও একটা ছাউনি পর্যন্ত নেই। হঠাৎ জাহিন এসে প্রাচীর পাশে দাঁড়ায়। প্রাচী মুখ বাকিয়ে বলে,
“আপনার জন্য ভিজে গেলাম।”

জাহিন~”হুমমম এখনো অনেক কিছু বাকি।”
প্রাচী~”আপনি কি বলেন এসব? পাগল হয়ে গিয়েছেন নাকি?”
জাহিন~”না তো৷ এমন কেন মনে হলো?”
প্রাচী~”আমাকে তো সবসময় দেখতাম ইগ্নোর করতেন। এখন এতো আজগুবি কথা বলছেন!”
জাহিন~”এখন হয়তো আজগুবি মনে হচ্ছে। একদিন বুঝবে। কথার মূল্য দিতে পারবে।”
প্রাচী~”এই বাসায় চলুন। আপনি না ডাক্তার? কোনো কাজ নেই? চলুন চলুন।”
জাহিন হেসে বলে,
“আচ্ছা চলো।”
প্রাচী গাড়িতে উঠে বসে। জাহিন গাড়ি স্টার্ট দেয়। প্রাচী পুরোটা সময় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।

প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব ৭

বড় একটা ঘরে দুজন মানুষ বসে আছে। সারা ঘরব কোনো আলো নেই। মানুষ দুটোর মাঝে একটা টেবিল। সেই টেবিলের ঠিক উপরে একটা লাইট জ্বলছে। দুজনের মুখ আবছা দেখা যাচ্ছে।
একজন হঠাৎ বলে উঠে,
“আমি যা বলছি তা মেনে নিলে তোমারই লাভ!”
অপরজন রাগান্বিত হয়ে যায়।
“লাভ মানে? আমি আমার প্ল্যান তোমাকে নষ্ট করতে দেব না!”
প্রথমজন হেসে বলে,
“তাহলে সব ফাস করে দেই নাকি? সবাই তোমার আসল রূপ দেখুক!”
দ্বিতীয় জন~”আচ্ছা! তুমি সব দোষ নিজের ঘারে কেন নিবে? এতে করে তোমার লাভ কি? আর আমাকে কেন ব্ল্যাকমেইল করছো?”
প্রথমজন রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল,

“আমার লাভ-লোকসানের হিসাব তোমার করার দরকার নেই। নিজেরটা দেখো৷ সব প্রমান আমার কাছে আছে। দুজন মিলে প্ল্যান সাজাবো৷ আশা করি বুঝতে পেরেছো!”
দ্বিতীয় জন উপায় না পেয়ে বলে,
“আচ্ছা। আমি রাজি৷ মেয়েটাকে তোমায় দিয়ে দিব। কিন্তু একটা কথা?”
প্রথম জন~”কি?”
দ্বিতীয় জন~”যতক্ষন আমার কাছে মেয়েটা থাকবে ততক্ষন যা ইচ্ছা করবো!”
প্রথম জন~”কিছু করার চেষ্টা করবে না। আজ আসি। যা বলেছি মনে থাকে যেন।”

প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব ৯